
পলিথিন বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, বিভিন্ন ধরনের পলিথিনজাত মিনিপ্যাকের উৎপাদন, ব্যবহার ও এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সবগুলোই সমস্যা। পলিথিন উৎপাদন ও এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে বাতাসে যেমন কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়, অন্যদিকে এর ব্যবহার প্রাণিকুল ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত। প্লাস্টিকের কণা এখন মানুষের রক্তে, মায়ের দুধে, সামুদ্রিক মাছে। শুধু ব্যবহার সম্পর্কিত সমস্যা না, পলিথিনের মাধ্যমে সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও বেশি সমস্যাসংকুল। কারণ এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, কৃষির উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে, শহরের নর্দমা বন্ধ করে দিচ্ছে তা আবার রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে এবং সবশেষে শহরকে বসবাসের অনুপযোগী করে দিচ্ছে।
এতসব সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ না করা বা বন্ধ করতে না পারার সংকট কোথায় সেটা বুঝতে আমাদের সমস্যা হয়। পলিথিন বন্ধে আইন আছে, নানা ধরনের প্যাকেজিংয়ে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাও অনেক দিন হলো। অন্যদিকে বেশ কিছুদিন ধরে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু তা সহসাই হচ্ছে না। ‘সোনালি ব্যাগ’ নিয়ে অনেক ঢাকঢোল পেটানো হয়েছে কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেই সোনালি স্বপ্ন কেমন জানি ফ্যাকাশে হয়ে আসছে এতদিনে।
পলিথিনের ব্যবহার শহরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি যার অনেকটাই অভ্যাসগত কারণে। শহরের মানুষের পলিথিনের ওপর অভ্যস্ততা যেমন বেশি, তেমনি তারা ভুক্তভোগীও বেশি। রাস্তাঘাট, ড্রেন নোংরা হয়ে তো থাকেই, বাড়তি পাওনা দুর্গন্ধ, তৈরি হয় জলজট ও ডেঙ্গুর মতো রোগবালাই। বাসাবাড়িতে পলিথিনের ব্যবহার তো আছেই, পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য, বেকারিজাত পণ্যের পলিথিনের ব্যবহার ও পলিথিনের মোড়ক যত্রতত্র নিক্ষেপই এই অবস্থার জন্য দায়ী। শুধু ঢাকা নয় অন্যান্য ছোট-বড় সব শহরে প্রায় একই অবস্থা। আর এগুলোই হচ্ছে পলিথিন নির্ভর অর্থনীতির অনুষঙ্গ কিন্তু এর অনর্থনীতি হচ্ছে পলিথিনের কারণে পরিবেশদূষণ ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণভাবে পলিথিন ব্যবহারের ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্যমান নির্ধারণ করা হয় না। তবে দূষণের মাত্রা এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে পলিথিনের অর্থনীতির থেকে এর ক্ষয়ক্ষতির অর্থনীতি যে অনেক বড় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আসছে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম অনুঘটক হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। অর্থমন্ত্রী তার এবারের বাজেট (২০২৩-২৪) বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলেছেন, পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ এর উল্লেখ করেছেন কিন্তু পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে দৃশ্যমান কোনো রূপকল্প এবারের বাজেটে উল্লেখ করতে সমর্থ হননি। এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে’। গত বছরের এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘একটাই পৃথিবী’। পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের যত্রতত্র ব্যবহার আমাদের এই একমাত্র পৃথিবীকে দূষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আইন হয়েছে ২০০২-এ এবং আজ ২০২৩ সাল, এই দীর্ঘ ২১ বছরেও এই আইনের বাস্তবায়ন করা যায়নি। যদিও এবারের বাজেট বক্তৃতায় প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার এর মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাস্টিক সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। ধরেই নেওয়া যায় শুল্ক বৃদ্ধির এই হার কোনোভাবে পলিথিন নিরুৎসাহিত করার জায়গা থেকে না বরঞ্চ কিছুটা বাড়তি কর আদায়ের চিন্তা থেকে।
পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সস্তা পলিথিনের ব্যবহার টেকসই ভোগের ধারণার জন্যও কোনোভাবে সহায়ক না। বরঞ্চ এটা এমন এক ধরনের মনস্তত্ত্ব তৈরি করে যা শুধু পরিবেশকেই ধ্বংস করে। যদিও বিশ্বব্যাপী টেকসই ভোগের ধারণার ওপর ভিত্তি করে এখন ‘সার্কুলার অর্থনীতির’ ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সার্কুলার অর্থনীতি শুধু অপচয় কমায় না, প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা, দূষণরোধ, বর্জ্য থেকে তৈরি পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে। তাই পরিবেশগত ঝুঁকি, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা এবং এ সংশ্লিষ্ট অভীষ্ট ২০৩০ সমূহ অর্জনে সার্কুলার অর্থনীতি অন্যতম হাতিয়ার।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা শহরে রাস্তায় কোনো পেট বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায় না। এর কারণ হচ্ছে এখন পেট বোতলের প্রায় শতভাগ রিসাইকেল করা হয় এবং পেট বোতল সংগ্রহের জন্য অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে হলেও একটি সংগ্রহ-লাইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু পলিথিনের ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। তবে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার সার্কুলার ইকোনমির ধারণার সঙ্গেও একেবারে মানানসই না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রযুক্তিগতভাবে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন রিসাইকেল করা অসম্ভব না হলেও এটি একটি জটিল এবং অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল যে কারণে পেট বোতলের মতো রাস্তা থেকে পলিথিন সংগ্রহ করতে কাউকে দেখা যায় না উলটো রাস্তাঘাটে এখানে সেখানে পলিথিন পড়ে থাকে।
পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের অনর্থনীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখন প্রথম দরকার এর ব্যবহার বন্ধ করা, এর ব্যবহারকে অনেক বেশি দামি করে ফেলতে হবে আর এর প্রতিফলন থাকতে হবে বাজেটে। দ্বিতীয়ত, সার্কুলার অর্থনৈতিক চর্চার উৎসাহিত করার জন্য পরিকল্পনা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, পলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগের মতো উদ্যোগগুলোকে সরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ ও বেসরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। সরকার প্রতি বছর বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবেশ দিবস পালন করে কিন্তু দিবস পালন শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই হবে না এর উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে তার ওপরও নজর দিতে হবে। তা নাহলে পলিথিনের অর্থনীতির নামে শুধু অনর্থনীতিকে বাড়িয়ে তোলা হবে, আর সেটা হবে টেকসই অর্থনীতি তৈরির সম্ভাবনার অপমৃত্যু।
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
‘উন্নয়নের দেড় দশক : স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ এই শিরোনামের সেøাগানে উৎকলিত উচ্চ মূল্যস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বৈশ্বিক সংকট, ডলার সংকট, ব্যবসা-বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে মন্দা, জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ নানামুখী চাপ সঙ্গে করে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত হয়েছে। জুনের ১ তারিখে এটি পেশ করা হলেও, বড়জোর তিন সপ্তাহ সময় মিলবে মোট ৪০ ঘণ্টা সংসদের ফ্লোরে, এ বাজেটের ওপর গতানুগতিক ও অনির্বচনীয় আলোচনার। তারপর কণ্ঠভোটে অর্থবিল পাস হবে ২৫ জুন এবং বাজেট ২৬ জুন। অনুধাবনীয় যে, শতবর্ষী ঔপনিবেশিক আয়কর আইন একবাক্যে নতুন আইন উপহার হিসেবে পাওয়ার আভাস মিলছে। আশা করা যায়, অতি গুরুত্বপূর্ণ আয়কর আইন যথাযথ জনমত যাচাই-বাছাইয়ের এবং আইন প্রণেতারা অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এটি গৃহীত হবে। আশঙ্কা থাকবে না এটি যেন ২০১২ সালের নতুন ভ্যাট আইনের মতো জন্মিয়াই মৃত্যুর অথবা আজীবন খোঁটা খাওয়ার ভাগ্য বরণ করবে না। জাতীয় নির্বাচনের বছরে অর্থনৈতিক কার্যক্রম চাঙ্গা করতে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের বিশাল বর্ণনা রয়েছে বাজেট বক্তৃতায়, যদিও পুরো বক্তৃতাটি পাঠের পরিবর্তে ভিন্ন আঙ্গিকে তুলে ধরা হয়েছে। আত্মতৃপ্তির বিশাল বাজেট বক্তৃতাটি মিডিয়ায় হুবহু প্রকাশও করা সম্ভব নয় বিধায় গণ কর্ণকুহরে পৌঁছানো, কিংবা পাঠের সুযোগ ঘটেনি আমজনতার, যাদের জন্য এটি পেশ করা হয়েছে সংসদে। মিডিয়ার বদৌলতে বাজেটের ছিটেফোঁটা জানতে পারছে যারা, তারা সেই বিশাল নাগরিক সম্প্রদায়ের অতি খ-িত অংশ।
