
বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার বেড়েছে, বেড়েছে প্রাতিষ্ঠানিক সার্টিফিকেটধারীদের সংখ্যা। কিন্তু বাড়েনি প্রকৃত শিক্ষিতের হার। তৈরি হয়নি খুব একটা বেশি ‘শিক্ষিত’ আর ‘আলোকিত’ মানুষ। উপনিবেশিক শাসনামল থেকে বেরিয়ে এসে স্বাধীনতা লাভ করলেও, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ নিজের অজান্তেই তাদের প্রবৃত্তির মধ্যে ধারণ করে শাসন ও শাসকের মানসিকতা। শত বছরের শাসন থেকে স্বাধীন হলেও, মনের দিক থেকে এ জাতি আজও মুক্ত হতে পারেনি। তাই, এ দেশে লেখাপড়া করা হয় মূলত চাকুরে হওয়ার জন্য। বহুদিন ধরে নিষ্পেষিত হওয়া এ জাতি যেন সর্বদা এক প্রতিশোধের আগুনে জ¦লে। চাকরি, ব্যবসা বা অন্য কোনোভাবে ক্ষমতার সামান্য স্বাদ পেলেই হয়ে উঠে প্রতিশোধপরায়ণ। এ দেশের মানুষের এমন মনস্তত্ত্বের জন্য উপনিবেশিক ইতিহাস, বর্তমানের ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা আর অসুস্থ রাজনীতি দায়ী।
এ দেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে উঠে আসা শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ আজও শুধুই সরকারি চাকুরে হতে চায়। যদিও ধনী শ্রেণির সন্তানরা ভিনদেশি পাঠ্যক্রমে শিক্ষিত হয়ে সরকারি চাকরির প্রতি কোনো আকর্ষণ বোধ করে না। অল্প বয়সেই ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা, তাদের অনেক কিছু দিতে না পারলেও অস্বাভাবিক উচ্চারণে ভাব প্রকাশ আর খানিকটা অহংকারী করে তোলে। এরা দেশের বেশির ভাগ মানুষকে আনকালচারড ভাবে। তাই অল্প বয়সেই এরা ইউরোপ আর আমেরিকায় পাড়ি জমাতে চায়, নিজেদের কৌলীন্য ধরে রাখতে। দেশপ্রেম তো দূরে থাক, এরা ঠিকমতো এদের পরিবার বা আত্মীয়স্বজনের সঙ্গেই তেমন যোগাযোগ না রেখে, এক ধরনের বিজাতীয় স্বার্থপর মানুষ হয়ে উঠতে চায়।
অন্যদিকে এ দেশের মধ্যবিত্ত বা দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে বেশির ভাগই সরকারি চাকুরে হতে চায়। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী নয় বরং হতে চায় ‘কর্মকর্তা’। একবার সরকারি ‘কর্মকর্তা’ হয়ে এরা দেখাতে চায়, সবকিছু তাদের পদতলে। ক্ষমতা, অবস্থান, অর্থ সব যেন সরকারি চাকরির মধ্যে নিহিত। এই চাকরিই যেন তাকে জাতে ওঠায়। অন্যকে নিচু সারির বা ক্ষমতাহীন মানুষ হিসেবে ভাবতে শেখায়। রাষ্ট্রের অসীম ক্ষমতার ম্যাপে মিশে যাওয়ার জন্য তথাকথিত ‘কর্মকর্তা’ হওয়ার যেন কোনো বিকল্প নেই। এ যেন হাজার বছরের নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার এক মোক্ষম অস্ত্র। তাই তো, মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, আইন পড়েও অনেকেই স্বাধীনভাবে তাদের পেশায় না নেমে সরকারি চাকুরে হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। এসব চাকরির পরীক্ষায় টিকতে না পারলে, এদের কণ্ঠ থেকে ঝরে পড়ে রাজ্যের হতাশা, বিষাদ আর ব্যর্থতা। অথচ কোনোভাবে এসব ক্ষমতা চর্চার সরকারি চাকরিতে ঢুকতে পারলে, এরা জনগণের সেবক না হয়ে, ‘স্যার’ ডাক শোনার জন্য ব্যাকুল থাকে। এ দেশে ‘স্যার’ বলতে শুধু ‘জনাব’ বোঝায় না। ‘স্যার’ সম্বোধন এ দেশে খানিকটা ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কিত। শিক্ষক ব্যতীত ‘স্যার’ ডাকা হয় ক্ষমতাবান ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের, আর ডাকে তারা যারা থাকে অধস্তন বা ক্ষমতাহীন অথবা ক্ষমতার স্কেলে নিচের দিকে। অনেক আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া ব্যক্তি এ দেশে পয়সা দিয়ে লোক পোষে, শুধু ‘স্যার’ আর ‘সাহেব’ ডাক শোনার জন্য।
প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের ‘স্যার’ ডাকতে হয়, এই উপনিবেশিক চর্চা এ দেশে আজ শুধু একটা প্রথা নয়, এটা একটা বিনিময় প্রথাও বটে। তাদের ‘স্যার’ ডাকলে সেবা পেতে সুবিধা হয়; বুক টান টান করে, কলমের খোঁচায় তখন আপনার কাজটা করে দেবে কোনো সরকারি চাকুরে। সেই কাজ করে দেওয়ার মধ্যে যত না থাকে দায়িত্ববোধ, তার থেকে বেশি থাকে ক্ষমতার চর্চা। নিজ দপ্তরের অধস্তন কর্মচারী আর কিছু ধান্ধাবাজ কপট মানুষদের কাছ থেকে ‘স্যার’ ডাক আর তোষামোদি বাক্য শুনতে শুনতে তারা এমন আচরণের ব্যত্যয় দেখলেই বেসামাল হয়ে পড়ে। যেন নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। যদিও স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান তাদের প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আর জনগণকে করেছে রাষ্ট্রের যাবতীয় ক্ষমতার উৎস। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখি, এর সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। স্বাধীন বাংলার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার কালজয়ী বিভিন্ন ভাষণে সরকারি চাকুরেদের সতর্ক করেছিলেন, কীভাবে বাংলার মেহনতি মানুষের সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। যাদের করের পয়সায় সরকারি কর্মচারীদের বেতন হয়, সে সব মানুষদের সম্মান দেওয়ার কথা বঙ্গবন্ধু একাধিকবার তার ভাষণে উল্লেখ করেছেন।
