
ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে প্রচুর সমালোচনা করি। ইদানীং নরেন্দ্র মোদি সরকারের বৈদেশিক নীতিও কখনো সখনো নিন্দার মুখে পড়ছে। একদা জোটনিরপেক্ষ ভারত হালে পড়শি দেশগুলোর সঙ্গে নানা সময়েই বিবাদ-বিসম্বাদে জড়িয়ে পড়ছে এতো সাদা চোখেই দেখা যায়। চীন, পাকিস্তান বাদ দিলাম। নেপাল ও ভুটানের মতো চিরবিশ্বস্ত প্রতিবেশীও আজকাল আপাত তুচ্ছ কারণে ভারতবিরোধী মন্তব্য করছে যা কাক্সিক্ষত নয়।
হতে পারে কৌশলগত কোনো সমস্যা ভারত সরকারের আছে। নীতির প্রশ্নেও এই সরকারের রাফ অ্যান্ড টাফ ভাবমূর্তি গড়ে তোলার আকাক্সক্ষাও হিতে বিপরীত হচ্ছে, হতেই পারে। তবে এটা না বললে অন্যায় হবে যে, ভারতের এখন একমাত্র মিত্র দেশ বাংলাদেশ ছাড়া অন্য পড়শিরা সবাই ধোয়া তুলসীপাতা নয়। কাশ্মীর প্রশ্নে পাকিস্তানের ভূমিকা পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যেমন যায় না, হালের সবচেয়ে হৈচৈ ফেলে দেওয়া খালিস্তান ইস্যুতে পাকিস্তানের ইন্ধন আছে বলে ভারত সরকারের অভিযোগ।
কয়েকদিন ধরে খালিস্তান আন্দোলন যেভাবে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ একাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। একের পর এক দেশে ভারতের দূতাবাস আক্রান্ত হচ্ছে। দেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে খালিস্তানি পতাকা তোলা রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের সাংবাদিকদের মারধরের ঘটনা ঘটছে।
ভারতের মিডিয়ায় কিছুদিন ধরেই উঠে আসছে অমৃতপাল সিং বলে এক তরুণের নাম। মাত্র ছ’মাস আগেও কেউ এই অমৃতপালের নাম শোনেননি। দুবাইয়ের একদা বাসিন্দা এই অমৃতপাল সিং এখন ভারতীয় প্রশাসনের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছেন। ছদ্মবেশে তিনি যেভাবে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে গা ঢাকা দিয়ে পালাচ্ছেন তা হলিউডের সিনেমার রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনাকেও পেছনে ফেলে দেবে।
আপাত সাধারণ চেহারার অমৃতপাল সিংয়ের রাতারাতি উত্থান সত্যিই যে কোনো রহস্য রোমাঞ্চ উপন্যাসকেও হার মানাবে। পুলিশ হন্যে হয়ে তাকে খুঁজে চলেছে আর তিনি দিল্লির পাবলিক বাস টার্মিনাল অথবা কোনো ধাবায় বসে, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে খোশগল্প করছেন। পুলিশ সেখানে পৌঁছবার ঠিক আগের মুহূর্তে পোশাক পাল্টে পালিয়ে যাচ্ছেন। ঘণ্টায় তিনি কুবার যে পোশাক পাল্টে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়েছেন তা নিয়েই গবেষণা হতে পারে। এর থেকে একটা ধারণা করা যায় যে, অমৃতপালের পেছনে নিশ্চিত জনসমর্থন রয়েছে। তা যে আছে তাও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল কয়েকমাস আগে অমৃতপালের এক সহযোগীকে অ্যারেস্ট করে পাঞ্জাবের এক থানায় নিয়ে আসার পরে। হাজার হাজার উন্মত্ত জনতা খোলা তলোয়ার হাতে থানায় হামলা চালাবার পরে পুলিশ বাধ্য হয়ে অমৃতপালের দাবি মেনে তার সহযোগীকে মুক্তি দেয়। এই সাফল্য অমৃতপালকে আরও সাহসী, উদ্ধত, আর আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। স্বঘোষিত এই খালিস্তানি নেতা এখন এতটাই ভয়ডরহীন যে, খোলাখুলি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছেন ভারত সরকার ও মাননীয় স্বরষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে আগামী দিনে খালিস্তানি দাবি মেনে না নিলে তাদের পরিণতিও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর মতো হবে।
কমবেশি সবাই জানেন ১৯৮৪ সালে অপারেশন ব্লু স্টার শিরোনামে মিলিটারি হামলায় শহীদ হয়েছিলেন খালিস্তানি আন্দোলনের বিতর্কিত নেতা ভিনদ্রেন ওয়ালা ও তার কয়েকশো অনুচর। শিখদের পবিত্র ধর্মীয় স্থানে হামলা চালানোর ‘অপরাধে’ শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে নির্মমভাবে গুলি করে খুন করা হয়েছিল। শ্রীমতী গান্ধী নিহত হয়েছিলেন তার দুই দেহরক্ষী সন্ত সিং ও বিয়ন্ত সিংয়ের হাতে।
সাধারণভাবে বলা যায় যে, গত শতকের আশির দশকে খালিস্তানি আন্দোলন যেভাবে ভারত সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছিল, এবারে অনেকদিন বাদে সেরকম চেহারা নিয়ে খালিস্তানি আন্দোলন ফের মাথাচাড়া দিচ্ছে, এরকম ইঙ্গিত মিলছে বলেই সরকার এত চিন্তিত।
বস্তুত কয়েক বছর আগে দিল্লিতে ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের সময় আচমকা কৃষক নেতাদের হতবাক করে দীপ সাধু বলে এক জনপ্রিয় অভিনেতা লাল কেল্লায় জাতীয় পতাকা নামিয়ে খালিস্তানি ফ্ল্যাগ তোলার পর গোটা আন্দোলন প্রশ্নের মুখে পড়ে। সরকার সরাসরি কৃষক রাজনীতি আদতেই পাঞ্জাব হরিয়ানার খালিস্তানি মুভমেন্টের ছদ্মবেশে পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র বলে চিহ্নিত করতে সক্রিয় হয়ে ওঠে।
যদিও তা যে সত্যি নয় তাও সঙ্গে সঙ্গে কৃষক নেতারা বিবৃতি দিয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করেছিলেন। বরং মোটামুটি প্রমাণ করা গিয়েছিল যে দীপের সঙ্গে শাসক দলের অনেকেরই সম্পর্ক গভীর। সেক্ষেত্রে পুরো আন্দোলনের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে শাসকদের তরফে দীপকে কাজে লাগানো হয়েছিল এই অভিযোগ জোরালো হতে থাকে।
