
১৯৬৯ সালের এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন ভাষাতত্ত্ববিদ, শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। তার জন্ম ১৮৮৫ সালের ১০ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনায়। হাওড়া জিলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা, কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফএ করে হুগলি কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। অসুস্থতার কারণে বিরতির পর কলকাতা সিটি কলেজ থেকে সংস্কৃতে অনার্সসহ বিএ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বে এমএ পাস করেন। দুই বছর পর বিএল ডিগ্রিও নেন। যশোর জিলা স্কুলের শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীনেশচন্দ্র সেনের তত্ত্বাবধানে শরৎচন্দ্র লাহিড়ী গবেষণা-সহকারী হিসেবে কাজ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ও বাংলা বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দেন। ঘরোয়া পরিবেশে উর্দু, ফারসি ও আরবি এবং স্কুলে সংস্কৃত শিখেছিলেন। ইউরোপ গিয়ে শেখেন প্রাচীন ভারতীয় বৈদিক সংস্কৃত, প্রাকৃতসহ বিভিন্ন ভাষা। তিনি ‘চর্যাপদাবলি’ বিষয়ে গবেষণা করে প্যারিসের সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে প্রথম ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। এ বছরই ধ্বনিতত্ত্বের মৌলিক গবেষণার জন্য তিনি প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপ্লোমা লাভ করেন। ১৯৩৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যক্ষ হন, ১৯৪৪ সালে অবসর নেন। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমেরিটাস নিযুক্ত হন। মৌলিক গবেষণার মাধ্যমে তিনিই প্রমাণ করেন গৌড়ী বা মাগধী প্রাকৃত থেকে বাংলা ভাষার উৎপত্তি। তার কাজের মধ্যে অভিধান তৈরি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। উর্দুকে বাদ দিয়ে তিনিই প্রথম বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার যৌক্তিক দাবি তোলেন। তার রচনার মধ্যে আছে, ‘সিন্দবাদ সওদাগরের গল্প’, ‘ভাষা ও সাহিত্য, ‘বাঙ্গালা ব্যাকরণ’, ‘দীওয়ান-ই-হাফিজ’, ‘রুবাইয়াত-ই-উমর খইয়্যাম’, ‘পদ্মাবতী’, ‘বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত’ প্রভৃতি।
নির্মল সেন, দীন মোহাম্মদ ও আবদুর রশীদ ছদ্ম পরিচয়ের অন্তরালে তিনজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ-অধ্যাপক যথাক্রমে নুরুল ইসলাম, রেহমান সোবহান ও আনিসুর রহমান একাত্তরের মার্চে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পৌঁছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করতে থাকেন। আবদুর রশীদ কখনো অশোক রায়ও হয়েছেন। তাদের কাজের শুরুটা আরও আগে, পঞ্চাশের দশকেই পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বঞ্চনা স্পষ্ট হওয়ার পর থেকেই। বিভিন্ন ব্রিটিশ ও মার্কিন বিশ^বিদ্যালয়ে খ-কালীন দায়িত্ব নিয়ে তারা একসময় ভারতও ছাড়েন।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স-এ পূর্ব-পশ্চিম পাকিস্তান সংকট নিয়ে গৃহীত অ্যাসাইনমেন্ট শেষ হওয়ার পর আনিসুর রহমান ম্যাসাচুসেটস-এর উইলিয়াম কলেজে শারদ মৌসুমের অতিথি অধ্যাপক হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় শীর্ষক একটি পাঠ প্রকল্প পরিচালনার নিমন্ত্রণ পান। ওদিকে একাত্তরের ১৩ ডিসেম্বর কলকাতা ছেড়ে বাংলাদেশের দিকে রওনা হন, স্বাধীনতার ১৬ ডিসেম্বর তিনি মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে মুক্ত শহর কুষ্টিয়াতে। উইলিয়ামস কলেজের সঙ্গে চুক্তির বরখেলাপ না করতে এবং প্ল্যানিং কমিশনের কিছু অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে ঢাকা না এসে কলকাতা ফিরে গেলেন এবং সেখান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
ততদিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে এসেছেন। উইলিয়ামস টাউন নিবাসী আনিসুর রহমান সংবাদপত্রে দেখছেন স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার অধ্যাপক নুরুল ইসলামকে ডেপুটি চেয়ারম্যান এবং মোশাররফ হোসেন ও রেহমান সোবহানকে সদস্য করে একটি পরিকল্পনা কমিশন গঠন করা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে তিনি ডেপুটি চেয়ারম্যানের টেলিগ্রাম পেলেন: APPOINTED MEMBER PLANNIG COMMISSION, JOIN EMMEDIATELY. NURUL ISLAM দিল্লিতে অশোক মিত্রের বাড়িতে অবস্থানকালে সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনার সময় তিনি বলেন: ‘...বাংলাদেশ মুক্ত হওয়ার পর আমরা দেশে ফিরলে দেশের অর্থনৈতিক প্রশ্নে সরকারকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য আমাদের ডাক পড়বে, কিন্তু আমাদের উচিত হবে সরাসরি সরকারে যোগ না দিয়ে বাইরে থেকে পরামর্শ দেওয়া। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তসমূহ রাজনৈতিক বিবেচনা অনুযায়ীই নেওয়া হবে, আমাদের কথামতো নেওয়া হবে না, কাজেই এই সমস্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমরা পার্টি হয়ে গেলে আমাদের পজিশন কম্প্রোমাইজড হয়ে যাবে। এই কথায় আমার সব কলিগ সায় দিয়েছিলেন।’ বন্ধনী দিয়ে আনিসুর রহমান এর পরপরই যোগ করেন যদিও আসল ঘটনা অন্যরকম হয়ে যায়।
দেশে ফিরে জানতে পারেন ১৮ জানুয়ারি ১৯৭২ তার নিয়োগের গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে, গণমাধ্যমেও প্রচারিত হয়েছে। তিনি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে যোগ দেন, নিভৃতেই থাকতে চেয়েছেন।
‘পথে যা পেয়েছি’ প্রথম পর্ব থেকে উদ্ধৃত: প্রথমে ফোন করলেন পরিকল্পনা কমিশনের ‘মেম্বার ওয়ান’ (অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন)। ‘কী আনিস, তুমি জয়েন করছ না? তোমাকে ভীষণ দরকার অনেক কাজ।’
আমি বললাম ‘আমার সঙ্গে তো দিল্লিতে কথা হয়েছিল আমরা জয়েন করব না। আপনারা জয়েন করে ভুল করেছেন। আমি করতে চাই না। তা ছাড়া, সবাই ইউনিভার্সিটি ছেড়ে দিলে ছাত্রদের পড়াবে কে?’
তখন স্বয়ং ডেপুটি চেয়ারম্যান (অধ্যাপক নুরুল ইসলাম) ফোন করলেন। তাকেও একই কথা বললাম। তিনি বললেন তার সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু আমি বেয়াদবের মতোই বললাম, দেখা করতে হয় আপনি আসুন।’ তিনি আমার শিক্ষকতুল্য (আমাকে সরাসরি পড়াননি, তবে আমার মাস্টার্স থিসিসের এক্সটার্নাল এগজামিনার ছিলেন), তা ছাড়া পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে তার এখন ক্যাবিনেটমন্ত্রীর পদমর্যাদা। তিনি কী করে আমার কাছে আসবেন?’