দেশের সেরা শিক্ষার্থীরা মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় আসেন। চাইলে, তারাও একটা ক্ষমতাকেন্দ্রিক নির্বাহী চাকরি বা কোনো করপোরেট জব জুটিয়ে নিতে পারতেন। কিন্তু সেদিকে না গিয়ে তারা শিক্ষকতায় আসেন স্বাধীনভাবে পাঠদান আর গবেষণা করবেন বলে। আসেন এক চূড়ান্ত সম্মানের জীবন বেছে নিতে। বঙ্গবন্ধু তার জীবদ্দশায় পাবলিক ইউনিভার্সিটি অধ্যাদেশ-১৯৭৩ করে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মর্যাদা চূড়ান্ত করেছিলেন। চারটি বড় বিশ্ববিদ্যালয়কে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দিয়ে শিক্ষকদের মুক্ত করেছিলেন আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আর পরাধীনতা থেকে। যদিও পরবর্তীকালের বিভিন্ন সরকার নিজস্ব সিদ্ধান্তে অপ্রয়োজনীয় সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছে। এর ফলে মানহীন শিক্ষক যেমন রাজনৈতিক কোটায় নিয়োগ পেয়েছেন, তেমনি বিভিন্ন কারণে তাদের সম্মানের স্খলনও হয়েছে। স্বীকার করতে কোনো দ্বিধা নেই যে, আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো অনেক শিক্ষকেরই নেই পর্যাপ্ত উচ্চশিক্ষা, ব্যক্তিত্ব, গাম্ভীর্য ও স্বীকৃতি। এমন অবস্থার জন্য ঘুণে ধরা বৈষম্যের রাজনীতিই দায়ী।
সম্প্রতি আরেকটি ঘটনা জানা গেল। একজন জেলা প্রশাসক এক স্কুলের শিক্ষকের জাতীয় সংগীতের পরীক্ষা নিচ্ছেন। সুরে না গেয়ে, তাকে বলা হচ্ছে আবৃত্তি আকারে বলতে। এভাবে তাকে অকৃতকার্য করে, তার বেতন বন্ধ করা হয়। ক্ষমতার কি চূড়ান্ত প্রদর্শনী! বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকদের শায়েস্তা করার কত ফন্দিফিকির। কলমের খোঁচায় কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই শাস্তি! এ দেশে এক দল লোক যেন স্বাধীনতা, জাতীয় সংগীত, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি, এগুলোর একছত্র জিম্মাদার হয়ে পড়েছে। ক্ষমতার সঙ্গে থাকতে পারলেই যেন সব কিছু করে পার পাওয়া সম্ভব। শিক্ষকদের মর্যাদা লুণ্ঠনের এক নির্মম প্রতিযোগিতা সর্বত্র।
পাশ্চাত্যেই শুধু নয়, শিক্ষকদের সর্বোচ্চ মর্যাদা ও কদরের প্রকৃষ্ট উদহারণ দেখা যায় প্রাচ্যেও। হংকং, সিঙ্গাপুর, জাপান, কোরিয়া, মালয়েশিয়া, এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও শিক্ষক, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যথেষ্ট মূল্যায়ন করা হয় অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবেও। কিন্তু আমাদের সমাজ চলছে এক উল্টোপথে। মনে রাখা দরকার, এই পৃথিবীর বিনির্মাণ যাদের হাতে হয়েছে তারা সবাই ছিলেন শিক্ষক অথবা গুরু বা পণ্ডিত।
যে রাষ্ট্র শিক্ষককে মূল্যায়ন করতে পারেনি, পারেনি শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে, সে রাষ্ট্রে টেকসই বা মজবুত উন্নয়ন অথবা মানবিক উন্নয়ন কোনো দিনই সম্ভব নয়। তাই, শিক্ষার মান নিশ্চিত করে, শিক্ষকদের মর্যাদা সমুন্নত করার কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষক নিয়োগে একই সঙ্গে দরকার শুধু মেধা আর দক্ষতার বিবেচনা। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে এই মহান পেশাকে বাঁচাতেই হবে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন ২০১০’-সহ রাষ্ট্রীয় বহু প্রকল্প ও প্রতিষ্ঠান ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ শব্দটি ব্যবহার করে। আর ‘আদিবাসী’ শব্দটি দেশে ১৯৪০ সাল থেকে জনপরিসরে ব্যবহারের প্রমাণ আছে। সর্বশেষ ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ অনুযায়ী দেশে আদিবাসী জনসংখ্যা দেখানো হয়েছে ১৬,৫০,১৫৯ জন এবং জাতিসত্তা ৫০। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট পরিচালিত ২০১৮ সালে শেষ হওয়া ভাষাগত জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে আদিবাসীদের ৪০টি মাতৃভাষা আছে। এর ভেতর কন্দ, খাড়িয়া, কোডা, সৌরা, মু-ারি, কোল, মালতো, খুমি, পাংখোয়া, রেংমিটচা, চাক, খিয়াং, লুসাই ও লালেং এই ১৪টি আদিবাসী মাতৃভাষা বিপন্ন। সাংবিধানিক স্বীকৃতি, প্রথাগত ভূমি অধিকার, সমতলের জন্য ভূমি কমিশন, মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির অধিকার আদিবাসী জনগণের দীর্ঘসময়ের দাবি। আদিবাসী জনতার দাবি ও লড়াইয়ের সঙ্গে যে বিরল কিছু বাঙালি রাজনীতিক জোরালোভাবে একাত্ম ছিলেন, পংকজ ভট্টাচার্য হলেন অগ্রগণ্যদের একজন। ছুটে গেছেন অগ্নিদগ্ধ রক্তাক্ত পাহাড় গ্রাম জঙ্গলে, দাঁড়িয়েছিলেন রাজপথে নির্ভয়ে।
