
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ম. তামিম। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল অ্যান্ড ম্যাটেরিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন, পেট্রোলিয়াম প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী। দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতি, জ্বালানিনীতি, গভীর সমুদ্রে পাইপলাইনে গ্যাস খালাস, ভারতের সঙ্গে পাইপলাইন স্থাপন, গ্যাস অনুসন্ধান, সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে তিনি কথা বলেছেন দেশ রূপান্তরের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সম্পাদকীয় বিভাগের সাঈদ জুবেরী
দেশ রূপান্তর : কিছুদিন আগে লোডশেডিং শুরু হলো। এখন পরিস্থিতির উন্নতি হলেও লোডশেডিং হচ্ছে বলে খবর পাই। এ পরিস্থিতিতে শিগগিরই যাবে, নাকি আরও বেশ কিছুকাল থাকবে মনে করেন?
ড. ম. তামিম : বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আমার মনে হয় না। কারণ জ্বালানি স্বল্পতা আছে, গ্যাস সরবরাহ কমে গেছে। কাজেই পুরোপুরি লোডশেডিং মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
দেশ রূপান্তর : কয়েকদিন আগে লোডশেডিংয়ের যে ভয়াবহ অবস্থা হয়েছিল, সেটা কি ফেরত আসতে পারে?
ড. ম. তামিম : এটা আসলে প্রেডিক্ট করা মুশকিল। এটা নির্ভর করে সরকারের জ্বালানি আমদানির ওপরে। সরকার যদি সঠিকভাবে কয়লা আমদানি করতে পারে, তেল-গ্যাস সরবরাহ ঠিক রাখতে পারে তাহলে পরিস্থিতি হয়তো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে না।
দেশ রূপান্তর : তেল, গ্যাস, কয়লা সব মিলিয়ে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রাথমিক জ্বালানির ক্ষেত্রে আমরা তো আমদানিনির্ভর। এটা কি একটা বিপদ ডেকে আনার হুমকি তৈরি করে না?
ড. ম. তামিম : এ ক্ষেত্রে হুমকি নির্ভর করে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থার ওপরে। আমাদের অর্থনীতি যদি ভালো করে তাহলে এটা কোনো হুমকি না। কারণ তখন আমরা কিনে আনতে পারব।
দেশ রূপান্তর : কিন্তু করোনার সময় এবং বর্তমানে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ক্ষেত্রে যা দেখলাম, অর্থ থাকলেও তো অনেক সময় জ্বালানি আমদানি কঠিন হয়ে পড়ছে।
ড. ম. তামিম : এটা তো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। এ ঘটনাগুলোকে তো আর স্বাভাবিক বলতে পারব না আমরা। এ ধরনের অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী সবাই স্ট্রাগল করে। নানাভাবে স্ট্রাগল করে। এটা দিয়ে নরমালি যে প্ল্যানিং সেটা করা হয় না। যুদ্ধের জন্য তো কোনো প্ল্যান থাকে না। মানে একটা যুদ্ধ হবে, সেজন্য আমি প্ল্যানিং করে রাখলাম, এটা তো এমন না। আমরা প্ল্যানিং করি সবকিছু স্বাভাবিক ও ঠিকঠাক থাকবে, সেখানে শুধু চাহিদা আর সরবরাহ এবং মার্কেট যাচাই করে আমরা সেটা করি।
দেশ রূপান্তর : আপনার মতে তাহলে অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো থাকলে আমদানি নির্ভর জ্বালানিনীতি বিদ্যুৎ উৎপাদনে কোনো সমস্যা তৈরি করবে না?
ড. ম. তামিম : কারণ, আমাদের তো বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে। সুতরাং বিদ্যুৎ সরবরাহ করাটা আমাদের জন্য তেমন কঠিন কিছু না। কিন্তু আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি সরবরাহটা আগে দেশের গ্যাসের ওপর অনেক নির্ভরশীল ছিল, সেটা এখন বন্ধ হয়ে গেছে। সেটা এখন আমরা আমদানির মাধ্যমে করছি।
দেশ রূপান্তর : ফুলবাড়ীর কয়লা তোলার প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা কি ঠিক হয়েছে মনে করেন?
ড. ম. তামিম : কয়লা উত্তোলন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত তো অনেক আগের। সেটা ২০০৫/৬ এর দিকে যখন ফুলবাড়ীতে কয়লা উত্তোলনবিরোধী আন্দোলন হয়, সেই সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তখন বিরোধী দলের নেত্রী ছিলেন। তখন তিনি সেই আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করেছিলেন। উনি তখন বলেছিলেন যে আমরা ক্ষমতায় গেলে কয়লা উত্তোলনে যাব না। তো উনি সেটা রক্ষা করেছেন। এছাড়া পরিবেশগত অনেক কথাও বলা হচ্ছে, কৃষিজমির ক্ষতির প্রসঙ্গও বলছেন অনেকে। ফলে এসব কারণ দেখিয়ে বলা হচ্ছে যে আমরা এখন কয়লা উৎপাদন করব না। কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যে কয়লা উত্তোলনের ব্যাপারটা পুনর্বিবেচনা করা দরকার।
দেশ রূপান্তর : উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের বিরুদ্ধে তো আন্দোলন হয়েছিল। এখন কয়লা উত্তোলনের আর চ্যালেঞ্জটা কী?
ড. ম. তামিম : আমাদের দেশে কয়লা উত্তোলনের বড় চ্যালেঞ্জটা হলো কয়লার স্তরের ওপরে একটা পানির স্তর আছে। তো ওই পানিটা কীভাবে ম্যানেজ করব আমরা? একটা হচ্ছে ওপেন কাটিং বা উন্মুক্ত পদ্ধতি আরেকটা হচ্ছে আন্ডারগ্রাউন্ড মাইনিং। আমরা দেখেছি যে আন্ডারগ্রাউন্ড মাইনিংয়ে পাঁচ পারসেন্ট কয়লাও উত্তোলন করা যায় না। যেটা বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ক্ষেত্রে দেখা গেছে। সেখান থেকে আমরা ১২ বছরে মাত্র ১৩ মিলিয়ন ইজ নাথিং, সেখানকার মজুদের সঙ্গে তুলনা করলে। সেখানে হাফ এ বিলিয়ন টনের মতো কয়লা আছে। ডিপ মাইনিংয়ে আসলে আমরা বেশি কয়লা উত্তোলন করতে পারি না। সেক্ষেত্রে সারফেস মাইনিংয়ে কয়লা উত্তোলনই আমাদের জন্য বেশি কার্যকর। এখন সারফেস বা ওপেন কাটিং করা যাবে কি না সেটা নির্ভর করবে কারিগরি বিষয়বস্তুর ওপর। এবং সেটাতে কিছু ঝুঁকি থাকেই। একেবারে ঝুঁকিবিহীনভাবে কোনো কাজ করতে পারব না।
দেশ রূপান্তর : তাহলে কয়লা উত্তোলন করা না করার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তটা কি রাজনৈতিক নাকি টেকনিক্যাল হওয়া উচিত?