নয়া বাজেটের মোট আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। ডলার সংকট কাটাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রকল্প চলমান রয়েছে। এর বিপরীতে দেওয়া শর্ত পরিপালন করতে গিয়ে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম দফায় দফায় বাড়াতে হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে জনজীবনে। ব্যাংক, আর্থিক ও রাজস্ব খাতে ব্যাপক সংস্কার আনতে হচ্ছে; প্রতি বছর ০.৫ শতাংশ হারে করদাতা বাড়াতে হবে। স্পষ্ট যে, বাজেটের অর্থের জোগান পেতে সরকার আগের চেয়ে বেশি ব্যাংকমুখী হবে। আগামী অর্থবছরে ব্যাংক থেকে সরকার চলতি অর্থবছরের চেয়ে ২৬ হাজার কোটি টাকা বেশি ঋণ নেবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নেবে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরে যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। সে হিসাবে আগামী অর্থবছরে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ চলতি বছরের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেশি বাড়বে। এটা সবার জানা যে, ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার বেশি ঋণ নিলে তার প্রভাব পড়ে মূল্যস্ফীতিতে। কারণ, ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ টাকা ছাপিয়ে মেটাতে হয়। টাকা ছাপালে তখন বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে যায় এবং মূল্যস্ফীতি বাড়ে। এর ফলে বেসরকারি খাতের ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয় কর্মসংস্থান ব্যবস্থা। প্রতিবারই অর্থবছরের শেষ দিকে সরকারের ব্যাংকঋণ নেওয়া বাড়ে। বিশেষ করে জুন মাসে। চলতি অর্থবছরেও এর ব্যতিক্রম হবে না বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। আগের অর্থবছরে ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার ঋণ নিয়েছিল ১৩ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। একই সময়ে চলতি অর্থবছরে তা বেড়ে হয় ৩৯ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এদিকে চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি প্রায় নেতিবাচক। অথচ চলতি অর্থবছরে ধরা হয়েছিল, এ খাত থেকে নিট ৩৫ হাজার কোটি টাকা আসবে। চলতি বছরের সংশোধিত বাজেটে তারপরও সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির নেতিবাচক চিত্রের কারণে জুন শেষে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
দেশে মূল্যস্ফীতির হার গত এপ্রিলে ছিল ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। অর্থবছর শুরুর দুই মাসের মাথায় গত আগস্টে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে উঠেছিল। যা হোক মূল্যস্ফীতি যেখানে গিয়ে ঠেকুক না কেন, অর্থের প্রয়োজন মেটাতে ব্যাংকঋণের কোনো বিকল্প আগেও ছিল না, চলতি অর্থবছরেও নেই, আগামী অর্থবছরেও থাকবে না।
শুধু তাই নয়, আর মাত্র ছয় মাস পরই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বহুমুখী চাপের মুখে এ নির্বাচন সামনে রেখে জনগণকে সামান্য হলেও স্বস্তি দিতে চাওয়ার জন্য সামাজিক নিরাপত্তাসহ বহু রকম নির্বাচনী কর্মসূচি আছে এ বাজেটে। এ বছর যেখানে বিদ্যমান (ডিসেম্বর পর্যন্ত) এবং নবনির্বাচিত (জানুয়ারি-জুন) সরকার বাজেট বাস্তবায়নে থাকবে, এতসব প্রতিশ্রুত কর্মসূচি বাস্তবায়নের হালহকিকত কী দাঁড়াবে তা আমজনতার বোধগম্যের মধ্যে আসছে না।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার। এর মধ্যে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার। বিশাল আকারের রাজস্ব আদায় করতে গিয়ে বাড়াতে হবে করের আওতা। করযোগ্য মানুষকে করের আওতায় আনার সুষ্ঠু পরিকল্পনার পরিবর্তে নিম্নআয়ের মানুষকেও করের আওতায় আনার পরিকল্পনার সিদ্ধান্তটি হবে অযৌক্তিক।
