
২০১২ সালের এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন অর্থনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদ মোজাফফর আহমেদ। তার জন্ম ১৯৩৬ সালের ২৭ মার্চ কলকাতায়। তার বাবার নাম নাজির আহমদ এবং মা জাহানারা বেগম। তিনি ১৯৫০ সালে নোয়াখালী জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৫২ সালে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৫৫ সালে তিনি অনার্স এবং ১৯৫৬ সালে মাস্টার্স করেন। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী বব লুকাস তার সহপাঠী ছিলেন। হরগঙ্গা কলেজে স্বল্প সময়ের জন্য অর্থনীতির শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়ে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। পরে পিএইচডি করতে যাওয়ার আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে যোগদান করেন। পিএইচডি শেষ করে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করলেও কিছুদিন পর পদত্যাগ করেন। এরপর কিছুদিন করাচিতে ইউনাইটেড ব্যাংকে কাজ করে আবার ঢাকায় ফিরে আসেন। যোগ দেন ইপিআইডিসিতে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে পরিকল্পনা কমিশনে যোগ দেন। ১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বরে পরিকল্পনা কমিশন ছেড়ে দেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে যোগদান করেন অধ্যাপক হিসেবে। দীর্ঘ ৩০ বছর এখানে অধ্যাপনা করে ২০০৪ সালে তিনি অবসরগ্রহণ করেন। দেশে-বিদেশে তার একাধিক বই ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া তিনি কাজ করেছেন ইউনেসকোসহ একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি নাগরিক সংগঠন সুজনের (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সভাপতি ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ছিলেন। ২০০৮ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন।
রোদের তাপে পুড়ছে দেশ, বাজারের আগুনে পুড়ছে সাধারণ মানুষের সংসার। প্রকৃতিতে ছায়া নেই, কেটে ফেলেছি গাছ। বাজারেও ছায়া নেই। কে দেবে সেই ছায়া বা ভরসা? বাজারে যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে হু হু করে, তখন মন্ত্রীদের কাছ থেকে সমাধানমূলক কোনো বক্তব্যের পরিবর্তে মানুষ এমন কিছু শুনছেন যার ফলে তারা মনে করেন একি হচ্ছে? তারা ভাবছেন, একি সান্ত্বনা নাকি শাস্তির পূর্বাভাস? মন্ত্রীরা একেকজন একেক রকম বক্তব্য দিচ্ছেন, যাতে সাধারণ মানুষ সান্ত্বনা এবং স্বস্তির পরিবর্তে বিভ্রান্তিতে পড়ে যান।
সম্প্রতি শিল্প প্রতিমন্ত্রী বাজেট সংক্রান্ত এক কর্মশালায় বলেছেন, ‘আমি দেখেছি, বাজার করতে গিয়ে অনেকে কাঁদছেন। কারণ, বাজারের যে অবস্থা, তাদের পকেটে সে টাকা নেই। এটার একমাত্র কারণ সিন্ডিকেট।’ সিন্ডিকেটের কথা বললেই ক্ষমতাসীন দলের কর্তাব্যক্তি এবং ব্যবসায়ী নেতারা সমস্বরে বলে ওঠেন কোথায় সিন্ডিকেট? সিন্ডিকেট বলে কিছু নেই। বাজার চলে বাজারের নিয়মে। কিন্তু মানুষ দেখে একই সঙ্গে সারা দেশে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। কার ইশারায় হয় তা দেখা যায় না কিন্তু দাম বেড়ে গেলে তার উত্তাপ ক্রেতার গায়ে লাগে। একে সিন্ডিকেটের কারসাজি বলে এই সিন্ডিকেট নিয়ে নানা কথা শোনা যাচ্ছিল, কিন্তু স্বীকার করছিলেন না দায়িত্বশীলরা। এবার তো মন্ত্রীর মুখেই শোনা গেল সিন্ডিকেটের কথা। এখানেই শেষ নয়, শিল্প প্রতিমন্ত্রী আরও এক ধাপ এগিয়ে পরিষ্কার করে বলেছেন, ‘মন্ত্রীদের মধ্যেও সিন্ডিকেট আছে।’ তিনি সংকটের কারণ জানালেন ’ কিন্তু তিনি যদি সিন্ডিকেটধারী মন্ত্রীদের নাম জানাতেন তাহলে মানুষ তাদের চিনতে পারতেন। দেশবাসী বুঝতেন কারা এই মন্ত্রিত্বের চেয়ারে বসে সিন্ডিকেটের সুতা টানছেন। তাহলে হয়তো লোকলজ্জার ভয়েও তারা কিছুটা সংযত হতেন, বাজারে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আসতে পারত। কিন্তু হায় এতো হওয়ার নয়।
বাজারে যারা যান তারা জানেন যে, খুচরা ও পাইকারি দুই বাজারেই পেঁয়াজের দাম আরও বেড়ে গেছে এবং বাড়ছেই। সবচেয়ে বিচলিত হওয়ার মতো বিষয় হলো এই যে প্রতিদিনই পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১২ থেকে ১৫ টাকা এবং পাইকারিতে ৮ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। অজুহাত হিসেবে বলা হচ্ছে ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি বন্ধের কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। অথচ মাস দুই আগে থেকেই পেঁয়াজ আমদানি না করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল এবার পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। আমদানি করলে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হবেন। শুধু আমাদের দেশে নয় ভারতেও এবার রেকর্ড পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। ভারতের পেঁয়াজ উৎপাদন তাদের চাহিদার চেয়েও বেশি ফলে রপ্তানি না হওয়ায় সেখানকার কৃষকরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না এবং পেঁয়াজের দাম গিয়েছে কমে। জানা গেছে ভারতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ রুপিতে (এক রুপি সমান ১ টাকা ২৯ পয়সা) অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় ৩৮ টাকা থেকে ৪৫ টাকায়।
বাংলাদেশে পেঁয়াজের সংকট সাধারণত হয় সেপ্টেম্বর মাসের পর থেকে। তখন কৃষকের পেঁয়াজ শেষের দিকে এবং নতুন পেঁয়াজ উঠতে বাকি। এই সংকট প্রায় প্রতি বছর কিছুটা হয়ে থাকে। ফলে এবারের সংকটে এই প্রশ্ন করা কি স্বাভাবিক নয় যে, এখন পেঁয়াজের মৌসুম কেবল শেষ হয়েছে। মাঠ থেকে পেঁয়াজ এসেছে কৃষকের ঘরে, এখনই কি আমদানির এত প্রয়োজন দেখা দিল? দুই মাসে কি পেঁয়াজের মজুদ শেষ হয়ে গেল যে পেঁয়াজের জন্য বাজারে হাহাকার দেখা দিয়েছে। তাহলে শিল্প প্রতিমন্ত্রীর কথা শুধু কথার কথা নয়। তার ভাষায় পেঁয়াজের বাজারেও সিন্ডিকেট ঢুকে পড়েছে। বাজার পরিস্থিতি দেখে তাহলে তো চাল, চিনি ও ভোজ্যতেলের বাজারের সিন্ডিকেটকেও অস্বীকার করা যাবে না।
পেঁয়াজের বাজার যখন এরকম অস্থির তখন বাণিজ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিতে গিয়ে হুমকি দিচ্ছেন যে, মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। নজর কি শুধুই আমদানির দিকে থাকবে? যাচাই করে দেখা হবে না যে সত্যি আমাদের পেঁয়াজের ঘাটতি আছে, নাকি সিন্ডিকেটই কারসাজি করে দাম বাড়িয়েছে।
যদি পেঁয়াজের ঘাটতি থেকে থাকে, তাহলে তো আমদানি করে তা মেটাতেই হবে। তার জন্য তো আগে থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। সংকট দেখা দিলেই আমদানির সিদ্ধান্ত নিলেও সেই পেঁয়াজ বাজারে আসতে এবং দাম কমতে সময় লাগবে। এই সময়ে সিন্ডিকেট (শিল্প প্রতিমন্ত্রীর ভাষায় মন্ত্রীদের মধ্যেও আছেন) বসে থাকবে না। দাও মারবে এবং ফাউ মুনাফা লুটে নেবে। সরকারের কাজ কি হবে এ ধরনের সিন্ডিকেটকে বারবার বাড়তি ও অন্যায্য মুনাফা নেওয়ার পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া? সরকারের কাছে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা কত ও উৎপাদন কত হয়েছে তার একটা গ্রহণযোগ্য হিসাব থাকলে এমন হতে পারে কি?
