
কবি, প্রাবন্ধিক ও সম্পাদক সুধীন্দ্রনাথ দত্ত ১৯৬০ সালের ২৫ জুন কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। বিশ শতকের ত্রিশের দশকে রবীন্দ্র-উত্তর সাহিত্যে বাংলা কবিতার নতুন ধারার সূচনাকারী হিসেবে সমাদৃত পাঁচ কবির অন্যতম সুধীন্দ্রনাথ দত্ত। ১৯০১ সালের ৩০ অক্টোবর কলকাতার হাতীবাগানে জন্মগ্রহণ করেন সুধীন্দ্রনাথ। পিতা হীরেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন সেকালের বিশিষ্ট দার্শনিক। সুধীন্দ্রনাথ ১৯১৪ থেকে ১৯১৭ সাল পর্যন্ত কাশীর থিওসফিক্যাল হাইস্কুলে শিক্ষাগ্রহণ করেন। পরে কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (১৯১৮) এবং স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে আইএ (১৯২০) ও বিএ (১৯২২) পাস করেন। এরপর তিনি কিছুদিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে এমএ শ্রেণিতে অধ্যয়ন করেন। এখানকার পাঠ অসমাপ্ত রেখেই তিনি ‘কলকাতা ল কলেজ’-এ আইনশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন, কিন্তু তাও সমাপ্ত করেননি। পিতার ল ফার্মে শিক্ষানবিশ হিসেবে সুধীন্দ্রনাথ কর্মজীবন শুরু করেন; পরে কিছুদিন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতেও চাকরি করেন। সুধীন্দ্রনাথ ১৯২৪ সালে ছবি বসুর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, কিন্তু এক বছরের ভেতরেই বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর ১৯৪৩ সালে প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রাজেশ্বরী বসুর সঙ্গে দ্বিতীয়বার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৩১ সাল থেকে দীর্ঘ বারো বছর তিনি পরিচয় পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ১৯৪৫-৪৯ সময়কালে তিনি স্টেটসম্যান পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। প্রমথ চৌধুরীর সবুজপত্রের সঙ্গেও তার সম্পৃক্ততা ছিল। ১৯৫৭-১৯৫৯ সময়কালে তিনি আমেরিকার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন এবং পরে কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। আধুনিক মনন ও বৈশ্বিক চেতনার কারণে তিনি বাংলা কাব্যে স্বতন্ত্র স্থান লাভ করেন। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ : কাব্য তন্বী, অর্কেস্ট্রা, ক্রন্দসী, উত্তরফাল্গুনী, সংবর্ত, দশমী। গদ্যগ্রন্থ : স্বগত, কুলায় ও কালপুরুষ। প্রতিধ্বনি নামে তার একটি অনুবাদগ্রন্থও আছে। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য, মননশীলতা ও নাগরিক বৈদগ্ধ্য তার কাব্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য। বাংলা কবিতায় তিনি আধুনিক দর্শনচিন্তার নান্দনিক প্রকাশ ঘটান।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ও খাদ্যনিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ড. গোলাম রসুল। তিনি বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, ঢাকার অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক। বর্ষায় কৃষির প্রস্তুতি, বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দসহ নানা বিষয়ে তিনি দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সম্পাদকীয় বিভাগের সহ-সম্পাদক সাঈদ জুবেরী
দেশ রূপান্তর : আমাদের কৃষিতে বর্ষার তো বিশেষ অবদান আছে। এবার বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছে। বর্ষাকালীন কৃষির প্রস্তুতি কেমন দেখছেন? কৃষকদের এ সময় যে সহায়তা পাওয়ার কথা সরকারের কি তেমন প্রস্তুতি আছে?
ড. গোলাম রসুল : আমাদের খাদ্য উৎপাদনে অবশ্যই বর্ষার বৃষ্টি একটা বিরাট উপাদান। আমাদের কৃষি তো অনেকটাই প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে। এই সিজনে, আউশ ধান যেটা, যদি বৃষ্টি হয় তাহলে আলাদা ইরিগেশন ছাড়াই হয়। এই বছর বৃষ্টি শুরু হয়েছে একটু দেরিতে। আউশের প্রস্তুতি মাত্র শুরু হয়েছে। এখন বীজতলা তৈরি এবং এ সময়ের কৃষিকাজের জন্য সরকারের বিশেষ কোনো প্রস্তুতি তো দেখছি না। সরকারের যেসব সাপোর্ট নরমালি আছে, বিশেষত ইনফরমেশন সার্ভিস সেগুলো চলছে। কিন্তু বিশেষ কোনো উদ্যোগ এখনো চোখে পড়েনি। হতে পারে সবাই ওয়েট করছে বর্ষার গতি-প্রকৃতি বুঝতে। মানে বন্যা-টন্যা হয় কি না। আমাদের নর্থ বেঙ্গলে তো বন্যার আভাস ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।
দেশ রূপান্তর : কয়েকদিন আগেই সরকারও বন্যার সতর্কীকরণ বার্তা দিয়েছে...
ড. গোলাম রসুল : হ্যাঁ। তবে যেটা বলতে চাইছি, আমাদের আউশের উৎপাদন কিন্তু এখন আগের তুলনায় অনেক কম। আমরা যদি কম্পেয়ার করি আমাদের টোটাল এগ্রিকালচারের যে প্রডাকশন আছে সেখানে আউশ ধান আগে একটা বড় রোল প্লে করত। এখন সেটা অনেক কমে গেছে। আমার মনে হয় সেটা টেন পারসেন্ট হয়ে গেছে এখন। অলমোস্ট ফিফটি পারসেন্ট হয়ে গেছে বোরো উৎপাদন। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে আমন। সেটা অবশ্য পরে আসবে। এখন আমাদের প্রস্তুতিটা হচ্ছে আউশের জন্য। তো, সেই প্রস্তুতিটা আমি মনে করি ইনিশিয়াল স্টেজে আছে।
দেশ রূপান্তর : বর্ষা মৌসুমে কৃষককে সরকার কী ধরনের সহায়তা দিতে পারে?
