
ওয়ালস্ট্রিটের নেকড়ে নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে সংগত কারণেই ওয়াল স্টিট জার্নাল নামের একদা রমরমা হালে কেবল অনলাইন দৈনিকটির খোঁজ নিতে হয়েছে। এ সময় কিছু ফাও জ্ঞান পেলাম। খবরের কাগজের পাঠক কমে গেছে। তারপরও যারা অবশিষ্ট আছেন তারা কে কোনটা পড়ছেন জেনে রাখা ভালো, সেটাই ব্লগ থেকে সরাসরি তুলে এনেছি:
দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল : যারা দেশ চালান তারা পড়েন।
দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট : যারা দেশ চালান বলে মনে করেন তারা পড়েন।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস : দেশ চালাবার দায়িত্ব তাদের পাওয়া উচিত বলে নিজেরা মনে করেন তারা পড়েন।
দ্য বোস্টন গ্লোব : যাদের পূর্বপুরুষ দেশ চালাবার মতো একটি মহান দায়িত্ব পালন করে গেছেন তারা পড়েন।
দ্য নিউ ইয়র্ক ডেইলি টাইমস : যতক্ষণ না আন্ডারগ্রাউন্ড রেলওয়েতে একটা সিট পাচ্ছেন, কে দেশ চালায় এ নিয়ে যাদের মাথাব্যথা নেই তারা পড়েন।
দ্য সানফ্রান্সিসকো ক্রোনিকল : কারা দেশ চালাচ্ছেন এ সম্পর্কে যাদের ধারণা নেই, তবে যারাই চালান তাদের যারা বিরোধিতা করেন তারা পড়েন।
দ্য মায়ামি হেরাল্ড : যারা অন্যদেশ চালান কিন্তু বেসবল খেলার ফলটা যাদের জানতেই হবে তারা পড়েন।
দ্য নাশনাল এনকোয়ারার : সুপার মার্কেটের কিউতে আটকা পড়ে গেলে আটকেপড়া মানুষেরা পড়েন।
আমরা বাংলাদেশের কোন পত্রিকা কেন পড়ি বা কিনি তা কি জানি? একটা গবেষণা হওয়া দরকার। ঢাকা স্টেডিয়ামের পূর্ব গ্যালারিতে সস্তার টিকিটে কড়া রোদে ক্রিকেট ম্যাচ দেখার সময় মাথাকে রোদের হাত থেকে বাঁচাতে একটি সংবাদপত্র কিনেছিলাম। পয়সার কেনা কাগজ, ছেড়ে আসিনি। বাসায় এনে মনোযোগ দিয়ে পাত্র চাই বিজ্ঞাপনের সবকটিই পড়ে নিজেকে কোনো একটার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে চেষ্টা করেছি। পারিনি।
পাইস হোটেলের তরজার বেড়া সজ্জার কাজে ব্যবহৃত একদা বিখ্যাত চলচ্চিত্র সাপ্তাহিক চিত্রালীর বেশ কটি পাতা ঘাড় ঘুরিয়ে পড়েছিলাম। নায়ক-নায়িকাদের খবর পাঠক বেশি ‘খায়’ তাই দৈনিকগুলোই সেসব খবর হরণ করে সিনেমা পত্রিকাগুলোকে হটিয়ে দিয়েছে।
আমার বাড়িতে একজন অতিথি এলেন, রাত কাটিয়ে পরদিন সন্ধ্যেবেলার উড়োজাহাজে দেশ ছাড়বেন। সুটকেস খুলে নামডাকঅলা সংবাদপত্রের সাহিত্য পাতায় মোড়ানো স্পঞ্জের চপ্পলজোড়া বের করলেন, আমি সংবাদপত্রের পরিত্যক্ত পাতা ফেলে দেওয়ার জন্য হাতে নিয়েই থ হয়ে যাই। তাতে আমার সদ্য প্রকশিত বড় মাপের একটি গদ্য ছাপা হয়েছে, সেই লেখাটি তার পবিত্র চপ্পল জোড়া পেঁচিয়ে আনার কাজে ভালো সার্ভিস দিয়েছে। আমি কি অপমানিত বোধ করে আর কখনো লিখব না এমন প্রতিজ্ঞা করে বসেছি? করিনি। কবি শামসুর রাহমান বাঁচিয়ে দিয়েছেন। তিনি তখন জীবিত। দেখি, আমার লেখার মাথায় শামসুর রাহমানের কবিতা। চপ্পলের সুরক্ষায় (নাকি সুটকেসের অন্যান্য কাপড়ের) এ কি অনাচার! ভাগ্যিস তিনি ছিলেন!
অবজেক্টিভ জার্নালিজম!
