
প্রখ্যাত ব্রিটিশ অণুজীববিজ্ঞানী, জৈব পদার্থবিদ এবং স্নায়ুবিজ্ঞানী ফ্রান্সিস হ্যারি কম্পটন ক্রিক ১৯১৬ সালের ৮ জুন জন্মগ্রহণ করেন। ওয়াটসন ও মরিস উইলকিন্সের সঙ্গে যৌথভাবে ডিএনএ মলিকিউলের কাঠামো আবিষ্কার করেন তিনি। তাদের এই আবিষ্কারে নিউক্লেয়িক অ্যাসিডের আণবিক কাঠামো, ডাবল হেলিক্স এবং জীবিত সত্তার দেহে তথ্য স্থানান্তরে এর ভূমিকার কারণে ১৯৬২ সালে যৌথভাবে ফিজিওলজি বা মেডিসিনে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন ফ্রান্সিস ক্রিক। বিশ্বসেরা একজন অণুজীববিজ্ঞানী হিসেবে তার গবেষণাগুলো জেনেটিক কোডের রহস্য উন্মোচনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নোবেল প্রাপ্তির পরের সময়টা থেকে বাকি জীবন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ‘সাল্ক ইনস্টিটিউট ফর বায়োলজিক্যাল স্টাডিজ’-এ গবেষণা করে কাটিয়েছেন ফ্রান্সিস ক্রিক। পরবর্তী জীবনে তার গবেষণার কেন্দ্রে চলে আসে তাত্ত্বিক স্নায়ুবিজ্ঞান এবং মানুষের স্নায়বিক চৈতন্যবিষয়ক বৈজ্ঞানিক গবেষণা। ফ্রান্সিস ক্রিকের জন্ম হয়েছিল যুক্তরাজ্যের নর্থহ্যাম্পটনে। তার বাবার নাম হ্যারি ক্রিক ও মায়ের নাম অ্যানি এলিজাবেথ ক্রিক। তার বাবা ও চাচা বুট ও জুতো তৈরির পারিবারিক ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। নর্থহ্যাম্পটন গ্রামার স্কুলে পড়ালেখার পর ১৪ বছর বয়সে ফ্রান্সিস বৃত্তি নিয়ে লন্ডনে পড়তে চলে যান। সেখানে গণিত, পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। ১৯৩৭ সালে লন্ডন ইউনিভার্সিটি কলেজ থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ফ্রান্সিস একজন বিদেশি হিসেবে ‘আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব আর্টস’-এর সম্মানসূচক সদস্যপদ লাভ করেন এবং ১৯৯১ সালে ‘ব্রিটিশ অর্ডার অব মেরিট’-এ ভূষিত হন।
বাংলাদেশের গণতন্ত্র, নির্বাচনকে সামনে রেখে যে সম্প্রতি মার্কিন ভিসানীতি দেওয়া হয়েছে সেটাকে দুইভাবে দেখা যায়। এই যে ডেমোক্রেসি বা গণতন্ত্রকে সমর্থন বা সুষ্ঠু নির্বাচনকে সমর্থন, এটার মধ্যেও একটা জিও-পলিটিক্যাল দিক আছে। সেটা কীরকম? একটা হলো তাত্ত্বিক পর্যায় থেকে দেখা যেতে পারে। বাংলাদেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিকভাবেই বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বেশ ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে আসছে। সেটা বিভিন্ন পর্যায়ে, বহুমাত্রিকভাবে। সেই সম্পর্কটা কিন্তু গত ৫২ বছরে ইতিবাচকভাবেই আবর্তিত হয়েছে। যেমন প্রথম দুই দশকের কথা যদি ধরি, সেই সম্পর্কটা ছিল মূলত এইড নির্ভর। ওই সময় বাইরে থেকে আমরা যে আর্থিক অনুদানগুলো পেতাম তার একটা বড় কন্ট্রিবিউটর বা অংশীদার ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারা যে আর্থিক অনুদান দিত তার ভিত্তিতে আমরা আমাদের অর্থনীতিটা চালু রাখার চেষ্টা করতাম। আমাদের বাজেটও হতো সেভাবে। প্যারিস ক্লাবের পয়সা থেকেই তখন আমাদের বাজেট হতো। আমরা প্যারিসে গিয়ে জেনে আসতাম যে ডোনাররা কত দেবে, তার ভিত্তিতে আমরা বাজেট তৈরি করতাম। আর প্যারিস ক্লাবের সবচেয়ে বড় দাতা হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের সবচেয়ে বড় ডোনারও তারা। স্বাধীনতার প্রথম দুই দশক এই নির্ভরতাটা ছিল। তার পরের ২০ বছরে দেখা যায় সম্পর্কটা বিবর্তিত হয়েছে। সেই এইড বা অনুদান নির্ভর সম্পর্ক থেকে এটা কিন্তু বাণিজ্যিক সম্পর্কে পরিবর্তিত হয়েছে। এই পর্যায়ে সম্পর্কটা লেনদেনের দিকে গেল। অর্থাৎ আগে আমরা একপাক্ষিকভাবে তাদের কাছ থেকে কেবল সাহায্য নিতাম পরে লেনদেনের বাণিজ্যিক সম্পর্কের দিকে গেলাম। এর মধ্য দিয়ে সম্পর্কেও একটা গুণগত পরিবর্তন হলো। বাংলাদেশের ৫২ বছরের হিসেবে এর পরের ১২ বছর যদি ধরি তাহলে এই সময়ে সম্পর্কটা কৌশলগত সহযোগিতার জায়গায় এসেছে। ২০১২ সালে আমাদের মধ্যে পলিটিক্যাল ডায়ালগ শুরু হয়েছে। সিকিউরিটি ডায়ালগ, ইকোনমিক ডায়ালগ হয়েছে। তখন থেকে এসব শুরুর পর এখন কাঠামোটা অনেক বেশি নিয়মতান্ত্রিক হয়েছে। একটা সম্মানজনক জায়গায় পারস্পরিক সহায়ক হিসেবে আমাদের সম্পর্কটা তৈরির দিকে এগিয়ে নিয়েছি। এর ফলে সম্পর্কে নতুন যে উপাদানগুলো যোগ হয়েছে বা প্রত্যাশাটা তৈরি হয়েছে সেটা হচ্ছে বাংলাদেশ যেন গণতান্ত্রিক পথে যায়। আমরা একটা বড় জনগোষ্ঠীর দেশ, বঙ্গোপসাগরের পাশেই আমাদের অবস্থান। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একটা সংযোগ স্থাপনের ভৌগোলিক অবস্থানে আমরা দাঁড়িয়ে আছি। ইত্যাদি বিবেচনায় বাংলাদেশ কৌশলগত গুরুত্বও তৈরি করেছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপিয়ান বা পশ্চিমা জগৎ এশিয়া অঞ্চলের ইতিবাচক অর্থনীতির অগ্রগতির প্রেক্ষাপটে যখন বিশেষভাবে নজর দিচ্ছে। সেই মনোযোগের দিক থেকে আমরাও সেই বিশেষ মনোযোগের বা তাদের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছি। এই কারণেই বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চেহারা, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে ইতিবাচকভাবে সম্পৃক্ত হয়ে আছে। লক্ষ করলে দেখা যাবে, সন্ত্রাসবাদবিরোধী যেসব কর্মকা- হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশ কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে। আমেরিকার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটার মাত্রা এর মাধ্যমেই বোঝা যায়।
এবার যদি নতুন প্রেক্ষাপটে আসি। বাইডেন প্রশাসন আসার পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার আগের সেই সন্ত্রাসবাদবিরোধী গ্লোবাল ন্যারেটিভ থেকে বেরিয়ে এসেছে। এখন মার্কিন প্রশাসন তার অভ্যন্তরীণ কারণে, গত ৭/৮ বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই গণতান্ত্রিক সংকট তৈরি হয়েছে। সেই সংকট থেকে উত্তরণের আলোকেই এখন অনেক কিছু হচ্ছে। তারা মনে করছে যে বাইরের পৃথিবীটাতেও যদি গণতন্ত্রকে শক্তিশালী না করা যায় তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে বৈশ্বিক স্বার্থ আছে সেটা রক্ষা করা যাবে না। এখানে বৈশ্বিক স্বার্থ বলতে তাদেরই কৌশলগত স্বার্থের কথা বুঝিয়েছি। তারা একটা রুল বেজড গ্লোবাল অর্ডারের কথা বলে। সেখানে মুক্তবাজার অর্থনীতির কথা বলে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু থাকার কথা বলে। এগুলোর সবই তো আমাদের জন্যও ইতিবাচক। ভারত মহাসাগরে বা বঙ্গোপসাগরে যদি রুল বেজড মানে আইনের শাসন থাকে বা সমুদ্রপথটা যদি নির্বিঘ্ন হয় তাহলে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে মার্কিন বর্তমান প্রশাসনের অন্যতম অগ্রাধিকার হলো গণতন্ত্র। বাইডেন প্রশাসন পরিষ্কার বলেছে, গণতান্ত্রিক বিশ্ব, অগণতান্ত্রিক বিশ্ব। তারা গণতান্ত্রিক বিশ্বটাকেই শক্তিশালী করতে কাজ করবে এটা তো ঘোষণাই করা হয়েছে। তারা নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে বিশ্বের অন্য দেশগুলোতেও গণতন্ত্র যাতে শক্তিশালী হয়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যেন চালু থাকে সে লক্ষ্যে সক্রিয় হয়েছে। কাজেই এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের এই দুটি মৌলিক বিষয়কে যদি আমরা দেখি তাহলেই বোঝা সম্ভব হবে যে এখানে কীভাবে আমরা কৌশলগত জায়গায় একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে আছি।