ড. গোলাম রসুল : বীজ উৎপাদনে সরকারের একটা সহায়তা আছে। ভালো মানের বীজ উৎপাদন ও বিতরণ করা। এক্ষেত্রে বর্ষা মৌসুমের একটা সমস্যা হচ্ছে বন্যা প্রেডিক্ট করা যায় না। দেখা গেল সহসাই বন্যার পানি চলে আসে। এ সময় কৃষকরা সাফার করে মূলত বীজতলা নিয়ে। দেখা গেল কৃষক বীজতলা তৈরি করেছে কিন্তু বন্যার পানি ঢুকে সেটি নষ্ট হয়ে গেল। বীজতলা নষ্ট হলে তো কৃষকের প্রডাকশনটাই নষ্ট হয়ে যায়। ফলে এই সিজনটা আমাদের জন্য আনসার্টেইন আর কি। এই অনিশ্চয়তার কারণেই কৃষকরা এখন আউশ উৎপাদন থেকে সরে যাচ্ছে। তারা বোরোতে বেশি উৎসাহ পাচ্ছে। কারণ বোরো উৎপাদনে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করা যায় বেশি। সেই হিসেবে বর্ষা কৃষকদের জন্য ভালনারেবল সিজনও বটে। একদিকে যেকোনো সময় বন্যা হয়, অন্যদিকে বৃষ্টি কখনো হয় কখনো হয় না। সব মিলিয়ে প্রডাকশনের ক্ষেত্রে সিজনটা অনিশ্চয়তায় ভরা।
দেশ রূপান্তর : এক্ষেত্রে সরকার কী করতে পারে।
ড. গোলাম রসুল : এক্ষেত্রে সরকার এই অনিশ্চয়তা কমিয়ে আনতে কাজ করতে পারে। বিশেষ করে কৃষকদের সচেতনা বৃদ্ধি ও আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে সক্রিয় হতে পারে। পাশাপাশি বীজতলা তৈরিতে ও ভালো বীজ সরবরাহ করে সহায়তা করতে পারে। এছাড়া কৃষকের কাছে বিকল্প কী আছে তা পৌঁছে দেওয়া ও সেটার খোঁজ দিতে পারে সরকার। আমাদের দেখতে হবে বন্যা হলেও যেসব শস্যের ক্ষতি হয় না, এমন কী আছে। সেগুলোর খোঁজ জানাতে হবে কৃষককে। আমার মনে হয় না সরকারের এসব উদ্যোগ আছে।
দেশ রূপান্তর : কিছুদিন আগে বাজেট ঘোষণা হলো। তো এবারের বাজেটে কৃষি খাতের বরাদ্দ নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
ড. গোলাম রসুল : আমরা বলি যে কৃষি আমাদের প্রাইম সেক্টর। মেইন সেক্টর। এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের ইকোনমির জন্য, খাদ্য নিশ্চয়তা বলেন আর খাদ্য নিরাপত্তা বলেন, নিউট্রিশন বলেন, আমাদের এমপ্লয়মেন্ট বলেন... যে কোনো দিক দিয়েই বলেন, কৃষির গুরুত্ব আপনি কমাতে পারবেন না। যদিও আমাদের জিডিপিতে কৃষির কন্ট্রিবিউশন কমে আসছে কিন্তু আমাদের টোটাল শ্রমশক্তির এখনও ৪০ শতাংশ এমপ্লয়মেন্ট কৃষিতে। পাশাপাশি কৃষির সামাজিক কন্ট্রিবিউশনও অনেক। কেবল খাদ্য নিরাপত্তা না, নিউট্রিশন বা এমপ্লয়মেন্ট না, কৃষির পরিবেশগত বেনিফিটও আছে। বাংলাদেশের যে কৃষি, এটার বেশিরভাগই ফ্যামিলি ফার্ম এগ্রিকালচার। এখানে পরিবেশগত ক্ষতি কম হয়। মোটামুটি এটা পরিবেশবান্ধব কৃষি। আমাদের ১৭০ মিলিয়ন জনসংখ্যার ছোট একটা দেশ। এত অল্প জায়গায় এতগুলো লোককে খাওয়ানোর জন্য আমাদের কৃষকদের একটা বিরাট অবদান আছে। পাশাপাশি দেখেন সারা বিশে^ই কৃষির প্রতি একটা আলাদা সাপোর্টও নজর দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের এবারের বাজেট যদি আমরা দেখি আমার কাছে একটু হতাশার মনে হচ্ছে।
এবার কৃষিতে বাজেটের অঙ্ক বাড়লেও ভর্তুকি ও প্রণোদনা কমে গেছে। এবার বরাদ্দ হচ্ছে ৪৩৪৮ কোটি টাকা। এটা আমাদের খাতওয়ারি যে বরাদ্দ আছে তার মাত্র ২.১০ হচ্ছে কৃষিতে। আমি এতে একটু অবাকই হলাম।
দেশ রূপান্তর : কারণ কি মনে হয় আপনার?
ড. গোলাম রসুল : আমার মনে হচ্ছে আইএমএফের যে ভর্তুকি কমানোর যে চাপ আছে, সরকার বোধ হয় সেজন্য গত বছরের যে ভর্তুকি ছিল সেটা কাট করার প্ল্যান করছে। এজন্য কৃষি খাতের প্রণোদনা ও ভর্তুকি বরাদ্দ প্রায় ৯১৬০ কোটি টাকার মতো কমে গেছে। এটা আমার কাছে খুবই হতাশার মনে হয়েছে। দ্বিতীয়ত আপনি যদি বাজেটটা দেখেন, বরাদ্দের সিংহভাগই প্রায় ৯৫ শতাংশই হলো অপারেটিং বাজেট। মানে হচ্ছে বেসিক্যালি স্টাফদের বেতন দেওয়াতে ব্যয় হবে। কিন্তু কৃষি সেক্টরকে ট্রান্সফর্ম করার জন্য, ডেভেলপ করার জন্য যে বরাদ্দ দেওয়ার দরকার সেটা খুবই কম। টোটাল এগ্রিকালচার বাজেট হচ্ছে এবার ২১ হাজার কোটি টাকা, এটার টোটাল সেক্টর এলোকেশন হলো তিন ভাগে। এর মধ্যে এডিপি বাজেট হচ্ছে মাত্র ৪৩৪৮ কোটি টাকা। যা গত বছরের চেয়ে কম, আগেই বললাম। এখন টোটাল এগ্রিকালচার সেক্টর যদি আমরা চিন্তা করি এখানে লাইফস্টক, ফিশারিজ ইত্যাদি আছে, সেখানেও বাজেট কিন্তু কমে গেছে। গত বছর যেটা ছিল ৩৫ হাজারের বেশি এবার সেটা কমে বোধহয় ৩০ হাজারের মতো।
দেশ রূপান্তর : সেই করোনার সময় থেকে বিশে^ খাদ্য নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আবার এবারের বাজেটের আগে থেকেই আইএমএফের শর্তে বাজেটে কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি কমানোর কথাও শুনে আসছিলাম। সরকার কি বাজেটে খাদ্য নিরাপত্তার চেয়ে আইএমএফের শর্ত পূরণে বেশি মনোযোগ দিয়েছে?
