
প্রকৃতি স্থবির নয়, সে সজীব এ কথা প্রায় সোয়া’শ বছর আগে আমাদের জানিয়ে গিয়েছেন আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু। এমনকি প্রতিটি বৃক্ষ অনুভূতিপ্রবণ, আঘাতে সে ন্যুব্জ হয়, ভালোবাসায় উৎফুল্ল হয়। যাকে আমরা আজ ‘প্ল্যান্ট নিউরোবায়োলজি’ নামে অভিহিত করি।
সভ্যতার গোড়াপত্তন থেকেই চলছে প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর মানুষের নির্মম কুঠারাঘাত। নিজেদের লালসা চরিতার্থ করার জন্য ভোগবাদী বিচার-বিবেচনাহীন মানুষ উজাড় করছে বন-বনানী, পাহাড়-অরণ্য, ধ্বংস করছে জীববৈচিত্র্য আর দূষিত করছে জীবনের অপরিহার্য উপাদান পানি ও বায়ু। আর এর ফলাফল হিসেবে দেখছি- বিগত বছরে ঘটে যাওয়া মহামারী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা বর্তমান ধরিত্রীর তীব্র উত্তপ্ত রূপ।
বিশ্ব গবেষণা ইনস্টিটিউটের মতে, বিশ্বের বনভূমি উজাড় হতে হতে প্রায় অর্ধেকে এসে দাঁড়িয়েছে। ভারসাম্যমূলক প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার জন্য দেশে মোট আয়তন ভূখণ্ডের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশে সরকারি হিসাব মতে বনভূমির পরিমাণ ১৬ শতাংশ ধরা থাকলেও বাস্তবে আছে ৯ শতাংশ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপে প্রতি বছর বন উজাড় হচ্ছে ৯.৪ শতাংশ। পাহাড় কেটে বসতবাড়ি তৈরিতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে কম বনভূমি পরিবেষ্টিত দেশগুলোর মধ্যে একটি। যেখানে বনভূমির হার মোট ভূমির মাত্র ৬.৭ শতাংশ।
আইন প্রয়োগের ঘাটতির কারণে নির্বিচারে বন-ধ্বংসের ফলে প্রতি বছর প্রায় ২ হাজার হেক্টর বনভূমি উজাড় হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শালবন প্রায় নিঃশেষ হওয়ার পথে। এমনকি প্রত্যক্ষ তদারকি ও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বাংলাদেশের মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ঘূর্ণিঝড় প্রতিরোধে সক্ষম পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে নির্বিচারে চলছে বৃক্ষনিধন। এছাড়া লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণেও হুমকির সম্মুখীন সুন্দরবন। বিশ্বব্যাপী নির্বিচারে বনভূমি ধ্বংসের পাশাপাশি শিল্পোন্নত দেশগুলোর অনিয়ন্ত্রিত শিল্পায়নের মাধ্যমে অবাধে কার্বন নিঃসরণের ফলে শুধু জলবায়ু পরিবর্তনই হয়নি, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের বন ও বন্যপ্রাণী হুমকির মুখে পড়েছে। এবং বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণিকুল আজ ধ্বংস ও বিলুপ্তির পথে। শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে একের পর এক প্রাকৃতিক বনাঞ্চল উজাড় করে দেওয়ায় ক্রমশ তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের জন্য পানিনির্ভর খাদ্যশস্য ও কৃষিপণ্য উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
বিশ্বব্যাপী চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল কারখানার বয়লার চেম্বারের মতো উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বাংলাদেশে বেশ কিছুদিন থেকে তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে। এ বছর এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে গত ১৭ এপ্রিল পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৯ বছর আগে ২০১৪ সালে মারাত্মক তাপপ্রবাহ দেখা গিয়েছিল। সে সময় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। এই মাঝের সময়টা বা গত আট বছরে দেশের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির নিচেই ছিল বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ভূবিজ্ঞানীদের মতে, দেশে অনাবৃষ্টি, পানি অপচয় ও ব্যবহারজনিত কারণে সামগ্রিকভাবে দেশের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিনের পর দিন অতি দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। এই বিপর্যয় মূলত পর্যাপ্ত পরিমাণে বনভূমি ও যথেষ্ট পরিমাণে গাছপালা না থাকারই ফল। এই প্রেক্ষাপটে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর আবহাওয়াতে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। দিনের বেলায় দুঃসহ গরম আর রাতে প্রচ- শীত অনুভূত হচ্ছে। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, এ লক্ষণ মরুকরণ প্রক্রিয়ার আশঙ্কাজনক পূর্বাভাস।
এসব কি তাহলে প্রকৃতির প্রতিশোধ? প্রকৃতি যদি সজীব হয়, যদি তার অনুভূতি থাকে, তাহলে তার এমন প্রতিশোধে বিস্মিত হব না। লাখ লাখ বছর ধরে মানুষ ক্রমেই প্রকৃতির ওপর তার আধিপত্য বিস্তার করেছে। বন কেটে বানিয়েছে নগর, ভূগর্ভ থেকে হরণ করেছে গ্যাস, তেল ও কয়লা, নদীপথ পরিবর্তন করে নির্মাণ করেছে অতিকায় বাঁধ। প্রকৃতির ওপর এক কাল্পনিক বিজয় লাভ করে আমরা নিজেদের অজেয় ভেবেছি। কিন্তু এখন সর্বংসহা প্রকৃতি মানবজাতির থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
প্রকৃতি একসময় প্রতিশোধ নেবে, এমন এক সম্ভাবনার কথা প্রায় দেড়’শ বছর আগে উল্লেখ করে গেছেন ফ্রেডেরিখ এঙ্গেলস। এমন কথা সম্ভবত তিনিই প্রথম বলেছিলেন তার অসম্পূর্ণ ‘ডায়ালেক্টিকস অব নেচার’ গ্রন্থে। তিনি প্রকৃতির বিরুদ্ধে ধাবমান মানুষকে এই বলে সাবধান করে দিয়েছিলেন, ‘এতটা বাড়াবাড়ি করো না। মনে রাখবে, তোমাদের প্রতিটি বিজয় প্রকৃতির প্রতিশোধ হিসেবে তোমাদের কাছেই ফিরে আসবে।’ আজকের পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে আমরা অনুধাবন করতে পারি, কী কঠোর সত্য উচ্চারণ করেছিলেন তিনি।
একটি আশার কথাও বলেছিলেন তিনি। মানুষকে তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন, আমরা যদি নির্দয় বিজেতা না হয়ে, বহিরাগত কোনো আক্রমণকারী না হয়ে প্রকৃতির অনুগত প্রজা হই, তাহলে সে আমাদের কেবল আশ্রয় দেবে তাই-ই নয় বরং আমাদের রক্ষাকর্তাও হবে। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, খুব বেশি কিছু নয়, এর জন্য প্রয়োজন শুধু প্রকৃতির আইন মেনে চলা। রবীন্দ্রনাথের ‘সভ্যতার প্রতি’ কবিতায়ও আমরা সেই একই ধ্বনি শুনতে পেয়েছিলাম। যান্ত্রিকতাকে পেছনে ফেলে প্রকৃতির কোলে আশ্রয়ের আকুতি!
পরিবেশ সুরক্ষার প্রয়োজনে মানব সচেতনতার একটি বৃহত্তর পদক্ষেপ ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’। পরিবেশ নিয়ে উদ্বিগ্নতার কারণজনিত বিষয়ে ১৯৬৮ সালের ২০ মে জাতিসংঘের অর্থনীতি ও সামাজিক পরিষদের কাছে একটি চিঠি পাঠায় সুইডেন সরকার। সে বছরই জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি সাধারণ অধিবেশনের আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরের বছর জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং সমাধানের উপায় খুঁজতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সম্মতিতে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে ১৯৭২ সালের ৫ জুন থেকে ১৬ জুন, জাতিসংঘ মানব পরিবেশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনটি ইতিহাসের ‘প্রথম পরিবেশবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন’-এর স্বীকৃতি পায়। ১৯৭৩ সালে সম্মেলনের প্রথম দিন ৫ জুনকে জাতিসংঘ ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেয়। এরপর ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতি বছর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। বিশ্ব পরিবেশ দিবসের বার্তা তখনই সফলতা লাভ করবে, যখন প্রকৃতিকে তার স্বরূপ রেখে উন্নয়ন, শিল্পায়ন ও মানবতা বিকাশের পথে বিশ্বের মানবজাতি এগিয়ে যেতে পারবে। এর জন্য প্রয়োজন ব্যাপক সচেতনতা, কঠোর আইন ও মূল্যবোধের বিকাশ।
মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ফলে বিপন্ন এই ধরণী মাতার দিকে তাকিয়ে মনে পড়ে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আরণ্যক’ উপন্যাসের কথা। সেখানে বনাঞ্চলের জমি প্রজাবিলি করার কাজে গিয়ে সেই বনের মায়ায় পড়ে যান সত্যচরণ বা লেখক। তবে শেষ পর্যন্ত তাকেই ঘন বন কেটে শস্যপূর্ণ জনপদ বসাতে হয়। লেখক তাই উপন্যাসের সমাপ্তি টেনেছেন এভাবে, ‘হে অরণ্যানীর আদিম দেবতারা, ক্ষমা করিও আমায়। বিদায়....’
ক্ষমা করো...
আমাদের ক্ষমা করো বসুন্ধরা!