কলকাতা থেকে ঢাকার দূরত্ব কত, আবহাওয়ার পার্থক্য কী, কৃষি উৎপাদন খরচের পার্থক্য কোথায় সেই বিষয়গুলো ভাবলে তো এক উত্তরবিহীন প্রশ্নের সামনে দাঁড়িয়ে যেতে হয়। কলকাতায় যদি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৩৫ রুপিতে বিক্রি হয়, সেখানে আমাদের এখানে কেন ৮০ টাকায় বিক্রি হবে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে বা এ নিয়ে এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া কি হয়েছে? ব্যাখ্যা হচ্ছে প্রচুর কিন্তু অশান্ত বাজার শান্ত হচ্ছে না। ক্রেতারা সব শোনে আর অসহায় হয়ে কেনে। সামনে কোরবানির ঈদ আসছে, ফলে পেঁয়াজের ঝাঁজ আরও বাড়াতে দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতা চলবে। আর দৃশ্যমান কিংবা অদৃশ্য কোনো সিন্ডিকেটের কাছে সরকার বারবার আত্মসমর্পণ করে ভোক্তাকে শাস্তি দেবে, এটা কতদিন চলবে?
এতো গেল সংকটের কথা। কিন্তু পেঁয়াজ চাষিরা জানান, এবার দেশি পেঁয়াজের সঙ্গে আগাম জাতের হাইব্রিড পেঁয়াজ রোপণ করেছিলেন। আগাম জাতের হাইব্রিড পেঁয়াজের ফলন বেশ ভালো হয়েছে। তাদের ধারণা গড়ে প্রতি বিঘা জমি থেকে পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ মণ পর্যন্ত। এটা অবশ্য হাইব্রিড পেঁয়াজের কথা। তবে দেরিতে লাগানো নাবি বা দেশি জাতের পেঁয়াজের উৎপাদন আগের মতোই, প্রতি বিঘায় গড় ফলন হয়েছে ২০-২২ মণ। বীজ, সারসহ চাষাবাদের খরচ হিসাব করলে দেখা যায় প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয়েছে ৪০ থেকে ৪২ হাজার টাকা। কিন্তু পেঁয়াজ যখন উঠল বাজারে অর্থাৎ মৌসুমের শুরুতে বাজারে প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। এতে কৃষকের লোকসান হয়েছে। তবে এপ্রিলের শেষ বা ঈদের পর থেকে বাজারে পেঁয়াজের চাহিদা ও দাম দুটিই বাড়তে শুরু করেছে। অস্থিতিশীল বর্তমান বাজারে প্রতি মণ পেঁয়াজ ১ হাজার ৬৫০ থেকে ১ হাজার ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে আন্তঃমন্ত্রণালয় তৎপরতাও শুরু হয়েছে। কৃষি সচিবকে পাঠানো চিঠিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম এক মাস আগেও ছিল ৩০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫০ টাকা আর বর্তমানে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। সরবরাহ বাড়িয়ে পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল করার উদ্যোগ নেওয়ার দরকার।’ চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল করার স্বার্থে জরুরিভিত্তিতে সীমিত পরিসরে আমদানির অনুমতি (আইপি) দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। কৃষি সচিব পত্রিকার সঙ্গে বলেন, ‘আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠি পর্যবেক্ষণ করছি এবং সীমিত পরিসরে আমদানির বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় রাখছি।’ তবে কৃষি সচিব আবার এ কথাও জানান যে, ২৪ লাখ টন বার্ষিক চাহিদার বিপরীতে দেশে এবার ৩৪ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে এবং গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজও উঠবে তাহলে উদ্বৃত্ত উৎপাদন সত্ত্বেও পেঁয়াজের বর্তমান দর কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। এই হিসাব দেখলে তো ধাঁধা লাগে চোখে আর সন্দেহ জাগে। হিসাব সঠিক নাকি কৃত্রিম বাজার নিয়ন্ত্রণ করে ক্রেতার পকেটের সর্বস্ব কেড়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শক্তিশালী?
অন্যদিকে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি বলেছেন, একটা কাজ করলেই পেঁয়াজের দাম কমে যাবে। আর সেটা হচ্ছে আমদানি অনুমতি। এ মুহূর্তে এ ছাড়া আর কোনো অস্ত্র নেই। পেঁয়াজের পাশাপাশি চিনি ও সয়াবিনের দাম নিয়ে তিনি বলেন, ‘মুক্তবাজার অর্থনীতিতে দাম বেঁধে দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। উচিত হচ্ছে সরবরাহ ব্যবস্থা ভালো রাখা ও প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করা। উভয় ক্ষেত্রেই ঘাটতি আছে। কয়েকজন ব্যবসায়ী মিলে এখানে যে সুরে বাঁশি বাজাচ্ছেন, সে সুরেই দাম ঠিক হচ্ছে। ভোক্তারা এখানে জিম্মি। বাজারের ২৫ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে না আসা পর্যন্ত একশ্রেণির ব্যবসায়ীর দুষ্কর্ম থেকে মুক্তি মিলবে না।’ একটা কথা হরহামেশাই বলা হয় এসব নাকি অসাধু ব্যবসায়ীদের কর্ম। তাহলে সেই প্রশ্নই তো আবার জেগে ওঠে, সাধু ব্যবসায়ী কারা? তারা কী করেন?
এসব কথার পরে তাহলে কী দাঁড়াল শেষমেশ? কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে পেঁয়াজ উদ্বৃত্ত, সংকট নেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে সংকট সমাধানে আমদানির বিকল্প নেই। শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলছেন, এসব সিন্ডিকেটের কারসাজি। সিন্ডিকেট খুব শক্তিশালী কারণ সেখানে মন্ত্রীরা যুক্ত থাকেন। ক্যাব সভাপতি বললেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণ কঠিন। এখানে দাম নির্ধারিত হয় ব্যবসায়ীদের বাঁশির সুরে। ফলে বাজারের নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতেও থাকতে হবে। এটা একটা সাময়িক সমাধান হতে পারে কিন্তু এখানেও তো ভয়। সরকারের মন্ত্রীদের সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রণ করবে কে?
