
কাজী হায়াৎ। বরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালক। বর্তমানে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি। যাত্রা শুরু করেছিলেন, সহকারী পরিচালক হিসেবে- ১৯৭৪ সালে পরিচালক মমতাজ আলীর হাত ধরে। পরবর্তী সময়ে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার আলমগীর কবিরের সঙ্গে ‘সীমানা পেরিয়ে’ চলচ্চিত্রেও কাজ করেন, সহকারী পরিচালক হিসেবে। এরপর ১৯৭৯ সালে ‘দি ফাদার’ ছবির মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করেন পরিচালক হিসেবে। এই ছবির গান- ‘আয় খুকু আয়’ সেই সময় অসম্ভব জনপ্রিয়তা লাভ করে। কাজী হায়াৎ এ পর্যন্ত ৫১টি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন। অভিনয় করেছেন- শতাধিক চলচ্চিত্রে। তার পরিচালিত ‘দাঙ্গা’ ও ‘আম্মাজান’ ছবি দেশ-বিদেশে অসম্ভব জনপ্রিয়তা পেয়েছে। দেশের বাইরে, উত্তর কোরিয়া চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়- দাঙ্গা। জাতীয়, আন্তর্জাতিক ও অন্যান্য পুরস্কারসহ এ পর্যন্ত ৭৩টি সম্মাননা পেয়েছেন। ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরিতে পেয়েছেন ৯টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এই গুণী অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার ও প্রযোজক সাম্প্রতিক সময়ে বাংলা সিনেমার সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু- ‘সেন্সরশিপ’ নিয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তোফায়েল আহমেদ
দেশ রূপান্তর : ঢাকাই সিনেমায় ইদানীংকার সবচেয়ে আলোচিত ইস্যুর নাম সেন্সরশিপ। কিছু সিনেমার ক্ষেত্রে এ নিয়ে জল ঘোলাও কম হয়নি। চলচ্চিত্রের মানুষ হিসেবে সামগ্রিকভাবে বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখেন?
কাজী হায়াৎ: সেন্সর বোর্ড নিয়ে কথা বলার আগে আমার মনে হয়, আমাদের সংবিধানে কতটুকু স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে সেটা জানতে হবে। যারা বাক স্বাধীনতার কাজ করবেন, মানে কোনো মাধ্যমে কাজ করবেন, তারা কতটুকু স্বাধীনতা পাচ্ছেন তা বড় বিষয়। আমাদের সংবিধানের ৩৯ ধারায় চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। ৩৯ এর ১-এ উল্লেখ আছে- ‘চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল।’ ৩৯ এর ২-এ বলা হয়েছে- ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশি রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে (ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের এবং (খ) সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল।’ আমার মনে হয়, এগুলো অনুসরণ করেই সেন্সর বোর্ডের নীতিমালা তৈরি করা হয়েছিল। তাতে কতটুকু স্বাধীনতা আমাদের আছে আমার জানা নেই।
দেশ রূপান্তর : তাহলে এই সংকটের সমাধন কী?
কাজী হায়াৎ: আগে এই ৩৯-এর দুটি ধারার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। তাহলে সাংবাদিকদেরও স্বাধীনতা আসবে। আমার মনে হয়, যারা এই মাধ্যম (চলচ্চিত্র) নিয়ে কাজ করেন, তাদেরও পূর্ণ স্বাধীনতা আসবে। আর এই পূর্ণ স্বাধীনতা নেই বলেই এত বাগ্বিতণ্ডা, সেন্সর বোর্ডের সমালোচনা, সেন্সর করতে গিয়ে ঝামেলা। সত্যিকথা বলতে কি, একটি স্বাধীন দেশে সেন্সর শব্দটিই খুব অযৌক্তিক। সেন্সর শব্দটি ইংরেজি না। প্রাচীন গ্রিসে যারা ম্যাজিস্ট্রেসি করতেন, তাদের সেন্সর বলা হতো। সেখান থেকে এই সেন্সর শব্দটি ইংরেজি ভাষায় এসেছে। যখন সারা বিশ্বে ব্রিটিশ রাজত্ব হয়ে গেল, তখন এই গণমাধ্যম এবং বাক স্বাধীনতা গ্রহিত করার জন্য অনেক কিছুতে সেন্সর বসিয়ে দিল। মানে ম্যাজিস্ট্রেসি বসিয়ে দেওয়া হলো। সেখান থেকেই এই সেন্সর শব্দটি এসেছে। আমার মনে হয়, একটি স্বাধীন দেশে এটির প্রয়োগ এবং এই শব্দটিই ব্যবহৃত হওয়া উচিত না। একটি সংগঠন বা কিছু ব্যক্তি আইন দ্বারা বাক স্বাধীনতার ওপর ম্যাজিস্ট্রেসি করবে, এমনটা হওয়া উচিত নয়। সেন্সর শব্দটিতে মনে হয় কেমন পরাধীনতা এবং ম্যাজিস্ট্রেসি আছে। আমার মনে হয়, সেন্সর শব্দটি না রেখে অন্য কোনো শব্দ দেওয়া উচিত। যেমন, সেটা ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সনদপত্র বিভাগ’ হতে পারে। তখন তারা নীতিমালা অনুসরণ করে ছাড়পত্র দেবেন।
দেশ রূপান্তর : এ অঙ্গনের অগ্রজ হিসেবে নিশ্চয়ই এ নিয়ে আপনারা কাজ করছেন?
কাজী হায়াৎ: বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার। সেন্সর বোর্ডের অনেকেও আমার এই কথার সঙ্গে একমত। এ নিয়ে আমরা মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলব। পরিচালক সমিতির সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট হলে আমরা দাবি তুলে ধরব। আমাদের এই দাবিতে যৌক্তিকতা আছে, তাই আশা করি এটার অগ্রগতি হবে। নীতিমালা যা আছে সেটাই থাকবে, শুধু সেন্সর বোর্ডের নাম পরিবর্তন হবে।
দেশ রূপান্তর : অনেক পরিচালক তো সেন্সর জটিলতা এড়াতে ওটিটি বা ভিন্ন প্ল্যাটফর্মকে বেছে নিচ্ছেন?
