
সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও পরিব্রাজক প্রবোধকুমার সান্ন্যাল ১৯০৫ সালের ৭ জুলাই উত্তর কলকাতার চোরবাগানে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। আদিনিবাস ছিল ফরিদপুরে এবং স্থায়ী নিবাস কলকাতার বালিগঞ্জে। তার সাহিত্যিক ছদ্মনাম ‘কীর্তনীয়া’। কর্মজীবনে হুগলির ডাক বিভাগ ও সামরিক বিভাগের হিসাবরক্ষণ শাখায় চাকরি করেন। অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে তিনি কিছুদিন পাবনার গ্রামে অন্তরীণ ছিলেন। তিনি যুগান্তর পত্রিকার রবিবাসরীয় সাহিত্য বিভাগের সম্পাদক (১৯৩৭-৪১) ছিলেন এবং স্বদেশ পত্রিকার সম্পাদক থাকাকালে একবার রাজদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত হন। তিনি মানস সরোবর, কৈলাস পর্বত ও হিমালয়ের দুর্গম অঞ্চলসহ ছয়বার সমগ্র ভারতবর্ষ ভ্রমণ করেন। তিনি এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা ও রাশিয়ার বহু অঞ্চল ভ্রমণ করেন। এসব ভ্রমণের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি মহাপ্রস্থানের পথে (১৯৩৭), রাশিয়ার ডায়েরি, দেবতাত্মা হিমালয় (দুই খন্ড) প্রভৃতি ভ্রমণকাহিনি রচনা করেছেন। কল্লোল যুগের খ্যাতনামা ঔপন্যাসিক হিসেবেই প্রবোধকুমারের প্রধান পরিচয়। তিনি বিজলী, কল্লোল, স্বদেশ, দুন্দুভি, পদাতিক, ফরওয়ার্ড, বাংলার কথা প্রভৃতি পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন এবং বিজলী, স্বদেশ ও পদাতিক পত্রিকা নিজেই সম্পাদনা করতেন। তার প্রথম উপন্যাস ‘যাযাবর’ প্রকাশিত হয় ১৯২৮ সালে। ‘প্রিয়বান্ধবী’, ‘অগ্রগামী’, ‘আঁকাবাঁকা’, ‘পুষ্পধনু’, ‘বিবাগী ভ্রমর’, ‘হাসুবানু’, ‘বনহংসী’, ‘কাঁচ কাটা হীরে’, ‘নিশিপদ্ম’ ইত্যাদি উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থ রচনা করেন তিনি। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণপদক (১৯১১), শিশির কুমার পুরস্কার, মতিলাল পুরস্কার (১৯১০), শরৎ পুরস্কার এবং আনন্দ পুরস্কার (১৯৮০) লাভ করেন। ১৯৮৩ সালের ১৭ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
চলতি বছর ১৮ লাখের বেশি মানুষ পবিত্র হজ পালন করেছেন। তন্মধ্যে বাংলাদেশি হাজির সংখ্যা ১ লাখ ২২ হাজারের মতো। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত হাজিরা হজপালন শেষে মক্কা থেকে নিজ নিজ দেশে ফেরা শুরু করেছেন। বাংলাদেশের হাজিরাও ঘরে ফিরছেন। হজপালন করে আসা হাজি সাহেবদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। দোয়া করি তাদের বরকতে সমাজ আলোকিত হোক।
হজ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যে পাঁচটি বিষয়ের ওপর ইসলামের মূল ভিত্তি, তার পঞ্চমটি হজ। তবে হজের বিধানটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। কেননা, এটি মুসলমানের ওপর প্রতিদিন অথবা প্রতি বছর ফরজ হয় না; জীবনে মাত্র একবার ফরজ হয়।
হজপালন আল্লাহর প্রতি বান্দার অকৃত্রিম ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। সম্পদশালী, সচ্ছল ও শারীরিকভাবে সামর্থ্যবানদের জন্য জীবনে একবার হজ ফরজ। বিপুল অর্থ ব্যয় করে মক্কার নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট আচার-আচরণ নির্দিষ্ট দিনে আদায় করতে হয়। হজের ফজিলত প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ করল এবং অশ্লীল কথাবার্তা ও গোনাহ থেকে বিরত থাকল সে ওই দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে হজ থেকে ফিরে আসবে, যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল। -সহিহ বোখারি : ১৫২১
ইসলামি স্কলাররা বলেন, হজপালনের জন্য মক্কা গমন এবং কিছু আচার-অনুষ্ঠান সম্পাদনের মধ্যেই হজের উদ্দেশ্য শেষ হয়ে যায় না। বরং হজ-পরবর্তী সময়েও রয়েছে তাদের জন্য বিশেষ জীবনযাপন ও আমলি জিন্দেগি। হজের পর গোনাহমুক্ত জীবনযাপনই হলো হজ কবুল হওয়ার লক্ষণ। হজের পর হাজিদের উচিত আল্লাহর বিধিবিধান পালনের প্রতি যথাযথ গুরুত্বারোপ করা। ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেছেন, ‘হজ-পরবর্তী জীবনে হজপালনকারী তার ভালো কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে। যাবতীয় পাপের কাজ থেকে দূরে থাকে। তাহলে ধারণা করা যায়, তার হজ আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে।’
সে হিসেবে আলেমরা বলেন, হজ-পরবর্তী সময়ে সমাজে ভালো কাজের অংশগ্রহণ বাড়ানো। অন্যায় প্রতিহত করতে নবী কারিম (সা.)-এর দেখানো পন্থায় চেষ্টা-সাধনা চালিয়ে যাওয়া। নিজে যেমন অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকবে, তেমনি অন্যকেও সব ধরনের অন্যায় থেকে বিরত রাখতে সচেষ্ট থাকবে।