লেখক: রাজনৈতিক সংগঠক ও কলামিস্ট
খুব কিছু ভুল না করলে কেরল স্টোরির ডিরেক্টর সুদীপ্ত সেনকে আমি চিনতাম। ছবিটির বিষয় এখন সবাই জানেন। নিরীহ অন্য সম্প্রদায়ের মেয়েদের কীভাবে মগজ ধোলাই করে আতঙ্কবাদী বানানো হচ্ছে। কিছু লেখার আগে চুপচাপ বসে তরুণ সুদীপ্তর বুদ্ধিদীপ্ত মুখটা মনে করার চেষ্টা করছি। আর ভাবছি, অন্য সম্প্রদায়ের মেয়েদের না হয় প্রেমের ফাঁদে ফেলে বা অন্যান্য বিষয়ের লোভ দেখিয়ে আইএসএসের চর করে তোলা হচ্ছে, কিন্তু একদা সহজ, হাসিখুশি কার প্রলোভনে এভাবে চরম ইসলামফোবিক হয়ে উঠল সেটা নিয়েও তো প্রশ্ন তোলা যায়।
একটা কথা প্রায়ই বলি, কেউ মানতে চান না। ভারতের অন্যান্য সব জায়গায় হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির আগ্রাসন বাড়ছে। গুজরাট, উত্তর প্রদেশ, আসাম তো বহুদিন ধরেই হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ল্যাবরেটরি। কিন্তু যদি তাত্ত্বিক ভিত্তির কথা বলেন, আমি বলব, মূল ঘাঁটি নিঃসন্দেহে পশ্চিমবঙ্গের বর্ণবাদী উচ্চবর্গের হিন্দু মন। এ রাজ্যে বিপ্লব বিদ্রোহের পাশাপাশি চরম দক্ষিণপন্থি রাজনীতির অবস্থান দীর্ঘদিনের। সুদীপ্ত কলকাতা থেকেই নিশ্চিত আরএসএস মন্ত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দীক্ষিত। দিল্লির স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার পরে খোলামেলা দক্ষিণপন্থি হতে সমস্যা হয়নি।
ব্যক্তি সুদীপ্ত সেন নিশ্চিত আমার আলোচনার বিষয় নয়। বরং একজন সামান্য প্রামাণ্যচিত্র পরিচালক হিসেবে বাণিজ্য সফলতার কারণে ওকে অভিনন্দন জানাই। তবে কোটি কোটি টাকা মুনাফা করতে যে পথটা ও বেছে নিয়েছেন তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। কেরালা স্টোরি নিয়ে আলোচনা করাটাই আমার কাছে বাহুল্য। পরিচালক নিজেও জানেন এই পুরোদস্তুর ইসলামফোবিক ছবি নির্মাণের উদ্দেশ্য এ দেশের শাসকদের মনোরঞ্জন করে তাদের হাতে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের অস্ত্র তুলে দেওয়া।
এর আগে বিবেক অগ্নিহোত্রী করেছিলেন কাশ্মীর ফাইলস। তারও আগে মাওবাদী রাজনীতির নেতিবাচক বিষয়কে রং চড়িয়ে বিবেক করেছিলেন বুদ্ধ ইন দ্য ট্রাফিক জ্যাম। ২০১৮ সালে সুদীপ্ত সেন করেছিলেন এক ডকুমেন্টারি। ইন দ্য নেম অব লাভ। তারই সম্প্রসারিত রূপ এই কেরালা স্টোরি। বিবেক অগ্নিহোত্রীর ছবি গোয়ায় আন্তর্জাতিক মহল যেভাবে ছিছিক্কার করেছিল তার ফলেই বোধহয় বিবেকের জায়গায় অপেক্ষাকৃত নতুন সুদীপ্ত সেনকে বিজেপির প্রমোট করার চেষ্টা।
এও হতে পারে, এক বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালককে সামনে নিয়ে আসার পেছনে চব্বিশ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সাফল্যের রণকৌশল। নতুন এক আইকন। বাঙালি জনগণের একাংশকে বলা, দ্যাখো দ্যাখো একজন বঙ্গসন্তান কেমন সাহস করে সত্যি কথা বলে তথাকথিত সেক্যুলারদের মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছেন। তোমরা আর কতকাল ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বিশ্বাস করবে!
নতুন করে সংঘ পরিবার এক সেøাগান এনেছে হিন্দু খতরে মে হায়। হিন্দু বিপন্ন। এই বিপন্ন পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে কী কী করতে হবে তার নিদান দেওয়াই কাশ্মীর ফাইলস বলুন বা এই কেরালা স্টোরির উদ্দেশ্য।
ফ্যাসিবাদী রাজনীতি নির্মাণের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে কোনো না কোনো কাল্পনিক শত্রুকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে, তাকে ঠেকাতে বিভেদ বিদ্বেষের বীজ পোঁতা। জার্মান ফ্যাসিস্ট বাহিনীর ছিল ইহুদি। ভারতে খ্রিস্টান ও মুসলমান। আমাদের মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কথায় কথায় প্রায়ই বলেন যে, ক্রোনলজি সমঝাইয়ে। মানে নানা ঘটনা যদি অতীত সময় ধরে খুঁটিয়ে লক্ষ করেন তাহলেই বোঝা যায়, কোনো ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। পরম্পরার মধ্যে লুকিয়ে থাকে নির্দিষ্ট দর্শন বা ভাবধারা।
বলা বাহুল্য, মাননীয় মন্ত্রী বিরোধী দলের প্রসঙ্গে এসব বলেন। তাদের অতীত দেখলেই বোঝা যায় যে, তারা কত ভয়ংকর। অথচ সংঘ পরিবারের ক্রোনলজি ঘাঁটলেই আপনি জানতে পারবেন এই দলগুলোর বিন্দুমাত্র গণতান্ত্রিক রীতিনীতির প্রতি আস্থা নেই। ধর্মীয় বিদ্বেষ তাদের সাফল্যের মূলধন। গোয়েবলস সাহেবের কাছ থেকে তারা আরেকটি গুণ রপ্ত করেছেন। তা হলো, মিথ্যা কখনো বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে একটু-আধটু নয়, অনর্গল, অনেক বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলতে হবে। যদি একটা পাখি মারা যায়, তবে বলতে হবে, দেখে এলাম অন্তত কয়েক লাখ পাখি মারা গেছে। দাঙ্গার সময় এই টেকনিক খুব কাজে দেয়। ১৯৪৬-এর কলকাতা, নোয়াখালী বা বিহারে মিথ্যা বলে বলে ক্ষমতা দখলের নোংরা কদর্য খেলায় মেতেছিলেন আমাদের রাজনীতিকরা। তারপরও যেখানে দাঙ্গা হয়েছে সেখানেই ওই গুজব টেকনিক কাজে লেগেছে। আধুনিক সময়ে গুজব ছড়াতে সিনেমার মতো শক্তিশালী মাধ্যম আর কী আছে!
হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিতে, বিজেপির সংস্কৃতিতে নির্দিষ্ট কিছু বিষয় বেছে নেওয়া হয়েছে অপর সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে জনমনে ঘৃণার জন্ম দিতে। তার প্রত্যেকটি আপনি পাবেন কাশ্মীর ফাইলস বা কেরালা স্টোরির মতো প্রোপাগান্ডা ফিল্মে।
বিজেপির শত্রু ঘায়েলের কিছু প্রিয় বিষয় রয়েছে। যা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণের মনে অল্পবিস্তর থাকলেও খুব স্পষ্ট নয়। যেমন লাভ জিহাদ। মুসলিম জনসংখ্যার বাড়বাড়ন্ত। কাশ্মীর কেন বিশেষ সুবিধা ভোগ করবে! কেন সেখানে অন্য প্রদেশের লোকে জমি কিনতে পারবে না! এই বিষয়গুলো নিয়েই তৈরি হচ্ছে একের পর এক ডকুমেন্টারি ও ফিচার ফিল্ম। সব কটিই সরকারি মদদে। কাশ্মীর ফাইলস বলুন কিংবা হালের কেরালা স্টোরি, বিজেপিশাসিত বিভিন্ন রাজ্যে তার প্রদর্শনে ট্যাক্স মওকুফ করা হয়। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী থেকে ক্ষমতার প্রভাবশালী অংশ উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন ছবিটির। একদিক দিয়ে হিন্দুত্ববাদী দর্শনের সেলুলয়েড ভার্সন এই ছবিগুলো।
বিজেপির কাজকে সমর্থন জোগানো এসব ফিল্মের উদ্দেশ্য। বিজেপি আরবান নকশাল বলে দেশের শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবীদের জেলে পুরছে, আপনি যদি আপত্তি তোলেন, তাই বিষয়টি জাস্টিফাই করতে নির্মিত হয়, বুদ্ধ ইন দ্য ট্রাফিক জ্যাম। ৩৭০ ধারা কেন বাতিল হবে তার সমর্থনে কাশ্মীর ফাইলস। আর বিভিন্ন রাজ্যে লাভ জেহাদের বিরুদ্ধে সংঘ বাহিনী লেঠেলের ভূমিকা নিয়ে আইনকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে বাধ্য হয়ে তাই এই চতুরতার কেরালা স্টোরি। যাতে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়া সহজ হয়। কাশ্মীরের ৩৭০ তো বাতিল হয়ে গেছে। জমি কেনা কঠিন নয়। জিজ্ঞেস করুন, হিমাচল প্রদেশের ৩৭১ বাতিল হয়েছে কি না! সেখানে সব জায়গায় জমি কেনা অন্য রাজ্যের লোকের পক্ষে বেআইনি নয় তো!
কেরালা স্টোরি নিয়ে আলোচনা করে লাভ নেই। সিনেমা কেমন হয়েছে! ক্যামেরা কেমন! এডিটিং, সাউন্ড এসব গৌণ। একটা ছবির টিজারে লেখা ছিল ৩২ হাজারের বেশি মেয়েকে ধর্মান্তরিত করে অন্য দেশে নিয়ে গিয়ে সন্ত্রাসবাদী করা হয়েছে। পরিচালক, প্রোডিউসারের কাছে কোর্ট খবরের সূত্র জানতে চাইলে তারা ভুল স্বীকার করে জানিয়ে দেয় যে, বত্রিশ হাজার হবে না। ওটা তিন হবে। কেরালার একাধিক সংগঠন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে জানিয়ে দিয়েছে, একটা কেস প্রমাণ যে করতে পারবে তাকে কোটি টাকা দেওয়া হবে। এখনো পর্যন্ত কেউই পরিচালকের পক্ষে কোনো তথ্য দিতে পারেনি। ২০২৪ যত এগোবে তত বিজেপির ব্যর্থতা ঢাকতে আরও বেশি বেশি এ ধরনের গোয়েবলসীয় সিনেমা হলে অবাক হব না।
লেখক : ভারতীয় প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা ও লেখক
ইমরান খান পাকিস্তানের ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তার প্রতি অবিচার হচ্ছে বা হতে পারে এই আশঙ্কা ও ক্ষোভে তার সমর্থকরা সেনা সদর থেকে শুরু করে কোর কমান্ডারের বাড়িতে আগুন দিয়েছে। তথাকথিত ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টেট’ পাকিস্তানের ইতিহাসে এটা এক অনন্য নজির। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এবং ইমরান খান আজ যে সাংঘর্ষিক অবস্থানে রয়েছে সেটা পুরো রাষ্ট্রের জন্য এক ক্রান্তিকাল বলা যেতেই পারে, ইমরান রুবিকন নদী পার হয়ে গেছেন। এখন তিনি জিতবেন বা ধ্বংস হবেন। জিতলে নিশ্চিত গণতন্ত্রের জয় হবে। পাকিস্তানের ইতিহাসে, প্রথমবার কোনো নেতা ও রাজনৈতিক শক্তির কাছে সত্যিকার অর্থে সেনাবাহিনী তথা এস্টাবলিশমেন্টের পরাজয় লেখা হবে। কিন্তু আসলে হবে কি?
বর্তমানে ইমরানের নেমেসিস পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর দুজন ব্যক্তি। একজন সেনাপ্রধান আসিম মুনির আর অন্যজন আইএসআই-এর ডিজি জেনারেল ফয়সাল নাসের। জেনারেল মুনির এর আগে আইএসআই-এর প্রধান থাকাকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে সমস্যা শুরু হয়। জেনারেল মুনিরের দাবি, তিনি ইমরান ও তার ক্যাবিনেটের লোকদের দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে তদন্ত করতে গেলে ইমরান রাগান্বিত হয়েছিলেন। মনে করেছিলেন, এরা তাদের এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে রাজনৈতিক শক্তিকে অবমাননা করছেন। ইমরানের অহং ও আত্মসম্মানবোধের জন্য তা ছিল অগ্রহণযোগ্য।
ইমরান, জেনারেল মুনিরের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই তাকে তার পদ থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তখনই সেনা ও ইমরানের মধ্যে টানাপড়েনের বিষয়টা জনসম্মুখে আসে। তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া, আসিম মুনিরের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর আদেশ মানতে রাজি ছিলেন না। শেষে ‘নো কনফিডেন্স’ ভোটে ইমরানকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়। জেনারেল বাজওয়া অবসরে যাওয়ার সময় শাহবাজ শরিফের সরকারকে দিয়ে ইমরানের শত্রু জেনারেল আসিম মুনিরকে সেনাপ্রধান হিসেবে অধিষ্ঠিত করে যান। বলাই যেতে পারে, আধুনিক কূটনৈতিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলে ক্লাসিক্যাল ‘প্রিন্সিপাল-এজেন্ট ডিলেমা’, সেটা আমরা এখানে দেখতে শুরু করি।
কারণ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ও পৃষ্ঠপোষকতাতেই ইমরানের রাজনীতির উত্থান। খেলোয়াড় হিসেবে তার জনপ্রিয়তা, কিংবা ক্যাপ্টেন হিসেবে ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয় তাকে রাজনীতিতে প্রবেশের সুযোগ করে দিলেও ঠিক একজন জনপ্রিয় জননেতা হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা দিতে পারেনি। এছাড়া, জীবনের একটা বড় সময় ধরে লাগামহীন ভোগবাদী পশ্চিমা জীবনাচার কিংবা বারবার সেলিব্রেটি জীবনের অবাধ যৌনাচার সম্পর্কিত নানান খবর তার ছায়া হয়েই ছিল। যা হোক, একটা সময় তিনি বুঝতে পারলেন কিংবা তাকে বুঝানো হলো যে পাকিস্তানের রাজনীতিতে সফল হতে হলে তাকে বদলাতে হবে। তিনি বদলালেন একেবারে খোলনলচে পালটে সম্পূর্ণ নতুন ব্যক্তিত্ব নিয়ে রাজনীতির মাঠে এলেন। এ সময়ে পাকিস্তানের মতো দেশে তৃতীয় বড় রাজনৈতিক শক্তির উত্থান এক অভূতপূর্ব ঘটনা। পাকিস্তানের তরুণ প্রজন্মকে তার মতো আশা আর কেউ জাগাতে পারেনি। দীর্ঘ দুই যুগের প্রচন্ড পরিশ্রম, হাটে-মাঠে-ঘাটে রাজনীতি করেও এ পর্যন্ত নির্বাচনের রাজনীতিতে ঠিক সুবিধা করতে না পারা ইমরান ২০১৮ সালের নির্বাচনে, আইএসআই ও সেনাবাহিনীর মদদে, সে সাফল্য পেয়ে যান।