কাজী হায়াৎ: এখন পর্যন্ত ওটিটি প্ল্যাটফর্ম মুক্ত। তাদের সেন্সর প্রয়োজন নেই। তবে এখানেও হয়তো কিছুদিন পর সেন্সরশিপ আরোপিত হবে।
দেশ রূপান্তর : ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখেন?
কাজী হায়াৎ: ওটিটি এই সময়ের জনপ্রিয় একটি প্ল্যাটফর্ম । আমি বলব, চলচ্চিত্র দেখার ক্ষেত্র পরিবর্তন হয়েছে। চলচ্চিত্র দেখার বিষয়টি হাতের মুঠোয় এসেছে। সেই হাতের মুঠোয় দেখার পদ্ধতিটা বাংলাদেশেও এসেছে। যে কোনো ব্যক্তি টাকা দিয়ে ওটিটিতে সিনেমা দেখতে পারে। তবে ওটিটিতে সিনেমা দেখা আর বড় পর্দায় সিনেমা দেখার মধ্যে অনেক তফাৎ। সিনেমা শব্দের সঙ্গে পর্দাই আসলে ভালো মানায়। সিনেমা মানেই অন্ধকার একটি প্রেক্ষাগৃহ। এক সময় এটার আলাদা একটা কালচার ছিল। সেখানে গিয়ে মানুষ বসবে, পর্দায় মনোনিবেশ করবে। পর্দায় ভেসে উঠবে ছবি, পাত্র-পাত্রীগুলো অনেক বড় দেখা যাবে। শব্দ ভালো পাবে। এটা ওটিটিতেও করা সম্ভব। হোম থিয়েটারে অনেকে এমন পরিবেশ তৈরি করে দেখতে পারে। এখন কে কোথায় দেখবে সেটা একটা বিষয়। কেউ হয়তো ওটিটিতে দেখেই ভালো বিনোদন পাবে, আবার কেউ হয়তো সিনেমা হলে গিয়ে দেখে বেশি তৃপ্তি পাবে। তবে হ্যাঁ, ক্ষেত্র পরিবর্তন হয়েছে। আর এটাকে আমি স্বাগত জানাই। আধুনিক বিজ্ঞানের যে অগ্রগতি, এটাকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে, সাধুবাদ জানাতে হবে।
দেশ রূপান্তর : নানা বাস্তবতার কারণে বাংলাদেশের মানুষ হলবিমুখ হয়ে পড়েছে। এখন থেকে বের হওয়ার উপায় কী?
কাজী হায়াৎ: ভালো মানের সিনেমার বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে বলব, দর্শকদের ভালো সিনেমা হল দিতে হবে। ভালো বসার জায়গা দিতে হবে, ভালো পর্দা দিতে হবে, শব্দ ভালো দিতে হবে। আগের হল অবকাঠামোতে যে সিনেমা হলগুলো রয়েছে, সেই সিনেমা হলগুলোর পর্দা ছোট। যার ফলে দর্শকরা একেবারে বিমুখ হয়ে গেছে। এগুলো পরিষ্কার করে আধুনিক মেশিন লাগানোর ব্যবস্থা যদি করা যায়, যদি শব্দ ভালো দেওয়া হয়, আমার মনে হয় দর্শক আবার ফিরে আসবে।
দেশ রূপান্তর : বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে মূলধারার সিনেমার যে অবস্থা, সেটাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
কাজী হায়াৎ: আমি বলব, খুবই দুর্দিন চলছে। প্রযোজকের এখানে আয়ের পথ হলো সিনেমা হলে দর্শক। কিন্তু কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে সেই দর্শক খরা তো চলছেই।
দেশ রূপান্তর : এর পেছনের কারণগুলো কী বলে মনে করেন?
কাজী হায়াৎ: অনেক কারণই রয়েছে। মানুষের মনমানসিকতার উন্নতি হয়েছে। সেই তুলনায় ভালো সিনেমাও হচ্ছে না। অনেকগুলো দিক এর পেছনে কাজ করছে। কাজে মনোনিবেশ করেছে অনেক লোক। বেকারের সংখ্যা কমে গেছে অনেকটা। এখন যে বেকার, তারও কিছু না কিছু কাজ আছে। সেই কাজ ফেলে সে সিনেমা দেখার সময়টা বের করতে পারে না। এগুলোর পরও যে সব সিনেমা তৈরি হচ্ছে, সেগুলো এত কম অর্থের সিনেমা এবং একই ধরনের সিনেমা। যার ফলে দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
দেশ রূপান্তর : দীর্ঘ সময় চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িয়ে আপনি। যদি দেশের সেরা অভিনেতা-অভিনেত্রী বাছাই করতে বলা হয়, কাদের নাম বলবেন?
কাজী হায়াৎ: এগুলো বলা উচিত না। আমি মনে করি, এই প্রশ্নই করা উচিত না। আমি কার নাম বলব, একজন হয়তো খুশি হবেন, আরেকজন বিরাগভাজন হবেন। আর অভিনয়ে অনেক বিতর্কিত বিষয় আছে। কেউ উচ্চ মার্গে অভিনয় করে। কেউ নিচু স্বরে কথা বলে অভিনয় করে। কেউ মুখ ভেংচি দিয়ে অভিনয় করে, কেউ হাত-পা ছুড়ে অভিনয় করে। আমাদের দেশে সিনেমা-নাটক, এমনকি এই উপমহাদেশের সিনেমা-নাটক অধিকাংশই অপেরাইসড স্টাইলে তৈরি হয়। অর্থাৎ ঘুরে যে করেই হোক ক্যামেরার সামনে চলে আসা। একটি দৃশ্য একটু লিঙ্গার হলেই দাঁড়িয়ে পড়া। এই যেমন, আমি-আপনি এতক্ষণ বসে কথা বললাম। অথচ এটা যদি সিনেমায় ধারণ করা হতো, তাহলে একবার আমি উঠতাম, পায়চারী করে আবার ঘুরে আসতাম। এগুলো অপেরা স্টাইল। এই উপমহাদেশেরই ধারা এটা। এগুলোর কে কোনটাকে ভালো অভিনয় বলবে, কোনটাকে কে খারাপ বলবে, সেটা অনেকের ধারণাবশত হতে পারে। অনেকের ধারণার সঙ্গে অনেকের ধারণার মিল নাও থাকতে পারে। আমি নিশ্চয়ই বোঝাতে পেরেছি।
দেশ রূপান্তর : পুরো জীবন চলচ্চিত্রে কাটিয়ে দিলেন। যদি নিজের চলচ্চিত্র জীবন মূল্যায়ন করতে বলা হয়, কী বলবেন?
