
নির্বাচনের রাজনীতি একটা বিজ্ঞান এখানে হিসাব খুব জটিল। ভুল হলে গরল। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কার পরাজয় হয়েছে? বিশেষ করে জাহাঙ্গীর আলমের ভাষায় ‘এটি নৌকার নয় বরং ব্যক্তি আজমত উল্লার পরাজয়’ মন্তব্যটি আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অন্যদিকে নেটিজেনদের ঠাট্টা সুষ্ঠু ভোটের জন্য আমেরিকার চাপে প্রথম ‘বলি’ হলেন আজমত উল্লা। জাহাঙ্গীর ঠিকই আঁচ করতে পেরেছিলেন তাকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না, তাই মাকে প্রার্থী করে রাখেন। তার এ কৌশলী সিদ্ধান্তের কাছে আওয়ামী লীগ হেরেছে। বাংলাদেশে এতদিন উত্তরাধিকারের রাজনীতির সংস্কৃতিতে বাবা কিংবা মায়ের আসনে সন্তান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন। এবার তার উল্টোটা ঘটতে দেখা গেল।
আওয়ামী লীগ ভেবেছিল জাহাঙ্গীরের মা অখ্যাত। ছেলের মতো প্রভাব ফেলতে পারবেন না তিনি। হালকাভাবে নেওয়াটা আওয়ামী লীগের ভুল ছিল। বহুদিন ধরে তারা এ কাজটি করে আসছে। ‘প্রতিপক্ষকে কখনো দুর্বল ভাবতে নেই’, কথাটা দলটি ভুলে গেছে। প্রার্থী হওয়ার আগে জাহেদা খাতুনকে রাজনৈতিক-সামাজিকভাবে গাজীপুরের মানুষ চিনত না, নির্বাচন তো দূরের কথা কোনো রাজনৈতিক কমর্সূচিতে তিনি ছিলেন না। জাহাঙ্গীর তার সেই মায়ের পক্ষে আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোটকে একাট্টা করেছেন। নীরব সমথর্কদের সংগঠিত করেছেন। তিনি তার মাকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গেছেন, কান্নাকাটি করেছেন। সহানুভূতি আদায় করেছেন। আর আজমত উল্লা ভোটারদের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন না, হয়তো নানাশক্তির ওপর তিনি নির্ভরশীল ছিলেন। প্রতিপক্ষকে খুব একটা হিসাবে ধরেননি। এটা ছিল ক্ষমতাসীনদের ভুল।
এটা ঠিক, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের কাছে এ নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই চ্যালেঞ্জকে অনেকটাই সামাল দিতে পেরেছে সরকার। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে বিজয়ী হলেও সাধারণ মানুষকে আস্থায় নিয়ে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বৈতরণী পার হতে পারবে কি না সেই প্রশ্নটা এখন সামনে চলে এসেছে। আমার মনে হয়, এ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য অস্বস্তিকর সতর্ক সংকেতও। আওয়ামী লীগের ভেতর আরেকটি আওয়ামী লীগ তৈরি হয়েছে, সেটাও প্রমাণ হয়েছে এ নির্বাচনে। এরা যে কখন আওয়ামী লীগের ভেতর প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে, এটা দলটি ধারণা করতে পারেনি। এখন যারা আওয়ামী লীগ করেন তাদের বেশিরভাগই তা করেন স্বার্থসিদ্ধির জন্য, দলের আদর্শের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি খুব ক্ষীণ এটাও এ নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছিল অতি আত্মবিশ্বাসী ও আত্মপ্রত্যয়ী। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় দলটির কারও কারও মধ্যে অহংকার এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস বিপজ্জনকভাবে পর্যায়ে চলে গেছে। তারা মনে করেন দল যাকে মনোনয়ন দেবে তাকে প্রভাব খাটিয়ে জিতিয়ে আনবে। গাজীপুরেও সেই প্রবণতা দেখা গেছে। যার কারণে যেভাবে গুরুত্ব সহকারে মাঠে কাজ করার দরকার ছিল, সেভাবে তারা গাজীপুরে কাজ করেননি। রাজনীতি হুমকি, ধমকের বিষয় নয়। একটি সমঝোতার কৌশল। এ চিরন্তন সত্যটা আওয়ামী লীগ ভুলেই গেছে। ভয় দেখিয়ে, প্রভাব খাটিয়ে রাজনীতিতে জয়ী হওয়া যায় না।
জাহাঙ্গীর ও তার মা যখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন, তখন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ‘দমননীতির’ কৌশল নিয়েছিল। ভোটের আগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা, দুদকে তলব, প্রচারের সময় গাড়ি ভাঙচুর, পেশিশক্তি প্রয়োগ সবই জনগণের মধ্যে জায়েদা খাতুনের পক্ষে এক ধরনের সহানুভূতি তৈরি করেছে। ভোটের দিন দেখা গেছে, নৌকার কার্ড গলায় ঝুলিয়ে তারা ঘড়ি মার্কায় ভোট দিয়েছেন।
গাজীপুরে পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললাম। তারা জানাল ব্যক্তি জাহাঙ্গীর আলমের ইমেজ ও তার উন্নয়ন কাজ নগরবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। তাদের ধারণা, তাকে মেয়র পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে থমকে যাবে উন্নয়ন কাজ। নানা ষড়যন্ত্র ও প্রতিহিংসার শিকার হলেও জাহাঙ্গীরের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অটুট।
জাহাঙ্গীর আলমের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও সাধারণ মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থনের কারণেই তার মায়ের বিজয় সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। ঋণখেলাপির দায়ে তার প্রার্থিতা বাতিল হবে এটা জানত জাহাঙ্গীর। তাই তার পক্ষে মা জায়েদা খাতুনকে তিনি মেয়র পদে দাঁড় করান। সাধারণ নারী ভোটারদের অকুণ্ঠ সমর্থন, শ্রমিকদের মধ্যে জাহাঙ্গীরের জনপ্রিয়তাও জায়েদা খাতুনের জয়ে ভূমিকা রাখে। এছাড়া নির্বাচনের প্রচারে কয়েক দফা হামলা, বাধা দেওয়ার বিষয়টি মানুষের নজর কেড়েছে। ফলে মানুষ অনেকটা বিরক্ত হয়েই আজমত উল্লা খানের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। বিরোধী শিবিরের ভোটও পড়েছে জাহাঙ্গীরের মায়ের ব্যালটে। জায়েদা খাতুন যেসব আসনে এজেন্ট দিতে পারেননি, সেখানেও জিতেছেন তিনি। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় তারা ও তাদের শরিকরা জায়েদা খাতুনের প্রতীকে ভোট দিয়েছেন।
আজমত উল্লা মার্জিত, বিনয়ী ও স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ হিসেবে গাজীপুরের রাজনীতিতে পরিচিত হলেও তার বিরুদ্ধে জনবিচ্ছিন্নতার অভিযোগ রয়েছে। ভোটারদের সঙ্গে পর্যাপ্ত যোগাযোগের অভাব, দলীয় কোন্দল এবং স্থানীয় প্রভাবশালী মন্ত্রী ও এমপিদের উদাসীনতাও রয়েছে। জাহাঙ্গীরের তুলনায় নির্বাচনের প্রচারে নৌকার প্রার্থী তেমন একটা টাকা খরচ করেননি।
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আওয়ামী লীগের বিভক্তি। সেই বিভক্তি নির্বাচনের আগে অতটা দেখা না গেলেও ভোটের দিন প্রকাশ পেয়েছে। প্রচারেও ছিল গাফিলতি। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে ঢিলেমি ছিল প্রচারণায়। বড় বড় শোডাউন এবং রোড শো করলেও মানুষের দ্বারে দ্বারে যাননি। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে একাধিক নেতা পরাজয়ের কারণ হিসেবে বলছেন, দলের স্থানীয় নেতাকর্মীর মধ্যে ভেতরে ভেতরে দ্বন্দ্ব, গ্রুপিং। এতে আওয়ামী লীগের ভোট দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগের একাংশ গোপনে ঘড়ির পক্ষে কাজ করেছে। নৌকার প্রার্থী তা আগে ধরতে পারেননি। ভোটের পর আজমত উল্লা বলেছেন, দলে থাকা বেইমানদের গাদ্দারিতে হেরেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামো ও নির্বাচনী ব্যবস্থাটি এমন জায়গায় চলে গেছে যে, কার চেয়ে কে কতটা যোগ্য ও ভালো মানুষ সেটি তার জয়-পরাজয় নিয়ন্ত্রণ করে না। মানুষ এখন ভোট দেয় কিছু পাওয়ার উদ্দেশ্যে নয়, বরং অনেক সময় ভোট দিয়ে তার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। যে কারণে দেখা যায়, দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকের বাইরে থাকা বিপুল ভোটারের অনেকেই সুযোগ পেলেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে ভোট দিতে নিরুৎসাহিত হন। আবার ক্ষমতাবানের কাছ থেকে তার কমিউনিটির অনেক মানুষ যেমন উপকৃত হন, তার বিপরীতে বিপুল সংখ্যক মানুষ বঞ্চিত এবং নানাভাবে নির্যাতিতও হন। ফলে তারা ভোটের সময় ‘দেখিয়ে দেওয়া’র অপেক্ষায় থাকেন। এ দেখিয়ে দেওয়ার ব্যাপারগুলো গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঘটেছে। মানুষের ক্ষোভের আঁচটা যে মাত্রায় ছড়িয়েছে, এর প্রভাবটা এ নির্বাচনে পড়েছে। প্রশ্ন হলো এ জয় কি তাহলে মানুষের ক্ষোভের বিস্ফোরণ?
