
মেক্সিকোর জগদ্বিখ্যাত কবি, লেখক ও কূটনীতিবিদ অক্তাভিও পাজ ১৯১৪ সালের ৩১ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ১৯৮১ সালে ‘মিগুয়েল ডি সার্ভেন্তেস’ পুরস্কার, ১৯৮২ সালে ‘নিউয়েস্টাড আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কার’ এবং ১৯৯০ সালে সাহিত্যে ‘নোবেল পুরস্কার’ লাভ করেন। অক্তাভিও পাজ ছিলেন বিংশ শতাব্দীর লাতিন আমেরিকান সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা কবি ও লেখক। মেক্সিকোতে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সময় পাজের জন্ম। যুদ্ধের বাস্তবতা থেকে আগলে রেখে পাজকে বড় করে তুলেছিলেন তার মা জোসেফিনা লোজানা, পিতামহ ও খালা। তার মা ছিলেন স্পেনীয় অভিবাসী, যিনি জীবনে ধর্মকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছিলেন। শিশু পাজের খালা সারাক্ষণ সঙ্গ দিয়ে, স্নেহ দিয়ে তাকে বড় করেছিলেন। সাহিত্যের প্রতি অগাধ অনুরাগী এই খালার কাছ থেকে পাজ শৈশবেই ভিক্টর হুগো ও রুশোর মতো সাহিত্যিকদের লেখার সঙ্গে পরিচিত হন। পাজের বাবা ছিলেন একজন আইনজীবী ও সাংবাদিক। পিতামহ ছিলেন একজন আদর্শনিষ্ঠ বিপ্লবী ও প্রভাবশালী লেখক, যিনি ফরাসিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। পাজ বাল্যকালে তার পিতামহের লেখা দ্বারাই অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। ১৯৩৭ সালে পাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। কবিতায় নিজেকে সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োজিত করাকেই জীবনের ব্রত হিসেবে বেছে নেন। ১৯৫৭ সালে প্রকাশিত হয় তার বিখ্যাত কবিতা ‘পিয়েরদা দ্য সান’ বা বাংলায় ‘সূর্য পাথর’। একই বছর পাজের প্রথম কবিতা সংকলন প্রকাশিত হয়। ১৯৬২ সালে মেক্সিকোর রাষ্ট্রদূত হয়ে তিনি ভারতে আসেন। ১৯৬৮ সালে মেক্সিকোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ওপর সরকারি বাহিনীর গুলি চালানোর প্রতিবাদে রাষ্ট্রদূতের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর হার্ভার্ডসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন এবং শিল্পকলা ও ইতিহাস বিষয়ে কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন। ১৯৯৮ সালের ১৯ এপ্রিল ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন কালজয়ী সাহিত্যিক অক্তাভিও পাজ।
বাবা কাহিনি
আমার বাবা ১৯৪৬ সালের ম্যাট্রিকুলেটদের একজন (আমার বাবা আমার হাইপ্রোফাইল বন্ধুদের বাবাদের মতো কোনোকালেও ফার্স্ট ক্লাস বা ফার্স্ট ডিভিশন পাননি)। ১৯৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি ঘটনাচক্রে তিনি ঢাকায় ছিলেন, থাকার কথা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের চাকলালায় তার বিমানবাহিনীর কর্মক্ষেত্রে। সন্ধ্যার দিকে তার খুব ইচ্ছা হলো উত্তপ্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভেতরটাতে কী হচ্ছে একটু দেখে আসবেন (আমার বাবা কসি¥নকালেও ভাষাসৈনিকদের একজন ছিলেন না এবং তাকে ঠেলেঠুলে ভাষাসৈনিক বানানোর কোনো গোপন বা প্রকাশ্য ইচ্ছাও আমার নেই)। চারদিকে তখন ঢিল খাওয়া এত ক্ষুব্ধ পুলিশ যে, ডাক্তারদেরও ভেতরে প্রবেশ করতে অসুবিধা হচ্ছিল।
সাইকেল আরোহী আমার বাবা তার সাইকেলসহ ঢোকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেন এবং পুলিশের ধমক খেলেন। কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে দলছুট একজন কনস্টেবলকে সালাম দিয়ে বললেন, স্যার, আমার একটু হাসপাতলের ভেতরে যাওয়া দরকার যদি একটু সুযোগ করে দিতেন স্যার, কৃতজ্ঞ থাকতাম।
একই বাক্যে দুবার স্যার সম্মোধন শুনে কনস্টেবল যথেষ্ট দয়া পরবশ হয়ে তাকে বললেন, সাইকেল নিয়ে যাওয়া যাবে না।
পরক্ষণেই আমার বাবা বললেন, স্যার, আপনি যদি আমার সাইকেলটা একটু দেখে রাখতেন...।
তার স্যার বলার আন্তরিকতা কনস্টেবল সাহেবকে মুগ্ধ করে থাকতে পারে। তিনি একটি জায়গা দেখিয়ে বললেন, এখানে রাখো, পনেরো মিনিটের মধ্যে যা যা দেখার দেখে ফিরে আসবে।
জি স্যার, অবশ্যই, বলে আমার বাবা তারই সঙ্গে গেট পর্যন্ত আসেন এবং ভেতরেও ঢুকে যান। তার পরিচিত দু-একজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে, কিছু দেখার কৌতূহল নিবৃত্ত করে আধা ঘণ্টা পর বেরিয়ে এসে আবারও তাকে স্যার ডেকে ধন্যবাদ জানিয়ে সাইকেল নিয়ে রাত্রিনিবাসে ফিরে এলেন।
আমি একাধিকবার তার কাছে এই এপিসোডটি শুনেছি এবং প্রতিবারই তিনি উপসংহারে বলেছেন : স্যার ডেকে পুলিশকে দিয়ে আমার সাইকেলটি আধা ঘণ্টা পাহারাও দেওয়াতে পেরেছি।
তিনি যে স্যার ডেকে ভেতরে যেতে পেরেছেন তার কাছে এর চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে নিজের সাইকেলের নিরাপত্তায় পুলিশ প্রহরা নিশ্চিত করতে পারা।
কারও পছন্দ হোক বা না হোক, উপনিবেশবাদ তাদের কাউকে খোঁচা দিক বা না দিক আমি ব্যক্তিজীবনে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত বাবার এই শিক্ষাটাকে গ্রহণ করেছি। কৌশল কিংবা চাতুর্য হিসেবে নয়, অপ্রত্যাশিতভাবেই আমি অনেককে স্যার বলি, বন্ধুদের কাউকেও বলি এবং বলে কিছুটা সম্মান ফিরেও পাই বলে আমার বিশ্বাস।
নিজের কাহিনি
‘আমলাতন্ত্রের কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘লাল ফিতের দৌরাত্ম্য বন্ধ কর বন্ধ কর’ এসব লিখতে লিখতে এ চাকরি সে চাকরি করতে করতে বাবাকেও সন্তুষ্ট রাখতে ১৯৮২ সালের নিয়মিত বিসিএস পরীক্ষায় বসলাম এবং শুরুতে বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ার কারণে সম্ভবত গণিত ও ইংরেজির পুঁজির জোরে পাসও করে গেলাম। প্রথম পদায়ন বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। হায়ারার্কি বা পদসোপানের বিষয়টি একটু একটু করে টের পেতে শুরু করলাম। একেবারে প্রথম দিনই অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোমেনুল হককে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আচ্ছা ভাই, এই অফিসে কাকে কাকে স্যার বলতে হবে?’
