
মূল : লিডিয়া পলগ্রিন
অনুবাদ : মনযূরুল হক
গত সপ্তাহে মেক্সিকোর ডিটেনশন সেন্টারে যখন আগুন লাগল মনে হলো, শরণার্থীদের ওপর এক মহাজাগতিক দুর্ভাগ্য নেমে এসেছে। ডিটেনশন সেন্টারটি ছিল সিউদাদ জুয়ারেজ থেকে আসা আমেরিকায় অভিবাসন প্রত্যাশী এবং রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের ঠিকানা। বিপদ থেকে পালিয়ে এসে তারা যেন মহাবিপদে পড়েছেন একদিকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সহিংসতা, জলবায়ু পরিবর্তন বা অর্থনৈতিক বঞ্চনার কারণে ঘরছাড়া, অন্যদিকে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়ার কেন্দ্রে বিধ্বংসী আগুন। কমপক্ষে ৩৯ জন মারা গেছে। বিশ্ব চেয়ে চেয়ে দেখেছে। কিন্তু এটা কি স্বাভাবিক ঘটনা? নাকি এই দ্বিমুখী বিপদ বিশ্বের বর্তমান অবস্থার একটি প্রতিচিত্র?
মনে পড়ল দক্ষিণ তুরস্কের কথা। কিছুদিন আগে, ফেব্রুয়ারিতে, বিধ্বংসী ভূমিকম্পের রিপোর্ট করতে গিয়েছিলাম। তুরস্কে ৩.৫ মিলিয়নেরও বেশি সিরিয়ান উদ্বাস্তুর বাস, যারা গৃহযুদ্ধ থেকে পালিয়ে এসেছে। ভূমিকম্প আঘাত হানলে তারাও একইরকম মহাজাগতিক দুর্ভাগ্যের মুখোমুখি হন বিপদ থেকে মহাবিপদে।
ভূমিকম্পের দায় না-হয় ঈশ্বরের, কিন্তু তাদের পরিস্থিতি তো মানুষের তৈরি। নিজভূমে নৃশংস সংঘাতের ফলেই তারা বাস্তুহারা। আর কোথাও যাওয়ারও উপায় নেই, কারণ তুর্কি সরকার ইইউ থেকে ০৬ বিলিয়ন ইউরো নিয়েছে ইউরোপে ঢোকার সমুদ্রমুখ বন্ধ করতে। যেমন মেক্সিকোর ডিটেনশন সেন্টারও নির্মিত হয়েছে দক্ষিণ কিংবা মধ্য আমেরিকার অভিবাসী প্রত্যাশীদের আটকাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে।
এই ডিটেনশন সেন্টার, কিংবা রিফিউজি ক্যাম্প মূলত নৈতিকভাবে সন্দেহজনক একটি ব্যবস্থা, যা ধনিক-বিশ্ব দরিদ্র-বিশ্বের কয়েক মিলিয়ন মানুষকে আটকে রাখতে গড়ে তুলেছে। যারা পালাচ্ছে, তাদের বলছে ওখানেই থাকো, খরচ আমরা দিচ্ছি। মানুষ ছুটছে দুর্যোগ, সংঘাত বা নিষ্ঠুরতার কবল থেকে বাঁচতে, আর ধনী দেশগুলো চাইছে নিজ উপকূল থেকে তাদের আরও দূরে রাখতে, তথাকথিত ‘থার্ড ওয়ার্ল্ড’-এর সীমানায় বেঁধে ফেলতে। নিষ্ঠুরতা-সহনশীল একটি চমৎকার ব্যবস্থা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অরক্ষিত মানুষকে সুরক্ষা দিতে বিশ্ব যে মহান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার কি আর কোনো মানে আছে এখন?
তুরস্কে আমার দোভাষী ছিল সিরিয়ার আহমেদ কানজো। যুদ্ধের শুরুতে সে ছিল আলেপ্পোতে একটি আরবি মিডিয়ার সংবাদ উপস্থাপক। পরিবার নিয়ে তুরস্কে পালিয়ে আসার পর জীবিকা নির্বাহে সংগ্রাম করছে। যে ভবনে স্ত্রী ও চারটি সন্তান নিয়ে থাকত, ভূমিকম্পে সেটি ভেঙে পড়েছে। তো পরিবারকে ভাইয়ের সঙ্গে অন্য এলাকায় পাঠিয়ে দিয়ে নিজে রয়ে গেছে গাজিয়ানটেপে। তার বন্ধু আব্দুল কাদির আমাকে জানায়, সে-ও আলেপ্পো থেকে পালিয়েছে সিরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার নির্যাতনের শিকার হয়ে।
এক সন্ধ্যায় আহমেদ, আবদুল কাদির আর তাদের কয়েক বন্ধু মেঝেতে আড়াআড়ি বসে মসলাদার কফি পান করছিল। সিগারেটের ধোঁয়ায় বাতাস ঘন হয়ে আসছে। আমি ভাবছিলাম, একজন প্রতিভাধর টেলিভিশন সাংবাদিক আহমেদের জীবনের কী হাল! সে আমাকে অনেকগুলো ভিডিও ক্লিপ দেখিয়েছে। চারপাশে বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ। আহমেদ আমাকে বলেছিল, সে তার কাজকে খুব মিস করে। বলেছিল, ‘বিশ্ব মনে করে তুরস্কে সিরিয়ানরা ভালো আছে। তারা একটি অভয়াশ্রম খুলে দিয়েছে, আসলে এটা একটি কারাগার।’
আহমেদ ও আমার আরেকটা মিল আছে। আমার শেকড়ও ইথিওপিয়াতে, সিরিয়ার মতোই বাস্তুচ্যুত মানুষের দেশে। নিষ্ঠুর মার্কসবাদী স্বৈরশাসনের কবলে পড়ে আমার মা পালিয়ে একজন আমেরিকানকে বিয়ে করেন। তারা আমাকে একটি গাঢ় নীল পাসপোর্ট দেয়, যা আজ আমাকে বিশ্বে অবাধে চলাফেরার সুবিধা দিয়েছে। ওটাই চাকরির অসিলায় আমাকে তুরস্কে এনেছে। ভৌগোলিক ‘সৌভাগ্য’ না-হলে আমার আর আহমেদের জীবন কাহিনি তো একই হওয়ার কথা। আবদুল কাদিরের পাশে চুপচাপ শুয়ে আছেন তার ৯০ বছর বয়সী দাদি, রাবিয়া। জিজ্ঞাসা করলাম, তুরস্কের জীবন কেমন? বললেন, ‘নিরাপদ, কারণ কোনো ব্যারেল বোমা নেই, গোলাগুলি নেই, যুদ্ধ নেই।’ কিন্তু ভয় না থাকলেই কি জীবন চলে?
