
আমরা যখন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ি, তখন একটি সিনেমার গান খুব হিট করেছিল, সিনেমার নামটি সম্ভবত ‘অশিক্ষিত’। নায়িকা গ্রাম থেকে ঢাকার সৌন্দর্য দেখে অভিভূত হয়েছে। গানটি ছিল ‘ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাইছে, লাল লাল নীল নীল বাত্তি দেইখা পরান জুড়াইছে...।’ একবার এক এনজিও নেতা বলেছিলেন, নারী পল্লীতে অপুষ্টিতে ভোগা মেয়েরা ঠোঁটে লাল লিপস্টিক লাগিয়ে পুরুষ আকর্ষণের চেষ্টা করে, কিন্তু তাদের শরীরে রয়েছে অপুষ্টির ছাপ। ঢাকা সিটির সেই সময়কার সাজানোকে অপুষ্টিতে ভোগা মেয়েদের ঠোঁটের লাল লিপস্টিকের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন ওই এনজিওকর্মী, আমরা তখন বিশ^বিদ্যালয় থেকে সবেমাত্র বেরিয়েছি। এসব এখন পুরনো কথা। ঢাকায় শুধু লাল লাল নীল নীল বাতি নয়, এখানে রয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকার ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল। নির্মাণ করা হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। সিটির অনেক রাস্তাই এখন অর্ধ পশ্চিমা দেশের মতো। রয়েছে শত শত মাল্টিস্টোরেজ বিল্ডিং। গ্রামের অবস্থাও আগের মতো নেই। অনেক পরিবর্তন হয়েছে। পরিবহন ব্যবস্থাও উন্নত হয়েছে অনেক। এসব পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একটি জায়গায় কিন্তু সেভাবে পরিবর্তন আসেনি, আর সেটি হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষা ক্ষেত্রে সুষম উন্নয়ন হয়নি।
অনেক উদাহরণের মধ্যে একটি উদাহরণ যদি আমরা লক্ষ করি, তাহলে আবার সেই লিপস্টিকের কথা মনে পড়ে। এই ঢাকা সিটিতে ৩৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তার মধ্যে অনেকগুলোই টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি ছোট্ট ঘর। যেখানে ১০ থেকে ১২টি বেঞ্চ বসিয়ে পাঠদান কার্যক্রম চলে। অনেক বিদ্যালয়ে নেই খেলার মাঠ যা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির জন্য একান্ত জরুরি। অনেক বিদ্যালয়ে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই। নেই শৌচাগার এবং বর্ষাকালে মেঝে স্যাঁতসেঁতে হয়ে যায়। অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা নিজ উদ্যোগে এলাকাবাসীর সহায়তায় শৌচাগার নির্মাণ করেছেন। সমস্যা শুধু জরাজীর্ণ ভবনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। শিক্ষার সার্বিক আয়োজনেই অবহেলার ছাপ স্পষ্ট। শিক্ষানীতি অনুসারে বিদ্যালয়গুলোয় প্রতি ৩০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু গড়ে এই সংখ্যা ৪৫ জন, কোথাও কোথাও আরও বেশি। বিদ্যালয়গুলোতে সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত দপ্তরি, নিরাপত্তা প্রহরী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও আয়া নেই। ব্যবস্থাপনা কমিটির বা স্থানীয় মানুষের অনুদানে সামান্য বেতনে কোনো কোনো বিদ্যালয়ে এ ধরনের কর্মী রাখা হয়েছে। বিদ্যালয়গুলো জরাজীর্ণ, মলিন ও অপরিচ্ছন্ন। মানে সর্বত্রই দারিদ্র্য আর অবহেলার ছাপ। বেশ কিছু বিদ্যালয়ের জমি ও অবকাঠামো বেদখল হয়ে গেছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছে। এভাবে শিক্ষার সব আয়োজনেই অবহেলার ছাপ বিদ্যমান। আর তাই সহজেই অনুমেয়, এখানে কি ধরনের লেখাপড়া হয়? আর কোনো ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রম যে অনুষ্ঠিত হয় না, তা তো বোঝাই যাচ্ছে। আলো ঝিলমিল ঢাকা সিটিতে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য শিক্ষার এ ধরনের আয়োজন আমাদের অনেকটাই অবাক করে দেয়।
আমাদের দেশে বর্তমানে ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীতে রয়েছে ৩৪২টি। তার মধ্যে ২১টি বিদ্যালয়ের জমি ও চারটির ভবন বেদখল হয়ে যাওয়ার খবর পত্রিকায় দেখলাম। সংবাদটি আমাদের বিস্মিত করেছে। ছোট বাচ্চাদের বিদ্যালয় বেদখল অথচ কোনো উচ্চবাচ্য নেই! বিষয়টি আমাদের অজানা নয় যে, ক্ষমতার ছত্রছায়ায় এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরাই দখলের কাজটি করে থাকেন। রাজধানীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণের জন্য ১ হাজার ১৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। যেটি একটি প্রশংসনীয় কাজ এবং এই প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু ২০২৩ সালের এ পর্যন্ত মাত্র ১০টি বিদ্যালয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে, যা খুবই হতাশাব্যঞ্জক। পাশাপাশি এটিও বলতে হয়, বিশাল এক জনসংখ্যার শহর রাজধানী ঢাকা, এখানে মাত্র ৩৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কি যথেষ্ট? তার মানে কি আমরা বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষাকে উৎসাহিত করছি? যদি তাই করে থাকি, সেটি করলেও ভালোভাবে করতে হবে। পুরো শিক্ষার দায়িত্ব ও দেখভাল করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়, তা বহুবার এবং প্রতিদিনই প্রমাণিত হচ্ছে। অথচ বেসরকারি ব্যবস্থাপনা কিংবা সরকারি-বেসরকারি যৌথ ব্যবস্থাপনায় শিক্ষা পরিচালনা করার উদাহরণ তৈরি করা প্রয়োজন। সেটি মুখের কথায় নয় বরং কাজে প্রমাণ করতে হবে। বেসরকারি সংস্থাগুলো যখন এসব কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে যায় তখন দেখা যায় সরকারি বাধা। বিষয়টিকে স্পষ্ট করা দরকার এবং রাষ্ট্রীয় একটি সঠিক নীতি থাকা দরকার যে, মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে বেসরকারি সংস্থাগুলো কী কী করতে পারে, কীভাবে করতে পারে। শিশুদের ঠকানোর অধিকার আমাদের নেই। উপযুক্ত প্রাথমিক শিক্ষা পাওয়া তাদের অধিকার, আমরা তাদের এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারি না। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এ দুরবস্থায় প্রতীয়মান হয়, দেশের অন্যান্য এলাকা, বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের বেশির ভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থাও ভালো নয়।