লেখক : প্রভাষক, বিইউবিটি
দেশজুড়ে ঘটে চলা ঘটনা বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত; কিন্তু সব ঘটনাই একটা ব্যবস্থার অধীন। ব্যবস্থাটা পুঁজিবাদী। এই ব্যাপারটাকে সবাই যে দেখতে পান তা নয়; কেউ কেউ আছেন দেখেও দেখেন না। পুঁজিবাদীরা আবার জাতীয়তাবাদীও হন। জাতীয়তাবাদী হলে লুণ্ঠন, প্রতারণা, নির্যাতন ইত্যাদি পন্থায় পুঁজি সংগ্রহে অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়। বৈধতাও এক রকমের থাকে; যা করছেন নিজের জন্য করছেন না, করছেন জাতির জন্য, ভাব করা যায় এই রকমের। এবং জাতি বলতে সবার কথা যদিও বলেন, কিন্তু বোঝান নিজেদের। নিজেদের শ্রেণিকে, অর্থাৎ পুঁজির মালিকদেরই। তাই দেখা যায় আধুনিক কালের ভয়ংকর ভয়ংকর সব জাতীয়তাবাদীরা সবাই পুঁজিবাদী ছিলেন; যেমন হিটলার, মুসোলিনি, ট্রাম্প, কিংবা এখনকার মোদি, পুতিন, ইত্যাদি। চীন এক সময়ে সমাজতন্ত্রী ছিল, কিন্তু সে যে পুঁজিবাদী হবে তার ইশারা নিজেই তুলে ধরেছিল, প্রথমে জাতীয়তাবাদী হয়ে এবং তারপর দ্রুতই সমাজতন্ত্রের আবরণটা গায়ে চেপে রেখে কার্যক্ষেত্রে আগ্রাসী ধরনের পুঁজিবাদী তৎপরতায় লিপ্ত হয়ে। সারা পৃথিবীর বাজার দখলে সে এখন অস্থির। সস্তায় পণ্য উৎপাদন করছে শ্রমিকদের বঞ্চিত করে, রাজনৈতিক বন্দিসহ বিভিন্ন ধরনের বন্দিদের উৎপাদনের কাজে খাটিয়ে, নানা দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য শিল্প-কারখানা গড়ে তুলে। তারা ঘুষ দিচ্ছে, প্রতারণা করছে, এবং শেষ পর্যন্ত মস্ত বড় আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে ছোঁয়াচে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দিয়ে। একদিন যে চীন সমাজবিপ্লবের আদর্শ প্রচার করে সারা বিশ্বে বিপ্লবীদের কাছে প্রশংসার এবং বুর্জোয়াদের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছিল আজ সে স্মরণীয় হয়েছে রোগ ছড়ানোর কৃতিত্বের দরুন। বোঝা যায় পুঁজিবাদ কেমন শক্তিশালী, অপ্রতিরোধ্য ও দুষ্টবুদ্ধিসম্পন্ন।
পুঁজিবাদের প্রগতিশীল ভূমিকাটা বিশ্ব-ইতিহাস ধারণ করে বৈকি। মর্যাদা দিয়েই ধারণ করে। সামন্তবাদের সঙ্কীর্ণতা, অন্ধকারাচ্ছন্নতা ও আত্মসন্তুষ্ট বেষ্টনী ভেঙে ফেলে সে একদিন বের হয়ে এসেছিল; এবং তখন বিশ্বাস করার কারণ ঘটেছিল যে তার কারণে মানুষের মুক্তি অত্যাসন্ন। কিন্তু সে মুক্তি যে এলো না তার মূল কারণ পুঁজিবাদ শ্রেণিশোষণ ব্যবস্থা না ভেঙে উল্টো তাকে আরও গভীর ও ব্যাপক করে ছাড়ল। দ্রুতই রূপ নিল সে সাম্রাজ্যবাদের। সাম্রাজ্যবাদ-কবলিত দেশগুলোতে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী যে লড়াইটা গড়ে উঠেছে তাতে জাতীয়তাবাদীরা থেকেছেন, থেকেছেন সমাজতন্ত্রীরাও। সাম্রাজ্যবাদবিরোধিতার সময়ে জাতীয়তাবাদের একটা প্রগতিশীল ভূমিকা ছিল, কিন্তু যেহেতু জাতীয়তাবাদীদের আকাক্সক্ষাটা মূলত ছিল পুঁজিবাদীই, সমাজতন্ত্রী নয়, তাই ওই জাতীয়তাবাদের ভেতরে একটা দুর্বলতা ছিল অনিবার্য। যে জন্য দেখা যায় যে বিদেশিরা বিদায় হওয়ার পরে জাতীয়তাবাদী স্বদেশিরা যখন ক্ষমতায় বসেছে তখন দেশের মানুষদের সঙ্গে তারা সেই রকমের আচরণই করেছে যে-রকমের আচরণ একদিন বিদেশি শাসকরা করত। অনেক ক্ষেত্রে তাদের আচরণ বিদেশিদের চেয়েও নিষ্ঠুর হয়ে উঠেছে। অন্তর্নিহিত কারণটা ছিল আদর্শিক। আদর্শিকভাবে আগের শাসকগুলোর মতোই পরের শাসকগুলোও পুঁজিবাদীই।
সমাজ-পরিবর্তন তাই প্রয়োজন। এর জন্য দরকার সামাজিক-বিপ্লবের। জাতীয়তাবাদীরা নিজেদের শ্রেণিগত স্বার্থকে স্থায়ী করার প্রয়োজনে সমাজ-বিপ্লবের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। সমাজ-বিপ্লবের জন্য খুব বেশি দরকার হলো জ্ঞানের। নির্মোহ জ্ঞানের চর্চাকে সাম্রাজ্যবাদী অধিপতিরা নিরুৎসাহিত করে, জাতীয়তাবাদী শাসকরাও সেটাই করে থাকে। একই কারণে। সামাজিক বিপ্লব যাতে না ঘটে। জাতীয়তাবাদীদের জ্ঞানচর্চাতে আবার এক ধরনের জাতিগত অহমিকা থাকে।
খুবই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ইতিহাসের জ্ঞান। জাতীয়তাবাদীরা ইতিহাসকে সাজাতে চায় নিজেদের শ্রেণিগত সাজসজ্জায়। যেমন ট্রাম্প বলছেন আমেরিকা হচ্ছে শ্বেতাঙ্গদের দেশ; ওই পবিত্রভূমিতে অন্য সবাই বহিরাগত, যদিও সে-দেশে তিনি নিজেই একজন বহিরাগত, তার পূর্বপুরুষ এসেছে অন্যদেশ থেকে। মোদি বলছেন ভারতবর্ষ হচ্ছে হিন্দুদের দেশ, অহিন্দুরা সবাই বহিরাগত। সে জন্য তিনি নাগরিকত্ব প্রমাণের বিধি চালু করতে চাচ্ছেন। যদিও তার খেয়াল নেই যে তার নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণের দলিলই তার কাছে নেই। আরেক জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমিক ইসরায়েলের দুর্নীতিতে-পারদর্শী প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু, যিনি মনে করেন ফিলিস্তিনের সবটা ভূমিই ইহুদিদের, আরবরা সবাই সেখানে বহিরাগত। এই তিন জাতীয়তাবাদীর মধ্যে এখন বেশ ইয়ার-বান্ধব সম্পর্ক।
জাতীয়তাবাদীরা সর্বত্র হস্তক্ষেপ করে, ইতিহাসকেও বাদ দেয় না। ইতিহাসকে তারা নিজেদের সুবিধার আলোকে রচনা করে। এবং সেই রচনা বিতরণ করতে থাকে, নিজেদের আধিপত্যকে সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে। ব্যাপারটা কখনো কখনো বেশ কৌতুককর হয়ে ওঠে। যেমন মোদি-সমর্থিত ভারতীয় হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা বলে যে পরবর্তী সময়ে যেসব জিনিস আবিষ্কৃত হয়েছে তার জ্ঞান মহাভারতেই পাওয়া যাবে। আকাশের উড়োজাহাজ? সে তো মহাভারতের কালের গরুড় পাখিরই আধুনিক সংস্করণ। সত্যটা বিজাতীয়রা এতকাল চাপা দিয়ে রেখেছিল। পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ১৯৪৭-এ; কিন্তু সেই রাষ্ট্রের দ্বারা উৎসাহিত ইতিহাসবিদদের দেখা যেত পাকিস্তানের জন্য চার হাজার বছরের সভ্যতার একটা ইতিহাস খুঁড়েটুরে বের করতে গলদঘর্ম হচ্ছেন। হরপ্পা, মহেঞ্জোদারো নাকি পাকিস্তানেরই পূর্ব-ইতিহাসের অন্তর্গত। ঘটনাক্রমে এলাকাগুলো যেহেতু পাকিস্তানে পড়েছে। তবে পশ্চিম অংশের ওই ইতিহাসের সঙ্গে পূর্ববঙ্গের ইতিহাসের সংযুক্তি দেখানোর চেষ্টা অবশ্য তারা করেননি। তা জাতীয়তাবাদী কল্পনারও তো একটা সীমা আছে।
একইভাবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরও কিন্তু দেখা যাচ্ছে এই অঞ্চলের গোটা ইতিহাসের ওপরই একটা জাতীয়তাবাদী আধিপত্য (নাকি আগ্রাসন?) প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলেছে। বাংলাদেশের এশিয়াটিক সোসাইটি সম্প্রতি গবেষণা-নির্ভর একটি ইতিহাস গ্রন্থ প্রকাশ করেছে, দু’খণ্ডে। প্রকাশনাটি গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে মিলে লিখেছেন, এবং সব লেখাতেই ইতিহাসের নির্ভরযোগ্য উন্মোচন রয়েছে। কিন্তু মুশকিল হলো জাতীয়তাবাদের সেই আধিপত্যের ব্যাপারটা নিয়ে। প্রকাশনাটির নাম রাখা হয়েছে History of Bangladesh; কিন্তু বাংলাদেশ বলে কোনো রাষ্ট্র তো ১৯৭১-এর আগে ছিল না। যে-রাষ্ট্রের বয়স পঞ্চাশ বছরও পূর্ণ হয়নি তার ইতিহাস এই জনভূমিতে জনবাস শুরুর ইতিহাসের আদিপর্ব পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাটা তো দাঁড়ায় পাকিস্তানি ইতিহাসবিদদের সেই চার হাজার বছরের ইতিহাস খোঁজার মতোই লোমহর্ষক। প্রকাশনাটির দ্বিতীয় শিরোনামটি বরং ইতিহাসসম্মত। সেটি হচ্ছে Early Bengal in Regional Perspective up to 1200 CE. এই শিরোনামে বাস্তব সত্যটা ধরা আছে, এতে জাতীয়তাবাদ নেই। সে জন্যই এটি যথার্থ।
জাতীয়তাবাদের সমস্যাটা এশিয়াটিক সোসাইটির গবেষকরা বাংলাপিডিয়া নামে যে এনসাইক্লোপিডিয়াটি রচনা ও প্রকাশ করেছেন সেখানেও বিদ্যমান। এই এনসাইক্লোপিডিয়াটিতে তথ্যভ্রান্তির সমালোচনা আছে; এও বলা যাবে যে এত তাড়াহুড়ো করে হৈ চৈ না বাধিয়ে এই রকমের বড় মাপের ও জরুরি কাজ যে পরিমাণ মনোযোগ ও শ্রম দাবি করে তা ব্যয় করে এ বিশ্বকোষটি রচনা করলে ভালো হতো। সেসব কথা অবশ্য এখানে প্রাসঙ্গিক নয়। প্রাসঙ্গিক যা তা হলো জাতীয়তাবাদী উৎসাহ এবং জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে ধারণা। উৎসাহ ও ধারণা দুটোই পাওয়া যাবে এনসাইক্লোপিডিয়ার nationalism ভুক্তিটিতে। উৎসাহটা ধরা পড়ে ভাষাতে, ধারণার ভ্রান্তি রয়েছে বক্তব্যে। জাতীয়তাবাদের ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ‘ইতিহাসের অভিজ্ঞতা’, ভূগোল, বর্ণ, ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতিকে। ভাষা আসছে একেবারে শেষে, অথচ ভাষারই আসার কথা সবার আগে। পরাধীন ভারতবর্ষের হিন্দু ও মুসলিম জাতীয়তাবাদীরা ধর্মকেই মুখ্য বিবেচনা করত, ভাষাকে উপেক্ষা করে। এশিয়াটিক সোসাইটির বিশ্বকোষও ধর্মকে রাখা হয়েছে ভাষার আগে, এবং জাতীয়তাবাদের প্রথম উপাদান হিসেবে যে ‘ইতিহাসের অভিজ্ঞতা’র কথা বলা হয়েছে তেমন কথা পাকিস্তানিরাও বলতে পছন্দ করত। ইতিহাসের অভিজ্ঞতা বলতে তারা সাম্প্রদায়িক অভিজ্ঞতাই বোঝাতে চাইত। বিশ্বকোষটির ‘nationalism’ ভুক্তিটির শুরুতেই Bangladesh জাতীয়তাবাদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এটি আসলে তথাকথিত ‘বাংলাদেশি’ জাতীয়তাবাদেরই ইংরেজি অনুবাদ। কিন্তু এটা তো পরিষ্কার যে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ বলে বাস্তবে কিছু নেই, আছে বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং বাংলাদেশি নাগরিকত্ব। অর্থাৎ বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের যারা নাগরিক তারা সবাই বাংলাদেশি, তবে এই রাষ্ট্রের অধিকাংশ নাগরিকই জাতীয় পরিচয়ে বাঙালি, কারণ তারা বাংলাভাষী, কিন্তু এখানে ক্ষুদ্র হলেও অন্য জাতিসত্তার মানুষরাও বাস করে, যাদের মাতৃভাষা বাংলা নয়, এবং সে-কারণে যারা বাঙালি নয়। এ বিষয়ে জ্ঞানতাত্ত্বিক বিভ্রান্তি সৃষ্টিটা মোটেই কাক্সিক্ষত নয়, এবং তা সমষ্টিগত অগ্রগতির পথে প্রতিবন্ধকস্বরূপ।