তখনই জানা যায় যে দীপ সাধু একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে তুলেছেন। তিনিই সেই সংগঠনের প্রধান। আপাত দৃষ্টিতে সরকার কৃষকদের দাবি মেনে নেওয়ার পরে আন্দোলন উইথড্র হলো। দীপ কোনো অজ্ঞাত কারণে তারও কিছুদিন বাদে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গেলেন। দীপের জায়গায় সংগঠনের মাথা হয়ে ধীরে ধীরে শিরোনামে আসতে থাকলেন অমৃতপাল সিং। যাকে অনুগামীরা বলছেন দ্বিতীয় ভিনদ্রেন ওয়ালা।
পাঞ্জাবের সমস্যার পেছনে একটা কারণ নিঃসন্দেহে দেশভাগ। মুসলিম অধ্যুষিত অমৃতসর পেল ভারত। আর হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ লাহোর গেল পাকিস্তানে। বস্তুত ১৯৪৭-এ দেশ বিভাজনের ঝড় বাংলার চেয়ে অনেক তীব্র আকারে তছনছ করেছিল পাঞ্জাবকে। অত রক্তপাত, খুন, নারী নির্যাতন, লুট, বীভৎসতা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। দুই পাড়েই চেহারা হয়ে উঠেছিল মারাত্মক। আমরা যখন দেশভাগের আলোচনা করি তখন সাধারণ ভাবে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের কথাই বলি। ব্রিটিশদের সঙ্গে শেষ সময়ের দরকষাকষির প্রশ্নেও জিন্নাহ, গান্ধী, নেহরু, প্যাটেল নামগুলোই ঘুরেফিরে আসে। অথচ মাস্টার তারা সিং ও অন্য শিখ নেতাদেরও কিছু বক্তব্য থাকলেও তা কখনো গুরুত্ব দিয়ে শোনা হয়নি। হিন্দু-মুসলমানের পাশাপাশি এই এক চিলতে ধূসর লাইন বা গ্রে-এরিয়াকে পাত্তা না দিলে কি হবে, সেই ফাটল কখনো জোড়া লাগেনি। ধূসর রং ক্রমশ স্পষ্ট হতে হতে বিপজ্জনক চেহারা নিচ্ছে তা টের যে কেউ পাননি তা নয়, কিন্তু সামাল দেওয়ার পথ নিয়ে মতপার্থক্য খালিস্তানি আন্দোলনকে মাঝেমধ্যেই তীব্র করে তুলছে। শিখ-গরিষ্ঠ পাঞ্জাব দেশভাগের পরেও বারেবারে ভাগ হয়েছে। হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা নানা খ- অংশ পাঞ্জাবি স্বাভিমানকে সময় সময় ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। তাদের মনে হয়েছে দেশের স্বাধীনতার জন্য বিপুল রক্তদানের পরেও তাদের গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ১৯৭৩ সালে আনন্দ সাহেব প্রস্তাব, এক অর্থে আজকের খালিস্তানি মুভমেন্টের সূচনাপর্ব। তবে তা ছিল মোটামুটি কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের পুনর্বিন্যাস বা রাজ্যের হাতে অধিক ক্ষমতা দেওয়ার দাবি।
ভিনদ্রেন ওয়ালা আত্মপ্রকাশ করেছিলেন আনন্দপুর সাহেব প্রস্তাব সমর্থক হিসেবে। আস্তে আস্তে তিনি গোটা মুভমেন্টকে হাইজ্যাক করেন নরমপন্থি আকালি নেতাদের হাত থেকে। পাঞ্জাব আশির দশকে গৃহযুদ্ধের চেহারা নেয়। নৈরাজ্যবাদী আন্দোলন জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে। শোনা যায় আকালি দলের জনপ্রিয়তা রুখতে একসময় কংগ্রেসের ইন্ধন ছিল ভিনদ্রেন ওয়ালাকে সামনের সারিতে নিয়ে আসার। ঘটনাচক্রে সেই হয়ে দাঁড়ায় ফ্রাঙ্কেনস্টাইন। তারপরের বিয়োগান্ত নাটকের নানা দৃশ্য তো আগেই বলেছি। শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর দুর্ভাগ্যজনকভাবে যে শিখ দাঙ্গা ঘটেছিল তাতে নিরীহ শিখ হত্যাও বীর জাতির শিখ আত্মাভিমানে ঘা দিয়েছিল। অনেকেই দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়ে ছিলেন। ষাটের দশকের সবুজ বিপ্লব পাঞ্জাবের অর্থনীতি বদলে দিয়েছিল। ক্ষমতা ও অর্থ কেন্দ্রীভূত হয়েছিল কয়েকজনের হাতে। তারা আরও ক্ষমতার দাবি নিয়ে পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল খালিস্তানি মুভমেন্টের। ছিল নয়, আজও আছে বলেই বিদেশের মাটিতে খালিস্তানি আন্দোলন এত শক্তিশালী।
১৯৭১ সালে অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের জন্ম হওয়ার পরপরই নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রথম জানান দেওয়া হয়েছিল খালিস্তান শব্দটি। চাঁদা তোলার শুরু ওই বিজ্ঞাপনের সাহায্যেই। শোনা যায় ওই সময় থেকেই পাকিস্তানের সহায়তা পেতে থাকে খালিস্তানি আন্দোলন।
লেখক: ভারতীয় প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার টিয়াখালী ইউনিয়নের ছয়ানিপাড়াটি গড়ে ওঠে ১৭৬০ সালের দিকে। পাড়ার প্রবীণ বংশে মাতবর, ফ্রুমায়ে, সুইনমা কিংবা প্রুমাইয়ে যখন বসতিস্থাপনের সব অবিস্মরণীয় আখ্যান গল্প করছিলেন, তখন চারধারে জমাট বেঁধেছিল জন্মমাটি হারানোর যন্ত্রণা। দেশের স্বার্থে, পায়রা বন্দরের জন্য প্রাচীন গ্রামখানি ছেড়ে দিতে হয়েছিল। ছয়ানিপাড়ার রাখাইনরা অর্থনীতির মানদ-ে ‘গরিব’। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে উদ্বাস্তু। কোনো কর্তৃপক্ষ, এলিট, সুশীল বা কুশীল, ইউটিউবার বা বাইরের কেউ এসে ছয়ানিপাড়ার মানুষের রুচি গড়ার দায়িত্ব নেয়নি। ঐতিহাসিকভাবে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের নানামুখী ব্যঞ্জনা কী আঘাতের ময়দানেই গড়ে উঠেছে ছয়ানিপাড়ার ব্যক্তি ও সমষ্টির রুচি। হয়তো এর কোনো মাপকাঠি নেই, তল-অতল নেই, ঝুঁকে পড়া বা ঝম্প কোনোটাই নেই। কিন্তু ছয়ানিপাড়ার গীতবাদ্য, বুননের বয়ান কিংবা জগৎদর্শনে তীব্র হয়ে আছে চারধারের বাস্তু ও প্রাণের পরম্পরা। আর এ কেবল এক সমুদ্র উপকূলের গ্রাম নয়, দেশের সর্বত্র গ্রামজীবনে এভাবেই বিকশিত হয়েছে জনরুচির বিস্ময়কর বিভা।
