
‘শিক্ষা জীবন কত না মধুর হইত যদি পরীক্ষা না থাকিত’। আমাদের ছাত্রজীবনে এ লাইনটি অনেক শুনেছি। কখনো বাবা-মা, কখনো শিক্ষকের মুখে। এ লাইনটি তাকেই শুনানো হতো, যারা পরীক্ষার ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়তেন। কিন্তু সত্যি সত্যি পরীক্ষা দিতে হবে না এ তো স্বপ্নেরও বাইরে।
আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে নানা গবেষণা চলছে, প্রায় তিন দশক ধরে। শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিকীকরণের নামে শিক্ষাপদ্ধতিতে আনা হচ্ছে পরিবর্তন। কোনো ব্যবস্থা পাঁচ-সাত বছর, কোনোটি দশ-বারো বছরের বেশি টিকছে না। শিক্ষাপদ্ধতি চালুর আগে, এর সক্ষমতা যাচাই ও ভবিষ্যৎ কার্যকারিতার মূল্যায়ন না করায় সেই পদ্ধতি টেকসই হচ্ছে না। শিক্ষাপদ্ধতি চালুর পর তাতে অভ্যস্ত করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। যা অনেকটা গিনিপিগের মতো।
চলতি বছর থেকে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। এই শিক্ষাক্রমে শিখনকালীন মূল্যায়নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। আগামী বছর দ্বিতীয় ও
তৃতীয় শ্রেণি এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণি এ শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে। ২০২৫ সালে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণি এবং ও দশম শ্রেণি যুক্ত হবে। ২০২৬ সালে একাদশ ও ২০২৭ সালের দ্বাদশ শ্রেণি যুক্ত হবে।
নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন থাকছে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের কোনো পরীক্ষায় বসতে হবে না। নতুন শিক্ষাক্রমে চতুর্থ ও ৫ম শ্রেণিতে ৮ বিষয় আছে। এর মধ্যে পাঁচটি বিষয়ে (বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান) হবে শিখনকালীন মূল্যায়ন ৬০ শতাংশ এবং সামষ্টিক মূল্যায়ন ৪০ শতাংশ। বাকি তিনটি বিষয়ে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, ধর্মশিক্ষা এবং শিল্পকলা রয়েছে। এগুলোর শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ।
ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত অভিন্ন ১০টি বিষয় রয়েছে। এরমধ্যে- বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ আর ৪০ শতাংশ হবে সামষ্টিক মূল্যায়ন। নবম ও দশম শ্রেণিতে ৫০ শতাংশ হবে শিখনকালীন মূল্যায়ন, বাকি ৫০ শতাংশ হবে সামষ্টিক মূল্যায়ন। জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্মশিক্ষা (প্রত্যকে ধর্ম অনুযায়ী) এবং শিল্প ও সংস্কৃতি- এই পাঁচটি বিষয়ে শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন। নতুন শিক্ষাক্রমে মাধ্যমিকে কোনো বিভাগ বিভাজন থাকছে না।
একাদশ ও দ্বাদশে গিয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৩০ শতাংশ। আর মূল্যায়ন হবে ৭০ শতাংশ। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যসূচির পর প্রতি বর্ষ শেষে হবে একটি করে পরীক্ষা। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ফলাফলের সমন্বয়ে চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারিত হবে।
এই শিখন পদ্ধতি নিয়ে বিস্তর কোনো গবেষণা কি হয়েছে? এ পদ্ধতি কি আদৌ টেকসই হবে? নাকি এটাও একটি শিক্ষার্থীদের ওপর পরীক্ষা। ইতিমধ্যে সরকার স্কুলগুলোতে এ পদ্ধতি অনুসরণের কথা বলেছে। কিন্তু অনেক শিক্ষক এখনো বুঝে উঠতে পারেননি, পরীক্ষা ছাড়া কীভাবে মূল্যায়ন করা যায় একজন শিক্ষার্থীকে। এ কারণে অনেক বিদ্যালয়ে এখন শুধু পড়িয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা।
শিখন পদ্ধতি চালু হলেও, সম্প্রতি কিছু কিছু বিদ্যালয় ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতি নিলে মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে তা যেন না করা হয় সে বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। কিন্তু মূল্যায়নের পদ্ধতিটি কী হবে- সেটা কি স্কুলগুলোকে বলা হয়েছে? এখনো তা বলা হয়নি। তবে শিক্ষকরা কীভাবে পাঠ্যক্রম চালিয়ে যাবেন? কিছু প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা কি শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের জন্য যথেষ্ট।
একটু পেছন ফিরে তাকাই। ৮০ দশক পর্যন্ত আমাদের দেশে পরীক্ষাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থায় চালু থাকে। একই বই বছরের পর বছর পড়ানো হয়েছে। সেই শিক্ষায় ছিল না আধুনিকতার ছোঁয়া। যদিও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সরব থাকত শিক্ষার্থীর কচিকণ্ঠে। সুর করে ছড়া কবিতা পড়া হতো। যা বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় অনুপস্থিত। পরীক্ষায় প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কবিতার প্রথম ১০ লাইন লিখতে হতো কবির নামসহ। এছাড়া সুন্দর হাতে লেখার জন্য কোনো স্কুলে নম্বরের ব্যবস্থা ছিল। প্রাথমিকে উদ্দীপনার জায়গা ছিল- বৃত্তি পরীক্ষা। স্কুলগুলো বাছাইকরা শিক্ষার্থীদের অর্থাৎ ক্লাসে প্রথম ১০ জন শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য পাঠাত। কেননা, এখানে বিদ্যালয়ের সুনাম জড়িত থাকত। একই ভাবে অষ্টম শ্রেণিতেও বৃত্তির ব্যবস্থা ছিল। যা মেধা যাচাইয়ের অন্যতম মাধ্যম ছিল।
প্রাথমিক মাধ্যমিকের সব শ্রেণির প্রশ্নগুলো অনুশীলনী থেকে নেওয়া গৎবাঁধা ছিল। উত্তরও একই। শব্দার্থ, রচনা, ভাবসম্প্রসারণ, সারাংশ কিংবা শ্ন্যূস্থান পূরণ ছিল মাধ্যমিকের সব ক্লাসে। শিক্ষার্থীদের ভয়ের সাবজেক্ট ছিল ইংরেজি ও অঙ্ক। দেখা যেত, এসএসসি পরীক্ষায় এই দুটি বিষয়ে বেশি ফেল করত। যে কারণে এসএসসিতে পাসের হার ৩০ শতাংশের ঘরে থাকত। এসএসসির বোর্ডে মেধা তালিকার ২০ জনকে দেওয়া হতো বিশেষ সম্মান। বলা হতো, এই ছাত্র স্ট্যান্ড করেছে। যার ছবি ছাপা হতো পত্রিকার পাতায়। তাকে চিনত সারা দেশের মানুষ। ভালো ছাত্র খারাপ ছাত্র বাছাই হয়েছে ডিভিশনে।
এই শিক্ষাব্যবস্থার একজন শিক্ষার্থীকে অনেক বেশি পড়তে হতো, মুখস্থ করতে হতো, হাতে লেখার চর্চা হতো, শুদ্ধ লিখার চর্চা হতো। কিন্তু অনাধুনিক, আন্তর্জাতিক শিক্ষার মানদ-ের ধারেকাছে না থাকার কারণে এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে।
