
দেশের সবচেয়ে বৃহৎ গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। গ্রাহকদের নিরাপদ ও মানসম্মত সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কতটা আন্তরিক রাষ্ট্রায়ত্ত এই প্রতিষ্ঠানটি? তাদের করণীয়ই বা কী এমন নানা বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বিস্তারিত কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নাজমুল লিখন
দেশ রূপান্তর : তিতাসের পাইপলাইন লিকেজ বা ছিদ্র হয়ে অগ্নিকান্ডের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস ছড়িয়ে পড়ার পর নগরবাসীর মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?
ইজাজ হোসেন : বিভিন্ন অগ্নিকান্ড কিংবা বিস্ফোরণের জন্য তিতাসের গ্যাসের পাইপলাইন অনেক ক্ষেত্রেই দায়ী। কিছুদিন আগেও গত ২৪ এপ্রিল বিভিন্ন স্থানে গ্যাস ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় এটা আরও বেশি প্রমাণিত হলো। তিতাসের পাইপলাইনে যত ছোট ছিদ্রই থাকুক না কেন, সেখান থেকে গ্যাস বের হবে। এটি কোনো আবদ্ধ স্থানে জমতে জমতে, বাতাসে এর পরিমাণ ৫ শতাংশের বেশি হলে এটা ‘এক্সপ্লোসিভ মিক্সার’ হয়ে যায়। এটা খুবই রিস্কি। সেখানে আগুনের সামান্যতম উৎস কিংবা কোনো ধরনের স্পার্ক হলেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পাইপলাইনে ছিদ্র থাকা মানেই সেটা বড় ধরনের ঝুঁকি। মাটির নিচে গ্যাসের পাইপলাইনে ছিদ্র কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা এর আগেও বন্যার সময় কিংবা বৃষ্টিতে কোথাও পানি জমার পর অনেক জায়গায় বুদ বুদ উঠতে দেখেছি। অনেকেই এটাকে গ্যাসের লিকেজের কথা বললেও সেভাবে পাত্তা দেয়নি তিতাস। যেনতেনভাবে মানুষকে বোঝানো হয়েছে। কিন্তু যেসব এলাকায় পানি জমে না, সেখানকার পাইপলাইনেও যে ছিদ্র আছে সেটা আমরা আগে জানতাম না। এবার গ্যাসের অতিরিক্ত চাপের কারণে আমরা দেখলাম- তিতাসের বেশিরভাগ এলাকার লাইনেই ছিদ্র রয়েছে। ওই ঘটনার ১০ দিন আগেও এসব লিক ছিল। তখন চাপ কম থাকায় তা বোঝা যায়নি। অনেক ক্ষেত্রে এলপিজি, স্যুয়ারেজ লাইন থেকে গ্যাস জমাসহ নানা কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমি বলব বেশিরভাগ বিস্ফোরণ কিংবা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হলো তিতাসের পাইপলাইনের লিকেজ।
দেশ রূপান্তর : এই লিকেজের কারণে গ্যাসের অপচয় হচ্ছে। এটা তো এক ধরনের আর্থিক ক্ষতি...
ইজাজ হোসেন : অবশ্যই। অপচয়ের কারণে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। তৃতীয় আরেকটা বড় ক্ষতি হলো, জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তন। কারণ এই গ্যাস নিঃসরণ মানেই বাতাসে মিথেন ছড়িয়ে পড়ছে। আর ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের’ জন্য কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়ে ২৪ গুণ ক্ষতিকর মিথেন গ্যাস যা জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রাখছে।
দেশ রূপান্তর : জ্বালানি বিভাগের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ওইদিন গ্যাসের চাপ বেশি থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। অনেকেই বলছেন, ওটাই আসলে গ্যাসের স্বাভাবিক চাপ। আপনি কী মনে করেন?
ইজাজ হোসেন : আমাদের গ্যাসফিল্ড থেকে উৎপাদিত গ্যাসের চাপ সাধারণত ১০০০ পিএসআই থাকে। পরে একটা স্টেশনের মাধ্যমে এই চাপ কমিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়। সুতরাং ওই স্টেশনে গ্যাসের চাপ এমনভাবে অ্যাডজাস্ট করে রাখা হয়, যাতে মাত্রাতিরিক্ত চাপের গ্যাস কোনোভাবেই সরবরাহ হতে না পারে। ফলে ওইদিনের গ্যাসের যে চাপ ছিল সেটাই স্বাভাবিক। অন্যসময় গ্রাহকরা চাহিদামতো চাপে গ্যাস পান না। এতে রান্নাবান্নাসহ নানা কাজে ব্যাঘাত ঘটছে।
দেশ রূপান্তর : তিতাস আগে থেকেই ব্যবস্থা নিলে এ ধরনের পরিস্থিতি কি এড়ানো যেত?
ইজাজ হোসেন : অবশ্যই সে সুযোগ ছিল। আগে থেকে সতর্ক হলে এই চাপ অ্যাডজাস্ট করা যেত সহজেই। কিন্তু যিনি দায়িত্বে ছিলেন, তিনি হয়তো লক্ষ করেননি। এটা এক ধরনের অসতর্কতা। প্রশ্ন হলো, পাইপলাইনে লিক থাকবে কেন? এটা তো ওই ইঞ্জিনিয়ারের দোষ না। লাইনে লিক আছে, এটা বিবেচনায় নিয়ে তো গ্যাসের চাপ কম-বেশি করা সম্ভব না। আসলে এসব লিক আগেও ছিল। কিন্তু গ্যাসের চাপ সমসময় স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকায় এতদিনে তা ডিটেক্ট হয়নি। তিতাস এখানে ধরা পড়ে গেছে। আরেকটা হতে পারে লিকগুলো আরও বড় হয়ে গেছে। কারণ প্রতি বছরই এই লিকগুলো বড় হয়।
দেশ রূপান্তর : আমরা কি তাহলে বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছি?
ইজাজ হোসেন : অবশ্যই। তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বিশেষ করে ওইদিনের (২৪ এপ্রিল) ঘটনার পর এটা প্রমাণ হলো আমরা সাংঘাতিক রকমের বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছি। আমরা দেখলাম- বিপুল পরিমাণ গ্যাস লিকেজ হচ্ছে। এতে প্রমাণিত হয়েছে- হয় একই জায়গায় অনেক লিক আছে, না হলে আকার অনেক বড়। কারণ লিকের পরিমাণ বেশি না হলে গন্ধ পাওয়া যেত না। এটা একটা বড় ঘটনা। অতীতে এমনটা কখনো হয়নি।
দেশ রূপান্তর : পানি, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান মাটির নিচে কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় তিতাসের পাইপলাইন ছিদ্র করে ফেলে। এটা কি এক ধরনের সমন্বয়হীনতা? নাকি এর পেছনে কোনো কারণ রয়েছে?
ইজাজ হোসেন : আসলে তিতাসের লোকজন নিজেরাই জানে না, কোথায় কোথায় তাদের লাইন আছে। এটা তারা স্বীকারও করেছে। ৩০-৪০ বছর আগে যেসব লাইন বসানো হয়েছে, সেগুলোর কোনো হদিসই নেই। কোথা থেকে কোন লাইন কোথায় গেছে, তাও তারা জানে না। তিতাসের পুরো পাইপলাইনের সঠিক স্টাডি হওয়া দরকার। যেসব স্থানে ৩০ বছরের পুরনো পাইপলাইন রয়েছে, সেগুলো বদলাতে হবে। এগুলো ভালো না খারাপ না দেখার সুযোগ নেই। কারণ এতদিনে এসব পাইপলাইন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। জিআইএস ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে তিতাসের পাইপলাইন নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে। যাতে অন্য কেউ কাজ করতে গেলে বুঝতে পারে, কোথায় কী অবস্থায় তিতাসের পাইপলাইন রয়েছে।
দেশ রূপান্তর : তিতাসের পাইপলাইনের এই অব্যবস্থাপনা তো একদিনে হয়নি। এজন্য মূলত দায়ী কারা?