১৯৭৩ সালে প্রায় ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা হয়। ২০১৩ সালের দিকেও আবারও প্রায় ৩৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করা হয়। এগুলো অত্যন্ত প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষক্ষেত্রে বৈষম্য বৃদ্ধি ও মানের উন্নয়নে আমরা এগোতে পারিনি। বিত্তবান ও সামর্থ্যবান মানুষ বিপুল অর্থ খরচ করে সন্তানদের বেসরকারি বিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন, সেটি কেবল ঢাকা সিটিতে কিংবা বড় বড় শহর ও জেলা শহরেই নয়, এটি গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত। বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষাকেও আমরা পুরোপুরি অস্বীকার করতে পারব না। তা ছাড়া তুলনা করার জন্যও সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে শিক্ষা থাকাটা একেবারে অর্বাচীন কোনো সিদ্ধান্ত নয়। কিন্তু রাষ্ট্রীয় নীতি এখানে যাই থাকুক, আমাদের শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে নিম্নআয়ের পরিবারের শিক্ষার্থীরা কিন্তু পিছিয়ে পড়ছে। কেউ কেউ বলছেন, রাজধানীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শোচনীয় অবস্থা হয়েছে মূলত দুটি কারণে। প্রথমত, এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েরা পড়ে, তাই এগুলোর দিকে তেমন রাষ্ট্রীয় নজর নেই। দ্বিতীয়ত, স্থানীয় প্রভাবশালীরা চান না সেখানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ভালোভাবে চলুক। সরকারি বিদ্যালয় উঠে গেলে তারা জমি ও ভবন অনায়াসে দখলে নিতে পারবে। শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ, খেলাধুলা ও শরীরচর্চার আয়োজন জরুরি হলেও রাজধানীর ৩৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৫২টিতেই কোনো খেলার মাঠ নেই। সব মিলিয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর এতই দুরবস্থা যে, সেখানে সন্তানদের ভর্তি করানোকে নিজেদের সম্মানহানি হিসেবে গণ্য করেন সচ্ছল অভিভাবকরা। সেদিন একজন রিকশাচালকের সঙ্গে কথা বলছিলাম। তার দুটো সন্তানই বেসরকারি বিদ্যালয়ে পড়ছে। বললাম, সরকারিতে পড়ালে তো কোনো টাকা লাগত না, তারপরও সেখানে পাঠাচ্ছেন না কেন। উত্তরে বললেন, ওইসব জায়গায় পাঠিয়ে ধরা খেয়েছি। কোনো পড়ালেখা নেই। আসলে এটিই তো বাস্তব কথা।
দিল্লির সরকারি বিদ্যালয়গুলোও একসময় জরাজীর্ণ ছিল। সংকট ছিল শিক্ষকের, শ্রেণিকক্ষ ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণের, শিক্ষার মান ছিল নিম্ন। ঢাকার মতো এসব সরকারি বিদ্যালয়েও দরিদ্র ও নিম্নবিত্তরা ছাড়া আর কেউ তাদের সন্তানদের পাঠাতে চাইতেন না। কিন্তু পরিস্থিতির পরিবর্তন শুরু হয় ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি ক্ষমতায় আসার পর। তারা স্বাস্থ্য, পানি, বিদ্যুৎ ইত্যাদি পাবলিক সেক্টরগুলোর মতো শিক্ষা খাতেও যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করতে থাকে। আম আদমি পার্টির লক্ষ্য ছিল দিল্লির সরকারি বিদ্যালয়গুলোকে এমনভাবে সংস্কার করা, যেন সেখানে পড়তে আসা শিশুদের মধ্যে গরিবের বিদ্যালয়ে পড়ার হীনম্মন্যতা না থাকে। তারা জানে, ভারতের তীব্র প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনী ব্যবস্থায় জনগণের মন জয় করেই ক্ষমতায় থাকতে হবে। এ কারণেই স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ ও পানির মতো পাবলিক সার্ভিস বা সর্বজন খাতের উন্নয়নের গুরুত্ব তাদের কাছে অপরিসীম। আমাদের দেশেও বিভিন্ন সেক্টরে প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে কিন্তু স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ ও পানির মতো সর্বজন খাতে সুলভে মানসম্পন্ন সেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা তৈরি হচ্ছে না। ফলে ক্রমাগত বাণিজ্যিকীকরণে এসব খাত থেকে সুলভে মানসম্পন্ন সেবা পাওয়ার অধিকার থেকে জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে। এ ঘটনা ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও দিল্লির শিক্ষা মডেল বিষয়ে যেমন আগ্রহ তৈরি করেছে, ভারতের বাইরেও সরকারি বিদ্যালয়ের এই ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আমরা জানি, থাকে না কোনো টয়লেট, থাকলেও দুর্গন্ধে সেগুলোতে ঢোকা যায় না। পানির ব্যবস্থা থাকে না, সর্বত্রই থাকে অব্যবস্থাপনার ছাপ। যেগুলোর দিকে দিল্লি সরকার সঠিক নজর দিয়ে পরিবর্তন এনেছে, যা থেকে আমার শিক্ষণীয় রয়েছে অনেক। যদি আমরা সেটি করতে ব্যর্থ হই, তাহলে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে কিংবা স্থানভেদে শুধু প্রাইভেট শিক্ষাকে কীভাবে মানসম্পন্ন করা যায় তার জন্য একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। এখন যে অবস্থায় চলছে এটিকে আমরা কোনোক্রমেই একটি সুষ্ঠু ও সর্বজনীন ব্যবস্থাপনা বলতে পারি না।