গত নির্বাচনের সময় তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মুসলিম লিগ (এন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি দুদলকেই সেনা ছাউনির মদদে একেবারে কাবু করে ফেললেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিজেদের কর্র্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে এক ধরনের মিউজিক্যাল চেয়ার খেলে। ইমরানই একমাত্র রাজনৈতিক নেতা নন, যিনি পাকিস্তানি সেনার মদদে ক্ষমতায় গেছেন। জুলফিকার আলি ভুট্টো এবং নওয়াজ শরিফও এক সময় সেনাবাহিনীর মদদপুষ্ট ছিলেন। এদের দুজনের সঙ্গেও সেনার মধুচন্দ্রিমা একটা সময় শেষ হয়েছিল। নেওয়াজ শরিফ জীবন বাঁচাতে পারলেও ভুট্টোকে ফাঁসিতে ঝুলতে হয়েছিল। নেওয়াজ শরিফের বিকল্প হিসেবে দাঁড় করাতে গিয়ে পাকিস্তান আর্মি ও আইএসআই ইমরান খানকে পাকিস্তানের রাজনীতির অন্যতম বড় শক্তিতে পরিণত হতে সহায়তা করেছে। ইমরান নিজ গুণ ও কারিশমায় জনগণের মনে আশা জাগিয়েছেন। ইমরান নিজের শক্তি বুঝতে পেরে তার সেনা প্রভুদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিয়েছেন। নেওয়াজ শরিফও একটা সময় পাকিস্তান আর্মির প্রোটিজি হয়েই রাজনীতিতে আসন গেড়েছিলেন। তবে, নেওয়াজ আর ইমরানের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে- পাবলিক পারসেপশনে। জনতার কাছে আজ ইমরান সৎ আর নেওয়াজ দুর্নীতিবাজ। তবে কাদেরিয়া ট্রাস্ট কেইস থেকে আমরা যা দেখি তাতে ইমরানের সততা নিয়েও আজ খানিকটা প্রশ্ন উঠেছে।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে এক সময় হস্তক্ষেপ সেনাবাহিনী ও উচ্চ আদালতের তরফ থেকে হতো, এখনো হয়। তবে এখন রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের প্রয়োজনে সেনা ও আদালতকে তাদের রাজনীতির বয়ানে প্রায়ই টেনে আনে। আগে সেনাবাহিনী রাজনীতিবিদদের ব্যবহার করত, এখন রাজনীতিবিদরাও সেনাকে রাজনীতিতে নিজেদের মতো করে ব্যবহার করতে চান।
ইমরানের গণতন্ত্রের ব্র্যান্ডটি কিন্তু অতি বিপজ্জনক। ইতিমধ্যেই তিনি একজন অতি পপুলিস্ট ঘরানার নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। পপুলিজমকে বেঁচে থাকতে হলে অনেকাংশেই ঘৃণা এবং আদারাইজেশনের (ড়ঃযবৎরুধঃরড়হ) ওপর নির্ভর করতে হয়। ন্যাশনালিজম কিংবা কমিউনাল পরিচয়ভিত্তিক অধিকার আদায় করার প্রতিশ্রুতি, প্রথাগত রাজনৈতিক ধারার ব্যর্থতা, দুর্নীতি ও সুশাসনের অভাব ইত্যাদির আলোকে মূলত সংখ্যাগরিষ্ঠ আমজনতার ক্ষোভই এই ধারার রাজনীতির চালিকাশক্তি।
অধিকার আদায় কিংবা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে জিহাদের কথা বলে মাঠ গরম রাখলেও ইতিহাস বলে, এই ধারার নেতারা যুগে যুগে বিরোধী মতের অধিকার হরণে কিংবা দুর্নীতির দৌড়ে অন্য যে কোনো ক্ষমতাধরের চেয়ে বেশি বৈ কম যাননি। ইমরান কি পারবেন তা বদলাতে? তবে বাংলাদেশি হিসেবে আমার কাছে আশা জাগানিয়া বিষয় হচ্ছে এই চরম সংগ্রাম ও প্রতিবাদের মুহূর্তে ইমরান পাকিস্তানের এস্টাবলিশমেন্ট ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির সংগ্রাম, এই জাতির ওপর অত্যাচার, বৈষম্য, ধর্ষণ-গণহত্যা এবং সর্বোপরি বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও এই জাতির বিরুদ্ধে অন্যায্যতা ও অবিচারের বিষয়টি অনুধাবন করতে পারছেন বলে জনসম্মুখে স্বীকার করেছেন।
পাকিস্তান বর্তমানে এক চরম অর্থনৈতিক সংকট ও দুরবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে এই চরম বিশৃঙ্খল ও হিংসাত্মক রাজনৈতিক সংঘাতের ফলে যে দুটো সম্ভাব্য ফলাফল বেরিয়ে আসতে পারে দুটোই পাকিস্তান রাষ্ট্র এবং এই অঞ্চলের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এ লড়াই অনেকটাই পাকিস্তানের বহু আগে থেকে চলে আসা সিভিল-মিলিটারি দ্বন্দ্বের এক চূড়ান্ত রূপ।
গণতান্ত্রিক দেশে সশস্ত্র বাহিনী বেসামরিক রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধীনস্ত থাকার কথা। পাকিস্তাানে কখনোই সেটি হয়নি বা হতে দেওয়া হয়নি। পাকিস্তানে ইমরান জয়ী হোক বা সেনাবাহিনী জয়ী হোক, ভঙ্গুর ও ক্ষয়িষ্ণু অর্থনীতির পারমাণবিক শক্তিধর বিশ কোটি মানুষের রাষ্ট্র পাকিস্তান ও এর জনগণের জন্য অত্যন্ত কঠিন ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে বলেই অনেকের ধারণা।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ও লেখক
টাকা কোনো বিষয় না। একটু কুবুদ্ধি থাকলেই হয়। এটা সবার থাকে না। থাকলেও পারে না। কীভাবে তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারী কোটি কোটি টাকার মালিক হলেন, কীভাবে গাড়ি-বাড়ি করলেন সেটি তদন্তের ভার দুর্নীতি দমন কমিশনের। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী, মুহাম্মদ এয়াকুবের যদি এই পরিমাণ টাকা থাকে তাহলে এই প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিত্ত-বৈভবের পরিমাণ জানলে, অনেকেরই বেকুব হওয়ার দশা হবে এটা নিশ্চিত।
শুধু যমুনা অয়েল কোম্পানি না, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের আর্থিক খোঁজ নিলে, দেখা যাবে তারা টাকায় ভাসছেন। এসব প্রতিষ্ঠানে ঘুষ-দুর্নীতি এখন ওপেন সিক্রেট। এমন কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান নেই, যেখানে কাঠের টেবিলও ‘হাঁ’ করে না। দীর্ঘদিন থেকে এই অনিয়ম চলছে। সরকারের বিভিন্ন কর্তাব্যক্তি, মাঝে মধ্যে ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে হাঁক ছাড়েন। অনেকটা শূন্যে ছড়ি ঘোরানোর মতন। ফলে কথাগুলোকে কেউ পাত্তা দেন না। যেভাবে চলছে, সেভাবেই চলবে। ঘুষ চলবে, দুর্নীতি চলবে পারলে ঠেকান! এই ঠেকাঠেকির ফাঁপরে পড়েছে জনগণ। অন্যদিকে, সরকারি প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ কর্মকর্তা এবং কর্মচারীর কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তারা সরকারের কাছ থেকে নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন, আবার ঘুষও খাচ্ছেন। যে কারণে, সামাজিক বাজারে, অসামাজিক কাজ করে এরাই হচ্ছেন সম্মানিত এবং পূজনীয়। যে সমাজে অর্থই ব্যক্তির মর্যাদা নির্ধারণ করে, সেই সমাজে এই ধরনের কর্মকা- বন্ধ করা দুরূহ।
প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। প্রভিডেন্ট ফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন এয়াকুব। যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন। স্থানীয়রা বলছেন, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো। আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের
কাছে ভাড়া দিয়েছেন। দুদকের অনুসন্ধানে এর প্রাথমিক সত্যতাও মিলেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই মুহূর্তে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে সিবিএ নেতা এয়াকুবের বিরুদ্ধে? অনুসন্ধান করবেন কোন পক্ষ! নিশ্চয়ই তারা সরকারি কর্মচারী।