একজন জবরদস্ত কাউন্ট মৃত্যুবরণ করলেন। তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানটি কাভার করার জন্য বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বিশিষ্ট প্রতিবেদকরা জমায়েত হলেন। বিলেতে অবস্থানরত কয়েকজন বাংলাদেশি প্রতিবেদকও সেখানে হাজির ছিলেন, বাংলাদেশ থেকেও সাবেক প্রভুরাজ্যে কেউ কেউ গিয়ে হাজির হয়ে থাকতে পারেন। ফরাসি, জার্মানি, স্পেনীয়, পর্তুগিজ, সেøাভোনিয়ান এবং কাজাখও কয়েকজন। ইংরেজি লিখতে পড়তে এবং বলতে পারারা তো বটেই।
দায়িত্ব নিলেন অঞ্চলের সেরা ফেয়ারওয়েল আন্ডারটেইকার। সার্ভিস চলছে। এ সময়ই ঘটনাটা ঘটল। কফিনটা নড়ছে, ভেতরে কেমন শব্দও হচ্ছে। খতমে ইউনুস পড়তে পড়তে বুকে তিন দফা ফুৎকার দিয়ে আমাদের ভাষাভাষী প্রতিবেদকরাও এগোলেন। কফিনের ডালা খোলা হলো। নড়েচড়ে উঠল মৃতদেহ। দেখা গেল কাউন্ট মরেননি।
দ্রুত তাকে এয়ারলিফট করে সবচেয়ে নামি দামি হাসপাতালের ছাদে নামানো হলো। ছাদের ওপর আজকাল হেলিপ্যাডও থাকে। সেখান থেকে পুশ ট্রলিতে যথাস্থানে। এরপর কাউন্ট হাসপাতালেই পটল তুললেন না নীল বটিকা ভায়াগ্রা আবিষ্কার হওয়া পর্যন্ত জীবিত ছিলেন জানা যায়নি।
তবে ল্যাজারাসের মতো যে কর্মটি করেছেন মৃত্যু থেকে উত্থান, প্রায় অলৌকিক এই ঘটনা বেশ ভালো কাভারেজ পেয়েছে। কোনো পত্রিকায় ঘটনাটির শিরোনাম হয়েছে ‘অলৌকিক পুনরুত্থান’, কোনোটার শিরোনাম ‘কাউন্টের তেলেসমাতি’। কোনো পত্রিকা এ ঘটনার মধ্য দিয়ে স্রষ্টার বিশালত্ব আবিষ্কার করেছেন। কাউন্টের নড়ে ওঠার যে নিউজভ্যালু আছে এতে কোনো সন্দেহ নেই, কোনো বিতর্কও নেই। কিন্তু একজন সাংবাদিক বিলেতে থাকা না বাংলাদেশ থেকে যাওয়া শনাক্ত করা হয়নি, প্রতিবেদনের শিরোনাম করেছেন ‘কাউন্ট তাঁর শেষকৃত্যের বারোটা বাজিয়েছেন।’ এটাও পাঠক ধরা হেড লাইন। ভেতরের খবরটার সারমর্ম হচ্ছে এভাবে হঠাৎ করে জীবিত হয়ে কাউন্ট এত চমৎকার একটা শেষকৃত্যের আয়োজন একেবারে নষ্ট করে দিয়েছেন।
এই সংবাদিকই কি অবজেক্টিভ সাংবাদিকতারই প্রতিভূ?
পত্রিকা তোষণ ও সরকারের বিজ্ঞাপনী ব্যয়
১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩ অবিভক্ত বংলার সংসদে (বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি) সৈয়দ আবদুল মজিদ সরকারের প্রচারণা দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর কাছে তারকাচিহ্নিত প্রশ্ন রাখলেন :
ক. কলকাতা থেকে প্রকাশিত কোন কোন পত্রিকায় সাধারণত বাংলা সরকারের বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়ে থাকে?
খ. দৈনিক আজাদ, নয়াযুগ, অমৃতবাজার পত্রিকা, আনন্দবাজার ও ডেইলি স্টেটসম্যান পত্রিকায় সরকারি বিজ্ঞাপনের দর কী?
গ. ১ ডিসেম্বর ১৯৪১ থেকে ৩১ আগস্ট ১৯৪২ এই ৯ মাসে এই পাঁচটি পত্রিকা সরকারের কাছ থেকে বিজ্ঞাপন ছাপা বাবদ মোট কত টাকা করে পেয়েছে?
ঘ. এই পত্রিকাগুলোর প্রচার সংখ্যা কত?
মাননীয় এ কে ফজলুল হক দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী। তিনি প্রশ্নের জবাবে বললেন,
ক. কলকাতা থেকে প্রকাশিত সব শীর্ষ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়ে থাকে।
খ. দৈনিক আজাদ প্রতি কলাম ইঞ্চি তিন টাকা, নয়াযুগ অমৃতবাজার পত্রিকা ও আনন্দবাজার ছয় টাকা, ডেইলি স্টেটসম্যান বারো টাকা।
গ. মাননীয় সদস্য যেভাবে চেয়েছেন সেভাবে জবাব দেওয়া যাবে, কিন্তু সময় লাগবে। বরং ১৯৪১-৪২ অর্থবছরে এই পত্রিকাগুলোকে কত দেওয়া হয়েছে তার হিসাব হচ্ছে :
দৈনিক আজাদ ৬,৬৩৮ টাকা; নয়াযুগ ৩,২৫৭ টাকা; অমৃতবাজার পত্রিকা ৮,৬১৫ টাকা; আনন্দবাজার ৫,০১৬ টাকা; ডেইলি স্টেটসম্যান ১১,২৪৩ টাকা।
ঘ. পত্রিকার প্রচারসংখ্যার প্রশ্নে আমি পত্রিকার ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে কথা বলব। তাদের যদি আপত্তি না থাকে, তাহলে প্রচারসংখ্যা মাননীয় সদস্যদের জানিয়ে দেওয়া যাবে।
সৈয়দ আবদুল মজিদ জিজ্ঞেস করলেন, দৈনিক আজাদের বেলায় বিজ্ঞাপনের রেট নয়াযুগের চেয়ে কম হওয়ার কারণ কী? কেন এমন বৈষম্যমূলক আচরণ?
মন্ত্রী বললেন, ব্যাপারটা আমারও চোখে পড়েছে। আমি খবর নিয়ে মাননীয় সদস্যকে পরে জানাব।
খান বাহাদুর মোহাম্মদ আলীর প্রশ্ন : নয়াযুগ কবে থেকে প্রকাশ হচ্ছে?
মন্ত্রী বললেন, সেপ্টেম্বর ১৯৪১।
মোহাম্মদ আলী বললেন, তার মানে ছয় মাসেরও কম সময়ে ৩,২৫৭ টাকা?
মন্ত্রী বললেন, এটা প্রথমে সাপ্তাহিক ছিল, পরে দৈনিক হয়েছে।
মোহাম্মদ আলী বললেন, নয়াযুগ ছয় মাসে পেয়েছে ৩,২৫৭ টাকা আর ৬,৬৩৮ টাকা আজাদ পেয়েছে এক বছরের জন্য নয়াযুগের রেট ইঞ্চিপ্রতি ছয় টাকা আর আজাদের বেলায় তিন টাকা।
মন্ত্রী একে ফজলুল হক বললেন, রেট কেন বেশি আমি কারণটা জানতে চেষ্টা করব।
ডাক্তার নলিনাক্ষ সান্যাল বললেন, কারণ নয়াযুগ অধিক মর্যাদাসম্পন্ন দৈনিক পত্রিকা।
কে নুরুদ্দিন জিজ্ঞেস করলেন, এটা কি আধাসরকারি পত্রিকা, না সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত পত্রিকা?