শিক্ষাব্যবস্থা এমন হওয়া প্রয়োজন যেন ভৌগোলিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণে কাউকে যথাযথ শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে না হয়। জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০-এ ‘সাংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশে গণমুখী, সুলভ, সুষম, সর্বজনীন, সুপরিকল্পিত, বিজ্ঞানমনস্ক ও মানসম্পন্ন শিক্ষাদানে সক্ষম শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলা হলেও দেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা সেই লক্ষ্য থেকে বহু দূরে। এমনকি শিক্ষানীতিতে যে প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বজনীন, বাধ্যতামূলক, অবৈতনিক এবং সবার জন্য একই মানের করার কথা বলা হয়েছে, সেই প্রাথমিক শিক্ষাই অর্থনৈতিক, আঞ্চলিক ও ভৌগোলিক বৈষম্যমুক্ত নয়। সরকারি, বেসরকারি এবং ইংরেজি মাধ্যমের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার খরচ ও মানের ক্ষেত্রে ব্যাপক তারতম্য। এমনকি শহরের সরকারি স্কুলের সঙ্গে গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোর শিক্ষার আয়োজনেও রয়েছে বৈষম্য। জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থে এই বৈষম্য দূর করা প্রয়োজন।
লেখক: শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক
যারা অর্থনীতির ছাত্র এবং নামকরা অর্থনীতিবিদ তাদের কাছে হয়তো শব্দটি অনেক প্রাচীন। কিন্তু আমার কাছে শব্দটি একেবারেই বোধগম্য নয়, শব্দটি হচ্ছে ‘ধনবিজ্ঞান’। এই বিজ্ঞানের সঙ্গে শাস্ত্রের কোনো সম্পর্ক নেই। অর্থনীতি একটা ব্যাপক বিষয়। পৃথিবীর বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ, কেউবা পুঁজির বিকাশের জন্য আবার কেউবা জনকল্যাণের সঙ্গে অর্থনীতিকে যুক্ত করার চেষ্টা করেছে। রাশিয়াতে লেনিন, কার্ল মার্কসের আধুনিকতার অর্থনীতিকে গ্রহণ করেছিলেন এবং রাষ্ট্রের মালিকাধীন একটি অধনতান্ত্রিক বিকাশের জন্ম দিয়ে সত্তর বছর সারা পৃথিবীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো শুধু নয়, উন্নত বিশ্বের শ্রমিকের অধিকারও অর্জন করতে সাহায্য করেছে। কিন্তু এই অর্থনীতির বিরুদ্ধে ধনবিজ্ঞানীরা নতুন সব পন্থা আবিষ্কার করে। যার মধ্যে কার্ল মার্কসের অনুলক্ষিত বিপণনকে ব্যবহার করতে থাকে। ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে সব বড় বড় আবিষ্কার প্রযুক্তির অভাবিত উন্নতি লাভ করে। ইতিমধ্যে রাশিয়ার মতো আরেকটি বিরাট দেশ চীনেও বিপ্লব সাধিত হয়। সেখানকার অর্থনীতিবিদরা এই অধনবাদী বিকাশ এবং রাষ্ট্রগুলোর একটা বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করে। মানুষের জীবনযাপনে জ্ঞান-বিজ্ঞানে একটা বড় চর্চা সেখানেও আমরা দেখতে পাই। এর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে উন্নত ও অনুন্নত বিশ্বে একটা নতুন অর্থনীতির সূচনা হয়। কিন্তু ধনবিজ্ঞানীরা নব আবিষ্কৃত বিপণনের মাধ্যমে মানুষের লোভ-লালসা ও আকাক্সক্ষার ব্যাপক পরিবর্তন করে ফেলেছে। এই দুই দেশের একটিতে স্ট্যালিনের মৃত্যুর আগে থেকেই এক ধরনের সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের সূচনা হয় এবং অন্যদিকে চীনে মাও সে-তুংয়ের মৃত্যুর পর ব্যক্তিগত সম্পত্তির আকাক্সক্ষার একটি চূড়ান্ত রূপলাভ করতে থাকে। এই পর্যায়ে পশ্চিমা এবং প্রাচ্যে ধনবিজ্ঞানীদের সঙ্গে তথ্যবিজ্ঞানীদের একটা সমন্বয় হয়।
বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের প্রথম দিকে যেমন ব্যাপকভাবে কলকারখানা, ব্যাংক, বিমা রাষ্ট্রীয়করণ শুরু হয়েছিল, পঁচাত্তরের পটপরিবর্তন এবং সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের পর পরিস্থিতির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। এ দেশের সাম্যবাদী দলগুলোর কেউ কেউ সামরিক শাসনের কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে। তারাও জাতীয়তাবাদী নামে মূলত পুঁজির সেবাদাস হয়ে পড়ে। এ সময়ে জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে জনগণের সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়। ফলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দলগুলো রাষ্ট্রক্ষমতার অংশীদার হয়ে পড়ে। এই জোটের অন্যতম অংশ স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে হাত মেলায় এবং আন্তর্জাতিক পুঁজির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে। বিভিন্ন দাতাসংস্থা এবং বেসরকারি সংস্থাগুলো ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠতে থাকে। আশির দশকে আন্দোলনের পরিণতিতে সামরিক শাসনের অবসান হলেও ধনবিজ্ঞানী ও তথ্যবিজ্ঞানীরা ক্রমে শক্তিশালী হয়ে পড়ে। এই সময়ে যে সাংস্কৃতিক আন্দোলন সেই প্রতারণাকারী পাকিস্তানি সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়েছিল এবং লড়াই করে বাংলাদেশকে অর্জন করেছিল তাদের সঙ্গে এক ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা শুরু করে। সংস্কৃতি ক্রমে দুর্বল হয়ে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারকে গ্রহণ করে। সেই ব্যবহারের প্রক্রিয়া এখনো চলছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বাঙালির সংস্কৃতির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল। কিন্তু কালক্রমে তারাও দুর্বল হতে থাকে। যার ফলে দেশে মাদ্রাসা শিক্ষার প্রসার এবং মৌলবাদী দলগুলোর সঙ্গে আপসের পথে নামে। আজকাল ক্ষমতাসীন দলে