
মেক্সিকোর জগদ্বিখ্যাত কবি, লেখক ও কূটনীতিবিদ অক্তাভিও পাজ ১৯১৪ সালের ৩১ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ১৯৮১ সালে ‘মিগুয়েল ডি সার্ভেন্তেস’ পুরস্কার, ১৯৮২ সালে ‘নিউয়েস্টাড আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কার’ এবং ১৯৯০ সালে সাহিত্যে ‘নোবেল পুরস্কার’ লাভ করেন। অক্তাভিও পাজ ছিলেন বিংশ শতাব্দীর লাতিন আমেরিকান সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা কবি ও লেখক। মেক্সিকোতে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সময় পাজের জন্ম। যুদ্ধের বাস্তবতা থেকে আগলে রেখে পাজকে বড় করে তুলেছিলেন তার মা জোসেফিনা লোজানা, পিতামহ ও খালা। তার মা ছিলেন স্পেনীয় অভিবাসী, যিনি জীবনে ধর্মকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছিলেন। শিশু পাজের খালা সারাক্ষণ সঙ্গ দিয়ে, স্নেহ দিয়ে তাকে বড় করেছিলেন। সাহিত্যের প্রতি অগাধ অনুরাগী এই খালার কাছ থেকে পাজ শৈশবেই ভিক্টর হুগো ও রুশোর মতো সাহিত্যিকদের লেখার সঙ্গে পরিচিত হন। পাজের বাবা ছিলেন একজন আইনজীবী ও সাংবাদিক। পিতামহ ছিলেন একজন আদর্শনিষ্ঠ বিপ্লবী ও প্রভাবশালী লেখক, যিনি ফরাসিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। পাজ বাল্যকালে তার পিতামহের লেখা দ্বারাই অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। ১৯৩৭ সালে পাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। কবিতায় নিজেকে সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োজিত করাকেই জীবনের ব্রত হিসেবে বেছে নেন। ১৯৫৭ সালে প্রকাশিত হয় তার বিখ্যাত কবিতা ‘পিয়েরদা দ্য সান’ বা বাংলায় ‘সূর্য পাথর’। একই বছর পাজের প্রথম কবিতা সংকলন প্রকাশিত হয়। ১৯৬২ সালে মেক্সিকোর রাষ্ট্রদূত হয়ে তিনি ভারতে আসেন। ১৯৬৮ সালে মেক্সিকোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ওপর সরকারি বাহিনীর গুলি চালানোর প্রতিবাদে রাষ্ট্রদূতের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর হার্ভার্ডসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন এবং শিল্পকলা ও ইতিহাস বিষয়ে কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন। ১৯৯৮ সালের ১৯ এপ্রিল ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন কালজয়ী সাহিত্যিক অক্তাভিও পাজ।
বাবা কাহিনি
আমার বাবা ১৯৪৬ সালের ম্যাট্রিকুলেটদের একজন (আমার বাবা আমার হাইপ্রোফাইল বন্ধুদের বাবাদের মতো কোনোকালেও ফার্স্ট ক্লাস বা ফার্স্ট ডিভিশন পাননি)। ১৯৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি ঘটনাচক্রে তিনি ঢাকায় ছিলেন, থাকার কথা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের চাকলালায় তার বিমানবাহিনীর কর্মক্ষেত্রে। সন্ধ্যার দিকে তার খুব ইচ্ছা হলো উত্তপ্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভেতরটাতে কী হচ্ছে একটু দেখে আসবেন (আমার বাবা কসি¥নকালেও ভাষাসৈনিকদের একজন ছিলেন না এবং তাকে ঠেলেঠুলে ভাষাসৈনিক বানানোর কোনো গোপন বা প্রকাশ্য ইচ্ছাও আমার নেই)। চারদিকে তখন ঢিল খাওয়া এত ক্ষুব্ধ পুলিশ যে, ডাক্তারদেরও ভেতরে প্রবেশ করতে অসুবিধা হচ্ছিল।
সাইকেল আরোহী আমার বাবা তার সাইকেলসহ ঢোকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেন এবং পুলিশের ধমক খেলেন। কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে দলছুট একজন কনস্টেবলকে সালাম দিয়ে বললেন, স্যার, আমার একটু হাসপাতলের ভেতরে যাওয়া দরকার যদি একটু সুযোগ করে দিতেন স্যার, কৃতজ্ঞ থাকতাম।
একই বাক্যে দুবার স্যার সম্মোধন শুনে কনস্টেবল যথেষ্ট দয়া পরবশ হয়ে তাকে বললেন, সাইকেল নিয়ে যাওয়া যাবে না।
পরক্ষণেই আমার বাবা বললেন, স্যার, আপনি যদি আমার সাইকেলটা একটু দেখে রাখতেন...।
তার স্যার বলার আন্তরিকতা কনস্টেবল সাহেবকে মুগ্ধ করে থাকতে পারে। তিনি একটি জায়গা দেখিয়ে বললেন, এখানে রাখো, পনেরো মিনিটের মধ্যে যা যা দেখার দেখে ফিরে আসবে।
জি স্যার, অবশ্যই, বলে আমার বাবা তারই সঙ্গে গেট পর্যন্ত আসেন এবং ভেতরেও ঢুকে যান। তার পরিচিত দু-একজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে, কিছু দেখার কৌতূহল নিবৃত্ত করে আধা ঘণ্টা পর বেরিয়ে এসে আবারও তাকে স্যার ডেকে ধন্যবাদ জানিয়ে সাইকেল নিয়ে রাত্রিনিবাসে ফিরে এলেন।
আমি একাধিকবার তার কাছে এই এপিসোডটি শুনেছি এবং প্রতিবারই তিনি উপসংহারে বলেছেন : স্যার ডেকে পুলিশকে দিয়ে আমার সাইকেলটি আধা ঘণ্টা পাহারাও দেওয়াতে পেরেছি।
তিনি যে স্যার ডেকে ভেতরে যেতে পেরেছেন তার কাছে এর চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে নিজের সাইকেলের নিরাপত্তায় পুলিশ প্রহরা নিশ্চিত করতে পারা।
কারও পছন্দ হোক বা না হোক, উপনিবেশবাদ তাদের কাউকে খোঁচা দিক বা না দিক আমি ব্যক্তিজীবনে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত বাবার এই শিক্ষাটাকে গ্রহণ করেছি। কৌশল কিংবা চাতুর্য হিসেবে নয়, অপ্রত্যাশিতভাবেই আমি অনেককে স্যার বলি, বন্ধুদের কাউকেও বলি এবং বলে কিছুটা সম্মান ফিরেও পাই বলে আমার বিশ্বাস।
নিজের কাহিনি
‘আমলাতন্ত্রের কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘লাল ফিতের দৌরাত্ম্য বন্ধ কর বন্ধ কর’ এসব লিখতে লিখতে এ চাকরি সে চাকরি করতে করতে বাবাকেও সন্তুষ্ট রাখতে ১৯৮২ সালের নিয়মিত বিসিএস পরীক্ষায় বসলাম এবং শুরুতে বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ার কারণে সম্ভবত গণিত ও ইংরেজির পুঁজির জোরে পাসও করে গেলাম। প্রথম পদায়ন বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। হায়ারার্কি বা পদসোপানের বিষয়টি একটু একটু করে টের পেতে শুরু করলাম। একেবারে প্রথম দিনই অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোমেনুল হককে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আচ্ছা ভাই, এই অফিসে কাকে কাকে স্যার বলতে হবে?’