ড. গোলাম রসুল : আমার তো তাই মনে হচ্ছে। আপনি যদি টোটাল সাবসিডি দেখেন, দেখবেন যে ভর্তুকি কিন্তু বাড়ছে। বিশেষ করে পাওয়ার সেক্টরের কারণে এই সাবসিডি বাড়ছে। কৃষি সেক্টরে গত বছর সাবসিডি বেশি ছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে। কিন্তু কৃষিতে সারা বিশ্বেই কিন্তু সাবসিডি দিচ্ছে। সে আপনি উন্নত বলেন আর অনুন্নত বলেন। পাশর্^বর্তী দেশ ভারতের কথাই ধরেন। অথবা চীন, জাপান, ভিয়েতনাম দেখেন। প্রতিটি দেশই কৃষিতে ভর্তুকি দিচ্ছে। কৃষিতে সাবসিডি দেওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে এটা একটা রিকগনিশন। সমাজে
কৃষির যে বিরাট অবদান সেখানে এই ভর্তুকিটা একটা হচ্ছে সেই অবদানের একটা স্বীকৃতি দেওয়া। অন্যদিকে কৃষি খাত অন্যান্য খাতের তুলনার একটা ইউনিক চ্যালেঞ্জ ফেস করে। এটা অন্যান্য সেক্টরের মতো না।
দেশ রূপান্তর : কিছুদিন আগেও তো ফুড সিকিউরিটি বড় ইস্যু ছিল, সরকারের ওপর মহল থেকেও খাদ্য নিরাপত্তার কথা জোরেশোরেই বলা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে কৃষিতে প্রণোদনা ও ভর্তুকি কমিয়ে খাদ্য নিরাপত্তাকে কম গুরুত্ব দেওয়া হলো না?
ড. গোলাম রসুল : হ্যাঁ, আমার মনে হয় বাজেটে এই খাদ্য নিরাপত্তার ইস্যুটা আরেকটু সতর্কতার সঙ্গে দেখতে পারত সরকার। দেখেন আমাদের যে এখন খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে বিশেষ করে ধান উৎপাদনে আমরা বেশ ভালো করছি। কিন্তু গমে আমরা পিছিয়ে গিয়েছি। আমাদের প্রচুর গম আমদানি করতে হচ্ছে, প্রায় ৯০ শতাংশ। অন্যান্য কৃষিপণ্যের কথাও যদি বলেন, এই যে চিনির বাজার যে এখন এত অস্থির। ঈদের আগে চিনির দাম বেড়ে গেল। ভেজিটেবল অয়েল, ডিম ইত্যাদি মিলিয়ে আমাদের কিন্তু বিরাট পরিমাণ কৃষিপণ্য আমদানি করতে হয়। গত বছর বোধ হয় ১৮ থেকে ২০ লাখ মেট্রিক টন আমদানি করতে হয়েছে। তো এই কৃষিপণ্য আমদানিতে সরকারের বড় অঙ্কের টাকা ব্যয় হয়। এখন করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সারা বিশে^ই একটা প্রবণতা দেখা গেছে যে নিজের দেশে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে সবাই। আগে যে প্রবণতা ছিল যে ডোন্ট ওরি, টাকা থাকলে কিনে আনা যাবে সেই আইডিয়া থেকে সব দেশই সরে এসেছে। পাশের দেশ ভারতও আত্মনির্ভর
কৃষি অর্থনীতির কথা বলছে। সেটা হচ্ছে আমি যদি আমার উৎপাদন বাড়াতে পারি তাহলে অন্য দেশের ওপর আমার নির্ভরতাটা কমবে। আমার অনিশ্চয়তা কমবে, খাদ্য নিরাপত্তা বাড়বে। এখন বাংলাদেশের মতো বড় জনসংখ্যার দেশে খাদ্যের নিশ্চয়তা বড় অংশে নির্ভর করে আমদানির ওপর। এক্ষেত্রে ধানের পাশাপাশি আরও দুই/তিনটা কৃষিপণ্যে যদি আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারতাম তাহলে ভালো হতো। আমাদের যেটা হয়েছে, কৃষি সেক্টরে কিছু ক্ষেত্রে আমরা উৎপাদনে ভালো করেছি। মাছ, ফলের উৎপাদন বেড়েছে। কিন্তু উৎপাদনের পরের যে অবস্থা, প্রডাকশন থেকে কনজাম্পশনের মাঝখানের যে অবস্থা সেখানে আমাদের অনেক কিছু করা দরকার। স্টোরেজ দরকার, প্রক্রিয়াজাতকরণ দরকার, মার্কেটিং দরকার। কৃষিকে আমরা যদি আরও প্রোডাকটিভ করতে চাই তাহলে আমাদের ফোকাস দিতে হবে উৎপাদনের পরের প্রক্রিয়াগুলোতে, ট্রান্সফরমেশনের দিকে। এই যে এখন আমের সিজন চলছে, আপনি রাজশাহীতে যান, দেখবেন সেখানে যে আম ২৫/৩০ টাকা কেজি, সেটা ঢাকাতে ৮০/৯০ টাকা। এই বাড়তি টাকা কে পাচ্ছে, যিনি আমবাগান করছেন তিনি তো এই দাম পাচ্ছেন না। কারণ কী? আমচাষি মার্কেটিং করতে পারছেন না, ফলে মাঝখানে তৃতীয় পক্ষ সুবিধা নিচ্ছে। আবার আমচাষি যদি তার আম সংরক্ষণ করতে চান, সেখানে স্টোরেজের অভাব। আমজাত পণ্য তৈরির সুবিধাও আমাদের তেমন ডেভেলপ করেনি। ফলে সিজনের পণ্য সিজনেই কম দামে হলেও ছেড়ে দিতে হচ্ছে, মাঝখানে অন্য কেউ লাভ করছে। কিন্তু চাষি মূল্য পাচ্ছে না, আবার জনগণকে বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে, সেই লাভটা করছে আরেকজন। ফলে আমাদের এখন উৎপাদন পরবর্তী ডেভেলপমেন্ট বাজেটের দিকে যেতে হবে।
১৯৭১ সালে নয় মাসের সহিংস যুদ্ধ শেষে বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতা লাভ করল, সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার অবজ্ঞার সুরে বললেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ একটি ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হতে যাচ্ছে। এরপর ১৯৭৪ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমস ভবিষ্যদ্বাণী করে, বাংলাদেশ ধীরে ধীরে ম্যালথাসের তত্ত্বের মতো ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের চক্রে আটকে যাচ্ছে। কেননা, জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি যে মাত্রায় রয়েছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খাদ্যের প্রবৃদ্ধি কুলিয়ে উঠতে পারবে না। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আজ দেখা যায়, বাংলাদেশ এসব সর্বনাশা বক্তাদের ভুল প্রমাণ করে বহুদূর এগিয়ে চলেছে।
সাফল্যের গল্পে বিশ্বে তাই প্রায়ই বাংলাদেশ উদাহরণ হিসেবে উঠে আসে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রয়েছে গর্ব করার মতো চিত্তাকর্ষক পরিসংখ্যান। কিন্তু একই সঙ্গে এখানকার সুস্থ গণতন্ত্রের চর্চা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। কয়েকদিন আগে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে বাংলাদেশকে নেতিবাচক হিসেবে তালিকাবদ্ধ করেছে।