পরে মেম্বার ওয়ানের মধ্যস্থতায় ডেপুটি চেয়ারম্যান ও দুজন সদস্য (মোশাররফ হোসেন ও রেহমান সোবহান) ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ চৌধুরীর অফিসে আসেন। সেখানে আনিসুর রহমানকে তাড়াতাড়ি পরিকল্পনা কমিশনে যোগ দিতে বলেন। আনিসুর রহমান ছয় মাসের জন্য মেম্বার থ্রি হিসেবে যোগ দিতে রাজি হলেন। ছ’মাসে যদি বুঝতে পারেন সরকার তার প্রত্যাশা পূরণ করে এগোচ্ছে তাহলে দায়িত্ব পালন করে যাবেন, নতুবা ছেড়ে দেবেন।
১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ কৃচ্ছ্রসাধনের আদেশ জারি করার লক্ষ্যে তিনি ডেপুটি চেয়ারম্যানকে যে নোট দেন তা আমলা-মন্ত্রী সবাইকে তার প্রতি শত্রুভাবাপন্ন করে তোলার জন্য যথেষ্ট। ১৯৭২ সালেই তার মনে হয়েছে ঢাকায় গাড়ির প্রসেশন চোখ ধাঁধিয়ে দেয়... ‘আমাদের মতো একটা দরিদ্র দেশে এরকম বিলাসী গাড়ির প্রদর্শন আমাদের দরিদ্র জনগণের জন্য নিদারণ অপমানকর, সমতানীতির বিরুদ্ধে এবং দেশ গড়ার কাজে দরিদ্র জনগণের উৎসাহের ওপর একটি নেতিবাচক প্রভাব। এসব গাড়ির স্পেয়ার পার্টস আমদানি নিষিদ্ধ করতে চেয়েছেন যাতে গাড়িগুলোর দ্রুত মৃত্যু ঘটে, অথবা বিদেশে বেঁচে দিতে বলেছেন। গাড়ির ব্যবহার প্রয়োজনভিত্তিক হওয়া প্রয়োজন, স্ট্যাটাসভিত্তিক নয়।’
তিনি প্রস্তাব করেন, সরকারের মালিকানায় যে সব বড় গাড়ি আছে তা বেশির ভাগ জেনারেল পাবলিকের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হোক অথবা সম্ভব হলে বিদেশে রপ্তানি করে দেওয়া হোক।
এ আশা তিনি অবশ্যই করতে পারেন, কিন্তু তার নিজের ডেপুটি চেয়ারম্যান ও সদস্যদ্বয়কে রাজি করাতে পেরেছেন কি না সে সন্দেহ তো রয়েই গেছে। মার্কিন কিংবা ব্রিটিশ বিশ^বিদ্যালয়ে সমাজতন্ত্রের পাঠ নেওয়া তাত্ত্বিক বিদ্বানদের তাতে ‘হ্যাঁ’ করার কথা নয়। আনিসুর রহমান লিখলেন, ‘কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যে স্পষ্ট হয়ে যায় এ দেশ মুক্তিযুদ্ধের প্রতিশ্রুত সমতাবাদী/সমাজতন্ত্রের পথে এত সহজে এগুবে না। পরিকল্পনা কমিশনের ভেতরেই এবং সঠিকভাবে প্রশাসনে হায়ারার্কিকাল চেতনা তীব্র। অফিসে আমাদের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর এবং মেঝেতে শৌখিন কার্পেটের ব্যবস্থা করা হয় সে সময় এটাও আমার অহেতুক বিলাসিতা মনে হয়েছিল। আমি এরকম ঘর নিইনি, কার্পেটবিহীন ফ্যানওয়ালা ঘরেই অফিস করে গেছি।’
তিনি লিখেছেন, শুরু থেকেই প্ল্যানিং কমিশনের সঙ্গে সিভিল সার্ভিসের আমলাদের একটা টেনশনের সম্পর্ক তৈরি হয় ইউনিভার্সিটির মাস্টাররা মন্ত্রী আর প্রতিমন্ত্রীর র্যাঙ্ক নিয়ে র্যাঙ্কের জোরে সচিবদের ডেকে পাঠাবার অধিকার অর্জন করেছেন। সিএসপিদের উল্লেখযোগ্য অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন এবং কেউ কেউ পরিকল্পনা কমিশনের প্রফেসরদেরও আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। সামন্ত সংস্কৃতি ও আমলা আচরণের নিবিড় নৈকট্য আনিসুর রহমান তুলে ধরেছেন এবং মর্যাদার হায়ারার্কিতে তার সহকর্মীরাও একই সামন্ত সংস্কৃতির ধারক সে ইঙ্গিতও দিয়েছেন।
‘যুদ্ধবিধ্বস্ত’ দেশজুড়ে মানুষের এত কষ্টের মধ্যে এলিট শ্রেণির ভোগবিলাসের চাকচিক্য দেখে আমি ৮ মার্চ (১৯৭১) প্রধানমন্ত্রীকে ‘প্রথম পদক্ষেপ’ বলে একটি প্রস্তাব লিখে পাঠাই।’ প্রথাগতভাবে ডেপুটি চেয়ারম্যানের হাত হয়ে পাঠাতে গেলে হয়তো আটকে যেত সে আশঙ্কা থেকে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে পাঠিয়ে ‘প্রথম পদক্ষেপ’-এর অনুলিপি তাকে দেন। অন্যসব মন্ত্রীকেও দেন। এই কর্মটি ডেপুটি চেয়ারম্যানের ‘অসোয়াস্তি’-র কারণ ঘটিয়ে থাকতে পারে।
বাহাত্তরের এপ্রিলে ঢাকা টেলিভিশনের আগে কেনা কিছু যন্ত্রপাতি স্থাপনের জন্য সোয়া লাখ টাকার বরাদ্দের জন্য আবেদন জানানো হলে তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্বাসন অগ্রাধিকারের কথা বললেন এবং গণমুখী টেলিভিশনের সুপারিশমালা দিতে একটি কমিটি করে দিলেন যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তা কীভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপিত হয়েছে বলা মুশকিল, ‘কিন্তু সেদিন সন্ধ্যায় সদস্যরা যখন ডেপুটি চেয়ারম্যানের অফিস কক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ভারীকণ্ঠ শোনা যায়, ‘ডাক্তার সাহেব আপনারা পরিকল্পনা কমিশনে খুব বাড়াবাড়ি করেছেন। টেলিভিশনের ওপর কমিটি করতে আপনাদের কে অধিকার দিয়েছে? আমি এর রিটেন এক্সপ্ল্যানেশন চাই।’ ডেপুটি চেয়ারম্যান ঘাবড়ে গেলেন।
‘আনিস, প্রধানমন্ত্রী আমাদের কমিটি করার ওপর রিটেন এক্সপ্ল্যানেশন চাচ্ছেন, কী বলব?’ আমি বললাম এতে তো কোনো সমস্যা নেইÑ আজ তো শনিবার কাল ছুটি আপনি বলেন যে সোমবার সকালে আমরা তার কাছে গিয়ে রিটেন এক্সপ্ল্যানেশন দিয়ে আসব।’
পরিকল্পনা কমিশনের করা কমিটি বাতিল হলো। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে লেখা পত্রটি একই সঙ্গে এক্সপ্ল্যানেশন এবং আনিসুর রহমানের পদত্যাগপত্র। দীর্ঘপত্রের শুরুটা ও শেষটা কেবল উদ্ধৃত করছি:
‘টেলিভিশন ব্যবস্থার র্যাশনালাইজ করবার জন্য কমিটি’ নাম দিয়ে যে কমিটি গঠন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং যে ঘটনা নিয়ে মনে হয় বেশ উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে সেটার জন্ম দেওয়ার জন্য আমিই দায়ী।’ সুতরাং তিনি পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করা ছাড়া আর কোনো পথ দেখছেন না। অতএব ‘অন্য কোনো আদেশ না পেলে আমি ৩০ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে ডেপুটি চেয়ারম্যানের কাছে আমার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেব।’
অর্থমন্ত্রী পদত্যাগপত্র পড়ে শোনালেন আর প্রধানমন্ত্রী আনিসুর রহমানকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘ডাক্তার সাহেব আমি সব বুঝতে পেরেছি, আপনি সমস্ত ব্যাপারটা আমার হাতে ছেড়ে দেন, আমি সব ঠিক করে দেব। আর পদত্যাগপত্র ছি ছি আমাকে এভাবে লজ্জা দেবেন না।... আমি বুঝতে পেরেছি আপনাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক খারাপ করার একটা বিরাট ষড়যন্ত্র চলছে। কারা এটা করছে তাও আমি বুঝে গেছি।’
প্রধানমন্ত্রীর আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়ে কি আর পদত্যাগ করা যায়?