আমার সৌভাগ্য আমার চাকরি জীবনে প্রথম কথা বলা বস মোমেনুল হক (১৯৬৯-এর ইপিসিএস) তখনই এ প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আমলাতন্ত্র নিয়ে কিছু রসিকতা করলেন, টেক্সট বইয়ের বাইরে কিছু জানি কিনা বোঝার চেষ্টা করলেন এবং বুঝলেন আমি টেক্সট বইয়ের তেমন কিছুই জানি না, সামান্য যা জানি সবই টেক্সট বইবহির্ভূত আমার আমলে সেগুলোকে বলা হতো আউট বই কিংবা কাজে বই।
তাকে আমার প্রশ্নের জবাবে ফিরিয়ে আনি। তিনি বললেন, ডিসি, এডিসি জেনারেল, এডিসি রেভিনিউ, এডিসি ভূমি হুকুমদখল এবং এডিএম (শামসুল হক)-কে স্যার বলবে।
আমি দেখলাম যার সঙ্গে কথা বলছি তিনিও এডিএম, তাকেই বা কেন বাদ দেব। বললামও, তাহলে ভাই আপনাকেও স্যার বলব।
তিনি বললেন, ইচ্ছা হলে বলো। ইচ্ছা না হলে থাক।
আরও বললেন, সিনিয়রদের মধ্যে যাদের তুমি একটু বেশি পছন্দ করবে তাদের স্যার কম বললেও চলবে, কিন্তু যারা কম পছন্দের হবেন তাদের একটু বেশি বেশি করে বলাই হবে উত্তম কাজ।
স্যার শুনে যেমন তৃপ্তি (!) বলেও তো তৃপ্তি আছে। আমার চাকরিজীবনের (কিংবা আমলাজীবনের) শুরুতে যাকে স্যার বলে তৃপ্তি পেয়েছি, তিনি মোমেনুল হক। একটি প্রতিষ্ঠানের বড়কর্তা থাকা অবস্থায় পদব্রজে রমনা পার্কের ভেতর দিয়ে বাড়ি ফেরার সময় ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে যা আছে সব খোয়াতে বাধ্য হন। ঘটানাটি সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছিল। ছিনতাইকারীরা তার ১৪৫ টাকার সবটাই নিয়ে যায়।
১৯৮৮ সালের একেবারে শুরুতে ভূমি সচিব এম. মোকাম্মেল হক আমাকে মাঠ থেকে তুলে ভূমি মন্ত্রণালয়ে নিয়ে আসেন। এটাই আমার সচিবালয় চাকরির সূচনা, সহকারী সচিব হিসেবে। মেজাজে আবেগময় দোদুল্যমানতা ছিল এমন একজন বিদ্বান যুগ্ম সচিব ডক্টর কামাল সিদ্দিকীকে আমাদের জ্যেষ্ঠ একজন সহকর্মী আসহাবুর রহমান বলতেন, কামাল ভাই। আমি ততদিনে সিনিয়রদের স্যার বলতে বেশ অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। কিন্তু ডক্টর সিদ্দিকী হুকুম করলেন এখন থেকে তুমিও আমাকে ভাই বলবে, কামাল ভাই। এটা আমার আদেশ। এটা তোমার জন্য স্পেশাল অফার। কিন্তু আদেশটা পালনের উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছি।
আবার সর্বজন শ্রদ্ধেয় স্যার ছিলেন বাংলাদেশে প্রথম মন্ত্রিসভায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ডক্টর মফিজ চৌধুরী, তিনি সবার স্যার, কিন্তু আমার হয়ে রইলেন ভাই। আদমসূত্র ছাড়া তার সঙ্গে আমার আত্মীয়তার কোনো সম্পর্ক নেই। তাকে মফিজ ভাই বলছি শুনে আমার বাবাও অবাক হলেন এবং আমার অপরাধটা যে অমার্জনীয় তা মনে করিয়ে দিলেন। আমি যখন ডক্টর মফিজ চৌধুরীকে স্যার বলতে চেষ্টা করলাম, তিনি বললেন, ফাজলামি শুরু করলে।
তার সঙ্গে আমার সম্পর্কসূত্র সাহিত্যের, হ্যামলেটের, রবীন্দ্রনাথের। সুতরাং তিনি আবার বাবার স্যার হলেও আমার ভাই, মফিজ ভাই।
সে আমলে নারীদের স্যার বলার রেওয়াজটা শুরুই হয়নি। বগুড়া কালেক্টরেটের দোতলায় আমি বসি। দুপুরের পর পঞ্চাশোর্ধ্ব একজন ভদ্রমহিলা এলেন, তার কয়েকটা কাগজ এবং ছবি প্রত্যয়ন করে দিতে হবে।
ছবিটা উল্টে দেখি নাম লেখা রোমেনা আফাজ। আমি নাম দেখেই দাঁড়িয়ে যাই। আমি অনেকটা তোতলাতে তোতলাতে বলি, আমি একজন রোমেনা আফাজকে জানি, দস্যু বনহুরের লেখক। আপনি তাহলে আরেকজন।
তিনি বললেন, না, একজনই রোমেনা আফাজ, আমিই দস্যু বনহুর সিরিজ লিখেছি। আমার ক্লাস সেভেন জীবনে রোমেনা আফাজই ছিলেন আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় লেখক, আমি কীভাবে তাকে সম্বোধন করব, কীভাবে সম্মান জানাব, অস্থির হয়ে উঠলাম। ‘স্যার’ ছাড়া আর সম্মানসূচক যত শব্দ আমার মনে আসে সবই তার জন্য নিবেদন করেছি। ‘স্যার’ বলিনি কারণ, সে সময় কোনো নারী স্যার শুনলে ভাবতেন ‘বিটলামি’ করছি। আমার উচ্ছ্বাস তাকে বিব্রত করে থাকতে পারে তিনি ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলেন এবং বললেন, এই কালেক্টরেটে কত এসেছি, কিন্তু এত সম্মান কখনো পাইনি।
আমার আরও আরও স্যার
১৯৮৯-এর অক্টোবরে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার ইউএনও পদে যোগ দিই। আমাকে সংবর্ধিত করতেই কিনা যোগ দেওয়ার সঙ্গে ছুটতে হলো ডাকাতের গুলিতে নিহত পাঁচজনকে দেখতে। মৃত্যুশয্যায় আরও কয়েকজন। খানিকটা দেহ গাছের ওপর, খানিকটা ঘরের চালে এমন একটি মরদেহও নামাতে হলো। তার অল্পদিন আগে কুমিল্লায় নিদারাবাদের ছয় খুনের ঘটনা বেশ আলোচিত হয়েছে। পরদিনই আহতদের একজনের মৃত্যু হলে ঢাকায় পত্রিকায় ছাপা হয়েছে গফরগাঁও নিদারাবাদের সঙ্গে ড্র করেছে।