আগামী অর্থবছরে সরকার দেশের উন্নয়নে ব্যয় করবে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয় হবে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বহির্ভূত প্রকল্পে ব্যয় করবে ৭ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা। কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিতে ব্যয় হবে ২ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। বিভিন্ন স্কিমে ব্যয় করবে ৩ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা। আগামী বাজেটের রূপরেখায় সরকারের পরিচালনসহ অন্যান্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১৩ শতাংশ বা ৬০ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকার বেশি। পরিচালন ব্যয়ের হিসাবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ বাড়ছে ৩৫ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা; যা চলতি অর্থবছরের বাজেটে সংশোধিত জিডিপির চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপির পরিমাণ রয়েছে ৪৪ লাখ ৩৯ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। বৈশ্বিক সংকটেও এ উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের আশা করছে সরকার। যদিও বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ উন্নয়ন সহযোগীরা বলছে, বৈশ্বিকভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার আগের তুলনায় হ্রাস পাবে। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ ধরে রাখার চেষ্টা : টানা প্রায় দেড় বছর ধরে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে ফেলেছে, যা এখন প্রায় ২ অঙ্কের ঘর ছুঁইছুঁই। মূল্যস্ফীতির এ চাপকে ৬ শতাংশে ধরে রাখার পরিকল্পনা উচ্চারিত হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। বাস্তব পরিস্থিতিতে তা কতখানি টেকসই হবে বলার সময়ই এখনো হয়নি।
মিডিয়ায় প্রশ্নটা বরাবরের ন্যায় আরও স্পষ্ট হতে হচ্ছে যে, সংবিধানের প্রস্তাবনায় উল্লিখিত ‘আমরা বাংলাদেশের জনগণ’ সেই আপামর জনগণ অর্থাৎ আমজনতার আশা-অকাক্সক্ষা চাওয়া-পাওয়া দাবি-দাওয়া বাজেটে প্রতিফলিত হয়েছে কিনা। এ প্রশ্ন ওঠাও স্বাভাবিক যে, জাতীয় বাজেটের মধ্যে করোনা মোকাবিলার মতো, করোনায় বিধ্বস্ত ও কিয়েভ-ক্রেমলিন যুদ্ধের দ্বারা আহত অর্থনীতি গণস্বাস্থ্য জন-শিক্ষা পুনরুদ্ধারের মতো জরুরি বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়েও পায়নি বলে প্রতীয়মান হচ্ছে কিনা। প্রশ্ন এ কারণেও উঠতে পারে যে, জাতীয় বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ প্রকৃত প্রস্তাবে প্রয়োজনীয় খাতে (এ মুহূর্তে যেমন জীবন ও জীবিকা) যথাযথ (দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সহনীয়করণ, ব্যয় সাশ্রয়ী, অর্থায়ন আয় বৃদ্ধি ও কৃচ্ছ্র সাধন অর্থে ব্যয় সংকোচন, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ, সরকারি-বেসরকারি খাত দল মত নির্বিশেষে ঐকবদ্ধভাবে সংকট মোকাবিলায়) ব্যবহৃত হবে কিনা, নতুন বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য সবাই পরামর্শ দিয়েছেন, দাবি তোলেন কিন্তু সেই বরাদ্দের বিপরীতে অর্থায়ন ও লক্ষভেদি বাস্তবায়নের পরিস্থিতি, সেই ব্যয়ের তাৎক্ষণিক, স্বল্প-মধ্য দীর্ঘমেয়াদি ইমপ্যাক্ট ও অভিঘাত সম্পর্কে অবহিত হওয়ার অবকাশ বরাবরই হালে পানি পায় না। সাধারণ সময় সেই অবকাশ কমবেশি দেরিতে মিললেও করোনা অভিঘাত ও বৈশি^ক প্রভাব মোকাবিলার মতো জরুরি সময়ে বরাদ্দ ব্যবহার এবং কর্মপরিকল্পনা প্রয়োগও জরুরি এ কারণে যে, ‘রোগী মারা যাওয়ার পর চিকিৎসকের উপস্থিতির’ মতো পরিস্থিতির যেন উদ্ভব না হয়। এটি এ জন্যও বিবেচিত যে, সবাই নতুন বাজেট আসার বা আনার সময় আলোচনা-পর্যালোচনা এমন কি মৃদুমন্দ সমালোচনা করেন, কিন্তু বাজেট পাস হওয়ার পর সারা বছর সেই বাজেট বাস্তবায়ন পরিস্থিতি নিয়ে, তাৎক্ষণিক করণীয় নিয়ে কোনো কথা তো হয়ই না, বরং বিনা বাক্যব্যয়ে সম্পূরক বাজেটে সারা বছরের অপব্যয়, অপচয়, অতিরিক্ত ব্যয়, আয়ে অপারগতা, ব্যয়ে বাড়াবাড়ি, তছরুপ-দুর্নীতি সবই গৃহীত হয়ে যায়। নির্বাচনের বছরের বাজেট গুণধারী হওয়ার চাইতে দৃশ্যধারী হওয়ার অবকাশ ছিল কি?