ইজাজ হোসেন : আমি এখানে তিতাসের প্রকৌশলীদের দায়ী করব না। তারা অনেক প্রতিকূল অবস্থায় কাজ করে যাচ্ছেন। যারা ওপরের লেভেলে আছেন, যারা এসব জায়গায় অর্থায়ন করেন, কোথায় কী খরচ করতে হবে তা নির্ধারণ করেন তারাই মূলত এজন্য দায়ী। আসলে আমাদের দেশে একটা বাজে অভ্যাস হলো যতক্ষণ না একটা জিনিস নষ্ট না হবে তার আগে সেটার দিকে নজর দেওয়া হয় না। আবার এটি মেরামতের সময়ও সস্তায় কোনোমতে জোড়াতালি দিয়ে করা হয়। একটা জিনিস তৈরি বা স্থাপনের পর সেটা যে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে সেই ধারণাই আমাদের দেশে নেই। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে বাজেট দরকার যেটা যথাযথভাবে দেওয়া হয় না। এর কারণ হলো রাজনীতিবিদরা এসব পুরনো জিনিস সংস্কার করতে চায় না। তারা নতুন প্রকল্পে আগ্রহী বেশি। কেন আগ্রহী সেটা আমরা সবাই জানি। এখানে কী কী সুবিধা ভোগ করা যায় তা সবারই জানা। নতুন প্রকল্প করলে তো লোকজনকে দেখানো যায়। একজন নতুন এমপি হলেন, তিনি তো পুরনো কাজ রাখবেন না। বাংলাদেশে কেউই পুরনো স্থাপনা বা কাজ মেইনটেইন করার ব্যাপারে আগ্রহী নন। সবাই আগ্রহী নতুন প্রকল্পে। আসলে কোনো প্রকল্প শেষ হওয়ার পর, সেখান থেকে যে আয় হবে তা থেকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কিছু অর্থ নিয়মিত জমা রাখতে হয়। না হলে কিছুদিনের মাথায় তা অকেজো হয়ে যাবে।
দেশ রূপান্তর : ঢাকায় যদি বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়, তাহলে তিতাসের এই জরাজীর্ণ পাইপলাইন ঝুঁকির মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেবে। কারণ এই গ্যাস থেকে অগ্নিকান্ড ছড়িয়ে পুরো শহর অগ্নিকুন্ডে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা অনেকের। আপনি কী মনে করেন?
ইজাজ হোসেন : অবশ্যই ভূমিকম্পে বড় ঝুঁকি রয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে তারা তাদের গ্যাসের লাইন বন্ধ করতে পারবে না। হয়তো ঘটনা ঘটার এক ঘণ্টা পর করল। ততক্ষণে তো অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। তিতাস তো ওইদিন (২৪ এপ্রিল) নিজেরা উদ্যোগী হয়ে কিছু করেনি। লোকজন অভিযোগ করার পর ব্যবস্থা নিয়েছে। মানুষ সবসময় তো জানানোর সুযোগ নাও পেতে পারে। তাছাড়া ঢাকায় যে পরিমাণ নানারকম দুর্গন্ধ তাতে অনেক সময় গ্যাসের গন্ধও বোঝা মুশকিল। ওইদিন যদি লোকজন গ্যাসের গন্ধ বুঝতে না পারত এবং সেই গ্যাস যদি আবদ্ধ স্থানে জমা হতো তাহলে কিন্তু বড় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা ছিল। তিতাসের পাইপলাইন থেকে এখনো যে কোথাও গ্যাস জমা হচ্ছে না, তার কিন্তু কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ লিকেজ তো এখনো রয়েছে। ফলে আমরা বিশাল ‘এক্সপ্লোসিভের’ মধ্যে বসে আছি।
দেশ রূপান্তর : অভিযোগ রয়েছে ২৪ এপ্রিলের ঘটনায় তিতাসের একাধিক নম্বরে বারবার যোগাযোগ করেও তাদের সাড়া মেলেনি। পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পৌঁছানোর অনেক পরে ঘটনাস্থলে তিতাসের প্রতিনিধিরা উপস্থিত হন। আপনি বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
ইজাজ হোসেন : এটা অবশ্যই বড় ধরনের গাফিলতি। কোনো অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত তার ব্যবস্থা নিতে হবে। এমনকি কেউ যদি মিথ্যে বা ভুয়া অভিযোগও করেন তারপরও সেটা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব তিতাসের। এটা তাদের কাজের অঙ্গ। নিরাপত্তার ব্যাপারে অবহেলার কোনো সুযোগ নেই।
দেশ রূপান্তর : তিতাস প্রতি বছর মুনাফা করলেও গ্রাহক সেবা ও তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে খুবই উদাসীন। অনেকেই এমন অভিযোগ করেছেন। আপনি কী মনে করেন?
ইজাজ হোসেন : অনেক ক্ষেত্রেই তিতাসের উদাসীনতা রয়েছে। আসলে তারা গ্রাহকের কাছ থেকে যে মুনাফা পায় তা ব্যাংকে ফিক্স্ড ডিপোজিট করে। সেই টাকা দিয়ে নিজেদের বোনাস, পিকনিক, ক্লাব তৈরি এমন নানা কাজে ব্যয় করে। তারা কখনো চিন্তা করে না যে, এটা জনগণের কাছ থেকে লাভ করেছি। সুতরাং এই টাকা নিয়ে জনগণের সেবা দিতে হবে। তারা একটা প্রজেক্ট করার সময় সরকারের কাছে টাকা চায়। না পেলে বলে, টাকার অভাবে কাজ করা যাচ্ছে না। এটা এক ধরনের অন্যায়। তিতাস উন্নত সেবা দেওয়ার পর, কিছু টাকা নিজেদের প্রয়োজনে ব্যয় করতে পারে। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু গ্রাহকের সেবার মান উন্নয়ন কিংবা নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য কোনো ব্যয় করবে না এটা তো হয় না।
দেশ রূপান্তর : গ্যাসের অবৈধ সংযোগের কারণেও বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনা ঘটছে...
ইজাজ হোসেন : অবৈধ সংযোগ যারা নেয়, তারা অসতর্কতার সঙ্গে পাইপলাইন ফুটো করছে। এতে গ্যাস লিক হচ্ছে। প্রতি বছর ৮ থেকে ১০ শতাংশ গ্যাস অপচয় হচ্ছে, যেটাকে সিস্টেম লস বলা হচ্ছে। বাস্তবে এই লস ২ শতাংশের বেশি কোনোভাবেই হওয়া উচিত নয়। তার মানে, বাকি ৬ থেকে ৮ শতাংশ গ্যাস চুরি ও লিকেজ। এরমধ্যে লিকেজ ২ শতাংশ হলেও বাকিটা চুরি। এই গ্যাসের পরিমাণ এবং দাম কিন্তু অনেক। গ্যাসের চুরি ও অপচয় বন্ধ করা গেলে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে। যা দিয়ে পুরনো লাইনগুলো সংস্কার করে গ্রাহকের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায় খুব সহজেই। এই কাজটা ধাপে ধাপে করা হলেও গত ১০ বছরে সবগুলো লাইন সংস্কার করা যেত।
দেশ রূপান্তর : কী কারণে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বন্ধ হচ্ছে না?
