
সন্জীদা খাতুন। ১৯৩৩ সালের ৪ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব। একাধারে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী, লেখক, গবেষক, সংগঠক, সংগীতজ্ঞ এবং শিক্ষক। বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং বর্তমানে সভাপতি। এছাড়া তিনি জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদেরও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। প্রচলিত ধারার বাইরে ভিন্নধর্মী একটি শিশুশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নালন্দা’র সভাপতি। পিতা ড. কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন বিখ্যাত পণ্ডিত ব্যক্তি ও জাতীয় অধ্যাপক। সন্জীদা খাতুন বাংলাদেশের একজন খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ ও সংগীতজ্ঞ। তিনি কাজী আনোয়ার হোসেনের বোন এবং রবীন্দ্রসংগীত বিশেষজ্ঞ ওয়াহিদুল হকের স্ত্রী। সন্জীদা খাতুন ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে সম্মানসহ স্নাতক এবং ১৯৫৫ সালে ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, শান্তিনিকেতন থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ১৯৭৮ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। সন্জীদা খাতুনের কর্মজীবন শুরু হয় শিক্ষক হিসেবে। শান্তিনিকেতন থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক হন। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বহু পুরস্কার তিনি পেয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত), দেশিকোত্তম পুরস্কার (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত)। এছাড়া কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট ১৯৮৮ সালে তাকে ‘রবীন্দ্র তত্ত্বাচার্য’ উপাধি, ২০১৯ সালে ‘নজরুল মানস’ প্রবন্ধ গ্রন্থের জন্য ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করে। ২০২১ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে। তিনি মোট ১৬টি গ্রন্থ রচনা করেছেন।
এক
অর্থনৈতিক সুবিধার্থে অভ্যন্তরীণ অভিপ্রয়াণ (Internal Migration) অতি পুরনো এক পদ্ধতি। কত পুরনো তা হয়তো বলা যাবে না তবে প্রায় একশ বছর আগে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাস যা সত্যজিৎ রায় কর্র্তৃক ১৯৫৫ সালে চিত্রায়িত, কিঞ্চিত ধারণা দেয় বলে বিশ্বাস।
অধিক উপার্জনের আশায়, তথা একটা ভালো জীবনের স্বপ্ন সাধনে, পুরোহিত হরিহর রায় গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে যায়। পেছনে পড়ে থাকে সহধর্মিণী সর্বজয়া, মেয়ে দুর্গা আর ছেলে অপুকে নিয়ে তার প্রাণপ্রিয় পরিবার। বাড়ি ছাড়ার আগে কথা দেয় হরিহর, ফিরে এসে জীর্ণ ঘর মেরামত করবে। একদিন সে এসেছিল বটে, তবে শহর থেকে সঙ্গে আনা শখের জিনিস দেখাতে গিয়ে শুনতে পায় যে তাদের মেয়ে দুর্গা প্রচণ্ড জ¦রে মারা গেছে। এবার কন্যা হারানোর বেদনা বুকে নিয়ে অর্থনৈতিক দৈন্য দূর করতে পৈতৃক ভিটা ফেলে পরিবারসহ গরুর গাড়িতে করে শহরমুখী হয় হরিহর।
আচ্ছা, ওই সময়ে নিশ্চিন্দপুর গ্রামে যদি খামার-বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বর্ধনশীল উপার্জনের ব্যবস্থা থাকত, তা হলে কি হরিহর গ্রাম ছেড়ে শহরে যেত?
দুই
এমন একটা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার প্রয়াস নিয়েছেন বাংলাদেশে ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস)-এর কাজী ইকবাল, নাহিদ ফেরদউস পাবন, রেজয়ানুল হক এবং নাহিয়ান আজাদ সসি।
সেই স্বাধীনতার শুরু থেকে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ মাইগ্রেশন যে বাড়ছে তার প্রমাণ দিতে বোধ করি পরিসংখ্যানের প্রয়োজন পড়ে না। শহরগুলোতে স্ফীত জনসংখ্যা, ঘিঞ্জি গলিতে মানুষের স্রোত, গ্রামে আধুনিক যন্ত্রে চাষবাস, ঈদ বা লকডাউনে জীবন বাজি রেখে বাড়ি ফেরার তাগিদ ইত্যাদি ইঙ্গিতবাহক বলে মনে করা যায়। তারপরও পরিশুদ্ধ অর্থনীতিবিদ পাঠকের পরিতৃপ্তির জন্য ২০০৩ সালে প্রকাশিত বিআইডিএস-এর রীতা আফসারের প্রবন্ধ থেকে বলা যায়, মোট মাইগ্রেশনের দুই-তৃতীয়াংশ গ্রাম থেকে শহরে, এক-দশমাংশ গ্রাম থেকে গ্রামে এবং এক-চতুর্থাংশ দেশের বাইরে অভিবাসিত। আরও জানা যায়, ১৯৭৪ থেকে অদ্যাবধি লাইফটাইম মাইগ্রেশনের তাৎপর্যপূর্ণ বৃদ্ধি ঘটেছে। অন্যদিকে, পল্লীর অবকাঠামো উন্নয়ন সাপেক্ষে অ-কৃষি কর্মকাণ্ডের ব্যাপক বিস্তার এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য নিরসনে তার প্রভাব অপরিমেয়। বস্তুত এখন গ্রামীণ খানার সিংহভাগ আয় আসে অ-কৃষি তথা খামার-বহির্ভূত কর্মকাণ্ড থেকে যা ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী, কৃষির চেয়ে অধিকতর উৎপাদনশীলতা ও আয় সঞ্চারক। যেমনটি আগে ভাবা হতো, এ ধরনের কাজ আর রেসিডুয়াল প্রকৃতির নয়, নয় পেশাগত শেষ আশ্রয়স্থল।
তিন
গবেষকরা বলছেন, মাইগ্রেশন গ্রামীণ শ্রমবাজারে প্রভাব ফেলে শ্রমিক স্বল্পতা মজুরি বাড়ায় যা খাদ্যের দাম বাড়ায়। এক অধ্যয়নে দেখা যায়, মাইগ্রেশন ভর্তুকি দ্বারা উসকানো ইমিগ্রেশনে গ্রামে পুরুষ শ্রমিকের মজুরি ৫-৬ শতাংশ বৃদ্ধি করে এবং তার ফলে খাদ্য-দাম প্রায় তিন শতাংশ ওপরে ওঠে। কেউ বলেন কৃষিশ্রমিক স্বল্পতার কারণে পতিত জমির হিস্যা বৃদ্ধি পায়। মৌসুমভিত্তিক ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণে সরকারি নীতিমালা অভ্যন্তরীণ মাইগ্রেশন উৎসাহিত করতে পারে বলে গবেষকরা মনে করেন। এক পর্যবেক্ষণ থেকে জানা যায়, মাত্র ৫০০ টাকার আর্থিক অনুদান প্রদান নমুনা খানার ২২ ভাগে অন্তত একজন মৌসুমি মাইগ্রেন্ট পাঠাতে উৎসাহিত করেছে। তবে উচ্চহারে পল্লী-নগর মাইগ্রেশনের প্রতিকূল প্রভাব অজানা থাকার কথা নয় যেমন শহুরে শ্রম, জমি ও বাড়ি-বাজারে বাড়তি চাপ, গণসেবার ওপর চাপ এবং ভিড় এবং শহুরে অর্থনীতির পঙ্কিল পরিবেশ ইত্যাদি।
