
কবি কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে আমাদের সনাতনী ধারণা তিনি অত্যন্ত দারিদ্র্যপীড়িত পরিবারের সন্তান। শিশু বয়সে পিতৃহীন অনাথ-দুঃখী শিশুটির আদি নাম ছাপিয়ে দুখু মিয়া নামকরণের পেছনে পারিবারিক অর্থনৈতিক দারিদ্র্যও যুক্ত। জীবিকার জন্য তাকে রুটির দোকানের কর্মচারী হতে হয়েছে। পূর্ব রেলওয়ের গার্ডের ভৃত্য হতে হয়েছে। লেটোর দলের গান রচনা ও সুরারোপ করাও ছিল জীবিকার তাগিদে। এসব ঘটনা সত্য। তবে এর পেছনের ঘটনা কিন্তু ভিন্ন। নজরুলের জন্ম ২৪ মে ১৮৯৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে। তার পরিবার কিন্তু দারিদ্র্যপীড়িত ছিল না। অঢেল ধন-সম্পদের অধিকারী না হলেও, সচ্ছল মধ্যবিত্ত বলতে যা বোঝায় সে ধরনের পরিবারেই তার জন্ম। তার পারিবারিক জীবনের ছন্দপতনের মূলে পিতার মৃত্যু এবং নিজ চাচার সঙ্গে তার মায়ের দ্বিতীয় বিয়ে তার শিশুমনে তীব্র আঘাত হানে এবং এটা মেনে নিতে পারেননি বলেই কিশোর বয়সে পরিবার-গৃহত্যাগ করে অনিশ্চিত পথে বেরিয়ে পড়া। একাকী-ভবঘুরে জীবনে জীবিকার জন্যই তাকে যুক্ত হতে হয়েছিল নানা পেশায়। পারিবারিক সচ্ছলতা তাকে আটকাতে পারেনি, তাই নিশ্চিত জীবনের বৃত্ত ছেড়ে তিনি অজানা পথে পা বাড়িয়েছিলেন।
ছাত্র হিসেবে নজরুল সাধারণ মানের ছিলেন না। ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। ১৯১৭ সালে রানিগঞ্জ শিয়ারশোর স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র নজরুল ছিলেন ক্লাসের ফার্স্ট বয়। পরিবারবিচ্ছিন্ন নজরুলের জীবনে ঘটে ছন্দপতন। মায়ের দ্বিতীয় বিয়ে তার পরিবারবিচ্ছিন্নের মূল কারণ রূপেই বিবেচনা করা যায়। মাত্র ১৭ বছর বয়সে যোগ দেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর বাঙালি পল্টনে। ঔপনিবেশিক শাসক ব্রিটিশের পক্ষে যুদ্ধ করার মানসিকতার পরিবর্তন ঘটতে বিলম্ব হয়নি। ১৯২১ সালে হাবিলদার পদমর্যাদায় থাকা সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে একাগ্রচিত্তে সাহিত্য সাধনায় প্রবেশ করেন। এবং কলম ধরেছিলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদেরই বিরুদ্ধে। তার রচিত প্রথম কবিতা ‘মুক্তি’ ১৯১৯ সালের জুলাই মাসে ‘বঙ্গীয় মুসলমান’ পত্রিকায় ছাপা হয়। নজরুলের বিদ্রোহী ভাবনার কবিতা ও গানে তিনি অনায়াসে তার সমসাময়িক অন্য সবাইকে অতিক্রম করতে পেরেছিলেন। বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী ভাবনার কবিদের তিনিই পথিকৃৎ। তার আগে কিংবা পরে দ্বিতীয় কেউ তার কাছাকাছি পর্যন্ত হতে পারেননি।
নজরুল চিন্তা-চেতনায়, মননে-সৃষ্টিতে এমনকি ব্যক্তিগত জীবনাচারে ছিলেন পরিপূর্ণ অসাম্প্রদায়িক। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প তখন সমাজে প্রবল বেগে বিস্তার লাভ করছিল। কিন্তু তাকে সেই বিষ স্পর্শ করতে পারেনি। ঔপনিবেশিক শোষণ-বঞ্চনা, সামাজিক বৈষম্য ও শোষণ-পীড়ন তার সাহিত্য রচনায় প্রকাশ ঘটে। তিনি প্রতিপক্ষ শত্রুর বিরুদ্ধে শক্তিশালী কার্যকর রাজনৈতিক ভূমিকার অবর্তমানে আশ্রয়ের খোঁজে ঈশ্বরের করুণা প্রার্থী হয়েছেন। তেমনি শক্তির দেবী কালী মূর্তির কাছেও ধরনা দিয়েছেন। তার লক্ষ্য ছিল নির্ধারিত। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী এবং স্বদেশি সামন্তবাদীদের পরাভূত করা। হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের ধর্মান্ধদের বিরুদ্ধে নজরুল চিরকাল উচ্চৈঃকণ্ঠে প্রতিবাদী ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে নার্গিসের সঙ্গে বিয়ে বাতিলের পর গিরিবালা দেবীর কন্যা প্রমীলা দেবীকে বিয়ে করেন। এতে দুই সম্প্রদায়ের ধর্মান্ধদের তীব্র ধিক্কার কবিকে সহ্য করতে হয়। কিন্তু নিজ অঙ্গীকারে অটল কবি নজরুল তার অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে কখনো বিসর্জন দেননি।
প্রবল প্রতিপক্ষ ঔপনিবেশিক ইংরেজ সরকার ১৯৩১ সালে তার ‘ভাঙার গান’ বইটি নিষিদ্ধ ও বাজেয়াপ্ত করে। ঐ একই বছর ‘যুগবাণী’ বইটিও নিষিদ্ধ হয়। আরও নিষিদ্ধ ও বাজেয়াপ্ত হয় ‘চন্দ্রবিন্দু’, ‘বিষের বাঁশি’। তবুও নজরুলকে দমানো সম্ভব হয়নি। তাকে জেলে যেতে হয়েছে। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। জেলের অনাচারের বিরুদ্ধে অনশন করেছেন। তবুও আত্মসম্পর্ণের একটি দৃষ্টান্তও সৃষ্টি করেননি। নজরুলের সম্পাদিত ‘নবযুগ’, ‘ধূমকেতু’, ‘লাঙল’ প্রভৃতি পত্রিকা ইংরেজ শাসক বাজেয়াপ্ত করেছিল। ‘অগ্নিবীণা’ বইটিও শাসকরা সহ্য করেনি। সামগ্রিকভাবে নজরুল বিরুদ্ধ স্রোতের বিপরীতে অবিচল থেকে যেমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তেমনি শৃঙ্খলিত পরাধীন দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করেছেন সাম্রাজ্যবাদী-সামন্তবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে। নেতাজী সুভাষ বসু যথার্থই বলেছিলেন, ‘আমরা যখন যুদ্ধে যাব তখন সেখানে নজরুলের গান গাওয়া হবে। আমরা যখন কারাগারে যাব সেখানেও নজরুলের গান গাওয়া হবে।’ ইংরেজ বিতাড়নে ভারতবর্ষের পূর্ণ স্বাধীনতার ঘোষণা নজরুলই প্রথম দিয়েছিলেন ১৯২২ সালে ‘ধূমকেতু’ পত্রিকার মাধ্যমে।
ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর ক্রমাগত বিকাশ নজরুলকে বিচলিত করেছিল। ভবিষ্যতের অনাকাক্সিক্ষত দ্বন্দ্ব-সংঘাতের আশঙ্কা-উপলব্ধি যথার্থই তিনি করতে পেরেছিলেন। উগ্র সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধদের বিরুদ্ধে তার শাণিত উক্তি, ‘‘হিন্দুত্ব ও মুসলমানত্ব দুই সওয়া যায়, কিন্তু তাদের টিকিত্ব ও দাড়িত্ব অসহ্য, কেননা ওই দুটো মারামারি বাধায়। টিকিত্ব হিন্দুত্ব নয়, ওটা হয়তো পণ্ডিত্ব! তেমনি দাড়িত্ব ইসলামত্ব নয়, ওটা মোল্লাত্ব! এই দুই ত্ব মার্কা চুলের গোছা নিয়েই আজ এত চুলোচুলি! আজ যে মারামারিটা বেধেছে সেটাও এই পণ্ডিত-মোল্লার মারামারি। হিন্দু-মুসলমানে মারামারি নয়।”
বাংলা সাহিত্য একান্তই সব বাঙালির। এতে সম্প্রদায়ের ভেদাভেদ নেই। নজরুল সাহিত্যে উভয় ধর্মের অবাধ প্রবেশ ঘটেছে। তিনি বিবাদে লিপ্ত দুই ধর্মের মানুষকে এককাতারে শামিল করতে চেয়েছেন, বিপ্লব আকাক্সক্ষায়। জাতিকে খণ্ডিত করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তাই নজরুল বলেছেন, “বাংলা সাহিত্য হিন্দু-মুসলিম উভয়েরই সাহিত্য। এতে হিন্দু দেবদেবীর নাম দেখলে মুসলমানের রাগ করা যেমন অন্যায়, হিন্দুরাও তেমনি মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের মধ্যে নিত্যপ্রচলিত মুসলমানি শব্দ দেখে ভুরু কোঁচকানো অন্যায়। আমি হিন্দু-মুসলমানের মিলনে পরিপূর্ণ বিশ্বাসী। তাই তাদের এ সংস্কারে আঘাত হানার জন্যই মুসলমানি শব্দ ব্যবহার করি, বা হিন্দু দেবদেবীর নাম নিই। অবশ্য এর জন্য অনেক জায়গায় আমার কাব্যের সৌন্দর্যহানি ঘটেছে। তবু আমি জেনেশুনেই তা করেছি।” ১৯৩১ সালে ‘নবযুগ’ পত্রিকায় আরও লিখেছেন, “এক খুঁটিতে বাঁধা রামছাগল, এক খুঁটিতে বাঁধা খোদার খাসি, কারুর গলার বাঁধন টুটল না, কেউ মুক্ত হলো না, অথচ তারা তাল ঠুকে এ ওকে ঢুঁস মারে। দেখে হাসি পায়।” এই দুইপক্ষ এক হতে পারেনি সেটা বাকহীন অসুস্থ থাকায় নজরুল দেখে যেতে পারেননি। তাই দেশভাগ ও বাংলাভাগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়নি। ১৯৪২ সালে ‘নবযুগ’ পত্রিকায় নজরুল লিখেছিলেন, “বাঙালি যেদিন ঐক্যবদ্ধ হয়ে বলতে পারবে ‘বাঙালির বাংলা’ সেদিন তারা অসাধ্য সাধন করবে।” আরও লিখেছেন, “বাঙালির ছেলেমেয়েকে ছেলেবেলা থেকে যে মন্ত্র শেখানো হবে তা হলো বাংলাদেশ আমাদের, এখান থেকে আমরা তাড়াব পরদেশি দস্যু ও ডাকাতদের, রামা’দের-গামা’দের।”
নজরুলের অগ্রজতুল্য কবি রবীন্দ্রনাথও সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে শঙ্কামুক্ত ছিলেন না। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, “হিন্দু-মুসলমানের সম্বন্ধ লইয়া আমাদের দেশে একটা পাপ আছে। এ পাপ অনেকদিন হইতে চলিয়া আসিতেছে। ইহার যা ফল তাহা না ভোগ করিয়া আমাদের কোনো মতেই নিস্তার নাই।” হিন্দু-মুসলমান বিরোধ-বিবাদে ক্ষুব্ধ রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, “তর্ক করিবার বেলায় বলিয়া থাকি কি করা যায়, শাস্ত্র তো মানিতে হইবে। অথচ শাস্ত্রে হিন্দু-মুসলমান সম্বন্ধে পরস্পরকে এমন করিয়া ঘৃণা করিবার তো কোনো বিধান দেখি না। যদি বা শাস্ত্রের সেই বিধানই হয়, তবে সে শাস্ত্র লইয়া স্বদেশ-স্বজাতি-স্বরাজের প্রতিষ্ঠা কোনোদিন হইবে না। মানুষকে ঘৃণা করা যে দেশে ধর্মের নিয়ম, প্রতিবেশীর হাতে জল খাইলে যাহাদের পরকাল নষ্ট হয়, পরকে অপমান করিয়া যাহাদের জাতি রক্ষা করিতে হইবে, পরের হাতে চিরদিন অপমানিত না হইয়া তাহাদের গতি নাই। তাহারা যাহাদিগকে মেøচ্ছ বলিয়া অবজ্ঞা করিতেছে, সেই মেøচ্ছর অবজ্ঞা তাহাদিগকে সহ্য করিতে হইবে।” বাংলা ও বাঙালি অভিন্ন জাতিসত্তার প্রতি আমাদের দুই মহান কবিদ্বয়ের মধ্যে বিরোধ নেই। রয়েছে সংহতি। ব্যাপকভাবেই।