কাজী হায়াৎ: আমি সুখী। আমার আর কী চাওয়ার আছে? জীবনের চলার পথে শেষ প্রান্তে এসেছি। যে কোনো সময় হোঁচট খেয়ে পড়ে যাব। তবে বলব, ভালোই কাটল। এই জীবনটায় চলচ্চিত্রে এসে হয়তো ভালোই করেছি। অনেক সুনাম হয়েছে। অনেক ভালোবাসা, অনেক শ্রদ্ধা পেয়েছি। সিনেমাতেই আগে একটা সময় ছিল, সবাই হায়াৎ নামে ডাকত। তারপরে হায়াৎ ভাই হলাম। তারপরে কাজী হায়াৎ হলাম। তারপরে দাদা হলাম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই পরিবর্তনগুলো হয়েছে। সবমিলিয়ে ভালোই কেটেছে।
দেশ রূপান্তর : এই যে অনেকগুলো পরিচয়ের কথা বললেন। আপনি নিজে কোনটা বেশি উপভোগ করেন?
কাজী হায়াৎ: সবগুলোই ভালো লাগে। পরিবর্তনগুলো হয়েছে ভিন্ন কারণে। পরিবর্তন আরও হয়েছে। আমি যখন কৈশোরে, তখন পাড়া-প্রতিবেশী, চাচা-চাচাত ভাইয়েরা সবাই আমাকে হায়াৎ আলী বলে ডাকত। এরপরে স্কুলে যখন গেলাম, তখন হায়াৎ কাজী বলে ডাকত। এই হায়াৎ কাজী কলেজ পর্যন্ত ছিলাম। এরপরে সিনেমায় আসার পরে, শুরুর দিকে যখন সহকারী ছিলাম, তখন হায়াৎ বলে ডাকত সবাই। এরপর যখন পরিচালক হলাম, অনেকে হায়াৎ ভাই বলে ডাকতে লাগলেন। এরপরে যখন সিনেমা হিট হতে লাগল, তখন কাজী হায়াৎ হয়ে গেলাম। এই সবগুলোই ধাপে ধাপে এসেছে এবং সবগুলোই আনন্দদায়ক ছিল আমার কাছে। কোনটায় বেশি আনন্দ পেয়েছি সেটা মূল বিষয় না। এই পরিবর্তগুলো আমার ক্ষেত্রে হয়েছে। অনেকের ক্ষেত্রেই হয়, তবে আমি এটা গভীরভাবে লক্ষ করেছি।
ইফতারের সময় এক গ্লাস গুড়ের শরবত রোজদারদের দেহমনে নিয়ে আসে এক নিবিড় প্রশান্তি। গুড়ের গ্লুকোজ শরীরে সরাসরি শক্তি জোগায়। ক্লান্তি দূর করে। এ কারণে আবহমান কাল থেকে রোজার সময় গ্রামের মানুষ গুড়ের শরবত পান করে আসছেন। পানীয় প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোর ব্যাপক প্রচার-প্রপাগান্ডার মধ্যেও গুড়ের শরবত এখনো মানুষের
তৃষ্ণা নিবারণে অনন্য উপকরণ হিসেবে সমাদৃত। রোজা এলে চিনি, ডাল, তেল ও দুধ, মাংস, ডিমের মতো গুড়ের দামও বেড়ে যায়। বর্তমানে দেশের বাজারে প্রতি কেজি আখের গুড় বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা, খেজুরের গুড় বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। ভাবতে অবাক লাগে, মাত্র এক বছরের ব্যবধানে প্রতি কেজি আখের গুড়ের দাম বেড়েছে ৬০ টাকা আর খেজুর গুড়ের দাম বেড়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা।
গুড় চিনির চেয়ে অধিক পুষ্টিকর। সাদা চিনিতে শুধু শর্করা ও সামান্য আয়রন ছাড়া আর কিছু নেই। অন্যদিকে গুড়ে শর্করা ছাড়াও রয়েছে প্রোটিন, ফ্যাট, বিভিন্ন খনিজ লবণ ও ভিটামিন। খেজুর ও তালের গুড়ে রয়েছে বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়াম। গুড়ে অধিক পরিমাণে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ থাকার কারণে দেহে দ্রুত শক্তি জোগায়। মিষ্টতার দিক থেকেও গুড় চিনির চেয়ে দেড়গুণ মিষ্টি। শরবত ছাড়াও মিঠাই, মন্ডা, সন্দেশ, নাড়ু, মোয়াসহ বিভিন্ন ধরনের আচার, রকমারি পিঠা এবং পায়েস তৈরিতে গুড়ের কোনো বিকল্প নেই। আয়ুর্বেদীয়, হেকিমি ও কবিরাজি ওষুধ তৈরির কাজেও গুড় ব্যবহার করা হয়। পুরাতন গুড়, রোগপ্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।
বাংলাদেশে সাধারণত আখ, খেজুর, তাল ও গোলপাতার রস থেকে গুড় তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে বেশিরভাগ গুড় উৎপাদিত হয় আখের রস থেকে। দেশে মিলজোন ও মিলজোন বহির্ভূত এলাকায় আখ থেকে গুড় উৎপাদিত হয়। মিলজোন বহির্ভূত এলাকার মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, শরিয়তপুর, সাতক্ষীরা, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, বরিশাল ও হবিগঞ্জে বেশি পরিমাণে গুড় উৎপাদিত হয়। আর মিলজোন এলাকার মধ্যে অবৈধ পাওয়ার ক্রাশার ব্যবহারের মাধ্যমে রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, গাইবান্ধা, রংপুর ও দিনাজপুর জেলায় ব্যবসায়িক ভিত্তিতে প্রচুর পরিমাণে গুড় উৎপাদন করা হয়।
