
আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তাকে বলা হচ্ছে তিনি বাইরে থেকে এসেছেন। অন্যদিকে সিলেটের বর্তমান মেয়র বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী দলীয় সিদ্ধান্তে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। প্রার্থিতা প্রত্যাহারসহ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন আরিফুল হক চৌধুরী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
দেশ রূপান্তর : আপনি তো দীর্ঘদিন ধরে একজন প্রবাসী। হঠাৎ করে কেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচন করার আগ্রহ তৈরি হলো?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী : হঠাৎ করে আমি সিলেটের রাজনীতিতে আসিনি। আমি উপজেলা ছাত্রলীগের সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ছিলাম। পরে, উপজেলা যুবলীগের কমিটিতেও ছিলাম। তারপর ইউকে চলে যাই। সেখানে লন্ডন সিটি যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করি, পরবর্তী সময়ে ইউকে যুবলীগের সভাপতি হই। কেন্দ্রীয় যুবলীগের নানক-আজম পরিষদের সদস্য ছিলাম। গত ২০ বছর ধরে বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জে নির্বাচন করার জন্য রাজনীতির মাঠে আমি সক্রিয় ছিলাম। সুতরাং কোনোভাবেই আমি হঠাৎ করে রাজনীতিতে এসেছি এটা বলা যুক্তিযুক্ত নয়।
দেশ রূপান্তর : আপনি তো আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচনে জয়ী হলে দলীয় পরিচয় ছাপিয়ে কি আপনি জনতার মেয়র হতে পারবেন?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী : মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শিক প্রশ্নে আমি আপস করব না। সিটি নির্বাচনে যদি জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে সেবা করার সুযোগ দেয় তবে আমি নিশ্চয়তা দিতে পারি দলের নয় জনতার মেয়র হিসেবে কাজ করব। আমি যার কাছ থেকে রাজনৈতিক দীক্ষা পেয়েছি, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়েছেন।
দেশ রূপান্তর : বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয়, ভোটের মাঠে আপনার সমীকরণ অনেকটা সহজ হয়ে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। আপনার মন্তব্য কী?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী : সত্যি বলতে উনার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত আমাকে মর্মাহত করেছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি চেয়েছিলাম, তিনি দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করুক। তারপর জনগণ তাদের মতামত জানাক।
দেশ রূপান্তর : প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সঙ্গে আপনার ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। সিলেটের উন্নয়নে আপনি এই সম্পর্ক কীভাবে কাজে লাগাবেন?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এবং আমাদের ছোট আপা শেখ রেহানা আমাকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন এটা আমার জন্য অনেক বড় গর্বের বিষয়। আমি এই পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করব। যেখানে শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণ, নতুন একটি হাসপাতাল নির্মাণ, বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি, সুরমা নদী খননসহ বিভিন্ন বিষয় থাকবে। ইতিমধ্যে সুরমা নদী খননের বিষয়টি নিয়ে নৌপরিবহনমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। সিলেটের লোডশেডিং নিরসনের জন্য আমি বিদ্যুৎ ও জ্বালানিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে কথা বলে তাৎক্ষণিক সমাধান করেছি।
দেশ রূপান্তর : আপনার পরিবার ও ব্যবসা-বাণিজ্য সবই যুক্তরাজ্যে। অনেকের ধারণা, আপনি মেয়র নির্বাচিত হলে সিলেট-লন্ডন যাতায়াতের মধ্যে থাকবেন। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী : ফলাফল যাই হোক আমি কিন্তু আর যুক্তরাজ্য ফিরে যাচ্ছি না। আমি সিলেটের মাটিতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চাই। দেখুন আমার সন্তানরা বড় হয়ে গেছে। যুক্তরাজ্যে আমার যে ব্যবসা-বাণিজ্য এটা তারাই দেখবে। ইতিমধ্যে আমার স্ত্রী দেশে ফিরে এসেছেন। আমরা হয়তো ছুটি কাটাতে ইউকে যেতে পারি, কিন্তু স্থায়ীভাবে আমরা কখনো ফিরে যাব না। এটা দেশ রূপান্তরের মাধ্যমে সবাইকে জানিয়ে দিতে চাই।
