
করোনাকাল শিশুর স্ক্রিন আসক্তিকে মহামারীর পর্যায়ে নিয়ে গেছে। যেহেতু গৃহবন্দি শিশুদের খেলাধুলার কোনো সুযোগ ছিল না, তাই অনেক মা-বাবা মোবাইলে গেমস দিয়ে অথবা টিভিতে কার্টুন ছেড়ে শিশুকে শান্ত রাখার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কখন যে শিশু স্ক্রিন আসক্ত হয়ে গেছে, সেটাই বুঝতে পারেনি।
করোনাকালীন অনলাইনে পাঠদান পদ্ধতি এই পরিস্থিতিকে আরও বেশি নাজুক করেছে। হাট-বাজার, মসজিদ-মন্দির, মিছিল-মিটিং, জনসভা-মাহফিল, মামলা-হামলা সবকিছুই চলেছে, কিন্তু শিশুদের স্কুল বন্ধ। শুধু শিশুদের লকডাউনে রেখে করোনা নিয়ন্ত্রণের এই ফর্মুলা কোন বিশেষজ্ঞের মাথা থেকে এলো, তা বোধগম্য নয়। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের কারণে অভিভাবকরা শিশুদের হাতে ইন্টারনেট সংযোগসহ স্মার্টফোন, ট্যাব অথবা ল্যাপটপ দিতে বাধ্য হলো। যার চূড়ান্ত ফলাফল হচ্ছে স্ক্রিন আসক্ত শিক্ষার্থী প্রজন্ম। ততদিনে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে, বিষয়টি আসক্তির পর্যায়ে চলে গেছে। এই আসক্তি মাদকাসক্তির মতোই ভয়ংকর। মাদক না পেলে নেশাখোর যেমন অস্থির হয়ে ওঠে, ঠিক তেমনি স্ক্রিন আসক্ত শিশুও মোবাইল বা ট্যাবে সময় কাটানোর জন্য অস্থির হয়ে ওঠে। মনোবিজ্ঞানীরা একে ‘ডিজিটাল কোকেন’ নামে অভিহিত করেছেন।
বাস্তবতা হচ্ছে, শিশুর কাছ থেকে মোবাইল বা ট্যাব কেড়ে নিলে অথবা ধমকালে, শিশু সাংঘাতিক প্রতিক্রিয়া দেখায়। খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে, পড়াশোনায় মনোযোগ দিচ্ছে না, মা-বাবার সঙ্গে চিৎকার-চেঁচামেচি, ব্ল্যাকমেইলসহ নানা সমস্যাপূর্ণ আচরণ করছে, এমনকি আত্মহননের পথও বেছে নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কী করবেন, অভিভাবকরাও তা বুঝতে পারছেন না।
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না মাদকাসক্তির মতো এটিও এক ধরনের আসক্তি। যেহেতু শিশুরা কিছুটা অবুঝ তাই এই আসক্তি ছাড়ানোর কাজটি বড়দের মতো হবে না। শোধরানোর কাজ হবে ধীরে ধীরে কৌশল প্রয়োগ করে। এ ক্ষেত্রে জোরজবরদস্তি হিতেবিপরীত হতে পারে। ভালো উপায় হচ্ছে, শিশুর স্ক্রিন টাইমের পরিমাণ আস্তে আস্তে কমিয়ে আনা। শিশু যদি দিনে ছয় ঘণ্টা স্ক্রিনে সময় কাটায়, প্রথম দিকে খুব বেশি সময় কমাতে যাবেন না। আপনি বলতে পারেন, এখন থেকে তুমি চার ঘণ্টা স্ক্রিনের সামনে থাকতে পারবে। সকালে দুই ঘণ্টা, বিকেলে দুই ঘণ্টা। রাতে না দিলেই ভালো হয়, ঘুমের আগে কোনোভাবেই নয়। অর্থাৎ প্রথমে তাকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টা করবেন। এরপর ধীরে ধীরে সময়ের পরিমাণ কমাবেন। পাশাপাশি এমন কিছু কাজে যুক্ত করবেন, যাতে অলস সময়ের পরিমাণ কম থাকে। স্ক্রিন টাইম কমানোর কারণে কিছু জিনিস ঘটবে, যা সবারই জানা দরকার। স্ক্রিনে সময় কাটানোর পর শিশুর মন খারাপ লাগতে পারে। এটা আসক্তির প্রভাব বা ডোপামিন ইফেক্ট (যদিও সবক্ষেত্রে ডোপামিন ক্ষতিকর নয়)। শিশু যেটাতে আনন্দ পায়, মস্তিষ্ক এটাকে আরও বেশি করে করতে বলে। যেহেতু নির্দিষ্ট সময় পরে, শিশু তার ভালো লাগার কাজটি করতে পারছে না, তাই তার মন খারাপ হয়।
আবার নির্দিষ্ট সময় পর শিশু আরও কিছুক্ষণ স্ক্রিনে সময় কাটাতে চাইতে পারে। যদি অনুমতি দিয়ে দেন, তাহলে এই আসক্তি থেকে বের করে আনা খুব কষ্টকর হবে। যদি শিশু চেঁচামেচি করে, তাকে গম্ভীর গলায় স্পষ্ট করে বলবেন যদি তুমি না থামো, তাহলে আগামী দুদিন কোনো ডিভাইস দেওয়া হবে না। সতর্ক করার পরেও যদি শান্ত না হয়, তাহলে অবশ্যই এই শাস্তি প্রয়োগ করবেন। তবে শিশু যখন কোনো গেমস খেলে বা ভিডিও দেখে, শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা বন্ধ করবেন না। এতে শিশু ক্ষেপে উঠতে পারে। সবচেয়ে ভালো হয়, স্ক্রিন টাইমের পরে শিশুর জন্য আরেকটি আনন্দদায়ক বিষয় প্রস্তুত করে রাখা। শিশুকে আগেই বলে রাখুন স্ক্রিন টাইমের পরে গল্প শোনানো হবে, অথবা মজার কিছু খেতে দেওয়া হবে, অথবা কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাওয়া হবে। শিশু যা করতে বেশি পছন্দ করে, তা করতে পারলে ভালো ফল পাবেন। আসলে স্ক্রিন টাইমের পরে আনন্দদায়ক কিছু পেলে, স্ক্রিন প্রত্যাহারজনিত মনোকষ্টের প্রভাব কিছুটা হলেও কম হবে।
এখানে আরকটি বিষয় লক্ষণীয়। যে সময়টুকু শিশুর স্ক্রিন টাইম থেকে কমিয়ে আনলেন, এ সময়ে শিশুকে যদি কোনো ইতিবাচক কাজে ব্যস্ত না রাখনে, তাহলে এই কৌশল খুব বেশি কাজে দেবে না। বাস্তবতা হচ্ছে, আবদ্ধ ঘরে শিশু বন্দি থাকলে, খেলার সঙ্গী না থাকলে, অবসর সময়ে কথা বলার মতো কাউকে না পেলে কিংবা কোনো কাজ না থাকলে, শিশুকে স্ক্রিন আসক্তি থেকে বের করে আনা খুব কঠিন।
এ জন্য শিশুর একাকিত্ব দূর করার ব্যবস্থাও করতে হবে। এই কাজটি নানা উপায়ে করা যেতে পারে। শিশুকে যেকোনো শখ বা সৃজনশীল কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। যেমন- গান, ছবি আঁকা, বইপড়া, লেখালেখি করা, বাগান করা ইত্যাদি সৃজনশীল কাজে উৎসাহিত করুন। একবার সৃজনশীল কাজে আনন্দ পেয়ে গেলে, এটাই তাকে মোবাইল বা ট্যাব থেকে দূরে রাখবে। শিশুকে বাইরের খেলাধুলায় যুক্ত করতে পারলে, চমৎকার ফলাফল পাবেন। যে শিশুরা নিয়মিত খেলাধুলা করে, তারা এ ধরনের আসক্তি সহজেই কাটিয়ে উঠতে পারে। এ ছাড়াও খেলাধুলাজনিত পরিশ্রমের কারণে, শিশু ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করে, রাতে ভালো ঘুম হয়। যা শিশুকে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনধারায় চালিত করে।
অর্থাৎ আমাদের মূল কাজ হবে, শিশু যে সময়ে স্ক্রিনে বুঁদ হয়ে থাকে সে সময়ে তাকে অন্য কোনো কাজ বা খেলাধুলা বা আনন্দদায়ক কিছুতে ব্যস্ত রেখে স্ক্রিন টাইমের পরিমাণ আস্তে আস্তে কমিয়ে আনা। এতে ধীরে ধীরে ডোপামিন ইফেক্টের পরিমাণ কমবে। শিশু যদি বোঝে, তাকে সুন্দরভাবে বোঝাতে পারেন। স্ক্রিনে বেশিক্ষণ সময় কাটালে কী কী ক্ষতি হয়। তা তাকে বুঝিয়ে বলুন। এ ছাড়াও বয়স অনুযায়ী সহজ কিছু যোগব্যায়াম এবং মেডিটেশন শেখানো গেলে, নিঃসন্দেহে তা দেহ-মনে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করবে, আসক্তি মোকাবিলায় শিশুকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।
কিছু বিষয়ে দৃঢ় থাকবেন, আপনি নিজেও মেনে চলবেন। শিশুর সামনে যতটা সম্ভব মোবাইল ব্যবহার কমিয়ে দিন। শিশু কথা বললে মনোযোগ দিয়ে শুনুন, তার চোখের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিন।
যতক্ষণ বাসায় থাকবেন শিশুকে গুণগত সময় দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এ সময়টা টিভি বা সোশ্যাল মিডিয়ার পেছনে ব্যয় না করে, সন্তানের সঙ্গে খেলাধুলা করুন। তাকে নিয়ে কোথাও ঘুরে আসুন, নদী বা সমুদ্রের কাছে যান, সবুজ ঘাসের ওপর হাঁটুন। এই সময় শিশুর জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সামাজিক মিথস্ক্রিয়া (অর্থাৎ পরিবার ও আশপাশের মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ) এবং প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মতা (গাছপালা পশুপাখি জীবজন্তুসহ প্রকৃতির সঙ্গে পরিচয় ঘটানো)।
এ বিষয়গুলো যদি মেনে চলতে পারেন, আশা করা যায় শিশু স্ক্রিন আসক্তি থেকে অনেকাংশে মুক্তি পাবে। সবকিছু করার পরেও যদি মনে হয়, শিশুর স্ক্রিন আসক্তি সারছে না, তাহলে অবশ্যই একজন শিশু সাইকোথেরাপিস্টের শরণাপন্ন হতে হবে।
লেখক : প্যারেন্টিং গবেষক
বিদেশের ব্যাংকে টাকা রাখার খবর দেখলে মনে হয়, বাংলাদেশ টাকা রপ্তানিকারক দেশ। সাধারণত কোন দেশ কী রপ্তানি করে তা দিয়ে সেই দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বোঝা যায়। কোনো দেশ খনিজদ্রব্য রপ্তানি করে, কোনো দেশ খনিজদ্রব্য দিয়ে প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদন করে রপ্তানি করে, কোনো দেশ শিল্পপণ্য রপ্তানি করে আবার কোনো দেশ কৃষিপণ্য রপ্তানি করে। সাধারণত শিল্পপণ্য রপ্তানিকারক দেশগুলোকে উন্নত দেশ বলা হয়, তাদের প্রযুক্তি উন্নত, জনসম্পদ দক্ষ এবং মানুষের আয় ও জীবনমান উন্নত। যেসব দেশ কৃষিপ্রধান এবং কৃষিপণ্য রপ্তানি করে তাদের দেশের জনগণ কঠোর পরিশ্রম করে জীবনমান উন্নত করতে পারে না। আর যেসব দেশ খনিজ সম্পদ রপ্তানি করে, কিন্তু নিজেরা সেই সম্পদ দিয়ে পণ্য উৎপাদন করতে পারে না সেসব দেশও দরিদ্র। আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা এবং এশিয়ার দরিদ্র দেশগুলো তার প্রমাণ। অন্যদিকে জাপানের মতো দেশ যাদের খনিজ সম্পদ নেই, কৃষিকাজও ব্যয়বহুল সেই দেশ কাঁচামাল আমদানি করে উন্নত প্রযুক্তি আর দক্ষ শ্রমশক্তি ব্যবহার করে কত উন্নত দেশ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।