আমার সৌভাগ্য আমার চাকরি জীবনে প্রথম কথা বলা বস মোমেনুল হক (১৯৬৯-এর ইপিসিএস) তখনই এ প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আমলাতন্ত্র নিয়ে কিছু রসিকতা করলেন, টেক্সট বইয়ের বাইরে কিছু জানি কিনা বোঝার চেষ্টা করলেন এবং বুঝলেন আমি টেক্সট বইয়ের তেমন কিছুই জানি না, সামান্য যা জানি সবই টেক্সট বইবহির্ভূত আমার আমলে সেগুলোকে বলা হতো আউট বই কিংবা কাজে বই।
তাকে আমার প্রশ্নের জবাবে ফিরিয়ে আনি। তিনি বললেন, ডিসি, এডিসি জেনারেল, এডিসি রেভিনিউ, এডিসি ভূমি হুকুমদখল এবং এডিএম (শামসুল হক)-কে স্যার বলবে।
আমি দেখলাম যার সঙ্গে কথা বলছি তিনিও এডিএম, তাকেই বা কেন বাদ দেব। বললামও, তাহলে ভাই আপনাকেও স্যার বলব।
তিনি বললেন, ইচ্ছা হলে বলো। ইচ্ছা না হলে থাক।
আরও বললেন, সিনিয়রদের মধ্যে যাদের তুমি একটু বেশি পছন্দ করবে তাদের স্যার কম বললেও চলবে, কিন্তু যারা কম পছন্দের হবেন তাদের একটু বেশি বেশি করে বলাই হবে উত্তম কাজ।
স্যার শুনে যেমন তৃপ্তি (!) বলেও তো তৃপ্তি আছে। আমার চাকরিজীবনের (কিংবা আমলাজীবনের) শুরুতে যাকে স্যার বলে তৃপ্তি পেয়েছি, তিনি মোমেনুল হক। একটি প্রতিষ্ঠানের বড়কর্তা থাকা অবস্থায় পদব্রজে রমনা পার্কের ভেতর দিয়ে বাড়ি ফেরার সময় ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে যা আছে সব খোয়াতে বাধ্য হন। ঘটানাটি সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছিল। ছিনতাইকারীরা তার ১৪৫ টাকার সবটাই নিয়ে যায়।
১৯৮৮ সালের একেবারে শুরুতে ভূমি সচিব এম. মোকাম্মেল হক আমাকে মাঠ থেকে তুলে ভূমি মন্ত্রণালয়ে নিয়ে আসেন। এটাই আমার সচিবালয় চাকরির সূচনা, সহকারী সচিব হিসেবে। মেজাজে আবেগময় দোদুল্যমানতা ছিল এমন একজন বিদ্বান যুগ্ম সচিব ডক্টর কামাল সিদ্দিকীকে আমাদের জ্যেষ্ঠ একজন সহকর্মী আসহাবুর রহমান বলতেন, কামাল ভাই। আমি ততদিনে সিনিয়রদের স্যার বলতে বেশ অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। কিন্তু ডক্টর সিদ্দিকী হুকুম করলেন এখন থেকে তুমিও আমাকে ভাই বলবে, কামাল ভাই। এটা আমার আদেশ। এটা তোমার জন্য স্পেশাল অফার। কিন্তু আদেশটা পালনের উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছি।
আবার সর্বজন শ্রদ্ধেয় স্যার ছিলেন বাংলাদেশে প্রথম মন্ত্রিসভায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ডক্টর মফিজ চৌধুরী, তিনি সবার স্যার, কিন্তু আমার হয়ে রইলেন ভাই। আদমসূত্র ছাড়া তার সঙ্গে আমার আত্মীয়তার কোনো সম্পর্ক নেই। তাকে মফিজ ভাই বলছি শুনে আমার বাবাও অবাক হলেন এবং আমার অপরাধটা যে অমার্জনীয় তা মনে করিয়ে দিলেন। আমি যখন ডক্টর মফিজ চৌধুরীকে স্যার বলতে চেষ্টা করলাম, তিনি বললেন, ফাজলামি শুরু করলে।
তার সঙ্গে আমার সম্পর্কসূত্র সাহিত্যের, হ্যামলেটের, রবীন্দ্রনাথের। সুতরাং তিনি আবার বাবার স্যার হলেও আমার ভাই, মফিজ ভাই।
সে আমলে নারীদের স্যার বলার রেওয়াজটা শুরুই হয়নি। বগুড়া কালেক্টরেটের দোতলায় আমি বসি। দুপুরের পর পঞ্চাশোর্ধ্ব একজন ভদ্রমহিলা এলেন, তার কয়েকটা কাগজ এবং ছবি প্রত্যয়ন করে দিতে হবে।
ছবিটা উল্টে দেখি নাম লেখা রোমেনা আফাজ। আমি নাম দেখেই দাঁড়িয়ে যাই। আমি অনেকটা তোতলাতে তোতলাতে বলি, আমি একজন রোমেনা আফাজকে জানি, দস্যু বনহুরের লেখক। আপনি তাহলে আরেকজন।
তিনি বললেন, না, একজনই রোমেনা আফাজ, আমিই দস্যু বনহুর সিরিজ লিখেছি। আমার ক্লাস সেভেন জীবনে রোমেনা আফাজই ছিলেন আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় লেখক, আমি কীভাবে তাকে সম্বোধন করব, কীভাবে সম্মান জানাব, অস্থির হয়ে উঠলাম। ‘স্যার’ ছাড়া আর সম্মানসূচক যত শব্দ আমার মনে আসে সবই তার জন্য নিবেদন করেছি। ‘স্যার’ বলিনি কারণ, সে সময় কোনো নারী স্যার শুনলে ভাবতেন ‘বিটলামি’ করছি। আমার উচ্ছ্বাস তাকে বিব্রত করে থাকতে পারে তিনি ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলেন এবং বললেন, এই কালেক্টরেটে কত এসেছি, কিন্তু এত সম্মান কখনো পাইনি।
আমার আরও আরও স্যার
১৯৮৯-এর অক্টোবরে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার ইউএনও পদে যোগ দিই। আমাকে সংবর্ধিত করতেই কিনা যোগ দেওয়ার সঙ্গে ছুটতে হলো ডাকাতের গুলিতে নিহত পাঁচজনকে দেখতে। মৃত্যুশয্যায় আরও কয়েকজন। খানিকটা দেহ গাছের ওপর, খানিকটা ঘরের চালে এমন একটি মরদেহও নামাতে হলো। তার অল্পদিন আগে কুমিল্লায় নিদারাবাদের ছয় খুনের ঘটনা বেশ আলোচিত হয়েছে। পরদিনই আহতদের একজনের মৃত্যু হলে ঢাকায় পত্রিকায় ছাপা হয়েছে গফরগাঁও নিদারাবাদের সঙ্গে ড্র করেছে।