ড. ম. তামিম : কয়লা উত্তোলনের সুবিধা-অসুবিধার টেকনিক্যাল যাচাই-বাছাই করা হয়নি। রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্তটা নেওয়া হয়েছে। মানে এক্ষেত্রে কতটুকু রিস্ক আছে বা নেই সেটা জানার জন্য আমরা নিজস্বভাবে টেকনিক্যালি কিছুই করিনি। আবার কোনো তৃতীয় পক্ষকেও এনগেইজ করিনি। অর্থাৎ কোনো কনসালটেন্টকে স্বার্থহীনভাবে যাচাই করতে বলিনি যে ওকে কয়লা ওঠালে আমাদের দেশের জন্য কতটা লাভ হবে তা বের করতে বা কয়লা তুলতে পরিবেশগত কতটা রিস্ক আছে। হয়তো অরিজিনাল যে পরিকল্পনা ছিল তার জন্য সিদ্ধান্তটা ঠিক ছিল, কিন্তু বর্তমানে যে পরিস্থিতি তাতে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতি হবেই এটা ধরে যে আমদানিনির্ভর পরিকল্পনা করা হয়েছিল সেটা কাজ করছে না। এখন আমরা দুটো কাজ করতে পারি এভাবে স্ট্রাগল করে ওয়েট করতে পারি যে সামনে অর্থনীতিটা ভালো হবে এবং পরবর্তী সময়ে জ¦ালানি আমদানিতে আর ঝামেলা হবে না। অথবা আমরা ভাবতে পারি যে- ফের আমরা কয়লা উত্তোলন করতে পারি কি না।
দেশ রূপান্তর : সরকারের এলএনজির মতো জ্বালানি কেনার ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির চেয়ে স্পট মার্কেট থেকে কেনার আগ্রহ বেশি। স্পট মার্কেট তো সব সময়ই অনিশ্চিত। সরকারের কি এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত?
ড. ম. তামিম : হ্যাঁ। সরকার ইতিমধ্যে ওমানের সঙ্গে একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করেছে। ডেফিনিটলি আমাদের স্পট মার্কেটিং থেকে বের হয়ে আসা উচিত। যেহেতু আমাদের যে ক্যাপাসিটি সেটা বেসিক চাহিদা থেকে কম। ধরেন এলএনজিসহ যদি ডেফিসিট ধরি তাহলে আমাদের প্রায় দুই বিলিয়ন ঘনফুট। সেখানে আমাদের ক্ষমতা হচ্ছে ৯০০ মিলিয়ন সর্বোচ্চ, এক বিলিয়নের কাছাকাছি। তো যেখানে আমাদের ডেফিসিট আছে সেখানে তো স্পট মার্কেটিংয়ের কোনো মানে হয় না। কারণ আমরা যাই-ই আমদানি করব সেটাই ব্যবহৃত হবে। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির ভয়টা হচ্ছে আমদানি করলাম কিন্তু ব্যবহার করতে পারলাম না। আমাদের তো সেই অবস্থা না। যাই-ই আমদানি করি না কেন, সেটা আমরা ব্যবহার করতে পারব। মার্কেট আছে, লোকাল ইউজেস আছে। আমি মনে করি আমাদের জ্বালানি আমদানির বেশিরভাগ প্রায় পুরোটাই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে করা উচিত। অল্প কিছু স্পট মার্কেট থেকে হতে পারে।
দেশ রূপান্তর : সম্প্রতি ভারত থেকে ডিজেল আনতে ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন চালু হয়েছে। অন্যদিকে, গভীর সমুদ্র থেকে লাইটার জাহাজের বদলে পাইপলাইনে তেল খালাসের যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। এ দুটি ঘটনাকে কীভাবে দেখছেন?
ড. ম. তামিম : এ দুটোই খুব ভালো উদ্যোগ। ভারতের সঙ্গে এটা হওয়াতে জ্বালানি আমদানির একটা অল্টারনেটিভ রুট খুলেছে। আমাদের আমদানির সবকিছু কিন্তু হয় সমুদ্র দিয়ে। কোনো কারণে যদি আজ মায়ানমারের সঙ্গে যুদ্ধ লাগে বা কারও সঙ্গে কোনো প্রবলেম হয় তাহলে তো এই রুটে মানে সমুদ্রপথে জ¦ালানি আসবে না। তো এসব চিন্তা যদি করি, সিকিউরিটির চিন্তা যদি করি, তাহলে ডেফিনিটলি ভারত থেকে যে পাইপলাইনটা আসছে এটা আমাদের একটা রুট খুলে দিয়েছে। আমাদের জন্য ভালো হয়েছে। প্লাস এটার পরিবহন ব্যয় কম হবে। প্রাইসিংও কিছুটা কম হবে। পাইপলাইনে যেহেতু আসবে লসেসও কম হবে। আর সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং দিয়ে, মানে গভীর সমুদ্র থেকে যে পাইপলাইনে তেল খালাস হবে এতেও আমাদের অনেক সাশ্রয় হবে। লাইটার জাহাজে করে বড় জাহাজ থেকে বারবার তেল খালাসে আমাদের লস আছে, কস্টিং আছে, সময়ের ব্যাপার আছে। এখন সরাসরি গভীর সমুদ্রের বড় জাহাজ থেকে পাইপলাইনে তেল খালাস করে নিয়ে আসাতে এসব লস ও প্রতিবন্ধকতা দূর হবে। ডেফিনিটলি এটা ভালো হয়েছে।
দেশ রূপান্তর : আমাদের গভীর সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়টা তো আগায়নি। এ ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলো কীরকম?
ড. ম. তামিম : উদ্যোগ খুবই অপ্রতুল ছিল, একদম ছিলই না বলা চলে। আমরা গভীর সমুদ্রে সার্ভে করতে চেয়েছি কিন্তু সেখানে দেখা গেছে যে আমরা দুইবার একই কোম্পানিকে সিলেক্ট করেছি কিন্তু দুইবারই তাদের কাজ করতে দেওয়া হয়নি। একবার পুরো টেন্ডারকে ক্যান্সেল করে দেওয়া হয়েছে, আরেকবার মন্ত্রণালয় থেকে একটা অবজেকশন লেটার দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। ফলে কোনো কাজই হয়নি। আমি মনে করি পেট্রোবাংলা বা মন্ত্রণালয় যারাই দায়িত্বে ছিল, তাদের নেতৃত্বেও সিদ্ধান্তহীনতা বা সিদ্ধান্ত নিলেও তা কার্যকর করতে না পারার জন্য গভীর সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানের কোনো কাজই হয়নি।
দেশ রূপান্তর : তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আমাদের বাইরের ওপর নির্ভর করতে হয়। নিজেদের প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা কেমন বা নেই কেন?