প্রাকৃতিক কী সাংস্কৃতিক বৈভবের যা কিছু উচ্চারিত এবং সর্বব্যাপী সৃজনশীলতায় নিয়ত বিকশিত তার সবই দেশের গরিব মানুষের নির্মাণ-বিনির্মাণ। আর এর প্রাণভোমরা দেশের গরিব নিম্নবর্গের জনরুচি। নওগাঁর কুসুম্বা মসজিদ কিংবা দিনাজপুরের কান্তজির মন্দিরের নির্মাণশৈলী ডাকসাইটে প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা কোনো স্থপতির নয়, একেবারেই গ্রামীণ মেহনতি মজদুরের। দুনিয়া কাঁপানো জামদানি কিংবা পাহাড়ের বেইন তাঁতের নকশা ও বুননের কারিগর কারা? নাটোরের কাঁচাগোল্লা কিংবা মুক্তাগাছার মন্ডা, টেপাপুতুল, শখের হাঁড়ি, শোলাশিল্প, কাঁসাশিল্প, মুখোশ, নকশি কাঁথা, দারুশিল্প, রিকশাচিত্র, খেলনা, সরাচিত্র, আলপনা কিংবা তীর-ধনুকের কারিগররা সমাজের কোনো ধনী বিত্তবান প্রভাবশালী ক্ষমতাধর ছিলেন না। সমাজ কী রাষ্ট্র এসব নির্মাণের জন্য ঘটা করে কোনো আয়োজনও জারি রাখেনি কখনো। সর্বকালে সর্বভূগোলে গরিব নিম্নবর্গই বিকশিত করেছে জনরুচি ও জনসংস্কৃতির ময়দান।
আজ জনরুচি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমন নয় যে, জনরুচি নিয়ে প্রশ্ন তর্ক বা বাহাস জারি ছিল না। তবে দুই ভিন্ন মাধ্যমের দুই গুরুত্বপূর্ণ মানুষের ভেতর দিয়ে তর্কটি এবার ছড়িয়েছে। নাট্যজন মামুনুর রশীদ, মঞ্চ থেকে পর্দা সর্বত্র যার সৃজনশীলতার রক্তঘাম আছে। ইউটিউবার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, যার মূল কর্মক্ষেত্র। ‘রুচির দুর্ভিক্ষের কারণে সমাজে হিরো আলমদের সৃষ্টি’ মামুনুর রশীদের এমন বক্তব্যে হিরো আলম চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছেন, কেউ তাকে সৃষ্টি করেনি, বহু পরিশ্রমে তিনি নিজেকে গড়েছেন। চলতি আলাপখানি ‘রুচির দুর্ভিক্ষ’, ‘হিরো আলম’, ‘মামুনুর রশীদ’ কিংবা ‘সুশীল-কুশীল তর্ক’ নিয়ে নয়। গরিব নিম্নবর্গের সাংস্কৃতিক দায় ও জনরুচির সীমানা নিয়ে হিরো আলম যে প্রশ্ন তুলেছেন তা ঐতিহাসিকভাবে ‘ভুল’। শিতালং শাহ, দূরবীণ শাহ, রাধারমণ, শাহ আবদুল করিম, জালাল কিংবা রমেশ শীল ধনী ছিলেন না, কিন্তু কোনো দিন তারা নিজেদের ‘গরিবত্বকে’ সৃজনশীলতা বিকাশের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেননি। ‘আলোচিত’ হিরো আলম এটাই বারবার করছেন। নিজেকে গরিব, অর্থ-বিত্ত-চেহারা নেই বলে প্রচলিত ক্ষমতাকাঠামো তার ‘সৃষ্টিশীলতাকে’ গুরুত্ব দেয় না বলে বারবার নানাভাবে তুলে ধরেছেন। এমনকি এও বলছেন, তিনি যা আয় করেন তা দিয়ে ‘এরচেয়ে রুচিশীল’ কিছু তৈরি কঠিন। কিন্তু রুচিশীলতার কোনো মাত্রা, মাপ, পরিধি বা গন্ডি আছে কী? আমরা অযথাই এখানে ক্ষমতাধর ও ক্ষমতাহীনের ঐতিহাসিক দ্বন্দ্বকে টানছি না। কিন্তু বারবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জন্য নিজের বানানো ‘কনটেন্টকে’ তিনি একজন ‘গরিব মানুষের’ সৃষ্টিশীলতা হিসেবে দাঁড় করানোর অহেতুক বাগাড়ম্বর করে যাচ্ছেন। যা দেশের মেহনতি গরিব নিম্নবর্গের ঐতিহাসিক সৃজনশীলতা ও বিকশিত জনরুচির প্রতি অসম্মান এবং মিথ্যাচার। তিনি যা ভিডিও কনটেন্ট বানিয়েছেন তা কোনোভাবেই দেশের গরিব নিম্নবর্গের সৃজনশীলতা ও সৃষ্টিশীল রুচি-ভূগোল নয়। হতে পারেন তিনি গরিব, ক্ষমতাহীন এবং সামাজিকভাবে প্রান্তিক। কিন্তু এ কারণে তার ‘তথাকথিত কনটেন্ট’ দেশের গরিবের প্রতিনিধিত্বশীল জনসংস্কৃতির অংশ হয়ে যায় না। গরিব ও ক্ষমতাহীনের সংস্কৃতি ও ইতিহাস ‘তথাকথিত মূলধারায়’ স্বীকৃত ও গণ্য হয় না। এমনকি মুদ্রিত ও অমুদ্রিত সৃষ্টিকর্ম নিয়েও আছে স্বীকৃতি-অস্বীকৃতির বহু দরবার। কিন্তু এই বিশ্লেষণ কাঠামো হিরো আলমের ‘ভিডিও কনটেন্টকে’ নিপীড়িত গরিব জনতার সৃজনশীল জনরুচির অংশ মনে করে না। কারণ তার কনটেন্ট খুব বেশি ব্যক্তিনির্ভর, প্রকৃতি ও সংস্কৃতির প্রতি অসংবেদনশীল। এসব কনটেন্ট সমষ্টির প্রতি দায়বদ্ধ ও দায়িত্বশীল নয় এবং ঐতিহাসিকভাবে অরাজনৈতিক।
শেরানজিং পালা রচিত হয়েছে গরিব মান্দি সমাজে কিংবা কারবালার জারি রচনা করেছে গ্রামীণ নিরক্ষর মানুষরা। মৈমনসিংহ গীতিকা কিংবা গাজীর গান রচনা করেছেন কিন্তু গরিব মানুষরাই। তাহলে সমাজ কেন বংশ থেকে বংশে এসব পালা, গীত ও পরিবেশনা বহন করে চলেছে। গরিব, নিরক্ষর, চেহারা হয় না, পোশাক হয় না, অভদ্রলোকের বলে চুরমার করে ছুড়ে ফেলেনি। তবে এসব করতে গিয়ে প্রতিদিন প্রতিরাত ক্ষমতাকাঠামোর প্রবল প্রতাপ আর রক্তআঘাত সইতে হয়েছে আমাদের অবিস্মরণীয় সব সৃষ্টিশীল কারিগরদের। যাদের কেউ নিজে ‘গরিব বলে কিংবা চেহারা নেই বলে’ ঘ্যানর ঘ্যানর প্যানর প্যানর করেননি। নিজের রক্তঘামে সমাজ-রাষ্ট্রব্যবস্থার চাবুক সয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠ কীর্তিগুলো হাজির করেছেন। যেসব কীর্তির ভেতর দিয়ে বহমান হয়েছে আমাদের জনরুচির স্রোত। বিস্তৃত বাংলা অঞ্চলে গ্রামীণ ছড়া, গাঁথা, ধাঁধা, শ্লোক, পই, ডাক, ডিঠান, হীলুক, পুঁথি, রে-রে, আজিয়া, গীত, রয়্যানি, উভোগীত, পালা, বান্ধা, কিসসা, কাহিনি, ঝাড়া, মন্ত্র কী প্রবাদের মতো নানান রূপ ও ধাপে অস্তিত্বশীল হয়েছে গরিব নিম্নবর্গের জনরুচি। কার সাহস আছে জনসংস্কৃতির এই ভিত্তিমূলকে অস্বীকার করে? দেশের গরিব মানুষ, নিরক্ষর মানুষ, যাদের হয়তো কথিত চেহারা বা ভদ্র পোশাক নেই, এই গরিষ্ঠভাগ মানুষরাই এই ভূগোলের ধরা কী অধরা জনসংস্কৃতির নির্মাতা। নিজেকে গরিব কী ক্ষমতাহীন জাহির করে আজ যেকোনো কিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ভাইরাল’ করে বা বাণিজ্য করে বা রটিয়ে দিলেই কী সেই তথাকথিত কনটেন্ট ‘সৃজনশীল’ হয়ে যায়? এসব কনটেন্টের সঙ্গে বাস্তুতন্ত্র, শ্রেণি লড়াই কিংবা বহুমুখী জীবনদর্শনের পরম্পরা নেই কেন? বাউল উকিল মুন্সী কিংবা কাঁথাশিল্পী সুধা রানী বর্মণও অতি গরিব মানুষ ছিলেন। আজও তাদের সৃষ্টি হাওর কিংবা শালবনকে উথাল-পাথাল করে কেন? রাষ্ট্র কী সমাজ কেউ কিন্তু তাদের শিল্পীসত্তার বিকাশ কিংবা সৃজনশীল রুচিনির্মাণে দায়িত্ব পালন করেনি। অবশ্যই রাষ্ট্র ও ব্যবস্থা মানুষসহ প্রাণ প্রকৃতির অপরাপর প্রাণসত্তার জন্যও কোনো নিরাপদ সুরক্ষাবলয় জারি রাখেনি। মানুষ তবুও বলতে পারছে তার কথা বলার স্বাধীনতা নেই, কিন্তু একটা হাতি বা পতঙ্গের এটি বলারও জায়গা নেই। তার বাদেও প্রকৃতি ও সমাজ রুদ্ধ হয়নি, মেহনতি নিম্নবর্গ চারধার গুটিয়ে বসেনি। নিরন্তর লড়াইয়ে শামিল। গরিব নিম্নবর্গের কাছে সৃষ্টিকর্ম নিছক কেবল বিনোদন বা সৃজনশীল উপাদান নয়; যাপিতজীবনের লড়াই ও অস্তিত্বের অংশ। হিরো আলমের ইউটিউব কনটেন্ট তার ব্যক্তিগত কাজ হতে পারে, কিন্তু তা সমষ্টির লড়াই ও অস্তিত্বকে কোনোভাবেই স্পর্শ করে না।
হিরো আলম নিজের সৃজনকর্মের ‘ব্যর্থতা’ (জানি তাকে নিয়ে যা হবে তাতে তার কিছু ব্যবসা হবে, যা, নয়াউদারবাদী করপোরেট মুনাফাকে আরও পোক্ত করবে) বারবার অন্যদিকে ঢাকতে নিজের ‘গরিবিপনাকে’ তুলে ধরে ‘ভার্চুয়াল দুনিয়ায় সরব জনগণের সমর্থন ও সহানুভূতি’ আদায় করতে চেয়েছেন। হিরো আলম আরেকটি হিরো আলম বানানোর চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন। দেশের যেকোনো প্রান্তের গরিব মানুষের যেকোনো সৃষ্টিকর্ম বা সৃজনশীল তৎপরতা কিন্তু কোনো দিনও হিরো আলমদের এমনতর চ্যালেঞ্জ দেবে না। কারণ গলাবাজি, চ্যালেঞ্জ, বাগাড়ম্বর কিংবা মিথ্যাচার দিয়ে জনসংস্কৃতির বিকাশ হয় না। রুচির দুর্ভিক্ষের কারণেই হিরো আলমদের কনটেন্টগুলো ক্রিয়াশীল হয় কিনা এ নিয়ে লম্বা বাহাস চলতে পারে। কারণ এতে ব্যক্তি হিরো আলমের যত না যুক্ততা, হয়তোবা আরও বেশি নয়াউদারবাদী করপোরেট উস্কানি আছে। সস্তা কনটেন্ট ও সহজ কনটেন্ট ক্রিয়েটরের মাধ্যমে বহু ব্যবহারকারীর ভেতর দিয়ে একটা বৃহৎ পুঁজির ভার্চুয়াল বাজার দখল করা সম্ভব হয়েছে। যদিও চলতি লেখাটি এসব নিয়ে নয়। লেখাটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এটি বলতে চেয়েছে, দেশের গরিব নিম্নবর্গের মানুষই দেশের সৃজনশীলতার কুসুম বিকশিত করেছেন। কোনোভাবেই গরিব হিসেবে জাহেরকারী হিরো আলমের ইউটিউব ভিডিও কনটেন্ট দেশের গরিব জনতার বৈচিত্র্যময় রুচি ও উচ্চমার্গীয় জনসংস্কৃতির সঙ্গে যায় না। কে কাকে কেন কীভাবে তৈরি করে বা করেছে সেসবও এই আলাপের কোনো বিষয় ছিল না। আশা করি, আমরা মামুনুর রশীদসহ সমাজে বহুধাবিভক্ত শ্রেণির সৃষ্টিপ্রয়াস এবং দেশের গরিব নিম্নবর্গের সামগ্রিক সৃজনশীলতার বলয় থেকে জনরুচির স্রোতকে পাঠ করতে পারব। যেখানে হিরো আলম অবশ্যই থাকবেন, কিন্তু তার সেসব ইউটিউব কনটেন্ট নিয়ে নিশ্চয়ই নয়। এটি সত্য, বহু বদলের ভেতর প্রতিনিয়ত জনসংস্কৃতি ও জনরুচির স্রোত ওলটপালট হয়েছে। দেশের নদীপ্রবাহের সঙ্গে গড়ে উঠেছে আমাদের জনরুচির স্রোতপ্রণালি কিন্তু প্রতিদিন নির্দয়ভাবে দেশের নদীগুলো খুন হওয়াতে কেবল উৎপাদন সম্পর্ক নয়, এর আঘাত লেগেছে জনসংস্কৃতির চরণরেখাতেও। জুম আবাদ নেই, অথচ শহরের মঞ্চে জুমনৃত্য করছে আদিবাসী মেয়ে। হাতিবান্ধা কী নয়নতারা ধান নেই, কিন্তু শহরে আয়োজিত হয় নবান্ন। নদীর কলিজা উপড়ে রাস্তা কিংবা পাহাড় খুন করে ইমারত। প্রাণ-প্রকৃতিতে অবিরাম এই নির্দয় রক্তক্ষরণ দেশের গরিব মানুষের জনসংস্কৃতিতে আছে। বিশেষ করে তথাকথিত সবুজ-বিপ্লব পরবর্তী সময়ে কেবল কৃষি উৎপাদন নয়, আমূল পরিবর্তন ঘটেছে সমাজ-সংস্কৃতি ও মনস্তত্ত্বে। এর সঙ্গে গার্মেন্টস বাণিজ্য এবং প্রবাসী শ্রমিকের আয় সব মিলিয়ে দেশের ভূগোল ও সামাজিক বিন্যাস ভীষণভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। বদলেছে বাণিজ্য, প্রযুক্তি ও মুনাফার ধরন। ময়দান, মঞ্চ, পর্দা সরিয়ে সহস্র কোটি হাত দখল করেছে মোবাইল ফোন। হিরো আলম কিংবা মামুনুর রশীদ বা আমরা কে কীভাবে এই প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হচ্ছি কিংবা আমাদের কার কী দায় ও দায়িত্ব এসব নিয়ে পরে লম্বা আলাপ হবে নিশ্চয়ই।
লোকসংস্কৃতি ও লোককৃত্যের ভেতর প্রতীকের বর্ণনা দিতে গিয়ে উইলিয়াম জি. গ্রে উল্লেখ করেন, প্রতীক হলো বিষয় ও বিষয়ীর অস্তিত্বের ভেতর এক নিরীক্ষাধর্মী সংযোগ। অধিকাংশ সময় দেখা যায়, নিম্নবর্গের সৃষ্টিকাহিনিগুলোকে কেবল এক ধরনের ‘ফ্যান্টাসি’ বা ‘শখের বিনোদন’ কী ‘প্রাচীন আমলের আদিম ধারণা’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। যদিও অধিপতি ব্যবস্থায় এসব ধারণা বদলাচ্ছে। লোকগবেষক ফ্লোরডা ডিভাটিন জানান, ঐতিহ্যগতভাবে জনসংস্কৃতির কথকতা মানবসমাজের রূপকে তুলে ধরে, যা সমাজের সদস্যদের আবেগ, চিন্তা, সাংস্কৃতিক ধারকে আশ্রয় করে বাহিত হয়। সমাজের সব সদস্যের দায়িত্ব হলো কথকতা ও সামাজিক স্মৃতিকথা থেকে বিস্মৃত না হওয়া, একে সচল রাখা। মামুনুর রশীদকে কৃতজ্ঞতা, জনরুচির প্রশ্নটি নিয়ে নানা প্রজন্ম নানামাধ্যমে কথা বলছে। গরিব, প্রান্তিক, দুর্বল বলে হিরো আলম কিংবা কাউকেই দাবিয়ে রাখা যাবে না, কোনো অন্যায় নিপীড়ন করা যাবে না, তার নেতৃত্বকে সুরক্ষা দিতে হবে। কিন্তু তাই বলে এমন কারও কোনো কনটেন্ট ‘সৃষ্টিকর্ম’ হিসেবে সৃজনশীলতাকে আঘাত করতে পারে না। তাতে দেশের গরিব নিম্নবর্গের সহস্র বছরের রক্তঘাম আর সৃষ্টিসাধনার সঙ্গে অন্যায়-অবিচার করা হয়। আশা করি, জনরুচির এই তর্ককে আমরা দেশের মেহনতি নিম্নবর্গের যাপিতজীবনের লড়াই ও চিন্তাদর্শনের ভেতর দিয়ে পাঠ করার প্রস্তুতি নেব।