প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসার জন্য লন্ডনে। এ সময় পদত্যাগ করলে প্রধানমন্ত্রী আর তাকে জড়িয়ে ধরে আটকাতে পারবেন না। ২ আগস্ট ১৯৭২ প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসাকালীন অনুপস্থিতির সময় ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিলেন। কমিশনের সঙ্গে সম্পর্কচ্যুত হননি তখনো। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা দাখিলের পর ২ অক্টোবর ১৯৭৩ তিনি কমিশন থেকে বেরিয়ে এলেন, তার ভাষায় প্রধানমন্ত্রী আমাকে (পরিকল্পনা কমিশন থেকে) ছেড়ে দিলেন।
অনুমেয়, পরিকল্পনা কমিশন হয়েছিল বটে, কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়নি। এটা না টেকারই কথা।
লেখক: সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ও কলামিস্ট
কয়েক সপ্তাহ যাবৎ অনলাইন অফলাইন সংবাদপত্র ছাড়াও পুরো সোশ্যাল মিডিয়া ছেয়ে গেছে একটি সংবাদে, সেটি হচ্ছে উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক কিংবা জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, বিভাগীয় শ্রেষ্ঠ শিক্ষা কর্মকর্তা ইত্যাদি পোস্টে। কীসের ওপর ভিত্তি করে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক কিংবা শ্রেষ্ঠ শিক্ষা কর্মকর্তা? একজন শিক্ষক কী করলে বা কী কী করলে এলাকার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হবেন, জেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হবেন, বিভাগের মধ্যে এবং জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হবেন। মানদন্ডগুলো কী কী? সেটি সুন্দরভাবে প্রকাশিত না হলে বিষয়টি মূল্যহীন হয়ে পড়ে। একজন শিক্ষক উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ হলে শিক্ষার্থী, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি কিংবা সহকর্মীদের কতটা কাজে লাগবে, জাতীয় পর্যায়ে কীভাবে কাজে লাগবে? তার বর্ণনা থাকতে হবে। শিক্ষক বা শিক্ষা কর্মকর্তা তাদের পেশাগত জীবনে কতটা পরিবর্তন এনেছেন, তার চারদিক কতটা পরিবর্তন করতে পেরেছেন সেটি জানা প্রয়োজন।
একজন শিক্ষক যিনি শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হয়েছেন তিনি কি শিক্ষার্থীদের জন্য এমন নতুন কিছু করেছেন যা আগে কেউ করেননি? শিক্ষকতায় ইনোভেশন প্রয়োজন সেখানে তার অবস্থান কী? তিনি কি জীবনে প্রাইভেট পড়াননি কিংবা পড়ালেও গরিব ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে কোনোদিন অর্থ নেননি? এমন কী ঘটেছে যা জাতির সামনে উদাহরণ হিসেবে দেখানো যেতে পারে? যিনি শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হলেন তাকে কি বিদ্যালয়ের অন্তত ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ভালো বলেন? এমন কী হয়েছে যে তার পড়ানোর ধরন ভালো, তার আচরণ শিক্ষকসুলভ, বোঝানোর ক্ষমতা অন্যদের চেয়ে আলাদা, তিনি কোন বিষয় নতুনভাবে, আনন্দের মাধ্যমে অন্যদের থেকে আলাদাভাবে শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করেছেন যা অন্য শিক্ষকদের অনুকরণ করার মতো? অথবা, তিনি প্রায় ৭০ শতাংশ অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, অভিভাবকরা তার কথা শুনেন, তার আহ্বানে তারা সমাবেশে যোগ দেন। প্রতিষ্ঠান প্রধান তার অনেক ক্লাস দেখেছেন, অন্যান্য কাজ দেখেছেন এবং সন্তোষ প্রকাশ করেছেন লিখিতভাবে। একেবারে পিছিয়ে পড়া নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থীদের তিনি ওপরে তুলেছেন। তিনি কোনোদিন ছুটি নেননি? তার শিক্ষার্থীরা কি ডিবেট কিংবা অন্য কোনো সহপাঠক্রমিক কাজে অন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চেয়ে পুরোপুরি আলাদা? এগুলোর কয়টি বিষয় ঘটেছে একজন শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের ক্ষেত্রে, শ্রেষ্ঠ শিক্ষা কর্মকর্তার ক্ষেত্রে? তার কোনো প্রমাণ আছে কি?
অধিকাংশ শিক্ষার্থী, অধিকাংশ অভিভাবক, অধিকাংশ সহকর্মী, প্রতিষ্ঠান প্রধান, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসার, কমিটির বৃহদাংশের সদস্যরা কি কোন বিশেষ বিশেষ গুণাবলির উল্লেখ করেছেন যেজন্য একজন শিক্ষক কিংবা একজন শিক্ষা কর্মকর্তা উপজেলা/জেলা/বিভাগের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হয়েছেন? নতুন কোন পদ্ধতিতে তার বিষয় পড়িয়ে শিক্ষার্থীদের সামনে বিশেষ কোন কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন, কিংবা কোন গবেষণা করেছেন যার ফল অনেকের উপকারে এসেছে? এর কোনোটিই যদি না হয় তাহলে কীসের ওপর ভিত্তি করে একজন শিক্ষক শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা ও সম্মান অর্জন করছেন? এ ধরনের তথাকথিত শ্রেষ্ঠত্বে কি কোনো তৃপ্তি পাওয়া যায়? এটি কেন করা হচ্ছে? বিষয়টিকে হাস্যকর করা হচ্ছে না?
ফেসবুক পেইজে কুষ্টিয়ার এক শিক্ষকের একটি পোস্ট দেখলাম তার কাছে একটি মেসেজ এসেছে যে, কভিভকালীন আপনি শিক্ষায় অনেক অবদান রেখেছেন তাই আমাদের প্রতিষ্ঠান আপনাকে একটি সম্মাননা দেবে। উনি বলেছেন, কই আমি তো তেমন কিছুই করিনি। অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার কথা, দু’একটি হয়তো নিয়েছি। তারা বললেন, যা করেছেন তাই আমাদের কাছে মূল্যবান। তারপর উক্ত শিক্ষক বললেন, তো কী করতে হবে আমাকে। বললেন কিছুই না, শুধু হাজার দশেক টাকা দিতে হবে। আমাদের প্রশাসনিক খরচের জন্য। উক্ত শিক্ষক বলেছেন, টাকা দিয়ে সম্মাননা বা প্রাইজ কোনোটিই আমি নেব না। তারপর তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করেনি। অন্য কাউকে হয়তো ধরবে, কিছু শিক্ষককে এভাবে পেয়েও যাবে। এভাবে বিভিন্ন পর্যায়ের কিছু শিক্ষককে দেখা যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে বলছেন কোথা থেকে তাদের বিরল সম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে, অনেকে আবার সার্টিফিকেটসহ পোস্ট দিচ্ছেন। শিক্ষকদের মধ্যে এসব কী হচ্ছে?
এনসিটিবির এক সভায় একবার দেখলাম শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব উপস্থিত শিক্ষকদের বলছেন, আপনারা মামা-চাচা ধরে এখানে এসে সবাই বিশেষজ্ঞ হয়ে গেছেন। এক একজন বিশেষজ্ঞের চেয়ার দখল করেছেন। অনেকেই প্রফেসর হয়েছেন। জীবনে কোনো গবেষণাপত্র লিখেছেন? নিজ থেকে কোনো একটি রচনাও লিখেছেন, এমনকি একটি প্যারাগ্রাফও নিজ থেকে লিখেননি অথচ সবাই প্রফেসর হয়েছেন। সরকারি কলেজে এখন প্রফেসরের ছড়াছড়ি। ক্রাইটেরিয়া কী? তেমন কোনো ক্রাইটেরিয়া নেই। এত বছর চাকরিতে আছেন, ধরা করা একটু বেশি কিংবা অন্য কোনো পরিচয় আছে তাই তিনি প্রফেসর। এ ধরনের প্রফেসর হলে কতটুকু তৃপ্তি পাওয়া যায়? মজার ব্যাপার হলো কোনো অধ্যাপক বা এনসিটিবির কোনো বিশেষজ্ঞ একটি কথাও বলেননি। এখানে একটি বিষয় যোগ করার আছে সেটি হচ্ছে, সরকারি কলেজের শিক্ষকদের যখন প্রমোশন দেওয়া হয় তখন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো পাবলিকেশন বা অবদানের মতো কিছু একটা থাকা উচিত তা না হলে এর মূল্য বোঝা মুশকিল।
শিক্ষকতার ব্যাপারটি যাতে হাস্যকর না হয়ে যায় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে সবাইকে। জেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হওয়া, এটি কি চাট্টিখানি কথা? শ্রেষ্ঠ মানে কী? তিনি ওই জেলার মধ্যে সবচেয়ে ভালো, আচরণে সবচেয়ে ভালো, মানবিকতায় সবচেয়ে ওপরে, সামাজিকতায় সবার ওপরে, নতুন কিছু করায় সবার ওপরে, কালচারাল দিক দিয়ে সবার ওপরে। এগুলো কোনো বাছবিচার নেই, বলে দিলাম উনি জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক! বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের চিন্তা করতে হবে।
কোনো শিক্ষকের অবদানের স্বীকৃতি এমনভাবে দিতে হবে যাতে তিনি বা তারা তৃপ্তি পান, তারা যেন বুঝেন এটি তাদের প্রকৃতভাবেই অর্জিত সম্মান। এটি অন্য কোনো পন্থায় আসেনি এবং মানুষের মনে যাতে প্রশ্ন না জাগে। তাহলে সবাই উৎসাহিত বোধ করবেন। আমরা নুরুল ইসলাম স্যারের কথা অনেকেই শুনেছি। অনেকেই সুন্দরগঞ্জে তার পরিবর্তন করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দেখে এসেছি যা একটি কলেজ এমনকি বিশ^বিদ্যালয়ের সঙ্গে তুলনীয়। একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যেখানে সরকারি নিয়মকানুনের মধ্যে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অনেক কিছু করা যায় না, সেই পাহাড়সম অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন নুরুল ইসলাম স্যার। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস-চ্যান্সেলর কী করেন আমি দেখেছি তার চেয়েও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনেক বেশি কিছু করেছেন। দেশ-বিদেশ থেকে তার বিদ্যালয় দেখতে আসেন শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তারা। এ ধরনের শিক্ষকের কথা আলাদা, তাদের কিন্তু পুরস্কার দেওয়া হয় না, তাদের কথা প্রচারও করা হয় না। এ ধরনের শিক্ষক, এ ধরনের বিদ্যালয়ের প্রচার দরকার, প্রসার দরকার যাতে শিক্ষকরা উৎসাহিত হতে পারেন। এসবের দিকে আমরা খেয়াল না করে কীসের ওপর ভিত্তি করে উপজেলা, জেলা, বিভাগ এমনকি জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, শ্রেষ্ঠ শিক্ষা কর্মকর্তা নির্বাচন করছি আর সেই খবরে সোশ্যাল মিডিয়া ভাসিয়ে দিচ্ছি?