জাতীয়তাবাদে ভাষার প্রধান গুরুত্ব সম্পর্কেও এই ভুক্তিতে এই ভ্রম এমন বক্তব্যের জন্য পরিসর তৈরি করে দিয়েছে যে পাকিস্তানি শাসনামলে বাঙালিদের জন্য দুঃসহ ছিল যে-ঘটনা সেটা হলো পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের আধিপত্য। এমন কথা সাধারণ কথাবার্তায় চলে, কিন্তু বিশ্বকোষের অন্তর্ভুক্তিতে অচল। কারণ আধিপত্যটা আসলে পশ্চিম পাকিস্তানের ছিল না, ছিল পাঞ্জাবি শাসকদের; এবং পশ্চিম পাকিস্তানে একটি নয় চার চারটি জাতি বসবাস করত, তারা হলো পাঞ্জাবি, সিন্ধি, বেলুচ ও পাঠান যাদের ওপর পাঞ্জাবি সামরিক আমলারা শাসন-শোষণ চালাত। বিশ্বকোষটিতে বড় রকমের ভ্রম আরও একটি আছে। সেটি হলো এই ধারণা যে, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের চিন্তা একাত্তরের যুদ্ধের সময়ে ভারত ও সোভিয়েট ইউনিয়ন থেকে import করা হয়েছিল, কারণ ওই দুটি দেশ যুদ্ধকালে বাংলাদেশের মিত্র ছিল। বিশ্বকোষটির মতে আমদানি-করা এসব চিন্তা স্থানীয় মানুষের কাছে মোটেই গ্রহণযোগ্য হয়নি। জাতীয়তাবাদীদের এইখানেই সবচেয়ে বড় অসুবিধা, সমাজতন্ত্রকে নিয়ে তাদের আতঙ্ক কিছুতেই বাগ মানে না।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
শুনি তো সেই কোন ছোটবেলা থেকেই যে, কলম তলোয়ালের চেয়েও শক্তিশালী। কিন্তু ইদানীং এই বয়সে এসে কেন জানি না বড় ধাঁধায় পড়েছি। বুঝতে পারছি না আদৌ কলম কতটা শক্তিশালী। কত লিখব, কত বলব জমাট বাঁধা এই অন্ধকার সময়ের কথা। সব লেখার কী স্বাধীনতা আছে! যেটুকু যা লিখি, সেখানেও কিছু লোক এসে হুমকি দেয়, এসব চলবে না। সত্যি কথা লিখলেও নাকি ভারতের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। মুশকিল হচ্ছে, যারা আমাকে হুমকি দেয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় গালমন্দ করে, অমুকের দালাল বলে, তারা বুঝতেই চায় না যে, আধুনিক পৃথিবীতে, প্রযুক্তির যুগে কোন দেশে কী ঘটছে তা কোথাও ধামাচাপা দিয়ে গোপন করা যায় না। তুমি সত্য কথা চাপা দিতে জেলে দেবে, ধমকাবে, বড়জোর খুন করবে তাতেও চিরদিন কখনোই শাসকের কুকীর্তি চাপা থাকবে না। আমার দেশেই বিজেপি শাসনে, কালবুর্গি, পানেসর, স্ট্যান স্বামী, গৌরী লঙ্কেশের মতো স্পষ্ট বক্তাকে সত্যি কথা বলার ‘অপরাধে’ মরতে হয়েছে। এখনো আর কতজনকে সেই তালিকায় দেখতে হবে জানি না। শুধু এটুকু বলতে পারি যে, আমার দেশ আক্ষরিক অর্থেই এক ভয়ংকর সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
যেভাবে আমাদের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অ্যাথলিটদের রাস্তায় ফেলে মারা হয়েছে, যেভাবে দিনের পর দিন তাদের অসম্মান করা হচ্ছে বিজেপি নেতা ব্রিজভূষন শরন সিংকে বাঁচাতে, যে আড়ম্বর করে ঢাকঢোল পিটিয়ে সাধু সমাবেশ করে কয়েকশ কোটি টাকা খরচ করে নতুন সংসদ ভবনের দ্বারোদ্ঘাটন হলো এবং যার বা যাদের কুৎসিত বাগাড়ম্বর সত্ত্বেও রেল দুর্ঘটনায় শত শত লোকের মৃত্যু হলো তার প্রত্যেকটি সম্পর্কে একটি কথাই বলার অশ্লীল। অশ্লীল এবং অবশ্যই চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন। অন্তঃসারশূন্য, বাকপটু, দাম্ভিক, চরম অসত্য কথনের নায়কদের পক্ষেই এই নির্মমতা সম্ভব।
কোনটা ছেড়ে কোনটা লিখব তাই তো বুঝতে পারছি না। প্রত্যেক ঘটনার পেছনে আছে আমাদের ক্ষমতায় মদমত্ত সরকারের অপদার্থ আচরণ। একদা ভারতের বহির্বিশ্বে সুনাম ছিল জোট নিরপেক্ষ নীতির কারণে। জওহরলাল নেহরু, শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী থেকে রাজীব গান্ধী, হাজারো সমালোচনা সত্ত্বেও তাদের বিদেশনীতি মোটের ওপর ছিল আন্তর্জাতিক মহলের প্রশংসিত। বিজেপি ক্ষমতা পাওয়ার পর থেকে সেই সুনামটুকুও যত দিন যাচ্ছে তত তলানিতে এসে ঠেকছে। চীন, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা না হয় বড় দেশ, মিয়ানমার ধরে নিলাম মিলিটারি রেজিম রয়েছে, কিন্তু এখন তো দেখছি সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু জনসংখ্যার নেপাল, ছোট্ট ভুটান তারাও সমান ক্ষুব্ধ ভারতের দাদাগিরি দেখে। বাংলাদেশের সরকার সাধারণভাবে চুপচাপ থাকলেও তাদের বিপুলসংখ্যক জনগণের মধ্যে যে ভারতবিরোধী ক্ষোভ বাড়ছে তা সে দেশে গিয়ে রাস্তাঘাটে একটু-আধটু কান পাতলেই স্পষ্ট বোঝা যায়।
মনে আছে কয়েক বছর আগে ঢাকা এয়ারপোর্টে, ইমিগ্রেশন করার সময়ে, খুব ভদ্র গলায় এক বাংলাদেশের আধিকারিক জানতে চেয়েছিলেন, আপনারা আমাদের পানি দেন না কেন! বেনাপোল সীমান্তে বিএসএফের ও ইমিগ্রেশন অধিকাংশ অফিসারদের বড় অংশ যে আচরণ পড়শি দেশের নাগরিকদের সঙ্গে করেন তা কোনো সভ্য দেশ করে না। সীমান্ত হত্যা নিয়ে বলতে গেলে তো আস্ত বই হয়ে যাবে। পাশাপাশি ঘুষপেটিয়া ও অন্যান্য বিদ্বেষমূলক কুৎসা তো সংঘ পরিবারের দৈনন্দিন রুটিন। বাংলাদেশ যেহেতু পড়শি, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনতার বাসস্থান, তাই সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে তাদের জুজু দেখিয়ে মিথ্যা বলে বলে মেরুকরণ করা বিজেপির রাজনৈতিক এজেন্ডা। সমস্যা হচ্ছে, যে বাংলাদেশের অনেক প্রগতিশীল লোকজনকে দেখি বিভ্রান্ত হয়ে ভারতের শাসক ও জনগণের প্রতিবাদী অংশকে সমার্থক করে তুলতে। নেপাল ও অন্যান্য অনেক রাষ্ট্রেও এই সমস্যা বাড়ছে।
আর এখন তো এই সেন্ট্রাল প্লাজার দেয়ালে ভারত সরকার যে ম্যুরাল বসিয়েছে তাতে তাদের চিন্তাভাবনা পুরোপুরি বেআব্রু হয়ে গেছে। সেই ম্যাপে অখণ্ড ভারতের কথা বলা হয়েছে। যে ভারতের অঙ্গ হয়ে শোভা পাচ্ছে পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ। এ ঘটনা নিছক আস্ফালন বা দাদাগিরি নয়। এই অখণ্ড ভারত জন্মলগ্ন থেকেই আমাদের শাসকদের মূল মস্তিষ্ক রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের কাক্সিক্ষত জনপদ। আপনি নাগপুরে আরএসএসের সদর দপ্তর বা কলকাতার কেশব ভবনে গিয়েও একই মানচিত্র দেখবেন। এ নিয়ে আরএসএস কর্তাদের কোনো হেলদোল নেই। তারা শুধু রাজনৈতিকভাবে নয়, সাংস্কৃতিক আধিপত্যবাদের কৌশলেও অন্য দেশের অভ্যন্তরে নিজেদের বিশ্বাস চাপিয়ে দিতে বহুদিন ধরেই সক্রিয়। কী তাদের বিশ্বাস? সেটা না হয় আরএসএস নেতাদের মুখেই শুনুন।
২০১৭ সালের সাতাশ অক্টোবর, আরএসএস সুপ্রিমো মোহন ভাগবত দলের কর্মিসভায় বলছেন, ‘জার্মানি কাদের রাষ্ট্র? জার্মানদের। ব্রিটেন কাদের? ব্রিটিশদের। আমেরিকা আমেরিকানদের। ফলে কোনো সন্দেহ নেই, হিন্দুস্তান হচ্ছে হিন্দুদের রাষ্ট্র। অন্যান্য সম্প্রদায় এখানে থাকতে পারবে অবশ্যই হিন্দু সংস্কৃতি মেনে, ভারত মাতার সন্তান হয়ে...।’
ঘুরেফিরে এই দর্শনের ফেরিওয়ালা বিজেপি। ১৯২৫ সালে আরএসএস জন্ম নিয়েছিল। ১৯৫১ সালে জন্ম নেয় তাদের রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ভারতীয় জনসংঘ। তার অনেক পরে জনতা পার্টি ভেঙে ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি। আজ আরএসএসের প্রচারক নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি এ দেশের সর্বেসর্বা। আরএসএস আগামী বছর শতবর্ষ পালন করবে। ফলে তাদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন জোট ও ধর্মনিরপেক্ষ ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র ঘোষণা করার পরম মুহূর্ত আগত ভেবে তারা এমন বেপরোয়া হয়ে যাবতীয় আন্তর্জাতিক রীতিনীতি, শিষ্টাচারের তোয়াক্কা না করে আরএসএসের মানচিত্রকে দেশের বলে চালিয়ে দিতে চাইছেন। এসব হচ্ছে ছোট ছোট টেস্ট কেস। কে কতটা গর্জে ওঠে দেখে নেওয়া। কোন দেশ কতটা গুরুত্ব দিয়ে নিজের ভূখ- হাতছাড়া হতে চলেছে দেখেও নীরব থাকে না, মেরুদণ্ড সোজা রেখে প্রতিবাদ করে তাও পরখ করা। এখন অবধি যা দেখলাম, সবচেয়ে বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে ভারতকে হুমকি দিয়েছে নেপাল। পাকিস্তান অসন্তুষ্ট। তবে লিখিতভাবে সেরকম কিছু বলতে শুনিনি। বাংলাদেশের সরকারের কোনো বিবৃতি এখনো চোখে পড়েনি।
ইতিমধ্যেই বিজেপি অনুগত অনেকেই মানচিত্রটা আসলে পুরনো সময়ে ভারত দেশটি কেমন ছিল, তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চেয়ে ম্যুরালটি করা হয়েছে বলে যাবতীয় দায় থেকে সরকারকে মুক্ত করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। বিজেপির একাংশ বলতে চাইছেন, ও তো সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে ভারত জনপদের ছবি। চ-াশোক অশোক কলিঙ্গ যুদ্ধের পর কীভাবে অহিংস নীতি গ্রহণ করে ধর্মাশোক হয়ে উঠলেন এ মানচিত্র সেই সময়ের সাক্ষী। কোনো কোনো মহল দাবি করছে, ব্রিটিশ আসার আগে যে সুপ্রাচীন সংস্কৃতি এ দেশে ছিল এই মানচিত্র তার সাক্ষ্য দেয়। মজা হচ্ছে, ঘুরেফিরে সেই বহুত্ববাদী সংস্কৃতি অস্বীকার করে রামায়ণের কল্পিত কাহিনি বা প্রাচীন ভারতগাথা জনমনে ফিরিয়ে আনা।