পংকজদার সঙ্গে বহু জায়গায় যাওয়ার কিংবা দাঁড়াবার গর্বিত স্মৃতি আছে। মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের বহু জনসংগ্রামের সাক্ষী ও সারথি সৃজনশীল মানবিক এই রাজনীতিকের মৃত্যুতে অনেকেই বলেছেন, কেমন খালি খালি শূন্য শূন্য লাগে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় ঠিক শূন্যতা নয়; পংকজদার মহাপ্রয়াণ আদিবাসী আন্দোলনের ভিত অনেকটাই আলগা করে দিল। দুই পাহাড়ের মাঝখানের সাঁকো থেকে একটা মজবুত কাঠের পাটাতন সরে গেলে যা হয়। আলগা হওয়া আদিবাসী আন্দোলনের সাঁকোর ফোঁকর এখন আমাদেরই জোড়া লাগাতে হবে। বাঙালি হিসেবে কজন রাজনীতিক আজ এই সেতুটি মজবুত করতে সাহসী হবেন? পংকজদা আদিবাসী বিষয়ে বহু তর্ক তুলেছিলেন। বারবার রাষ্ট্র কী অধিপতি ব্যবস্থাকে প্রশ্ন করেছিলেন। কিন্তু সেসব তর্কের সুরাহা হয়নি। অমীমাংসিত রয়ে গেছে আদিবাসী দাবিনামা। প্রতিটি সফরে প্রতিটি জনপদে জনতা, প্রশাসন কী গণমাধ্যমের সামনে সেসব এলাকার আদিবাসী জীবনের নিদারুণ সব বিবরণ পংকজদা নথি ও প্রমাণসমেত তুলে ধরেছিলেন এবং ন্যায়বিচার দাবি করেছিলেন। পংকজ ভট্টাচার্য স্পষ্টভাবে আদিবাসী বিষয়ে প্রবল জাতিরাষ্ট্রের কাছে বারবার রাজনৈতিক জিজ্ঞাসা তুলে ধরেছেন। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার আত্মপরিচয়ের বিতর্ক এবং রাজনৈতিক প্রশ্নগুলো নানাভাবে আলোচনায় এনেছেন। পংকজদার সঙ্গে দেশের তিন এলাকার আদিবাসী জনপদে সফরের অভিজ্ঞতা থেকে চলতি আলাপখানি তার আদিবাসী-জিজ্ঞাসাকে বোঝার চেষ্টা করছি।
২০০৭-এর ৯ আগস্ট। ঢাকা থেকে পংকজদাসহ আমরা গাজীপুরের শ্রীপুরে যাই। আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানের পর শ্রীপুর এবং কালিয়াকৈর কোচ ও বর্মণদের গ্রাম ঘুরে দেখি। মৌচাকের কাছে একটি এলাকার নাম- চা-বাগান। কিন্তু কোনো চা-বাগান নেই। সেখানে কিছু মু-া জনগোষ্ঠীর লোক পাই। যারা তাদের নাম ও জাতিগত সংস্কৃতি হারিয়েছে। তারা জানায়, এখানে একসময় চা-বাগান তৈরির কথা বলে মু-াদের আনা হয়। পরে চা-বাগান হয়নি আর তাদেরও ফেরত পাঠায়নি কেউ। কোচ-বর্মণরা অভিযোগ করে সহস্র বছরের প্রথাগত শালবনের চালাজমি থেকে তাদের প্রতিনিয়ত উচ্ছেদ করা হচ্ছে। কারখানা, বিনোদনকেন্দ্র, রিসোর্ট, পোলট্রিফার্ম, পার্ক নানাভাবে শালবন দখল হচ্ছে। লোহাগাছ এলাকার বহু কোচ নারী তাদের স্বামীদের নামে মিথ্যা বন ও মদ রাখার মামলা থেকে রেহাই পাওয়ার কথা পংকজদার সামনে চিৎকার করে বলেছিলেন। পংকজদা তাদের সাহস দিয়েছিলেন। পরে সেই নারীরাই গ্রাম থেকে হেঁটে আদালতে গিয়ে মামলা চালিয়েছিলেন, দাদা পেছন থেকে সহযোগিতা করেছেন।
গাজীপুরে কোচেরা একবার হারিয়ে যাওয়া নবান্ন উৎসব ‘গেদেলচাওয়া’ আয়োজন করেছিলেন। প্রবীণ কোচ নারীরা শালবন থেকে বনআলু তোলার কিছু গান গেয়েছিলেন। পংকজদা এসব লোকজীবনের স্মৃতি এবং লোকায়ত সংস্কৃতি সুরক্ষার কথা বলতেন সব সময়। রাথুরা শালবন অধিগ্রহণ করে বর্মণ-কোচদের আদি ভূমি দখল করে যখন শালবনের ভেতর কৃত্রিম চিড়িয়াখানা ও সাফারি পার্ক গড়ে তোলা হয়, শালবন বাঁচানোর সেই আন্দোলনে পংকজদা সবসময় সক্রিয় ছিলেন। সেই আন্দোলনের সময় একরাত আমরা গোবিন্দ বর্মণদের বাড়িতে পংকজদাসহ ছিলাম। আগুনের চারপাশ ঘিরে রাতভর ভাওয়ালগড়ের যন্ত্রণা ও দুর্দশার কথা শুনেছিলাম। এসব আহাজারি শোনার মতো আকাক্সক্ষা ও অঙ্গীকার পংকজদার মতো কজন বাঙালি রাজনীতিবিদের এ সময়ে আছে জানি না।
দেশের উপকূলীয় অঞ্চল রাখাইন জীবনের প্রশ্নহীন বঞ্চনা ও ভূমি সংকটের ধরনগুলো বুঝতে ঢাকা থেকে ১৩ সদস্যের এক নাগরিক প্রতিনিধি দল ১৭ থেকে ১৯ মার্চ ২০১৭ তারিখে বরিশাল বিভাগের বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলা এবং পটুয়াখালীর রাখাইন জনপদ সরেজমিন পরিদর্শন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক মঙ্গল কুমার চাকমা, আইইডির নির্বাহী পরিচালক নুমান আহমেদ খান, দৈনিক সমকালের প্রতিবেদক রাজীর নূর, প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য বিষয়ক গবেষক ও লেখক পাভেল পার্থ, দৈনিক ভোরের কাগজের প্রতিবেদক তানভীর আহমেদ, নিউএজের প্রতিবেদক ইমরান হোসেন ইমন, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির সহসভাপতি সোনা রানী চাকমা, মানবাধিকার কর্মী রওশন মাসুদা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা, ফিল্ম মেকার লতা আহমেদের সঙ্গে আমিও ছিলাম সেই দলে। পংকজদা সেই সফরের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পরিদর্শনকালে রাখাইনরা জানান, বর্তমানে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় ২৮টি এবং গলাচিপা উপজেলায় ৪টি রাখাইন গ্রাম আছে। বরগুনা জেলার তালতলী ও সদরে ১৩টি রাখাইন