ড. ম. তামিম : প্রথমত সমুদ্রে অনুসন্ধানের জন্য বাপেক্সের ক্ষমতা নেই। ফলে সমুদ্রে অনুসন্ধানের জন্য আমাদের বাইরের প্রতিষ্ঠানকে বা থার্ড পার্টিকে ডাকতেই হবে। ধরেন আমরা ১০টা বোয়িং কিনেছি বলে তো এখন বোয়িংয়ের কারখানা খুলতে যাব না। বিশ্বে গভীর সমুদ্রে এ ধরনের অনুসন্ধান করেই ৫/৬টি কোম্পানি। এখন বাপেক্সকে ওই বোয়িং বানানোর কারখানার মতো করে তোলার দরকার কী? এটা অযৌক্তিক। বিশ্বের যে ৫/৬টি কোম্পানি এ কাজ করে তারাই কাজটা করবে। এ ধরনের কাজ হিউজ ইনভেস্টমেন্ট, হিউজ টেকনোলজি, হিউজ নলেজ বেজড। এখন এটা করতে গেলে তো ওই কোম্পানিগুলোকে কম্পিট করার মতো করে করতে হবে। বিলিয়নস অব ডলারস দরকার। ওই ছোট এলাকার জন্য এত ইনভেস্ট আমি কেন করব? এটা তো আমরা রেন্ট করেই করাতে পারি। আর ল্যান্ডের ক্ষেত্রেও যদি আসি এক্ষেত্রে ওসব আন্তর্জাতিক কোম্পানি যেভাবে করে সেই লেভেলে করতে গেলে বাপেক্সকে যে পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার দরকার ছিল কোনো নীতিনির্ধারকরাই সেটার জন্য কিছু করেনি। আর এখন ইট ইজ টু লেইট। এখন বাপেক্সকে ওই পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে কাজ করাতে গেলে অনেক পিছিয়ে যাব আমরা।
জলবায়ু পরিবর্তনকে মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ২০২০ সালের মধ্যে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার তহবিল সংগ্রহের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সেই প্রতিশ্রুতি এখনো অপূর্ণ থাকলেও ২০২৫ সালে এই কর্মসূচির শেষ হওয়ার কথা। অন্যদিকে দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক সংবাদ অনুযায়ী যুক্তরাজ্য সরকার জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় প্রতিশ্রুত ১১.৬ বিলিয়ন ইউরো প্রদানের পরিকল্পনা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছে, এপ্রিল ২০২১ থেকে মার্চ ২০২৬ সালের মধ্যে এই অর্থ ব্যয় করার কথা ছিল।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো বহুমুখী সমস্যা ও ঝুঁকির মুখোমুখি। একদিকে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা এবং অন্যদিকে জলবায়ু অভিযোজন আবার জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দুর্যোগ ও ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা করা। আবার জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা প্রশমনে অর্থনীতিকে কার্বন মুক্ত করা, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার, সবুজ শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলায় সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন। এ জন্যই জলবায়ু তহবিল গঠনে ন্যায্যতা, স্বচ্ছতা ও ধনী দেশগুলোর জবাবদিহিতা দাবি করে আসছে উন্নয়নশীল ও জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর গবেষণা অনুযায়ী, ২০২০ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রকৃতপক্ষে ২১ বিলিয়ন থেকে ৮৩.৩ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে সহায়তা গ্রহণ করেছে, যার বেশির ভাগই ছিল অ-রেয়াতি ঋণ। যা উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলোর ওপর বাড়তি ঋণের বোঝা চাপিয়েছে। একশনএইডের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, জলবায়ু বিপদাপন্ন দেশগুলোর মধ্যে ৯৩ শতাংশই ঋণগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে আছে। সাইক্লোন, বন্যা, খরা, সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি ও ফসলহানির মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় অতিরিক্ত খরচ এই দেশগুলোকে আরও ঋণগ্রস্ত করে তুলছে এবং দেশগুলোর মৌলিক পরিষেবা প্রদান ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করছে। বিশ্বের ষাট শতাংশ স্বল্প আয়ের দেশ জলবায়ু অভিযোজনে যতটা বিনিয়োগ করে তার থেকে প্রায় পাঁচগুণ বেশি ব্যয় করে ঋণ পরিশোধে।
আঙ্কটাড (জাতিসংঘ বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্মেলন)-এর ২০১৯ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নয়ন ও জলবায়ু সম্পর্কিত লক্ষ্যপূরণে বার্ষিক ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। জলবায়ু তহবিলের জন্য আঙ্কটাড চারটি অগ্রাধিকার উল্লেখ করেছে, যেমন উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর ঋণের বোঝা কমানো, উন্নয়নশীল ও জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহযোগিতায় আইএমএফ ঋণ প্রদান কাঠামো পুনর্বিন্যস্ত করা, বিশ্বব্যাপী সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় তহবিল সরবরাহ ও প্রাইভেট ফাইন্যান্সিং। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর দাবি বিনিয়োগ হতে হবে সমান সমান, অভিযোজন ও প্রশমনে এবং জলবায়ু ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, অভিযোজনে বিনিয়োগের সুফল কয়েকগুণ বেশি যদিও ধনী দেশগুলোর অগ্রাধিকার প্রশমনের ওপর। এজন্য তারা বিনিয়োগ করছে নতুন প্রযুক্তি উন্নয়নে, জীবাশ্ম জ¦ালানি থেকে নবায়নযোগ্য জ¦ালানি উৎপাদনে এবং তাদের অর্থনীতিকে কার্বন মুক্ত করার জন্য। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন এখন আর কোনো নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের সমস্যা নয়। শুধু উন্নত দেশগুলোর অর্থনীতি কার্বনমুক্ত ও তথাকথিত ‘নেট জিরো’ প্রতিষ্ঠা করলে হবে না, জলবায়ু ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করতে উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও কার্বনমুক্ত অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
উন্নয়নশীল ও জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য অভিযোজন ও দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতির মোকাবিলা করাই সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ২০২২ সালে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা গ্রহণ করে ২০৫০ সালের মধ্যে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ২৩০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মূলত দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর দুর্বল অবকাঠামো ও ক্ষয়িষ্ণু পরিষেবা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অনেক বেশি অসহায় করে তোলে। আইএমএফের ধারণা অনুযায়ী শুধু সাইক্লোনের কারণে বাংলাদেশে বার্ষিক এক বিলিয়ন ডলারের ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়, যা জিডিপির ০.৭ শতাংশ। জলবায়ু পরিবর্তনের এই ধারা অব্যাহত থাকলে ক্ষয়ক্ষতি ২০৫০ সালের মধ্যে জিডিপির ৯ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। অন্যদিকে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী জলবায়ু সংশ্লিষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ২০২১ সালে বাংলাদেশ আনুমানিক ১১.৩ বিলিয়ন ডলার ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, যেটা ওই অর্থবছরের ২.৪৭ শতাংশ জিডিপির সমান।
দরিদ্র দেশগুলোর দাবির মুখে গত বছর মিসরে অনুষ্ঠিত ২৭তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে ক্ষয়ক্ষতি তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, যা ছিল এযাবৎকালের সম্মেলনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সাহসী সিদ্ধান্ত। পাশাপাশি এই সম্মেলনে গ্লাসগো সম্মেলনের মতো অভিযোজন খাতে অর্থায়ন দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়। নতুন প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অভিযোজনের জন্য ২৩০ বিলিয়নের বেশি ডলার তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। এত এত প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও অনেকেই বলে থাকেন তহবিল গঠনে ধনী দেশগুলোর প্রতিশ্রুতির বাস্তব অগ্রগতি খুবই সামান্য। আসছে নভেম্বর মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অনুষ্ঠিতব্য ২৮তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের আগে জলবায়ু ক্ষয়ক্ষতি তহবিল গঠনের জন্য এ বছরের জুন মাসে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর আমন্ত্রণে প্যারিসে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের অংশগ্রহণে একটি উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সম্মেলনের প্রস্তাবনায় তহবিল সংগ্রহের জন্য শিপিং, এভিয়েশন ও সম্পদের ওপর কর আরোপ ও দরিদ্র দেশগুলোর ওপর ঋণের বোঝা কমানোর কথা বলা হয়েছে, কিন্তু এসব ক্ষেত্রে এই সম্মেলনে অগ্রগতি সামান্য।