দেশ রূপান্তর : গত কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি একেবারেই কম দেখা গেছে। বিএনপি সরে দাঁড়ানোয় ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কঠিন হয়ে গেল কি?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী : আমি বিশ্বাস করি মানুষ ভোট দিতে আসবে। দেখুন বিএনপি সরে গেলেও, ভোটের মাঠে জাতীয় পার্টি, ইসলামি আন্দোলনসহ ৬ জন মেয়র প্রার্থী সক্রিয় থেকে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী সক্রিয় থেকে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে আসবে বলেই আমার বিশ্বাস।
দেশ রূপান্তর : শুরুর দিকে আওয়ামী লীগ থেকে অনেকেই প্রার্থী হয়েছিলেন। পরে তারা সরে দাঁড়ালেও আপনার জন্য তারা কাজ করবেন কি?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী : সিলেট আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। দলের সবাই আমার জন্য কাজ করছেন এ বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত। আমার প্রচার-প্রচারণা চালাতে কিংবা কর্মসূচি চালাতে আমি সবার কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছি এবং সিলেট আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ যেভাবে পরামর্শ দিচ্ছেন আমি সেভাবেই কাজ করছি। বলতে পারেন টোটাল প্ল্যানিংটা দলের।
দেশ রূপান্তর : আপনি জয়ের ব্যাপারে কতটা আশাবাদী?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী : নির্বাচনে জয়ের বিষয়টা বেশ চ্যালেঞ্জিং তবে আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। এ জন্য আমাদের আরও কাজ করতে হবে। ভোটারদের কাছে যেতে হবে। আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য জানাতে হবে।
দেশ রূপান্তর : আপনি মেয়র নির্বাচিত হলে কোন ৫টি বিষয়কে গুরুত্ব দেবেন?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী : শহরকে সবুজ এবং পরিষ্কার নগরী হিসেবে গড়ে তুলব। ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে। নগরীর জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান করব। মশক নিধন ও নতুন কিছু স্কুল নির্মাণ এই ৫টি বিষয় আমার প্রায়োরিটির লিস্টে রয়েছে। এছাড়া আমি এখানে হাইটেক পার্ক নির্মাণ করতে চাই। ফ্রিল্যান্সারদের জন্য উপযুক্ত একটা পরিবেশ গড়তে চাই। যেন তারা সিলেটে বসে ডলার উপার্জন করতে পারে।
দেশ রূপান্তর : প্রবাসীদের কীভাবে সিলেটের উন্নয়নে কাজে লাগানো যায়?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী : আমি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করে তাদের উৎসাহিত করব সিলেটে বিনিয়োগ করার জন্য। হাইটেক পার্ক নির্মাণ করতে প্রবাসীদের সহযোগিতা প্রয়োজন। একটা হাসপাতাল তৈরি করতে চাই, যেখানে প্রবাসীদের বড় বিনিয়োগ প্রয়োজন।
দেশ রূপান্তর : পর্যটন শিল্পের বিকাশে আপনার কি কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী : দেখুন আমাদের কেবলমাত্র যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী তরুণ প্রজন্মকে যদি সিলেটের পর্যটনের প্রতি আকৃষ্ট করা যায় তাহলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করা সম্ভব। এ খাত নিয়ে আমার বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে।
দেশ রূপান্তর : আপনি মেয়র হতে পারলে নগরবাসীর সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ স্থাপন করবেন?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী : আমি একটা অ্যাপস তৈরির পরিকল্পনা করেছি। মানুষকে যেন আমাদের কাছে না আসতে হয়, আমরাই তাদের কাছে ছুটে যাব। অ্যাপসে তারা যেকোনো সমস্যার কথা জানাবে, আমাদের টিম সেখানে পৌঁছে যাবে। এজন্য আমরা ‘কুইক অ্যাকশন রেসপন্স টিম’ গড়ে তুলব।
দেশ রূপান্তর : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী : দেশ রূপান্তরকেও ধন্যবাদ।
আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তাকে বলা হচ্ছে তিনি বাইরে থেকে এসেছেন। অন্যদিকে সিলেটের বর্তমান মেয়র বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী দলীয় সিদ্ধান্তে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সিলেটের রাজনীতি, ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
দেশ রূপান্তর : নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয় আপনার সমর্থকরা হতাশ কি না?