জীবন ও জীবিকার জন্য বাজেটকে জাতীয় বাজেট থেকে আলাদা অলিন্দে নয়, একীভূত হিসেবে দেখাই জরুরি। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা, কৃষি খাতে অগ্রাধিকার ঘোষণা এবং কিঞ্চিৎ বরাদ্দ বাড়ালেই বাজেট জনগণের বাজেট বা ইতিবাচক হয় না, স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ বাড়ালেই মহামারী মোকাবিলা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অটোমেটিক্যালি বাড়ে না, বিদেশি ঋণের টাকায় টিকা কেনা এবং ফ্রি বিতরণসহ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের সক্ষমতা ও সুশাসন নিয়ে প্রশ্ন বহাল থাকে, দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনা-অপারগতায় আকীর্ণ থাকে এবং তা নিরসন নিয়ন্ত্রণে তথা জবাবদিহিকরণে ‘কথায় নয় কাজে’ অগ্রগতি না থাকে। বাজেটে বরাদ্দ বড় কথা নয়, অর্থনীতিতে সেই বরাদ্দের দ্বারা কতটা সম্পদ ও সেবা সৃষ্টি হলো, প্রভাব ফেলতে পারল সেটিই বড় কথা। বাজেট বাস্তবায়ন সক্ষমতা অক্ষমতা প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকার পরিস্থিতি যথাসময়ে দেখভালের ব্যবস্থা না থাকলে সে বাজেট শাক দিয়ে মাছ ঢাকার কৌশল হিসেবে পরিণতি লাভ করে। এ নিরীখেই কঠিন সময়ে কঠিন বাজেট মিলেছে।
লেখক: কলাম লেখক উন্নয়ন অর্থনীতির বিশ্লেষক
বাজেটের একটা দর্শন থাকে। রাষ্ট্র আয় করবে কোথা থেকে আর ব্যয় করবে কার জন্য তা নির্ধারিত হয় একটি দর্শন দ্বারা। কিন্তু আমাদের দেশে প্রতি বছর বাজেটের নানা ধরনের নামকরণ করা হয়ে থাকে। যেমন বাজেট ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট সম্পর্কে বলা হয়েছে, স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে এই প্রতিপাদ্যে সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণকেই বলা হচ্ছে এবারের বাজেটের মূল দর্শন। বলা হয়েছে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে যার স্তম্ভ হবে চারটি। স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সোসাইটি ও স্মার্ট ইকোনমি। বলা হয়েছে স্মার্ট বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় হবে কমপক্ষে ১২ হাজার ডলার, দারিদ্রসীমার নিচে থাকবে ৩ শতাংশ মানুষ, চরম দারিদ্র্য নেমে আসবে শূন্যের কোঠায়, মূল্যস্ফীতি সীমিত থাকবে ৪-৫ শতাংশের মধ্যে, বাজেট ঘাটতি থাকবে জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে, রাজস্ব জিডিপি অনুপাত হবে ২০ শতাংশের ওপরে, বিনিয়োগ হবে জিডিপির ৪০ শতাংশ।
দেশের ইতিহাসের ৫২তম এবং আওয়ামী লীগ সরকারের ২৪তম বার্ষিক আয়-ব্যয় বিবরণী বা বাজেট উপস্থাপিত হয়েছে জাতীয় সংসদে। একটা বিষয় পরিষ্কার যে স্বাধীনতার পর দেশের বয়স যত বাড়ছে, বাজেটের আকার তত বড় হচ্ছে। এবারের বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। যা জিডিপির ১৫ শতাংশ। এই পরিমাণ টাকা আসবে কোথা থেকে? বাজেটে ৫ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আয় আসবে বলে সরকার ধরে নিচ্ছে। এ আয়ের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে ঘাটতি থাকছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা যা জিডিপির ৫.২ শতাংশ। কিন্তু ঘাটতি বাজেট হলেও সরকারকে খরচ তো করতেই হবে। তাই উপায় হিসেবে বলা হয়েছে, ঘাটতি পূরণ (অর্থসংস্থান) করা হবে দুইভাবে বৈদেশিক ঋণ ও অভ্যন্তরীণ ঋণ নিয়ে। বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হবে নিট ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। আর অভ্যন্তরীণ ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা, আর সঞ্চয়পত্র বিক্রিসহ ব্যাংকবহির্ভূত ঋণ নেওয়া হবে ২৩ হাজার কোটি টাকা।
ঘাটতি পূরণে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ তো প্রতি বছরই করতে হয়। কিন্তু এই ঋণ কতটুকু নেওয়ার পরিকল্পনা এবং কত নেওয়া হয় তার মধ্যে বেশ বড় ফারাক থেকে যায়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা। গত এপ্রিলে এসে দেখা গেল প্রয়োজন আরও বেশি। ফলে ব্যাংকঋণের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা যা বর্তমান অর্থবছরের ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার তুলনায় ২৬ হাজার কোটি বা ২৪ শতাংশ বেশি। এর ফলে ঘাটতি পূরণ হয়তো হবে কিন্তু মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা বাড়িয়ে দেবে।
যে বছরটা পেরিয়ে এলাম আমরা অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। নানা কারণে সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় ৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটের আকারকে ভিত্তি ধরলে আগামী বাজেটের আকার বাড়ছে ১ লাখ ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। কিন্তু আয় বৃদ্ধির যে কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে তা সাধারণ মানুষের জীবনে কী প্রভাব ফেলবে সেই আলোচনাটা খুবই জরুরি। আয় বৃদ্ধির প্রধান উৎস এনবিআর। অথচ চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ৩৪ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা শুল্ক-কর আদায়ের লক্ষ্য ধরা হলেও গত জুলাই-এপ্রিল সময়ে সব মিলিয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার ২৮২ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে। ফলে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল করা, আয়বৈষম্য রোধ করা এবং রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি করা এগুলো এবারের বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য কী সব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, বাজেটে সেটাই দেখার বিষয়।