বিশ্বে কার্বন নিঃসরণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী জীবাশ্ম জ¦ালানি কোম্পানিগুলো। পৃথিবীর অর্থনীতিকে কার্বনমুক্ত করার জন্য প্রথাগত জীবাশ্ম জ¦ালানি থেকে নবায়নযোগ্য জ¦ালানিতে রূপান্তর আবশ্যক। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অনেকেরই আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় এই রূপান্তর প্রক্রিয়া মোটেও সহজ হবে না। এর জন্য প্রয়োজন ন্যায্য ও যথোপযুক্ত আর্থিক সমর্থন, কারণ সার্বক্ষণিক ও মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া বিশ্বের প্রতিটি মানুষের অধিকার। আর এ জন্য আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রযুক্তি হস্তান্তর প্রক্রিয়া যেমন নিশ্চিত করতে হবে একই সঙ্গে প্রধান প্রধান প্রযুক্তির ওপর মেধাস্বত্ব আইন রহিত করতে হবে। প্যারিসে অনুষ্ঠিত তহবিল সম্পর্কিত বিশ্ব সম্মেলন সফল হয়নি, কিন্তু বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের আগে আসছে মাসগুলোতে এ সম্পর্কিত আরও অনেক উদ্যোগ অপেক্ষায় আছে, সেক্ষেত্রে ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নেই। আর এগুলো যদি ব্যর্থই হয় তাহলে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক ফলাফল নিয়ে বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা আচমকাই সত্য হয়ে ধরা দেবে, যারা সবচেয়ে খারাপ ভুক্তভোগী উন্নয়নশীল দেশগুলো হলেও ধনী দেশগুলো এর প্রভাব থেকে রক্ষা পাবে না।
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
অনেক বছর ধরে শরণার্থীদের ঢল সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ২০১৫ সালে মূলত সিরিয়া যুদ্ধের কারণে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ ইউরোপে প্রবেশ করার পর থেকে ইইউ দিশাহারা হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ভূমধ্যসাগর উপকূলবর্তী দেশগুলোর জন্য সে সংকট বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। অথচ শরণার্থীদের প্রশ্নে ইইউ এখনো কোনো সাধারণ নীতি সম্পর্কে ঐকমত্যে আসতে পারেনি। পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশ শরণার্থীদের বিরোধিতা করে আসছে। জার্মানি, ফ্রান্স ও সুইডেনের মতো দেশ একাই শরণার্থীর বোঝা কাঁধে নিতে চাইছে না। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের রুটে ২০২১ সালের চেয়ে ২০২২ সালে ১১ শতাংশ বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে। ২০২২ সালে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের সমুদ্র ও স্থল রুটে ৩ হাজার ৭৮৯ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর মারা যাওয়ার তথ্য তারা নথিভুক্ত করেছে। আইওএমের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার আঞ্চলিক পরিচালক ওথমান বেলবেইসি বলেন, অঞ্চলটির বিভিন্ন রুটে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের এই উদ্বেগজনক মৃত্যুর বিষয় তাদের নিরাপত্তা-সুরক্ষা বাড়াতে অবিলম্বে মনোযোগের পাশাপাশি সমন্বিত প্রচেষ্টার দাবি রাখে। ভূমধ্যসাগর ক্রমেই হতে চলেছে সলিলসমাধির সাগর। আইওএম জানায়, ২০১৪ সাল থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ২০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন।
১৪ জুন গভীর রাতে গ্রিসের উপকূলে আবারও ডুবেছে প্রায় সাড়ে ৭০০ শরণার্থী বোঝাই একটি জাহাজ। উদ্ধার করা গেছে মাত্র ১০৪ জনকে। সাগরে সলিলসমাধি ঘটেছে পাঁচ শতাধিক মানুষের। এ ঘটনার পর গ্রিসে তিন দিন রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা আর ইউরোপের কিছু নেতার লোক দেখানো দুঃখ প্রকাশ ছাড়া আর কিছু শোনা গেল না। এর ঠিক এক সপ্তাহ আগেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউরোপে শরণার্থীদের প্রবেশের বিষয়ে কড়া আইন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইইউ সদর দপ্তর থেকে বরাবরের মতো এ ঘটনার জন্য মানব পাচারকারীদের শায়েস্তা করার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এই শরণার্থীরা কেন তাদের দেশ ছেড়ে বিপৎসংকুল পথ পাড়ি দিচ্ছেন, সেই উত্তর তারা খুঁজছে না। সেই ১৫০০ শতাব্দীর শেষ দিক থেকেই ইউরোপীয়রা নিজেদের অর্থনৈতিক দৈন্যদশা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় খুঁজতে সমুদ্রপথের পথিক হয়েছিলেন। বণিকের বেশে প্রবেশ করে অপরের ভূখণ্ডের মালিক হয়েছিলেন। আফ্রিকা, এশিয়া, লাতিন আমেরিকা সব মহাদেশেই তারা ব্যবসা করেছেন আর অঢেল মুনাফার পাহাড় গড়ে নিজেদের দেশের চাকচিক্য বাড়িয়েছিলেন। আজ প্রায় ৫০০ বছর পর বিপরীত পৃথিবীর দারিদ্র্য, নিপীড়িত, যুদ্ধ-দাঙ্গাপীড়িত অভাবী অর্ধাহারে থাকা মানুষেরা স্বাবলম্বী মহাদেশের মানুষের কাছে একটু স্বপ্ন দেখতে চাইছেন, একটু আশ্রয় খুঁজছেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন, সেই আশ্রয়ের সলিলসমাধি ঘটছে ইউরোপের সর্বদক্ষিণে ভূমধ্যসাগরের লোনাজলে। এই মানুষদের ইউরোপে আসা রুখতে তারা নিত্যনতুন আইন তৈরি করছে।
জাহাজটি যাত্রা শুরু করেছিল মিসর থেকে। জাহাজটির বেশির ভাগ যাত্রী ছিল সিরিয়া, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের। গ্রিসে রাষ্ট্রীয় রেডিওতে কোস্টগার্ডের একজন মুখপাত্র বলেছেন, বেশির ভাগ যাত্রী সময়মতো জাহাজটি ছাড়তে পারেননি। প্রায় ১০০ শিশুসহ অনেক নারী ডেকের নিচে অবস্থান করেছিলেন। বেশির ভাগ যাত্রীর কোনো লাইফ জ্যাকেট ছিল না। বেঁচে যাওয়া ১০৪ জনকে আপাতত দক্ষিণ গ্রিসের বন্দর কালামাতায় তাঁবুতে রাখা হয়েছে। ৯ মিসরীয়কে জাহাজটির নাবিক ও মানব পাচারকারী সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রিসের বিরোধীদলীয় নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সিস সিপ্রাস গ্রিসের কোস্টগার্ডের আচরণ নিয়ে সমালোচনা করেছেন। বলেছেন ভিন্ন কথা। তিনি ঘটনার পরের দিন কালামাতা বন্দরে উদ্ধারকৃত শরণার্থীদের তাঁবু পরিদর্শনের সময় বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ডুবে যাওয়ার আগে সাহায্যের জন্য ডাকাডাকি করলেও উদ্ধারের জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। জার্মানির ডের স্পিগেল পত্রিকাটি উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, জাহাজটি ডুবে যাওয়ার আগে সবাই চিৎকার করছিল এবং একে অপরকে ধরে রাখার চেষ্টা করছিল। ঘটনার এক দিন পরেই গ্রিসের রাজধানী এথেন্স এবং বন্দর শহর থেসালোনিকিতে অসংখ্য মানুষ ইইউ অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন মানুষ হত্যা করছে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে এ ঘটনায় জড়িত করার সময় এসেছে। কারণ হিসেবে তারা বলেছে, ইইউ মানবাধিকারের প্রসঙ্গে সব সময় কথা বললেও বছরের পর বছর এ ঘটনা ঘটছে।
শরণার্থীদের প্রশ্নে মূল সমস্যা অগোচরে রেখে তারা ইউরোপে নতুন শরণার্থী আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। ৮ জুন লুক্সেমবার্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো শরণার্থীদের জন্য ইউরোপে আরও কড়া নিয়ম করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ইইউ কমিশনার ইভা ইয়োহান্সসনের মতে, এই ঐকমত্য ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। তার মতে, ইইউভুক্ত দেশগুলো এখন থেকে একসঙ্গে কাজ করলে ইউরোপে আগত শরণার্থীদের সমস্যা মানবিক অথচ কঠোর পন্থায় সামলানো যাবে। শরণার্থী বিষয়ে ইইউর দেশগুলোর এই অভিন্ন সিদ্ধান্ত কতটা মানবিক, তা তাদের মুখ্য সংস্কার নীতিটি জানলেই বোঝা যাবে। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশের কোনো একটি দেশের সীমান্তে কোনো শরণার্থী রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করলে প্রথমে আশ্রয়প্রার্থীকে ১২ সপ্তাহের জন্য সীমান্তবর্তী আশ্রয়শিবিরে রাখা হবে। সেখানে সেই রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন যাচাই-বাছাই করা হবে। অর্থাৎ ইইউ ঠিক করবে কোন দেশটি সমস্যাপূর্ণ বা সংকটবহুল এবং আদৌ তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার যোগ্য কি না। নয়তো ১২ সপ্তাহ পর তাকে ফেরত পাঠানো হবে।
ইউরোপের পথে সিরিয়া, লিবিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান বা আফ্রিকার দেশগুলো থেকে কেন এত শরণার্থী জীবন বাজি রেখে নিজের জন্মভূমি ফেলে দুর্গম সাগর বা সড়কপথ পাড়ি দিয়ে ইউরোপের পথে পা বাড়াল, সেই আলোচনা ইউরোপে খুব কম। এই দেশগুলোর মানুষকে বাস্তুহারা করার পেছনে ইউরোপের অনেক দেশ, আমেরিকা আর ন্যাটো জোট তাদের ভুল যুদ্ধনীতি অস্বীকার করতে পারবে না। যুদ্ধের কারণে আজকের যে মানবিক সমস্যা, তাতে তাদের দায়ভারের কথা তাদের ভাবতে হবে।
ভয়ংকর এই স্বপ্নযাত্রায় সর্বস্ব বিক্রি করে দালালদের হাতে তুলে দিচ্ছেন টাকা-পয়সা শেষ সম্বল। কেউ কেউ অবৈধ পথে স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছাতে পারলেও অধিকাংশই হন ভাগ্যাহত। ভাগ্য সহায় হলে অনেকের জায়গা হয় কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে। বাকিদের কারও কারও সলিল সমাধি হয় নৌকাডুবিতে। কেউ প্রাণ হারায় অনাহারে-অর্ধাহারে, নানা রোগ-শোকে। তারপরও জীবনবাজি রেখে মৃত্যুকে হাতে নিয়ে এক মরীচিকার পেছনে ছুটছে হাজার হাজার বাংলাদেশি তরুণ। শুধু বাংলাদেশি নয়, বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে শরণার্থী অভিবাসীদের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশের অন্যতম প্রধান পথ গ্রিস। জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, প্রায় ৭২ হাজার শরণার্থী ও অভিবাসনপ্রত্যাশী এ বছর ইতালি, স্পেন, গ্রিস, মাল্টা ও সাইপ্রাসে গিয়েছেন। এদিকে ইউরোপের অনেক জাতিরাষ্ট্রই এখন মুখের ওপরে দরজা বন্ধ করে দিতে উদ্যত। শরণার্থীদের চাপে তাদের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে, এই ছুতো দেখিয়ে তারা চায় না কোনো শরণার্থী ইউরোপে প্রবেশ করুক। অথচ তারা নিজেদের মানবাধিকারের দর্পণ হিসেবে উপস্থাপন করতে চায় বিশ্ববাসীর কাছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়ে নিজেরা মানবাধিকার ও উন্নয়নের বুলি আওড়াতে ব্যস্ত।