বিভিন্ন কারণে গফরগাঁও প্রশাসনে তখন অস্থিরতা চলছে ইউএনওবিরোধী হয়ে উঠেছেন উপজেলা হাসপাতালের সব ডাক্তার; প্রকৃচি (প্রকৌশলী কৃষিবিদ ও চিকিৎসা) সমাজের আন্দোলনও চলছে। পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে, সংসদ সদস্য উপজেলার কারও কারও মতে, উপজেলাটাকে গিলে খাচ্ছেন। এ রকম একটি অস্থির পরিবেশে একটি সভাতে আমি গফরগাঁও সরকারি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আমীর আলীকে সম্বোধন করলাম স্যার; খায়রুল্লাহ গার্লস স্কুলের হেডমিস্ট্রেস মার্জিয়া বেগমকে বললাম ম্যাডাম; গফরগাঁও কলেজের প্রিন্সিপাল মোকাররম হোসেন তো অবশ্যই স্যার আমার এক-দুজন সহকর্মীর মনে হলো আমি প্রশাসনের ডিসিপ্লিন ভেঙে ফেলছি। অভিযোগটা আরও গুরুতর হলো যখন আমি একজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে বললাম, স্যার। প্রশাসন বোধ হয় তখন পুরোটাই ভেঙেই পড়ল! সেই ইউনিয়নের নাম রাওনা এবং চেয়ারম্যান হামিদুল্লাহ মাস্টার। আমার ‘বস’ ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক শফিউল আলম ফিসফিস করে বললেন, কী শুনলাম, তুমি নাকি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকেও স্যার বলতে শুরু করেছ।
একটু হালকা চালে বললাম, স্যার, গ্রাসরুটস লেভেল থেকেও এগোতে এগোতে মন্ত্রী হওয়ার নজির আছে। মন্ত্রীকে সবাই স্যার বলেন। কে কখন মন্ত্রী হয়ে যান বলা তো যায় না, আমি না হয় একটু আগে থেকেই স্যার বলা শুরু করলাম।
গফরগাঁও স্কুলটা সরকারি হাইস্কুল, আমি ঢাকার একটি সরকারি হাইস্কুলে পড়তাম গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল। সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের আন্তঃস্কুল বদলি হয়েই থাকে। আমি হয়তো আমীর আলীকে সরাসরি আমার শিক্ষক হিসেবেই ল্যাবরেটরি স্কুলে পেতে পারতাম। কাজেই তাকে তো আমার স্যার বলতেই হবে, না বলাটাই হবে ঔদ্ধত্ব। বদলিসূত্রে আমি যখন গফরগাঁও ছেড়ে আসি, আমীর আলী স্যার আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, শিক্ষকতা জীবনের শেষ পর্বে এসে সম্মানটা পেয়েছি। ১৯৯৯-এর এপ্রিলে তার-আমার শেষ দেখা।
মার্জিয়া বেগমের ‘সফিসটিকেশন’ চোখে পড়ার মতো। আদর্শ স্কুলশিক্ষক, আমি সম্বোধন করতাম ম্যাডাম। সন্তানদের বাধা উপেক্ষা করে হামিদুল্লাহ মাস্টার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। অন্তত তার বিরুদ্ধে চাল-গম তছরুপের কাহিনি আমি শুনিনি। মাস্টার হিসেবে, ভালো মানুষ হিসেবে, ভালো জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি অবশ্যই আমার স্যার।
আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ কবি হিসেবে বড়, আমলা হিসেবেও। চাকরিসূত্রে তিনি কেবল আমার নন, আমার বসদের যারা বস তাদেরও স্যার। ১৯৮২ সালে সন্ধানী প্রকাশনীর কর্ণধার গাজী শাহাবুদ্দিন আহমেদ আরও কটি বইয়ের সঙ্গে আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর বইও দিলেন, উদ্দেশ্য বাংলাদেশ অবজারভার পত্রিকায় রিভিও লেখানো। আমি তার সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে তখনো পরিচিত হইনি। ১৯৯২ সালে তার একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা যখন তার সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমিও ফিসফিস করে বললাম, স্যার, আমি অবজারভারে আপনার বই নিয়ে লিখেছিলাম।
তিনি বললেন, আমি তো তোমাকেই খুঁজছি। বলেই আমার কাছে তার মুখ এনে আস্তে করে বললেন, তুমি আমাকে স্যার বলবে না, সেন্টু ভাই বলবে। তারপরও দেখা হয়েছে, আমি সেন্টু ভাই বলতে পারিনি, স্যারই বলেছি।
লেখক: সরকারের সাবেক কর্মকর্তা ও কলামিস্ট
পবিত্র রমজান মাস যেহেতু প্রতি বছরই আসে, সেজন্য এটা অনেকের জন্য পরীক্ষার বিষয় হয়ে যায়। কারণ যে কাজ বারবার করা হয় তাতে গভীর মনোযোগ ও একনিষ্ঠতা ধরে রাখা এবং ওই কাজের মাধ্যমে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা এবং সওয়াবের প্রত্যাশা অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন হয়ে পড়ে। তখন অনেকেই এ জাতীয় কাজ করেন অভ্যাসবশত। ফলে ওই কাজের গুরুত্ব ও মর্যাদা আর বজায় থাকে না। তার বিনিময়ে আল্লাহতায়ালার যে ওয়াদা সেটা স্মরণ থাকে না। কিংবা সেই ওয়াদার ওপর বিশ্বাস যথাযথভাবে মনে থাকে না। কারণ কোনো কাজ অভ্যাসজাত হয়ে গেলে তা অনেকটা অভ্যাসের তাগিদেই করা হয়। তাতে অন্য কোনো বিষয় খেয়াল করা হয় না। অথচ স্পষ্টভাবে হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ইমান (বিশ্বাস) ও ইহতিসাব (একনিষ্ঠতা)-এর সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে, তার অতীত গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ -সহিহ বোখারি : ৩৮
বর্ণিত হাদিসে ইমান তথা বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে সওয়াবের প্রত্যাশা নিয়ে রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে। এখান থেকে খুব খেয়াল করে শিক্ষাগ্রহণ এবং পুরো রমজান মাস সেই শিক্ষা মনে রাখা।
একটু চিন্তা করা দরকার, মানুষ কেন রোজা রাখে? কেন সে পানাহার ত্যাগ করে? প্রচ- গরমেও সে পানি পান করে না! তীব্র ক্ষুধায়ও খাবার খায় না। অথচ সবকিছুর ব্যবস্থা আছে। চাইলেই সে যে কোনো কিছু গ্রহণ করতে পারে। এমনিভাবে সে আরও অনেক ধরনের কষ্ট করে। অনেক কিছু সয়ে নেয়। এসব কেন করে?