আজ থেকে ৪/৫ বছর আগেও বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ১ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমি থেকে প্রায় ৬৫ লাখ মেট্রিক টন আখ উৎপাদিত হতো। উৎপাদিত আখের শতকরা ৫০ ভাগ গুড় ২৫ থেকে ৩০ ভাগ চিনি উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত হতো। বাকি ২০ থেকে ২৫ ভাগ আখ চিবিয়ে খাওয়া, রস উৎপাদন ও বীজ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। প্রতি বছর দেশে গড়ে আখ থেকে ৩ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন গুড় এবং তাল, খেজুর ও গোলপাতা থেকে বছরে বড়জোর ৪০ থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন গুড় উৎপাদিত হতো। সে হিসেবে দেশে প্রতি বছর উৎপাদিত হতো ৩ লাখ ৬০ থেকে ৩ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন গুড়। বর্তমানে তা কমে ২ থেকে ২.৫ লাখ টনে এসে দাঁড়িয়েছে।
২০২০ সালে ৬টি সরকারি চিনিকল বন্ধ করার হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে মিলজোন এলাকায় আখের আবাদ ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়, যার বিরূপ প্রভাব পড়ে দেশের চিনি ও গুড় উৎপাদনে। আখ একটি দীর্ঘমেয়াদি ফসল এবং গুড় উৎপাদন কাজটি বেশ কষ্টসাধ্য হওয়ায় মিল বহির্ভূত এলাকায়ও ব্যাপকভাবে গুড় উৎপাদনের কাঁচামাল আখের আবাদ হ্রাস পায়। জনপ্রতি বার্ষিক ৬ কেজি হিসেবে দেশে মোট বার্ষিক গুড়ের প্রয়োজন প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন।
গুড় চিনির চেয়ে পুষ্টিকর হলেও বাংলাদেশে উৎপাদিত গুড়ের প্রায় শতভাগ ভেজাল ও অনিরাপদ বললে মোটেও ভুল হবে না। এক শ্রেণির লোভী গুড় উৎপাদনকারী আখের রসের সঙ্গে পশুখাদ্য হিসেবে পরিচিত চিটাগুড়, আটা, ভুট্টা ও ডালের গুড়া মিশিয়ে ভেজাল গুড় তৈরি করে। কেউ কেউ খেজুর গুড়ের রসে চিনির বস্তা ঢেলে ভেজাল গুড় তৈরির উৎসবে মেতে ওঠে। ভয়ের বিষয় হলো- দেশের প্রায় সব গুড় উৎপাদন এলাকায় গুড়ের রং ক্ষণস্থায়ী সোনালি হলুদ করার জন্য হাইড্রোজ নামক এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ ক্ষতিকর মাত্রায় মেশানো হয়। হাইড্রোজের রাসায়নিক নাম সোডিয়াম হাইড্রোসালফাইড। এই রাসায়নিক পদার্থটি পৃথিবীর কোনো দেশেই খাদ্য প্রস্তুত কাজে ব্যবহারে অনুমতিপ্রাপ্ত নয়। এটি কাপড় ও কাগজ কলে বিরঞ্জক হিসেবে ব্যবহার করা হয়- যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
গুড় উৎপাদনে আখ থেকে রস আহরণের জন্য দেশে পশুচালিত, ডিজেলচালিত ও বিদ্যুৎচালিত মাড়াই কল ব্যবহার করা হয়। পশুচালিত মাড়াই কলে তুলনামূলকভাবে রস আহরণ হার বেশি। শতকরা ৫০ থেকে ৫৫ ভাগ। বর্তমানে গুড় উৎপাদনে ডিজেলচালিত মাড়াই কল বেশি ব্যবহার হচ্ছে। প্রতি ঘণ্টায় ৩৫০ থেকে ৫৫০ কেজি ইক্ষু মাড়াই ক্ষমতা সম্পন্ন এ জাতীয় মাড়াই কলের রস আহরণ ক্ষমতা ৪৫ থেকে ৫৫ ভাগ। অন্যদিকে বিদ্যুৎচালিত মাড়াই কলের ঘণ্টায় ৩৫০ থেকে ৪৫০ কেজি পর্যন্ত আখ মাড়াই করা যায় এবং এর রস আহরণ ক্ষমতা ৪৫ থেকে ৫০ ভাগ। এসব মাড়াই কলে আখ একবারই মাড়াই করা হয় ফলে ইক্ষুতে বিদ্যমান চিনির ৩৫ থেকে ৪০ ভাগ ছোবড়াতে থেকে যায়, যা বিরাট অঙ্কের জাতীয় অপচয়। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিএসআরআই একটি আধুনিক আখ মাড়াই কল উদ্ভাবন করে। মাড়াই কলটি ঘণ্টায় ৪৫০ থেকে ৫৬০ কেজি আখ মাড়াই করতে পারে এবং এর রস আহরণ ক্ষমতা ৫৫ থেকে ৬০ ভাগ। মাড়াই কলটির আনুমানিক মূল্য ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। অন্যান্য কৃষি যন্ত্রপাতির মতো এই যন্ত্রটিতে শতকরা ৫০ ভাত ভর্তুকি এবং মাড়াই কল ক্রয়ে স্বল্পসুদে ঋণের ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে গুড় উৎপাদন এলাকায় মাড়াই কলটির বহুল ব্যবহার নিশ্চিত করা উচিত।
আমাদের কথা, গুড়ের ঘাটতি পূরণের জন্য চর ও পার্বত্য এলাকায় ব্যাপক ভিত্তিতে আখের চাষ করতে হবে। দেশে মিলজোন বহির্ভূত এলাকায় একটি গুড় বোর্ড গঠন করে আখচাষিদের মধ্যে মিল এলাকার মতো ঋণে বিশুদ্ধ বীজ, সার, নগদ অর্থ ও বালাইনাশক বিতরণ করতে হবে। আখচাষিদের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে উন্নত মানের আখ মাড়াই যন্ত্র সরবরাহ করতে হবে। মিল এলাকার মতো মুড়ি ও রোপা আখ চাষে সমপরিমাণ ভর্তুকি প্রদান করতে হবে। গুড় উৎপাদন এলাকায় আর্দ্র-গরম-বাতাস শোষিত পরিচ্ছন্ন ভিত্তি ও প্রত্যায়িত বীজ উৎপাদন এবং বিতরণ করতে হবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন ও বাংলাদেশ বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
লেখক : সাবেক মহাব্যবস্থাপক (কৃষি)
নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস্ লি. বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন
এক.