লেখক : কলামিস্ট ও শিক্ষাবিষয়ক গবেষক
বাজেট যেমন প্রতি বছরের রুটিন কাজ তেমনি বাজেটের বেশিরভাগ পরিকল্পনাই রুটিনমাফিক, অনেক সময় বছর বছর খাতসমূহের ধারাবাহিক বরাদ্দের বৃদ্ধি। তারপরও এবারের বাজেটে বেশ কিছু ব্যতিক্রম আছে। এই প্রথম কোনো বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের রূপান্তরের বর্ণনা করা হয়েছে। সাধারণভাবে জাতীয় বাজেট এক বছরের আয় ও ব্যয়ের হিসাব ও এ সংশ্লিষ্ট নীতির উল্লেখ থাকে কিন্তু এবারের বাজেটে গত চৌদ্দ বছরে এই সরকারের অগ্রগতিসমূহ বিস্তৃত পরিসরে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই মাঝে মাঝেই মনে হয়েছে এই বাজেট যতটা না বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের হিসাব তার থেকে বেশি মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি নীতি-কাঠামোর একটি বিশদ মূল্যায়ন। এটা সুখপাঠ্য নিঃসন্দেহে, তবে এতে বাৎসরিক পরিকল্পনার অগ্রাধিকারসমূহ বোঝা বেশ কষ্টকর ঠেকছে।
এই বাজেটের অন্যতম শক্তিশালী দিক হচ্ছে এখানে স্মার্ট বাংলাদেশের একটি রূপরেখা প্রদান করা হয়েছে। এতে চারটি স্তম্ভ যেমন ‘স্মার্ট নাগরিক’, ‘স্মার্ট সোসাইটি’, ‘স্মার্ট গভর্নমেন্ট’ ও ‘স্মার্ট ইকোনমি’ ইত্যাদির বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। বাজেটে এর সপক্ষে উল্লেখ করা হয়েছে স্মার্ট সিটিজেন গড়ার অংশ হিসেবে ২০২৬ সালের মধ্যে ২০ হাজার তরুণ-তরুণীকে উচ্চতর প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষণ প্রদানের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ ও ইনোভেশন সেন্টারের মাধ্যমে ৮০ হাজার তরুণ-তরুণীকে উচ্চতর প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যত্র বলা হয়েছে, হাইটেক পার্কের মাধ্যমে ২০২৫ সালের মধ্যে ৫২ হাজার এবং ২০৩০ সালের মধ্যে দুই লাখ যুব জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। সংখ্যাটা একেবারে ছোট না, তবে বাংলাদেশের বিশাল যুব জনগোষ্ঠীর তুলনায় এই সংখ্যাটি কত অপ্রতুল তা বলার অপেক্ষা রাখে না যেখানে দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর ২৮ শতাংশ তরুণ বা যুব এবং আগামী দিনগুলোতে এরাই হবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কারিগর তেমনটাই প্রত্যাশা।
অন্যদিকে বাজেটে স্মার্ট গভর্নমেন্ট এর অংশ হিসেবে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার, তথ্য বাতায়ন, মাইগভ প্লাটফর্ম, ই-নথি, ই-নামজারি, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ইত্যাদির কথা হয়েছে। একই ভাবে স্মার্ট ইকোনমি’র মাধ্যমে দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেন, ক্যাশলেস সোসাইটি, স্টার্ট-আপ কার্যক্রম ও ১০০টি স্টার্ট-আপ এ বিনিয়োগ ইত্যাদি বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে। আর স্মার্ট সোসাইটির অংশ হিসেবে ‘কাউকে পেছনে ফেলে নয়’ এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার আলোকে ‘সকলের সাথে সমৃদ্ধির পথে’ এই স্লোগানের প্রতি প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়। তবে বাজেটের বরাদ্দ বিশ্লেষণের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রচেষ্টা খুব একটা ইতিবাচক বলা যাবে না। তথ্য প্রযুক্তি খাতে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বরাদ্দ ২ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা। অন্যদিকে যুব মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত বরাদ্দ আসছে বছরে এ বছরের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, এর মধ্যে উন্নয়ন বাজেট হ্রাস পেয়েছে পঞ্চাশ শতাংশেরও বেশি। শিক্ষায় বাজেট এখনো জিডিপির দুই শতাংশের নিচে যেখানে ৩৫টি স্বল্পোন্নত দেশ শিক্ষায় দুই শতাংশ বা তারও বেশি ব্যয় করে থাকে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রেও একই অবস্থা এখনো বরাদ্দ জিডিপির এক শতাংশের নিচে।
স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের ওপরের বর্ণনা ও বরাদ্দের আলোকে স্মার্ট শব্দটি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ আছে। এখানে যে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে তাতে নতুনত্বের তুলনায় প্রচলিত ধারাবাহিকতায়ই বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। এমনকি প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও যে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে তার অনেকগুলোতেই দেশের মানুষ ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। অন্যদিকে স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে প্রথম প্রথম স্মার্ট শব্দটির সঙ্গে আমাদের পরিচয়ের সূত্রপাত হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বব্যাপী সেই ধারণায় অনেক পরিবর্তন এসেছে এতে যেমন নতুন প্রযুক্তি যোগ হচ্ছে একই সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নতুন বিশ্বব্যবস্থার দৃষ্টিভঙ্গি। যে দৃষ্টিভঙ্গি সক্ষমতার কথা বলে, সমতার কথা বলে, টেকসই পৃথিবীর কথা বলে। আর স্মার্ট বাংলাদেশের সংজ্ঞায় তা কতটুকু ধারণ করা গেছে তাই এখন প্রশ্নসাপেক্ষ। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই স্মার্ট বাংলাদেশে সম্ভাব্য রূপকল্প বিস্তৃত পরিসরে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা ও মতামত গ্রহণের দাবি রাখে।
স্মার্ট বাংলাদেশের ধারণায় টেকসই বাংলাদেশ নির্মাণের ওপর যেমন গুরুত্ব দেওয়া দরকার একই সঙ্গে গুরুত্ব দেওয়া দরকার ‘স্মার্ট গভর্নেন্স’-এর ওপর যদিও বাজেটে ‘স্মার্ট গভর্নমেন্ট’-এর কথা বলা হয়েছে। গভর্নমেন্ট ও গভর্নেন্স এই দুইয়ের মধ্যে যে বিস্তর ফারাক সেটা সংশ্লিষ্ট সবাই অনুধাবন করতে পারেন। টেকসই পৃথিবী প্রয়োজনীয় গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে স্মার্ট বাংলাদেশের ধারণার মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোজন, প্রশমন, নদী-খাল-বিল দূষণের হাত থেকে রক্ষা করা, প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ের ওপর কেমন যেন দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। যেখানে মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনায় ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩০ শতাংশ উল্লেখ করলেও এবারের বাজেটে তা মাত্র ১০ শতাংশ উল্লেখ করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের এই যুগে যেখানে বাংলাদেশ অন্যতম ভুক্তভোগী দেশ সেখানে টেকসই পৃথিবী ও টেকসই বাংলাদেশ নির্মাণের এই ধারণাগুলো এড়িয়ে কীভাবে স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ করা যাবে তা বোধগম্য না। অন্যদিকে দায়সারা গভর্নেন্সের ধারণা আমাদের দেশের পশ্চাৎপদতার অন্যতম মূল কারণ। হোক পর্যাপ্ত জনবলের অভাব, হোক দক্ষতার অভাব বা দৃষ্টিভঙ্গিগত সমস্যা, জেঁকে বসা অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতিই যেন শাসনব্যবস্থার নির্মম বাস্তবতা। লালফিতার সংস্কৃতিতে প্রতি পদে পদে বাধাপ্রাপ্ত হওয়া বোধকরি সাধারণ জনগণের জন্য কোনো নতুন অভিজ্ঞতা নয়। যতই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ বলা হোক না কেন এখানে সাধারণ সেবা গ্রহণকারীরা কোনো অবস্থায়ই শাসনব্যবস্থার কেন্দ্রীয় অবস্থানে থাকেন না, তাদের অবস্থান হয় নিতান্তই প্রান্তে। এখন স্মার্ট বাংলাদেশেও কি এই অবস্থার ধারাবাহিকতাই দেখতে পাব? গভর্নমেন্ট স্মার্ট হলো, কিন্তু গভর্নেন্স সেই পুরনো ধ্যানধারণার ভিত্তিতে চলতে থাকল তাহলে এই স্মার্ট বাংলাদেশের সার্থকতা কী? এবারের বাজেট ডকুমেন্টে বলা হয়েছে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৫৭২টি আইন পাস হয়েছে কিন্তু সুশাসন প্রতিষ্ঠান আইন যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন এর ন্যায্য বাস্তবায়ন।
ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরে নিঃসন্দেহে বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই, বাজেট সেই বিনিয়োগের নীতি রূপরেখা তৈরি করবে সেটাই কাম্য। তবে বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ আছে কি না, আর সম্পদ সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় প্রগতিশীল (স্মার্ট) কর কাঠামোর বাস্তবায়ন করতে পারছে কি না সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। আর এর পাশাপাশি রয়েছে কর ফাঁকির নানা ব্যবস্থা। এসব কারণে প্রতি বছরের মতো প্রয়োজনীয় খাতে সম্পদ বরাদ্দের ঘাটতি এবারের বাজেটেও চোখে পড়বে। উন্নয়নের বাজেটের প্রায় সবটাই হয় ঘাটতি বাজেটের ওপর নির্ভর করে ফলে যেকোনো আর্থিক সংকটেই এটাই কাটছাঁট করা হয় সবার আগে যেমনটা আমরা দেখেছি গত বছরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে। আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে পারাই হচ্ছে স্মার্ট বাজেটের অন্যতম অনুষঙ্গ।