লেখক: গবেষক ও লেখক
বর্তমান বাংলাদেশের পরিবেশদূষণের অন্যতম অনুষঙ্গ অত্যধিক প্লাস্টিকের ব্যবহার, বিশেষ করে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিনের মাত্রাতিরিক্ত চল। দেশে মাথাপিছু পলিথিনের ব্যবহার দিনে দিনে বেড়েই যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, ২০০৫ সালে বাংলাদেশে মাথাপিছু পলিথিনের ব্যবহার যেখানে ছিল মাত্র ৩ কেজি, যা ২০২০ সালে এসে দাঁড়ায় ৯ কেজিতে, ঢাকা শহরে এটি ২২ কেজিরও বেশি। ঢাকা শহরে যে বর্জ্য তৈরি হয় তার প্রায় ১০ শতাংশ প্লাস্টিক পণ্য থেকে আসে। বলা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে প্লাস্টিকের ব্যবহার মাথাপিছু ৩৪ কেজিতে পৌঁছাতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২০ সালে দেশে নয় লাখ ৭৭ হাজার টন পলিথিনের ব্যবহার করা হয়েছে, যার মাত্র ৩১ শতাংশ পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করা হয়েছে। যদিও সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় প্রণীত টেকসই প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত জাতীয় পরিকল্পনা অনুযায়ী একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার ২০২৬ সালের মধ্যে ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। ২০২১ সালের শেষার্ধে প্রকাশিত ওই ডকুমেন্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে প্লাস্টিক দূষণের হটস্পট হচ্ছে ঢাকা শহর, ঢাকা শহরের চার পাশের চারটি নদী, চট্টগ্রাম শহর এবং কক্সবাজার। ঢাকার বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, টঙ্গী খাল ও শীতলক্ষ্যা নদী, এমনকি মেঘনা নদী, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদী, চাকতাই খাল এবং পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকা, কক্সবাজার শহর ও সৈকত এলাকা প্লাস্টিক বর্জ্যরে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত।
বাংলাদেশ ২০০২ সালে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে প্লাস্টিকের শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধ করে। শুধু তাই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে ২০২০ সালে আমাদের হাইকোর্টে প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা থেকে প্রকৃতি ও দেশকে রক্ষা করার জন্য উপকূলীয় অঞ্চল ও সারা দেশের সব হোটেল ও মোটেলে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারকে নির্দেশ দেন। যদিও এই আইন ও নির্দেশনা কতটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে বা বাস্তবায়ন করার কতটুকু সদিচ্ছা আছে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
প্লাস্টিক পণ্য বিশেষ করে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক আমাদের দেশের প্লাস্টিক হটস্পটগুলোর এমনকি সাধারণ পরিবেশের ড্রেন, নালা, খাল, নদী ইত্যাদির পানির প্রবাহ বন্ধ করে দেয়, পরিবেশে দূষিত পানি জমে থাকতে বাধ্য করে, মশা-মাছি ও রোগবালাইয়ের বিস্তারে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে। একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন শুধু পানির প্রবাহই বন্ধ করে না, একই সঙ্গে নদীর তলদেশ ভরাট করে দিচ্ছে। বলা হচ্ছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামের আশপাশের নদীগুলোর তলদেশ পরতে পরতে পলিথিনের স্তূপে ভরে গেছে। অন্যদিকে এর মাধ্যমে আমাদের উর্বর পলিমাটি দীর্ঘদিনের জন্য অনুর্বর হয়ে পড়ছে।
একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ, এটি আমাদের আচরণকে দীর্ঘমেয়াদে প্রভাবিত করে এবং এমনভাবে নির্ভরশীলতা তৈরি করে যাতে প্রতিদিনই এর ব্যবহার একটু একটু করে বাড়ছে। অন্যদিকে লাগামহীন প্লাস্টিক ব্যবহার ও এর উৎপাদন প্রক্রিয়া বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ ক্রমাগত বাড়িয়ে দিচ্ছে। আর মাইক্রো প্লাস্টিক এখন সবকিছুতে, সমুদ্রের মাছ থেকে শুরু করে মানুষের রক্তে। এটি জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধের জন্য বিশ্বব্যাপী যে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা এই শতাব্দীর মধ্যে এক দশমিক পাঁচ শতাংশের নিচে রাখার লক্ষ্যমাত্রাকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে।
