
মনুসংহিতায় চতুরাশ্রমের তৃতীয় আশ্রম ‘বানপ্রস্থ’ কি কেবলই একটা ব্যক্তিগত আধ্যাত্মিক এষণা, নাকি নীরবে ও শান্তিপূর্ণভাবে সামাজিক ক্ষমতা হস্তান্তর। অন্যভাবে বললে সংসারের বোঝা নামিয়ে বা দায়িত্ব শেষ করে নিজেকে সময় দেওয়ার, ফেলে আসা জীবনকে অবসরে উদযাপনের সুযোগ।
পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী বলেছেন, ‘শাস্ত্রকারেরা যখন বানপ্রস্থের বিধান দিচ্ছেন, তখন তার পেছনে একটা সামাজিক কারণ ছিল। তার থেকেও বড় ব্যাপার, ব্যক্তিত্বের সংঘাত এড়ানোর জন্য বদলে যাওয়া পৃথিবীকে নতুন প্রজন্মের হাতে সমর্পণ করে বনবাসী হওয়ার ওই বিধান দেওয়া হয়েছিল।’ আজকের ভাষায় বলতে গেলে, ছেলেমেয়েকে তাদের সময় ও সংসার যাপনে অন্তরায় বা বোঝা যেন হতে না হয়, তার জন্যই ওই বানপ্রস্থের বিধান।
এ কালের ‘বানপ্রস্থ’দের দেখা মেলে বৃদ্ধাশ্রমে। বৃদ্ধাশ্রম, ওল্ডহোম, প্রবীণনিবাস শব্দগুলো শুনলেই আমার ‘অ্যাপল ট্রি’-এর কথা মনে পড়ে। এক বড় ভাই একদিন ফোনে ডেকে নিয়ে তাদের এই প্রতিষ্ঠানটির গল্প শোনান। এটা একটি নেক্সট জেনারেশন ওল্ডহোম কনসেপ্ট। ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা ও বসবাসরত ৬/৭ জন বন্ধু মিলে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ার কথা ভাবছিলেন। তারা সবাই কর্মক্ষেত্রে সফল অর্থেই প্রতিষ্ঠিত। তারা চান না, বৃদ্ধ বয়সে তাদের কথা চিন্তা করে সন্তানরা যেন নিজেদের মবিলিটিকে সংকুচিত করে। তারা মনে করেন, সন্তানরা যে যার মতো প্রতিষ্ঠা পাক, পেশা বেছে নিক, পৃথিবীর যে কোনো স্থানে প্রয়োজন, সুবিধা ও পছন্দমতো আবাস গড়ে নিক। তাদের এই বেছে নেওয়ার পেছনে পিছুটান হয়ে থাকতে চান না তারা। আইডিয়া হিসেবে খুবই চমৎকার। জানতে চাইলাম, তার মানে আপনারা কি অবসর নিলে সবাই পরিবার ছেড়ে আপনাদের আপেল গাছের তলে আশ্রয় নেবেন, ছেলেমেয়েরা মানবে। তিনি বললেন, ব্যাপারটা তেমন না। প্রতিষ্ঠানটি করে সন্তানদের এই বার্তাই দিতে চান যে- তোমাদের জন্য আমরা বোঝা নই। তাদের যেন কখনই মনে না হয় বা শুনতে না হয় যে, দেখো বাবা-মাকে একা ফেলে রেখে তারা নিজেদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে আছে। সেই বড় ভাই সব শেষে যা বললেন, দিন-দুনিয়ার সব কাজ, দায়িত্ব, সাফল্য, ব্যর্থতা তো দিন শেষে বন্ধুদের সঙ্গেই শেয়ার করে, খোশগল্প করে বেশি সুখ আমাদের, বুড়ো-বুড়িদেরও তাই।
কিছুদিন আগে আমরা মা দিবস পালন করলাম। সামনে আছে বাবা দিবস। আছে প্রবীণ দিবসও। এসব দিবসে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘বৃদ্ধাশ্রম’ আলোচনায় আসে। নানারকম প্রতিবেদন হয়, পোস্ট দেওয়া হয়। এসবে মূল সুর থাকে অবহেলার, করুণার। সম্প্রতি অকৃতদার কবি হেলাল হাফিজের অসুস্থতাও এমন আলাপের সূত্র হয়েছিল। আমাদের সমাজে কোনো এক অজ্ঞাত কারণে প্রবীণদের, বৃদ্ধদের অত্যন্ত করুণার চোখে দেখা হয়। সরকারি অফিসে কোনো কাজ নিয়ে গেলে শুনতে হয়, আপনি একা কেন এসেছেন, আপনার ছেলেমেয়ে কোথায়। যেন তারা বয়স্ক হয়েছেন মানেই যাবতীয় কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। সেই মানসিকতারই প্রকাশ ঘটে বৃদ্ধাশ্রম সম্পর্কে চিন্তাভাবনায়। বৃদ্ধাশ্রম মানেই যেন এক চিলতে চৌকিতে শুয়ে অবহেলা আর অনাদরে মৃত্যুর প্রতীক্ষা করা। অথচ আদপেই ব্যাপারটা তেমন নয়। কিছু ঘটনা হয়তো আছে যা অমানবিক, কিন্তু সব গল্প এক নয়। যেমন যে কোনো যুদ্ধে ব্যক্তি, সমাজ, নৈতিকতার চূড়ান্ত ক্ষতি হলেও; যুদ্ধের পটভূমিতে নির্মাণ করা প্রায় সব সিনেমায় একটি প্রেমের গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়Ñ তেমনি বৃদ্ধাশ্রম-কেন্দ্রিক আমাদের প্রচারণা ও আলাপ-আলোচনায় একটি অবহেলার, করুণার গল্পই খোঁজা হয়। ফলে অনেকে যে বৃদ্ধাশ্রমে নতুন করে বাঁচতে আসেন, সেই গল্পটা অজানা থেকে যায়।
‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন বলছে, দেশে ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ৫৩ লাখ ২৬ হাজার ৭১৯। মোট জনসংখ্যার ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ। জনশুমারি বলছে, দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম। অন্যদিকে প্রবীণ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি। জাতিসংঘের জনসংখ্যা উন্নয়ন তহবিলের প্রাক্কলন বলছে, ২০২৫-২৬ সালে প্রবীণের সংখ্যা হবে ২ কোটি। ২০৫০ সালে ওই সংখ্যা হবে সাড়ে ৪ কোটি, যা তখনকার জনসংখ্যার ২১ শতাংশ হবে। ফলে আমাদের সেভাবে প্রস্তুতিও নিতে হবে। আমাদের দেশের যৌথ পরিবারের হই-হুল্লোড়ের মধ্যে আগে যখন শুনতাম বিদেশে নাকি বুড়ো হলে মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসে, তখন ওসব দেশের লোকদের প্রতি ঘৃণা ও করুণা হতো। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। এখন বৃদ্ধাশ্রম বা প্রবীণনিবাস সময়ের দাবি। আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত বৃদ্ধাশ্রমগুলো যেন বয়স্কদের অবহেলা না করে। ধরলাম, স্বজনদের অবহেলায় কেউ বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে এসেছেন টাকার বিনিময়ে। এখানে ওই বৃদ্ধ বা বৃদ্ধার স্বজনদের অবহেলার সামাজিক বিচার করার চেয়ে শেষ বয়সে তিনি যেন টাকা দিয়ে যে সেবা কিনছেন তার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করাই গুরুত্বপূর্ণ। আবার তার স্বজনদের অবহেলার কথা তুলে ধরে তাকে ভালনারেবল করে তোলার দরকারটা কী? এতে কি ওইসব বৃদ্ধাশ্রম, যারা টাকা নিয়েছে কিন্তু সেবা দিচ্ছে না তাদের অপরাধ আড়াল করে সেই বৃদ্ধ লোকটিকেই ঠকানোর সামাজিক পরিসর তৈরি হয় না?
