
সর্বশক্তিময় তৈল নানারূপে সমস্ত পৃথিবী ব্যাপ্ত করিয়া আছেন। তৈলের যে মূর্তিতে আমরা গুরুজনকে স্নিগ্ধ করি, তাহার নাম ভক্তি; যাহাতে গৃহিণীকে স্নিগ্ধ করি, তাহার নাম প্রণয়; যাহাতে প্রতিবেশীকে স্নিগ্ধ করি, তাহার নাম মৈত্রী; যাহা দ্বারা সমস্ত জগৎকে স্নিগ্ধ করি, তাহার নাম শিষ্টাচার ও সৌজন্য ‘ফিলনথপি।’ যাহা দ্বারা সাহেবকে স্নিগ্ধ করি, তাহার নাম লয়েলটি; যাহা দ্বারা বড়লোককে স্নিগ্ধ করি, তাহার নাম নম্রতা বা মডেস্টি। চাকরবাকর প্রভৃতিকেও আমরা তৈল দিয়া থাকি, তাহার পরিবর্তে ভক্তি বা যত্ন পাই। অনেকের নিকট তৈল দিয়া তৈল বাহির করি অনেক আগেই হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ‘তৈল’ প্রবন্ধে কথাগুলো বলেছেন।
কিন্তু এর বাইরেও আছে অনেক কথা। তেলতেলে স্বভাব ছাড়া দুর্নীতি করা সম্ভব না। আবার একার পক্ষেও প্রায় অসম্ভব। যখন রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়মিতভাবে দুর্নীতি চলতে থাকে, তখন বুঝে নিতে হবে সেই প্রতিষ্ঠানে প্রচুর তৈলমর্দনকারী এবং গ্রহণকারী আছেন। কিন্তু ওই যে সিস্টেম লস? যুক্তি তো আছেই। তা না হলে কি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ইজ্জত থাকে! সুতরাং প্রতিষ্ঠানের সম্মান বাঁচাতে চাইলে চুরি করতে হবে, দুর্নীতি করতে হবে। একই সঙ্গে থাকবে বিভিন্ন কৌশলে তৈলমর্দন।
গতকাল দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতায় প্রকাশিত ‘তেল চুরির দুর্ভেদ্য চক্র’ শীর্ষক প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণন প্রতিষ্ঠান মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের প্রধান স্থাপনা থেকে জ্বালানি তেল চুরির অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে এই অপকর্ম চললেও বেশির ভাগ সময়ই তা ধরা পড়ে না। মাঝেমধ্যে ধরা পড়লেও শাস্তি হয় না জড়িতদের। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সিবিএর কিছু নেতার ছত্রচ্ছায়ায় থেকে একটি চক্র তেল চুরির সঙ্গে জড়িত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিপত্তিতে পড়েছেন নিরাপত্তাকর্মীসহ অনেকেই।
সংবাদে আরও বলা হয়েছে, মেঘনা পেট্রোলিয়ামের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, প্রধান স্থাপনা থেকে সারা দেশের ২১টি ডিপোতে তেল সরবরাহ করা হয়। প্রতিটি লরিতে (তেলবাহী গাড়ি) ডিজেল, পেট্রল, অকটেন মিলে গড়ে ৯ হাজার লিটার জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয়। এসব লরির ধারণক্ষমতা ১০ হাজার লিটার। দুর্ঘটনা এড়াতে এক হাজার লিটারের জায়গা সাধারণত ফাঁকা রাখা হয় প্রতিটি লরিতে। কেউ চাইলে সর্বোচ্চ সাড়ে ৯ হাজার লিটার পর্যন্ত তেল পরিবহন করতে পারে। মূলত যে স্থানটি ফাঁকা থাকে সেখানেই ২০০ থেকে ৫০০ লিটার পর্যন্ত অতিরিক্ত তেল পরিবহন করে চক্রটি। এই তেলের জন্য কোনো অর্থ পরিশোধ করা হয় না। তেলবাহী লরি বাইরে বের হওয়ার পর সুবিধাজনক স্থানে ওই তেল নামিয়ে তা বিক্রি করে দেয় তারা। প্রায় প্রতিদিনই এভাবে তেল চুরি হয়। পরে চুরি যাওয়া এই তেল সিস্টেম লস, ট্রান্সপোর্ট লস হিসেবে মেঘনা কর্র্তৃপক্ষ সমন্বয় করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বুধবার বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা গুপ্তখাল এলাকায় মেঘনা পেট্রোলিয়ামের প্রধান স্থাপনা থেকে একটি জ্বালানি তেলবাহী গাড়ি বের হওয়ার সময় দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীরা তা পরীক্ষা করতে গেলে তারা বাধার মুখে পড়েন। এ সময় তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। কিন্তু পরে এ নিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
কে ব্যবস্থা নেবেন, কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে, কাদের স্বার্থে এই বিষয়গুলো আগে নিষ্পত্তি করতে হবে। অন্যায়, দুর্নীতি শুধু কথার কথা। এসব শুনতে শুনতে, এক ধরনের চেতনাগত বৈকল্য গ্রাস করেছে আমাদের। দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি আন্তরিকভাবে উদ্যোগী হয়, তাহলে সমাধান হবে। না হলে না যা চলছে, চলবে।
‘শিক্ষা জীবন কত না মধুর হইত যদি পরীক্ষা না থাকিত’। আমাদের ছাত্রজীবনে এ লাইনটি অনেক শুনেছি। কখনো বাবা-মা, কখনো শিক্ষকের মুখে। এ লাইনটি তাকেই শুনানো হতো, যারা পরীক্ষার ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়তেন। কিন্তু সত্যি সত্যি পরীক্ষা দিতে হবে না এ তো স্বপ্নেরও বাইরে।
আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে নানা গবেষণা চলছে, প্রায় তিন দশক ধরে। শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিকীকরণের নামে শিক্ষাপদ্ধতিতে আনা হচ্ছে পরিবর্তন। কোনো ব্যবস্থা পাঁচ-সাত বছর, কোনোটি দশ-বারো বছরের বেশি টিকছে না। শিক্ষাপদ্ধতি চালুর আগে, এর সক্ষমতা যাচাই ও ভবিষ্যৎ কার্যকারিতার মূল্যায়ন না করায় সেই পদ্ধতি টেকসই হচ্ছে না। শিক্ষাপদ্ধতি চালুর পর তাতে অভ্যস্ত করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। যা অনেকটা গিনিপিগের মতো।
চলতি বছর থেকে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। এই শিক্ষাক্রমে শিখনকালীন মূল্যায়নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। আগামী বছর দ্বিতীয় ও
তৃতীয় শ্রেণি এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণি এ শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে। ২০২৫ সালে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণি এবং ও দশম শ্রেণি যুক্ত হবে। ২০২৬ সালে একাদশ ও ২০২৭ সালের দ্বাদশ শ্রেণি যুক্ত হবে।
নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন থাকছে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের কোনো পরীক্ষায় বসতে হবে না। নতুন শিক্ষাক্রমে চতুর্থ ও ৫ম শ্রেণিতে ৮ বিষয় আছে। এর মধ্যে পাঁচটি বিষয়ে (বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান) হবে শিখনকালীন মূল্যায়ন ৬০ শতাংশ এবং সামষ্টিক মূল্যায়ন ৪০ শতাংশ। বাকি তিনটি বিষয়ে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, ধর্মশিক্ষা এবং শিল্পকলা রয়েছে। এগুলোর শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ।
ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত অভিন্ন ১০টি বিষয় রয়েছে। এরমধ্যে- বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ আর ৪০ শতাংশ হবে সামষ্টিক মূল্যায়ন। নবম ও দশম শ্রেণিতে ৫০ শতাংশ হবে শিখনকালীন মূল্যায়ন, বাকি ৫০ শতাংশ হবে সামষ্টিক মূল্যায়ন। জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্মশিক্ষা (প্রত্যকে ধর্ম অনুযায়ী) এবং শিল্প ও সংস্কৃতি- এই পাঁচটি বিষয়ে শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন। নতুন শিক্ষাক্রমে মাধ্যমিকে কোনো বিভাগ বিভাজন থাকছে না।
একাদশ ও দ্বাদশে গিয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৩০ শতাংশ। আর মূল্যায়ন হবে ৭০ শতাংশ। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যসূচির পর প্রতি বর্ষ শেষে হবে একটি করে পরীক্ষা। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ফলাফলের সমন্বয়ে চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারিত হবে।
এই শিখন পদ্ধতি নিয়ে বিস্তর কোনো গবেষণা কি হয়েছে? এ পদ্ধতি কি আদৌ টেকসই হবে? নাকি এটাও একটি শিক্ষার্থীদের ওপর পরীক্ষা। ইতিমধ্যে সরকার স্কুলগুলোতে এ পদ্ধতি অনুসরণের কথা বলেছে। কিন্তু অনেক শিক্ষক এখনো বুঝে উঠতে পারেননি, পরীক্ষা ছাড়া কীভাবে মূল্যায়ন করা যায় একজন শিক্ষার্থীকে। এ কারণে অনেক বিদ্যালয়ে এখন শুধু পড়িয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা।
শিখন পদ্ধতি চালু হলেও, সম্প্রতি কিছু কিছু বিদ্যালয় ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতি নিলে মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে তা যেন না করা হয় সে বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। কিন্তু মূল্যায়নের পদ্ধতিটি কী হবে- সেটা কি স্কুলগুলোকে বলা হয়েছে? এখনো তা বলা হয়নি। তবে শিক্ষকরা কীভাবে পাঠ্যক্রম চালিয়ে যাবেন? কিছু প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা কি শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের জন্য যথেষ্ট।
একটু পেছন ফিরে তাকাই। ৮০ দশক পর্যন্ত আমাদের দেশে পরীক্ষাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থায় চালু থাকে। একই বই বছরের পর বছর পড়ানো হয়েছে। সেই শিক্ষায় ছিল না আধুনিকতার ছোঁয়া। যদিও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সরব থাকত শিক্ষার্থীর কচিকণ্ঠে। সুর করে ছড়া কবিতা পড়া হতো। যা বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় অনুপস্থিত। পরীক্ষায় প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কবিতার প্রথম ১০ লাইন লিখতে হতো কবির নামসহ। এছাড়া সুন্দর হাতে লেখার জন্য কোনো স্কুলে নম্বরের ব্যবস্থা ছিল। প্রাথমিকে উদ্দীপনার জায়গা ছিল- বৃত্তি পরীক্ষা। স্কুলগুলো বাছাইকরা শিক্ষার্থীদের অর্থাৎ ক্লাসে প্রথম ১০ জন শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য পাঠাত। কেননা, এখানে বিদ্যালয়ের সুনাম জড়িত থাকত। একই ভাবে অষ্টম শ্রেণিতেও বৃত্তির ব্যবস্থা ছিল। যা মেধা যাচাইয়ের অন্যতম মাধ্যম ছিল।