এই আলোচনাটা ধান ভানতে শিবের গীতের মতো মনে হতে পারে। আলোচনার বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশ। আয়তনে ছোট্ট একটা দেশ। লোকসংখ্যার ঘনত্ব পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। প্রতি বর্গকিলোমিটারে গড়ে ১১১৯ জন বাস করে, যা ১৯৭৪ সালে ছিল ৪৮৪ জন। ঢাকা মহানগরে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। এই বিপুল জনঘনত্ব নিয়ে বাংলাদেশ তার মাথাপিছু আয় এবং আয়ু বাড়িয়ে চলেছে। মোট জাতীয় আয়ের ৫১.৫ শতাংশ সেবা খাত থেকে, ৩৬.৯ শতাংশ শিল্প খাত থেকে আর ১১.৬ শতাংশ আসে কৃষি খাত থেকে। কিন্তু আয় বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে বৈষম্য আর আয়ু বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে বৃদ্ধ বয়সের অসহায়ত্ব। এ তো গেল মুদ্রার এক পিঠের ছবি। অন্য পিঠে দেখা যাচ্ছে, ধনীদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে এবং ধনীরা টাকা দেশে রাখছে না, পাচার করছে দেশের বাইরে। কৃষিপণ্য, শিল্পপণ্য তো রপ্তানি হয়ই, রপ্তানি হয়ে যায় দেশের শ্রমশক্তি অর্থাৎ কর্মক্ষম যুবশক্তি। বিনিময়ে পাওয়া যায় বৈদেশিক মুদ্রা। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা হিসেবে। ফলে টাকাও এখন বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য।
দেশে দেশে টাকা পাচার নিয়ে কাজ করে এমন আন্তর্জাতিক ৬টি সংস্থার রিপোর্টে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের তথ্য পাওয়া যায়। সংস্থাগুলো হলো জিএফআই, সুইস ব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম (আইসিআইজে) প্রকাশিত পানামা, প্যারাডাইস ও পেনডোরা পেপার্স, জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রোগ্রামের (ইউএনডিপি) রিপোর্ট এবং মালয়েশিয়ায় প্রকাশিত সে দেশের সেকেন্ড হোম রিপোর্ট। এ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও সিঙ্গাপুরে বেশ কিছু বাংলাদেশির অর্থ পাচারের তথ্য মিলেছে, তাদের বাড়ি, ব্যবসা ও ব্যাংক ব্যালেন্সের খবর নানা মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়, সে টাকার গন্তব্যস্থল কোথায়? মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় সরকার আন্তর্জাতিক বিধিবিধান অনুযায়ী একটি কৌশলপত্র তৈরি করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে দুই দফায় কৌশলপত্র তৈরি করা হয়েছে। ‘ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ফর প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যান্ড কমব্যাটিং ফাইন্যান্স অব টেররিজম’ নামের প্রথম কৌশলপত্রটি ছিল ২০১৫-১৯ সময়ের জন্য। আর পরেরটি ২০১৯-২১ সময়কালের জন্য। সর্বশেষ কৌশলপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, বিভিন্ন গবেষণা ও অবৈধ অর্থ প্রবাহের ঘটনা থেকে দেখা যাচ্ছে, ১০টি দেশ বা অঞ্চলেই বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়। এই ১০ দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কেম্যান আইল্যান্ড ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস। টাকা পাচারের ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় এবং নিরাপদ কয়েকটি দেশ রয়েছে যাদের ট্যাক্সহ্যাভেন বা কর ফাঁকির অভয়ারণ্য বলা হয়। এর শীর্ষ ১০-এর তালিকায় আছে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস, কেম্যান আইল্যান্ড, বারমুডা, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, হংকং, জার্সি, সিঙ্গাপুর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত।
ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) রিপোর্ট অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার পাচার হয়। টাকার অঙ্কে তা দাঁড়ায় প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা। তবে জনসাধারণের ধারণা এমন যে, পাচার করা অর্থের পরিমাণ এর চেয়ে আরও বেশি।
একটা ব্যাপার অবশ্য লক্ষ্য করা গেছে যে, জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে এলে এবং রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হলে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাচার বেড়ে যায়। গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই), সুইস ব্যাংক এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে এর সত্যতা জানা গেছে। সংস্থাগুলোর রিপোর্ট অনুসারে, আগের বছরের তুলনায় ২০১৮, ২০১৪ এবং ২০০৭ সালে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার বেড়েছে। আলোচ্য বছরগুলো বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক আলোচিত ছিল।
সুইজারল্যান্ডে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশে যে বছর নির্বাচন হয়েছে, সেই বছরগুলোতে টাকা পাচার বেড়েছে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসে অন্যতম অস্থির বছর ছিল ২০০৭ সাল। ২০০৬ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত ছিল ১২ কোটি ৪০ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক। প্রতি সুইস ফ্রাঙ্ক ১১৮ টাকা হিসাবে স্থানীয় মুদ্রায় তা ১ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা। কিন্তু ২০০৭ সালে তা বেড়ে দ্বিগুণ ২৪ কোটি ৩০ লাখে উন্নীত হয়।
এ ছাড়াও ২০১৪ সালে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগের বছর ২০১৩ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত ছিল ৩৭ কোটি ১৮ লাখ ফ্রাঙ্ক। কিন্তু ২০১৪ সালে অর্থাৎ নির্বাচনী বছরে তা বেড়ে ৫০ কোটি ৬০ লাখ সুইস ফ্রাঙ্কে উন্নীত হয়। ২০১৮ সালে এগারোতম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগের বছর ২০১৭ সালে বাংলাদেশিদের আমানত ছিল ৪৮ কোটি ১৩ লাখ ফ্রাঙ্ক। কিন্তু ২০১৮ সালে তা বেড়ে ৬১ কোটি ৭৭ লাখ ফ্রাঙ্কে উন্নীত হয়। সুইস ব্যাংকের সর্বশেষ রিপোর্ট অনুসারে, ২০২১ সালে দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত ৮৭ কোটি ২১ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক। স্থানীয় মুদ্রায় যা ১০ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। আর সাম্প্রতিক যে উদ্বেগজনক খবর প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে অবিশ্বাস্য গতিতে কমেছে বাংলাদেশিদের আমানত। মাত্র এক বছরেই সুইস ব্যাংকগুলো থেকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা সরিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশি নাগরিক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
টাকা পাচার কি এত সহজ, কীভাবে এত সহজে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করা হয়? বলা হয়, ব্যাংক ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে টাকা পাচার করা হয়। এ ক্ষেত্রে বহুল প্রচলিত পন্থা হচ্ছে ওভার ইনভয়েসিং এবং আন্ডার ইনভয়েসিং। ঋণপত্র বা লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খুলে আমদানি-রপ্তানির আড়ালে যে টাকা পাচার হয় সেখানে ইনভয়েসিং পদ্ধতিকে কাজে লাগানো হয়। এ ক্ষেত্রে টাকা পাচারের কয়েকটি ধাপ রয়েছে। আমদানির ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে কোনো পণ্য ক্রয় করতে গেলে আগে তাকে এলসি খুলতে হয়। এলসি খোলার প্রক্রিয়ায় উল্লেখ করতে হয় কোন পণ্য কত দামে ক্রয় করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অসাধু (!) ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বেশি দেখায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একজন ব্যবসায়ী যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিছু খাদ্যপণ্য আমদানি করবেন। বর্তমান বাজারে সেই খাদ্যপণ্যের দাম কেজিপ্রতি ৫০০ টাকা, কিন্তু ব্যাংককে দেখানো হলো ৮০০ টাকা। এ ক্ষেত্রে একটি পরিকল্পনা পণ্যের দাম হেরফের করে দেখানো হয়। এভাবে দাম বাড়িয়ে যে রসিদ তৈরি করে এলসি খোলা হয় সেটিকে মূলত ওভার ইনভয়েসিং বলে। আমদানিতে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়। আমদানির ক্ষেত্রে পণ্য ও পণ্যের দামের ওপর শুল্কহার নির্ভর করে। এ ক্ষেত্রে পণ্য আমদানির সময় দাম কমিয়ে দেখালে শুল্ক ফাঁকি দেওয়া সম্ভব। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি গাড়ির দাম হয়তো ২ কোটি টাকা, এ ক্ষেত্রে অনেক সময় তিনশ ভাগ কিংবা আরও বেশি কর দিতে হয় ক্রেতাকে। কিন্তু গাড়ির দাম যদি কমিয়ে ৫০ লাখ দেখানো হয়, তাহলে করের পরিমাণ অনেকটা কমে আসে। তাহলে প্রশ্ন উঠবে, বাকি টাকা কীভাবে পরিশোধ করা হয়? সে ক্ষেত্রে হুন্ডির আশ্রয় নেয় তারা। এভাবেই আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে একদিকে দেওয়া হয় কর ফাঁকি, অন্যদিকে হুন্ডির মাধ্যমে দেশের টাকা পাচার হয় বিদেশে।