গ্রাম আছে। বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলে রাখাইনদের জনমিতির সূত্রমতে মাত্র দুইশ বছরে প্রায় ৮১ ভাগ রাখাইন গ্রাম বেদখল হয়ে রাখাইনশূন্য হয়েছে এবং রাখাইন জনসংখ্যা কমেছে প্রায় ৯৫ ভাগ। পটুয়াখালী ও বরগুনা অঞ্চলের প্রবীণ রাখাইনদের সঙ্গে কথা বলে মোট ২৩৭টি রাখাইন গ্রামের নাম পাওয়া যায়। বর্তমানে ১৯২টি রাখাইন গ্রামের কোনো হদিশ নেই। এসব আদি রাখাইন গ্রামে এখন বাঙালিরা বসবাস করছেন এবং অধিকাংশ রাখাইন গ্রামের নাম পাল্টে ফেলা হয়েছে। বরগুনার তালতলী উপজেলার একটি রাখাইন গ্রামের নাম ছিল জোজিতংব মানে ঋষিটিলা। গ্রামটি রাখইনশূন্য করার পর, বর্তমানে এর বাঙালি নাম হয়েছে ‘জাকিরতবক’।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌরসভার চইয়াপাড়া গ্রামের নাম এখন উলামানগর। উপকূলে রাখাইন জনপদ রাখাইনশূন্য করার চলমান প্রতাপের বিরুদ্ধে পংকজদা সর্বদা সোচ্চার ছিলেন। সফরে আমরা স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় সরকার, গণমাধ্যম এবং নাগরিক সমাজের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। কর্তৃপক্ষকে প্রমাণসমেত চিঠি ও স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। প্রতিটি সভায় পংকজদা জোর গলায় রাখাইনদের ভূমি-সুবিচারের দাবি জানিয়েছেন। আমরা যখন পটুয়াখালীর কলাপাড়ার টিয়াখালী ইউনিয়নের ছয়ানিপাড়ায় যাই, তখন দুপুর। পায়রা সমুদ্রবন্দরের জন্য প্রতিদিন গ্রাম ছেড়ে যাচ্ছে মানুষ, পরিবার কমতে কমতে দশে ঠেকেছে। অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে ঐশ্বর্যময় প্রাচীন এই গ্রামের প্রবীণরা যখন তাদের গ্রাম হারানোর বিবরণ তুলে ধরছিলেন তখন পংকজদার চোখ ছলছল করে ওঠেছিল। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে কেবল বাঙালি নয়, উস্যুয়ের মতো রাখাইন জনতার প্রতিনিধিত্বও ছিল, তা পংকজদা সবসময় বলতেন। আদিবাসী বা প্রান্তিকতাকে বিচ্ছিন্ন করে নয়, সবার অবদানকে সমান মর্যাদা দিয়েই ভাষা আন্দোলন বা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনার তাগিদ দিতেন সবসময়। মাতৃভাষা প্রশ্নে তাই তিনি আদিবাসী সব মাতৃভাষার সমান স্বীকৃতি ও মর্যাদা দাবি করেছিলেন।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমিরক্ষা আন্দোলন শুরু হয় ২০১৬ সালের দিকে। পংকজদার সঙ্গে বেশ কয়েকবার সেখানে গিয়েছি। ১৯৬২ সালে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ৫নং সাপমারা ইউনিয়নের রামপুর, সাপমারা, মাদারপুর, নরেঙ্গাবাদ ও চকরহিমাপুর মৌজার ১৮৪২.৩০ একর ভূমি ‘রংপুর (মহিমাগঞ্জ) সুগার মিলের’ জন্য অধিগ্রহণের নামে কেড়ে নেয় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার। কথা ছিল, অধিগ্রহণের নামে গ্রামের মানুষের কাছ থেকে জোর করে কেড়ে নেওয়া এই জমিতে আখ চাষ হবে। আখ ভিন্ন অন্য কোনো ফসল চাষ করা হলে, জমি আবারও ভূমি মালিকদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে। চিনিকল কর্তৃপক্ষের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার দরুন ৩১ মার্চ ২০০৪ সালে কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। চিনিকল কর্তৃপক্ষ নানাভাবে অধিগ্রহণকৃত জমি বহিরাগত প্রভাবশালীদের কাছে ইজারা দিতে শুরু করে। জন্মমাটি থেকে উদ্বাস্তু আদিবাসী ও বাঙালিরা পুরো ঘটনাটি প্রশাসনের নজরে আনে। ২০১৫ সালের ৩০ মার্চ গাইবান্ধা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম এলাকা সরেজমিন তদন্ত করেন ও অভিযোগের সত্যতা পান। ১০ মে ২০১৬ তারিখে ওই ভূমিতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন সরকার বরাবর। ২০১৬ সালের ১২ জুলাই মিল কর্তৃপক্ষ পুলিশ ও লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে হামলা চালায়। একই সালের ৬ নভেম্বর প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ তাদের শ্রমিক-কর্মচারী ও ভাড়াটে মাস্তান বাহিনী নিয়ে আবারও হামলা চালায়। নিহত হন শ্যামল হেমব্রম, মঙ্গল মার্ডি ও রমেশ টুডু। পংকজদা শুরু থেকেই এ আন্দোলনে একাত্ম হয়েছেন। সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম সংকট সমাধানে নানাভাবে সংলাপ ও আলাপচারিতা চালিয়েছেন।
প্রতিটি আদিবাসী ভূমিদখলের বিচারসহ সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশনের দাবিতে সর্বদা সোচ্চার থেকেছেন। আত্মপরিচয়, সাংবিধানিক স্বীকৃতি, শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশ, মাতৃভাষার অধিকার, ভূমি ও জীবিকা সুরক্ষা এবং আদিবাসী নেতৃত্ব বিকাশের বিষয়গুলো পংকজদা তার ‘আদিবাসী-জিজ্ঞাসা’ হিসেবে রাজনৈতিকভাবে জারি রেখে গেছেন। এই জিজ্ঞাসার জিইয়ে রাখার জন্য রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত?