বিভিন্ন কারণে গফরগাঁও প্রশাসনে তখন অস্থিরতা চলছে ইউএনওবিরোধী হয়ে উঠেছেন উপজেলা হাসপাতালের সব ডাক্তার; প্রকৃচি (প্রকৌশলী কৃষিবিদ ও চিকিৎসা) সমাজের আন্দোলনও চলছে। পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে, সংসদ সদস্য উপজেলার কারও কারও মতে, উপজেলাটাকে গিলে খাচ্ছেন। এ রকম একটি অস্থির পরিবেশে একটি সভাতে আমি গফরগাঁও সরকারি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আমীর আলীকে সম্বোধন করলাম স্যার; খায়রুল্লাহ গার্লস স্কুলের হেডমিস্ট্রেস মার্জিয়া বেগমকে বললাম ম্যাডাম; গফরগাঁও কলেজের প্রিন্সিপাল মোকাররম হোসেন তো অবশ্যই স্যার আমার এক-দুজন সহকর্মীর মনে হলো আমি প্রশাসনের ডিসিপ্লিন ভেঙে ফেলছি। অভিযোগটা আরও গুরুতর হলো যখন আমি একজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে বললাম, স্যার। প্রশাসন বোধ হয় তখন পুরোটাই ভেঙেই পড়ল! সেই ইউনিয়নের নাম রাওনা এবং চেয়ারম্যান হামিদুল্লাহ মাস্টার। আমার ‘বস’ ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক শফিউল আলম ফিসফিস করে বললেন, কী শুনলাম, তুমি নাকি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকেও স্যার বলতে শুরু করেছ।
একটু হালকা চালে বললাম, স্যার, গ্রাসরুটস লেভেল থেকেও এগোতে এগোতে মন্ত্রী হওয়ার নজির আছে। মন্ত্রীকে সবাই স্যার বলেন। কে কখন মন্ত্রী হয়ে যান বলা তো যায় না, আমি না হয় একটু আগে থেকেই স্যার বলা শুরু করলাম।
গফরগাঁও স্কুলটা সরকারি হাইস্কুল, আমি ঢাকার একটি সরকারি হাইস্কুলে পড়তাম গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল। সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের আন্তঃস্কুল বদলি হয়েই থাকে। আমি হয়তো আমীর আলীকে সরাসরি আমার শিক্ষক হিসেবেই ল্যাবরেটরি স্কুলে পেতে পারতাম। কাজেই তাকে তো আমার স্যার বলতেই হবে, না বলাটাই হবে ঔদ্ধত্ব। বদলিসূত্রে আমি যখন গফরগাঁও ছেড়ে আসি, আমীর আলী স্যার আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, শিক্ষকতা জীবনের শেষ পর্বে এসে সম্মানটা পেয়েছি। ১৯৯৯-এর এপ্রিলে তার-আমার শেষ দেখা।
মার্জিয়া বেগমের ‘সফিসটিকেশন’ চোখে পড়ার মতো। আদর্শ স্কুলশিক্ষক, আমি সম্বোধন করতাম ম্যাডাম। সন্তানদের বাধা উপেক্ষা করে হামিদুল্লাহ মাস্টার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। অন্তত তার বিরুদ্ধে চাল-গম তছরুপের কাহিনি আমি শুনিনি। মাস্টার হিসেবে, ভালো মানুষ হিসেবে, ভালো জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি অবশ্যই আমার স্যার।
আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ কবি হিসেবে বড়, আমলা হিসেবেও। চাকরিসূত্রে তিনি কেবল আমার নন, আমার বসদের যারা বস তাদেরও স্যার। ১৯৮২ সালে সন্ধানী প্রকাশনীর কর্ণধার গাজী শাহাবুদ্দিন আহমেদ আরও কটি বইয়ের সঙ্গে আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর বইও দিলেন, উদ্দেশ্য বাংলাদেশ অবজারভার পত্রিকায় রিভিও লেখানো। আমি তার সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে তখনো পরিচিত হইনি। ১৯৯২ সালে তার একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা যখন তার সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমিও ফিসফিস করে বললাম, স্যার, আমি অবজারভারে আপনার বই নিয়ে লিখেছিলাম।
তিনি বললেন, আমি তো তোমাকেই খুঁজছি। বলেই আমার কাছে তার মুখ এনে আস্তে করে বললেন, তুমি আমাকে স্যার বলবে না, সেন্টু ভাই বলবে। তারপরও দেখা হয়েছে, আমি সেন্টু ভাই বলতে পারিনি, স্যারই বলেছি।
লেখক: সরকারের সাবেক কর্মকর্তা ও কলামিস্ট
পবিত্র রমজান মাস যেহেতু প্রতি বছরই আসে, সেজন্য এটা অনেকের জন্য পরীক্ষার বিষয় হয়ে যায়। কারণ যে কাজ বারবার করা হয় তাতে গভীর মনোযোগ ও একনিষ্ঠতা ধরে রাখা এবং ওই কাজের মাধ্যমে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা এবং সওয়াবের প্রত্যাশা অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন হয়ে পড়ে। তখন অনেকেই এ জাতীয় কাজ করেন অভ্যাসবশত। ফলে ওই কাজের গুরুত্ব ও মর্যাদা আর বজায় থাকে না। তার বিনিময়ে আল্লাহতায়ালার যে ওয়াদা সেটা স্মরণ থাকে না। কিংবা সেই ওয়াদার ওপর বিশ্বাস যথাযথভাবে মনে থাকে না। কারণ কোনো কাজ অভ্যাসজাত হয়ে গেলে তা অনেকটা অভ্যাসের তাগিদেই করা হয়। তাতে অন্য কোনো বিষয় খেয়াল করা হয় না। অথচ স্পষ্টভাবে হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ইমান (বিশ্বাস) ও ইহতিসাব (একনিষ্ঠতা)-এর সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে, তার অতীত গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ -সহিহ বোখারি : ৩৮
বর্ণিত হাদিসে ইমান তথা বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে সওয়াবের প্রত্যাশা নিয়ে রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে। এখান থেকে খুব খেয়াল করে শিক্ষাগ্রহণ এবং পুরো রমজান মাস সেই শিক্ষা মনে রাখা।
একটু চিন্তা করা দরকার, মানুষ কেন রোজা রাখে? কেন সে পানাহার ত্যাগ করে? প্রচ- গরমেও সে পানি পান করে না! তীব্র ক্ষুধায়ও খাবার খায় না। অথচ সবকিছুর ব্যবস্থা আছে। চাইলেই সে যে কোনো কিছু গ্রহণ করতে পারে। এমনিভাবে সে আরও অনেক ধরনের কষ্ট করে। অনেক কিছু সয়ে নেয়। এসব কেন করে?