একইভাবে রপ্তানির ক্ষেত্রেও আন্ডার ইনভয়েসিং করে শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে আবার পণ্য না এনেও নাকি ভুয়া ইনভয়েসিং করা হয়। কিন্তু এটা কি ব্যাংকের অজ্ঞাতসারে সম্ভব? ফলে বিষয়টা জটিল এবং জড়িত থাকার সম্ভাবনা অনেকের। এক তথ্য থেকে দেখা যায়, ওভার বা আন্ডার ইনভয়েসিং করে ক্ষেত্রবিশেষে পণ্যের দাম ২০ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো বা কমানো হয়। গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) তথ্যমতে, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রতি বছর গড়ে এ ধরনের ইনভয়েসিংয়ের কারণে ৮ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়েছে। আবার পাচারের পাশাপাশি এ কারণে প্রতি বছর ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের শ্রমিকদের মজুরি যেমন কম, প্রবাসী শ্রমিকদের আয়ও তেমনি কম। আবার বাংলাদেশের মানুষকেই বেশি দামে শিক্ষা, চিকিৎসা, খাদ্য কিনতে হয়, ফলে কমাতে হয় খাওয়া। সেই কম আয়ের আর কম খাওয়ার দেশে কৃষক শ্রমিকরা ঘাম ঝরিয়ে উৎপাদন করেন, প্রবাসীরা ঘামে ভেজা টাকা দেশে পাঠান। এই কষ্টের টাকা যারা পাচার করে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার রাজনীতিকে শক্তিশালী করা সময়ের দাবি।
লেখক: রাজনৈতিক সংগঠক ও কলামিস্ট
এখন পর্যন্ত গণতন্ত্রই সব থেকে বেশি কাক্সিক্ষত শাসনব্যবস্থা। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সমমর্যাদা ও সমঅধিকারের প্রতিশ্রুতি দেয়। অঙ্গীকার করে মানবাধিকার রক্ষায়। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণে এ দেশের মানুষ যে আশা-আকাক্সক্ষার স্বপ্ন বুনেছিল, তা একটু একটু করে ম্রিয়মাণ হয়েছে গত দু-তিন দশকে। তিন দশকে রাজনৈতিক সংস্কৃতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। ধীরে ধীরে রাজনীতি থেকে গণতান্ত্রিক আদর্শ বিলীন হয়েছে। বিজয়ীরাই এখন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। এদের বেশির ভাগই ক্ষমতায় আসীন হলে ‘অভিজাত শাসক’ হয়ে যান এবং সাধারণের সঙ্গে স্পষ্ট বিভাজন তৈরি করেন। আবার অনেকের কাছেই অর্থ ও বিত্তের মালিক হওয়ার উপায়ই হচ্ছে রাজনীতি। কেউ কেউ আবার রাজনীতির মাধ্যমে পেশাগত ও ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জন করতে চায়। বিশ্লেষকরা বলেন, এমনটাই হচ্ছে হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মীর প্রচলিত মটিভেশন এবং নেতারাও কর্মীদের কাছে সেই প্রতিশ্রুতির বিকিকিনি করে থাকেন। আর ক্ষমতায় যাওয়ার অপেক্ষার পালা যখন ফুরায় তখন তাদের সামলায় কে!
রাজনীতি নিয়ে আমরা বরাবরই বিদেশমুখী, ক্ষমতায় থাকলে এক ধরনের না থাকলে অন্য ধরনের। এই প্রবণতা প্রথাগত ঔপনিবেশিক চিন্তা-চেতনা থেকে নাকি অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত তা নিয়ে অভিজ্ঞরা ভেবে দেখতে পারেন। যে কারণেই হোক, রাজনীতি মানেই ক্ষমতার চর্চা ও ঔপনিবেশিক শাসক চরিত্র ধারণ করা, আর অর্থ-বিত্তের কাছে নিজেকে সমর্পণ করা, সেটা কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়। অধিকন্তু এসবই হচ্ছে গণতান্ত্রিক নীতি ও মানবাধিকারের দৃষ্টিভঙ্গির পরিপন্থি।
জাতীয় নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার তাগিদ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসানীতি গ্রহণ করেছে। এ নিয়ে সব মহলে চর্চার যেন শেষ নেই। একেক পক্ষ একেকভাবে ব্যাখ্যা করছে। তবে মূল বিষয়টি হচ্ছে, নির্বাচনী ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি সমুন্নত রাখা এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে রাজনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্টদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। পাশাপাশি এই ভিসানীতি এটাও মনে করিয়ে দিচ্ছে, আমাদের দেশে যারা দণ্ডমুণ্ডের কর্তা তাদের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এর মূল কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন ধনী দেশ এদের অনেকেরই অবসরজীবনের আশ্রয়স্থল। আবার কারও কারও পরিবার বা পরিবারের সদস্যরা সেখানেই থাকেন এবং সেখানেই প্রতিষ্ঠা লাভের চেষ্টায় আছেন।
বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি শুধু রাজনীতিবিদরাই নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাবিত করেন না। এই বলয়ে আছে ব্যবসায়ী ও সরকারি প্রশাসনের কর্মকর্তা ও পেশাজীবী। মানছি বাংলাদেশের অনেকেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে বিদেশের মাটিতে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু এর থেকে অনেকগুণ বেশি যারা দেশে নানা ধরনের অপরাধে যুক্ত থেকে পরবর্তী সময় বিদেশে নিশ্চিন্তে জীবনযাপন করছে। আরও আছে যারা দেশে অর্থ উপার্জন করেছেন বৈধ ও অবৈধ উপায়ে এবং সেই অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। পরবর্তী সময় সেখানেই আরাম-আয়াশে নির্ঝঞ্ঝাট জীবন কাটাচ্ছেন। বিভিন্ন দেশের ‘সেকেন্ড হোম’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ এবং বিনিয়োগের বিনিময়ে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছেন। বিভিন্ন ধরনের গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যায়। সম্প্রতি হেনলি প্রাইভেট ওয়েলথ মাইগ্রেশন রিপোর্ট ২০২৩ প্রকাশ করা হয়েছে। এই রিপোর্টের উদ্দেশ্য হলো, ধনীরা কীভাবে তাদের সঞ্চিত সম্পদ অপেক্ষাকৃত নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে দেশ ত্যাগ করে তা দেখানো।
এই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩ সালে পৃথিবীব্যাপী ১ লাখ ২২ হাজার ডলার মিলিয়নার দেশ ছাড়বেন। অন্যদিকে গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্ট্রেগ্রিটি রিপোর্ট বলছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সূত্র ধরে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলার পাচার হয়। আবার এর বাইরেও রয়েছে অন্য অনেক উপায়। নতুন ভিসানীতি যদি এসব ক্ষেত্রে পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে, তাহলে সেটা হবে দেশের জন্য সত্যিকার অর্থে শাপে বর।
গণতন্ত্র নিয়ে আমাদের আসল সমস্যা যতটা না নির্বাচনের, তার থেকে অনেক বেশি রাজনৈতিক সংস্কৃতির। সেই প্রত্যাশিত সংস্কৃতি তৈরিতে ভোট প্রদানের পরিবেশ ও স্বাধীনতা যেমন আবশ্যক একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থায় ন্যায্যতা ও সমতার পরিবেশ তৈরি করা। আর এটা শুধু রাজনীতিবিদের ওপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে সামগ্রিক সমাজ ও অর্থনৈতিক কাঠামোর ওপর। শুধু নির্বাচনের দিনে সবাই সমান কিন্তু বাকি ৪ বছর ৩৬৪ দিন ঔপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গি কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে মানবাধিকার ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করা না গেলে তা কখনই কাক্সিক্ষত না। তথাপি ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে কিছু মানুষ ফুলে ফেঁপে উঠেছে। উল্টোপিঠে বেশির ভাগ মানুষ দীনহীন অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। বাজার অর্থনীতির সুযোগ তখনই সবার কাছে পৌঁছে যখন এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকে। আবার এই অর্থনীতির মডেলের সঙ্গে যখন করাপ্ট সিস্টেম মিলেমিশে যায় সেটাই সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটে। আগে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা ছিল ভূমিকেন্দ্রিক আর এখনকার সামন্ততান্ত্রিকতা হচ্ছে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে সম্পদ কুক্ষিগত করার ব্যবস্থা। বাংলাদেশে সম্পদশালীদের সম্পদ দেশের মধ্যে চুইয়ে পড়ার কোনো সুযোগ নেই, কারণ এখান থেকে সম্পদ পাচার হয়ে যায় এবং এই সম্পদের খরচ করা হয় বিদেশে।
আমরা যে বিশ্ব পরিমণ্ডলে বসবাস করি, এখানে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোকে কেন্দ্র করেই অন্য রাষ্ট্রগুলোর অর্থনীতি ও রাজনীতি আবর্তিত হয়। এই কেন্দ্রমুখী প্রবণতা নিঃসন্দেহে এশিয়া ও আফ্রিকার তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য। দরিদ্র দেশগুলোতে প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভাবে, আবার যেটুকু আছে সেটুকু ‘মেনুপুলেট’ করার বাসনায় বিভিন্ন স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব, সংঘাত তৈরি হয়ে থাকে। কারণ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, স্বার্থের সংঘাতে সেখানেই বড় সংকট। বিশ্ব অভিজ্ঞতা বলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো শক্তিশালী করতে অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সুফল সবার জন্য নিশ্চিত করা জরুরি। আর তার অভাবেই অনেকের কাছে ক্ষমতা মানেই সম্পদ কুক্ষিগত করার অপচেষ্টা। শুধু নিজের জন্য না, নিজস্ব বলয় ও গোষ্ঠীর মানুষের জন্য। এ ধরনের প্রচেষ্টা কোনো অর্থেই গণতন্ত্রের আদর্শ বহন করে না। অর্থনৈতিক বঞ্চনার মাত্রা কমিয়ে আনা গেলে গণতন্ত্রের মান উন্নয়ন সম্ভব এমন দৃষ্টান্ত পৃথিবীব্যাপী আছে। মধ্যপ্রাচ্য বাদে বিশ্বের বেশির ভাগ ধনী দেশগুলোর গণতান্ত্রিক মান অপেক্ষাকৃত ভালো। আর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর গণতন্ত্রের মান দুর্বল হলেও বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কারণে সেখানে নাগরিকদের মধ্যে গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষার চূড়ান্ত প্রকাশ দেখা যায় না। আসলে গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষা হচ্ছে সমৃদ্ধশীল জীবনযাপনের বাসনা এবং মানুষ মাত্রই খেয়ে পরে বাঁচতে চায়, নিজের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা চায়, আবার নিজেদের সম্মান পাওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে চায়। আর বর্তমান সমাজ কাঠামোতে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ছাড়া মর্যাদা অর্জন করার ক্ষেত্র খুবই সীমিত।