অধিকাংশ নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরণের পোশাকের প্রভাব বেড়ে চলেছে এবং গ্রামাঞ্চল থেকে শুরু করে শহর পর্যন্ত সেই পোশাকের প্রচলন বেড়ে চলেছে। অত্যন্ত দুঃখজনক, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীসহ নানান সাংস্কৃতিক সংগঠন এই ক্ষেত্রে দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। এক সময় যে বাংলাদেশে বাঙালির জাতীয় উৎসবগুলোতে এই প্রতিষ্ঠানগুলো সক্রিয় উপস্থিতি প্রবলভাবে লক্ষ্য করা গিয়েছিল, তারাও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। অন্যদিকে যেসব সংগঠন মৌলবাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত তারা গ্রামাঞ্চলে বাড়িতে বাড়িতে নানাভাবে তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যায়। বিশেষ করে এদের কর্মকা-ের জায়গা হচ্ছে নারী। নারীদের মধ্যে এদের কর্মতৎপরতা নানাভাবে বাড়তে থাকে। এরই সঙ্গে ধর্মভিত্তিক এনজিওগুলো নানা রকম প্রণোদনা দিয়ে মাদ্রাসাভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করে ফেলে। এর মধ্যে একটি বড় ঘটনা ঘটে চট্টগ্রামভিত্তিক হেফাজতে ইসলামের। যারা রাজধানীকে অধিকার করে ফেলেছিল। বর্তমান সরকার অনেকটাই বলপ্রয়োগ করে সেই অন্যায় আন্দোলনকে পর্যুদস্ত করতে সক্ষম হয়েছিল বটে, কিন্তু তাদের সঙ্গে এক ধরনের আপসরফায় মিলিত হয়। যার ফলাফল অত্যন্ত ভয়ংকর হয়ে গিয়েছিল, যখন শিক্ষাব্যবস্থায় তাদের দাবিদাওয়াকে মেনে নেওয়া হয়েছে। যদিও এসব প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে যারা থাকেন, একটা পর্যায়ে তারা বিভক্ত হয়ে যায়। কিন্তু প্রচুর অর্থ বিনিয়োগকারী এসব প্রতিষ্ঠান কখনো দমে যায় না। তারা তাদের কর্মসূচির ব্যাপকতা চালিয়ে যান। এর প্রতিফলন দেখা যায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এরা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, মেডিকেল হাসপাতাল, ব্যাংক, বিমা এসবকে ইতিমধ্যে দখল করে ফেলেছে। মেধাবী ছাত্রদের একটা বড় অংশকে তারা নানা ধরনের প্রণোদনা দিয়ে তাদের মাঝে টেনে নিয়েছে। ফলে একটা বড় অংশ দেশের সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ করতে শুরু করে। বাংলার স্কুলগুলোতে নানাভাবে তারা ঢুকে পড়েছে এবং একটি শিশুর আদর্শ পাঠকেও তারা কব্জা করে ফেলেছে।
যারা ক্ষমতাসীন তাদের উত্থানও হয়েছে, বাঙালির সংস্কৃতির দ্বারা। কিন্তু তারা ধর্মীয় উপসনালয় নির্মাণে হঠাৎ উৎসাহী হয়ে উঠল কিন্তু মিলনায়তন, নাট্যশালার উন্নয়ন, গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা এসব ব্যাপারে উৎসাহী হলো না। খোদ ঢাকা শহরেও মিরপুর, উত্তরা, গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি এসব এলাকায় তারা গ্রন্থাগার নির্মাণে কোনো রকম উদ্যোগ না নিয়ে দেশে অন্য কিছু নির্মাণে তাদের উৎসাহ অপরিসীম। এসব উপসনালয় কমপ্লেক্সে যেসব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে তাতে বাঙালি সংস্কৃতির কোনো প্রণোদনা নেই। বরং মৌলবাদীদের ব্যাপারে উৎসাহ সর্বত্র দৃশ্যমান। গত কয়েক বছরে বাজেটের দিকে যদি আমরা তাকাই একটা চিত্রই দেখতে পাব যে, সংস্কৃতির উন্নয়নে সরকারের অনেক ব্যয় সর্বত্র বিদ্যমান। অবকাঠামো নির্মাণে সার্বক্ষণিক সংস্কৃতিকর্মীদের প্রণোদনার বিষয়ে সরকারের আগ্রহ নিতান্তই কম। একবার সামরিক শাসনামলে সংস্কৃতির বাজেটের ব্যাপারে এক সচিবের মুখোমুখি হয়েছিলাম সেটা বহু বছর আগে। একজন পাকিস্তানি আমলা তখন সচিব ছিলেন এবং তিনি অত্যন্ত উচ্চকণ্ঠে বলছিলেন একটা দরিদ্র দেশে সংস্কৃতির অগ্রাধিকার কি হতে পারে? মানুষকে খাওয়ানোটাই আমাদের অগ্রাধিকার, যার জন্য ফুড ফর ওয়ার্কস একমাত্র ব্যবস্থা। আমরা ফুড ফর ওয়ার্কসের একটা তীব্র সমালোচনা করেছি। বলেছিলাম, মানুষ কি শুধু খেয়ে বাঁচে, আর কিছুর কি প্রয়োজন নেই? তৃতীয় বিশ্বের দেশের মানুষগুলো শুধু দিন শেষে কয়েক কেজি গম খেয়ে বেঁচে থাকবে, তাদের কি আর কিছুর প্রয়োজন হবে না? বস্ত্র, চিকিৎসা এবং সংস্কৃতি এসবের দরকার নেই? ওই সচিব তখন আলোচনাসভা বন্ধ করে চলে গেলেন। এটাই আমাদের ভবিতব্য! এখনো আমাদের রাজনীতিবিদরা বোঝেন যে, সংস্কৃতি মানেই নাচ, গান, নাটক ইত্যাদি। কিন্তু ১৯৭২ সাল থেকে যে নাটক এ দেশে শুরু হয়েছে তার মধ্য থেকে কিছুই কি বোঝার নেই? যদিও এ দেশের রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী এরা নাটক দেখতে আসেন না, কিংবা তারা বোঝেনও না। এদিকে শিক্ষকরা অর্থ উপার্জনের প্রতি কোচিং সেন্টার গড়ে তুলে তাদের সেই দিগন্ত ভুলিয়ে দিয়েছে। আর রাজনীতিবিদদের এসব দেখার সময়ই নেই। শিক্ষকদেরও সেই সময় হয় না, তারা এটাকে নিছক বিনোদন বলেই মনে করে। কিন্তু দেশের শত শত নাট্যকর্মী এই সমস্যাগুলোকে বোঝাবার চেষ্টা করছেন, কোনো লাভ হচ্ছে না। এরা বিনোদনেই উৎসাহী। ব্যবসায়ী সমৃদ্ধ আমাদের সংসদ সদস্যরা জীবনে কয়টা বই, কয়টা নাটক বা কতগুলো গান শুনেছেন এটাও প্রশ্নবিদ্ধ! বাংলাদেশের অসংখ্য ক্লাবে তারা যান, অশ্রাব্য সংগীত তারা উপভোগ করেন এবং দিন শেষে তাদের কোনো ভাবনার জায়গা তৈরি হয় না। তারা ধনবিজ্ঞানী এবং তথ্যবিজ্ঞানীদের কথা শোনেন। এ দেশ ছবির দেশ, গানের দেশ, নাটকের দেশ সে দেশের কোনো ভাবনাকে তারা গ্রহণ করেন না, কারণ তারা ধনবিজ্ঞানী এবং তথ্যবিজ্ঞানের মধ্যে আটকে আছেন।
লেখকঃ অভিনেতা, নাট্যকার ও কলাম লেখক