প্লাস্টিক পণ্যের যথেচ্ছ ব্যবহার ক্ষতিকর বহুমাত্রিক। একদিকে পরিবেশদূষণ, অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবক এবং মানবস্বাস্থ্যের জন্য হানিকর। আবার আমরা সাধারণত পরিবেশদূষণের অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণ করি না, যেমন নির্ধারণ করি না এর স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে যে ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তার আর্থিক মূল্য। এই বিবেচনায় প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার নিরুৎসাহিক করা যেমন দরকার, একই সঙ্গে প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে যারা যুক্ত তাদেরও তেমনি জবাবদিহিতার মধ্যে আনা দরকার, যাতে প্লাস্টিক পণ্য ও বিভিন্ন ধরনের পণ্যে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনায় তারা কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করে।
সব মিলিয়ে প্লাস্টিকের এই উৎপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এই মুহূর্ত থেকে সব পর্যায়ে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিনের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা খুবই দরকার, এ জন্য প্রচলিত আইন বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। যে কোম্পানিগুলো প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে মুনাফার অঙ্ক বাড়িয়েই চলছে তাদের আরও দায়িত্বশীল আচরণ করতে বাধ্য করতে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। জাতিসংঘ প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে একটি আন্তর্জাতিক আইন প্রণয়নে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে বেশ কিছু প্রস্তাবনা উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে প্লাস্টিক বর্জ্য কমিয়ে আনার জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা, ভার্জিন প্লাস্টিক ব্যবহার কমিয়ে আনা, প্লাস্টিক বর্জ্যরে পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি রিসাইকেলিং কার্যক্রমকে জোরদার করা, ক্ষতিকর প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবহার বন্ধ করা ইত্যাদি। পাশাপাশি এখন সময় এসেছে দেশের অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তর করার। বাংলাদেশের অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় সাতচল্লিশ হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হতে পারে, বছরে যা সতেরো মিলিয়ন টনেরও বেশি। এই পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, দেশে মাত্র চার থেকে পনেরো শতাংশ বর্জ্য অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের মাধ্যমে রিসাইকেল করা হয়। পরিবেশদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এই হার বাড়াতে হবে। তদুপরি প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে এর ব্যবহার বন্ধ, কমিয়ে আনা ও একই পণ্যের বারবার ব্যবহারে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ধারাবাহিক প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণের এখনই সময়।
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
১৯২৯ সালের এই দিনে ঢাকা শহরে জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশি স্থপতি এবং কাঠামো-প্রকৌশলী ফজলুর রহমান খান। তার বাবা খান বাহাদুর আবদুর রহমান খান ছিলেন শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা। তিনি ১৯৪৪ সালে কলকাতার বালিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করার পর প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে তিনি কলকাতার শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করেন। তিনি ঢাকার তৎকালীন প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ার পরপরই ১৯৫২ সালে ফুলব্রাইট ফেলোশিপ ও ফোর্ড ফাউন্ডেশন স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। ১৯৫৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান স্কিডমোর-এ যোগ দেওয়ার মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু হয়। তিনি শিকাগোর ১০০ তলা উঁচু জন হ্যানকক সেন্টার এবং সিয়ার্স টাওয়ারের নকশা তৈরি করেন। ১৯৭২ সালে তিনি আরবানার ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যালুমনি অ্যাওয়ার্ড, ১৯৭৩ সালে নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট অব সায়েন্স এবং ১৯৮০ সালে লেহাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট অব ইঞ্জিনিয়ারিং সম্মানে ভূষিত হন। ১৯৭২ সালে তিনি কনস্ট্রাকশনসের ‘ম্যান অব দি ইয়ার’ ভূষিত হন। ১৯৮৩ সালে আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস তাকে তার অসাধারণ অবদানের জন্য এআইএ ইনস্টিটিউট সম্মাননা দেয়। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের পক্ষে বিদেশে জনমত গড়ে তুলতে সাহায্য করেন। ১৯৮২ সালের ২৬ মার্চ তিনি হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে এবং তার স্মরণে একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়। সুউচ্চ ভবন নির্মাণের বিশেষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য বিশ্বব্যাপী স্মরণীয় বরণীয় হয়ে আছেন বাঙালি স্থপতি ও কাঠামো-প্রকৌশলী ফজলুর রহমান খান।
পারিবারিক আদালতের মুখ্য বিষয় হচ্ছে, দেনমোহর বা ভরণপোষণ। এসব বিষয়ে কোনো সমস্যা দেখা দিলে, মানুষ আদালতের শরণাপন্ন হয়। প্রতি জেলায় সহকারী জজ আদালত পারিবারিক আদালত হিসেবে গণ্য হয়।