বিএনপি এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়েছিল আওয়ামী লীগই। দলের মধ্যে একটা অংশ তো বিরুদ্ধে ছিলই। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন নতুন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতি, অভ্যন্তীরণ দ্বন্দ্ব, জনগণের মনোভাব ইত্যাদি সম্পর্কে দলের নীতিনির্ধারকদের কাছে যে সঠিক তথ্য নেই, সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনগুলোতেও যদি এরকম অন্তঃকলহ থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য গাজীপুরের মতোই পরিণতি অপেক্ষা করছে।
লেখক: প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন
জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকেও গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্বাচন হয়ে গেল। সেটি গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। হাটে মাঠে ঘাটে এখন শুধুই আজমত উল্লা ও আওয়ামী লীগ এবং বিজিত জায়েদা খাতুনের চুলচেরা বিশ্লেষণ। একটি পক্ষ ঘুমহীনভাবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে, শুধু আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার কারণে আজমত উল্লার মতো প্রবীণ রাজনীতিক হেরে গেছেন। বিএনপি নেতারা এই নির্বাচনে মোটামুটি একটা তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন। দলটির নেতাকর্মী, সমর্থকদের কথাবার্তায় মনে হচ্ছে জায়েদা খাতুন বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী শিবিরের বাইরের পক্ষটি মনে করেছে জায়েদা খাতুন জয়ী হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতির কারণে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন এখন জাতীয় নির্বাচনের একটা অ্যাসিড টেস্টে পরিণত হয়েছে। একটি পক্ষ ধারণাই করছে গাজীপুরের মতো নির্বাচন হলে সবকটিতে আওয়ামী লীগ হারবে। আর আরেকটি পক্ষ মনে করছে, গাজীপুর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের একটি মহড়া হয়ে গেল। আবার এখানে সরকার ও নির্বাচন কমিশন নিজেদের অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট যোগ্য ও সামর্থ্যবান মনে করছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও এর ফলাফল কার পক্ষে গেল এমন বিতর্ক জমে উঠেছে। আমার মনে হয় গাজীপুর নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং এর ফলাফল আওয়ামী লীগের পক্ষেই গেল।
প্রথমত, হাবিবুল আউয়াল কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিএনপি এবং তাদের সমমনা দলগুলো নতুন কমিশনকে মেনে নেয়নি। বারবার বলা হচ্ছে এই কমিশন ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকারের মদদপুষ্ট এবং তাদের অধীনে কোনো অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন সম্ভব নয়। আর এই দাবিতে আন্তর্জাতিক মহলেও তারা আলাপ-আলোচনা করছে। এখানে আওয়ামী লীগ জিতেছে। কারণ, গত বৃহস্পতিবার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের যে নির্বাচনটি হলো আমরা দেখলাম, বিএনপি এবং বিরোধী পক্ষগুলোসহ সব রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং অন্যান্য মহল বলছে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। স্বতঃস্ফূর্ত, অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। নির্বাচন কমিশনও যোগ্যতা প্রমাণে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে, নিকট অতীতে নির্বাচনী ফল নিজেদের পক্ষে আনার যে অভিযোগ সরকারের বিরুদ্ধে করে আসছিল গাজীপুরে জায়েদা খাতুন জয়ী হওয়ায় সেটির অবসান হবে আশা করি।
গাজীপুর নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়া এবং এর ফলাফলের মধ্য দিয়ে সরকার আন্তর্জাতিকভাবেও জয়ী হয়েছে। কারণ দেশের বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মন্তব্য এবং বাংলাদেশের নির্বাচনে বিদেশি প্রভাবশালী মহলের কাছে দেন দরবার একটি নিত্য বিষয় হয়ে গেছে। এটি বাংলাদেশের আরেকটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। ২০১৪ সালের নির্বাচন থেকেই বিএনপি এবং বিরোধী পক্ষের কিছু দল নির্বাচনের পদ্ধতি, নির্বাচনকালীন সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনাস্থা এনে বিদেশিদের কাছে নালিশ অব্যাহত রাখছে। দেশের নির্বাচনে বাইরের প্রভাব তৈরির চেষ্টা করে আসছে। ফলে গত কয়েকটি নির্বাচনে আন্তর্জাতিক মহলের পরামর্শ এবং কখনো কখনো সরাসরি হস্তক্ষেপ লক্ষ্য করা গেছে। আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায়। আর আসন্ন নির্বাচনে দলটি যদি আবারও ক্ষমতায় যায় তাহলে চতুর্থবারের মতো হবে। দীর্ঘ ১৫ বছর বিএনপিসহ অন্য ছোট-বড় রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতার বাইরে থাকায় এবং রাজনৈতিক কর্মসূচি জোরালো না হওয়ায় তাদের নেতাকর্মীরা অনেকটাই সাংগঠনিক কাঠামোর বাইরে। জনগুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়েই বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো মাঠের রাজনীতির চাঙ্গা করতে পারছে না। যার ফলে তারা মাঠ গোছাতে এবং দলীয় অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বিদেশিদের কাছে ধরনা দিচ্ছে।
অন্যদিকে, টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকার কারণে মাঠ পর্যায়ে আওয়ামী লীগেরও অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকট হয়েছে। পাশাপাশি দলের নেতৃত্বে সংখ্যাও বেড়েছে। ফলে বিগত দু-তিন বছরে যেসব স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়েছে সবকটিতেই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর আধিক্য দেখা গেছে। বিএনপি অংশগ্রহণ না করলেও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের লড়াই হয়েছে। সেই লড়াইয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হেরেছে। সংসদ নির্বাচনেও আলামত পাওয়া যাচ্ছে প্রায় প্রতিটি আসন থেকেই আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। এই নির্বাচনের ফলে আওয়ামী লীগ বুঝতে পারবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের জয়ী হতে হলে কেমন প্রার্থী বাছাই করতে হবে। সে দিক থেকেও আওয়ামী লীগেরই জয় হলো। বিএনপি এসব নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় তাদের মাঠ জরিপও হচ্ছে না। তারা শুধুই আওয়ামীবিরোধী সেন্টিমেন্ট নিয়ে জাতীয় নির্বাচনে পার হতে পারবে না।
তৃতীয়ত, আওয়ামী লীগের জন্য আরেকটি শিক্ষণীয় বিষয় হলো বিএনপি বা বড় বিরোধী কোনো পক্ষ নির্বাচনে না থাকলে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে মানে বিদ্রোহীদের কাছে দলীয় মনোনয়নের পরাজয় ঘটতে পারে। এই নির্বাচনে আমরা দেখেছি, জায়েদা খাতুন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে ১৬ হাজার ১৮৭ ভোটে পরাজিত করেছেন। আজমত উল্লা খান দীর্ঘদিন রাজনীতি করছেন। তিনি তিনবার টঙ্গী পৌরসভার মেয়র ছিলেন। উচ্চ শিক্ষিত। আর জায়েদা খাতুন রাজনীতিতে সরাসরি যুক্ত ছিলেন না। তিনি স্বশিক্ষিত। মূলত তার ছেলে জাহাঙ্গীরের মাঠ থেকেই তিনি জয়ের মালা এনেছেন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব যে বার্তা পেল তা হলো বড় বিরোধী পক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলেও নিজেরই হাতের আঘাত বিক্ষত করতে পারে। জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে তৃণমূল এবং মাঠের সেন্টিমেন্টকে প্রাধান্য দিতে হবে। এই শিক্ষাও একটা বড় একটা জয়।