প্রাথমিক মাধ্যমিকের সব শ্রেণির প্রশ্নগুলো অনুশীলনী থেকে নেওয়া গৎবাঁধা ছিল। উত্তরও একই। শব্দার্থ, রচনা, ভাবসম্প্রসারণ, সারাংশ কিংবা শ্ন্যূস্থান পূরণ ছিল মাধ্যমিকের সব ক্লাসে। শিক্ষার্থীদের ভয়ের সাবজেক্ট ছিল ইংরেজি ও অঙ্ক। দেখা যেত, এসএসসি পরীক্ষায় এই দুটি বিষয়ে বেশি ফেল করত। যে কারণে এসএসসিতে পাসের হার ৩০ শতাংশের ঘরে থাকত। এসএসসির বোর্ডে মেধা তালিকার ২০ জনকে দেওয়া হতো বিশেষ সম্মান। বলা হতো, এই ছাত্র স্ট্যান্ড করেছে। যার ছবি ছাপা হতো পত্রিকার পাতায়। তাকে চিনত সারা দেশের মানুষ। ভালো ছাত্র খারাপ ছাত্র বাছাই হয়েছে ডিভিশনে।
এই শিক্ষাব্যবস্থার একজন শিক্ষার্থীকে অনেক বেশি পড়তে হতো, মুখস্থ করতে হতো, হাতে লেখার চর্চা হতো, শুদ্ধ লিখার চর্চা হতো। কিন্তু অনাধুনিক, আন্তর্জাতিক শিক্ষার মানদ-ের ধারেকাছে না থাকার কারণে এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে।
১৯৯২ সালে প্রথম শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হয় নৈর্ব্যত্তিক পদ্ধতির মাধ্যমে। গণিত বাদে বাকি ৯টি বিষয়ে ৫০ শতাংশ নম্বর এমসিকিউ যুক্ত হয়। এরশাদ সরকারের শাসনের শেষ ভাগে এ পদ্ধতি যুক্ত হওয়ার ঘোষণা আসে। এর মূল লক্ষ্য ছিল শুধু নির্দিষ্ট প্রশ্ন উত্তরে সীমাবদ্ধ না থেকে গোটা বই পড়ার চর্চা করা। এ পদ্ধতির প্রথম এসএসসির বোর্ড পরীক্ষা হয় ১৯৯২ সালে। অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে ভীতি তৈরি হয় পাস করা নিয়ে। ফলে ১৯৯১ সালের এসএসসির টেস্ট পরীক্ষায় অনেক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হলে, কিছু স্কুল শিক্ষার্থী আন্দোলনে নামে এ পদ্ধতি বাতিল করার জন্য। ওই সময় বিদ্যালয়গুলোতে ৫০০ প্রশ্নব্যাংক নামে নমুনা প্রশ্ন পাঠানো হয়। শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে এই ৫০০ প্রশ্ন ব্যাংক থেকে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি তুলে। ১৯৯১ সালের বিএনপি নতুন সরকারের প্রথম আন্দোলন ছিল এটি। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ড. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন মেনে নিয়ে, ৫০০ প্রশ্নব্যাংক ১৯৯২ সালের এসএসসির পরীক্ষার জন্য স্থির করে দেন। এমসিকিউ ও রচনামূলকে সমন্বিত পাস হওয়ায় দেখা সেবার এসএসসিতে পাসের হার এক লাফে ৬০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত এই পরিস্থিতিতে চলতে থাকায় পাসের হার বাড়তে থাকে। ১৯৯৬ সালে পাসের হার ছিল ৪২.৬১ শতাংশ। এই ব্যবস্থায় পাস করে যাওয়া বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে উচ্চ মাধ্যমিকে গিয়ে চাপে পড়তে হয়।
পরবর্তী সময়ে এমসিকিউ পদ্ধতি ঠিক রেখে ২০১০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় প্রথমবারের মতো সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি চালু হয়। পরের বছর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পাসের হার ৮০ শতাংশ পেরিয়ে যায়। এ পদ্ধতি চালু হয়েছিল কোনো রকম প্রস্তুতি ছাড়াই। এ কারণে সরকারের সর্বশেষ হিসাবে দেখা যায় ৪১ শতাংশ শিক্ষকই বোঝেননি সৃজনশীল পদ্ধতি। শিক্ষার্থীরা মনের মাধুরী মিশিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে, তেমনি শিক্ষকরা প্রশ্ন তৈরি করতে গিয়ে নানান বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। এ পদ্ধতিতে শুধু পাসের হারই বাড়িয়েছে। ২০১৪ সালে তা পৌঁছায় ৯২ দশমিক ৬৭ শতাংশে। গত ছয় বছরে সবসময়ই পাসের হার ৮০ শতাংশের বেশি ছিল।
সৃজনশীল শিক্ষাপদ্ধতির যাত্রা শেষে এ বছর থেকে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। শিখনকালীন মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে চালু হওয়া নতুন শিক্ষাক্রমেও শিক্ষকদের দক্ষ করাই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, নতুন শিক্ষাক্রমের পুরোপুরি বাস্তবায়নের পর পরীক্ষার ফলে প্রচলিত নম্বর বা গ্রেড থাকবে না। তিনভাবে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যদিও তা এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। যারা মূল্যায়নের প্রাথমিক স্তরে থাকবে তাদের এলিমেন্টারি লেভেল (প্রাথমিক স্তর), পরের স্তর হবে মিডেল লেভেল (মধ্যম স্তর)। যারা সবচেয়ে ভালো করবে, তাদের এক্সপার্ট লেভেল (পারদর্শী স্তর)-এর সনদ দেওয়া হবে। এভাবে নম্বর গ্রেড দেওয়া হলে অভিভাবকদেরও আর জিপিএ ৫-এর পেছনে দৌড়াতে হবে না। তবে এই ধরনের নম্বর গ্রেডে আবার উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হতে পারে।