মন্ত্রী বললেন, এটা স্বাধীন মানে আজাদ।
সদস্য জিজ্ঞেস করলেন, এটা কি চিফ মিনিস্টারের পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে? তিনি কি পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা এবং এখনো এর সঙ্গে জড়িত?
নলিনাক্ষ সান্যাল বললেন, পত্রিকাটি প্রতিষ্ঠা করেছেন এ কে ফজলুল হক, চিফ মিনিস্টার নন।
এমএএইচ ইস্পাহানি প্রশ্ন রাখলেন, মাননীয় মন্ত্রী কি বলবেন, এ কে ফজলুল হক সাহেব কি এই পত্রিকার সঙ্গে আর্থিকভাবে বা অন্য কোনোভাবে জড়িত রয়েছেন?
মুখ্যমন্ত্রী এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রচারণা মন্ত্রী এ কে ফজলুল হক বললেন, তার নিজের টাকাও নেই এবং পত্রিকা চালাতে টাকা-পয়সাও দিচ্ছেন না।
ষাট বছর আগে পত্রিকার সার্কুলেশন
২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৪২। বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির সদস্য কে. নুরুদ্দিনের প্রশ্নের জবাবে প্রচারণা দপ্তরের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী ও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী একে ফজলুল হক বাংলা সরকার যে সব পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয় তার নাম ও প্রচারসংখ্যা হাউজকে জানালেন :
পত্রিকার নাম ও প্রচার সংখ্যা
১. স্টেটসম্যান ৫০,০০০; ২. স্টার অব ইন্ডিয়া ১১,০০০; ৩. অমৃতবাজার পত্রিকা ৩০,৫৪৫; ৪. হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড ২৫,০০০; ৫. অ্যাডভান্স ২৬,০০০; ৬. ক্যালকাটা এক্সচেঞ্জ গেজেট ১,৬০০; ৭. আনন্দবাজার পত্রিকা ৬৫,৬৭৯; ৮. আজাদ ১৯,০০০; ৯. নয়াযুগ ৭,০০০; ১০. যুগান্তর ৩২,৩৮৮; ১১. ভারত ১০,০০০; ১২. আমর-ই-জাদিদ ২,০০০; ১৩. বিশ্বচিত্র ২০,০০০; ১৪. লোকমান্য ১,০০০; ১৫. রোজানা হিন্দ ২,৩০০
বিতর্ক জমে ওঠে নয়াযুগ নিয়ে। প্রচার সংখ্যা ৭০০০ হলেও সরকারি বিজ্ঞাপন বেশি পায় নয়াযুগ। আবদুল লতিফ বিশ্বাস জিজ্ঞেস করলেন:
একে ফজলুল হকই কি এ পত্রিকার মালিক নন?
স্পিকার আর এগোতে দিলেন না। বললেন, এ প্রশ্ন অবান্তর
(বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির প্রসিডিংস থেকে নেওয়া)
লেখকঃ কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক
শিল্পোন্নত দেশগুলোর সংগঠন জি-৭ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৫ সালে। শুরুতে ব্রিকস অর্থনৈতিক জোট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও ধীরে ধীরে এটি বিশ্ব রাজনৈতিক মঞ্চে আত্মপ্রকাশ করতে চাচ্ছে, এমনটাই আশঙ্কা অনেক পশ্চিমা বিশ্লেষকের। অন্যদিকে পশ্চিমাবিরোধী অনেকেই ভাবছেন ব্রিকস হবে বিশ্ব অর্থনীতির ‘গেমচেঞ্জার’। গোল্ডম্যান স্যাক্সের অর্থনীতিবিদ জিম ওনিল ২০০১ সালে প্রথম ব্রিকসের ধারণা নিয়ে আসেন। ২০০৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা বাদে ব্রিকসভুক্ত চারটি দেশ প্রথমবারের মতো একত্র হয়। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে এই জোটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিশ্বব্যাংকের মডেলকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য ব্রিকস ২০১৪ সালে ‘দি নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক’ তৈরি করে। করোনার মধ্যেই দি নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে শুরু করে এবং এই সময়ে মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উরুগুয়ে ও বাংলাদেশ এর সদস্যপদ গ্রহণ করে।
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে ব্রিকস দেশগুলো সম্মিলিতভাবে বর্তমান বিশ্বের অর্থনৈতিক মঞ্চে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। এই দেশগুলোর ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে সামগ্রিক বৈশ্বিক জিডিপির ৩১.৫ শতাংশের, বিশ্ববাণিজ্যের ১৬ শতাংশের অংশীদার। প্রাকৃতিক সম্পদের দিক দিয়ে ব্রিকস দেশগুলো সমৃদ্ধ, তারা বিশ্বের তেলের ২৬ শতাংশ, স্টিল তৈরির জন্য ৫০ শতাংশ আকরিক লৌহ, কৃষিপণ্যের মধ্যে ৪০ শতাংশ ভুট্টা, ৪৬ শতাংশ গমের উৎপাদন করে। অন্যদিকে এই দেশগুলোই বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, যেখানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪২ শতাংশ বসবাস করে। আসছে আগস্টে ব্রিকসের ১৫তম সম্মেলন যা দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সেখানে ব্রিকস জোটে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হতে পারে। এতে অন্য কিছু উন্নয়নশীল দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশের ব্রিকস সদস্য হওয়ার সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছে।