এখন ভূ-রাজনৈতিক জায়গার প্রসঙ্গে আসি। এ অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার বন্ধু বাড়াতে চাইছে এটা যেমন সত্যি কথা তেমনি আমরা তো নিজেদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু বলেই মনে করি। সে ক্ষেত্রে তাদের যে পরিকল্পনা সেখানে কয়েকটা বিষয় আছে। একটা হচ্ছে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি। অর্থাৎ এই ভারত মহাসাগর অঞ্চলকে ঘিরে তারা এখন বন্ধু বা একটা গণতান্ত্রিক বাতাবরণ তৈরি করতে আগ্রহী। এরও কারণ রয়েছে। তারা মনে করে চীন অগণতান্ত্রিক। কাজেই চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে গেলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো আমার বন্ধু হিসেবে থাকলে মার্কিন অবস্থানটা শক্তিশালী হয়। এজন্য তারা চাইছে আমরা যেন আদর্শিকভাবে গণতন্ত্র চর্চার মধ্যে থাকি।
গণতন্ত্র কিন্তু শাসক দলের গণতন্ত্র না বা শাসনব্যবস্থার গণতন্ত্র না। গণতন্ত্রের মূল বক্তব্য হচ্ছে জনগণের ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকার। সেটাই হচ্ছে গণতন্ত্র। কাজেই সেই গণতন্ত্রের আলোকে জনগণই নির্ধারণ করবে কারা শাসন ক্ষমতায় থাকবে। এবং সেটা ঠিক করার প্রক্রিয়াটাই হচ্ছে নির্বাচন। যদি লক্ষ করি, গণতান্ত্রিক চর্চার কথা কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই বলছে না, অন্যরাও বলছে। আমাদের প্রতিবেশীরাও তাই-ই প্রত্যাশা করে। এখন এটা নিয়ে ভিসানীতি দেওয়াতে বা ব্লিঙ্কেন সাহেব কথা বলেছেন বলে আমাদের একটু খারাপ লাগতে পারে। কিন্তু লক্ষ করলে দেখা যাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া সবাই চায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটা চালু থাকুক ও সেটা শক্তিশালী হোক। এর মধ্য দিয়ে মানুষের অধিকারের জায়গাটাও সাবলীল থাকুক। নিরাপদ থাকুক। বিশ্বের যে বড় বড় অর্থনীতি আছে যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আমাদের গার্মেন্টসের বড় চালান যায় সেখানে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সিঙ্গেল এক্সপোর্ট ডেস্টিনেশন। জাপান আমাদের এক নম্বর বাই ন্যাচারাল ডোনার। তারপর ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, জাতিসংঘের কথাও এক। জাতিসংঘ তো স্পষ্ট করেই গণতান্ত্রিক চর্চার কথা বলেছে। কাজেই লক্ষ করলেই বোঝা যাবে যে, এখানে একটা বৈশ্বিক আকর্ষণ বা অ্যাটেনশন যদি বলি, সেটা কিন্তু বাংলাদেশ পাচ্ছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের চর্চা হোক মানুষ তার অধিকারটা পাক। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিটাও চালু থাকুক, নির্বিঘœ থাকুক। এসব নিয়ে দেশে-বিদেশে একটা সচেতনতা আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। ব্লিঙ্কেন সাহেব যেটা বলছিলেন যে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনটার দিকে বিশ্ব তাকিয়ে আছে। এই জায়গাটায় আমরা তার একটা ইঙ্গিত বা প্রতিফলন দেখতে পাই। আমরা সামগ্রিক অর্থে বিবেচনা করি তাহলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র চর্চা, আগামী নির্বাচন, মানুষের অধিকারের মতো বিষয়গুলো যে শুধুমাত্র আমাদের জন্যই প্রয়োজন বা দরকার তা নয় কিন্তু। বৈশ্বিকভাবে বাংলাদেশকে অন্যরা কীরকম দেখতে চায় তারও একটা ইঙ্গিত রয়ে গেছে। এটা তো আমাদের জন্যও ইতিবাচক হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন তো ইতিমধ্যেই বলেছে যে আমরা যদি জিএসপি প্লাস পেতে চাই তাহলে আগামী নির্বাচনটা তারা সুষ্ঠু দেখতে চায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও সেটা দেখতে চায়। জাপানও তার প্রত্যাশার কথা বলেছে। আর চীন যে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু থাকুক সেটা চায় না, সেটা কিন্তু কখনই বলেনি। চীন চায় এমন একটা বাংলাদেশ যেটা স্থিতিশীল, অগ্রসরমাণ। কাজেই আমাদের বন্ধু বলেন আর উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্র, তারা সবাই কিন্তু এই একটা ব্যাপারে সহমত বলে আমার মনে হয়েছে।
এক্ষেত্রে তাদের চাওয়া তো আছেই তার চেয়ে বড় তো আমাদের নিজেদের চাওয়া। সেটা হলো শান্তিপূর্ণভাবে, টেকসইভাবে আমাদের এই উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। সেজন্য সবচেয়ে উত্তম পথ হচ্ছে গণতান্ত্রিক চর্চাটাকে সাবলীল রাখা। তবে মার্কিন ভিসানীতির ক্ষেত্রে এখানে বাংলাদেশের দিক থেকে চীন-রাশিয়ার দিকে খানিকটা ঝুঁকে থাকার প্রবণতার বিষয়টির কথা অনেকে বলতে পারেন। তা খানিকটা থাকলেও আমি মনে করি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকলে অটোমেটিক্যালি ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু হয়ে যাব। স্থিতিশীলতার জন্যও এটা দরকার। শ্রীলঙ্কার উদাহরণই যথেষ্ট। দেশটির পরিস্থিতির জন্য পুরোটা না হলেও চীনা ঋণের একটা ভূমিকা আছে। চীনা সহায়তার প্রশ্নে পাকিস্তানেরও প্রায় একই অবস্থা। তারা এখন আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিতে চেষ্টা করছে। তাদের দৃষ্টিতে চায়না একটা সমস্যা। তাই এই দেশগুলো যাতে সেদিকে না যায় সেজন্য একটা কৌশলগত জায়গা পশ্চিমাদের থাকতে পারে। কিন্তু তাদের এই কনসার্ননেস বা সহায়তার উপাদানটা কাজে লাগবে না, যদি দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক না থাকে।
প্রশ্ন হচ্ছে, মার্কিন ভিসানীতি বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে কী ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে? এক্ষেত্রে কতগুলো জিনিস দেখা দরকার। একটা হলো মার্কিন ভিসা রেস্ট্রিকশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যতিক্রম না। তারা বেশ কতগুলো দেশের ওপর ভিসা রেস্ট্রিকশন বিভিন্ন সময়ে দিয়েছে। তাতে সেই দেশের রাজনীতি ও পরিস্থিতির যে খুব একটা পরিবর্তন হয়েছে সেটা বলা মুশকিল। আমাদের পাশের দেশ মিয়ানমারের ওপরও এরকম রেস্ট্রিকশন আছে, তাতে যে দেশটির কোনো পরিবর্তন হয়েছে সেটা দেখা যায় না। ঠিক একইভাবে অনেক দেশ আছে যেখানে হয়তো গণতন্ত্রের কাঠামো খুবই দুর্বল। যেমন, পাকিস্তানের কথা ধরা যেতে পারে। কিন্তু সেসব দেশের বেলায় আমরা এ ধরনের রেস্ট্রিকশন দেখি না। অন্যকথায়, এটা তারা যে খুব চিন্তাভাবনার মধ্য দিয়ে এটা করেই তা আমার কখনই মনে হয়নি। কারণ, মনে রাখতে হবে, যেকোনো দেশের রাজনীতি ও গণতন্ত্রের যে বিষয় সেখানে ন্যূনতম কতগুলো বিষয় বা শর্ত থাকতে হয়। গণতন্ত্র নিয়ে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম ডেফিসিট বা ঘাটতি বিভিন্নভাবে আছে। কোনো সন্দেহ নেই যে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের এক ধরনের ঘাটতি আছে। আবার অন্য দেশে সেই ঘাটতিটা অন্য ধরনের। কথা হচ্ছে, সেটা বাইরের একটা ফোর্স এসে কি সমাধান করতে পারবে? আজ আমেরিকার গণতন্ত্রের যে ঝামেলা সেটা কি বাইরের কোনো শক্তি তার সমাধান করতে পারবে? আমার মনে হয় না। এটা ওই দেশের জনগণকেই সমাধান করতে হবে। এখন ন্যূনতম শর্ত যেটা, সেটা বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেন আস্থা থাকে। পশ্চিমা কাঠামোতে যেই নির্বাচনের কথা বলা হয়, আমাদের দেশেও যেহেতু ব্রিটিশদের হাত ধরে সেটা এসেছে; সেখানে বড় বড় পার্টিগুলোর মধ্যে আস্থা থাকতে হবে। দেশের বড় বড় দলগুলোর নিজেদের মধ্যে কোনো আস্থা নেই।