উত্তর পরিষ্কার। আল্লাহতায়ালার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে। তার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে। তার কাছ থেকে বিনিময় ও সওয়াবের আশায়।
যারা মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞান এবং মানবীয় দুর্বলতার খবর রাখেন, তারা জানেন- যখন কোনো বিষয় ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয় এবং নির্ধারিত রুটিনের আওতাভুক্ত হয়, তখন সেটা অনেক সময়ই উদাসীনভাবে পালন করা হয় এবং অবচেতন মনে আদায় করা হয়। রোজা রাখতে হবে, তাই রাখা। রোজা না রাখলে মানুষ মন্দ ভাববে, ঘরের লোক খারাপ বলবে। মানুষের কাছে লজ্জা পেতে হবে, সমালোচনা শুনতে হবে। তাই সে রোজা পালন করে।
আবার অনেকে আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তেই রোজা রাখে কিন্তু তাদের হৃদয় সবসময় জাগ্রত থাকে না। রোজার প্রকৃত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তাদের স্মরণ থাকে না। অথচ আমলের হিসাব নেওয়া, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি মনোযোগী হওয়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবুও মানুষ সেদিকে মনোযোগী হয় না। খেয়াল করে না- কেন সে রোজা রাখছে? কেন সে পানাহার ত্যাগ করছে? চাহিদা ও চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা থাকার পরও সে কেন তা থেকে বিরত থাকছে? রোজাপালনের ক্ষেত্রে এমন উদাসীনতা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
রোজার যেসব ফজিলত এবং রোজার মাধ্যমে যেসব বিষয় অর্জনের কথা বলা হয়েছে, তার একটি হলো- তাকওয়া তথা আল্লাহভীতি। সরাসরি কোরআন মাজিদে এই ফজিলতের কথা এসেছে। আর হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রোজার অসিলায় কামাই-রোজগারে বরকত হয়। মানব হৃদয় আলোকিত হয়। গোনাহ থেকে বাঁচার শক্তি অর্জিত হয়। আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সহজ হয়ে যায়। সর্বোপরি তাতে আল্লাহর নির্দেশ পালন ও নবী কারিম (সা.)-এর অনুসরণ করা হয়।
আমরা পানাহারে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও যখন শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তা পরিত্যাগ করি, তখন প্রতিটি মুহূর্তে সওয়াব হতে থাকে, আমাদের মর্যাদা উঁচু হতে থাকে। কারণ এই ত্যাগ আল্লাহর কাছে খুবই দামি, তাতে আল্লাহ খুব খুশি হন। বান্দা যখন তার হুকুম পালনার্থে এবং তাকে খুশি করার উদ্দেশ্যে ক্ষুৎপিপাসার কষ্ট সহ্য করছে- এর মর্যাদা তার কাছে অনেক বেশি।
কিন্তু আফসোসের কথা হলো- অধিকাংশ রোজাদারেরই এসব কথা মনে থাকে না। রোজাদারের মর্যাদা, তার জন্য আল্লাহ কী পুরস্কার নির্ধারণ করেছেন, আল্লাহ তাকে কত ভালোবাসেন ইত্যাদি বিষয়ের দিকে মনোযোগ নিবদ্ধ হয় না। অথচ সেটা খুবই জরুরি। আল্লাহর হুকুমের কথা মনে করা, তার সন্তুষ্টি লাভের নিয়ত স্মরণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যখন একটা অনুষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে শুরু হয়, নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় এবং সবাই তাতে অংশগ্রহণ করে তখন কে কী নিয়তে অংশগ্রহণ করে সেটা স্পষ্ট থাকা জরুরি। প্রত্যেকের মূল্যায়ন হবে তার নিয়তের ভিত্তিতে।
রমজানের রোজার ক্ষেত্রে দেখা যায়, যেন একধরনের বাতাস আসে এবং সেইসঙ্গে একটি মৌসুম আসে। তাতে চারপাশে নতুন আবহ ছড়িয়ে পড়ে। সবাই ওই আবহে প্রভাবিত হয় এবং সে অনুযায়ী আমল শুরু করে। অথচ আসল উদ্দেশ্য ও নিয়তের কথা সবার মনে থাকে না।
জীবনের সব কাজে এই ‘ইমান (বিশ্বাস) ও ইহতিসাব (একনিষ্ঠতা)’ যদি আমাদের অর্জন হয়ে যায়, তাহলে পুরো জীবন আল্লাহর রহমত ও করুণার বারিধারায় স্নাত হবে। এর প্রকৃত ফায়দা দেখা যাবে কেয়ামতের দিন। যখন সবাই আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে, তখন বুঝে আসবে ‘ইমান ও ইহতিসাব’-এর মূল্য। ছোট ছোট এই আমলগুলোও দেখা যাবে- কত বড় আকারে সামনে আসছে! কারও কোনো ছোট্ট একটি কাজ করে দিয়েছিলাম, কারও সঙ্গে একটু হেসে কথা বলেছিলাম, সেগুলোই দেখা যাবে অনেক সওয়াবের মাধ্যম হয়ে গেছে। এটাই রমজান মাসের প্রথম ও সবচেয়ে বড় হাদিয়া। অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তের গুণ অর্জন। এটাই জীবনের জন্য বরকতময় এ মাসের বার্তা।
লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক
দক্ষিণ ভারত ভ্রমণে প্রধান দুই সমস্যার একটি ভাষা। অপরটি খাদ্য। দক্ষিণ ভারতের চার প্রদেশের চার প্রাদেশিক ভাষার একমাত্র বিকল্প ভাষাটি ইংরেজি। সরকারি হিন্দি নয়। স্থানীয়রা হিন্দি বলা তো দূরের কথা, বোঝেও না। কেউ জানলেও বলে না। নিজ নিজ ভাষার প্রতি তাদের গভীর ভালোবাসা দেখে অবাক হয়েছিলাম। অন্ধ্র, কর্ণাটক, কেরালা এবং তামিলনাড়– ঘুরে ভাষা-
