
সাধারণত সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণকৃত দৃশ্য অস্পষ্ট এবং ঘোলাটে। তবু চেহারা দেখে অপরাধী শনাক্তকরণে অনেক দূর অগ্রসর হওয়া যায়। কিন্তু আমাদের দেশে যেসব সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে, সেগুলো বেশি জুম করা যায় না। একই সঙ্গে মোশন ডিটেক্ট করতেও সমস্যা হয়। অবশ্য উন্নত প্রযুক্তির সিসিটিভিতে এসব সমস্যা তেমন নেই। অপরাধ দমনে সরকারিভাবে সিসিটিভির মাধ্যমে অপরাধী শনাক্তে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যে কারণে, অপরাধ দমনে বেসরকারিভাবে বিভিন্ন বাসাবাড়ি এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে সিসিটিভি লাগানো হচ্ছে। পুলিশের নিজস্ব ক্যামেরার সংখ্যা কম থাকায় বেসরকারিভাবে স্থাপিত ক্যামেরাগুলো মনিটরিং করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিশেষ করে, বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে স্থাপিত ক্যামেরার মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করছেন তারা। ইতিমধ্যে ডিএমপি কার্যক্রম শুরু করেছে।
শনিবার দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতায় প্রকাশিত ‘অপরাধ দমনে বেসরকারি সিসিটিভি ক্যামেরা!’ শীর্ষক প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায়, অপরাধ সংঘটিত হলে অপরাধীদের শনাক্ত করতে গিয়ে বেগ পেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। কখনো কখনো অপরাধীদের খুঁজে বের করাই অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে অপরাধী শনাক্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সিসিটিভি ক্যামেরা। এর অংশ হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ব্যক্তিগত সিসিটিভি ক্যামেরাকে পুলিশের কেন্দ্রীয় সিস্টেমে যুক্ত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে এলাকাভিত্তিক হাউজিং সোসাইটি, অ্যাপার্টমেন্ট, সমবায়, বাসাবাড়ি ও ব্যবসায়ীদের তাদের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো আপগ্রেড করতে অনুরোধ করেছে পুলিশ। ক্যামেরাগুলোতে লাইভ ফিড সরবরাহসহ ফেস ডিটেকশন, স্বয়ংক্রিয় অ্যালার্ম সিস্টেম এবং গাড়ির নম্বর প্লেট ট্রেসিংয়ের মতো ১১ ধরনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে কাজ করবে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে প্রায় ৫০ হাজার ব্যক্তিগত সিসিটিভি ক্যামেরাকে কেন্দ্রীয় সার্ভারে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে ডিএমপি। সাধারণ মানুষও এ উদ্যোগে সাড়া দিচ্ছে। ক্যামেরাগুলো আপডেট করার কাজ শুরু করেছে কেউ কেউ। মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারদের পাশাপাশি জেলার পুলিশ সুপাররা থানার ওসিদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। যেসব বাসাবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, অফিস এবং রাস্তাঘাটে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা আছে সেগুলো মনিটরিং করবে পুলিশ। এজন্য ওসিরা বেসরকারি ক্যামেরার মালিকদের সঙ্গে কথা বলছেন।
সংবাদে আরও বলা হয়েছে, ‘প্রায় সব বাসাবাড়িতেই এখন সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো আছে। বিভিন্ন আবাসিক এলাকাও এখন সিসিটিভি ক্যামেরার অধীনে। ডিএমপির কেন্দ্রীয় মনিটরিং সিস্টেমে শহরের ২২১ পয়েন্টে ৬৮০টি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৯৯টি স্থানে ৬২৫টি সিসিটিভি রয়েছে। সেগুলোও ডিএমপির কেন্দ্রীয় সিস্টেমে যুক্ত হবে। গুলশান ডিভিশনে বেসরকারি যেসব ক্যামেরা আছে সেগুলো মনিটরিং করে আমরা সুফল পেয়েছি। এজন্য সাতটি ডিভিশনে ৫০ হাজার বেসরকারি ক্যামেরা টার্গেট করা হয়েছে।’
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘বেসরকারি সিসিটিভি ক্যামেরাগুলোর আপগ্রেডিং কোনো সরকারি প্রকল্পের অধীনে করা হচ্ছে না। আমরা এটি পুরোপুরি জনসমর্থন নিয়ে করছি। আমরা থানার মাধ্যমে সিসিটিভির মালিকদের কাছে তাদের ক্যামেরা আপগ্রেড করার জন্য অনুরোধ করেছি। তারা তাদের ক্যামেরার গুণমান উন্নত করতে যদি সম্মত হয়, তাহলে এ ক্যামেরাগুলোকে একটি কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্কিং সিস্টেমের অধীনে আনা হবে। এসব করা গেলে পুলিশ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে অনেক সহায়তা পাবে। একই সঙ্গে দ্রুত সেবা দিতে জাতীয় জরুরি নম্বর ৯৯৯-এর সঙ্গে এ প্রযুক্তি ট্যাগ করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। তবে এ প্রকল্পের নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। কারণ এটি একটি স্বেচ্ছাসেবী জনসমর্থিত প্রকল্প।’
বেসরকারিভাবে যতই উদ্যোগ নেওয়া হোক, সিসিটিভি ক্যামেরা পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণের ভার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে রাখা প্রয়োজন। দ্রুত অপরাধী শনাক্তকরণে কেন্দ্রীয়ভাবে দেশজুড়ে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা দরকার। মনে রাখতে হবে, অপরাধীরাও এর বিকল্প রাস্তা তৈরি করবে। এমনও হতে পারে, অপরাধীদের উদ্যোগেই পূর্বনির্ধারিত জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে যা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, অপরাধীদের দ্বারাই। চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই বন্ধে এই ক্যামেরার বিকল্প নেই। তবে নিয়ন্ত্রণ যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতেই থাকে।
সরকারি সচিব ও রাজনীতিক এ.এস.এইচ.কে. সাদেক ১৯৩৪ সালের ৩০ এপ্রিল যশোরের কেশবপুর থানার বড়েঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম আবু শরাফ হিজবুল কাদের সাদেক। পিতা ইয়াহিয়া সাদেক ছিলেন অবিভক্ত বাংলার সরকারের যুগ্ম কমিশনার। এইচ.কে সাদেক ১৯৪৯ সালে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৫১ সালে ইন্টারমিডিয়েট, ১৯৫৪ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৫৫ সালে এমএ পাস করেন। তিনি যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিক্সে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৬ সালে সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান (সিএসপি) ক্যাডারে যোগ দেন। ১৯৫৯ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত তিনি নীলফামারী ও নারায়ণগঞ্জে মহকুমা প্রশাসক ছিলেন। ১৯৬৬-৬৭ সালে তিনি কুমিল্লার জেলা প্রশাসক এবং ১৯৬৯-৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সচিব এবং ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির মুখ্য সচিব ছিলেন। ১৯৯৬ সালে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হিসেবে শপথ নেন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি সরকারি হিসাব এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। ২০০৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
দেশের সবচেয়ে বৃহৎ গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। গ্রাহকদের নিরাপদ ও মানসম্মত সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কতটা আন্তরিক রাষ্ট্রায়ত্ত এই প্রতিষ্ঠানটি? তাদের করণীয়ই বা কী এমন নানা বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বিস্তারিত কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নাজমুল লিখন
দেশ রূপান্তর : তিতাসের পাইপলাইন লিকেজ বা ছিদ্র হয়ে অগ্নিকান্ডের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস ছড়িয়ে পড়ার পর নগরবাসীর মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?