চতুর্থত, বিএনপির অভিযোগ ছাড়াও ভূ-রাজনৈতিক ও নানামুখী স্বার্থসংশ্লিষ্ট কারণে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে আগামী সংসদ নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। এই নির্বাচন অনুষ্ঠান তাদের মধ্যে সেই প্রত্যাশার আলো দেখিয়েছে। এই নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল এখন পর্যন্ত কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করেনি। সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে, এটা অনেকটাই প্রমাণিত হয়েছে। কাজেই কূটনৈতিক রাজনীতিতেও এই নির্বাচনের ফলাফল এবং নির্বাচন অনুষ্ঠান আওয়ামী লীগের জয়কে ইঙ্গিত করে।
সর্বশেষ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আওয়ামী লীগের জয় দেখা যায়। তাহলো নির্বাচনকালীন সরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিটি এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বিরোধী দল তথা বিএনপির দাবির মূল দাবি ছিল এই সরকারের অধীনে শান্তিপূর্ণ বা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। এই দাবি নিয়ে যেমন তারা মাঠে সরব, তেমনি কূটনৈতিক চালাচালিতেও সরব। এখন বিদেশিরা নিশ্চয়ই তাদের বলবেন সরকার তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আহ্বান করা হয়েছে। তারা বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরামর্শ হয়তো দেবে। এখন বিএনপি কোথায় যাবে? তারা কি তারপরও বিদেশ নির্ভরতা রাখবে, নাকি যে দাবিতে মাঠ চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করেছে সেটা থেকে সরে আসবে। বিএনপিও এই নির্বাচন নিয়ে কারচুপি বা অশান্তির অভিযোগ আনতে পারেনি। ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সুযোগ তাদের কমে এলো।
লেখক: সাংবাদিক
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ সম্ভবত সিগারেটের প্যাকেটের সৌন্দর্যবর্ধন করে। দেদার বিক্রি হওয়া একটি সিগারেটের প্যাকেটে ক্যানসারাক্রান্ত গলার এক ভয়ংকর ছবি থাকে, নিচে কালোর ওপর সাদাতে বাংলায় লিখা : ধূমপানের কারণে গলায় ও ফুসফুসে ক্যানসার হয়। এই সংবিধিবদ্ধ সতর্কবাণী দেখে সিগারেট ছেড়ে দিয়েছেন এমন কারও সঙ্গে অদ্যাবধি আমার সাক্ষাৎ হয়নি। সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ কেবল বাংলাদেশে নয় সারা পৃথিবীতেই একটি খেলো ফাজলামিতে পরিণত হয়েছে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ২০২২ সালের হিসাবে সিগারেট প্রতি বছর ৮০ লাখ মানুষকে খুন করে। এর মধ্যে ৭০ লাখ মৃত্যুর কারণ সরাসরি ধূমপান। ধূমপায়ী না হলেও ধূমপায়ীদের সান্নিধ্যে থাকা ১২ লাখ মানুষ প্যাসিভ স্মোকার হিসেবে প্রতি বছর মৃতের তালিকায় নাম লেখায়। ১৩০ কোটি তামাকখোরের ৮০ শতাংশের নিবাস নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে।
ধূমপানের মিথ
সিগারেট বছরে কমপক্ষে ৮০ লাখ লোককে হত্যা করে। তবে এই হত্যাকাণ্ডটি খুব ঢাকঢোল পিটিয়ে ঘটানো হয় না। ব্যাপারটা ঘটে নীরবে-নিভৃতে। তাই অবিশ্বাস্য ঠেকে। উল্টো এই ধূম্রদণ্ডটিকে মনে হবে অফুরন্ত শক্তিদাতা ও প্রাণ-সঞ্জীবনী। বিশ্বব্যাংক সিগারেট নিয়ে এক ডজন বহুল প্রচলিত মিথ শনাক্ত করেছে এবং সেগুলো কতটা অসার এবং সত্যবিরোধী তাও ব্যাখ্যা করেছে।
মিথ ১ : সিগারেট কেবল সচ্ছল মানুষ ও ধনী দেশের ব্যাপার।
বাস্তবতা একেবারে ভিন্ন। যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হরেকরকম সিগারেট খাইয়ে গোটা পৃথিবীকে ধোঁয়ামুখী করেছে, সেই দেশেই ধূমপান ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের উপাত্ত পরীক্ষা করে দেখা গেছে, একটি নির্দিষ্ট সীমার ওপরে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি মাথাপিছু সিগারেট সেবনের হার ক্রমান্বয়ে কমিয়ে দিয়েছে। অতি উঁচু আয়ের দেশগুলোতে পুরুষদের ধূমপান লক্ষণীয় দ্রুততার সঙ্গে হ্রাস পাচ্ছে। কিন্তু স্বল্প ও মাঝারি আয়ের দেশগুলোতে ধূমপান বাড়ছে। মহিলাদের বেলায় ধূমপানের হার পৃথিবীর প্রায় সবগুলো দেশেই বাড়ছে। গরিব দেশগুলোতে উঁচু আয়ের লোকেরা ধূমপানে কম আসক্ত হচ্ছে আর আসক্তরা ছেড়ে দিচ্ছে। গরিব দেশে এবং তুলনামূলকভাবে কম আয়ের পরিবারগুলোতে সিগারেটের চাহিদা বেশি। ধূমপান থেকে সৃষ্ট রোগের ভারও তাদের বেলায় অন্যের চেয়ে বেশি।
মিথ ২ : ধূমপান নিরুৎসাহিত করা সরকারের কাজ নয়, তা ভোক্তার স্বাধীন পছন্দে হস্তক্ষেপ করার নামান্তর।
প্রথমত, অধিকাংশ ধূমপায়ী ধূমপানের ঝুঁকি সম্পর্কে অবহিত নয় কিংবা ঝুঁকিকে তুচ্ছ জ্ঞান করে। দ্বিতীয়ত, ধূমপানের ক্ষতিকর দিক না জেনেই অধিকাংশ শিশু ও তরুণের ধূমপানে হাতেখড়ি হয়। যখন সিগারেট ছাড়ার কথা ভাবে ততদিনে রীতিমতো নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে, চাইলেও ছাড়তে ইচ্ছে করে না। তৃতীয়ত, ধূমপানের খেসারত দিতে হয় অধূমপায়ীদের। ‘প্যাসিভ স্মোকিং’ একই ধরনের ক্ষতির কারণ। অধূমপায়ীদের রক্ষা করার যুক্তিতে হলেও ধূমপান বন্ধে সরকারের হস্তক্ষেপ যুক্তিসংগত।
মিথ ৩ : ধূমপায়ীরা নিজের গাঁটের টাকায় সিগারেট কেনে; অসুখ-বিসুখ হলে গাঁটের টাকাই খরচ করে। অন্যের মাথাব্যথার কারণ নেই।
অবশ্যই, মাথাব্যথার কারণ রয়েছে। ধূমপায়ীরা খরচের ভার অন্যের ওপর ফেলে দেয়। আশপাশে অবস্থানকারীদের স্বাস্থ্য ও জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। ধূমপায়ী এবং তাদের সান্নিধ্যে থাকা অধূমপায়ীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে গিয়ে রাষ্ট্রকে হিমশিম খেতে হয়। কার্যত, এই সরকারি খরচ আদায় করা হয় নিরপরাধ জনগণের কাছ থেকে বাড়তি কর আরোপের মাধ্যমে। ধূমপায়ীদের জন্য রাষ্ট্রের খরচ অনেক বেশি। আর ধূমপায়ীদের অপরাধের দায় বহন করতে হয় সাধারণ মানুষকে।
মিথ ৪ : ধূমপান নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে অনেকেই স্থায়ী চাকরি হারাবে, অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ভয়টি অমূলক। অনেক শিল্পজাত দ্রব্যের উৎপাদন বিভিন্ন অর্থনীতিতে বন্ধ হয়েছে, তাই বলে অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে পড়েনি। পরিকল্পিত ধূমপান নিয়ন্ত্রণ অর্থনীতিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না। ভিন্ন উৎপাদনশীল খাতে পরিবর্তিত হবে। যে হাত তামাকপাতা পিষত সেই হাতেই তৈরি হতে পারে কম্পিউটার। অর্থনীতি সে ক্ষেত্রে আরও গতিময় হবে, শ্রমিকের মজুরিও বাড়বে।
যে দেশে সিগারেট উৎপাদন নিয়ন্ত্রিত হয়েছে, সেসব দেশে কার্যত চাকরির বাজারে এর তেমন প্রভাব পড়েনি। বরং ধূমপান হ্রাস পাওয়ায় অর্থনীতির হিসাবে নিট লাভ হয়েছে।