এক কথায় বলা যায়, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অবনমন ঘটেছে, আবার অর্থনীতি ভালো করছে এতটাই যে, ধারাবাহিক দক্ষিণ এশিয়ায় তার সমকক্ষ আর নেই। মাথাপিছু জিডিপি বেড়ে এখন ২,২২৭ ডলার। আর যে পাকিস্তানের শৃঙ্খল ভেঙে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ বেরিয়ে এসেছে, তার আয় মাথাপিছু ১,৫৪৩ ডলার। ভারতের থেকেও বাংলাদেশের জিডিপি ভালো। যদিও ভারতের জাতীয়তাবাদীরা কথিত বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসনকে বিরাট এক রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত করেছে। তারপরও ভারতের মাথাপিছু আয় বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কম, ১,৯৪৭ ডলারেরও কম।
২০২১ সালের মে মাসে দেখুন, শ্রীলঙ্কা দেশের ক্ষয়িষ্ণু বৈদেশিক রিজার্ভ বজায় রাখতে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ হাত বাড়ায় এবং লঙ্কান অর্থনীতিকে সাহায্য করতে ২০০ মিলিয়ন ডলার বিনিময়ের সুবিধা দেয়। অর্থনীতিতে বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস এতখানি যে, ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংক কথিত অভিযোগে পদ্মা সেতুর নির্মাণের এক বিলিয়ন ডলার ঋণচুক্তি বাতিল করলেও তারা কেয়ার করেনি, বরং নিজস্ব অর্থায়নে বহুমুখী সেতুটির নির্মাণকাজ সমাপ্ত করে।
বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রা শুরু হয় ১৯৯০ সাল থেকেই। সে সময় বাংলাদেশের গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধি বিশ্বের গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধির চেয়ে বেশি হতে থাকে এবং গড় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি দক্ষিণ এশিয়ার গড় অতিক্রম করে চলেছে। পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারত সম্প্রতি অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়লে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে শীর্ষস্থানে চলে আসে। ক্রমবর্ধমান উৎপাদন খাত এবং পোশাক শিল্পের সিঁড়ি বেয়ে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। সফটওয়্যার ও আইটি সেবা রপ্তানিতেও বাংলাদেশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে। ২০১৮ সালে জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক আয়তনের বিচারে বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) এবং আশা করা হচ্ছে ২০২৪ সালের মধ্যে এলডিসি ক্যাটাগরিও ছাড়িয়ে যাবে।
যে দেশের মানুষ দুর্ভিক্ষে মারা পড়বে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল (১৯৭৪ সালে), মাত্র ৫০ বছরেরও কম সময়ে সে দেশ ১৬৬ মিলিয়ন জনসংখ্যার খাদ্য উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে। চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বাসকারী মানুষের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাচ্ছে। আরও আছে বিদেশের ২.৫ মিলিয়ন অভিবাসী কর্মী, যারা সোপার্জিত অর্থ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির স্বাস্থ্য পরিপুষ্ট রাখে। কেবল ২০২০ সালে রেমিট্যান্স পেয়েছে বাংলাদেশ ১৯.৮ বিলিয়ন ডলার।
অর্জন কেবল অর্থনীতিতে সীমাবদ্ধ নয়, সামাজিক খাতেও ভালো করছে দেশটি। সরকারি পরিষেবাগুলোয় স্মার্টভাবে বিনিয়োগ করছে এবং সামাজিক ও লিঙ্গবৈষম্য ক্রমে কমিয়ে আনছে। ষাটের দশকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে নারীর প্রজনন হার ছিল সমান অর্থাৎ ৬.৭, যখন ভারতে ছিল ৫.৯। এর ৬০ বছর পরে ২০২০ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশ প্রজনন হার কমিয়ে ২ এ এনেছে, অথচ ভারতে এখনো আছে ২.২ এবং পাকিস্তানে ৩.৪। স্বাস্থ্য খাতেও ব্যয় বাড়িয়েছে এবং ফলও পাচ্ছে। ভারতীয় ও পাকিস্তানিদের চেয়ে বাংলাদেশিদের মানুষ বেশিদিন বাঁচে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের গড় আয়ু ছিল ৭২.৩২ বছর। অথচ পাকিস্তানের আয়ু এখনো ৬৭.১১ বছর এবং ভারতে ৬৯.৭২ বছর। সাক্ষরতার হারে পাকিস্তানের চেয়ে অনেকগুণ এগিয়ে বাংলাদেশ এখন ভারতের কাছাকাছি চলে এসেছে। বিশেষ করে ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের মেয়েরা উচ্চশিক্ষা অর্জনে ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে। শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণও আশানুরূপ এবং ভারতের চেয়ে বেশি।
বোঝাই যাচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের সরকার শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়কে অগ্রাধিকার দিয়েছে। পুষ্টি থেকে স্যানিটেশন কিংবা শিক্ষা থেকে ক্ষমতায়নÑ সব ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বাংলাদেশের অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। এত সাফল্যের পরও কথা থেকে যায়। অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বিশ্বকে বাংলাদেশের সাফল্যের প্রশংসা করতে হবে, এটা সত্য। কিন্তু একই সঙ্গে সচেতন থাকতে হবে যে, দেশটির ঠিক অপর পৃষ্ঠায় রয়েছে অসুস্থ গণতন্ত্রের চর্চা, যা তার সামগ্রিক উন্নয়ন চিত্রকে বদলে দিতে সময় নেবে না। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ১৯৭৫, ১৯৮২ ও ২০০৭ সাল মিলিয়ে মোট অন্তত তিনটি সামরিক অভ্যুত্থান প্রত্যক্ষ করেছে। ২০১১ সালে ক্ষমতাসীন দল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রথা বাতিল করার পর দেশটির গণতান্ত্রিক যাত্রা আরেকবার মুখ থুবড়ে পড়ে। সে সময় দেশের সবচেয়ে বড় বিরোধী দল ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন বয়কট করে।