আশার কথা আমাদের দেশেও বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে আতঙ্ক বা ছুঁতমার্গের দিন শেষ হয়ে আসছে। কিছুদিন পর প্রবীণনিবাস প্রবীণদের কাছে ঈপ্সিত হয়ে উঠবে বলেও অনেকে বিশ্বাস করেন। কারণ, নিবাসগুলো যত দিন যাচ্ছে, ততই চাহিদাভিত্তিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে হাজির হচ্ছে। উন্নত বিশ্বের আদলে নিরাপত্তা, চিকিৎসা, বইপড়া, বিনোদন, ঘুরে বেড়ানো সবই থাকছে এখানে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় দেশের ছয়টি বিভাগীয় সদরে প্রবীণনিবাস আছে বলে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি জানান। প্রতিটিতে ৫০ জনের থাকার ব্যবস্থা আছে। যাদের টাকা আছে, তারা হয়তো বেসরকারি বৃদ্ধাশ্রমের সেবা নিতে পারবেন কিন্তু আর্থিকভাবে অসচ্ছলদের ক্ষেত্রে? তাই প্রতিটি উপজেলায় প্রবীণদের সরকারি আবাস গড়ে তোলা দরকার। প্রবীণদের জন্য সর্বজনীন পেনশন ভাতায়ও সীমাবদ্ধতা আছে। প্রবীণদের সম্পদ হিসেবে ভাবতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, জনসংখ্যার যে জনমিতির সুবিধা এখন বাংলাদেশে আছে, তা ৩০ থেকে ৩৫ বছর পর আর থাকবে না। এই প্রবীণদের কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা এখন থেকেই ভাবতে হবে। ভাতা দেওয়ার পরিবর্তে কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ ফাউন্ডেশন গঠনের পরামর্শ দেন তারা। জন্মহার কমাতে কমাতে চীন-জাপানকে এখন বৃদ্ধদের দেশ বলে বিবেচনা করা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের প্রবীণ জনগোষ্ঠীর ২৬ শতাংশ অপুষ্টিতে ভুগছেন, এবং ৬২ শতাংশ রয়েছেন অপুষ্টির ঝুঁকিতে। গবেষণায় অংশ নেওয়া প্রবীণদের মধ্যে যারা সঙ্গী ছাড়া জীবন কাটাচ্ছেন তাদের মধ্যে অপুষ্টি এবং অপুষ্টির ঝুঁকির মাত্রা ছিল যথাক্রমে ২৮.৬ এবং ৬৫.৩ শতাংশ। যাদের মানসিক স্বাস্থ্য স্বাভাবিক (১২.৫ শতাংশ) তাদের তুলনায় যারা হতাশাগ্রস্ত (৩৯.৩ শতাংশ) তাদের মধ্যে অপুষ্টির মাত্রা বেশি দেখা গেছে। ভারতের মুম্বাইয়ে প্রবীণদের ওপর চালানো গবেষণায় দেখা গেছে বৃদ্ধাশ্রম বা ওল্ডহোমে যেসব বয়স্ক ব্যক্তি থাকেন, তাদের চেয়ে ছেলেমেয়ে বা আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে থাকা বৃদ্ধরা বেশি বিষন্নতা ও হতাশায় ভোগেন। ওই একই গবেষণায় বলা হয়েছে, ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিদের সঙ্গে হয়তো বয়স্করা থাকতে চান কিন্তু প্রবীণরা তাদের বয়সীদের সঙ্গেই বেশি কোয়ালিটি টাইম কাটান। এক্ষেত্রে, গৃহবাসী কিন্তু একাকিত্বের শিকার হওয়ার চেয়ে বয়স্করা প্রবীণনিবাসেই ভালো থাকেন। কারণ সেখানে নিজের সময়ের মানুষের সঙ্গে সামাজিক গল্প থাকে।
এ কথা ঠিক যে টিভি, গিজার, ইন্টারনেট কানেকশন ইত্যাদি অত্যাধুনিক ব্যবস্থাসহ এইসব বৃদ্ধাবাসগুলোতে থাকার জন্য একটা ন্যূনতম আর্থিক সামর্থ্য জরুরি। জীবনের সঞ্চয়ের একটা বড় অংশ (অথবা সরকারি কর্মচারী হলে রিটায়ারমেন্ট বেনিফিট থেকে পাওয়া টাকার বেশ খানিকটা) ঢালতে না পারলে ওখানে প্রবেশাধিকার মেলে না।
কিন্তু আসল প্রশ্নটা আর্থিক সামর্থ্যরে নয়, মানসিকতার। টাকার জোর অনেকেরই থাকে, কিন্তু সময় থাকতে আত্মসম্মানের সঙ্গে রাজ্যপাট ছেড়ে আসার মতো মানসিক জোর সবার থাকে না। সবাই চায় ছেলেমেয়ের সংসারে কর্র্তৃত্ব করতে, নাতি-নাতনি পরিবৃত হয়ে, ছেলে-বউমার আদরে-সোহাগে জীবনের শেষ দিনগুলো কাটাতে। সে চাওয়ায় কোনো দোষ নেই, কিন্তু একটা নির্ভরশীলতার নিবিড় গল্প আছে। আজকাল অনেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধাই সেই নির্ভরশীলতা বা শেষ জীবনের ওই পরমুখাপেক্ষী হয়ে থাকার চিরন্তন ঐতিহ্যকে অস্বীকার করে নিজের মতো বাঁচতে চাইছেন।
হয়তো স্বজন-সংসার ফেলে আসা দিনের দীর্ঘশ্বাসের পরও প্রবীণনিবাসের জানালায় মুখ রেখে কোনো বৃদ্ধা গেয়ে উঠতে পারেন ‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে। তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে।’ আমাদের বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা মাথা উঁচু করে জাগুক তা সে গৃহে হোক বা বৃদ্ধাশ্রমে। অবহেলার গল্পে না, যাপনের আর অধিকারের গল্প দিয়ে তাদের আমরা শান্তি আর নিরাপত্তায় রাখি।
লেখক: কবি ও সাংবাদিক
আধুনিক জমানায় বৃদ্ধাশ্রম একটি জনপ্রিয় কনসেপ্ট। উন্নত দেশে ডে-কেয়ার সেন্টারের পাশাপাশি ওল্ড হোমও জনপ্রিয়। পাশ্চাত্য ধারণায় তাড়িত হয়ে আমাদের দেশেও প্রবীণ নিবাস, ওল্ড হোম বা বৃদ্ধাশ্রম ক্রমেই আলোচিত হয়ে উঠছে।
যদিও আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক রীতি-নীতি অনুযায়ী, বয়স্কদের জন্য আলাদা নিবাস অনেকটা ‘বনবাসে’ যাওয়া বা পাঠানোর মতোই ঘটনা। কেননা, যুগ যুগ ধরে আমাদের সমাজে বয়স্করা পরিবারের অপরিহার্য সদস্য হিসেবে নিজ বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। দু-চার দশক আগে পরিবারের বয়স্ক সদস্যকে আলাদা জায়গায় পাঠানোর কথা আমাদের সমাজে কেউ কখনো কল্পনাও করেনি। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ক্রমেই বদলে যাচ্ছে। ‘প্রীতি প্রেমের পুণ্য বাঁধনে’র চিরায়ত ভাবনার বদলে তৈরি হচ্ছে ‘বৃদ্ধাশ্রম’! ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ‘স্বর্গ-সুখের’ ধারণা।
নতুন যুগের মানুষেরা বৃদ্ধাশ্রমের পক্ষে উঠেপড়ে লেগেছে। যেন ওই বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাতে পারলেই সব দায়দায়িত্ব থেকে মুক্তি! পাশ্চাত্য দেশগুলোতে ব্যক্তি স্বাধীনতা ও ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে সমাজের মূল চালিকাশক্তি। তাই ১৮ বছর পার হলেই সেখানে পরিবারের বন্ধন ছিন্ন করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর তাড়া থাকে, তেমনি শেষ বয়সে কীভাবে চলবে, তা নিজেরই ভেবে বের করার দায়িত্ব থাকে। সেখানে উচ্চশিক্ষার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হয়। আবার উপার্জনের টাকা বাবা-মাকে দিতে হয় না। কেউ তা আশাও করে না। অন্যের গলগ্রহ হয়ে না থেকে ওল্ড হোমের আশ্রয় তাই সেখানে জীবনের স্বীকৃত সমাধান। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক গতিশীল জীবনচর্চার অনুশীলন শুরু হয়ে গেলেও পারিবারিক নির্ভরশীলতা এখানে মোটেও কমে যায়নি। এখানে যেমন ১৮ হলেই পিতা-মাতার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না, তেমনি বাবা-মায়ের ভার নেওয়াটাও সন্তানের কর্তব্য হিসেবেই বিবেচিত হয়। আমাদের বাবা-মায়েরা এখনো সন্তানের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এমনকি বিয়ে দেওয়ার জন্য নিজেদের সব সঞ্চয় ব্যয় করেন। আবার দেখা যায়, সন্তান চাকরি পাওয়ার পর নিজের বেতন থেকে প্রতি মাসে বাবা-মাকে টাকা পাঠায়। এই টাকায় শুধু পিতা-মাতাই নয়, বরং ছোট ভাইবোনের খরচও চলে। এই পারস্পরিক সহযোগিতা, একত্রে এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতা আমাদের সমাজব্যবস্থার অনন্য সৌন্দর্য। তাহলে বৃদ্ধাশ্রমের আমদানি কেন?