হজপালনকারীরা অনেক কষ্ট করে শারীরিক ও আর্থিক এই ইবাদত সম্পাদন করেছেন। যাদের হজ কবুল হয়, তাদের জীবনের মোড় ও কর্মের অভিযাত্রা ঘুরে যায়। ভবিষ্যতে গোনাহ থেকে বিরত থাকার আগ্রহ বাড়ে। আল্লাহর আনুগত্যের প্রতি মানুষ যতœবান হয়। হজের পর যার জীবনে কাক্সিক্ষত পরিবর্তন আসেনি, তার হজ কবুল হওয়ার বিষয়টি সন্দেহমুক্ত নয়। হাদিসে বলা হয়েছে, মাবরুর হজ (কবুল হজ) নসিব হলে, হজপালনকারী সদ্যপ্রসূত ভূমিষ্ঠ শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। তাই হজপালনকারী হজ-পরবর্তী জীবনে নিজেকে কলুষমুক্ত রাখতে দুনিয়ার সব কাজে আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করবে। নেক কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে। বিশেষ করে পাপমুক্ত জীবন গঠনে মনোযোগী হওয়া। সহজ ভাষায়, আকাইদ (বিশ্বাস), ইবাদত-বন্দেগি (উপাসনা), মুয়ামালা (লেনদেন), মুয়াশারা (সমষ্টিগত জীবনের নীতি ও বিধান) ও আখলাক (স্বভাব-চরিত্র) ইত্যাদির ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান ও নবী কারিম (সা.)-এর সুন্নত মেনে চলা। যারা আল্লাহর ঘর পবিত্র কাবা স্বচক্ষে দর্শন করেছেন এবং তওয়াফের সৌভাগ্য লাভ করেছেন, যারা আল্লাহর রাসুলের রওজায় সশরীরে উপস্থিত হয়ে দরুদ ও সালাম পেশ করেছেন- তাদের তো নিশ্চয়ই এই প্রেরণা জাগ্রত হয়েছে, ইনশাআল্লাহ- সামনের জীবন আল্লাহর বিধান মোতাবেক ও রাসুলের সুন্নত অনুযায়ী অতিবাহিত করব।
এক কথায়, সঠিকভাবে ইবাদত-বন্দেগি পালন করাই হবে একজন হাজির হজ-পরবর্তী জীবন। সুতরাং ফরজ ইবাদতগুলো পালন, সুন্নতে মোয়াক্কাদাকে গুরুত্ব দেওয়া, সাধ্যমতো নফল আদায়ের চেষ্টা, নিয়মিত কিছু পরিমাণে হলেও কোরআন তেলাওয়াত, বিভিন্ন সময়ের দোয়া পাঠ, কিছু পরিমাণে আল্লাহর জিকির ও ইস্তেগফার ইত্যাদিতে মনোযোগী হওয়া। সর্বাবস্থায় লেনদেনে হারাম উপার্জন ত্যাগ করা এবং অন্যের পাওনা পরিশোধ করা অতি জরুরি। মনে রাখতে হবে, লেনদেনে হারাম ছাড়তে না পারলে দ্বীনদার হওয়া যায় না। সুদ, ঘুষ ও অন্যান্য হারাম থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হয়ে হালাল উপার্জনের চেষ্টা করতে হবে এবং হালাল উপায়ে যতটুকু উপার্জন হয় তাতে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। সেই সঙ্গে প্রত্যেকের হক সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং তা আদায় করা। পিতা-মাতার হক, আত্মীয়-স্বজনের হক, পাড়া-প্রতিবেশীর হক, সহকর্মী ও দায়িত্বশীলের হক, সাধারণ মুসলমানের হক, এমনকি অমুসলিম ও পশু-পাখির হকও ইসলামি শরিয়তের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ সম্পর্কে নির্ভুল জ্ঞানার্জন করে সে অনুযায়ী নিজের কর্ম ও জীবন পরিচালিত করতে হবে।
স্বভাবের ভালো বৈশিষ্ট্যগুলো যেমন বিনয়, নম্রতা, ক্ষমাশীলতা, উদারতা, সংযম, পরোপকার, অন্যের হিত কামনা ইত্যাদি জাগ্রত ও কার্যকর করা এবং স্বভাবের মন্দ প্রবণতাগুলো যেমন অহংকার, ক্রোধ, কৃপণতা, অসংযম, অন্যের অনিষ্ট কামনা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা একজন ভালো মানুষ হওয়ার বিকল্পহীন বিষয়। একজন সাধারণ মানুষের অসৎ আচরণের চেয়ে একজন হাজি সাহেবের অসৎ আচরণ অধিক দৃষ্টিকটু। এ কারণে তাদের আচার-ব্যবহার সুন্দর ও শালীন হওয়া অধিক কাম্য।
নামের আগে আলহাজ বা হাজি উপাধি ব্যবহার করা কিংবা হজপালন করে এসে নিজেকে অন্যদের চেয়ে বড়, আলাদা কিছু কিংবা বেশি সৌভাগ্যবান মনে করা অনুচিত। হ্যাঁ, একজন হাজি সাহেবের জীবন তখনই সৌভাগ্যবান হবে, যখন তার হজ-পরবর্তী জীবন হবে আল্লাহ-রাসুলের দেখানো পথে। আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহকে লোক দেখানো যাবতীয় ইবাদত-বন্দেগি থেকে বেঁচে থাকার তওফিক দান করুন।
লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক গবেষক
ত্রিকালদর্শী বৃদ্ধ অছিমদ্দীন ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমল আর হালের বাংলাদেশ আমলে ৫২ বছর পার করেছেন। পরকালের পথে পা দিয়ে রেখেছেন তিনি। অছিমদ্দীন দেখেছেন কীভাবে তার সামনে ব্রিটিশরা তল্পিতল্পাসহ চলে গেছে এ দেশ ছেড়ে, দেখেছেন কীভাবে সংসার ভেঙেছে পাকিস্তানিদের। নিজে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশ স্বাধীন করতে মহান মুক্তিযুদ্ধে। অতীত তার কাছে এখন ধূসর, স্মৃতির ভাঁজে ভাঁজে আনন্দ-বেদনার সুখ সর্বনাশের নানান মুহূর্তগুলো গুটিয়ে গেছে। অফুরন্ত অবসরের আয়নায় অছিমদ্দীন দেখেন তার ছেলেবেলা, কৈশোরকাল, ক্যাম্পাস জীবন, যুদ্ধের রণাঙ্গন, মনুষ্য কারসাজিতে জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধির বেসাতি, নীতি-নৈতিকতার নানান বেশভূষা।