আমেরিকা এই যে ভিসা রেস্ট্রিকশনটা দিল, এতে কি আস্থা বাড়বে নাকি বিভাজন বাড়বে? খুব সহজে এর উত্তর হলো এখানে আস্থাটা বাড়বে না, বরং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে বিভাজনটা আছে সেটাই আরও বাড়বে। তাহলে যেই গণতন্ত্রের কথা চিন্তা করা হচ্ছে সেখানে এই বিভাজনটা যদি বাড়ে, তাহলে তো আর সেই গণতন্ত্রটা আর হয় না। তাহলে এই বিভাজন যে তারা বাড়াচ্ছে এর কারণটা কী? এটা কি তারা জেনেশুনেই বাড়াচ্ছে? ব্যবসায়িক স্বার্থ থেকে শুরু করে জিও-পলিটিক্যাল স্বার্থ, এসব পূরণেই কি ভিসানীতি বা বিভিন্ন স্যাংশন, রেস্ট্রিকশন? অনেক দেশের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক আছে যেখানে গণতন্ত্রের অভাব আছে।
এখন আমেরিকার ভিসানীতি ঘোষণার বড় দেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। নেতাকর্মীরা নানা ধরনের কথাবার্তা বলছেন। এগুলো হচ্ছে রাজনীতির কথা। কিন্তু আমি ওই রাজনীতির আলাপে যেতে চাই না। অ্যাকাডেমিশিয়ান হিসেবে আমি মনে করি না, দেশের বড় দুই দল এই মার্কিন ভিসানীতির কারণে নিজেদের মধ্যে ওই আস্থার জায়গায় আসছে বা আসবে। বিরোধী দল মনে করছে বা বলার চেষ্টা করছে যে সরকারি বা ক্ষমতাসীন দলের ওপর প্রেশার দেওয়া হয়েছে। আর ক্ষমতাসীন দল বলতে চাচ্ছে যে, আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন করব কিন্তু বিরোধী দল যেন সেখানে বাধা দিতে না পারে। আবার সরকারি দলের অনেকে এটাও মনে করছে যে, যেহেতু কেয়ারটেকার সরকারের কথা ভিসানীতিতে বলা হয়নি সেহেতু আমেরিকাও বুঝে ফেলেছে যে এই সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। এবং ইলেকশন কমিশনকে এখন দেখাতে হবে যে এটা স্বচ্ছ নির্বাচন হলো কি না। সেক্ষেত্রে বিভাজন বাড়ানোর যেই রাজনীতি সেটাই চোখে পড়ছে। শেষ বিচারে বাংলাদেশের গণতন্ত্রে যেই দুর্বলতা আছে সেটা যদি ঠিক করতে হয় ভিন্নভাবে ভাবতে হবে। মনে রাখতে হবে যে আমাদের দেশে তেমন পলিটিক্যাল স্ট্যাবিলিটি কিন্তু সেভাবে কখনই ছিল না, যেটা এবার হয়েছে বা ২০০৯ থেকে যদি বলি সেটা একটা রেজিম স্ট্যাবিলিটি হয়েছে, এটাও কিন্তু পার্থক্যকরণের দরকার। পলিটিক্যাল স্ট্যাবিলিটি বাংলাদেশে কখনই ছিল না, এই রেজিম স্ট্যাবিলিটি বা একটি গোষ্ঠীতন্ত্রের স্থিতিশীলতায় যেটা হয় উন্নয়নের কাঠামোটা করা সম্ভবপর হয়। রেজিম স্ট্যাবিলিটির কারণে উন্নয়নের একটা কাঠামো করা গেছে। ফলে বাংলাদেশের প্রতি অনেকের আকর্ষণ বেড়েছে। অনেকে মনে করছে, উন্নয়নের ব্যাপারে বাংলাদেশের একটা প্রমিস আছে। পলিটিক্যাল আনস্ট্যাবিলিটি সত্ত্বেও রেজিম স্ট্যাবিলিটি থাকার ফলে উন্নয়নের যে কাঠামো বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে তাতে অনেক দেশই মনে করে এখানে উন্নয়ন সম্ভাবনা রয়েছে। এটা বিশ^ব্যাংকও মনে করে, আইএমএফও মনে করে। এবং সেই হিসেবে চীন, জাপানসহ বিভিন্ন দেশ মনে করে। কথা হচ্ছে যে এই জিনিসটাকে ধরে রাখার বিষয়। আমাদের এমন সময় এটা ধরে রাখতে হবে যখন গোটা পৃথিবীতেই একটা বড় পরিবর্তন আসছে বা ঘটছে। সেটা হলো এককেন্দ্রিক বিশ^ থেকে বহুকেন্দ্রিক বিশ^ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছে পৃথিবী।
বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমেরিকা যে ভিসানীতি দিয়েছে, সেখানে পুলিশ প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিদের কথাও বলা হয়েছে। এর ফলে নির্বাচন বা সুষ্ঠু ভোটের পক্ষে প্রভাব পড়বে কি না। আমার কথা হচ্ছে, কোনো প্রভাবই পড়বে না। ধরলাম কারও কারও ছেলেমেয়ে আমেরিকায় থাকে, আমেরিকায় যাওয়াটা তাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। কথা হচ্ছে যে সে যদি ক্ষমতায়ই না থাকে তাহলে আমেরিকা যাওয়া না যাওয়ার কী আছে! আমাদের তো সবকিছুতেই বিভাজন হয়ে গিয়েছে। এটা কেবল রাজনীতিবিদদের মধ্যে না। ধারণা করা হয়, রাজনীতিবিদ ছাড়া অন্য পেশাজীবী যারা অবৈধ সম্পদ আহরণ করেছেন, আত্মীয়দের বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন তারা আসলে একটা সেফ এক্সিট চান। কিন্তু এটা এত সহজ না। ক্ষমতা চলে গেলে তো সে এমনিতেই সমস্যায় পড়বে। প্রশ্ন উঠতে পারে, যারা মানি লন্ডারিং করছে তাদের সেফ প্যাসেজ দিতেই এসব ভিসানীতি, রেস্ট্রিকশন কিনা। কথা সেটা না, কথা হচ্ছে যারা ক্ষমতার অবৈধ বা অনৈতিক চর্চা করছে সে তো এমনিতেই বড় প্রেশারে আছে। কারণ ক্ষমতা চলে গেলে কী হবে সেটা তার বড় চিন্তার বিষয়। এখন আমরা তো দেখছি যে নানা রকম মামলা, গ্রেপ্তার, আইনি প্রক্রিয়ায় পড়ে বিরোধীদের কী নাজেহাল অবস্থা। তখন তো সে এসবের মধ্যে পড়বে। ফলে তারা ক্ষমতাটা ধরেই রাখতে চাইবে। রাজনীতিবিদদের ক্ষেত্রে যেমন, পেশাজীবীদের মধ্যেও তেমন। ক্ষমতাটা কেউ আসলে ছাড়তে চায় না। এটা আমি পলিটিক্যাল সায়েন্টিস্ট হিসেবে বলছি, এটা অনেকেই বুঝতে চায় না।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণের একটা বড় ভূমিকা থাকে। এখানে গণতন্ত্র নিয়ে যতগুলো পরিবর্তন হয়েছে সেগুলো কিন্তু জনগণই করেছে। সেই জনগণের ওপর আস্থা রাখতেই হবে। বাইরের কোনো শক্তি ভিসা রেস্ট্রিকশন দিয়ে বা স্যাংশন দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ঠিক করে দেবে, এটা সম্ভব না। আমি মনে করি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় পলিটিক্যাল পার্টি বা সিভিল সোসাইটির যদি ইচ্ছা থাকে, তাহলে তাদের জনগণের কাছেই যেতে হবে। এখন জনগণ কী চাচ্ছে সেটা যদি আমরা না দেখি তাহলে কিন্তু আমরা বুঝতে পারব না যে জনগণ কখন আন্দোলন করে বা কখন করে না। কেউ যদি বলে কাঠামোটা অনেক কঠিন হয়ে গেছে তাই চাইলেও জনগণ আন্দোলনে নামতে পারছে না, সেটাও ঠিক না। কারণ আমারা তো এর চেয়ে বড় সিচুয়েশন ফেস করেছি, মার্শাল ল’ দেখেছি। বিভিন্ন কাঠামো ভাঙতে জনগণ যে বাসায় বসে ছিল তা তো নয়। আমাদের যেটা বোঝা দরকার, আমরা যেভাবে গণতন্ত্রকে ডিফাইন করি সব মানুষ তো আর একভাবে গণতন্ত্রকে দেখে না। জরিপেও দেখা গেছে গণতন্ত্র বলতে তারা যতটা না নির্বাচন বোঝে, বাংলাদেশের জন্য ৫৪ শতাংশের বেশি মনে করে খাদ্য, শিক্ষা, বাসস্থান, বস্ত্রকে মানে বেসিক নেসেসিটিকে বড় মনে করে। ওই জরিপে মাত্র ১১ শতাংশ নির্বাচনকে বড় মনে করেছে। এই ১১ শতাংশের মধ্যে আবার এলিট বেশি, জনগণ কম। এর স্পষ্ট উদাহরণ হলো শ্রীলঙ্কা। দেশটির নির্বাচন নিয়ে কিন্তু কোনো প্রশ্ন করে না কেউ। ছোট দেশ, নির্বাচনও স্বচ্ছই হয়। কিন্তু তারপরও আমরা দেখেছি সেখানে পার্লামেন্টে পাবলিক অ্যাটাক করেছে, প্রেসিডেন্টের বাসায় আগুন দিয়েছে। কেন হয়েছে? কারণ দেশটির ইকোনমি যেভাবে ধসে পড়েছিল তাতে মানুষ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। ভিসা রেস্ট্রিকশন দিয়ে কি এটা করা যাবে? বা স্যাংশন? আমেরিকায় আমাদের যে মার্কেট, গার্মেন্টস প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে, এটা তারা দয়া দেখিয়ে করেনি। মনে রাখতে হবে এটা একটা ক্যাপিটালিস্ট বিশ^। সেই প্রিন্সিপাল মেনেই সেখানে আমাদের মার্কেট হয়েছে। ভারত, চীন, ভিয়েতনামের থেকে আমদানির চাইতে বাংলাদেশ থেকে পণ্য নিলে তাদের প্রফিট বেশি, বিষয়টা খুবই পরিষ্কার। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এই যে বার্মা অ্যাক্ট করল আমেরিকা সেখানে তারা একসেপশন ক্লজ রেখেছে যে কোনোভাবেই বার্মার ইমপোর্ট থামানো যাবে না। কারণ, আমেরিকার ব্যবসায়ীদের স্বার্থ। সবশেষে যেটা বলতে চাই, আমেরিকার উদ্দেশ্য হয়তো সৎ আছে, যে তারা চায় বাংলাদেশে গণতন্ত্র শক্তিশালী হোক। কিন্তু এই ভিসানীতি যেভাবে তারা দিয়েছে, সেখানে তেমন চিন্তাভাবনা তাদের ছিল বলে মনে হয় না। আর আমাদের যেটা করতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভাজন কমাতে হবে, আস্থা বাড়াতে হবে। এই বিভাজন রেখে বাংলাদেশে যেই গণতন্ত্রের কথা বলা হয় সেটা আসবে না। এখানে আমাদের যেমন নতুন চিন্তাভাবনার অভাব আছে, তেমনি বিদেশিরাও এই জায়গাতে ফোর্স করছে না। তাতে হচ্ছে কি, বিভাজনটা বাড়ছে।