উত্তর পরিষ্কার। আল্লাহতায়ালার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে। তার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে। তার কাছ থেকে বিনিময় ও সওয়াবের আশায়।
যারা মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞান এবং মানবীয় দুর্বলতার খবর রাখেন, তারা জানেন- যখন কোনো বিষয় ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয় এবং নির্ধারিত রুটিনের আওতাভুক্ত হয়, তখন সেটা অনেক সময়ই উদাসীনভাবে পালন করা হয় এবং অবচেতন মনে আদায় করা হয়। রোজা রাখতে হবে, তাই রাখা। রোজা না রাখলে মানুষ মন্দ ভাববে, ঘরের লোক খারাপ বলবে। মানুষের কাছে লজ্জা পেতে হবে, সমালোচনা শুনতে হবে। তাই সে রোজা পালন করে।
আবার অনেকে আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তেই রোজা রাখে কিন্তু তাদের হৃদয় সবসময় জাগ্রত থাকে না। রোজার প্রকৃত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তাদের স্মরণ থাকে না। অথচ আমলের হিসাব নেওয়া, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি মনোযোগী হওয়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবুও মানুষ সেদিকে মনোযোগী হয় না। খেয়াল করে না- কেন সে রোজা রাখছে? কেন সে পানাহার ত্যাগ করছে? চাহিদা ও চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা থাকার পরও সে কেন তা থেকে বিরত থাকছে? রোজাপালনের ক্ষেত্রে এমন উদাসীনতা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
রোজার যেসব ফজিলত এবং রোজার মাধ্যমে যেসব বিষয় অর্জনের কথা বলা হয়েছে, তার একটি হলো- তাকওয়া তথা আল্লাহভীতি। সরাসরি কোরআন মাজিদে এই ফজিলতের কথা এসেছে। আর হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রোজার অসিলায় কামাই-রোজগারে বরকত হয়। মানব হৃদয় আলোকিত হয়। গোনাহ থেকে বাঁচার শক্তি অর্জিত হয়। আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সহজ হয়ে যায়। সর্বোপরি তাতে আল্লাহর নির্দেশ পালন ও নবী কারিম (সা.)-এর অনুসরণ করা হয়।
আমরা পানাহারে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও যখন শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তা পরিত্যাগ করি, তখন প্রতিটি মুহূর্তে সওয়াব হতে থাকে, আমাদের মর্যাদা উঁচু হতে থাকে। কারণ এই ত্যাগ আল্লাহর কাছে খুবই দামি, তাতে আল্লাহ খুব খুশি হন। বান্দা যখন তার হুকুম পালনার্থে এবং তাকে খুশি করার উদ্দেশ্যে ক্ষুৎপিপাসার কষ্ট সহ্য করছে- এর মর্যাদা তার কাছে অনেক বেশি।
কিন্তু আফসোসের কথা হলো- অধিকাংশ রোজাদারেরই এসব কথা মনে থাকে না। রোজাদারের মর্যাদা, তার জন্য আল্লাহ কী পুরস্কার নির্ধারণ করেছেন, আল্লাহ তাকে কত ভালোবাসেন ইত্যাদি বিষয়ের দিকে মনোযোগ নিবদ্ধ হয় না। অথচ সেটা খুবই জরুরি। আল্লাহর হুকুমের কথা মনে করা, তার সন্তুষ্টি লাভের নিয়ত স্মরণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যখন একটা অনুষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে শুরু হয়, নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় এবং সবাই তাতে অংশগ্রহণ করে তখন কে কী নিয়তে অংশগ্রহণ করে সেটা স্পষ্ট থাকা জরুরি। প্রত্যেকের মূল্যায়ন হবে তার নিয়তের ভিত্তিতে।
রমজানের রোজার ক্ষেত্রে দেখা যায়, যেন একধরনের বাতাস আসে এবং সেইসঙ্গে একটি মৌসুম আসে। তাতে চারপাশে নতুন আবহ ছড়িয়ে পড়ে। সবাই ওই আবহে প্রভাবিত হয় এবং সে অনুযায়ী আমল শুরু করে। অথচ আসল উদ্দেশ্য ও নিয়তের কথা সবার মনে থাকে না।
জীবনের সব কাজে এই ‘ইমান (বিশ্বাস) ও ইহতিসাব (একনিষ্ঠতা)’ যদি আমাদের অর্জন হয়ে যায়, তাহলে পুরো জীবন আল্লাহর রহমত ও করুণার বারিধারায় স্নাত হবে। এর প্রকৃত ফায়দা দেখা যাবে কেয়ামতের দিন। যখন সবাই আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে, তখন বুঝে আসবে ‘ইমান ও ইহতিসাব’-এর মূল্য। ছোট ছোট এই আমলগুলোও দেখা যাবে- কত বড় আকারে সামনে আসছে! কারও কোনো ছোট্ট একটি কাজ করে দিয়েছিলাম, কারও সঙ্গে একটু হেসে কথা বলেছিলাম, সেগুলোই দেখা যাবে অনেক সওয়াবের মাধ্যম হয়ে গেছে। এটাই রমজান মাসের প্রথম ও সবচেয়ে বড় হাদিয়া। অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তের গুণ অর্জন। এটাই জীবনের জন্য বরকতময় এ মাসের বার্তা।
লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক
দক্ষিণ ভারত ভ্রমণে প্রধান দুই সমস্যার একটি ভাষা। অপরটি খাদ্য। দক্ষিণ ভারতের চার প্রদেশের চার প্রাদেশিক ভাষার একমাত্র বিকল্প ভাষাটি ইংরেজি। সরকারি হিন্দি নয়। স্থানীয়রা হিন্দি বলা তো দূরের কথা, বোঝেও না। কেউ জানলেও বলে না। নিজ নিজ ভাষার প্রতি তাদের গভীর ভালোবাসা দেখে অবাক হয়েছিলাম। অন্ধ্র, কর্ণাটক, কেরালা এবং তামিলনাড়– ঘুরে ভাষা-
সংস্কৃতির বৈচিত্র্যে বিস্মিত হতে হয়। পাশাপাশি প্রদেশ অথচ এক প্রদেশের মানুষ অপর প্রদেশের মানুষের সঙ্গে বিকল্প ইংরেজিতে কথা বলে। ভাষার প্রশ্নে কেউ কাউকে ছাড় দেয় না। দক্ষিণ ভারতে বাংলাভাষী তো পরের কথা, হিন্দিভাষীও পাওয়া দুরূহ ব্যাপার। একমাত্র অন্ধ্র প্রদেশের হায়দ্রাবাদ এবং সিকান্দ্রাবাদে উর্দু-হিন্দির কদাচিৎ প্রচলন দেখা সম্ভব হয়েছিল। চার মিনার চত্বরে স্থানীয় জনৈক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করায়, তিনি বলেছিলেন উর্দু ও হিন্দি ভাষা প্রচলনের মূলে অতীতের শাসক নিজামদের কথা।
ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনামলে হায়দ্রাবাদের শাসনকর্তা ছিলেন নিজামেরা। মুসলিম সম্প্রদায়ের নিজামেরা তেলেগু ভাষার পরিবর্তে উর্দু ভাষায় কথা বলত। সে কারণেই উর্দু-হিন্দি ভাষার চল সেখানে। হায়দ্রাবাদ ছিল ব্রিটিশদের করদরাজ্য। রাজ্যের শাসনক্ষমতা ছিল বংশপরম্পরায় নিজামদের অধীনে। ব্রিটিশদের বার্ষিক কর প্রদান করত নিজামেরা। ব্রিটিশরা নিজামদের এমনিতেই শাসনকর্তারূপে স্বীকৃতি দেয়নি। ব্রিটিশ শাসনের গোড়াপত্তনে স্বদেশি বিশ্বাসঘাতকদের কারণে ব্রিটিশদের ভারতবর্ষ জয় সহজ হয়েছিল। বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পতনের মূলে ছিল নবাবের প্রধান সেনাপতি মীর জাফর আলী খানের বিশ্বাসঘাতকতা। একইভাবে মহিশূরের বীর টিপু সুলতানের পরাজয়ের মূলে ছিল হায়দ্রাবাদের নিজামের চরম বিশ্বাসঘাতকতা। নিজামের বিশ্বাসঘাতকতায় ইংরেজদের পক্ষে টিপু সুলতানকে পরাজিত এবং হত্যা করা সম্ভব হয়েছিল। ওই বিশ্বাসঘাতকতার পুরস্কার স্বরূপ নিজাম পেয়েছিল হায়দ্রাবাদের শাসনভার। স্বাধীন ভারতে করদরাজ্যগুলো বৃহৎ ভারত ইউনিয়নে একীভূত হলেও; হায়দ্রাবাদের শাসক নিজামের অসম্মতিতে সামরিক হস্তক্ষেপে রাজ্যের শাসনক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েছিল নেহরু সরকার। হায়দ্রাবাদে মুসলিম সম্প্রদায় এখনো তেলেগু ভাষার পাশাপাশি উর্দু ভাষায় কথা বলে। উর্দুভাষীদের ক্ষেত্রে হিন্দি বলা সহজ। দুটি ভাষার মধ্যে দূরত্ব তেমন নেই। প্রদেশের প্রাতিষ্ঠানিক ভাষা তেলেগু এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ তেলেগু জাতিসত্তার মানুষ তেলেগু ভাষায়ই কথা বলে থাকে। হিন্দি-উর্দুতে নয়।
ওই চার প্রদেশে ঘুরতে গিয়ে আমার সঙ্গী ব্যতীত অন্য কারও সঙ্গে বাংলা ভাষায় কথা বলার উপায় ছিল না। মাসাধিককালজুড়ে দক্ষিণ ভারত ভ্রমণে ভাষা এবং খাদ্যের অতৃপ্তি প্রতিক্ষণে অনুভব করেছিলাম। পাহাড়ের চূড়ায় বিশাল এলাকাজুড়ে উটি। সমতল থেকে উঁচু পথে উটিতে যেতে হয়। গাড়ি ওপরের পানে ধীরে ধীরে উঠে যায়। যাত্রাপথে উটির হিমশীতল ঠা-া অনুভূত হতে থাকে। উটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিস্ময়কর। উটিতে প্রচুর চা বাগান, একটি চা বাগান দেখতে গিয়ে সাহেবি পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তিকে স্ত্রীর সঙ্গে বাংলায় কথা বলতে শুনে দ্রুত তাদের কাছে ছুটে যাই। পশ্চিমবাংলার ঢঙে বাংলা বলা শুনেই নিশ্চিত হয়েছিলাম তাদের নিবাস পশ্চিমবঙ্গে। আগ বাড়িয়ে ভদ্রলোকের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘দাদা, আপনি বাঙালি নিশ্চয়?’ আমার প্রশ্নটি শুনে ভদ্রলোক মহাবিরক্তিতে উত্তরে বলেছিলেন, ‘কেন অসুবিধা আছে?’ অমন নির্লিপ্ত উত্তর শুনে হতাশায় দমে যাই। ভদ্রলোকও আমাদের এড়িয়ে স্ত্রীকে নিয়ে অন্যদিকে চলে যায়।
উটিতে পাঁচদিন কাটিয়ে চেন্নাই ফিরে আসি। চেন্নাই বাস টার্মিনালে টিকিট কেটে বাসের অপেক্ষায় ছিলাম। সেখানে আকস্মিক দেখা পেলাম স্ত্রীসহ সেই বাঙালি ভদ্রলোকটিকে। দেখামাত্র মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলাম। বাস এলে আমরা বাসে উঠে নির্দিষ্ট আসনে বসে পড়ি। বাঙালি বাবু বাসে ওঠার সময় আমাদের দেখেও না দেখার মতো বাসের ভেতরে আসন নিতে এগিয়ে যায়। কন্ডাক্টর তাদের আসন বাসের শেষ সারিতে দেখিয়ে দেয়। এতে বাঙালি বাবু ক্ষেপে ওঠেন। কাউন্টার থেকে নাকি তাকে বলা হয়েছে পঞ্চম সারিতে আসন। অথচ শেষ সারিতে আসন নিয়ে ক্ষিপ্ত বাঙালি বাবু কন্ডাক্টরের সঙ্গে বচসায় লিপ্ত হয়। কন্ডাক্টর বারবার বলছে টিকিটের গায়ে তামিল ভাষায় লেখা রয়েছে তাদের আসন শেষ সারিতে। উভয় পক্ষের বিবাদে বাসের হেলপার এসে বাঙালি বাবুর শার্টের কলার চেপে ধরে এবং কিল-ঘুষি মারতে উদ্যত। অনবরত তামিল ভাষায় খিস্তি দেয়। বাঙালি বাবু ভারতীয় হলেও, সেখানে প্রবাসী। তাই নিশ্চুপ হয়ে যায়। অসহায়ত্বে নিরুপায়ে আমাদের উদ্দেশে বলে ওঠেন, ‘আপনারা বাঙালি হয়েও চেয়ে চেয়ে তামাশা দেখছেন। আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসার সামান্য কর্তব্যবোধ করছেন না?’ এমনিতে ভদ্রলোকের ওপর আমার রাগ জমা ছিল। সুযোগের মওকা হাতছাড়া করতে চাইনি বলেই এগিয়ে তার সামনে গিয়ে পূর্বের তার বলা কথাটিই তাকে বলি, ‘কেন অসুবিধা আছে?’ আমার প্রতিশোধের বাক্যটি শুনে চুপ হয়ে নতমুখে বাসের শেষ সারি অভিমুখে চলে যায়। স্বামী-স্ত্রী মিলে আমাদের ইঙ্গিত করে নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে হয়তো কিছু বলছিল। কিন্তু আমরা শুনতে পাইনি। বাঙালি বাবুকে জব্দ করার প্রশান্তিতে বেশ হালকা অনুভব করি এবং খোশ মেজাজে বেঙ্গালুরুর পথে বাসযাত্রায় রওনা হই।