চার
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘সহজ কথা কইতে আমায় কহ যে সহজ কথা যায় না বলা সহজে।’ খামার কর্মকাণ্ড ও আয়ের সম্পর্ক আপাতদৃষ্টে সহজ মনে হলেও বাস্তবে এর ব্যাখ্যাটা বেশ জটিল। আবহাওয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খামারের আয় সাধারণত খামার-বহির্ভূত আয়ের চেয়ে অধিকতর অস্থিতিশীল; বাংলাদেশে জলবায়ুজনিত প্রভাবে মাথাপিছু প্রকৃত কৃষি-আয় এক স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন কমে গেলে বাইরে যাওয়ার হার ১-২ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। বস্তুত মাইগ্রেশন ও গ্রামীণ খামার-বহির্ভূত কর্মকাণ্ড উভয়ই দুটো গুরুত্বপূর্ণ ‘পেরে-ওঠার’ পদক্ষেপ বা কোপিং কায়দা হিসেবে দেখাটা ভালো।
এই পরিপ্রেক্ষিতে লেখকদের হাইপথেসিস হচ্ছে এরকম যেহেতু গ্রামীণ অ-কৃষি কর্মকাণ্ড জলবায়ু নির্ভরশীল কৃষির ওপর নির্ভরতা হ্রাস করে এবং তাই আয়-ওঠানামা কমায়, সে ক্ষেত্রে অধিক খামার-বহির্ভূত কর্মকাণ্ড শহর-গ্রাম মাইগ্রেশন কমিয়ে আনতে পারে। কিন্তু এটা পরিষ্কার এবং সরলরৈখিক নয়। উদাহরণস্বরূপ, স্থানীয় পর্যায়ে এ সমস্ত কর্মকাণ্ড কম থাকলে খানার সদস্য মাইগ্রেট নাও করতে পারে। কারণ চাকরি, মজুরি সম্পর্কিত অসম্পূর্ণ তথ্য প্রবাহ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে; অভিভাবকহীন সন্তানেরা মানব পুঁজি উন্নয়নে বাবা-মার অবদান বঞ্চিত হওয়ার ভয়ে থাকে; টেস্ট স্কোর ও কগনিটিভ উন্নয়ন কম হয়, এবং স্বাস্থ্য ও মনোজাগতিক নেতিবাচক প্রভাব এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়। এবং সবশেষে ‘ও সখিনা গেছস কিনা ভুইল্লা আমারে, আমি অহন রিকশা চালাই ঢাহা শহরে’ জাতীয় গানে বেদনার জায়গাটুকু অভিপ্রয়াণের অভিপ্রায় ক্ষেত্রবিশেষে কিছুটা হলেও অবদমন করতে পারে।
দ্বিতীয়ত, স্থানীয় নন-ফার্ম কাজের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও মাইগ্রেশন ঘটে মূলত অর্থ-বহির্ভূত সুবিধার জন্য যেমন শহরে ভালো কাজের পরিবেশ, পুরো পরিবার নিয়ে অধিকতর ভালো জীবন যাপনের সম্ভাবনা (হরিহর রায়!), এমনকি অপেক্ষাকৃত সচ্ছল এলাকায় বসবাস করে ওপরে ওঠার ব্যয়-সাশ্রয়ী সিঁড়ির সন্ধান পাওয়ার সুযোগ ইত্যাদি। সুতরাং, গ্রামীণ নন-ফার্ম আয়ের প্রভাব দুদিকেই কাটতে পারে অর্থশাস্ত্রের আপ্তবাক্য অন দি ওয়ান হ্যান্ড, অ্যান্ড অন দি আদার হ্যান্ডের পথ ধরে।
পাঁচ
ইউনিয়ন পর্যায়ে ম্যাপিং করে গবেষকরা দেখিয়েছেন যে, বাংলাদেশের আগের তুলনায় পশ্চিম দিকে খামার-বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রীকরণ বেশি অথচ পশ্চিমাঞ্চলের চেয়ে মাইগ্রেন্টের কেন্দ্রীকরণ অপেক্ষাকৃত অধিক দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে। সম্ভবত এটা প্রমাণ করে যে, ইউনিয়ন পর্যায়ে খামার-বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের বিস্তৃতি ও মাইগ্রেশন প্রকোপের সম্পর্ক নেতিবাচক (এবং এই পার্থক্য সৃষ্টিতে সবুজ বিপ্লব-তাড়িত খামারের ভূমিকা আছে কিনা দেখা দরকার)।
প্রশ্ন উঠতে পারে, প্রবৃদ্ধি এবং কল্যাণ সবচেয়ে অনুকূল করতে শিল্প-কারখানার আঞ্চলিক বিন্যাস কী হওয়া উচিত? যদি পর্যাপ্ত উৎসাহ দেওয়া যায়, গবেষকদের ধারণা, পল্লী অঞ্চলে স্থাপিত একটা পোশাক তৈরির কারখানা গুণক ও দারিদ্র্য হ্রাস প্রভাবে ঢাকার চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকবে (তা বটে, তবে শিল্পের কেন্দ্রীভূতকরণ উপপাদ্যটিও মাথায় রাখতে হবে)। লকডাউনের সময় বাড়িগামী কিংবা ঢাকাগামী মাইগ্রেন্ট কর্মীদের অবর্ণনীয় কষ্ট যে ইঙ্গিত দিতে চায় তা হলো, বিপুল সংখ্যক কর্মী বাড়ি থেকে অনেক দূরে কাজ করে বলে এই মানবিক সংকট। উন্নত দেশে নাকি অমন হয় না (তাই বুঝি? আমরা জানি যে ১০০ কি.মি. ট্রাভেল করে অফিস করে বাড়ি ফিরে যায় একমাত্র উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কল্যাণে, তাছাড়া এমন মানবিক সংকট হরহামেশাই হয়ে থাকে হরতাল, অবরোধ, পরিবহন সংকট ইত্যাদির কারণে)।
সুতরাং, গবেষকদের সুপারিশ হচ্ছে কর্মী যেখানে বাস করে তার কাছাকাছি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। যদি খামার-বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের আয়ের হিস্যা বেশি থাকে তবে খানার সদসস্যের মাইগ্রেট করার চান্স কম থাকবে। অন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এসএমই গুচ্ছ-ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোগ বেশি যেখানে, সেখান থেকে অভ্যন্তরীণ মাইগ্রেশন হওয়ার সম্ভাবনা কম। তার মানে এসএমইর জন্য বিশেষব্যবস্থা করতে হবে।
নীতি সংক্রান্ত তাৎপর্য
শহরে আসার মানব-মিছিল বন্ধ করতে হলে স্থানীয় স্তরে খামার-বহির্ভূত কাজের সুযোগ চিন্তা-চেতনার কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে হবে। কিন্তু কীভাবে?
স্থানীয় বাজার এবং হাটসহ ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পল্লীতে ইউনিয়ন পর্যায়ে শিল্প এলাকা স্থাপনে গণবিনিয়োগ, গ্রামের কাছে দ্বিতীয় শহর গড়ে তোলা। মূল প্রশ্ন, শিল্পের কাছে শ্রমিক যাবে নাকি শ্রমিকের কাছে শিল্প যাবে? দ্বিতীয়টি ব্যয়বহুল বিধায় ব্যাপক গণবিনিয়োগ দাবি করে।
এমন একটা অন্তর্দৃষ্টিমূলক উপস্থাপনার জন্য গবেষকদের ধন্যবাদ। আশা করি নীতিনির্ধারক মহল সুপারিশে নজর দেবেন এবং মানুষের আয় উন্নতি ঘটাবেন, কলকারখানা শ্রমিকের সন্নিকটে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে মানব সংকট দূর করবেন।
কিন্তু গ্রাম যদি শহর বনে যায় তখন?