মোটা দাগে ৫টি বিষয় এখানে নিষ্পত্তি হয়ে থাকে। বিয়েবিচ্ছেদ, মোহরানা, সন্তানের ভরণপোষণ, সন্তানের অভিভাবকত্ব ও দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার। এসব বিষয়ে সমস্যা দেখা দিলেই মানুষ আদালতের দ্বারস্থ হন। এরই মধ্যে বিচারকদের বিভিন্ন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু অবকাঠামোগত তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। যে কারণে, বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় বিচারপ্রার্থীদের। এ ক্ষেত্রে শিশু ও নারীবান্ধব আলাদা কর্নার থাকা জরুরি। পারিবারিক আদালতের বর্তমান পরিবেশ কোনোভাবেই বিচারপ্রার্থীদের কাছে সন্তোষজনক নয়, ফলে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছেন তারা। তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ভোগান্তি।
গতকাল দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতায় প্রকাশিত ‘বিড়ম্বনা অস্বস্তি বিরক্তি ভয়’ শীর্ষক প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায়, ছোট্ট আদালত কক্ষে গুমোট গরমে গিজগিজ করছেন আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী। তিনটি বেঞ্চে গাদাগাদি করে বসেছেন কয়েকজন। বেশির ভাগ দাঁড়িয়ে। ৯ বছরের এক মেয়েশিশু অস্বস্তি নিয়ে পায়চারি করছে আদালতের ভেতরে-বাইরে। মা প্রবোধ দিচ্ছেন আরেকটু ক্ষণ! মাঝেমধ্যেই নেতিয়ে পড়ছিল শিশুটি।
সংবাদে আরও উল্লেখ করা হয়েছে একই আদালতের বারান্দায় কথা হয় মিরপুর-১০ নম্বর থেকে আসা নজরুল ইসলামের সঙ্গে। ক্লান্ত ও হতাশ নজরুল বলেন, মামলার বিড়ম্বনা তো আছেই। তার চেয়েও ভয় আর অস্বস্তি আদালতের পরিবেশ নিয়ে। বসার জায়গা নেই। একটু বিশ্রামের মতো পরিবেশ নেই।
প্রতিদিন অসংখ্য বিচারপ্রার্থী এলেও নারী ও শিশুদের জন্য পৃথক শৌচাগার কিংবা বিশ্রামাগার নেই। ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার নেই। রেবতি ম্যানশনের নিচতলায় নারী ও শিশুদের জন্য একটি বিশ্রামাগার ও ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার থাকলেও সেটি যথেষ্ট দূরে। এসব থাকা-না থাকা সমান কথা মন্তব্য করেন আইনজীবীরা। কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থাও নেই। আদালতগুলোতে জনবলেরও ঘাটতি রয়েছে।
নিয়মিত মামলা পরিচালনা করেন এমন কয়েকজন আইনজীবী বলেন, পারিবারিক আদালতের মামলার বড় অংশই শিশু ও নারী। তারা আসে দূরদূরান্ত থেকে। অথচ আদালতের অস্বস্তিকর পরিবেশে তাদের একটু বিশ্রাম ও স্বস্তির সুযোগ থাকে না। প্রায়ই নারী ও শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। গরমের সময় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। আদালতের পরিবেশে ভড়কে যায় শিশুরা। পরে আর আদালতমুখো হতে চায় না তারা।
১৯৮৫ সালে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে পারিবারিক আদালত। বিয়েবিচ্ছেদ, দেনমোহর, সন্তানের ভরণপোষণ, অভিভাবকত্ব, হেফাজত, দাম্পত্য সম্পর্ক পুনরুদ্ধার এ ধরনের পারিবারিক বিষয়ে মামলার শুনানি, আদেশ ও রায় হয় এসব আদালতে।
আইনজীবীরা বলেন, মামলাজটের অসহনীয় পরিস্থিতি থেকে পারিবারিক আদালতগুলোও মুক্ত নয়। সুপ্রিম কোর্টের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ঢাকাসহ সারা দেশের পারিবারিক আদালতগুলোতে গত জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৭৬ হাজার মামলা বিচারাধীন ছিল। ঢাকার তিনটি আদালতে প্রায় ১০ হাজারের মতো মামলা বিচারাধীন রয়েছে বলে জানান আদালত-সংশ্লিষ্টরা।
এ ধরনের আদালতের পরিবেশে স্বস্তির একটা বিষয় থাকা জরুরি। এমনিতেই বিচারপ্রার্থীরা থাকেন বিভিন্ন ধরনের মানসিক অশান্তিতে। আবার আদালতের পরিবেশের মধ্যেও যদি তাদের বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে হয়, তা অত্যন্ত পীড়াদায়ক। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মানবিকভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন। প্রত্যাশা থাকল, অনতিবিলম্বে সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
সাত বছর পর ভারতের মাটিতে অবতরণ পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে তারা গিয়েছিল সেখানে। তারপর এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে। টুর্নামেন্ট শুরুর এক সপ্তাহ আগে তারা পৌঁছালেন দেশটিতে। সেখানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হোটেলে।
বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বাবর আজমরা সেখানে পৌঁছানো মাত্রই উচ্ছ্বসিত জনতা ভিড় করেন। হায়দ্রবাদের বিমানবন্দরের বাইরে তাদের দেখে অনেকেই চিৎকার করে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন। বাবরের নাম উচ্চারণ করতও শোনা গেছে এসময়। পুলিশ উৎসুক জনতাকে আটকে রেখেছিল।
রাজনৈতিক বৈরি সম্পর্কের কারণে দুই দলের দেখা হয় না দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজে। বিশ্ব মাতানো ক্রিকেটার থাকলেও পাকিস্তানিরা খেলতে পারে না আইপিএলে। কারণ ঐ একটাই। তবে বৈশ্বিক বা মহাদেশীয় ইভেন্টে তাদের ঘিরে আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। সেটা দেখা গেছে এশিয়া কাপেও।
বিশ্বকাপ খেলতে আজ বাংলাদেশ উড়াল দিয়েছে ভারতে। সেই টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখে টাইগাররা। তামিম ইকবাল নেতৃত্ব ছাড়ার পর সাকিব আল হাসানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে অধিনায়কত্বের ভার। আর আজই জানা গেল, বিশ্বকাপের পর একদিনও তিনি অধিনায়কত্ব করবেন না।