ইজাজ হোসেন : রাজনৈতিক কারণেই গ্যাসের অবৈধ সংযোগ টিকে আছে। যেসব জায়গায় অবৈধ সংযোগ রয়েছে সেখানে অত্যন্ত ক্ষমতাধর লোকজন রয়েছেন। যাদের বিরুদ্ধে তিতাস ব্যবস্থা নিতে পারে না। প্রতিমন্ত্রী নিজেও বলেছেন। এর সঙ্গে তিতাসের কিছু অসাধু লোকজনও জড়িত। তারা সব সরকারের আমলেই ছিল, এখনো আছে। আমার মনে হয়, প্রধানমন্ত্রী ছাড়া এটা বন্ধ করা যাবে না। আমি এখানে তিতাসের প্রকৌশলীদের দায়ী করব না। তারা অনেক প্রতিকূল অবস্থায় কাজ করে যাচ্ছেন। যারা ওপরের লেভেলে আছেন, যারা এসব জায়গায় অর্থায়ন করেন, কোথায় কী খরচ করতে হবে তা নির্ধারণ করেন তারাই মূলত এজন্য দায়ী। আসলে আমাদের দেশে একটা বাজে অভ্যাস হলো যতক্ষণ না একটা জিনিস নষ্ট না হবে তার আগে সেটার দিকে নজর দেওয়া হয় না।
সরকারি সচিব ও রাজনীতিক এ.এস.এইচ.কে. সাদেক ১৯৩৪ সালের ৩০ এপ্রিল যশোরের কেশবপুর থানার বড়েঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম আবু শরাফ হিজবুল কাদের সাদেক। পিতা ইয়াহিয়া সাদেক ছিলেন অবিভক্ত বাংলার সরকারের যুগ্ম কমিশনার। এইচ.কে সাদেক ১৯৪৯ সালে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৫১ সালে ইন্টারমিডিয়েট, ১৯৫৪ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৫৫ সালে এমএ পাস করেন। তিনি যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিক্সে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৬ সালে সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান (সিএসপি) ক্যাডারে যোগ দেন। ১৯৫৯ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত তিনি নীলফামারী ও নারায়ণগঞ্জে মহকুমা প্রশাসক ছিলেন। ১৯৬৬-৬৭ সালে তিনি কুমিল্লার জেলা প্রশাসক এবং ১৯৬৯-৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সচিব এবং ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির মুখ্য সচিব ছিলেন। ১৯৯৬ সালে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হিসেবে শপথ নেন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি সরকারি হিসাব এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। ২০০৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সৃষ্টির আদিকাল থেকেই দুর্বলের ওপর সবলের অধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলমান। হাজার হাজার বছর ধরেই চলে আসছে। অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ভালো এবং মন্দ দুধরনের শাসকগোষ্ঠীই দৃশ্যমান ছিল, মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক একসময় প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক বলেই পরিগণিত হতো, কখনো কখনো এই অধিকার দুর্বলের ওপর অত্যাচারে রূপ নিয়েছে, আর তখনই ধীরে ধীরে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে এবং এভাবেই দুর্বলের ভেতর, শ্রমিকদের ভেতর থেকে নেতৃত্বের জন্ম নিয়েছে। ইতিহাসের পাতায় তাদের অনেক সফলতা-ব্যর্থতার কাহিনি লিখিত হয়েছে।
একসময় ছিল সামন্তবাদ বা ফিউডাল ইকোনমি। মধ্যযুগজুড়ে ইউরোপের দেশে দেশে ছিল এটি। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি তখন চালিকাশক্তি। সামন্ত সমাজব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের শ্রেণি গোড়াপত্তন হয় কৃষক শ্রেণির ভেতরে আবার মুক্ত (fee -যারা জমির পূর্ণ সৎব্যবহার করতে পারত নিজেদের মতো করে) অর্ধ মুক্ত (semi fee-কৃষকদের কিছুটা স্বাধীনতা ছিল) এবং বদ্ধ unfree- এখানে কৃষকদের কোনো স্বাধীনতা ছিল না, পুরোপুরি লর্ড বা প্রভুর অধীনস্ত থেকে কাজ করতে হতো) শ্রেণিবিন্যাস দেখা যায়। এ ছাড়া যোদ্ধাদের একটি শ্রেণি যারা সামরিক বাহিনীতে যোগদানের বিনিময়ে জমির মালিক হতো। তখন থেকেই শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের ভিন্নতা দেখা যেত। রাষ্ট্রে ব্যবস্থা পরিচালনায় রাজতন্ত্রের ব্যাপকতা চোখে পড়ে! ধারণা এমন ছিল যে, রাজারা কখনো ভুল করতে পারে না। আর এর ফলেই কর্তৃত্ববাদের সৃষ্টি হয়, মালিক-শ্রমিক সম্পর্কে শোষণ একটি ভালো হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। জাপানেও এর ফিউডাল বা সামন্ত অর্থনীতির চলন দেখা গেছে।
ইউরোপ থেকে গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স, স্প্যানিশ, পর্তুগিজরা উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় এসে বসতি গড়ে কলোনি প্রথার উৎপত্তি ঘটায়। আমেরিকাতে ফিউডাল বা সামন্ত অর্থনীতি সফলতা লাভ করেনি এখানকার বৈরী আবহাওয়া একটা কারণ হতে পারে আবার এখানকার আদিবাসীদের স্বতন্ত্র জীবনব্যবস্থার প্রভাব থাকতে পারে।
বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটে পুঁজিবাদের বিকাশ ঘটতে দেখা যায়। মালিকরা তাদের লাভের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য শ্রমিকদের ন্যায্য ভাতা নিয়ে অতটা চিন্তাশীল ছিলেন না।
শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দানা বাঁধতে থাকে। ১৭৭৬ সালে আমেরিকা স্বাধীন হলেও পরের অনেক বছর গৃহযুদ্ধ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যদিও অনেক আইন হয়েছে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার্থে। কিন্তু আইন প্রণেতারা মালিক পক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হতে থাকে, মালিকদের স্বার্থ বেশি সংরক্ষিত হতে থাকে, যার ফলে আইন মালিকদের মুনাফার লোভ দমন করতে ব্যর্থ হয়। বিনিময়ে শ্রমিকদের ওপর শোষণ/নিপীড়ন/নির্যাতনের মাত্রা বর্ধিত আকারে চলতে থাকে।
ধীরে ধীরে শ্রমিক আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকে। ১৮৮৬ সালের ২৫ এপ্রিল থেকে ৪ মের মধ্যে আমেরিকার শিকাগো শহরে শ্রমিক আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে। এ সময়ের মধ্যে শিকাগো ইউনিয়নভুক্ত শ্রমিক, সমাজবাদী, সংস্কারবাদী এবং সাধারণ শ্রমিকরা একত্রিত হয়ে মিছিল-মিটিং করতে থাকে। তাদের মুখ্য দাবি ছিল, ‘প্রতিদিন আট ঘণ্টা’ কাজ করা। পহেলা মে, (মে ১, ১৮৮৬) শনিবার শিকাগোর ডাউনটাউনে প্রায় ৩৫ হাজার শ্রমিক তাদের কর্মস্থল থেকে বেরিয়ে আসে এবং তাদের দাবিতে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করে। মে মাসের ৩ ও ৪ তারিখে আরও হাজার হাজার দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিক যোগ দেয়। শ্রমিকরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামনে গিয়ে শ্রমিকদের বের করে এনে সমাবেশে যোগ দেওয়াতে থাকে। মে মাসের ৩ তারিখে এক ফ্যাক্টরিতে এই শ্রমিক ধর্মঘট ভয়ংকর আকার ধারণ করে। পুলিশের গুলিতে দুই শ্রমিক মারা যায়।
শ্রমিক-জনতার মে ৪ তারিখের দেস প্লেইন স্ট্রিটের সমাবেশে শিকাগো সিটির মেয়র কার্টার হ্যারিসন যোগ দেন। যদিও পুলিশকে এই সমাবেশে হস্তক্ষেপ করতে নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো এক বক্তার বক্তব্যে সব ভন্ডুল হয়ে যায়। পুলিশ যখন সমাবেশ ভঙ্গ করতে যায়, তখন সমাবেশ থেকে কেউ একজন বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়! পুলিশও নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকে। এতে ৮ জন পুলিশ অফিসার মারা যান। অনেক শ্রমিক নিহত হয়। মেয়র মিটিং-মিছিল নিষিদ্ধ করেন। তখন গণমাধ্যম শ্রমিকদের বিপক্ষে চলে যায়। আর পুলিশ পিকেটারদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে। একসময় আন্দোলন স্তিমিত হয়ে আসে।
এই ঘটনায় পুলিশ শত শত শ্রমিক-জনতাকে গ্রেপ্তার করে। বোম্ব কে ছুড়েছে তা বের করার চেষ্টা করে, কিন্তু ব্যর্থ হয়। পুলিশ মূলত অফিসার হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে থাকে। আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী আটজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়। বিচারে জুরিরা একমত হয়ে আটজনকেই দোষী সাব্যস্ত করেন এবং সাতজনকে মৃত্যুদন্ড দেন। অনেক আমেরিকান এতে ক্ষুব্ধ হয়। কিন্তু আপিল কোর্টেও মৃত্যুদ- বহাল থাকে। পরবর্তী সময় এই দন্ড কার্যকর করা হয়। আমেরিকার ইতিহাসে, এই বিচারের রায়কে সবচেয়ে অনৈতিক বিচারকার্য বলে গণ্য করা হয়।
প্রতিদিন আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে শিকাগো শহরের মুভমেন্ট দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে সমাজ সংস্কারক, ইউনিয়নিস্টরা পহেলা মে (May 1)কে মে দিবস হিসেবে পালন করতে থাকে। বিংশ শতাব্দীতে সোভিয়েত ইউনিয়নসহ অন্য কমিউনিস্ট দেশগুলো মে মাসের এক তারিখকে ‘মে দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেয় যা এখন উত্তর আমেরিকা ছাড়া সারা পৃথিবীতেই পালিত হচ্ছে।