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার কোনো বিকল্প এখন তৈরি হয়নি। কিন্তু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণ করার জন্য দরিদ্র দেশগুলোর সাহায্য দরকার। এ রকম ভিসানীতি যদি হয় সাহায্য করার একটি উপায়, অন্য উপায়টি হচ্ছে এ দেশগুলোর দরিদ্র জনগোষ্ঠী যাতে অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ক্ষমতা ও অধিকার চর্চা করতে পারে, মর্যাদাপূর্ণ জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক ভিত্তি অর্জন করতে পারে তার ব্যবস্থা করা। আর এটা বিচ্ছিন্ন ভাবে করা সম্ভব কিনা তাও প্রশ্নসাপেক্ষ। অধিকন্তু বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বৈশ্বিক পর্যায়ে ক্ষমতাধর ও অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশগুলোকে তৃতীয় বিশ্বের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
লেখক: উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
কাশীদাসী মহাভারতে, যুধিষ্ঠির-দ্রৌপদী সংবাদের মাধ্যমে আমরা জানি ‘ক্রোধে পাপ, ক্রোধে তাপ, ক্রোধে কুলক্ষয়/ ক্রোধে সর্ব্বনাশ হয়, ক্রোধে অপচয়।’ মহাভারতের যুগ পেরিয়ে আমরা এখন কলিযুগে। বর্তমানে মনে হয়, এই কাব্যছন্দের একটু পরিবর্তন দরকার। শুধু ‘ক্রোধ’ শব্দের স্থানে, ‘লোভ’ বসালেই হয়। তখন পড়তে হবে লোভে পাপ, লোভে তাপ, লোভে কুলক্ষয়/ লোভে সর্ব্বনাশ হয়, লোভে অপচয়। ষড়রিপুর ৩ নম্বরেই আছে, লোভের কথা। এটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব কঠিন। যে কারণে, মানবজীবনের ছয়টি শত্রুর তৃতীয় শত্রু হিসেবে ‘লোভ’কে চিহ্নিত করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশে মজুদদারির ব্যবসা জমজমাট। একটা শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে মজুদদারদের। এই নব্য কাবুলিওয়ালাদের দল, বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে। এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে, দলীয় রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। রঙধনু আদর্শের একেকজন মজুদদার শুধু টাকার গন্ধ ভালোবাসেন। ফলে জনগণকে এই নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতেই, এসব অর্থখোরদের যাবজ্জীবন অথবা সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে ‘খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) বিল-২০২৩’ উত্থাপন করা হয়েছে। অবশ্য নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি খাদ্যদ্রব্য মজুদ করলে তাদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। এই বিলটি পাস করা কঠিন হলেও সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে, কোনো ধরনের চাপের কাছে নতিস্বীকার করা ঠিক হবে না। এ বিষয়ে শুক্রবার দেশ রূপান্তরে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। জানা যাচ্ছে, বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বিলটি উত্থাপন করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। পরে বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। উত্থাপিত বিলে বলা হয়েছে, এ আইনের উদ্দেশ্য পূরণে সারা দেশে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আদালত থাকবে। সংশ্লিষ্ট আদালত ‘খাদ্যদ্রব্য বিশেষ আদালত’ নামে অভিহিত হবে। এ আইনের অধীনে কিছু অপরাধের বিচার মোবাইল কোর্টেও করা যাবে।
বিলে বলা হয়েছে, সরকার নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি খাদ্যদ্রব্য মজুদ করলে বা মজুদ-সংক্রান্ত সরকারের নির্দেশনা অমান্য করলে শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড। এরূপ অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি প্রমাণ করতে পারেন, তিনি আর্থিক লাভের জন্য নয়, অন্য উদ্দেশ্যে মজুদ করেছিলেন, তাহলে তিনি অনূর্ধ্ব তিন মাস কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এ অপরাধ হবে অজামিনযোগ্য।
‘নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে’ এই কথাটি কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। এর মানে হচ্ছে, মজুদ করার একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ থাকবে। সেই পরিমাণ কোন পণ্যের ক্ষেত্রে কতটুকু, এখনই জানা সম্ভব নয়। এখন খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে। তবে একটি কথা না বললেই নয় পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যাই আসুক, দেশের মানুষকে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসলে, এই বিল সংসদে পাস করতে হবে। কঠোর আইন করে মজুদদারি বন্ধ করতে না পারলে, সরকারেরই ক্ষতি। কোনো উন্নয়নই জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। আগে মানুষকে বাজার সিন্ডিকেটের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। কোন পণ্য কতটুকু মজুদ করা যাবে, তার পরিমাণ যেন ক্রেতাদের অস্বস্তির কারণ না হয়।
অর্থনৈতিকভাবে দেশের অধিকাংশ মানুষ যে সীমাতে অবস্থান করছেন, তাদের কথা চিন্তা করেই এ বিষয়ে কোনো ধরনের দোদুল্যমানতা থাকা উচিত হবে না। একই সঙ্গে বলা প্রয়োজন, মজুদদারদের শাস্তি যেন কোনোভাবেই হ্রাস করা না হয়। দ্রুততার সঙ্গে বিলটি সংসদে পাস করে, আইন কার্যকর করা হোক। এ বিষয়ে জড়িত সব পক্ষ স্বচ্ছ থাকবেন বলেই আমরা প্রত্যাশা করছি। আর যদি বিলটি অন্ধকারেই হারিয়ে যায়, তাহলে সাধারণ মানুষের কাছে পরিষ্কার হবে আসলে কোথায় থাকে, গোবর্ধন গোঁসাই! জনগণের প্রতি সরকারের আন্তরিকতার কোনো কমতি নেই আমরা এমন কথা বিশ্বাস করতে চাই।
বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবদুল মতিন চৌধুরী এই দিনে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। ১৯২১ সালের ১ মে লক্ষ্মীপুর জেলার নন্দনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। নোয়াখালীর অরুণচন্দ্র হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা ও ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন তিনি। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে প্রথম শ্রেণিসহ বিএসসি (সম্মান) এবং একই শাস্ত্রে প্রথম শ্রেণিসহ এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। তার গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন অধ্যাপক এবং খ্যাতনামা পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ বসু। ১৯৪৯ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অঃসড়ংঢ়যবৎরপ চযুংরপং-এ পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন আবদুল মতিন চৌধুরী। আবহাওয়া অধিদপ্তরে আবহাওয়াবিদ হিসেবে কর্মজীবন শুরুর পর ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে রিডার নিযুক্ত হন। ১৯৫৬ সালে যুক্তরাজ্যে যান এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢ-ৎধু ঈৎুংঃধষষড়মৎধঢ়যু বিষয়ে গবেষণা করেন তিনি। পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে ১৯৬২ সালে তিনি পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক পদে উন্নীত হন এবং ওই বছর থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনের সদস্য, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান বিজ্ঞানী এবং রাষ্ট্রপতির বিজ্ঞান উপদেষ্টা হিসেবেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। অধ্যাপক চৌধুরী ‘পাকিস্তান অ্যাসোসিয়েশন ফর দি অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স’-এর সচিব, ‘পাকিস্তান অ্যাসোসিয়েশন অব সায়েন্টিস্ট অ্যান্ড সায়েন্টিফিক প্রফেশন্স’-এর সভাপতি, ব্রিটেনের ‘রয়্যাল মেটিয়োরোলজিক্যাল সোসাইটি’-এর ফেলোসহ নানা সম্মানসূচক পদ অলংকৃত করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানে আটক জীবনযাপন করেন তিনি। স্বাধীনতার পর দেশে প্রত্যাবর্তন করে ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে সত্যেন বোসের নামে চেয়ার প্রতিষ্ঠার পর অধ্যাপক আবদুল মতিন চৌধুরী সম্মানসূচক ‘বোস অধ্যাপক’ পদে নিযুক্ত হন। ১৯৮১ সালের ২৪ জুন ঢাকায় এ কৃতী বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ মৃত্যুবরণ করেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির পাল্টাপাল্টি আলটিমেটামের কারণে চলমান রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে নতুন করে উত্তাপ তৈরি হয়েছে। দুই দলের এ পাল্টাপাল্টি আলটিমেটামের মূল টার্গেট ঢাকা দখলে নেওয়া। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন অসুস্থ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসা নিতে বিদেশ পাঠাতে রবিবার বিএনপি ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে। পাল্টা জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও একই পথে হেঁটেছে। বিএনপিকে ‘আগুন সন্ত্রাস, অপরাজনীতি ও নাশকতার রাজনীতি’ ছাড়ার জন্য সোমবার ৩৬ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এরপর পাল্টা ৩৬ ঘণ্টার হুঁশিয়ারি এসেছে বিএনপির কাছ থেকে।