জানতে চাইলাম, কী বেশি মিস করেন? বললেন জলপাই তেলের কথা, যা তিনি নিজেই উঠোনের গাছ থেকে পেড়ে তৈরি করেছেন। বললেন, ‘সিরিয়ায় আমাদের সমস্ত স্মৃতি রেখে এসেছি।’ বাড়ির জন্য এই কাতরতা অভিবাসীদের বিরুদ্ধে যারা ক্ষোভ দেখায় তারা কখনো বুঝবে না। মায়ের কথা মনে পড়ে, কয়েক দশক ধরে তিনি আমেরিকান নাগরিক, অথচ প্রতি মুহূর্তে বলেন ইথিওপিয়াতে নিজের শহরে একটা বাড়ি বানাবেন। যে গরিব দেশে গেছি, দেখেছি, আধখেচড়া ইট-পাটকেলের ঘর প্রবাসীদের ফেরার স্বপ্নে বিভোর। কে চায় বাড়ি ছেড়ে যেতে? কিন্তু সিরিয়ার শরণার্থীরা বাড়িও যেতে পারে না, ইউরোপেও না।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, যুদ্ধ ও নিপীড়নের পালাতে বাধ্য হওয়া মানুষকে রক্ষা করতে এই ‘শরণার্থী’ ব্যবস্থা তৈরি করে বিশ্ব। তাই এটা এখন তাদের আইনি পদবি, সাধারণ অভিবাসীদের মতো নয়। যুদ্ধোত্তর অনেক প্রতিশ্রুতির মতো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শরণার্থীদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিও বাস্তবের চেয়ে বেশি তাত্ত্বিক অনুশীলনে বন্দি। এটা ছিল বৈশ্বিক দায়িত্ব, কিন্তু বাস্তবে, পালন করতে হয় অতি দরিদ্র কিংবা মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে ধনী দেশগুলোর ‘দান-দক্ষিণার’ ভিত্তিতে। ধনী দেশগুলো তাদের দেশে যেতে সুইয়ের চোখের মতো কয়েকটি সরু পথ রেখেছে, গুটিকতক সৌভাগ্যবান ছাড়া যার ফাঁকে মাথা গলাতে পারে না কেউ। শরণার্থীদের জন্য তা-ও বন্ধ। পরিবর্তে, এমন লোক নিতে চায়, যারা যোগ্যতার প্রমাণ দেখাবে।
অভিবাসনের রাজনীতিও সম্পূর্ণ বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। ২০১৫ সালে ইউরোপে উদ্বাস্তুদের নিতে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল সাহসের সঙ্গে ঘোষণা করেছিলেন, ‘আমরা সামলাতে পারব।’ জার্মানি তখন এক মিলিয়নেরও বেশি লোক নিয়েছে, বেশিরভাগই সিরিয়ার। জার্মানি সামলেছে। কিন্তু ইউরোপ জুড়ে বিদ্রোহ করেছে ভোটাররা। পরের বছরই মার্কেলসহ ইইউ নেতারা অভিবাসীদের আগমন বন্ধ করতে তুরস্কের সঙ্গে দর কষাকষি করেছেন। তারপর আর কেউ পা বাড়ায়নি। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৩২ মিলিয়ন শরণার্থীর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোটা মাত্র ১ লাখ ২৫ হাজার; যদিও ২০২২ সালে নিয়েছে মাত্র ২৫ হাজার।
২০১৫ সালে মার্কেল যা করেছেন, সেটুকু সাহসও ধনী বিশ্বেও এখন কোনো নেতার নেই। এমনকি সেখানকার বাহ্যত ‘ভালো’ লোকেরাও শরণার্থী চান না। কানাডা এবং উদারপন্থি প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো দীর্ঘকাল জানিয়েছেন তার দেশ শরণার্থীদের স্বাগত জানাতে ইচ্ছুক। সত্য কথা হলো যে, সীমান্তে ‘অবৈধ’ অভিবাসী ঠেকাতে তারাও অন্যদের মতো তৎপর। গত মার্চের শেষে করা ওয়াশিংটন-অটোয়া চুক্তিতে কানাডাকে আরও বেশি শরণার্থী ফিরিয়ে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে।
গাজিয়ানটেপে আহমেদের সঙ্গে কফি খেতে বসা আর মেক্সিকোর ডিটেনশন সেন্টার পুড়িয়ে দেওয়ার মধ্যকার কয়েক সপ্তাহে মিডিয়ার ৩টি সংবাদ শিরোনাম ছিল এমন ‘ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র সচিব রুয়ান্ডার সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আনন্দময় করমর্দন করেন’ অথচ এ-দেশটির মানবাধিকার লঙ্ঘনের দীর্ঘ রেকর্ড রয়েছে; ‘ইতালির উপকূলে একটি নৌকা ডুবে ৮০ জনেরও বেশি অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে’; ‘জাতিসংঘের একটি তদন্ত উপসংহারে পৌঁছেছে যে, ভূমধ্যসাগরে টহল দিয়ে অভিবাসীদের আটকে রাখার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন লিবিয়ান কোস্টগার্ডকে যে-নির্দেশ দিয়েছে, তা মানবাধিকার লঙ্ঘনকে সহায়তা ও উৎসাহিত করেছে।’
নিউ ইয়র্ক টাইমস থেকে অনূদিত
লেখক : প্রধান সম্পাদক, হাফিংটন পোস্ট। সাবেক এডিটরিয়াল ডিরেক্টর, নিউ ইয়র্ক টাইমস
‘শিক্ষা জীবন কত না মধুর হইত যদি পরীক্ষা না থাকিত’। আমাদের ছাত্রজীবনে এ লাইনটি অনেক শুনেছি। কখনো বাবা-মা, কখনো শিক্ষকের মুখে। এ লাইনটি তাকেই শুনানো হতো, যারা পরীক্ষার ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়তেন। কিন্তু সত্যি সত্যি পরীক্ষা দিতে হবে না এ তো স্বপ্নেরও বাইরে।
আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে নানা গবেষণা চলছে, প্রায় তিন দশক ধরে। শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিকীকরণের নামে শিক্ষাপদ্ধতিতে আনা হচ্ছে পরিবর্তন। কোনো ব্যবস্থা পাঁচ-সাত বছর, কোনোটি দশ-বারো বছরের বেশি টিকছে না। শিক্ষাপদ্ধতি চালুর আগে, এর সক্ষমতা যাচাই ও ভবিষ্যৎ কার্যকারিতার মূল্যায়ন না করায় সেই পদ্ধতি টেকসই হচ্ছে না। শিক্ষাপদ্ধতি চালুর পর তাতে অভ্যস্ত করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। যা অনেকটা গিনিপিগের মতো।