ইজাজ হোসেন : বিভিন্ন অগ্নিকান্ড কিংবা বিস্ফোরণের জন্য তিতাসের গ্যাসের পাইপলাইন অনেক ক্ষেত্রেই দায়ী। কিছুদিন আগেও গত ২৪ এপ্রিল বিভিন্ন স্থানে গ্যাস ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় এটা আরও বেশি প্রমাণিত হলো। তিতাসের পাইপলাইনে যত ছোট ছিদ্রই থাকুক না কেন, সেখান থেকে গ্যাস বের হবে। এটি কোনো আবদ্ধ স্থানে জমতে জমতে, বাতাসে এর পরিমাণ ৫ শতাংশের বেশি হলে এটা ‘এক্সপ্লোসিভ মিক্সার’ হয়ে যায়। এটা খুবই রিস্কি। সেখানে আগুনের সামান্যতম উৎস কিংবা কোনো ধরনের স্পার্ক হলেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পাইপলাইনে ছিদ্র থাকা মানেই সেটা বড় ধরনের ঝুঁকি। মাটির নিচে গ্যাসের পাইপলাইনে ছিদ্র কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা এর আগেও বন্যার সময় কিংবা বৃষ্টিতে কোথাও পানি জমার পর অনেক জায়গায় বুদ বুদ উঠতে দেখেছি। অনেকেই এটাকে গ্যাসের লিকেজের কথা বললেও সেভাবে পাত্তা দেয়নি তিতাস। যেনতেনভাবে মানুষকে বোঝানো হয়েছে। কিন্তু যেসব এলাকায় পানি জমে না, সেখানকার পাইপলাইনেও যে ছিদ্র আছে সেটা আমরা আগে জানতাম না। এবার গ্যাসের অতিরিক্ত চাপের কারণে আমরা দেখলাম- তিতাসের বেশিরভাগ এলাকার লাইনেই ছিদ্র রয়েছে। ওই ঘটনার ১০ দিন আগেও এসব লিক ছিল। তখন চাপ কম থাকায় তা বোঝা যায়নি। অনেক ক্ষেত্রে এলপিজি, স্যুয়ারেজ লাইন থেকে গ্যাস জমাসহ নানা কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমি বলব বেশিরভাগ বিস্ফোরণ কিংবা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হলো তিতাসের পাইপলাইনের লিকেজ।
দেশ রূপান্তর : এই লিকেজের কারণে গ্যাসের অপচয় হচ্ছে। এটা তো এক ধরনের আর্থিক ক্ষতি...
ইজাজ হোসেন : অবশ্যই। অপচয়ের কারণে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। তৃতীয় আরেকটা বড় ক্ষতি হলো, জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তন। কারণ এই গ্যাস নিঃসরণ মানেই বাতাসে মিথেন ছড়িয়ে পড়ছে। আর ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের’ জন্য কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়ে ২৪ গুণ ক্ষতিকর মিথেন গ্যাস যা জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রাখছে।
দেশ রূপান্তর : জ্বালানি বিভাগের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ওইদিন গ্যাসের চাপ বেশি থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। অনেকেই বলছেন, ওটাই আসলে গ্যাসের স্বাভাবিক চাপ। আপনি কী মনে করেন?
ইজাজ হোসেন : আমাদের গ্যাসফিল্ড থেকে উৎপাদিত গ্যাসের চাপ সাধারণত ১০০০ পিএসআই থাকে। পরে একটা স্টেশনের মাধ্যমে এই চাপ কমিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়। সুতরাং ওই স্টেশনে গ্যাসের চাপ এমনভাবে অ্যাডজাস্ট করে রাখা হয়, যাতে মাত্রাতিরিক্ত চাপের গ্যাস কোনোভাবেই সরবরাহ হতে না পারে। ফলে ওইদিনের গ্যাসের যে চাপ ছিল সেটাই স্বাভাবিক। অন্যসময় গ্রাহকরা চাহিদামতো চাপে গ্যাস পান না। এতে রান্নাবান্নাসহ নানা কাজে ব্যাঘাত ঘটছে।
দেশ রূপান্তর : তিতাস আগে থেকেই ব্যবস্থা নিলে এ ধরনের পরিস্থিতি কি এড়ানো যেত?
ইজাজ হোসেন : অবশ্যই সে সুযোগ ছিল। আগে থেকে সতর্ক হলে এই চাপ অ্যাডজাস্ট করা যেত সহজেই। কিন্তু যিনি দায়িত্বে ছিলেন, তিনি হয়তো লক্ষ করেননি। এটা এক ধরনের অসতর্কতা। প্রশ্ন হলো, পাইপলাইনে লিক থাকবে কেন? এটা তো ওই ইঞ্জিনিয়ারের দোষ না। লাইনে লিক আছে, এটা বিবেচনায় নিয়ে তো গ্যাসের চাপ কম-বেশি করা সম্ভব না। আসলে এসব লিক আগেও ছিল। কিন্তু গ্যাসের চাপ সমসময় স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকায় এতদিনে তা ডিটেক্ট হয়নি। তিতাস এখানে ধরা পড়ে গেছে। আরেকটা হতে পারে লিকগুলো আরও বড় হয়ে গেছে। কারণ প্রতি বছরই এই লিকগুলো বড় হয়।
দেশ রূপান্তর : আমরা কি তাহলে বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছি?