নজরুল সমাজ ও রাষ্ট্রে সাম্য প্রতিষ্ঠায় ছিলেন অবিচল এবং অকুতোভয়ও। বলশেভিক বিপ্লবকে তিনি যেরূপ গ্রহণ করতে পেরেছিলেন; তেমনটি অন্য কেউ পারেননি। তার গ্রন্থের নাম ‘সাম্যবাদী’, ‘সর্বহারা’। শ্রমজীবী মানুষের প্রতি তার গভীর মমত্ববোধ ছিল বলেই তার সাহিত্যে কৃষক, শ্রমিক, কুলি, মজুর, ধীবর, চোর-ডাকাত, বারবণিতা সবাই উপস্থিত এবং বিষয়ভুক্ত। কেবল কলম হাতে যুদ্ধ করেননি। শারীরিকভাবেও কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত হয়ে সাম্রাজ্যবাদী-সামন্তবাদী শোষণ অবসানে লড়ে গেছেন। নজরুলের অবিভক্ত বাংলা অখণ্ড থাকেনি। ভাগ হয়ে গেছে দুই পৃথক রাষ্ট্রের সীমানায়। ব্রিটিশদের কূটচাল আর কংগ্রেস-মুসলিম লীগের ক্ষমতার ভাগাভাগিতে চূড়ান্ত হয়েছিল দেশভাগ এবং বাংলাভাগও। উদ্দেশ্যমূলক উপায়ে ধর্মকে ঢুকিয়ে জন্ম দেওয়া হয় সাম্প্রদায়িকতা, পরিণতিতে ঘটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং রক্তাক্ত দেশভাগ। আজও নজরুল আমাদের অবলম্বনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। নজরুলকে ভাগ করা সম্ভব হয়নি। কাঁটাতারের বেড়া, দিল্লির শাসকগোষ্ঠীর সীমান্তের নৃশংসতা আর পৃথক রাষ্ট্রের বিভাজনেও বাঙালিকে পৃথক করা যাবে না। কেননা বাঙালির সঙ্গে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন নজরুল।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত
১৯২৯ সালের অক্টোবর মাসে জাপানের আধুনিক জুজুৎসু সংস্থা কোদোকানের ৫ দান বেল্টপ্রাপ্ত জুজুৎসু শিক্ষক শিনজো তাকাগাকি শান্তিনিকেতনে যোগদান করেন। তিনি আসার দুমাস পর (১৩৩৭-এর পৌষ মাসে) রবীন্দ্রনাথ তাকে তার রুমালে একটি গান লিখে উপহার দিয়েছিলেন : ‘সঙ্কোচের বিহ্বলতা নিজেরে অপমান, সঙ্কটের কল্পনাতে হোয়োনা ম্রিয়মাণ। মুক্ত করো ভয়, আপনা মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়।’ স্বদেশ পর্যায়ের গানটি ১৩৩৮ সালে কলকাতার নিউ এম্পেয়ার রঙ্গমঞ্চে প্রথম গাওয়া হয়। এই গানটির বাণীর মধ্যে যেকোনো পর্যায়ে পরাধীন বা স্বৈরশাসনাধীন বাঙালির আত্মশক্তি বিকাশের সর্বকালীন প্রেরণা ও প্রাসঙ্গিকতা পরিলক্ষিত হয়।
১৯৪৭ পূর্ব ভারতবর্ষে ও পরবর্তী ২৪ বছরের পূর্ববঙ্গ বা পূর্ব পাকিস্তানে এবং এমনকি ১৯৭১ সালের পর বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় ও পর্যায়ে আর্থ-সামাজিক (রাজনৈতিক নির্বুদ্ধিতা কিংবা দুরভিসন্ধি সিদ্ধ, স্বৈরাচার সৃজিত) সমস্যা সংকটকালে স্বাধীন নাগরিকরা প্রতিবাদে সঙ্কোচবোধ করে নিত্যনৈমিত্তিক অপমানিত বোধ করেছে। তাদের মনের মধ্যে সংশয়-সন্দেহবোধ ঢুকিয়ে তাদের নিজেদের অধিকার ও দাবি পেশের ক্ষেত্রে বিহ্বলতায় বারবার বিমূর্ত বিমলিন করেছে স্বার্থবাদীরা। ন্যায়ের-অন্যায়ের অপমৃত্যু আর অন্যায়ের উদগ্র বাহু বিস্তারিত হয়ে তাদের জীবনযাপন, মানবিক মূল্যবোধ চর্চায় বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে সেই অব্যক্ত বেদনাবোধের প্রকাশ ঘটেছে। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলকে ডুবিয়ে দিয়েছে, ১৯৬২-এর ছাত্র আন্দোলনে কায়েমি শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার চেয়ে আন্দোলন করেছে, ১৯৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের সংগ্রামের সূচনা ঘটে ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১-এ রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে তার পরিণতি লাভ করেছে। কিন্তু স্বাধীনতা লাভের পরবর্তী পাঁচ দশকে জনগণ বা আমজনতা সব অধিকার অর্জন করতে পারেনি, যার জন্য তারা একাত্তরে রক্ত দিয়েছিল অকাতরে। মনে হবে এখনো তারা সেই আগের (১৯৩০, ১৯৪৭, ১৯৬২) পর্যায়ে বয়ে গিয়েছে। আত্মত্যাগের সুফল জুটেছে টিনের ঘর থেকে পাকা দালানে, খালি থেকে পায়ে জুটেছে জুতা, পোশাক-আশাকে আচার-আচরণে স্মার্টনেস এসেছে বা আসছে। কিন্তু তা প্রকৃতপক্ষে কতখানি তাৎপর্যবহ হতে পেরেছে তার খতিয়ান বা হিসাব মেলেনি। মাথা পিছু আয় ৩ হাজার ডলারের কাছাকাছি, যার বাস্তব উপস্থিতি উপলব্ধির চত্বরেই পৌঁছাতে পারেনি। দুইশ বিলিয়নের বিদেশি সাহায্য, একশ পঞ্চাশ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স, একশ বিলিয়ন ডলারের এফডিআই এই মাটিতে প্রথিত হয়ে সত্যিই কি কোনো কার্যকর পরিবর্তন সূচনা করতে পেরেছে? পরিবর্তন যা করেছে বা হয়েছে তা বাংলাদেশের কৃষকরা করেছেন। যারা কোনো আন্দোলন বা বিশ্ব সম্মেলন বা স্বীকৃতি আদায়ে চতুরতার আশ্রয় নেয় না।
ভালো ও মন্দের কুস্তি খেলা চলছে। ভালোকে কোরামিন দিয়ে বাঁচাতে হচ্ছে। মন্দ মুদ্রা ভালো মুদ্রাকে বাজার থেকে তাড়িয়ে সাজঘরে পাঠিয়ে দিচ্ছে। মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের মতো জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্ন চরকির মতো ঘুরছে শাটল ককের মতো, কূটনামির দ্বারা চলছে বাগ্্যুদ্ধের রাজনীতি।
স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনর্গঠন এবং পুনর্বাসন, পরবর্তীকালে দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, অর্থনীতির প্রধান খাতগুলোকে স্বাবলম্বী করে তোলা ও নানান সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে বৈদেশিক সাহায্য গ্রহণ ও ধার-কর্জ করতে হয়েছে। এ সাহায্য গ্রহণের সময় খাতভিত্তিক প্রয়োজন ও উপযোগিতার ভিত্তিতে শর্তাদি যথাযথ বিবেচনা ও পরীক্ষা পর্যালোচনা, যথাসময়ে সুদক্ষতার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের দ্বারা দ্রুত রিটার্ন প্রাপ্তির লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং অর্জিত অগ্রগতি পর্যালোচনার প্রয়োজনীয়তা ছিল অনস্বীকার্য।