‘মানুষ কী চায়উন্নতি, না আনন্দ? উন্নতি করিয়া কি হইবে যদি তাহাতে আনন্দ না থাকে? আমি এমন কত লোকের কথা জানি, যাহারা জীবনে উন্নতি করিয়াছে বটে, কিন্তু আনন্দকে হারাইয়াছে। অতিরিক্ত ভোগে মনোবৃত্তির ধার ক্ষইয়া ক্ষইয়া ভোঁতা এখন আর কিছুতেই আনন্দ পায় না, জীবন তাহাদের নিকট একঘেয়ে, একরঙা, অর্থহীন। মন শান-বাঁধানো রস ঢুকিতে পায় না।’ (আরণ্যক, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়)।
লেখক: অর্থনীতিবিদ। সাবেক উপাচার্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
সুশীল বাবু ছিলেন কলেজ শিক্ষক। সদ্য অবসর নিয়েছেন। এক পুত্র ও এক কন্যাসন্তান নিয়ে সুখের সংসার। কদিন ধরে দারুণ চিন্তিত তিনি ও তার পত্নী। প্রতিবেশী কারণ জানতে চাইলে সুশীল বাবুর স্ত্রী জানালেন, তার কন্যা সন্তানসম্ভবা। প্রতিবেশী মহিলা সান্ত¡না দিলেন, ‘সব ঠিক হয়ে যাবে’। আরও কিছু দিন কেটে গেল। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় আরেক দিন দেখা তাদের মধ্যে। প্রতিবেশী মহিলা জানতে চাইলেন, ‘কী ব্যাপার দিদি, মেয়ের কথা তো কিছুই জানালেন না।’ সুশীল বাবুর স্ত্রী যেন লজ্জাই পেলেন; বললেন, ‘আসলে নাতনি হয়েছে তো, কে কী বলবে, তাই জানাইনি।’ শুনে তাজ্জব বনে যান প্রতিবেশী। বর্তমান সময়ে চারদিকে যখন সভ্যতার বোল ফুটছে, সেই উন্নত আধুনিক সমাজে একজন কলেজ শিক্ষক পতœীর এমন চিন্তাধারা আমাদের কী জানায়?
বেগম রোকেয়ার আর্তনাদ কানে বাজে, ‘আপনারা হয়তো শুনিয়া আশ্চর্য হইবেন যে, আমি ২২ বৎসর হইতে ভারতের সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্টজীবের জন্য রোদন করিতেছি। সে জীব নারী। এই জীবগুলোর জন্য কাহারও কখনো প্রাণ কাঁদে নাই। পশুর জন্য চিন্তা করিবারও লোক আছে। তাই যত্রতত্র পশুক্লেশ নিবারণী সমিতি দেখিতে পাই। পথে কুকুরটা মোটরচাপা পড়িলে অ্যাংলো ইন্ডিয়ান পত্রিকাগুলিতে ক্রন্দনের রোল দেখিতে পাই। কিন্তু আমাদের অবরোধ বন্দিনী নারী জাতির জন্য কাঁদিবার একটি লোকও এ ভূ-ভারতে নাই।’
নারীরা কখনোই তাদের অবস্থানের ব্যাপারে সজাগ হয়নি কিংবা তাদের অবস্থানের ব্যাপারে সচেতন হয়নি কিংবা তাদের পুরুষ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বিপ্লবী হয়ে উঠতে পারেনি। বাস্তবে নারী মুক্তির সম্ভাবনা সুদূরপরাহত। নারী-পুরুষের এই প্রান্তিক অবস্থান বরাবরই নারীকে নির্ভরশীল রেখেছে। এমনকি আজও নারী নানাভাবে মানস প্রতিবন্ধী। যদিও হালে নারীর সামাজিক অবস্থান পাল্টাতে শুরু করেছে। তবুও এখনো নারীর সামাজিক অধিকার পুরুষের সমকক্ষ নয়। কখনো কোথাও নারীর সামাজিক অধিকার স্বীকৃত হলে পুরনো প্রথা এসে তা বাস্তবায়নে বাদ সাধে।
আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে বক্তৃতা প্রদানকালে এলিজাবেথ ক্যাডিস্টেন্টন আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘অদ্যাবধি নারীরা পুরুষের প্রতিধ্বনি মাত্র। আমাদের আইন ও সংবিধান, আমাদের মতবিশ্বাস ও নীতিমালা, সামাজিক জীবনের রীতিনীতি সবকিছুই পুরুষ উৎসজাত। যথার্থ নারী আজও একটি ভবিষ্যতের স্বপ্ন। আর বাস্তবের নারী-পুরুষ প্রণীত পুরাণ।’
পুরুষের একটি অতি প্রচলিত বিশ্বাস যে, নারী সব সৌন্দর্যের আধার। এই ধরাধামে যা কিছু সুন্দর, সবই তার অধিকারভুক্ত। সে সৃষ্টির মুকুট, শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম। এই শৈল্পিক স্তাবকতা রোমান্টিক পুরুষের কল্পনায় নারীর অবস্থানের সাক্ষ্য দেয়। এই স্তব কল্পনানির্ভর, খেয়ালি ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। চিত্রকর্মে নারীর অবস্থান সর্বাগ্রে।
বুক অব জেনেসিস পুরুষের একটি হাড় থেকে নারী সৃষ্টির ধারণাটাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ‘কতিপয় গুণের ঘাটতির কারণে নারী হয়েছে নারী’ বলেছেন অ্যারিস্টটল। প্লেটো ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়েছেন- তাকে নারী হিসেবে সৃষ্টি না করার জন্য। করিনথিয়ানদের উদ্দেশে লেখা বক্তব্যে জন পল বলেছেন, ‘প্রত্যেক পুরুষের প্রভু খ্রিস্ট আর প্রত্যেক নারীর প্রভু হলো পুরুষ।’
কীভাবে নারী অধস্তনতার সূচনা হয়েছিল? কেবল এ কারণেই কি প্রকৃতিগতভাবে নারী দুর্বল, তার বাহুবল কম, কম তার শারীরিক শক্তি, সে অপেক্ষাকৃত ধীরে চলে, অপেক্ষাকৃত কম ভার বইতে পারে, কদাচিৎ পুরুষের সঙ্গে কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে, কোনো যুদ্ধে সে পুরুষের সঙ্গে দাঁড়াতে পারে না? এসব দুর্বলতার যোগফলই কি তার নতজানু নিষ্কৃতির মূল কথা? এ জন্যই কি নারী চিরবন্দিত্ব ভোগ করছে?
কিন্তু পুরুষদের নিজেদের ভেতর তো পৈশিক সামর্থ্যরে তারতম্য আছে। তাই বলে তা তো তাদের মধ্যে অবস্থার তারতম্যের নিয়ামক হচ্ছে না। তা ছাড়া যে মস্তিষ্ক আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে, তাতে নারী-পুরুষ তারতম্যের বিষয়টি বিজ্ঞান স্বীকার করে না। তাই নারী অধস্তনতার কারণ খুঁজতে হবে সমাজব্যবস্থার অসম বিকাশের মাঝে।
পরিবারের মধ্যে স্বামী বুর্জোয়া এবং স্ত্রী প্রলেতারিয়েতের প্রতিনিধিত্ব করে। সময় এসেছে নারী-পুরুষের আন্তঃসম্পর্কের বিষয়গুলো নতুন আঙ্গিকে ভেবে দেখার। ভোর হয়নি, আজ হলো না, কাল হবে কিনা তা-ও জানা নেই। তবে এ কথা সত্য, পরশু ভোর ঠিকই আসবে। সে ভোরের আলো দেখার প্রত্যাশায় নারী-পুরুষ উভয়ে হাতে হাত রেখে চলো সবে গাই ‘সনাতন জীর্ণ কুআচার, চূর্ণ করে জাগো জনগণ, ঘুচাও এ দৈন্য হাহাকার, জীবন মরণ করে পণ।’
লেখক : কলাম লেখক ও সাংবাদিক
কোথাও মার, কোথাও ধরের শিকার সাংবাদিকরা। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ধরা হয়েছে সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে। মামলা দিয়ে ধরা হয়নি তাকে। ধরার ঘণ্টা কয়েক পর মামলা দেওয়া হয়েছে। এরপর জেল থেকে জেল। কেরানীগঞ্জ টু কাশিমপুর; কাশিমপুর টু কেরানীগঞ্জ। নানা নাটকীয়তার পর ২০ হাজার টাকা মুচলেকায় শর্তসাপেক্ষে জামিন। আর তার সম্পাদক মতিউর রহমান হাজিরা দিয়ে ৬ মাসের আগাম জামিন পেয়েছেন। তাকে জামিন না দিলেই কি অনেক কিছু হয়ে যেত? সাংবাদিকরা দেশে উথাল-পাথাল অবস্থা করে ফেলতেন?