ব্রিকসের ধারণার পর ২০০৫ সালে গোল্ডম্যান স্যাকস উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে নেক্সট ইলেভেন তালিকা প্রকাশ করে সেই তালিকায় মিসর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মেক্সিকো, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভিয়েতনামের পাশাপাশি বাংলাদেশও স্থান পায়। অন্যদিকে ফরাসি আর্থিক ও বীমা প্রতিষ্ঠান কোফেস ২০১৪ নতুন ১০টি সম্ভাবনাময় উন্নয়নশীল দেশের নাম প্রকাশ করে যার মধ্যে রয়েছে পেরু, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, কলম্বিয়া, শ্রীলঙ্কা, কেনিয়া, তানজানিয়া, জাম্বিয়া, বাংলাদেশ ও ইথিওপিয়া। অনেকে এভাবে তালিকা প্রস্তুত ও প্রকাশ করে উন্নয়নের এই সম্ভাবনার গল্পের মধ্যে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর এক ধরনের ব্যবসায়িক ফন্দি খুঁজে পান। কারণ ইতিমধ্যে সম্ভাবনার গল্প অনেক দেশের ক্ষেত্রে মিথ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে ব্রিকস নিয়ে যে হাইপ তৈরি হয়েছে তার সঙ্গে বাস্তবতার মিল কতটুকু? মূলত এই ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী অনেক যদি ও কিন্তুর ওপর নির্ভরশীল।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দেখিয়েছে পশ্চিমা অর্থনীতি কতটা শক্তিশালী ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এখনো পশ্চিমা অর্থনীতির যেকোনো ধরনের ‘শক’ বিশ্ব অর্থনীতিকেই দারুণভাবে প্রভাবিত করে। পশ্চিমা অর্থনীতির বড় শক্তির জায়গা হচ্ছে তাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা। আবার প্রয়োজনের সময় কোনো প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণও করছে তারা এই মুহূর্তে যেমনটা ঘটছে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের ক্ষেত্রে। পশ্চিমা অর্থনীতির শক্তিশালী ভিত্তির আরেকটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী তাদের মিত্রদের সরব উপস্থিতি। এমন বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিকস পশ্চিমা অর্থনীতিকে চ্যালেঞ্জ জানাবে এমন ধারণার ভিত্তি কতটুকু বাস্তব তা বুঝতে হয়তো আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
তবে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিকসের কিছু প্রাসঙ্গিকতা তৈরি হয়েছে। কারণ এই যুদ্ধে পশ্চিমাদের প্রভাবের কারণে বাজার অর্থনীতির প্রচলিত রীতিনীতির চর্চার ক্ষেত্রে বেশ কিছু ব্যত্যয় তৈরি হয়েছে। আমরা জানি বাজার অর্থনীতিতে চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে অর্থনীতির গতিপথ নির্ধারিত হয় কিন্তু পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে সেই নীতিতে যে ছেদ পড়েছে সেখানেই হয়তো ব্রিকসের কিছুটা স্পেস তৈরি হয়েছে। কারণ ইরান ও উত্তর কোরিয়া থেকে রাশিয়ার অর্থনীতি বিশ্বব্যবস্থার সঙ্গে অনেক বেশি সম্পৃক্ত। অন্যদিকে ভবিষ্যতের পলিটিক্যাল ইকোনমিতে ব্রিকস দেশগুলোর অনেকেই নিজেকে পশ্চিমা প্রতিদ্বন্দ্বিতার রাশিয়ার জায়গায় দেখতে পাচ্ছে, ব্রিকস দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞায়ও অংশগ্রহণ করেনি। মনে হচ্ছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিকস দেশগুলোকে তাদের নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়ার একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। আসছে সম্মেলনে ব্রিকস নতুন একটি আন্তর্জাতিক বিনিময় মুদ্রা প্রচলন নিয়ে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে। অনেকে এই প্রক্রিয়াকে ডি-ডলারাইজেশন প্রক্রিয়া বলছেন। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের সময়ে ডলার ব্যবস্থাপনা অনেক দেশকেই ভুগিয়েছে। আবার সুইফট ব্যবস্থায় নিষেধাজ্ঞা অন্য দেশগুলোকে বিকল্প মুদ্রা ব্যবহারের জন্য উদ্বুদ্ধ করছে। যা মার্কিন ডলারের জন্য কিছুটা চাপ তৈরি করছে। এটা একদিকে ব্রিকসের শক্তি ও সামর্থ্য যেমন বাড়াচ্ছে তেমনি গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু ধরে রাখা যাবে, ব্রিকসের প্রধান প্রধান সদস্য রাষ্ট্রগুলো কতটুকু নিজেদের স্বার্থ-কেন্দ্রিকতার ঊর্ধ্বে উঠতে পারবে? ব্রিকসের এখন পর্যন্ত একমাত্র স্থিতিশীল দেশ চীন। চীনের অর্থনীতি ২০১০ সালে ৬ ট্রিলিয়ন থেকে ২০২১ সালে ১৮ ট্রিলিয়ন হয়েছে। এর পরেই আছে ভারত ১.৭ ট্রিলিয়ন থেকে ৩.১ ট্রিলিয়ন হয়েছে, অন্য দেশগুলোর অর্থনীতি সেভাবে গতিশীল না। সামগ্রিকভাবে ব্রিকস দেশগুলোর শক্তির জায়গা তার বিশাল ভোক্তা শ্রেণি কিন্তু প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও নতুন উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে দেশগুলোর সীমাবদ্ধতা আছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও উদ্ভাবন ছাড়া বিশ্ব অর্থনীতিতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব।
ব্রিকসের অন্তর্ভুক্তি এবং বিকল্প বিনিময় মুদ্রার উদ্যোগ হয়তো বাংলাদেশ বা অন্য দেশগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক লেনদেনে নতুন সুযোগ তৈরি করবে কিন্তু সদস্য দেশগুলোর মধ্যে প্রযুক্তি হস্তান্তর, প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের সংস্থান ও সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দেশগুলোর উৎপাদিত পণ্যের বাজার নিশ্চিত করতে পারবে কিনা তার ওপর এই জোটের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে। অন্যদিকে ব্রিকসের প্রধান প্রধান দেশগুলো বিশ্বরাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা চালাতে পারে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশসহ নতুন যুক্ত হতে যাওয়া দেশগুলোকে শুরু থেকেই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। পশ্চিমা অর্থনীতির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্বাভাবিক তথাপি ইন্দো-প্যাসিফিকসহ অন্যান্য জোটের সঙ্গে গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্ক ব্রিকসের সম্ভাবনাকে আরও বাড়িতে দিতে পারে। আর সেটাই হতে পারে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক ‘ব্রেকথ্রু’।