গত ১১ আগস্ট তৃতীয় দফায় ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান। তখনই বলা হয়েছিল, সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপ ও ভারত বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
দেশের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এই বিশ্বকাপই শেষ। এরপর একদিনও (অধিনায়কত্ব) করবো না। যে কারণে আমি এশিয়া কাপের আগে নিতে চাইনি। এরপরও এটা না। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি হাসতে চাই, খেলতে চাই, পারফর্ম করতে চাই। এই একটা কারণে আমি করতে চাইনি।’
সাকিব যোগ করেন, ‘আর কোনে কারণ নেই। বেস্ট হয় যদি অধিনায়ক না থাকি। অধিনায়কত্ব কি আমার কোনো ভেল্যু এড করতেছে ক্যারিয়ারে এই স্টেজে এসে? আমি তো মনে করি না।’
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
বিশ্বকাপে তামিম ইকবালকে ওপেন থেকে সরিয়ে মিডল অর্ডারে ব্যাট করার প্রস্তাব দিয়ে ফোন করেছিলেন, তামিমের ভাষায় 'বোর্ডের টপ লেভেল' এবং 'ক্রিকেটের সাথে বেশ ইনভলভড' একজন।
তিনি তামিমকে বলেন, ''তুমি তো বিশ্বকাপে যাবা, তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলতে হবে। তুমি এক কাজ করো। তুমি প্রথম ম্যাচ খেলো না আফগানিস্তানের সঙ্গে।'
তিনি আবার বলেন, আচ্ছা তুমি যদি খেলোও, আমরা এমন একটা পরিকল্পনা করছি, তুমি যদি খেলোও, তাহলে নিচে ব্যাট করবে।''
তামিমের এমন বক্তব্যের পর প্রশ্ন উঠেছে, কেই সেই বোর্ড কর্মকর্তা? এক টিভি সাক্ষাৎকারে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'আমি এটা জানিনা।'
পরক্ষণেই তিনি বলেন, 'তবে যদি কেউ বলে থাকে, আমি সিউর তিনি অথোরাইজড পার্সন। আর এরকম কিছু বলে থাকলে আমি খারাপ কিছু বলেছে বলে আমি মনে করিনা। টিমের কথা চিন্তা করেই বলেছে। টিম কম্বিনেশন নিয়ে কথা বলে থাকলে দোষের কি আছে। আমার তো মনে হয় না দোষের কিছু আছে। নাকি এরকম কোনো প্রস্তাব দেয়া যাবে না। নাকি আপনি যা চাইবেন তাই করতে পারবেন?।'
বিশ্বমঞ্চে দেশের ক্রিকেটের দূত বলা যায় সাকিব আল হাসানকে। বর্ণিল এক ক্যারিয়ার গড়েছেন তিনি। তিন ফরম্যাটেই তিনি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। দেশের এই তারকা ক্রিকেটার নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপে যাচ্ছেন দলের অধিনায়ক হিসেবে। সেই টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই জানা গেল কবে তিনি অবসর নিচ্ছেন।
দেশের একটি ক্রীড়াভিত্তিক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের অবসরের সময় জানিয়েছেন। তার ইচ্ছে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর অবসর ঘোষণা করার। একইসঙ্গে তিন ফরম্যাটকে বিদায় জানাতে চান দেশের ক্রিকেটের এই তারা।
নেতৃত্ব ছাড়া ও অবসরের প্রসঙ্গ টেনে সাকিব বলেন, ‘আজকে এখন এই অবস্থায় বলছি, ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত ওয়ানডে খেলবো। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে টি-টোয়েন্টিকে বিদায় দেবো। টেস্টের অবসর শিগগিরই। তবে একেক ফরমেট একেক সময় ছাড়লেও আনুষ্ঠানিক অবসর ঘোষণা করবো ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর।’
অধিনায়কত্ব নিয়ে সাকিব বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপের আগে একাধিক সিরিজে বিশ্রামের কথা বলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে দলের বাইরে রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত এশিয়া কাপেও দলে ফেরানো হয়নি তাকে। যেহেতু সাকিবের নেতৃত্বে সেই আসরে খেলেছে বাংলাদেশ, তাই অনেকের ধারণা সাকিবের চাওয়াতেই দলের বাইরে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ।
তবে সাকিব এসব কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়ক ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দল পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলারও ছিল না! কারন পরের দিন সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকি রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা!'
দলের ভেতরের কথা ভালোভাবে না জেনেই মানুষ যেভাবে সমালোচনা করে সেটাকে হাস্যকর বলেছেন সাকিব। বাংলাদেশ অধিনায়ক সমালোচকদের মানসিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, 'মানুষের সাইলকোলজি এমন কেন! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!'
অধিনায়ক একা যে দল নির্বাচন করেন না সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন সাকিব। তিনি বলেন, 'রিয়াদ ভাইয়ের যে ডেডিকেশন ছিল তার দলের প্রতি যে অবদান ছিল। দলের হয়ে খেলার যে ইচ্ছে ছিল, সবকিছু সবাই দেখতে পেরেছে। আমার দায়িত্বতো পুরো দলটা নির্বাচন করার না। এমনটা হলে এশিয়া কাপের একদিন পরেই এনাউন্স করে দল দিয়ে দিতে পারতাম। এটা অনেক প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। অনেক বিষয় চিন্তা করতে হয়। অনেক কিছু চিন্তা করে দলটা গড়তে হয়।'
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।