এরপর থেকে বাংলাদেশে বিরোধী রাজনৈতিক দল প্রান্তিক হয়ে পড়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনা টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হন। অনুদান আত্মসাতের অভিযোগে দেশের প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। যদিও তিনি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ ক্ষমতাবলে জেলে না থেকে নিজবাসগৃহে শর্তসাপেক্ষে থাকছেন। বিরোধী দলের অনুপস্থিতি এবং সংসদীয় তদারকির অভাব সরকারের শাসনের মান তলানিতে নামিয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মতে, দুর্নীতি এখানে একটি গুরুতর সমস্যা। তাদের হিসাবে বাংলাদেশ সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে প্রধানতম।
সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সরকারের উত্তরোত্তর ক্র্যাকডাউনের কারণে চরমপন্থার হুমকি কিছুটা কমেছে বটে। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ প্রায় এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থীর বোঝা দেশের কাঁধ ন্যুব্জ করে দিচ্ছে। শিগগিরই তাদের ফেরানো যাবে, তেমন আশাও খুব একটা আছে বলে মনে হয় না। গত কয়েক বছর ধরে ভারতের আসামে এনআরসি (ন্যাশনাল রেজিস্ট্রি অব সিটিজেন) মামালার যে জিগির উঠেছে, তা-ও বাংলাদেশিদের ভেতরে এক রকম ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের যে অগ্রগতি হয়েছে, তার প্রশংসা তো করতেই হবে। কিন্তু রাজনীতির কথাও ভুলে গেলে চলবে না। কার্যকর বিরোধী দল না থাকলে গণতন্ত্র এসব সফলতাকে পাল্টে দিতে মোটেও সময় নেবে না। এমন পরিস্থিতি এড়াতে চাইলে বাংলাদেশের রাজনীতিকে গুরুত্ব সহকারে দেখার বিকল্প নেই।
লেখক : সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘাত গবেষণার অধ্যাপক
গালফনিউজ থেকে ভাষান্তর করেছেন মনযূরুল হক
ষাটের দশকের শুরুতে, যখন খুব ছোট বরিশালের আগৈলঝাড়ায় কানাই সাধুর আবির্ভাব ঘটেছিল। তার বাড়িতে মেলা বসে গিয়েছিল। তিনি স্বল্পবসনে ধ্যানমগ্ন থাকেন বেশির ভাগ সময়। মুখে কথা বলেন না। ইচ্ছা হলে খান, পরিমাণ অল্প। মুখরোচক, দামি খাবারে আগ্রহ নেই। বড় কৈ মাছ সাধু বাবার খুব পছন্দ একবার তিনি কাগজে কেবল ‘কৈ’ লেখাতেই প্রিয় ভক্তরা সেটা বুঝে যান। ভক্তরা বড় বড় তিনসনি-চারসনি কৈ রান্না করে নিয়ে হাজির হতে থাকে। এক ভক্ত গৈলা বাজার থেকে পাঁচসনি (পাঁচ বছর বয়সী) কৈ মাছ রান্না করে হাজির হন। আরও কয়েকজন ভক্তও কৈ মাছ নিয়ে আসেন। কিন্তু সাধু বাবা কারও রান্না ছুঁয়ে দেখলেন না। তিনি একটি কাগজে লিখে দিলেন ‘মাছ বাজার থেকে দরদাম করে কেনা হয়েছে।’ আরেকটি কাগজে লিখলেন ‘রান্নার সময় দুই বউ ঝগড়া করেছে।’ আরেকটিতে লিখলেন ‘ঘুষের টাকায় কেনা।’ যারা যে কৈ এনেছে, তারা বলল ঠিক ঠিক। কিন্তু সাধু বাবা জানলেন কেমন করে? এ এক মস্ত কেরামতি। সে রহস্য কেউ উন্মোচন করতে পারল না। বছর তিনেক কানাই সাধুর মেলা রমরমা ছিল। তারপর তিনি কোথায় গেলেন, কেউ জানে না। ঢাকায় ‘নূরা পাগলা’ জমিয়ে বসেছিলেন হাইকোর্টের মাজারে। গানের আসর বসত প্রতিদিন। গাঁজায় দম দিত কেউ কেউ, এমন অভিযোগ ছিল। আমার পরিচিত এক কিশোর বাসায় ফেরার সময় দেখতে চাইল কেন এত মানুষ সেখানে ভিড় করে। সে সচ্ছল পরিবারের সন্তান ছিল। মাজারে প্রবেশের সময় পকেটে অর্থ ছিল। হাতে ছিল ঘড়ি। গলায় সোনার চেইন। মাজারে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে দেখতে পেল একদল ভক্তের মাঝে। তার পাশে নাচছে, গাইছে এক দল। তার অস্বস্তি লাগছিল। ঘণ্টাখানেক পর যখন ছাড়া পেল, বাইরে এসে দেখল পরনের প্যান্ট ছাড়া কিছু নেই। হাইকোর্ট মাজারে নূরা পাগলার মেলাও বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।
স্বাধীনতার পরের কয়েকটি বছর জাসদ এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ছিল রমরমা। ১৯৭৫ সালে সিরাজুল আলম খান, আ স ম আবদুর রব, শাহজাহান সিরাজরা ‘সিপাহি বিপ্লব’ সংঘটিত করেই ফেললেন, নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ চলল সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে। তারপর কখনো জিয়াউর রহমান, কখনো এইচ এম এরশাদের সহযোগী হয়ে কেরামতি উধাও। এখনো সে সময়ের যেসব তরুণ জাসদে যোগ দিয়েছিল হতাশা-ক্ষোভ গোপন রাখতে পারে না। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলও এক সময়ে আসর জাঁকিয়ে বসেছিল। কিন্তু এখন হতোদ্যম হয়ে পড়েছে।
ড. রেজা কিবরিয়া ২০২২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বিবিসির সাংবাদিক আকবর হোসেনের সঙ্গে দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, র্যাবের ওপর আমেরিকান নিষেধাজ্ঞাই শেষ কথা নয়। আরও নিষেধাজ্ঞা আসছে বাংলাদেশের ওপর। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে বিদ্রোহের উসকানি দিয়ে কথা বলেছিলেন ওই সাক্ষাৎকারে। বলেছিলেন অধস্তনদের উচিত, অফিসারদের অন্যায় আদেশ না মানা। কোনটি ন্যায় আদেশ, কোনটি নয় সেটা বিচারের ভার তিনি সাধারণ সৈনিকদের নিজেদের হাতে নিতে বলেছিলেন। তিনি শেখ হাসিনার কঠোর সমালোচনা করলেও কেন তার বিরুদ্ধে সরকার কিছু করে না, এ প্রশ্নে তিনি বলেছিলেন তাকে ভয় পায় সরকার। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের কাছে ঋণ চাইলে রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘আমি ১১ বছর এ প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদে কাজ করেছি। বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীদের পরামর্শ দিয়েছি। আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ দেবে না।’ তিনি বিদ্রুপ ও উপহাস করে বলেছিলেন, আইএমএফে ‘বাংলাদেশের মন্ত্রীর মামা বসে নেই’, যিনি চাইলেই শেখ হাসিনার জন্য ঋণ মঞ্জুর করে দেবেন।
আইএমএফ অবশ্য, বাংলাদেশের জন্য ঋণ মঞ্জুর করেছে। কথায় বলে শকুনের দোয়ায় গরু মরে না।