ঢাকার অদূরে সবুজে ঘেরা, শহরের কোলাহল ও ট্রাফিকমুক্ত একটি বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে দেশের মানুষ দেশের একমাত্র ‘সম্পূর্ণ আবাসিক’ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবেই চেনে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ, এমনকি দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য হল প্রশাসন একটি সিটের ব্যবস্থা করতে পারে না। যে অসীম সম্ভাবনাময়ী ও আত্মপ্রত্যয়ী বয়সে শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠন করার কথা, তখন তাদের গণরুম নামক এক ‘নরকে’ টিকে থাকার লড়াই করতে হয়। লাখ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে, হাজারো মেধাবী শিক্ষার্থীকে বেছে নিয়ে কীভাবে তাদের মেধা ও সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুম নামক ‘নরকের’ বিলুপ্তি, অছাত্রদের হল থেকে বের করে দেওয়া ও নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিতের দাবিতে গত চারদিন ধরে ‘প্রত্যয়’ নামের একজন শিক্ষার্থী হলের বাইরে মাঠে অবস্থান করে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছরের একটি স্নাতক সম্পন্ন করতে যান। অথচ তার স্নাতক কোর্সের অর্ধেক সমাপ্ত হওয়ার সময়ে তাকে হলে একটি সিটের দাবিতে খোলা আকাশের নিচে রাত-দিন অবস্থান করতে হচ্ছে। এই সময়ে প্রত্যয়ের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত তরুণ ও শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে জার্নাল লেখার কথা কিন্তু দেশের একমাত্র ‘আবাসিক’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়েও তাকে হলে থাকার ন্যূনতম আবাসনের জন্য আন্দোলন করতে হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীর দাবি যৌক্তিক, কিন্তু বাস্তবায়নে সময় লাগবে’। ভিসি মহোদয়ের বক্তব্যে আমার ন্যূনতম আস্থা নেই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ বছর পড়ালেখা করেছি। চার বছর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে জাতীয় দৈনিকে সাংবাদিকতা করেছি। একটি বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে ফাংশান করে, খুব কাছ থেকে দেখেছি। ভিসি আসে ভিসি যায়। প্রভোস্ট আসে, যায়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকটের সমাধান আসে না। প্রতি বছর নতুন ব্যাচ আসার আগে হল প্রশাসন ‘অছাত্রদের হল ছাড়তে’ বলে নিয়ম রক্ষার একটি নোটিস সাঁটান। তাদের দৌরাত্ম্য অতটুকুই। হল প্রশাসনের অছাত্রদের হল থেকে বের করার ইচ্ছে বা সাহস নেই। হল ছাড়া কেন, শিক্ষার্থীদের হলের সিট বণ্টনেও হল প্রশাসনের ন্যূনতম প্রভাব নেই। এমনকি কোনো হল প্রভোস্ট বলতে পারবেন না, তার হলে কতজন ছাত্র ও কতজন অছাত্র অবস্থান করছেন! আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুম বিলুপ্তি করে নিয়মিত ছাত্রদের সিট বণ্টনের দাবি করেছিলাম, তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জবাব ছিল ‘নতুন হল হলেই আবাসন সমস্যার সমাধান হবে’।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর হলের সিট সাপেক্ষে নতুন ভর্তি নেওয়া হয়। তাহলে যতজন নিয়মিত ছাত্র আছে তত সিটই আছে। তবু কেন দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা হলে সিট পান না? কারণ ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পরও দুই-তিনটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করেন। সেই সঙ্গে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের সিট দখলদারিত্ব তো আছেই! এখন যখন নতুন হল হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের আসন সংখ্যা বেড়েছে। ফলে শিক্ষার্থী ভর্তি সংখ্যাও বাড়বে। নতুন আঙ্গিকে দখলদারিত্ব শুরু হবে। ফলে সিস্টেমকে চ্যালেঞ্জ না করে, নতুন হল দিয়ে আবাসন সমস্যার সংকটের আশা ‘কুমিরের বাচ্চা দেখানোর গল্প’ ছাড়া কিছুই না।
গণরুমের অমানুষিক নির্যাতন : গণরুমের অবাসযোগ্য পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আরেক নারকীয় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। পৃথিবীর কোনো সভ্য সমাজে এটা ভাবা যায় না যে, চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবীদের বাছাই করে তাদের গণরুমে রেখে রাত জাগিয়ে ‘ম্যানার শেখানোর’ নামে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়। গণরুমে যা হয় সবকিছু সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবগত। কিন্তু হল প্রভোস্ট ‘অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা’ শীর্ষক ‘তোতাপাখির বুলি’ ছাড়া কোনো কিছুর ক্ষমতা রাখেন না। প্রক্টর অফিস জানে না, কতটি অভিযোগ তাদের দপ্তরে জমা আছে। র্যাগিং, নবীন শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, রাত জাগিয়ে রাখা, গ্রিলে ঝুলিয়ে রাখা এসব জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুমের নিত্যদিনের চিত্র। গণরুমের কাছে গিয়ে কান পাতলেই শোনা যায় কী অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। একজন সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছাতে বাবা-মায়ের বছরের বছর কী পরিমাণ আত্মত্যাগ করতে হয় তা শুধু মা-বাবাই জানেন। আর সে কাক্সিক্ষত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর রাত জাগিয়ে বাবা-মা’কে গালি শুনানো হয়। এটা কোন সভ্য দেশের প্রক্রিয়া? বাবা-মা কি সন্তানদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠিয়েছে রাত জেগে তাদের গালি শুনাতে? এসব বছরের পর বছর হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নাকের ডগায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কী করেছে এবং করতে পেরেছে? কিছুই না।
গাছ কাটা নিষেধ : বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ‘অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প’ নামে মেগা উন্নয়ন প্রজেক্ট চলমান রয়েছে। এই প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অংশীজন অতিথি পাখি যাতায়াত, আবাস্থল ও ন্যূনতম গাছ কেটে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি কোনো পরামর্শ, প্রস্তাবকে আমলে নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার একটা দাবিতে তিনি শেষ পর্যন্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থী দ্বন্দ্বে পরিণত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌহার্দ্যকে বিসর্জন দিয়েছেন। জাহাঙ্গীরনগরের অংশীজন প্রাণ-প্রকৃতির বেশ যতœশীল ও আবেগপ্রবণ। প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনশনেও বসতে পারেন। এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি তীব্র আন্দোলনের রেশ না কাটতেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ফের ‘মহাপরিকল্পনা’র বাইরে গিয়ে একটি সংরক্ষিত অঞ্চলে ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকদের আপত্তির মুখে প্রশাসন এই প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এখন ভবন নির্মাণে অমূল্য আরও ৫০০ গাছ কাটা যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে দৈনিক দেশ রূপান্তর, ২৫ মে, ২০২৩।