বেঙ্গালুরুতে নানা দর্শনীয় স্থান প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা ট্যুরিস্ট বাসে চেপে দেখতে যেতাম। বিন্দাবন গার্ডেন দেখতে গিয়ে আবারও সেই বাঙালি বাবুর সাক্ষাৎ পেয়ে যাই। তাদের দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে দ্রুত সামনে এগিয়ে যাই। কিন্তু হঠাৎ পেছন থেকে নারীকণ্ঠের নির্ভেজাল বাংলায়, ‘দাদা শুনুন।’ শুনে চমকে পেছনে ফিরে দেখি সেই বাঙালি বাবুর স্ত্রী আমাদের নিকটে। কিছু বোঝার আগেই ভদ্রমহিলা আমাদের উদ্দেশে বলেন, ‘দেখুন উটির ঘটনায় আমাদের ভুল হয়েছিল। সে জন্য আমরা দুঃখিত। আমার স্বামীও অনুতপ্ত। ওই দেখুন, লজ্জায় তিনি ওখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সে-ই আমাকে আপনাদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির অবসানে পাঠিয়েছে।’ আমরা দুজন কী করব বুঝতে পারছিলাম না। শেষে দুজনে মিলে উল্টো পথে ভদ্রমহিলার সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা তার স্বামীর কাছে এগিয়ে যাই।
আগের ঘটনার তিক্ততা ভুলে সৌজন্যমূলক সম্পর্ক সৃষ্টিতে খুব বেশি সময় লাগেনি। সহজেই আমরা পরস্পরের নিকটজন হয়ে যাই। বেঙ্গালুরুতে থাকা বাকি পাঁচদিন আমরা নির্মল বন্ধুত্বের বন্ধনে অতিবাহিত করেছিলাম। পাশাপাশি হোটেলে ছিলাম। প্রতিদিন ট্যুরিস্ট বাসে একত্রে ঘুরেছি বেঙ্গালুরুর দর্শনীয় স্থানগুলো। খেয়েছিও একত্রে। দক্ষিণ ভারতের ইডলি, দোসা ভালো না লাগলেও খেতে হয়েছে প্রাণ বাঁচাতে। আমার এবং আমার সঙ্গীর কেবল নয়; বাঙালি বাবু ও তার স্ত্রীরও একই দশা খাবার গ্রহণে। বেঙ্গালুরু থেকে তারা কলকাতার পথে এবং আমরা কেরালা অভিমুখে যাত্রার পূর্বক্ষণ পর্যন্ত নির্মল আন্তরিকতায় একত্রে নিবিড় বন্ধুত্বে দিন কটি কাটিয়েছিলাম। বিদায় বেলায় স্বজনের বিদায়ের মতো বিচ্ছেদের কষ্ট উভয়ে অনুভব করেছি।
দক্ষিণ ভারত ভ্রমণের এই অভিজ্ঞতার প্রাসঙ্গিক দিকটি হচ্ছে জাতীয়তা। নয়তো কেন বাংলায় কথা শোনামাত্র আমি অপরিচিত ব্যক্তিটির কাছে ছুটে গিয়েছিলাম! নিশ্চয় ভাষার টানে। নিজ ভাষায় কথা বলার লোভ সংবরণ করতে না পারার কারণেই ছুটে গিয়েছিলাম। মানুষ সবকিছু পাল্টাতে পারলেও জাতীয়তা পাল্টাতে পারে না। কোনো বাঙালি চীন, জাপান, ইংল্যান্ড, আমেরিকায় যুগ যুগ বসবাসে এবং চীনা, জাপানি, ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী হওয়ার পরও চায়নিজ, জাপানিজ, ইংরেজ, আমেরিকান হতে পারবে না। ধর্ম পরিবর্তন মুহূর্তে সম্ভব, কিন্তু জাতীয়তা পরিবর্তন অসম্ভব। জাতীয়তার ভিত্তিমূলে ভাষা। সেই ভাষাকে পরিত্যাগ করা একমাত্র বোহেমিয়ান ছাড়া কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। পশ্চিমবাংলার সেই ভদ্রলোক ও তার স্ত্রীর সঙ্গে আমাদের আন্তরিক সম্পর্কের মূলেও ছিল ভাষা। একমাত্র ভাষার কারণেই অমন তিক্ততার পরও আমাদের সুসম্পর্ক সম্ভব হয়েছিল। ভাষার টান অধিক অনুভব করা যায় বিদেশ-বিভুঁইতে। নিজ ভাষায় কথা বলতে না পারার অতৃপ্তি-অস্বস্তি তাড়া করবেই। ভিনভাষীদের ভিড়ে নিজ ভাষায় কথা বলার তীব্র তাগিদ অনুভব হবে। যারা প্রবাসী তারাই বোঝে নিজ ভাষায় কথা বলতে না পারার অতৃপ্তি কত বেদনাদায়ক। নিজ ভাষায় কথা বলার পাশাপাশি গান শোনা, বই পড়ার তৃষ্ণা নিবারণ করতে না পারার অতৃপ্তি অনুভূত হবেই। বিদেশে অবস্থানেই বোঝা যায় স্বদেশ কী? স্বদেশ, মাতৃভাষা, পারিবারিক, সামাজিক জীবনের পিছুটান প্রতিক্ষণে তাড়া করবে। প্রবাসী ব্যতীত সেটা অন্যদের কিন্তু বোঝা সহজ নয়।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত
বিবিএস জরিপে বলা হচ্ছে, বর্তমানে দেশে কর্মক্ষম বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৩০ হাজার। ২০১৭ সালে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ। এর মানে ৬ বছরের ব্যবধানে দেশে বেকার কমেছে ৭০ হাজার। তবে সিপিডি জানাচ্ছে, যে উপায় বা যে সংজ্ঞার ওপর ভিত্তি করে বেকার সংখ্যা নিরূপণ করা হয়েছে, সেই সংজ্ঞা অচল এবং অবাস্তব।
আমরা বিশ্বাস করি, বাস্তবতা বিশ্লেষণ করেই বর্তমান তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়েছে। একই সঙ্গে এ কথা বলা যায় যে, উপস্থাপিত তথ্য এবং বেকারত্বের পরিসংখ্যানের মধ্যে কোনো ধরনের গরমিল বা গোঁজামিল নেই। অবশ্য অর্থনীতির বাস্তব চিত্রই প্রকাশ করবে, উপস্থাপিত তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা।
গতকাল দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতায় প্রকাশিত ‘বেকারের আকার কমেছে’ শীর্ষক প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায়, সরকারের বেকারত্বের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ৩০ দিনে বেতন বা নিজস্ব পণ্য উৎপাদনের নিমিত্তে কোনো না কোনো কাজ খুঁজে থাকেন এবং গত সাত দিনে কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকেন, তবে তাকে ‘বেকার’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বিবিএস বলছে, করোনার সময় দেশে বেকারের সংখ্যা বাড়েনি বরং কমেছে। কারণ ওই সময় সরকার বিশেষ অনেক পদক্ষেপ নেওয়ায় এসব বেকারের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। তা ছাড়া কৃষি খাতে অংশগ্রহণ বাড়ায় বেকারের সংখ্যা কমেছে।