আমাদের দেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বৃদ্ধাশ্রম হয়ে উঠছে কিছু আত্মকেন্দ্রিক আধুনিক মানুষের দায়িত্ব এড়ানোর হাতিয়ার। আর্থিকভাবে সচ্ছল সন্তান নৈতিকতার অবক্ষয়ের চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত স্থাপন করে পিতা-মাতাকে এক অর্থে পরিত্যাগ করে ফেলে যাচ্ছে এসব আশ্রমে। এককালের একান্নবর্তী পরিবারগুলো ভেঙে যাচ্ছে। আর তাতে স্থান হচ্ছে না বৃদ্ধ পিতা-মাতার। বাবা-মায়ের সেবা-যতœ আর ভরণপোষণকে কেন্দ্র করে শুরু হচ্ছে দাম্পত্য কলহ, আর এর পরিণতিতে তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে। সন্তান নিজের পরিবার নিয়ে আরামেই দিন কাটাচ্ছে। কিন্তু বৃদ্ধ পিতা-মাতার খরচ দেওয়া দূরে থাক, একবার গিয়ে খবরও নিচ্ছে না। আঁস্তাকুড়ে আবর্জনা ফেলার মতো করে একবার বৃদ্ধাশ্রমে তাদের দিয়ে এসেই দায়িত্ব শেষ করছে। নিজে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার আগ পর্যন্ত বাবা-মাকে নিংড়ে নিয়ে শেষ বয়সে তাদের ছুড়ে ফেলার জন্য এমন একটি জায়গাই যেন তাদের দরকার ছিল!
আসলে আধুনিক জীবনে একদিকে ভোগবাদের বিপুল আয়োজন, অন্যদিকে ক্রয়ক্ষমতার ক্রমহ্রাস জীবনকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক সংকটে ফেলেছে। আধুনিক প্রজন্ম এই দুষ্টচক্রে পড়ে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে। বেকারত্ব ও ছদ্মবেকারত্ব বাড়ছে, সৃষ্টি করছে মনের অসুখ। এই মনের অসুখেরই একটা বহির্প্রকাশ হচ্ছে পরিবারের বয়স্ক সদস্যকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেওয়া।
কিন্তু কোনো মানুষের জন্য বৃদ্ধাশ্রম মোটেও কাক্সিক্ষত ঠিকানা নয়। যে বয়সে মানুষ পরিবারের সদস্যদের সান্নিধ্য কামনা করেন, ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিদের কাছে পেতে চান, তখন তাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিলে মানুষটি আসলে মরার আগেই মরে যায়। কারণ প্রবীণরা খুবই অসহায়, বয়সের ভারে ন্যুব্জ। তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়াটা নিষ্ঠুর অমানবিকতা।
তার মানে এই নয় যে, দেশে বৃদ্ধাশ্রম থাকবে না। যাদের সন্তানসন্ততি নেই, দেখভাল করার মতো তেমন কোনো নির্ভরযোগ্য স্বজন নেই, কিংবা যাদের ছেলেমেয়ে বাইরের দেশে থাকেন, তাদের জন্য উন্নতমানের বৃদ্ধাশ্রম বা প্রবীণ নিবাস তৈরি করাই যেতে পারে। কেননা একটা সময়ে গিয়ে তাদের পক্ষে একা থাকা, শরীরের যত্ন নেওয়া, বাজার করা, রান্না করা সম্ভব হয় না। তাদের জন্য অবশ্যই প্রবীণ নিবাসের কথা ভাবা যেতে পারে।
আবার যেসব মানুষ নিজেরাই আধুনিক ব্যবস্থাসম্পন্ন বৃদ্ধাশ্রম বেছে নিচ্ছেন, তাদের কথাও আলাদা। হ্যাঁ, ইদানীং স্বেচ্ছায় সমবয়স্ক মানুষদের সঙ্গে আনন্দে শেষ জীবনটা কাটানোর আকাক্সক্ষা থেকে কেউ কেউ বৃদ্ধাশ্রমকে বেছে নিচ্ছেন। এর মধ্যে কোনো গ্লানি নেই। নিজের ইচ্ছামতো, স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার সবারই আছে। একটি বৃদ্ধাশ্রমে যদি নিজেদের মতো করে নানান অনুষ্ঠান পালন, বেড়াতে যাওয়া, সান্ধ্য বৈঠক, ধর্মপালন, বিনোদন ইত্যাদির সুযোগ থাকে, নিঃসঙ্গ জীবনের নিরাপত্তা থাকে, তাহলে সেই বৃদ্ধাশ্রমের বিরোধিতা করার কোনো কারণ নেই। বরং এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা যেতে পারে।
হয়তো বিত্তবান একজন বয়স্ক মানুষ নিজ গৃহেই কাজের লোক রেখে দিন কাটাতে পারতেন, কিন্তু একাকিত্ব তাতে কাটত না। ছেলেমেয়েদের ব্যস্ত জীবনে সময় সত্যি নেই। দূর দেশে থাকার কারণেই অনেক সময় সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে বাড়িতে বৃদ্ধ পিতা-মাতার নিরাপত্তাও একটা সমস্যা হয়। বাড়ির কর্ম সহায়করাই অনেক সময় বিশ্বাসঘাতকতা করে তাদের খুন করে সব লুটে নিতে চায়। অনেক সময় একাকী মরে পড়ে থাকতে হয়। বেশ কয়েকদিন পর দরজা ভেঙে মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এটা আরও বেদনাদায়ক। এই পরিণতি কারও কাম্য নয়। তার থেকে তিনি যদি বৃদ্ধাশ্রমে থাকতেন, তবে অন্তত তার দেখাশোনা হতো, সময়মতো ডাক্তার, সেবা পেতেন। উপরন্তু সমবয়সী মানুষের সঙ্গ তাকে করত সমৃদ্ধ। বৃদ্ধ বয়সে এটাই প্রাপ্য সবার। এসব সুযোগ যদি কোথাও মেলে এবং সেখানে যদি কেউ স্বেচ্ছায় যেতে চায়, তবে সেটা অবশ্যই ইতিবাচক।
কিন্তু সন্তানসন্ততি, আত্মীয়পরিজন যাদের আছে, তাদের বৃদ্ধাশ্রমে ঠেলে পাঠানো তো অবশ্যই নিষ্ঠুরতা। বয়স্ক পিতা-মাতার ঠাঁই কেন হবে না পরিবারে? ছোট ছোট শিশুরা কেন তাদের শৈশবে দাদা-দাদি, নানা-নানির স্নেহ থেকে বঞ্চিত হবে? রূপকথার ঝুলি নিয়ে কেন তারা গৃহের পরিবেশ করবেন না আমোদিত? নিঃসন্দেহে এটা একটা সামাজিক সমস্যা।
আর বৃদ্ধাশ্রম এই সমস্যার সমাধান নয়, বরং সমস্যাকে এড়িয়ে চলার একটি উপায় মাত্র। নিজের জীবনকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য নিরন্তর ছুটে চলা আর বৃদ্ধ বাবা-মায়ের প্রতি দায়িত্ব পালনের যে দ্বন্দ্ব দুয়ের মাঝে এ যেন এক চাতুর্যপূর্ণ সমঝোতা। বাবা-মা কোনো আইন বা সামাজিকতার জন্য নয়, বরং সন্তানের প্রতি অকৃত্রিম স্নেহ আর ভালোবাসার কারণেই শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে তাদের জন্য কাজ করে যান। এর বিপরীতে বাবা-মায়ের প্রতিও সন্তানদের দায়িত্ব রয়েছে। মনে রাখা দরকার যে, প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে একদিন সবাই বৃদ্ধ হবেন। আজ যে টগবগে তরুণ, সেও এক সময় ন্যুব্জ হবে বয়সের ভারে। নির্মম পরিহাস হলো, এই কথাটি কেউ মনে রাখে না। তাই বৃদ্ধাশ্রম গড়ে তোলার চেয়ে বেশি প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা। বৃদ্ধ বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানরা যেন দায়িত্বশীল হন, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বাবা-মাকে সন্তান মনে করে, সেবা-যত্ন, শুশ্রুষা দিয়ে তাদের বাকি জীবনটাকে যতটুকু সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে রাখা যায়, তা করে যেতে হবে। অবহেলা, অযতœ আর দায়মুক্তির মনমানসিকতা নিয়ে কোনো সন্তানই যেন তার মাতা-পিতাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে না দেন।
কোনো প্রবীণকেই যেন অবহেলা আর অনাদরে জীবনযাপন করতে না হয়, তা সুনিশ্চিত করতে সমাজের সচেতন ব্যক্তিবর্গ, রাজনীতিবিদ, গণমাধ্যমসহ সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। বৃদ্ধাশ্রম নয়, প্রত্যেকের আশ্রয় হোক নিজের পরিবারে, সন্তানেরই ঘরে। প্রতিটি পরিবার যেন প্রবীণদের জন্য সুখ আর স্বস্তির নিবাস হিসেবে গড়ে উঠে, সেই চেষ্টা করতে হবে।