তার আগে গত শনিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে আবেদন করলে অনুমতির বিষয়টি দেখা যাবে। তবে তার কাছে এরকম কোনো কাগজপত্র আসেনি। ওইদিনই খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার বলেছেন, সরকারের মনোভাব ইতিবাচক হলে তারা আবারও আবেদন করবেন।
পরদিন রবিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আলটিমেটাম দেন। ওইদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত জটিলতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আদালতের অনুমোদন প্রয়োজন। তবে বিএনপি বলছে, সরকার চাইলে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে পারে।
দুই দলের রাজনীতি ও ঘোষিত আলটিমেটাম মাঠের রাজনীতিতে কোনো পরিবর্তন আনবে কি না, সে সম্পর্কে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। বিএনপির আলটিমেটামের ফল কী হবে আর আওয়ামী লীগেরও দীর্ঘ ৩৬ দিনের আলটিমেটাম কেন এ নিয়ে সাধারণ মানুষের ভেতর বেশ কৌতূহল দেখা দিয়েছে।
দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত রাজধানী ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এমন পাল্টাপাল্টি আলটিমেটাম। ঢাকায় বিএনপির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার কৌশলের অংশ হিসেবেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ইস্যুতে দলটি আলটিমেটাম দিয়েছে। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতেই তার পাল্টা জবাব দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
দুই দলের ওই নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির রাজনীতির মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছে ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা। ঢাকার রাজনীতি আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ থেকে বের করে আনতে না পারলে রাজনীতিতে জুতসই অবস্থান সৃষ্টি করতে পারবে না বিএনপি।
সারা দেশের নিয়ন্ত্রণে রাখা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেয়ে ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে রাজনৈতিক জয়-পরাজয় নির্ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিএনপির ওই শীর্ষসারির নেতারা। তাই বিএনপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসাকে ইস্যু করে নেতাকর্মীদের ঢাকায় ডেকে পাঠানোর কৌশল গ্রহণ করেছে। পর্যাপ্ত নেতাকর্মী ঢাকায় ঢুকে গেলে অবস্থা বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তাই ইস্যু খালেদার চিকিৎসা, কিন্তু লক্ষ্য ঢাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ৩৬ দিনের আলটিমেটামের পেছনে রয়েছে নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার আগপর্যন্ত ঢাকায় নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখা। সেই সঙ্গে নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে নির্দেশনা দিয়ে রাখা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে ততই ষড়যন্ত্রের নীল নকশা আঁকছে।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের শান্তি যেন বিঘিœত না হয়, সেজন্যই আমরা বিএনপির কর্মসূচির দিন মাঠে থাকি। বিএনপিকে জনগণ বিশ্বাস করে না। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে সত্যিই নিতে চাইলে আলটিমেটাম কেন দেবে বিএনপি? আইনি জটিলতা নিরসন করে বিদেশ নেওয়ার চেষ্টা করবে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘বিএনপি সন্ত্রাস-সহিংসতানির্ভর রাজনীতি করে, বিশ্বাস করে। তারা পাকিস্তানের প্রেতাত্মা।’ তিনি বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করাতে চাইলে কেন বিএনপি আইনি প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে না? তার কিছু হলে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দায় নিতে হবে।’
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দুই দলের ঘোষিত আলটিমেটামকে কথার বাকযুদ্ধ হিসেবে নিয়েছেন। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এগুলো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের অবস্থান ধরে নেওয়া যায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে তাদের কোনো গা নেই। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিভিন্ন বক্তব্যে সেটাই স্পষ্ট করেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে হলে আইনগতভাবে যেতে হবে। নির্বাহী কোনো সিদ্ধান্তে এ সুযোগ দেওয়া হবে না। ফলে আলটিমেটাম মূলত নিষ্ফল হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দাবি আদায় করার জন্য জনগণ থেকে দাবি উঠতে হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণকে রাস্তায় নামাতে পারবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘এখন যেসব বক্তব্য এগুলো মঞ্চের বাকযুদ্ধ।’
বিএনপির আলটিমেটাম নিয়ে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারব না। আমি (গতকাল মঙ্গলবার) সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা শেষ করে এসেছি।’ আলটিমেটামের পেছনে ঢাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় তো আমরা সভা-সমাবেশ করছিই।’
জানতে চাইলে বিএনপির আরেক নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আলটিমেটাম সম্পর্কে ক্লিয়ার কিছু জানি না।’
বিএনপিকে ‘অপরাজনীতি’ ছাড়তে ৩৬ দিন সময় বেঁধে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ সময়ের মধ্যে ‘সঠিক পথে’ না এলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির ‘অপরাজনীতির কালো হাত’ গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে আলটিমেটাম দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এটি বিএনপির জন্য শেষ বার্তা।’ গত সোমবার রাজধানীর উত্তরায় এবং যাত্রাবাড়ীতে পৃথক সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। উত্তরার সমাবেশে ওবায়দুল কাদের এ আলটিমেটাম দেন।
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপি দুই সপ্তাহের কর্মসূচি নিয়ে এখন রাজপথে আছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগও ২১ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ঢাকায় গত সোমবার দুটি সমাবেশ হয়।
এর আগে থেকেই ঢাকায় বিএনপির কর্মসূচির দিন শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীনরা বিএনপির সভা-সমাবেশের বিষয়ে নমনীয়তা প্রদর্শন করলেও মাঠের নিয়ন্ত্রণ ছাড়েনি।
ভারতের বিপক্ষেই খেলেছিলেন বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। এবার বিশ্বকাপটাই ভারতে, যে ধর্মশালা দিয়ে শুরু হবে বিশ্বকাপ অভিযান, সেখানেই আছে বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির কৃতিত্ব। হিমালয়ের কোলে, ছবির মতো সুন্দর সেই মাঠে আবারও খেলবে বাংলাদেশ, কিন্তু খেলবেন না তামিম ইকবাল।
অনেক নাটকীয়তার পর অবশেষে বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বরাবরের মতো সংবাদ সম্মেলনে নিরাবেগ কণ্ঠে একের পর এক নাম পড়ে শোনাননি প্রধান নির্বাচক, গভীর রাতে কোনো ইমেইলেও আসেনি খেলোয়াড় তালিকা। বিশ্বকাপগামী ১৫ ক্রিকেটারের প্রত্যেকের হাতে হাতে সুন্দর করে বাক্সবন্দি বিশ্বকাপ জার্সি তুলে দেওয়ার ভিডিও নিজেদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে ২০২৩ বিশ্বকাপের জন্য নির্বাচিতদের পরিচিত করেছে বিসিবি। এজন্য বিসিবির সংশ্লিষ্টরা বাহবা পেতেই পারেন, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড যেমনটা হৃদয় জিতে নিয়েছে ক্রিকেটারদের পরিবারের আপনজনদের দিয়ে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করিয়ে।