আমেরিকান প্রশাসন কখনোই এটিকে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালন করেনি। এটাকে ‘কমিউনিস্ট হলিডে’ বলে থাকে। ১৯৫৫ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আইসেন হাওয়ার এই দিনটিকে ‘লয়ালটি’ দিবস হিসেবে উল্লেখ করেন। আমেরিকা, কানাডা প্রতি বছর সেপ্টেম্বরের প্রথম সোমবারকে ‘লেবার ডে’ হিসেবে পালন করে। সারা পৃথিবীর (উত্তর আমেরিকা ছাড়া) মানুষ এখন গণমানুষের অধিকার আদায়ের দিন বলেই মে দিবসকে গণ্য করে। জয় হোক মুক্তিকামী মানুষের, জয় হোক শ্রমিক অধিকারের।
লেখক : প্রকৌশলী, সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরি
হিন্দুত্ববাদী বিজেপির শাসনামলে ভারত কি হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত হতে চলেছে? বিজেপির বিদ্যমান শাসনামলে নানা ঘটনায় ও দৃষ্টান্ত তেমন মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে অহিন্দু সংখ্যালঘু হত্যা, নির্যাতন-নিপীড়নের অজস্র নৃশংস ঘটনাসহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামার ঘটনা ঘটেই চলেছে। হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায়, মুসলিম বসতি উচ্ছেদে মুসলিম শিশু ধর্ষণ ও হত্যার ন্যায় ঘৃণিত ঘটনাও ঘটিয়েছে দলটির উগ্রবাদী কর্মীরা। ভারতের নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, পক্ষপাতমুক্ত কিন্তু বলা যাবে না। আর্থিক এবং পেশিশক্তির প্রভাব প্রতিটি নির্বাচনে লক্ষ্য করা যায়। নির্বাচনী সহিংসতায় প্রাণ হারানোর ঘটনাও অহরহ ঘটে। ভারতে ক্ষমতার পালাবদল ঘটে আসছে নির্বাচনের মাধ্যমে। এটাই দেশটির গণতান্ত্রিকতার একমাত্র সনদ হতে পারে না। সাংবিধানিকভাবে ভারত এককেন্দ্রিক শাসনের অধীন। ভারত একজাতি ও এক সম্প্রদায়ের দেশ অতীতেও ছিল না। আজও নয়। অজস্র ভাষাভাষী ও অনেক সম্প্রদায়ের দেশ ভারতে জাতিগত আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার সাংবিধানিকভাবে খর্ব করা হয়েছে, সংবিধান প্রণয়নকালে। কংগ্রেস অখণ্ড ভারতের দাবি তুলেছিল, বৃহৎ ভারতের পুঁজিপতি গোষ্ঠীর সর্বভারতীয় জনগণের ওপর একচেটিয়া পুঁজির শাসন-শোষণ নিশ্চিত করার অভিপ্রায়ে। ভারতীয় পুঁজিপতিরাই কংগ্রেস এবং গান্ধীর প্রধান পৃষ্ঠপোষকরূপে অকাতরে অর্থের জোগান দিয়েছিল। পুঁজির শাসন ও শোষণের জাঁতাকলে ভারতীয় জনগণ খেসারত দিয়ে আসছে, ১৯৪৭-এর স্বাধীনতার পর থেকে এযাবৎ। ভারত স্বাধীন হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ কিন্তু স্বাধীন হতে পারেনি। মুক্তি তো অবিশ্বাস্য।
স্বাধীনতার বহু পরে ১৯৭৪ সালে ভারতের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি অন্তর্ভুক্ত করা হলেও বাস্তবে সেটা কাগুজে পরিণত। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিধান তবে উন্মুক্ত কেন? ধর্মনিরপেক্ষ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কংগ্রেস নেতৃত্বের স্বেচ্ছাচারী কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেই ধর্মভিত্তিক পৃথক রাষ্ট্রের দাবি তুলেছিলেন। তবে ভারত বিভাগের জন্য কেবল জিন্নাহ একা দায়ী ছিলেন না। হিন্দুরা এক পৃথক জাতি, এই কথা ১৯৪০-এর লাহোর প্রস্তাবের পূর্বে ১৯৩৮-৩৯ সালে হিন্দু মহাসভার অধিবেশনগুলোতে সাভারকার সভাপতিরূপে বারবার বলেছেন। গান্ধীও তখন ভারতবর্ষে হিন্দু ও মুসলমান পৃথক দুটি জধপবং (নরগোষ্ঠী) বলে উল্লেখ করেছেন। সর্দার প্যাটেলও দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন যে, হিন্দু ও মুসলমানরা দুই পৃথক জাতি, এমন কি গান্ধী ও কংগ্রেস-ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি ঘনশ্যাম দাস বিড়লা লাহোর প্রস্তাবের দুই বছরেরও আগে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগের প্রস্তাব করেছিলেন গান্ধী ও ভাইসরয় লিনলিথগোর কাছে। গান্ধী ‘হরিজন’ পত্রিকায় লিখে ও বলে বেড়িয়েছেন, মুসলমানরা ভারতবর্ষকে ভাগ করতে চাইলে তিনি বাধা দেবেন না। অর্থাৎ হিন্দুত্ববাদী দক্ষিণপন্থিরা তো বটেই, কংগ্রেস দলের ভূমিকায় ভারত ভাগের প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হয়েছিল এবং জিন্নাহকে ওই পথে অগ্রসর হয়ে তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবে পরিণত করেছিলেন।
ভারতের স্বাধীনতার প্রশ্নে প্রস্তাব নিয়ে ভারতে আসেন ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার সদস্য স্যার স্টাফোর্ড ক্রিপস্ ১৯৪২ সালের ১২ মার্চ। ক্রিপসের ওই প্রস্তাবে, ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় বিধানকে স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেক রাজ্যের স্বতন্ত্র শাসনব্যবস্থার অধিকারের কথাও উল্লেখ ছিল। এমন কি কমনওয়েলথ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার অধিকারের কথাও ছিল ওই প্রস্তাবে। ক্রিপস্ কমিশনের প্রস্তাব, মুসলিম লীগ এবং কংগ্রেস কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হন। ভাষাভিত্তিক জাতিসত্তাগুলোর আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে কংগ্রেস বিচ্ছিন্নতার অধিকার হিসেবে অভিহিত করে। মূলত কংগ্রেসের এককেন্দ্রিক ভারত-শাসনের অভিপ্রায় ক্ষুন্ন হওয়ার আশঙ্কায় কংগ্রেস ক্রিপস কমিশনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল। জিন্নাহরও অভিন্ন বাসনা ছিল ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানের কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা। ধর্মের বিভাজনে ভারত বিভক্তি ছিল নজিরবিহীন ঘটনা। বিশ্বে এ ধরনের দ্বিতীয় ঘটনা কিন্তু আর একটিও ঘটেনি।
নির্বাচনে বিজয়ী সরকার মাত্রই গণতান্ত্রিক নয়। বিশ্ব ইতিহাসের নিন্দিত হিটলার, মুসোলিনিও কিন্তু জনরায় নিয়ে ক্ষমতাসীন হয়েছিলেন। দীর্ঘ মেয়াদে নিরবচ্ছিন্ন ক্ষমতায় থাকাই শাসকদের ফ্যাসিবাদী করে তোলে। প্রতিটি দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকা সরকারগুলোর মধ্যে তাই ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয় না। ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে রাজ্যে-রাজ্যে ক্ষমতাপ্রাপ্তিতে দলটি দেশের ধর্মনিরপেক্ষ তকমা মুছে দেওয়ার নানা অপকীর্তি সংঘটনে মেতে উঠেছে। বামদুর্গ খ্যাত ত্রিপুরায় বিজেপি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দখলে নিয়েছে। একই প্রক্রিয়ায় আসামসহ বিভিন্ন রাজ্যে। পশ্চিম বাংলায় ৩৪ বছর বামফ্রন্টের শাসনাধীন থাকলেও বামফ্রন্টের পতন ঘটে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় নানা স্বেচ্ছাচারিতায়। বামফ্রন্টের সুযোগ-সুবিধাভোগীরা পরবর্তী সময় ওই সুবিধার লোভে দলে দলে এখন ক্ষমতাসীন তৃণমূলে, এমনকি বিজেপিতেও শামিল হয়েছে। সুবিধাভোগীরা ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে মিশে যাওয়ার প্রবণতা ক্রমাগত বৃদ্ধি ঘটেছে যেমন ভারতে, তেমনি বাংলাদেশেও।
তৃণমূলের প্রতিপক্ষ ছিল বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস। গত দুটি বিধানসভার নির্বাচনে সেটা দেখা গেছে। বিজেপির ভারতজুড়ে বিজয়ের চাকা অগ্রসরমাণ অথচ পশ্চিম বাংলায় তাদের ছিল দুরবস্থা। বিজেপির রথের চাকা পশ্চিম বাংলায় প্রায় অচলই ছিল। বিজেপির অবস্থার বদল ঘটতে কিন্তু বিলম্ব হয়নি। পশ্চিম বাংলার নির্বাচনে শূন্য অবস্থান থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে বিজেপি। অচিরেই যদি পশ্চিম বাংলা ত্রিপুরার ভাগ্যবরণ করে তাহলে অবাক-বিস্ময়ের কারণ হবে না। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারের চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে ভারতের গণতন্ত্র ও সংবিধানকে।
বামফ্রন্টের পতনে তৃণমূলের উত্থান আমাদের চমকে দিয়েছিল। ভবিষ্যতে হিন্দুত্ববাদী বিজেপির পশ্চিম বাংলার ক্ষমতা গ্রহণে আমরা কিন্তু বিস্মিত হবো না। কলকাতায় মার্কসবাদী একজন রাজনীতিকের সঙ্গে আমার দীর্ঘ আলাপ হয়েছিল। তিনি বললেন, ‘দেখুন, আমরা দেশভাগের পর পূর্ববাংলার প্রত্যাগতরা প্রায় সবাই এ দেশে এসে বামপন্থায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে যুক্ত হয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের পরের প্রজন্ম এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পর হতে এযাবৎ যারা এসেছে, তারা সবাই আচানক বিজেপির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত হয়ে গেছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটাই বাস্তবতা। আসামে এবং ত্রিপুরায়ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী পূর্ববঙ্গীয়রা বিজেপির ভোটব্যাংক হয়ে পড়েছে। পশ্চিম বাংলার ভবিষ্যৎ যে কোথায় গিয়ে ঠেকবে, বলা মুশকিল।’ তার বক্তব্যের প্রমাণ তো পশ্চিম বাংলার গত বিধানসভার নির্বাচনের ফলাফল।