প্রবীণদের সামাজিক নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় সংসদে পিতা-মাতার ভরণপোষণ বিল-২০১৩ পাস করা হয়। যেখানে বলা হয়েছে, সন্তানকে পিতা-মাতার সঙ্গে থাকতে হবে এবং পিতা-মাতার প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবাসহ সব ধরনের দায়িত্ব পালন করতে হবে। কিন্তু আইন পাস করে ভালোবাসা, কর্তব্য, শ্রদ্ধাবোধ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভম নয়। এর জন্য প্রয়োজন নৈতিক ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন।
লেখক: কলামিস্ট
নির্বাচনে এরদোয়ান তার দুই দশকে বানানো কর্র্তৃত্ববাদী আমলাতন্ত্রের ওপর অনেকটা ভরসা করছেন। তিনি পরিকল্পিতভাবে দেশের সংবাদমাধ্যমকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছেন। এ ছাড়া দেশটির প্রায় ৮০ হাজার মসজিদের পরিচালনা পর্ষদও তার হয়ে কাজ করবে বলে ধারণা করা হয়। তবে ২০ বছর ধরে তিনি যে দমন-পীড়ন করেছেন, তাতে সাধারণ তুর্কিদের একটি বিরাট অংশ তার শাসনের প্রতি বিরক্ত। তার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো তুরস্কের অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা। সেখানে মূল্যস্ফীতি ৮০ শতাংশের ওপরে উঠেছে। এর মধ্যে ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রায় ৫০ হাজার লোক মরেছে। এই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে কার্যকরভাবে দাঁড়াতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। তুরস্কে দুটি ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে।
পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো যথারীতি বলছে, রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান আমলের অবসান ঘটতে যাচ্ছে। কম-বেশি সব কটি পশ্চিমা গণমাধ্যমের আভাস হচ্ছে, ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির এরদোয়ানকে হারিয়ে দিতে পারেন রিপাবলিকান পিপলস পার্টির নেতা কামাল কিলিচদারোগলু। এরদোয়ানের পরাজয় বা ক্ষমতা থেকে নির্বাসন পশ্চিমাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা। তবে এর আগে কোনো নির্বাচনে এরদোয়ান হারেননি, কিন্তু এবার পাহাড়সম চাপ নিয়ে নির্বাচনে লড়তে হচ্ছে তাকে।
অনেকেই মনে করছেন, ভূমিকম্পের আঘাতও সামলে নিয়েছেন এরদোয়ান। এবারের নির্বাচনে মূলত প্রবীণ ও মধ্য বয়স্কদের সঙ্গে তরুণ ভোটারদের মধ্যে লড়াই হবে। প্রবীণ ও মধ্যবয়স্কদের মধ্যে এরদোয়ানের জনপ্রিয়তা বেশি। ওদিকে তরুণরা ভিড়ছেন কামাল কিলিচদারোগলুর ডেরায়। আবার নারী ভোটদের মধ্যে এরদোয়ানের জনপ্রিয়তা বেশি। কামালপন্থিরা স্বীকার করেছেন, ১১ মিলিয়ন নারী ভোটার নির্বাচনে ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন। এই নারী ভোটাররা কামালের জন্য মাথাব্যথার কারণ হতে পারেন। এ ছাড়া গ্রামীণ রক্ষণশীল সমাজে এরদোয়ানের শক্ত অবস্থান রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন জরিপের আভাস হচ্ছে, এরদোয়ানের শক্ত অবস্থান ভেঙে এবার কামাল বেরিয়ে আসতে পারেন। শেষ মুহূর্তে রিপাবলিকান পিপলস পার্টির গতবারের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মুহাররেম ইনচের প্রার্থিতা প্রত্যাহারে সুবিধা পেতে পারেন কামাল। কিন্তু ইনচের ভোটাররা কামালকে ভোট নাও দিতে পারেন।
এরদোয়ান অভিযোগ করছেন, কামাল জিতে গেলে তুরস্কের নিজস্ব সংস্কৃতি হারিয়ে যাবে। তরুণরা রাস্তায় বসে মদ পান করবে। কারণ, কামাল নির্বাচনী সমাবেশগুলোতে বলেছেন, তিনি তরুণদের ইউরোপের জীবন দিতে চান। তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, তোমরা রাস্তায় যা করতে চাও, তাই করতে পারবে। কামাল কিলিচদারোগলুর নেতৃত্বাধীন জোটকে পশ্চিমা গণমাধ্যম উদার ও আধুনিক জোট বলে প্রচার করলেও এই জোটের বিরুদ্ধে জোনোফোবিক আচরণের অভিযোগ রয়েছে। খোদ কামাল কিলিচদারোগলুর প্রতিশ্রুতি হচ্ছে, তিনি জিতলে দুই বছরের মধ্যে সিরিয়ান উদ্বাস্তুদের ফেরত পাঠাবেন। তার ঘোষণার কারণে শুধু সিরিয়ান উদ্বাস্তুরাই না, ইরাকি ও ফিলিস্তিনের উদ্বাস্তুরাও ঝুঁকির মধ্যে পতিত হবেন। আঙ্কারাসহ বিভিন্ন শহরে কামালের রিপাবলিকান পিপলস পার্টির কট্টর সমর্থকরা বিদেশিদের ধরে ধরে নাম-পরিচয় জানতে চান।
কারণ, কট্টর জাতীয়তাবাদীরা মনে করেন, উদ্বাস্তু ও বিদেশিদের কারণে তুরস্কের অর্থনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। তাদের তুরস্ক থেকে বের করে দেওয়া উচিত বলে তারা প্রচারণা চালাচ্ছেন। এরপরও ভবিষ্যৎ রাজনীতির কথা মাথায় রেখেই কামাল কিলিচদারোগলুকে পশ্চিমারা সমর্থন করছে। কারণ, নানা মত ও পথের কারণে কামালের নেতৃত্বে সরকার হবে দুর্বল। এই সরকারে বামপন্থি, ইসলামপন্থি, উদারপন্থি ও কট্টর জাতীয়তাবাদীরা থাকবেন। এ ছাড়া নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিলেও অর্থনৈতিক সংকট সম্ভাব্য কামাল সরকারের পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না। এসব কারণে কামালের সরকার দীর্ঘস্থায়ী নাও হতে পারে এবং কামালকে ইচ্ছামতো পরিচালনা করা যাবে। পশ্চিমাদের উদ্দেশ্য সম্ভবত সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন করে দীর্ঘ মেয়াদে মিসরের সিসির মতো বিশ্বস্ত কাউকে তুরস্কের ক্ষমতায় আনা। রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে এরদোয়ানকে মুছে দিতে পারলে তুরস্ক আগের মতো পুরোপুরি পশ্চিমাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। এরদোয়ানের ওপর পশ্চিমাদের ক্ষোভের কারণ হচ্ছে, তিনি তুরস্ককে স্বতন্ত্র অবস্থানে নিয়ে গেছেন। ন্যাটোর সদস্য হয়েও রাশিয়া থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা করেছেন। আরবের রাজনীতি এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যথার কারণ দুই অনারব রাষ্ট্র ইরান ও তুরস্ক।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, রাশিয়া এ যুদ্ধে প্রবেশ করেছে ইরান ও তুরস্কের কারণেই। তাই যুক্তরাষ্ট্রের নীতি হচ্ছে, যেকোনো মূল্যে এই দুই দেশে ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটানো। এরদোয়ানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক দুরবস্থা, বিরোধী মত দমন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকলেও আঞ্চলিক ভূরাজনীতি তুরস্কের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ১৪ মের নির্বাচনে এরদোয়ানের রাজনৈতিক ভাগ্য নতুন করে লেখা হবে। জিতলে তুরস্কের ইতিহাসে নতুন উচ্চতায় চলে যাবেন আর হারলে কারাবাস, মৃত্যুদণ্ড অনেক কিছুই হতে পারে। বিভিন্ন জরিপে কামালের জয়ের পাল্লা বেশি বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে এখনই আশা ছাড়ছেন না এরদোয়ানের সমর্থকরা। শেষ পর্যন্ত নিজস্ব কৌশল অবলম্বন করে বেরিয়ে আসবেন বলে এরদোয়ানের সমর্থক-ভক্তরা প্রত্যাশা করছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের একটি সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, ভোটারদের সবাই যে জনতুষ্টিবাদী কর্র্তৃত্বপরায়ণ শাসনের ধ্বংসাত্মক প্রভাব এবং গণতন্ত্রকে হুমকির মধ্যে ফেলার বিষয়টি জানেন না, বিষয়টি মোটেও তা নয়। কিন্তু যখন তারা আমরা বনাম তারা যুক্তি ধরে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন এবং দেখেন, বিরোধী জোটের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনিশ্চিত, তখন তারা মন্দের ভালো হিসেবে জনতুষ্টিবাদের ভেতরেই আশাবাদ খোঁজার চেষ্টা করেন। তুরস্কের ক্ষেত্রে এটি আরও সত্য। সেখানে বিরোধী ছয়টি দল কামাল কিলিচদারোগলুকে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করলেও ছয়টি দলের কাছে তার সর্বান্তঃকরণ সমর্থন নেই। আর কামাল নির্বাচিত হলে তারা কী কী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার করবেন, সে বিষয়েও স্পষ্ট ধারণা ভোটাররা পাচ্ছেন না। ফলে এই নেতৃত্বের পক্ষে এরদোয়ানের মতো জনতুষ্টিবাদীকে হারানো তথা গণতন্ত্রকে অধিকতর হুমকি থেকে বাঁচানো কঠিন হবে।
লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক
ডায়াবেটিস রোগে যে মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন, একমাত্র তিনিই জানেন এর জটিলতা। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা যখন বেড়ে যায়, কমে যায় ইনসুলিনের মাত্রাÑ তখনই মানুষ আক্রান্ত হন এই রোগে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণের পথও মানুষের হাতে। তবু আক্রান্ত হচ্ছেন। বিভিন্ন কারণে এই রোগে একজন মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু বংশগত বা জিনগত বিষয়টি এড়ানো কঠিন। তখন তাকে সতর্কতার সঙ্গে জীবনযাপন করতে হয়। কিন্তু আমাদের মতো দেশে, যেখানে সচেতনতার প্রচন্ড অভাব সেখানে, এই রোগ নিয়ে মানুষের মধ্যে তেমন কোনো সতর্কতা নেই। ‘প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর’ এই কথাটার মর্মার্থ তখনই কার্যকর হয়, যখন একজন মানুষ নিজ শরীরের প্রতি যথেষ্ট সচেতন থাকেন। এই অসচেতনতার কারণেই, হু হু করে বাড়ছে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা। এই রোগে আক্রান্ত মানুষটি জানেনই না, তিনি ডায়াবেটিসে ভুগছেন। যখন অন্য কোনো রোগের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন, ঠিক তখনই জানতে পারেন তিনি ডায়াবেটিসে ভুগছেন। এরপর কোনোভাবেই এই রোগ থেকে আর তিনি শতভাগ মুক্ত হতে পারেন না। একমাত্র উপায় হচ্ছে, মাত্রা নিয়ন্ত্রণ। শারীরিক ব্যায়াম এবং খাদ্যাভ্যাসে ব্যাপক পরিবর্তন এনে, দৈনন্দিন জীবনযাপন করা ছাড়া অন্য কোনো পথ থাকে না। শুধু তাই না, এই রোগে আক্রান্ত হলে, ত্যাগ করতে হয় ‘রসনাবিলাস’। পরিমিত এবং নির্ধারিত খাবারের বাইরে কোনো কিছু খাওয়া মানেই, মৃত্যুর ঝুঁকি এবং নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হওয়া। একমাত্র সচেতনতাই এই রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে।
দেশের ১০ শহরে শুরু হচ্ছে বিনামূল্যে ডায়াবেটিস নির্ণয়। যা নিঃসন্দেহে একটি শুভ সংবাদ। এই উদ্যোগে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ জরুরি। বুধবার দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে দেশের ১০ শহরের ১০ লাখ মানুষের বিনামূল্যে ডায়াবেটিস নির্ণয় শুরু হচ্ছে আগস্ট থেকে। ‘মোবাইল ডায়াবেটিস সেন্টার’ নামের গাড়িতে ডায়াবেটিস ছাড়াও চোখ, দাঁত, আল্ট্রাসনোগ্রাম, লিপিড প্রোফাইলসহ আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিনামূল্যে করা হবে। এ সময় যাদের ডায়াবেটিস শনাক্ত হবে চিকিৎসার জন্য তাদের স্থানীয় মেডিকেল কলেজ, ডায়াবেটিক সমিতি বা কাছের হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেওয়া হবে। কান্ট্রি চেঞ্জিং ডায়াবেটিস প্রকল্পের আওতায় আগামী আগস্ট মাস থেকে দেশের আটটি বিভাগীয় শহর এবং গোপালগঞ্জ ও কক্সবাজার শহরে ডায়াবেটিস নির্ণয় ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে যাবে একটি করে গাড়ি।
উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, দেশের ৪৩ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগীই জানেন না, তারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন। ডায়াবেটিসের কারণে হার্ট বা কিডনির পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার পর এ রোগ শনাক্ত হয়। এমন পরিস্থিতিতে মানুষকে স্ক্রিনিং ও ডায়াবেটিস বিষয়ে সচেতন করতে শুরু হচ্ছে ‘কান্ট্রি চেঞ্জিং ডায়াবেটিস’ প্রকল্প। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সেন্টার ফর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চ ও জাইকার যৌথ উদ্যোগে আগামী দুই বছরে দেশের ১০ লাখ ডায়াবেটিস রোগী স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আসবে। এই প্রকল্পের আওতায় ডায়াবেটিস শনাক্তে মানুষের দোরগোড়ায় যাবে গাড়ি এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে।
এই প্রকল্পের সফলতা প্রত্যেক শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরই চাওয়া। দেশে যে হারে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়ছেÑ একটি জরিপ করলে দেখা যাবে, অসচেতনতার কারণেই মূলত এর প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষের মধ্যে পূর্ণ মাত্রায় সচেতনতা নিয়ে আসতে পারলে, ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা হ্রাস পেতে বাধ্য। যখন একজন মানুষ জানবেন, এই রোগে আক্রান্ত হলে স্ট্রোক বা কিডনি জটিলতায় তার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই তিনি সতর্ক হবেন। শুধুমাত্র এর জন্য প্রয়োজন, নিজেকে সচেতন রাখা।
১৯২৪ সালের এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ও কলকাতা বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। তিনি ১৮৬৪ সালের ২৮ জুন কলকাতার মলঙ্গা লেনে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা চিকিৎসক গঙ্গাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, মা জগত্তারিণী দেবী। আশুতোষ ১৮৭৯ সালে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি ১৮৮৪ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক ও ১৮৮৫ সালে গণিতে স্নাতকোত্তর করেন। পরে তিনি পদার্থবিদ্যায়ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। ১৮৮৮ সালে তিনি বিএল ডিগ্রি লাভ করেন এবং আইন ব্যবসায় নামেন। ১৮৮০ থেকে ১৮৯০ সাল পর্যন্ত তিনি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জার্নালে উচ্চতর গণিত নিয়ে লেখালেখি করেন। গণিতের ওপর তার দুটি অসাধারণ অবদান হলো, ১৮৯৩ সালে প্রকাশিত ‘জিওমেট্রি অব কোনিক্স’ ও ১৮৯৮ সালে প্রকাশিত ‘ল অব পারপিচুইটিস’। দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে ১৯০৬ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে অধিষ্ঠিত হন। এই দায়িত্ব পালন করেন ১৯১৪ সাল পর্যন্ত। স্বদেশি আন্দোলন চলাকালে আশুতোষ ঔপনিবেশিক শিক্ষা কাঠামোর পক্ষে থাকেন এবং একে জাতীয় স্বার্থে ব্যবহারের চেষ্টা করেন। ১৯২১ থেকে ১৯২৩ সাল পর্যন্ত তিনি আবার উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯২৩ সালে ইংরেজ গভর্নর লর্ড লিটন যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন খর্ব করতে চান, তখন তিনি তা নিয়ে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন এবং পুনরায় উপাচার্যের দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানান। এই তেজস্বিতার স্বীকৃতিস্বরূপ জনগণের কাছ থেকে ‘বেঙ্গল টাইগার’ উপাধি পান। অবকাঠামোগত সংস্কারের পাশাপাশি তিনি কলা ও বিজ্ঞান অনুষদে নতুন নতুন বিষয় খোলেন এবং নিজে সিলেবাস তৈরি করেন। কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না থেকেও পাশ্চাত্য শিক্ষার সঙ্গে সমন্বয় করে জাতীয় শিক্ষা কাঠামো প্রণয়নে তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ।
জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারে বাংলাদেশ দল। যে সিরিজে চট্টগ্রামে ঘরের মাঠে টাইগাররা ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। আর এই সিরিজে পরাজয়ের পেছনে বড় কারণ অধিনায়ক তামিম ইকবাল! এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ দলের বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ শেষে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম। একদিন পরে অবশ্য অবসর ভাঙলেও সেই সিরিজ আর খেলেননি তিনি। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় কিস্তিতে সাকিব সেই সিরিজ হারের দায় দিলেন তামিমের ওপরই।
'আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ হারটা আমি পুরোপুরি একজনকে দায় দেব, অধিনায়ক। এক ম্যাচ পরে আমাদের হাতে আরও দুই ম্যাচ ছিল। আমরা তৃতীয় ম্যাচে ঠিকই কামব্যাক করেছি কিন্তু একটা ম্যাচ সময় লেগেছে আমাদের। সুতরাং এটা আর কারো দায় নয়, পুরো সিরিজটায় দায় একজনের ওপর। বিশ্বের কোথাও অন্তত দেখিনি যে এক ম্যাচ পরেই এরকম অধিনায়ক এসে ইমোশনালি বলে ফেলেন যে আমি ভাই খেলব না আর ক্রিকেট।’
সাকিব বলেন, 'আমার ধারণা যদি কোনো অধিনায়কের দায়িত্ববোধ থাকত, সে এটা করতে পারত না। আমার কাছে মনে হয়, এটা দলকে অনেক বাজে একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে এবং আমার মনে হয় ওইটাই এখনো রিকভার করতে সময় লাগছে, যেটা আমি অনুভব করি।’
কুমিল্লার লাকসামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ৭ জনকে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) পৌর সদরের ৭নং ওয়ার্ডের গাজীমূড়া আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন— ফারুক, রাশেদ, শাহজাহান ও মনির হোসেন। প্রাথমিকভাবে এদের নাম জানা যায়। তবে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত ব্যক্তির নাম মনির হোসেন। আহত ব্যক্তিদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে অনুষ্ঠানের আয়োজক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নানের অভিযোগ করে বলেন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের অনুসারীরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে তিনি দাবি করছেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় গাজীমূড়া আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে মিলাদ ও বেলা তিনটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উপলক্ষে দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নান। সকালে শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠান হয়। তবে চারটার দিকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রীর অনুসারী ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দাবিদার জাহাঙ্গীর আলম, লাকসাম উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শিহাব খান এবং পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফ খানের নেতৃত্বে শতাধিক লোক মাদ্রাসার ফটকে তালা দেন। এ সময় আবদুল মান্নান তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে আবদুল মান্নানের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সেখানে হামলা হয়। এতে আহত হয়েছেন সাতজন। হামলার সময় রামদা দিয়ে মনির হোসেন নামের এক হকারের হাত ও পা কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। পরে দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী (রাজনৈতিক)। বৃহস্পতিবার সকালে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) এর অনুষ্ঠান করি। বিকেলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে দোয়ার আয়োজন করি। এ সময় জাহাঙ্গীর, শিহাব ও স্বাধীনের নেতৃত্বে শতাধিক লোক আমার এলাকার লোকজনের ওপর হামলা করেন। মনির নামের এক হকার অনুষ্ঠান দেখতে আসেন। তাঁকে কোপানো হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। মন্ত্রীর লোকজন এই হামলা করেছেন। আমি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৯ (লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইব। সামাজিক এই কর্মসূচিতে হামলা চালানো হয়েছে, যা ন্যক্কারজনক ঘটনা।
এ ঘটনার অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর, শিহাব ও সাইফের মুঠো ফোনে বার বার কল দিও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও লাকসাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইউনুস ভূঁইয়া বলেন, আমাদের স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাহাঙ্গীরকে প্রথমে মান্নান মারধর করে। এরপর সেখানে ঝামেলা হয়েছে বলে শুনেছি।
লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নানের কর্মসূচিতে একজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে এ নিয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করলে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতির আওতায় আসতে পারেন যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এমন কথাই জানিয়েছেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
একইসঙ্গে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসসহ অন্য সকল কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এদিনের সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন ছাড়াও নাগরিকদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রসঙ্গটিও উঠে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে ওই ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমি এখন নির্দিষ্ট কোনও পদক্ষেপ ঘোষণা করতে যাচ্ছি না। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের ঘোষণা অনুসারে বাংলাদেশে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ করার কাজে দায়ী কিংবা জড়িত থাকার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সরকার এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভীসা নীতি কার্যকর করার পদক্ষেপ আমরা শুরু করেছি।