প্রশ্ন হচ্ছে, পরীক্ষা না হলে একজন শিক্ষার্থী শ্রেণির পড়া কেন পড়বে? করোনা ভাইরাসের মহামারীতে আমাদের শিক্ষার্থীদের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। করোনাকালীন অটো পাস হওয়ায় শিক্ষার্থীরা না পড়েই উচ্চ শ্রেণিতে উঠেছে। একটা বিশেষ সময়ের কারণে অটো পাসের ব্যবস্থা মানা যায়। কিন্তু এখন পরীক্ষা ছাড়া, শুধু শ্রেণি মূল্যায়ন নিয়ে উচ্চশ্রেণিতে যাওয়ার ব্যবস্থা মানেই হচ্ছে- ভঙ্গুর শিক্ষিত জাতি তৈরি করা।
আমাদের দেশের শহরের তুলনায় গ্রামের শিক্ষাব্যবস্থা এখনো ততটা উন্নত নয়। ফলে শহরের সঙ্গে গ্রামের শিক্ষার্থীদের বৈষম্য তৈরি করতে পারে এ শিক্ষা পদ্ধতি। এছাড়া একজন শ্রেণি শিক্ষক যে ছাত্রকে পছন্দ করবেন তাকে বেশি নম্বর দিতে পারেন। এজন্য শিক্ষককে জবাবদিহি করতে হবে না। আর যেসব অভিভাবক চাইবেন, তার সন্তান ভালো পড়ে উচ্চশ্রেণিতে যাক- তারা প্রাইভেট বা কোচিংয়ের দিকে মনোনিবেশ করবে। ফলে শ্রেণি শিক্ষা সে ততটা নিতে চাইবে না।
নৈর্ব্যত্তিক, সৃজনশীল বা গ্রেডিং পদ্ধতি প্রবর্তনের মাধ্যমে আমাদের সরকার গত তিন দশক ধরে গবেষণা করে কোথাও স্থির হতে পারেনি। প্রশ্ন থাকে, শিক্ষার্থী বা শিক্ষকদের ওপর একেক সময়ে একেক পদ্ধতির শিক্ষাব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়ে আমরা কি দক্ষ শিক্ষার্থী তৈরি করতে পারছি? তবে একটা স্থির পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়োজন দক্ষ শিক্ষার্থী তৈরি জন্য। একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ বলা হতো। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা বিদেশে পড়তে গিয়ে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল করেছে, করছে। এটা অব্যাহত রাখতে হবে। এ কারণে পাসের হার নয়, জিপিএ ৫ নয় মানসম্পন্ন শিক্ষিত জাতি তৈরি করা একান্ত কাম্য। ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র তো, তাদের হাতেই থাকবে।
লেখক : সাংবাদিক
কল্পনার পাখা উড়তে যদি দিই কিছুক্ষণের জন্য, যদি ভাবি, কেমন হতে পারে আগামী দিনের হাসপাতাল? যদি এমন হয় উচ্চ প্রযুক্তির বিশাল বিশাল সব মেশিন। রোগীর ডিভাইস থেকে প্রেরিত সব তথ্য বিশ্লেষণে ব্যস্ত ডাক্তার। মুখ চিহ্নিত করে এলইডি স্ক্রিন অভ্যর্থনা করছে, ভিজিটরদের। ভার্চুয়াল পেসেন্ট ভিজিট অপারেশন করছে রোবটরা এ রকম একটা ধারণা বিশেষজ্ঞদের হচ্ছে।
হাসপাতালের ডিজাইন করতে গিয়ে, পয়েন্ট অব কেয়ারের বাইরে আর ভেতরের চেহারা যাতে হয় সুসজ্জিত তা দেখতে হবে। এমন প্রতিষ্ঠান হবে রোগ প্রতিরোধের। একিউট কেয়ার, পেসেন্ট কেয়ার লাগবে রোগীদের। হেলথ কেয়ার কেন্দ্র এবং যেসব রোগীর সার্জিক্যাল প্রসিডিওর বা যাদের প্রয়োজন বিশাল রেডিওলজি মেশিন এসবের কেন্দ্র হবে এমন হাসপাতাল। হতে পারে কল্পনাবিলাস, তবে এ রকম হাসপাতাল বিশে^র কোনো কোনো দেশে গড়ে উঠছে।
মেডিকেল ফিউচারিস্ট পেট্রিওন কিম্বারলি পাওয়েল বলেন, বিশে^র বিভিন্ন দেশে দ্রুত গড়ে উঠবে এমন হাসপাতাল। যেগুলো ব্যবহার করবে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্ক্রিন করার জন্য কৃত্রিম মেধা ক্যামেরা। প্রতি রোগীর জন্য কোনো বিশেষ ভাইরাস বা সন্দেহজনক সংক্রমণ কতটা ভয়ংকর হবে, তা আগেই জানার জন্য ব্যবহৃত হবে প্রযুক্তি। জানা যাবে, জেনমিক্স সিকুয়েন্সিং দ্বারা।
রোগীর সঙ্গে কথাবার্তা বা তাদের নজরদারির জন্য ক্যামেরা আর মাইক্রোফোনে সংযুক্ত থাকবে কৃত্রিম মেধা বা আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স। এতে রোগীর অভিজ্ঞতা হবে সমৃদ্ধ, কমবে হেলথ কেয়ার খরচ ও তথ্য আর উপাত্ত হবে নিরাপদ।
আদর্শ হাসপাতাল হবে
১. কাগজবিহীন বা পেপারলেস
রোগীর উপাত্ত কাগজে লিপিবদ্ধ করা বা কাগজে সংরক্ষণের দিন থাকবে না, সব হবে অতীত। ব্যবহৃত হবে ইলেক্ট্রনিক ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, এ দিয়ে করা হবে রোগীর উপাত্তের সংরক্ষণ। কাগজের নথি ডিজিটালাইজ করা হবে এবং তাতে রোগীর নথির গোপনীয়তাও রক্ষা হবে।
২. সংযুক্ত থাকবে রোগীর বাসার সঙ্গে
একটি আদর্শ হাসপাতাল মানে হলো, রোগী যাতে সম্ভাব্য কম সময় হাসপাতালে কাটান। রোগীর চিকিৎসাস্থল হবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাসা।
হাসপাতালের ওয়ার্ডে যদি থাকে ফাইভ-জি আর ওয়াইফাই, তাহলে উপাত্ত দৌড়াবে দ্রুত। কভিড প্যান্ডেমিকের সময়, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে রোগীদের ভার্চুয়ালি যুক্ত আর পারস্পরিক বিনিময় করতে এই প্রযুক্তি যথেষ্ট সহায়ক হয়েছে।