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
রাজনীতির সঙ্গে কূটনীতিও উথাল-পাথাল। আউলা-ঝাউলা অবস্থা সবখানে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, ক্ষমতাহীন বিরোধী দল বিএনপি, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি থেকে জামায়াত-হেফাজত সব দলই মাথা দিয়েছে এ উত্তাল কূটনীতিতে। ইনু-মেনন থেকে নূর-হিরো আলমও বাদ নেই। বাংলাদেশের স্থানিক রাজনীতি আর বৈশ্বিক কূটনীতির স্বভাব-বৈশিষ্ট্য অনেকটা সমান্তরালে চলে এসেছে। শত্রু-মিত্রের সংজ্ঞা বদলে গেছে। সকালের বন্ধু বিকেলে শত্রু হয়ে যাচ্ছে। সময়ে সময়ে বদলে যাওয়া কথা ও পরিস্থিতির পক্ষে যুক্তিরও অভাব থাকছে না। ‘স্নায়ুযুদ্ধের সময় সব জায়েজ’ পুরনো তত্ত্বের নতুন সংস্করণে র’, মোসাদ, আইএসআই, সিআইএ মিলিয়ে বাজিকরী কাণ্ডকারখানা। যে যেখানে পারছেন মাথা ঢুকিয়ে সুবিধা হাতাচ্ছেন। কে যে কাকে ফাঁসাচ্ছেন। নিজের বেলায় দাওয়াত, অন্যের ক্ষেত্রে ষড়যন্ত্রের অপবাদ।
বছর কয়েক আগেও নির্বাচন ঘনিয়ে এলে নেতাদের পীর-মুর্শিদ, মাজার-দরগায় যাতায়াত বাড়ানোর প্রবণতা ছিল। মাঝেমধ্যে মসজিদে ছুটে যাওয়া, কবর জিয়ারতসহ মানুষের সঙ্গে মোলাকাত, হাসিমুখে গাল কাত করার ক্রিয়াকলাপও চলত। মানুষ বুঝে নিত নির্বাচন আসন্ন। এবার সেখানেও ভিন্নতা। পীর-মুর্শিদ, মাজার-দরগা, মসজিদ-কবরের বদলে বিভিন্ন দলের নেতারা ছুটছেন বিভিন্ন দূতাবাসে। বিদেশি মান্যবরদের সিডিউল না পেলেও তাদের দুয়ারে-উঠানে ঘুরছেন। সাক্ষাৎ পেলে মোলাকাত করতে ধরলে হাত আর ছাড়েন না। সম্ভব হলে সেটার ছবি ধারণ করে নানান জায়গায় তা দেখিয়ে নিজের ওজন বাড়ানোর চেষ্টা।
এই আজব অবস্থার মধ্যে দেশীয় ঘটনা বা ইস্যুর চেয়ে আন্তর্জাতিক বিষয়াদির ভ্যালু বাড়বাড়ন্ত। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বা চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং বাংলাদেশ নিয়ে কী ভাবছেন সেই খবর রচনাও বাদ যাচ্ছে না। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকেও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। মুখে একটু আওয়াজ দিলেই হয়ে যাচ্ছে। একদা নকল মালামালের মোকাম কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরার প্রোডাক্টের মতো রমরমা অবস্থা। বাজারে ছাড়লেই মুড়ি-মুড়কির মতো চলতে থাকে। জিঞ্জিরার সেই নকল মালের অপবাদ ঘুচে ঘুরে দাঁড়িয়েছে যদিও। তবে যখন সেই অপবাদ ছিল তখন মালে ভেজাল-নকল জানার পরও এর খরিদদারে কমতি হতো না। সেই অবস্থা এখন দেশে রাজনীতির ইস্যুর বাজারের। হোক তা স্থানিক বা আন্তর্জাতিক। বাংলাদেশকে জড়িয়ে বা প্রাসঙ্গিক রেখে ছাড়তে পারলে সুপার-ডুপার হিট। মানুষ গিলবেই। কম-বেশি বাজার পেয়েছে সেন্টমার্টিন ইস্যুও। এ নিয়ে রাজনীতি মোটামুটি জমেছে। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সেন্টমার্টিন নিতে চায় মর্মে তুড়িটা প্রথম মেরেছিলেন এ সরকারের রাজনৈতিক মিত্র, ওয়াকার্স পার্টির নেতা সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। সংসদে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ‘রেজিম চেঞ্জের’ কৌশলের অংশ উল্লেখ করে বলেন, তারা সেন্টমার্টিন চায়, কোয়াডে বাংলাদেশকে চায়। বর্তমান সরকারকে হটানোর লক্ষ্যে তারা সব কিছু করছে।
মেননের কথায় তেমন জমেনি। পরে প্রধানমন্ত্রীর মুখ দিয়ে প্রকাশ পাওয়ায় এর ভ্যালু বেড়ে যায়। তিনি বলেন, ‘বিএনপি গ্যাস বিক্রি করার মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। এখন তারা দেশ বিক্রি করবে, নাকি সেন্টমার্টিন দ্বীপ বিক্রি করার মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়? আমি দেশের কোনো সম্পদ কারও কাছে বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে চাই না। সেন্টমার্টিন দ্বীপ বা আমাদের দেশ কাউকে লিজ দিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চাইলে, আমাদের কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু আমার দ্বারা সেটা হবে না’।