তিনি আরও বলেন, গত ২৪ মে ভিসা নীতি ঘোষণার সময় আমরা এটা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি। আমরা ভিসা নীতির কথা বলেছি তবে কারও নাম উল্লেখ করিনি। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দুর্বল ও বাধাগ্রস্থ করার কাজে দায়ী কিংবা জড়িত যেকোনও বাংলাদেশির ক্ষেত্রে এই ভিসা নীতি কার্যকর হবে। অন্য যেকোনও ব্যক্তির ক্ষেত্রে যদি আমরা মনে করি তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে আমরা এই নীতি প্রয়োগ করব।
৯ দফার ভিত্তিতে ১৫টি ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন নিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ভোটাধিকার, সন্ত্রাস-দখলদারিত্বমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস, সর্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতৃত্বে 'ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য' আত্মপ্রকাশ করেছে।
আজ শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের মুখপাত্র হিসেবে এ ঘোষণা করেন। ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়কারী করা হয়েছে ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানকে।
জোটভুক্ত হতে যাচ্ছে যেসব ছাত্রসংগঠন
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জেএসডি), গণতান্ত্রিক ছাত্রদল (এলডিপি), নাগরিক ছাত্র ঐক্য, জাগপা ছাত্রলীগ, ছাত্র ফোরাম (গণফোরাম মন্টু), ভাসানী ছাত্র পরিষদ, জাতীয় ছাত্রসমাজ (কাজী জাফর), জাতীয় ছাত্রসমাজ (পার্থ), জাগপা ছাত্রলীগ (লুৎফর) ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ, বিপ্লবী ছাত্র সংহতি এবং রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলন।
ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের দাবিসমূহ
১. বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারে আন্দোলনরত দলগুলোর ৩১ দফা বাস্তবায়ন করা।
২. শিক্ষা ব্যবস্থার লক্ষ্য হবে মানবিকতার বিকাশ, নৈতিকতা বোধের উন্নতি, মানুষে মানুষে বৈষম্যবিরোধী চিন্তার অনুশীলন এবং এই লক্ষ্য পূরণে শিক্ষাকাঠামো, পাঠদানপদ্ধতি, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক সমস্ত ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক চর্চাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে জিডিপির অন্তত ৫ ভাগ বরাদ্দ করে সকলের জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। যাতে করে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান দক্ষতা ও সৃজনশীলতা বিকাশের উপযোগী হয়ে জাতীয় সম্পদে পরিণত হয়। একটি উৎপাদনমুখী অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এর প্রয়োজন মেটাতে বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণায় সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ। দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে কারিগরি শিক্ষার বিকাশ। বুনিয়াদি শিক্ষাকে সার্বজনীন, অবৈতনিক ও মানসম্মত করার উদ্যোগ গ্রহণ।
৩. সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং সাইবার সিকিউরিটি আইনসহ নিবর্তনমূলক সকল আইন বাতিল করতে হবে।
৪. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্যাতনবিরোধী আইন করে শিক্ষাঙ্গনগুলোকে সন্ত্রাস ও দখলদারিত্ব মুক্ত করা, সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন, প্রথম বর্ষ থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্রদের সিট পাওয়ার বৈধ অধিকারের স্বীকৃতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ। সর্বোপরি দলমত নির্বিশেষে সকল সংগঠনের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
৫. শিক্ষার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, শিক্ষকদের বেতন কাঠামোর পুনর্নির্ধারণ, মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধার পুনর্বিন্যাসসহ বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ। শিক্ষক সংখ্যা বৃদ্ধি করে পর্যাপ্ত উপকরণ ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের পুষ্টি ও মনোযোগের কথা মাথায় রেখে মিড ডে মিল চালু করতে হবে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভ্যাট (মূল্য সংযোজনী কর) আরোপ করা চলবে না। বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতন-ফি কমাতে হবে এবং অভিন্ন নীতিমালা ও বেতন কাঠামো নির্ধারণ করতে হবে।
৬. জ্ঞানকে গভীর করার জন্য মাতৃভাষায় শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। ফলে সারা বিশ্বের সমস্ত ধ্রুপদী সাহিত্য ও পাঠ্যপুস্তককে মাতৃভাষায় রূপান্তরের জন্য একটি জাতীয় অনুবাদ সংস্থা স্থাপন করে দ্রুততার সাথে এই কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
৭. বর্তমান সরকার যেভাবে ইতিহাসের ব্যক্তিকেন্দ্রিক বয়ান তৈরি করেছে এবং জনগণের ভূমিকাকে নির্বাসিত করেছে তার বদলে বাংলাদেশের জনগণের নির্ধারক ভূমিকাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং ইতিহাসে সকল ব্যক্তির যার যা অবদান আছে তার স্বীকৃতি দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকাকে প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের সামনে প্রকৃত ইতিহাস পৌঁছে দেওয়ার জরুরি কাজটি করার জন্য পাঠ্যপুস্তক সংস্কার করতে হবে।
৮. শিক্ষার্থীদের মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী শিক্ষা গ্রহণের সমস্ত ব্যবস্থা এবং শিক্ষা শেষে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সহজ শর্তে শিক্ষা ঋণ দিতে হবে। সকল শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্যবিমার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করার জন্য সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে।
৯. সকল জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীর সুযোগের সমতা এবং নাগরিক অধিকারের সাংবিধানিক নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
দেশের ক্রিকেট নিয়ে নানা সময়ে আলোচিত-সমালোচিত বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপান। জাতীয় দলের প্রায় প্রতিটি বিষয় নিয়েই মাথা ঘামান তিনি। তার এই তৎপরতাকে কীভাবে দেখেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ প্রশ্ন করা হয়েছিল সাকিবে। তার সোজাসাপটা জবাব, ‘আমার সঙ্গে (সম্পর্ক) কখনো অস্বস্তির হয়নি। আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া ভালো। আমি ওনাকে বুঝি। উনি আমাকে বোঝেন। আমাদের মধ্যে কথা হয়, এমন হলে ভালো হতো, অমন হলে ভালো হতো। যে আলোচনাটা হয়, ফলদায়ক হয়। আমার কাছে (তাঁর সঙ্গে কাজ করা) সমস্যা হয়নি কখনো।’