দেশের অর্থনীতি এখন নানামুখী চাপে বিপর্যস্ত। ডলারের সংকট এখনো প্রকট। পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খুলতে গেলে কোনো কোনো ব্যাংক ফিরিয়ে দিচ্ছে। আবার রপ্তানি আয় তুলতে গেলেও ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতি দেশে সাম্প্রতিক অতীতের বছরগুলোতে দেখা যায়নি। সাধারণ মানুষ দেখেছে বছর জুড়ে চাল, ডাল, লবণ, ভোজ্য তেল, চিনিসহ প্রায় প্রতিটি জিনিসেরই দাম বেড়েই চলেছে। সরকার মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল ৫.৬ শতাংশ কিন্তু গত এপ্রিলে তা ছিল ৯.২৪ শতাংশ। অথচ মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৭.২৩ শতাংশ। গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল ও সারের দাম বাড়ানো হয়েছে। কমেছে টাকার মান। প্রায় ৩০ টাকা কমেছে ডলারপ্রতি। প্রণোদনা দিয়েও প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) বাড়ানো যায়নি, রপ্তানি আয়ের প্রবণতাও ছিল নিম্নমুখী। ডলার সংকটে বিলাসপণ্যের আমদানি সংকোচনের উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে দেখা যাচ্ছে গত জুন থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি কমেছে ৫৬ শতাংশ, আর মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি কমেছে ৩১ শতাংশ। বেসরকারি বিনিয়োগ তেমন বাড়েনি যেমন, তেমনি দাম বাড়ানো হলেও শিল্প খাতে জ্বালানি সংকটের সুরাহা হয়নি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নানা ধরনের শর্ত পূরণের চাপ। আইএমএফ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার চেয়ে সরকার প্রথম কিস্তি পেয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তি পেতে সময় লাগবে আগামী ডিসেম্বর। সে ক্ষেত্রে কিছু শর্ত পূরণ করতে পারলেই পাওয়া যাবে পরবর্তী কিস্তি। রিজার্ভ সংরক্ষণসহ বড় কিছু শর্ত পূরণ না হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
এখন দেখা যাক গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো কেমন গুরুত্ব পেল এবারের বাজেটে? স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ প্রস্তাব ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা যা গত বাজেটে ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। সেই ৫ শতাংশের ঘরেই থেকে গেল স্বাস্থ্য বাজেট। করোনার আঘাত, চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি, চিকিৎসা ব্যয়ের ৭২ শতাংশ জনগণের নিজেদের পকেট থেকে ব্যয় করার তথ্য জানা থাকার পরও স্বাস্থ্য খাতে কিন্তু বরাদ্দ বাড়ল না উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। যে কোনো রাষ্ট্রের জন্য শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত। বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে যা গত বাজেটে ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খাতে ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে যা গত অর্থবছরে ছিল ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে, যা গত বছরে ছিল ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দাঁড়াল ১১.৫৮ শতাংশ। যা ছাত্রসমাজের দীর্ঘদিনের আকাক্সক্ষা আর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হলো কি? যে কৃষি দেশের অর্থনীতি এবং কর্মসংস্থানের প্রধান খাত সেই খাতে বরাদ্দের পরিমাণটাও দেখা যাক। কৃষি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৫ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা যা গত বছরে ৩৩ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। মোট বাজেটের ৪.৬৪ শতাংশ। খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে এত উদ্বেগ সত্ত্বেও কৃষি খাতে বরাদ্দ কি প্রয়োজন পূরণের মতো হয়েছে, সে প্রশ্ন করাই যায়।
প্রতি বছর শ্রম বাজারে আগত ২০ লাখ কর্মপ্রত্যাশীদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে উদ্বেগ যত আছে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী দক্ষতার ঘাটতি যত উদ্বেগ তৈরি করেছে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাজেটের বরাদ্দ তেমন দৃশ্যমান নয়। ২০৩০ সালের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দক্ষতা ও কর্মসংস্থানের যে সুযোগ তৈরির কথা বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ হয়েছে তা খুব বেশি আশা জাগায় না। ১৭৬টি দেশে ১ কোটি ৪৯ লাখের অধিক কর্মী কর্মরত। কিন্তু এদের মধ্যে অধিকাংশই আধা দক্ষ, অদক্ষ; ফলে দক্ষতা গড়ে তোলার বিকল্প নেই। বাজেটে দেশে এবং বিদেশে কর্মপ্রত্যাশীদের মানসম্পন্ন শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের কথা বলা হলেও বরাদ্দের ক্ষেত্রে তার ছাপ লক্ষ করা গেল না। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দেশের সমস্ত মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার ঘটনা লক্ষ করা গেলেও বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রতিফলন সংগতিপূর্ণ নয়। ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকার বরাদ্দ প্রস্তাব গত বছরের সঙ্গে তুলনা করে দেখা যাক। গত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। বাজেট যত বড়, বরাদ্দ তত গুরুত্ব পায়নি।