ইতিমধ্যে অপরিকল্পিত মহাপরিকল্পনার জন্য জাহাঙ্গীরনগরে সবুজ, প্রাণ-প্রকৃতি হুমকির মুখে। অথচ দেশের একমাত্র ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারটি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত। সাবেক ভিসি ফারজানা ইসলাম জানিয়েছিলেন, তাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ‘জাহাঙ্গীরনগরের সুবজ যেন নষ্ট করা না হয়’। অথচ নির্বিচারে গাছের পর গাছ কেটে অপরিকল্পিত উন্নয়নের মধ্যে আবারও ৫০০ গাছ কাটার কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের রেশ বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে পড়তে শুরু করেছে ইতিমধ্যে। হয়তো আমাদের আগামী ভবিষ্যতের মধ্যে সবচেয়ে কম গরমের বছরটি আমরা পার করছি। আসছে বছর আরও তীব্র তাপপ্রবাহ অপেক্ষা করছে। পরের বছর তীব্রতর। এখন বৃক্ষ সৃজন, প্লাস্টিক বর্জন, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর জ্বালানি-নির্ভর বিদুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধ করে ধরণীকে বাঁচানোর সময়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের সংকটের পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের আসার আগে অন্তত দেশের বুদ্ধিভিত্তিক জায়গাগুলোতে তৈরি হওয়া দরকার। ঢাকার মতো জায়গায় যেখানে একটি গাছ মানে একটি অমূল্য হীরা সেখানে সিটি করপোরেশন গাছ কেটে ফেলছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে ইতিমধ্যে প্রাণ-প্রকৃতি হুমকির সম্মুখীন সেখানে বেপরোয়া প্রশাসন ফের গাছ কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন না পারছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা করতে, না পারছে মেধাবী তরুণদের জীবনকে গতিশীল রাখতে।
অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড সাধারণত বিভিন্ন গুদামজাত শস্যকে পোকামাকড় থেকে রক্ষা করার জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে ইঁদুর দমনে এই ওষুধের জুড়ি নেই। কিন্তু ছারপোকা, আরশোলা দমনের নামে এই পেস্ট বিভিন্ন ধরনের ট্যাবলেট আকারে যথেচ্ছ ব্যবহৃত হচ্ছে। মারাত্মক কীটনাশক অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড বাতাসের সংস্পর্শে গেলেই রুদ্রমূর্তি ধারণ করে। প্রকাশ করে তার আসল ক্ষমতা। এই মারাত্মক কীটনাশক, বাতাসে মিশে গিয়ে উৎপাদন করে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফাইন। এই গ্যাসের কারণেই মৃত্যু হয় পোকামাকড়ের। কিন্তু বাসাবাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ থাকলে, গ্যাস বাতাসের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায় ঘরের মধ্যে। কোনো মানুষ যখন শ^াসপ্রশ^াসের মাধ্যমে সেই গ্যাস টেনে নেন, তখনই তিনি ঢলে পড়ছেন মৃত্যুর কোলে। সামান্য সময়ের ব্যবধানে, প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে শুরু হয় মাথাধরা, বমি। একপর্যায়ে মানুষ অচেতন হয়ে পড়ে। বেশি পরিমাণে তা শরীরের মধ্যে প্রবেশ করলে মৃত্যু সুনিশ্চিত। যে কারণে ছারপোকা, আরশোলা, ইঁদুর বা কোনো ধরনের পোকামাকড় বিনাশ করতে চাইলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী, যে কোনো পেস্ট কন্ট্রোল বা ট্যাবলেট ব্যবহার করা উচিত। কম সময় ও সঠিক উপায়ে এইসব পোকামাকড় দূর করার পদ্ধতিই হচ্ছে-পেস্ট কন্ট্রোল। শহর বা গ্রামে এ সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকার কারণে, প্রায়ই মৃত্যু বা গুরুতর অসুস্থতার খবর জানা যাচ্ছে।
খোদ রাজধানীর বিভিন্ন পাবলিক বাস, ফুটপাত অথবা বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যেই এই ট্যাবলেট বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ‘পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস’র নামে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, সেই প্রতিষ্ঠানে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মীরা জানেনই না, তারা কী ধরনের ওষুধ বাসাবাড়িতে স্প্রে করছেন! অধিকাংশই অনুমোদনহীন এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রশাসনিক তৎপরতার খবর কেউ জানে না। গতকাল দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত ‘বাসায় পেস্ট কন্ট্রোলে মৃত্যুঝুঁকি’ সংবাদের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সংবাদে আরও বলা হয়েছে, পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
আসলে পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরণের ওষুধ বিক্রি হচ্ছে, সেই তথ্য কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে আছে, আমাদের জানা নেই। এও জানা নেই, সেই ওষুধে কোন কেমিক্যালের মিশ্রণ ঘটানো হচ্ছে? রাস্তাঘাটে যখন সাধারণ মানুষের কানে আসে চিৎ হইয়া মরবো, কাইৎ হইয়া মরবো, ধরফরাইয়া মরবো, উপ্তা হইয়া মরবো, পাও চ্যাগাইয়া মরবো তখনই শহরের বিভিন্ন এলাকার ভ্যানগাড়ি বা পাবলিক বাসে হকারদের কথার ছন্দে আকৃষ্ট হয়ে তারা নিয়মিতভাবে ক্রয় করছেন এই ওষুধ। এসব কেমিক্যাল স্প্রে বা ট্যাবলেট বিক্রির বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। একইসঙ্গে জনগণকে সচেতন করার উদ্যোগ নেওয়াও জরুরি।
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
আইন মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি বলছে, আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে। সরকারের এমন নেতিবাচক সিদ্ধান্তের পর এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি দেয়নি দলটি। তবে এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি এক দফার আন্দোলনের সঙ্গে যোগ হতে পারে বলে জানা গেছে।
৫৩ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও দলীয় নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গুরুতর। বিদেশে নেওয়া ছাড়া তার উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়। সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসনকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ চেয়ে তার ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। এতে মতামত দিতে আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় আইন মন্ত্রণালয় এতে মতামত দেয়। এ বিষয়ে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেছেন, তার সাময়িক মুক্তির আদেশটা বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) কারাগারে নেওয়া হলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া বাসায় চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশে যেতে পারবেন না এমন দুটো শর্ত সাপেক্ষে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে দন্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। দরখাস্তটা নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে আটবার দন্ড স্থগিত করা হয়েছে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার কোনো সুযোগ আইনে থাকে না। আমরা ৪০১ ধারার উপধারা ১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ ব্যাখ্যা করে মতামত পাঠিয়েছি। আমাদের মতামত হলো, ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে, সেটা অতীত এবং মীমাংসিত। এটা আর খোলার কোনো উপায় নেই।’