আরিফুল হক চৌধুরী : আমি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রায় ২০-২৫ দিন সময় নিয়ে চিন্তা করেছি। এ সময়ে আমার সমর্থক দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে শুভাকাক্সক্ষীদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমি বলেছি, আপনারা আমাকে ভোট দিয়েছিলেন বলেই আমি মেয়র হতে পেরেছিলাম। কিন্তু এবার ইভিএমে আপনারা আমাকে ভোট দিলেও সেই ভোট অন্য জায়গায় চলে যাবে। তাই তারাও বিষয়টা বুঝতে পেরেছেন। তা ছাড়া ইভিএমের সঙ্গে সাধারণ ভোটাররা পরিচিত নয়।
অন্যদিকে, আমি নির্বাচনে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই আমাদের ১৭-১৮ জন নেতাকর্মীকে পুলিশ মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করেছে। আমি নির্বাচনে দাঁড়ালে গ্রেপ্তার-হয়রানির পরিমাণ আরও বাড়ত। এতে অনেক পরিবারকে ভোগান্তিতে পড়তে হতো। এ ছাড়া নির্বাচনের আগ দিয়ে প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল ঘটে। বিশেষ করে প্রতিটি থানার পুলিশদের বদলি করা হচ্ছিল, যা ভালো ইঙ্গিত দেয় না।
দেশ রূপান্তর : নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল? অনেকে বলছেন আপনি মনের বিরুদ্ধে গিয়ে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। আপনার ব্যাখ্যা কী?
আরিফুল হক চৌধুরী : আমি দলের একজন একনিষ্ঠ কর্মী। আমি দলের প্রতি কমিটেড, তাই দল যে সিদ্ধান্ত নেবে আমি সেই সিদ্ধান্তই মেনে নেব এটাই স্বাভাবিক। তাই বলতে পারেন এটা দলের প্রতি আনুগত্য আর দায়বদ্ধতার বহিঃপ্রকাশ। মনের বিরুদ্ধে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেইনি। আমি অনেক চিন্তাভাবনা, আলাপ-আলোচনা করেই এবং আপনাকে প্রথম প্রশ্নের উত্তরে যে পরিস্থিতির কথা বলেছি সেসব বিবেচনায় নিয়েই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
দেশ রূপান্তর : আপনি নির্বাচনে দাঁড়ালে বিএনপির চলমান আন্দোলন বড় ধরনের সংকটে পড়ত কি না?
আরিফুল হক চৌধুরী : চলমান সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত বিএনপির নীতিগত সিদ্ধান্ত। যারা বিএনপির রাজনীতি করে, তারা কোনোভাবেই দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। আমার জন্য দলের কোনো ক্ষতি হোক, এমন কোনো কাজ তো আমি করতে পারি না।
দেশ রূপান্তর : গুঞ্জন আছে, আপনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর বিনিময়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে সিলেট-১ আসনের প্রার্থী হওয়ার নিশ্চয়তা চেয়েছিলেন। এ বিষয়ে কী বলবেন?
আরিফুল হক চৌধুরী : আমি সিলেট-১ আসন থেকে নির্বাচন করতে চাই, এটা মিথ্যা নয়। তবে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে আমি দলের কাছে এ রকম কোনো দাবি জানাইনি। এ নিয়ে দরকষাকষির গুঞ্জনটি একদম ঠিক নয়। দল যখন যেভাবে চিন্তা করবে আমি সেভাবেই কাজ করব। এখানে দরকষাকষির কোনো প্রশ্নই ওঠে না। দল এখন একটা ক্রাইসিস মুহূর্ত পার করছে। এই মুহূর্তে রাজপথে সক্রিয় থেকে আন্দোলন করার সময়। দল যখন সুবিধাজনক জায়গায় যাবে তখন এ নিয়ে কথা বলব। তবে জাতীয় নির্বাচন হোক বা যেকোনো নির্বাচন হোক, দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার জন্য কাজ করব।
দেশ রূপান্তর : আপনি যদি দলের সিদ্ধান্তই মেনে নেবেন, তাহলে সিদ্ধান্ত জানাতে এত বিলম্ব করলেন কেন?