লেখক: গবেষক ও লেখক
চাওয়া-পাওয়ার বৈপরীত্য, আমাদের সমাজ কাঠামোয় মোটেও নতুন বা অপ্রত্যাশিত নয়। বাঙালি সমাজে পরিবার প্রথায় প্রত্যাশা বা নির্ভরতা একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। যুগ যুগ ধরে পরিবার প্রথায় চালু থাকা বিশ্বাস আর সামাজিক, সাংস্কৃতিক রীতিনীতি এটিকে একটি অনিবার্য অনুষঙ্গে পরিণত করেছে। সুদীর্ঘকাল থেকেই বিশ্বাস করা হতো, ছেলেসন্তান পারিবারিক ও বংশীয় ঐতিহ্য রক্ষার ধারক। সাংসারিক ও পারিবারিক অর্থনৈতিক দায়িত্ব পালনে ছেলেই গুরুত্বপূর্ণ। তাই পিতা-মাতা ছেলেসন্তানের প্রতি যতটা যত্নশীল বা মনোযোগী হতেন, বিপরীতে মেয়েসন্তানের প্রতি ততটাই উদাসীন ছিলেন।
বংশপরম্পরায় আমাদের সমাজে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় পুরুষদের একচ্ছত্র আধিপত্য বিরাজমান। বিগত কয়েক দশকে শিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। পরিবারের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে নারী গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। ক্ষমতায়নে সন্তোষজনক না হলেও, উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ, শিক্ষাক্ষেত্রে জাগরণ তৈরির সঙ্গে সঙ্গে প্রাগৈতিহাসিক ধ্যান-ধারণার পিতৃতান্ত্রিক সমাজের সঙ্গে, একটি মনস্তাত্ত্বিক সংঘাতও তৈরি হচ্ছে। একদিকে পিতৃতান্ত্রিক কর্র্তৃত্ববাদী মানসিকতার ধারাবাহিকতা, অন্যদিকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় শিক্ষিত সচেতন নারী সমাজের অংশগ্রহণের আগ্রহ পরিবার কাঠামোতে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি করছে।
মাইগ্রেশন বা অভিবাসনের পেছনে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নানা উপাদান কাজ করে। কখনো কখনো ব্যক্তি তার নিজস্ব ইচ্ছায় অভিবাসী হয়। আবার কখনো বা পরিস্থিতি ব্যক্তিকে অভিবাসনে বাধ্য করে। দলভিত্তিক অভিবাসনের মূলে বিদ্যমান পরিস্থিতি মুখ্য ভূমিকা পালন করে, যাকে ‘ফোর্স মাইগ্রেশন’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। অর্থনৈতিক কারণে অভিবাসন তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর একটি স্বাভাবিক চিত্র।
অস্থায়ী অভিবাসনের পাশাপাশি আজকাল স্থায়ী অভিবাসন অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। মেধাবী তরুণ সমাজ, শিক্ষা-প্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তির একটি বড় অংশ আজ উত্তর আমেরিকা, ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশে স্থায়ী অভিবাসী হয়ে নাগরিকত্ব গ্রহণ করছে। অনিয়ম, অনাচারকে দায়ী করে সুখের অভিলাষে সদাচার, আর নিয়ম-নিষ্ঠার দেশে অভিবাসী হচ্ছে। সামাজিক রীতিনীতির সংস্কৃতিগুলো ধারণ করে, এই অভিবাসী শ্রেণি সত্যিই কি তাদের কাক্সিক্ষত ‘সুখ’কে খোঁজে পাচ্ছে? অভিবাসনের পেছনের গল্পগুলোই বা কেমন? সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও এটি স্পষ্ট যে, কানাডার বাংলাদেশি কমিউনিটির বৃহত্তম অংশটি যুগল জীবনে অভিবাসী হয়েছেন। মেধা আর দক্ষতায় ঈর্ষণীয় সাফল্যের প্রমাণ দিয়ে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পেয়েছেন। বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থার রীতিনীতি, মূল্যবোধ, কৃষ্টি, সংস্কৃতির সঙ্গে এখানকার সমাজব্যবস্থার ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। এই সমাজে নারী-পুরুষকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখার সুযোগ নেই। পুরুষের কর্র্তৃত্ববাদী মানসিকতাকে নারীসমাজ চোখ বুঝে মেনে নেওয়ার পরিবেশও এখানে বিদ্যমান নয়। তাহলে দুটো বিপরীত কৃষ্টি ও মূল্যবোধের বৈপরীত্য কি পরিবার কাঠামোতে নতুন কোনো চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে?
আমাদের বাঙালি সমাজ কাঠামোতে যৌথ পরিবার প্রথার প্রচলন অত্যন্ত সুপ্রাচীন। সমসাময়িককালে একক পরিবারের প্রথা জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও, পিতৃতান্ত্রিক কর্র্তৃত্ববাদী মানসিকতার প্রভাব এখনো অত্যন্ত সুস্পষ্ট। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও, তাদের ওপর পিতা-মাতার নির্ভরতা বা প্রত্যাশার মাত্রাটি হ্রাস না পেয়ে ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে।
আজকাল তরুণ-তরুণীদের মাঝে একক পরিবারের ধারণা জনপ্রিয় হয়ে ওঠার ফলে, যৌথ পরিবার প্রথার বৈশিষ্ট্যগুলো বিশেষ চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। এই চ্যালেঞ্জে নারী চায় সমতাভিত্তিক সমাজ, আর পুরুষ এগিয়ে যায় কর্র্তৃত্ববাদী মানসিকতায়। এমন দুটি ভিন্নধারার মানসিকতা নিয়ে যখন কোনো পরিবার অভিবাসী হয়, তখন নতুন সমাজব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের মাঝে আরও নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে গিয়ে কোনো কোনো সময় আন্তঃপারিবারিক দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটে, যা বিয়েবিচ্ছেদের মতো জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি করে।
কানাডার অভিবাসী সমাজে সেপারেশন বা বিয়েবিচ্ছেদের সংখ্যাটি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। কানাডার তথ্য অনুযায়ী, সমাজে বিয়েবিচ্ছেদের সংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়ছে। ২০১০ সালে বিয়েবিচ্ছেদ প্রাপ্ত (সেপারেশন বাদে) জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল ২.৩৯ মিলিয়ন, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২.৭৮ মিলিয়ন, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ৭.০৭ শতাংশ। বিয়েবিচ্ছেদের এই পরিসংখ্যান নিঃসন্দেহে একটি সমাজ কাঠামোর অস্থিরতারই বহিঃপ্রকাশ। এক সময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ানদের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তান থেকে আগত অভিবাসী কমিউনিটিতে বিয়েবিচ্ছেদ দৃষ্টিগোচর হলেও, বাঙালি কমিউনিটি ছিল তার ব্যতিক্রম। পরিতাপের বিষয়, আমাদের বাঙালি সমাজেও বিয়েবিচ্ছেদের সংখ্যাটি এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