চলতি বছর থেকে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। এই শিক্ষাক্রমে শিখনকালীন মূল্যায়নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। আগামী বছর দ্বিতীয় ও
তৃতীয় শ্রেণি এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণি এ শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে। ২০২৫ সালে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণি এবং ও দশম শ্রেণি যুক্ত হবে। ২০২৬ সালে একাদশ ও ২০২৭ সালের দ্বাদশ শ্রেণি যুক্ত হবে।
নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন থাকছে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের কোনো পরীক্ষায় বসতে হবে না। নতুন শিক্ষাক্রমে চতুর্থ ও ৫ম শ্রেণিতে ৮ বিষয় আছে। এর মধ্যে পাঁচটি বিষয়ে (বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান) হবে শিখনকালীন মূল্যায়ন ৬০ শতাংশ এবং সামষ্টিক মূল্যায়ন ৪০ শতাংশ। বাকি তিনটি বিষয়ে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, ধর্মশিক্ষা এবং শিল্পকলা রয়েছে। এগুলোর শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ।
ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত অভিন্ন ১০টি বিষয় রয়েছে। এরমধ্যে- বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ আর ৪০ শতাংশ হবে সামষ্টিক মূল্যায়ন। নবম ও দশম শ্রেণিতে ৫০ শতাংশ হবে শিখনকালীন মূল্যায়ন, বাকি ৫০ শতাংশ হবে সামষ্টিক মূল্যায়ন। জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্মশিক্ষা (প্রত্যকে ধর্ম অনুযায়ী) এবং শিল্প ও সংস্কৃতি- এই পাঁচটি বিষয়ে শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন। নতুন শিক্ষাক্রমে মাধ্যমিকে কোনো বিভাগ বিভাজন থাকছে না।
একাদশ ও দ্বাদশে গিয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৩০ শতাংশ। আর মূল্যায়ন হবে ৭০ শতাংশ। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যসূচির পর প্রতি বর্ষ শেষে হবে একটি করে পরীক্ষা। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ফলাফলের সমন্বয়ে চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারিত হবে।
এই শিখন পদ্ধতি নিয়ে বিস্তর কোনো গবেষণা কি হয়েছে? এ পদ্ধতি কি আদৌ টেকসই হবে? নাকি এটাও একটি শিক্ষার্থীদের ওপর পরীক্ষা। ইতিমধ্যে সরকার স্কুলগুলোতে এ পদ্ধতি অনুসরণের কথা বলেছে। কিন্তু অনেক শিক্ষক এখনো বুঝে উঠতে পারেননি, পরীক্ষা ছাড়া কীভাবে মূল্যায়ন করা যায় একজন শিক্ষার্থীকে। এ কারণে অনেক বিদ্যালয়ে এখন শুধু পড়িয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা।
শিখন পদ্ধতি চালু হলেও, সম্প্রতি কিছু কিছু বিদ্যালয় ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতি নিলে মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে তা যেন না করা হয় সে বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। কিন্তু মূল্যায়নের পদ্ধতিটি কী হবে- সেটা কি স্কুলগুলোকে বলা হয়েছে? এখনো তা বলা হয়নি। তবে শিক্ষকরা কীভাবে পাঠ্যক্রম চালিয়ে যাবেন? কিছু প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা কি শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের জন্য যথেষ্ট।
একটু পেছন ফিরে তাকাই। ৮০ দশক পর্যন্ত আমাদের দেশে পরীক্ষাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থায় চালু থাকে। একই বই বছরের পর বছর পড়ানো হয়েছে। সেই শিক্ষায় ছিল না আধুনিকতার ছোঁয়া। যদিও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সরব থাকত শিক্ষার্থীর কচিকণ্ঠে। সুর করে ছড়া কবিতা পড়া হতো। যা বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় অনুপস্থিত। পরীক্ষায় প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কবিতার প্রথম ১০ লাইন লিখতে হতো কবির নামসহ। এছাড়া সুন্দর হাতে লেখার জন্য কোনো স্কুলে নম্বরের ব্যবস্থা ছিল। প্রাথমিকে উদ্দীপনার জায়গা ছিল- বৃত্তি পরীক্ষা। স্কুলগুলো বাছাইকরা শিক্ষার্থীদের অর্থাৎ ক্লাসে প্রথম ১০ জন শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য পাঠাত। কেননা, এখানে বিদ্যালয়ের সুনাম জড়িত থাকত। একই ভাবে অষ্টম শ্রেণিতেও বৃত্তির ব্যবস্থা ছিল। যা মেধা যাচাইয়ের অন্যতম মাধ্যম ছিল।
প্রাথমিক মাধ্যমিকের সব শ্রেণির প্রশ্নগুলো অনুশীলনী থেকে নেওয়া গৎবাঁধা ছিল। উত্তরও একই। শব্দার্থ, রচনা, ভাবসম্প্রসারণ, সারাংশ কিংবা শ্ন্যূস্থান পূরণ ছিল মাধ্যমিকের সব ক্লাসে। শিক্ষার্থীদের ভয়ের সাবজেক্ট ছিল ইংরেজি ও অঙ্ক। দেখা যেত, এসএসসি পরীক্ষায় এই দুটি বিষয়ে বেশি ফেল করত। যে কারণে এসএসসিতে পাসের হার ৩০ শতাংশের ঘরে থাকত। এসএসসির বোর্ডে মেধা তালিকার ২০ জনকে দেওয়া হতো বিশেষ সম্মান। বলা হতো, এই ছাত্র স্ট্যান্ড করেছে। যার ছবি ছাপা হতো পত্রিকার পাতায়। তাকে চিনত সারা দেশের মানুষ। ভালো ছাত্র খারাপ ছাত্র বাছাই হয়েছে ডিভিশনে।