আরিফুল হক চৌধুরী : দল আমাকে নমিনেশন দিয়েছিল বলেই আমি সিলেটের মেয়র হতে পেরেছিলাম এটা যেমন সত্য। তেমনি এই নগরীর জনগণ শত প্রতিকূলতার মধ্যে থেকেও আমাকে ভোট দিয়ে মেয়র বানিয়েছিল। কাজেই আমি তাদের মূল্যায়ন করতে গিয়ে, দলীয় সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছি, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জনগণের সঙ্গে আলোচনা করে, মতামত নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে গিয়েই এটুকু সময় বিলম্ব হয়েছে।
দেশ রূপান্তর : শোনা যায় নির্বাচনে অংশ নিতে আপনি শেষ চেষ্টা হিসেবে লন্ডনে গিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। ঘটনাটি কি সত্য?
আরিফুল হক চৌধুরী : দেখুন, যারা বিএনপির রাজনীতি করে তারা লন্ডনে গেলে তারেক রহমান সাহেবের সঙ্গে দেখা করবে, এটা খুব স্বাভাবিক। সেই হিসেবে লন্ডনে যাওয়ার পর আমিও ওনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছি। কিন্তু সেখানে নির্বাচন নিয়ে কোনো আলাপ হয়নি। কেন না দল সিটি নির্বাচনে অংশ নেবে না এটা আগেই চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল।
দেশ রূপান্তর : আপনি ইলেকশন থেকে সড়ে দাঁড়ানোয়, সিলেট সিটি নির্বাচন জৌলুস হারিয়েছে কি না?
আরিফুল হক চৌধুরী : নির্বাচন নিয়ে এখন গোটা জাতি আস্থাহীনতায় ভুগছেন। এ অবস্থায় সিলেট সিটির মানুষেরও নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ থাকার মতো কোনো কারণ দেখছি না।
দেশ রূপান্তর : অভিযোগ রয়েছে, আপনি মেয়র হয়েছিলেন সরকারি দলের একটা অংশের আশীর্বাদে। আপনি মেয়র হওয়ার পর সরকারি দলের সঙ্গে যোগসাজশে কাজ করেছেন। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
আরিফুল হক চৌধুরী : যেহেতু জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে মেয়র বানিয়েছিল তাই আমি কেবল বিএনপির মেয়র ছিলাম না। সেই জায়গা থেকে আমি চেষ্টা করেছি দলীয় বিবেচনায় না গিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করার। এখন বিষয়টাকে কে, কীভাবে দেখবে সেটা তাদের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়।
দেশ রূপান্তর : বিশ্লেষকদের মতে, গাজীপুর সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। এটা দেখে কি নির্বাচনে না দাঁড়িয়ে আফসোস লাগছে?
আরিফুল হক চৌধুরী : গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন দেখে আমার আফসোস করার কোনো কারণ নেই। এটা সরকারের একটা নির্বাচনী খেলা। সেখানে যে দুজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তাদের দুজনই সরকারদলীয় মানুষ। যেহেতু প্রার্থী নেই, তাই তারা নিজেদের মধ্যে খেলাধুলা করতেছে।
দেশ রূপান্তর : আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন আপনি নির্বাচনে না দাঁড়ানোয় তিনি মর্মাহত হয়েছেন। আপনি কী উত্তর দেবেন?
আরিফুল হক চৌধুরী : যেহেতু প্রথম দিন থেকেই বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সিটি নির্বাচনে অংশ নেবে না। তাই কে প্রার্থী হবে, কে হবে না সেই চিন্তা আমার মাথায় একদম ছিল না। আনোয়ারুজ্জামান সম্পর্কে আমার খুব একটা ধারণা নেই। দেখা যাক, আগামী দিনে তিনি কেমন পারফরম্যান্স দেখান। মানুষ কাজ দিয়েই তাকে মূল্যায়ন করবে।
দেশ রূপান্তর : আপনি তো এই সরকারের অধীনে গত সিটি নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন। সেই নির্বাচন কি সুষ্ঠু হয়েছিল?