বাঙালির প্রায় প্রতি ঘরে সকাল শুরু হয় ধোঁয়া ওঠা এক কাপ গরম চা দিয়ে। এই চা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি দ্রব্য, যা দীর্ঘকাল থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হিসেবে বিবেচিত। বর্তমানে এই শিল্পে প্রায় দেড় লাখ লোক কর্মরত।
বাংলাদেশের চায়ের অধিকাংশ চারাই সংকর ও বিমিশ্র এবং সেগুলোর চারিত্রিক ভিন্নতাও রয়েছে। বেশির ভাগ চা অবশ্য গাঢ় রঙের পাতার জাত। বাংলাদেশে চা চাষের সফল ও উৎপাদনশীল উন্নয়নে বনও একটি উপযোগী ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের রয়েছে, আবহমানকালের প্রাকৃতিক বন ও রোপিত বনভূমি। এখানকার প্রাকৃতিক বনগুলো গ্রীষ্মম-লীয় আধা-চিরহরিৎ ধরনের। বনাঞ্চলগুলো প্রধানত উচ্চভূমিতে এবং চা বাগানগুলোর অধিকাংশই উঁচু-নিচু পাহাড় ও উপত্যকায় অবস্থিত।
সংগ্রহ করার পর চায়ের পাতা কারখানায় প্রক্রিয়াজাত করা হয়। বাংলাদেশে কালো চা সর্বাধিক জনপ্রিয় ও ব্যাপক ব্যবহৃত পানীয়। চা তৈরির মূল কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে- চায়ের কুঁড়ি সংগ্রহ, প্রসেসিং, রোলিং, গাঁজন, শুকানো, সেঁকা, মান অনুুযায়ী পৃথকীকরণ ও প্যাকিং। সংগৃহীত চা পাতা অর্থাৎ দুটি পাতা একটি কুঁড়ির গুণাগুণের ওপর মানসম্পন্ন চা তৈরি বহুলাংশে নির্ভরশীল।
চা শিল্পে বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদান ও চা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে তার যোগদানের তারিখকে স্মরণীয় করে রাখতে এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে চা শিল্পের ভূমিকা বিবেচনায় ৪ জুন ‘জাতীয় চা দিবস’ ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশ চা বোর্ডের উদ্যোগে ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, চা শিল্পের প্রসার’ সেøাগান নিয়ে গত ৪ জুন ২০২১ তারিখে বর্ণাঢ্য আয়োজনে দেশের সব চা উৎপাদনকারী অঞ্চলে উদযাপিত হয় প্রথম জাতীয় চা দিবস।
বঙ্গবন্ধু চা বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালীন মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকায় সরকার কর্র্তৃক বরাদ্দকৃত ০.৩৭১২ একর ভূমির ওপর চা বোর্ডের প্রধান কার্যালয় নির্মাণকাজ ত্বরান্বিত হয়। তিনি ১৯৫৭ সালে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে টি রিসার্চ স্টেশনের গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করে উচ্চ ফলনশীল জাতের ক্লোন চা গাছ উদ্ভাবনের নির্দেশনা প্রদান করেন। চায়ের উচ্চ ফলন নিশ্চিত করতে সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এবং শ্রীমঙ্গলস্থ ভাড়াউড়া চা বাগানে উচ্চ ফলনশীল জাতের চারা রোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। তিনি ‘টি অ্যাক্ট-১৯৫০’ সংশোধনের মাধ্যমে চা বোর্ডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড চালু করেছিলেন, যা এখনো চালু রয়েছে।
১৮০০ শতাব্দীর প্রথম ভাগে ভারতবর্ষের আসাম ও তৎসংলগ্ন এলাকায় চা চাষ শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার কর্ণফুলী নদীর তীরে চা আবাদের জন্য ১৮২৮ সালে জমি বরাদ্দ হয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেখানে চা চাষ বিলম্বিত হয়। ১৮৪০ সালে চট্টগ্রাম শহরের বর্তমান চট্টগ্রাম ক্লাব সংলগ্ন এলাকায় একটি চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যা কু-দের বাগান নামে পরিচিত। এই বাগানটিও প্রতিষ্ঠার পরপরই বিলুপ্ত হয়ে যায়। অতঃপর ১৮৪৭ সালে সিলেট শহরের এয়ারপোর্ট রোডের কাছে মালনীছড়া চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়। মূলত মালনীছড়াই বাংলাদেশের প্রথম বাণিজ্যিক চা বাগান।
রবার্ট ব্রুস আসামের উঁচু অঞ্চলে চা গাছের সন্ধান পান। এরপর ১৮৫৫ সালে সিলেটের চাঁদখানি টিলায় দেশীয় জাতের চা গাছের সন্ধান মেলে। একই সময়ে খাসি ও জৈন্তা পাহাড়েও বন্য প্রজাতির চা গাছের সন্ধান পাওয়া যায়। ১৮৪০ সালে চট্টগ্রামেও চা উৎপাদন শুরু হয়। এখানে চা উৎপাদনের জন্য চীন থেকে চারা আমদানি করা হয় এবং কলকাতা বোটানিক্যাল গার্ডেনে উৎপাদিত চীনা প্রজাতির চা গাছ রোপণ করা হয়। প্রথমদিকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে চা বাগান প্রতিষ্ঠা শুরু হয়। কিন্তু উনিশ শতকের ষাটের দশকে ব্যাপক মন্দায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে চা বাগান প্রতিষ্ঠার তৎপরতা বন্ধ হয়ে গেলে চা শিল্প ধীরে ধীরে বড় বড় কোম্পানির আয়ত্তে চলে আসে।
ওই মন্দার পর সিলেটের চা শিল্পে জেমস ফিনলে নিরঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। তবে উনিশ শতকের শেষ দিক হতে ক্ষুদ্র একটি দেশীয় উদ্যোক্তা শ্রেণি চা শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। তবে দেশীয় উদ্যোক্তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হলেও বিদেশি কোম্পানিগুলোর আধিপত্য কখনই বিঘ্নিত হয়নি। কারণ প্রযুক্তিগত জ্ঞান এবং চা বিপণনের জন্য দেশীয় চা করদাতারা ইউরোপীয়দের ওপরই নির্ভর করত। তবে এই শিল্পের মাধ্যমেই দেশীয় ও বিদেশি উদ্যোক্তাদের মধ্যে এক ধরনের সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