নাজমুলের আগে বিসিবি সভাপতি ছিলেন এখনকার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। তিনিও জাতীয় দলের সঙ্গে বেশ ভালোভাবেই জড়িত ছিলেন বলে জানান সাকিব। তবে নাজমুল অনেক বেশি জড়িত বলে মনে করেন সাকিব, 'কামাল ভাইও দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। হয়তো তখন এত মিডিয়া ছিল না, উনি হয়তো মিডিয়াতে অত কথা বলেন নাই। যে কারণে জানা যেত না। কিন্তু দলে কী হচ্ছে, এসবে উনিও জড়িত ছিলেন। আর পাপন ভাই যেটাকে বলে ইন হ্যান্ডস জড়িত। অনেক বেশি যুক্ত। এমন বোর্ড প্রেসিডেন্ট পাওয়াও কঠিন।’
অনেক বেশি জড়িত থাকা বোর্ডপ্রধান ভালো কি মন্দ, প্রশ্ন করা হলে সাকিবের চটজলদি জবাব, ‘দুটোই। নিতে পারলে ভালো। যারা নিতে পারে না, তাদের জন্য অনেক ডিফিকাল্ট।’
নাজমুল হাসানের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করার সুবাদে তার মধ্যে যদি একটা ভালো দিক খুঁজতে বলেন প্রশ্নকর্তা। সাকিব বলেন ‘বিশেষভাবে জাতীয় দলের জন্য সবকিছু করতে রাজি আছেন।'আর মন্দ দিক কোনটি? হাসতে হাসতে সাকিবের জবাব, ‘মে বি ইন্টারভিউ (হয়তো সাক্ষাৎকার)’।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পুলিশ। নির্বাচনে কী উপায়ে নিরাপত্তা দেওয়া হবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। তবে সরকারের হাইকমান্ড থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে তথ্য এসেছে, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ও সদস্য সরকারবিরোধীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছে। পুলিশের একটি প্রতিবেদনেও তথ্য এসেছে সারা দেশে অন্তত আড়াইশো কর্মকর্তা আছেন তারা সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তাদের পুরো কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এদিকে, চলতি মাস ও আগামী মাসের মধ্যে পুলিশে আরও বড় ধরনের রদবদল করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তালিকাও করা হয়েছে। পাশাপাশি উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদিও কেনার চেষ্টা করছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, সামনের দিনগুলোতে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। এ নিয়ে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা আগাম সতর্কবার্তাও দিয়েছে। যেকোনো বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করতে কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সবকটি ইউনিট প্রধান ও জেলার এসপিদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। বার্তায় বলা হয়েছে রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তায়নের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি পুলিশের মধ্যে কোনো সদস্য সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার তথ্য পেলে জানাতে বলা হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশেই সব পুলিশ সদস্যকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনকালীন যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পেশাদার সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু সদস্যের কর্মকান্ড নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এই সংখ্যা প্রায় আড়াইশো মতো হবে। সংখ্যা আরও বাড়তেও পারে। ইতিমধ্যে তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে সরকারের হাইকমান্ডকে অবহিতও করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য পুলিশকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশে উদ্বেগ আছে। বৈধ অস্ত্রের সংখ্যার খোঁজ নেওয়া, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্র কারবারিদের গ্রেপ্তার করতে বিশেষ অভিযান চালাতে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযানের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। হুট করেই আমরা বিশেষ অভিযান শুরু করব। কেপিআই স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন যথাসময়ে হবে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো মহল বা চক্র নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালাতে না পারে সে জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সতর্ক আছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের সবধরনের প্রস্তুতি আছে। দাগি সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বড় ধরনের অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের।
পুলিশ সূত্র জানায়, আড়াইশো পুলিশ কর্মকর্তার কর্মকান্ড নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তাদের মোবাইল নম্বর সার্বক্ষণিক ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও খোঁজ রাখা হচ্ছে। নজরদারির মধ্যে থাকা বেশ কয়েকজন পুলিশ সুপার, অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর আছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতাদের সাপোর্ট দেওয়া আমাদের কাজ না। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের জন্য উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্র ও যানবাহন ক্রয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি ৫০ লাখের মতো রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড কেনা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে এসব সরঞ্জাম বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করছি। ডিএমপি, সিএমপি, কেএমপি, আরএমপি, বিএমপি, এসএমপি, আরপিএমপি, জিএমপি কমিশনার, বিশেষ শাখা (এসবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), অপরাধ তদন্ত বিভাগ, পিবিআই, টুরিস্ট পুলিশ, এটিইউ, রেলওয়ে পুলিশ, নৌপুলিশ, এপিবিএন, হাইওয়ে, শিল্পাঞ্চল পুলিশ প্রধান, সব অ্যাডিশনাল আইজিপি, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও রংপুর রেঞ্জে নতুন আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি পাঠানো হবে। ইতিমধ্যে ইউনিট প্রধানরা পুলিশ সদর দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন। বিষয়টি আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারবিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্র করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। বিএনপি আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করছে। তারা পুলিশের ওপর হামলা করছে। যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। আর এসব মোকাবিলা করতে পুলিশকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পুলিশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।