এক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে (খালেদা জিয়া) সাজা স্থগিত রেখে যে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, সেটা বাতিল করে তারপর পুনরায় বিবেচনা করার সুযোগ থাকলে সেটা করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই উপমহাদেশে ৪০১ ধারার ক্ষমতা যখন প্রয়োগ করে, তখন এটি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না বলে সিদ্ধান্তের নজির আছে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন যে আদেশটা আছে, সেটা যদি বাতিল করা হয়, বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) যদি আবার কারাগারে নেওয়া হয়, তাহলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু এ অবস্থায় আদালতে যেতে পারবেন না।’ খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের বিষয়টি বাতিল করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা অমানবিক হবে, বাতিল করব না।’
আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এক বার্তায় বলেন, ‘আজকের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, দেশে আইনের শাসন নেই। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক ভয়ংকর তামাশা করা হচ্ছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, নির্বাহী বিভাগ চাইলেই কাউকে মুক্তি দিতে পারে।’
খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় বিএনপি কী এখন ভাবছে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে।’
আর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর নীলনকশার অংশ। মানবতাবিরোধী ও সরকারের বর্বর ইচ্ছা পূরণের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।’
দলটির নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদন আইনগতভাবে বিবেচনা না করে, রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে। ফলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করতে না পারলে বিএনপিপ্রধানের মুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমেই এই ইস্যুর সুরাহা করতে চায় দলটি।
কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেখানে বলা হয়েছে, তাকে “দেশে চিকিৎসা নিতে হবে”, তার বদলে “দেশে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন” বলাই যথেষ্ট। কিন্তু দেশে চিকিৎসা গ্রহণের শর্তারোপ করা হলে তা যে চিকিৎসার বিবেচনায় না করে রাজনীতির বিবেচনায় করা হবে, সেটা বোঝার মতো বুদ্ধি সাধারণ মানুষের আছে।’
অসুস্থতার কারণে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের মার্চে করোনার সময় টানা দুই বছর কারাভোগের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরেছিলেন খালেদা জিয়া। পরে এ পর্যন্ত তার মুক্তির মেয়াদ আটবার বাড়িয়েছে সরকার।
এরই মধ্যে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তাকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ দিতে পরিবারের পক্ষে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এ বিষয়ে আইনি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদনটি পাঠায়।
বিএনপিপ্রধানকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছিল ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি সরকার ইতিবাচকভাবে দেখতে পারে’। কিন্তু সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ‘বিদেশে যাওয়ার আবেদন করতে হলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরত গিয়ে করতে হবে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের পর সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় এবারও ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না। গত শনিবার এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এ শঙ্কাই প্রকাশ করেছিলেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা আছে, যেকোনো মূল্যে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকার মরিয়া। সে কারণে হয়তো খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি ঝুঁলিয়ে রাখতে চাইছে এমনটাই মনে করছে সরকারবিরোধীরা। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দিলেই সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলেও বিরোধী নেতাদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। তবে শর্ত দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দল যাতে সম্মত না হয়, সে কথাই নেতাদের বলে রেখেছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির হাইকমান্ড মনে করছেন, এ অবস্থায় চলমান এক দফার আন্দোলনে খালেদা জিয়ার মুক্তি বিষয়টি থাকলেও সেটাকে আরও জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে; যাতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নেয়।
জানা গেছে, এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে দলটি। আজ সোমবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক রয়েছে। সূত্র বলছে, জোটগত ছাড়াও দলীয়ভাবেও কর্মসূচি আসতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক চিকিৎসক জানান, হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তার কেবিনে এক্স-রে মেশিন নেওয়া হয়েছিল গতকাল ভোরে। শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে না এলে সিসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ ছিল। দুপুরে তার ইসিজি ও ইকো ডায়াগ্রাম করানো হয়েছে। ফুসফুসের পানি অপসারণের জন্য তার ডান পাশে যে ক্যাথেটার লাগানো ছিল, সেটা আপাতত খুলে ফেলা হয়েছে।
লিভার জটিলতা ছাড়াও ৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ফুসফুস, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। গত ৯ আগস্ট ফিরোজায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে দলীয় মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) সেটআপে কেবিনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছে।
জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘ওনার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সে জন্য তাকে দ্রুত বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে পাঠানো দরকার।’
অপেক্ষা আর মাত্র ৩ দিনের। তারপরই শুরু হয়ে যাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ডের চার বছরের রাজত্ব আরও চার বছর টিকিয়ে রাখার আর বাকিদের সেই মুকুট কেড়ে নেওয়ার লড়াই শুরু হবে গতবারের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই দিয়েই।
শাহরুখ খানকে দিয়ে প্রোমো আর রণবীর সিংকে দিয়ে থিম সং, আইসিসি জানান দিয়েছে ক্রিকেটে বলিউডি আবেগের মিশেল ভালোই থাকবে। কিং খানের ‘জাওয়ান’ কাঁপাচ্ছে পর্দা, কাটতি বাড়ছে বক্স অফিসে; বিশ্বকাপে আইসিসির পকেট ভরবে তো?