এই শিক্ষাব্যবস্থার একজন শিক্ষার্থীকে অনেক বেশি পড়তে হতো, মুখস্থ করতে হতো, হাতে লেখার চর্চা হতো, শুদ্ধ লিখার চর্চা হতো। কিন্তু অনাধুনিক, আন্তর্জাতিক শিক্ষার মানদ-ের ধারেকাছে না থাকার কারণে এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে।
১৯৯২ সালে প্রথম শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হয় নৈর্ব্যত্তিক পদ্ধতির মাধ্যমে। গণিত বাদে বাকি ৯টি বিষয়ে ৫০ শতাংশ নম্বর এমসিকিউ যুক্ত হয়। এরশাদ সরকারের শাসনের শেষ ভাগে এ পদ্ধতি যুক্ত হওয়ার ঘোষণা আসে। এর মূল লক্ষ্য ছিল শুধু নির্দিষ্ট প্রশ্ন উত্তরে সীমাবদ্ধ না থেকে গোটা বই পড়ার চর্চা করা। এ পদ্ধতির প্রথম এসএসসির বোর্ড পরীক্ষা হয় ১৯৯২ সালে। অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে ভীতি তৈরি হয় পাস করা নিয়ে। ফলে ১৯৯১ সালের এসএসসির টেস্ট পরীক্ষায় অনেক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হলে, কিছু স্কুল শিক্ষার্থী আন্দোলনে নামে এ পদ্ধতি বাতিল করার জন্য। ওই সময় বিদ্যালয়গুলোতে ৫০০ প্রশ্নব্যাংক নামে নমুনা প্রশ্ন পাঠানো হয়। শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে এই ৫০০ প্রশ্ন ব্যাংক থেকে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি তুলে। ১৯৯১ সালের বিএনপি নতুন সরকারের প্রথম আন্দোলন ছিল এটি। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ড. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন মেনে নিয়ে, ৫০০ প্রশ্নব্যাংক ১৯৯২ সালের এসএসসির পরীক্ষার জন্য স্থির করে দেন। এমসিকিউ ও রচনামূলকে সমন্বিত পাস হওয়ায় দেখা সেবার এসএসসিতে পাসের হার এক লাফে ৬০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত এই পরিস্থিতিতে চলতে থাকায় পাসের হার বাড়তে থাকে। ১৯৯৬ সালে পাসের হার ছিল ৪২.৬১ শতাংশ। এই ব্যবস্থায় পাস করে যাওয়া বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে উচ্চ মাধ্যমিকে গিয়ে চাপে পড়তে হয়।
পরবর্তী সময়ে এমসিকিউ পদ্ধতি ঠিক রেখে ২০১০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় প্রথমবারের মতো সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি চালু হয়। পরের বছর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পাসের হার ৮০ শতাংশ পেরিয়ে যায়। এ পদ্ধতি চালু হয়েছিল কোনো রকম প্রস্তুতি ছাড়াই। এ কারণে সরকারের সর্বশেষ হিসাবে দেখা যায় ৪১ শতাংশ শিক্ষকই বোঝেননি সৃজনশীল পদ্ধতি। শিক্ষার্থীরা মনের মাধুরী মিশিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে, তেমনি শিক্ষকরা প্রশ্ন তৈরি করতে গিয়ে নানান বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। এ পদ্ধতিতে শুধু পাসের হারই বাড়িয়েছে। ২০১৪ সালে তা পৌঁছায় ৯২ দশমিক ৬৭ শতাংশে। গত ছয় বছরে সবসময়ই পাসের হার ৮০ শতাংশের বেশি ছিল।
সৃজনশীল শিক্ষাপদ্ধতির যাত্রা শেষে এ বছর থেকে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। শিখনকালীন মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে চালু হওয়া নতুন শিক্ষাক্রমেও শিক্ষকদের দক্ষ করাই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, নতুন শিক্ষাক্রমের পুরোপুরি বাস্তবায়নের পর পরীক্ষার ফলে প্রচলিত নম্বর বা গ্রেড থাকবে না। তিনভাবে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যদিও তা এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। যারা মূল্যায়নের প্রাথমিক স্তরে থাকবে তাদের এলিমেন্টারি লেভেল (প্রাথমিক স্তর), পরের স্তর হবে মিডেল লেভেল (মধ্যম স্তর)। যারা সবচেয়ে ভালো করবে, তাদের এক্সপার্ট লেভেল (পারদর্শী স্তর)-এর সনদ দেওয়া হবে। এভাবে নম্বর গ্রেড দেওয়া হলে অভিভাবকদেরও আর জিপিএ ৫-এর পেছনে দৌড়াতে হবে না। তবে এই ধরনের নম্বর গ্রেডে আবার উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হতে পারে।
প্রশ্ন হচ্ছে, পরীক্ষা না হলে একজন শিক্ষার্থী শ্রেণির পড়া কেন পড়বে? করোনা ভাইরাসের মহামারীতে আমাদের শিক্ষার্থীদের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। করোনাকালীন অটো পাস হওয়ায় শিক্ষার্থীরা না পড়েই উচ্চ শ্রেণিতে উঠেছে। একটা বিশেষ সময়ের কারণে অটো পাসের ব্যবস্থা মানা যায়। কিন্তু এখন পরীক্ষা ছাড়া, শুধু শ্রেণি মূল্যায়ন নিয়ে উচ্চশ্রেণিতে যাওয়ার ব্যবস্থা মানেই হচ্ছে- ভঙ্গুর শিক্ষিত জাতি তৈরি করা।
আমাদের দেশের শহরের তুলনায় গ্রামের শিক্ষাব্যবস্থা এখনো ততটা উন্নত নয়। ফলে শহরের সঙ্গে গ্রামের শিক্ষার্থীদের বৈষম্য তৈরি করতে পারে এ শিক্ষা পদ্ধতি। এছাড়া একজন শ্রেণি শিক্ষক যে ছাত্রকে পছন্দ করবেন তাকে বেশি নম্বর দিতে পারেন। এজন্য শিক্ষককে জবাবদিহি করতে হবে না। আর যেসব অভিভাবক চাইবেন, তার সন্তান ভালো পড়ে উচ্চশ্রেণিতে যাক- তারা প্রাইভেট বা কোচিংয়ের দিকে মনোনিবেশ করবে। ফলে শ্রেণি শিক্ষা সে ততটা নিতে চাইবে না।