সংস্কৃতির বৈচিত্র্যে বিস্মিত হতে হয়। পাশাপাশি প্রদেশ অথচ এক প্রদেশের মানুষ অপর প্রদেশের মানুষের সঙ্গে বিকল্প ইংরেজিতে কথা বলে। ভাষার প্রশ্নে কেউ কাউকে ছাড় দেয় না। দক্ষিণ ভারতে বাংলাভাষী তো পরের কথা, হিন্দিভাষীও পাওয়া দুরূহ ব্যাপার। একমাত্র অন্ধ্র প্রদেশের হায়দ্রাবাদ এবং সিকান্দ্রাবাদে উর্দু-হিন্দির কদাচিৎ প্রচলন দেখা সম্ভব হয়েছিল। চার মিনার চত্বরে স্থানীয় জনৈক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করায়, তিনি বলেছিলেন উর্দু ও হিন্দি ভাষা প্রচলনের মূলে অতীতের শাসক নিজামদের কথা।
ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনামলে হায়দ্রাবাদের শাসনকর্তা ছিলেন নিজামেরা। মুসলিম সম্প্রদায়ের নিজামেরা তেলেগু ভাষার পরিবর্তে উর্দু ভাষায় কথা বলত। সে কারণেই উর্দু-হিন্দি ভাষার চল সেখানে। হায়দ্রাবাদ ছিল ব্রিটিশদের করদরাজ্য। রাজ্যের শাসনক্ষমতা ছিল বংশপরম্পরায় নিজামদের অধীনে। ব্রিটিশদের বার্ষিক কর প্রদান করত নিজামেরা। ব্রিটিশরা নিজামদের এমনিতেই শাসনকর্তারূপে স্বীকৃতি দেয়নি। ব্রিটিশ শাসনের গোড়াপত্তনে স্বদেশি বিশ্বাসঘাতকদের কারণে ব্রিটিশদের ভারতবর্ষ জয় সহজ হয়েছিল। বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পতনের মূলে ছিল নবাবের প্রধান সেনাপতি মীর জাফর আলী খানের বিশ্বাসঘাতকতা। একইভাবে মহিশূরের বীর টিপু সুলতানের পরাজয়ের মূলে ছিল হায়দ্রাবাদের নিজামের চরম বিশ্বাসঘাতকতা। নিজামের বিশ্বাসঘাতকতায় ইংরেজদের পক্ষে টিপু সুলতানকে পরাজিত এবং হত্যা করা সম্ভব হয়েছিল। ওই বিশ্বাসঘাতকতার পুরস্কার স্বরূপ নিজাম পেয়েছিল হায়দ্রাবাদের শাসনভার। স্বাধীন ভারতে করদরাজ্যগুলো বৃহৎ ভারত ইউনিয়নে একীভূত হলেও; হায়দ্রাবাদের শাসক নিজামের অসম্মতিতে সামরিক হস্তক্ষেপে রাজ্যের শাসনক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েছিল নেহরু সরকার। হায়দ্রাবাদে মুসলিম সম্প্রদায় এখনো তেলেগু ভাষার পাশাপাশি উর্দু ভাষায় কথা বলে। উর্দুভাষীদের ক্ষেত্রে হিন্দি বলা সহজ। দুটি ভাষার মধ্যে দূরত্ব তেমন নেই। প্রদেশের প্রাতিষ্ঠানিক ভাষা তেলেগু এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ তেলেগু জাতিসত্তার মানুষ তেলেগু ভাষায়ই কথা বলে থাকে। হিন্দি-উর্দুতে নয়।
ওই চার প্রদেশে ঘুরতে গিয়ে আমার সঙ্গী ব্যতীত অন্য কারও সঙ্গে বাংলা ভাষায় কথা বলার উপায় ছিল না। মাসাধিককালজুড়ে দক্ষিণ ভারত ভ্রমণে ভাষা এবং খাদ্যের অতৃপ্তি প্রতিক্ষণে অনুভব করেছিলাম। পাহাড়ের চূড়ায় বিশাল এলাকাজুড়ে উটি। সমতল থেকে উঁচু পথে উটিতে যেতে হয়। গাড়ি ওপরের পানে ধীরে ধীরে উঠে যায়। যাত্রাপথে উটির হিমশীতল ঠা-া অনুভূত হতে থাকে। উটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিস্ময়কর। উটিতে প্রচুর চা বাগান, একটি চা বাগান দেখতে গিয়ে সাহেবি পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তিকে স্ত্রীর সঙ্গে বাংলায় কথা বলতে শুনে দ্রুত তাদের কাছে ছুটে যাই। পশ্চিমবাংলার ঢঙে বাংলা বলা শুনেই নিশ্চিত হয়েছিলাম তাদের নিবাস পশ্চিমবঙ্গে। আগ বাড়িয়ে ভদ্রলোকের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘দাদা, আপনি বাঙালি নিশ্চয়?’ আমার প্রশ্নটি শুনে ভদ্রলোক মহাবিরক্তিতে উত্তরে বলেছিলেন, ‘কেন অসুবিধা আছে?’ অমন নির্লিপ্ত উত্তর শুনে হতাশায় দমে যাই। ভদ্রলোকও আমাদের এড়িয়ে স্ত্রীকে নিয়ে অন্যদিকে চলে যায়।
উটিতে পাঁচদিন কাটিয়ে চেন্নাই ফিরে আসি। চেন্নাই বাস টার্মিনালে টিকিট কেটে বাসের অপেক্ষায় ছিলাম। সেখানে আকস্মিক দেখা পেলাম স্ত্রীসহ সেই বাঙালি ভদ্রলোকটিকে। দেখামাত্র মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলাম। বাস এলে আমরা বাসে উঠে নির্দিষ্ট আসনে বসে পড়ি। বাঙালি বাবু বাসে ওঠার সময় আমাদের দেখেও না দেখার মতো বাসের ভেতরে আসন নিতে এগিয়ে যায়। কন্ডাক্টর তাদের আসন বাসের শেষ সারিতে দেখিয়ে দেয়। এতে বাঙালি বাবু ক্ষেপে ওঠেন। কাউন্টার থেকে নাকি তাকে বলা হয়েছে পঞ্চম সারিতে আসন। অথচ শেষ সারিতে আসন নিয়ে ক্ষিপ্ত বাঙালি বাবু কন্ডাক্টরের সঙ্গে বচসায় লিপ্ত হয়। কন্ডাক্টর বারবার বলছে টিকিটের গায়ে তামিল ভাষায় লেখা রয়েছে তাদের আসন শেষ সারিতে। উভয় পক্ষের বিবাদে বাসের হেলপার এসে বাঙালি বাবুর শার্টের কলার চেপে ধরে এবং কিল-ঘুষি মারতে উদ্যত। অনবরত তামিল ভাষায় খিস্তি দেয়। বাঙালি বাবু ভারতীয় হলেও, সেখানে প্রবাসী। তাই নিশ্চুপ হয়ে যায়। অসহায়ত্বে নিরুপায়ে আমাদের উদ্দেশে বলে ওঠেন, ‘আপনারা বাঙালি হয়েও চেয়ে চেয়ে তামাশা দেখছেন। আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসার সামান্য কর্তব্যবোধ করছেন না?’ এমনিতে ভদ্রলোকের ওপর আমার রাগ জমা ছিল। সুযোগের মওকা হাতছাড়া করতে চাইনি বলেই এগিয়ে তার সামনে গিয়ে পূর্বের তার বলা কথাটিই তাকে বলি, ‘কেন অসুবিধা আছে?’ আমার প্রতিশোধের বাক্যটি শুনে চুপ হয়ে নতমুখে বাসের শেষ সারি অভিমুখে চলে যায়। স্বামী-স্ত্রী মিলে আমাদের ইঙ্গিত করে নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে হয়তো কিছু বলছিল। কিন্তু আমরা শুনতে পাইনি। বাঙালি বাবুকে জব্দ করার প্রশান্তিতে বেশ হালকা অনুভব করি এবং খোশ মেজাজে বেঙ্গালুরুর পথে বাসযাত্রায় রওনা হই।