বাজেটে আয় বৃদ্ধির যে সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, ব্যয় বরাদ্দের যে সব ক্ষেত্র নির্ধারণ করা হয়েছে, জনগণের ওপর ভ্যাট ট্যাক্সের পরিমাণ বৃদ্ধির যে সমস্ত পরিকল্পনা উল্লেখ করা হয়েছে তাতে এটা স্পষ্ট যে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরতে কী উদ্যোগ নেওয়া হবে তা উল্লেখ করা হয়নি। জনজীবনকে সহনীয় রাখার জন্য জনগণের টাকায় জনগণের জন্য ভর্তুকির ব্যবস্থা কেমন থাকবে, বৈষম্য কমানোর পদক্ষেপ কী হবে, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি আর আয় বৈষম্য বৃদ্ধি যে সমানতালেই চলছে তা কমানোর কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান হবে কি না, বাজেটের পরে সেটাই হবে জনগণের প্রত্যাশা।
লেখক: রাজনৈতিক সংগঠক ও কলামিস্ট
ইংরেজ কবি ও কথাসাহিত্যিক টমাস হার্ডি ১৮৪০ সালের ২ জুন পূর্ব ডচেস্টারশায়ারের হায়ার বকহ্যাম্পটন নামে একটি পল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন। রোমান্টিসিজম ঘরানার এই কবি ও ঔপন্যাসিক উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ ও চার্লস ডিকেন্সের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। ডিকেন্সের মতো তার লেখাও সেকালের ভিক্টোরীয় সমাজে সমালোচিত হয়েছিল। যদিও হার্ডি তার লেখায় তৎকালীন ক্ষয়িষ্ণু গ্রাম্য সমাজের দিকে বেশি আলোকপাত করেছিলেন। টমাস হার্ডি প্রথম দিকে নিজেকে একজন কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। পরে ঔপন্যাসিক হিসেবেও তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। তার পিতা টমাস ছিলেন একজন পাথরখোদাই শিল্পী। তার মা জেমিমা হার্ডি একজন বিদূষী নারী ছিলেন এবং হার্ডির বয়স আট বছর হওয়া পর্যন্ত তিনি তাকে বাড়িতে শিক্ষা দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় মাত্র ষোলো বছর বয়সে তাকে পড়ালেখা ছেড়ে দিতে হয়। এরপর তিনি জেমস হিকস নামের স্থানীয় এক স্থপতির কাছে শিক্ষানবিসির কাজ শুরু করেন। ১৯৬২ সালে হার্ডি লন্ডনের কিংস কলেজে ভর্তি হন। পরে তিনি স্থপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। ১৮৭৪ সালে এমা লাভিনিয়া গিফোর্ডকে বিয়ে করেন তিনি। তার লেখালেখির শুরুটা খুব অল্প বয়সে হলেও ১৮৭০ সালের পূর্বে তার কোনো লেখা প্রকাশিত হয়নি। ফার ফ্রম দ্য মডিং ক্রাউড (১৮৭৪), দ্য মেয়র অব কাস্টারব্রিজ (১৯৮৬), জুড দ্য অবসকিউর (১৮৯৫) ও টেস অব দ্য ড’আরবারভিলস (১৮৯১) তার জনপ্রিয় উপন্যাস। টমাস হার্ডি ১৯২৮ সালের ১১ জানুয়ারি ৮৭ বছর বয়সে মারা যান। তার মরদেহ দাহ করা হয়। তার দেহাবশেষ ওয়েস্ট মিনস্টার অ্যাবির পোয়েটস কর্নারে রাখা হয়েছে।
প্রতি বছরের মতো, জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য বাজেট পেশ করা হলো গতকাল। প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদিত হবে ২৬ জুন। নতুন অর্থবছর শুরু হবে ১ জুলাই।
এবারের অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। যেখানে অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ। এবারের বাজেট বক্তব্যের শিরোনামটা সুন্দর ‘উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘এবারের বাজেট গরিববান্ধব। বাজেটে কোনো ধরনের চাপ নেই। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ধরে রাখতে বাজেটে ধারাবাহিকতা থাকছে। এ ছাড়া সামাজিক বেষ্টনীর বলয় বিপুল আকারে বাড়ানো হবে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘সরকার দেশের মানুষকে ঠকাবে না। সরকার কাউকে গরিব করে কিছু অর্জন করতে চায় না। সবাইকে নিয়ে সবার জন্য আমরা বাজেটটি করেছি।’
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে জাল বিছিয়ে সাধারণ আয়ের মানুষকে আটকে ফেলা হয়েছে। রাজস্ব আদায়ে চাপ বাড়ানোর ফলে জীবনযাত্রার অনেক খাতেই খরচ বাড়বে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি কমাতেও বাজেটে রাখা হয়নি কিছু। আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারের অস্থিরতা কবে কমবে তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।
ফলে মাস-ছয়েক থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চাল, ডাল, আটা, ময়দা, ভোজ্য তেল, লবণ, চিনি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের খাবারের দাম আপাতত কমছে না। চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষাসহ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়ও কমবে না। তাহলে সাধারণ মানুষের এমন কী উপকারে আসবে এই বাজেট? কীভাবেই-বা ‘গরিববান্ধব’ বাজেট হলো এটি! এ বিষয়ে সহজ-সরলভাবে সাধারণের বোধগম্য ভাষায়, বাজেটের পজিটিভ দিকগুলো তুলে ধরা দরকার। অবশ্য যদি বোঝানোর মতন কিছু থাকে! কিন্তু এ মুহূর্তে যে প্রশ্নটি মুখ্য, সাধারণ মানুষের জন্য কী এমন ছাড় দেওয়া হলো প্রস্তাবিত বাজেটে?