আরিফুল হক চৌধুরী : সেই নির্বাচনে কী ভয়ানক অবস্থা ছিল আপনাদের নিশ্চয় তা অজানা নয়। জনগণের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সমর্থন ছাড়া আমি জয়লাভ করতে পারতাম না। সেদিন জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাহারা বসিয়েছিল।
দেশ রূপান্তর : দেশ রূপান্তরকে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
আরিফুল হক চৌধুরী : আপনাকেও ধন্যবাদ। সেই সঙ্গে দেশ রূপান্তরের সব পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীকে ধন্যবাদ।
বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। গত ২৪ মে রাতে এমন একটি খবর আসে। এর আগে কয়েকটি গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছিল আরও কিছু নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আরও কিছু এ কারণে, ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর তৎকালীন র্যাবের ডিজিসহ ৭ কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। এরপর থেকে জল্পনা-কল্পনা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের আরও কিছু নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। গত বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জারি করা নতুন ভিসানীতি ঘোষণা এলো। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এটা কি বাংলাদেশিদের জন্য কোনো নিষেধাজ্ঞা না অন্য কিছু। যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশিদের জন্য কি অপমানের? না আনন্দের।
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বহু দিন ধরেই কথা বলছে। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিদের আলোচনা হয়েছে। আর অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থেই যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিমালা ঘোষণা। আশা করা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপ আগামী নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
২৪ মে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এক বিবৃতিতে এ ঘোষণা দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের কয়েকটি ধারা অনুযায়ী নতুন যে ভিসানীতি ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। তার মানে হলো, একটি দেশের নির্বাচন পরিচালনার জন্য যে পক্ষগুলো যুক্ত থাকে তারা সবাই নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করলে এই নীতিমালার আওতায় পড়বে। যেখানে সরকারি দল বা বিরোধী দল বলে কথা নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত আসছে, তা সরকারকে জানানো হয়েছে গত ৩ মে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত কোনো আলোচনা শোনা যায়নি। বরং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনাই করেছেন।
২৪ মে রাতে যুক্তরাষ্ট্রের একই নীতিমালা ঘোষণার পর রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনা শুরু হয়। প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতারা একে স্বাগত জানিয়েছে। একটি মজার বিষয়, একটি সিদ্ধান্ত যে সব পক্ষকে খুশি করতে পারে তা মিরাকলই বটে। শুধু মিরাকলই নয়, একপক্ষ অন্যপক্ষকে বলতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্ত তাদের বিপক্ষ দলকেই বেকায়দায় ফেলবে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসা নীতিমালায় সরকারের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত বিএনপির। কারণ তারা নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের পরে যে সহিংসতা চালিয়েছে সেটার জন্য ভিসা বিধিনিষেধ আসতে পারে। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতেও বলেছে, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অব্যাহত অঙ্গীকারের প্রতি জোরালো সমর্থনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসা করেছে সরকার। বিবৃতিতে আরও বলেছে, মার্কিন ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের তথাকথিত ৩সি ধারা অনুযায়ী ভিসায় বিধিনিষেধের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের ঘোষণাটি নজরে নিয়েছে। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমুন্নত রাখার স্বার্থে দেশের সব স্তরে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার দ্ব্যর্থহীন অঙ্গীকারের বৃহত্তর প্রেক্ষাপট থেকে মার্কিন এই ঘোষণাকে বিবেচনায় নিতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল জাতি, যার কয়েক দফায় জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান আয়োজনের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির প্রধান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে এটি একটা বড় পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপকে আমরা স্বাগত জানাই। কারণ, বিএনপি তো ভোট চুরির প্রক্রিয়াতে নেই।’ সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, তারই প্রতিফলন মার্কিন নতুন ভিসানীতি।