ইজাজ হোসেন : অবশ্যই। তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বিশেষ করে ওইদিনের (২৪ এপ্রিল) ঘটনার পর এটা প্রমাণ হলো আমরা সাংঘাতিক রকমের বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছি। আমরা দেখলাম- বিপুল পরিমাণ গ্যাস লিকেজ হচ্ছে। এতে প্রমাণিত হয়েছে- হয় একই জায়গায় অনেক লিক আছে, না হলে আকার অনেক বড়। কারণ লিকের পরিমাণ বেশি না হলে গন্ধ পাওয়া যেত না। এটা একটা বড় ঘটনা। অতীতে এমনটা কখনো হয়নি।
দেশ রূপান্তর : পানি, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান মাটির নিচে কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় তিতাসের পাইপলাইন ছিদ্র করে ফেলে। এটা কি এক ধরনের সমন্বয়হীনতা? নাকি এর পেছনে কোনো কারণ রয়েছে?
ইজাজ হোসেন : আসলে তিতাসের লোকজন নিজেরাই জানে না, কোথায় কোথায় তাদের লাইন আছে। এটা তারা স্বীকারও করেছে। ৩০-৪০ বছর আগে যেসব লাইন বসানো হয়েছে, সেগুলোর কোনো হদিসই নেই। কোথা থেকে কোন লাইন কোথায় গেছে, তাও তারা জানে না। তিতাসের পুরো পাইপলাইনের সঠিক স্টাডি হওয়া দরকার। যেসব স্থানে ৩০ বছরের পুরনো পাইপলাইন রয়েছে, সেগুলো বদলাতে হবে। এগুলো ভালো না খারাপ না দেখার সুযোগ নেই। কারণ এতদিনে এসব পাইপলাইন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। জিআইএস ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে তিতাসের পাইপলাইন নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে। যাতে অন্য কেউ কাজ করতে গেলে বুঝতে পারে, কোথায় কী অবস্থায় তিতাসের পাইপলাইন রয়েছে।
দেশ রূপান্তর : তিতাসের পাইপলাইনের এই অব্যবস্থাপনা তো একদিনে হয়নি। এজন্য মূলত দায়ী কারা?
ইজাজ হোসেন : আমি এখানে তিতাসের প্রকৌশলীদের দায়ী করব না। তারা অনেক প্রতিকূল অবস্থায় কাজ করে যাচ্ছেন। যারা ওপরের লেভেলে আছেন, যারা এসব জায়গায় অর্থায়ন করেন, কোথায় কী খরচ করতে হবে তা নির্ধারণ করেন তারাই মূলত এজন্য দায়ী। আসলে আমাদের দেশে একটা বাজে অভ্যাস হলো যতক্ষণ না একটা জিনিস নষ্ট না হবে তার আগে সেটার দিকে নজর দেওয়া হয় না। আবার এটি মেরামতের সময়ও সস্তায় কোনোমতে জোড়াতালি দিয়ে করা হয়। একটা জিনিস তৈরি বা স্থাপনের পর সেটা যে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে সেই ধারণাই আমাদের দেশে নেই। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে বাজেট দরকার যেটা যথাযথভাবে দেওয়া হয় না। এর কারণ হলো রাজনীতিবিদরা এসব পুরনো জিনিস সংস্কার করতে চায় না। তারা নতুন প্রকল্পে আগ্রহী বেশি। কেন আগ্রহী সেটা আমরা সবাই জানি। এখানে কী কী সুবিধা ভোগ করা যায় তা সবারই জানা। নতুন প্রকল্প করলে তো লোকজনকে দেখানো যায়। একজন নতুন এমপি হলেন, তিনি তো পুরনো কাজ রাখবেন না। বাংলাদেশে কেউই পুরনো স্থাপনা বা কাজ মেইনটেইন করার ব্যাপারে আগ্রহী নন। সবাই আগ্রহী নতুন প্রকল্পে। আসলে কোনো প্রকল্প শেষ হওয়ার পর, সেখান থেকে যে আয় হবে তা থেকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কিছু অর্থ নিয়মিত জমা রাখতে হয়। না হলে কিছুদিনের মাথায় তা অকেজো হয়ে যাবে।
দেশ রূপান্তর : ঢাকায় যদি বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়, তাহলে তিতাসের এই জরাজীর্ণ পাইপলাইন ঝুঁকির মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেবে। কারণ এই গ্যাস থেকে অগ্নিকান্ড ছড়িয়ে পুরো শহর অগ্নিকুন্ডে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা অনেকের। আপনি কী মনে করেন?
ইজাজ হোসেন : অবশ্যই ভূমিকম্পে বড় ঝুঁকি রয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে তারা তাদের গ্যাসের লাইন বন্ধ করতে পারবে না। হয়তো ঘটনা ঘটার এক ঘণ্টা পর করল। ততক্ষণে তো অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। তিতাস তো ওইদিন (২৪ এপ্রিল) নিজেরা উদ্যোগী হয়ে কিছু করেনি। লোকজন অভিযোগ করার পর ব্যবস্থা নিয়েছে। মানুষ সবসময় তো জানানোর সুযোগ নাও পেতে পারে। তাছাড়া ঢাকায় যে পরিমাণ নানারকম দুর্গন্ধ তাতে অনেক সময় গ্যাসের গন্ধও বোঝা মুশকিল। ওইদিন যদি লোকজন গ্যাসের গন্ধ বুঝতে না পারত এবং সেই গ্যাস যদি আবদ্ধ স্থানে জমা হতো তাহলে কিন্তু বড় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা ছিল। তিতাসের পাইপলাইন থেকে এখনো যে কোথাও গ্যাস জমা হচ্ছে না, তার কিন্তু কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ লিকেজ তো এখনো রয়েছে। ফলে আমরা বিশাল ‘এক্সপ্লোসিভের’ মধ্যে বসে আছি।
দেশ রূপান্তর : অভিযোগ রয়েছে ২৪ এপ্রিলের ঘটনায় তিতাসের একাধিক নম্বরে বারবার যোগাযোগ করেও তাদের সাড়া মেলেনি। পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পৌঁছানোর অনেক পরে ঘটনাস্থলে তিতাসের প্রতিনিধিরা উপস্থিত হন। আপনি বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
ইজাজ হোসেন : এটা অবশ্যই বড় ধরনের গাফিলতি। কোনো অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত তার ব্যবস্থা নিতে হবে। এমনকি কেউ যদি মিথ্যে বা ভুয়া অভিযোগও করেন তারপরও সেটা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব তিতাসের। এটা তাদের কাজের অঙ্গ। নিরাপত্তার ব্যাপারে অবহেলার কোনো সুযোগ নেই।
দেশ রূপান্তর : তিতাস প্রতি বছর মুনাফা করলেও গ্রাহক সেবা ও তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে খুবই উদাসীন। অনেকেই এমন অভিযোগ করেছেন। আপনি কী মনে করেন?