পরিবার সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক নিমকফ তার Marriage and the Family গ্রন্থে বলেন, ‘Family is more or less durable association of husband and wife with or without children or of a man or women alone, with children’ সমাজ বিজ্ঞানী অ্যান্ডারসন ও পার্কারের মতে, ‘Family is a socially recognised unit of people related to each other by kinship, marital and legal ties’ পরিবার সম্পর্কে মার্ক্সীয় সমাজবিজ্ঞানীদের বিশ্লেষণ কিছুটা ভিন্নতার হলেও পরিবার একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান, বৈবাহিক ও আইনানুগ সম্পর্কের মাধ্যমে তা প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং রক্ত সম্পর্কের বন্ধনে তা বিস্তৃত হয় এ বিষয়ে কারও ভিন্নমত নেই।
অভিবাসীরা একটি সমাজব্যবস্থায় বিকশিত হয়ে যখন ভিন্নধর্মী অন্য একটি সমাজব্যবস্থায় স্থানান্তরিত হয়, তখন সেই সমাজব্যবস্থার রীতিনীতি ও মূল্যবোধকে ধারণ করতে গিয়ে তাদের মধ্যে এক ধরনের সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এই দ্বন্দ্ব থেকে তৈরি মানসিক দূরত্ব পারিবারিক আন্তঃসম্পর্কের ক্ষেত্রে কখনো কখনো চরম বৈরিতার সৃষ্টি করে।
সমতাভিত্তিক সমাজে আইনানুগভাবে সম্পত্তিতে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের সমানাধিকার স্বীকৃত। কানাডিয়ান সমাজে অভিবাসীদের বৃহত্তম অংশটি নানা রকম চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়েই তাদের জীবন পরিচালিত করে। বাড়ি ভাড়া বা বাড়ির মর্টগেজ, পরিবারের দৈনন্দিন খরচসহ আনুষঙ্গিক নিত্যপ্রয়োজন মেটাতে অনেক ক্ষেত্রেই একজনের উপার্জন যথেষ্ট নয়। তাই স্বামী স্ত্রী উভয়ের উপার্জন তখন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে।
সালমা ও আজমান (ছদ্মনাম) বিবাহিত জীবনে অধিক সুখের অভিলাষে কানাডার অভিবাসী জীবনকে বেঁচে নিয়েছিলেন। আজমান তার একক উপার্জন দিয়ে সংসারের খরচ চালিয়ে, ব্যাংকের মর্টগেজ চালাতে পারবেন না বিধায়, দীর্ঘদিন নিজ বাড়িতে বসবাসের স্বপ্নটিকে নিভৃত রেখেছিলেন।
কিন্তু সালমার ভাবনা ছিল ভিন্ন! সম্পত্তির অর্ধেক মালিকানার প্রতি তিনি তখন নেশাগ্রস্ত! তাই স্বামীকে একটি বাড়ি ক্রয়ের জন্য নানাভাবেই প্ররোচিত করেছিলেন। বিপত্তি বাধে, মর্টগেজসহ পারিবারিক খরচের জোগান নিয়ে। দেশসেরা বিদ্যাপীঠের এমবিএ, ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার চাকরি ছেড়ে অভিবাসী হয়েছেন। সারভাইভাল চাকরিতে তার ঘোরতর আপত্তি। কথায় কথায় আজমানকে ধর্মীয় বিধান মতে, স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। গোবেচারা আজমান গায়ে গতরে খেটে চলে অবিরত। যখন সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখন স্ত্রীর সঙ্গে বাকবিত-ায় জড়িয়ে পড়ে। কয়েকবার ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের অপরাধে আরসিএমপি তথা পুলিশের মুখোমুখি হয়েছেন। পরিশেষে সহায় সম্পদ বিক্রি করে মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। বিপত্তি সেখানেও! আইনগতভাবে সম্পদের অর্ধেক মালিকানা সালমার। অবশেষে কোর্ট কাচারি হয়ে সমান সমান হিস্যায় সহায় সম্পদের ভাগাভাগি হয়। চূড়ান্ত হয় বিয়েবিচ্ছেদ।
অভিবাসনকে যারা সুখ-বিলাসের আশ্রয় মনে করেন, অনেক সময়ই তা হিতেবিপরীত হয়। অভিবাসী সমাজের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের সঙ্গে, বেড়ে ওঠা সমাজের রীতিনীতি ও মূল্যবোধের দ্বান্দ্বিক সংঘর্ষ আন্তঃপারিবারিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। ফলে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব মেলাতে গিয়ে ব্যক্তির জীবনে তৈরি হয় হতাশা। সেই হতাশা দূরীকরণে আন্তঃপারিবারিক সম্পর্ক একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই পরিবর্তিত সমাজের মূল্যবোধকে ধারণ করে, একটি সুন্দর আন্তঃপারিবারিক সম্পর্ক সৃষ্টির মধ্য দিয়েই অভিবাসী জীবনে সুখের অনুসন্ধান করতে হবে, অন্যথায় ব্যক্তি জীবনের পাশাপাশি সামাজিক জীবনেও অভিবাসন একদিন মূল্যহীন হয়ে উঠবে।
লেখক: উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক
শিক্ষা নিয়ে কথা বলা বহু চর্চিত বিষয়। তবু বলতে হয়। একজন মানুষকে সর্বোচ্চ আলোয় উদ্ভাসিত করে শিক্ষা। আমাদের দেশে পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক ধাপ পার হয়ে বিশ^বিদ্যালয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণে প্রতিবন্ধকতা নতুন কিছু না। উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন অধিকাংশ শিক্ষার্থীই দেখে। ফলে মা-বাবাও সন্তানের ইচ্ছা পূরণে টাকা খরচ করতে দ্বিধা করেন না। কিন্তু যাদের সামর্থ্য নেই? সহজ উত্তর তাদের দরকার নেই উচ্চশিক্ষা গ্রহণের! অর্থের অসম প্রতিযোগিতায় হেরে যান দরিদ্র মা-বাবা। অন্যদিকে পাবলিকে না হলেও প্রাইভেট বিশ^বিদ্যালয়ে ধনীর সন্তান ঠিকই সুযোগ পান। সেই টাকার জোরে। এখানে মেধার কোনো বালাই নেই। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এমনই অরাজক পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে কোচিং প্রতিষ্ঠানগুলো। বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু ভর্তিতেই বাণিজ্য হচ্ছে ২ হাজার কোটি টাকা। এই টাকার তুফানে কারা উড়ছেন? শিক্ষাকে ‘পণ্য’ বানিয়ে যেসব চক্র শিক্ষাবাণিজ্যে বুঁদ হয়ে আছে তাদের উদ্দেশে কিছু বলার নেই। কিন্তু এই অরাজকতা বন্ধ করতে, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কিছুই করার নেই!