কারা থাকছেন আর কারা থাকছেন না, তা নিয়ে খুব বড় কোনো চমক ছিল না বিশ্বকাপ দলে। সবাই শুধু একটাই কোটি টাকার প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলেন। তামিম ইকবাল শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ দলে আছেন নাকি নেই। অবসর, প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে প্রত্যাবর্তন, ব্যক্তিগত কাজে দুবাই ভ্রমণ, ইংল্যান্ডে ইনজেকশন, দেশে অনুশীলন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এক ইনিংসে ব্যাট করে ৪৪ রান এবং পরে নিজেকে আবারও পুরোপুরি ফিট নয় বলে পরের ম্যাচে বিশ্রাম। স্বভাবতই এই তামিম ইকবালকে বিশ্বকাপে দেখতে চাইবেন না কোনো কোচ এবং অধিনায়ক। সোমবার গভীর রাতে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বাসায় সাকিবের ছুটে যাওয়া এবং সিডনি থেকে নেমে তড়িঘড়ি করে বোর্ড সভাপতির বাসায় কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের পা রাখাই প্রমাণ করে, বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করতেই তাদের এ তৎপরতা।
তামিমের মতো ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটা সহজ নয়। নিঃসন্দেহে দেশের সফলতম ব্যাটসম্যান, ওয়ানডেতে ১৪টা সেঞ্চুরি। হুট করে অবসর নিলে যাকে ফিরিয়ে আনেন স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রী। সাক্ষাৎকারেও তামিম বলেছেন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগের কথাও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেশাদারির কাছে হার মেনেছে আবেগ, যুক্তির কাছে হেরে গেছে অতীত। তামিম নামটা আছে বিশ্বকাপ দলে, তবে পদবিটা ইকবাল নয়। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তানজিদ হাসান তামিমকে নিয়েই বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন সাকিব আল হাসান, যার বয়স আর তামিম ইকবালের ক্যারিয়ারের বয়স প্রায় কাছাকাছি।
২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিবের পারফরম্যান্স ছিল অতিমানবীয়। ৬০৬ রান আর ১১ উইকেট। তবু দল হলো অষ্টম। গোটা আসর চোটজর্জর অধিনায়ককে বইল দল। প্রতিটি সকাল শুরু হতো এক অনিশ্চয়তা নিয়ে, খেলতে পারবেন তো মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা? শুরুর দিকে নতুন বলে কোনো উইকেট ফেলতে পারেনি বাংলাদেশ, প্রতিপক্ষ গড়েছে রানের পাহাড়। সেই অভিজ্ঞতা কী করে ভুলবেন সাকিব। অস্ট্রেলিয়ান জেমি সিডন্স আর অধিনায়ক সাকিব এজন্যই ২০১১ সালের বিশ্বকাপে দলে রাখেননি চোটগ্রস্ত মাশরাফীকে। হাথুরুসিংহে জাতীয়তায় শ্রীলঙ্কান হলেও অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে থাকতে হয়ে গেছেন তাদের মতোই পেশাদার। তাই তো কঠিন সিদ্ধান্তটা নেওয়ার সাহস দেখিয়েছেন।
কাল বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডের পর সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন জাতীয় নির্বাচকরা। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন এবং দুই নির্বাচক হাবিবুল বাশার ও আবদুর রাজ্জাক। তামিমকে বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে মিনহাজুল শুনিয়েছেন মুখস্থ কথাই, ‘আপনারা তো এবারের বিশ্বকাপের দলটা এরই মধ্যে পেয়ে গেছেন। তামিম ইকবালের তো অনেক দিন ধরেই ইনজুরি নিয়ে চিন্তা আছে। নিউজিল্যান্ড সিরিজের পর... সবকিছু বিবেচনা করেই, সবাই আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া। বিশ্বকাপে অনেক দিনের ব্যাপার। অনেক ম্যাচ আছে।’
তামিমের চোটটা তো নতুন নয়। অনেক দিন ধরেই এ চোট নিয়ে তিনি ভুগছেন, নিজের ইচ্ছামতো ভারতের বিপক্ষে সিরিজ, আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ এসব থেকে নিজেকে সরিয়েও রেখেছিলেন। চিকিৎসাও করিয়ে আনা হয়েছে। সবকিছু জেনেশুনে কেন তাকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে সুযোগ দেওয়া এবং ম্যাচ খেলিয়ে বাদ দেওয়া এ প্রসঙ্গে মিনহাজুলের উত্তর, ‘দেখুন, কিছু কিছু ইনজুরি আছে আপনি ঝুঁকি নিতে পারেন না। টিম ম্যানেজমেন্ট কিন্তু বেকায়দায় পড়বে। আপনি দেখুন, নিউজিল্যান্ড সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলার পর দ্বিতীয় ম্যাচে... প্রথম ম্যাচ খেলেছে, দ্বিতীয় ম্যাচটা খেলেছে... এরপর কিন্তু শেষ ম্যাচে বিশ্রাম দিতে হয়েছে।’
‘তামিম অন্যতম সেরা। কিন্তু চোটের দুশ্চিন্তা থাকলে নিজেকে মেলে ধরা কঠিন। মেডিকেলের সঙ্গে আলোচনা করেছি, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি। এটা আগেই বলেছি, এখন দল ঘোষণা করা হয়েছে’বলছিলেন প্রধান নির্বাচক। বিসিবি সভাপতি বা সাকিব ও কোচের সঙ্গে আলাপ হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কী আলাপ হয়েছে সেটা তো এখানে প্রকাশ করব না।’
১০ দলের বিশ্বকাপে দশম দল হিসেবে বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। কেন এত দেরি, ফ্লাইটে ওঠার ২৪ ঘণ্টারও কম সময় আগে বিশ্বকাপের দল দেওয়া হলো কেন এ নিয়ে হাবিবুল বাশারের ব্যাখ্যা, ‘আমাদের সঙ্গে কী হয়েছে সেটা তো আমাদের সঙ্গের ব্যাপার। দল নির্বাচন করতে যখন বসি... খেলোয়াড় হিসেবে তামিমের... আমরা সুস্থ-সবল তামিমকে পেতে... এটা নিয়ে আমাদের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত ভাবতে হয়েছে। তাই দেরি হয়েছে।’
তামিমের বাদ পড়ার ডামাডোলে হারিয়ে গেছে মাহমুদউল্লাহর ফেরাটাও। সেই ইংল্যান্ড সিরিজের পর বিশ্রামের মোড়কে বাদ পড়েছিলেন। তার বদলে অনেক বিকল্প খুঁজেও শেষ পর্যন্ত ঘুরেফিরে আবার তার কাছেই ফিরলেন নির্বাচকরা। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ৪৯ আর ২১ রানের দুটো ইনিংসেই হয়ে গেছে বিশ্বকাপের টিকিট। প্রধান নির্বাচক বললেন, ‘আগেই বলেছি, বিশ্বকাপের আগে যেকোনো খেলোয়াড়কে যেকোনো সিরিজে দেখব। ও পরিকল্পনাতেই ছিল। নিউজিল্যান্ড সিরিজে দেখেছি।’
২০১৫ সালের বিশ্বকাপের আগে, মাত্র দুই ম্যাচ দেখে সৌম্য সরকারকে দলে নিয়েছিলেন হাথুরুসিংহে। তানজিদ তামিম আর তানজিম সাকিব নিজেদের ভাগ্যবান ভাবতে পারেন। যথাক্রমে মাত্র পাঁচ আর দুই ম্যাচ খেলে তারা বিশ্বকাপ যাত্রার সঙ্গী হয়েছেন। এমন নয় যে, এ স্বল্প সময়ে দারুণ কিছু করে দেখিয়েছেন, প্রধান কারণ বিকল্পের অভাব।
শুধু তামিম ইকবালই নয়, দলের লজিস্টিক ম্যানেজারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তার বড় ভাই ও সাবেক খেলোয়াড় নাফিস ইকবালকেও। তামিমের অবসর-কা-ে তিনি বিসিবি সভাপতির মেসেজের জবাব দেননি, যা পাপন নিজে বলেছেন গণমাধ্যমে। হয়তো তারই প্রতিশোধ, সেই সঙ্গে ড্রেসিংরুমের সঙ্গে তামিমের সব সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া।
অবসর ভেঙে ফিরেছিলেন তামিম, দুটি ম্যাচ খেললেন। কিন্তু যেভাবে বাদ পড়লেন, তাতে মনে হতে পারে অবসরের সিদ্ধান্তটাই ছিল সঠিক। বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগামীতেও তামিমের দলে ফেরাটা বোধহয় অনিশ্চিতই হয়ে গেল।
তামিম প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে দলটা কেমন হয়েছে দেখা যাক। পাঁচ পেসার, দুই অফ স্পিনার, দুই বাঁহাতি স্পিনার মিলিয়ে বোলিং আক্রমণটা নেহায়েত খারাপ নয়। লিটন দাসের সঙ্গে তানজিদ তামিম অথবা মেকশিফট ওপেনার মিরাজ। সহঅধিনায়কের পদ থেকে বাদ পড়েছেন লিটন, সেটা করা হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তকে। সাকিব, মুশফিক, তাওহীদ হৃদয়দের নিয়ে মিডল অর্ডারের পর ফিনিশার রোলে মাহমুদউল্লাহ। এ নিয়েই ধর্মশালায় আফগানদের বিপক্ষে লড়াইয়ের শুরু। প্রত্যাশা অনেক বড়, প্রস্তুতি গোলমেলে। ভরসা একটাই, শুরুর আগে পরিস্থিতি এমন গোলমেলে হলেই কেন যেন ভালো করে বাংলাদেশ!
বিশ্বকাপ দল : সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন (সহঅধিনায়ক), তাওহীদ হৃদয়, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, শরীফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ, মেহেদি হাসান, তানজিদ হাসান, তানজিম হাসান ও মাহমুদউল্লাহ।
তামিম ইকবাল দলে না থাকাতে যেন অনেকেরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে! আবার বিশ্বকাপের দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অন্তর্ভুক্তিতেও অনেকের চোখ কপালে! দল ঘোষণার পর যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকরা এলেন সংবাদ সম্মেলনে, তখন আলোচনায় শুধু ছিলেন এই দুজনেই। তাদের এই বিরহ বেদনায় চাপা পড়ে যায় অনেক প্রশ্ন। লিটন দাসকে বাদ দিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত কেন সহ-অধিনায়ক! বাড়তি কোনো ওপেনার ছাড়া কিংবা পাঁচ পেসারকে নিয়ে কেন দল গড়া?