মিথ ৫ : সিগারেটখোরদের বেলায় ধূমপান আসক্তি এত তীব্র যে, ট্যাক্স বাড়িয়ে চাহিদা কমানো সম্ভব নয়। ফলে ট্যাক্স বাড়ানোর কোনো যুক্তি নেই।
পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণা ভিন্ন চিত্র তুলে ধরে। সিগারেটের ওপর ট্যাক্স বাড়ালে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমে আসে এবং একই সঙ্গে নেমে আসে ধূমপানজনিত মৃত্যুর সংখ্যা। সিগারেটের দাম বাড়লে কেউ কেউ সিগারেট ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। বাড়তি খরচে অসমর্থ হওয়ায় কেউ কেউ কমসংখ্যক সিগারেট খায়। মূল্যবৃদ্ধি তাদের নিরুৎসাহিত করে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, সিগারেটের ওপর বর্ধিত ট্যাক্স চাপানো হলে উঁচু আয়ের দেশগুলোতে তা খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারে না। কিন্তু নিম্ন ও মাঝারি আয়ের দেশে তা বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ধূমপান ট্যাক্স আরোপ করা হলে সরকারের আয়ের তেমন হেরফের না ঘটিয়ে ধূমপান বৃদ্ধির প্রবণতাকে রোধ করা সম্ভব। ধূমপান নিয়ন্ত্রণ এবং ধূমপানজনিত মৃত্যু কমাতে উচ্চতর ট্যাক্স আরোপই কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
মিথ ৬ : ট্যাক্স বাড়ালে সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাবে, কারণ তখন কম সিগারেট বিক্রি হবে।
এটি একেবারে ভ্রান্ত ধারণা। বর্ধিত ট্যাক্স আরোপের কারণে পৃথিবীর কোথাও সিগারেট থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব কমেনি। ট্যাক্স বৃদ্ধিতে ক্রয়ক্ষমতার সীমাবদ্ধতাজনিত কারণে বিক্রি কমে সত্যি, কিন্তু বর্ধিত ট্যাক্স সিগারেট খাতে টার্গেটকৃত রাজস্বকে অবশ্যই অক্ষুণœ রাখে। দাম বাড়লে ধূমপায়ী যত দরিদ্রই হোক না কেন সঙ্গে সঙ্গেই সিগারেট ছেড়ে দিচ্ছে না। এটি একটি ধীরগতি প্রক্রিয়া। ফলে অর্থের বাজারে আকস্মিক কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যায় না।
মিথ ৭ : সিগারেটের ওপর ট্যাক্স বাড়ানোর সুফল চোরাচালান ও অবৈধ উৎপাদন নষ্ট করে দেয়।
মিথটি আংশিক সত্য। কেবল সিগারেট নয়, যেকোনো দ্রব্যের বেলাতেই চোরাচালানি এবং অবৈধ উৎপাদন বিভিন্ন কারণে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। চোরাচালান রোধ করতে না পারা রাষ্ট্রের একটি অন্যতম প্রশাসনিক দুর্বলতা। এদিকে সরকারকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। চোরাচালানির বাস্তবতা মেনে নেওয়ার পরেও দেখা যাচ্ছে, সিগারেটের ওপর বর্ধিত ট্যাক্স আরোপ এ খাতে প্রাপ্ত রাজস্বকে বাড়াচ্ছে এবং ধূমপানের হার কমিয়ে আনছে। চোরাচালানপ্রবণ দেশে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষ সহযোগিতাতেই চোরাচালান চলছে।
মিথ ৮ : সিগারেটের ওপর ট্যাক্স বাড়ানো অনুচিত। কারণ এতে দরিদ্র ধূমপায়ী আনুপাতিক হারে ধনীর চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
মিথটিতে একটি নৈতিক প্রশ্নের সমর্থন দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কোনো দ্রব্যের একই হারে মূল্যবৃদ্ধি ধনীর চেয়ে গরিবকেই বেশি বিপদগ্রস্ত করে। বাড়তি ট্যাক্সের কারণে সিগারেটের দাম বাড়লে কিনে খেতে ধনীর খুব একটা অসুবিধা হয় না। কিন্তু আয় নিতান্ত সীমিত হওয়ায় দরিদ্র ব্যক্তির পক্ষে তা কেনা সম্ভব হয়ে ওঠে না। কাজেই দরিদ্রের ভোগের ইচ্ছে রাষ্ট্রের কারণে বেশি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক মনে করে, নীতিনির্ধারকদের কাজ কেবল সিগারেটের ওপর ট্যাক্স বাড়ানো নয়। সিগারেটের জন্য ব্যয়িত বাড়তি অর্থ বেঁচে যাচ্ছে। অসুস্থতা কমছে। রাষ্ট্রের চিকিৎসা ভর্তুকিও কম লাগছে। পরোক্ষভাবে তা দরিদ্র ধূমপায়ীর এবং রাষ্ট্রের কল্যাণই করছে।
মিথ ৯ : সিগারেটের ওপর ট্যাক্স বাড়ালে ধূমপায়ীরা আরও কম দামি সিগারেটের দিকে ঝুঁঁকে পড়বে। ফলে সার্বিক ধূমপানের ওপর এর কোনো প্রভাব পড়বে না।
ধূমপানে একটি নির্দিষ্ট রুচি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মানুষ সাধারণত হীন রুচির সিগারেটের দিকে হাত বাড়ায় না। তবে কিছুসংখ্যক ধূমপায়ী তাদের বাজেট ঠিক রেখে বর্তমান ব্র্যান্ডের কমসংখ্যক সিগারেট খাবে অথবা একই বাজেটে অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের সমসংখ্যক সিগারেট খাবে। নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপিতে সিগারেটের বিকল্প বাজারের সুযোগ রয়েছে।
মিথ ১০ : অধিকাংশ দেশেই সিগারেটের ওপর ট্যাক্স অত্যন্ত বেশি।
প্রতিপাদ্যটি যথার্থ নয়। রাষ্ট্রীয় কর কাঠামো এবং ধূমপান নিয়ন্ত্রণে সরকারের নীতিমালা ট্যাক্স নির্ধারণের গাইডলাইন। ‘অত্যন্ত বেশি’ মানে কী তাও ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। ধনী দেশগুলোতে সিগারেটের ওপর ধার্য ট্যাক্স মোটামুটিভাবে সিগারেটের খুচরা মূল্যের কমপক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ। নিম্নআয়ের দেশগুলোতে ট্যাক্স সিগারেটের খুচরা মূল্যের অর্ধেকেরও কম। ইউরোপ ও আমেরিকার কোনো কোনো দেশে ট্যাক্সের পরিমাণ খুচরা মূল্যের শতকরা আশি ভাগ।
মিথ ১১ : সিগারেটের জোগান হ্রাসের চেষ্টাই ধূমপান হ্রাসের কার্যকর পন্থা।
মিথটি যুক্তিসংগত, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। একজন সরবরাহকারী কমিয়ে দিলে বিকল্প সরবরাহকারী জন্ম নিচ্ছে। দেশীয় উৎপাদন কমিয়ে দিলে চোরাচালান বেড়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে জোগান নয়, চাহিদা হ্রাসই অন্যতম কর্মকৌশল। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য-শিক্ষা, সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে অবহিতকরণ এবং সিগারেটের বিকল্প দ্রব্য বাজারজাতকরণ আবশ্যক।
মিথ ১২ : ধূমপান নিয়ন্ত্রণ তামাকনির্ভর গ্রামীণ অর্থনীতির দারিদ্র্য আরও বাডিয়ে দেবে।
মিথটি অতিরঞ্জিত। ধূমপান নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে কালই সবাই সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দেবেন না। সুষ্ঠু ও বাস্তবায়নযোগ্য নীতিমালা থাকলে তা ধীরে ধীরে কার্যকর হবে। আগামী এক দু’দশকে আকস্মিকভাবে তামাক চাষের জমি ব্যাপক হারে কমে যাবে মনে করার কারণ নেই। নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা একই সঙ্গে তাদের বিকল্প কৃষিপণ্য উৎপাদনের সুযোগ করে দেবে এবং একটি নতুন বাজারও তৈরি হবে। এভাবেই কৃষি ক্ষেত্রে ও শিল্পে পুনর্বাসনেও কোনো কোনো সরকার সহায়তা করছে।
সিগারেটের পক্ষে বলার মতো ধূমপায়ীদের ভালো লাগার যুক্তি ছাড়া আর কিছু নেই। এই ভালো লাগার ক্ষতি নিজের এবং চারপাশের সবার। ট্যাক্সের ভিত্তি বাড়ানো হচ্ছে। সিগারেটের ক্ষেত্রে ট্যাক্সের হারও বাড়ানো প্রয়োজন। আরও উচ্চমূল্য হওয়া প্রয়োজন প্রতিটি সিগারেট। এতে রাষ্ট্র এবং জনগণ উপকৃত হবে।
লেখক: সরকারের সাবেক কর্মকর্তা ও কলামিস্ট
জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। কিন্তু ভাসমান সৌরবিদু্যুতে সেই সমস্যা নেই। পরিবেশ রক্ষায় ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিস্তৃতি যত হবে, দেশ ততই দূষণমুক্ত হবে। একইসঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে, বৈপ্লবিক পরিবর্তনও নিয়ে আসতে পারে। ইউরোপের সবচেয়ে বড় ভাসমান সোলার পার্ক রয়েছে পর্তুগালের আলকেভা জলাশয়ে। ভাসমান সোলার পার্কের বাড়তি সুবিধা আছে। সেগুলো এমন জায়গা দখল করে, যেটি অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা সম্ভব নয়। পানিতে থাকার কারণে, জমির তুলনায় আরও কার্যকরভাবে জ্বালানি উৎপাদন করা যায়। একইসঙ্গে প্যানেলও বেশি গরম হয় না। যে কারণে টেকে বেশিদিন। কার্বন নির্গমন কমানোর পাশাপাশি, এই পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করা গেলে বিদ্যুতের দামও কমে আসতে পারে। এর মানে হচ্ছে ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প জনপ্রিয় হয়ে উঠলে, দেশে বিদ্যুতের কোনো সংকট থাকবে না।
দেশ রূপান্তরে বুধবার প্রকাশিত ‘দেশের প্রথম ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু’ সংবাদের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, জলাশয়ের ওপর স্থাপিত সোলার প্যানেল থেকে সূর্যের আলোর সাহায্যে উৎপাদিত হচ্ছে বিদ্যুৎ। এর নিচে পানিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে নানা প্রজাতির মাছ। কৃষিজমির ক্ষতি না করে নির্মিত দেশের প্রথম ভাসমান এই সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে উৎপাদন শুরু হয়েছে।
জ্বালানি সংকটের এই সময়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পরিবেশবান্ধব সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ছে। কিন্তু অকৃষি জমির স্বল্পতা ও কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে নবায়নযোগ্য এই জ্বালানির প্রসার হচ্ছে খুবই ধীরগতিতে। এমন পরিস্থিতিতে ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র সফল হলে পরিবেশ ও কৃষিজমি নষ্ট না করে তুলনামূলক কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার ব্যাপকহারে বাড়বে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে বুলনপুরে অবস্থিত নবাব অটোরাইস মিল এলাকায় নিজস্ব অর্থায়নে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করেছে জুলস পাওয়ার লিমিটেড। এর আগে বেসরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি কক্সবাজারে ২০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করে, যেটি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত রয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মোট উৎপাদন ক্ষমতা ২.৩০ মেগাওয়াট।
জানা গেছে, সৌর প্যানেল ভাসানোর জন্য এই প্রকল্পে ফুডগ্রেডের প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে। যাতে এটি পানি কিংবা মাছের কোনো ক্ষতি না করে। আগামী ২০ বছর এর গুণগত মান অক্ষুণœ থাকবে। পানিতে সৌর প্যানেলগুলো এমনভাবে বসানো হয়েছে, যেন মাছের স্বাভাবিক জীবনচক্রে ব্যাঘাত না ঘটে।
বলার অপেক্ষা রাখে না ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিষয়টি আধুনিক, বিজ্ঞানসম্মত এবং পরিবেশবান্ধব। একইসঙ্গে বলা যায়, এই পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠবে অচিরেই। কারণ এভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং মাছ চাষ, উৎপাদককে নিঃসন্দেহে স্বস্তিতে রাখবে। দেশের বিভিন্ন পুকুরে, এই ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশে বিদ্যুৎ সমস্যা তো দূরের কথা, তখন বিদ্যুৎ রপ্তানির চিন্তাও আসতে পারে।
পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ, এই পদ্ধতি ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের লাভ গুনছে। বাংলাদেশও একসময়, লাভের তালিকায় নাম লেখাবে এটা প্রত্যাশা করাই যায়।
কিন্তু এই প্রকল্পের সমস্যা অন্য খানে। হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে, বেসরকারি উদ্যোগে যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তারা কখনোই এই প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন চাইবে না। শুধু এই বিষয়টি সরকারিভাবে নিশ্চিত করা গেলে, কোনোভাবেই ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। মোদ্দা কথা, সরকারের আন্তরিক উদ্যোগের ওপরই নির্ভর করছে এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ। যে কোনোভাবে ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, সরকারের আন্তরিকতার কোনো অভাব থাকবে না এটিই আমাদের প্রত্যাশা।
১৯৬৯ সালের এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতের অন্যতম পথিকৃৎ তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া। তার জন্ম ১৯১১ সালে পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া গ্রামে। শৈশবে শিক্ষালাভ করেন গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়, স্থানীয় ভাণ্ডারিয়া হাইস্কুল ও পিরোজপুর সরকারি হাইস্কুলে। বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে স্নাতক পাস করে পিরোজপুরের মহকুমা হাকিম আদালতের সহকারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। এক মুন্সেফের খারাপ আচরণের প্রতিবাদে চাকরি ছেড়ে দেন। এরপর তদানীন্তন সরকারের জনসংযোগ বিভাগে বরিশাল জেলার জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে পরিচয় ঘটার সুযোগে এই চাকরিও ছেড়ে দেন, চলে যান রাজনীতিতে। রাজনৈতিক প্রচারপত্রের প্রয়োজনীয়তা থেকে তিনি ও আবুল মনসুর আহমদ ১৯৪৬ সালে বের করেন ‘দৈনিক ইত্তেহাদ’। দেশভাগের পর পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম হলে দলের মুখপত্র হিসেবে আবির্ভাব ঘটে ‘ইত্তেফাক’ পত্রিকার এবং আবদুল হামিদ খান ভাসানী এর সম্পাদকের দায়িত্ব পান। পরে মানিক মিয়া ১৯৫১ সালে ইত্তেফাক সম্পাদকের দায়িত্ব নেন এবং তার সম্পাদনায়ই ১৯৫৩ সালে পত্রিকাটি দৈনিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। সামরিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ১৯৫৯ সালে তাকে জেলে যেতে হয়। ১৯৬৩ সালে তিনি আবার গ্রেপ্তার হন, ইত্তেফাকও নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। গণ-আন্দোলনের মুখে ১৯৬৯ সালে পত্রিকাটির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। আমৃত্যু আপসহীন, জনদরদি মানিক মিয়া মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে আজীবন নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন।
অপেক্ষা আর মাত্র ৩ দিনের। তারপরই শুরু হয়ে যাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ডের চার বছরের রাজত্ব আরও চার বছর টিকিয়ে রাখার আর বাকিদের সেই মুকুট কেড়ে নেওয়ার লড়াই শুরু হবে গতবারের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই দিয়েই।
শাহরুখ খানকে দিয়ে প্রোমো আর রণবীর সিংকে দিয়ে থিম সং, আইসিসি জানান দিয়েছে ক্রিকেটে বলিউডি আবেগের মিশেল ভালোই থাকবে। কিং খানের ‘জাওয়ান’ কাঁপাচ্ছে পর্দা, কাটতি বাড়ছে বক্স অফিসে; বিশ্বকাপে আইসিসির পকেট ভরবে তো?