শুক্রবার দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতায় প্রকাশিত ‘ভর্তিতে ২ হাজার কোটির বাণিজ্য’ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে কোচিং সেন্টার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরম কেনার জন্য প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। এই টাকার সিংহভাগ যায় ১৫ কোচিং সেন্টারের পকেটে। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বেশি আয় করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ও কম নয়। এ আয়ের ভাগ পান ভর্তিসংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা। ভর্তি ফরম বিক্রি থেকে আয় করা টাকার বড় অংশ ব্যয় না হলেও প্রতি বছরই ফরমের দাম বাড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
অভিযোগ রয়েছে, কোচিং সেন্টারগুলোর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষকের যোগসাজশ রয়েছে। কিছু কোচিং সেন্টারে পড়লে মেডিকেল বা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া অনেক সহজ হয়। বলা চলে শিক্ষার্থীরা কোচিং সেন্টারে যেতে বাধ্য হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে হিসাব করে দেখা গেছে, ৪ লাখ ৩৮ হাজার শিক্ষার্থী কোচিংয়ের পেছনে ৪০ হাজার টাকা করে ব্যয় করলে এক সেশনেই কোচিংয়ে আয় হয় প্রায় ১ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। আর ৩ লাখ শিক্ষার্থী যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি গুচ্ছ, প্রকৌশল গুচ্ছ, সাধারণ গুচ্ছে ভর্তি ফরম কেনে তাহলে গড়ে ১ হাজার ২০০ টাকা করে ফি হলেও ব্যয় করতে হয় প্রায় ২৮৮ কোটি টাকা।
গত বছর গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে আবেদন করেছিল ৩ লাখ ৬০ হাজার ৪০৬ জন শিক্ষার্থী। এবার গুচ্ছ ফরমের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা। এবার মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য এক হাজার টাকা ফি দিয়ে ১ লাখ ৩৯ হাজার ২১৭ জন আবেদন করেছিল। তাতে শিক্ষার্থীদের ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৪ কোটি টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে প্রতি বছর কোচিং সেন্টার ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার বেশি বাণিজ্য করছে।
নিয়ম হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ফরম বিক্রি করে যে টাকা আয় হচ্ছে, তার ৬০ শতাংশ পরীক্ষাসংক্রান্ত খাতে ব্যয় করা যাবে। আর ৪০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে দিতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই নিয়ম কি আদৌ অনুসরণ করা হচ্ছে? টাকার ভাগ-বাটোয়ারায় কোন কোন পক্ষ জড়িত, তা ওপেনসিক্রেট। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষ এ বিষয়ে, বালিতে মুখ গুঁজে রেখেছেন কি না আমাদের জানা নেই। তবে এটা জানি, ভর্তি বাণিজ্য বন্ধ করে সমাজের সব শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তির পথ সহজ-সরল করা দরকার। কোনোভাবেই যেন ভর্তি বাণিজ্যের শিকার না হন মেধাবীরা।
প্রখ্যাত কবি, কথাশিল্পী, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, শিশুসাহিত্যিক, গবেষক, সাহিত্য-সমালোচক ও অধ্যাপক আলাউদ্দিন আল আজাদ ১৯৩২ সালের ৬ মে নরসিংদীর রায়পুরা থানার রামনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম গাজী আব্দুস সোবহান। নারায়ণপুর শরাফতউল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা (১৯৪৭), ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক (১৯৪৯), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সসহ স্নাতক (১৯৫৩) ও স্নাতকোত্তর (১৯৫৪) এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি (১৯৭০) লাভ করেন। আলাউদ্দিন আল আজাদ তোলারাম কলেজ, জগন্নাথ কলেজ, মুরারি চাঁদ কলেজ এবং চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেন এবং স্বাধীনতার পর এক বছর ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। পরে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরুল অধ্যাপক ও নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। পঞ্চাশের দশকে তার উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ ‘জেগে আছি’, ‘ধানকন্যা’, ‘জীবন জমিন’ প্রভৃতি। ষাটের দশকে ‘তেইশ নম্বর তৈলচিত্র’ ও ‘কর্ণফুলী’ উপন্যাস দুটি ব্যাপক সাড়া জাগায়। অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে ‘শীতের শেষরাত বসন্তের প্রথমদিন’, ‘ক্ষুধা ও আশা’, ‘শ্যামল ছায়ার সংবাদ’ উল্লেখযোগ্য। তার নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘মরক্কোর যাদুকর’, ‘মায়াবী প্রহর’, ‘ধন্যবাদ’, ‘নিঃশব্দ যাত্রা’, ‘নরকে লাল গোলাপ’ এবং দুটি কাব্যনাট্য ‘ইহুদির মেয়ে’ ও ‘রঙিন মুদ্রারাক্ষস’। আলাউদ্দিন আল আজাদের সাহিত্য-সমালোচনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘শিল্পীর সাধনা’, ‘সাহিত্যের আগন্তুক ঋতু’, ‘নজরুল গবেষণা : ধারা ও প্রকৃতি’, ‘মায়াকোভস্কি ও নজরুল’। তার কাবগ্রন্থের মধ্যে ‘মানচিত্র’, ‘ভোরের নদীর মোহনায় জাগরণ’, ‘লেলিহান পা-ুলিপি’, ‘নিখোঁজ সনেটগুচ্ছ’, ‘সাজঘর’ ও ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ উল্লেখযোগ্য। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য আলাউদ্দিন আল আজাদ ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার’, ‘ইউনেস্কো পুরস্কার’, ‘জাতীয় চলচিত্র পুরস্কার’, ‘দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ স্বর্ণপদক’ ও ‘একুশে পদক’-এ ভূষিত হন। ২০০৯ সালের ৩ জুলাই ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) হলের আসন দখল করে রাখার বিরুদ্ধে অনশনরত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ তাকে সমর্থন দেওয়া কয়েকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।তারা বলেন, ওই স্থানে গত বুধবার রাত থেকে অনশনে ছিলেন প্রত্যয়। তাকে মারধরের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায় হামলায় জড়িতরা। এ সময় প্রত্যয়ের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা হয়।