আর জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন ভিসানীতির উদ্দেশ্য বোঝা গেছে, তারা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চায় এবং নির্বাচনটা যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়। এ ব্যাপারে আমাদের দলও একমত।’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের ভিসানীতি ঘোষণার পরদিন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। পরে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতি ওয়াশিংটনের সমর্থনের অংশ বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তিনি বলেন, ‘আমাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) বিবৃতিতে যা দেখেছেন, তা বাংলাদেশের জনগণ, সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী সবার জন্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন, যে বক্তব্য তারা (যুক্তরাষ্ট্র) দিয়েছেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী যেটা চাচ্ছেন, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) তাকে আরও জোরালোভাবে বলেছেন। আমাদের অঙ্গীকার এবং অবস্থান সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন করতে চাই। এটাকেই তারা সমর্থন দিয়েছে। সুতরাং চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর অভিব্যক্তিতে মনে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি শুধু রাজনৈতিক অঙ্গন ও আগামী নির্বাচনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বিষয়টি কি তাই? বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে ও সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চা নিয়ে কেউ যখন ধমক দেয় সেটা কী গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য লজ্জার নয়? অপমানের নয়? ’৯০-এর গণআন্দোলনে এত রক্তক্ষয়, এত ত্যাগ তবে কেন? বিশ্বের বুকে সম্মানিত জাতি হিসেবে কেন আমরা টিকে থাকতে পারছি না। শুধু কী নির্বাচন ক্ষমতার মোহই আমাদের পিছিয়ে দিচ্ছে?
একটু হিসাব করে দেখি, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশি রয়েছে। দেশটি থেকে রেমিট্যান্সও আসে সর্বোচ্চ। যা প্রতি বছরই বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশিদের রেমিট্যান্সের পরিমাণ ৯৬৬ দশমিক ৮৯ মিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ শতাংশ বেশি। নতুন ভিসানীতির কারণে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কমতে পারে প্রবাসী আয়। যা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সুখকর নয়। আমরা জানি, প্রবাসী আয় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক আয়ের অন্যতম একটি খাত। প্রতি মাসে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আসে প্রবাসী আয় থেকে। এ ছাড়া বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগেও প্রভাব ফেলবে এই ভিসানীতি। কারণে মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে সাধারণত পশ্চিমা দেশগুলো অনুসরণ করে। ফলে কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া থেকে বিনিয়োগ প্রবাহ কমে আসতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতিটা আবার যদি একটু দেখি, সেখানে বলা হয়ছে, গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কাজের মধ্যে রয়েছে : ‘ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, জনগণকে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার চর্চাকে সহিংসতার মাধ্যমে বাধাদান। এর পাশাপাশি রাজনৈতিক দল, ভোটার, নাগরিক সমাজ এবং গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখতে বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার পদক্ষেপের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। এই নীতির অধীনে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপে আমরা সক্ষম হব।’
নতুন এই নীতির আরেকটি দিক হচ্ছে, সরকার প্রশাসন ও আমলাতন্ত্রের বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়াবে। নির্বাচনী জালিয়াতির সংশ্লিষ্টতায় একে অন্যের যুক্তরাষ্ট্র গমনে বাধা সৃষ্টি করবে। কেননা সরকারের এই পক্ষগুলো নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকে। অতিসম্প্রতি কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও সদ্যসমাপ্ত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে বিশ্লেষণ করলে যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসানীতি জারির কারণ কিছুটা হলেও বোঝা যাবে। এ ছাড়া গাইবান্ধার নির্বাচন বাতিল নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি করেছে তা ঠেকানোর কোনো উপায় অবশ্য প্রয়োজন ছিল। তাই বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আগামী জাতীয় নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসানীতির ইতিবাচক ভূমিকা থাকবে।
কিন্তু মনে রাখা দরকার যে, নিষেধাজ্ঞা কোনো দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য সুখকর নয়। বৈশ্বিক মন্দার এ সময় বাণিজ্যপ্রবাহ সচল রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি। আগামী নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসানীতি ঘোষণা শুধু কোনো একটি পক্ষকে সুবিধা বা বেকায়দায় ফেলবে তা নয়, বরং বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে নতজানু করে রাখারও একটি প্রক্রিয়া। রাজনৈতিক দলগুলোর সহনশীল আচরণ পারত এই লজ্জাজনক পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত রাখতে।
লেখকঃ সাংবাদিক
প্রতি বছর নতুন বাজেট হয়। সাধারণত দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। এবারও বাজেট আসছে। বাড়বে দাম। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, সেই পণ্যের দাম বাড়ে না, যা সাধারণ মানুষ স্পর্শও করে না। গাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট কোন শ্রেণির মানুষের জন্য? এসব বিষয়ে নিম্নবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্তের কোনো আগ্রহ আছে!