১৯৯২ সালে প্রথম শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হয় নৈর্ব্যত্তিক পদ্ধতির মাধ্যমে। গণিত বাদে বাকি ৯টি বিষয়ে ৫০ শতাংশ নম্বর এমসিকিউ যুক্ত হয়। এরশাদ সরকারের শাসনের শেষ ভাগে এ পদ্ধতি যুক্ত হওয়ার ঘোষণা আসে। এর মূল লক্ষ্য ছিল শুধু নির্দিষ্ট প্রশ্ন উত্তরে সীমাবদ্ধ না থেকে গোটা বই পড়ার চর্চা করা। এ পদ্ধতির প্রথম এসএসসির বোর্ড পরীক্ষা হয় ১৯৯২ সালে। অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে ভীতি তৈরি হয় পাস করা নিয়ে। ফলে ১৯৯১ সালের এসএসসির টেস্ট পরীক্ষায় অনেক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হলে, কিছু স্কুল শিক্ষার্থী আন্দোলনে নামে এ পদ্ধতি বাতিল করার জন্য। ওই সময় বিদ্যালয়গুলোতে ৫০০ প্রশ্নব্যাংক নামে নমুনা প্রশ্ন পাঠানো হয়। শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে এই ৫০০ প্রশ্ন ব্যাংক থেকে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি তুলে। ১৯৯১ সালের বিএনপি নতুন সরকারের প্রথম আন্দোলন ছিল এটি। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ড. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন মেনে নিয়ে, ৫০০ প্রশ্নব্যাংক ১৯৯২ সালের এসএসসির পরীক্ষার জন্য স্থির করে দেন। এমসিকিউ ও রচনামূলকে সমন্বিত পাস হওয়ায় দেখা সেবার এসএসসিতে পাসের হার এক লাফে ৬০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত এই পরিস্থিতিতে চলতে থাকায় পাসের হার বাড়তে থাকে। ১৯৯৬ সালে পাসের হার ছিল ৪২.৬১ শতাংশ। এই ব্যবস্থায় পাস করে যাওয়া বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে উচ্চ মাধ্যমিকে গিয়ে চাপে পড়তে হয়।
পরবর্তী সময়ে এমসিকিউ পদ্ধতি ঠিক রেখে ২০১০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় প্রথমবারের মতো সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি চালু হয়। পরের বছর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পাসের হার ৮০ শতাংশ পেরিয়ে যায়। এ পদ্ধতি চালু হয়েছিল কোনো রকম প্রস্তুতি ছাড়াই। এ কারণে সরকারের সর্বশেষ হিসাবে দেখা যায় ৪১ শতাংশ শিক্ষকই বোঝেননি সৃজনশীল পদ্ধতি। শিক্ষার্থীরা মনের মাধুরী মিশিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে, তেমনি শিক্ষকরা প্রশ্ন তৈরি করতে গিয়ে নানান বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। এ পদ্ধতিতে শুধু পাসের হারই বাড়িয়েছে। ২০১৪ সালে তা পৌঁছায় ৯২ দশমিক ৬৭ শতাংশে। গত ছয় বছরে সবসময়ই পাসের হার ৮০ শতাংশের বেশি ছিল।
সৃজনশীল শিক্ষাপদ্ধতির যাত্রা শেষে এ বছর থেকে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। শিখনকালীন মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে চালু হওয়া নতুন শিক্ষাক্রমেও শিক্ষকদের দক্ষ করাই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, নতুন শিক্ষাক্রমের পুরোপুরি বাস্তবায়নের পর পরীক্ষার ফলে প্রচলিত নম্বর বা গ্রেড থাকবে না। তিনভাবে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যদিও তা এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। যারা মূল্যায়নের প্রাথমিক স্তরে থাকবে তাদের এলিমেন্টারি লেভেল (প্রাথমিক স্তর), পরের স্তর হবে মিডেল লেভেল (মধ্যম স্তর)। যারা সবচেয়ে ভালো করবে, তাদের এক্সপার্ট লেভেল (পারদর্শী স্তর)-এর সনদ দেওয়া হবে। এভাবে নম্বর গ্রেড দেওয়া হলে অভিভাবকদেরও আর জিপিএ ৫-এর পেছনে দৌড়াতে হবে না। তবে এই ধরনের নম্বর গ্রেডে আবার উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হতে পারে।
প্রশ্ন হচ্ছে, পরীক্ষা না হলে একজন শিক্ষার্থী শ্রেণির পড়া কেন পড়বে? করোনা ভাইরাসের মহামারীতে আমাদের শিক্ষার্থীদের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। করোনাকালীন অটো পাস হওয়ায় শিক্ষার্থীরা না পড়েই উচ্চ শ্রেণিতে উঠেছে। একটা বিশেষ সময়ের কারণে অটো পাসের ব্যবস্থা মানা যায়। কিন্তু এখন পরীক্ষা ছাড়া, শুধু শ্রেণি মূল্যায়ন নিয়ে উচ্চশ্রেণিতে যাওয়ার ব্যবস্থা মানেই হচ্ছে- ভঙ্গুর শিক্ষিত জাতি তৈরি করা।
আমাদের দেশের শহরের তুলনায় গ্রামের শিক্ষাব্যবস্থা এখনো ততটা উন্নত নয়। ফলে শহরের সঙ্গে গ্রামের শিক্ষার্থীদের বৈষম্য তৈরি করতে পারে এ শিক্ষা পদ্ধতি। এছাড়া একজন শ্রেণি শিক্ষক যে ছাত্রকে পছন্দ করবেন তাকে বেশি নম্বর দিতে পারেন। এজন্য শিক্ষককে জবাবদিহি করতে হবে না। আর যেসব অভিভাবক চাইবেন, তার সন্তান ভালো পড়ে উচ্চশ্রেণিতে যাক- তারা প্রাইভেট বা কোচিংয়ের দিকে মনোনিবেশ করবে। ফলে শ্রেণি শিক্ষা সে ততটা নিতে চাইবে না।
নৈর্ব্যত্তিক, সৃজনশীল বা গ্রেডিং পদ্ধতি প্রবর্তনের মাধ্যমে আমাদের সরকার গত তিন দশক ধরে গবেষণা করে কোথাও স্থির হতে পারেনি। প্রশ্ন থাকে, শিক্ষার্থী বা শিক্ষকদের ওপর একেক সময়ে একেক পদ্ধতির শিক্ষাব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়ে আমরা কি দক্ষ শিক্ষার্থী তৈরি করতে পারছি? তবে একটা স্থির পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়োজন দক্ষ শিক্ষার্থী তৈরি জন্য। একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ বলা হতো। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা বিদেশে পড়তে গিয়ে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল করেছে, করছে। এটা অব্যাহত রাখতে হবে। এ কারণে পাসের হার নয়, জিপিএ ৫ নয় মানসম্পন্ন শিক্ষিত জাতি তৈরি করা একান্ত কাম্য। ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র তো, তাদের হাতেই থাকবে।
লেখক : সাংবাদিক
কল্পনার পাখা উড়তে যদি দিই কিছুক্ষণের জন্য, যদি ভাবি, কেমন হতে পারে আগামী দিনের হাসপাতাল? যদি এমন হয় উচ্চ প্রযুক্তির বিশাল বিশাল সব মেশিন। রোগীর ডিভাইস থেকে প্রেরিত সব তথ্য বিশ্লেষণে ব্যস্ত ডাক্তার। মুখ চিহ্নিত করে এলইডি স্ক্রিন অভ্যর্থনা করছে, ভিজিটরদের। ভার্চুয়াল পেসেন্ট ভিজিট অপারেশন করছে রোবটরা এ রকম একটা ধারণা বিশেষজ্ঞদের হচ্ছে।
হাসপাতালের ডিজাইন করতে গিয়ে, পয়েন্ট অব কেয়ারের বাইরে আর ভেতরের চেহারা যাতে হয় সুসজ্জিত তা দেখতে হবে। এমন প্রতিষ্ঠান হবে রোগ প্রতিরোধের। একিউট কেয়ার, পেসেন্ট কেয়ার লাগবে রোগীদের। হেলথ কেয়ার কেন্দ্র এবং যেসব রোগীর সার্জিক্যাল প্রসিডিওর বা যাদের প্রয়োজন বিশাল রেডিওলজি মেশিন এসবের কেন্দ্র হবে এমন হাসপাতাল। হতে পারে কল্পনাবিলাস, তবে এ রকম হাসপাতাল বিশে^র কোনো কোনো দেশে গড়ে উঠছে।