নুরুল হক নুর ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে’ পরিচিতি পেয়েছিলেন। ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ আন্দোলন জনপ্রিয় হয়েছিল, কিন্তু তা ছিল বিভ্রান্তি সৃষ্টির পরিণতি। বাংলাদেশের গৌরবের মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র পর্যায়ে দরিদ্র-শ্রমজীবীদের অংশগ্রহণ ছিল ব্যাপক। আমি ত্রিপুরার পালাটানায় প্রথম ব্যাচে সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়েছি। আমি ছিলাম একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা তুলতে ব্যাংকে গেলে দেখি বেশির ভাগ এখনো দরিদ্র। তাদের উত্তরাধিকারদের জন্য চাকরি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংরক্ষণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। এ পদক্ষেপ ছিল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের স্বীকৃতি। এটা অনেকের গাত্রদাহের কারণ হয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মাত্র একজন ছাত্র মুক্তিযোদ্ধা কোটা সুবিধায় ভর্তি হয়েছিল, সেটাকেই ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বড় করে দেখানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছিলেন, কোটা সুবিধা পেতে হলে প্রথমে লিখিত ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। তারপর কোটা সুবিধা পেতে পারে এমন আবেদনকারীদের মধ্য থেকে প্রার্থী বাছাই করা হয়। তবে শর্ত হচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিভাগে এ জন্য আসন থাকতে হবে। কোটা সুবিধা উঠে যাওয়ায় সরকারি চাকরি, বিশেষ করে বিসিএসে নারীর সংখ্যা কমে গেছে, এমনটি শুনেছি। এর দায় কে নেবে?
গত কয়েকদিন ধরে নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ তুলছেন তারই দল গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া। তিনি বলেছেন, নুরুল হক নুর দেশ-বিদেশে চাঁদাবাজি করছে। দলের নামে অর্থ সংগ্রহ করছে। কমিটির সদস্যপদ দেওয়ার নামে ব্যবসা করছে। তিনি বলেছেন, নুরুল হক কোটা-আন্দোলনের সময় চাঁদাবাজি করেছে। এখন রাজনৈতিক দলের নামে চাঁদাবাজি করছে। কিন্তু আদায় করা অর্থের হিসাব দিচ্ছে না।
রেজা কিবরিয়ার কথা অনুযায়ী, চাঁদাবাজিতে আপত্তি নেই। কিন্তু তার কাছে হিসাব দিতে হবে। আর নুরুল হক নুর বলছে রেজা কিবরিয়াকে অনুগ্রহ-করুণা করে দলের প্রধান পদে বসানো হয়েছে। তার কাছে হিসাব দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমাদের এটাও জানা আছে, নুরুল হক নুর গণঅধিকার পরিষদ গঠনের সময় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে তার দলের প্রধানের পদ গ্রহণের অনুরোধ করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে, তারা একটি ‘মুখ’ চেয়েছিলেন সামনে রাখার মতো, কিন্তু এ মুখ যে দ্রুতই দুর্মুখে পরিণত হয়ে তাদের মুখোশ খুলে দেবে, সেটা বুঝতে পারেননি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ছাত্রছাত্রীরা নুরুল হক নুরের ডাকে রাজপথে নেমেছিলেন, উপাচার্যের বাসভবন ভাঙচুর করেছিলেন তারা এখন জবাব চাইতেই পারেন। অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরাও বলতে পারেন কেন অসত্য কথা বলেছিলেন? কেন এখন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে সাফাই গাইছেন তিনি? আন্দোলনের সময় অভিযোগ উঠেছিল নুরুল হকের পেছনে রয়েছে একাত্তরের ঘাতকদের দল জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির। সে সময় অনেকে এটাকে অপপ্রচার মনে করেছে। এখন দেখা যাচ্ছে, গণঅধিকার পরিষদ আসলেই গণঅধিকার বিরোধীদের দল। এ দলের আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব পরস্পরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ তুলছেন প্রকাশ্যে। আমরা ধরে নিচ্ছি উভয়ে সত্য কথা বলছেন। আইন যদি নিজস্ব গতিতে চলে প্রত্যাশা থাকবে, দ্রুত অভিযোগগুলোর নিষ্পত্তি হবে। আরও চাওয়া থাকবে মানবাধিকারের পক্ষে যারা দেশের ভেতরে এবং বাইরে সোচ্চার, তারা নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে তারই দলের প্রধান নেতা এবং বিশ্বব্যাংক আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক পদস্থ কর্মকর্তা রেজা কিবরিয়ার আনা অভিযোগকে ‘অসত্য-ভিত্তিহীন’ বলবেন না। বরং আমলে নেবেন। আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংক তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে অনেক যাচাই-বাছাই করে নিয়োগ দেয়। এখানে স্বজনপ্রীতির স্থান নেই। রেজা কিবরিয়া নিশ্চয়ই মিথ্যা অভিযোগ করেননি। বাংলাদেশের ‘পশ্চিমা দূতাবাসে’ গণঅধিকার পরিষদ নেতাদের কদর ছিল। বিভিন্ন সময়ে তাদের সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন রাষ্ট্রদূতরা। কেন নতুন এ দলটির এত সমাদর, সে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন সময়ে। রেজা কিবরিয়া এমনও বলেছেন মার্কিন প্রশাসন কী করবে আর কী করবে না, সে বিষয়ে তিনি আগাম ধারণা রাখেন। এমন ব্যক্তি নিশ্চয়ই মিথ্যাচার করবেন না। তার অভিযোগের সূত্র ধরে গণঅধিকার পরিষদের নেতাদের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগগুলো অনুসন্ধান করে আইনি পদক্ষেপ নিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাষ্ট্রদূতরা বলতেই পারেন। তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অনেক ইস্যুতে বিবৃতি দেন। রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুর পরস্পরের বিরুদ্ধে বিদেশি গোয়েন্দাদের উসকানি ও আর্থিক মদদে চলার অভিযোগ আনছেন। তারা একই ঘরে ছিলেন। ঘরের কথা তারা ভালোই জানেন। আমরা তা বিশ্বাস করে নিচ্ছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য ভিসানীতি প্রণয়ন করেছে। বাংলাদেশকে তারা পথে আনতে চাইছে। রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুরসহ এ দলের নেতাদের ওপর এর প্রয়োগ হতেই পারে, কী বলেন?