ভারতের সংবিধান প্রণয়নের সময়ে প্রতিটি রাজ্যের রাজ্যপালকে জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল, ওই প্রস্তাব কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেন নেহরু। নেহরু ওই প্রস্তাবের বিপরীতে ক্ষমতাসীন কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক রাজ্যপালের নিয়োগকে সংবিধানভুক্ত করেন। স্বাধীন ভারতে কংগ্রেস এবং নেহরুর অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাবের কারণে প্রস্তাবকরা নিশ্চুপ হয়ে যান। নেহরু, সর্দার প্যাটেলের প্রস্তাবই সংবিধানে সর্বাধিক অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল, দলের ও ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তায় এবং নানা কূটকৌশল অবলম্বনে। কেন্দ্রীভূত শাসনের জালে আবদ্ধ ভারতের রাজ্যগুলোর শাসনতান্ত্রিক ক্ষমতা কেন্দ্র কর্তৃক কুক্ষিগত। কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত রাজ্যপাল ক্ষমতাসীন সরকারের অনুগত-তল্পিবাহক। পশ্চিম বাংলার প্রাক্তন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথাগত রায় বিজেপির কেন্দ্রীয় ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই ত্রিপুরার রাজ্যপাল পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। রাজ্যপালের পদ সাংবিধানিক এবং রাজ্যের নির্বাচিত সরকারকে তাৎক্ষণিক বরখাস্ত করার এখতিয়ারও রাজ্যপালকে দেশটির সংবিধান দিয়েছে। রাজ্যপালদের অসীম ক্ষমতা প্রদানের মাশুল এখন স্বয়ং কংগ্রেস দলকেই দিতে হচ্ছে। আশার কথা, ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের আদেশে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পা সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ব্যর্থ হবেন বিবেচনায় শপথের ৭২ ঘণ্টার মাথায় স্বেচ্ছায় পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন। পরে কংগ্রেস এবং জেডিএস জোট রাজ্যে সরকার গঠন করে। কংগ্রেস-জেডিএস জোটের অধিক আসন সংখ্যার পরও রাজ্যপাল কোন যুক্তিতে বিজেপিকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণসহ ইয়েদুরাপ্পাকে মুখ্যমন্ত্রীর শপথ করিয়েছিলেন? ওদিকে বিজেপি কংগ্রেস ও জেডিএসের বিধায়কদের অর্থের বিনিময়ে দলে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। দল ভাঙতে বিজেপি অর্থের ভাণ্ডার উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। কিন্তু এতে কাজ হয়নি। নেহরু উদ্দেশ্যমূলক রাজ্যপালের নিয়োগের এখতিয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনের বিধি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। সেই অগণতান্ত্রিক বিধির শিকার এখন খোদ কংগ্রেস দল। তাদেরই বলির পাঁঠায় পরিণত করেছে। আমাদের উপমহাদেশের তিন খণ্ডে বিভক্ত রাষ্ট্রগুলোর ক্ষমতায় থাকা সরকাররা ক্ষমতায় থাকাকালীন নিজেদের দেশের শেষ সরকার বিবেচনা করে। এটা যে চরম আত্মঘাতী সেটা অতীত এবং বর্তমানের ইতিহাসের নানা দৃষ্টান্ত এবং অভিজ্ঞতায় বারবার প্রমাণিত হয়েছে।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক নতুন দিগন্ত
সাধারণত সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণকৃত দৃশ্য অস্পষ্ট এবং ঘোলাটে। তবু চেহারা দেখে অপরাধী শনাক্তকরণে অনেক দূর অগ্রসর হওয়া যায়। কিন্তু আমাদের দেশে যেসব সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে, সেগুলো বেশি জুম করা যায় না। একই সঙ্গে মোশন ডিটেক্ট করতেও সমস্যা হয়। অবশ্য উন্নত প্রযুক্তির সিসিটিভিতে এসব সমস্যা তেমন নেই। অপরাধ দমনে সরকারিভাবে সিসিটিভির মাধ্যমে অপরাধী শনাক্তে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যে কারণে, অপরাধ দমনে বেসরকারিভাবে বিভিন্ন বাসাবাড়ি এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে সিসিটিভি লাগানো হচ্ছে। পুলিশের নিজস্ব ক্যামেরার সংখ্যা কম থাকায় বেসরকারিভাবে স্থাপিত ক্যামেরাগুলো মনিটরিং করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিশেষ করে, বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে স্থাপিত ক্যামেরার মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করছেন তারা। ইতিমধ্যে ডিএমপি কার্যক্রম শুরু করেছে।
শনিবার দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতায় প্রকাশিত ‘অপরাধ দমনে বেসরকারি সিসিটিভি ক্যামেরা!’ শীর্ষক প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায়, অপরাধ সংঘটিত হলে অপরাধীদের শনাক্ত করতে গিয়ে বেগ পেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। কখনো কখনো অপরাধীদের খুঁজে বের করাই অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে অপরাধী শনাক্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সিসিটিভি ক্যামেরা। এর অংশ হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ব্যক্তিগত সিসিটিভি ক্যামেরাকে পুলিশের কেন্দ্রীয় সিস্টেমে যুক্ত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে এলাকাভিত্তিক হাউজিং সোসাইটি, অ্যাপার্টমেন্ট, সমবায়, বাসাবাড়ি ও ব্যবসায়ীদের তাদের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো আপগ্রেড করতে অনুরোধ করেছে পুলিশ। ক্যামেরাগুলোতে লাইভ ফিড সরবরাহসহ ফেস ডিটেকশন, স্বয়ংক্রিয় অ্যালার্ম সিস্টেম এবং গাড়ির নম্বর প্লেট ট্রেসিংয়ের মতো ১১ ধরনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে কাজ করবে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে প্রায় ৫০ হাজার ব্যক্তিগত সিসিটিভি ক্যামেরাকে কেন্দ্রীয় সার্ভারে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে ডিএমপি। সাধারণ মানুষও এ উদ্যোগে সাড়া দিচ্ছে। ক্যামেরাগুলো আপডেট করার কাজ শুরু করেছে কেউ কেউ। মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারদের পাশাপাশি জেলার পুলিশ সুপাররা থানার ওসিদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। যেসব বাসাবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, অফিস এবং রাস্তাঘাটে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা আছে সেগুলো মনিটরিং করবে পুলিশ। এজন্য ওসিরা বেসরকারি ক্যামেরার মালিকদের সঙ্গে কথা বলছেন।
সংবাদে আরও বলা হয়েছে, ‘প্রায় সব বাসাবাড়িতেই এখন সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো আছে। বিভিন্ন আবাসিক এলাকাও এখন সিসিটিভি ক্যামেরার অধীনে। ডিএমপির কেন্দ্রীয় মনিটরিং সিস্টেমে শহরের ২২১ পয়েন্টে ৬৮০টি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৯৯টি স্থানে ৬২৫টি সিসিটিভি রয়েছে। সেগুলোও ডিএমপির কেন্দ্রীয় সিস্টেমে যুক্ত হবে। গুলশান ডিভিশনে বেসরকারি যেসব ক্যামেরা আছে সেগুলো মনিটরিং করে আমরা সুফল পেয়েছি। এজন্য সাতটি ডিভিশনে ৫০ হাজার বেসরকারি ক্যামেরা টার্গেট করা হয়েছে।’
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘বেসরকারি সিসিটিভি ক্যামেরাগুলোর আপগ্রেডিং কোনো সরকারি প্রকল্পের অধীনে করা হচ্ছে না। আমরা এটি পুরোপুরি জনসমর্থন নিয়ে করছি। আমরা থানার মাধ্যমে সিসিটিভির মালিকদের কাছে তাদের ক্যামেরা আপগ্রেড করার জন্য অনুরোধ করেছি। তারা তাদের ক্যামেরার গুণমান উন্নত করতে যদি সম্মত হয়, তাহলে এ ক্যামেরাগুলোকে একটি কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্কিং সিস্টেমের অধীনে আনা হবে। এসব করা গেলে পুলিশ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে অনেক সহায়তা পাবে। একই সঙ্গে দ্রুত সেবা দিতে জাতীয় জরুরি নম্বর ৯৯৯-এর সঙ্গে এ প্রযুক্তি ট্যাগ করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। তবে এ প্রকল্পের নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। কারণ এটি একটি স্বেচ্ছাসেবী জনসমর্থিত প্রকল্প।’
বেসরকারিভাবে যতই উদ্যোগ নেওয়া হোক, সিসিটিভি ক্যামেরা পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণের ভার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে রাখা প্রয়োজন। দ্রুত অপরাধী শনাক্তকরণে কেন্দ্রীয়ভাবে দেশজুড়ে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা দরকার। মনে রাখতে হবে, অপরাধীরাও এর বিকল্প রাস্তা তৈরি করবে। এমনও হতে পারে, অপরাধীদের উদ্যোগেই পূর্বনির্ধারিত জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে যা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, অপরাধীদের দ্বারাই। চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই বন্ধে এই ক্যামেরার বিকল্প নেই। তবে নিয়ন্ত্রণ যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতেই থাকে।