৩. হাসপাতাল ডিজাইন করতে ব্যবহৃত হবে রোগীর ডিজাইন
আদর্শ হাসপাতাল হবে রোগীকেন্দ্রিক, রোগীর চাহিদা আর আকাক্সক্ষার ভিত্তিতে নির্মিত। তাদের চাহিদা হলো বেশি আলো, সুন্দর রংঅলা কক্ষ, গোলাকার টেবিল। তবে যেহেতু হাসপাতাল ডিজাইন সরাসরি প্রভাব ফেলে রোগীর ওপর, সে জন্য হাসপাতালের ডিজাইন সেভাবে বদলাতে হবে।
৪. টেলিমেডিসিনের জন্য যথাস্থান
রোগের নিরাময় কীভাবে হতে পারে, কভিড-১৯ সেই দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা পাল্টে দিয়েছে। আমরা অনুধাবন করেছি, কী করে অনেক কাজ একসঙ্গে অনেক দূর থেকে আরও ফলপ্রসূভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব।
এ কথা ঠিক, রোগীকে সবসময় অসুখের জন্য হাসপাতাল বা ক্লিনিকে যাওয়ার দরকার নেই । সবসময় রোগীর সঙ্গে ডাক্তারের সাক্ষাৎ হতে হবে, এমনো নয়।
এতে সময় আর অর্থের অপচয় হয় কম। এমন পরামর্শের যৌক্তিকতা তো আছেই, ফলপ্রসূও বটে।
৫. থাকবে হেলথ কেয়ার কর্মী, ডাক্তার নার্সদের জন্য বিশ্রামস্থল, শিথিল হওয়ার সময় আর স্থান
প্যান্ডেমিকের সময় আরও একটি জিনিস প্রকটভাবে দেখা গেছে স্বাস্থ্য পরিচর্যা, শুশ্রƒষা, চিকিৎসা রোগ নির্ণয় যারা করেন তাদের কুশল আর ভালো থাকার বিষয়টি। এরা রোগীকে সেবা দিতে দিতে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়েছেন। ফলে হয়েছে বার্ন আউট। যে কারণে, সুসজ্জিত, আরামদায়ক টিপটপ কমন রুম আর বিশ্রাম ঘর থাকতে হবে।
আদর্শ হাসপাতাল হতে হবে রোগী, স্বাস্থ্যকর্মী ডাক্তার নার্স সবার জন্য কুশল কেন্দ্র বা ওয়েলনেস সেন্টার। এমন ব্যবস্থা রয়েছে, নিউ ইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে।
আমাদের দেশে ডিজিটালাইজেশন খুব জোরদার। তাই এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্মার্ট হাসপাতালের দিকে এগোতে পারি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্মার্ট বাংলাদেশের কথা। আমরা স্মার্ট হাসপাতাল করে স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি আর রোগীর স্বাস্থ্য খাতে খরচ কমানোর চেষ্টা করতেই পারি।
লেখক : সাবেক অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ
মূল : লিডিয়া পলগ্রিন
অনুবাদ : মনযূরুল হক
গত সপ্তাহে মেক্সিকোর ডিটেনশন সেন্টারে যখন আগুন লাগল মনে হলো, শরণার্থীদের ওপর এক মহাজাগতিক দুর্ভাগ্য নেমে এসেছে। ডিটেনশন সেন্টারটি ছিল সিউদাদ জুয়ারেজ থেকে আসা আমেরিকায় অভিবাসন প্রত্যাশী এবং রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের ঠিকানা। বিপদ থেকে পালিয়ে এসে তারা যেন মহাবিপদে পড়েছেন একদিকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সহিংসতা, জলবায়ু পরিবর্তন বা অর্থনৈতিক বঞ্চনার কারণে ঘরছাড়া, অন্যদিকে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়ার কেন্দ্রে বিধ্বংসী আগুন। কমপক্ষে ৩৯ জন মারা গেছে। বিশ্ব চেয়ে চেয়ে দেখেছে। কিন্তু এটা কি স্বাভাবিক ঘটনা? নাকি এই দ্বিমুখী বিপদ বিশ্বের বর্তমান অবস্থার একটি প্রতিচিত্র?
মনে পড়ল দক্ষিণ তুরস্কের কথা। কিছুদিন আগে, ফেব্রুয়ারিতে, বিধ্বংসী ভূমিকম্পের রিপোর্ট করতে গিয়েছিলাম। তুরস্কে ৩.৫ মিলিয়নেরও বেশি সিরিয়ান উদ্বাস্তুর বাস, যারা গৃহযুদ্ধ থেকে পালিয়ে এসেছে। ভূমিকম্প আঘাত হানলে তারাও একইরকম মহাজাগতিক দুর্ভাগ্যের মুখোমুখি হন বিপদ থেকে মহাবিপদে।
ভূমিকম্পের দায় না-হয় ঈশ্বরের, কিন্তু তাদের পরিস্থিতি তো মানুষের তৈরি। নিজভূমে নৃশংস সংঘাতের ফলেই তারা বাস্তুহারা। আর কোথাও যাওয়ারও উপায় নেই, কারণ তুর্কি সরকার ইইউ থেকে ০৬ বিলিয়ন ইউরো নিয়েছে ইউরোপে ঢোকার সমুদ্রমুখ বন্ধ করতে। যেমন মেক্সিকোর ডিটেনশন সেন্টারও নির্মিত হয়েছে দক্ষিণ কিংবা মধ্য আমেরিকার অভিবাসী প্রত্যাশীদের আটকাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে।
এই ডিটেনশন সেন্টার, কিংবা রিফিউজি ক্যাম্প মূলত নৈতিকভাবে সন্দেহজনক একটি ব্যবস্থা, যা ধনিক-বিশ্ব দরিদ্র-বিশ্বের কয়েক মিলিয়ন মানুষকে আটকে রাখতে গড়ে তুলেছে। যারা পালাচ্ছে, তাদের বলছে ওখানেই থাকো, খরচ আমরা দিচ্ছি। মানুষ ছুটছে দুর্যোগ, সংঘাত বা নিষ্ঠুরতার কবল থেকে বাঁচতে, আর ধনী দেশগুলো চাইছে নিজ উপকূল থেকে তাদের আরও দূরে রাখতে, তথাকথিত ‘থার্ড ওয়ার্ল্ড’-এর সীমানায় বেঁধে ফেলতে। নিষ্ঠুরতা-সহনশীল একটি চমৎকার ব্যবস্থা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অরক্ষিত মানুষকে সুরক্ষা দিতে বিশ্ব যে মহান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার কি আর কোনো মানে আছে এখন?