সবশেষে বলা যায়, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য এবারের বাজেটে যুবদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কিছু উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই এই উদ্যোগগুলো যথেষ্ট নয়। পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতিসহ, প্রকৃতি-পরিবেশ ও অন্য বিষয়সমূহের ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ শুধু কোনো প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিষয় হতে পারে না মূলত এটি একটি সংস্কৃতি এবং তা শুধু দেশীয় পরিপ্রেক্ষিতেই বিবেচনা করলে হবে না বরঞ্চ তাল মেলাতে হবে বিশ্বপরিস্থিতি ও মানদণ্ডের সঙ্গে। আর একে শুধু একটি ধারণার ওপর ছেড়ে দিলে হবে না এর জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, যার জন্য পরিবর্তনটা আনতে হবে সামগ্রিক, একদম ভেতর থেকে, সাধারণ মানুষের ওপর নির্ভর করে, তাদের মর্যাদা ও পরিবর্তনকে সবার আগে গুরুত্ব দিয়ে।
লেখক: উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু, বাংলাদেশে নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। প্রতিদিনই এমন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে মানুষ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চালকের বেপরোয়া ড্রাইভিং যেমন দায়ী তেমনি কিছু ক্ষেত্রে পথচারীর অসতর্কতাও যে দুর্ঘটনায় হতাহতের কারণ তা সবাই একবাক্যে স্বীকার করবেন। তবে আজ পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় কোনো চালকের আমৃত্যু কারাদন্ড হয়েছে সে রকম তথ্য জানা নেই। তবে দুর্ঘটনার কারণে বিভিন্ন মেয়াদে অসংখ্য চালকের জরিমানা ও ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল হয়েছে। কিন্তু আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরও কারাবাসের কোনো খবর আমাদের জানা নেই। আমৃত্যু কারাদন্ড তো দূরের কথা। কিন্তু এবার হয়েছে। আদালতে প্রমাণিত হয়েছে কক্সবাজারের চকরিয়ায় পিকআপের চাপায় যে ছয় ভাইয়ের করুণ মৃত্যু হয়েছে তার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন পিকআপ চালক। যে কারণে তাকে আদালত কর্তৃক আমৃত্যু কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-তে বলা হয়েছে, বেপরোয়াভাবে বা অবহেলা করে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনায় কেউ গুরুতর আহত বা কারও মৃত্যু হলে চালককে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। তবে তদন্তে যদি দেখা যায়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চালক বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন, তাহলে দণ্ডবিধি ৩০২ অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হবে। অর্থাৎ সাজা হবে মৃত্যুদন্ড। তবে এটা তদন্তসাপেক্ষে এবং তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধারা নির্ধারণ করবে।
সোমবার দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায় কক্সবাজারের চকরিয়ায় পিকআপ চাপায় ছয় ভাই নিহতের ঘটনায় হওয়া মামলায় পিকআপটির চালক সাইদুল ইসলামকে আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে তাকে এক লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। রবিবার দুপুরে আসামির উপস্থিতিতে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল এ রায় ঘোষণা করেন।
পিকআপ চাপায় ছয় ভাই নিহতের ঘটনাটি দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে রায় ঘোষণার সময় বিচারক বলেন, পিকআপ চালক প্রথমবার চাপা দেওয়ার পর দ্বিতীয়বার পেছন থেকে আহত ব্যক্তিদের চাপা দিয়ে ঘটনাস্থলে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে। এজন্য চালক সাইদুলের মৃত্যুদণ্ড হওয়ার কথা। কিন্তু চালকের বয়স (২২) বিবেচনায় নিয়ে তাকে আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হলো। সংবাদে আরও বলা হয়েছে, নিহত ছয় ভাইয়ের মা মৃণালিনী সুশীল তার ছেলেদের হত্যার নির্দেশদাতা কে বা কারা তা জানতে চান। এর মানে, বিষয়টি পরিষ্কার। তদন্তে অবশ্যই ইচ্ছাকৃত হত্যাকান্ড হিসেবে এটি প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু হত্যাকান্ডের শিকার ছয় ভাইয়ের মা’র কথা আরেক ধরনের রহস্যের উন্মোচন করেছে। তিনি আরও বলেছেন, যে পিকআপটি ওই ঘটনা ঘটিয়েছে, সেই পিকআপের নম্বর প্লেট ও লাইসেন্স নেই। সাইদুলের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। তারপরও কী করে গাড়িটি এমনভাবে রাস্তায় চলেছে তাও জানতে চাই। গাড়িতে চালকের পাশে বসে থাকা পিকআপ মালিকের ছেলে তারেকের সেদিনের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাই। আশা করি, উচ্চ আদালতে গেলে আমি আমার মনের ভেতর থাকা সব প্রশ্নের জবাব পাব।
চালকের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক থাকলেও, দন্ডপ্রাপ্ত চালকের কোনো লাইসেন্স নেই! এ ছাড়া পিকআপের মালিকের ছেলে গাড়িতে থাকা অবস্থায় ছয় ভাইকে গাড়ির চাকায় পিষ্ট করা হয়েছে। এখান থেকে আন্দাজ করা যায়, হয়তো কোনো বড় ধরনের ঝামেলা ছিল। যে কারণে এমন নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে। পিকআপ, বাস, ট্রাকসহ পরিবহন চালকদের মনে এমন ধারণা জন্ম নিয়েছে যে, দুর্ঘটনায় কোনো পাবলিকের মৃত্যু হলে, আমাদের তেমন কোনো সমস্যা নেই। সবকিছু ‘ম্যানেজ’ হয়ে যাবে। এইভাবে খুন করে, সড়ক দুর্ঘটনার নামে চালিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টার প্রতি তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানাচ্ছি। আইনের প্রতি আমরা পুরোপুরি আস্থাশীল। এমন যুগান্তকারী রায়ের জন্য বিচারকের প্রতি শুভকামনা। তিনি অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে সবকিছু বিশ্লেষণ করেই এমন রায় দিয়েছেন। অবশ্যই এই রায় একটি উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হবে।
অভিষেকে ২৬ মিনিট খেলে দুই অ্যাসিস্টের অবদান রাখতে পেরেছিলেন নেইমার। আল হিলাল জিতেছিল। কিন্তু পর পর দুম্যাচ খেললেন পুরো সময়। তেমন কিছুই করতে পারলেন না। ড্র করেছে আল হিলাল আবার।
এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচে শেষ দিকের গোলে ১-১ ড্র করে পরাজয় বাঁচিয়েছিল আল হিলাল। আজ সৌদি প্রো লিগে দামাক এফসির বিপক্ষে ম্যালকমের গোলে ৯ মিনিটে এগিয়ে গেলেও শেষপর্যন্ত তা ধরে রাখতে পারেনি।
সাত ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে তবুও শীর্ষেই রইলো আল হিলাল।
বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস আজ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে দিবসটি পালিত হবে। এ উপলক্ষে ২১টি বেসরকারি সংস্থা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘স্বল্প দূরত্বে হেঁটে ও সাইকেলে চলি, ব্যক্তিগত গাড়ি পরিহার করি’।
দিবসটি উপলক্ষে আজ শুক্রবার সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে ২১টি আয়োজক সংস্থার সম্মিলিত উদ্যোগে ধানমন্ডি-২৭-এর মোড় থেকে আবাহনী খেলার মাঠ পর্যন্ত ‘স্বল্প দূরত্বে হেঁটে ও সাইকেলে চলি, ব্যক্তিগত গাড়ি পরিহার করি’ শীর্ষক র্যালি আয়োজন করা হয়েছে।