সরকারি প্রক্রিয়ার প্রতি মানুষের অনাস্থা, সরকার ও নাগরিক কারও জন্যই ভালো নয়। মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাস, পারস্পরিক আস্থার ওপরে যেমন সামাজিক-মনস্তাত্ত্বিক স্থিতি দাঁড়িয়ে থাকে, তেমনই সরকারের প্রতি নাগরিকের আস্থার ওপরে নির্ভর করে প্রশাসনের ভারসাম্য। নাগরিকের আস্থা দৃঢ় থাকলে তবেই মানুষ সরকার তথা প্রশাসনের নীতি মন দিয়ে মেনে চলেন তা-ই ফুটে ওঠে জনস্বাস্থ্যের প্রতিক্রিয়ায়। সরকারি নির্দেশিকা পালনে, এমনকি নানা কানুনে। প্রশাসনের প্রতি আস্থায় মানুষের সচেতন রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়ে, বাড়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতাও। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকার ও নাগরিকের মধ্যে আস্থার ভারসাম্য থাকলে উন্নয়নের কাজ হয় দ্রুত ও মসৃণ। মানুষ এগিয়ে আসেন অনেক বেশি, উৎপাদনশীলতায় তার সুফল মেলে। অন্যথায় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দুই.
একদিকে দেশ উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। মানুষের মাথাপিছু আয় আড়াই হাজার ডলার ছাড়িয়ে যাচ্ছে। দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্প ছড়িয়ে পড়ছে। বড় বড় মেগা প্রকল্পে সরকার হাজারো কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে। এসব মেগা প্রকল্প সচল রাখতে, আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে সরকার কঠিন শর্তে বড় বড় অঙ্কের ঋণ নিচ্ছে।
অপরদিকে বেশির ভাগ সাধারণ মানুষ, যারা মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা আয় করেন বা স্বল্প আয় করেন, উচ্চ দ্রব্যমূল্যের কারণে নিজেদের খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। মানুষ ঠিকমতো খাবার খেতে পারছে না, নিজেদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারছে না।
দেশ যখন অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছে ঠিক সেই সময়ে বড় দাগে সামাজিক অবক্ষয়ও বেড়ে চলছে। এটাই কি দেশের সুষম বা টেকসই উন্নয়ন?
তিন.
ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের শুরু থেকে বঙ্গীয় সমাজে ‘স্যার’ ডাকা সম্মানসূচক। হালে একশ্রেণির কাছে ‘স্যার’ ডাকটি আদায় করে ছাড়ার বিষয়। সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা পর্যায়ের কিছু ব্যক্তি উন্মুখ হয়ে থাকেন ‘স্যার’ ডাক শুনতে। কিছু করপোরেট হাউসে আবার ব্যতিক্রম। সেখানে নিচু পর্যায়ের কাস্টমারকেও ‘স্যার’ সম্বোধনের সংস্কৃতি চলে। সেখানেও আবার সীমাহীন সাংঘর্ষিক চিত্র। কাস্টমারদের দিক থেকে কাউন্টারের ওপাশের জনকে নাম ধরে ডাকা দূরে থাক, করজোড়ে দাঁড়াতে হয়। কে সেবাদাতা, কে গ্রহীতা বোঝার অবস্থা থাকে না। বছর কয়েক ধরে টিভি-রেডিওতে বিচারকের আসনে বসা শিল্পীকেও গুরুজি-ওস্তাদজির বদলে ‘স্যার’ সম্বোধনের রীতি চালু হয়েছে।
আমাদের এ বঙ্গে ‘স্যার’ চালু করা ব্রিটিশ রাজ্যের দেশেও এখন ‘স্যার’ সম্বোধনের চল উঠে গেছে। ডাকা হচ্ছে, সরাসরি নাম ধরে। নামের আগে ডক্টর-ডাক্তার, প্রফেসর, মিস্টার যুক্ত করা হয় সম্মানের সঙ্গে। কথায় ব্রিটিশদের গাল দিয়ে এক ধরনের তুষ্টিতে ভুগলেও আমাদের তথাকথিত বরেণ্য তথা ক্ষমতাধররা ব্রিটিশদের চালু করা ‘স্যার’-এর ভূত ধরে রাখতে বড্ড আগ্রহী। কিন্তু ব্রিটিশদের ‘স্যার’ পরিহারের শিক্ষা নিতে আগ্রহী নন। তারা কর্র্তৃত্ব, প্রভুত্ব ও আভিজাত্য কায়েম করতে ‘স্যার’ ছাড়তে নারাজ।
বিষয়টি সামন্তবাদী চর্চার। এ ব্যবস্থা অক্ষুণœœ রেখে কেবল ‘স্যার’ কেন তাদের ‘জাঁহাপনা’ সম্বোধন আদায় করে নিতেও বাধা পড়বে না। তারা উপলব্ধিই করতে পারেন না, সামনাসামনি ‘স্যার’ ডেকে মাথা চুলকালেও পেছনে গেলেই গালমন্দ জোটে তাদের ভাগ্যে। আমাদের অধিকাংশ মানুষের মনোজগতে বাস করে ফিউডালিজম বা সামন্তবাদ। আমরা যার যার ক্ষেত্রে একেকজন সামন্ত প্রভু। আমলা তার অধস্তন কর্মকর্তা ও জনগণের সঙ্গে, ডাক্তার রোগীদের সঙ্গে, শিক্ষক ছ্ত্রাছাত্রীর সঙ্গে এবং রাজনীতিবিদ তার সমর্থকদের সঙ্গে সামন্ত প্রভুর মতো আচরণ করেন। আমলার কাছে জনগণ, ডাক্তারের কাছে রোগী, শিক্ষকের কাছে তার শিক্ষার্থীরা যেন প্রজার মতো।
আমরা প্রকৃত ‘স্যার’ হারিয়ে ফেলছি না তো? শিক্ষকদের এখন ‘স্যার’ না ডাকলেও সমস্যা হয় না। কিন্তু তাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষক হয়ে ‘স্যার’ হওয়ার চেয়ে শাসক হয়ে ‘স্যার’ হওয়ার লিপ্সা ভর করছে মারাত্মক পর্যায়ে। কর্মজীবনে প্রশাসক হয়ে ‘স্যার’ হতে যারপরনাই উদগ্রীব তারা। এই মেধাবীদের মধ্যে শিক্ষক-গবেষক হওয়ার চেয়ে শাসক-প্রশাসক হয়ে ‘স্যার’ হওয়ার দৌড় শুরু হয়েছে।
আমাদের পদস্থ ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালীরা সাধারণ জনগণের কাছ থেকে ‘স্যার’ ডাক শুনতে চান, সমীহ চান, সালাম চান। নিজেদের দায়িত্বের কথা ভুলে গিয়ে, জনগণকে সেবা দেওয়ার আইনসঙ্গত কর্তব্যের কথা বিস্মৃত হয়ে তারা মালিকপক্ষ হয়ে যান। রাষ্ট্রের কর্মচারী ও জনগণের সেবক নয়, তারা নিজেদের প্রভু, জমিদার ও ক্ষমতার মালিক ভাবেন। আমাদের রাষ্ট্রীয় চর্চা, রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও প্রচলিত সামাজিক প্রথা জমিদারি ও ফিউডালিজমকে পুষ্ট করে তোলে, উৎসাহ দেয় যেন জমিদার-প্রজা ও প্রভু-ভৃত্য সম্পর্ক ফুলে-ফলে ফুলে-ফেঁপে ওঠে!