অথচ এসব দেশগুলোর মূল সমস্যার পেছনে ইউরোপীয়রাই দায়ী। তারা একদিকে আফ্রো-এশিয়ার এসব দেশগুলোতে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করে। তারপর এসব দেশ থেকে মূল্যবান খনিজ ও অন্যান্য সামগ্রী লুট করতে বিভিন্ন গোষ্ঠীতে বিভক্ত করে। আবার এদের কাছেই অস্ত্র বিক্রি করে নিজেরা লাভবান হয়। এশিয়া ও আফ্রিকার এসব অঞ্চলে ধ্বংসযজ্ঞ চলছে বহু বছর ধরে। আজ এক দেশ তো কাল অন্য দেশ। এসব যুদ্ধের শিকার নিরীহ আদম সন্তানেরা। নিজ দেশেই তারা আজ পরবাসী। জীবন বাঁচাতে মাইলের পর মাইল পাড়ি দিচ্ছে। ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকায় নিজের প্রাণ বাজি রাখে একটু শান্তিতে বাঁচার আশায়। শরণার্থী সমস্যাটি এখন আর ইউরোপীয় নয়। এ সমস্যাকে গুরুতর বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে আমলে নিয়ে সমাধানের জন্য দ্রুত আন্তর্জাতিক উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক
বাংলা সাহিত্যে ইলিশের ছড়াছড়ি। বুদ্ধদেব বসু কবিতায় ইলিশকে বলেছেন, ‘জলের উজ্জ্বল শস্য’। ইলিশ নিয়ে, বাঙালির গর্বের শেষ নেই। সেই গর্বের জায়গাটি বিস্তৃত করে দিয়েছিল ২০১৭ সালের একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। ওই বছর বাংলাদেশের ইলিশ মাছ ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এরপর বাংলাদেশি গবেষক দল এই মাছের জীবনরহস্য উদঘাটন করায় বাংলাদেশের সাফল্যে আরেকটি পালক যুক্ত হয়েছে।
মাঝে ইলিশের আকাল দেখা দিয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইলিশ আহরণে বলা যায় বিপ্লব ঘটে গেছে। দেশে ইলিশের পরিমাণ বেড়েছে। এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে মূলত ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি। দেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয়গুলোতে গত এক যুগে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। এর একটা কারণ ইলিশ আহরণে নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলার প্রবণতা আগের তুলনায় বেড়েছে। প্রজনন ঋতুতে ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা আগের তুলনায় বেশি কার্যকর হচ্ছে। এ ব্যাপারে জেলেদের সচেতনতা বেড়েছে, সরকারি প্রশাসনের নজরদারির ব্যবস্থাও আগের তুলনায় উন্নত হয়েছে।
দেশ রূপান্তরে শনিবার ‘এক যুগে ইলিশের ৪৬ শতাংশ উৎপাদন বৃদ্ধি’ শিরোনামের প্রতিবেদনেও এর প্রমাণ মেলে। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, বরিশাল বিভাগের অভ্যন্তরীণ নদী এবং সমুদ্র মিলিয়ে গত এক যুগে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে ৪৬ শতাংশ।
জাটকা নিধন বন্ধ ও ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফলভাবে হওয়ায় নদীতে ইলিশের ঝাঁক বাধাহীনভাবে চলাফেরা করতে পেরেছে। তাই ইলিশের বেড়ে ওঠার পাশাপাশি বংশবিস্তার হয়েছে নির্বিঘেœ। এমন পরিস্থিতিতে চলতি মৌসুমে ইলিশ উৎপাদনে বিগত দিনের রেকর্ড ভাঙার প্রত্যাশা করছে বরিশাল মৎস্য বিভাগ। সব মিলিয়ে জেলেরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিও চাঙ্গা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে সাগরে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা ২০ জুলাই শেষ হবে। তাই জেলেরাও নিচ্ছেন সাগরে নামার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। তবে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে দেওয়া সরকারি সহায়তা প্রকৃত জেলেদের হাতে পৌঁছাতে টাস্কফোর্স গঠনের দাবি জানিয়েছেন জেলেরা। এ ছাড়া ইলিশ শিকারে তাদের বিভিন্ন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ প্রান্তিক পর্যায়ের জেলেদের।
নিষেধাজ্ঞার সময়জুড়ে দরিদ্র জেলেদের আয়-রোজগারের কী ব্যবস্থা হবে, তা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। দারিদ্র্যের কারণেই জেলেরা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জাটকা ধরেন। নিষেধাজ্ঞার সময়ে সরকার জেলেদের যে সহায়তা দেয় তা যথাযথভাবে বিতরণ হয় না বলেও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এ সময়ে এবার সারা দেশের জেলেদের ৪০ কেজি করে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার কথা।
একটি জেলে পরিবারে যদি চার জন সদস্যও থাকে, তবে চার জন মানুষের দুবেলা আহারের জন্য দৈনিক ২ কেজি করে হলেও কমপক্ষে ৪২ কেজি চাল দরকার। জেলেদের প্রশিক্ষণ ও উপকরণ-সহায়তার পাশাপাশি ঋণদান কর্মসূচি চালানো দরকার।
ইলিশ মাছ পুষ্টিগুণেও ভরপুর। বাংলাদেশের জিডিপিতে ইলিশের অবদান ১ শতাংশ। প্রতি বছর ইলিশ মাছ রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। বিশে^ মোট আহরিত ইলিশের সিংহভাগ আহরণ করা হয় বাংলাদেশে। প্রায় ২৫ লাখ মানুষ ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বিপণন ও খুচরা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
সার্বিকভাবে ইলিশের প্রজননকালে এ নিষেধাজ্ঞা মেনে চলায় দিন শেষে জেলেরাই যে লাভবান হবেন, সে বিষয়টিও তাদের উপলব্ধিতে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। এজন্য উদ্দীপনামূলক প্রচারাভিযান চালানো যেতে পারে। আশা করি ‘জলের উজ্জ্বল শস্য’ ইলিশ উজ্জ্বলতর হয়ে উঠবে।
১৮৮৯ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন কবি, প্রাবন্ধিক ও পাঠ্যপুস্তক রচয়িতা কালীদাস রায়। তার রচিত কাব্যগুলোর মধ্যে প্রথম কুন্দ (১৯০৮), কিশলয় (১৯১১), পর্ণপুট (১৯১৪), ক্ষুদকুঁড়া (১৯২২) ও পূর্ণাহুতি (১৯৬৮) বিশেষ প্রশংসা লাভ করে। গ্রামবাংলার রূপকল্প অঙ্কনের প্রতি আগ্রহ, বৈষ্ণবপ্রাণতা ও সামান্য তত্ত্বপ্রিয়তা ছিল তার কবিতাগুলোর বৈশিষ্ট্য। কালীদাসের শৈশব কেটেছিল মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর শহরে। সেখান থেকে বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি শিক্ষকতার বৃত্তি গ্রহণ করেন। কলকাতার ভবানীপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশনে দীর্ঘকাল শিক্ষকতা করেছিলেন তিনি। ১৯১৩ সালে রংপুরের উলিপুর মহারানী স্বর্ণময়ী হাইস্কুলের সহ-শিক্ষক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু হয়। পরে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন সাত বছর।
চব্বিশ পরগনার বড়িশা হাইস্কুলে শিক্ষকতা করার পর তিনি কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউশনের ভবানীপুর শাখায় প্রধান শিক্ষক পদে যোগ দেন এবং ১৯৫২ সালে অবসর গ্রহণ করেন। রবীন্দ্র ভাবধারায় প্রভাবিত হয়ে তিনি কাব্যচর্চা শুরু করেন। এরপর কবিতা, ছোটগল্প, রম্য সাহিত্য ইত্যাদি রচনা করেন। সাহিত্যকর্মের অবদানের জন্য কালীদাস রায় অনেক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তিনি আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন।
এ ছাড়া তিনি রংপুর সাহিত্য পরিষদ থেকে ‘কবিশেখর’ উপাধি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’ ও ‘সরোজিনী স্বর্ণপদক’, বিশ্বভারতীর ‘দেশিকোত্তম’ উপাধি, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’ এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডি. লিট ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৭৫ সালের ২৫ অক্টোবর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
আইন মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি বলছে, আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে। সরকারের এমন নেতিবাচক সিদ্ধান্তের পর এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি দেয়নি দলটি। তবে এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি এক দফার আন্দোলনের সঙ্গে যোগ হতে পারে বলে জানা গেছে।