নৈর্ব্যত্তিক, সৃজনশীল বা গ্রেডিং পদ্ধতি প্রবর্তনের মাধ্যমে আমাদের সরকার গত তিন দশক ধরে গবেষণা করে কোথাও স্থির হতে পারেনি। প্রশ্ন থাকে, শিক্ষার্থী বা শিক্ষকদের ওপর একেক সময়ে একেক পদ্ধতির শিক্ষাব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়ে আমরা কি দক্ষ শিক্ষার্থী তৈরি করতে পারছি? তবে একটা স্থির পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়োজন দক্ষ শিক্ষার্থী তৈরি জন্য। একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ বলা হতো। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা বিদেশে পড়তে গিয়ে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল করেছে, করছে। এটা অব্যাহত রাখতে হবে। এ কারণে পাসের হার নয়, জিপিএ ৫ নয় মানসম্পন্ন শিক্ষিত জাতি তৈরি করা একান্ত কাম্য। ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র তো, তাদের হাতেই থাকবে।
লেখক : সাংবাদিক
কল্পনার পাখা উড়তে যদি দিই কিছুক্ষণের জন্য, যদি ভাবি, কেমন হতে পারে আগামী দিনের হাসপাতাল? যদি এমন হয় উচ্চ প্রযুক্তির বিশাল বিশাল সব মেশিন। রোগীর ডিভাইস থেকে প্রেরিত সব তথ্য বিশ্লেষণে ব্যস্ত ডাক্তার। মুখ চিহ্নিত করে এলইডি স্ক্রিন অভ্যর্থনা করছে, ভিজিটরদের। ভার্চুয়াল পেসেন্ট ভিজিট অপারেশন করছে রোবটরা এ রকম একটা ধারণা বিশেষজ্ঞদের হচ্ছে।
হাসপাতালের ডিজাইন করতে গিয়ে, পয়েন্ট অব কেয়ারের বাইরে আর ভেতরের চেহারা যাতে হয় সুসজ্জিত তা দেখতে হবে। এমন প্রতিষ্ঠান হবে রোগ প্রতিরোধের। একিউট কেয়ার, পেসেন্ট কেয়ার লাগবে রোগীদের। হেলথ কেয়ার কেন্দ্র এবং যেসব রোগীর সার্জিক্যাল প্রসিডিওর বা যাদের প্রয়োজন বিশাল রেডিওলজি মেশিন এসবের কেন্দ্র হবে এমন হাসপাতাল। হতে পারে কল্পনাবিলাস, তবে এ রকম হাসপাতাল বিশে^র কোনো কোনো দেশে গড়ে উঠছে।
মেডিকেল ফিউচারিস্ট পেট্রিওন কিম্বারলি পাওয়েল বলেন, বিশে^র বিভিন্ন দেশে দ্রুত গড়ে উঠবে এমন হাসপাতাল। যেগুলো ব্যবহার করবে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্ক্রিন করার জন্য কৃত্রিম মেধা ক্যামেরা। প্রতি রোগীর জন্য কোনো বিশেষ ভাইরাস বা সন্দেহজনক সংক্রমণ কতটা ভয়ংকর হবে, তা আগেই জানার জন্য ব্যবহৃত হবে প্রযুক্তি। জানা যাবে, জেনমিক্স সিকুয়েন্সিং দ্বারা।
রোগীর সঙ্গে কথাবার্তা বা তাদের নজরদারির জন্য ক্যামেরা আর মাইক্রোফোনে সংযুক্ত থাকবে কৃত্রিম মেধা বা আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স। এতে রোগীর অভিজ্ঞতা হবে সমৃদ্ধ, কমবে হেলথ কেয়ার খরচ ও তথ্য আর উপাত্ত হবে নিরাপদ।
আদর্শ হাসপাতাল হবে
১. কাগজবিহীন বা পেপারলেস
রোগীর উপাত্ত কাগজে লিপিবদ্ধ করা বা কাগজে সংরক্ষণের দিন থাকবে না, সব হবে অতীত। ব্যবহৃত হবে ইলেক্ট্রনিক ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, এ দিয়ে করা হবে রোগীর উপাত্তের সংরক্ষণ। কাগজের নথি ডিজিটালাইজ করা হবে এবং তাতে রোগীর নথির গোপনীয়তাও রক্ষা হবে।
২. সংযুক্ত থাকবে রোগীর বাসার সঙ্গে
একটি আদর্শ হাসপাতাল মানে হলো, রোগী যাতে সম্ভাব্য কম সময় হাসপাতালে কাটান। রোগীর চিকিৎসাস্থল হবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাসা।
হাসপাতালের ওয়ার্ডে যদি থাকে ফাইভ-জি আর ওয়াইফাই, তাহলে উপাত্ত দৌড়াবে দ্রুত। কভিড প্যান্ডেমিকের সময়, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে রোগীদের ভার্চুয়ালি যুক্ত আর পারস্পরিক বিনিময় করতে এই প্রযুক্তি যথেষ্ট সহায়ক হয়েছে।
৩. হাসপাতাল ডিজাইন করতে ব্যবহৃত হবে রোগীর ডিজাইন
আদর্শ হাসপাতাল হবে রোগীকেন্দ্রিক, রোগীর চাহিদা আর আকাক্সক্ষার ভিত্তিতে নির্মিত। তাদের চাহিদা হলো বেশি আলো, সুন্দর রংঅলা কক্ষ, গোলাকার টেবিল। তবে যেহেতু হাসপাতাল ডিজাইন সরাসরি প্রভাব ফেলে রোগীর ওপর, সে জন্য হাসপাতালের ডিজাইন সেভাবে বদলাতে হবে।
৪. টেলিমেডিসিনের জন্য যথাস্থান
রোগের নিরাময় কীভাবে হতে পারে, কভিড-১৯ সেই দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা পাল্টে দিয়েছে। আমরা অনুধাবন করেছি, কী করে অনেক কাজ একসঙ্গে অনেক দূর থেকে আরও ফলপ্রসূভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব।
এ কথা ঠিক, রোগীকে সবসময় অসুখের জন্য হাসপাতাল বা ক্লিনিকে যাওয়ার দরকার নেই । সবসময় রোগীর সঙ্গে ডাক্তারের সাক্ষাৎ হতে হবে, এমনো নয়।
এতে সময় আর অর্থের অপচয় হয় কম। এমন পরামর্শের যৌক্তিকতা তো আছেই, ফলপ্রসূও বটে।
৫. থাকবে হেলথ কেয়ার কর্মী, ডাক্তার নার্সদের জন্য বিশ্রামস্থল, শিথিল হওয়ার সময় আর স্থান
প্যান্ডেমিকের সময় আরও একটি জিনিস প্রকটভাবে দেখা গেছে স্বাস্থ্য পরিচর্যা, শুশ্রƒষা, চিকিৎসা রোগ নির্ণয় যারা করেন তাদের কুশল আর ভালো থাকার বিষয়টি। এরা রোগীকে সেবা দিতে দিতে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়েছেন। ফলে হয়েছে বার্ন আউট। যে কারণে, সুসজ্জিত, আরামদায়ক টিপটপ কমন রুম আর বিশ্রাম ঘর থাকতে হবে।
আদর্শ হাসপাতাল হতে হবে রোগী, স্বাস্থ্যকর্মী ডাক্তার নার্স সবার জন্য কুশল কেন্দ্র বা ওয়েলনেস সেন্টার। এমন ব্যবস্থা রয়েছে, নিউ ইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে।