চার.
সম্প্রতি বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রুবাইয়া ইয়াসমিন বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীর মাকে বিদ্যালয়ে ডেকে এনে তার পা ধরে মাফ চাইতে বাধ্য করেছেন। এ কারণে ওই বিচারককে ইতিমধ্যে বগুড়া থকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। যে ঘটনার অবতারণা করা হয়েছে, সেটি আর উল্লেখ করলাম না। ইতিমধ্যে ঘটনাটি সবার জানা। নিঃসন্দেহে ঘটনাটি দুঃখজনক ও মর্মান্তিক। বাংলাদেশে তো এখন দাসপ্রথা নেই, জমিদার বা রাজা-রানীও নেই। তাহলে পদস্থ কর্মকর্তা, সম্পদ ও ক্ষমতা যাদের আছে, তারা সাধারণ মানুষকে দাসী-বাঁদি কেন মনে করবেন? সংবিধানে ‘পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’-এর বাংলা করা হয়েছে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’। এ সংবিধানের মুখবন্ধ এবং ৭ অনুচ্ছেদের কারণে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, বাংলাদেশে সব ক্ষমতার উৎস হচ্ছে জনগণ এবং সে জন্য এখানে সাংবিধানিক ও আইনিভাবে কোনো রাজা-প্রজা, প্রভু ও দাস বলে কিছু নেই। এখানে সব মানুষ লিঙ্গ, বর্ণ, ধর্ম ও গোত্র নির্বিশেষে পদমর্যাদাগতভাবে সমান এবং আইনের সমান সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারী।
সেই জজ গত বুধবার বগুড়ার কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মীর কাছে একটি বিবৃতি পাঠিয়েছেন। তিন পৃষ্ঠার সেই বিবৃতিতে তার মেয়ের সঙ্গে সহপাঠীরা নতুন শিক্ষার্থী হিসেবে ‘র্যাগিং’ ও ‘বুলিং’ করার কথা উল্লেখ করেছেন। অথচ এ ঘটনা নিয়ে কোথাও কোনো আলোচনা নেই। বরাবরের মতো গণমাধ্যম, একই সঙ্গে বুদ্ধিজীবীরা তার দায়কে অস্বীকার করেছে।
যে কোনো অবস্থায় ‘র্যাগিং’ ও ‘বুলিং’ এক ধরনের হেনস্তা। কেউ শারীরিক নিগ্রহের সম্মুখীন হন, কাউকে আবার শুনতে হয় কুকথা। তবে এ ধরনের নিগ্রহ ছাড়াও আরেক ধরনের নির্যাতন রয়েছে, যা চোখ এড়িয়ে যায় বহু মানুষের, তা হলো সামাজিক বৈষম্য। মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা বলছে, সামাজিক বৈষম্য এমন এক ধরনের হেনস্থা, যা শারীরিক নিগ্রহ বা কটু কথার থেকেও বেশি দেখা যায়। বিষয়টি খুবই বেদনাদায়ক। যারা বুলিংয়ের শিকার হন, তারা বুঝতে পারেন এ যন্ত্রণা বা কষ্টগুলো কেমন। সাধারণত এ ধরনের হেনস্তার শিকার হলে মানুষের মধ্যে ইমপালস কাজ করে। তার মনে হয়, তার জীবন শেষ হয়ে আসছে, সেখান থেকেই আইসোলেশন ও সুইসাইডের ভাবনা।
কারা এই জাতীয় অত্যাচারের শিকার হয়? দেখা গিয়েছে, সাধারণত শারীরিক বা মানসিকভাবে দুর্বলরাই হয়রানির শিকার হয়। যারা এই বুলিং করেন, তারা মূলত নিজেদের আপার অ্যাগ্রেশন প্রকাশ করতে এই পথ বেছে নেন। বুলিংয়ের শিকার যারা হন, তাদের প্রথমেই চোট লাগে আত্মবিশ্বাসে। প্রাথমিকভাবে তাদের এই ধারণা হয় যে, এ ঘটনা একমাত্র তাদের সঙ্গেই হয়েছে, এই লড়াইয়ে তিনি একা। তার আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। সেই ভাবনা থেকেই ধীরে ধীরে গুটিয়ে যাওয়া, অবসাদ, উৎকণ্ঠায় ভোগা ও একসময়ে আত্মহত্যার কথা ভাবা।
শারীরিকভাবে দুর্বল বা রুগ্্ণ, অতিরিক্ত মোটা, বেঁটে; যারা কোনো শারীরিক বা মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত, অন্যদের সঙ্গে সহজে মিশতে পারে না, বন্ধুবান্ধবের সংখ্যা কম, জাতি-ধর্ম-বর্ণ ইত্যাদি কারণে ক্লাসে সংখ্যালঘু, তারাই সাধারণত এ ধরনের অত্যাচারের শিকার হয়। ‘বুলিং’-এর ফলে নিজের ভেতর সংকুচিত হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। তীব্র মানসিক অবসাদ থেকে আত্মহত্যার ঘটনাও অস্বাভাবিক নয়। অন্যদিকে যারা এ ধরনের হয়রানি ঘটানোর মূলে, তারাও স্বাভাবিক নয়। অনেক ক্ষেত্রেই এদের মধ্যে ব্যক্তিত্বজনিত সমস্যা খুঁজে পাওয়া যায়।
কাউকে আক্রমণ করে নিজেকে শক্তিশালী মনে হলেও, দিন শেষে আয়নার সামনে দাঁড়ালে দেখা যায়, অপূর্ণতা রয়েছে নিজের মধ্যে। তাই পরস্পরকে রক্তাক্ত করার বদলে যদি অনুভূতির পাঠ শেখা যায়, তাহলে সমাজ বাসযোগ্য হয়ে উঠবে। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা আর সম্মানও বাড়বে।
লেখক: সহকারী সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন
১৮৪০ সালের এই দিনে ফ্রান্সের প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন বিশ্বখ্যাত ঔপন্যাসিক এমিল জোলা। বাবা ফ্রাংকোয়িজ জোলা ইতালি বংশোদ্ভূত হলেও মা ছিলেন ফরাসি। বাবার মৃত্যুর পর তার পরিবার ১৮৫৮ সালে ফ্রান্সে চলে আসে। খুব অল্প বয়স থেকেই তিনি লিখতে শুরু করেন এবং তার লেখালেখি শুরু রোমান্টিক ধারার কবিতা দিয়ে। তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে ১৮৭৭ সাল থেকে, যখন ফরাসি ভাষায় লেখা তার বই ‘লা’সআমোর’ প্রকাশিত হয়। মাধ্যমিক পড়াশোনা শেষে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে তিনি বিপণনকেন্দ্র এবং শিপিং ফার্মে কেরানির কাজ করেন। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি আর্থ’ ও ‘দ্য জার্মিনাল’। প্রকৃতিবাদী চিন্তাধারার জোরালো প্রবক্তা ছিলেন তিনি। তার ‘নানা’ বইটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিজাত মহল প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে। কিন্তু বইটি অসম্ভব জনপ্রিয়তা অর্জন করে। উপন্যাস ছাড়া বেশ কিছু ছোটগল্প, প্রবন্ধ ও নাটক লিখেছেন তিনি। ফ্রান্সের উদারনৈতিক রাজনীতির জন্য সব সময় কাজ করেছেন তিনি। নেপোলিয়নের প্রতি ব্যক্তিগত বিরাগ তিনি লুকাতেন না। এ জন্য তাকে নির্বাসিত জীবনযাপনও করতে হয়েছে। ১৯০১ ও ১৯০২ সালে দুবার তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। ১৯০২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়ায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ইট তৈরিতে আলাদা ধরনের মাটি দরকার। সাধারণত বালু-মাটি ও কাদা-মাটি উচ্চতাপে পুড়িয়ে, তৈরি করা হয় ইট। এর বেশিরভাগ অংশ, সিলিকন ডাই অক্সাইড। এ ছাড়া রয়েছে অ্যালুমিনা, আয়রন অক্সাইড, ম্যাগনেশিয়া, সামান্য চুন ও অন্য কিছু পদার্থ। কিন্তু ইটের জন্য বেশি প্রয়োজন- সিলিকা অর্থাৎ বালু ও অ্যালুমিনা বা কাদামাটি। সিলিকা ও অ্যালুমিনার মিশ্রণকে শক্ত ইটে পরিণত করার পেছনে চুনের একটি বড় ভূমিকা থাকে। প্রচণ্ড তাপে এই চুন, সিলিকা ও অ্যালুমিনার মিশ্রণকে শক্ত গাঁথুনি দেয়। ইটভাটায় প্রচণ্ড তাপে নির্দিষ্ট সময় পোড়ালে তৈরি হয় ইট ।
কৃষিজমি ব্যবহার করা হয়, ইট তৈরির মাটির জন্য। ফলে মাটির উপরিভাগ নষ্ট হয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফসল। যে কারণে এখন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে কৃষিজমির মাটি ব্যবহার করা হয় না। কিন্তু সমস্ত ইটভাটায়, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবেই, ইট তৈরিতে দরকার পড়ছে কৃষিজমির মাটি।
গতকাল দেশ রূপান্তরের শেষ পাতায় প্রকাশিত ‘চুরি লুটে ফোকলা হচ্ছে ফসলি জমি’ শীর্ষক প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায়, ঢাকার ধামরাইয়ের কুল্লা ইউনিয়নের পাল্লী মৌজার ৪০ শতাংশ ফসলি জমির মালিক আবুল কালাম আজাদ। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ওই জমি ভোগদখল করছেন। কিন্তু কিছু না জানিয়েই গত ২০ জানুয়ারি দুপুরে ইটভাটার জন্য স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র) দিয়ে তার ফসলি জমিতে গভীর গর্ত করে মাটি কেটে নিয়ে যায়।
তখন ঢাকায় ছিলেন আজাদ। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ধামরাই থানার ওসি, ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অভিযোগ করেন তিনি। কিন্তু মেলেনি কোনো প্রতিকার।
সংবাদে আরও বলা হয়েছে, নিজের ফসলি জমির মাটি লুটের বর্ণনা তুলে ধরে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘পাল্লী মৌজার এক দাগের ৮৫ শতাংশ ফসলি জমির মধ্যে ৪০ শতাংশ আমার। জমির অন্য মালিকদের কাছ থেকে ৪৫ শতাংশ কিনেছে ইটভাটার মালিক সোলাইমানের লোকেরা। কিন্তু পুরো জমির মাটিই কেটে নিয়ে গেছে তারা। আমার ফসলি জমি থেকে প্রায় তিন লাখ টাকার মাটি চুরি করেছে। ঘটনার দিনই আমি থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ করি। কিন্তু পুলিশ কোনো সুরাহা করেনি।’
একই মৌজায় ১৬৫ শতাংশ ফসলি জমি রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা মো. সাখাওয়াতের। তার জমির পাশের একটি জমি থেকে গভীর গর্ত করে প্রথমে মাটি কেটে ইটভাটায় নেয় একই চক্র। পরে সেখান থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে সাখাওয়াতের ফসলি জমি। সম্প্রতি তিনি এর প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন।
সংবাদে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়ার ফলে শুধু জমির উর্বরা শক্তি নষ্ট হওয়াই নয়, পরিবেশের ভারসাম্যও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন পরিবেশবাদীরা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, ‘ইটভাটায় লাগে টপ সয়েল। এটি হারিয়ে যাওয়া মানে ফসলি জমি হারিয়ে যাওয়া। এটি বহু বছরের ফসল। এটি নষ্ট হলে আবার তৈরি হতে বহু বছর সময় লাগে। এটি শুধু আমাদের ফুড সিকিউরিটিতে প্রভাব ফেলবে না, সামাগ্রিক ইকো সিস্টেমেও প্রভাব ফেলবে। কাজেই এটি ঠেকানো দরকার।’