প্রস্তুতি বলছে, ভরবে। উইকেটে হবে রান উৎসব, লড়াই হবে ধুন্ধুমার। তাতেই ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ হবে এক ব্লকবাস্টার মেগা হিট।
মাস তিনেক আগে, বিশ্বকাপের মূলপর্বের ম্যাচগুলো যে ১০ ভেন্যুতে আয়োজন করা হবে সেই ভেন্যুগুলোর কিউরেটরদের সঙ্গে বসেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান কিউরেটর। সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপের একটাই মন্ত্র, রান চাই।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে, ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে ৩ ওয়ানডের সিরিজ খেলেছে সেই ম্যাচগুলো যদিও বিশ্বকাপের ভেন্যুতে হয়নি তবে সেই সব ম্যাচেও রানের বন্যা বয়েছে।
প্রথম দুটো ওয়ানডেতে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার করা ২৭৬ রান অনায়াসে তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছে ভারত। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ঠেঙিয়ে তুলেছেন ৩৯৯ রান। তিন নম্বর ম্যাচে আবার অস্ট্রেলিয়া করেছে ৩৫২ রান, যা তাড়া করে ভারতও গিয়েছিল ২৮৬ অবধি।
উদ্বোধনী ম্যাচ হবে গুজরাতের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। এখানে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় গত ১ ফেব্রুয়ারি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। ম্যাচে শুভমান গিল করেন সেঞ্চুরি, ভারত করে ৪ উইকেটে ২৩৪ রান আর জবাবে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ৬৬ রানে।
বোঝাই যাচ্ছে, উইকেটের ধরন বুঝে ব্যাট করতে পারলে ৫০ ওভারে এখানে রানবন্যা হবে। বিশ্বকাপে ভারত-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। দুই দল এখানে মুখোমুখি হয়েছে বহুবার, পোশাকের রঙ কখনো রঙিন কিংবা কখনো সাদা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ কমেনি। এই মাঠে অস্ট্রেলিয়া ২৬৯ রান করে ভারতকে ২১ রানে হারিয়েছে সবশেষ ম্যাচে।
আইপিএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ঘরের মাঠে সবশেষ মৌসুমে ধোনির ‘ইয়েলো আর্মি’ ৮ ম্যাচ খেলে ২০০ রানের ওপরে করেছে দুইবার, একবার জিতেছে অন্যবার হেরেছে। তবে দুই ইনিংসেই ২০০’র বেশি রান হয়েছে দুটো ম্যাচেই। অর্থাৎ চাইলে চেন্নাইকেও ব্যাটিং স্বর্গে পরিণত করা সম্ভব।
বিশ্বকাপের আগে দারুণ ছন্দে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হারার পর টানা তিন ওয়ানডে জিতে সিরিজ তো নিশ্চিত করেছেই, টানা তিন ম্যাচে ৩০০’র ওপর রান করেছে। চতুর্থ ওয়ানডেতে তো ৪০০ পার করেছে প্রোটিয়ারা। ব্যাটিং উইকেটে তারাও যে কোনো প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। হেনরিক ক্লাসেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৮৩ বলে খেলেছেন ১৭৪ রানের ইনিংস। বিধ্বংসী রূপে ফিরছেন ডেভিড মিলারও।
প্রোটিয়ারা প্রথম ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে। সেখানে অবশ্য সবশেষ হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ম্যাচেও খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে তারা অলআউট হয়েছিল মাত্র ৯৯ রানে। দিল্লির মাঠটা হয়তো খানিকটা স্পিনারদের দিকেই ঝুঁকবে, তবে অন্য মাঠগুলোতে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের রান উৎসবে মেতে উঠতে দেখার সম্ভাবনা জোরালো। তাই অনেক সাবেক ক্রিকেটারই প্রোটিয়াদের দেখছেন শেষ চারে।
বিশ্বকাপের আগে ক্লাসেন ছাড়াও ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস খেলেছেন ১৮২ রানের ইনিংস, দারুণ ছন্দে ইংল্যান্ডের ডাভিড মালানও। তবে সেরা ছন্দে নিঃসন্দেহে শুভমান গিল। সবশেষ ৫ ইনিংসে দুটো শতরান আর একটা হাফসেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেলও আছেন দারুণ ছন্দে। দুটো হাফসেঞ্চুরি আর একটা সেঞ্চুরি সবশেষ ৫ ইনিংসে। হায়দ্রাবাদে বিশ্বকাপের অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের ৩৪৫ রান কিউইরা তাড়া করেছে ৩৮ বল হাতে রেখে।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করেন, এই বারের বিশ্বকাপে রানবন্যায় বোলারদের জন্য কাজটা হবে কঠিন। দেশ রূপান্তরকে আশরাফুল বলেন, ‘আমাদের পেসাররা গত এক দেড় বছর ধরে খুবই ভালো করছে। তবে যেহেতু ভারতের মাটিতে খেলা, আমরা দেখেছি যে সাড়ে ৩০০’র বেশি রান হচ্ছে প্রতিটা ম্যাচে। কেউ যদি ভালো না করে, তাকে মনে রাখতে হবে যে টুর্নামেন্টে পরের ম্যাচে ফিরে আসতে হবে। একজনের দিন খারাপ যেতেই পারে, কোনো ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান উঠেই যেতে পারে। ৯টা ম্যাচের ভেতর ৪-৫টা ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান হতে পারে। তাই বোলারদের ফিরে আসার মানসিকতা থাকতে হবে।’
বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমও বলেছেন যে দেড় মাসের আসরে প্রস্তুত থাকতে হবে যে কোনো কিছুর জন্যই, ‘দেড় মাসের আসর, ৯টা ম্যাচ এই সময়ে খেলতে হবে বা তারও বেশি। অনেক উত্থান-পতন হবে। যে কোনো কিছুর জন্যই তৈরি থাকতে হবে।’
রান উৎসবের বিশ্বকাপ যে হতে যাচ্ছে, তার সব রসদই মজুদ। মাঠগুলোকে করা হয়েছে ব্যাটিং স্বর্গ, বিশ্বকাপে আসার আগে সেরা সেরা ব্যাটসম্যানরাও আছেন ছন্দে। শুধু প্রশ্ন এটাই, রান উৎসবের এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে রান করবেন কে? সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাটিংয়ের ছবিটা যে মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়।
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ অনুযায়ী, দেশে ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২২ হাজার ১১৯। এ তালিকায় রয়েছে যারা রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, মাজার, ফুটপাত, সিঁড়ি, ওভারব্রিজের নিচে, লঞ্চ টার্মিনাল, ফেরিঘাট, মার্কেটের বারান্দায় দিন কাটান। আর বস্তিতে বসবাস করছে ১৮ লাখ ৪৮৬ জন। তারা মূলত শহর ও উপশহর এলাকায় টিনের ঘর, সেমিপাকা ঘর বা ঘিঞ্জি পাকা ঘরে বাস করে। তবে বস্তিবাসী কারা সে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১৬ সালে সরকার আবাসন নীতিমালা করেছে। আবাসন উন্নয়ন তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। আবাসন সংকট নিরসন করতে হলে সরকারকে আবাসন তহবিল করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বস্তিবাসী, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত কারা তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। না হলে বোঝা যাবে না কত মানুষ বস্তিতে থাকে।’
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে আবাসন সংকট কাটছে না। স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে আবাসন।’
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে ৯ লাখ গৃহহীন মানুষকে চিহ্নিত করে। ইতিমধ্যে আট লাখ মানুষের গৃহের ব্যবস্থা করেছে; প্রায় ৪০ লাখ মানুষের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বাকিদের জন্যও শেখ হাসিনা ব্যবস্থা করবেন। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্যও আবাসনের ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা তার সৈনিক হিসেবে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
জানা যায়, বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার সবার জন্য আবাসন। অঙ্গীকার পূরণে সরকার নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সারা দেশে ৩০টি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, নোয়াখালী, যশোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, শরীয়তপুর, নড়াইল, খুলনা, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব প্রকল্পে ৬ হাজার ৪৩২টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হয়েছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২৭টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পে ৫ হাজার ৯৩০টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হবে। শেরপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, হবিগঞ্জ, সিলেট, ঝিনাইদহ, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে ১৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৩৫টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় রাজউক পূর্বাচল, ঝিলমিল, উত্তরা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় আবাসন প্রকল্পে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ফ্ল্যাটগুলো উচ্চমূল্যের কারণে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। পূর্বাচল, ঝিলমিল ও উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প গ্রহণ করছে সরকার। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনেও বিভিন্ন সংস্থা আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন শহরে বসবাসরত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সম্পদশালী ব্যক্তিরা। যাদের অনেক ফ্ল্যাট আছে তারা আরও ফ্ল্যাট কিনছেন। কিন্তু বাস্তুহারা, দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত সরকারি এসব আবাসনের সুবিধা পাচ্ছেন না। অল্প দামে জমি অধিগ্রহণ করে সরকার আবাসন প্রকল্প তৈরি করে যাদের নামে বরাদ্দ দিচ্ছে তারা রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে জমির মালিক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত।