তুরস্কে আমার দোভাষী ছিল সিরিয়ার আহমেদ কানজো। যুদ্ধের শুরুতে সে ছিল আলেপ্পোতে একটি আরবি মিডিয়ার সংবাদ উপস্থাপক। পরিবার নিয়ে তুরস্কে পালিয়ে আসার পর জীবিকা নির্বাহে সংগ্রাম করছে। যে ভবনে স্ত্রী ও চারটি সন্তান নিয়ে থাকত, ভূমিকম্পে সেটি ভেঙে পড়েছে। তো পরিবারকে ভাইয়ের সঙ্গে অন্য এলাকায় পাঠিয়ে দিয়ে নিজে রয়ে গেছে গাজিয়ানটেপে। তার বন্ধু আব্দুল কাদির আমাকে জানায়, সে-ও আলেপ্পো থেকে পালিয়েছে সিরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার নির্যাতনের শিকার হয়ে।
এক সন্ধ্যায় আহমেদ, আবদুল কাদির আর তাদের কয়েক বন্ধু মেঝেতে আড়াআড়ি বসে মসলাদার কফি পান করছিল। সিগারেটের ধোঁয়ায় বাতাস ঘন হয়ে আসছে। আমি ভাবছিলাম, একজন প্রতিভাধর টেলিভিশন সাংবাদিক আহমেদের জীবনের কী হাল! সে আমাকে অনেকগুলো ভিডিও ক্লিপ দেখিয়েছে। চারপাশে বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ। আহমেদ আমাকে বলেছিল, সে তার কাজকে খুব মিস করে। বলেছিল, ‘বিশ্ব মনে করে তুরস্কে সিরিয়ানরা ভালো আছে। তারা একটি অভয়াশ্রম খুলে দিয়েছে, আসলে এটা একটি কারাগার।’
আহমেদ ও আমার আরেকটা মিল আছে। আমার শেকড়ও ইথিওপিয়াতে, সিরিয়ার মতোই বাস্তুচ্যুত মানুষের দেশে। নিষ্ঠুর মার্কসবাদী স্বৈরশাসনের কবলে পড়ে আমার মা পালিয়ে একজন আমেরিকানকে বিয়ে করেন। তারা আমাকে একটি গাঢ় নীল পাসপোর্ট দেয়, যা আজ আমাকে বিশ্বে অবাধে চলাফেরার সুবিধা দিয়েছে। ওটাই চাকরির অসিলায় আমাকে তুরস্কে এনেছে। ভৌগোলিক ‘সৌভাগ্য’ না-হলে আমার আর আহমেদের জীবন কাহিনি তো একই হওয়ার কথা। আবদুল কাদিরের পাশে চুপচাপ শুয়ে আছেন তার ৯০ বছর বয়সী দাদি, রাবিয়া। জিজ্ঞাসা করলাম, তুরস্কের জীবন কেমন? বললেন, ‘নিরাপদ, কারণ কোনো ব্যারেল বোমা নেই, গোলাগুলি নেই, যুদ্ধ নেই।’ কিন্তু ভয় না থাকলেই কি জীবন চলে?
জানতে চাইলাম, কী বেশি মিস করেন? বললেন জলপাই তেলের কথা, যা তিনি নিজেই উঠোনের গাছ থেকে পেড়ে তৈরি করেছেন। বললেন, ‘সিরিয়ায় আমাদের সমস্ত স্মৃতি রেখে এসেছি।’ বাড়ির জন্য এই কাতরতা অভিবাসীদের বিরুদ্ধে যারা ক্ষোভ দেখায় তারা কখনো বুঝবে না। মায়ের কথা মনে পড়ে, কয়েক দশক ধরে তিনি আমেরিকান নাগরিক, অথচ প্রতি মুহূর্তে বলেন ইথিওপিয়াতে নিজের শহরে একটা বাড়ি বানাবেন। যে গরিব দেশে গেছি, দেখেছি, আধখেচড়া ইট-পাটকেলের ঘর প্রবাসীদের ফেরার স্বপ্নে বিভোর। কে চায় বাড়ি ছেড়ে যেতে? কিন্তু সিরিয়ার শরণার্থীরা বাড়িও যেতে পারে না, ইউরোপেও না।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, যুদ্ধ ও নিপীড়নের পালাতে বাধ্য হওয়া মানুষকে রক্ষা করতে এই ‘শরণার্থী’ ব্যবস্থা তৈরি করে বিশ্ব। তাই এটা এখন তাদের আইনি পদবি, সাধারণ অভিবাসীদের মতো নয়। যুদ্ধোত্তর অনেক প্রতিশ্রুতির মতো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শরণার্থীদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিও বাস্তবের চেয়ে বেশি তাত্ত্বিক অনুশীলনে বন্দি। এটা ছিল বৈশ্বিক দায়িত্ব, কিন্তু বাস্তবে, পালন করতে হয় অতি দরিদ্র কিংবা মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে ধনী দেশগুলোর ‘দান-দক্ষিণার’ ভিত্তিতে। ধনী দেশগুলো তাদের দেশে যেতে সুইয়ের চোখের মতো কয়েকটি সরু পথ রেখেছে, গুটিকতক সৌভাগ্যবান ছাড়া যার ফাঁকে মাথা গলাতে পারে না কেউ। শরণার্থীদের জন্য তা-ও বন্ধ। পরিবর্তে, এমন লোক নিতে চায়, যারা যোগ্যতার প্রমাণ দেখাবে।
অভিবাসনের রাজনীতিও সম্পূর্ণ বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। ২০১৫ সালে ইউরোপে উদ্বাস্তুদের নিতে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল সাহসের সঙ্গে ঘোষণা করেছিলেন, ‘আমরা সামলাতে পারব।’ জার্মানি তখন এক মিলিয়নেরও বেশি লোক নিয়েছে, বেশিরভাগই সিরিয়ার। জার্মানি সামলেছে। কিন্তু ইউরোপ জুড়ে বিদ্রোহ করেছে ভোটাররা। পরের বছরই মার্কেলসহ ইইউ নেতারা অভিবাসীদের আগমন বন্ধ করতে তুরস্কের সঙ্গে দর কষাকষি করেছেন। তারপর আর কেউ পা বাড়ায়নি। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৩২ মিলিয়ন শরণার্থীর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোটা মাত্র ১ লাখ ২৫ হাজার; যদিও ২০২২ সালে নিয়েছে মাত্র ২৫ হাজার।
২০১৫ সালে মার্কেল যা করেছেন, সেটুকু সাহসও ধনী বিশ্বেও এখন কোনো নেতার নেই। এমনকি সেখানকার বাহ্যত ‘ভালো’ লোকেরাও শরণার্থী চান না। কানাডা এবং উদারপন্থি প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো দীর্ঘকাল জানিয়েছেন তার দেশ শরণার্থীদের স্বাগত জানাতে ইচ্ছুক। সত্য কথা হলো যে, সীমান্তে ‘অবৈধ’ অভিবাসী ঠেকাতে তারাও অন্যদের মতো তৎপর। গত মার্চের শেষে করা ওয়াশিংটন-অটোয়া চুক্তিতে কানাডাকে আরও বেশি শরণার্থী ফিরিয়ে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে।