সংবাদে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ছয় বছর আগের তুলনায় বেকারত্বের হারও কমেছে। ২০১৭ সালে বেকারত্ব ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। সর্বশেষ জরিপ বলছে, এখন বেকারত্ব কমে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। সপ্তাহে এক ঘণ্টা মজুরির বিনিময়ে কাজ করার সুযোগ না পেলে তাকে বেকার হিসেবে ধরা হয়।
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, এখন দেশে শ্রমশক্তিতে ৭ কোটি ৩৪ লাখ মানুষ আছে। এর মধ্যে কাজে নিয়োজিত ৭ কোটি ৭ লাখ ৮০ হাজার মানুষ। এ শ্রমশক্তির মধ্যে থাকা ৪ কোটি ৭৪ লাখ পুরুষ আর ২ কোটি ৫৯ লাখ নারী। ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৯৯ লাখ ১০ হাজার মানুষ শ্রমশক্তির আওতায় এসেছে অর্থাৎ এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। জরিপে ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের বিবেচনা করা হয়েছে। গত বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশের প্রায় সোয়া লাখ পরিবার থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তথ্য সংগ্রহ করা হয় দ্বৈবচয়ন অর্থাৎ লটারি পদ্ধতিতে বাছাইয়ের মাধ্যমে। এর আগে ২০১৭ সালে শ্রমশক্তি জরিপ করেছে বিবিএস। প্রতি চার থেকে পাঁচ বছরের ব্যবধানে এ জরিপ করা হয়ে থাকে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেকারদের মধ্যে পুরুষ ১৬ লাখ ৯০ হাজার। আর নারী ৯ লাখ ৪০ হাজার। পাঁচ বছর আগের চেয়ে নারীর বেকারত্ব কমেছে। বেড়েছে পুরুষের বেকারত্ব। ২০১৭ সালের জরিপে ১৪ লাখ পুরুষ বেকার ছিল। ওই সময় ১৩ লাখ নারী বেকার ছিল। জরিপ বলছে, মোট সাত কোটি কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তির মধ্যে কৃষি খাতে নিয়োজিত রয়েছে ৩ কোটি ২২ লাখ, শিল্প খাতে ১ কোটি ২০ লাখ এবং সেবা খাতে ২ কোটি ৬৬ লাখ।
খটকা লাগে তখনই, যখন স্বয়ং শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব এহসান-ই-এলাহী বলেন, ‘আমি তো ভেবেছিলাম দেশে শ্রমিক ছয় কোটি, এখন দেখি সাত কোটির বেশি। এটি বড় সুসংবাদ। আমরা আগামী বছরের মধ্যে তিন লাখ শ্রমিকের ডাটাবেজ করব। কারণ আমাদের কাছে সঠিক কোনো ডাটাবেজ নেই।’
এখানেই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। সঠিক ডাটাবেজ না থাকলে, উত্থাপিত তথ্যের মধ্যে যে কোনো গরমিল নেই সেই প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? আর যদি প্রদানকৃত সব তথ্য সঠিক হয়, তাহলে অবশ্যই ডাটাবেজ তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই ধন্যবাদের যোগ্য। একই সঙ্গে প্রত্যাশা থাকল, কর্মসংস্থানের সুযোগ আরও বাড়বে কমবে, বেকারের আকার।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।
গোটা দেশ এখন দুই ভাগে বিভক্ত। একদল সাকিব আল হাসানকে শূলে চড়াচ্ছে, অন্যরা তামিম ইকবালকে। অথচ জাতীয় ক্রিকেট দল ভারতে গেছে বিশ্বকাপ খেলতে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে খোঁচাখুঁচি। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ খেলতে নেমেছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে। যে উদ্বোধনী জুটি নিয়ে এত দ্বিধা আর সংকোচ, যে কারণে তামিম না থাকায় এত হাহাকার, সেখানেই কিনা বাজিমাত করে পুরো জাতিকে অন্য এক বার্তা দিলেন তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস।
বিশ্বকাপের দলে যে তামিম ইকবাল থাকছেন না, সেটা জানা গিয়েছিল আগের দিনেই। তবু ক্রিকেট ভক্তদের মনের এক কোণে ক্ষীণ আশা ছিল। ওপেনারদের টানা ব্যর্থতার কথা বিবেচনায় হলেও এই ব্যাটসম্যান থাকবেন বলে ছিল তাদের। কিন্তু সেই আশার গুড়ে বালি। তাকে দলে না রাখায় অবশ্য রাস্তায় জনতার ঢল নামেনি, রাজপথে হয়নি কোনো সভা-সমাবেশ। তবে নতুন যুগের দেয়ালে দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদী নিন্দার বাণী। হাল জামানায় যাকে ‘টাইমলাইন’ বলে সম্বোধন করা হয়।
সেই সব প্রতিবাদী স্ট্যাটাসও দুই ভাগে বিভক্ত। কেউ সাকিব আল হাসানের পক্ষে, কেউবা তামিম ইকবালের। একদল পরিসংখ্যান-পর্যালোচনা দিয়ে বোঝাতে ব্যস্ত যে এই যুগে তামিমের কৌশল ‘ওল্ড স্কুল’। ওসব এখন আর চলে না। অন্য দল ১৭ বছরের ইতিহাস আর আবেগ নিয়ে হাজির। তাদের কাছেও আছে পরিসংখ্যান। সেটা গত কয়েক বছরের তামিমের ওপেনার সঙ্গীদের একটা তালিকা। তারাই শূলে চড়াচ্ছেন সাকিব-হাথুরু থেকে শুরু করে বিসিবির শীর্ষ কর্তাদের।
বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে সাকিব ক্রীড়াভিত্তিক একটি টিভি চ্যানেলকে দিয়ে গেছেন সাক্ষাৎকার। সেখানে তিনি সরাসরি তামিমের সমালোচনা করেছেন। এই ওপেনার যে দলের প্রয়োজনে পজিশন পরিবর্তনে রাজি হতে চান না, সেই মানসিকতা বাচ্চাদের মতো বলে সমালোচনা করেছেন টাইগার অধিনায়ক। এমনকি তার স্পোর্টসম্যানশিপ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তার আগে তামিম নিজে একটা ভিডিও বার্তায় বলেছেন তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা। মাশারফী বিন মোর্ত্তজাও ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। তাতে করে ক্রিকেটাঙ্গনে এখন যেন ভিডিও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ক্রিকেট নিয়ে জাতির অবস্থা যখন এমন, তখন ভারতের গোয়াহাটিতে বাংলাদেশের ক্রিকেট দল। আসাম রাজ্যের রাজধানীর বরষাপাড়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম উদ্বোধনী ম্যাচ খেলতে নেমেছিল তারা। ছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, নাজমুল হোসেন শান্তও ছিলেন না থাকার মতো করেই। প্রথম গা গরমের ম্যাচে তাই নেতৃত্ব দেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