হিন্দু বা মনুবাদী কালচারাল হেজিমনি চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা কিন্তু হিন্দুত্ববাদী উগ্র জাতীয়তাবাদী দলের নতুন নয়। এ কাজ তারা বহুদিন ধরেই কাঁটাতারের রাজনৈতিক সীমানা লঙ্ঘন করছে সেটা ভুক্তভোগী মাত্রেই জানেন। ফলে মানচিত্র দেখে অবাক হলেও চমকে যাওয়ার কিছু নেই। আর একটা সূক্ষ্ম অথচ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একদিক অনেকের চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে। সেটা হচ্ছে নানান কৌশলে গণতন্ত্রের পরিবর্তে রাজতন্ত্রের শ্রেষ্ঠত্ব বড় মুখে ঘোষণা করা। সে অশোক বলুন বা চোল সাম্রাজ্যের সেঙ্গোলÑ সব মিলিয়ে রাজরাজড়ার যুগবন্দনা। ঠিক সে কারণেই নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশের সাংবিধানিক প্রধান রাষ্ট্রপতিকে আমন্ত্রণ জানানোর সৌজন্য দেখানোর প্রয়োজনটুকুও অনুভব করেন না মোদি। শরীরী ভাষ্যে তিনিই হয়ে ওঠেন মহারাজাধিরাজ। নিমেষে ভারত চলে যায় তপোবনের কালে। সাধুদের মন্ত্র উচ্চারণের মধ্য দিয়ে আভূমি নত হয়ে অখণ্ড ভারতের স্বপ্ন দেখতে দেখতে তিনি হাঁটতে থাকেন। হাতে থাকে আরএসএসের অদৃশ্য গেরুয়া ঝা-া। অনুগতরা কলরব করতে থাকেন। জয় ঘোষণা হতে থাকে, এক জাতি, এক পতাকা, এক নেতার। নিন্দুকদের কেন জানি না কারণ ছাড়াই হিটলার-মুসোলিনিকে মনে পড়ে যায়।
লেখক: ভারতীয় প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা ও লেখক [email protected]
সড়ক পরিবহন সেক্টরে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন উপায়ে চাঁদাবাজি চলছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সবাই বালিতে মুখ গুঁজে রেখেছেন। তারা কোনো কথা বলেন না অথবা অন্য কোনো কারণে বলতে পারেন না। কেউ কোনো কথা বলতে চাইলে, তাকে বিভিন্ন উপায়ে সাইজ করা হয়। অতীতে দেখা গেছে, একই সেক্টরের কেউ যখনই সত্য কথা বলেছেন, কিছুদিন পরই সেই ব্যক্তি হয় বদলি হয়ে গেছেন না হয় কিছুই বলছেন না মিডিয়ার সামনে। যে কারণে, এই সেক্টরে চাঁদাবাজি এখন আর কোনো গোপন কিছু না। প্রতিদিন চাঁদাবাজির বিশাল অঙ্কের অর্থ যাচ্ছে সর্বনিম্ন থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই পর্যায়গুলোর মানুষ কারা? অভিযোগ রয়েছে, এর সঙ্গে জড়িত আছেন স্থানীয় নেতা, এলাকার মাস্তান, ট্রাফিক পুলিশ এবং উচ্চ পর্যায়ের কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতি হলেও, শতভাগ অনিরাময়যোগ্য কিছু রোগ আছে। মানবদেহ সেই রোগে আক্রান্ত হলে, শতভাগ সুস্থ হওয়া প্রায় অসম্ভব। এর মধ্যে একটি হচ্ছে কর্কট রোগ। সম্ভবত এই কর্কট বা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখ কেরানীগঞ্জের কদমতলী গোলচত্বর এলাকা। কারণ এই গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবৈধ স্ট্যান্ডের জঞ্জালে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিদিন। অবৈধ এসব স্ট্যান্ড থেকে ওঠা চাঁদার টাকা যাচ্ছে একাধিক প্রভাবশালী নেতার পকেটে। অভিযোগ রয়েছে, ট্রাফিক পুলিশ ভাগ পায় চাঁদার টাকার। তবে অবৈধভাবে গজিয়ে ওঠা সিএনজি, বাস, অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, লেগুনা স্ট্যান্ডের খেসারত দিতে হচ্ছে কেরানীগঞ্জবাসী ও পথচারীদের।
রবিবার দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত ‘মহাসড়কের মুখে যানের জঞ্জাল’ সংবাদের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, গোলচত্বর এলাকার একাধিক দোকানদার বলেন, স্ট্যান্ডের বিরুদ্ধে তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন না। কারণ প্রভাবশালীরা এর সঙ্গে জড়িত। অনুসন্ধানে জানা যায়, গুটিকয়েক নেতা নিয়ন্ত্রণ করেন কদমতলী গোলচত্বরের আশপাশের স্ট্যান্ডগুলো। প্রতিদিন প্রায় দুই লাখ টাকা চাঁদা আদায় হয় এসব স্ট্যান্ড থেকে।
কদমতলী থেকে আঁটিবাজার, কোনাখোলা, রুহিতপুর, শাক্তা, বাস্তাসহ একাধিক সিএনজি স্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ করে ঢাকা জেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি আফজাল হোসেন ডিপটি। মূলত কদমতলী এলাকার সিংহভাগ সিএনজি স্ট্যান্ড তার নিয়ন্ত্রণে। তার পক্ষে চাঁদা তোলেন হানিফ, হীরাসহ একাধিক ব্যক্তি।
প্রকাশিত সংবাদে আরও উল্লেখ করা হয়েছে অবৈধ স্ট্যান্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিপটি বলেন, ‘সারা জীবনই এভাবে স্ট্যান্ড চলে আসছে। স্ট্যান্ড ঠিক রাখার জন্য ট্রাফিক অফিসারের লোক আছে, উপজেলার লোক আছে, আমরা চেষ্টা করি কীভাবে এটা ঠিক রাখা যায়। আর স্ট্যান্ড নদীর ওপারে চলছে এপারে চলছে, কোথাও তো থেমে নেই। সবাই চালাচ্ছে, তাই আমিও চালাচ্ছি। এটা সবাই জানে।’ মজার বিষয় হচ্ছে, কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সল করিম বলছেন অবৈধ স্ট্যান্ডের সঙ্গে উপজেলার কেউ জড়িত নয়। এ ব্যাপারে আমরা আগে অভিযান পরিচালনা করেছি, আবারও অভিযানে নামব। রাস্তায় কোনো অবৈধ স্ট্যান্ড থাকতে পারবে না। আবার ঢাকা জেলা ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক (টিআই) পীযূষ সরকার বলেন, অবৈধ স্ট্যান্ডের সঙ্গে ট্রাফিকের কেউ জড়িত নয়।
ঠাকুর ঘরে কে কলা খাচ্ছে এটা সবাই জানে। সড়ক পরিবহনে দেশব্যাপী প্রতিদিন কী পরিমাণ চাঁদা তোলা হচ্ছে, তা কল্পনারও বাইরে। দৈনিক হিসাবে এই টাকার পরিমাণ শতকোটি ছাড়িয়ে যাবে। ফলে কাঁচা টাকার গন্ধ, কে ভুলতে চায়? সুতরাং যানের জঞ্জাল শুধু না, পুরো পরিবহন খাতে ভেতরে-বাইরে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে সরকারকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। অন্য কারও পক্ষে কিছুই করা সম্ভব না। সমস্ত সেক্টরে নীতিহীনতা এবং আইনি শৈথিল্যের নগ্ন প্রকাশ বন্ধ হওয়া জরুরি।
আধুনিক অর্থশাস্ত্রের জনক হিসেবে পরিচিত অ্যাডাম স্মিথের জন্ম ১৭২৩ সালের ৫ জুন স্কটল্যান্ডের ফিফ শহরে। তিনি একজন রাজস্ব নিয়ন্ত্রকের ছেলে ছিলেন। চার বছর বয়সে এক দল ইহুদি তাকে অপহরণ করে। কিন্তু তিনি তার চাচার সহযোগিতায় দ্রুত মুক্ত হন এবং মায়ের কাছে ফেরত আসেন। ১৪ বছর বয়সে স্মিথ গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে তিনি ফ্রান্সিস হাচিসনের অধীনে দর্শনশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। এই বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সময়ে তিনি ‘দ্য থিওরি অব ম্যুরাল সেন্টিমেন্টস’ গ্রন্থ রচনা করেন। পরবর্তী জীবনে তিনি সমগ্র ইউরোপ পরিভ্রমণ করেন এবং এ সময়ে তৎকালীন বুদ্ধিজীবী নেতাদের সান্নিধ্য লাভ করেন। তিনি তার নিজের সময়ে বিতর্কিত ছিলেন। তার সাধারণ লিখন পদ্ধতি ও শৈলীর কারণে তিনি প্রায়ই উইলিয়াম হোগার্থ ও জোনাথন সুইফট কর্তৃক সমালোচিত হয়েছেন। ২০০৫ সালে তার রচিত ‘দ্য ওয়েলথ অব নেশন’ বইটি সর্বকালের সেরা ১০০ স্কটিশ বইয়ের তালিকায় স্থান পায়। বলা হয়ে থাকে, সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার তার লেখা এ বইটি সর্বদা হাত ব্যাগে বহন করতেন। তিনি অর্থনীতিকে দর্শনের সঙ্গে, বিশেষত সমাজের ন্যায়-অন্যায় বোধের সঙ্গে মিলিয়ে উপস্থাপন করেছেন। তিনি জাতি ও রাষ্ট্র কাঠামোর ভিত্তিতে অর্থশাস্ত্রকে বিশ্লেষণ করেন এবং উন্মুক্ত বাজার, শ্রমের বণ্টনব্যবস্থা, প্রশাসনের করণীয় ইত্যাদি বিষয় আলোচনায় নিয়ে আসেন। স্মিথের পরে অর্থনীতির আওতা ও গভীরতা আরও অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে; কিন্তু সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি এখনো শিক্ষণীয়। অকৃতদার এই অর্থনীতিবিদ সারা জীবন মায়ের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করেছেন। মায়ের মৃত্যুর ছয় বছর পর ১৭৯০ সালের ১৭ জুলাই তিনি মারা যান।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
আজ আন্তর্জাতিক ৩৩তম প্রবীণ দিবস। ১৯৯০ সালে জাতিসংঘ প্রতিবছর ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রবীণদের সুরক্ষা এবং অধিকার নিশ্চিতে ১৯৯১ সাল থেকে এ দিবসটি পালন শুরু হয়।
প্রবীণরা সমাজে সম্মানিত ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। তাদের প্রতি যত্নশীল হওয়া সবারই কর্তব্য। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উৎকর্ষ ও আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতির কারণে দেশে প্রবীণের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
বর্তমান কর্মব্যস্ত জীবনধারা এবং একক পারিবারিক সংস্কৃতিতে বয়স্কদের সুস্থ ও সুখী রাখা আগের চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তাঁদের যত্নের প্রয়োজন হবে আগের চেয়ে বেশি। এই সময়ে তাঁদের যত্ন নেওয়ার জন্য কয়েকটি কথা মাথায় রাখা দরকার।
বৃদ্ধ বয়সে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রমে ভোগেন বেশিরভাগ প্রবীণ। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, অস্টিওপোরোসিস, চোখের অসুখ, পুরুষদের প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া, কিডনিতে ও লিভারের নানা সমস্যায় ভোগেন প্রবীণরা।
বয়সের সাথে সাথে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে এ সময় মানুষ খুব সহজে রোগাক্রান্ত হয়। সুতরাং বাড়ির প্রবীণ মানুষটি কোনো রোগে আক্রান্ত হলে তার সঠিক যত্নের পাশাপাশি নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সময়মত ওষুধ খাওয়াতে হবে।
শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকার ফলে শরীরে বয়সের প্রভাব কমে যায়। প্রবীণদের জন্য হালকা কিছু ব্যায়াম করা জরুরি যা হৃদস্পন্দন বাড়ায় এবং সঠিক রক্তপ্রবাহ বজায় রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া ব্যায়াম শরীর এবং মন ভালো রাখে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরে ডায়াবিটিস, আলজাইমার এবং ডিমেনশিয়া হওয়ার আশঙ্কাও কমে।