বিদেশি ঋণের সুদের কিস্তি ও রেয়াতকাল শেষে আসল পরিশোধের ক্রমবর্ধমান বোঝা এখন বাংলাদেশের রাজস্ব বাজেটের অন্যতম ব্যয় খাত। ক্রমান্বয়ে বিদেশি দায় পরিশোধের পরিমাণ বাড়ছে। বর্তমানে যেসব হার্ডটার্মের, সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট প্রকৃতির ধারকর্জ করা অব্যাহত আছে তাতে সামনে দায়-দেনা পরিশোধের চাপ আরও বাড়বে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পরিমাণ না বাড়লে বৈদেশিক দায়-দেনা পরিশোধের সহনীয় মাত্রা এক সময়ে অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। বিদেশি সাহায্য গ্রহণকারী অধিকাংশ দেশের ক্ষেত্রে এমনটি হওয়ার কথা নয়, যদি বিদেশি সাহায্য প্রয়োজনীয় সময়ে গ্রহণ করে উপযুক্ত খাতে দ্রুততার সঙ্গে ব্যয় ও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সংসারের বাজেট ঘাটতি মেটাতে নিজের সীমিত সম্পদকে অধিকতর উপযোগী অবস্থায় পাওয়ার জন্যই তো ঋণ বা সাহায্যের প্রত্যাশী হওয়া। গৃহীত সাহায্য ও ঋণ যদি তার ইপ্সিত লক্ষ্য অর্জনে তথা স্বয়ম্ভর ও উৎপাদনমুখী অবস্থার পরিণতিতে না পৌঁছে দেয় তাহলে এক সময় কর্জের টাকা সুদসহ শোধ করতে হলে তো ত্রাহি মধুসূদন পরিস্থিতির উদ্ভব হবেই, যেমনটি হয়েছে দূরের ও কাছের বেশ কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশ ও অর্থনীতিতে। গোষ্ঠী, পারিবারিক ও স্বৈরতান্ত্রিক দুর্নীতিতে নিমজ্জিত বেশ কয়েকটি হতভাগ্য অর্থনীতির দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেউলিয়া হওয়ার উদাহরণও আছে। তবে স্বস্তির বিষয় এই যে, এমন অবস্থায় পড়েনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উদীয়মান ব্যাঘ্র নামে খ্যাত নব্য শিল্পায়িত দেশগুলো। তাদের সফলতা ও ব্যর্থতার কারণগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা জরুরি হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন প্রেক্ষাপটে।
একটা উন্নয়নশীল দেশকে দেখতে হবে কোন সেক্টরে কি পরিমাণ সাহায্য কেন বা কত দিনের জন্য নেওয়া হবে আর নিশ্চিত করতে হবে দ্রুত সেই অগ্রগতি অর্জন। ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশে গৃহীত মোট প্রকল্প ঋণের শতকরা ২৪.২৮ ভাগ ব্যবহৃত হয়েছে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে, শতকরা ২১.৭৮ ভাগ পরিবহন ও যোগাযোগ (সড়ক সেতু, রেলওয়ে, টিঅ্যান্ডটিসহ) খাতে। বাংলাদেশ অর্থনীতির প্রাণ কৃষি ও পানিসম্পদ খাতে ব্যবহৃত হয়েছে মাত্র ১২.৪৭ ভাগ। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পল্লী উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের মতো সামাজিক খাতগুলোয় ব্যবহারের পরিমাণ একুনে ১৫.৭৭ ভাগ। তাহলে দেখতে হবে জ্বালানি বিদ্যুৎ এবং যোগাযোগ খাতে বিনিয়োগকৃত বিপুল ঋণের টাকা বাঞ্ছিত ও টেকসই উন্নয়নে সক্ষমতা অর্জিত হয়েছে কিনা। উন্নয়নকে অর্থবহ করতে হলে এ পর্যালোচনা প্রয়োজন।
বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তিকে কখনো সখনো ধারকর্জ করে চলা কোনো কোনো অর্থনীতিতে উন্নয়নের বিশেষ সাফল্য বিবেচনা করে তা ফলাও করে প্রচারের প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। আবার সময়ে সময়ে দাতাদেশ ও সংস্থার আরোপিত নানান সংস্কার কর্মসূচির প্রেসক্রিপশন পালনেও বৈদেশিক সাহায্য নেওয়ার প্রবণতা, বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে বিদেশি কনসালট্যান্ট দিয়ে দেশের মানবসম্পদের দক্ষতা ও কর্মক্ষমতাকে বাড়ানোর প্রয়াসের নামে প্রকল্প ব্যবস্থাপনাকে বরং বিদেশি সাহায্যনির্ভর ও আরামপ্রিয় করে তোলার আত্মঘাতী অবস্থা উপযুক্ত পর্যালোচনায় আনা হয় না। যেহেতু যেকোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত ঋণ অনুদানের দায়ভার বহন করতে হবে রীতিমতো তিন জেনারেশন পর্যন্ত সব সাধারণ নাগরিককে, সেহেতু বৈদেশিক সাহায্য আর কতদিন, কেন, কোন কাজে এবং কী শর্তে নেওয়া হচ্ছে, হবে বা হবে নাÑ এসব নিয়ে মিডিয়া এমনকি জাতীয় সংসদে আলোচনা- বিতর্ক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গণসচেনতা বৃদ্ধি এবং জনমত যাচাইয়ের ব্যবস্থা থাকা উচিত।