২০০৬ সাল থেকে দেশে বেসরকারি উদ্যোগে দিনটি উদযাপন করা হচ্ছে। তবে ২০১৬ সাল থেকে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে এটি পালন শুরু হয়, যেখানে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্র্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) মুখ্য সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করে এসেছে। কিন্তু বিশ্বের অন্যতম যানজটপ্রবণ ঢাকা শহরে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা থাকা সত্ত্বেও সরকারিভাবে এ দিবসটি পালনের উদ্যোগ এই বছর নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশে দিবসটি পালনের প্রায় দেড় যুগ পার হতে চললেও ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ও ফলপ্রসূ পরিকল্পনা ও নীতির বাস্তবায়ন এখনো দেখা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, যানজটের বড় কারণ হলো এই ব্যক্তিগত গাড়ি। দেশে মেগা প্রকল্পগুলো ব্যক্তিগত গাড়িকে প্রাধান্য না দিয়ে গণপরিবহনকে প্রাধান্য দিয়ে করা উচিত। এখন গণপরিবহনের দিকে জোর না দেওয়ায় অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে ব্যক্তিগত গাড়ি, যা সড়কে বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিআরটিএ একটি সূত্র থেকে জানা যায়, দিন দিন ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। চলতি বছর আগস্ট পর্যন্ত মোট যানবাহন নিবন্ধন আছে ৫৮ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮টি মতো। এর মধ্যে গণপরিবহনের সংখ্যা মাত্র ২ শতাংশের কম। আর বেশিরভাগই ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা গাড়ি।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বায়ুদূষণে বিশ্বে দুই বিলিয়ন শিশু প্রতিদিন বিষাক্ত বাতাসের সংস্পর্শে আসছে। এদের মধ্যে পাঁচ লাখের বেশি প্রতিবছর মারা যাচ্ছে। তবুও দেশে গণপরিবহনকে প্রাধান্য না দিয়ে বড় বড় অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। যার জন্য দেশে দিনের পর দিন ব্যক্তিগত গাড়ি বাড়ছে। এ অবস্থায় ভবিষ্যতে সড়কে নানারকম বিশৃঙ্খলার শঙ্কা থেকেই যাবে।
এদিকে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানান, প্রতি মাসের প্রথম রবিবার সব ধরনের ব্যক্তিগত গাড়ি বন্ধ করার রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ প্রয়োজন। নীতিনির্ধারকরা গণপরিবহন ব্যবহার করলেই সাধারণ মানুষের যাতায়াতের দুর্ভোগ উপলব্ধি করতে পারবেন, ফলে গণপরিবহনের মান বাড়তে পারে। টেকসই পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নগর এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়াস সারা বিশ্বে বেগবান হলেও বাংলাদেশে এ প্রয়াস সীমিত। তাছাড়া ঢাকা শহরে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ব্যক্তিগত গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দিয়ে চলছে বিআরটিএ। নগর পরিকল্পনা ও পরিবহন পরিকল্পনার মধ্যে সমন্বয় নেই, কর্র্তৃপক্ষগুলোর মধ্যেও নেই কার্যক্রমের সমন্বয়। ফলে নগরে গাড়ির চাপ বাড়ছে, মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়েছে যানজট।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনা কখন যাবি জনগণ এখন আর এই কথা বলে না। বলে, এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনা এখন যাবি। আর যাবেনইবা কোথায়? এখন সেটাই দেখার বিষয়। সর্বশেষ গতকাল ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাফ বলে দিয়েছে, তারা শেখ হাসিনার অধীনে হওয়া নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবেন না। কারণ তাদের যে প্রতিনিধিরা দেশে এসেছিলেন, তারা গিয়ে বলেছেন, নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই।’ গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিএনপি আয়োজিত ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-সিলেট অভিমুখী ‘রোডমার্চ’ কর্মসূচির শুরুতে ভৈরবের বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সকালে অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির এক দফা দাবি আদায়ে এই রোডমার্চ শুরু হয়। কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রোডমার্চ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন গয়েশ^র চন্দ্র রায়।
এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওয়ারেস আলী মামুন, নির্বাহী কমিটির সদস্য লায়লা বেগম ও মজিবুর রহমান ইকবাল।
ওই জনসভায় গয়েশ্বর চন্দ্র আরও বলেন, ‘বিএনপির দাবি দেশে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন, যা হতে হবে নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। যার যার ভোট সে সে দেবে। সকালের ভোট রাতে হবে না।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ব্যবসার পরিবেশ পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগের লোকেরা ধ্বংস করছে। ফলে এতে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। দেশের মানুষ আজ অসহায় দ্রব্যমূল্য নিয়ে। চালের দাম, তেলের দাম, আলুর দাম, বিদ্যুতের দাম হু হু করে বেড়েছে। আজকে ব্যাংকগুলোতে টাকা চুরি করে আওয়ামী লীগের লোকেরা পাচার করছে বিদেশে। রিজার্ভ কমে গেছে। সরকারদলীয় লোকের দুর্নীতির কারণে আজ রিজার্ভ কমছে, দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হচ্ছে।’
দুপুরে সিলেট অভিমুখে তারুণ্যের রোডমার্চে যাত্রাপথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল বিশ্বরোড মোড়ে পথসভা হয়। এ সময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তৃতাকালে গয়েশ্বর বলেন, ‘তারুণ্যের যে রোডমার্চ শুরু হয়েছে, তা সরকার পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। দেশ বাঁচাতে, মানুষ বাঁচাতে তরুণ সমাজ আজ জেগে উঠেছে। শেখ হাসিনা সরকারকে আর কোনো অশুভ শক্তিই রক্ষা করতে পারবে না।’ এ আন্দোলন ডু আর ডাই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
রোডমার্চটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমানায় পৌঁছলে দলের কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম খোকন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মোহাম্মদ শামীম ও যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা এসএন তরুণ দেসহ দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নেতৃত্বে রোডমার্চকে স্বাগত জানিয়ে শোডাউন করা হয়।
পরে দুপুরে হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ এলাকায় পথসভা করা হয়। পথসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মালিক জনগণ। সেই মালিকানা আমরা ফেরত দিতে চাই। ক্ষমতায় আসার জন্য আমরা আন্দোলন করছি না। জনগণের অধিকার আর মানুষের ভোটাধিকার ফেরাতে আমরা রাজপথে নেমেছি।’
রোডমার্চটি বিকেল ৪টায় সিলেটে এসে সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই রোডমার্চ সিলেটে পৌঁছে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। এরপর সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ নেতারা।
এদিকে বৃষ্টি হওয়ায় সমাবেশস্থল আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে নেতাকর্মীরা সেভাবে অবস্থান নিতে পারেননি। খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে অনেকে সমাবেশস্থলে এলেও বৃষ্টির কারণে তারা আশপাশের বিভিন্ন ভবনে আশ্রয় নেন। অবশ্য বেশ কিছু নেতাকর্মী ছাতা, ব্যানার-ফেস্টুন ইত্যাদি মাথায় দিয়ে মাঠেই অবস্থান করছিলেন। বৃষ্টিতে ভিজে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী সরকারবিরোধী স্লোগান দেন।
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন জানান, রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশে যোগ দিতে দুপুর থেকেই সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলা, পৌরসভা ও সিলেট মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মী মিছিল সহকারে এসে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জড়ো হতে থাকেন। তবে বৃষ্টির কারণে মাঠে অবস্থান কষ্টকর হয়ে পড়ে। এরপরও বৃষ্টিতে ভিজে শত শত নেতাকর্মী সেখানে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ সফল করেছেন। সভা শেষে রোডমার্চ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
* প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ও নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
রাজধানীর পল্টনে ব্যাংক থেকে ব্যবসায়ীর ২০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দুই পুলিশসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