তাহলে প্রশ্ন আসে, এই বাজেট আসলে কোন শ্রেণির মানুষের জন্য? নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তসহ সব শ্রেণির মানুষ কি একইভাবে বাজেটের মাধ্যমে প্রভাবিত হন? এর উত্তর সবারই জানা। কয়েক দশক ধরেই দেখা যাচ্ছে, বাজেটে সাধারণত যেসব জিনিসের দাম বাড়ে বা কমে যেখানে সাধারণ মানুষ কোনোভাবেই উপকৃত হন না। বাজেট মানেই, তাদের কাছে এক ধরনের আতঙ্ক। নতুন বাজেট মানেই জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি। আবার এই সুযোগে দেশের অতিমুনাফালোভী ব্যবসায়ীকুল, বাজেটে যে মার্জিনে মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে তার চেয়ে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেন। বাজেটে মূল্যবৃদ্ধি এবং বাজারের পণ্যমূল্য এই দুইয়ের মধ্যে কোনো দিনই বিন্দুমাত্র মিল পাওয়া যায়নি। স্বাভাবিকভাবেই এই অরাজকতার বলি হনÑ সাধারণ মানুষ। হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয় তাদের কাছ থেকে।
বৈশ্বিক কারণে দেশের বাজারে পণ্যের দামের বাড়ন্ত অবস্থা ঠেকাতে আগামী বাজেটে জোরালো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরং সরকারের আয় বাড়াতে ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মানতে গিয়ে সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যাতে অনেক খাতে খরচ বাড়বে। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে বলে অর্থনীতি বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন। নির্বাচনের আগের শেষ বাজেট হওয়ায় ব্যবসায়ীদের খুশি করতেও কিছু ছাড় দেওয়া হয়েছে এই সংবাদ শনিবারের দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারের অর্থনীতি সূচক বৃদ্ধির ফলে কি সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে! এভাবে পণ্যমূল্য ক্রমাগত বাড়তে থাকলে, বাজার অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে বাধ্য। যেখানে আসছে বাজেটে দ্রব্যমূল্য হ্রাসে সরকারের বিভিন্ন ধরনের কৌশল নেওয়ার কথা, সেখানে উল্টো দ্রব্যমূল্য বাড়ছে! আবার দেখা যাচ্ছে, সরকার দাম কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও সেসবের সুফল তেমন পাওয়া যায়নি। এক বছর ধরে সব ধরনের চালের দাম বেশি। আটা, ময়দা, চিনি, ভোজ্য তেলের দাম প্রায় দ্বিগুণ। দাম বাড়তি বলে মাছ, মাংস, ডিম, দুধসহ অনেক খাবার সাধারণ আয়ের পরিবারগুলো খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে চাল, গম, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, ছোলা, বুট, ডাল, হলুদ, মরিচ, ভুট্টা, আটা, ময়দা, ভোজ্য তেল, চিনি, ফল, লবণের দাম কমানোর চেষ্টা করা হয়নি। এর মানে হলো, বর্তমান বাজেটে সাধারণ মানুষের জন্য কোনো ধরনের পদক্ষেপই নেওয়া হচ্ছে না! এই দুঃসহ পরিস্থিতি, কেবল তারাই উপলব্ধি করতে পারবেন, যারা এর ফলে আক্রান্ত হবেন। আক্রান্তের এই যন্ত্রণা সরকারের উপলব্ধিতে নিয়ে নেওয়া উচিত। যেখানে দ্রব্যমূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে, সেখানে আরেক ধাপ মূল্যবৃদ্ধি হবেÑ মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা।