নব্বই বছরে কত কিছিমের মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে তার! জমিদার বরকন্দাজের পর একবিংশ শতাব্দীর সূচনাপ্রহরে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী’ এই সময় ও সমাজে বয়স, বর্ণ, পর্যায় ও প্রকার ভেদে নানান কিসিমের মানুষ এখনো রীতি পদ্ধতি, নীতি ও নিয়মে ঔপনিবেশিত। শ্রমজীবী কর্মক্লান্ত মানুষের পাশাপাশি অতি চালাক ফিটফাট ট্রেড ইউনিয়ন নেতা ও কর্মী, শিক্ষাবিহীন শিক্ষিতের সমারোহের পাশে প্রযুক্তি প্রখর মেধাবী মুখ, মুক্তবুদ্ধি শান্ত সমাহিত চিন্তাচেতনার সারিতে সহসা মৌলবাদী চেহারার মানুষ, উন্নয়নকর্মীর পাশাপাশি নিজের আখের গোছাতে তৎপর এনজিও কর্ণধার, সন্ত্রাসীর ভয়ে আতঙ্কিত মানুষ, চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারী আত্মউৎসর্গীকৃত সেই পুলিশ সার্জেন্ট, ষড়যন্ত্রের শিকার গৃহহীন মানুষ, আশ্রয়ণ প্রকল্পে হাসিমুখের মানুষ, বানভাসি মানুষ, নিঃস্বার্থ ত্রাণকর্মীর পাশে সুযোগসন্ধানী-অসৎ উদ্দেশ্য অভিলাষী চোখের মানুষ, কোণঠাসা সৎ ও নিষ্ঠাবান চাকুরে, ধান্দাবাজ আর আত্মস্বার্থের শর্করাসমৃদ্ধ জনস্বার্থসেবী আমলা, অবিবেচক বাসের হেলপার, ট্রাকের মাতাল ড্রাইভার, নীল সাদা অধ্যাপক, একচোখা আঁতেল, রাজনৈতিক শিল্পী, ঋণখেলাপি, ব্রিফকেসবাহী নতুন শিল্পপতি, নকল সরবরাহকারী, উদ্ধত ছাত্রনেতার সামনে অসহায় অধ্যক্ষ, জামিনপ্রাপ্ত সন্ত্রাসী, কুকুরের মাংস বিক্রেতা আর এসিডে দগ্ধ তরুণীর দেশে সেঞ্চুরি করা ক্রিকেটার। সময় সমাজ ও সংসারে এত পরিবর্তন দেখার জন্য প্রভু নিরঞ্জন তাকে যে এতদিন বাঁচিয়ে রেখেছেন এটাই আশ্চর্য লাগে। বড় কৃতজ্ঞতা তার সৃষ্টিকর্তার প্রতি।
চোখে মোটা চশমা পরেন তিনি। ইতিমধ্যে তিনবার চোখের ছানি কাটাতে হয়েছে, দু’বার বড় অপারেশন, ৪৩ এর মন্বন্তর, ৭১ এর রণাঙ্গন, অতিমারী করোনাকালে মরণ পথ থেকে ফিরে এসেছেন। চৌকস ক্রিকেটারের মতো সাফল্যের ছক্কা মেরেছেন কয়েকবার, আবার বোল্ড আউট হয়ে সাজঘরেও ফিরেছেন কখনো-সখনো। শ্রান্তি ও ক্লান্তির কোলে মাথা রেখে তন্দ্রায় গিয়েছেন আবার নতুন উদ্যমে জেগে উঠেছেন। অছিমদ্দীন তালপাতায় হাত মকশ করেছেন, শ্লেটে পেনসিল ভেঙেছেন, কাগজে মুখে কালির আলপনা এঁকেছেন। এখন তিনি দেখেন তার নাতিপুতিরা কম্পিউটারে লেখাপড়া করে। ক্যালকুলেটারে অঙ্ক কষে, নামতা মুখস্থ তারা করে না, বানান শেখা লাগে না তাদের ব্রেনে; অঙ্ক কষার কাজটা নিয়েছে মেশিন, কত রঙ-বেরঙের জীবনজ¦লন্ত জীবন তরঙ্গ।
ব্রিটিশ আমলে অছিমদ্দীন দেখেছেন গোরা পুলিশ, খাকি হাফপ্যান্ট বেল্ট পরা চৌকিদার-দফাদার, নায়েব কানুনগো, মোটা পেট পঞ্চায়েত, শৌখিন ধুতিপরা জমিদার বাবু, রুমি টুপি পরা মৌলবি, পৈতা লাগানো ব্রাহ্মণ আর বাংলার বারবধূ। কলের গানে ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ কিংবা ‘নিমাই দাঁড়াবে’ জাতীয় গান শুনতে শুনতে রাতে ঘুমুতে যেত বালক অছিমদ্দীন। কলের গান থেকে টেপ, টেপ থেকে চিপসে এখন গান শোনা যায়, ইউটিউবে পুরো সিনেমা দেখা যায়। স্কুলে যাওয়ার তাড়া ছিল না, তবে কুটে পন্ডিতের হাতের বেতের ভয় তো ছিলই। এখন তো বিনামূল্যে পাওয়া পাঠ্যবই দামি গাইড বইয়ের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে। অকাতরে বিদ্যাদানে ধন্য গুরুমশাইরা এখন কোচিংয়ের কসাই।
সেই অছিমদ্দীন কী দেখছেন তার বায়ান্ন বছর বয়েসি বাংলাদেশে? জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নীতি-নৈতিকতাবিহীন দলীয় কর্মী প্রবেশের প্রথা কেন চালু হলো সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির পারিবারিক, সামাজিক সংসারে? এখন সামান্য একটা চারিত্রিক সনদ আনতে গেলে ইউপি সদস্য পর্যন্ত পক্ষ-বিপক্ষ ভেদে আচরণ করে। গ্রামের ভেতর দিয়ে এলজিইডি রাস্তা বানাবে সেখানে ভাগ বসাবে ক্ষমতাসীন দলীয় কর্মী, সেই রাস্তা ওজন সর্বস্ব ভারী যানবাহন চলাচল করে রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত করবে ইউপি চেয়ারম্যান, স্থানীয় ঠিকাদার এমনকি উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায়, চোরে চোরে মাসতুতো ভাইয়ের মতো আচার-আচরণে স্থানীয় শান্তি নিয়ম-শৃঙ্খলার মাঠ হচ্ছে বেদখল। বড় রাস্তার শরীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য বড় বড় উপদেশমূলক (গতিসীমা, ওভারলোডেড গাড়ি, একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না) বিলবোর্ডের খরচটাও অকার্যকর অপচয় মনে হয় প্রতিদিন গড়ে ৭০/৮০ জনের পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংবাদে। বড় শহরে ট্রাফিক সিগন্যালও জ¦লে আবার হাততোলা ট্রাফিকের বিচার বিবেচনাহীন ব্যবসাও চলে।
অছিমদ্দীনের গ্রামের বসতবাড়ির গা ঘেঁষে চলে গেছে পাকা রাস্তা। নসিমন, মোটরসাইকেলের বেপরোয়া গতিতে চলাচলে সেই রাস্তায় হাঁটতে ভয় পায় সবাই। অকাল মৃত্যুর ফাঁদ মানুষকে গৃহবন্দি করে তুলছে। ফিটনেসবিহীন, লাইসেন্সবিহীন গাড়ি চলছেই, কেউ দেখার নেই। গরিবের দিন এনে দিন খাওয়ার উপার্জন আনে যে ভ্যান গাড়ি তা চুরি হলে থানায় কিংবা পরিষদে নালিশ বা উদ্ধার প্রার্থনাতেও পয়সা লাগে, পাছে প্রশাসন ও বাহিনী তার চৌদ্দগুষ্টি যাচাইয়ে নেমে বিব্রত করতে শুরু করবে।