বেঙ্গালুরুতে নানা দর্শনীয় স্থান প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা ট্যুরিস্ট বাসে চেপে দেখতে যেতাম। বিন্দাবন গার্ডেন দেখতে গিয়ে আবারও সেই বাঙালি বাবুর সাক্ষাৎ পেয়ে যাই। তাদের দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে দ্রুত সামনে এগিয়ে যাই। কিন্তু হঠাৎ পেছন থেকে নারীকণ্ঠের নির্ভেজাল বাংলায়, ‘দাদা শুনুন।’ শুনে চমকে পেছনে ফিরে দেখি সেই বাঙালি বাবুর স্ত্রী আমাদের নিকটে। কিছু বোঝার আগেই ভদ্রমহিলা আমাদের উদ্দেশে বলেন, ‘দেখুন উটির ঘটনায় আমাদের ভুল হয়েছিল। সে জন্য আমরা দুঃখিত। আমার স্বামীও অনুতপ্ত। ওই দেখুন, লজ্জায় তিনি ওখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সে-ই আমাকে আপনাদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির অবসানে পাঠিয়েছে।’ আমরা দুজন কী করব বুঝতে পারছিলাম না। শেষে দুজনে মিলে উল্টো পথে ভদ্রমহিলার সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা তার স্বামীর কাছে এগিয়ে যাই।
আগের ঘটনার তিক্ততা ভুলে সৌজন্যমূলক সম্পর্ক সৃষ্টিতে খুব বেশি সময় লাগেনি। সহজেই আমরা পরস্পরের নিকটজন হয়ে যাই। বেঙ্গালুরুতে থাকা বাকি পাঁচদিন আমরা নির্মল বন্ধুত্বের বন্ধনে অতিবাহিত করেছিলাম। পাশাপাশি হোটেলে ছিলাম। প্রতিদিন ট্যুরিস্ট বাসে একত্রে ঘুরেছি বেঙ্গালুরুর দর্শনীয় স্থানগুলো। খেয়েছিও একত্রে। দক্ষিণ ভারতের ইডলি, দোসা ভালো না লাগলেও খেতে হয়েছে প্রাণ বাঁচাতে। আমার এবং আমার সঙ্গীর কেবল নয়; বাঙালি বাবু ও তার স্ত্রীরও একই দশা খাবার গ্রহণে। বেঙ্গালুরু থেকে তারা কলকাতার পথে এবং আমরা কেরালা অভিমুখে যাত্রার পূর্বক্ষণ পর্যন্ত নির্মল আন্তরিকতায় একত্রে নিবিড় বন্ধুত্বে দিন কটি কাটিয়েছিলাম। বিদায় বেলায় স্বজনের বিদায়ের মতো বিচ্ছেদের কষ্ট উভয়ে অনুভব করেছি।
দক্ষিণ ভারত ভ্রমণের এই অভিজ্ঞতার প্রাসঙ্গিক দিকটি হচ্ছে জাতীয়তা। নয়তো কেন বাংলায় কথা শোনামাত্র আমি অপরিচিত ব্যক্তিটির কাছে ছুটে গিয়েছিলাম! নিশ্চয় ভাষার টানে। নিজ ভাষায় কথা বলার লোভ সংবরণ করতে না পারার কারণেই ছুটে গিয়েছিলাম। মানুষ সবকিছু পাল্টাতে পারলেও জাতীয়তা পাল্টাতে পারে না। কোনো বাঙালি চীন, জাপান, ইংল্যান্ড, আমেরিকায় যুগ যুগ বসবাসে এবং চীনা, জাপানি, ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী হওয়ার পরও চায়নিজ, জাপানিজ, ইংরেজ, আমেরিকান হতে পারবে না। ধর্ম পরিবর্তন মুহূর্তে সম্ভব, কিন্তু জাতীয়তা পরিবর্তন অসম্ভব। জাতীয়তার ভিত্তিমূলে ভাষা। সেই ভাষাকে পরিত্যাগ করা একমাত্র বোহেমিয়ান ছাড়া কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। পশ্চিমবাংলার সেই ভদ্রলোক ও তার স্ত্রীর সঙ্গে আমাদের আন্তরিক সম্পর্কের মূলেও ছিল ভাষা। একমাত্র ভাষার কারণেই অমন তিক্ততার পরও আমাদের সুসম্পর্ক সম্ভব হয়েছিল। ভাষার টান অধিক অনুভব করা যায় বিদেশ-বিভুঁইতে। নিজ ভাষায় কথা বলতে না পারার অতৃপ্তি-অস্বস্তি তাড়া করবেই। ভিনভাষীদের ভিড়ে নিজ ভাষায় কথা বলার তীব্র তাগিদ অনুভব হবে। যারা প্রবাসী তারাই বোঝে নিজ ভাষায় কথা বলতে না পারার অতৃপ্তি কত বেদনাদায়ক। নিজ ভাষায় কথা বলার পাশাপাশি গান শোনা, বই পড়ার তৃষ্ণা নিবারণ করতে না পারার অতৃপ্তি অনুভূত হবেই। বিদেশে অবস্থানেই বোঝা যায় স্বদেশ কী? স্বদেশ, মাতৃভাষা, পারিবারিক, সামাজিক জীবনের পিছুটান প্রতিক্ষণে তাড়া করবে। প্রবাসী ব্যতীত সেটা অন্যদের কিন্তু বোঝা সহজ নয়।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত
বিবিএস জরিপে বলা হচ্ছে, বর্তমানে দেশে কর্মক্ষম বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৩০ হাজার। ২০১৭ সালে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ। এর মানে ৬ বছরের ব্যবধানে দেশে বেকার কমেছে ৭০ হাজার। তবে সিপিডি জানাচ্ছে, যে উপায় বা যে সংজ্ঞার ওপর ভিত্তি করে বেকার সংখ্যা নিরূপণ করা হয়েছে, সেই সংজ্ঞা অচল এবং অবাস্তব।
আমরা বিশ্বাস করি, বাস্তবতা বিশ্লেষণ করেই বর্তমান তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়েছে। একই সঙ্গে এ কথা বলা যায় যে, উপস্থাপিত তথ্য এবং বেকারত্বের পরিসংখ্যানের মধ্যে কোনো ধরনের গরমিল বা গোঁজামিল নেই। অবশ্য অর্থনীতির বাস্তব চিত্রই প্রকাশ করবে, উপস্থাপিত তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা।