গাজিয়ানটেপে আহমেদের সঙ্গে কফি খেতে বসা আর মেক্সিকোর ডিটেনশন সেন্টার পুড়িয়ে দেওয়ার মধ্যকার কয়েক সপ্তাহে মিডিয়ার ৩টি সংবাদ শিরোনাম ছিল এমন ‘ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র সচিব রুয়ান্ডার সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আনন্দময় করমর্দন করেন’ অথচ এ-দেশটির মানবাধিকার লঙ্ঘনের দীর্ঘ রেকর্ড রয়েছে; ‘ইতালির উপকূলে একটি নৌকা ডুবে ৮০ জনেরও বেশি অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে’; ‘জাতিসংঘের একটি তদন্ত উপসংহারে পৌঁছেছে যে, ভূমধ্যসাগরে টহল দিয়ে অভিবাসীদের আটকে রাখার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন লিবিয়ান কোস্টগার্ডকে যে-নির্দেশ দিয়েছে, তা মানবাধিকার লঙ্ঘনকে সহায়তা ও উৎসাহিত করেছে।’
নিউ ইয়র্ক টাইমস থেকে অনূদিত
লেখক : প্রধান সম্পাদক, হাফিংটন পোস্ট। সাবেক এডিটরিয়াল ডিরেক্টর, নিউ ইয়র্ক টাইমস
প্রখ্যাত বাঙালি সংগীতশিল্পী কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০০০ সালের ৫ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার সোনামুখী গ্রামে ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের ১২ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবার নাম সত্যচরণ মুখোপাধ্যায়, মায়ের নাম অনিলা দেবী। কণিকার বাবা ছিলেন বিশ্বভারতী গ্রন্থাগারের কর্মী ও মা অনিলা দেবী ছিলেন শান্তিনিকেতনের আশ্রমজননী। শৈশবেই বাবার কর্মস্থল শান্তিনিকেতনে চলে আসেন এবং ব্রহ্মচর্যাশ্রম বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তার পিতৃদত্ত নাম ছিল অণিমা মুখোপাধ্যায়, পারিবারিক ডাক নাম ছিল ‘মোহর’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই নাম পরিবর্তন করে নাম দেন ‘কণিকা’। এই নামেই পরিচিতি লাভ করেন তিনি। ঘনিষ্ঠজনরা তাকে ‘মোহর দি’ ডাকতেন। বীরেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিয়ের পর নাম হয় কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। শান্তিনিকেতনে আসার পর তার আনুষ্ঠানিক গান শেখার শুরু। রবীন্দ্রনাথের কাছে প্রায়ই নতুন গান শিখতে যেতেন। রবীন্দ্রনাথও তার রচিত নতুন গান শেখানোর জন্য কণিকাকে ডাকতেন। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে শিশুশিল্পী হিসেবে শান্তিনিকেতনের শারদোৎসবে প্রথম মঞ্চে গান করেন। ১৯৪৩ সালে বিশ্বভারতীর সংগীত ভবনে রবীন্দ্রসংগীত শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন তিনি। একই বছর আকাশবাণীর নিয়মিত শিল্পীরূপে তিনি যোগ দেন। পরে বিশ্বভারতীর ইমেরিটাস অধ্যাপকও হন কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৪২ থেকে ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত একক এবং সহশিল্পীদের সঙ্গে তার রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল ২৮টি। একক এবং দ্বৈতকণ্ঠের রেকর্ডের পাশাপাশি তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন ‘শ্যামা’, ‘মায়ারখেলা’, ‘তাসের দেশ’, ‘চিত্রাঙ্গদা’, ‘কালমৃগয়া’ নৃত্যনাট্য ও গীতিনাট্যে। এ ছাড়া তিনি জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান, অতুলপ্রসাদের গান ও নজরুলসংগীতও গেয়েছেন। তবে, টপ্পা ধরনের রবীন্দ্রসংগীতের শিল্পী হিসেবেই সবচেয়ে প্রসিদ্ধি লাভ করেন কণিকা। মৃত্যুর পর কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সম্মান জানাতে কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল লাগোয়া সুরম্য উদ্যানটির নাম রাখা হয় ‘মোহরকুঞ্জ’।
সাত বছর পর ভারতের মাটিতে অবতরণ পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে তারা গিয়েছিল সেখানে। তারপর এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে। টুর্নামেন্ট শুরুর এক সপ্তাহ আগে তারা পৌঁছালেন দেশটিতে। সেখানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হোটেলে।
বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বাবর আজমরা সেখানে পৌঁছানো মাত্রই উচ্ছ্বসিত জনতা ভিড় করেন। হায়দ্রবাদের বিমানবন্দরের বাইরে তাদের দেখে অনেকেই চিৎকার করে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন। বাবরের নাম উচ্চারণ করতও শোনা গেছে এসময়। পুলিশ উৎসুক জনতাকে আটকে রেখেছিল।
রাজনৈতিক বৈরি সম্পর্কের কারণে দুই দলের দেখা হয় না দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজে। বিশ্ব মাতানো ক্রিকেটার থাকলেও পাকিস্তানিরা খেলতে পারে না আইপিএলে। কারণ ঐ একটাই। তবে বৈশ্বিক বা মহাদেশীয় ইভেন্টে তাদের ঘিরে আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। সেটা দেখা গেছে এশিয়া কাপেও।
বিশ্বকাপ খেলতে আজ বাংলাদেশ উড়াল দিয়েছে ভারতে। সেই টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখে টাইগাররা। তামিম ইকবাল নেতৃত্ব ছাড়ার পর সাকিব আল হাসানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে অধিনায়কত্বের ভার। আর আজই জানা গেল, বিশ্বকাপের পর একদিনও তিনি অধিনায়কত্ব করবেন না।