অছিমদ্দীন ভাবেন পদে পদে এসব ঠেকা-বেঠেকায় পড়ার জন্য কি তারা স্বাধীন হয়েছেন। দিন দিন ভালো মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে, পালিয়ে বেড়াচ্ছে। রাতের চেয়ে ভোরবেলায় ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম্য বেড়ে যাচ্ছে। কে কাকে দেখবে? বিপুল উন্নয়ন দৈনন্দিন সুশাসন কেড়ে নিচ্ছে কি না, শিক্ষাব্যবস্থাকে নতুন নতুন সংস্কারের নামে পঙ্গু করে দিচ্ছে না তো জাতিকে? দেশের অদক্ষ শ্রমিক যাচ্ছে বিদেশে আর প্রতিবেশী দেশের শিক্ষিত ও দক্ষরা এসে এ দেশ থেকে রেমিট্যান্স নিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে স্মার্ট বাংলাদেশে। সাগর-রুনির চার্জশিট দিতে বিলম্বের কারণ খোঁজা পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে সহযোদ্ধা সহকর্মীরা। সবখানে সংশয়, সন্দেহ, অধৈর্য, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং কেনা-বেচা চলছে তো চলছে।
জাপানের এক মন্দিরে ৩ বানরের মূর্তি আছে- একটি বানর মুখে আঙুল দিয়ে, এক বানর কানে আঙুল দিয়ে এবং অপর বানর চোখে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। বানর তিনটির একান্ত প্রতিজ্ঞা যে তারা খারাপ কিছু শুনবে না, খারাপ কিছু বলবে না এবং খারাপ কিছু দেখবে না। অছিমুদ্দীন কোরআন শরিফের সুরা বাকারার ৭ম আয়াতে পড়েছে (যারা গাফিল তারা ফিরবে না) আল্লাহ তাদের অন্তঃকরণ এবং তাদের কানসমূহ বন্ধ করে দিয়েছেন আর তাদের চোখসমূহ পর্দায় ঢেকে দিয়েছেন। আবার গাফিল বা কাফিরদের বলা হয়েছে ‘তারা বধির, মূক ও অন্ধ সুতরাং তারা ফিরে আসবে না’। (বাকারা, আয়াত/১৮)। অছিমুদ্দীন ভাবেন সত্যিই তো মুখের কথা কানে শোনা এবং চোখের দেখায় তারতম্য ঘটলে বিপদ নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, দেশের জন্য। অছিমুদ্দীন প্রায়ই দেখেন নানান বিষয়-আশয়ে আচার-আচরণে চলনে-বলনে সবাই কেমন যেন খাপছাড়া ও সমন্বয়হীনতার উদাহরণ সৃষ্টি করেই চলেছেন।
অছিমুদ্দীন শুনেছেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নাকি বলা আছে কোনো বন্ধুদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বিনষ্ট হতে পারে এমন কোনো মন্তব্য বা বক্তব্য দেওয়া যাবে না। অছিমুদ্দীন ভাবেন নিজেদের দুর্বলতা অন্যেরা জানুক এটা অন্যায়কারীরা চান না। লোকে কথা বললে তা মোকাবিলা করতে দোষারোপে ও দুর্বৃত্তপনাতেও কম যান না অনেকে। কারও মাজা ভেঙে দিয়ে তারপর বলা তার মাজা ভেঙে গিয়েছে। অছিমুদ্দীনের ছেলেবেলায় পড়া, মনে হয় বলাই চাঁদ মুখোপাধ্যায় বা বনফুলের একটা গল্প দুই গ্রামের পন্ডিতের কে কেমন বুদ্ধিমান তার পরীক্ষা প্রতিযোগিতা হচ্ছে গ্রামবাসীর মধ্যে। দিনক্ষণ ঠিক করে সবাই দু গ্রামের মাঝখানে বটতলায় দুই পন্ডিতের পান্ডিত্যের পরীক্ষা/বির্তক সভার আয়োজন করেছে। এক পন্ডিত প্রশ্ন করলে অপর পন্ডিত জবাব দিতে পারলে সবাই ঢাক-ঢোল পিটিয়ে আনন্দ হইচই করে। বিষয়টি অনেকটা টাইব্রেকারে গোল দেওয়া বা ঠেকানোর কসরতের মতো। তো এক পর্যায়ে এক পন্ডিত ‘I do not Know এর বাংলা কী হবে জানতে চাইলেন অপর পন্ডিত সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলেন ‘আমি জানি না’। আর যায় কোথায়, মূর্খ গ্রামবাসী হইচই করে উঠল পন্ডিত মহাশয় এটা জানেন না, তিনি নিজেই স্বীকার করলেন। কী আর বলা, সঠিক উত্তর দেওয়ার জন্য প-িত মহাশয়ের পরাজয় ঘোষিত হলো। কেউ আসল কথার ধারেকাছে গেল না। গলাবাজির সরগরমে সবার যুক্তি ও বুদ্ধি লোপ পেল। আপন আচরি ধর্মে আস্থাবান অছিমুদ্দীন ইদানীং দেখেন তার চারপাশে এভাবে বোকা বানানোর মহোৎসব চলছে। লেখক: সাবেক সচিব এনবিআর-এর সাবেক চেয়ারম্যান
রাজধানীর ১১৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে দুই সিটি করপোরেশনের ৫৫টি ওয়ার্ড বা অর্ধেকই ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটির ২৮ ও উত্তরের ২৭টি ওয়ার্ড রয়েছে। এসব ওয়ার্ডে এডিস মশার ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি। অর্থাৎ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি আয়োজিত কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়।
গত ৫ জুলাই দৈনিক দেশ রূপান্তরের প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পেরেছি সারা বিশ্বে মশা নিয়ন্ত্রণ করা হয় বৈজ্ঞানিক উপায়ে। কীটতত্ত্ববিদরা এ কাজে নেতৃত্ব দেন। গবেষণা করে মশার বিস্তারের নানা দিক খুঁজে বের করা হয়। এরপর কাজে নামে কর্মীবাহিনী। কিন্তু বাংলাদেশে পুরো উল্টো চিত্র। সিটি করপোরেশনগুলোতে কীটতত্ত্ববিদ নেই, গবেষণাগার নেই। প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো সক্ষমতাই গড়ে ওঠেনি। এই সুযোগে মশা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে, ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ার মতো প্রাণঘাতী রোগ।
প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা গেছে, দুই সিটির মশক নিধনের গত চার বছরের খরচের চিত্র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ডিএনসিসি ২০১৯-২০ অর্থবছরে মশক নিয়ন্ত্রণে খরচ করেছে ৭০ কোটি টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫৫ কোটি ৫০ লাখ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫৯ কোটি ৮৫ লাখ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০১ কোটি টাকা। আর ডিএসসিসি ২০১৯-২০ অর্থবছরে খরচ করেছে ৩২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২০ কোটি ২ লাখ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩১ কোটি ২ লাখ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৭ কোটি টাকা।