প্রবীণদের গুরুতর রোগের ঝুঁকি কমাতে সুষম খাদ্য দিতে হবে। তাঁদের কম স্যাচুরেটেড ফ্যাট আইটেম (ঘি-তেল-মাখন-বিস্কুট-চর্বিহীন মাংস) এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার বেশি দেওয়া উচিত। প্রবীণ ব্যক্তিদের তাজা খাবার খেতে হবে এবং বেশি করে পানি ও তরল জাতীয় খাবার দিতে হবে। প্রবীণদের উপযুক্ত পরিমাণে ফল, সবজি এবং গোটা শস্য দিতে হবে।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রবীণদের ঘুমের সমস্যা দেখা যায়। এই বয়সে ঘুমের অভাবে হার্ট ও মস্তিষ্ক সংক্রান্ত নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই পরিমিত পরিমাণে ঘুমানো উচিত, প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঘুমের ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। ভালো ঘুমের জন্য শরীরচর্চা, যোগব্যায়াম, ধ্যান, গান শোনা, হাঁটাহাঁটি করার অভ্যাস করা যেতে পারে।
বৃদ্ধ বলে যে প্রবীণকে নিয়ে কোথায় ঘুরতে যাবেন না, এ কাজটি কখনো করবেন না। তাদেরও ইচ্ছে হয় খোলণা হাওয়ায় সময় কাটানোর। মাঝে মধ্যে তাকে নিয়ে ঘুরতে যান। এ ছাড়া পরিবারের সবার সঙ্গে যদি সময় কাটাতে পছন্দ করেন তাহলে তাকে বেশি সময় দিন। এ ছাড়া টিভি দেখা, গান শোনা, বই পড়াসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ব্যবস্থা রাখুন প্রবীণের কাছে।
যেখানে প্রবীণ থাকেন সে স্থান বা সেই বাড়ি যথাসম্ভব নিরাপদ রাখার চেষ্টা করতে হবে। চেষ্টা করতে হবে খোলামেলা পরিবেশে রাখার এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্ন স্থানে রাখার। প্রবীণের ব্যবহৃত বাথরুম যেনো পিচ্ছিল না হয়।
বর্তমান সময়ে সবাই কর্মব্যস্ত। পরিবারে যদি কোনো প্রবীণ থাকেন ও তার দেখাশুনা করার জন্য পরিবারের কোনো মানুষ না থাকলে দেখাশোনার জন্য কেয়ারটেকার রাখুন। যিনি সব সময় প্রবীণের দেখাশুনা করবেন। তবে কর্মব্যস্ততা শেষে চেষ্টা করুন নিজে সময় দেয়ার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনীতি অনেকটাই কূটনৈতিক পরিম-লে আবর্তিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বন্ধুরাষ্ট্র ও উন্নয়ন অংশীদার বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার নানামুখী কর্মকান্ড ও তার প্রভাব নিয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সম্পাদকীয় বিভাগের সাঈদ জুবেরী
দেশ রূপান্তর : ভোটের আগে বিদেশি কূটনীতিকদের তৎপরতা বাংলাদেশে নতুন নয়। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনপূর্ব রাজনীতিতে বিদেশিদের বিভিন্ন তৎপরতা নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। পরিস্থিতি নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
ইমতিয়াজ আহমেদ : এটা তো নতুন না। আগেও হয়েছে, এবারও হচ্ছে। কিন্তু একটা জিনিস হলো যে মিডিয়ার সংখ্যা যেহেতু অনেক বেড়েছে, তারপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রসার ঘটেছে বলে এখন আলোচনা অনেক বেশি হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু আমি মনে করি এটা নতুন না, এটা কমবেশি আগেও হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো এই ধরনের তৎপরতা বাংলাদেশের গণতন্ত্রে কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে। আমাদের বড় বড় যেসব পরিবর্তন হয়েছে, এখন পর্যন্ত যতটুকুই গণতন্ত্র আছে সেসব জনগণের মাধ্যমেই এসেছে, জনগণের স্যাক্রিফাইসের মাধ্যমেই অর্জিত হয়েছে। মনে রাখতে হবে সেটা ৭১ থেকে শুরু করে বড় ধরনের ত্যাগের মাধ্যমে কিন্তু এ দেশের মানুষ গণতন্ত্রের চর্চা করে আসছে। এখানকার জনগণ যেভাবে গণতন্ত্রকে বুঝেছে, তারা সেভাবেই সেটা অর্জন করেছে। এখানে বাইরের শক্তি বিশেষ করে কূটনীতিকদের তৎপরতায় বাংলাদেশের গণতন্ত্র ঠিক হয়েছে তার নজির পাওয়া যায় না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে বিদেশিরা এখন এসব কেন করছে। অনেক দেশই তো আছে যেখানে সেই ধরনের গণতন্ত্র নেই। কিন্তু তাদের সঙ্গে তো যারা এদেশে তৎপরতা দেখাচ্ছে তারা ভালো সম্পর্ক রাখছে। বোঝাই যাচ্ছে যে, এখানে অন্য কারণ থাকতে পারে।
দেশ রূপান্তর : তারা তো বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের সঙ্গে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সুশাসনের মতো বিষয়কে যুক্ত করেছে...
ইমতিয়াজ আহমেদ : তারা সেগুলোর প্রচার করে। কিন্তু কথা হচ্ছে যে, অনেক দেশেই, যাদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আছে, সেখানে তো সেই ধরনের গণতন্ত্রের চর্চা বলতে গেলে একেবারেই নেই। কিন্তু তারপরও তারা সম্পর্ক রাখে এবং সেখানে গণতন্ত্রের জন্য তাদের কোনো ভূমিকা রাখতেও দেখি না। যেমন পাকিস্তানের কথা যদি ধরি বা মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক এমন দেশ রয়েছে যাদের সঙ্গে তাদের বিরাট সম্পর্ক রয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে যে এর কারণ কী? হতে পারে যে তাদের উদ্দেশ্য হয়তো সৎ। এটা ধরে নিলেও আপনি যেসব বললেন গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সুশাসন ইত্যাদির জন্য তাদের চেয়ে আমার মনে হয় অভ্যন্তরীণ রাজনীতিই দায়ী। এখানে যেহেতু বড় ধরনের বিভাজন আছে এবং বিশেষ করে যারা অপজিশনে থাকে তারা এই জিনিসগুলোকে সামনে নিয়ে আসে, তা সে যে দলেরই হোক না কেন। যখন যারা অপজিশনে থাকে তখন তারা এই বিদেশি কূটনীতিক বা বিদেশিদের একটা হস্তক্ষেপ চান বা তাদের কাছে এসব নিয়ে নালিশ করেন। বিদেশি হস্তক্ষেপ বা তাদের কথা বলার স্পেসটা দেশের রাজনীতিবিদরাই করে দেয়।
দেশ রূপান্তর : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ভিসানীতির যে ঘোষণা দিয়েছিল সেটা প্রয়োগের পদক্ষেপ নেওয়া শুরুর কথাও জানিয়েছে তারা। তারা তো সেখানে পুলিশ, প্রশাসন, বিরোধী দলের কথাও বলেছে। বিচার বিভাগ, এমনকি সাংবাদিকদেরও এর আওতায় এনেছে। এই ভিসা নিষেধাজ্ঞার চাপ কি কোনো ধরনের প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন?
ইমতিয়াজ আহমেদ : এটা তো একটা অসম্মানের ব্যাপার। মনে হচ্ছে বাংলাদেশের সবাই একেবারে আমেরিকায় যাওয়ার জন্য রীতিমতো রেডি। সাংবাদিক থেকে শুরু করে পুলিশ, একেবারে সবাই। এই ধারণাটা কেন হয়েছে আমি জানি না।
দেশ রূপান্তর : এই ধারণার কি বাস্তবতা নেই? রাজনীতিবিদ ছাড়া যেসব পেশাজীবীকে ভিসানীতির আওতায় আনার কথা বলা হচ্ছে তাদের বিদেশমুখিতা বা তাদের পরিবারের বিদেশে সেটেল হওয়ার একটা প্রবণতা তো আছেই।
ইমতিয়াজ আহমেদ : কথা হচ্ছে এর পার্সেন্টেজটা কত? আমরা তো ১৭০ মিলিয়ন মানুষের একটা দেশ। আমি যদি সংখ্যা হিসেবে ধরি, সেই দেশের কয়জন আছে যারা বিদেশে চলে যেতে চাচ্ছে। কাজেই এসব কথাবার্তা খুবই হিউমিলিয়েটিং। আমি জানি না তাদের ধারণা কেন হয়েছে, যে বাংলাদেশের সবাই আমেরিকা যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে আছে। এই চিন্তাভাবনা বা মানসিকতাটার কথা আমি জানি না। এটা কি তারাই তৈরি করে নিয়েছে নাকি আমাদের লোকেরা তাদের এমন বুঝিয়েছে? সেজন্যই বলছি যে তাদের হয়তো সৎ ইচ্ছা থাকতে পারে যে আমাদের একটা গণতান্ত্রিক কাঠামো হোক। কিন্তু এ ধরনের কথাবার্তায় আমাদের যে বিভাজনের রাজনীতি সেটা কমছে না বাড়ছে? সহজ উত্তর হবে, এটা তো বাড়ছে। এটা তারা বাড়াচ্ছে কেন। এটা কি তারা জেনেশুনেই বাড়াচ্ছে, নাকি না জেনেশুনে বাড়াচ্ছে? সেই জায়গায় আমার মনে হয় একটু চিন্তা করা দরকার। কারণ যেই গণতন্ত্র তারা চাচ্ছে বা যেই গণতন্ত্র আমরা চাচ্ছি সেটা যদি হয় পশ্চিমা কাঠামোর গণতন্ত্র, তাহলে তো প্রথমে দরকার বড় বড় দলগুলোর মধ্যে ন্যূনতম আস্থা। এটা হচ্ছে ন্যূন্যতম শর্ত। এখন এই ন্যূন্যতম শর্তের ব্যাপারে তো তারা কোনো কন্ট্রিবিউট করছে না। আমার শেষ কথা হলো বাংলাদেশের গণতন্ত্র বাংলাদেশের জনগণকেই ঠিক করতে হবে। বাইরের শক্তি এসে এটা ঠিক করে দেবে, এমন নজির পৃথিবীতে নেই। আমাদের মিডিয়া যে একজনকে এত গুরুত্ব দিচ্ছে, দেখা হলেই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করছে, এখন তাকে একটা কিছু তো বলতে হবে। তাকে যদি বলা হয়, ভিসানীতিতে কি মিডিয়াও পড়বে, সে স্বাভাবিকভাবেই বলবে যে হ্যাঁ, মিডিয়াও পড়বে। বিভিন্নভাবে এখন যে নাম ছড়ানো হচ্ছে, যেখানে সে বলেছে যে, আমাদের আইনে কোনোভাবেই নাম দেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু একাধিক পত্রিকা নাম দিয়ে বলে যাচ্ছে অমুকের বিরুদ্ধে স্যাংশন হয়েছে, তমুকের ভিসা বাতিল হয়েছে। আমরা যে এগুলো করছি, এটা তো আত্মঘাতী ব্যাপার। পলিটিক্যালি এক পক্ষ আরেক পক্ষের নাম বলে যাচ্ছে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে, এটা করে তারা এদেশে বিভাজনটা আরও বাড়াল। আমার মনে হয় তাদের খোলাখুলিভাবে বলা উচিত যে তোমরা যেটা করছ তাতে করে তো বাংলাদেশে কোনোভাবেই গণতন্ত্র বাড়বে না, বরং দিন দিন অবস্থা আরও জটিল হবে। তবে শেষ বিচারে ওই জনগণের ওপরই ভরসা।
দেশ রূপান্তর : এমন আলাপও রয়েছে যে নির্বাচন কেন্দ্র করে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে সেনা সদস্য প্রেরণে এবং পশ্চিমা বিশ্বে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিতে বাধা আসতে পারে। এর সম্ভাবনা কতটুকু, বাধা আসলে কেমন প্রতিক্রিয়া হতে পারে?