আমাদের দেশে ডিজিটালাইজেশন খুব জোরদার। তাই এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্মার্ট হাসপাতালের দিকে এগোতে পারি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্মার্ট বাংলাদেশের কথা। আমরা স্মার্ট হাসপাতাল করে স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি আর রোগীর স্বাস্থ্য খাতে খরচ কমানোর চেষ্টা করতেই পারি।
লেখক : সাবেক অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ
প্রখ্যাত বাঙালি সংগীতশিল্পী কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০০০ সালের ৫ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার সোনামুখী গ্রামে ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের ১২ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবার নাম সত্যচরণ মুখোপাধ্যায়, মায়ের নাম অনিলা দেবী। কণিকার বাবা ছিলেন বিশ্বভারতী গ্রন্থাগারের কর্মী ও মা অনিলা দেবী ছিলেন শান্তিনিকেতনের আশ্রমজননী। শৈশবেই বাবার কর্মস্থল শান্তিনিকেতনে চলে আসেন এবং ব্রহ্মচর্যাশ্রম বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তার পিতৃদত্ত নাম ছিল অণিমা মুখোপাধ্যায়, পারিবারিক ডাক নাম ছিল ‘মোহর’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই নাম পরিবর্তন করে নাম দেন ‘কণিকা’। এই নামেই পরিচিতি লাভ করেন তিনি। ঘনিষ্ঠজনরা তাকে ‘মোহর দি’ ডাকতেন। বীরেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিয়ের পর নাম হয় কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। শান্তিনিকেতনে আসার পর তার আনুষ্ঠানিক গান শেখার শুরু। রবীন্দ্রনাথের কাছে প্রায়ই নতুন গান শিখতে যেতেন। রবীন্দ্রনাথও তার রচিত নতুন গান শেখানোর জন্য কণিকাকে ডাকতেন। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে শিশুশিল্পী হিসেবে শান্তিনিকেতনের শারদোৎসবে প্রথম মঞ্চে গান করেন। ১৯৪৩ সালে বিশ্বভারতীর সংগীত ভবনে রবীন্দ্রসংগীত শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন তিনি। একই বছর আকাশবাণীর নিয়মিত শিল্পীরূপে তিনি যোগ দেন। পরে বিশ্বভারতীর ইমেরিটাস অধ্যাপকও হন কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৪২ থেকে ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত একক এবং সহশিল্পীদের সঙ্গে তার রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল ২৮টি। একক এবং দ্বৈতকণ্ঠের রেকর্ডের পাশাপাশি তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন ‘শ্যামা’, ‘মায়ারখেলা’, ‘তাসের দেশ’, ‘চিত্রাঙ্গদা’, ‘কালমৃগয়া’ নৃত্যনাট্য ও গীতিনাট্যে। এ ছাড়া তিনি জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান, অতুলপ্রসাদের গান ও নজরুলসংগীতও গেয়েছেন। তবে, টপ্পা ধরনের রবীন্দ্রসংগীতের শিল্পী হিসেবেই সবচেয়ে প্রসিদ্ধি লাভ করেন কণিকা। মৃত্যুর পর কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সম্মান জানাতে কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল লাগোয়া সুরম্য উদ্যানটির নাম রাখা হয় ‘মোহরকুঞ্জ’।
সর্বশক্তিময় তৈল নানারূপে সমস্ত পৃথিবী ব্যাপ্ত করিয়া আছেন। তৈলের যে মূর্তিতে আমরা গুরুজনকে স্নিগ্ধ করি, তাহার নাম ভক্তি; যাহাতে গৃহিণীকে স্নিগ্ধ করি, তাহার নাম প্রণয়; যাহাতে প্রতিবেশীকে স্নিগ্ধ করি, তাহার নাম মৈত্রী; যাহা দ্বারা সমস্ত জগৎকে স্নিগ্ধ করি, তাহার নাম শিষ্টাচার ও সৌজন্য ‘ফিলনথপি।’ যাহা দ্বারা সাহেবকে স্নিগ্ধ করি, তাহার নাম লয়েলটি; যাহা দ্বারা বড়লোককে স্নিগ্ধ করি, তাহার নাম নম্রতা বা মডেস্টি। চাকরবাকর প্রভৃতিকেও আমরা তৈল দিয়া থাকি, তাহার পরিবর্তে ভক্তি বা যত্ন পাই। অনেকের নিকট তৈল দিয়া তৈল বাহির করি অনেক আগেই হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ‘তৈল’ প্রবন্ধে কথাগুলো বলেছেন।
কিন্তু এর বাইরেও আছে অনেক কথা। তেলতেলে স্বভাব ছাড়া দুর্নীতি করা সম্ভব না। আবার একার পক্ষেও প্রায় অসম্ভব। যখন রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়মিতভাবে দুর্নীতি চলতে থাকে, তখন বুঝে নিতে হবে সেই প্রতিষ্ঠানে প্রচুর তৈলমর্দনকারী এবং গ্রহণকারী আছেন। কিন্তু ওই যে সিস্টেম লস? যুক্তি তো আছেই। তা না হলে কি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ইজ্জত থাকে! সুতরাং প্রতিষ্ঠানের সম্মান বাঁচাতে চাইলে চুরি করতে হবে, দুর্নীতি করতে হবে। একই সঙ্গে থাকবে বিভিন্ন কৌশলে তৈলমর্দন।
গতকাল দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতায় প্রকাশিত ‘তেল চুরির দুর্ভেদ্য চক্র’ শীর্ষক প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণন প্রতিষ্ঠান মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের প্রধান স্থাপনা থেকে জ্বালানি তেল চুরির অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে এই অপকর্ম চললেও বেশির ভাগ সময়ই তা ধরা পড়ে না। মাঝেমধ্যে ধরা পড়লেও শাস্তি হয় না জড়িতদের। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সিবিএর কিছু নেতার ছত্রচ্ছায়ায় থেকে একটি চক্র তেল চুরির সঙ্গে জড়িত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিপত্তিতে পড়েছেন নিরাপত্তাকর্মীসহ অনেকেই।