৫৩ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও দলীয় নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গুরুতর। বিদেশে নেওয়া ছাড়া তার উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়। সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসনকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ চেয়ে তার ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। এতে মতামত দিতে আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় আইন মন্ত্রণালয় এতে মতামত দেয়। এ বিষয়ে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেছেন, তার সাময়িক মুক্তির আদেশটা বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) কারাগারে নেওয়া হলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া বাসায় চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশে যেতে পারবেন না এমন দুটো শর্ত সাপেক্ষে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে দন্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। দরখাস্তটা নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে আটবার দন্ড স্থগিত করা হয়েছে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার কোনো সুযোগ আইনে থাকে না। আমরা ৪০১ ধারার উপধারা ১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ ব্যাখ্যা করে মতামত পাঠিয়েছি। আমাদের মতামত হলো, ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে, সেটা অতীত এবং মীমাংসিত। এটা আর খোলার কোনো উপায় নেই।’
এক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে (খালেদা জিয়া) সাজা স্থগিত রেখে যে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, সেটা বাতিল করে তারপর পুনরায় বিবেচনা করার সুযোগ থাকলে সেটা করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই উপমহাদেশে ৪০১ ধারার ক্ষমতা যখন প্রয়োগ করে, তখন এটি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না বলে সিদ্ধান্তের নজির আছে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন যে আদেশটা আছে, সেটা যদি বাতিল করা হয়, বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) যদি আবার কারাগারে নেওয়া হয়, তাহলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু এ অবস্থায় আদালতে যেতে পারবেন না।’ খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের বিষয়টি বাতিল করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা অমানবিক হবে, বাতিল করব না।’
আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এক বার্তায় বলেন, ‘আজকের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, দেশে আইনের শাসন নেই। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক ভয়ংকর তামাশা করা হচ্ছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, নির্বাহী বিভাগ চাইলেই কাউকে মুক্তি দিতে পারে।’
খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় বিএনপি কী এখন ভাবছে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে।’
আর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর নীলনকশার অংশ। মানবতাবিরোধী ও সরকারের বর্বর ইচ্ছা পূরণের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।’
দলটির নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদন আইনগতভাবে বিবেচনা না করে, রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে। ফলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করতে না পারলে বিএনপিপ্রধানের মুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমেই এই ইস্যুর সুরাহা করতে চায় দলটি।
কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেখানে বলা হয়েছে, তাকে “দেশে চিকিৎসা নিতে হবে”, তার বদলে “দেশে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন” বলাই যথেষ্ট। কিন্তু দেশে চিকিৎসা গ্রহণের শর্তারোপ করা হলে তা যে চিকিৎসার বিবেচনায় না করে রাজনীতির বিবেচনায় করা হবে, সেটা বোঝার মতো বুদ্ধি সাধারণ মানুষের আছে।’
অসুস্থতার কারণে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের মার্চে করোনার সময় টানা দুই বছর কারাভোগের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরেছিলেন খালেদা জিয়া। পরে এ পর্যন্ত তার মুক্তির মেয়াদ আটবার বাড়িয়েছে সরকার।
এরই মধ্যে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তাকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ দিতে পরিবারের পক্ষে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এ বিষয়ে আইনি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদনটি পাঠায়।
বিএনপিপ্রধানকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছিল ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি সরকার ইতিবাচকভাবে দেখতে পারে’। কিন্তু সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ‘বিদেশে যাওয়ার আবেদন করতে হলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরত গিয়ে করতে হবে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের পর সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় এবারও ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না। গত শনিবার এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এ শঙ্কাই প্রকাশ করেছিলেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা আছে, যেকোনো মূল্যে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকার মরিয়া। সে কারণে হয়তো খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি ঝুঁলিয়ে রাখতে চাইছে এমনটাই মনে করছে সরকারবিরোধীরা। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দিলেই সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলেও বিরোধী নেতাদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। তবে শর্ত দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দল যাতে সম্মত না হয়, সে কথাই নেতাদের বলে রেখেছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির হাইকমান্ড মনে করছেন, এ অবস্থায় চলমান এক দফার আন্দোলনে খালেদা জিয়ার মুক্তি বিষয়টি থাকলেও সেটাকে আরও জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে; যাতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নেয়।
জানা গেছে, এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে দলটি। আজ সোমবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক রয়েছে। সূত্র বলছে, জোটগত ছাড়াও দলীয়ভাবেও কর্মসূচি আসতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক চিকিৎসক জানান, হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তার কেবিনে এক্স-রে মেশিন নেওয়া হয়েছিল গতকাল ভোরে। শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে না এলে সিসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ ছিল। দুপুরে তার ইসিজি ও ইকো ডায়াগ্রাম করানো হয়েছে। ফুসফুসের পানি অপসারণের জন্য তার ডান পাশে যে ক্যাথেটার লাগানো ছিল, সেটা আপাতত খুলে ফেলা হয়েছে।
লিভার জটিলতা ছাড়াও ৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ফুসফুস, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। গত ৯ আগস্ট ফিরোজায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে দলীয় মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) সেটআপে কেবিনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছে।
জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘ওনার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সে জন্য তাকে দ্রুত বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে পাঠানো দরকার।’
হতাশায় শেষ খালেদার অপেক্ষা
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
সাড়ে ৩ বছরে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স
দেশের বিদেশি মুদ্রা আয়ের অন্যতম হাতিয়ার প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের ধস নেমেছে। সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশে অবস্থানকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধপথে ও ব্যাংকের মাধ্যমে মাত্র ১৩৪ কোটি ডলারের বিদেশি মুদ্রার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। গত সাড়ে তিন বছরে এটি সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স। ৪১ মাস আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে এর চেয়ে কম ১০৯ কোটি ডলার সমপরিমাণের রেমিট্যান্স এসেছিল। রেমিট্যান্স-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দামের ব্যবধান বেশি হলে হুন্ডিতে লেনদেন বেড়ে যায়। আর যখন হুন্ডির চাহিদা বাড়ে তখন রেমিট্যান্স কমে যায়। গত মাসে ব্যাংকের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দাম ৬ থেকে ৭ টাকা বেশি ছিল। তাই বেশি লাভের আশায় বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন প্রবাসীরা।
ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজার ছাড়াল
এ বছর অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে ডেঙ্গু। গতকাল রবিবার ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজারের কোটা ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) সারা দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬ জনে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৮৮২ জন।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
অকাজের ৩৭০০ কোটির সেতু