জানা গেছে, তিন দাবিতে গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনের খেলার মাঠে অনশনে বসেন প্রত্যয়। তিনি ওই হলের আবাসিক ছাত্র। তার অন্য দুটি দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা ও হলের গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং নবীন শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। ওই সময় ক্যাম্পাসে লোডশেডিং চলছিল। হঠাৎ করেই প্রত্যয়সহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
হামলায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী, মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সৃষ্টি, চারুকলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মনিকা, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৮তম ব্যাচের সুরসহ আরও কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, হামলায় ৩০ থেকে ৪০ জন অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের কয়েকজন হলেন ছাত্রলীগ নেতা ও রসায়ন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গৌতম কুমার দাস, তুষার, ফেরদৌস, নোবেল, গোলাম রাব্বি, মুরসালিন, মুরাদ, সোহেল, তানভীর, রায়হান, রাহাত, সৌমিক, তারেক মীর, সজীব ও নাফিস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমরা যারা প্রত্যয়ের সঙ্গে ছিলাম তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর প্রত্যয়কে দেখতে চিকিৎসক এসেছিলেন। তখন তারা অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা করে সেটি ফিরিয়ে দেয়। প্রক্টরকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি আসেননি। একাধিক ছাত্রীর দিকেও চড়াও হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ এমন একটি ফোনকল পেয়ে তারা অ্যাম্বুলেন্স পাঠায়। তবে কে কল দিয়েছিল সে সম্পর্কে চিকিৎসা কেন্দ্রের কেউ বলতে পারেননি।
তবে যে ফোন নাম্বার থেকে কল দেওয়া হয়েছিল সেটিতে যোগাযোগ করে দেখা যায় নাম্বারটি শাখা ছাত্রলীগের নেতা গৌতম কুমার দাসের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। দরকার হলে আমি পদত্যাগ করব।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে তারা এ রাত পৌনে ১টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।
তবে অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউলের ওপর হামলারে পেছনে ছাত্রলীগের কোনো হাত নেই বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, মীর মশাররফ হোসেন হলের অনশনরত ওই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। তবে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরা করেছে। সেখানে ছাত্রলীগের একজনও জড়িত নয়।’
অসুস্হ সাবেক ফুটলার মোহাম্মদ মহসীনের পাশে দাড়িয়েছেন তার সাবেক সতীর্থরা। মোহামেডান ক্লাবের সাবেক ফুটবলার ও সোনালী অতীত ক্লাবের সদস্যরা বিকেলে বসে এই সিদ্ধান্ত নেন। পরে মহসীনের বাসায় যান তার সংগে দেখা করতে।সাবেক ফুটবলারদের মধ্যে ছিলেন আব্দুল গাফফার, জোসী, বাবলু, জনি, সাব্বির, রিয়াজ।
এসময় গাফফার জানান, মহসীনের চিকিৎসার জন্য বিসিবি সভাপতির উদ্যোগে বুধবার সকালে অসুস্হ ফুটবলারকে হাসপাতালে ভর্তি করবে।
হাসপাতাল থেকে সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে ফেরার পর মহসীন কানাডায় ফিরে যেতে চাইলে সাবেক ফুটবলাররা সহায়তা করবে। মহসীন কানাডা থেকে দেশে ফিরেছেন মায়ের পাশে থাকতে। প্রায় নব্বই ছুই ছুই মহসিনের মায়ের পায়ে ব্যথা। মহসীনের পাশাপাশি তার মায়ের চিকিৎসার ব্যাপারেও সাবেক ফুটবলাররা পাশে থাকবেন বলে জানান আবদুল গাফফার।
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
প্রথম সেটে হেরে পিছিয়ে পড়েছিলেন। তবে পরের সেটেই ঘুরে দাঁড়ান। ৩ ঘণ্টা ৩৮ মিনিটের লড়াইয়ের পর কোয়ার্টার ফাইনালটা জিতে নিলেন নোভাক জকোভিচ। কারেন খাচানভকে ৪-৬, ৭-৬, ৬-২, ৬-৪ ব্যবধানে পরাজিত করে ফ্রেঞ্চ ওপেনের সেমিফাইনালে উঠলেন এই সার্বিয়ান।
কোয়ার্টার ফাইনালের শুরুটা দেখে মনে হচ্ছিল, দিনটা বোধহয় জকোভিচের নয়। তবে মাথা ঠান্ডা রেখেছিলেন তিনি। খাচানভ প্রথম সেট জিতে নেওয়ার পর দ্বিতীয় সেটেও সমানে সমানে লড়াই করেন। যদিও টাইব্রেকারে জোকোর সামনে দাঁড়াতে পারেননি তিনি।
ম্যাচে সমতা ফেরানোর পর এক বার লকার রুমে ফিরে যান জোকোভিচ। তার পর শুধু কোর্টেই ফিরলেন না। নিজের চেনা ছন্দেও ফিরলেন। তৃতীয় এবং চতুর্থ সেটে আর শুরুর মতো লড়াই করতে পারলেন না প্রতিযোগিতার ১১ নম্বর বাছাই।
ফ্রেঞ্চ ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে মঙ্গলবার প্রতিযোগিতার প্রথম সেট হারলেন জোকোভিচ। হেরে যেতে পারেন এমন মনে না হলেও এ দিন ছন্দ পেতে কিছু সময় লেগেছে তার। ৩৬ বছরের জোকোভিচ কি সর্বোচ্চ পর্যায়ের টেনিসের ধকল আগের মতো সামলাতে পারছেন না আর?
এমন প্রশ্ন যখন উঁকি দিতে শুরু করছে, তখনই নিজের চেনা ছন্দে দেখা দিয়েছেন। কোয়ার্টার ফাইনালে খাচানভের বিরুদ্ধে সময় পেয়েছেন। সুযোগ পেয়েছেন। সেমিফাইনাল বা ফাইনালের প্রতিপক্ষরা কি ছন্দে ফেরার সময় বা সুযোগ দেবেন তাঁকে?
টেনিসপ্রেমীদের মনে এই প্রশ্ন রেখেই ফ্রেঞ্চ ওপেনের শেষ চারে পৌঁছে গেলেন দু’বারের চ্যাম্পিয়ন। পাশাপাশি কিছুটা হয়তো উদ্বেগেও রাখলেন। সেমিফাইনালে জায়গা নিশ্চিত করার পর জোকার স্বীকারও করে নিয়েছেন, কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথম দু’টি সেট তার থেকে ভাল খেলেছেন রুশ প্রতিপক্ষ।
এদিকে ওপর কোয়ার্টার ফাইনালে জয় পেয়েছেন কার্লোস আলকারাজ। সিৎসিপাসের বিপক্ষে তিনি ৩-০ (৬-২, ৬-১, ৭-৬) সেটে জিতে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছেন এই স্পেনিশ টেনিস তারকা।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।