গতকাল দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতায় প্রকাশিত ‘বেকারের আকার কমেছে’ শীর্ষক প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায়, সরকারের বেকারত্বের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ৩০ দিনে বেতন বা নিজস্ব পণ্য উৎপাদনের নিমিত্তে কোনো না কোনো কাজ খুঁজে থাকেন এবং গত সাত দিনে কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকেন, তবে তাকে ‘বেকার’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বিবিএস বলছে, করোনার সময় দেশে বেকারের সংখ্যা বাড়েনি বরং কমেছে। কারণ ওই সময় সরকার বিশেষ অনেক পদক্ষেপ নেওয়ায় এসব বেকারের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। তা ছাড়া কৃষি খাতে অংশগ্রহণ বাড়ায় বেকারের সংখ্যা কমেছে।
সংবাদে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ছয় বছর আগের তুলনায় বেকারত্বের হারও কমেছে। ২০১৭ সালে বেকারত্ব ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। সর্বশেষ জরিপ বলছে, এখন বেকারত্ব কমে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। সপ্তাহে এক ঘণ্টা মজুরির বিনিময়ে কাজ করার সুযোগ না পেলে তাকে বেকার হিসেবে ধরা হয়।
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, এখন দেশে শ্রমশক্তিতে ৭ কোটি ৩৪ লাখ মানুষ আছে। এর মধ্যে কাজে নিয়োজিত ৭ কোটি ৭ লাখ ৮০ হাজার মানুষ। এ শ্রমশক্তির মধ্যে থাকা ৪ কোটি ৭৪ লাখ পুরুষ আর ২ কোটি ৫৯ লাখ নারী। ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৯৯ লাখ ১০ হাজার মানুষ শ্রমশক্তির আওতায় এসেছে অর্থাৎ এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। জরিপে ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের বিবেচনা করা হয়েছে। গত বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশের প্রায় সোয়া লাখ পরিবার থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তথ্য সংগ্রহ করা হয় দ্বৈবচয়ন অর্থাৎ লটারি পদ্ধতিতে বাছাইয়ের মাধ্যমে। এর আগে ২০১৭ সালে শ্রমশক্তি জরিপ করেছে বিবিএস। প্রতি চার থেকে পাঁচ বছরের ব্যবধানে এ জরিপ করা হয়ে থাকে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেকারদের মধ্যে পুরুষ ১৬ লাখ ৯০ হাজার। আর নারী ৯ লাখ ৪০ হাজার। পাঁচ বছর আগের চেয়ে নারীর বেকারত্ব কমেছে। বেড়েছে পুরুষের বেকারত্ব। ২০১৭ সালের জরিপে ১৪ লাখ পুরুষ বেকার ছিল। ওই সময় ১৩ লাখ নারী বেকার ছিল। জরিপ বলছে, মোট সাত কোটি কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তির মধ্যে কৃষি খাতে নিয়োজিত রয়েছে ৩ কোটি ২২ লাখ, শিল্প খাতে ১ কোটি ২০ লাখ এবং সেবা খাতে ২ কোটি ৬৬ লাখ।
খটকা লাগে তখনই, যখন স্বয়ং শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব এহসান-ই-এলাহী বলেন, ‘আমি তো ভেবেছিলাম দেশে শ্রমিক ছয় কোটি, এখন দেখি সাত কোটির বেশি। এটি বড় সুসংবাদ। আমরা আগামী বছরের মধ্যে তিন লাখ শ্রমিকের ডাটাবেজ করব। কারণ আমাদের কাছে সঠিক কোনো ডাটাবেজ নেই।’
এখানেই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। সঠিক ডাটাবেজ না থাকলে, উত্থাপিত তথ্যের মধ্যে যে কোনো গরমিল নেই সেই প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? আর যদি প্রদানকৃত সব তথ্য সঠিক হয়, তাহলে অবশ্যই ডাটাবেজ তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই ধন্যবাদের যোগ্য। একই সঙ্গে প্রত্যাশা থাকল, কর্মসংস্থানের সুযোগ আরও বাড়বে কমবে, বেকারের আকার।
সাত বছর পর ভারতের মাটিতে অবতরণ পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে তারা গিয়েছিল সেখানে। তারপর এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে। টুর্নামেন্ট শুরুর এক সপ্তাহ আগে তারা পৌঁছালেন দেশটিতে। সেখানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হোটেলে।
বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বাবর আজমরা সেখানে পৌঁছানো মাত্রই উচ্ছ্বসিত জনতা ভিড় করেন। হায়দ্রবাদের বিমানবন্দরের বাইরে তাদের দেখে অনেকেই চিৎকার করে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন। বাবরের নাম উচ্চারণ করতও শোনা গেছে এসময়। পুলিশ উৎসুক জনতাকে আটকে রেখেছিল।
রাজনৈতিক বৈরি সম্পর্কের কারণে দুই দলের দেখা হয় না দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজে। বিশ্ব মাতানো ক্রিকেটার থাকলেও পাকিস্তানিরা খেলতে পারে না আইপিএলে। কারণ ঐ একটাই। তবে বৈশ্বিক বা মহাদেশীয় ইভেন্টে তাদের ঘিরে আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। সেটা দেখা গেছে এশিয়া কাপেও।
বিশ্বকাপ খেলতে আজ বাংলাদেশ উড়াল দিয়েছে ভারতে। সেই টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখে টাইগাররা। তামিম ইকবাল নেতৃত্ব ছাড়ার পর সাকিব আল হাসানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে অধিনায়কত্বের ভার। আর আজই জানা গেল, বিশ্বকাপের পর একদিনও তিনি অধিনায়কত্ব করবেন না।
গত ১১ আগস্ট তৃতীয় দফায় ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান। তখনই বলা হয়েছিল, সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপ ও ভারত বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