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
মানুষের রক্তে যখন প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পরিমাণে গ্লুকোজ থাকে, তখন শরীর চাহিদামতো ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না। অথবা এমনও হতে পারে, শরীরে উৎপাদিত ইনসুলিন যখন কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হয় না তখনই ডায়াবেটিস রোগ থাবা বসায় মানুষের শরীরে। এর ফলে, শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। আমাদের দেশ তো বটেই, বিশ্বে হু হু করে বাড়ছে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগী। আতঙ্কজনক তথ্য হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে। বিশ্বব্যাপী সম্ভাব্য এ সংখ্যা ১৩০ কোটি হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। মূলত মানুষের খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান, ব্যায়াম না করা এবং মদ্যপানের কারণেই এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
আমাদের দেশে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। ২০ বছর আগে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় ৭২ লাখ। বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ৩৫ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। এর চেয়েও বড় সমস্যা হচ্ছে আক্রান্ত ব্যক্তি জানেনই না, তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। যদিও এই রোগ প্রতিরোধযোগ্য এবং সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণযোগ্য। শুধু অসচেতনতার কারণেই ডায়াবেটিস জটিলতায় বাড়ছে অন্ধত্ব, হৃদরোগ, কিডনি রোগ, স্ট্রোক ও পঙ্গুত্বের মতো জটিল রোগের ঝুঁকি। বিশ্বখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী ‘ল্যানসেট’ এ বিষয়ে গবেষণাধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। দেশ রূপান্তরে শনিবার প্রকাশিত সংবাদ জানাচ্ছে বিশ্বের সব দেশেই ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়বে। তবে সবচেয়ে বেশি বাড়বে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে। ২০৪৫ সালের মধ্যেই ওই দেশগুলোর ৭৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মানুষের মৃত্যুর শীর্ষ ১০ কারণের একটি ডায়াবেটিস। এ ছাড়া ডায়াবেটিসের কারণে মানুষ শারীরিকভাবে সক্ষমতাও হারায়। বর্তমানে ৫২ কোটি ৯০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছেন বলে ধারণা করা হয়। গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, এই বিপুলসংখ্যক মানুষের ৯৫ শতাংশই টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এই সংখ্যা আগামী তিন দশকে বেড়ে ১৩০ কোটিতে দাঁড়াবে। ইনস্টিটিউট ফর হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের শীর্ষ গবেষক এবং এই গবেষণা প্রবন্ধের মূল লেখক লিয়েন অং দ্য গার্ডিয়ানকে এ বিষয়ে জানান, নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে বিশ্বজুড়ে মানুষের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন হচ্ছে। তিনি আরও বলেন শাকসবজি, ফলমূল ও সাধারণভাবে উৎপাদিত আমিষজাত খাদ্যের পরিবর্তে প্রক্রিয়াজাত খাবারের ওপর নির্ভরশীলতাই আসন্ন এই সংকটের জন্য মূলত দায়ী।
‘ল্যানসেট’-এর আরেক গবেষণায় বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো ধনী দেশেও সংখ্যালঘু তথা কৃষ্ণাঙ্গ, হিস্পানিক, এশীয়দের মধ্যে ডায়াবেটিসের হার দেড়গুণ বেশি। এজন্য মেডিকেল কলেজ অব উইসকনসিনের গবেষক ‘ক্রমবর্ধমান ডায়াবেটিস বৈষম্যকে’ দায়ী করেন। তিনি বলেছেন, বর্ণবাদী নীতির কারণে একটি বিশেষ শ্রেণির মানুষ পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর খাবার ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত।
আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা জরুরি। দৈনন্দিন জীবনযাপন পদ্ধতি, কোন কোন খাবার গ্রহণ করলে এই রোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে এবং এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর একজন রোগীকে কী ধরনের জীবনযাপন করতে হবে সেই সম্পর্কে দেশব্যাপী প্রচারণা দরকার। নির্দিষ্ট সময় পর, নিয়মিতভাবে রক্তের সুগার পরীক্ষা করা, শারীরিক ব্যায়াম ও নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন পদ্ধতিই একমাত্র এই রোগ থেকে মুক্ত থাকার উপায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং গণস্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে দেশব্যাপী এ বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা জরুরি। মানুষকে সচেতন করতে পারলে, এই রোগের থাবা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, কালক্ষেপণ না করে এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সাত বছর পর ভারতের মাটিতে অবতরণ পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে তারা গিয়েছিল সেখানে। তারপর এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে। টুর্নামেন্ট শুরুর এক সপ্তাহ আগে তারা পৌঁছালেন দেশটিতে। সেখানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হোটেলে।
বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বাবর আজমরা সেখানে পৌঁছানো মাত্রই উচ্ছ্বসিত জনতা ভিড় করেন। হায়দ্রবাদের বিমানবন্দরের বাইরে তাদের দেখে অনেকেই চিৎকার করে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন। বাবরের নাম উচ্চারণ করতও শোনা গেছে এসময়। পুলিশ উৎসুক জনতাকে আটকে রেখেছিল।