দেশ স্বাধীনের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশে শুধু দুটি জেলায় চা আবাদ করা হতো, একটি সিলেট জেলায়, যা ‘সুরমা ভ্যালি’ নামে পরিচিত ছিল, আর অপরটি চট্টগ্রাম জেলায় যা ‘হালদা ভ্যালি’ নামে পরিচিত ছিল। বর্তমানে বৃহত্তর সিলেটের সুরমা ভ্যালিকে ছয়টি ভ্যালিতে ভাগ করা হয়েছে। যথাক্রমে : লস্করপুর ভ্যালি, বালিশিরা ভ্যালি, মনু-দলই ভ্যালি, লংলা ভ্যালি, নর্থ সিলেট ভ্যালি এবং হালদা ভ্যালিকে চট্টগ্রাম ভ্যালি করা হয়েছে।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চা বাগানগুলো প্রায় বিধ্বস্ত হয়ে যায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই শিল্পকে টেকসই খাতের ওপর দাঁড় করানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি স্বাধীনতার পর ‘বাংলাদেশ টি ইন্ডাস্ট্রিজ ম্যানেজমেন্ট কমিটি (BTIMC)’ গঠন করে যুদ্ধোত্তর মালিকানাবিহীন/পরিত্যক্ত চা বাগান পুনর্বাসন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এ ছাড়াও যুদ্ধে বিধ্বস্ত পরিত্যক্ত বাগানগুলোকে ১৯৭৫ সালের জুলাই মাসের মধ্যে বাগান মালিকদের কাছে পুনরায় হস্তান্তর করেন।
তিনি স্বাধীনতার পরই ধ্বংসপ্রাপ্ত চা কারখানাগুলো পুনর্বাসনের জন্য ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া’ থেকে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে চা শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। চা শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষায় সরকার চা উৎপাদনকারীদের নগদ ভর্তুকি প্রদান করার পাশাপাশি ভর্তুকি মূল্যে সার সরবরাহের ব্যবস্থা করে। ওই সার সরবরাহ কার্যক্রম এখনো অব্যাহত রয়েছে। তিনি চা শ্রমিকদের শ্রমকল্যাণ নিশ্চিত করেন; যেমন বিনামূল্যে বাসস্থান, সুপেয় পানি, বেবি কেয়ার সেন্টার, প্রাথমিক শিক্ষা এবং রেশন প্রাপ্তি। তিনি ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ টি রিসার্চ স্টেশনকে পূর্ণাঙ্গ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটে উন্নীত করেন। বর্তমানে তা বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (BTRI) নামে পরিচিত।
বর্তমানে বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপের কারণে চা শিল্পের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। ১৯৭০ সালে চা উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩১.৩৮ মিলিয়ন কেজি। ২০১৬ সালে ৮৫.০৫ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়, ২০১৮ সালে ৮২.১২ মিলিয়ন কেজি এবং ২০১৯ সালে রেকর্ড পরিমাণ ৯৬.০৭ কেজি এবং ২০২০ সালে ৮৬.৩৯ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়। এ ছাড়া ২০২০ সালে রেকর্ড পরিমাণ ২.১৭ মিলিয়ন কেজি চা রপ্তানি হয়। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে চা আমদানির প্রয়োজন হবে না বরং রপ্তানির ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হবে।
১৯৭০ সালে বাংলাদেশে চা বাগানের সংখ্যা ছিল ১৫০টি, বর্তমানে চা বাগানের সংখ্যা ১৬৭টি। বর্তমানে দেশে দুটি চা নিলাম কেন্দ্র চট্টগ্রাম নিলাম কেন্দ্র এবং শ্রীমঙ্গল নিলাম কেন্দ্র রয়েছে। এ ছাড়াও ২০০২ সাল থেকে চা বোর্ড কর্র্তৃক গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, দিনাজপুর এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলায় ক্ষুদ্রায়তন চা আবাদ শুরু হয়েছে এবং ব্যাপক সফলতা লাভ করেছে। এ ছাড়া সরকার বাংলাদেশ চা শিল্পের উন্নয়নের জন্য ১১টি কর্মকৌশল অন্তর্ভুক্ত করে ‘উন্নয়নের পথনকশা : বাংলাদেশ চা শিল্প’ শিরোনামে একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে, যা আগামীতে দেশের চা শিল্পকে আরও এগিয়ে নিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক
খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার বড় ডাঙ্গা গ্রাম এখন ‘বড় ডাঙ্গা মডেল’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। এই পরিচিতি এসেছে, চিংড়ি চাষ করে। মূলত মৎস্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারণ কাজের সফলতার সর্বশেষ সাফল্য ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ। এর ফলে অধিকাংশ মৎস্য চাষি সনাতন পদ্ধতির বদলে, ক্লাস্টার পদ্ধতিতে ঝুঁকে পড়ছেন। তাতে চিংড়ি উৎপাদন যেমন বাড়ছে, তেমনি পাওয়া যাচ্ছে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত মাছ। একই সঙ্গে পরিবেশেরও কোনো ধরনের ক্ষতি হচ্ছে না।
আগে সনাতন পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করার ফলে উৎপাদন যেমন কম হচ্ছিল, তেমনি নিয়মিতভাবেই লেগে থাকত রোগবালাই। যে কারণে চিংড়ি চাষে লোকসানের মুখে পড়তেন চাষিরা। ক্রমেই তাদের মধ্যে চিংড়ি চাষে অনীহা বাড়তে থাকে। এমন অবস্থাতেই এগিয়ে আসে উপজেলা মৎস্য দপ্তর। দায়িত্বপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা এলাকার ২৫ জন চাষিকে নিয়ে তৈরি করেন, ক্লাস্টার বা দল। বিশ^ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার আর্থিক সহযোগিতায় মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত এসটিডিএফ প্রকল্পের মাধ্যমে ওয়ার্ল্ড ফিশের সহযোগিতায় এই অঞ্চলের ২টি ক্লাস্টারে ৫০ জন চাষিকে একত্রিত করে, সনাতন পদ্ধতির বদলে আধুনিক প্রযুক্তি ও পদ্ধতির সমন্বয়ে লাভজনক ও নিরাপদ চিংড়ি চাষের কলাকৌশল শেখানো হয়। ফলে অল্পদিনেই চাষিরা দেখতে পান লাভের মুখ। ক্রমেই তাদের মধ্যে ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষে ব্যাপক উৎসাহ দেখা দেয়।