ইমতিয়াজ আহমেদ : কোনোই সম্ভাবনা নেই। কারণ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কোনো এক সদস্যের কারণে এটা বন্ধ হয়ে যাবে না। আমরা ভুলে যাই যে, নিরাপত্তা পরিষদে চীন-রাশিয়াও আছে। বিশ্বে অনেক দেশ আছে যেখানে পশ্চিমা কাঠামোর গণতন্ত্র নেই। যারা এটা বলে প্রচার করছে, তারা এটা কেন করছে সেটা আমার জানা নেই। জাতিসংঘের পিস কিপারদের মধ্যে পাকিস্তানের মতো দেশও রয়েছে। বাংলাদেশ সেখানে এক নম্বরে গিয়েছে তাদের পেশাদারিত্বের কারণে। পিস কিপিংয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে যারা প্রশ্ন করে তারা জেনেশুনে করে নাকি না জেনে করে? আর গার্মেন্টস সেক্টরে বাংলাদেশ আমেরিকা বা ইউরোপীয় ইউনিয়নে যে মার্কেট তৈরি করেছে সেটা কোনো মানবিক কারণে হয়নি। এটা খেয়াল রাখতে হবে। এটা একেবারেই ধণতান্ত্রিক প্রিন্সিপাল মেনে হয়েছে। আমাদের থেকে পণ্য নিয়ে তারা বেশি প্রফিট পাচ্ছে বলেই আমরা সেখানে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিতে অবস্থান তৈরি করতে পেরেছি। আমাদের গার্মেন্টস ওনাররা যতটা না প্রফিট পান সেখানকার ওনাররা আরও অনেক অনেক বেশি প্রফিট পান এখান থেকে পণ্য নিয়ে। আমাদের ওনাররা যদি ৬ ডলার লাভ পান, সেখানকার ওনাররা ৩০ ডলার প্রফিট করেন। এটা একেবারে তাদেরই হিসাব করা। মিয়ানমারের কথা যদি ধরেন, যেখানে আমেরিকা বলছে যে তারা একটা জেনোসাইড করেছে, তারা বার্মা অ্যাক্ট নামে একটা অ্যাক্টও করেছে সেখানে তারা বলেছে কোনোভাবেই মিয়ানমার থেকে ইমপোর্ট বন্ধ করা যাবে না। এটা তাদের যারা ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট বা আমদানিকারক তাদের চাপেই হয়তো করেছে। ফলে এসব বুঝতে হবে।
দেশ রূপান্তর : সাম্প্রতিক সময়ে নাইজেরিয়া, হাইতি, সুদান ও নিকারাগুয়াকে মার্কিন ভিসানীতির ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। অনেকের মতে, তাদের ‘গ্লোবাল স্ট্যাটাস ভ্যালু’ বাংলাদেশের চেয়ে কম। তারাই এই ভিসানীতি আমলে নেয়নি, ফলে এ নিয়ে বাংলাদেশের শঙ্কিত হওয়ার কোনোও কারণ নেই। আপনার মত কী?
ইমতিয়াজ আহমেদ : একেবারেই, এটা একটা ভালো প্রশ্ন এবং প্রকৃত উদাহরণ। যেসব দেশে তারা ভিসা রেস্ট্রিকশন দিয়েছে কোনোটাই, কোনোটাই কাজে লাগেনি। এটা যে কেবল এখন তা না, কিউবাতে তারা কত বছর ধরে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। তাই বলে কিউবা কি বসে রয়েছে? ইরান, নর্থ কোরিয়া কি বসে আছে। কথা হচ্ছে যে, এই চিন্তাটা, এটা কেন হয় আমি জানি না। কোন কাঠামোতে এটা আসে সেটা আমি বুঝি না, কারণ আমেরিকাকে বোঝা খুবই মুশকিল। আসলে ওই ধরনের রেস্ট্রিকশন দিয়ে একটা দেশের মধ্যে পরিবর্তন আনার চিন্তাটাই একটা কলোনিয়াল চিন্তাভাবনা। যেখানে বাংলাদেশের জনগণ যথেষ্ট সচেতন, তারা প্রচুর স্যাক্রিফাইস করেছে। তো সেই জায়গায় ভরসা রাখতে হবে। যখন জনগণ চাইবে, বড় রকমের পরিবর্তন তখন কেউ থামাতে পারবে না।
দেশ রূপান্তর : নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ বৃদ্ধির মধ্যে ঢাকা সফর করেছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। ধারণা করা হচ্ছে তিনি পুতিনের বার্তা দিতে এসেছেন। যুক্তরাষ্ট্র যখন চাপ দিচ্ছে তখন রাশিয়ার বার্তা মার্কিন অবস্থানকে নমনীয় নাকি আরও কঠোর করবে?
ইমতিয়াজ আহমেদ : আসলে যে জিনিসটা খেয়াল রাখতে হবে পৃথিবী একটা বহুমাত্রিকতার দিকে যাচ্ছে।
দেশ রূপান্তর : কেউ কেউ মনে করেন, বাংলাদেশকে চীনের আধিপত্যের প্রভাবমুক্ত রাখতে ভূরাজনৈতিক স্বার্থে বাইডেন প্রশাসনের চাপ। এটাও তো বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে। আপনার মন্তব্য কী?
ইমতিয়াজ আহমেদ : হ্যাঁ, আমি সেটাই বলছি। বাংলাদেশের যারা এটা বলেন তাদের মেন্টালিটি এখনো কলোনাইজড হয়ে আছে। তারা মনেই করে যে বাংলাদেশকে একটা না একটা বলয়ের মধ্যেই থাকতে হবে। আমরা যেহেতু সবসময় একটা পরাধীনতার মধ্যে থেকেছি, সেহেতু আমাদের মানসিকতাও পরাধীন হয়ে গেছে। আমার মনে হয় না যে একাত্তরের ওই স্বাধীনতা আমাদের মস্তিষ্কে এখনো ঠিকমতো ঢুকতে পেরেছে। কথা হলো এককেন্দ্রিক যে পৃথিবীটা হয়েছিল, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরে সেই জায়গাতে পৃথিবীটা এখন নেই। একটা পরিবর্তন হচ্ছে এবং একটা বহুমাত্রিক বা যেটাকে আমরা মাল্টিপোলার ওয়ার্ল্ড বলছি, পৃথিবীটা সেদিকে যাচ্ছে। এবং সেখানে কিন্তু একাধিক দেশের উত্থান বা পুনরুত্থান হচ্ছে। সেখানে চীনের যেমন উত্থান হচ্ছে, ভারতেরও হচ্ছে। টার্কিরও পুনরুত্থান ঘটছে। তারপর সাউথ আফ্রিকা আছে, এখানে রাশিয়ারও একটা পুনরুত্থান হচ্ছে। মাল্টিপোলারে একাধিক দেশ কিন্তু উঠে আসছে। এবং এটা থামানোর কোনো উপায় নেই। সেই জায়গাতে লাভরভের আসা, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক করা, ভারতের সঙ্গে বড় আকারে সম্পর্কিত থাকা... এ সবই হলো নিউ নরমাল। এটাকে ওইভাবে দেখা ঠিক হবে না যে ইনি আসছেন, তারমানে আমরা এই বলয়ে চলে যাচ্ছি বা আমরা আমেরিকাকে একটা জবাব দিচ্ছি, তা না। আমাদের সঙ্গে আমেরিকার বহুমাত্রিক সম্পর্ক আছে। একাধিক কাঠামোগত সম্পর্ক তৈরি করা আছে। আমার মনে হয় না, বর্তমান যে সরকার আছে দেশটিতে, তার অপজিশন এভাবে বিষয়গুলো দেখে। দেখা যাবে, যদি রিপাবলিকানরা আগামীতে ক্ষমতায় আসে তাহলে দেখা যাবে পুরো বিষয়টাই পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। আমার মনে হয় এটাকে নিউ নরমাল হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই দেখা দরকার। এটাই স্বাভাবিক যে বাংলাদেশের ওপর একটা এটেনশন তৈরি হচ্ছে, এর কারণ হচ্ছে বাংলাদেশ এই ১৫/২০ বছরে একটা কাঠামো তৈরি করতে পেরেছে, যার একটা ভবিষ্যৎ আছে। ফলে সবাই চাচ্ছে সেই কাঠামোর সঙ্গে পার্টনারশিপ করে যেন প্রফিট করতে পারে। আমরা তো একটা ক্যাপিটালিস্ট ওয়ার্ল্ডে বসবাস করছি, এখানে কোনো কাঠামোই আদর্শ না। কম্পিটিশন আছে, আবার কো-অপারেশনও আছে। সেই জায়গায় জাপান যেভাবে চাইবে আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক করতে চীনও চাইবে, আমেরিকাও চাইবে এমনকি টার্কি, রাশিয়াও চাইবে। এটাই নিউ নরমাল। এবং আমি মনে করি বিভিন্ন ডেলিগেশন আসাটাও এ কারণে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাখোঁর বাংলাদেশ আসাটাও এর অংশ। আমেরিকার আশা হয়তো আমরা বোয়িং কিনব। কিন্তু আমরা বোয়িং কিনব না এয়ারবাস কিনব, সেই নেগোশিয়েশনটা তো রাখতে হবে। মাল্টিাপোলারাইজেশন, এটাই নতুন বাস্তবতা।
দেশ রূপান্তর : হঠাৎ করে ড. ইউনূস সামনে আসার কারণ কী? মার্কিন ভিসানীতির পেছনে ফ্রেন্ডস অব ইউনূসের ভূমিকা কতটুকু?
ইমতিয়াজ আহমেদ : এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো এভিডেন্স নেই। অ্যাকাডেমিশিয়ানদের এটা একটা সমস্যা। রাজনীতিবিদ হলে একটা কথা বলে দেওয়া যেত। কথাটা হচ্ছে ওনার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো হয়েছে আশা করা যায় আদালত বিষয়গুলো দেখবে। আমার মনে হয় না এখানে সরলীকরণ করা ঠিক হবে। ড. ইউনূসের বা তাকে নিয়ে সমস্যাটা অনেক আগে থেকেই ছিল। একেকটা সময়ে আমরা একেকভাবে বিষয়গুলোর সমাধান করতে দেখেছি। তার যে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি হিসেবে থাকার বিষয়টা একভাবে সমাধান হয়েছে। আবার ট্যাক্সের বিষয়টার সমাধান হলো আরেকভাবে। তাই না? তো কথা হচ্ছে গিয়ে এই প্রসেসটা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকমভাবে ছিল। তার কারণেই যে এখন আমেরিকা ভিসানীতি দিয়েছে এটা বেশি সরলীকরণ হয়ে যায়। এটার কোনো এভিডেন্সও নেই, ধরেন এটা নিয়ে যদি কোনো রিপোর্টও হতো, বা এ নিয়ে কেউ বলাবলি করেছে সেটা প্রকাশ পেল তেমনও তো এভিডেন্স এখন পর্যন্ত পাইনি। কারণ, তার প্রতি তাদের সাপোর্ট সবসময়ই ছিল, এটা নতুন না, যেটাকে ফ্রেন্ডস অফ ইউনূস বলা হচ্ছে।
দেশ রূপান্তর : ভারতের অবস্থান অনেকটা নীরব ছিল। অবশ্য জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ ও সেখানে প্রধানমন্ত্রীর তৎপরতার মধ্যে অনেকে এক ধরনের বার্তা খুঁজেছেন। সার্বিকভাবে এখানে ভারতের ভূমিকা কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
ইমতিয়াজ আহমেদ : একটা হলো ভারতের সঙ্গে এই সরকারের একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এটা এই বিজেপি সরকারের সঙ্গে না, সম্পর্কটা ভারতের সঙ্গে। ভারতের একটা বড় ধরনের কন্সাসনেস তৈরি হয়েছে বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে। সেটা হলো ভারতের অন্যতম যে সমস্যা, বিশেষ করে দেশটির নর্থ-ইস্টের যে জঙ্গিবাদ বা মিলিটেন্সি বা ইনসার্জেন্সি বলি সে বিষয়ে বাংলাদেশের জিরো টলারেন্সের ফলে তার একটা সমাধান হয়েছে। বলতে গেলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা মৌলিক পরিবর্তন এই সরকার করতে পেরেছে। এটা অন্য সরকার করতে পারেনি বরং অন্য সরকারের সময় বিশেষ করে বিএনপির সরকার যখন ছিল, তখন এটা একটা বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করেছে। সেদিক থেকে বাংলাদেশের অন্য রাজনৈতিক দল ভবিষ্যতে সেটা পারবে কি না, তা আমরা জানি না। করে দেখাব, আর করে দেখানোটা তো এক না। যার কারণে জি-২০ তে বাংলাদেশকে ভারতের আমন্ত্রণ জানানোটা খুবই স্বাভাবিক। যারা আগে বলেছিল যে, ভারত বোধ হয় এবার অন্য চিন্তা করছে, আমি মনে করি এক্ষেত্রে অন্য চিন্তা করার অবস্থাই নেই। এটা খুবই স্বাভাবিক আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে জি-২০ সম্মেলনে আমন্ত্রণ করা এবং ভারতের পক্ষ থেকে তাকে বড় ধরনের একটা প্ল্যাটফর্ম দেওয়া।
দেশ রূপান্তর : বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সেলফি নিয়ে আমাদের এখানে তো বেশ আলোচনা হয়েছে। এই সেলফি ডিপ্লোমেসির কী প্রভাব?