গত মঙ্গলবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চিরুনি অভিযানে নামে। অভিযানের নেতৃত্ব দেন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। অভিযান শুরুর বিষয়টি পূর্বঘোষিত ছিল বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়। তিনি এই অভিযান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন ৪১নং ওয়ার্ডের বলদা গার্ডেন থেকে। বেশ কয়েকটি বাড়িতে তিনি এবং তার দল এডিস মশার লার্ভা পান এবং তিন বাড়ির মালিককে জরিমানাও করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন একটি সার্ভে রিপোর্টের ভিত্তিতে তিনি এই অভিযান পরিচালনা করেছেন। সবাইকে এডিস মশাবাহী রোগ ও ডেঙ্গু নিয়ে জনসচেতনতা বাড়তে কাজ করছেন।
গণমাধ্যম সূত্রে আরও জানা যায়, অভিযানে মশক নিধনের ওষুধ নিয়ে যে কর্মীরা ছিলেন তারা কর্মকর্তাদের প্রটোকল দিতেই ব্যস্ত ছিলেন। যে কারণে যে পরিমাণ ওষুধ নিয়ে অভিযানে নেমেছিলেন তাও শেষ করতে পারেননি। প্রশ্ন হচ্ছে, মশক নিধনের জন্য ঘটা করে অভিযান পরিচালনা করা কি সিটি করপোরেশনের কাজ? না, এটি তো তাদের দাপ্তরিক দায়িত্ব। জরিমানা করা হলো ভবন মালিকদের অসচেতনতার কারণে। কারণ নির্মাণাধীন ওই ভবনে বৃষ্টির পানি জমে ছিল। কিন্তু ভবনের নির্মাণশ্রমিকের দাবি এখানে পানি ছিল না, গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে পানি জমেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বৃষ্টির দিন পানি জমবে এটাই স্বাভাবিক, রোদ উঠলে সে পানি শুকিয়েও যেতে পারে। তা ছাড়া সড়কের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পগুলো হচ্ছে সেখানে বৃষ্টির পানি জমে থাকছে, থানাগুলোতে জব্দ করা গাড়ি ও অন্যান্য মালামাল বছরের পর বছর ধরে পড়ে থাকছে, সেখানে পানি জমছে এসব জায়গায় মশক নিধন অভিযান না চালিয়ে নির্মাণাধীন বাড়ি থেকে কেন অভিযান শুরু হলো তা বোধগম্য নয়। মশার ওষুধ না ছিটিয়ে জরিমানা করা একটু বেশি হয়ে যায় না? যেখানে মশক নিধনে সিটি করপোরেশনের বাজেট আছে। মশার ওষুধ ছিটানোর জন্য কর্মী নিয়োগ করা আছে, জনগণকে সচেতন করার আগে ওষুধটা সঠিকভাবে ছিটালেই তো মশা অনেকটা কমে যেতে পারে।
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা গত বুধবার মোহাম্মদপুরে ড্রোনের সাহায্যে ছাদ বাগানে মশার প্রজননস্থল চিহ্নিতকরণের লক্ষ্যে সার্ভে কার্যক্রম শুরু করেন। চার দিনে পৃথক পাঁচটি ড্রোনের মাধ্যমে নগরের বাসাবাড়িগুলোর ছাদে পানি জমে আছে কি না বা জমে থাকা পানিতে মশার প্রজনন আছে কি না তা সার্ভে করা হবে। পরে ৮ জুলাই থেকে চিরুনি অভিযান শুরু হবে, মশার উৎসস্থল ধ্বংস করা হবে এবং লার্ভা পেলে জরিমানা করা হবে। বুদ্ধিটা ভালো। অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে উত্তর সিটির মশা নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা এসেছে। শেষ পর্যন্ত মশার উৎসস্থল খুঁজতে ড্রোন থেরাপিতে যেতে হলো উত্তর সিটিকে। এর আগে ব্যাঙ থেরাপি এসেছিল। কিন্তু সে থেরাপি খুব একটা কাজ হয়নি বলেই মনে হচ্ছে। তাই এবার ড্রোন অভিযান, যা শুধু আধুনিকই না, অত্যাধুনিক।
মূলত মশা নিধন বা উৎসস্থল ধ্বংস করা দুই সিটি করপোরেশনের রুটিন দায়িত্ব। কিন্তু ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের এ সময়েও সিটির কর্তাব্যক্তিরা মিডিয়া কাভারেজেই বেশি ব্যস্ত। তারা দিনক্ষণ ঠিক করে এডিস মশা নিধনের অভিযান চালাতে চায়। অথচ গত বছর পুরো সময়জুড়ে ডেঙ্গুজ¦রে আক্রান্ত হয়েছে মানুষ। তা ছাড়া ২০১৯ সাল থেকে এই সংকট অব্যাহত আছে। তাদের এডিস মশা নিধনে অভিযান পরিচালনার কথা জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে। অথবা এডিস মশার বিস্তার রোধে ওই সময় থেকে পরিকল্পনা করার কথা। গোটা শহরে যখন মশার বিস্তার ঘটে গেছে, হাসপাতাল যখন রোগীতে ভরে উঠেছে, তখন সিটি করপোরেশন মশা নিধনের অভিযান শুরু করেছে। তাও আবার উদ্বোধন কর্মসূচির মাধ্যমে।
২০০০ সালের দিকে প্রথম ডেঙ্গু জ্বর শনাক্ত হয়। পরের দু-তিন বছরে এই জ¦রে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার শূন্যে নেমে আসে। কিন্তু ২০১৮ সালে ফিরে আসে ডেঙ্গু জ¦র এবং তা দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। মশা নিধনে গত ৬ অর্থবছরে দুই সিটির বাজেট হয়েছে প্রায় ৩৮৭ কোটি টাকা। এই টাকা ব্যয়ে সিটি করপোরেশন মশা নিধনে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তা কোনো কাজে আসেনি। উত্তর সিটি মেয়র সম্প্রতি বলেছেন মশা নিধনে রাজধানীতে এতদিন যে পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে তা ভুল ছিল। সিটি করপোরেশন যে পদ্ধতি ব্যবহার করে মশা নিধন করেছে তাতে মশা নির্মূলে কাজে আসেনি।