রাজনৈতিক বৈরি সম্পর্কের কারণে দুই দলের দেখা হয় না দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজে। বিশ্ব মাতানো ক্রিকেটার থাকলেও পাকিস্তানিরা খেলতে পারে না আইপিএলে। কারণ ঐ একটাই। তবে বৈশ্বিক বা মহাদেশীয় ইভেন্টে তাদের ঘিরে আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। সেটা দেখা গেছে এশিয়া কাপেও।
বিশ্বকাপ খেলতে আজ বাংলাদেশ উড়াল দিয়েছে ভারতে। সেই টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখে টাইগাররা। তামিম ইকবাল নেতৃত্ব ছাড়ার পর সাকিব আল হাসানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে অধিনায়কত্বের ভার। আর আজই জানা গেল, বিশ্বকাপের পর একদিনও তিনি অধিনায়কত্ব করবেন না।
গত ১১ আগস্ট তৃতীয় দফায় ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান। তখনই বলা হয়েছিল, সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপ ও ভারত বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
দেশের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এই বিশ্বকাপই শেষ। এরপর একদিনও (অধিনায়কত্ব) করবো না। যে কারণে আমি এশিয়া কাপের আগে নিতে চাইনি। এরপরও এটা না। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি হাসতে চাই, খেলতে চাই, পারফর্ম করতে চাই। এই একটা কারণে আমি করতে চাইনি।’
সাকিব যোগ করেন, ‘আর কোনে কারণ নেই। বেস্ট হয় যদি অধিনায়ক না থাকি। অধিনায়কত্ব কি আমার কোনো ভেল্যু এড করতেছে ক্যারিয়ারে এই স্টেজে এসে? আমি তো মনে করি না।’
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
বিশ্বকাপে তামিম ইকবালকে ওপেন থেকে সরিয়ে মিডল অর্ডারে ব্যাট করার প্রস্তাব দিয়ে ফোন করেছিলেন, তামিমের ভাষায় 'বোর্ডের টপ লেভেল' এবং 'ক্রিকেটের সাথে বেশ ইনভলভড' একজন।
তিনি তামিমকে বলেন, ''তুমি তো বিশ্বকাপে যাবা, তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলতে হবে। তুমি এক কাজ করো। তুমি প্রথম ম্যাচ খেলো না আফগানিস্তানের সঙ্গে।'
তিনি আবার বলেন, আচ্ছা তুমি যদি খেলোও, আমরা এমন একটা পরিকল্পনা করছি, তুমি যদি খেলোও, তাহলে নিচে ব্যাট করবে।''
তামিমের এমন বক্তব্যের পর প্রশ্ন উঠেছে, কেই সেই বোর্ড কর্মকর্তা? এক টিভি সাক্ষাৎকারে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'আমি এটা জানিনা।'
পরক্ষণেই তিনি বলেন, 'তবে যদি কেউ বলে থাকে, আমি সিউর তিনি অথোরাইজড পার্সন। আর এরকম কিছু বলে থাকলে আমি খারাপ কিছু বলেছে বলে আমি মনে করিনা। টিমের কথা চিন্তা করেই বলেছে। টিম কম্বিনেশন নিয়ে কথা বলে থাকলে দোষের কি আছে। আমার তো মনে হয় না দোষের কিছু আছে। নাকি এরকম কোনো প্রস্তাব দেয়া যাবে না। নাকি আপনি যা চাইবেন তাই করতে পারবেন?।'
বিশ্বমঞ্চে দেশের ক্রিকেটের দূত বলা যায় সাকিব আল হাসানকে। বর্ণিল এক ক্যারিয়ার গড়েছেন তিনি। তিন ফরম্যাটেই তিনি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। দেশের এই তারকা ক্রিকেটার নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপে যাচ্ছেন দলের অধিনায়ক হিসেবে। সেই টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই জানা গেল কবে তিনি অবসর নিচ্ছেন।
দেশের একটি ক্রীড়াভিত্তিক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের অবসরের সময় জানিয়েছেন। তার ইচ্ছে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর অবসর ঘোষণা করার। একইসঙ্গে তিন ফরম্যাটকে বিদায় জানাতে চান দেশের ক্রিকেটের এই তারা।
নেতৃত্ব ছাড়া ও অবসরের প্রসঙ্গ টেনে সাকিব বলেন, ‘আজকে এখন এই অবস্থায় বলছি, ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত ওয়ানডে খেলবো। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে টি-টোয়েন্টিকে বিদায় দেবো। টেস্টের অবসর শিগগিরই। তবে একেক ফরমেট একেক সময় ছাড়লেও আনুষ্ঠানিক অবসর ঘোষণা করবো ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর।’
অধিনায়কত্ব নিয়ে সাকিব বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপের আগে একাধিক সিরিজে বিশ্রামের কথা বলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে দলের বাইরে রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত এশিয়া কাপেও দলে ফেরানো হয়নি তাকে। যেহেতু সাকিবের নেতৃত্বে সেই আসরে খেলেছে বাংলাদেশ, তাই অনেকের ধারণা সাকিবের চাওয়াতেই দলের বাইরে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ।
তবে সাকিব এসব কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়ক ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দল পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলারও ছিল না! কারন পরের দিন সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকি রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা!'
দলের ভেতরের কথা ভালোভাবে না জেনেই মানুষ যেভাবে সমালোচনা করে সেটাকে হাস্যকর বলেছেন সাকিব। বাংলাদেশ অধিনায়ক সমালোচকদের মানসিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, 'মানুষের সাইলকোলজি এমন কেন! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!'
অধিনায়ক একা যে দল নির্বাচন করেন না সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন সাকিব। তিনি বলেন, 'রিয়াদ ভাইয়ের যে ডেডিকেশন ছিল তার দলের প্রতি যে অবদান ছিল। দলের হয়ে খেলার যে ইচ্ছে ছিল, সবকিছু সবাই দেখতে পেরেছে। আমার দায়িত্বতো পুরো দলটা নির্বাচন করার না। এমনটা হলে এশিয়া কাপের একদিন পরেই এনাউন্স করে দল দিয়ে দিতে পারতাম। এটা অনেক প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। অনেক বিষয় চিন্তা করতে হয়। অনেক কিছু চিন্তা করে দলটা গড়তে হয়।'
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।