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
আইন মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি বলছে, আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে। সরকারের এমন নেতিবাচক সিদ্ধান্তের পর এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি দেয়নি দলটি। তবে এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি এক দফার আন্দোলনের সঙ্গে যোগ হতে পারে বলে জানা গেছে।
৫৩ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও দলীয় নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গুরুতর। বিদেশে নেওয়া ছাড়া তার উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়। সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসনকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ চেয়ে তার ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। এতে মতামত দিতে আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় আইন মন্ত্রণালয় এতে মতামত দেয়। এ বিষয়ে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেছেন, তার সাময়িক মুক্তির আদেশটা বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) কারাগারে নেওয়া হলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া বাসায় চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশে যেতে পারবেন না এমন দুটো শর্ত সাপেক্ষে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে দন্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। দরখাস্তটা নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে আটবার দন্ড স্থগিত করা হয়েছে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার কোনো সুযোগ আইনে থাকে না। আমরা ৪০১ ধারার উপধারা ১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ ব্যাখ্যা করে মতামত পাঠিয়েছি। আমাদের মতামত হলো, ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে, সেটা অতীত এবং মীমাংসিত। এটা আর খোলার কোনো উপায় নেই।’
এক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে (খালেদা জিয়া) সাজা স্থগিত রেখে যে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, সেটা বাতিল করে তারপর পুনরায় বিবেচনা করার সুযোগ থাকলে সেটা করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই উপমহাদেশে ৪০১ ধারার ক্ষমতা যখন প্রয়োগ করে, তখন এটি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না বলে সিদ্ধান্তের নজির আছে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন যে আদেশটা আছে, সেটা যদি বাতিল করা হয়, বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) যদি আবার কারাগারে নেওয়া হয়, তাহলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু এ অবস্থায় আদালতে যেতে পারবেন না।’ খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের বিষয়টি বাতিল করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা অমানবিক হবে, বাতিল করব না।’
আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এক বার্তায় বলেন, ‘আজকের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, দেশে আইনের শাসন নেই। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক ভয়ংকর তামাশা করা হচ্ছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, নির্বাহী বিভাগ চাইলেই কাউকে মুক্তি দিতে পারে।’
খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় বিএনপি কী এখন ভাবছে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে।’
আর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর নীলনকশার অংশ। মানবতাবিরোধী ও সরকারের বর্বর ইচ্ছা পূরণের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।’
দলটির নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদন আইনগতভাবে বিবেচনা না করে, রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে। ফলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করতে না পারলে বিএনপিপ্রধানের মুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমেই এই ইস্যুর সুরাহা করতে চায় দলটি।
কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেখানে বলা হয়েছে, তাকে “দেশে চিকিৎসা নিতে হবে”, তার বদলে “দেশে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন” বলাই যথেষ্ট। কিন্তু দেশে চিকিৎসা গ্রহণের শর্তারোপ করা হলে তা যে চিকিৎসার বিবেচনায় না করে রাজনীতির বিবেচনায় করা হবে, সেটা বোঝার মতো বুদ্ধি সাধারণ মানুষের আছে।’
অসুস্থতার কারণে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের মার্চে করোনার সময় টানা দুই বছর কারাভোগের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরেছিলেন খালেদা জিয়া। পরে এ পর্যন্ত তার মুক্তির মেয়াদ আটবার বাড়িয়েছে সরকার।
এরই মধ্যে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তাকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ দিতে পরিবারের পক্ষে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এ বিষয়ে আইনি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদনটি পাঠায়।
বিএনপিপ্রধানকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছিল ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি সরকার ইতিবাচকভাবে দেখতে পারে’। কিন্তু সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ‘বিদেশে যাওয়ার আবেদন করতে হলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরত গিয়ে করতে হবে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের পর সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় এবারও ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না। গত শনিবার এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এ শঙ্কাই প্রকাশ করেছিলেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা আছে, যেকোনো মূল্যে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকার মরিয়া। সে কারণে হয়তো খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি ঝুঁলিয়ে রাখতে চাইছে এমনটাই মনে করছে সরকারবিরোধীরা। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দিলেই সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলেও বিরোধী নেতাদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। তবে শর্ত দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দল যাতে সম্মত না হয়, সে কথাই নেতাদের বলে রেখেছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির হাইকমান্ড মনে করছেন, এ অবস্থায় চলমান এক দফার আন্দোলনে খালেদা জিয়ার মুক্তি বিষয়টি থাকলেও সেটাকে আরও জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে; যাতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নেয়।
জানা গেছে, এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে দলটি। আজ সোমবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক রয়েছে। সূত্র বলছে, জোটগত ছাড়াও দলীয়ভাবেও কর্মসূচি আসতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক চিকিৎসক জানান, হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তার কেবিনে এক্স-রে মেশিন নেওয়া হয়েছিল গতকাল ভোরে। শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে না এলে সিসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ ছিল। দুপুরে তার ইসিজি ও ইকো ডায়াগ্রাম করানো হয়েছে। ফুসফুসের পানি অপসারণের জন্য তার ডান পাশে যে ক্যাথেটার লাগানো ছিল, সেটা আপাতত খুলে ফেলা হয়েছে।
লিভার জটিলতা ছাড়াও ৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ফুসফুস, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। গত ৯ আগস্ট ফিরোজায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে দলীয় মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) সেটআপে কেবিনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছে।
জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘ওনার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সে জন্য তাকে দ্রুত বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে পাঠানো দরকার।’