গত ১১ আগস্ট তৃতীয় দফায় ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান। তখনই বলা হয়েছিল, সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপ ও ভারত বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
দেশের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এই বিশ্বকাপই শেষ। এরপর একদিনও (অধিনায়কত্ব) করবো না। যে কারণে আমি এশিয়া কাপের আগে নিতে চাইনি। এরপরও এটা না। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি হাসতে চাই, খেলতে চাই, পারফর্ম করতে চাই। এই একটা কারণে আমি করতে চাইনি।’
সাকিব যোগ করেন, ‘আর কোনে কারণ নেই। বেস্ট হয় যদি অধিনায়ক না থাকি। অধিনায়কত্ব কি আমার কোনো ভেল্যু এড করতেছে ক্যারিয়ারে এই স্টেজে এসে? আমি তো মনে করি না।’
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
বিশ্বকাপে তামিম ইকবালকে ওপেন থেকে সরিয়ে মিডল অর্ডারে ব্যাট করার প্রস্তাব দিয়ে ফোন করেছিলেন, তামিমের ভাষায় 'বোর্ডের টপ লেভেল' এবং 'ক্রিকেটের সাথে বেশ ইনভলভড' একজন।
তিনি তামিমকে বলেন, ''তুমি তো বিশ্বকাপে যাবা, তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলতে হবে। তুমি এক কাজ করো। তুমি প্রথম ম্যাচ খেলো না আফগানিস্তানের সঙ্গে।'
তিনি আবার বলেন, আচ্ছা তুমি যদি খেলোও, আমরা এমন একটা পরিকল্পনা করছি, তুমি যদি খেলোও, তাহলে নিচে ব্যাট করবে।''
তামিমের এমন বক্তব্যের পর প্রশ্ন উঠেছে, কেই সেই বোর্ড কর্মকর্তা? এক টিভি সাক্ষাৎকারে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'আমি এটা জানিনা।'
পরক্ষণেই তিনি বলেন, 'তবে যদি কেউ বলে থাকে, আমি সিউর তিনি অথোরাইজড পার্সন। আর এরকম কিছু বলে থাকলে আমি খারাপ কিছু বলেছে বলে আমি মনে করিনা। টিমের কথা চিন্তা করেই বলেছে। টিম কম্বিনেশন নিয়ে কথা বলে থাকলে দোষের কি আছে। আমার তো মনে হয় না দোষের কিছু আছে। নাকি এরকম কোনো প্রস্তাব দেয়া যাবে না। নাকি আপনি যা চাইবেন তাই করতে পারবেন?।'
বিশ্বমঞ্চে দেশের ক্রিকেটের দূত বলা যায় সাকিব আল হাসানকে। বর্ণিল এক ক্যারিয়ার গড়েছেন তিনি। তিন ফরম্যাটেই তিনি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। দেশের এই তারকা ক্রিকেটার নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপে যাচ্ছেন দলের অধিনায়ক হিসেবে। সেই টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই জানা গেল কবে তিনি অবসর নিচ্ছেন।
দেশের একটি ক্রীড়াভিত্তিক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের অবসরের সময় জানিয়েছেন। তার ইচ্ছে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর অবসর ঘোষণা করার। একইসঙ্গে তিন ফরম্যাটকে বিদায় জানাতে চান দেশের ক্রিকেটের এই তারা।
নেতৃত্ব ছাড়া ও অবসরের প্রসঙ্গ টেনে সাকিব বলেন, ‘আজকে এখন এই অবস্থায় বলছি, ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত ওয়ানডে খেলবো। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে টি-টোয়েন্টিকে বিদায় দেবো। টেস্টের অবসর শিগগিরই। তবে একেক ফরমেট একেক সময় ছাড়লেও আনুষ্ঠানিক অবসর ঘোষণা করবো ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর।’
অধিনায়কত্ব নিয়ে সাকিব বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপের আগে একাধিক সিরিজে বিশ্রামের কথা বলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে দলের বাইরে রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত এশিয়া কাপেও দলে ফেরানো হয়নি তাকে। যেহেতু সাকিবের নেতৃত্বে সেই আসরে খেলেছে বাংলাদেশ, তাই অনেকের ধারণা সাকিবের চাওয়াতেই দলের বাইরে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ।
তবে সাকিব এসব কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়ক ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দল পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলারও ছিল না! কারন পরের দিন সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকি রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা!'
দলের ভেতরের কথা ভালোভাবে না জেনেই মানুষ যেভাবে সমালোচনা করে সেটাকে হাস্যকর বলেছেন সাকিব। বাংলাদেশ অধিনায়ক সমালোচকদের মানসিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, 'মানুষের সাইলকোলজি এমন কেন! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!'
অধিনায়ক একা যে দল নির্বাচন করেন না সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন সাকিব। তিনি বলেন, 'রিয়াদ ভাইয়ের যে ডেডিকেশন ছিল তার দলের প্রতি যে অবদান ছিল। দলের হয়ে খেলার যে ইচ্ছে ছিল, সবকিছু সবাই দেখতে পেরেছে। আমার দায়িত্বতো পুরো দলটা নির্বাচন করার না। এমনটা হলে এশিয়া কাপের একদিন পরেই এনাউন্স করে দল দিয়ে দিতে পারতাম। এটা অনেক প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। অনেক বিষয় চিন্তা করতে হয়। অনেক কিছু চিন্তা করে দলটা গড়তে হয়।'
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।