মেডিকেল ফিউচারিস্ট পেট্রিওন কিম্বারলি পাওয়েল বলেন, বিশে^র বিভিন্ন দেশে দ্রুত গড়ে উঠবে এমন হাসপাতাল। যেগুলো ব্যবহার করবে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্ক্রিন করার জন্য কৃত্রিম মেধা ক্যামেরা। প্রতি রোগীর জন্য কোনো বিশেষ ভাইরাস বা সন্দেহজনক সংক্রমণ কতটা ভয়ংকর হবে, তা আগেই জানার জন্য ব্যবহৃত হবে প্রযুক্তি। জানা যাবে, জেনমিক্স সিকুয়েন্সিং দ্বারা।
রোগীর সঙ্গে কথাবার্তা বা তাদের নজরদারির জন্য ক্যামেরা আর মাইক্রোফোনে সংযুক্ত থাকবে কৃত্রিম মেধা বা আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স। এতে রোগীর অভিজ্ঞতা হবে সমৃদ্ধ, কমবে হেলথ কেয়ার খরচ ও তথ্য আর উপাত্ত হবে নিরাপদ।
আদর্শ হাসপাতাল হবে
১. কাগজবিহীন বা পেপারলেস
রোগীর উপাত্ত কাগজে লিপিবদ্ধ করা বা কাগজে সংরক্ষণের দিন থাকবে না, সব হবে অতীত। ব্যবহৃত হবে ইলেক্ট্রনিক ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, এ দিয়ে করা হবে রোগীর উপাত্তের সংরক্ষণ। কাগজের নথি ডিজিটালাইজ করা হবে এবং তাতে রোগীর নথির গোপনীয়তাও রক্ষা হবে।
২. সংযুক্ত থাকবে রোগীর বাসার সঙ্গে
একটি আদর্শ হাসপাতাল মানে হলো, রোগী যাতে সম্ভাব্য কম সময় হাসপাতালে কাটান। রোগীর চিকিৎসাস্থল হবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাসা।
হাসপাতালের ওয়ার্ডে যদি থাকে ফাইভ-জি আর ওয়াইফাই, তাহলে উপাত্ত দৌড়াবে দ্রুত। কভিড প্যান্ডেমিকের সময়, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে রোগীদের ভার্চুয়ালি যুক্ত আর পারস্পরিক বিনিময় করতে এই প্রযুক্তি যথেষ্ট সহায়ক হয়েছে।
৩. হাসপাতাল ডিজাইন করতে ব্যবহৃত হবে রোগীর ডিজাইন
আদর্শ হাসপাতাল হবে রোগীকেন্দ্রিক, রোগীর চাহিদা আর আকাক্সক্ষার ভিত্তিতে নির্মিত। তাদের চাহিদা হলো বেশি আলো, সুন্দর রংঅলা কক্ষ, গোলাকার টেবিল। তবে যেহেতু হাসপাতাল ডিজাইন সরাসরি প্রভাব ফেলে রোগীর ওপর, সে জন্য হাসপাতালের ডিজাইন সেভাবে বদলাতে হবে।
৪. টেলিমেডিসিনের জন্য যথাস্থান
রোগের নিরাময় কীভাবে হতে পারে, কভিড-১৯ সেই দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা পাল্টে দিয়েছে। আমরা অনুধাবন করেছি, কী করে অনেক কাজ একসঙ্গে অনেক দূর থেকে আরও ফলপ্রসূভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব।
এ কথা ঠিক, রোগীকে সবসময় অসুখের জন্য হাসপাতাল বা ক্লিনিকে যাওয়ার দরকার নেই । সবসময় রোগীর সঙ্গে ডাক্তারের সাক্ষাৎ হতে হবে, এমনো নয়।
এতে সময় আর অর্থের অপচয় হয় কম। এমন পরামর্শের যৌক্তিকতা তো আছেই, ফলপ্রসূও বটে।
৫. থাকবে হেলথ কেয়ার কর্মী, ডাক্তার নার্সদের জন্য বিশ্রামস্থল, শিথিল হওয়ার সময় আর স্থান
প্যান্ডেমিকের সময় আরও একটি জিনিস প্রকটভাবে দেখা গেছে স্বাস্থ্য পরিচর্যা, শুশ্রƒষা, চিকিৎসা রোগ নির্ণয় যারা করেন তাদের কুশল আর ভালো থাকার বিষয়টি। এরা রোগীকে সেবা দিতে দিতে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়েছেন। ফলে হয়েছে বার্ন আউট। যে কারণে, সুসজ্জিত, আরামদায়ক টিপটপ কমন রুম আর বিশ্রাম ঘর থাকতে হবে।
আদর্শ হাসপাতাল হতে হবে রোগী, স্বাস্থ্যকর্মী ডাক্তার নার্স সবার জন্য কুশল কেন্দ্র বা ওয়েলনেস সেন্টার। এমন ব্যবস্থা রয়েছে, নিউ ইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে।
আমাদের দেশে ডিজিটালাইজেশন খুব জোরদার। তাই এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্মার্ট হাসপাতালের দিকে এগোতে পারি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্মার্ট বাংলাদেশের কথা। আমরা স্মার্ট হাসপাতাল করে স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি আর রোগীর স্বাস্থ্য খাতে খরচ কমানোর চেষ্টা করতেই পারি।
লেখক : সাবেক অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ
মূল : লিডিয়া পলগ্রিন
অনুবাদ : মনযূরুল হক
গত সপ্তাহে মেক্সিকোর ডিটেনশন সেন্টারে যখন আগুন লাগল মনে হলো, শরণার্থীদের ওপর এক মহাজাগতিক দুর্ভাগ্য নেমে এসেছে। ডিটেনশন সেন্টারটি ছিল সিউদাদ জুয়ারেজ থেকে আসা আমেরিকায় অভিবাসন প্রত্যাশী এবং রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের ঠিকানা। বিপদ থেকে পালিয়ে এসে তারা যেন মহাবিপদে পড়েছেন একদিকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সহিংসতা, জলবায়ু পরিবর্তন বা অর্থনৈতিক বঞ্চনার কারণে ঘরছাড়া, অন্যদিকে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়ার কেন্দ্রে বিধ্বংসী আগুন। কমপক্ষে ৩৯ জন মারা গেছে। বিশ্ব চেয়ে চেয়ে দেখেছে। কিন্তু এটা কি স্বাভাবিক ঘটনা? নাকি এই দ্বিমুখী বিপদ বিশ্বের বর্তমান অবস্থার একটি প্রতিচিত্র?
মনে পড়ল দক্ষিণ তুরস্কের কথা। কিছুদিন আগে, ফেব্রুয়ারিতে, বিধ্বংসী ভূমিকম্পের রিপোর্ট করতে গিয়েছিলাম। তুরস্কে ৩.৫ মিলিয়নেরও বেশি সিরিয়ান উদ্বাস্তুর বাস, যারা গৃহযুদ্ধ থেকে পালিয়ে এসেছে। ভূমিকম্প আঘাত হানলে তারাও একইরকম মহাজাগতিক দুর্ভাগ্যের মুখোমুখি হন বিপদ থেকে মহাবিপদে।
ভূমিকম্পের দায় না-হয় ঈশ্বরের, কিন্তু তাদের পরিস্থিতি তো মানুষের তৈরি। নিজভূমে নৃশংস সংঘাতের ফলেই তারা বাস্তুহারা। আর কোথাও যাওয়ারও উপায় নেই, কারণ তুর্কি সরকার ইইউ থেকে ০৬ বিলিয়ন ইউরো নিয়েছে ইউরোপে ঢোকার সমুদ্রমুখ বন্ধ করতে। যেমন মেক্সিকোর ডিটেনশন সেন্টারও নির্মিত হয়েছে দক্ষিণ কিংবা মধ্য আমেরিকার অভিবাসী প্রত্যাশীদের আটকাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে।
এই ডিটেনশন সেন্টার, কিংবা রিফিউজি ক্যাম্প মূলত নৈতিকভাবে সন্দেহজনক একটি ব্যবস্থা, যা ধনিক-বিশ্ব দরিদ্র-বিশ্বের কয়েক মিলিয়ন মানুষকে আটকে রাখতে গড়ে তুলেছে। যারা পালাচ্ছে, তাদের বলছে ওখানেই থাকো, খরচ আমরা দিচ্ছি। মানুষ ছুটছে দুর্যোগ, সংঘাত বা নিষ্ঠুরতার কবল থেকে বাঁচতে, আর ধনী দেশগুলো চাইছে নিজ উপকূল থেকে তাদের আরও দূরে রাখতে, তথাকথিত ‘থার্ড ওয়ার্ল্ড’-এর সীমানায় বেঁধে ফেলতে। নিষ্ঠুরতা-সহনশীল একটি চমৎকার ব্যবস্থা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অরক্ষিত মানুষকে সুরক্ষা দিতে বিশ্ব যে মহান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার কি আর কোনো মানে আছে এখন?