বর্তমান নাজুক সময়ে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধকালীন বিভক্ত পৃথিবীর স্নায়ুর উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। সেখানে সেন্টমার্টিনও সাবজেক্ট। স্থানীয়রা একে ডাকে নারিকেল জিঞ্জিরা নামে। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিনে হাজার দশেক মানুষের বাস। টেকনাফ উপজেলা ভূমি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের আয়তন ১ হাজার ৯৭৭ একর।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেন্টমার্টিন দ্বীপে নেভাল বেস স্থাপন করবে বলে মিডিয়ায় প্রচার আছে। যদিও বাংলাদেশের মার্কিন দূতাবাস তা অস্বীকার করেছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপ আদৌ নৌঘাঁটি স্থাপন করার উপযোগী কি না তা নিয়েও কথা উঠেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব এবং পশ্চিম উপকূল জুড়ে ৪০টিরও বেশি নৌঘাঁটি আছে। সেন্টমার্টিনের আয়তন ও অবস্থান সেগুলোর ধারেকাছেও নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌঘাঁটিতে যে পরিমাণ ভূমির প্রয়োজন হয় এবং জনবল সার্বক্ষণিক কাজ করে তার তুলনায় সেন্টমার্টিনের ১৯৭৭ একরের প্রবাল দ্বীপ নিতান্তই অপ্রতুল।
এরপরও সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে রাজনীতির ভূত কাঁধে চেপেছে কি না তা আগামী দিনগুলোতে বোঝা যাবে। বছর কয়েক আগে রাজনীতির মাঠে বিএনপির তোলা আওয়াজ ছিল, বাংলাদেশের ফেনী পর্যন্ত ভারত নিয়ে যাবে। সেই আওয়াজও মাঠে মারা পড়েছিল। এখন সে রকম আওয়াজের আইটেম কক্সবাজারের নারিকেল জিঞ্জিরা। কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরা পর্যন্ত আসেনি। যুক্তি তত্ত্ব দিয়ে ছাড়তে পারলে বাজার পেতেও পারে।
ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশের উচ্চতা অনেক বেড়েছে সত্য। তাই বলে দেশকে সেই জিঞ্জিরা পর্যায়ে নামিয়ে আনা কতটা শোভন, প্রশ্ন থেকে যায়। যেখানে বাংলাদেশ এখন বিশ্ব কূটনীতির শরিক, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে চীন, পাকিস্তানসহ আশপাশ উত্তাল। সেখানে আমরা দেশকে টেনে নিচ্ছি কোন তলানিতে। মার্কিন ও ভারতীয় কর্মকর্তারা মোদির এ সফরকে উচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করেছেন, যা মার্কিন-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য উন্নতির পরিবেশ তৈরি করেছে। বাংলাদেশের কাছেও চীন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। চাইনিজ মাল জিঞ্জিরার মালের মতো কম টিকলেও এ অঞ্চলে ফ্যাক্টর। যুক্তরাষ্ট্র এখন ভারতকে চীনের সঙ্গে মোকাবিলা করতে একটি ভূ-রাজনৈতিক প্রয়োজনের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। চীনকে নিয়ন্ত্রণে নিতে যুক্তরাষ্ট্র চেষ্টার কমতি করছে না। কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়, সবার সঙ্গে বন্ধুত্বের কূটনৈতিক তত্ত্বে বাংলাদেশ আছে বা থাকতে চায় সবদিকেই। এ চেষ্টা করতে গিয়ে কখনো কখনো তালগোল পেকে যাচ্ছে। চীনও বাংলাদেশকে পাশে রাখতে চায়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের উন্নয়নের বন্ধুত্ব। আবার বিএনপিকেও এক দম খারিজ করে দেয় না। পাত্তা দেয় দুদিকেই।
চীন তার কূটনীতির চিকন পথে ঢাকায় দূতাবাসের মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ফল, স্ন্যাক্স ও বিস্কুট উপহার পাঠিয়েছে। এর আগে ২০২০ সালে খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে ঢাকার চীনা দূতাবাস শুভেচ্ছা জানিয়ে উপহার সামগ্রী পাঠিয়েছিল। ওই সময়ে উপহার সামগ্রী দেওয়ার পাশাপাশি দূতাবাস কর্মকর্তারা বিএনপি চেয়ারপারসনের আরোগ্যও কামনা করেন। খালেদা জিয়াকে উপহার পাঠিয়ে নুতন কী বাতা দিল চীন? এ প্রশ্ন ঘুরছে বিশেষ বিশেষ জায়গায়। সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে উপহার পাঠানো যায় কি না এ প্রশ্নও রয়েছে। এ প্রশ্নের জবাবও আছে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চীনের সোনার নৌকা উপহার পাঠানোর মধ্যে। বাস্তবতা হচ্ছে, প্রোডাক্ট ঠুনকো হলেও বাংলাদেশের জন্য চীন খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে। জ্ঞান অর্জনের জন্যও চীন যেতে হয়। তা তারা আমাদের মহান স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার ঐতিহাসিক সত্যতার পরও। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্বীকৃতি না দিলেও। জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের বদান্যতায় সদস্যপদ লাভ করে প্রথম যে ভেটো দেয় তার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ যাতে সদস্যপদ না পায়। এরপর ১৯৭৩ সালে আরেকবার ভেটো দিয়ে জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ রুখে দেয় চীন।
১৯৭৪ সালে ভারত থেকে বন্দি পাকিস্তানি সেনারা ও বিশেষ করে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী ফিরে যাওয়ার পরই কেবল চীন জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ প্রাপ্তিতে ভেটো দেওয়া থেকে বিরত থাকে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ৩১ আগস্ট চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। খন্দকার মোশতাকের সরকারের প্রতি আস্থার স্বীকৃতি দিতেও সময় নেয়নি। পরে ভিন্ন উচ্চতায় বন্ধুত্ব হয় জিয়াউর রহমান ও বিএনপির সঙ্গে। এজন্য সব সময় ভারত ও সোভিয়েত রাশিয়ার আগুন চক্ষু মোকাবিলা করতে হয় বিএনপিকে। এর বিপরীতে গত দশকে বিস্ময়করভাবে বেনিফিশিয়ারি আওয়ামী লীগ। করোনার পর চীনা সরকারের দেওয়া সহায়তার প্যাকেটে লেখা থাকত ‘ভালোবাসার নৌকা পাহাড় বইয়া যায়’। এর আগে ঢাকায় চীনা রাষ্ট্রদূত ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর সোনার নৌকা নিয়ে ছুটে যান শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানাতে। সেখানে হালে ছন্দ-তাল-লয়ে হেরফেরের কিঞ্চিৎ নমুনা। সেই দৃষ্টে কেবল চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া নয়; উগান্ডা-ঘানার আশীর্বাদ খুঁজতেও কার্পণ্য হচ্ছে না বাংলাদেশের নানাজনের।
লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট
পরিবেশ এবং মানুষের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে পলিথিন। দেখতে পাতলা প্লাস্টিক মনে হলেও, এটি মোটেও সাধারণ নয়। যেহেতু এই বস্তুটি মাটির সঙ্গে কোনোভাবেই মিলিয়ে যায় না, ফলে তা পরিবেশ এবং মানবদেহের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে। এটি মূলত একটি রাসায়নিক যৌগ ইথেনের পলিমার। এর রয়েছে ভয়ংকর ক্ষতিকর ক্ষমতা। আবার পলিথিন পোড়ালে, এর উপাদান পলিভিনাইল ক্লোরাইড তৈরি করে কার্বন মনোক্সাইড। ফলে দূষিত হয় বায়ু। এটি এমন একটি পদার্থ, যা কোনোভাবেই পচনশীল নয়। এমনকি কোনো অ্যাসিড বা ক্ষারের সহযোগিতাতেও পলিথিনকে ধ্বংস করা অসম্ভব। একইসঙ্গে পলিথিন মানবদেহের জন্যও ভয়ংকর ক্ষতিকর। এর প্রভাবে শরীর আক্রান্ত হচ্ছে, ক্যানসার-চর্মরোগসহ বিভিন্ন ব্যাধিতে। যে কারণে চিকিৎসাবিজ্ঞানে পলিথিনকে বলা হচ্ছে ‘চর্মরোগের এজেন্ট’। পরিবেশ ও মানবদেহের জন্য ভয়ংকর ক্ষতিকর বিবেচনা করে, পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে পলিথিনের উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন এবং পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা!
এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, ঢাকা শহরেই অধিকাংশ পরিবার প্রতিদিন কমপক্ষে গড়ে চারটি পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার করছে। এর মানে, শুধু ঢাকা শহরেই প্রতিদিন লাখ লাখ পলিথিন একবার ব্যবহার করেই ফেলে দেওয়া হচ্ছে। আর সারা দেশে এর সংখ্যা কী হবে, তা ভাবলেও আতঙ্কিত হতে হয়! প্রতি মাস এবং বছরে কী পরিমাণ পলিথিন মাটিতে আটকে আছে তা চিন্তা করলেই এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে আন্দাজ করা যায়।
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় প্লাস্টিকের কারখানা রয়েছে শতাধিক। প্রকাশ্যে চলছে, পলিথিনের উৎপাদন ও বিক্রি, যা কাগজে-কলমে অবৈধ এবং নিষিদ্ধ। তবু সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো ভ্রƒক্ষেপ নেই। সোমবার দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত ‘পলিথিনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সমন্বয় সেল গঠনের দাবি’ শিরোনামের সংবাদের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে এসব প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহারের পরিমাণও খুবই কম। ফলে একদিকে যেমন নষ্ট হচ্ছে মাটির উর্বরতা, তেমনি ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ। প্লাস্টিক উৎপাদন ও দূষণরোধে সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে পলিথিন শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধ আইনের সফল প্রয়োগের জন্য সরকারি ও বেসরকারি সমন্বয়ে সেল গঠন করার দাবি জানিয়েছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। সংবাদে আরও উল্লেখ করা হয়েছে নদীর তলদেশে জমে থাকা প্লাস্টিকের দ্বারা কাটার আটকে যাওয়া এবং প্লাস্টিক চুষে বারবার পাম্পের ব্যর্থতার কারণে বুড়িগঙ্গা নদীর ড্রেজিং ব্যর্থ হয়েছে।
একদিকে পরিবেশের হুমকি অন্যদিকে মানবদেহে সরাসরি রোগের বিস্তার ঘটানোতে পটু পলিথিনের উৎপাদন এবং বিপণন, অনতিবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, যেখানে আইন রয়েছে পলিথিন ব্যবহার না করার সেখানে কীভাবে এটি গণহারে ব্যবহৃত হচ্ছে, তার উত্তর একমাত্র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষই দিতে পারেন। তবে সাধারণ মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করা সরকারের গুরুদায়িত্ব। একইসঙ্গে প্রয়োজন দ্রুত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সমন্বয় সেল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া।
আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ এমনিতেই অসচেতন। এরপর সরকারও যদি এ বিষয়ে শৈথিল্য দেখায় তাহলে এর পরিণতি হবে ভয়াবহ। দেশের মানুষকে নিরাপদ এবং শতভাগ স্বাস্থ্য সুরক্ষার দায়িত্ব সরকারের। একইসঙ্গে এমন কথাও মনে রাখতে হবে, মানুষই যদি সুস্থ না থাকে, তাহলে কার জন্য কী? অবৈধ কারবারির দখলে চলে যাবে দেশের সমস্ত সেক্টর এমনটি কেউ কল্পনা করে না। এই পলিথিনের কারণে শুধু সাধারণ মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না সামাজিক অর্থনীতির বিভিন্ন স্তরে থাকা সমস্ত মানুষই এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এবং বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। পরিবেশ দূষিত হলে, দেশের কেউ বাদ যাবে না এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে। মনে রাখতে হবে- অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ থাকে না।