জানা গেছে, আবদুল্লাহ আল মামুন নামে একজন ব্যবসায়ীর কর্মচারী আইএফআইসি ব্যাংকের পল্টন শাখায় ২০ লাখ টাকা জমা দিতে আসেন। তিনি এসে টাকা জমা দেওয়ার লাইনে দাঁড়ান। এ সময় পুলিশের ইউনিফর্ম পরা দুই ব্যক্তি তাকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে যান। পরে তার কাছে থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যান তারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। পরে সিটিটিভি ফুটেজ দেখে দুজন হকারকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ধারাবাহিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয় অন্যদের। এ ঘটনায় পল্টন থানায় একটি মামলা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের (ডিএমপি) উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ছিনতাইয়ের সঙ্গে দুজন পুলিশ কনস্টেবল জড়িত ছিল। তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিভিলে থাকা তিন ব্যক্তি টাকার বিষয়ে ওই দুই পুলিশকে তথ্য দেয়। এরপর ইউনিফর্ম পরা দুই পুলিশ কনস্টেবল ব্যাংকে ঢুকে ওই ব্যক্তিকে বাইরে নিয়ে আসে। তার কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। দুই পুলিশ কনস্টেবল বরখাস্ত ছিল।
জানা গেছে, পল্টন থানা-পুলিশ ও ডিবির মতিঝিল জোনাল টিম সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ব্যাংকের সামনের ফুটপাতের হকার হৃদয় ও তার সহযোগী মঞ্জুকে আটক করে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের দেওয়া তথ্যে ডেমরা পুলিশ লাইনসে ক্লোজড হয়ে থাকা পুলিশের দুই সদস্য কনস্টেবল মাহাবুব ও কনস্টেবল আসিফকে ১০ লাখ টাকাসহ আটক করা হয়। এরপর বাসাবো থেকে ছিনতাইয়ের আরও ১০ লাখ টাকা ও মোটরসাইকেলসহ সোহেলকে আটক করে পুলিশ।
এ ঘটনার ভুক্তভোগী আবদুল্লাহ আল মামুন করপোরেট আইডিয়াসের মালিক। তিনি বলেন, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই মার্কেটিং অফিসারের মাধ্যমে টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার জন্য পাঠানো হয়। টাকা নিয়ে ব্যাংকের ওই শাখায় যাওয়ার পর এ ঘটনা ঘটে। এরপর দ্রুত পুলিশকে জানাই।
এ ব্যবসায়ী আরও বলেন, পুলিশের পোশাক পরিহিত দুই লোক এসে আমাদের কর্মীকে ভয় দেখিয়ে টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে এটি শুনে বিস্মিত হয়েছিলাম। এখন জানলাম এ ছিনতাইকাণ্ডে শাহজাহানসহ আরও তিনজন রয়েছে। শাহজাহান আমার দীর্ঘদিনের কর্মী। আমাদের প্রতিষ্ঠান ঠিকাদারিতে জড়িত।
পুলিশ বলছে, পুরানা পল্টনে করপোরেট আইডিয়াসের অফিস থেকে টাকা জমা দেওয়া জন্য ব্যাংকের উদ্দেশ্যে যাত্রার পরপরই শাহজাহান, হৃদয় ও রাসেল পুলিশের দুই সদস্যকে খবর দেন। তারা পল্টনের আইএফআইসি ব্যাংকে গিয়ে টাকার ব্যাগসহ আজিমকে তুলে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে দুই পুলিশ সদস্য পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিনতাইয়ে অংশ নেন। এ সময় বাকি তিনজন আশপাশে পাহারায় ছিলেন।
পল্টন থানার ওসি সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরই ব্যাংকের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়। এরপর পুলিশের দুই সদস্যকে শনাক্তের পর অন্য তিনজনের বিষয়েও তথ্য বেরিয়ে আসে।
জানা গেছে, ব্যাংকের ওই শাখায় গিয়ে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা একটি হিসাব নম্বরে জমা দেওয়ার পরই ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের নামে ব্যাংকের বাইরে নিয়ে আসা হয়। তারা আজিমের টাকার উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। ব্যাগে থাকা টাকা হুন্ডির অর্থ বলে দাবি করেন পুলিশ সদস্যরা। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে আজিমকে ব্যাংকের বাইরে নিয়ে যান। রাস্তায় এনে তাকে মোটরসাইকেলে তুলে দ্রুত মুগদা এলাকায় নেন। সেখানে টাকার ব্যাগ রেখে ছেড়ে দেওয়া হয় আজিমকে। এরপর ঘটনা ওই প্রতিষ্ঠানের মালিককে জানানোর পর পুলিশের একাধিক দল কাজ শুরু করে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার-২০২৩। মেলার প্রথম দিনে পর্যটকদের ব্যাপক সাড়া মিলেছে। ভারত ও বাংলাদেশ ছাড়াও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের জন্য যাবতীয় বিষয় নিয়ে মেলায় বসেছে অর্ধশতাধিক স্টল। মেলায় আসা দর্শনার্থীরাও হাতের লাগালেই ভ্রমণসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য এবং ভ্রমণের ওপর অফার পাওয়ায় বেশ খুশি।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে আগত দর্শনার্থী ও স্টলগুলোতে থাকা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই মিলেছে।
মেলায় স্টল বসিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসও। স্টলটিতে দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি চালু হওয়া জাপানের নারিতা রুটে যাতায়াত করতে চাইলে মেলায় আসারা পাবেন ২০ শতাংশ ছাড়। এ ছাড়া কাঠমান্ডু, কলকাতা, দিল্লি, আবুধাবি, শারজা, দুবাই, দোহা, সিঙ্গাপুর ও ব্যাংকক রুটে মিলবে ১৫ শতাংশ ছাড়। এ ক্ষেত্রে বিমানের কল সেন্টারেও (০১৯৯০৯৯৭৯৯৭) সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন আগ্রহীরা।
এদিকে মেলা উপলক্ষে র্যাফেল ড্রর টিকিটও দিচ্ছে এয়ারলাইনসটি। প্রবেশপথে টিকিট কাটলে প্রথম দিনে থাকছে ঢাকা-দিল্লি-ঢাকা কাপল রিটার্ন টিকিট, দ্বিতীয় দিনে থাকছে ঢাকা-গুয়াংজু-ঢাকা রুটে কাপল রিটার্ন টিকিট এবং তৃতীয় দিনে ঢাকা-নারিতা-ঢাকা কাপল রিটার্ন টিকিট পাবেন র্যাফেল ড্রতে বিজয়ীরা।
মেলায় আসা দর্শনার্থীদের ভাষ্য, এরকম মেলার আয়োজন প্রতি তিন মাস পরপর করা প্রয়োজন। তাহলে মানুষের ভ্রমণের ওপর ভীতি কাটবে। তথ্য জানবে খোলামনে। আর এতে দেশের পর্যটন স্পটগুলোতেও তারা সহজে ঘুরতে যেতে চাইবে।
রংপুরের ‘আলী বাবা থিম পার্কে’র আকর্ষণীয় নানা বিষয় ভ্রমণপিপাসুদের জানাতে মেলায় স্টল দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার তৌহিদুল ইসলাম তৌহিদ। তিনি বলেন, ‘আমরা অফার দিচ্ছি না, তবে আমাদের পার্কে মানুষ কেন যাবে, কী কী দেখার মতো জিনিস দিয়ে আমরা পার্ক সাজিয়েছিÑ সেটা জানাতেই মেলায় আসা।’
ব্যাংকপাড়াখ্যাত মতিঝিল এখন মৃতপ্রায়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে না পারায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যত্র সরে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির চাকা ঘোরানো মতিঝিলে আবাসিক ভবন, শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান তৈরি না হলে দেশের প্রধান এই বাণিজ্যিক অঞ্চল প্রাণ হারাবে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তাদের মতে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বড় অবদান রয়েছে মতিঝিলের টাকার। শুধু তা-ই নয়, মতিঝিলে উপার্জিত অর্থে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, কানাডাসহ আরও অনেক দেশে। এখানকার উপার্জিত টাকা অনেকে জমা রেখেছেন সুইস ব্যাংকেও। শুধু উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি মতিঝিলে। এ যেন মা কাঁকড়ার আত্মত্যাগের গল্প। মা কাঁকড়া বাচ্চাদের আগলে রাখে বুকের ভেতর; যেদিন বাচ্চাগুলো বের হয়ে আসে, সেদিন খোলস ছাড়া মা কাঁকড়ার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। মা কাঁকড়ার মতো দুঃখী ও ত্যাগী বাণিজ্যিক মতিঝিল।
ষাটের দশকে মতিঝিলে গড়ে ওঠে দেশের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট-সিবিডি)। সেই থেকে এখনো দেশের প্রধান বাণিজ্যিক অঞ্চল মতিঝিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১। এর মধ্যে সরকারি ৮টি, বেসরকারি ৪৫টি এবং বিদেশি ব্যাংক রয়েছে ৮টি। এ ছাড়া ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ৮১টি বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকের বেশির প্রধান কার্যালয় চলে গেছে কারওয়ান বাজার, গুলশান-বনানী ও উত্তরায়। নতুন করে যেসব ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাচ্ছে, সেগুলোর প্রধান কার্যালয় মতিঝিলের বাইরে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, মতিঝিলের আশপাশে পরিকল্পিত কোনো আবাসিক এলাকা, অভিজাত হোটেল, কাজের ফাঁকে অবসর কাটানোর মতো উন্মুক্ত স্থান, শপিং কমপ্লেক্স না থাকায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের সুবিধার জন্য অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয়গুলোও মতিঝিলের বাইরের এলাকা, অর্থাৎ কারওয়ান বাজার, গুলশান অ্যাভিনিউ, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে গড়ে উঠছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক বাংলা, শাপলা চত্বর, মধুমিতা সিনেমা হল এবং ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এবং দিলকুশা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবন এবং বঙ্গভবনের পাশের এলাকাজুড়ে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল। বিশ্বের বাণিজ্যিক অঞ্চলের ভবনগুলো সুউচ্চ হয়ে থাকে। কিন্তু মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের পাশেই বঙ্গভবন। নিরাপত্তার কারণে বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর কোনো বহুতল ভবন করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, মতিঝিলের প্লটগুলোর ‘নন-রেসট্রিকটেড’ উচ্চতা দেওয়া রয়েছে। কিন্তু বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর সাড়ে চারতলার বেশি উচ্চতার ভবনের অনুমোদন মেলে না। ফলে মূল্যবান ওই প্লটগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারছেন না মালিকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগ জরাজীর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণও রয়েছে কয়েকটি ভবন। একটির সঙ্গে অন্যটি লাগানো। দুটি ভবনের মাঝখানে উন্মুক্ত জায়গা নেই বেশিরভাগ ভবনের। দিলকুশা এলাকার বঙ্গভবন লাগানো ভবনগুলোর মাঝখানেও কোনো ফাঁকা জায়গা দেখা যায় না।