তুরস্কে আমার দোভাষী ছিল সিরিয়ার আহমেদ কানজো। যুদ্ধের শুরুতে সে ছিল আলেপ্পোতে একটি আরবি মিডিয়ার সংবাদ উপস্থাপক। পরিবার নিয়ে তুরস্কে পালিয়ে আসার পর জীবিকা নির্বাহে সংগ্রাম করছে। যে ভবনে স্ত্রী ও চারটি সন্তান নিয়ে থাকত, ভূমিকম্পে সেটি ভেঙে পড়েছে। তো পরিবারকে ভাইয়ের সঙ্গে অন্য এলাকায় পাঠিয়ে দিয়ে নিজে রয়ে গেছে গাজিয়ানটেপে। তার বন্ধু আব্দুল কাদির আমাকে জানায়, সে-ও আলেপ্পো থেকে পালিয়েছে সিরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার নির্যাতনের শিকার হয়ে।
এক সন্ধ্যায় আহমেদ, আবদুল কাদির আর তাদের কয়েক বন্ধু মেঝেতে আড়াআড়ি বসে মসলাদার কফি পান করছিল। সিগারেটের ধোঁয়ায় বাতাস ঘন হয়ে আসছে। আমি ভাবছিলাম, একজন প্রতিভাধর টেলিভিশন সাংবাদিক আহমেদের জীবনের কী হাল! সে আমাকে অনেকগুলো ভিডিও ক্লিপ দেখিয়েছে। চারপাশে বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ। আহমেদ আমাকে বলেছিল, সে তার কাজকে খুব মিস করে। বলেছিল, ‘বিশ্ব মনে করে তুরস্কে সিরিয়ানরা ভালো আছে। তারা একটি অভয়াশ্রম খুলে দিয়েছে, আসলে এটা একটি কারাগার।’
আহমেদ ও আমার আরেকটা মিল আছে। আমার শেকড়ও ইথিওপিয়াতে, সিরিয়ার মতোই বাস্তুচ্যুত মানুষের দেশে। নিষ্ঠুর মার্কসবাদী স্বৈরশাসনের কবলে পড়ে আমার মা পালিয়ে একজন আমেরিকানকে বিয়ে করেন। তারা আমাকে একটি গাঢ় নীল পাসপোর্ট দেয়, যা আজ আমাকে বিশ্বে অবাধে চলাফেরার সুবিধা দিয়েছে। ওটাই চাকরির অসিলায় আমাকে তুরস্কে এনেছে। ভৌগোলিক ‘সৌভাগ্য’ না-হলে আমার আর আহমেদের জীবন কাহিনি তো একই হওয়ার কথা। আবদুল কাদিরের পাশে চুপচাপ শুয়ে আছেন তার ৯০ বছর বয়সী দাদি, রাবিয়া। জিজ্ঞাসা করলাম, তুরস্কের জীবন কেমন? বললেন, ‘নিরাপদ, কারণ কোনো ব্যারেল বোমা নেই, গোলাগুলি নেই, যুদ্ধ নেই।’ কিন্তু ভয় না থাকলেই কি জীবন চলে?
জানতে চাইলাম, কী বেশি মিস করেন? বললেন জলপাই তেলের কথা, যা তিনি নিজেই উঠোনের গাছ থেকে পেড়ে তৈরি করেছেন। বললেন, ‘সিরিয়ায় আমাদের সমস্ত স্মৃতি রেখে এসেছি।’ বাড়ির জন্য এই কাতরতা অভিবাসীদের বিরুদ্ধে যারা ক্ষোভ দেখায় তারা কখনো বুঝবে না। মায়ের কথা মনে পড়ে, কয়েক দশক ধরে তিনি আমেরিকান নাগরিক, অথচ প্রতি মুহূর্তে বলেন ইথিওপিয়াতে নিজের শহরে একটা বাড়ি বানাবেন। যে গরিব দেশে গেছি, দেখেছি, আধখেচড়া ইট-পাটকেলের ঘর প্রবাসীদের ফেরার স্বপ্নে বিভোর। কে চায় বাড়ি ছেড়ে যেতে? কিন্তু সিরিয়ার শরণার্থীরা বাড়িও যেতে পারে না, ইউরোপেও না।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, যুদ্ধ ও নিপীড়নের পালাতে বাধ্য হওয়া মানুষকে রক্ষা করতে এই ‘শরণার্থী’ ব্যবস্থা তৈরি করে বিশ্ব। তাই এটা এখন তাদের আইনি পদবি, সাধারণ অভিবাসীদের মতো নয়। যুদ্ধোত্তর অনেক প্রতিশ্রুতির মতো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শরণার্থীদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিও বাস্তবের চেয়ে বেশি তাত্ত্বিক অনুশীলনে বন্দি। এটা ছিল বৈশ্বিক দায়িত্ব, কিন্তু বাস্তবে, পালন করতে হয় অতি দরিদ্র কিংবা মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে ধনী দেশগুলোর ‘দান-দক্ষিণার’ ভিত্তিতে। ধনী দেশগুলো তাদের দেশে যেতে সুইয়ের চোখের মতো কয়েকটি সরু পথ রেখেছে, গুটিকতক সৌভাগ্যবান ছাড়া যার ফাঁকে মাথা গলাতে পারে না কেউ। শরণার্থীদের জন্য তা-ও বন্ধ। পরিবর্তে, এমন লোক নিতে চায়, যারা যোগ্যতার প্রমাণ দেখাবে।
অভিবাসনের রাজনীতিও সম্পূর্ণ বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। ২০১৫ সালে ইউরোপে উদ্বাস্তুদের নিতে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল সাহসের সঙ্গে ঘোষণা করেছিলেন, ‘আমরা সামলাতে পারব।’ জার্মানি তখন এক মিলিয়নেরও বেশি লোক নিয়েছে, বেশিরভাগই সিরিয়ার। জার্মানি সামলেছে। কিন্তু ইউরোপ জুড়ে বিদ্রোহ করেছে ভোটাররা। পরের বছরই মার্কেলসহ ইইউ নেতারা অভিবাসীদের আগমন বন্ধ করতে তুরস্কের সঙ্গে দর কষাকষি করেছেন। তারপর আর কেউ পা বাড়ায়নি। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৩২ মিলিয়ন শরণার্থীর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোটা মাত্র ১ লাখ ২৫ হাজার; যদিও ২০২২ সালে নিয়েছে মাত্র ২৫ হাজার।
২০১৫ সালে মার্কেল যা করেছেন, সেটুকু সাহসও ধনী বিশ্বেও এখন কোনো নেতার নেই। এমনকি সেখানকার বাহ্যত ‘ভালো’ লোকেরাও শরণার্থী চান না। কানাডা এবং উদারপন্থি প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো দীর্ঘকাল জানিয়েছেন তার দেশ শরণার্থীদের স্বাগত জানাতে ইচ্ছুক। সত্য কথা হলো যে, সীমান্তে ‘অবৈধ’ অভিবাসী ঠেকাতে তারাও অন্যদের মতো তৎপর। গত মার্চের শেষে করা ওয়াশিংটন-অটোয়া চুক্তিতে কানাডাকে আরও বেশি শরণার্থী ফিরিয়ে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে।
গাজিয়ানটেপে আহমেদের সঙ্গে কফি খেতে বসা আর মেক্সিকোর ডিটেনশন সেন্টার পুড়িয়ে দেওয়ার মধ্যকার কয়েক সপ্তাহে মিডিয়ার ৩টি সংবাদ শিরোনাম ছিল এমন ‘ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র সচিব রুয়ান্ডার সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আনন্দময় করমর্দন করেন’ অথচ এ-দেশটির মানবাধিকার লঙ্ঘনের দীর্ঘ রেকর্ড রয়েছে; ‘ইতালির উপকূলে একটি নৌকা ডুবে ৮০ জনেরও বেশি অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে’; ‘জাতিসংঘের একটি তদন্ত উপসংহারে পৌঁছেছে যে, ভূমধ্যসাগরে টহল দিয়ে অভিবাসীদের আটকে রাখার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন লিবিয়ান কোস্টগার্ডকে যে-নির্দেশ দিয়েছে, তা মানবাধিকার লঙ্ঘনকে সহায়তা ও উৎসাহিত করেছে।’
নিউ ইয়র্ক টাইমস থেকে অনূদিত
লেখক : প্রধান সম্পাদক, হাফিংটন পোস্ট। সাবেক এডিটরিয়াল ডিরেক্টর, নিউ ইয়র্ক টাইমস
প্রখ্যাত বাঙালি সংগীতশিল্পী কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০০০ সালের ৫ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার সোনামুখী গ্রামে ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের ১২ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবার নাম সত্যচরণ মুখোপাধ্যায়, মায়ের নাম অনিলা দেবী। কণিকার বাবা ছিলেন বিশ্বভারতী গ্রন্থাগারের কর্মী ও মা অনিলা দেবী ছিলেন শান্তিনিকেতনের আশ্রমজননী। শৈশবেই বাবার কর্মস্থল শান্তিনিকেতনে চলে আসেন এবং ব্রহ্মচর্যাশ্রম বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তার পিতৃদত্ত নাম ছিল অণিমা মুখোপাধ্যায়, পারিবারিক ডাক নাম ছিল ‘মোহর’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই নাম পরিবর্তন করে নাম দেন ‘কণিকা’। এই নামেই পরিচিতি লাভ করেন তিনি। ঘনিষ্ঠজনরা তাকে ‘মোহর দি’ ডাকতেন। বীরেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিয়ের পর নাম হয় কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। শান্তিনিকেতনে আসার পর তার আনুষ্ঠানিক গান শেখার শুরু। রবীন্দ্রনাথের কাছে প্রায়ই নতুন গান শিখতে যেতেন। রবীন্দ্রনাথও তার রচিত নতুন গান শেখানোর জন্য কণিকাকে ডাকতেন। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে শিশুশিল্পী হিসেবে শান্তিনিকেতনের শারদোৎসবে প্রথম মঞ্চে গান করেন। ১৯৪৩ সালে বিশ্বভারতীর সংগীত ভবনে রবীন্দ্রসংগীত শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন তিনি। একই বছর আকাশবাণীর নিয়মিত শিল্পীরূপে তিনি যোগ দেন। পরে বিশ্বভারতীর ইমেরিটাস অধ্যাপকও হন কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৪২ থেকে ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত একক এবং সহশিল্পীদের সঙ্গে তার রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল ২৮টি। একক এবং দ্বৈতকণ্ঠের রেকর্ডের পাশাপাশি তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন ‘শ্যামা’, ‘মায়ারখেলা’, ‘তাসের দেশ’, ‘চিত্রাঙ্গদা’, ‘কালমৃগয়া’ নৃত্যনাট্য ও গীতিনাট্যে। এ ছাড়া তিনি জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান, অতুলপ্রসাদের গান ও নজরুলসংগীতও গেয়েছেন। তবে, টপ্পা ধরনের রবীন্দ্রসংগীতের শিল্পী হিসেবেই সবচেয়ে প্রসিদ্ধি লাভ করেন কণিকা। মৃত্যুর পর কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সম্মান জানাতে কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল লাগোয়া সুরম্য উদ্যানটির নাম রাখা হয় ‘মোহরকুঞ্জ’।
সর্বশক্তিময় তৈল নানারূপে সমস্ত পৃথিবী ব্যাপ্ত করিয়া আছেন। তৈলের যে মূর্তিতে আমরা গুরুজনকে স্নিগ্ধ করি, তাহার নাম ভক্তি; যাহাতে গৃহিণীকে স্নিগ্ধ করি, তাহার নাম প্রণয়; যাহাতে প্রতিবেশীকে স্নিগ্ধ করি, তাহার নাম মৈত্রী; যাহা দ্বারা সমস্ত জগৎকে স্নিগ্ধ করি, তাহার নাম শিষ্টাচার ও সৌজন্য ‘ফিলনথপি।’ যাহা দ্বারা সাহেবকে স্নিগ্ধ করি, তাহার নাম লয়েলটি; যাহা দ্বারা বড়লোককে স্নিগ্ধ করি, তাহার নাম নম্রতা বা মডেস্টি। চাকরবাকর প্রভৃতিকেও আমরা তৈল দিয়া থাকি, তাহার পরিবর্তে ভক্তি বা যত্ন পাই। অনেকের নিকট তৈল দিয়া তৈল বাহির করি অনেক আগেই হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ‘তৈল’ প্রবন্ধে কথাগুলো বলেছেন।
কিন্তু এর বাইরেও আছে অনেক কথা। তেলতেলে স্বভাব ছাড়া দুর্নীতি করা সম্ভব না। আবার একার পক্ষেও প্রায় অসম্ভব। যখন রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়মিতভাবে দুর্নীতি চলতে থাকে, তখন বুঝে নিতে হবে সেই প্রতিষ্ঠানে প্রচুর তৈলমর্দনকারী এবং গ্রহণকারী আছেন। কিন্তু ওই যে সিস্টেম লস? যুক্তি তো আছেই। তা না হলে কি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ইজ্জত থাকে! সুতরাং প্রতিষ্ঠানের সম্মান বাঁচাতে চাইলে চুরি করতে হবে, দুর্নীতি করতে হবে। একই সঙ্গে থাকবে বিভিন্ন কৌশলে তৈলমর্দন।
গতকাল দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতায় প্রকাশিত ‘তেল চুরির দুর্ভেদ্য চক্র’ শীর্ষক প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণন প্রতিষ্ঠান মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের প্রধান স্থাপনা থেকে জ্বালানি তেল চুরির অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে এই অপকর্ম চললেও বেশির ভাগ সময়ই তা ধরা পড়ে না। মাঝেমধ্যে ধরা পড়লেও শাস্তি হয় না জড়িতদের। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সিবিএর কিছু নেতার ছত্রচ্ছায়ায় থেকে একটি চক্র তেল চুরির সঙ্গে জড়িত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিপত্তিতে পড়েছেন নিরাপত্তাকর্মীসহ অনেকেই।
সংবাদে আরও বলা হয়েছে, মেঘনা পেট্রোলিয়ামের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, প্রধান স্থাপনা থেকে সারা দেশের ২১টি ডিপোতে তেল সরবরাহ করা হয়। প্রতিটি লরিতে (তেলবাহী গাড়ি) ডিজেল, পেট্রল, অকটেন মিলে গড়ে ৯ হাজার লিটার জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয়। এসব লরির ধারণক্ষমতা ১০ হাজার লিটার। দুর্ঘটনা এড়াতে এক হাজার লিটারের জায়গা সাধারণত ফাঁকা রাখা হয় প্রতিটি লরিতে। কেউ চাইলে সর্বোচ্চ সাড়ে ৯ হাজার লিটার পর্যন্ত তেল পরিবহন করতে পারে। মূলত যে স্থানটি ফাঁকা থাকে সেখানেই ২০০ থেকে ৫০০ লিটার পর্যন্ত অতিরিক্ত তেল পরিবহন করে চক্রটি। এই তেলের জন্য কোনো অর্থ পরিশোধ করা হয় না। তেলবাহী লরি বাইরে বের হওয়ার পর সুবিধাজনক স্থানে ওই তেল নামিয়ে তা বিক্রি করে দেয় তারা। প্রায় প্রতিদিনই এভাবে তেল চুরি হয়। পরে চুরি যাওয়া এই তেল সিস্টেম লস, ট্রান্সপোর্ট লস হিসেবে মেঘনা কর্র্তৃপক্ষ সমন্বয় করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বুধবার বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা গুপ্তখাল এলাকায় মেঘনা পেট্রোলিয়ামের প্রধান স্থাপনা থেকে একটি জ্বালানি তেলবাহী গাড়ি বের হওয়ার সময় দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীরা তা পরীক্ষা করতে গেলে তারা বাধার মুখে পড়েন। এ সময় তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। কিন্তু পরে এ নিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
কে ব্যবস্থা নেবেন, কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে, কাদের স্বার্থে এই বিষয়গুলো আগে নিষ্পত্তি করতে হবে। অন্যায়, দুর্নীতি শুধু কথার কথা। এসব শুনতে শুনতে, এক ধরনের চেতনাগত বৈকল্য গ্রাস করেছে আমাদের। দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি আন্তরিকভাবে উদ্যোগী হয়, তাহলে সমাধান হবে। না হলে না যা চলছে, চলবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর আলটিমেটাম দিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়া এত অসুস্থ যে, এখন তার চিকিৎসকরা বলছেন, বাংলাদেশে তার চিকিৎসা সম্ভব নয়। বিদেশে পাঠাতে না পারলে তাকে বাঁচানো দুস্কর হয়ে যাবে। আমি চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা বলেছেন, আপনাদের যদি কিছু করার থাকে তাহলে করেন। দেশনেত্রীর শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। পরিষ্কার করে বলতে চাই, বেগম জিয়ার কিছু হলে সব দায়দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে।
গতকাল রবিবার বিকেলে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে মির্জা ফখরুল এ আলটিমেটাম দেন। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত সমাবেশস্থলে দুপুরের আগ থেকেই নেতাকর্মীরা আসতে থাকেন। খালেদা জিয়ার ছবিসহ ব্যানার, পোস্টার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে সেøাগানে সেøাগানে মুখরিত সমাবেশ একসময় নেতাকর্মী-সমর্থকদের পদচারণায় লোকারণ্য হয়ে যায়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ক্ষমতা দখলকারী সরকারকে স্পষ্ট করে বলতে চাই, খালেদা জিয়ার ক্ষতি হলে তাতে নেত্রীর ক্ষতি হবে না, তার পরিবারের ক্ষতি হবে না, ক্ষতি হবে বাংলাদেশের। এই এশিয়া উপমহাদেশে যে কজন নেতা-নেত্রী গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছেন, তাদের মধ্যে আমাদের নেত্রী আছেন সে কথা কয়েক দিন আগে জার্মান চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স বলে গেছেন। বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, আমরা তাকে অন্যভাবে দেখি। এই হচ্ছে পাশ্চাত্যের ধারণা।