জানা যাচ্ছে, আইএমএফের শর্তে রাজস্বসুবিধা কমানোয় পাউরুটি, বিস্কুট, সাবান, শ্যাম্পু, প্রক্রিয়াজাত খাবারের দাম বাড়বে। আমদানিকৃত পণ্যের দাম বাড়বে। আগামী অর্থবছরেও চেইন শপ থেকে পণ্য কিনতে হলে ভ্যাটের সর্বোচ্চ হার ১৫ শতাংশের সঙ্গে আরও ৫ শতাংশ বাড়তি দিতে হবে ক্রেতাকে। খামারে চাষ করা ৩০ লাখ টাকার বেশি মাছ বিক্রিতে ১৫ শতাংশ রাজস্ব থাকছে। একই সঙ্গে বড় মাছ আমদানিতেও সম্পূরক শুল্ক আসছে। আবার মোবাইল ব্যবহারে খরচ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত অর্থবিলে ভ্রমণকর ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সব ধরনের পরিবহনে যাতায়াতে খরচ বাড়ছে।
সাধারণ মানুষকে বেশি নিংড়ানো ঠিক হবে না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবার গভীরভাবে ভেবে দেখা উচিত। বাজেটে এমন কোনো বিষয় থাকা উচিত না, যার কারণে দেশের সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন হতে পারেন, ক্ষিপ্ত হতে পারেন। ভুলে গেলে চলবে না, সরকার কিন্তু জনগণের।
১৯৯৪ সালের এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন রাজনীতিক, শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক আসহাবউদ্দীন আহমদ। ১৯১৪ সালে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুর গ্রামে তার জন্ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩৯ সালে ইংরেজিতে এমএ পাস করে তিনি চট্টগ্রাম কলেজ, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রভৃতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৪ বছর অধ্যাপনা করেন। তিনি চট্টগ্রাম নাইট (সিটি) কলেজ, বাঁশখালী কলেজ, সাধনপুর পল্লী উন্নয়ন হাইস্কুল, পশ্চিম বাঁশখালী হাইস্কুল প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ১৯৫২ সালে কুমিল্লায় ভাষা আন্দোলন পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সে সময়ের সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও তার উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল। ১৯৫৪ সালে তিনি যুক্তফ্রন্টের পক্ষে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং কয়েক মাসের মধ্যেই পাকিস্তানি কর্র্তৃপক্ষ তাকে বন্দি করে। বামপন্থি রাজনীতির কারণে তাকে আরও পনেরো বছর আত্মগোপন করে থাকতে হয়। ১৯৬৬ সালে কমিউনিস্ট পার্টি দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেলে তিনি পিকিংপন্থিদের সঙ্গে ছিলেন এবং ১৯৬৭ সালে চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি নির্বাচিত হন। আসহাবউদ্দীনের সাহিত্যকীর্তি সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এক অকৃত্রিম সারল্য, হাস্যকৌতুক ও যুক্তির সমাহার এবং শেকসপিয়রীয় সাহিত্যবোধ তার রচনায় সর্বত্র লক্ষণীয়। তার গ্রন্থসংখ্যা একুশ; কিছু পান্ডুলিপি অপ্রকাশিত রয়েছে। তার বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর, সের এক আনা মাত্র, জান ও মান, লেখক ও পাঠক, ইধহফব ঠড়ঃধৎধস, হাতের পাঁচ আঙুল, দাড়ি সমাচার, বিপ্লব বনাম অতি বিপ্লব, বাঁশ সমাচার, পথ চলিতে, আমার সাহিত্য জীবন, ডেনজার সিগন্যাল, ঘুষ, উজান স্রোতে জীবনের ভেলা প্রভৃতি গ্রন্থে সমকালীন রাজনীতি, সমাজবাস্তবতা এবং তার ব্যক্তিগত চিন্তাধারার প্রকাশ ঘটেছে। তিনি ২০০৫ সালে মরণোত্তর একুশে পদক লাভ করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।