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, মতিঝিল এলাকার ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে। ভাঙাচোরা এবড়োখেবড়ো সড়ক। সড়ক বিভাজকগুলো শ্রীহীন। এগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হয়নি। প্রধান সড়ক থেকে একটু ভেতরে গেলে মতিঝিলের আরও করুণ দশা চোখে পড়ে। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকার সড়কের ফুটপাতে গড়ে উঠেছে চটের ছালা দিয়ে ঘেরা খাবারের হোটেল, চায়ের দোকান এবং নানা পণ্যের অস্থায়ী দোকান। সামান্য বৃষ্টিতে মতিঝিল এলাকার সড়কগুলো তলিয়ে থাকে পানির নিচে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত। ডিএসসিসি এলাকার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলছে। খসড়া মাস্টারপ্ল্যানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে মূল্যায়ন করলে মতিঝিল ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে। যদিও এটা মানতে নারাজ ডিএসসিসির কারিগরি কমিটি।
মতিঝিল এলাকার বেহাল অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিল এলাকার সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে ডিএসসিসি। পরিত্যক্ত প্রায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর একটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মতিঝিলের সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত ও সড়ক বিভাজকের অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা দরকার। পর্যায়ক্রমে এ এলাকার বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে কাজ করবে ডিএসসিসি। তবে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের মূল সংস্কার ও আধুনিকায়নের দায়িত্ব রাজউকের। রাজউককে সেসব বিষয় পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব কাজে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা লাগলে করপোরেশন সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলে রাজউক। রাজউক সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশক থেকেই মতিঝিলের পুরোপুরি বাণিজ্যিক বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। বিশে^র উন্নত দেশগুলোর বাণিজ্যিক অঞ্চলে শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান থাকে। আর কাছাকাছি এলাকায় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা থাকে। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে সেটা ছিল না। অভিজাত মানের হোটেল পূর্বাণী গড়ে উঠলেও আশপাশে সময় কাটানোর মতো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লোকজন গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় থাকেন। মতিঝিলের সৌন্দর্য নিশ্চিত করতে ও আধুনিকায়নে যেসব বিষয়ে দৃষ্টি রাখা দরকার ছিল রাজউক ও সিটি করপোরেশন সেটা করেনি।
রাজউক সূত্রে আরও জানা যায়, ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধরা, উত্তরা। সেই সব এলাকা থেকে মানুষ মতিঝিলে আসেন। শহরের জনসংখ্যা বাড়ায় দিন দিন যানজট বাড়ছে। ওই সব এলাকা থেকে মতিঝিলে আসতে সড়কে এক থেকে দেড় ঘণ্টা চলে যায়। দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কর্মঘণ্টার মধ্যে ৩০ শতাংশ সময় সড়কে নষ্ট হচ্ছে। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে চিন্তা করেছে, তার কর্মস্থল এমন একটা জায়গায় হবে যা তার আবাসনের কাছাকাছি। মতিঝিল থেকে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও ভূমিকা রেখেছে।
কালের বিবর্তনে গুলশান হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক এলাকা। কারওয়ান বাজার, উত্তরায়ও গেছে কিছু। এসব জায়গায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমও সেখানে চলে গেছে। এসব এলাকার আশপাশে গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় তাদের বসবাস। আবাসিক এলাকা ছাড়া, পৃথিবীর কোথাও শতভাগ জায়গা শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা অথবা একই শ্রেণির কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার হয় না।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মুখপাত্র মো. আশরাফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, নগর পরিকল্পনায় ভূমির ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়, যেকোনো জায়গার ব্যবহার হবে ২৪ ঘণ্টা। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল কর্মচঞ্চল থাকে মাত্র ১২ ঘণ্টা। এরপর ওই জায়গার ব্যবহার হয় না। রাতে নীরব ও ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়।
তিনি বলেন, যে মতিঝিলে দিনের বেলায় হাঁটা যায় না; গাড়ির কারণে, যানজটে; সেই মতিঝিলে রাত ৮টার পরে আবার একাও হাঁটা যায় না; অনিরাপদ বোধ হয়। এ জন্য যারা দিনে বাণিজ্য করতে আসেন, তারা মতিঝিল এলাকার হোটেলগুলোতে থাকেন না। অন্যদিকে গুলশান-বনানী এলাকায় থাকলে তারা শপিংয়ে যেতে পারেন, কফি শপে যেতে পারেন। এসব কারণে সারা বিশ্বে ভূমির মিশ্র ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, মতিঝিল এলাকা যেহেতু ইতিমধ্যে তার আভিজাত্য হারিয়ে ফেলেছে, এ জন্য মতিঝিলের জমির শ্রেণিকে মিশ্র ব্যবহার হিসেবে ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি নিয়েছে রাজউক। সংশোধিত ড্যাপে সে বিষয়ে নির্দেশনা রাখা হয়েছে। পৃথিবীর নগর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৫০, ৬০ বা ১০০ বছর অন্তর সেসব ঢেলে সাজানো হয়। সেটা বিবেচনায় নিয়েই মতিঝিল এলাকাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। এখানে আবাসিকের বৈশিষ্ট্য দিতে হবে; কনডোমিনিয়াম গড়ে তুলতে হবে। ইতিমধ্যে রাজউক বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ১৬ একর জায়গা নিয়ে একটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে লাইব্রেরি, ওয়াকওয়ে থাকবে। বসার ব্যবস্থা থাকবে। মতিঝিল এলাকায় ঝিল ছিল, ওই ঝিলকে প্রাধান্য দিয়ে পার্কটি তৈরি করা হবে। বহুমুখী ব্যবহার ছাড়া মতিঝিলকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিলের আধুনিকায়ন ও ভূমির মিশ্র ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। তাহলে মতিঝিল সচল থাকবে; তবে ঢাকা শহর বড় হওয়ায় আরও বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে ওঠা ইতিবাচক। এসব পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা দরকার ছিল; কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে সে রকম হয়নি। এটা দুঃখজনক। এ জন্য শহরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ঢাকায় এখন অনেকগুলো বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই সব অঞ্চলে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় বড় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় মতিঝিলে রয়েছে। তবে ব্যবসা গুলশান, বনানী, উত্তরা, গাজীপুরে সরে যাওয়ায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ব্যবসা কেন্দ্রের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।