মির্জা ফখরুল বলেন, শুধু আমেরিকা নয়, দেশের জনগণও আপনাদের স্যাংশন দিচ্ছে, তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। আজকে গায়ের মধ্যে আগুন লেগেছে। বাইডেনের সঙ্গে সপরিবারে ছবি তুলে খুব দেখিয়েছিল। বলেছিলেন, আর আমেরিকা যাবেন না, অথচ তিনি আমেরিকা থাকা অবস্থায় ভিসানীতি কার্যকর করা হলো। ভিসানীতি বাংলাদেশের মতো একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশের জন্য অপমানজনক। আওয়ামী লীগের জন্য তাও আমাদের দেখতে হলো। কিছু কিছু পুলিশ কর্মকর্তা একটা বেআইনি সরকারকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য দমনপীড়ন করছে।
বিদেশে যেতে হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের এরকম বক্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এসব ছলচাতুরী করে কোনো লাভ নেই। পরিবার থেকে দেওয়া চিঠিতে তার (খালেদা জিয়া) মুক্তির কথা বলা হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। বেমালুম চেপে গিয়ে মিথ্যা কথা বলছেন। আপনাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।
শনিবার এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখতে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, নেত্রী অত্যন্ত শক্ত মনের। তিনি মনের জোরে সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে ওঠেন। সেই নেত্রী পাঁচ বছর বন্দি থাকা অবস্থায় কোনোদিনও তার চোখে পানি দেখিনি। গতকাল তাকে অত্যন্ত অসুস্থ দেখেছি। প্রথমবারের মতো মনে হয়েছে, সত্যি তিনি অনেক অনেক বেশি অসুস্থ। তার এ বক্তব্যের মধ্যেই নেতাকর্মীরা মুহুর্মুহু সেøাগান দেন, ‘খালেদা জিয়ার কিছু হলে আগুন জ¦লবে ঘরে ঘরে’।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বিভিন্ন কুঞ্জে কুঞ্জে আমলারা মিটিং করে বেড়াচ্ছেন, যেকোনো মূল্যে গুম খুন করেও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। সরকারি কর্মকর্তারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে এতটা মরিয়া যে, আওয়ামী লীগও ততটা মরিয়া না। শেখ হাসিনার ছেলের বিদেশে বাজেয়াপ্ত করা সম্পত্তি এ দেশের জনগণের। এর জন্য আমাদের বহু কথা আছে আপনি (শেখ হাসিনা) যেভাবে সহজে বলেছেন, দেখছেন বিষয়টা এত সহজ নয়।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আদালতে সাজাপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের নেতারা বিদেশে চিকিৎসা করতে পারলে খালেদা জিয়ার পারবেন না কেন? আদালতের বিচারকদের একদিন এর হিসাব দিতে হবে। খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে শেখ হাসিনা ক্ষমতা থাকতে পারবে না। প্রয়োজনে গুলি খেতে খেতেই সামনে যেতে হবে। আমরা চাইলে এখনই শেখ হাসিনার বাসভবন ঘেরাও করতে পারি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যারা দখলদারীর মাধ্যমে ক্ষমতায় বসে আছেন বিশ্বে এমন কতগুলো ফ্যাসিস্ট সরকারকে স্যাংশন দেওয়া হয়েছে। আপনাদের (আওয়ামী লীগ) শুধু বিচারই হবে না, বাংলাদেশের জনগণের সামনে মুখোমুখি হতে হবে।
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, হাসিনার কথায় প্রমাণিত হলো, তার ছেলের বিশাল সম্পদ বিদেশের মাটিতে।
দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব লিটন মাহমুদের সঞ্চালনায় সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, কেন্দ্রীয় নেতা এজেডএম জাহিদ হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে সংঘর্ষ : সমাবেশ চলাকালে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হন বলে জানা গেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, সমাবেশে মির্জা ফখরুলের বক্তব্য শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই কয়েকজন ছাত্রদল নেতাকর্মী হঠাৎ লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালান। এ সময় মঞ্চে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ অন্য জাতীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সংঘাত থামাতে চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে নেতাকর্মীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন মির্জা আব্বাস এবং যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। কিন্তু ততক্ষণে হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হন। সংঘর্ষ চলাকালে বিএনপি মহাসচিব তার নির্ধারিত বক্তব্য থামিয়ে বলেন, যারা সংঘাত করছে তারা সরকারের দালাল।
ঢাকায় নয়াবাজারের পরিবর্তে ধোলাইখালে সমাবেশ : এক দফা দাবিতে সোমবার রাজধানীর নয়াবাজারে পূর্বঘোষিত সমাবেশের কর্মসূচি অনিবার্য কারণে নয়াবাজারের পরিবর্তে ধোলাইখালে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। বিষয়টি অবহিত করে এবং ধোলাইখালে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে শনিবার ডিএমপি কমিশনার বরাবর চিঠি দিয়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। এদিকে আজ সোমবার বিকেলে তালতলা মার্কেট এর সামনে গণসমাবেশ ও পদযাত্রা করবে গণতন্ত্র মঞ্চ।
দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৯০০। গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) মারা গেছে ১৬ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাইরে ৯ ও ঢাকায় ৭ জন রয়েছে। এ নিয়ে এই বছর মৃত্যু দাঁড়াল ৯০৯ জনে।
এর আগে বাংলাদেশ কখনোই ডেঙ্গুতে এত মৃত্যু দেখেনি। এ বছরের আগ পর্যন্ত সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ছিল গত বছর ২৮১ জনের। এ বছর সেই রেকর্ড ছাড়িয়েছে প্রায় দুই মাস আগেই গত ৩ আগস্ট। সে দিনই প্রথম সর্বোচ্চ ২৮৩ জনের মৃত্যুর রেকর্ড হয়। এরপর মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে থাকে। সর্বশেষ গতকাল তা ৯০০-এর ঘর ছাড়াল।
এ পর্যন্ত যত মৃত্যু হয়েছে, তার ৬৬ শতাংশই ঘটেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে। এখানে মারা গেছে ৬০৩ জন। বাকি ৩৪ শতাংশ বা ৩০৬ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকার বাইরে।
এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মারা গেছে ৩১-৩৫ বছর ও ৩৬-৪০ বছর বয়সী রোগীরা, মোট মৃত্যুর ৯ শতাংশ করে। এরপর ৮ শতাংশ করে মারা গেছে ২১-২৫ বছর, ২৬-৩০ বছর, ৪১-৪৫ বছর ও ৫৬-৬০ বছর বয়সী রোগীরা। ৭ শতাংশ করে মারা গেছে ৪৬-৫০ বছর ও ৬১-৬৫ বছর, ৬ শতাংশ করে মারা গেছে ১৬-২০ বছর ও ৫১-৫৫ বছর, ৫ শতাংশ করে ৬-১০ বছর ও ৬৬-৭০ বছর বয়সীরা। ০-৫ বছর বয়সী ৩৪ শিশু মারা গেছে, যা মোট মৃত্যুর ৪ শতাংশ। ৩ শতাংশ করে মারা গেছে ১১-১৫ বছর ও ৭১-৭৫ বছর বয়সীরা। সবচেয়ে কম ২ শতাংশ করে মারা গেছে ৭৬-৮০ বছর ও ৮০ বছর ঊর্ধ্ব বয়সীরা।
নারী ও পুরুষদের মধ্যে বেশি মারা গেছে নারী রোগীরা ৫২০ জন, যা মোট মৃত্যুর ৫৭ শতাংশ ও পুরুষ ৩৮৯ জন বা ৪৩ শতাংশ। অথচ পুরুষরা আক্রান্ত হয়েছে নারীদের চেয়ে বেশি। নারী আক্রান্তের সংখ্যা ৩৯ শতাংশ ও পুরুষ ৬১ শতাংশ।
বিশেষ করে এ বছর এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হচ্ছে এ মাসেই। এ মাসের গত ২৪ দিনে মারা গেছে ৩১৬ জন, যা মোট মৃত্যুর ৩৫ শতাংশ ও দৈনিক গড় মৃত্যু ১৩ জন। অথচ এখন পর্যন্ত এ বছরের সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যুর মাস গত আগস্টে দৈনিক গড় মৃত্যু ছিল ১১ জন করে। সে মাসে মারা যায় ৩৪২ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩ হাজার ৮ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ১৯৬ ও ঢাকায় ৮১২ জন। অর্থাৎ ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরে ১ হাজার ৩৮৪ রোগী বেশি পাওয়া গেছে।
এ নিয়ে এই বছর রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭২৫ জন। তাদের মধ্যে ঢাকায় রোগীর সংখ্যা ৭৮ হাজার ৯১৫ ও ঢাকার বাইরে ১ লাখ ৮ হাজার ৮১০ জন।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ১০ হাজার ৪৭০ রোগী। তাদের মধ্যে ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিচ্ছে ৬ হাজার ৬৭৬ ও ঢাকায় ৩ হাজার ৭৯৪ জন।
স্যালাইনের সংকট নেই : গতকাল রবিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার জানান, ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় আইভি স্যালাইনের সাময়িক সমস্যা হয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে জরুরিভিত্তিতে ভারত থেকে তিন লাখ ব্যাগ স্যালাইন আমদানি করেছে সরকার। তার মধ্যে গত শনিবার পর্যন্ত ৪৪ হাজার ব্যাগ স্যালাইন চলে এসেছে। এসব স্যালাইন ইডিসিএলের মাধ্যমে যেখানে বেশি চাহিদা ছিল, সেই জায়গাগুলোতে, বিশেষ করে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজবাড়ী জেলা হাসপাতাল, ফরিদপুর জেলা হাসপাতাল, মানিকগঞ্জের কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম জেলা হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়েছে। বাকি স্যালাইন প্রতিদিনই দেশে পৌঁছাচ্ছে ও চাহিদা অনুযায়ী সেগুলো সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলোতে দ্রুততার সঙ্গে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এই মুহূর্তে স্যালাইনের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। এই তিন লাখের বাইরে আরও কিছু স্যালাইন আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। সরকারি অনুমোদন পেলে সেটা দ্রুত আমদানি করা হবে।
চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রসঙ্গে এই কর্মকর্তা বলেন, দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল, এমনকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। সব জায়গায় একই গাইড লাইন অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মাঠপর্যায়ে সব চিকিৎসককে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নিয়মিত ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য এনএস১ কিট সব জায়গায় পর্যাপ্ত পরিমাণ রয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
মধ্যবয়সীরা বেশি আক্রান্ত : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, ডেঙ্গু রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ২০-৫০ বছর বয়সী মানুষ। পাঁচ বছরের নিচের বয়সী শিশুদের মধ্যে আক্রান্ত মাত্র ৮ শতাংশ ও ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে আক্রান্ত ৫ শতাংশ।
বিভাগ ও জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে। ঢাকা বিভাগের ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী জেলা, চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম ও লক্ষ্মীপুর জেলা এবং বরিশাল বিভাগের বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি রংপুর, সিলেট, ময়মনসিংহ ও রাজশাহী বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা খুব কম।
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে চলতি বছর মে মাসে। গত শুক্রবার ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে দেশটি। নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে এ নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করার ঘোষণার তিন দিন পার হলেও কারও নাম প্রকাশ হয়নি। তবে বিভিন্ন মহলে নানা দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের নামে আলোচনা এখন সর্বত্র।
কারা যুক্তরাষ্ট্রের এ ভিসা নিষেধাজ্ঞায় পড়েছেন বা পড়তে যাচ্ছেন তা নিয়ে রাজনৈতিক, কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ ও ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্বকারী একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, যেহেতু নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, তাতে এর লক্ষ্য নির্বাচনী ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারাই। তারাই ভিসানীতির আওতায় পড়বেন, এটাই স্পষ্ট।
তারা আরও বলেন, ভিসানীতি প্রয়োগের কথা জানালেও যুক্তরাষ্ট্র কারও নাম প্রকাশ করেনি। তবুও বলা যেতে পারে, কাদের ওপর ভিসানীতি প্রয়োগ করবে পশ্চিমা এ প্রভাবশালী দেশটি।
এ ব্যক্তিরা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয়ই একটা তালিকার বেশিরভাগ নামই চূড়ান্ত করে ফেলেছে। অল্পসংখ্যক বাকি থাকতে পারে। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে সেগুলোরও চূড়ান্ত করা হবে। যেখানে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জড়িত প্রতিষ্ঠান, দপ্তর, অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা থাকতে পারেন।
বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে ধারণা পাওয়া গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির উদ্দেশ্যই যেহেতু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে, ফলে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা যারা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকবেন তারাই ভিসানীতির আওতায় আসবেন। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারাও থাকতে পারেন। থাকতে পারেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রাজনৈতিক নেতা, তারা যেকোনো দলের হতে পারেন। অল্পসংখ্যক ব্যবসায়ীও থাকতে পারেন।
জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন,‘ভিসানীতির বিষয়টি আমেরিকা প্রশাসন পরিষ্কার করে ঘোষণা না করলেও বুঝিয়ে দিয়েছে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারেন, এমন যে কেউ এ ভিসানীতির আওতায় পড়তে পারেন। যেমন রাজনীতিবিদ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাহী প্রশাসন, জুডিশিয়ারি অর্থাৎ যারাই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট থাকবেন, অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যাহত করবেন তারাই এর আওতায় আসবেন।’ তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের এর আওতায় পড়ার সুযোগ নেই। তবে হ্যাঁ, নির্বাচন ব্যাহত করার ছোট্ট সুযোগ তাদের হাতেও থাকে, তারা যদি জড়িত হন, ভিসানীতির আওতায় পড়বেন।’
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ভিসানীতির চেয়েও আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে নেগোশিয়েশন জরুরি। কে ভিসানীতির আওতায় পড়ল, কে পড়ল না এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঐক্য।’ তিনি বলেন, ‘ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়ায় কারা রয়েছেন সেটা আমেরিকা প্রশাসন ঘোষণা না করলেও বোঝা খুব জটিল কিছু নয়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘আমেরিকা যেহেতু ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে তাদের ভিসানীতি, ফলে পরিষ্কার হয়ে গেছে কারা পড়তে পারেন এর আওতায়। যারা নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, নিশ্চয়ই তারাই এর আওতায়।’
বিভিন্ন পর্যায়ের ও পেশার নিয়োজিত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজনৈতিক নেতারা ভিসানীতিকে তেমন আমলে না নিলেও বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা ও সিভিল প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ভেতরে আমেরিকার ভিসানীতি ভীষণ ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে এর নানা কারণ জানা গেছে। এর মধ্যে বিদেশে টাকা পাচার, ব্যবসাবাণিজ্য, পরিবারের সদস্যদের বিদেশে থাকা এসব কারণে বেশি ভীতিতে ফেলেছে তাদের। আবার একটা অংশ বিদেশে কিছু না থাকলেও ভিসানীতির আওতায় পড়লে ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হওয়ার ভয় পাচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করায় যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে পারেন এমন দুুশ্চিন্তা যেমন কারও কারও মনে ভর করেছে, তেমনি ভিসানীতিতে পড়ার সুযোগ নেই তারাও দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। কারণ এই শ্রেণির লোকজন মনে করছেন, কখনো যদি যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান, তখন যদি ভিসা না হয়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন এমন নামের তালিকাও চারদিকে ঘুরপাক খাচ্ছে। আরও অগ্রসর হয়ে কোনো কোনো মহল লম্বা তালিকা হাতে নিয়ে ঘুরছে। তবে এসব নামের তালিকার উৎস বা সূত্র নিশ্চিত নয় বলে কেউ কেউ বিষয়টি গুজব মনে করছেন। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের বাইরে প্রায় সবাই ভিসানীতি আতঙ্কে ভুগছেন।
একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ভিসানীতিকে জয়-পরাজয় হিসেবে প্রচার করে এলেও ভেতরে ভীতি সবারই রয়েছে। কারণ পশ্চিমা দেশে তাদের অনেকেই ইতিমধ্যে সেকেন্ড হোম গড়ে তুলেছেন। ফলে রাজনীতির বাইরেও ব্যক্তিজীবনের প্রয়োজনে ভিসানীতি তাদের ওপর যদি প্রভাব ফেলে, সে আশঙ্কা তো আছেই।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সব বিষয়ে আমি কথা বলি না। আমি একটাই কথা বলব, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আওয়ামী লীগ সে কাজই করছে।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘ভিসানীতি আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এর সঙ্গে গণতন্ত্র ও নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।’ তিনি বলেন, গণতন্ত্রের বিষয়ে বলতে হলে আরও অনেক বিষয় রয়েছে। এ ভিসানীতি কারা লক্ষ্যবস্তু জানতে চাইলে ইনু বলেন, ‘এটি নিয়ে মাথাব্যথা নেই আমাদের। তারাই বলতে পারবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কারও পরামর্শে সরকার কোনো প্রতিষ্ঠান অদলবদল করবে না, পরিবর্তনও আনবে না।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি প্রয়োগ করতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র মো. ফারুক হোসেন। গতকাল রবিবার এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন। তবে তালিকা পাননি বলে জানিয়েছেন তিনি।
গণমাধ্যমকে পাঠানো ভিডিও বার্তায় ফারুক হোসেন বলেন, ‘মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে আমরা যে সংবাদ দেখেছি, তারা বাংলাদেশে ভিসানীতি কার্যক্রম শুরু করেছে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কথা স্পষ্টভাবে বলা আছে। এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন কোন সদস্যের ওপর তারা ভিসানীতি প্রয়োগ করেছে, তার তালিকা এখনো আমরা পাইনি। সেখানে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা থাকতে পারেন বা অন্য বাহিনীর সদস্য থাকতে পারেন। এ ছাড়া বর্তমানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য বা অন্য বাহিনীর সদস্যরাও থাকতে পারেন।’
মার্কিন ভিসানীতিতে পুলিশের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, ‘পুলিশ বাহিনী যেভাবে কাজ করে, তাদের কাজের ওপরে কোনো প্রভাব পড়বে না। আমরা মনে করি পুলিশ বাহিনী আইনের মধ্যে থেকে মানবাধিকার সমুন্নত রেখে কাজ করে। এর আগেও করেছে এবং ভবিষ্যতেও করতে থাকবে। সুতরাং এই ভিসানীতির কারণে আমাদের কাজের গতি কোনোভাবেই থেমে যাবে না বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে ভিসানীতি আসবে, তারা হয়তো আমেরিকা যেতে পারবেন না। কিন্তু আমার প্রশ্ন, বাংলাদেশ পুলিশের দুই লাখেরও বেশি সদস্য রয়েছেন। এই পুলিশ সদস্যদের মধ্য থেকে কতজন আমেরিকা যাচ্ছেন? খুবই নগণ্য কিছু লোক হয়তো আমেরিকা যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন অথবা তাদের ছেলেমেয়েদের পাঠানোর চিন্তা করেন।’
সুষ্ঠু নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমরা তো আইনের মধ্য থেকেই কাজ করি। আগামী যে নির্বাচন আসবে, নির্বাচনে পুলিশের যেই দায়িত্ব থাকবে, কেন্দ্রের নিরাপত্তা দেওয়া, সেই নিরাপত্তা দেওয়ার কাজে আমাদের সঙ্গে আরও অন্য বাহিনীও কাজ করে। আমাদের ওপর আইনত যে দায়িত্ব থাকবে, নির্বাচন কমিশন থেকে যে দায়িত্ব দেওয়া হবে, সেই দায়িত্ব আমরা পালন করব। সে ক্ষেত্রে আমরা মনে করি না, ভিসানীতি আমাদের কাজের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।’
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।