অভিযোগ আছে, সিটি করপোরেশনগুলো কীটতত্ত্ববিদদের পরামর্শ কখনোই নেয়নি। মশা নিধনে যে ফগিং মেশিন ব্যবহার হয় তা নিয়েও আছে বিতর্ক। ফগিংয়ের ধোঁয়া চোখ জ্বালাপোড়া করে, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এ কথা বহুবার সিটি করপোরেশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। ফগিংয়ে মশা তাড়াতে নিরুৎসাহিত করে লার্ভিসাইডকে গুরুত্ব দিতে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে কিটতত্ত্ববিদরা পরামর্শ দিয়েছেন সিটি করপোরেশনকে। কিন্তু সিটি করপোরেশন তা আমলে নেয়নি।
প্রকৃতপক্ষে মশার উৎপাত নতুন না। আমাদের দেশে ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া আসার আগেও মশার উৎপাত ছিল। তখন মশা ম্যালেরিয়াসহ নানা রোগ ছড়াত। সেগুলো ডেঙ্গুর মতো এত প্রাণঘাতী ছিল না। এ কারণে মশা নিধন যে সিটি করপোরেশনের রুটিন কাজ তা তারা বেমালুম ভুলে থাকত। কিন্তু মশা নিধনে যন্ত্রপাতি কেনা বা ওষুধ কেনা কিন্তু বন্ধ থাকেনি কখনোই। তা না করে যদি মশা নিধনে কোনো গবেষণা হতো, কার্যকর ও জনমানবের ক্ষতিকর না এমন ওষুধ ছিটানোর ব্যবস্থা হতো তবে মশার উৎপাত অনেক কমে যেত। ফলে মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের দায়িত্বে অবহেলার চিত্রই ফুটে ওঠে।
২০০০ সালের পর ডেঙ্গু জ্বর নিয়ন্ত্রণ করতে আমরা পেরেছি। ওই সময় যদি সিটি করপোরেশন বা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়ে থাকে তবে এখন প্রক্রিয়াগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে না কেন, দেখা দরকার। নাকি আপনাআপনি নিয়ন্ত্রণে এসেছিল তাও দেখা দরকার।
মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের কিটতত্ত্ববিদ নিয়োগ ও গবেষণা করা অতি জরুরি। কারণ বাসাবাড়ির ছাদে পানি জমে আছে কি না তা খুঁজে বের করা যেমনি দুরূহ কাজ, তেমনি এ পদ্ধতিতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণও সম্ভব না। ওষুধ ছিটানোর পরও যদি মশার বংশবিস্তার না কমে, দেখতে হবে আমরা যে ওষুধটি ব্যবহার করছি তা কার্যকর ওষুধ কি না। কারণ ২০১৯ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত ছোট্ট একটি প্রাণী মশার নিধনে দুই সিটি করপোরেশনকে কয়েকশ কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে। যদি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে স্থায়ীভাবে মশার নিধন ও বিস্তার রোধ করা যায় তবে মশা নিধনের অর্থ সিটি করপোরেশন অন্য জনগুরুত্বপূর্ণ খাতে ব্যয় করতে পারবে।
লেখক: সাংবাদিক
সরকারি কেনাকাটায় একের পর এক নানা দুর্নীতি-অনিয়মের খবর দীর্ঘদিন ধরেই জনগণের মুখে মুখে ফিরছে। জনপরিসরে এ নিয়ে আলোচনা নতুন এক মাত্রা পায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কেনাকাটায় ভয়াবহ দুর্নীতির খবরে। ২০১৯ সালের ১৬ মে ‘কেনা-তোলায় এত ঝাঁজ’ শিরোনামে দেশ রূপান্তরে রূপপুর প্রকল্পের কেনাকাটায় দুর্নীতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যা পরে সারা দেশে ‘বালিশ-কান্ড’ নামে পরিচিতি পায়। প্রতিবেদনটি সারা দেশে তুমুল আলোড়ন তুলেছিল। এর ফলে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা এবং মন্ত্রণালয়ের তদন্তের মধ্য দিয়ে ওই দুর্নীতি কান্ডের বিচারে কিছুটা ইতিবাচক ফলও পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, বালিশ-কান্ডের পরও প্রায় একই কায়দায় সরকারি কেনাকাটায় একের পর এক দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হতে থাকে। আর সংবাদমাধ্যমে সেসব পর্দাকান্ড-, বইকান্ড, টিনকান্ড, ইভিএম-কান্ড ইত্যাদি নাম পেতে থাকে।
দেশের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার যত বাড়ছে, সরকারের কেনাকাটাও তত বাড়ছে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বিপুল পরিমাণ কেনাকাটায় নজরদারি করার জন্য কোনো কর্তৃপক্ষ নেই দেশে। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট লঙ্ঘন করে সরকারি কেনাকাটায় বাজারমূল্য থেকে বহু বহু গুণ বেশি দাম দিয়ে পণ্য কেনার হিড়িক থামছে না। বাস্তবতা এমন পর্যায়ে চলে গেছে, সরকারি কেনাকাটায় দুর্নীতির এই অসুখের ভয়াবহতা বোঝাতে এখন যেন আর ‘হরিলুট’, ‘পুকুরচুরি’ কিংবা ‘সাগরচুরি’র মতো কোনো উপমাই আর যথেষ্ট নয়।
বালিশ-কান্ড-পর্দাকান্ড নিয়ে সারা দেশে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার পর আশা করা হয়েছিল সব ধরনের সরকারি কেনাকাটায় দুর্নীতি বন্ধে সরকার পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট এবং ই-টেন্ডারিংয়ের ব্যবস্থা যথাযথভাবে অনুসরণ করায় তদারকি জোরদার করবে। কিন্তু তা হয়নি। বরং অসাধু কর্মকর্তা আর ঠিকাদার-ব্যবসায়ীদের লুটপাটের মানসিকতা কতটা বেপরোয়া হলে কেউ গরু-ছাগল উন্নয়ন প্রকল্পে ৪৫ হাজার টাকার চেয়ারের দাম ছয় লাখ টাকা দেখাতে পারেন? প্রশ্ন হলো এমন সব অবাস্তব ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদিত হয় কীভাবে?