অন্যদিকে, সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের আওতাধীন গঠিত ৩০০ ক্লাস্টারের সাড়ে সাত হাজার চিংড়ি চাষি বিপর্যয়ের মধ্যেও ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন। শুক্রবার দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত ‘চিংড়ি চাষের আশা ক্লাস্টার পদ্ধতি’ সংবাদের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, সনাতন পদ্ধতিতে বেশ কয়েক বছর ধরে চিংড়ি চাষে লাভের মুখ দেখতে পারছেন না অধিকাংশ চাষি। জলবায়ুর প্রভাব, রোগবালাইসহ নানাবিধ কারণে উৎপাদনের আগে চিংড়ি মারা যাওয়ায় ক্রমাগত লোকসানে আর্থিক বিপর্যয়ে পড়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক লাখ চাষি। চিংড়ি চাষিরা যখন হতাশায় দিন পার করছে, ঠিক তখনই মৎস্য অধিদপ্তর তাদের সংগঠিত করে দেখিয়েছে নতুন সম্ভাবনা ও আশার আলো। প্রকাশিত সংবাদে আরও বলা হয়েছে সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মাছ চাষিদের সুসংগঠিত করে ৩০০ ক্লাস্টারকে প্রকল্পভুক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি ক্লাস্টারে রয়েছে ২৫টি ঘের। যেসব ঘেরের আয়তন ৩৩ থেকে ১৫০ শতক।
প্রকল্পের নির্দেশনা অনুযায়ী, ঘের প্রস্তুতির পর ক্লাস্টারগুলোকে ম্যাচিং গ্র্যান্ট (আর্থিক অনুদান) পাওয়ার জন্য আবেদন করতে বলা হয়। ক্লাস্টারভুক্ত চাষিদের একর (১০০ শতক) প্রতি অফেরতযোগ্য ১ লাখ ৮১ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে। যে অনুদান দিয়ে তারা খনন ও রাস্তা নির্মাণ বাদে পোনা মজুদ, ঘের প্রস্তুত, গুড অ্যাকোয়া প্র্যাকটিস, বিদ্যুৎ সংযোগ, অফিস কক্ষ নির্মাণ, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয়সহ যাবতীয় খরচ মেটাবেন।
এখন অনুদান পাওয়া ক্লাস্টারগুলো ভালো উৎপাদনের স্বপ্ন নিয়ে পোনা মজুদের প্রস্তুতি নিচ্ছে। চিংড়ি চাষিদের মধ্যে দেখা গেছে নতুন প্রাণচাঞ্চল্য। কারণ এর ফলে চাষিদের আয় বেড়েছে। কমেছে চিংড়ি চাষের ঝুঁকি। আবার কোনো ধরনের রোগবালাইও নেই।
এমন কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, দক্ষিণ উপকূলের সব চাষিকে সুসংগঠিত করে ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণ করতে পারলে কৃষি অর্থনীতিতে খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিপ্লব ঘটবে। কারণ এতদিন সনাতন পদ্ধতিতে হচ্ছিল চিংড়ি চাষ। সেখানে ক্লাস্টারের কোনো ধারণা ছিল না।
এর ফলে চিংড়ি চাষিদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা কাজ করছিল। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি আমূল পাল্টে গেছে। পরিবেশবান্ধব এই ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চিংড়ি উৎপাদন বাড়িয়ে, বাংলাদেশ বিশে^র শীর্ষস্থানে থাকবে এমনটি প্রত্যাশা থাকল।
১৯৬৯ সালের ৩ জুন ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও ভাষাবিজ্ঞানী মুহাম্মদ আবদুল হাই। তার জন্ম ১৯১৯ সালের ২৬ নভেম্বর মুর্শিদাবাদে। তার বাবা আব্দুল গণি ও মা ময়মুন্নেসা খাতুন। ১৯৩৬ সালে তিনি রাজশাহী হাই মাদ্রাসা থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৩৮ সালে ঢাকা ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪১ সালে তিনি বাংলায় বিএ অনার্স এবং ১৯৪২ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর তিনিই ছিলেন বাংলা বিভাগের প্রথম মুসলমান ছাত্র। ১৯৪২ সালে তিনি বাংলার লেকচারার পদে বেঙ্গল জুনিয়র এডুকেশন সার্ভিসে যোগ দেন। ১৯৪৩ সালে তিনি কৃষ্ণনগর কলেজ এবং ১৯৪৭ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজে অধ্যাপনায় যোগ দেন। ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ লাভ করেন। ১৯৫০ সালে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাতত্ত্ব অধ্যয়ন ও গবেষণার জন্য যান এবং ১৯৫২ সালে ডিস্টিংশনসহ এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। তার অভিসন্দর্ভটি ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয়। ১৯৬২ সালে বিভাগে ফিরে এসে প্রথমে তিনি যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে বাংলা বিভাগকে পুনর্গঠিত করেন। তার আগ্রহে সৈয়দ আলী আহসান, মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আহমদ শরীফ, আনিসুজ্জামান, আবু হেনা মোস্তফা কামাল প্রমুখ কীর্তিমান শিক্ষক বাংলা বিভাগে যোগদান করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি বাংলা বিভাগের রিডার ও অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। গবেষণার ক্ষেত্র প্রশস্ত ও প্রসারের লক্ষ্যে তিনি ‘সাহিত্য পত্রিকা’ প্রকাশ করেন, যা খ্যাতি লাভ করে।
সাত বছর পর ভারতের মাটিতে অবতরণ পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে তারা গিয়েছিল সেখানে। তারপর এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে। টুর্নামেন্ট শুরুর এক সপ্তাহ আগে তারা পৌঁছালেন দেশটিতে। সেখানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হোটেলে।
বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বাবর আজমরা সেখানে পৌঁছানো মাত্রই উচ্ছ্বসিত জনতা ভিড় করেন। হায়দ্রবাদের বিমানবন্দরের বাইরে তাদের দেখে অনেকেই চিৎকার করে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন। বাবরের নাম উচ্চারণ করতও শোনা গেছে এসময়। পুলিশ উৎসুক জনতাকে আটকে রেখেছিল।
রাজনৈতিক বৈরি সম্পর্কের কারণে দুই দলের দেখা হয় না দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজে। বিশ্ব মাতানো ক্রিকেটার থাকলেও পাকিস্তানিরা খেলতে পারে না আইপিএলে। কারণ ঐ একটাই। তবে বৈশ্বিক বা মহাদেশীয় ইভেন্টে তাদের ঘিরে আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। সেটা দেখা গেছে এশিয়া কাপেও।