গণতন্ত্রে মানুষই বড় কথা। অর্থনৈতিক উন্নয়ন এই মানুষের কল্যাণ ভাবনাতেই নিবেদিত। এই মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধের দ্বারা, আবার সব মানুষের দ্বারা কর্তব্যকর্ম সূচারুরূপে সম্পাদনের মাধ্যমে সমাজ সমৃদ্ধি লাভ করে। আবার এই মানুষের দায়িত্বহীনতার কারণে সমাজের সমূহ ক্ষতি সাধিত হয়। অবস্থা ও সাধ্য অনুযায়ী উৎপাদনে একেকজনের দায়িত্ব ও চাহিদার সীমারেখা বেঁধে দেওয়া আছে কিন্তু এ সীমা অতিক্রম করলে বাজার ভারসাম্য বিনষ্ট হবেই। ওভারটেক করার যে পরিণাম দ্রুতগামী বাহনের ক্ষেত্রে, সমাজে সম্পদ অর্জন ও ভোগের ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রমণে একই পরিবেশ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে থাকে। সমাজে নেতিবাচক মনোভাবের উপস্থিতি, অস্থিরতা ও উন্নয়ন অপারগতার যতগুলো কারণ এ যাবৎ চিহ্নিত বা শনাক্ত হয়েছে, তার মধ্যে এই সম্পদ অবৈধ অর্জনরোধে অপারগতা, ন্যায্য অধিকার বঞ্চিতকরণে প্রগলভতা এবং আত্মত্যাগ স্বীকারে অস্বীকৃতিই মুখ্য। গণতন্ত্রের বিকাশ ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য যা শুভ ও কল্যাণকর নয়।
দেখা যাচ্ছে, কার্যকারণের সঙ্গে ফলাফলের আন্তঃযোগাযোগ বা আন্তঃসম্পর্ক পরস্পর প্রযুক্ত ও নিবিড়ভাবে নির্ভরশীল। যেকোনো পর্যায়কে তাই বিছিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই, দীর্ঘমেয়াদে অর্জিত সাফল্যকে একটি সীমাবদ্ধ সময়ের অবয়বে শুধু নিজেদের সাফল্য হিসেবে দেখার, প্রচারের ও প্রগলভতা প্রকাশের সুযোগ নেই। সামষ্টিকতার সামষ্টিকতাই থাকে না, যদি কাজ আর ইফেক্টের মধ্যকার পরস্পর প্রযুক্ততার বিষয়টি নিরপেক্ষভাবে নৈর্ব্যক্তিক বিশ্লেষণে যাওয়া না হয়, যদি শুধু খ-িত দৃষ্টিতে দেখা হয় একটি সম্পূর্ণ বিষয়কে। অর্থনীতির ক্ষতিকর যেকোনো অপপ্রয়াসের সামনের ও নেপথ্যের উভয় কারণের প্রতি দৃষ্টিদান সমাধান প্রত্যাশা ও প্রয়াসকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে পারে। কার্যকারণ ছাড়া কোনো কিছু উদ্ভব হয় না। শুধু উদ্ভূত পরিস্থিতি কিংবা উপস্থাপিত ফলাফলকে সমালোচনার কাঠগড়ায় না এনে একই সঙ্গে কী কারণে এই পরিস্থিতির উদ্ভব কিংবা এই ফলাফলের উপলক্ষকেও বিচার-বিশ্লেষণের আর্জিতে আনার আবশ্যকতা অনস্বীকার্য।
লেখক: কলাম লেখক ও উন্নয়ন অর্থনীতির বিশ্লেষক
পরিবারকে বলা হয়, বৃহৎ সমাজের সংক্ষিপ্ত পরিসর। ইসলামের দৃষ্টিতে পরিবার একটি আলোকিত দর্পণ। যেখানে ফুটে ওঠে ইসলামের সুমহান শিক্ষা ও আদর্শ। ফলে বিরাজ করে শান্তি ও ভালোবাসা। যে পরিবারে ইসলামের শিক্ষা নেই, সেখানে শান্তি ও ভালোবাসা নেই। তাই পরিবার গঠনে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা হচ্ছে, পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের সঙ্গে ন্যায় ও শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করা। কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা তাদের সঙ্গে সুন্দরভাবে বসবাস করো।’ সুরা আন নিসা : ১৯
বর্ণিত আয়াতের শিক্ষা হলো স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে উত্তম কথা বলা। কথায়, কাজে, চলাফেরায় সৌন্দর্য রক্ষা করা। যেমন ব্যবহার আপনি তাদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করেন, তেমন ব্যবহার করা। হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে উত্তম হলো ওই ব্যক্তি, যে তার পরিবারের কাছে উত্তম। আমি আমার পরিবারের কাছে উত্তম।’ জামে তিরমিজি : ৩৮৯৫
নবী কারিম (সা.)-এর চারিত্রিক সৌন্দর্যের মধ্যে এটাও ছিল যে, তিনি সদাহাস্য সুন্দর ব্যবহার করতেন। পরিবারের সঙ্গে হাস্যরস, নরম ব্যবহার ইত্যাদি করতেন। হজরত আয়েশা (রা.)-এর সঙ্গে কখনো কখনো দৌড় প্রতিযোগিতা করতেন। সুনানে আবু দাউদ : ২৫৭৮
ইসলামের সুমহান আদর্শ ও শিক্ষা পালন সুখি পরিবারের উপকরণ বিশেষ। এর মাধ্যমে পারস্পরিক ভালোবাসা ও সৌহার্দবোধে ভরপুর হবে পরিবার, পরস্পরে তৈরি হবে সুদৃঢ় বন্ধন। পরিবারগুলো এই সমাজেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে অশিক্ষা, দায়িত্বহীনতার পাশাপাশি মুসলিম ঐতিহ্য ভুলে যাওয়া, মূল্যবোধহীন জীবনাচার এবং অভাব-অনটনসহ নানাবিধ সংকট পরিবারগুলোর জন্য প্রধান হুমকি। এমতাবস্থায় পরিবারগুলোকে রক্ষা করতে মুসলিম ঐতিহ্য অবলম্বনের পাশাপাশি, মূল্যবোধ চর্চা ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকে জোরদার করতে হবে। এগুলো হচ্ছে পরস্পরের পরিপূরক ও অপরিহার্য অংশ।
ইসলামি স্কলারদের মতে, পরিবারগুলোকে মূল্যবোধ, দয়া ও ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার কেন্দ্রস্থল বানাতে হবে। ইসলাম সর্বাবস্থায় তালাক, সন্তানহীনতা ও দাম্পত্য কলহের মতো নানা জটিল সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা এবং সন্তানদের প্রয়োজনীয় বিষয়ে দক্ষতা শেখানোর ওপর জোর দিয়েছে। এক কথায়, ইসলাম পরিবার ও পারিবারিক মূল্যবোধ রক্ষার বিষয়ে সচেতন।
হজরত হাসান বসরি (রহ.) বলেছেন, ‘আপনি যদি আপনার স্বামী বা স্ত্রীকে সম্মান করেন, তাহলে আপনি তার আস্থা অর্জন করবেন এবং এরই সূত্রে আপনি তার আনুগত্য পাবেন। ফলে উভয়ই প্রশান্তি, প্রফুল্লতা ও সাফল্য অর্জন করবেন।’