তিনি আরও বলেন, ইটের বিকল্প বিভিন্ন দেশে আবিষ্কৃত হয়েছে। আমাদের দেশেও ইটের বিকল্প ব্লক এবং অন্যান্য ম্যাটেরিয়াল করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আইনেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। সরকারি প্রজ্ঞাপনও জারি হয়েছে। কিন্তু আমাদের সমস্যা আইন বাস্তবায়ন হয় না এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার কোনো জবাবদিহি নেই।
হাজার মানুষের জীবন-জীবিকাকে পুঁজি করে যে গোষ্ঠী দুর্বৃত্তায়নে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে আইনের মুখোমুখি করা জরুরি। অপরাধীকে উপযুক্ত শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা, প্রশাসনের দায়িত্ব। এ বিষয়ে কালক্ষেপণ, কোনোভাবেই কাম্য নয়।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
অপারেশন ছাড়াই সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় আব্দুল মোতালেব হোসেন (৩৫) নামের এক মানসিক রোগীর পেট থেকে ১৫টি কলম বের করেছেন চিকিৎসক।
এ কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক। তাদের এই সাফল্যে রীতিমত হৈচৈ পড়ে গেছে নেট দুনিয়ায়।
এ বিষয়ে আব্দুল মোতালেবের মা লাইলী খাতুন বলেন, তার ছেলে মোতালেব খুব ভাল ছাত্র ছিল। ২টি লেটার মার্ক নিয়ে এসএসসি পাস করে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এরপর খারাপ সঙ্গদোষে সে আস্তে আস্তে মাদকাসক্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এরপর থেকে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ানোর সময় কুড়িয়ে পাওয়া কলমগুলি খাদ্য মনে করে খেয়ে ফেলে। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। গত এক বছর ধরে তার শরীরে জ্বর ও পেটে ব্যথা শুরু হয়। অনেক চিকিৎসার পরও তা ভালো হচ্ছিল না। অবশেষে গত ১৬ মে তাকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। এখানে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার অসুখের কারণ ধরা পড়ে। পরে চিকিৎসকরা তার পেটের ভিতর থেকে বিনা অপারেশনে কলমগুলো বের করে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মোতালেব হোসেন প্রথমে পেটে ব্যথা নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করেও পেটে কি সমস্যা সেটা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। ফলে রোগীটিকে আমার কাছে রেফার্ড করেন। এন্ডোস্কপির মাধ্যমে পরীক্ষা করে তার পেটের ভেতর ১৫টি কলম দেখে প্রথমে চমকে যাই। এটা কীভাবে সম্ভব। পরে এন্ডোস্কপির মাধ্যমেই অপারেশন ছাড়াই আমরা কলমগুলো বের করার সিদ্ধান্ত নেই। তিনি আরও বলেন, কাজটি আমাদের জন্য দারুণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কলমগুলো একে একে পাকস্থলীতে সেট হয়ে গিয়েছিল। কলমগুলো বের করতে আমাদের প্রথমে মাথায় চিন্তা ছিল যেন, কলমগুলোর কারণে কোনোভাবেই শ্বাসনালিতে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ না হয়ে যায়। এছাড়াও রক্তক্ষরণের একটা চিন্তাও মাথায় ছিল। অতঃপর প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আমরা কলমগুলো বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হই।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এন্ডোস্কপি করা ব্যক্তি মানসিক অসুস্থ হওয়ায় তার কলম খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এভাবে খেতে খেতে সে অনেক কলম খেয়ে ফেলে। কলমগুলো তার পেটের মধ্যে জমা হয়েছিল। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তার পেটের ভিতর ১৫টি কলম থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হই। এবং অপারেশন ছাড়াই এন্ডোস্কপির মাধ্যমে তার পেটের ভেতর থেকে একে একে ১৫টি আস্ত কলম বের করে আনি। বর্তমানে রোগীটি সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সুস্থ আছেন।
তিনি আরও বলেন, এন্ডোস্কপির মাধ্যমে মানুষের পেট থেকে কলম বের করার মতো ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। তাও আবার একটি-দু‘টি নয় ১৫টি কলম। এর আগে ঢাকা মেডিকেলে এক ব্যক্তির পেট থেকে এন্ডোসকপির মাধ্যমে একটি মোবাইল বের করেছেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এমন সাফল্য এটাই প্রথম। আমরা অত্যাধুনিক ভিডিও এন্ডোস্কপি মেশিনের মাধ্যমে এবং আমাদের দক্ষ ডাক্তার দ্বারা অপারেশন ছাড়াই শুধু এন্ডোস্কপির মাধ্যমে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পেট থেকে ১৫টি কলম বের করে আনতে সক্ষম হয়েছি। শুধু এটাই নয়, আমরা বিনা অপারেশনে পেটের পাথর, কিডনিতে পাথর থেকে শুরু করে অনেক কিছুই অপারেশন ছাড়াই সেগুলো অপসারণের কাজ করে যাচ্ছি।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।