সংবাদে আরও বলা হয়েছে, মেঘনা পেট্রোলিয়ামের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, প্রধান স্থাপনা থেকে সারা দেশের ২১টি ডিপোতে তেল সরবরাহ করা হয়। প্রতিটি লরিতে (তেলবাহী গাড়ি) ডিজেল, পেট্রল, অকটেন মিলে গড়ে ৯ হাজার লিটার জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয়। এসব লরির ধারণক্ষমতা ১০ হাজার লিটার। দুর্ঘটনা এড়াতে এক হাজার লিটারের জায়গা সাধারণত ফাঁকা রাখা হয় প্রতিটি লরিতে। কেউ চাইলে সর্বোচ্চ সাড়ে ৯ হাজার লিটার পর্যন্ত তেল পরিবহন করতে পারে। মূলত যে স্থানটি ফাঁকা থাকে সেখানেই ২০০ থেকে ৫০০ লিটার পর্যন্ত অতিরিক্ত তেল পরিবহন করে চক্রটি। এই তেলের জন্য কোনো অর্থ পরিশোধ করা হয় না। তেলবাহী লরি বাইরে বের হওয়ার পর সুবিধাজনক স্থানে ওই তেল নামিয়ে তা বিক্রি করে দেয় তারা। প্রায় প্রতিদিনই এভাবে তেল চুরি হয়। পরে চুরি যাওয়া এই তেল সিস্টেম লস, ট্রান্সপোর্ট লস হিসেবে মেঘনা কর্র্তৃপক্ষ সমন্বয় করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বুধবার বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা গুপ্তখাল এলাকায় মেঘনা পেট্রোলিয়ামের প্রধান স্থাপনা থেকে একটি জ্বালানি তেলবাহী গাড়ি বের হওয়ার সময় দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীরা তা পরীক্ষা করতে গেলে তারা বাধার মুখে পড়েন। এ সময় তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। কিন্তু পরে এ নিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
কে ব্যবস্থা নেবেন, কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে, কাদের স্বার্থে এই বিষয়গুলো আগে নিষ্পত্তি করতে হবে। অন্যায়, দুর্নীতি শুধু কথার কথা। এসব শুনতে শুনতে, এক ধরনের চেতনাগত বৈকল্য গ্রাস করেছে আমাদের। দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি আন্তরিকভাবে উদ্যোগী হয়, তাহলে সমাধান হবে। না হলে না যা চলছে, চলবে।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
মূল লড়াইয়ের আগে গা গরমের খেলা। সেখানে ব্যাটসম্যানরা ছিলেন আগ্রাসী। তাতে পাকিস্তান পায় ৩৪৫ রানের বড় সংগ্রহ। তারপরও জিততে পারল না। নিউজিল্যান্ড জয় তুলে নিয়েছে ৩৮ বল হাতে রেখেই।
পাকিস্তানের ব্যাটারদের মধ্যে সেঞ্চুরি পেয়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ৯৪ বলে ১০৩ রান করে অবসর নেন তিনি। এছাড়া বাবর আজম ৮০ ও সৌদ শাকিল ৭৫ রান সংগ্রহ করেছেন।
পাকিস্তানের দেয়া ৩৪৬ রানের জবাব দিতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে নিউজিল্যান্ড।
কিউই ব্যাটারদের মধ্যে ওপেনিংয়ে নামা রাচিন রবীন্দ্র ৭২ বলে ৯৭ রান সংগ্রহ করে দলের জয়ে বড় অবদান রাখেন। এছাড়া দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা কেন উইলিয়ামসন ৫৪, ড্যারেল মিচেল ৫৯ আর মার্ক চাপম্যান ৬৫ রান করে দলকে ৫ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন।
গোটা দেশ এখন দুই ভাগে বিভক্ত। একদল সাকিব আল হাসানকে শূলে চড়াচ্ছে, অন্যরা তামিম ইকবালকে। অথচ জাতীয় ক্রিকেট দল ভারতে গেছে বিশ্বকাপ খেলতে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে খোঁচাখুঁচি। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ খেলতে নেমেছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে। যে উদ্বোধনী জুটি নিয়ে এত দ্বিধা আর সংকোচ, যে কারণে তামিম না থাকায় এত হাহাকার, সেখানেই কিনা বাজিমাত করে পুরো জাতিকে অন্য এক বার্তা দিলেন তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস।
বিশ্বকাপের দলে যে তামিম ইকবাল থাকছেন না, সেটা জানা গিয়েছিল আগের দিনেই। তবু ক্রিকেট ভক্তদের মনের এক কোণে ক্ষীণ আশা ছিল। ওপেনারদের টানা ব্যর্থতার কথা বিবেচনায় হলেও এই ব্যাটসম্যান থাকবেন বলে ছিল তাদের। কিন্তু সেই আশার গুড়ে বালি। তাকে দলে না রাখায় অবশ্য রাস্তায় জনতার ঢল নামেনি, রাজপথে হয়নি কোনো সভা-সমাবেশ। তবে নতুন যুগের দেয়ালে দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদী নিন্দার বাণী। হাল জামানায় যাকে ‘টাইমলাইন’ বলে সম্বোধন করা হয়।
সেই সব প্রতিবাদী স্ট্যাটাসও দুই ভাগে বিভক্ত। কেউ সাকিব আল হাসানের পক্ষে, কেউবা তামিম ইকবালের। একদল পরিসংখ্যান-পর্যালোচনা দিয়ে বোঝাতে ব্যস্ত যে এই যুগে তামিমের কৌশল ‘ওল্ড স্কুল’। ওসব এখন আর চলে না। অন্য দল ১৭ বছরের ইতিহাস আর আবেগ নিয়ে হাজির। তাদের কাছেও আছে পরিসংখ্যান। সেটা গত কয়েক বছরের তামিমের ওপেনার সঙ্গীদের একটা তালিকা। তারাই শূলে চড়াচ্ছেন সাকিব-হাথুরু থেকে শুরু করে বিসিবির শীর্ষ কর্তাদের।
বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে সাকিব ক্রীড়াভিত্তিক একটি টিভি চ্যানেলকে দিয়ে গেছেন সাক্ষাৎকার। সেখানে তিনি সরাসরি তামিমের সমালোচনা করেছেন। এই ওপেনার যে দলের প্রয়োজনে পজিশন পরিবর্তনে রাজি হতে চান না, সেই মানসিকতা বাচ্চাদের মতো বলে সমালোচনা করেছেন টাইগার অধিনায়ক। এমনকি তার স্পোর্টসম্যানশিপ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তার আগে তামিম নিজে একটা ভিডিও বার্তায় বলেছেন তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা। মাশারফী বিন মোর্ত্তজাও ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। তাতে করে ক্রিকেটাঙ্গনে এখন যেন ভিডিও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ক্রিকেট নিয়ে জাতির অবস্থা যখন এমন, তখন ভারতের গোয়াহাটিতে বাংলাদেশের ক্রিকেট দল। আসাম রাজ্যের রাজধানীর বরষাপাড়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম উদ্বোধনী ম্যাচ খেলতে নেমেছিল তারা। ছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, নাজমুল হোসেন শান্তও ছিলেন না থাকার মতো করেই। প্রথম গা গরমের ম্যাচে তাই নেতৃত্ব দেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
টসভাগ্যে মিরাজের পরাজয়ের পর বল হাতে নামে বাংলাদেশ। টানা ৪০ ওভার টাইগারদের বোলারদের যেন শাসন করছিলেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। ঐ সময় পর্যন্ত ৫ উইকেট হারালেও তারা করে ২০২ রান। তারপরই যেন ঘুরে দাঁড়ান টাইগার বোলাররা। শেষ ১০ ওভারের ৫ বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় লঙ্কানরা। ২৬৩ রানের বেশি তারা করতে পারেনি।
২৬৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নামা বাংলাদেশের হালটা যে সুখকর হবে না, মুহূর্তেই ধসে পড়বে ব্যাটিং লাইনআপ। সিনিয়রদের কাউকে এসে হাল ধরে নিয়ে টেনে নিয়ে যেতে হবে দলকে। খাঁদের কিনারা থেকে টেনে তুলে হয় জয়, নয়তো সম্মানজনক হার! এমনটাই ছিল অনুমিত। আমরা যে এতেই অভ্যস্ত।
কিন্তু তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস সব অনুমান ভুল প্রমাণ করে দেন। যে ওপেনিং জুটি বাংলাদেশকে ভোগাচ্ছিল, যে সমস্যার কারণে চোট প্রবণ তামিম ইকবালকেও সবাই চাইছিলেন দলে। সেটাই কিনা তারা প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে ভুলিয়ে দিলেন! উদ্বোধনীতে তারা গড়েন ১৩১ রানের জুটি। তাতে ১৩ ম্যাচ পর বাংলাদেশ ওপেনিংয়ে শতরানের জুটি দেখতে পেয়েছে। হোক সেটা প্রস্তুতি ম্যাচ, তবুও তো লড়াই!
সবচেয়ে বড় স্বস্তি লিটন-তানজিদের রানে ফেরা। এশিয়া কাপের আগে জ্বরে ভুগছিলেন লিটন। সেই জ্বরের ধকল কাটিয়ে উঠতে তার সময় লেগেছে। মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে যেতে হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর চোটের কারণে। কিন্তু নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। এই টুর্নামেন্টে ২ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তানজিদ। কিন্তু তিনিও প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড সিরিজেও।
তাই বিশ্বকাপের দলে তামিম ইকবালকে বাদ দেওয়াতে ঝড় উঠেছিল। সেই ঝড় চলমান ছিল আজ দুপুর অবধি। অনেকেই ভেবে রেখেছিলেন, এই জুটি ব্যর্থ হবে। যা ধারাবাহিক থাকবে টুর্নামেন্টের শুরুতেও। তারপর বিশ্বকাপের মাঝপথে আচমকা ডাক পেয়ে তামিম ইকবাল উড়াল দেবেন ভারতে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলে। সেবার জাভেদ মিয়াঁদাদকে ছাড়াই তারা বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল। কিন্তু ব্যাটারদের ব্যর্থতার কারণে তাকে মাঝপথে উড়িয়ে নেওয়া হয়েছিল, এবং বিশ্বকাপ জিতেছিল।
এমন স্বপ্ন বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটভক্তরাও দেখতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তানজিদ তামিম আর লিটনের জুটি বদলে দিয়েছে সব হিসেব-নিকেশ। তামিমের ফেরার প্রত্যাশায় যারা গুনছিলেন প্রহর, তাদের মাথায় যেন এবার আকাশ ভেঙে পড়েছে। কারণ তারা যে রানে ফিরেছেন। যুববিশ্বকাপজয়ী তামিম খেলেছেন ৮৪ রানের একটি ইনিংস। ৮৮ বলে যা সাজানো ছিল ১০টি চার ও ২টি ছক্কায়। অন্যপ্রান্তে লিটন ৫৬ বলে ১০ চারে খেলেছেন ৬১ রানের ইনিংস। শুধু কি তাই! এদিন তিনে নেমেছিলেন মিরাজ। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৬৭ রান। ৬৪ বলের হার না মানা ইনিংসটি সাজানো ছিল ৫ চার ও ২ ছক্কায়।
পঞ্চপান্ডবের পরের প্রজন্ম তো তারাই। যাদের ব্যাটে শুক্রবার বরষাপাড়ায় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তাদের রানে ফেরা যেন নতুন দিনের বার্তা দেয়। যে বার্তা আগামীর পথচলার। যেখানে পুরনোকে আকড়ে ধরে রাখার প্রবণতা ক্ষীণ হয়ে আসার বার্তা। সহজ কথায়, তরুণদের রানে ফেরাতে মিয়াঁদাদ হওয়ার সুযোগ আর হচ্ছে না তামিম ইকবালের।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।