সেতু হয়। কিন্তু সড়ক হয় না। সেতু করার জন্য নানান প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু সেসব সেতু করেই দায়সারা বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়। ভোগান্তি সাধারণ মানুষের। আবার যতগুলো সেতু করার কথা ততগুলো না করেও প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ করার প্রতিবেদনও দেওয়া হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সারা দেশের গ্রামের রাস্তাগুলোতে সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পে। প্রকল্পের এসব অনিয়ম উঠে এসেছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবি আ.লীগ নেতার
আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার। গত শনিবার রাতে তার ফেসবুকে এ দাবি জানিয়ে স্ট্যাটাস দেন তিনি।
মুহূর্তেই স্ট্যাটাসটি ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিএনপির অসংখ্য নেতা, কর্মী-সমর্থক তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রশংসা করেন। অন্যদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নিন্দা জানিয়ে দলীয় সব পদ থেকে তার বহিষ্কারের দাবি জানান।
আবদুল মোতালেব হাওলাদার তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘রাজনৈতিক কারণে আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দেওয়া হউক।’
স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন অধরাই
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
ফুটপাত থেকে মদের বার সবখানে চাঁদাবাজি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের কমিটি পার করেছে পাঁচ বছরের বেশি সময়। মেয়াদোত্তীর্ণ এ কমিটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। কিছু নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার তথ্য রয়েছে। সর্বশেষ মদের বার ভাঙচুর ও লুট করে আবারও আলোচনায় এ কমিটির নেতাকর্মীরা।
নতুন কমিটি না হওয়ায় নেতারা বেপরোয়া আচরণের পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছেন বলে মনে করেন সাধারণ কর্মীরা। তারা বলেন, সংগঠনের কর্মকাণ্ডও স্থবির হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান তারা।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মো. রিপন মিয়াকে সভাপতি ও মাহমুদুল হক জুয়েল মোড়লকে সাধারণ সম্পাদক করে তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের জন্য আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে গত বছর ১২ জুন ৩২১ জনের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য।
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ অনুযায়ী, দেশে ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২২ হাজার ১১৯। এ তালিকায় রয়েছে যারা রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, মাজার, ফুটপাত, সিঁড়ি, ওভারব্রিজের নিচে, লঞ্চ টার্মিনাল, ফেরিঘাট, মার্কেটের বারান্দায় দিন কাটান। আর বস্তিতে বসবাস করছে ১৮ লাখ ৪৮৬ জন। তারা মূলত শহর ও উপশহর এলাকায় টিনের ঘর, সেমিপাকা ঘর বা ঘিঞ্জি পাকা ঘরে বাস করে। তবে বস্তিবাসী কারা সে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১৬ সালে সরকার আবাসন নীতিমালা করেছে। আবাসন উন্নয়ন তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। আবাসন সংকট নিরসন করতে হলে সরকারকে আবাসন তহবিল করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বস্তিবাসী, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত কারা তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। না হলে বোঝা যাবে না কত মানুষ বস্তিতে থাকে।’
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে আবাসন সংকট কাটছে না। স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে আবাসন।’
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে ৯ লাখ গৃহহীন মানুষকে চিহ্নিত করে। ইতিমধ্যে আট লাখ মানুষের গৃহের ব্যবস্থা করেছে; প্রায় ৪০ লাখ মানুষের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বাকিদের জন্যও শেখ হাসিনা ব্যবস্থা করবেন। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্যও আবাসনের ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা তার সৈনিক হিসেবে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
জানা যায়, বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার সবার জন্য আবাসন। অঙ্গীকার পূরণে সরকার নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সারা দেশে ৩০টি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, নোয়াখালী, যশোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, শরীয়তপুর, নড়াইল, খুলনা, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব প্রকল্পে ৬ হাজার ৪৩২টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হয়েছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২৭টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পে ৫ হাজার ৯৩০টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হবে। শেরপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, হবিগঞ্জ, সিলেট, ঝিনাইদহ, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে ১৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৩৫টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় রাজউক পূর্বাচল, ঝিলমিল, উত্তরা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় আবাসন প্রকল্পে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ফ্ল্যাটগুলো উচ্চমূল্যের কারণে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। পূর্বাচল, ঝিলমিল ও উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প গ্রহণ করছে সরকার। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনেও বিভিন্ন সংস্থা আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন শহরে বসবাসরত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সম্পদশালী ব্যক্তিরা। যাদের অনেক ফ্ল্যাট আছে তারা আরও ফ্ল্যাট কিনছেন। কিন্তু বাস্তুহারা, দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত সরকারি এসব আবাসনের সুবিধা পাচ্ছেন না। অল্প দামে জমি অধিগ্রহণ করে সরকার আবাসন প্রকল্প তৈরি করে যাদের নামে বরাদ্দ দিচ্ছে তারা রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে জমির মালিক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত।
জাতিসংঘ ১৯৮৫ সালে বিশ্ব বসতি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশে^ অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার এ দিবসটি পালিত হয়।
বিশ্বজুড়ে বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউ এয়ারের তথ্য অনুযায়ী আজ সোমবার (০২ অক্টোবর) ঢাকার বাতাসের মান ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’। এদিন সকাল ১০টার দিকে ১২৯ স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে ঢাকা।
এসময় ১৮৩ স্কোর নিয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকার প্রথম স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর। ১৬২ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা। ১৬০ স্কোর নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি। ১৫৬ স্কোর নিয়ে চতুর্থ ভারতের আরেক শহর করাচি। ১৫৩ স্কোর নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে ইতালির মিলানো।
এ ছাড়া একইসময়ে একিউআই স্কোর ১১৭ স্কোর নিয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে চীনের উহান। ১১৩ স্কোর নিয়ে অষ্টম স্থানে রয়েছে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর। ১১২ স্কোর নিয়ে নবম স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। ১০৯ স্কোর নিয়ে দশম স্থানে রয়েছে সৌদি আরবের রিয়াদ।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার দূষিত বাতাসের শহরের এ তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই স্কোর একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে কি না, তা জানায়।
একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। একইভাবে একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং স্কোর ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে থাকলে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়।
অপেক্ষা আর মাত্র ৩ দিনের। তারপরই শুরু হয়ে যাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ডের চার বছরের রাজত্ব আরও চার বছর টিকিয়ে রাখার আর বাকিদের সেই মুকুট কেড়ে নেওয়ার লড়াই শুরু হবে গতবারের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই দিয়েই।
শাহরুখ খানকে দিয়ে প্রোমো আর রণবীর সিংকে দিয়ে থিম সং, আইসিসি জানান দিয়েছে ক্রিকেটে বলিউডি আবেগের মিশেল ভালোই থাকবে। কিং খানের ‘জাওয়ান’ কাঁপাচ্ছে পর্দা, কাটতি বাড়ছে বক্স অফিসে; বিশ্বকাপে আইসিসির পকেট ভরবে তো?