প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিকারের জন্য আজীবন লড়াই করা লেখক ও রাজনৈতিক কর্মী হেলেন অ্যাডামস কেলার ১৮৮০ সালের ২৭ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আর্থার কেলার এবং মায়ের নাম কেইট অ্যাডামস। মাত্র ১৯ মাস বয়সেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে চিরদিনের জন্য কথা বলা, শোনা এবং দেখার শক্তি হারিয়ে যায় হেলেনের। প্রতিবন্ধিত্ব নিয়েই মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। আট বছর বয়সে অ্যানি সুলিভান নামের এক গৃহশিক্ষিকা তার পড়াশোনার দায়িত্ব নেন। পরবর্তী ৪৯ বছর শিক্ষাদীক্ষা ও এক অনন্য মানবিক সম্পর্কে যুক্ত থাকেন তারা দুজন। অ্যানি নিজেও একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছিলেন। ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়াশোনা করেন এবং পরে নরওয়েতে উদ্ভাবিত এক পদ্ধতি অনুসরণ করে কথা বলা শেখেন হেলেন। ১৯০০ সালে রেডক্লিফ কলেজে ভর্তি হন। ১৯০৪ সালে হেলেন প্রথম দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হিসেবে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি ও গণমানুষের সহায়তা অর্জনে সচেষ্ট ছিলেন হেলেন। হেলেন ১৯১৫ সালে জর্জ কেসলারকে সঙ্গে নিয়ে ‘হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল’ নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। সংস্থাটি এখনো বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিবন্ধী শিশুদের সহায়তা ও মানবতায় অবদানের জন্য ১৯৫৯ সালে হেলেন কেলার জাতিসংঘ কর্র্তৃক বিশেষ সম্মানে ভূষিত হন। হেলেন রাজনৈতিক লেখালেখির পাশাপাশি ছিলেন ‘আমেরিকান সোশ্যালিস্ট পার্টির’ সমর্থক। ১৯১২ সালে তিনি ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স অব দ্য ওয়ার্ল্ড’-এ যোগ দেন। হেলেনের আত্মজীবনী ‘দ্য স্টোরি অব মাই লাইফ’ এবং তার রাজনৈতিক রচনাবলির সংকলন ‘আউট অব দ্য ডার্ক’। প্রতিবন্ধীদের বিড়ম্বনা ও দুঃখ-দুর্দশাকে উপজীব্য করে নির্মিত জর্জ ফস্টার প্ল্যাট পরিচালিত নির্বাক ছবি ‘ডেলিভারেন্স’ প্রযোজনা করেন এবং এর প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন হেলেন। ১৯৬৮ সালের ১ জুলাই হেলেন কেলার মৃত্যুবরণ করেন।
আগামী চেস গিল্ড স্কুল দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আইয়ান রহমান ও মনন রেজা নীড়। একক ইভেন্টের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী ক্যাটাগরিতে আইয়ান ও ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নীড়। ৭ রাউন্ডের খেলায় আইয়ান ও নীড় দুজনই পেয়েছে সাড়ে ছয় পয়েন্ট করে।
বিটজ দলগত বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এলিগেন্ট চেস একাডেমি। এই দলে খেলেছে জারিফ হক আফনান, তাসরিক সায়হান, সিয়াম চৌধুরী ও নীলাভা চৌধুরী। আজ শনিবার দাবা ফেডারেশন কার্যালয়ে শেষ হয়েছে এই প্রতিযোগিতা।
আগামী চেস গিল্ডের আয়োজনে গত ২৮ সেপ্টেম্বর শুরু হয় ‘আমরা ৯২’ আগামী চেস গিল্ড স্কুল রেটিং টুর্নামেন্ট। সুইস লিগ পদ্ধতিতে হয়েছে খেলা। একক ও দলগত দুই বিভাগে অংশ নেয় ১৪৫ জন দাবাড়ু। টুর্নামেন্টে বিজয়ীরা ট্রফি, মেডেল ও সার্টিফিকেটের পাশাপাশি পেয়েছে ৭০ হাজার টাকা।
টুর্নামেন্ট শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন গ্র্যান্ডমাস্টার রিফাত বিন সাত্তার, আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার রানী হামিদ। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম।
টানা ৬ ম্যাচ জিতে লা লিগার শীর্ষে উঠে এসেছিল জিরোনা। আগের রাতে সেভিয়াকে হারানো বার্সেলোনা সেই জিরোনাকে পেছনে ফেলে। আর রিয়াল মাদ্রিদ এবার উড়তে থাকা জিরোনাকে হারিয়ে লা লিগার কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধার করেছে।
শনিবার মন্তিলিভি স্টেডিয়ামে জিরোনাকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে কার্লো আনচেলত্তির দল। রিয়ালের হয়ে গোল তিনটি করেছেন জোসেলু, অঁরেলিয়ে চুয়ামেনি ও জুড বেলিংহাম।
আট ম্যাচের সাতটিতে জিতে রিয়ালের পয়েন্ট এখন ২১। সমান ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে বার্সেলোনা। আর টানা ছয় জয়ের পর রিয়ালের কাছে হেরে যাওয়া জিরোনা ১৯ পয়েন্ট নিয়ে আছে তিনে।
সপ্তাহ খানেক আগেই আতলেতিকো মাদ্রিদে গিয়ে ৩-১ গোলে হেরেছিল রিয়াল। এবার জিরোনায় গিয়ে
প্রথমার্ধেই ২ গোলে এগিয়ে যায় আনচেলোত্তির শিষ্যরা। এর মধ্যে ১৭ মিনিটে বেলিংহামের ক্রস থেকে বল জালে পাঠান জোসেলু। আর ২২ মিনিটে টনি ক্রুসের কর্নার থেকে হেডে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন চুয়ামেনি।
রিয়াল ব্যবধান ৩-০ করে ৭১ মিনিটে। জোসেলুর শট জিরোনা গোলরক্ষক প্রতিহত করলেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি। নাগালে বল পেয়ে দারুণভাবে বল জালে পাঠান বেলিংহাম। এটি রিয়ালের হয়ে ৭ ম্যাচে তার অষ্টম গোল।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।