আদর্শ পরিবারের বৈশিষ্ট্য হলো এমন পরিবারের সদস্যরা পরস্পরের প্রতি সহৃদয় থাকেন। বলা হয়, পরিবারের সদস্যরা যদি পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে একত্রে বসে, তাহলে তার সওয়াব মসজিদে নফল ইতিকাফের চেয়েও বেশি। এমন পরিবারের সদস্যরা যখন পরস্পরের সঙ্গে কথা বলেন, তখন তাতে থাকবে সততা, স্পষ্টতা ও আন্তরিকতা। তারা পরস্পরকে ভালো কাজে উৎসাহ দেন ও মন্দ কাজে নিরুৎসাহিত করেন।
পারিবারিক প্রেক্ষাপটে কয়েকটি ভালো কাজ হলো আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা ও তাদের খোঁজখবর নেওয়া, বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য সচেষ্ট থাকা এবং ধর্মীয় বিষয় অনুসরণ ও পালনে উৎসাহ দেওয়া। কোনো পরিবারের যখন এসব বৈশিষ্ট্য উপস্থিত থাকবে, তখন সেখানে সামান্য ও অর্থহীন বিষয় নিয়ে কথা বলার সুযোগ হবে না, বরং তারা পরস্পরকে সবসময় কল্যাণ ও সুন্দর বিষয়ের দিকে পথপ্রদর্শন করবেন।
আদর্শ পরিবারে কেউ কাউকে কোনো বিষয়ে উপদেশ দেওয়ার আগে তাকে কাজের মাধ্যমে ওই বিষয়ের অগ্রপথিক হতে হয়। আপনি যদি আচার-আচরণে সুশীল হন তখন অন্যরা স্বাভাবিকভাবেই আপনার অনুসারী হবেন। আপনি নিজে যদি সুশীল না হয়ে পরিবারের অন্যদের সুশীল হওয়ার উপদেশ দেন তাতে কাজ হবে না। ইমাম গাজালী (রহ.) বলেন, ‘পরিবারে অতিরিক্ত মাত্রায় উপদেশ প্রদান অন্যদের মধ্যে বিরক্তি সৃষ্টি করে এবং এতে অন্যরা আপনার অনুগতও হবেন না।’
যে পরিবারে এমন সূক্ষ্ম বিষয়ের চর্চা হয়, ওই পরিবারের সদস্যরা সবসময় জ্ঞানার্জন ও ধর্মীয় জ্ঞান বৃদ্ধিতে সক্রিয় হন; যাতে তারা পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যেতে পারেন। এমন পরিবারের সদস্যরা সব কাজ করেন সচেতনতা নিয়ে এবং পরিবারের অন্যদের জীবন ও পরিবারবিষয়ক জ্ঞানার্জনের পথে উৎসাহ দেন। এ ক্ষেত্রে জ্ঞানী ও ধার্মিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা উচিত, যাতে পরিবারের সবার ইমান জোরালো হয় এবং তারা জীবন সম্পর্কে অনেক ভালো দক্ষতা অর্জন করেন।
ইসলামি স্কলারদের মতে, দাম্পত্য জীবনে সফল হতে হলে পারিবারিক সব বিষয়ে পরিকল্পনা থাকতে হবে। আগামীকালও যাতে আপনি স্ত্রী বা স্বামীর কাছে ভালো থাকেন সে জন্য আজ যা যা করার দরকার, সেসব করতে হবে পরিকল্পনামাফিক। এভাবে আগামী ৫ বছরের জন্য স্ত্রী-স্বামীর পরস্পরে ভালো সহযোগী হতে পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। অর্থনৈতিক বিষয়ে, সাশ্রয়ের বিষয়ে, জীবিকা ও আয়-উপার্জনের বিষয়ে, জীবনযাপনের বিষয়ে পরিকল্পনা প্রণয়নে স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের সহযোগিতা জরুরি। সামর্থ্য এবং সাধ্যের আলোকে পরিকল্পনা করা। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাগুলোকে স্বল্পসময়ের পরিকল্পনায় ভাগ করে নেওয়া। ধরুন তিন বছরে যা যা অর্জনের পরিকল্পনা রয়েছে, সেই লক্ষ্যের আলোকে প্রতি বছরে ও প্রতি মাসে আপনাকে যা যা করতে হবে তা ঠিক করে নিন। এভাবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সহজ হয়ে যাবে।
ইসলামের শিক্ষা হলো মানুষের প্রতি দয়ার্দ্র, আন্তরিক, ক্ষমাশীল ও সহানুভূতিশীল হোন। যদি মানুষের প্রতি সহৃদয় হন দেখবেন মানুষ আপনার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে চারপাশে জড়ো হচ্ছে। নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনে এসব গুণ ছিল বলেই তিনি সহজেই মানুষদের আকৃষ্ট করতে পারতেন। নবীর উম্মত হিসেবে এই গুণ অর্জনের জন্য সবার চেষ্টা করা দরকার। আর এটা শুরুর প্রথম পর্যায় হলো পরিবার। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনুসরণে প্রতিটি পরিবারে এ বিষয়ের চর্চা হলে পারিবারিক অশান্তি অনেকটাই কমে যাবে। সন্তানের বখে যাওয়ার প্রবণতা কমবে। সমাজে নেমে আসবে শান্তির সুবাতাস।
লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক গবেষক
উন্নয়নশীল এবং উন্নত, সব ধরনের সমাজেই বৈষম্য থাকে। এর ফলে তৈরি হয় মূল্যবোধের ঘাটতি। কিন্তু সেই ঘাটতি পূরণের দায়িত্ব সরকারের। একটি সমাজে বৈষম্য কমানোর জন্য, সরকারের নির্দিষ্ট কিছু পলিসি থাকে। সেই পলিসি অনুসরণ করেই ভারসাম্যপূর্ণ সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। এটা এই কারণেই করা হয়, না হলে অপরাধ ও দুর্নীতিও একই হারে বাড়তে থাকবে যা কোনো সরকারেরই কাম্য না। একইসঙ্গে সামাজিক অস্থিরতার ফলে, সরকারের মধ্যেই তৈরি হয় এক ধরনের সিদ্ধান্তহীনতা। ভেঙে পড়ে চেইন অব কমান্ড। তখন সেই সমাজ পরিণত হয় অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে।