টসভাগ্যে মিরাজের পরাজয়ের পর বল হাতে নামে বাংলাদেশ। টানা ৪০ ওভার টাইগারদের বোলারদের যেন শাসন করছিলেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। ঐ সময় পর্যন্ত ৫ উইকেট হারালেও তারা করে ২০২ রান। তারপরই যেন ঘুরে দাঁড়ান টাইগার বোলাররা। শেষ ১০ ওভারের ৫ বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় লঙ্কানরা। ২৬৩ রানের বেশি তারা করতে পারেনি।
২৬৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নামা বাংলাদেশের হালটা যে সুখকর হবে না, মুহূর্তেই ধসে পড়বে ব্যাটিং লাইনআপ। সিনিয়রদের কাউকে এসে হাল ধরে নিয়ে টেনে নিয়ে যেতে হবে দলকে। খাঁদের কিনারা থেকে টেনে তুলে হয় জয়, নয়তো সম্মানজনক হার! এমনটাই ছিল অনুমিত। আমরা যে এতেই অভ্যস্ত।
কিন্তু তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস সব অনুমান ভুল প্রমাণ করে দেন। যে ওপেনিং জুটি বাংলাদেশকে ভোগাচ্ছিল, যে সমস্যার কারণে চোট প্রবণ তামিম ইকবালকেও সবাই চাইছিলেন দলে। সেটাই কিনা তারা প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে ভুলিয়ে দিলেন! উদ্বোধনীতে তারা গড়েন ১৩১ রানের জুটি। তাতে ১৩ ম্যাচ পর বাংলাদেশ ওপেনিংয়ে শতরানের জুটি দেখতে পেয়েছে। হোক সেটা প্রস্তুতি ম্যাচ, তবুও তো লড়াই!
সবচেয়ে বড় স্বস্তি লিটন-তানজিদের রানে ফেরা। এশিয়া কাপের আগে জ্বরে ভুগছিলেন লিটন। সেই জ্বরের ধকল কাটিয়ে উঠতে তার সময় লেগেছে। মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে যেতে হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর চোটের কারণে। কিন্তু নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। এই টুর্নামেন্টে ২ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তানজিদ। কিন্তু তিনিও প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড সিরিজেও।
তাই বিশ্বকাপের দলে তামিম ইকবালকে বাদ দেওয়াতে ঝড় উঠেছিল। সেই ঝড় চলমান ছিল আজ দুপুর অবধি। অনেকেই ভেবে রেখেছিলেন, এই জুটি ব্যর্থ হবে। যা ধারাবাহিক থাকবে টুর্নামেন্টের শুরুতেও। তারপর বিশ্বকাপের মাঝপথে আচমকা ডাক পেয়ে তামিম ইকবাল উড়াল দেবেন ভারতে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলে। সেবার জাভেদ মিয়াঁদাদকে ছাড়াই তারা বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল। কিন্তু ব্যাটারদের ব্যর্থতার কারণে তাকে মাঝপথে উড়িয়ে নেওয়া হয়েছিল, এবং বিশ্বকাপ জিতেছিল।
এমন স্বপ্ন বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটভক্তরাও দেখতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তানজিদ তামিম আর লিটনের জুটি বদলে দিয়েছে সব হিসেব-নিকেশ। তামিমের ফেরার প্রত্যাশায় যারা গুনছিলেন প্রহর, তাদের মাথায় যেন এবার আকাশ ভেঙে পড়েছে। কারণ তারা যে রানে ফিরেছেন। যুববিশ্বকাপজয়ী তামিম খেলেছেন ৮৪ রানের একটি ইনিংস। ৮৮ বলে যা সাজানো ছিল ১০টি চার ও ২টি ছক্কায়। অন্যপ্রান্তে লিটন ৫৬ বলে ১০ চারে খেলেছেন ৬১ রানের ইনিংস। শুধু কি তাই! এদিন তিনে নেমেছিলেন মিরাজ। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৬৭ রান। ৬৪ বলের হার না মানা ইনিংসটি সাজানো ছিল ৫ চার ও ২ ছক্কায়।
পঞ্চপান্ডবের পরের প্রজন্ম তো তারাই। যাদের ব্যাটে শুক্রবার বরষাপাড়ায় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তাদের রানে ফেরা যেন নতুন দিনের বার্তা দেয়। যে বার্তা আগামীর পথচলার। যেখানে পুরনোকে আকড়ে ধরে রাখার প্রবণতা ক্ষীণ হয়ে আসার বার্তা। সহজ কথায়, তরুণদের রানে ফেরাতে মিয়াঁদাদ হওয়ার সুযোগ আর হচ্ছে না তামিম ইকবালের।
মূল লড়াইয়ের আগে গা গরমের খেলা। সেখানে ব্যাটসম্যানরা ছিলেন আগ্রাসী। তাতে পাকিস্তান পায় ৩৪৫ রানের বড় সংগ্রহ। তারপরও জিততে পারল না। নিউজিল্যান্ড জয় তুলে নিয়েছে ৩৮ বল হাতে রেখেই।
পাকিস্তানের ব্যাটারদের মধ্যে সেঞ্চুরি পেয়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ৯৪ বলে ১০৩ রান করে অবসর নেন তিনি। এছাড়া বাবর আজম ৮০ ও সৌদ শাকিল ৭৫ রান সংগ্রহ করেছেন।
পাকিস্তানের দেয়া ৩৪৬ রানের জবাব দিতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে নিউজিল্যান্ড।
কিউই ব্যাটারদের মধ্যে ওপেনিংয়ে নামা রাচিন রবীন্দ্র ৭২ বলে ৯৭ রান সংগ্রহ করে দলের জয়ে বড় অবদান রাখেন। এছাড়া দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা কেন উইলিয়ামসন ৫৪, ড্যারেল মিচেল ৫৯ আর মার্ক চাপম্যান ৬৫ রান করে দলকে ৫ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।