তবে আশার কথা, সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে হচ্ছে কর্র্তৃপক্ষ। সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধি ও পেশাদারিত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ)’ নামে একটি কর্র্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করবে সরকার। এ লক্ষ্যে একটি আইনের খসড়া জাতীয় সংসদে বুধবার তোলা হয়েছে। বিলটি পরীক্ষার জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। বিলে বলা হয়েছে, বিপিপিএর ১৭ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ থাকবে। তবে সরকার চাইলে সদস্য সংখ্যা বাড়াতে-কমাতে পারবে। পরিকল্পনামন্ত্রী হবেন এই কর্র্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান। আর সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞ কাউকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ করবে সরকার। এই কর্র্তৃপক্ষের একটি তহবিল থাকবে। বিপিপিএ তার কাজ সম্পাদনের জন্য যেকোনো ব্যক্তি বা সংস্থার জন্য চুক্তি সম্পাদন করতে পারবে।
অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হলো চলমান করোনা মহামারীর জাতীয় দুর্যোগে স্বাস্থ্য খাতেও যা দেখা গেছে, সরকারি কেনাকাটায়ও দেখা গেছে একই ধারাবাহিকতা। এসব দুর্নীতি থামাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার কি তাদের বহুল প্রচারিত ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের’ প্রমাণ রাখবে? আমাদের কথা হচ্ছে, কমিটিতে সঠিক লোকের নিয়োগ এবং সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। না হলে এই কমিটিও কেনাকাটার অসুখে সংক্রমিত হয়ে হরিলুটের আখড়ায় পরিণত হতে সময় নেবে না। আর সরকারকে তখন বিপুল বেতন-ভাতা, অবকাঠামোর বোঝাসহ একটি শে^তহস্তী পালতে হবে। যদি এমনটি হয়, তখন এই প্রতিষ্ঠানটিই হবে সরকারি কেনাকাটায় দুর্নীতির উৎসস্থল, যা কাম্য নয়। আমরা আশা করি সরকারি কেনাকাটায় বিপিপিএ শৃঙ্খলা আনবে। একটি নির্দিষ্ট বিভাগ থেকে সব ধরনের কেনাকাটা করার ফলে অনিয়ম দূর করাসহ সরকারি কেনাকাটায় দীর্ঘ সময় ব্যয়ও রোধ করা সম্ভব হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।
প্রাচীন সময় থেকে মানুষের খাদ্যতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে চীজ বা পনির। গরুর দুধের তৈরি পনিরে শরীরকে সুস্থ রাখার প্রয়োজনীয় সব উপাদান পাওয়া যায়।
বর্তমানে সময়ের সাথে সাথে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পনিরের ব্যবহার। আর তাই বিস্কিট থেকে শুরু করে পাউরুটি, পাস্তা, পিৎজা অনেক কিছুতেই পনির ব্যবহার হয়।
পনিরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের মতে, ১০০ গ্রাম পনিরের মধ্যে রয়েছে:
শক্তি - ৩৬২ কিলোক্যালরি
প্রোটিন – ৫.১৭ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট - ৫০ গ্রাম
ক্যালসিয়াম - ৬৯ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম - ১৮১ মিলিগ্রাম
স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড – ৩.৪৫ গ্রাম
কোলেস্টেরল - ৩৪ মিলিগ্রাম
এটি প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে এবং ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস। পনিরের বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে।
পনির ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এবং প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস। এটি বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অনেক উপকারি। পনিরে থাকা ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পনির খেলে অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করা যায়।
পনির ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা শক্তিশালী ও মজবুত দাঁত তৈরিতে অবদান রাখে। পনিরে থাকা কেসিন ফসফোপেপটাইড উপাদান দাঁতের গহ্বর কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া চিউইং চিজ মুখের পিএইচ মাত্রা বাড়াতে পারে এবং সামগ্রিক মৌখিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
পনিরে অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড যেমন কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিডের সমৃদ্ধ উৎস। কোরিয়া ইউনিভার্সিটি এবং ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে এই ফ্যাটি অ্যাসিডে ক্যান্সার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ ছাড়া এই ফ্যাটি অ্যাসিড এথেরোস্ক্লেরোসিস এর বিকাশ রোধ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে।
পনিরে কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিড এবং স্ফিংগোলিপিড রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে স্ফিংগোলিপিড মানুষের কোলন ক্যান্সারকে বাধা দিতে পারে।
এ ছাড়া পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে খাদ্যতালিকাগত ক্যালসিয়াম কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ উপকারি।
পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই উপকারি। এটি প্রসবের সময় সংকোচনকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া উকের দুধ পান করানোর সময় ক্যালসিয়াম পুষ্টির ঘাটতিও পূরণ করে পনির। এটি গর্ভবতী মহিলাদের ভ্রূণের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে।
কিছু ধরণের পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কার্যকারিতা বাড়াতে পরিচিত। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে পনির শরীরের প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটি অসুস্থতা এবং রোগ কমাতে পারে।
প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সুরক্ষিত পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। এটি বয়স্কদেরমধ্যে ইমিউনোসেনেসেন্স (প্রতিরোধ ব্যবস্থার ধীরে ধীরে দুর্বল হওয়া) প্রতিরোধ করতে পারে।
পনির সেলেনিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা থাইরয়েড ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সেলেনিয়ামের থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করে ভাইরাসের বিকাশকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে।
চেডার পনির হল এক ধরনের হার্ড পনির। এটি খাদ্যতালিকায় যোগ করলে তা থাইরয়েড রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
পনিরের আশ্চর্যজনক স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলির মধ্যে একটি হল মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করা। বিশেষ করে ক্যামেমবার্ট জাতের পনির এই ধরনের কাজ করে থাকে। ক্যামেমবার্ট পনির প্রদাহজনক সাইটোকাইনের মাত্রা কমাতে পারে। এটি আলঝাইমার রোগের ঝুঁকি কমায় এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।
পনির ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। এতে থাকা ভিটামিন বি কোষের বিপাক এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে এটি উজ্জ্বল ত্বকের পাশাপাশি ত্বকের দাগ কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
যাদের গরুর দুধে অ্যালার্জি আছে তাদের পনির এড়ানো উচিত। এটি অ্যালার্জি, ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথার কারণ ও হতে পারে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (অতিরিক্ত পনির খাওয়া) কার্ডিওভাসকুলার রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