সদ্যোজাত থেকে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে অনেক সময়েই নানা কারণে কানের ব্যথা দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে দিন কয়েকের মধ্যেই তা সেরেও যায়। কিছু ক্ষেত্রে সেই ব্যথা ঘুরেফিরে আসে ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।
দীর্ঘস্থায়ী কানে ব্যথা কখনোই অবহেলা করা উচিত না। যদি কানে ব্যথা বাড়তে থাকে, সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। মূলত কানের সংক্রমণ থেকে দীর্ঘস্থায়ী এই ব্যথা হতে পারে।
অনেকেরই ধারণা থাকে যে, বাচ্চাদের কানে পানি ঢুকে বা সদ্যোজাতদের দুধ খাওয়ানোর সময়ে তা কানে ঢুকে সংক্রমণ হয়। এ ছাড়া কানে ময়লা জমেও কানে ব্যথা হয় বলে সাধারণ ধারণা রয়েছে। কিন্তু শিশু বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই ধারণাগুলো ঠিক নয়। স্বাভাবিক অক্ষত কানের পর্দা ভেদ করে পানি, দুধ কানের একদম ভেতরে ঢুকতে পারে না।
শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে কান, গলা ও নাক এগুলো একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। ফলে গলায় সংক্রমণ হলে তা সহজেই কানে চলে আসে। বাচ্চার ঠান্ডা লেগে জ্বর, সর্দি-কাশি বা গলায় সংক্রমণ হলে তা কানেও ছড়িয়ে পড়ে। কানের সঙ্গে ফ্যারিঙ্কসের যোগসূত্র তৈরি হয় ইউস্টেশিয়ান টিউবের মাধ্যমে। ফলে যখন সন্তান বা বড়দের ফ্যারিঞ্জাইটিস, ল্যারিঞ্জাইটিস বা টনসিলাইটিস হচ্ছে, তখন সেই সংক্রমণ কানের মধ্যে চলে যেতে পারে।
এ ছাড়া শিশুদের সর্দি থেকেও কানে ব্যথা হয়। বিশেষ করে নবজাতকদের মধ্যে এই উপসর্গ দেখা যায়। বাচ্চারা যেহেতু নিজে থেকে কফ বার করতে পারে না। তাদের ঠান্ডা লেগে গলায় কফ জমে এবং কানেও তরল জমতে পারে। ফলে কানে ব্যথা হয় ও বাচ্চা কাঁদতে থাকে।
শিশুদের কানে ব্যথা হলেই অনেকে কানের ড্রপ দিতে শুরু করেন। কিন্তু এসব করতে বারণ করেন শিশু বিশেষজ্ঞরা। বরং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল খাওয়ানো যেতে পারে।
শিশু এবং ছোট বাচ্চাদের কানের ব্যথা বা সংক্রমণ সম্পর্কে বোঝানোর ক্ষমতা থাকে না। তাই কিছু লক্ষণ দেখেই তাদের কানে সংক্রমণ নিশ্চিত করা যায়।
১. সংক্রমণের কারণে কানে ব্যথা এবং অস্বস্তি হয়। ব্যথা কমাতে শিশুরা তাদের কান ধরে টানতে থাকে।
২. সংক্রমণে আক্রান্ত শিশু শুয়ে থাকলে এটি মধ্যকর্ণে চাপের পরিবর্তন ঘটায়। যা ব্যথা এবং অস্বস্তির সৃষ্টি করে ফলে শিশুদের জন্য ঘুমানো বা শুয়ে থাকা কঠিন হয়ে যায়।
৩. কানের সংক্রমণের একটি নিশ্চিত লক্ষণ হল শিশুর কান থেকে তরল বা পুঁজ বের হওয়া।
৪. সংক্রমণের কারণে কানের ব্যথা হয় যার ফলে শিশু অতিরিক্ত কান্না করে বা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি খিটখিটে মেজাজ হতে পারে।
৫. সংক্রমণের কারণে কানে তরল জমা হয়ে সাময়িকভাবে শ্রবণশক্তি হারাতে পারে।
৬. জ্বর থাকতে পারে।
৭. ডায়রিয়া, বমি, ক্ষুধা কমে যাওয়া।
১. ঘরে বা রাস্তাঘাটে ধুলো নাক-মুখ দিয়ে ঢুকলে অনেক সময়ে আল্যার্জি ও প্রদাহ হয়। ফলে ইউস্টেশিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে যায়। তখন কানে ব্যথা হতে পারে।
২. বিমানে ওঠার সময়ে যেমন ইউস্টেশিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অনেকেরই কানে সমস্যা দেখা যায়। বাচ্চারা সেটা বোঝাতে বা বলতে না পেরে কেঁদে ওঠে। তখন বড় হোক বা বাচ্চা, ঢোঁক গিলতে হবে। তা হলেই আবার ইউস্টেশিয়ান টিউবের মুখটা খুলে যাবে। সন্তান খুব ছোট হলে পানি বা লজেন্স খাওয়ানো যায়। সেটা খাওয়ার সময়ে সে ঢোঁক গিললে সমস্যা মিটে যাবে।
৩. ইউস্টেশিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে গেলে বা কান বন্ধ হয়ে গেলে, তা ঠিক করার জন্য এক ধরনের ব্যায়াম ভালসালভা ম্যানুভার করা যেতে পারে। এর জন্য নাক দিয়ে অনেকটা শ্বাস গ্রহণ করে তারপরে নাক ও মুখ বন্ধ করে, বেলুন ফোলানোর মতো করে মুখ ফুলিয়ে সেই বাতাস বের করার চেষ্টা করতে হবে। এতে নাক ও মুখ বন্ধ থাকায় ভিতরের বাতাস কানের পথে বেরোনোর চেষ্টা করবে। ফলে বন্ধ কান খুলে যাবে।
৪. এ ছাড়া রাইনাইটিস বা নাকের ভিতরের শ্লেষ্মাঝিল্লির জ্বালাপোড়া ও প্রদাহ থেকেও কানে ব্যথা হতে পারে। তখন ন্যাজ়াল ড্রপ দেন বিশেষজ্ঞরা।
গলার সংক্রমণ যেমন কানে ছড়াতে পারে ঠিক তেমনি কানের সংক্রমণ মস্তিষ্কে ছড়িয়ে যেতে পারে। ট্রান্সভারস বা সিগময়েড সাইনাস কান ও মস্তিষ্কের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে।
দীর্ঘদিন কানের ইনফেকশন অবহেলা করলে, এই সংক্রমণ সিগময়েড সাইনাস দিয়ে ব্রেনে চলে যেতে পারে। তখন রোগের জটিলতা বেড়ে যায়। যেমন, গলায় যদি স্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটিরিয়ার দ্বারা সংক্রমণ হয়, তা ব্রেনের মধ্যে চলে গেলে সেখানে মস্তিষ্কে পুঁজ তৈরি করে। এতে বাচ্চার খিঁচুনি হতে পারে, হাত-পায়ের দুর্বলতা দেখা যায়, চোখে কম দেখতে পারে সেই সময়।
তাই কানে সংক্রমণ বা ব্যথা হলেই অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।সোমবার (২ অক্টোবর) বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা শেষে উপাচার্যের সামনেই এ ঘটনা ঘটে।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে ২-০ গোলে আইন বিভাগকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। তবে খেলা শেষে পক্ষপাতিত্বমূলক সিদ্ধান্তের অভিযোগ এনে রেফারির দিকে তেড়ে যান আইন বিভাগের খেলোয়াড়রা। এসময় সহকারী প্রক্টর অমিত দত্ত তাদেরকে থামাতে এগিয়ে গেলে তার সাথে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ধস্তাধস্তি ঘটে। এক পর্যায়ে অমিত দত্তকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন শিক্ষার্থীরা। এরপর নাজমুল হোসেন হৃদয় নামে এক শিক্ষার্থী দৌড়ে চলে যেতে লাগলে তাকে বাধা দেন ক্রীড়া কমিটির আহ্বায়ক মো. আইনুল হক। এরপর তাকে মারধর করেন ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী। এসময় আবারও হাতাহাতি শুরু হলে নৃবিজ্ঞান বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীও সেখানে গিয়ে যুক্ত হন। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ফুটেজও প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সে ফুটেজে এসবের সত্যতা মিলেছে।এ বিষয়ে সহকারী প্রক্টর অমিত দত্ত বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রক্টরিয়াল বডির যে কাজ ছিল, আমি তাই করেছি। শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে রেফারির দিকে তেড়ে যাচ্ছিল। আমি থামাতে গেলে তারা আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। আমি দু’বার মাটিতে পড়ে গিয়েছি।’তবে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল দাবি করেন, ‘খেলা শেষে আমি স্টেজের পাশেই ছিলাম। হুড়োহুড়ির মধ্যে অমিত স্যার আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। আমি যখন উঠি তখন আবার আমাকে ফেলে দেন। রানা স্যার, প্রক্টর ওমর সিদ্দিকী, অমিত স্যার, লাল শার্ট পরা আরেকজন (আইনুল হক) আমার কলার চেপে ধরেন। তারপর রানা স্যার আমাকে চড়-থাপ্পড় মারেন। পেছন থেকে আমাকে গলা চেপে ধরেন আরেক স্যার। ধাক্কা লেগে পড়ে গিয়ে আমার ব্লেডিং হয়েছে।’আইন বিভাগের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেন, ‘কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে আমাদের দলের ছেলেরা হৈ-হুল্লোড় করে। এরপর অমিত স্যার আমাদের একজনের কলার ধরে নিচে ফেলে মারধর করেন। শিক্ষকের এমন মারধর দেখে আমরা বিস্মিত হয়েছি।’তবে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি কাউকে মারিনি। প্রক্টরিয়াল বডি নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছে।’
ক্রীড়া কমিটির আহ্বায়ক মো. আইনুল হক বলেন, ঘটনার সময় দেখলাম একটা ছেলে দৌড়াচ্ছে। তখন তার দৌড় দেখে মনে হলো কেন সে দৌড়াচ্ছে। তখন তাকে আটকানোর চেষ্টা করলাম। পরে শুনলাম ছেলেটা রেফারির সাথে উদ্ধত আচরণ করেছে। খেলায় যারা পরাজিত হয় তাদের একটা অভিযোগ থাকে। রেফারির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগ সত্য নয়।উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈনের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি কোনো বক্তব্য দিবেন না বলে এই প্রতিবেদকের ফোন কল কেটে দেন।
হতাশায় শেষ খালেদার অপেক্ষা
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