প্রায় মিনিট পনেরোর সংবাদ সম্মেলনে ঘুরে ফিরে এসেছে একই প্রশ্ন। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও ঘুরেফিরে বন্দী ছিলেন একই কথার বৃত্তে। প্রশ্নোত্তর শেষে বেরিয়ে যান তিন নির্বাচক। যেতে যেতে কথা হয় তাদেরই একজন হাবিবুল বাশারের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল চাপা পড়া সেইসব প্রশ্নের উত্তর।
শুরুতেই জানতে চাওয়া হয় লিটনকে বাদ দিয়ে শান্তকে কেন সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ একটা কারণ। আর লিটনের অনাগ্রহও তাকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর একটি কারণ। লিটন নিজেও চায় না নেতৃত্বের চাপ নিতে। সে একটু ব্যাটিংয়ে বেশি মনোযোগ দিতে চায়।’
বিশ্বকাপ দলে বিকল্প ওপেনার না থাকার কারণও জানা গেল এই নির্বাচকের কথায়। তিনি জানালেন, ‘আমরা ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে মিরাজকে ভাবছি।’
বিকল্প ওপেনার হিসেবে বিশেষজ্ঞ কাউকে না নেওয়ায় একজন বাড়তি বোলার দলে রাখার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে শেখ মেহেদি হাসান সুযোগ পেয়েছেন সে কারণে। পাশাপাশি জায়গা হয়েছে পাঁচ পেসারেরও। এর পেছনে বাশার ভারতের কন্ডিশনের কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভারতে এখন আর্লি সিজন। উইকেট সতেজ থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই পাঁচজন পেসার দরকার হবে।’
যেতে যেতে আরও বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক মুখোমুখি হলেন, এই দলটা বিশ্বকাপে কেমন করবে? এই প্রশ্নটা শুনেই ঘুরে দাঁড়ালেন হাবিবুল। উত্তরে মজা করে বললেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হবে এই দল।’ এরপর একটু গাম্ভীর্য ফিরিয়ে এনে যোগ করলেন, ‘আমি এদের অনেক দিন ধরে দেখছি। ওরা কয়টা ম্যাচ জিতবে জানি না। তবে বিশ্বকাপে প্রতিটি দলকে ভোগাবে, এটা জানি।’
স্থায়ীভাবে ঢাকা বসবাসের আমার ষাট বছর পূর্ণ হলো। এই ষাট বছরে প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকা, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ঢাকার উত্থান-পতন, বন্যা, দুর্ভিক্ষ, আন্দোলন-অভ্যুত্থানসহ অনেক কিছু দেখার সুযোগ পেয়েছি। যখন ঢাকায় প্রথম এসেছিলাম তখন মনে হতো ঢাকা একটি বড় গ্রাম। এখানে গ্রামের মতোই বৃষ্টি হয়, অমাবস্যা পূর্ণিমা হয়, শীত-গ্রীষ্ম হয়। ভারী থেকে লঘু বর্ষণ হয়। ঢাকার চারদিক বর্ষার পানিতে প্লাবিত হয়। সদরঘাট, চকবাজার, সোয়ারীঘাট, ইসলামপুর এসব ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের এলাকা। গুলিস্তানকে ঘিরে বিপণি কেন্দ্রগুলো বিকশিত হতে শুরু করে। মতিঝিল গড়ে উঠছে। ঢাকার উন্নয়নের জন্য ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট সংক্ষেপে (ডিআইটি)’র কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তখনো ধোলাইখাল অতিক্রম করে কোর্টকাচারি, জগন্নাথ কলেজ, সদরঘাটের দিকে যেতে হতো। ঢাকা শহরের আবর্জনা নিষ্কাশনের জন্য আর্মেনিয়ানদের উদ্যোগে ধোলাইখাল চালু হয়েছিল।
ঢাকা শহরের ১৬১০ সালের আগে ও পরের মানচিত্র দেখলে বোঝা যায় যে শহরটা কী রকম খাল-বিল-নালা দিয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। যে কারণে শহরটি কখনোই ডুবে যাওয়ার কোনো ইতিহাস পাওয়া যায় না। সেই সময়ে একমাত্র যাতায়াতের উপায় ছিল নৌকা। এর মধ্যেই ১৬১০ সালে ইসলাম খাঁ রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তর করেন। বহুকষ্টে ঘোড়া, হাতি এবং পদাতিক বাহিনীকে রাজমহল থেকে বাংলায় আসতে হয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনক পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধীনে ঢাকার পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। স্থানিক বিবেচনাকে অগ্রাহ্য করে যখন বিদেশিরা নানা ধরনের শহর উন্নয়নের উদ্যোগ নেয় তার পরিণতি যে কত ভয়াবহ হয় তার প্রমাণ ঢাকা শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। ধোলাইখাল বন্ধ করে সেখানে মাটির নিচে বড় বড় পাইপ বসিয়ে নারিন্দাতে একটি পাম্প মেশিন বসিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়।
বিদেশিদের পরামর্শে এই ব্যবস্থার ফলে ঢাকায় গুরুতরভাবে পানি নিষ্কাশনের সংকট দেখা দেয়। একই পদ্ধতিতে বিভিন্ন জায়গায় পাইপ বসানো হয় এবং পানি নিষ্কাশনের গুরুতর সংকট দেখা দেয়। এরপর ঢাকা রাজধানী হলো, বিপুল পরিমাণ মানুষের আগমন ঘটল এই শহরে। বিভিন্ন জলাভূমি, ফাঁকা জায়গা যে যেখানে পারে বাড়িঘর তৈরি করতে শুরু করল। সরকারও প্রথমে ডিআইটি এবং পরে রাজউকের মাধ্যমে নানা জায়গায় আবাসনের ব্যবস্থা করতে শুরু করল। সেই ব্যবস্থা শুরু করতে গিয়ে ধানম-ি, গুলশান, বনানী, উত্তরা এসব জায়গায়ও জলাভূমিগুলো ভরাট করে শহরের আবাসিক এলাকা বৃদ্ধির কার্যক্রম শুরু করা হয়। এখন বৃষ্টিপাত মানেই সর্বত্রই জলাবদ্ধতা এবং মানুষের অন্তহীন দুর্ভোগ।
আশির দশকের পর থেকে গত চল্লিশ বছরে শহরটি কংক্রিটের জঞ্জালে পরিণত হয়েছে। সেই ষাটের দশকের গাছপালাগুলো নেই, ফাঁকা জায়গা নেই, বৈচিত্র্যহীন অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে শহরটি কিছু ম্যাচ বাক্সের মতো এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা একটা আবর্জনার স্তূপ মনে হয়। শহরটায় এত পরিমাণ গাড়ি, বিশেষ করে প্রাইভেট গাড়ি একেবারেই পরিকল্পনাহীন নগরীতে চেপে বসেছে। মাত্র গত দশ পনের বছরে কিছু ফ্লাইওভার এবং সম্প্রতি মেট্রোরেলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বটে কিন্তু সেগুলোর অধিকাংশ পরিকল্পনাহীন হওয়ায় যানজট কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এর মধ্যে সেবা সংস্থাসমূহ একজন আরেকজনের প্রতি দোষ চাপিয়ে আপাতত নিজেদের গা বাঁচিয়ে চলছে।
আমার এই ষাট বছরের ঢাকা বসবাসের ইতিহাসে গত তিনদিন আগে যখন আমি মগবাজার থেকে ধানম-ির বাসায় এসেছি তখন সময় লেগেছে চার ঘণ্টা! এই চার ঘণ্টার মধ্যে সাড়ে তিন ঘণ্টাই ছিলাম আমি পানির মধ্যে। কিন্তু চলাচলের কোনো উপায় ছিল না। এক জায়গাতেই এক থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকেছি। সামনে পেছনে গাড়ির চাপ, কোনো কোনো গাড়ি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। তার সামনে বা পেছনে যাওয়ারও কোনো উপায় ছিল না। শহরে কোনো ট্রাফিক পুলিশ দেখা যায়নি। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোনো ধরনের সরকারি উদ্যোগ দেখা যায়নি। খবরে প্রায়ই দেখে থাকি কোনো দেশে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের বাহিনীগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে মানুষের সাহায্যে সরকারের প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসে। যা ভেবেছিলাম তাই, এই দুর্যোগের মধ্যে কিছু প্রাণ যাবে, কিছু লোক আহত হবে এবং সত্যিই দেখলাম যে ওই রাতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের তিনজনসহ চারজন মারা গেছে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত এক শিশুকে নিয়ে উদ্ধারকারীরা বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসার জন্য গিয়েছে কিন্তু চিকিৎসা পায়নি। এটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয় না এই কারণে যে, একবার আমার ছেলে স্কুল থেকে ফেরার সময়ে বেবিট্যাক্সিতে দুর্ঘটনায় পড়ে তার শরীর রক্তাক্ত হয়। সেই সময়ে তার কাছে পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না, চিকিৎসার জন্য কাছের একটি চিকিৎসাকেন্দ্রে গেলে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। রক্তাক্ত অবস্থাতেই সে ঘরে ফিরে আসে।