একটি সমাজে আয়ের তুলনায় বৈষম্য যখন লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকে, তখন স্বাভাবিকভাবেই জনগণের মধ্যে তৈরি হয়, অসন্তোষ। সেই অসন্তোষের মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে যাওয়ার আগেই, উদ্যোগী হতে হয় সরকারকে। সেখানে ব্যর্থতার কোনো সুযোগ নেই। যখন আয়ের তুলনায় সম্পদ বৈষম্য দ্বিগুণ হয়ে যায়- তখন বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে, সরকারের পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করা দরকার।
দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে- সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলছেন- যে দেশের আয় যত বেশি বাড়ে, সে দেশের সম্পদ কর আহরণ তত বেশি বাড়ে। বাংলাদেশের সম্পদ কর আহরণ জিডিপির শূন্য দশমিক ৩৪ শতাংশ। অর্থাৎ ১ শতাংশ জিডিপি বাড়লে সম্পদ কর শূন্য দশমিক ৩৪ শতাংশ বাড়ার কথা। সেই আয় ও মূল্যস্ফীতি মিলিয়ে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় বছরে ৬ হাজার কোটি টাকা বাড়তি সম্পদ কর আসার কথা ছিল। কিন্তু তা আসছে না। তিনি আরও জানাচ্ছেন- বাংলাদেশে আয় বেড়েছে দ্বিগুণ, একই সঙ্গে বৈষম্যও বেড়েছে। কিন্তু দেখার বিষয়, আয় বৈষম্যের চেয়ে সম্পদের বৈষম্য বেড়েছে দ্বিগুণ হারে। আয় বৈষম্য ১.৪ শতাংশ বেড়ে থাকলে সম্পদের বৈষম্য বেড়েছে ৩ শতাংশের বেশি। অর্থাৎ সম্পদের বৈষম্য ক্রমান্বয়ে ঘনীভূত হচ্ছে ও বৈষম্য কয়েকগুণ হারে বাড়ছে।
জমি, বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে যথাযথভাবে কর আরোপ হচ্ছে না। এখানে বৈষম্য রয়েছে। জমির ওপর বিনিয়োগ বাড়ছে, কারণ জমির দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। এটার বড় কারণ এই বিনিয়োগে বড় ধরনের কর দিতে হয় না। সোজা কথায় এর অর্থ দাঁড়ায়, মধ্যবিত্তকে প্রত্যক্ষ করের আওতায় আরও কীভাবে নিয়ে আসা যায়- সেই পথ খুলে দেওয়া। এর মানে হচ্ছে- যারা জমি-বাড়ির মালিক, তারা কর প্রদানের ক্ষেত্রে গড়িমসি করলেও, কোনোভাবেই যেন মধ্যবিত্ত কর প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ছাড় না পায়। বিষয়টা কি তাই!
আসলে ট্যাক্স পদ্ধতির মধ্যে শহর-গ্রাম অথবা ধনী-গরিবের মধ্যে যে পাহাড়সম বৈষম্য রয়েছে, তার মধ্যে ভারসাম্য নিয়ে আসা জরুরি। আমরা জানি, জিডিপির পরিমাণ বাড়লে এমনিতেই কর আদায় বাড়ে। একইসঙ্গে বাড়তে থাকে কর্মসংস্থান। কিন্তু বর্তমানে সমাজের চিত্র পুরোপুরি উল্টো! এই উল্টো প্রতিবিম্বকে সোজা করার দায়িত্ব সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। তাদের ব্যর্থতা জনগণের কাঁধে চাপানোর কোনো সুযোগ নেই।
কিছু আমলা দুর্নীতিবাজ, কিছু ব্যবসায়ী দুর্নীতিবাজ, কিছু সরকারি কর্মচারী দুর্নীতিবাজ আবার কিছু রাজনীতিবিদও দুর্নীতিবাজ। তাহলে আর বাকি থাকল কী- সাধারণ জনগণ? খুব স্বাভাবিকভাবেই, ঘুরেফিরে সব বোঝা সেই পাবলিকের ঘাড়েই।
এইভাবে সম্পদ বৈষম্য যদি বাড়তে থাকে, মনে রাখতে হবে- উল্টো দিকে অন্য কিছু বাড়বে। ফলে সময় থাকতেই, অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট বরেণ্য ব্যক্তিদের সঙ্গে বসে একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। কর্মসংস্থানহীন, করহীন সমাজব্যবস্থায় স্থিতিশীল কোনো কর্মযজ্ঞই শেষ পর্যন্ত আর স্থিতিশীল থাকে না। বিষয়টি সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ যত দ্রুত উপলব্ধি করবেন, ততই মঙ্গল। বাংলাদেশে আয়ের তুলনায় সম্পদ বৈষম্য কমে আসবে- এটাই কাম্য।
আধুনিক রুশ সাহিত্যের সম্রাট হিসেবে খ্যাত আলেকজান্ডার পুশকিনের জন্ম মস্কোয় ১৭৯৯ সালের ২৬ মে। ইংরেজি সাহিত্যে শেকসপিয়ার, জার্মান সাহিত্যে গ্যেটে ও বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের মতোই রুশ সাহিত্যে পুশকিনের সাম্রাজ্য। প্রাচীন রুশ অভিজাত পরিবারগুলোর একটিতে পুশকিনের জন্ম। বাবা লভোভিচ পুশকিনের কবিতা লেখার শখ ছিল। তাই বইয়ের রাজত্বেই বেড়ে ওঠা পুশকিনের। ১৫ বছর বয়সেই প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। ১৮২০ সালে ‘রুসলান ই লুদমিনা’ নামে কাহিনিকাব্য প্রকাশিত হলে তাকে উদীয়মান কবি হিসেবে ধরে নেন অনেকে। পরের ১০ বছর তিনি কাব্য, গদ্য এসবের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কাটিয়েছেন। ১৮২৯ থেকে ১৮৩৬ সালের মধ্যে তার রচনাগুলো রুশ সাহিত্যে নবদিগন্তের উন্মেষ ঘটায়। রাশিয়ায় তখন ছিল রাজতন্ত্র। পুশকিন ছিলেন রাজতন্ত্রবিরোধী। রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে লেখালেখির কারণে পুশকিনকে সেন্ট পিটার্সবুর্গ থেকে বন্দি করে নির্বাসনে পাঠানো হয় দক্ষিণ রাশিয়ার একটি দুর্গম অঞ্চলে। তবু তার লেখনী থেমে থাকেনি। ১৮৩৬ সাল থেকে পুশকিন একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন, বাংলায় যার নাম হতে পারে ‘সমসাময়িক সাহিত্য’। সাময়িকীটি তার মৃত্যুর পরও ১৮৬৬ সাল পর্যন্ত চালু