সাড়ে ৩ বছরে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স
দেশের বিদেশি মুদ্রা আয়ের অন্যতম হাতিয়ার প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের ধস নেমেছে। সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশে অবস্থানকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধপথে ও ব্যাংকের মাধ্যমে মাত্র ১৩৪ কোটি ডলারের বিদেশি মুদ্রার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। গত সাড়ে তিন বছরে এটি সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স। ৪১ মাস আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে এর চেয়ে কম ১০৯ কোটি ডলার সমপরিমাণের রেমিট্যান্স এসেছিল। রেমিট্যান্স-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দামের ব্যবধান বেশি হলে হুন্ডিতে লেনদেন বেড়ে যায়। আর যখন হুন্ডির চাহিদা বাড়ে তখন রেমিট্যান্স কমে যায়। গত মাসে ব্যাংকের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দাম ৬ থেকে ৭ টাকা বেশি ছিল। তাই বেশি লাভের আশায় বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন প্রবাসীরা।
ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজার ছাড়াল
এ বছর অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে ডেঙ্গু। গতকাল রবিবার ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজারের কোটা ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) সারা দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬ জনে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৮৮২ জন।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
অকাজের ৩৭০০ কোটির সেতু
সেতু হয়। কিন্তু সড়ক হয় না। সেতু করার জন্য নানান প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু সেসব সেতু করেই দায়সারা বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়। ভোগান্তি সাধারণ মানুষের। আবার যতগুলো সেতু করার কথা ততগুলো না করেও প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ করার প্রতিবেদনও দেওয়া হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সারা দেশের গ্রামের রাস্তাগুলোতে সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পে। প্রকল্পের এসব অনিয়ম উঠে এসেছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবি আ.লীগ নেতার
আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার। গত শনিবার রাতে তার ফেসবুকে এ দাবি জানিয়ে স্ট্যাটাস দেন তিনি।
মুহূর্তেই স্ট্যাটাসটি ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিএনপির অসংখ্য নেতা, কর্মী-সমর্থক তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রশংসা করেন। অন্যদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নিন্দা জানিয়ে দলীয় সব পদ থেকে তার বহিষ্কারের দাবি জানান।
আবদুল মোতালেব হাওলাদার তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘রাজনৈতিক কারণে আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দেওয়া হউক।’
স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন অধরাই
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
ফুটপাত থেকে মদের বার সবখানে চাঁদাবাজি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের কমিটি পার করেছে পাঁচ বছরের বেশি সময়। মেয়াদোত্তীর্ণ এ কমিটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। কিছু নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার তথ্য রয়েছে। সর্বশেষ মদের বার ভাঙচুর ও লুট করে আবারও আলোচনায় এ কমিটির নেতাকর্মীরা।
নতুন কমিটি না হওয়ায় নেতারা বেপরোয়া আচরণের পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছেন বলে মনে করেন সাধারণ কর্মীরা। তারা বলেন, সংগঠনের কর্মকাণ্ডও স্থবির হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান তারা।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মো. রিপন মিয়াকে সভাপতি ও মাহমুদুল হক জুয়েল মোড়লকে সাধারণ সম্পাদক করে তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের জন্য আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে গত বছর ১২ জুন ৩২১ জনের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য।
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ অনুযায়ী, দেশে ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২২ হাজার ১১৯। এ তালিকায় রয়েছে যারা রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, মাজার, ফুটপাত, সিঁড়ি, ওভারব্রিজের নিচে, লঞ্চ টার্মিনাল, ফেরিঘাট, মার্কেটের বারান্দায় দিন কাটান। আর বস্তিতে বসবাস করছে ১৮ লাখ ৪৮৬ জন। তারা মূলত শহর ও উপশহর এলাকায় টিনের ঘর, সেমিপাকা ঘর বা ঘিঞ্জি পাকা ঘরে বাস করে। তবে বস্তিবাসী কারা সে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১৬ সালে সরকার আবাসন নীতিমালা করেছে। আবাসন উন্নয়ন তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। আবাসন সংকট নিরসন করতে হলে সরকারকে আবাসন তহবিল করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বস্তিবাসী, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত কারা তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। না হলে বোঝা যাবে না কত মানুষ বস্তিতে থাকে।’
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে আবাসন সংকট কাটছে না। স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে আবাসন।’
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে ৯ লাখ গৃহহীন মানুষকে চিহ্নিত করে। ইতিমধ্যে আট লাখ মানুষের গৃহের ব্যবস্থা করেছে; প্রায় ৪০ লাখ মানুষের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বাকিদের জন্যও শেখ হাসিনা ব্যবস্থা করবেন। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্যও আবাসনের ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা তার সৈনিক হিসেবে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
জানা যায়, বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার সবার জন্য আবাসন। অঙ্গীকার পূরণে সরকার নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সারা দেশে ৩০টি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, নোয়াখালী, যশোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, শরীয়তপুর, নড়াইল, খুলনা, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব প্রকল্পে ৬ হাজার ৪৩২টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হয়েছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২৭টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পে ৫ হাজার ৯৩০টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হবে। শেরপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, হবিগঞ্জ, সিলেট, ঝিনাইদহ, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে ১৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৩৫টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় রাজউক পূর্বাচল, ঝিলমিল, উত্তরা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় আবাসন প্রকল্পে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ফ্ল্যাটগুলো উচ্চমূল্যের কারণে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। পূর্বাচল, ঝিলমিল ও উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প গ্রহণ করছে সরকার। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনেও বিভিন্ন সংস্থা আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন শহরে বসবাসরত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সম্পদশালী ব্যক্তিরা। যাদের অনেক ফ্ল্যাট আছে তারা আরও ফ্ল্যাট কিনছেন। কিন্তু বাস্তুহারা, দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত সরকারি এসব আবাসনের সুবিধা পাচ্ছেন না। অল্প দামে জমি অধিগ্রহণ করে সরকার আবাসন প্রকল্প তৈরি করে যাদের নামে বরাদ্দ দিচ্ছে তারা রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে জমির মালিক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত।
জাতিসংঘ ১৯৮৫ সালে বিশ্ব বসতি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশে^ অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার এ দিবসটি পালিত হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।