আমার কাছে প্রশ্নটি অন্য জায়গায়, আমরা নিয়তিতে বিশ্বাস করতে শুরু করেছি। দ্রব্যমূল্য বাড়বে, বেকারত্বের সৃষ্টি হবে, মানুষ চিকিৎসা পাবে না এটাই যেন স্বাভাবিক। আর এর বিনিময়ে কোটি কোটি ডিমের দাম পাঁচ টাকা করে বাড়িয়ে একদিনে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কোটিপতি হয়ে যায়। রাষ্ট্রীয় অমাত্যরা এর সমাধানে বিনিদ্র রজনী পার করবেন না, আমলারা নিজের সন্তানদের পৃথিবীর নিরাপদ কোনো জায়গায় পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত থাকবেন। সাংসদ-ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে ব্যবহার করে আরও কোটি কোটি টাকার মালিক হবে। আমরা কি এমনটি দেখতে পাব কোনোদিন দেশ যারা চালায় তাদের ঘুম নেই, সারা রাত পথে পথে ঘুরছেন কোথায় কী হলো সেসব দেখে পরদিনই মানুষকে জানানো যে এই ব্যবস্থা এইভাবে পরিবর্তন করা সম্ভব। সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ! রাজনীতিবিদরা শুধুই বোঝেন ক্ষমতা। মার্কিন ভিসা নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই, কিন্তু পাঁচজন মানুষ যে অতিবর্ষণের ফলে পানিতে তলিয়ে যাওয়া রাস্তায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে অকালে মারা গেল তাতে তাদের কপালে একটুও ভাঁজ পড়ে না।
ক’দিন পরে পরে রাস্তার পাশে বিরাট বিরাট কংক্রিটের পাইপ দেখা যায়। বহুদিন মানুষকে ভুগিয়ে একদিন সেই পাইপগুলো মাটির নিচে চাপা পড়ে। কিন্তু এই পাইপের কাজগুলো কী? তারা কি পানি নিষ্কাশনের কাজ করে? নাকি মাটির নিচে গিয়ে নানা রকম ময়লা-আবর্জনায় বন্ধ হয়ে নিচের দিকের পানিকে ওপরের দিকে ঠেলে দেয়? আমাদের এক নাট্যকর্মীর বা অভিনেতা বন্ধু উবারে করে তার কল্যাণপুরের বাসায় যাচ্ছিলেন। কল্যাণপুর যাওয়ার পর উবারের ড্রাইভার আর যেতে রাজি হলেন না। বুক সমান পানি ভেঙে সেই বন্ধু বাড়ি যাওয়ার পথে ম্যানহোলের মধ্যে পড়ে যান। তার একটি পা ক্ষতবিক্ষত হয় এবং মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে এখনো ট্রমায় ভুগছেন।
এটা সত্য, বাংলাদেশ বানভাসি ও ঝড়-ঝঞ্ঝার দেশ। মানুষ এসবের বিরুদ্ধে লড়াই করে বহু শতাব্দী ধরে বেঁচে আছেন। মানুষের কোনো অভিজ্ঞতা আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র কিছুতেই নেবে না। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গৃহে কিছু অনভিজ্ঞ লোক নকশাঁ বানাবে এবং বিপুল পরিমাণে অর্থ ব্যয়ে একটি প্রকল্প সাজাবে, তার মধ্য থেকে কোটি কোটি টাকা চলে যাবে ক্ষমতাসীনদের পকেটে। আজই পত্রিকায় দেখলাম প্রমাণসহ একজন লিখেছেন ভাঙ্গা থেকে খুলনার রেললাইন আপাতত এখন প্রয়োজন নেই। এতে বিশাল অর্থের অপচয় হবে। কিন্তু দেখা যাবে প্রকল্পটি হলো ঠিকই, কিন্তু এটা কারও কাজে লাগছে না। এমনি অনেক অকেজো প্রকল্প হরহামেশাই হয়। আমাদের সংস্কৃতিতে ষাটের দশক পর্যন্ত দেশপ্রেমের বিষয়টি বড়ই প্রবল ছিল। হয়তো সেটা পরাধীনতার কারণে। সবাই যার যার মতো দেশের জন্য কাজ করতে ছুটত। সত্তরের দশকের পর যে চায়নি তা নয়। কিন্তু সম্পূর্ণ বিষয়টি চলে গেছে শাসকের হাতে। জনগণের মেধাকে কখনোই গ্রহণ করার চেষ্টা করা হয়নি। গত ষাট বছরে এবং আমার এই বয়সে আমাদের কাজে লাগানোর রাষ্ট্রীয় কোনো ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়নি। সব কিছু সরকারি বেতনভুক্ত লোকদের কাছে এবং রাজনীতিবিদদের হাতে। তারা যাই করবেন তাই হবে। তবে সবচেয়ে বেদনার বিষয় এই পরিস্থিতির কোনো উন্নতিরও আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। একমাত্র গণজাগরণ এবং সাংস্কৃতিক বিপ্লবই সমাজকে আবার কর্মময় করে তুলতে পারে। অন্যথায় খবরের কাগজের প্রথম পৃষ্ঠায় নির্বাচন আর ভিসার খবরই আমরা দেখতে পাব। ওই পাঁচজন হতভাগ্য মানুষ যে রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলার শিকার তার সত্যতা কখনোই ভুলবার নয়। এসব ভেবেই হয়তো আলেকজান্ডার পাঞ্জাব থেকে ফিরে গিয়েছিলেন এবং সেনাপতিকে বলেছিলেন ‘সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ’।
লেখক: অভিনেতা, নাট্যকার ও কলামিস্ট
নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আখেরি নবী ও রাসুল। তিনি মানবজাতির জন্য আল্লাহতায়ালার সর্বশেষ দূত। তার প্রতি বিশ্বাস ও আনুগত্য ছাড়া আল্লাহকে বিশ্বাস ও আনুগত্যের দাবি অর্থহীন। কোরআন মাজিদের বিভিন্ন জায়গায় এ বিষয়টি ঘোষিত হয়েছে। আল্লাহকে পাওয়ার একমাত্র পথ খাতামুন্নাবিয়ীন হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর অনুসরণ। তাই তার জন্য হৃদয়ে গভীর ভালোবাসা পোষণ করা এবং তার জন্য আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে দোয়া করা প্রত্যেক উম্মতের ইমানি কর্তব্য।
কোরআন মাজিদে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা নবী কারিম (সা.)-এর জন্য দরুদ পাঠের তথা আল্লাহর দরবারে তার জন্য দোয়া করার আদেশ করেছেন। এটা একদিকে যেমন আল্লাহর কাছে তার রাসুলের মর্যাদার প্রমাণ অন্যদিকে মুমিন বান্দার রহমত ও বরকত লাভের অন্যতম উপায়। আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানকে এই সহজ ও মূল্যবান আমলটি বেশি বেশি করার তৌফিক দান করুন। নিম্নে দরুদ ও সালামের কিছু ফজিলত উল্লেখ করা হলো-
গোনাহ মাফের আমল : দরুদ রহমত, মাগফিরাত ও দরজা বুলন্দির আমল। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, যে আমার ওপর একবার দরুদ পড়বে, বিনিময়ে আল্লাহতায়ালা তার ওপর দশটি রহমত নাজিল করবেন। -সহিহ মুসলিম : ১/১৬৬
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে আমার ওপর একবার দরুদ পড়বে আল্লাহ তার ওপর দশটি রহমত নাজিল করবেন, তার দশটি গোনাহ ক্ষমা করা হবে এবং দশটি দরজা বুলন্দ হবে। -সুনানে নাসায়ি : ১/১৪৫
ফেরেশতাদের দোয়া লাভ : দরুদ পাঠকারীর জন্য ফেরেশতারা মাগফিরাতের দোয়া করেন। হজরত আমের ইবনে রবিয়া (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে খুতবার মধ্যে বলতে শুনেছি, আমার ওপর দরুদ পাঠকারী যতক্ষণ দরুদ পড়ে ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। সুতরাং বান্দার ইচ্ছা, সে দরুদ বেশি পড়বে না কম। -মুসনাদে আহমদ : ৩/৪৪৫
কিয়ামতের দিন নবীর নিকটবর্তী থাকার সুযোগ : কিয়ামতের দিন দরুদ পাঠকারী নবীজির সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন ওই ব্যক্তি আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে, যে আমার ওপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পড়েছে। - জামে তিরমিজি : ১/১১০
দুনিয়া ও আখেরাতের মকসুদ হাসিল : দুনিয়া ও আখেরাতের সব মকসুদ হাসিল হবে দরুদ পাঠকারীর। হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, একবার আল্লাহর রাসুল (সা.) জিকরুল্লাহর (আল্লাহর জিকিরের) খুব তাকিদ করলেন। আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি আপনার প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করে থাকি। আমি আমার দোয়ার কতভাগ আপনার জন্য নির্ধারণ করব? তিনি বললেন, তোমার যে পরিমাণ ইচ্ছা।
আমি বললাম, চার ভাগের এক ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। তবে বেশি করলে আরও ভালো। আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। তবে বেশি করলে আরও ভালো। আমি বললাম, তাহলে তিন ভাগের দুই ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা হয়। তবে বেশি করলে আরও ভালো। আমি বললাম, তাহলে কি আমার দোয়ার পুরোটাই হবে আপনার প্রতি দরুদ? তিনি বললেন, তবে তো তোমার মকসুদ হাসিল হবে, তোমার গোনাহ মাফ করা হবে। -জামে তিরমিজি : ২/৭২
দরুদ গরিবের সদকা : দরুদের আমলের মাধ্যমে গরিব পাবে সদকার সওয়াব। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে মুসলমানের দান করার সামর্থ্য নেই, সে যেন দোয়ায় বলে- এটা তার জন্য জাকাত (সদকা) হিসেবে গণ্য হবে। -ইবনে হিব্বান : ৩/১৮৫
সালাম নবীর কাছে পৌঁছানো হয় : উম্মতের সালাম নবীজির কাছে পৌঁছানো হয়। রাসুলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহতায়ালার জমিনে বিচরণকারী কিছু ফেরেশতা আছেন, তারা আমার কাছে উম্মতের পক্ষ থেকে প্রেরিত সালাম পৌঁছিয়ে থাকেন। -মুসনাদে আহমদ : ১/৪৪১
দরুদ ছাড়া দোয়া ঝুলন্ত থাকে : দরুদবিহীন দোয়া আসমান-জমিনের মধ্যে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, যে পর্যন্ত তুমি তোমার নবীর (সা.) ওপর দরুদ না পড়বে ততক্ষণ দোয়া আসমানে যাবে না, আসমান-জমিনের মধ্যে থেমে থাকবে।
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।