ইমতিয়াজ আহমেদ : পত্রিকায় যেভাবে খবর দেয় সেটা দুঃখজনক। আমেরিকানরাও যারা আছেন তারাও মনে করেন যে, আমার ছবি পত্রিকায় ছাপিয়েছে সেটা তো সাংঘাতিক ব্যাপার। হা হা হা। ফলে, মিডিয়া, অ্যাকাডেমিশিয়ান, গবেষক, টক শোয়ের গেস্ট আমাদের সবারই পেশাদারিত্ব বাড়ানো দরকার যে কোনটা আমরা নিরুৎসাহিত করব আর কোনটা না। সেই জায়গায় আমরা যদি না যেতে পারি, তাহলে মনে হবে যে সাংঘাতিক কিছু একটা হয়ে যাচ্ছে। এই ভিসা রেস্ট্রিকশন, তারপর নানা রকম বিবৃতিকে আমরা যদি কম গুরুত্ব দিতে পারতাম।
দেশ রূপান্তর : গুরুত্বের ব্যাপারটা তো দিপক্ষীয়। বিরোধীরা যেমন ভিসানীতিকে গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করেছে, সরকার দলীয়রাও বাইডেন-হাসিনার সেলফিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে।
ইমতিয়াজ আহমেদ : কারা কীভাবে কাকে গুরুত্ব দিচ্ছে সেদিকে আমি যাচ্ছি না। কেউ নেগেটিভলি দিচ্ছে, কেউ পজিটিভলি দিচ্ছে। কথা হচ্ছে, আমি অ্যাকাডেমিশিয়ান হিসেবে বলছি, যে আমরা গুরুত্বটা যদি একটু কম দিতাম তাহলে ভালো হতো। মানে একটা দেশের প্রেসিডেন্ট আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি তুলতেই পারেন, সেটা তো অস্বাভাবিক কিছু না। মনে রাখতে হবে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক সরকারপ্রধান। সেই জায়গাতে তিনি নিজেই তো একটা বড় আকর্ষণ। আমি মনে করি যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একটা দেশের নারী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সেলফিটা বাইডেনও দেখাতে চাইবেন। আমাদের নেগেটিভটা দিয়েই আমরা দেখছি। হয়তো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নারী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছবিটা বাইডেন তো মধ্যপ্রাচ্যে দেখাতে চাইতে পারে। এগুলোকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি, আমাদের মনে রাখতে হবে যে আমেরিকার সঙ্গে আমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্ক রয়েছে। তারা অনেক সময় অনেক পদক্ষেপ নেয়, সেগুলো যে তারা সব বুঝেশুনে নেয় তা না, সেটা তো পরিষ্কার। আফগানিস্তানের ব্যাপরেই আমরা জানি যে তার পলিসিতে ভুল ছিল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে অনেক বছর পরে তারা বুঝতে পারে যে তারা ভুল পদক্ষেপ নিয়েছে।
দেশ রূপান্তর : নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের গুরুত্ব কতটুকু?
ইমতিয়াজ আহমেদ : আমি মনে করি না যে এর কোনো গুরুত্ব আছে। নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আসা না আসায় গণতন্ত্রের তেমন কিছু যায় আসে না। আমি নিজেই ১৯৯৬ সালে পাকিস্তানের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হিসেবে গিয়েছিলাম। যে নির্বাচনে নওয়াজ শরিফ জিতল। তাতে কি পাকিস্তানের গণতন্ত্রে বড় কোনো পরিবর্তন হয়েছে? অনেকেই বলবেন যে পাকিস্তানের গণতন্ত্র আরও পেছনে চলে গিয়েছে। কাজেই আমি মনে করি না যে এই আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দিয়ে বাংলাদেশের বা যে কোনো দেশের গণতন্ত্র ঠিক করা যায়। আর এখন যে টেকনোলজি তৈরি হয়েছে, তারা আসুক বা না আসুক, এমনিতেই তো খবরাখবর রাখা যায়। আর তারা এসেই বা কী করবে? ভোটের দিনেই তো আর নির্বাচন হয় না। নির্বাচনের যে প্রক্রিয়া, তাতে ভোটের অনেক আগেই কিন্তু নির্বাচন শুরু হয়ে যায়। নমিনেশনের একটা সমস্যা রয়েছে, আমেরিকাতেই তো মিলিয়নিয়ার ছাড়া কেউ নমিনেশন পান না। তো আমেরিকার গণতন্ত্রের মধ্যেই বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। পাশাপাশি ব্ল্যাক লাইফ ম্যাটারের মতো ইত্যাদি বিষয় আছে। কাজেই ওই ভোটের দিন পর্যবেক্ষণ করে গণতন্ত্রকে ঠিক করা যাবে না। প্রসেসটা অনেক বড়। আমি মনে করি, আমেরিকানদের চেয়ে বাংলাদেশের জনগণ যথেষ্ট সচেতন বিশেষ করে রাজনীতির ব্যাপারে অনেক সচেতন, ঐতিহাসিকভাবেই। তারাই ঠিক করবেন। ওই নির্বাচন পর্যবেক্ষক দিয়ে বা ভিসানীতি দিয়ে এটা ঠিক হবে না, এদেশের জনগণই ঠিক করবেন, যেখানে ঘাটতি আছে।
বিশ্বের প্রায় ৩০০ কোটি মানুষের জন্য ‘ডেঙ্গু’ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়াতে ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি। শীতপ্রধান দেশের চেয়ে নিরক্ষীয় এলাকাতেই এডিস মশা বেশি জন্মানোর ফলে দক্ষিণ এশিয়াতে এর প্রকোপ বাড়ছে। এই রোগে প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আক্রান্ত হন লাখ লাখ মানুষ, মৃত্যু হয় হাজার হাজার।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
একদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের খবরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। এই নিয়ে পুলিশের কানাঘুষা চলছে। ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কী হতে পারে তা নিয়ে চলছে বিচার-বিশ্লেষণ। একই সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতা কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় তা নিয়েও দুশ্চিন্তা বেড়েছে পুলিশের। দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে পুলিশ সদর দপ্তরও ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আদালতে গিয়ে অনুমতি নিতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য তাকে (খালেদা জিয়া) আবারও কারাগারে যেতে হবে বলেও জানান তিনি। যুক্তরাষ্ট্র সফররত প্রধানমন্ত্রী ওয়াশিংটন ডিসিতে স্থানীয় সময় বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভয়েস অব আমেরিকাকে (ভিওএ) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে দলটির নেতাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তাদের নেত্রীকে বিদেশে যেতে হলে আবারও আদালতে যেতে হবে, জেলে যেতে হবে প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর পরিস্থিতি বদলে গেছে বলে তারা মনে করছেন।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরটি মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে কার্যকর কোনো আইন না থাকায় এই মন্তব্য হাওর-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। এমন মন্তব্যের সূত্র অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ আইন-১৯৫০-এর ৯০(২) ধারা এবং ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েল-১৯৯০-এর ৩২৬ ধারার বিধান অনুযায়ী কৃষিজমিকে অকৃষি শ্রেণিতে পরিবর্তন করে শিল্প, বাণিজ্যিক বা আবাসিক কাজে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘তারা বলে আর অনুমতি নেবে না। অবৈধ সরকার থেকে অনুমতি নেবে না। তাহলে অবৈধ সরকারের কাছে খালেদা জিয়ার মুক্তির আবেদন কেন করে? এ সরকার যদি অবৈধ হয়, এখানে কেন আবেদন?’ বিএনপিকে হুঁশিয়ারি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মিটিং করতে গেলে সরকারের অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি না নিলে খবর আছে। পালাবার পথ পাবেন না।’
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলা নিয়ে ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেসব তথ্য উল্লেখ করেছেন সেগুলো ‘মিথ্যাচার’ বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘ভয়েস অব আমেরিকাকে প্রধানমন্ত্রী কিছু কথা বলেছেন, যেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির মামলা নেই। তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রাখা হয়েছে।’
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
ভোটাধিকার, সন্ত্রাস-দখলদারিমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস, সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করেছে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রঐক্য’ নামে একটি ছাত্রজোট। ৯ দফার ভিত্তিতে ১৫টি ছাত্র সংগঠনকে নিয়ে এই ছাত্রঐক্য হয়। যার বেশিরভাগই বাম ধারার ছাত্র সংগঠন এবং নামসর্বস্ব। ক্যাম্পাসগুলোতে যাদের তেমন কোনো অবস্থান নেই। তাই প্রশ্ন উঠেছে, এসব ছাত্র সংগঠনকে নিয়ে আদৌও আন্দোলন সফল করা যাবে কি না।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনীতি অনেকটাই কূটনৈতিক পরিম-লে আবর্তিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বন্ধুরাষ্ট্র ও উন্নয়ন অংশীদার বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার নানামুখী কর্মকান্ড ও তার প্রভাব নিয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সম্পাদকীয় বিভাগের সাঈদ জুবেরী
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে সৌদি আরব ও ইসরায়েল ঐতিহাসিক চুক্তির রূপরেখা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। হোয়াইট হাউস গত শুক্রবার এ কথা জানায়। কয়েক দশকের শত্রুতামূলক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে উভয় দেশের মধ্যে চুক্তি প্রণয়নে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘চুক্তি চূড়ান্ত করতে সব পক্ষই তৎপর রয়েছে।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী ও চরমপন্থিদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠছে কানাডা, যা দিন দিন দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে তুলছে দিল্লির। যুক্তরাষ্ট্রের থিংকট্যাংক সংস্থা হাডসন ইনস্টিটিউটে দেওয়া এক বক্তব্যে এই অভিযোগ করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম গতকাল শনিবার জানায়, গত শুক্রবার হাডসন ইনস্টিটিউটে বক্তব্য দেন জয়শঙ্কর। তার বক্তব্য শেষে একজন সাংবাদিক কানাডার সঙ্গে ভারতের সাম্প্রতিক টানাপোড়েন নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘কানাডার প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি কিছু অভিযোগ করেছেন।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
হৃদরোগ বললে হৃৎপিন্ডের অসুস্থতা বোঝায়। হৃদরোগকে দুই ধরনের। এক জন্মগত হৃদরোগ জন্মের পর হৃৎপিন্ডের দেয়ালে ছিদ্র, ভাল্বের গঠনে ত্রুটিজনিত সমস্যা। এ ধরনের সমস্যা দেখা যায় ১ থেকে ২ ভাগ। দুই অর্জিত হৃদরোগ বাতজ্বরজনিত, যাকে রিউমেটিক হার্ট ডিজিজ (জঐউ) বলা হয়। এটা হার্টের ভাল্বের ক্ষতি করে। অবশিষ্ট প্রায় ৯৭-৯৮% হৃদরোগই মূলত হার্টের নিজের রক্তনালির প্রতিবন্ধকতা বা ব্লকজনিত।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল-ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্টের কাজ প্রায় শেষের দিকে। এ প্রকল্পে ঋণ দিয়ে আসছে জাপান। ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটির এ প্রকল্পে প্রায় ৪৪ হাজার কোটিই ঋণ দেওয়ার কথা জাইকার। এরই অংশ হিসেবে সপ্তম পর্যায়ে জাপানের সঙ্গে আরও ১৫০ কোটি ডলারের ঋণ দেওয়ার চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। গতকাল শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে ঋণের সুদের হারের সীমা। এতে ব্যাংকগুলোতে ঋণের বিপরীতে সুদের হার বেড়েছে। কিন্তু আমানতে সুদের হার বাড়ায়নি ব্যাংকগুলো। এতে ব্যাংকে ঋণ এবং আমানতের সুদের হার দিন দিন বাড়ছে। গত আগস্টে ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান বা স্প্রেড বেড়ে ১৯ মাসে সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে। এই সময় স্প্রেড ছিল ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