পনিরের স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ও রয়েছে। যেমন,
কিছু লোকের দুধের প্রোটিন যেমন কেসিনে অ্যালার্জি থাকে। এটি সারা শরীর জুড়ে একটি প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এবং ত্বকে ফুসকুড়ি, সাইনাস কনজেশন এবং ব্রণ জ্বলতে পারে।
অনেকের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা থাকে। সেক্ষেত্রে তাদের পনির না খাওয়াই শ্রেয়। কারণ ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা গ্যাস, পেট ফোলাভাব এবং ডায়রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। অনেক সময় এর কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে।
প্রচুর পরিমাণে পনির খাওয়ার ফলে মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথা হতে পারে। পুরনো পনিরে থাকা টাইরামিন উপাদান কিছু ব্যক্তির মধ্যে মাইগ্রেনকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
যারা মোনোমাইন অক্সিডেস ইনহিবিটরস (MOIs) গ্রহণ করছেন তাদের পনির খাওয়া এড়ানো উচিত। এই ওষুধগুলি হতাশার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এসব ওষুধ পুরনো বা বয়স্ক পনিরে থাকা উপাদান টাইরামিনের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হবে ২ নভেম্বর। পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন তা নিয়ে এখন চলছে আলোচনা, কানাঘুষা; শুরু হয়েছে দৌড়ঝাঁপ।
বর্তমান উপাচার্যই আবার দায়িত্ব পাবেন নাকি নতুন কাউকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হবে এ আলোচনাই চলছে এখন। আলোচিত হচ্ছে কয়েকজন শিক্ষকের নামও। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন কানাঘুষারও অবসান হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ পদে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের মধ্য থেকেই কাউকে বাছাই করার বিষয়টি একপ্রকার নিশ্চিত। বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের এ বিষয়ে আগ্রহ নেই। গুণী কোনো শিক্ষক উপাচার্যবিষয়ক আলোচনার মধ্যে নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সিনেটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা হবে কি না, এ বিষয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশের ১১(১) ধারা অনুযায়ী, উপাচার্য নিয়োগে তিন সদস্যবিশিষ্ট প্যানেল নির্বাচনের দায়িত্ব সিনেটের। সিনেট নির্বাচিত তিনজনের মধ্য থেকে একজনকে উপাচার্য নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এবং রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। রাষ্ট্রপতি তাকে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেন।
রীতি অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের জন্য সিনেটের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করা হয়। কিন্তু এবার সিনেট অধিবেশন হওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। উপাচার্য অধিবেশন ডাকবেন কি ডাকবেন না; ওপর মহলের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কেউ কিছু জানেন না। উপাচার্য নিজেও বিষয়টি খোলাসা করছেন না।
অধ্যাদেশের ১১(২) ধারা অনুযায়ী, কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যেমন অসুস্থতা, ছুটি, অপসারণ বা অন্য কোনো কারণে উপাচার্যের পদ শূন্য হলে একজনকে অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা বলছেন, অধ্যাদেশের নিয়ম অনুসরণ করে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করা হোক। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে এবং আগামী নির্বাচনেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। নতুন উপাচার্যের গ্রহণযোগ্যতাও বাড়বে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, ‘ভিসি প্যানেল নিয়ে আলোচনা নেই। উপাচার্যও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে আমাদের জানা নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট, সিন্ডিকেট সদস্য ও শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল সবচেয়ে বেশি আলোচিত। তাদের মধ্য থেকেই কারোর পরবর্তী উপাচার্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম এ বিষয়ক আলোচনায় রয়েছেন।
অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পান। পরে প্যানেল নির্বাচনের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর উপাচার্য পদে পুনর্নিয়োগ পান তিনি। সাত বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সামলাচ্ছেন তিনি। দুই মেয়াদের বেশি উপাচার্য থাকার নজির নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই তার দায়িত্ব পালনের শেষ দেখছেন অনেকে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে শিক্ষকদের মধ্যেও তাকে নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে পুনরায় নিয়োগ পেতে পারেন তিনি।
ইমেরিটাস অধ্যাপক বা অন্য কোনো গুণী শিক্ষক নেই উপাচার্য নিয়োগের আলোচনায়। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গুণী শিক্ষকদের সামনে আনার যে ধরনের কাঠামো থাকা উচিত তা নেই। যারা তোশামোদ করতে পারে, অন্ধ আনুগত্য প্রকাশ করতে পারে, তাদেরই প্রশাসনের শীর্ষ পদে নিয়ে আসা হয়। সত্যিকারের গুণী শিক্ষক এবং অনেক ভালো গবেষক আছেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারা কখনো প্রশাসনের দায়িত্বে আসতে পারেন না। তারা ব্যক্তিত্বের জলাঞ্জলি দিতেও রাজি নন।’
অতীতে উপাচার্যদের মধ্যে অ্যাকাডেমিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে একটা ভারসাম্য ছিল। এখন তা নেই। এখন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও আনুগত্যের ভিত্তিতে প্রশাসনিক পদগুলো দেওয়া হয়।
পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন বা ভিসি প্যানেল নিয়ে আগ্রহ নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের। বিএনপিঘোষিত এক দফাতেই তারা মগ্ন। যদিও সিনেটে তিনজন প্রতিনিধি থাকায় সুযোগ তাদেরও রয়েছে। সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার পরিবর্তন না হলে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিষয়ে ভাবছি না। এ বিষয়ে আমাদের ফোকাস নেই। আমাদের ফোকাস হচ্ছে এ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। জাতীয় রাজনীতিতে পরিবর্তন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও পরিবর্তন আসবে।’
শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও সাংগঠনিকভাবে আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আমরা নীল দল এখনো এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করিনি। যথাসময়ে দলের সভায় এ নিয়ে কথা হবে। মনোনয়ন কে পাবেন, তার আলোচনাও সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে। বর্তমান প্রশাসনের শীর্ষ তিনজন বিশেষভাবে আলোচনায় থাকবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই দায়িত্ব দেবেন। আমরা উনাদের সমর্থন করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ীই সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।’
বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইনের গতি অনুযায়ীই সব চলবে। এ বিষয়ে যাদের ভাবা প্রয়োজন তারা অবশ্যই ভাববেন।’ সিনেটের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশেষ অধিবেশন ডাকার প্রয়োজন হলে আমরা ডাকি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।