বিশ্বকাপ খেলতে আজ বাংলাদেশ উড়াল দিয়েছে ভারতে। সেই টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখে টাইগাররা। তামিম ইকবাল নেতৃত্ব ছাড়ার পর সাকিব আল হাসানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে অধিনায়কত্বের ভার। আর আজই জানা গেল, বিশ্বকাপের পর একদিনও তিনি অধিনায়কত্ব করবেন না।
গত ১১ আগস্ট তৃতীয় দফায় ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান। তখনই বলা হয়েছিল, সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপ ও ভারত বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
দেশের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এই বিশ্বকাপই শেষ। এরপর একদিনও (অধিনায়কত্ব) করবো না। যে কারণে আমি এশিয়া কাপের আগে নিতে চাইনি। এরপরও এটা না। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি হাসতে চাই, খেলতে চাই, পারফর্ম করতে চাই। এই একটা কারণে আমি করতে চাইনি।’
সাকিব যোগ করেন, ‘আর কোনে কারণ নেই। বেস্ট হয় যদি অধিনায়ক না থাকি। অধিনায়কত্ব কি আমার কোনো ভেল্যু এড করতেছে ক্যারিয়ারে এই স্টেজে এসে? আমি তো মনে করি না।’
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
বিশ্বকাপে তামিম ইকবালকে ওপেন থেকে সরিয়ে মিডল অর্ডারে ব্যাট করার প্রস্তাব দিয়ে ফোন করেছিলেন, তামিমের ভাষায় 'বোর্ডের টপ লেভেল' এবং 'ক্রিকেটের সাথে বেশ ইনভলভড' একজন।
তিনি তামিমকে বলেন, ''তুমি তো বিশ্বকাপে যাবা, তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলতে হবে। তুমি এক কাজ করো। তুমি প্রথম ম্যাচ খেলো না আফগানিস্তানের সঙ্গে।'
তিনি আবার বলেন, আচ্ছা তুমি যদি খেলোও, আমরা এমন একটা পরিকল্পনা করছি, তুমি যদি খেলোও, তাহলে নিচে ব্যাট করবে।''
তামিমের এমন বক্তব্যের পর প্রশ্ন উঠেছে, কেই সেই বোর্ড কর্মকর্তা? এক টিভি সাক্ষাৎকারে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'আমি এটা জানিনা।'
পরক্ষণেই তিনি বলেন, 'তবে যদি কেউ বলে থাকে, আমি সিউর তিনি অথোরাইজড পার্সন। আর এরকম কিছু বলে থাকলে আমি খারাপ কিছু বলেছে বলে আমি মনে করিনা। টিমের কথা চিন্তা করেই বলেছে। টিম কম্বিনেশন নিয়ে কথা বলে থাকলে দোষের কি আছে। আমার তো মনে হয় না দোষের কিছু আছে। নাকি এরকম কোনো প্রস্তাব দেয়া যাবে না। নাকি আপনি যা চাইবেন তাই করতে পারবেন?।'
বিশ্বমঞ্চে দেশের ক্রিকেটের দূত বলা যায় সাকিব আল হাসানকে। বর্ণিল এক ক্যারিয়ার গড়েছেন তিনি। তিন ফরম্যাটেই তিনি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। দেশের এই তারকা ক্রিকেটার নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপে যাচ্ছেন দলের অধিনায়ক হিসেবে। সেই টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই জানা গেল কবে তিনি অবসর নিচ্ছেন।
দেশের একটি ক্রীড়াভিত্তিক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের অবসরের সময় জানিয়েছেন। তার ইচ্ছে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর অবসর ঘোষণা করার। একইসঙ্গে তিন ফরম্যাটকে বিদায় জানাতে চান দেশের ক্রিকেটের এই তারা।
নেতৃত্ব ছাড়া ও অবসরের প্রসঙ্গ টেনে সাকিব বলেন, ‘আজকে এখন এই অবস্থায় বলছি, ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত ওয়ানডে খেলবো। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে টি-টোয়েন্টিকে বিদায় দেবো। টেস্টের অবসর শিগগিরই। তবে একেক ফরমেট একেক সময় ছাড়লেও আনুষ্ঠানিক অবসর ঘোষণা করবো ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর।’
অধিনায়কত্ব নিয়ে সাকিব বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপের আগে একাধিক সিরিজে বিশ্রামের কথা বলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে দলের বাইরে রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত এশিয়া কাপেও দলে ফেরানো হয়নি তাকে। যেহেতু সাকিবের নেতৃত্বে সেই আসরে খেলেছে বাংলাদেশ, তাই অনেকের ধারণা সাকিবের চাওয়াতেই দলের বাইরে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ।
তবে সাকিব এসব কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়ক ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দল পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলারও ছিল না! কারন পরের দিন সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকি রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা!'
দলের ভেতরের কথা ভালোভাবে না জেনেই মানুষ যেভাবে সমালোচনা করে সেটাকে হাস্যকর বলেছেন সাকিব। বাংলাদেশ অধিনায়ক সমালোচকদের মানসিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, 'মানুষের সাইলকোলজি এমন কেন! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!'
অধিনায়ক একা যে দল নির্বাচন করেন না সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন সাকিব। তিনি বলেন, 'রিয়াদ ভাইয়ের যে ডেডিকেশন ছিল তার দলের প্রতি যে অবদান ছিল। দলের হয়ে খেলার যে ইচ্ছে ছিল, সবকিছু সবাই দেখতে পেরেছে। আমার দায়িত্বতো পুরো দলটা নির্বাচন করার না। এমনটা হলে এশিয়া কাপের একদিন পরেই এনাউন্স করে দল দিয়ে দিতে পারতাম। এটা অনেক প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। অনেক বিষয় চিন্তা করতে হয়। অনেক কিছু চিন্তা করে দলটা গড়তে হয়।'
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।