প্রস্তুতি বলছে, ভরবে। উইকেটে হবে রান উৎসব, লড়াই হবে ধুন্ধুমার। তাতেই ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ হবে এক ব্লকবাস্টার মেগা হিট।
মাস তিনেক আগে, বিশ্বকাপের মূলপর্বের ম্যাচগুলো যে ১০ ভেন্যুতে আয়োজন করা হবে সেই ভেন্যুগুলোর কিউরেটরদের সঙ্গে বসেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান কিউরেটর। সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপের একটাই মন্ত্র, রান চাই।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে, ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে ৩ ওয়ানডের সিরিজ খেলেছে সেই ম্যাচগুলো যদিও বিশ্বকাপের ভেন্যুতে হয়নি তবে সেই সব ম্যাচেও রানের বন্যা বয়েছে।
প্রথম দুটো ওয়ানডেতে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার করা ২৭৬ রান অনায়াসে তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছে ভারত। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ঠেঙিয়ে তুলেছেন ৩৯৯ রান। তিন নম্বর ম্যাচে আবার অস্ট্রেলিয়া করেছে ৩৫২ রান, যা তাড়া করে ভারতও গিয়েছিল ২৮৬ অবধি।
উদ্বোধনী ম্যাচ হবে গুজরাতের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। এখানে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় গত ১ ফেব্রুয়ারি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। ম্যাচে শুভমান গিল করেন সেঞ্চুরি, ভারত করে ৪ উইকেটে ২৩৪ রান আর জবাবে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ৬৬ রানে।
বোঝাই যাচ্ছে, উইকেটের ধরন বুঝে ব্যাট করতে পারলে ৫০ ওভারে এখানে রানবন্যা হবে। বিশ্বকাপে ভারত-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। দুই দল এখানে মুখোমুখি হয়েছে বহুবার, পোশাকের রঙ কখনো রঙিন কিংবা কখনো সাদা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ কমেনি। এই মাঠে অস্ট্রেলিয়া ২৬৯ রান করে ভারতকে ২১ রানে হারিয়েছে সবশেষ ম্যাচে।
আইপিএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ঘরের মাঠে সবশেষ মৌসুমে ধোনির ‘ইয়েলো আর্মি’ ৮ ম্যাচ খেলে ২০০ রানের ওপরে করেছে দুইবার, একবার জিতেছে অন্যবার হেরেছে। তবে দুই ইনিংসেই ২০০’র বেশি রান হয়েছে দুটো ম্যাচেই। অর্থাৎ চাইলে চেন্নাইকেও ব্যাটিং স্বর্গে পরিণত করা সম্ভব।
বিশ্বকাপের আগে দারুণ ছন্দে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হারার পর টানা তিন ওয়ানডে জিতে সিরিজ তো নিশ্চিত করেছেই, টানা তিন ম্যাচে ৩০০’র ওপর রান করেছে। চতুর্থ ওয়ানডেতে তো ৪০০ পার করেছে প্রোটিয়ারা। ব্যাটিং উইকেটে তারাও যে কোনো প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। হেনরিক ক্লাসেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৮৩ বলে খেলেছেন ১৭৪ রানের ইনিংস। বিধ্বংসী রূপে ফিরছেন ডেভিড মিলারও।
প্রোটিয়ারা প্রথম ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে। সেখানে অবশ্য সবশেষ হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ম্যাচেও খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে তারা অলআউট হয়েছিল মাত্র ৯৯ রানে। দিল্লির মাঠটা হয়তো খানিকটা স্পিনারদের দিকেই ঝুঁকবে, তবে অন্য মাঠগুলোতে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের রান উৎসবে মেতে উঠতে দেখার সম্ভাবনা জোরালো। তাই অনেক সাবেক ক্রিকেটারই প্রোটিয়াদের দেখছেন শেষ চারে।
বিশ্বকাপের আগে ক্লাসেন ছাড়াও ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস খেলেছেন ১৮২ রানের ইনিংস, দারুণ ছন্দে ইংল্যান্ডের ডাভিড মালানও। তবে সেরা ছন্দে নিঃসন্দেহে শুভমান গিল। সবশেষ ৫ ইনিংসে দুটো শতরান আর একটা হাফসেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেলও আছেন দারুণ ছন্দে। দুটো হাফসেঞ্চুরি আর একটা সেঞ্চুরি সবশেষ ৫ ইনিংসে। হায়দ্রাবাদে বিশ্বকাপের অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের ৩৪৫ রান কিউইরা তাড়া করেছে ৩৮ বল হাতে রেখে।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করেন, এই বারের বিশ্বকাপে রানবন্যায় বোলারদের জন্য কাজটা হবে কঠিন। দেশ রূপান্তরকে আশরাফুল বলেন, ‘আমাদের পেসাররা গত এক দেড় বছর ধরে খুবই ভালো করছে। তবে যেহেতু ভারতের মাটিতে খেলা, আমরা দেখেছি যে সাড়ে ৩০০’র বেশি রান হচ্ছে প্রতিটা ম্যাচে। কেউ যদি ভালো না করে, তাকে মনে রাখতে হবে যে টুর্নামেন্টে পরের ম্যাচে ফিরে আসতে হবে। একজনের দিন খারাপ যেতেই পারে, কোনো ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান উঠেই যেতে পারে। ৯টা ম্যাচের ভেতর ৪-৫টা ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান হতে পারে। তাই বোলারদের ফিরে আসার মানসিকতা থাকতে হবে।’
বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমও বলেছেন যে দেড় মাসের আসরে প্রস্তুত থাকতে হবে যে কোনো কিছুর জন্যই, ‘দেড় মাসের আসর, ৯টা ম্যাচ এই সময়ে খেলতে হবে বা তারও বেশি। অনেক উত্থান-পতন হবে। যে কোনো কিছুর জন্যই তৈরি থাকতে হবে।’
রান উৎসবের বিশ্বকাপ যে হতে যাচ্ছে, তার সব রসদই মজুদ। মাঠগুলোকে করা হয়েছে ব্যাটিং স্বর্গ, বিশ্বকাপে আসার আগে সেরা সেরা ব্যাটসম্যানরাও আছেন ছন্দে। শুধু প্রশ্ন এটাই, রান উৎসবের এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে রান করবেন কে? সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাটিংয়ের ছবিটা যে মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়।
সুরের মূর্চ্ছনায় মোহাচ্ছন্ন শ্রোতারা হারিয়ে যাবেন। তারপর নৃত্যের তালে মেতে উঠবে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি ক্রিকেট স্টেডিয়াম। আগামী বুধবার (৪ অক্টোবর) বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। আয়োজনকে বর্ণাঢ্য করে তুলতে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
এবারের বিশ্বকাপ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কী থাকছে, এ নিয়ে আয়োজক ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) এখনো চুপ। দর্শকদের চমকে দিতে এমন গোপনীয়তার চেষ্টা অবশ্য প্রায় সব আয়োজকেরাই করে থাকেন।
তবে ভারতীয় গণমাধ্যম পিটিসি পাঞ্জাবের সূত্রে এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইনসাইডস্পোর্ট।
খবরে বলা হয়, বিশ্বকাপের উদ্বোধনী বিভিন্ন পরিবেশনায় থাকবেন বেশ কয়েকজন বলিউড অভিনেতা–অভিনেত্রী ও গায়ক–গায়িকা। এর মধ্যে গান পরিবেশনে থাকবেন কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী আশা ভোসলে, গায়ক ও সংগীত পরিচালক শঙ্কর মহাদেভান, কণ্ঠশিল্পী শ্রেয়া ঘোষাল ও অরিজিত সিং।
নাচের পরিবেশনায় দেখা যাবে রণবীর সিং ও তামান্না ভাটিয়াকে। রণবীর বিশ্বকাপের অফিশিয়াল থিম সংয়েও অংশ নিয়েছিলেন।
নাচ–গানের পাশাপাশি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হবে ভারতের ইতিহাস–ঐতিহ্য ও ক্রিকেট উন্মাদনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খেলোয়াড়দের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ১০ দলের অধিনায়ক। এ ছাড়া আয়োজক বিসিসিআই ও আইসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তো থাকবেনই।