সরকারি পর্যায়ে সাংবাদিক ধরার মধ্যেই বিরোধী দল বিএনপি দিয়েছে আস্ত মার। রাজধানীর মিরপুরে তাদের ইফতার পার্টির সংবাদ কাভার করতে যাওয়া সাংবাদিকদের মেরেছে দলের আতিপাতিরা। তাও দলটির মহাসচিবের সামনে। মহাসচিব এ ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন। আবার ঘটনার জন্য দায়ী করেছেন ক্ষমতাসীন দলকে। সরকারি দলের লোকেরা নাকি বিএনপির ইফতার পার্টিতে ঢুকে গণ্ডগোল পাকিয়ে সাংবাদিকদের মার খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। যুক্তি এবং অজুহাত কত টনটনে!
‘মাইরের ওপর ওষুধ নাই’ বলে দেশে একটা মেঠোকথা চালু আছে। এই ওষুধটির চরম প্রয়োগ হচ্ছে সাংবাদিকদের ওপর। আজ এখানে, কাল সেখানে। বাদ পড়ল না সংযমের আনুষ্ঠানিকতার রমজানেও। এমন উত্তম-মধ্যম খেতেই থাকবেন সাংবাদিকরা? কেন? কী অসুখ হয়েছে তাদের? কোনো অসুখ যদি হয়েও থাকে আর কোনো ওষুধ নেই? মাইরই একমাত্র ওষুধ? কারা এ ওষুধের প্রেসক্রাইবার?
গেল রমজানেও ঢাকার নিউ মার্কেটের কর্মচারী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সময় এ খাদ্যই জুটেছে সাংবাদিকদের নসিবে। কেন বাছাই করা হলো সাংবাদিকদের? তারা সংঘর্ষ ও হত্যায় জড়িত মুখঢাকাদের তথ্য-ছবি প্রকাশের অপরাধটি করেছে। এর আগে, ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময়ও ‘হেলমেট বাহিনী’ সাংবাদিকদের আচ্ছা মতো পিটিয়ে তক্তা বানিয়েছে।
কোনো কোনো পেশার ওপর ফুলের টোকা পড়লেও ‘কত ধানে কত চাল’ বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তীব্র প্রতিবাদের সক্ষমতা রয়েছে অন্য কিছু পেশাজীবীরও। ব্যতিক্রম কেবল সাংবাদিকরা। ঢাকাসহ দেশে সাংবাদিকদের প্রায় শ-দেড়েক সংগঠন রয়েছে। দেড়শো সংগঠনের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি এক হলেও তিনশো সাংবাদিক সমাগম হওয়ার কথা। কিন্তু, বাস্তবে ব্যানার টান দিয়ে ধরে রাখার লোকও মেলে না। এখন আর ব্যানার নিয়ে রাস্তায় নেমে কষ্ট করার পর্বও নেই। সেই কাজ ভার্চুয়ালিই করে দেওয়া হচ্ছে। বিবৃতি বা বক্তব্য পাঠিয়ে প্রতিবাদের কঠিন কাজটি সেরে ফেলা হচ্ছে সহজে।
কেন এমন নিপাতনে সিদ্ধ হচ্ছে এই কমিউনিটিটি? গণমাধ্যম বিকলাঙ্গের এ আলামত দহন করে না পেশাদারদের? পেশার ভেতর অপেশা ও সংগঠনের অন্তরালে অসংগঠিত দশা কোথায় নিচ্ছে আমাদের? আলামতে চুপ থাকাও একটি প্রতিক্রিয়া। নীরবতার ভাষাও বুঝতে চান না গদিনশীন বড়রা। মাইরের ভাগটা বেশি পড়ে পেশাদার ও মাঠে কাজ করা সাংবাদিকদের ভাগ্যে। তারা কি নিজেরা নিজেরাও মাঝেমধ্যে বসতে পারেন না? উদ্দেশ্য রিপোর্ট করে মানুষকে জানানো নয়, নিজেদের বোধবুদ্ধি শেয়ার করা। নিজেদের প্রশ্ন করা আমরা কি কেবল পুলিশ-র্যাব, নেতা, মন্ত্রী, আতিপাতিদের সংবাদ সম্মেলনের খবর রচনা করব? ‘তিনি বলেন, তিনি জানান, তিনি আরও মন্তব্য করেন, হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন’ ধরনের গৎবাঁধা বয়ানকারী হয়েই থাকব? আর মাইর নামের মহৌষধ খেতেই থাকব?
কেউ মাঠে মার খাবেন, কেউ নানান জায়গায় দাওয়াত খাবেন। এই দাওয়াত খানেঅলাদের মতলব, ব্যক্তিত্বের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ, ব্যাস-ব্যাসার্ধ তো মারনেওয়ালারা ভালো মতো বুঝে ফেলেছে। সাংবাদিকদের মারা, ধরা, নাজেহাল করা একদম সোজা কাজ তাদের কাছে। যার যখন মন চায় এ সম্প্রদায়কে পেটাচ্ছে। প্রাণেও মারছে। এতে তেমন কোনো বাধা আসে না। সাংবাদিক মারতে-ধরতে ক্ষমতাসীন-ক্ষমতাহীন সবার দুয়ারই খোলা। কমজোরিরাও তা ঘটিয়ে দিচ্ছে। এরা জেনে গেছে, সাংবাদিকদের মামলা, আজেবাজে মন্তব্য, পথে-ঘাটে নাজেহাল করলে কিছুই হয় না, হবেও না।
ক্ষমতাবানদের কখনো বুঝের কমতি হয় না। তেলের ক্রাইসিস হয় না। তেলামাথায় তেল ভূতেও জোগায়। সাংবাদিকরা কেন ওই পালে ভিড়ে মালিশ-পালিশে মত্ত থাকবেন? মতলব হাসিলে বিদ্যা-শিক্ষা, সততার বিকল্প হিসেবে তেলের ব্যবহার নতুন নয়। এ সত্যকে রস-সুধায় একশোরও বেশি বছর আগে সাহিত্য মর্যাদা দিয়ে গেছেন পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। বিখ্যাত ‘তৈল’ প্রবন্ধে তা সবিস্তারে লিখে গেছেন তিনি। সেখানকার কয়েকটা লাইন উল্লেখের লোভ সামলাতে পারছি না।
‘...যে সর্বশক্তিময় তৈল ব্যবহার করিতে জানে, সে সর্বশক্তিমান। তাহার কাছে জগতের সব কাজই সোজা, তাহার চাকরির জন্য ভাবিতে হয় না, উকিলিতে প্রসার করিবার জন্য সময় নষ্ট করিতে হয় না, বিনা কাজে বসিয়া থাকিতে হয় না, কোনো কাজেই শিক্ষানবিশ থাকিতে হয় না। যে তৈল দিতে পারিবে তাহার বিদ্যা না থাকিলেও সে প্রফেসর হইতে পারে, আহাম্মক হইলেও ম্যাজিস্ট্রেট হইতে পারে, সাহস না থাকিলেও সেনাপতি হইতে পারে এবং দুর্লভরাম হইয়াও উড়িষ্যার গভর্নর হইতে পারে।’
১৯৩১ সালের ১৭ নভেম্বর লোকান্তরিত হওয়া শাস্ত্রী মহোদয় এখনো বেঁচে থাকলে সাংবাদিকদের তেল মালিশ-পালিশবাজ, তস্কর, চাটুকার, মোসাহেবদের অপ্রতিরোধ্য হাউকাউ দেখে কষ্ট পেতেন। আরও কিছু লিখে ‘তৈল’ প্রবন্ধটিকে আপডেট করতেন। ওই প্রবন্ধে তিনি উকিল, প্রফেসর, ম্যাজিস্ট্রেট, গভর্নর, সেনাপতিদের কথা লিখেছেন। বাদ ছিল সাংবাদিকদের কথা। তাদের হাতে না জাতির কল্যাণে সত্যের ঝাণ্ডা তুলে ধরার মহান দায়িত্ব? জাতির বিবেক বুঝি দুস্থ-অসুস্থ, অসহায়-অথর্ব হয়? কেন তারা মোসাহেবিতে আন্ধার গলিতে তেলের ঘানি টানবেন?