দেশের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এই বিশ্বকাপই শেষ। এরপর একদিনও (অধিনায়কত্ব) করবো না। যে কারণে আমি এশিয়া কাপের আগে নিতে চাইনি। এরপরও এটা না। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি হাসতে চাই, খেলতে চাই, পারফর্ম করতে চাই। এই একটা কারণে আমি করতে চাইনি।’
সাকিব যোগ করেন, ‘আর কোনে কারণ নেই। বেস্ট হয় যদি অধিনায়ক না থাকি। অধিনায়কত্ব কি আমার কোনো ভেল্যু এড করতেছে ক্যারিয়ারে এই স্টেজে এসে? আমি তো মনে করি না।’
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
বিশ্বকাপে তামিম ইকবালকে ওপেন থেকে সরিয়ে মিডল অর্ডারে ব্যাট করার প্রস্তাব দিয়ে ফোন করেছিলেন, তামিমের ভাষায় 'বোর্ডের টপ লেভেল' এবং 'ক্রিকেটের সাথে বেশ ইনভলভড' একজন।
তিনি তামিমকে বলেন, ''তুমি তো বিশ্বকাপে যাবা, তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলতে হবে। তুমি এক কাজ করো। তুমি প্রথম ম্যাচ খেলো না আফগানিস্তানের সঙ্গে।'
তিনি আবার বলেন, আচ্ছা তুমি যদি খেলোও, আমরা এমন একটা পরিকল্পনা করছি, তুমি যদি খেলোও, তাহলে নিচে ব্যাট করবে।''
তামিমের এমন বক্তব্যের পর প্রশ্ন উঠেছে, কেই সেই বোর্ড কর্মকর্তা? এক টিভি সাক্ষাৎকারে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'আমি এটা জানিনা।'
পরক্ষণেই তিনি বলেন, 'তবে যদি কেউ বলে থাকে, আমি সিউর তিনি অথোরাইজড পার্সন। আর এরকম কিছু বলে থাকলে আমি খারাপ কিছু বলেছে বলে আমি মনে করিনা। টিমের কথা চিন্তা করেই বলেছে। টিম কম্বিনেশন নিয়ে কথা বলে থাকলে দোষের কি আছে। আমার তো মনে হয় না দোষের কিছু আছে। নাকি এরকম কোনো প্রস্তাব দেয়া যাবে না। নাকি আপনি যা চাইবেন তাই করতে পারবেন?।'
বিশ্বমঞ্চে দেশের ক্রিকেটের দূত বলা যায় সাকিব আল হাসানকে। বর্ণিল এক ক্যারিয়ার গড়েছেন তিনি। তিন ফরম্যাটেই তিনি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। দেশের এই তারকা ক্রিকেটার নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপে যাচ্ছেন দলের অধিনায়ক হিসেবে। সেই টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই জানা গেল কবে তিনি অবসর নিচ্ছেন।
দেশের একটি ক্রীড়াভিত্তিক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের অবসরের সময় জানিয়েছেন। তার ইচ্ছে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর অবসর ঘোষণা করার। একইসঙ্গে তিন ফরম্যাটকে বিদায় জানাতে চান দেশের ক্রিকেটের এই তারা।
নেতৃত্ব ছাড়া ও অবসরের প্রসঙ্গ টেনে সাকিব বলেন, ‘আজকে এখন এই অবস্থায় বলছি, ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত ওয়ানডে খেলবো। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে টি-টোয়েন্টিকে বিদায় দেবো। টেস্টের অবসর শিগগিরই। তবে একেক ফরমেট একেক সময় ছাড়লেও আনুষ্ঠানিক অবসর ঘোষণা করবো ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর।’
অধিনায়কত্ব নিয়ে সাকিব বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপের আগে একাধিক সিরিজে বিশ্রামের কথা বলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে দলের বাইরে রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত এশিয়া কাপেও দলে ফেরানো হয়নি তাকে। যেহেতু সাকিবের নেতৃত্বে সেই আসরে খেলেছে বাংলাদেশ, তাই অনেকের ধারণা সাকিবের চাওয়াতেই দলের বাইরে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ।
তবে সাকিব এসব কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়ক ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দল পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলারও ছিল না! কারন পরের দিন সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকি রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা!'
দলের ভেতরের কথা ভালোভাবে না জেনেই মানুষ যেভাবে সমালোচনা করে সেটাকে হাস্যকর বলেছেন সাকিব। বাংলাদেশ অধিনায়ক সমালোচকদের মানসিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, 'মানুষের সাইলকোলজি এমন কেন! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!'
অধিনায়ক একা যে দল নির্বাচন করেন না সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন সাকিব। তিনি বলেন, 'রিয়াদ ভাইয়ের যে ডেডিকেশন ছিল তার দলের প্রতি যে অবদান ছিল। দলের হয়ে খেলার যে ইচ্ছে ছিল, সবকিছু সবাই দেখতে পেরেছে। আমার দায়িত্বতো পুরো দলটা নির্বাচন করার না। এমনটা হলে এশিয়া কাপের একদিন পরেই এনাউন্স করে দল দিয়ে দিতে পারতাম। এটা অনেক প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। অনেক বিষয় চিন্তা করতে হয়। অনেক কিছু চিন্তা করে দলটা গড়তে হয়।'
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।