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ অনুযায়ী, দেশে ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২২ হাজার ১১৯। এ তালিকায় রয়েছে যারা রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, মাজার, ফুটপাত, সিঁড়ি, ওভারব্রিজের নিচে, লঞ্চ টার্মিনাল, ফেরিঘাট, মার্কেটের বারান্দায় দিন কাটান। আর বস্তিতে বসবাস করছে ১৮ লাখ ৪৮৬ জন। তারা মূলত শহর ও উপশহর এলাকায় টিনের ঘর, সেমিপাকা ঘর বা ঘিঞ্জি পাকা ঘরে বাস করে। তবে বস্তিবাসী কারা সে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১৬ সালে সরকার আবাসন নীতিমালা করেছে। আবাসন উন্নয়ন তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। আবাসন সংকট নিরসন করতে হলে সরকারকে আবাসন তহবিল করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বস্তিবাসী, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত কারা তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। না হলে বোঝা যাবে না কত মানুষ বস্তিতে থাকে।’
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে আবাসন সংকট কাটছে না। স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে আবাসন।’
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে ৯ লাখ গৃহহীন মানুষকে চিহ্নিত করে। ইতিমধ্যে আট লাখ মানুষের গৃহের ব্যবস্থা করেছে; প্রায় ৪০ লাখ মানুষের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বাকিদের জন্যও শেখ হাসিনা ব্যবস্থা করবেন। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্যও আবাসনের ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা তার সৈনিক হিসেবে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
জানা যায়, বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার সবার জন্য আবাসন। অঙ্গীকার পূরণে সরকার নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সারা দেশে ৩০টি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, নোয়াখালী, যশোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, শরীয়তপুর, নড়াইল, খুলনা, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব প্রকল্পে ৬ হাজার ৪৩২টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হয়েছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২৭টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পে ৫ হাজার ৯৩০টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হবে। শেরপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, হবিগঞ্জ, সিলেট, ঝিনাইদহ, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে ১৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৩৫টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় রাজউক পূর্বাচল, ঝিলমিল, উত্তরা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় আবাসন প্রকল্পে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ফ্ল্যাটগুলো উচ্চমূল্যের কারণে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। পূর্বাচল, ঝিলমিল ও উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প গ্রহণ করছে সরকার। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনেও বিভিন্ন সংস্থা আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন শহরে বসবাসরত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সম্পদশালী ব্যক্তিরা। যাদের অনেক ফ্ল্যাট আছে তারা আরও ফ্ল্যাট কিনছেন। কিন্তু বাস্তুহারা, দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত সরকারি এসব আবাসনের সুবিধা পাচ্ছেন না। অল্প দামে জমি অধিগ্রহণ করে সরকার আবাসন প্রকল্প তৈরি করে যাদের নামে বরাদ্দ দিচ্ছে তারা রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে জমির মালিক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত।
জাতিসংঘ ১৯৮৫ সালে বিশ্ব বসতি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশে^ অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার এ দিবসটি পালিত হয়।
শিশুরাই আগামী দিনের কান্ডারি। তাদের হাতেই অর্পিত হবে আগামী দিনের নেতৃত্ব। দেশের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে শিশুদের সুন্দর, স্বাভাবিক ও ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশে বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে হবে। শিশুদের সুস্থ, সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার গুরুত্ব অনুভব করে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। এর ফলে শিশুদের জন্য ‘হ্যাঁ’ বলুন, সবার আগে শিশু ইত্যাদি স্লোগান যেমন সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি শিশু অধিকার নিয়ে কাজও হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে বাংলাদেশের সফলতা দৃশ্যমান। বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ছেলের ক্ষেত্রে ২১ এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ বছর নির্ধারণ করেই সরকার দায়িত্ব শেষ করেনি, বরং তা পালিত হচ্ছে কি না তাও নজরদারিতে রেখেছে। ফলে, বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের ঘটনা এখন নেই বললেই চলে। বরং, পত্রপত্রিকায় বাল্যবিয়ে প্রতিহত করতে পাত্র/পাত্রীর সহপাঠী, শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তার (ইউএনও, সমাজসেবা অফিসার) ভূমিকার কথা প্রকাশিত হয়। কিন্তু এর উল্টোচিত্রও রয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে আজ বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশু দিবস। প্রতিবছর ২০ নভেম্বর জাতিসংঘ বিশ্ব শিশু দিবস পালন করে। তবে অন্যদিনেও এই দিবসটি পালনের নজির রয়েছে। যেমন ভারতে প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর জন্মদিন ১৪ নভেম্বর শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়। আমাদের দেশেও ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকার অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার বিশ্ব শিশু দিবস এবং এরপরের এক সপ্তাহ শিশু অধিকার সপ্তাহ হিসেবে পালন করে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এই কর্মসূচিগুলোর সুফল ইতিমধ্যেই পরিলক্ষিত হয়েছে।
নাগরিকের পাঁচটি মৌলিক অধিকার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা; যা শিশুদের জন্যও প্রযোজ্য তার শতভাগ বাস্তবায়ন দেখা যায় না। রাতে ফুটপাতে শুয়ে থাকা পথশিশু, দিনের বেলা পার্ক-রাস্তার ফুল বিক্রেতা শিশু, লেগুনার হেলপার, খাবার হোটেল, চায়ের দোকানে ফুট-ফরমাশ খেটে দুবেলা আহার জোগানো শিশুরা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত নয়। শুধু যে নিম্নবিত্ত বা দরিদ্র শিশুরাই আমাদের অবিমৃশ্যকারিতার শিকার তা নয়। ঝুঁকিতে পড়েছে মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুদের বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়াও।
শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে লাগাতার পরীক্ষা-নিরীক্ষা, কোচিং ক্লাসের চাপ, জিপিএ ৫ পাওয়ার জন্য অভিভাবকের চাপ সব মিলিয়ে শিশু-কিশোররা অতিক্রম করছে এক ক্রান্তিকাল। পরীক্ষায় ভালো ফলের জন্য বাবা-মা ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ তাদের ওপর যে মানসিক চাপ সৃষ্টি করে তার ফলাফল দেখা যায় প্রতি বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর। সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয় কাক্সিক্ষত ফল না পাওয়ায় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা।
পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষের মৌলিক অধিকার পাঁচটি হলেও একজন শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য দাবি করে আরও বেশি। তার স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন খেলাধুলার সুব্যবস্থা। রাজধানীসহ সারা দেশে আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে খেলার মাঠ। আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুসারে যেকোনো এলাকায় প্রতি পাঁচ হাজার মানুষের জন্য একটি করে খেলার মাঠ প্রয়োজন। যে মাঠের আকার হতে হবে এক একরের। ঢাকার শহরের জনসংখ্যা যদি আড়াই কোটি ধরা হয় তাহলে এই বিশাল জনসংখ্যার জন্য মাঠের প্রয়োজন হবে পাঁচ হাজার। কিন্তু ২০০০ সালের এক জরিপ অনুসারে এই মাঠের সংখ্যা মাত্র ১৫০টি। গত ২৩ বছরে এই সংখ্যা আরও হ্রাস পেয়েছে বলাই বাহুল্য।
মাঠহীন এই শহরে শিশুদের জন্য তৈরি হয়েছে আরেকটি ফাঁদ ফাস্ট ফুড দোকানের প্লে-জোন। প্লে-জোন নির্মাণ করে শিশুদের মনোযোগ আকর্ষণ করছেন ফাস্ট ফুড ব্যবসায়ীরা। ফাস্ট ফুড শিশু স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। ফাস্ট ফুড শিশুদের বার্গার, স্যান্ডউইচ, পেস্ট্রি, কেক, সফট ড্রিংকসের কুফল সম্পর্কে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা নানাভাবে আমাদের সতর্ক করেছেন। ফাস্ট ফুড ও সফট ড্রিংকস গ্রহণের ফলে অতি স্থূলতা, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, অ্যালার্জির সমস্যা, ক্যানসার, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি নানা ধরনের শারীরিক অসুস্থতা সৃষ্টি হতে পারে।
স্বাভাবিকভাবেই খেলার মাঠহীন এই খাবারের দোকানগুলো শিশুদের ভীষণ প্রিয়। আর এই সুযোগটিই নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। প্লে-জোন সংযুক্ত এই বিশেষ দোকানের খাবারের মূল্য অন্য সাধারণ দোকানের থেকে অনেক বেশি। কিন্তু সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে এই বাড়তি অর্থ পরিশোধ করতে হয় অভিভাবকদের। খেলার মাঠের সংকট সৃষ্টি করেছে ইনডোর প্লে-শপ। এই ইনডোর প্লে-শপে খেলার জন্য ঘণ্টা অনুসারে অর্থব্যয় করতে হয় অভিভাবকদের। দোকান অনুসারে এই অর্থ ঘণ্টাপ্রতি ৩৫০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
চিকিৎসা, শিক্ষা থেকে শুরু করে এখন খেলাধুলার মতো মৌলিক অধিকারও যখন অর্থের বিনিময়ে কিনতে হয়, তখন বলা যায় না আমাদের শিশুরা নিরাপদ আছে, বলতে হয় তাদের শৈশব নানা চাপে সংকুচিত হয়ে আছে। একটি নিরাপদ, বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার অঙ্গীকার শুধু নথিতে পড়ে রবে না, বাস্তবায়িতও হবে বিশ্ব শিশু দিবসে এটিই আমাদের প্রত্যাশা।
বগুড়ার প্রায় ৪০০ বাড়ির দেয়ালে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা দাবি করে কম্পিউটার প্রিন্ট করা কাগজ সাঁটিয়েছেন অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা। গত শনিবার রাতে কোনো একসময় জেলা কাহালুর উপজেলার মুরইল ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের বিষ্ণুপুর মাঝগাড়িপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, হিন্দুপাড়া ও মোল্লাপাড়ায় বাড়ির দেয়ালে কাগজগুলো লাগানো হয়েছে। এতে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে গতকাল রবিবার সকালে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিষ্ণুপুর গ্রামের চারপাড়ায় বিভিন্ন বাড়ির দেয়ালে কম্পিউটারে প্রিন্ট করা কাগজ সাঁটানো হয়েছে। ওই কাগজগুলোতে ২০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দাবি করা হয়েছে। দেয়ালে সাঁটানো কাগজগুলোতে লেখা রয়েছে ‘আসসালামু আলাইকুম, ২০০০ টাকা ৬ তারিখে দিতে হবে। না হইলে ৭ তারিখ থেকে আপনাদের ছেলে-মেয়ে হারায় গেলে আমার কোনো কিছু করার থাকবে না। আমি বা আমরা কে সেটা না খুঁজে, আমি যা বলছি সেটা করার চেষ্টা করেন তাহলে কিছু হবে না। অল্প কিছু টাকার জন্য বাচ্চাদের বিপদে ফেলায়েন না। যদি ছেলে-মেয়ের মঙ্গল চান তাহলে লোয়া-পুকুর সোলার লাইটের সঙ্গে যে বক্স থাকবে। নিজের টাকার সাথে একটা কাগজে নিজের নাম লিখে ওই বক্স-এ ফেলান আর নিজের বাচ্চাকে সুরক্ষিত করুন ধন্যবাদ। [বিঃ দ্রঃ আমার এই কাগজ আপনি পড়ছেন তাহলে মনে করেন আপনার ছেলে/মেয়েকে তুলে আনতেও পারবো। দয়া করে টাকাটা দিয়েন আমরা ছেলেগুলা ভালো না। ভালো থাকবেন ৬ তারিখ পর্যন্ত আল্লাহ হাফিজ।’
গতকাল রবিবার সকালে এসব পাড়ার মানুষ তাদের বাড়ির দেয়ালে সাঁটানো কাগজ দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এলাকার মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের খবর দিলে তারা বিষয়টি পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে দেখেন। এসব পাড়ার লোকজন জানান, সকালে উঠে দেখেন দরজার পাশে এসব কাগজ লাগানো হয়েছে। প্রতিটি কাগজে পারিবারিক অবস্থান বুঝে নানা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়েছে। দিনমজুরের কাছে সর্বনিম্ন ২০০ টাকা ও বিত্তবানদের কাছে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা দাবি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মুরইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল জলিল ও স্থানীয় মেম্বার জাহিদুর রহমান বলেন, ‘স্থানীয় লোকজন খবর দিলে বিষ্ণুপুর গ্রামে এসে বিষয়টির সত্যতা পাই। এলাকায় আতঙ্ক ছড়াতে এ ধরনের কাজ করেছে একটি চক্র। ধারণা করা হচ্ছে, স্থানীয়রা এ কাজের সঙ্গে জড়িত। নইলে এক রাতে ৩০০ থেকে ৪০০ বাড়িতে এই কাগজ সাঁটানো সহজ নয়। প্রতিটি বাড়িতে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়েছে। তার মানে এলাকার বা আশপাশের কোনো চক্র এ ঘটনা ঘটিয়েছে।’
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বগুড়ার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নাজরান রউফ, কাহালু থানার ওসি মাহমুদ হাসানসহ পুলিশ সদস্যরা।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নাজরান রউফ বলেন, গভীর রাতে কে বা কারা এমন লিফলেট বাড়ির সামনে সাঁটিয়ে দিয়েছে। ফলে এলাকার লোকজন ভয় পাচ্ছে। ভয়ের কোনো কারণ নেই। আমরা ঘরে ঘরে গিয়ে কথা বলেছি। এলাকায় যে বা যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে অতিদ্রুত তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। আমাদের বেশ কয়েকটি টিম এ বিষয়ে কাজ করছে। বিভিন্ন বিষয় সামনে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।