হোক না জি-হুজুরদের হুজরতি সমাজে প্রতিষ্ঠিত। বেশিরভাগ মানুষই অকপটে মিথ্যা বলেন। এগুলোর শ্রোতাও অনেক। সত্য কথার চেয়ে ইনিয়ে-বিনিয়ে মিষ্টি মিথ্যার বাজার বেশি। সাংবাদিকদের কি তা মানায়? সাংবাদিকতা অবশ্যই অন্যসব পেশার চেয়ে একটু আলাদা।
বাংলাদেশের সাংবাদিকদের সে রকম মোচড় দিয়ে ওঠার অবস্থাও শেষ হওয়ার পথে। তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কষ্ট পেলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। তাদের চাওয়ার ধরনেও ভিন্নতা। এক গ্রুপ এ আইন রাখতেই চান না। আইনটি বাতিলের দাবি তাদের। আরেক গ্রুপ চান আইনটির কিছু ধারা সংশোধনের। এরা সরকারি পছন্দের গ্রুপ। তাদের মাঝেও কয়েক মত-পথ। কারণ তারা ভেতরের অবস্থা বেশি জানেন। ‘আইন (ডিজিটাল) তো সংসদে পাস হয়েই গেছে। এখন এ নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনার কী আছে? ‘পরেরবার ক্ষমতায় এলে দেখা যাবে’ ক্ষমতার শীর্ষ পর্যায় থেকে এমন আভাসের পর তারা হাল বুঝে পাল তুলছেন। ঝিম মেরে থাকছেন।
গুজব এবং উসকানিমূলক তথ্যরোধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বিহিতের আয়োজন করেছে সরকার। তবে, দেশে জনসম্মুখে মিথ্যা কথা বলে ক্ষমতাসীন বা বিরোধী রাজনীতিকরা সেগুলোকে সত্য বা ‘রাজনৈতিক বক্তব্য’ বলে চালিয়ে দিলে ধরা খাওয়ার শঙ্কা নেই। ধরা বা মারের পর্বটা কেবল সাংবাদিক নামের নিরীহ জীবদের ভাগ্যে। তাও মুখ চিনে মুগডাল বা মুগুর খাওয়ানোর মতো। এ আইনে গুজবের অভিযোগে নগদে ধরা-বাঁধা, জেল-জরিমানাসহ শায়েস্তা হওয়ার ঝুঁকি এখন সব সাংবাদিকের জন্য প্রযোজ্য নয়। কিন্তু, পরে কী হবে? ভাগ উল্টে যাবে না তখন? অল্পসংখ্যক কিছু বাদ দিলে রাষ্ট্রের কাছে সাংবাদিকদের মোটাদাগে চাওয়া একেবারে সীমিত। লেখার ও বলার স্বাধীনতা চান তারা। আর রুটি-রুজির নিরাপত্তা। সরকারি কল্যাণ ফান্ডের খবর সবাই জানেন না। রাখেনও না সেই খবর। রুটি-রুজির নিশ্চয়তার মধ্যেই তাদের আসল কল্যাণ নিহিত। তা রাষ্ট্র ও সরকারের জন্যও কল্যাণের। দয়া-দাক্ষিণ্য ধরনের ব্যবস্থা অসম্মানের। সাংবাদিক, সরকার ও রাষ্ট্র সবার জন্যই অকল্যাণের।
অপ্রিয় সত্য হচ্ছে, নিজেদের অবস্থা-অবস্থান এ জায়গায় এনে ঠেকানোর পেছনে সাংবাদিকরাও দায়মুক্ত নন। বিভিন্ন ইউনিয়ন, ফেডারেশন, বিটের কিছু সাংবাদিক দলীয় কর্মী হয়ে উঠছেন। কখনো কখনো কদাকার দলসেবায় আত্মবিসর্জন দিচ্ছেন তারা। নিজের ওজন কমানোর যাবতীয় বন্দোবস্ত নিজেরাই করতে থাকলে রুখবে কে? বছর কয়েক আগে, এক সাংবাদিককে পুলিশ নাজেহাল করার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, পুলিশ আসলে সাংবাদিকদের নির্যাতন করে না। মাঝে-মধ্যে একটু ধাক্কাধাক্কি করে।
প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কয়েকবার সাংবাদিকদের সম্বোধন করেছেন রাবিশ নামে। এক সময়ের বহুল আলোচিত সমাজকল্যাণমন্ত্রী মরহুম সৈয়দ মহসিন আলী বেশ কবার বলেছেন, সাংবাদিকরা খবিশ। জাতীয় পার্টির মাননীয় রওশন এরশাদ বলেছিলেন, দেশে বেকারত্ব বেড়ে যাওয়ায় পোলাপাইনগুলো সাংবাদিক হয়ে যাচ্ছে। এমনতর মন্তব্যে বুঝতে বাকি থাকার কথা নয়, সাংবাদিকদের সম্পর্কে উঁচুতলার কী উপলব্ধি?
লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন
বায়ুদূষণ বর্তমানে বৃহত্তম পরিবেশগত ‘স্বাস্থ্য হুমকি’ হিসেবে বিবেচিত। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘আইকিউএয়ার’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ২০১৮ সাল থেকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ৬৪টি জেলার মধ্যে ৫৪টি জেলারই বায়ুর মান আদর্শ মাত্রার চেয়ে খারাপ অবস্থায়। অতিরিক্ত বায়ুদূষণের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব পড়েছে, মানুষের প্রজনন ক্ষমতাসহ পুরো স্বাস্থ্যের ওপর। দূষণপ্রবণ এলাকাগুলোর প্রায় ১৪ শতাংশ বাসিন্দা বিষণœতায় ভুগছেন বলে বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় উঠে এসেছে। এর ফলে, গলা এবং ফুসফুসের রোগ বাড়ছে। গবেষণায় বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে, মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি পরিমাপ করা হয়।
কিন্তু এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সচেতনতা কতটুকু তা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। প্রযুক্তি পণ্যের উচ্ছিষ্ট বর্জ্য মাটি, বায়ু ও পানিকে দূষিত করছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সমষ্টিগত অভিঘাত বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনকে করছে ত্বরান্বিত। এর ফলে এই পৃথিবী একদিন ভয়ংকর পরিবেশ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে বাধ্য। একইসঙ্গে একথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় এই দূষণের তীব্রতায় জীববৈচিত্র্য একদিন বিলুপ্তির পথে চলে যেতে পারে।
গতকাল দেশ রূপান্তরের শেষ পাতায় প্রকাশিত ‘সারাক্ষণ দরজা-জানালা বন্ধ’ শীর্ষক প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায়, সারাক্ষণ বন্ধ থাকে আশপাশের বাড়িঘরের দরজা-জানালা। কারণ দিনভর কালো ধোঁয়ার কুন্ডলীতে আচ্ছাদিত থাকে পুরো এলাকা। ধোঁয়ার কারণে বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অফিসে কালির স্তর পড়ে গেছে। বায়ুদূষণের এমন ভয়াবহ চিত্র চট্টগ্রাম নগরের নাসিরাবাদ শিল্প এলাকার। দূষিত বাতাসের কারণে বায়েজিদ বোস্তামি এলাকার জনস্বাস্থ্য হুমকিতে। ওই এলাকার ও আশপাশের কয়েক লাখ মানুষ বায়ুদূষণজনিত নানা রোগে ভুগছে।
সংবাদে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, নাসিরাবাদ এলাকায় এসব শিল্পকারখানা ঘিরে আছে ঘনবসতিপূর্ণ শেরশাহ, বাংলাবাজার, চন্দ্রনগরের লাখ লাখ মানুষের বসতি। আছে অসংখ্য তৈরি পোশাক কারখানা, মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকা। রড উৎপাদনকারী কারখানাগুলোয় স্ক্র্যাপ গলানোর সময় ধোঁয়ার সঙ্গে কার্বন, আয়রন, অ্যালুমিনিয়ামসহ বিভিন্ন বস্তুকণা নিঃসরণ হয়। যা মানুষের নাক, মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে। অভিযোগ আছে, পরিবেশ সংরক্ষণ আইনকে তোয়াক্কা না করে ‘বায়ু শোধনযন্ত্র’ অকার্যকর রেখে রড উৎপাদন করছে এসব কারখানা। দীর্ঘদিন থেকে কারখানাগুলো পরিবেশের ক্ষতিসাধন করে এলেও মাঝেমধ্যে জরিমানা করে দায় সারছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক ড. খালেদ মিজবাহুজ্জামান বলেন, সাধারণত কারখানাগুলো থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া কুয়াশায় মিশে যায়। এটাকে পরিবেশবিজ্ঞানের ভাষায় আমরা ‘স্মগ’ বলে থাকি। এই ‘স্মগ’ বেশি ওপরে যেতে পারে না। তাই জলীয় বাষ্পের সঙ্গে আটকা পড়ছে।’
এসব দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহস্যজনকভাবে শুধু জরিমানা করেই ক্ষান্ত হন। এর বাইরে তাদের যেন আর কিছুই করার নেই! এছাড়া নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধের কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে, আমরা ছুটছি অর্থের পেছনে। ভবিষ্যতের করুণ পরিস্থিতির কথা, একবারের জন্যও ভাবি না। সাধারণ মানুষের কথা ভুলে গিয়ে, দায়িত্বহীন হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করে, নিজস্বার্থ উদ্ধার করাই যখন এই সমস্ত মানুষের উদ্দেশ্য তখন সরকারের অগ্রণী ভূমিকাই পারে, এমন অবিমৃশ্যকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে।
যেভাবেই হোক, সাধারণ মানুষকে নিশ্চিন্ত-নিরাপদ-দূষণমুক্ত পরিবেশে বেড়ে ওঠার সুযোগ দিতে হবে। এটি জনগণের মৌলিক অধিকার। এই দায়িত্ব সরকারের। কোনোভাবেই বিষয়টি পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা, অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া এবং শরীরচর্চার অভাবের বেশির ভাগ মানুষেরই হার্ট খারাপ হচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে 'খারাপ' কোলেস্টেরল— এ সব মানুষের নিত্যসঙ্গী। তবে রক্তের বিভিন্ন উপাদানের মাত্রা যদি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে যায়, তা হলে ওষুধ তো খেতেই হবে। সঙ্গে পছন্দের প্রায় সব খাবারেই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়ে যাবে। তবে পুষ্টিবিদেরা বলছেন, রোজকার খাবারে কিছু পরিবর্তন আনলেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই হার্টের যাবতীয় সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
বিরিয়ানি হোক বা পোলাও সঙ্গে মাটনের কোনো পদ ছাড়া জমে না। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, এ ধরনের 'লাল' মাংস খেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তাই খাসির বদলে মুরগির মাংস খাওয়া তুলনায় স্বাস্থ্যকর।
অনেক চেষ্টা করেও ভাজাভুজি খাবারের লোভ সামলাতে পারছেন না। এই অভ্যাসের ফলেই কিন্তু অজান্তেই বেশির ভাগ মানুষের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে চলেছে। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ভাজার বদলে যদি বেকড খাবার খাওয়ার অভ্যাস করা যায়, তবে এই সমস্যা অনেকটাই ঠেকিয়ে রাখা যেতে পারে।
সকালের নাশতায় পাউরুটি খান অনেকেই। কিন্তু পুষ্টিবিদেরা বলছেন, পাউরুটির ওপর মাখন দেওয়ার অভ্যাস ছাড়তে হবে। শুধু পাউরুটি খেতে যদি সমস্যা হয়, তবে ডিম ফেটিয়ে তার মধ্যে পাউরুটি ডুবিয়ে, তা বেক করে নিন। স্বাদ এবং স্বাস্থ্য দুই-ই থাকবে।
মন খারাপ হলে মাঝে মধ্যেই আইসক্রিম খেয়ে ফেলেন। তৎক্ষণাৎ মন ভালো করতে এই টোটকা সত্যিই কার্যকর। কিন্তু সমস্যা হলো আইসক্রিম খাওয়ার অভ্যাসে রক্তে বাড়তে থাকে কোলেস্টেরল। পরবর্তীতে যা হৃদরোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
গরমে তেষ্টা মেটাতে বার বার ঠাণ্ডা পানীয়তে চুমুক দিচ্ছেন। কিন্তু এ পানীয়ে থাকা কৃত্রিম শর্করা যে হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করছে, টের পেয়েছেন কী? পুষ্টিবিদেরা বলছেন, এই তেষ্টা মেটাতে এবং স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে নরম পানীয় না খেয়ে ফল থেকে তৈরি রস খেতে পারেন।
পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলে নয়, এশিয়া কাপ হবে একটি দেশে। আর সেটা শ্রীলংকা। পাকিস্তান তাতে অংশ না নিতে চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে এশিয়া কাপ।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দা টেলিগ্রাফ।
বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ যিনি এসিসিরও প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছেন, শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ খেলতে রাজি আছে ভারতসহ চার পূর্ণ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে এসিসির নির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে। পাকিস্তান রাজি না হলে ৫ দল নিয়েই হবে এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ অন্য কোনো দেশে আয়োজনে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজমা শেঠির দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন জয় শাহ। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে ভারতেই খেলতে হবে, না হলে না খেলবে। এ বার্তা পিসিবি এবং আইসিসির দুই কর্মকর্তা যারা সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করেন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
রিয়াল মাদ্রিদের সংগে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন। ৪০ কোটি ইউরো চুক্তিতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আলো ইত্তিহাদে যোগ দিচ্ছেন।
ক'দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল করিম বেনজেমাকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন -এমন কথাও চাউর হয় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে।
কিন্তু সব কিছুতে জল ঢাললেন ব্যালন ডি অর জয়ী। স্পেনের গণমাধ্যম মার্কার দেয়া মার্কা লিজেন্ড এওয়ার্ড নিতে গিয়ে বললেন, 'আমি যখন রিয়ালেই আছি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেনো বলবো। ইন্টারনেটে যা প্রচার হচ্ছে তা ঠিক না। আমি এখানে ভালো আছি। শনিবার রিয়ালের ম্যাচ আছে, সব ফোকাস আমার সেই ম্যাচকে নিয়ে।'
ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে তাকে রিয়ালে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেনজেমা বলেন, '২১ বছরের আমি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই ক্লাবে খেলার মতো আর কিছু হয় না, সান্তিয়াগো বার্নাবু দারুন এক জায়গা।'
রিয়ালের সংগে চুক্তির মেয়াদ এ মাসেই শেষ হচ্ছে বেনজেমার।
পলিথিন বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, বিভিন্ন ধরনের পলিথিনজাত মিনিপ্যাকের উৎপাদন, ব্যবহার ও এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সবগুলোই সমস্যা। পলিথিন উৎপাদন ও এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে বাতাসে যেমন কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়, অন্যদিকে এর ব্যবহার প্রাণিকুল ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত। প্লাস্টিকের কণা এখন মানুষের রক্তে, মায়ের দুধে, সামুদ্রিক মাছে। শুধু ব্যবহার সম্পর্কিত সমস্যা না, পলিথিনের মাধ্যমে সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও বেশি সমস্যাসংকুল। কারণ এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, কৃষির উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে, শহরের নর্দমা বন্ধ করে দিচ্ছে তা আবার রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে এবং সবশেষে শহরকে বসবাসের অনুপযোগী করে দিচ্ছে।
এতসব সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ না করা বা বন্ধ করতে না পারার সংকট কোথায় সেটা বুঝতে আমাদের সমস্যা হয়। পলিথিন বন্ধে আইন আছে, নানা ধরনের প্যাকেজিংয়ে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাও অনেক দিন হলো। অন্যদিকে বেশ কিছুদিন ধরে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু তা সহসাই হচ্ছে না। ‘সোনালি ব্যাগ’ নিয়ে অনেক ঢাকঢোল পেটানো হয়েছে কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেই সোনালি স্বপ্ন কেমন জানি ফ্যাকাশে হয়ে আসছে এতদিনে।
পলিথিনের ব্যবহার শহরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি যার অনেকটাই অভ্যাসগত কারণে। শহরের মানুষের পলিথিনের ওপর অভ্যস্ততা যেমন বেশি, তেমনি তারা ভুক্তভোগীও বেশি। রাস্তাঘাট, ড্রেন নোংরা হয়ে তো থাকেই, বাড়তি পাওনা দুর্গন্ধ, তৈরি হয় জলজট ও ডেঙ্গুর মতো রোগবালাই। বাসাবাড়িতে পলিথিনের ব্যবহার তো আছেই, পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য, বেকারিজাত পণ্যের পলিথিনের ব্যবহার ও পলিথিনের মোড়ক যত্রতত্র নিক্ষেপই এই অবস্থার জন্য দায়ী। শুধু ঢাকা নয় অন্যান্য ছোট-বড় সব শহরে প্রায় একই অবস্থা। আর এগুলোই হচ্ছে পলিথিন নির্ভর অর্থনীতির অনুষঙ্গ কিন্তু এর অনর্থনীতি হচ্ছে পলিথিনের কারণে পরিবেশদূষণ ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণভাবে পলিথিন ব্যবহারের ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্যমান নির্ধারণ করা হয় না। তবে দূষণের মাত্রা এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে পলিথিনের অর্থনীতির থেকে এর ক্ষয়ক্ষতির অর্থনীতি যে অনেক বড় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আসছে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম অনুঘটক হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। অর্থমন্ত্রী তার এবারের বাজেট (২০২৩-২৪) বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলেছেন, পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ এর উল্লেখ করেছেন কিন্তু পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে দৃশ্যমান কোনো রূপকল্প এবারের বাজেটে উল্লেখ করতে সমর্থ হননি। এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে’। গত বছরের এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘একটাই পৃথিবী’। পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের যত্রতত্র ব্যবহার আমাদের এই একমাত্র পৃথিবীকে দূষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আইন হয়েছে ২০০২-এ এবং আজ ২০২৩ সাল, এই দীর্ঘ ২১ বছরেও এই আইনের বাস্তবায়ন করা যায়নি। যদিও এবারের বাজেট বক্তৃতায় প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার এর মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাস্টিক সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। ধরেই নেওয়া যায় শুল্ক বৃদ্ধির এই হার কোনোভাবে পলিথিন নিরুৎসাহিত করার জায়গা থেকে না বরঞ্চ কিছুটা বাড়তি কর আদায়ের চিন্তা থেকে।
পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সস্তা পলিথিনের ব্যবহার টেকসই ভোগের ধারণার জন্যও কোনোভাবে সহায়ক না। বরঞ্চ এটা এমন এক ধরনের মনস্তত্ত্ব তৈরি করে যা শুধু পরিবেশকেই ধ্বংস করে। যদিও বিশ্বব্যাপী টেকসই ভোগের ধারণার ওপর ভিত্তি করে এখন ‘সার্কুলার অর্থনীতির’ ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সার্কুলার অর্থনীতি শুধু অপচয় কমায় না, প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা, দূষণরোধ, বর্জ্য থেকে তৈরি পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে। তাই পরিবেশগত ঝুঁকি, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা এবং এ সংশ্লিষ্ট অভীষ্ট ২০৩০ সমূহ অর্জনে সার্কুলার অর্থনীতি অন্যতম হাতিয়ার।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা শহরে রাস্তায় কোনো পেট বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায় না। এর কারণ হচ্ছে এখন পেট বোতলের প্রায় শতভাগ রিসাইকেল করা হয় এবং পেট বোতল সংগ্রহের জন্য অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে হলেও একটি সংগ্রহ-লাইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু পলিথিনের ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। তবে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার সার্কুলার ইকোনমির ধারণার সঙ্গেও একেবারে মানানসই না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রযুক্তিগতভাবে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন রিসাইকেল করা অসম্ভব না হলেও এটি একটি জটিল এবং অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল যে কারণে পেট বোতলের মতো রাস্তা থেকে পলিথিন সংগ্রহ করতে কাউকে দেখা যায় না উলটো রাস্তাঘাটে এখানে সেখানে পলিথিন পড়ে থাকে।
পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের অনর্থনীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখন প্রথম দরকার এর ব্যবহার বন্ধ করা, এর ব্যবহারকে অনেক বেশি দামি করে ফেলতে হবে আর এর প্রতিফলন থাকতে হবে বাজেটে। দ্বিতীয়ত, সার্কুলার অর্থনৈতিক চর্চার উৎসাহিত করার জন্য পরিকল্পনা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, পলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগের মতো উদ্যোগগুলোকে সরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ ও বেসরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। সরকার প্রতি বছর বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবেশ দিবস পালন করে কিন্তু দিবস পালন শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই হবে না এর উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে তার ওপরও নজর দিতে হবে। তা নাহলে পলিথিনের অর্থনীতির নামে শুধু অনর্থনীতিকে বাড়িয়ে তোলা হবে, আর সেটা হবে টেকসই অর্থনীতি তৈরির সম্ভাবনার অপমৃত্যু।
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষের। এমন অবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না কেউ। তাই বলে গরমের ভয়ে ঘরে বসে থাকলে তো আর জীবন চলবে না। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে যেতে হবে। আর কর্মজীবীদের অফিস ও অন্যান্য কর্মস্থলে। অনেকেরই এই গরমেও কাজের প্রয়োজনে সারাদিন কেটে যায় বাইরে ঘুরে ঘুরেই। গরমকে মোকাবিলা করতে সঙ্গে এই প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো রাখলেই গরমের কাছে নিজেকে হার মানতে হবে না।
পানি পান
গরমের সময় শরীর থেকে স্বাভাবিক ভাবে অনেক বেশি ঘাম বের হয়ে থাকে। যার ফলে দেখা দিতে পারে পানি শূন্যতা। শরীরের মধ্যে যদি পানির পরিমাণ কমে যায় তাহলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। পানি শূন্যতা দূর করতে হলে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি খেতে হবে।
বিশুদ্ধ পানি খাওয়ার পাশাপাশি ফলের জুস কিংবা কচি ডাবের পানি খেতে পারেন। দেহের ত্বককে ভালো রাখতে পানি, শরবত বা জুস পানের বিকল্প নেই। গরমে সময় প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ লিটার বিশুদ্ধ পানি খেলে ডিহাইড্রেশন এবং পানি শূণ্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
খাবার স্যালাইন
গরমের সময় ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণ বের হতে থাকে যার ফলে শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায়। এ থেকে মুক্তি পেতে খাবার স্যালাইন খেতে পারেন। বিকেল বেলা খাবার স্যালাইন খেলে অতিরিক্ত গরমেও শরীরে সতেজতা ফিরে আসে। আবার অনেকেই স্বাদযুক্ত স্যালাইন খান যেমন, টেস্টি স্যালাইন। ভুল করেও এসব খাবেন না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হলো ওরস্যালাইন । তবে আপনাদের মধ্যে যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা খাবার স্যালাইন খাওয়ার আগে ভালো কোনো ডাক্তারের মতামত নেওয়া উচিত।
রেড মিট পরিহার করুন
অতিরিক্ত গরমের সময় গরু-ছাগলের মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ গরমের সময় বা অতিরিক্ত গরমের সময় গরুর মাংস খেলে শরীরের তাপমাত্রা অনেকাংশে বেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গরু-ছাগলের মাংস ছেড়ে মাছ খেতে পারেন। আর অতিরিক্ত গরমে অবশ্যই অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার থেকে দূরে থাকুন।
সবুজ শাক সবজি
গরমের সময় শরীরকে সুস্থ রাখতে বেশি বেশি করে সবুজ শাক সবজি খেতে পারেন। সবুজ শাক সবজিতে অধিক পরিমাণে ভিটামিন মিনারেল এবং খনিজ উপাদান থাকে। এতে করে অতিরিক্ত গরমেও শরীর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।তাছাড়াও খেতে পারেন তরমুজ যা শরীরে এনার্জি দিতে পারে।
টক জাতীয় ফল
প্রচুর গরমে সুস্থ থাকার উপায় হিসেবে টক জাতীয় ফল খেতে পারেন। যেমন: কামরাঙ্গা, লেবু, তেতুল, আমরা ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে অতিরিক্ত টক ফল খাওয়া ঠিক নয়। যদি কারো এসিডিটির সমস্যা থেকে থাকে তবে টক জাতীয় ফল খাওয়া হতে বিরত থাকুন। টক জাতীয় ফল খালি পেটে খাওয়া যাবে না। এতে করে আরো বেশী অসুস্থ হয়ে পারতে পাবেন।
টক দই
অতিরিক্ত গরমে সুস্থ থাকতে হলে টক দই খেতে পারেন। যারা করা রোদে কাজ করেন বিশেষ করে তাদের জন্য অনেক উপকারী হলো টক দই। রোদের প্রচুর তাপ থেকে শরীরকে কিছুটা হলেও রক্ষা করবে টক দই। টক দই শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে অনেকাংশে সাহায্য করে।
প্রতিদিন গোসল করুন
গরমের সময় প্রতিদিন এক বার করে হলেও গোসল করতে হবে। যদি পারেন তবে দিনে ২ বার গোসল করতে পারেন। গোসল করার ক্ষেত্রে একটু সাবধান থাকতে হবে। বাহির থেকে এসে সাথে সাথে গোসল করতে যাবেন না। একটু বিশ্রাম নিয়ে তারপর গোসল করতে যাবেন। কারণ হঠাৎ করে গরম থেকে এসে গোসল করলে ঠাণ্ডা লাগতে পারে।
ঘরেই অবস্থান করুন
অতিরিক্ত গরমে বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বাহিরে যাবেন না । যদিও বিভিন্ন কারণে বাহিরে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে রোদ থেকে বাঁচতে প্রয়োজনে ছাতা ব্যবহার করতে পারেন। যতটুকু সম্ভব ছায়াযুক্ত স্থানে থাকার চেষ্টা করুন।
শারীরিক পরিশ্রম কম করুন
গরমের সময় অনেকেই আছে অতিরিক্ত ব্যায়াম করে থাকেন এমনটি করা যাবে না কারণ অতিরিক্ত গরমে শরীরের তাপমাত্রা একটু বেশি হয়ে থাকে।
পাতলা সুতি কাপড় পরিধান করা
গরমের সময় পাতলা সুতি কাপড় পরা দরকার। কারণ সাদা কাপড় তাপ শোষণ করতে পারে না বরং তাপের প্রতিফলন ঘটায় ও গরম কম লাগে।
পারফিউম ব্যবহারে সতর্ক থাকুন
অতিরিক্ত গরমে ঘামের গন্ধ থেকে বেচে থাকার জন্য অনেকেই সুগন্ধি ব্যবহার করে থাকে। তবে অতিরিক্ত গরমে পারফিউম ব্যবহার না করাটাই উত্তম কাজ। কারণ, পারফিউম গরম লাগা বৃদ্ধি করে দেয়।
যদিও ব্যবহার করতে হয় তাহলে হালকা গন্ধের সুগন্ধি ব্যবহার করতে পাবেন। বাজারে কিছু সুগন্ধি পাওয়া যায় যেগুলো ব্যবহার করলে ঠাণ্ডা লাগে। সেগুলো ব্যবহার করলে আরো ভালো হয়।
ধূমপান পরিত্যাগ করা
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা কিনা ধূমপান করে থাকি। ধূমপান করলে শরীরের তাপমাত্রা তুলনামূলক ভাবে বেড়ে যায়। তাই প্রচন্ত গরমে সুস্থ থাকতে হলে ধূমপান পরিত্যাগ করতে হবে। যদিও এই অভ্যাসটি সহজে পরিত্যাগ করা যায় না। তাই যতটুকু পারেন ধূমপান কম করার চেষ্টা করুন।
চা কফি পরিত্যাগ করুন
চা, কফি বা অ্যালকোহল খেলে শরীরের তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পায়। আর যদি অতিরিক্ত গরমে চা, কফি বা অ্যালকোহল খেয়ে থাকেন তাহলে শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পাবে যার ফলে হতে পারে হিটস্ট্রোক। তাই গরমের সময় চা কফি বা অ্যালকোহল খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে।
শান্ত থাকুন
মন মেজাজ গরম থাকলে শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। রাগের কারণে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং অতিরিক্ত গরমের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় আর দুই তাপমাত্রা এক সঙ্গে হলে কি অবস্থা হতে পারে একবার হলেও সেটা ভেবে দেখবেন।
বিশেষজ্ঞরা অতিরিক্ত গরমে শান্ত থাকার জন্য মতামত দিয়ে থাকে। বিশেষ করে যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের জন্য শান্ত থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।