এই কারণেই সমাজে একটি বদ্ধমূল ধারণা তৈরি হয়েছে, যে করেই হোক সন্তানকে সরকারি চাকরিতে ঢোকাতে হবে। তাতে দুই ধরনের সুবিধা। চাকরি যাওয়ার কোনো ভয় নেই, বড়জোর অফিস পরিবর্তন হতে পারে। এর সঙ্গে আবার ঘুষের সুবিধা! নিশ্চিত জীবন। এই সুবিধার জন্যই এখন, সরকারি চাকরি পেতেও ঘুষ লাগে! এসবের জন্যই, হাজার হাজার শিক্ষিত ছেলে-মেয়ে প্রতি বছর সরকারি চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ফেরে। সমাজের এই ভয়ংকর অবক্ষয়ে কোনো মহলের বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই।
দেশের সামাজিক কাঠামোর মনস্তাত্ত্বিক এই অধঃপতন, কোন কৌশলে আবার ঊর্ধ্বমুখী করা যাবে তা আমাদের জানা নেই। তবে এটুকু জানি একটি সভ্য, সুন্দর, শান্তিপূর্ণ সমাজব্যবস্থা চাইলে এসবের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ করা কঠিন কোনো বিষয় নয়, আন্তরিকতা থাকলেই হয়। প্রত্যাশা থাকবে, সুষ্ঠু তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে, মুহাম্মদ এয়াকুবের বিরুদ্ধে যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কোনো ধরনের রাজনৈতিক কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হবে আত্মঘাতী।
অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা, অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া এবং শরীরচর্চার অভাবের বেশির ভাগ মানুষেরই হার্ট খারাপ হচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে 'খারাপ' কোলেস্টেরল— এ সব মানুষের নিত্যসঙ্গী। তবে রক্তের বিভিন্ন উপাদানের মাত্রা যদি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে যায়, তা হলে ওষুধ তো খেতেই হবে। সঙ্গে পছন্দের প্রায় সব খাবারেই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়ে যাবে। তবে পুষ্টিবিদেরা বলছেন, রোজকার খাবারে কিছু পরিবর্তন আনলেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই হার্টের যাবতীয় সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
বিরিয়ানি হোক বা পোলাও সঙ্গে মাটনের কোনো পদ ছাড়া জমে না। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, এ ধরনের 'লাল' মাংস খেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তাই খাসির বদলে মুরগির মাংস খাওয়া তুলনায় স্বাস্থ্যকর।
অনেক চেষ্টা করেও ভাজাভুজি খাবারের লোভ সামলাতে পারছেন না। এই অভ্যাসের ফলেই কিন্তু অজান্তেই বেশির ভাগ মানুষের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে চলেছে। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ভাজার বদলে যদি বেকড খাবার খাওয়ার অভ্যাস করা যায়, তবে এই সমস্যা অনেকটাই ঠেকিয়ে রাখা যেতে পারে।
সকালের নাশতায় পাউরুটি খান অনেকেই। কিন্তু পুষ্টিবিদেরা বলছেন, পাউরুটির ওপর মাখন দেওয়ার অভ্যাস ছাড়তে হবে। শুধু পাউরুটি খেতে যদি সমস্যা হয়, তবে ডিম ফেটিয়ে তার মধ্যে পাউরুটি ডুবিয়ে, তা বেক করে নিন। স্বাদ এবং স্বাস্থ্য দুই-ই থাকবে।
মন খারাপ হলে মাঝে মধ্যেই আইসক্রিম খেয়ে ফেলেন। তৎক্ষণাৎ মন ভালো করতে এই টোটকা সত্যিই কার্যকর। কিন্তু সমস্যা হলো আইসক্রিম খাওয়ার অভ্যাসে রক্তে বাড়তে থাকে কোলেস্টেরল। পরবর্তীতে যা হৃদরোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
গরমে তেষ্টা মেটাতে বার বার ঠাণ্ডা পানীয়তে চুমুক দিচ্ছেন। কিন্তু এ পানীয়ে থাকা কৃত্রিম শর্করা যে হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করছে, টের পেয়েছেন কী? পুষ্টিবিদেরা বলছেন, এই তেষ্টা মেটাতে এবং স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে নরম পানীয় না খেয়ে ফল থেকে তৈরি রস খেতে পারেন।
পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলে নয়, এশিয়া কাপ হবে একটি দেশে। আর সেটা শ্রীলংকা। পাকিস্তান তাতে অংশ না নিতে চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে এশিয়া কাপ।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দা টেলিগ্রাফ।
বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ যিনি এসিসিরও প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছেন, শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ খেলতে রাজি আছে ভারতসহ চার পূর্ণ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে এসিসির নির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে। পাকিস্তান রাজি না হলে ৫ দল নিয়েই হবে এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ অন্য কোনো দেশে আয়োজনে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজমা শেঠির দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন জয় শাহ। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে ভারতেই খেলতে হবে, না হলে না খেলবে। এ বার্তা পিসিবি এবং আইসিসির দুই কর্মকর্তা যারা সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করেন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
রিয়াল মাদ্রিদের সংগে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন। ৪০ কোটি ইউরো চুক্তিতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আলো ইত্তিহাদে যোগ দিচ্ছেন।
ক'দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল করিম বেনজেমাকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন -এমন কথাও চাউর হয় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে।
কিন্তু সব কিছুতে জল ঢাললেন ব্যালন ডি অর জয়ী। স্পেনের গণমাধ্যম মার্কার দেয়া মার্কা লিজেন্ড এওয়ার্ড নিতে গিয়ে বললেন, 'আমি যখন রিয়ালেই আছি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেনো বলবো। ইন্টারনেটে যা প্রচার হচ্ছে তা ঠিক না। আমি এখানে ভালো আছি। শনিবার রিয়ালের ম্যাচ আছে, সব ফোকাস আমার সেই ম্যাচকে নিয়ে।'
ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে তাকে রিয়ালে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেনজেমা বলেন, '২১ বছরের আমি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই ক্লাবে খেলার মতো আর কিছু হয় না, সান্তিয়াগো বার্নাবু দারুন এক জায়গা।'
রিয়ালের সংগে চুক্তির মেয়াদ এ মাসেই শেষ হচ্ছে বেনজেমার।