ছিল। পুশকিনের অসংখ্য কবিতা তরুণদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। রাশিয়ান রোমান্টিসিজমের প্রদর্শক হিসেবে স্বীকৃত পুশকিনের ‘আমি তোমাকে ভালোবাসতাম, সম্ভবত এখনো ভালোবাসি’ কবিতাটি ভালোবাসার শক্তিশালী কবিতা হিসেবে সমাদৃত। ভাষার ওপর আশ্চর্য দক্ষতা, প্রাঞ্জলতা ও গভীরতা ছিল তার সাহিত্যের মূল বৈশিষ্ট্য। তিনি শুধু রাশিয়ান হিসেবেই নন, বরং সমগ্র পৃথিবীতে অত্যন্ত শক্তিমান কবি হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন। কিছু ব্যক্তিগত শত্রুর সঙ্গে সংঘর্ষকালে তিনি আহত হন এবং দুদিন পরই মারা যান। ১৮৩৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পুশকিনের অকাল মৃত্যু রুশ সাহিত্যে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচিত হয়।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
অপারেশন ছাড়াই সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় আব্দুল মোতালেব হোসেন (৩৫) নামের এক মানসিক রোগীর পেট থেকে ১৫টি কলম বের করেছেন চিকিৎসক।
এ কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক। তাদের এই সাফল্যে রীতিমত হৈচৈ পড়ে গেছে নেট দুনিয়ায়।
এ বিষয়ে আব্দুল মোতালেবের মা লাইলী খাতুন বলেন, তার ছেলে মোতালেব খুব ভাল ছাত্র ছিল। ২টি লেটার মার্ক নিয়ে এসএসসি পাস করে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এরপর খারাপ সঙ্গদোষে সে আস্তে আস্তে মাদকাসক্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এরপর থেকে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ানোর সময় কুড়িয়ে পাওয়া কলমগুলি খাদ্য মনে করে খেয়ে ফেলে। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। গত এক বছর ধরে তার শরীরে জ্বর ও পেটে ব্যথা শুরু হয়। অনেক চিকিৎসার পরও তা ভালো হচ্ছিল না। অবশেষে গত ১৬ মে তাকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। এখানে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার অসুখের কারণ ধরা পড়ে। পরে চিকিৎসকরা তার পেটের ভিতর থেকে বিনা অপারেশনে কলমগুলো বের করে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মোতালেব হোসেন প্রথমে পেটে ব্যথা নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করেও পেটে কি সমস্যা সেটা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। ফলে রোগীটিকে আমার কাছে রেফার্ড করেন। এন্ডোস্কপির মাধ্যমে পরীক্ষা করে তার পেটের ভেতর ১৫টি কলম দেখে প্রথমে চমকে যাই। এটা কীভাবে সম্ভব। পরে এন্ডোস্কপির মাধ্যমেই অপারেশন ছাড়াই আমরা কলমগুলো বের করার সিদ্ধান্ত নেই। তিনি আরও বলেন, কাজটি আমাদের জন্য দারুণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কলমগুলো একে একে পাকস্থলীতে সেট হয়ে গিয়েছিল। কলমগুলো বের করতে আমাদের প্রথমে মাথায় চিন্তা ছিল যেন, কলমগুলোর কারণে কোনোভাবেই শ্বাসনালিতে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ না হয়ে যায়। এছাড়াও রক্তক্ষরণের একটা চিন্তাও মাথায় ছিল। অতঃপর প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আমরা কলমগুলো বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হই।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এন্ডোস্কপি করা ব্যক্তি মানসিক অসুস্থ হওয়ায় তার কলম খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এভাবে খেতে খেতে সে অনেক কলম খেয়ে ফেলে। কলমগুলো তার পেটের মধ্যে জমা হয়েছিল। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তার পেটের ভিতর ১৫টি কলম থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হই। এবং অপারেশন ছাড়াই এন্ডোস্কপির মাধ্যমে তার পেটের ভেতর থেকে একে একে ১৫টি আস্ত কলম বের করে আনি। বর্তমানে রোগীটি সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সুস্থ আছেন।
তিনি আরও বলেন, এন্ডোস্কপির মাধ্যমে মানুষের পেট থেকে কলম বের করার মতো ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। তাও আবার একটি-দু‘টি নয় ১৫টি কলম। এর আগে ঢাকা মেডিকেলে এক ব্যক্তির পেট থেকে এন্ডোসকপির মাধ্যমে একটি মোবাইল বের করেছেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এমন সাফল্য এটাই প্রথম। আমরা অত্যাধুনিক ভিডিও এন্ডোস্কপি মেশিনের মাধ্যমে এবং আমাদের দক্ষ ডাক্তার দ্বারা অপারেশন ছাড়াই শুধু এন্ডোস্কপির মাধ্যমে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পেট থেকে ১৫টি কলম বের করে আনতে সক্ষম হয়েছি। শুধু এটাই নয়, আমরা বিনা অপারেশনে পেটের পাথর, কিডনিতে পাথর থেকে শুরু করে অনেক কিছুই অপারেশন ছাড়াই সেগুলো অপসারণের কাজ করে যাচ্ছি।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।