ইজাজ হোসেন : অনেক ক্ষেত্রেই তিতাসের উদাসীনতা রয়েছে। আসলে তারা গ্রাহকের কাছ থেকে যে মুনাফা পায় তা ব্যাংকে ফিক্স্ড ডিপোজিট করে। সেই টাকা দিয়ে নিজেদের বোনাস, পিকনিক, ক্লাব তৈরি এমন নানা কাজে ব্যয় করে। তারা কখনো চিন্তা করে না যে, এটা জনগণের কাছ থেকে লাভ করেছি। সুতরাং এই টাকা নিয়ে জনগণের সেবা দিতে হবে। তারা একটা প্রজেক্ট করার সময় সরকারের কাছে টাকা চায়। না পেলে বলে, টাকার অভাবে কাজ করা যাচ্ছে না। এটা এক ধরনের অন্যায়। তিতাস উন্নত সেবা দেওয়ার পর, কিছু টাকা নিজেদের প্রয়োজনে ব্যয় করতে পারে। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু গ্রাহকের সেবার মান উন্নয়ন কিংবা নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য কোনো ব্যয় করবে না এটা তো হয় না।
দেশ রূপান্তর : গ্যাসের অবৈধ সংযোগের কারণেও বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনা ঘটছে...
ইজাজ হোসেন : অবৈধ সংযোগ যারা নেয়, তারা অসতর্কতার সঙ্গে পাইপলাইন ফুটো করছে। এতে গ্যাস লিক হচ্ছে। প্রতি বছর ৮ থেকে ১০ শতাংশ গ্যাস অপচয় হচ্ছে, যেটাকে সিস্টেম লস বলা হচ্ছে। বাস্তবে এই লস ২ শতাংশের বেশি কোনোভাবেই হওয়া উচিত নয়। তার মানে, বাকি ৬ থেকে ৮ শতাংশ গ্যাস চুরি ও লিকেজ। এরমধ্যে লিকেজ ২ শতাংশ হলেও বাকিটা চুরি। এই গ্যাসের পরিমাণ এবং দাম কিন্তু অনেক। গ্যাসের চুরি ও অপচয় বন্ধ করা গেলে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে। যা দিয়ে পুরনো লাইনগুলো সংস্কার করে গ্রাহকের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায় খুব সহজেই। এই কাজটা ধাপে ধাপে করা হলেও গত ১০ বছরে সবগুলো লাইন সংস্কার করা যেত।
দেশ রূপান্তর : কী কারণে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বন্ধ হচ্ছে না?
ইজাজ হোসেন : রাজনৈতিক কারণেই গ্যাসের অবৈধ সংযোগ টিকে আছে। যেসব জায়গায় অবৈধ সংযোগ রয়েছে সেখানে অত্যন্ত ক্ষমতাধর লোকজন রয়েছেন। যাদের বিরুদ্ধে তিতাস ব্যবস্থা নিতে পারে না। প্রতিমন্ত্রী নিজেও বলেছেন। এর সঙ্গে তিতাসের কিছু অসাধু লোকজনও জড়িত। তারা সব সরকারের আমলেই ছিল, এখনো আছে। আমার মনে হয়, প্রধানমন্ত্রী ছাড়া এটা বন্ধ করা যাবে না। আমি এখানে তিতাসের প্রকৌশলীদের দায়ী করব না। তারা অনেক প্রতিকূল অবস্থায় কাজ করে যাচ্ছেন। যারা ওপরের লেভেলে আছেন, যারা এসব জায়গায় অর্থায়ন করেন, কোথায় কী খরচ করতে হবে তা নির্ধারণ করেন তারাই মূলত এজন্য দায়ী। আসলে আমাদের দেশে একটা বাজে অভ্যাস হলো যতক্ষণ না একটা জিনিস নষ্ট না হবে তার আগে সেটার দিকে নজর দেওয়া হয় না।
সৃষ্টির আদিকাল থেকেই দুর্বলের ওপর সবলের অধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলমান। হাজার হাজার বছর ধরেই চলে আসছে। অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ভালো এবং মন্দ দুধরনের শাসকগোষ্ঠীই দৃশ্যমান ছিল, মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক একসময় প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক বলেই পরিগণিত হতো, কখনো কখনো এই অধিকার দুর্বলের ওপর অত্যাচারে রূপ নিয়েছে, আর তখনই ধীরে ধীরে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে এবং এভাবেই দুর্বলের ভেতর, শ্রমিকদের ভেতর থেকে নেতৃত্বের জন্ম নিয়েছে। ইতিহাসের পাতায় তাদের অনেক সফলতা-ব্যর্থতার কাহিনি লিখিত হয়েছে।
একসময় ছিল সামন্তবাদ বা ফিউডাল ইকোনমি। মধ্যযুগজুড়ে ইউরোপের দেশে দেশে ছিল এটি। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি তখন চালিকাশক্তি। সামন্ত সমাজব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের শ্রেণি গোড়াপত্তন হয় কৃষক শ্রেণির ভেতরে আবার মুক্ত (fee -যারা জমির পূর্ণ সৎব্যবহার করতে পারত নিজেদের মতো করে) অর্ধ মুক্ত (semi fee-কৃষকদের কিছুটা স্বাধীনতা ছিল) এবং বদ্ধ unfree- এখানে কৃষকদের কোনো স্বাধীনতা ছিল না, পুরোপুরি লর্ড বা প্রভুর অধীনস্ত থেকে কাজ করতে হতো) শ্রেণিবিন্যাস দেখা যায়। এ ছাড়া যোদ্ধাদের একটি শ্রেণি যারা সামরিক বাহিনীতে যোগদানের বিনিময়ে জমির মালিক হতো। তখন থেকেই শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের ভিন্নতা দেখা যেত। রাষ্ট্রে ব্যবস্থা পরিচালনায় রাজতন্ত্রের ব্যাপকতা চোখে পড়ে! ধারণা এমন ছিল যে, রাজারা কখনো ভুল করতে পারে না। আর এর ফলেই কর্তৃত্ববাদের সৃষ্টি হয়, মালিক-শ্রমিক সম্পর্কে শোষণ একটি ভালো হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। জাপানেও এর ফিউডাল বা সামন্ত অর্থনীতির চলন দেখা গেছে।
ইউরোপ থেকে গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স, স্প্যানিশ, পর্তুগিজরা উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় এসে বসতি গড়ে কলোনি প্রথার উৎপত্তি ঘটায়। আমেরিকাতে ফিউডাল বা সামন্ত অর্থনীতি সফলতা লাভ করেনি এখানকার বৈরী আবহাওয়া একটা কারণ হতে পারে আবার এখানকার আদিবাসীদের স্বতন্ত্র জীবনব্যবস্থার প্রভাব থাকতে পারে।
বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটে পুঁজিবাদের বিকাশ ঘটতে দেখা যায়। মালিকরা তাদের লাভের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য শ্রমিকদের ন্যায্য ভাতা নিয়ে অতটা চিন্তাশীল ছিলেন না।
শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দানা বাঁধতে থাকে। ১৭৭৬ সালে আমেরিকা স্বাধীন হলেও পরের অনেক বছর গৃহযুদ্ধ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যদিও অনেক আইন হয়েছে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার্থে। কিন্তু আইন প্রণেতারা মালিক পক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হতে থাকে, মালিকদের স্বার্থ বেশি সংরক্ষিত হতে থাকে, যার ফলে আইন মালিকদের মুনাফার লোভ দমন করতে ব্যর্থ হয়। বিনিময়ে শ্রমিকদের ওপর শোষণ/নিপীড়ন/নির্যাতনের মাত্রা বর্ধিত আকারে চলতে থাকে।
ধীরে ধীরে শ্রমিক আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকে। ১৮৮৬ সালের ২৫ এপ্রিল থেকে ৪ মের মধ্যে আমেরিকার শিকাগো শহরে শ্রমিক আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে। এ সময়ের মধ্যে শিকাগো ইউনিয়নভুক্ত শ্রমিক, সমাজবাদী, সংস্কারবাদী এবং সাধারণ শ্রমিকরা একত্রিত হয়ে মিছিল-মিটিং করতে থাকে। তাদের মুখ্য দাবি ছিল, ‘প্রতিদিন আট ঘণ্টা’ কাজ করা। পহেলা মে, (মে ১, ১৮৮৬) শনিবার শিকাগোর ডাউনটাউনে প্রায় ৩৫ হাজার শ্রমিক তাদের কর্মস্থল থেকে বেরিয়ে আসে এবং তাদের দাবিতে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করে। মে মাসের ৩ ও ৪ তারিখে আরও হাজার হাজার দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিক যোগ দেয়। শ্রমিকরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামনে গিয়ে শ্রমিকদের বের করে এনে সমাবেশে যোগ দেওয়াতে থাকে। মে মাসের ৩ তারিখে এক ফ্যাক্টরিতে এই শ্রমিক ধর্মঘট ভয়ংকর আকার ধারণ করে। পুলিশের গুলিতে দুই শ্রমিক মারা যায়।
শ্রমিক-জনতার মে ৪ তারিখের দেস প্লেইন স্ট্রিটের সমাবেশে শিকাগো সিটির মেয়র কার্টার হ্যারিসন যোগ দেন। যদিও পুলিশকে এই সমাবেশে হস্তক্ষেপ করতে নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো এক বক্তার বক্তব্যে সব ভন্ডুল হয়ে যায়। পুলিশ যখন সমাবেশ ভঙ্গ করতে যায়, তখন সমাবেশ থেকে কেউ একজন বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়! পুলিশও নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকে। এতে ৮ জন পুলিশ অফিসার মারা যান। অনেক শ্রমিক নিহত হয়। মেয়র মিটিং-মিছিল নিষিদ্ধ করেন। তখন গণমাধ্যম শ্রমিকদের বিপক্ষে চলে যায়। আর পুলিশ পিকেটারদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে। একসময় আন্দোলন স্তিমিত হয়ে আসে।
এই ঘটনায় পুলিশ শত শত শ্রমিক-জনতাকে গ্রেপ্তার করে। বোম্ব কে ছুড়েছে তা বের করার চেষ্টা করে, কিন্তু ব্যর্থ হয়। পুলিশ মূলত অফিসার হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে থাকে। আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী আটজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়। বিচারে জুরিরা একমত হয়ে আটজনকেই দোষী সাব্যস্ত করেন এবং সাতজনকে মৃত্যুদন্ড দেন। অনেক আমেরিকান এতে ক্ষুব্ধ হয়। কিন্তু আপিল কোর্টেও মৃত্যুদ- বহাল থাকে। পরবর্তী সময় এই দন্ড কার্যকর করা হয়। আমেরিকার ইতিহাসে, এই বিচারের রায়কে সবচেয়ে অনৈতিক বিচারকার্য বলে গণ্য করা হয়।
প্রতিদিন আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে শিকাগো শহরের মুভমেন্ট দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে সমাজ সংস্কারক, ইউনিয়নিস্টরা পহেলা মে (May 1)কে মে দিবস হিসেবে পালন করতে থাকে। বিংশ শতাব্দীতে সোভিয়েত ইউনিয়নসহ অন্য কমিউনিস্ট দেশগুলো মে মাসের এক তারিখকে ‘মে দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেয় যা এখন উত্তর আমেরিকা ছাড়া সারা পৃথিবীতেই পালিত হচ্ছে।
আমেরিকান প্রশাসন কখনোই এটিকে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালন করেনি। এটাকে ‘কমিউনিস্ট হলিডে’ বলে থাকে। ১৯৫৫ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আইসেন হাওয়ার এই দিনটিকে ‘লয়ালটি’ দিবস হিসেবে উল্লেখ করেন। আমেরিকা, কানাডা প্রতি বছর সেপ্টেম্বরের প্রথম সোমবারকে ‘লেবার ডে’ হিসেবে পালন করে। সারা পৃথিবীর (উত্তর আমেরিকা ছাড়া) মানুষ এখন গণমানুষের অধিকার আদায়ের দিন বলেই মে দিবসকে গণ্য করে। জয় হোক মুক্তিকামী মানুষের, জয় হোক শ্রমিক অধিকারের।
লেখক : প্রকৌশলী, সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরি
হিন্দুত্ববাদী বিজেপির শাসনামলে ভারত কি হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত হতে চলেছে? বিজেপির বিদ্যমান শাসনামলে নানা ঘটনায় ও দৃষ্টান্ত তেমন মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে অহিন্দু সংখ্যালঘু হত্যা, নির্যাতন-নিপীড়নের অজস্র নৃশংস ঘটনাসহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামার ঘটনা ঘটেই চলেছে। হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায়, মুসলিম বসতি উচ্ছেদে মুসলিম শিশু ধর্ষণ ও হত্যার ন্যায় ঘৃণিত ঘটনাও ঘটিয়েছে দলটির উগ্রবাদী কর্মীরা। ভারতের নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, পক্ষপাতমুক্ত কিন্তু বলা যাবে না। আর্থিক এবং পেশিশক্তির প্রভাব প্রতিটি নির্বাচনে লক্ষ্য করা যায়। নির্বাচনী সহিংসতায় প্রাণ হারানোর ঘটনাও অহরহ ঘটে। ভারতে ক্ষমতার পালাবদল ঘটে আসছে নির্বাচনের মাধ্যমে। এটাই দেশটির গণতান্ত্রিকতার একমাত্র সনদ হতে পারে না। সাংবিধানিকভাবে ভারত এককেন্দ্রিক শাসনের অধীন। ভারত একজাতি ও এক সম্প্রদায়ের দেশ অতীতেও ছিল না। আজও নয়। অজস্র ভাষাভাষী ও অনেক সম্প্রদায়ের দেশ ভারতে জাতিগত আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার সাংবিধানিকভাবে খর্ব করা হয়েছে, সংবিধান প্রণয়নকালে। কংগ্রেস অখণ্ড ভারতের দাবি তুলেছিল, বৃহৎ ভারতের পুঁজিপতি গোষ্ঠীর সর্বভারতীয় জনগণের ওপর একচেটিয়া পুঁজির শাসন-শোষণ নিশ্চিত করার অভিপ্রায়ে। ভারতীয় পুঁজিপতিরাই কংগ্রেস এবং গান্ধীর প্রধান পৃষ্ঠপোষকরূপে অকাতরে অর্থের জোগান দিয়েছিল। পুঁজির শাসন ও শোষণের জাঁতাকলে ভারতীয় জনগণ খেসারত দিয়ে আসছে, ১৯৪৭-এর স্বাধীনতার পর থেকে এযাবৎ। ভারত স্বাধীন হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ কিন্তু স্বাধীন হতে পারেনি। মুক্তি তো অবিশ্বাস্য।