পলিথিন বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, বিভিন্ন ধরনের পলিথিনজাত মিনিপ্যাকের উৎপাদন, ব্যবহার ও এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সবগুলোই সমস্যা। পলিথিন উৎপাদন ও এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে বাতাসে যেমন কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়, অন্যদিকে এর ব্যবহার প্রাণিকুল ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত। প্লাস্টিকের কণা এখন মানুষের রক্তে, মায়ের দুধে, সামুদ্রিক মাছে। শুধু ব্যবহার সম্পর্কিত সমস্যা না, পলিথিনের মাধ্যমে সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও বেশি সমস্যাসংকুল। কারণ এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, কৃষির উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে, শহরের নর্দমা বন্ধ করে দিচ্ছে তা আবার রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে এবং সবশেষে শহরকে বসবাসের অনুপযোগী করে দিচ্ছে।
এতসব সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ না করা বা বন্ধ করতে না পারার সংকট কোথায় সেটা বুঝতে আমাদের সমস্যা হয়। পলিথিন বন্ধে আইন আছে, নানা ধরনের প্যাকেজিংয়ে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাও অনেক দিন হলো। অন্যদিকে বেশ কিছুদিন ধরে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু তা সহসাই হচ্ছে না। ‘সোনালি ব্যাগ’ নিয়ে অনেক ঢাকঢোল পেটানো হয়েছে কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেই সোনালি স্বপ্ন কেমন জানি ফ্যাকাশে হয়ে আসছে এতদিনে।
পলিথিনের ব্যবহার শহরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি যার অনেকটাই অভ্যাসগত কারণে। শহরের মানুষের পলিথিনের ওপর অভ্যস্ততা যেমন বেশি, তেমনি তারা ভুক্তভোগীও বেশি। রাস্তাঘাট, ড্রেন নোংরা হয়ে তো থাকেই, বাড়তি পাওনা দুর্গন্ধ, তৈরি হয় জলজট ও ডেঙ্গুর মতো রোগবালাই। বাসাবাড়িতে পলিথিনের ব্যবহার তো আছেই, পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য, বেকারিজাত পণ্যের পলিথিনের ব্যবহার ও পলিথিনের মোড়ক যত্রতত্র নিক্ষেপই এই অবস্থার জন্য দায়ী। শুধু ঢাকা নয় অন্যান্য ছোট-বড় সব শহরে প্রায় একই অবস্থা। আর এগুলোই হচ্ছে পলিথিন নির্ভর অর্থনীতির অনুষঙ্গ কিন্তু এর অনর্থনীতি হচ্ছে পলিথিনের কারণে পরিবেশদূষণ ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণভাবে পলিথিন ব্যবহারের ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্যমান নির্ধারণ করা হয় না। তবে দূষণের মাত্রা এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে পলিথিনের অর্থনীতির থেকে এর ক্ষয়ক্ষতির অর্থনীতি যে অনেক বড় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আসছে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম অনুঘটক হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। অর্থমন্ত্রী তার এবারের বাজেট (২০২৩-২৪) বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলেছেন, পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ এর উল্লেখ করেছেন কিন্তু পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে দৃশ্যমান কোনো রূপকল্প এবারের বাজেটে উল্লেখ করতে সমর্থ হননি। এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে’। গত বছরের এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘একটাই পৃথিবী’। পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের যত্রতত্র ব্যবহার আমাদের এই একমাত্র পৃথিবীকে দূষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আইন হয়েছে ২০০২-এ এবং আজ ২০২৩ সাল, এই দীর্ঘ ২১ বছরেও এই আইনের বাস্তবায়ন করা যায়নি। যদিও এবারের বাজেট বক্তৃতায় প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার এর মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাস্টিক সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। ধরেই নেওয়া যায় শুল্ক বৃদ্ধির এই হার কোনোভাবে পলিথিন নিরুৎসাহিত করার জায়গা থেকে না বরঞ্চ কিছুটা বাড়তি কর আদায়ের চিন্তা থেকে।
পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সস্তা পলিথিনের ব্যবহার টেকসই ভোগের ধারণার জন্যও কোনোভাবে সহায়ক না। বরঞ্চ এটা এমন এক ধরনের মনস্তত্ত্ব তৈরি করে যা শুধু পরিবেশকেই ধ্বংস করে। যদিও বিশ্বব্যাপী টেকসই ভোগের ধারণার ওপর ভিত্তি করে এখন ‘সার্কুলার অর্থনীতির’ ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সার্কুলার অর্থনীতি শুধু অপচয় কমায় না, প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা, দূষণরোধ, বর্জ্য থেকে তৈরি পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে। তাই পরিবেশগত ঝুঁকি, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা এবং এ সংশ্লিষ্ট অভীষ্ট ২০৩০ সমূহ অর্জনে সার্কুলার অর্থনীতি অন্যতম হাতিয়ার।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা শহরে রাস্তায় কোনো পেট বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায় না। এর কারণ হচ্ছে এখন পেট বোতলের প্রায় শতভাগ রিসাইকেল করা হয় এবং পেট বোতল সংগ্রহের জন্য অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে হলেও একটি সংগ্রহ-লাইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু পলিথিনের ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। তবে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার সার্কুলার ইকোনমির ধারণার সঙ্গেও একেবারে মানানসই না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রযুক্তিগতভাবে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন রিসাইকেল করা অসম্ভব না হলেও এটি একটি জটিল এবং অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল যে কারণে পেট বোতলের মতো রাস্তা থেকে পলিথিন সংগ্রহ করতে কাউকে দেখা যায় না উলটো রাস্তাঘাটে এখানে সেখানে পলিথিন পড়ে থাকে।
পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের অনর্থনীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখন প্রথম দরকার এর ব্যবহার বন্ধ করা, এর ব্যবহারকে অনেক বেশি দামি করে ফেলতে হবে আর এর প্রতিফলন থাকতে হবে বাজেটে। দ্বিতীয়ত, সার্কুলার অর্থনৈতিক চর্চার উৎসাহিত করার জন্য পরিকল্পনা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, পলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগের মতো উদ্যোগগুলোকে সরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ ও বেসরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। সরকার প্রতি বছর বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবেশ দিবস পালন করে কিন্তু দিবস পালন শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই হবে না এর উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে তার ওপরও নজর দিতে হবে। তা নাহলে পলিথিনের অর্থনীতির নামে শুধু অনর্থনীতিকে বাড়িয়ে তোলা হবে, আর সেটা হবে টেকসই অর্থনীতি তৈরির সম্ভাবনার অপমৃত্যু।