জাতিসংঘ ১৯৮৫ সালে বিশ্ব বসতি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশে^ অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার এ দিবসটি পালিত হয়।
সুরের মূর্চ্ছনায় মোহাচ্ছন্ন শ্রোতারা হারিয়ে যাবেন। তারপর নৃত্যের তালে মেতে উঠবে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি ক্রিকেট স্টেডিয়াম। আগামী বুধবার (৪ অক্টোবর) বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। আয়োজনকে বর্ণাঢ্য করে তুলতে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
এবারের বিশ্বকাপ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কী থাকছে, এ নিয়ে আয়োজক ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) এখনো চুপ। দর্শকদের চমকে দিতে এমন গোপনীয়তার চেষ্টা অবশ্য প্রায় সব আয়োজকেরাই করে থাকেন।
তবে ভারতীয় গণমাধ্যম পিটিসি পাঞ্জাবের সূত্রে এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইনসাইডস্পোর্ট।
খবরে বলা হয়, বিশ্বকাপের উদ্বোধনী বিভিন্ন পরিবেশনায় থাকবেন বেশ কয়েকজন বলিউড অভিনেতা–অভিনেত্রী ও গায়ক–গায়িকা। এর মধ্যে গান পরিবেশনে থাকবেন কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী আশা ভোসলে, গায়ক ও সংগীত পরিচালক শঙ্কর মহাদেভান, কণ্ঠশিল্পী শ্রেয়া ঘোষাল ও অরিজিত সিং।
নাচের পরিবেশনায় দেখা যাবে রণবীর সিং ও তামান্না ভাটিয়াকে। রণবীর বিশ্বকাপের অফিশিয়াল থিম সংয়েও অংশ নিয়েছিলেন।
নাচ–গানের পাশাপাশি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হবে ভারতের ইতিহাস–ঐতিহ্য ও ক্রিকেট উন্মাদনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খেলোয়াড়দের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ১০ দলের অধিনায়ক। এ ছাড়া আয়োজক বিসিসিআই ও আইসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তো থাকবেনই।
শিশুরাই আগামী দিনের কান্ডারি। তাদের হাতেই অর্পিত হবে আগামী দিনের নেতৃত্ব। দেশের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে শিশুদের সুন্দর, স্বাভাবিক ও ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশে বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে হবে। শিশুদের সুস্থ, সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার গুরুত্ব অনুভব করে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। এর ফলে শিশুদের জন্য ‘হ্যাঁ’ বলুন, সবার আগে শিশু ইত্যাদি স্লোগান যেমন সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি শিশু অধিকার নিয়ে কাজও হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে বাংলাদেশের সফলতা দৃশ্যমান। বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ছেলের ক্ষেত্রে ২১ এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ বছর নির্ধারণ করেই সরকার দায়িত্ব শেষ করেনি, বরং তা পালিত হচ্ছে কি না তাও নজরদারিতে রেখেছে। ফলে, বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের ঘটনা এখন নেই বললেই চলে। বরং, পত্রপত্রিকায় বাল্যবিয়ে প্রতিহত করতে পাত্র/পাত্রীর সহপাঠী, শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তার (ইউএনও, সমাজসেবা অফিসার) ভূমিকার কথা প্রকাশিত হয়। কিন্তু এর উল্টোচিত্রও রয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে আজ বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশু দিবস। প্রতিবছর ২০ নভেম্বর জাতিসংঘ বিশ্ব শিশু দিবস পালন করে। তবে অন্যদিনেও এই দিবসটি পালনের নজির রয়েছে। যেমন ভারতে প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর জন্মদিন ১৪ নভেম্বর শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়। আমাদের দেশেও ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকার অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার বিশ্ব শিশু দিবস এবং এরপরের এক সপ্তাহ শিশু অধিকার সপ্তাহ হিসেবে পালন করে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এই কর্মসূচিগুলোর সুফল ইতিমধ্যেই পরিলক্ষিত হয়েছে।
নাগরিকের পাঁচটি মৌলিক অধিকার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা; যা শিশুদের জন্যও প্রযোজ্য তার শতভাগ বাস্তবায়ন দেখা যায় না। রাতে ফুটপাতে শুয়ে থাকা পথশিশু, দিনের বেলা পার্ক-রাস্তার ফুল বিক্রেতা শিশু, লেগুনার হেলপার, খাবার হোটেল, চায়ের দোকানে ফুট-ফরমাশ খেটে দুবেলা আহার জোগানো শিশুরা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত নয়। শুধু যে নিম্নবিত্ত বা দরিদ্র শিশুরাই আমাদের অবিমৃশ্যকারিতার শিকার তা নয়। ঝুঁকিতে পড়েছে মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুদের বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়াও।
শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে লাগাতার পরীক্ষা-নিরীক্ষা, কোচিং ক্লাসের চাপ, জিপিএ ৫ পাওয়ার জন্য অভিভাবকের চাপ সব মিলিয়ে শিশু-কিশোররা অতিক্রম করছে এক ক্রান্তিকাল। পরীক্ষায় ভালো ফলের জন্য বাবা-মা ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ তাদের ওপর যে মানসিক চাপ সৃষ্টি করে তার ফলাফল দেখা যায় প্রতি বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর। সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয় কাক্সিক্ষত ফল না পাওয়ায় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা।
পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষের মৌলিক অধিকার পাঁচটি হলেও একজন শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য দাবি করে আরও বেশি। তার স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন খেলাধুলার সুব্যবস্থা। রাজধানীসহ সারা দেশে আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে খেলার মাঠ। আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুসারে যেকোনো এলাকায় প্রতি পাঁচ হাজার মানুষের জন্য একটি করে খেলার মাঠ প্রয়োজন। যে মাঠের আকার হতে হবে এক একরের। ঢাকার শহরের জনসংখ্যা যদি আড়াই কোটি ধরা হয় তাহলে এই বিশাল জনসংখ্যার জন্য মাঠের প্রয়োজন হবে পাঁচ হাজার। কিন্তু ২০০০ সালের এক জরিপ অনুসারে এই মাঠের সংখ্যা মাত্র ১৫০টি। গত ২৩ বছরে এই সংখ্যা আরও হ্রাস পেয়েছে বলাই বাহুল্য।
মাঠহীন এই শহরে শিশুদের জন্য তৈরি হয়েছে আরেকটি ফাঁদ ফাস্ট ফুড দোকানের প্লে-জোন। প্লে-জোন নির্মাণ করে শিশুদের মনোযোগ আকর্ষণ করছেন ফাস্ট ফুড ব্যবসায়ীরা। ফাস্ট ফুড শিশু স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। ফাস্ট ফুড শিশুদের বার্গার, স্যান্ডউইচ, পেস্ট্রি, কেক, সফট ড্রিংকসের কুফল সম্পর্কে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা নানাভাবে আমাদের সতর্ক করেছেন। ফাস্ট ফুড ও সফট ড্রিংকস গ্রহণের ফলে অতি স্থূলতা, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, অ্যালার্জির সমস্যা, ক্যানসার, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি নানা ধরনের শারীরিক অসুস্থতা সৃষ্টি হতে পারে।
স্বাভাবিকভাবেই খেলার মাঠহীন এই খাবারের দোকানগুলো শিশুদের ভীষণ প্রিয়। আর এই সুযোগটিই নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। প্লে-জোন সংযুক্ত এই বিশেষ দোকানের খাবারের মূল্য অন্য সাধারণ দোকানের থেকে অনেক বেশি। কিন্তু সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে এই বাড়তি অর্থ পরিশোধ করতে হয় অভিভাবকদের। খেলার মাঠের সংকট সৃষ্টি করেছে ইনডোর প্লে-শপ। এই ইনডোর প্লে-শপে খেলার জন্য ঘণ্টা অনুসারে অর্থব্যয় করতে হয় অভিভাবকদের। দোকান অনুসারে এই অর্থ ঘণ্টাপ্রতি ৩৫০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
চিকিৎসা, শিক্ষা থেকে শুরু করে এখন খেলাধুলার মতো মৌলিক অধিকারও যখন অর্থের বিনিময়ে কিনতে হয়, তখন বলা যায় না আমাদের শিশুরা নিরাপদ আছে, বলতে হয় তাদের শৈশব নানা চাপে সংকুচিত হয়ে আছে। একটি নিরাপদ, বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার অঙ্গীকার শুধু নথিতে পড়ে রবে না, বাস্তবায়িতও হবে বিশ্ব শিশু দিবসে এটিই আমাদের প্রত্যাশা।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।