স্বাধীনতার বহু পরে ১৯৭৪ সালে ভারতের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি অন্তর্ভুক্ত করা হলেও বাস্তবে সেটা কাগুজে পরিণত। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিধান তবে উন্মুক্ত কেন? ধর্মনিরপেক্ষ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কংগ্রেস নেতৃত্বের স্বেচ্ছাচারী কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেই ধর্মভিত্তিক পৃথক রাষ্ট্রের দাবি তুলেছিলেন। তবে ভারত বিভাগের জন্য কেবল জিন্নাহ একা দায়ী ছিলেন না। হিন্দুরা এক পৃথক জাতি, এই কথা ১৯৪০-এর লাহোর প্রস্তাবের পূর্বে ১৯৩৮-৩৯ সালে হিন্দু মহাসভার অধিবেশনগুলোতে সাভারকার সভাপতিরূপে বারবার বলেছেন। গান্ধীও তখন ভারতবর্ষে হিন্দু ও মুসলমান পৃথক দুটি জধপবং (নরগোষ্ঠী) বলে উল্লেখ করেছেন। সর্দার প্যাটেলও দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন যে, হিন্দু ও মুসলমানরা দুই পৃথক জাতি, এমন কি গান্ধী ও কংগ্রেস-ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি ঘনশ্যাম দাস বিড়লা লাহোর প্রস্তাবের দুই বছরেরও আগে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগের প্রস্তাব করেছিলেন গান্ধী ও ভাইসরয় লিনলিথগোর কাছে। গান্ধী ‘হরিজন’ পত্রিকায় লিখে ও বলে বেড়িয়েছেন, মুসলমানরা ভারতবর্ষকে ভাগ করতে চাইলে তিনি বাধা দেবেন না। অর্থাৎ হিন্দুত্ববাদী দক্ষিণপন্থিরা তো বটেই, কংগ্রেস দলের ভূমিকায় ভারত ভাগের প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হয়েছিল এবং জিন্নাহকে ওই পথে অগ্রসর হয়ে তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবে পরিণত করেছিলেন।
ভারতের স্বাধীনতার প্রশ্নে প্রস্তাব নিয়ে ভারতে আসেন ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার সদস্য স্যার স্টাফোর্ড ক্রিপস্ ১৯৪২ সালের ১২ মার্চ। ক্রিপসের ওই প্রস্তাবে, ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় বিধানকে স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেক রাজ্যের স্বতন্ত্র শাসনব্যবস্থার অধিকারের কথাও উল্লেখ ছিল। এমন কি কমনওয়েলথ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার অধিকারের কথাও ছিল ওই প্রস্তাবে। ক্রিপস্ কমিশনের প্রস্তাব, মুসলিম লীগ এবং কংগ্রেস কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হন। ভাষাভিত্তিক জাতিসত্তাগুলোর আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে কংগ্রেস বিচ্ছিন্নতার অধিকার হিসেবে অভিহিত করে। মূলত কংগ্রেসের এককেন্দ্রিক ভারত-শাসনের অভিপ্রায় ক্ষুন্ন হওয়ার আশঙ্কায় কংগ্রেস ক্রিপস কমিশনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল। জিন্নাহরও অভিন্ন বাসনা ছিল ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানের কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা। ধর্মের বিভাজনে ভারত বিভক্তি ছিল নজিরবিহীন ঘটনা। বিশ্বে এ ধরনের দ্বিতীয় ঘটনা কিন্তু আর একটিও ঘটেনি।
নির্বাচনে বিজয়ী সরকার মাত্রই গণতান্ত্রিক নয়। বিশ্ব ইতিহাসের নিন্দিত হিটলার, মুসোলিনিও কিন্তু জনরায় নিয়ে ক্ষমতাসীন হয়েছিলেন। দীর্ঘ মেয়াদে নিরবচ্ছিন্ন ক্ষমতায় থাকাই শাসকদের ফ্যাসিবাদী করে তোলে। প্রতিটি দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকা সরকারগুলোর মধ্যে তাই ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয় না। ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে রাজ্যে-রাজ্যে ক্ষমতাপ্রাপ্তিতে দলটি দেশের ধর্মনিরপেক্ষ তকমা মুছে দেওয়ার নানা অপকীর্তি সংঘটনে মেতে উঠেছে। বামদুর্গ খ্যাত ত্রিপুরায় বিজেপি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দখলে নিয়েছে। একই প্রক্রিয়ায় আসামসহ বিভিন্ন রাজ্যে। পশ্চিম বাংলায় ৩৪ বছর বামফ্রন্টের শাসনাধীন থাকলেও বামফ্রন্টের পতন ঘটে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় নানা স্বেচ্ছাচারিতায়। বামফ্রন্টের সুযোগ-সুবিধাভোগীরা পরবর্তী সময় ওই সুবিধার লোভে দলে দলে এখন ক্ষমতাসীন তৃণমূলে, এমনকি বিজেপিতেও শামিল হয়েছে। সুবিধাভোগীরা ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে মিশে যাওয়ার প্রবণতা ক্রমাগত বৃদ্ধি ঘটেছে যেমন ভারতে, তেমনি বাংলাদেশেও।
তৃণমূলের প্রতিপক্ষ ছিল বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস। গত দুটি বিধানসভার নির্বাচনে সেটা দেখা গেছে। বিজেপির ভারতজুড়ে বিজয়ের চাকা অগ্রসরমাণ অথচ পশ্চিম বাংলায় তাদের ছিল দুরবস্থা। বিজেপির রথের চাকা পশ্চিম বাংলায় প্রায় অচলই ছিল। বিজেপির অবস্থার বদল ঘটতে কিন্তু বিলম্ব হয়নি। পশ্চিম বাংলার নির্বাচনে শূন্য অবস্থান থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে বিজেপি। অচিরেই যদি পশ্চিম বাংলা ত্রিপুরার ভাগ্যবরণ করে তাহলে অবাক-বিস্ময়ের কারণ হবে না। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারের চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে ভারতের গণতন্ত্র ও সংবিধানকে।