গত শুক্রবার দেশের ১৮টি হলে মুক্তি পেয়েছে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী এস ডি রুবেল অভিনীত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘বৃদ্ধাশ্রম’। এই ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবেও আত্মপ্রকাশ হয়েছে তার। ছবিতে তার নায়িকা ইয়ামিন হক ববি। আপাতত সিনেমার প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও নিয়মিত নতুন গান প্রকাশ করছেন। নতুন সিনেমার কাজেও হাত দিয়েছেন। সমসাময়িক বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন মাসিদ রণ
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ‘নিশাত বাহিনীর’ সদস্যরা ভাড়ায় খেটে তান্ডব চালিয়ে বালু লুট করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর প্রতিবাদ করায় একই পরিবারের নারীসহ চারজনকে পিটিয়ে আহত করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ নিশাত বাহিনীর চার সদস্যকে আটক করেছে। গতকাল শনিবার দুপুরে উপজেলার হাটাবো শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় এলাকায় ঘটে এ ঘটনা। এ ঘটনার পর নিশাত বাহিনীর অব্যাহত হুমকির মুখে বালুর গদির মালিক মোবারক হোসেনসহ পরিবারের সদস্যরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
অপেক্ষা আর মাত্র ৪ দিনের। তারপরই শুরু হয়ে যাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ডের চার বছরের রাজত্ব আরও চার বছর টিকিয়ে রাখার আর বাকিদের সেই মুকুট কেড়ে নেওয়ার লড়াই শুরু হবে গতবারের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই দিয়েই। শাহরুখ খানকে দিয়ে প্রোমো আর রণবীর সিংকে দিয়ে থিম সং, আইসিসি জানান দিয়েছে ক্রিকেটে বলিউডি আবেগের মিশেল ভালোই থাকবে।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
রাজধানীর অদূরে আশুলিয়ায় বহুতল ভবনের একটি ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রী ও তাদের ১২ বছর বয়সী ছেলের গলা কাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার রাত ১০টার দিকে জামগড়া জামগড়া ফকিরবাড়ির মোড় এলাকার মেহেদী হাসানের মালিকানাধীন ছয়তলা ভবনের চারতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
‘জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে আমার স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলাম সুস্থ করতে। কিন্তু ফিরে এলো লাশ হয়ে। কয়েকজন আনসার সদস্যের কারণে মাত্র এক সপ্তাহে আমার পুরো পরিবার এলোমেলো হয়ে গেছে। অভিযোগ করেছিলাম হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষের কাছে। তারা তদন্ত কমিটি গঠন করে আনসার টিমকে বদলি করে দায় সারতে চায়। কিন্তু আমার সংসার যে এলামেলো হয়ে গেল, এর বিচার কি শুধু বদলি?’ কথাগুলো বলছিলেন, রাজধানীর শ্যামলী এলাকার বাসিন্দা সেলিম রেজা।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
১৯ শতকে স্পেনে খনিশ্রমিকরা একটি গুহায় খননকাজ চালানোর সময় জুতার মতো কিছু বস্তু খুঁজে পান। পরে সেগুলো ঘাসের তৈরি জুতা বলে নিশ্চিতও হওয়া যায়। তবে জুতাগুলোর বয়স কত তখন ধারণা ছিল না গবেষকদের। সম্প্রতি কার্বন ডেটিংয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়ায় গেছে, আবিষ্কৃত জুতাগুলো কম করে হলেও ছয় হাজার বছর আগের।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
এক দফা দাবিতে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহ জেলায় নতুন করে ২২টি মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় প্রায় পৌনে তিন শো নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। এ ছাড়া সাভারের আমিনবাজারে বিএনপির সমাবেশ শেষে হেমায়েতপুর এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে উপজেলায় বিএনপির ৪০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
মালদ্বীপে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন বিরোধীদলীয় প্রার্থী মোহাম্মদ মুইজু (৪৫)। দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে প্রাথমিক ফলাফলে তাকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। গতকাল শনিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সান এমবি। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ২ লাখ ৮২ হাজার ৮০৪ জনের ভোট দেওয়ার কথা ছিল। তবে নির্বাচনে ভোটদানের হার ছিল ৮৬ শতাংশ, যা প্রথম দফার ৭৯ শতাংশের চেয়ে বেশি।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম ও কুমিল্লার বটগ্রাম মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা নুরুল হক। আলেমদের অবস্থান সুসংহত করাসহ জেলার মাদ্রাসাগুলোকে একতাবদ্ধ রাখা ও শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তার বিশেষ অবদান রয়েছে। সাদাসিধে চলাফেরায় অভ্যস্ত আশি বছর বয়সী এই আলেম বেশ কয়েকটি মাদ্রাসায় দীর্ঘদিন ধরে হাদিসের বিশুদ্ধতম গ্রন্থ সহিহ বোখারি শরিফের দরস দেন। তার বর্ণাঢ্য জীবন নিয়ে লিখেছেন শামসুদ্দীন সাদী
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
রক্তশূন্যতা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ একটি বিষয়। রক্তশূন্যতা অন্য রোগের সঙ্গে একটি উপসর্গ হতে পারে। কখনোবা নিজেই একটি রোগ হতে পারে। রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কোনো কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে নেমে গেলে তাকে বলা হয় অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা।
শরীরে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর লোহিত রক্তকণিকার অভাব হলে অ্যানিমিয়া হয়। ফলে রক্ত পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন বহনে অক্ষম হয়ে পড়ে। অ্যানিমিয়া অস্থায়ী বা দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে এবং হালকা থেকে গুরুতর পর্যন্ত হতে পারে।
রক্তাল্পতার সবচেয়ে প্রধান লক্ষণগুলির মধ্যে একটি হল ক্লান্তি। এ ছাড়া অন্যান্য লক্ষণগুলোর মধ্যে হলো,
দুর্বলতা
অনিয়মিত হৃদস্পন্দন
মাথা ঘোরা বা হালকা মাথাব্যথা
ঠান্ডা হাত পা
ফ্যাকাশে বা হলুদ ত্বক
নিঃশ্বাসের দুর্বলতা
বুক ব্যাথা
মাথাব্যথা
বেশিরভাগ অ্যানিমিক রোগীদের প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ মিলিগ্রাম আয়রন খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। রক্তাল্পতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে যে খাবারগুলি তা হল,
ফলমূলে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। প্রতিদিন আয়রনযুক্ত ফল যেমন আপেল, টমেটো, বেদানা, কলা, আঙ্গুর, কমলা, গাজর ইত্যাদি খেলে রক্তশূন্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই সরাসরি আয়রন গ্রহণ করতে প্রতিদিন ২-৩ টি ফল খেতে ভুলবেন না।
পালং শাকের মতো গাঢ় শাক-সবজি আয়রনের একটি বড় উৎস। এ ছাড়া বিভিন্ন রকম সবজি, যেমন কচু শাক, কচুর লতি, কচু, পালং শাক, বিট, লেটুস, ব্রকোলি, ধনিয়া পাতা এবং পুদিনা পাতা নিয়মিত খেলে রক্তশূন্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কারণ এই শাক সবজিগুলোতে আয়রনের পাশাপাশি ফলিক এসিড আছে যা রক্তের হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
বাদাম এবং বীজ হল সবচেয়ে পুষ্টিকর-ঘন খাবার। এক আউন্স পেস্তা একজন ব্যক্তির প্রয়োজনীয় দৈনিক আয়রনের ৬.১ ভাগ সরবরাহ করে থাকে। বিভিন্ন ধরনের বাদাম ও শণ বীজ, সূর্যমুখী বীজ, কুমড়ো বীজ, পেস্তা, আখরোট এগুলো শরীরের প্রয়োজনীয় আয়রন দিয়ে থাকে।
মাংস ও মাছে রয়েছে শরীরের জন্য পর্যাপ্ত আয়রন। বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ আয়রনের ভাল উৎস। তাছাড়া ছোট মাছ যেমন-শিং মাছ, টেংরা মাছ ইত্যাদি সব মাছেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। রক্ত স্বল্পতায় ভুগছেন এমন রোগীদের জন্য সবজির সাথে মুরগির মাংসের স্যুপ আয়রন সমৃদ্ধ খাবার তৈরি করতে পারে।
এ ছাড়া কলিজা, স্যামন মাছ, টুনা, চর্বিহীন গরুর মাংস, চিংড়ি, মুরগির মাংসও রক্ত স্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।
উচ্চ স্তরের আয়রন ও প্রোটিনের সমৃদ্ধ উৎস হল ডিম। যাদের রক্ত স্বল্পতা রয়েছে তাদের সকালেওর নাস্তায় ডিম অবশ্যই রাখা উচিত। ডিমের মধ্যে রয়েছে প্রোটিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। রক্তস্বল্পতা কমিয়ে শরীরে রক্তের পরিমাণ বাড়াতে ডিম খুব উপকারী। ডিমের কুসুমের মধ্যে থাকা আয়রন শরীরে লোহিত রক্তের কণিকার পরিমাণ বাড়ায়।
দুধ শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও প্রোটিন যোগাতে সাহায্য করে। দুধে খুব বেশি পরিমাণে আয়রন না থাকলেও এতে প্রায় সব রকমের ভিটামিন আছে। এছাড়াও দুধে আছে পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়াম। এই খাদ্য উপাদানগুলো রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়িয়ে রক্তশূন্যতা দূর করতে সহায়তা করে। তাই রক্তশূন্যতার রোগীদের জন্য নিয়মিত দুধ খাওয়া উপকারী।
অ্যানিমিয়া বা রক্ত স্বল্পতা রোগীদের জন্য মটরশুটি এবং মসুর ডালকে একটি সুপারফুড বলে মনে করা হয়। আধা কাপ মসুর ডালে প্রায় ৩.৩ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে, যা সারাদিনে শরীরের চাহিদার প্রায় ২০%। মটরশুটি এবং ডাল প্রচুর পরিমাণে আয়রন সরবরাহ করে।
এ ছাড়া ছোলা, কালো শিম, সয়াবিন এগুলোতেও প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে যা শরীরে রক্ত উৎপাদনে সাহায্য করে।
কুইনোয়া, ওটস, গম, ফোর্টিফাইড পাস্তা, শস্য জাতীয় খাবারে প্রয়োজনীয় আয়রন পাওয়া যায়। এগুলি সকলেই আয়রন সমৃদ্ধ এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
মধু আয়রনের একটি ভালো উৎস। আয়রন ছাড়াও মধুতে কপার ও ম্যাঙ্গানিজ আছে। এই উপাদানগুলো শরীরে হিমোগ্লোবিন প্রস্তুত করতে সহায়তা করে। তাই রক্তশূন্যতা দূর করতে প্রতিদিন ১ চামচ মধুর সাথে পরিমাণগত লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন।
১. কিছু ধরণের খাবার শরীর থেকে আয়রন শোষণ করে থাকে। তাই শরীরে রক্ত স্বল্পতা থাকলে এই সমস্ত খাবার না খাওয়াই শ্রেয়। যেমন দই, কাঁচা দুধ, পনির, ব্রকলি, টোফু, চা-কফি ইত্যাদি।
২. খাবার খাওয়ার এক ঘণ্টা আগে–পরে চা, কফি, কোনো কোমল পানীয় খেলে খাবারের আয়রন শরীরে ঠিকভাবে শোষিত হতে পারে না। তাই এরকম অভ্যাস থাকতে বদলে ফেলুন।
৩. খালিপেটে ফল খাবেন না। ফলের ভিটামিন সি খাবারের আয়রনকে শোষিত হতে সাহায্য করে।
৪. মাছ, মাংস ও ডিম খাওয়ার পর দুধের খাবার খাওয়া ঠিক নয়।
৫. অতিরিক্ত ভাঁজা-পোড়া বা জাঙ্ক ফুড খাওয়া উচিত নয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’