বাজেট পেশের আগ থেকেই বাজারে বিভিন্ন পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পেতে থাকে। এবারও তাই হয়েছে। অথচ প্রস্তাবিত বাজেটে থাকার কথা ছিল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য হ্রাসের বিষয় ছাড়াও নিউজপ্রিন্ট আমদানিসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ককর প্রত্যাহার করার কথা। কিন্তু তা হয়নি। তাহলে এই বাজেট কীভাবে গরিববান্ধব হলো!
এখনো সাধারণ চিন্তার মানুষ পরিষ্কার না, উত্থাপিত এই বাজেটের মাধ্যমে কীভাবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে? সত্যিকার অর্থে, দেশের মানুষকে ভালোবাসতে হলে, তাদের মৌলিক অধিকারের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সাধারণ মানুষের যন্ত্রণা এবং সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করা একটি গণতান্ত্রিক ও দেশপ্রেমিক সরকারের প্রধান দায়িত্ব।
দেশের সিংহভাগ মানুষ বাজেটের মারপ্যাঁচ বোঝে না। তারা দেখতে চায়, স্বাভাবিক জীবনযাপনে কোনো সমস্যা তৈরি হচ্ছে কি? দ্রব্যমূল্যের কঠিন যন্ত্রণা থেকে সে মুক্তি পাচ্ছে কি? মোদ্দা কথা, জীবনযাপনে কোনো ধরনের বাড়তি চাপের মুখোমুখি হচ্ছে কি? যদি তা না হয়, মনে রাখতে হবে এই চাওয়া খুবই সামান্য।
উত্থাপিত বাজেটের মাধ্যমে কি স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট সোসাইটি এবং স্মার্ট ইকোনমি-সম্পন্ন একটি দেশ গড়ে তোলা সম্ভব? আমাদের প্রত্যাশা থাকবে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে প্রথম চূড়ান্ত বাজেট যেন হয় জনবান্ধব।
সমস্ত অর্থনৈতিক কর্মকা-ের মধ্যে কিন্তু সাধারণ মানুষের চাওয়াকেই প্রাধান্য দিতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।
জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারে বাংলাদেশ দল। যে সিরিজে চট্টগ্রামে ঘরের মাঠে টাইগাররা ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। আর এই সিরিজে পরাজয়ের পেছনে বড় কারণ অধিনায়ক তামিম ইকবাল! এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ দলের বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ শেষে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম। একদিন পরে অবশ্য অবসর ভাঙলেও সেই সিরিজ আর খেলেননি তিনি। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় কিস্তিতে সাকিব সেই সিরিজ হারের দায় দিলেন তামিমের ওপরই।
'আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ হারটা আমি পুরোপুরি একজনকে দায় দেব, অধিনায়ক। এক ম্যাচ পরে আমাদের হাতে আরও দুই ম্যাচ ছিল। আমরা তৃতীয় ম্যাচে ঠিকই কামব্যাক করেছি কিন্তু একটা ম্যাচ সময় লেগেছে আমাদের। সুতরাং এটা আর কারো দায় নয়, পুরো সিরিজটায় দায় একজনের ওপর। বিশ্বের কোথাও অন্তত দেখিনি যে এক ম্যাচ পরেই এরকম অধিনায়ক এসে ইমোশনালি বলে ফেলেন যে আমি ভাই খেলব না আর ক্রিকেট।’
সাকিব বলেন, 'আমার ধারণা যদি কোনো অধিনায়কের দায়িত্ববোধ থাকত, সে এটা করতে পারত না। আমার কাছে মনে হয়, এটা দলকে অনেক বাজে একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে এবং আমার মনে হয় ওইটাই এখনো রিকভার করতে সময় লাগছে, যেটা আমি অনুভব করি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।