বামফ্রন্টের পতনে তৃণমূলের উত্থান আমাদের চমকে দিয়েছিল। ভবিষ্যতে হিন্দুত্ববাদী বিজেপির পশ্চিম বাংলার ক্ষমতা গ্রহণে আমরা কিন্তু বিস্মিত হবো না। কলকাতায় মার্কসবাদী একজন রাজনীতিকের সঙ্গে আমার দীর্ঘ আলাপ হয়েছিল। তিনি বললেন, ‘দেখুন, আমরা দেশভাগের পর পূর্ববাংলার প্রত্যাগতরা প্রায় সবাই এ দেশে এসে বামপন্থায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে যুক্ত হয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের পরের প্রজন্ম এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পর হতে এযাবৎ যারা এসেছে, তারা সবাই আচানক বিজেপির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত হয়ে গেছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটাই বাস্তবতা। আসামে এবং ত্রিপুরায়ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী পূর্ববঙ্গীয়রা বিজেপির ভোটব্যাংক হয়ে পড়েছে। পশ্চিম বাংলার ভবিষ্যৎ যে কোথায় গিয়ে ঠেকবে, বলা মুশকিল।’ তার বক্তব্যের প্রমাণ তো পশ্চিম বাংলার গত বিধানসভার নির্বাচনের ফলাফল।
ভারতের সংবিধান প্রণয়নের সময়ে প্রতিটি রাজ্যের রাজ্যপালকে জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল, ওই প্রস্তাব কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেন নেহরু। নেহরু ওই প্রস্তাবের বিপরীতে ক্ষমতাসীন কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক রাজ্যপালের নিয়োগকে সংবিধানভুক্ত করেন। স্বাধীন ভারতে কংগ্রেস এবং নেহরুর অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাবের কারণে প্রস্তাবকরা নিশ্চুপ হয়ে যান। নেহরু, সর্দার প্যাটেলের প্রস্তাবই সংবিধানে সর্বাধিক অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল, দলের ও ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তায় এবং নানা কূটকৌশল অবলম্বনে। কেন্দ্রীভূত শাসনের জালে আবদ্ধ ভারতের রাজ্যগুলোর শাসনতান্ত্রিক ক্ষমতা কেন্দ্র কর্তৃক কুক্ষিগত। কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত রাজ্যপাল ক্ষমতাসীন সরকারের অনুগত-তল্পিবাহক। পশ্চিম বাংলার প্রাক্তন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথাগত রায় বিজেপির কেন্দ্রীয় ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই ত্রিপুরার রাজ্যপাল পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। রাজ্যপালের পদ সাংবিধানিক এবং রাজ্যের নির্বাচিত সরকারকে তাৎক্ষণিক বরখাস্ত করার এখতিয়ারও রাজ্যপালকে দেশটির সংবিধান দিয়েছে। রাজ্যপালদের অসীম ক্ষমতা প্রদানের মাশুল এখন স্বয়ং কংগ্রেস দলকেই দিতে হচ্ছে। আশার কথা, ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের আদেশে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পা সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ব্যর্থ হবেন বিবেচনায় শপথের ৭২ ঘণ্টার মাথায় স্বেচ্ছায় পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন। পরে কংগ্রেস এবং জেডিএস জোট রাজ্যে সরকার গঠন করে। কংগ্রেস-জেডিএস জোটের অধিক আসন সংখ্যার পরও রাজ্যপাল কোন যুক্তিতে বিজেপিকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণসহ ইয়েদুরাপ্পাকে মুখ্যমন্ত্রীর শপথ করিয়েছিলেন? ওদিকে বিজেপি কংগ্রেস ও জেডিএসের বিধায়কদের অর্থের বিনিময়ে দলে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। দল ভাঙতে বিজেপি অর্থের ভাণ্ডার উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। কিন্তু এতে কাজ হয়নি। নেহরু উদ্দেশ্যমূলক রাজ্যপালের নিয়োগের এখতিয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনের বিধি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। সেই অগণতান্ত্রিক বিধির শিকার এখন খোদ কংগ্রেস দল। তাদেরই বলির পাঁঠায় পরিণত করেছে। আমাদের উপমহাদেশের তিন খণ্ডে বিভক্ত রাষ্ট্রগুলোর ক্ষমতায় থাকা সরকাররা ক্ষমতায় থাকাকালীন নিজেদের দেশের শেষ সরকার বিবেচনা করে। এটা যে চরম আত্মঘাতী সেটা অতীত এবং বর্তমানের ইতিহাসের নানা দৃষ্টান্ত এবং অভিজ্ঞতায় বারবার প্রমাণিত হয়েছে।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক নতুন দিগন্ত
সাত বছর পর ভারতের মাটিতে অবতরণ পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে তারা গিয়েছিল সেখানে। তারপর এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে। টুর্নামেন্ট শুরুর এক সপ্তাহ আগে তারা পৌঁছালেন দেশটিতে। সেখানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হোটেলে।
বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বাবর আজমরা সেখানে পৌঁছানো মাত্রই উচ্ছ্বসিত জনতা ভিড় করেন। হায়দ্রবাদের বিমানবন্দরের বাইরে তাদের দেখে অনেকেই চিৎকার করে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন। বাবরের নাম উচ্চারণ করতও শোনা গেছে এসময়। পুলিশ উৎসুক জনতাকে আটকে রেখেছিল।
রাজনৈতিক বৈরি সম্পর্কের কারণে দুই দলের দেখা হয় না দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজে। বিশ্ব মাতানো ক্রিকেটার থাকলেও পাকিস্তানিরা খেলতে পারে না আইপিএলে। কারণ ঐ একটাই। তবে বৈশ্বিক বা মহাদেশীয় ইভেন্টে তাদের ঘিরে আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। সেটা দেখা গেছে এশিয়া কাপেও।