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষের। এমন অবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না কেউ। তাই বলে গরমের ভয়ে ঘরে বসে থাকলে তো আর জীবন চলবে না। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে যেতে হবে। আর কর্মজীবীদের অফিস ও অন্যান্য কর্মস্থলে। অনেকেরই এই গরমেও কাজের প্রয়োজনে সারাদিন কেটে যায় বাইরে ঘুরে ঘুরেই। গরমকে মোকাবিলা করতে সঙ্গে এই প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো রাখলেই গরমের কাছে নিজেকে হার মানতে হবে না।
পানি পান
গরমের সময় শরীর থেকে স্বাভাবিক ভাবে অনেক বেশি ঘাম বের হয়ে থাকে। যার ফলে দেখা দিতে পারে পানি শূন্যতা। শরীরের মধ্যে যদি পানির পরিমাণ কমে যায় তাহলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। পানি শূন্যতা দূর করতে হলে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি খেতে হবে।
বিশুদ্ধ পানি খাওয়ার পাশাপাশি ফলের জুস কিংবা কচি ডাবের পানি খেতে পারেন। দেহের ত্বককে ভালো রাখতে পানি, শরবত বা জুস পানের বিকল্প নেই। গরমে সময় প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ লিটার বিশুদ্ধ পানি খেলে ডিহাইড্রেশন এবং পানি শূণ্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
খাবার স্যালাইন
গরমের সময় ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণ বের হতে থাকে যার ফলে শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায়। এ থেকে মুক্তি পেতে খাবার স্যালাইন খেতে পারেন। বিকেল বেলা খাবার স্যালাইন খেলে অতিরিক্ত গরমেও শরীরে সতেজতা ফিরে আসে। আবার অনেকেই স্বাদযুক্ত স্যালাইন খান যেমন, টেস্টি স্যালাইন। ভুল করেও এসব খাবেন না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হলো ওরস্যালাইন । তবে আপনাদের মধ্যে যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা খাবার স্যালাইন খাওয়ার আগে ভালো কোনো ডাক্তারের মতামত নেওয়া উচিত।
রেড মিট পরিহার করুন
অতিরিক্ত গরমের সময় গরু-ছাগলের মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ গরমের সময় বা অতিরিক্ত গরমের সময় গরুর মাংস খেলে শরীরের তাপমাত্রা অনেকাংশে বেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গরু-ছাগলের মাংস ছেড়ে মাছ খেতে পারেন। আর অতিরিক্ত গরমে অবশ্যই অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার থেকে দূরে থাকুন।
সবুজ শাক সবজি
গরমের সময় শরীরকে সুস্থ রাখতে বেশি বেশি করে সবুজ শাক সবজি খেতে পারেন। সবুজ শাক সবজিতে অধিক পরিমাণে ভিটামিন মিনারেল এবং খনিজ উপাদান থাকে। এতে করে অতিরিক্ত গরমেও শরীর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।তাছাড়াও খেতে পারেন তরমুজ যা শরীরে এনার্জি দিতে পারে।
টক জাতীয় ফল
প্রচুর গরমে সুস্থ থাকার উপায় হিসেবে টক জাতীয় ফল খেতে পারেন। যেমন: কামরাঙ্গা, লেবু, তেতুল, আমরা ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে অতিরিক্ত টক ফল খাওয়া ঠিক নয়। যদি কারো এসিডিটির সমস্যা থেকে থাকে তবে টক জাতীয় ফল খাওয়া হতে বিরত থাকুন। টক জাতীয় ফল খালি পেটে খাওয়া যাবে না। এতে করে আরো বেশী অসুস্থ হয়ে পারতে পাবেন।
টক দই
অতিরিক্ত গরমে সুস্থ থাকতে হলে টক দই খেতে পারেন। যারা করা রোদে কাজ করেন বিশেষ করে তাদের জন্য অনেক উপকারী হলো টক দই। রোদের প্রচুর তাপ থেকে শরীরকে কিছুটা হলেও রক্ষা করবে টক দই। টক দই শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে অনেকাংশে সাহায্য করে।
প্রতিদিন গোসল করুন
গরমের সময় প্রতিদিন এক বার করে হলেও গোসল করতে হবে। যদি পারেন তবে দিনে ২ বার গোসল করতে পারেন। গোসল করার ক্ষেত্রে একটু সাবধান থাকতে হবে। বাহির থেকে এসে সাথে সাথে গোসল করতে যাবেন না। একটু বিশ্রাম নিয়ে তারপর গোসল করতে যাবেন। কারণ হঠাৎ করে গরম থেকে এসে গোসল করলে ঠাণ্ডা লাগতে পারে।
ঘরেই অবস্থান করুন
অতিরিক্ত গরমে বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বাহিরে যাবেন না । যদিও বিভিন্ন কারণে বাহিরে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে রোদ থেকে বাঁচতে প্রয়োজনে ছাতা ব্যবহার করতে পারেন। যতটুকু সম্ভব ছায়াযুক্ত স্থানে থাকার চেষ্টা করুন।
শারীরিক পরিশ্রম কম করুন
গরমের সময় অনেকেই আছে অতিরিক্ত ব্যায়াম করে থাকেন এমনটি করা যাবে না কারণ অতিরিক্ত গরমে শরীরের তাপমাত্রা একটু বেশি হয়ে থাকে।
পাতলা সুতি কাপড় পরিধান করা
গরমের সময় পাতলা সুতি কাপড় পরা দরকার। কারণ সাদা কাপড় তাপ শোষণ করতে পারে না বরং তাপের প্রতিফলন ঘটায় ও গরম কম লাগে।
পারফিউম ব্যবহারে সতর্ক থাকুন
অতিরিক্ত গরমে ঘামের গন্ধ থেকে বেচে থাকার জন্য অনেকেই সুগন্ধি ব্যবহার করে থাকে। তবে অতিরিক্ত গরমে পারফিউম ব্যবহার না করাটাই উত্তম কাজ। কারণ, পারফিউম গরম লাগা বৃদ্ধি করে দেয়।
যদিও ব্যবহার করতে হয় তাহলে হালকা গন্ধের সুগন্ধি ব্যবহার করতে পাবেন। বাজারে কিছু সুগন্ধি পাওয়া যায় যেগুলো ব্যবহার করলে ঠাণ্ডা লাগে। সেগুলো ব্যবহার করলে আরো ভালো হয়।
ধূমপান পরিত্যাগ করা
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা কিনা ধূমপান করে থাকি। ধূমপান করলে শরীরের তাপমাত্রা তুলনামূলক ভাবে বেড়ে যায়। তাই প্রচন্ত গরমে সুস্থ থাকতে হলে ধূমপান পরিত্যাগ করতে হবে। যদিও এই অভ্যাসটি সহজে পরিত্যাগ করা যায় না। তাই যতটুকু পারেন ধূমপান কম করার চেষ্টা করুন।
চা কফি পরিত্যাগ করুন
চা, কফি বা অ্যালকোহল খেলে শরীরের তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পায়। আর যদি অতিরিক্ত গরমে চা, কফি বা অ্যালকোহল খেয়ে থাকেন তাহলে শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পাবে যার ফলে হতে পারে হিটস্ট্রোক। তাই গরমের সময় চা কফি বা অ্যালকোহল খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে।
শান্ত থাকুন
মন মেজাজ গরম থাকলে শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। রাগের কারণে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং অতিরিক্ত গরমের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় আর দুই তাপমাত্রা এক সঙ্গে হলে কি অবস্থা হতে পারে একবার হলেও সেটা ভেবে দেখবেন।
বিশেষজ্ঞরা অতিরিক্ত গরমে শান্ত থাকার জন্য মতামত দিয়ে থাকে। বিশেষ করে যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের জন্য শান্ত থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।