প্রস্তুতি বলছে, ভরবে। উইকেটে হবে রান উৎসব, লড়াই হবে ধুন্ধুমার। তাতেই ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ হবে এক ব্লকবাস্টার মেগা হিট।
মাস তিনেক আগে, বিশ্বকাপের মূলপর্বের ম্যাচগুলো যে ১০ ভেন্যুতে আয়োজন করা হবে সেই ভেন্যুগুলোর কিউরেটরদের সঙ্গে বসেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান কিউরেটর। সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপের একটাই মন্ত্র, রান চাই।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে, ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে ৩ ওয়ানডের সিরিজ খেলেছে সেই ম্যাচগুলো যদিও বিশ্বকাপের ভেন্যুতে হয়নি তবে সেই সব ম্যাচেও রানের বন্যা বয়েছে।
প্রথম দুটো ওয়ানডেতে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার করা ২৭৬ রান অনায়াসে তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছে ভারত। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ঠেঙিয়ে তুলেছেন ৩৯৯ রান। তিন নম্বর ম্যাচে আবার অস্ট্রেলিয়া করেছে ৩৫২ রান, যা তাড়া করে ভারতও গিয়েছিল ২৮৬ অবধি।
উদ্বোধনী ম্যাচ হবে গুজরাতের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। এখানে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় গত ১ ফেব্রুয়ারি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। ম্যাচে শুভমান গিল করেন সেঞ্চুরি, ভারত করে ৪ উইকেটে ২৩৪ রান আর জবাবে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ৬৬ রানে।
বোঝাই যাচ্ছে, উইকেটের ধরন বুঝে ব্যাট করতে পারলে ৫০ ওভারে এখানে রানবন্যা হবে। বিশ্বকাপে ভারত-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। দুই দল এখানে মুখোমুখি হয়েছে বহুবার, পোশাকের রঙ কখনো রঙিন কিংবা কখনো সাদা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ কমেনি। এই মাঠে অস্ট্রেলিয়া ২৬৯ রান করে ভারতকে ২১ রানে হারিয়েছে সবশেষ ম্যাচে।
আইপিএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ঘরের মাঠে সবশেষ মৌসুমে ধোনির ‘ইয়েলো আর্মি’ ৮ ম্যাচ খেলে ২০০ রানের ওপরে করেছে দুইবার, একবার জিতেছে অন্যবার হেরেছে। তবে দুই ইনিংসেই ২০০’র বেশি রান হয়েছে দুটো ম্যাচেই। অর্থাৎ চাইলে চেন্নাইকেও ব্যাটিং স্বর্গে পরিণত করা সম্ভব।
বিশ্বকাপের আগে দারুণ ছন্দে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হারার পর টানা তিন ওয়ানডে জিতে সিরিজ তো নিশ্চিত করেছেই, টানা তিন ম্যাচে ৩০০’র ওপর রান করেছে। চতুর্থ ওয়ানডেতে তো ৪০০ পার করেছে প্রোটিয়ারা। ব্যাটিং উইকেটে তারাও যে কোনো প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। হেনরিক ক্লাসেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৮৩ বলে খেলেছেন ১৭৪ রানের ইনিংস। বিধ্বংসী রূপে ফিরছেন ডেভিড মিলারও।
প্রোটিয়ারা প্রথম ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে। সেখানে অবশ্য সবশেষ হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ম্যাচেও খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে তারা অলআউট হয়েছিল মাত্র ৯৯ রানে। দিল্লির মাঠটা হয়তো খানিকটা স্পিনারদের দিকেই ঝুঁকবে, তবে অন্য মাঠগুলোতে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের রান উৎসবে মেতে উঠতে দেখার সম্ভাবনা জোরালো। তাই অনেক সাবেক ক্রিকেটারই প্রোটিয়াদের দেখছেন শেষ চারে।
বিশ্বকাপের আগে ক্লাসেন ছাড়াও ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস খেলেছেন ১৮২ রানের ইনিংস, দারুণ ছন্দে ইংল্যান্ডের ডাভিড মালানও। তবে সেরা ছন্দে নিঃসন্দেহে শুভমান গিল। সবশেষ ৫ ইনিংসে দুটো শতরান আর একটা হাফসেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেলও আছেন দারুণ ছন্দে। দুটো হাফসেঞ্চুরি আর একটা সেঞ্চুরি সবশেষ ৫ ইনিংসে। হায়দ্রাবাদে বিশ্বকাপের অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের ৩৪৫ রান কিউইরা তাড়া করেছে ৩৮ বল হাতে রেখে।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করেন, এই বারের বিশ্বকাপে রানবন্যায় বোলারদের জন্য কাজটা হবে কঠিন। দেশ রূপান্তরকে আশরাফুল বলেন, ‘আমাদের পেসাররা গত এক দেড় বছর ধরে খুবই ভালো করছে। তবে যেহেতু ভারতের মাটিতে খেলা, আমরা দেখেছি যে সাড়ে ৩০০’র বেশি রান হচ্ছে প্রতিটা ম্যাচে। কেউ যদি ভালো না করে, তাকে মনে রাখতে হবে যে টুর্নামেন্টে পরের ম্যাচে ফিরে আসতে হবে। একজনের দিন খারাপ যেতেই পারে, কোনো ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান উঠেই যেতে পারে। ৯টা ম্যাচের ভেতর ৪-৫টা ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান হতে পারে। তাই বোলারদের ফিরে আসার মানসিকতা থাকতে হবে।’
বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমও বলেছেন যে দেড় মাসের আসরে প্রস্তুত থাকতে হবে যে কোনো কিছুর জন্যই, ‘দেড় মাসের আসর, ৯টা ম্যাচ এই সময়ে খেলতে হবে বা তারও বেশি। অনেক উত্থান-পতন হবে। যে কোনো কিছুর জন্যই তৈরি থাকতে হবে।’
রান উৎসবের বিশ্বকাপ যে হতে যাচ্ছে, তার সব রসদই মজুদ। মাঠগুলোকে করা হয়েছে ব্যাটিং স্বর্গ, বিশ্বকাপে আসার আগে সেরা সেরা ব্যাটসম্যানরাও আছেন ছন্দে। শুধু প্রশ্ন এটাই, রান উৎসবের এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে রান করবেন কে? সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাটিংয়ের ছবিটা যে মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।