বিশ্বকাপ খেলতে আজ বাংলাদেশ উড়াল দিয়েছে ভারতে। সেই টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখে টাইগাররা। তামিম ইকবাল নেতৃত্ব ছাড়ার পর সাকিব আল হাসানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে অধিনায়কত্বের ভার। আর আজই জানা গেল, বিশ্বকাপের পর একদিনও তিনি অধিনায়কত্ব করবেন না।
গত ১১ আগস্ট তৃতীয় দফায় ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান। তখনই বলা হয়েছিল, সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপ ও ভারত বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
দেশের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এই বিশ্বকাপই শেষ। এরপর একদিনও (অধিনায়কত্ব) করবো না। যে কারণে আমি এশিয়া কাপের আগে নিতে চাইনি। এরপরও এটা না। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি হাসতে চাই, খেলতে চাই, পারফর্ম করতে চাই। এই একটা কারণে আমি করতে চাইনি।’
সাকিব যোগ করেন, ‘আর কোনে কারণ নেই। বেস্ট হয় যদি অধিনায়ক না থাকি। অধিনায়কত্ব কি আমার কোনো ভেল্যু এড করতেছে ক্যারিয়ারে এই স্টেজে এসে? আমি তো মনে করি না।’
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
বিশ্বকাপে তামিম ইকবালকে ওপেন থেকে সরিয়ে মিডল অর্ডারে ব্যাট করার প্রস্তাব দিয়ে ফোন করেছিলেন, তামিমের ভাষায় 'বোর্ডের টপ লেভেল' এবং 'ক্রিকেটের সাথে বেশ ইনভলভড' একজন।
তিনি তামিমকে বলেন, ''তুমি তো বিশ্বকাপে যাবা, তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলতে হবে। তুমি এক কাজ করো। তুমি প্রথম ম্যাচ খেলো না আফগানিস্তানের সঙ্গে।'
তিনি আবার বলেন, আচ্ছা তুমি যদি খেলোও, আমরা এমন একটা পরিকল্পনা করছি, তুমি যদি খেলোও, তাহলে নিচে ব্যাট করবে।''
তামিমের এমন বক্তব্যের পর প্রশ্ন উঠেছে, কেই সেই বোর্ড কর্মকর্তা? এক টিভি সাক্ষাৎকারে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'আমি এটা জানিনা।'
পরক্ষণেই তিনি বলেন, 'তবে যদি কেউ বলে থাকে, আমি সিউর তিনি অথোরাইজড পার্সন। আর এরকম কিছু বলে থাকলে আমি খারাপ কিছু বলেছে বলে আমি মনে করিনা। টিমের কথা চিন্তা করেই বলেছে। টিম কম্বিনেশন নিয়ে কথা বলে থাকলে দোষের কি আছে। আমার তো মনে হয় না দোষের কিছু আছে। নাকি এরকম কোনো প্রস্তাব দেয়া যাবে না। নাকি আপনি যা চাইবেন তাই করতে পারবেন?।'
বিশ্বমঞ্চে দেশের ক্রিকেটের দূত বলা যায় সাকিব আল হাসানকে। বর্ণিল এক ক্যারিয়ার গড়েছেন তিনি। তিন ফরম্যাটেই তিনি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। দেশের এই তারকা ক্রিকেটার নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপে যাচ্ছেন দলের অধিনায়ক হিসেবে। সেই টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই জানা গেল কবে তিনি অবসর নিচ্ছেন।
দেশের একটি ক্রীড়াভিত্তিক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের অবসরের সময় জানিয়েছেন। তার ইচ্ছে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর অবসর ঘোষণা করার। একইসঙ্গে তিন ফরম্যাটকে বিদায় জানাতে চান দেশের ক্রিকেটের এই তারা।
নেতৃত্ব ছাড়া ও অবসরের প্রসঙ্গ টেনে সাকিব বলেন, ‘আজকে এখন এই অবস্থায় বলছি, ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত ওয়ানডে খেলবো। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে টি-টোয়েন্টিকে বিদায় দেবো। টেস্টের অবসর শিগগিরই। তবে একেক ফরমেট একেক সময় ছাড়লেও আনুষ্ঠানিক অবসর ঘোষণা করবো ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর।’
অধিনায়কত্ব নিয়ে সাকিব বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপের আগে একাধিক সিরিজে বিশ্রামের কথা বলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে দলের বাইরে রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত এশিয়া কাপেও দলে ফেরানো হয়নি তাকে। যেহেতু সাকিবের নেতৃত্বে সেই আসরে খেলেছে বাংলাদেশ, তাই অনেকের ধারণা সাকিবের চাওয়াতেই দলের বাইরে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ।
তবে সাকিব এসব কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়ক ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দল পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলারও ছিল না! কারন পরের দিন সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকি রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা!'
দলের ভেতরের কথা ভালোভাবে না জেনেই মানুষ যেভাবে সমালোচনা করে সেটাকে হাস্যকর বলেছেন সাকিব। বাংলাদেশ অধিনায়ক সমালোচকদের মানসিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, 'মানুষের সাইলকোলজি এমন কেন! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!'
অধিনায়ক একা যে দল নির্বাচন করেন না সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন সাকিব। তিনি বলেন, 'রিয়াদ ভাইয়ের যে ডেডিকেশন ছিল তার দলের প্রতি যে অবদান ছিল। দলের হয়ে খেলার যে ইচ্ছে ছিল, সবকিছু সবাই দেখতে পেরেছে। আমার দায়িত্বতো পুরো দলটা নির্বাচন করার না। এমনটা হলে এশিয়া কাপের একদিন পরেই এনাউন্স করে দল দিয়ে দিতে পারতাম। এটা অনেক প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। অনেক বিষয় চিন্তা করতে হয়। অনেক কিছু চিন্তা করে দলটা গড়তে হয়।'
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।