
বাংলাদেশের উন্নয়ন একটি মহলের কাছে বিভ্রম বা ভ্রান্ত। সেই ১৯৭২ সালে বিশ্বব্যাংকের কোনো কোনো কর্মকর্তা অনেক গবেষণা করে আবিষ্কার করেছিলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন হওয়া দেশটি চিরকাল পরনির্ভর থাকবে। উন্নত বিশ্বের দয়ায় বেঁচে থাকবে। যদি কোনো কারণে দেশটি ঘুরে দাঁড়াতে পারে, যদি উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে তাহলে ধরে নিতে হবে, দুনিয়ার যে কোনো দেশ উন্নত হবে। অলৌকিক কাণ্ড ছাড়া এটা সম্ভব হবে না, এটাও তারা বলে দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের এক সময়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারও এটা মনে করতেন। তিনি ১৯৭১ সালে ইয়াহিয়া-টিক্কা খানের বাঙালি নিধনযজ্ঞে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তিনি শত্রু গণ্য করতেন এবং ১৫ আগস্টের ঘাতকদের তিনি মদদ দিয়েছিলেন, এমন অভিযোগ খোদ যুক্তরাষ্ট্রের অনেকেই অমূলক মনে করেন না। কেউ আর পশ্চাৎপদ থাকবে না। সত্যিই যখন বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের সারি থেকে উন্নয়নশীল দেশের সম্মান পাওয়ার মতো অবস্থায় চলে গেল, তখন কেউ বা বলা শুরু করল এ এক প্রহেলিকা বা হেঁয়ালি কিংবা ধাঁধা। তারা মাথার চুল টেনে অস্থির পদচারণা করতে করতে বলেন- সব ঝুটা, সব ঝুটা। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ? নিজের অর্থে পদ্মা সেতু? যমুনায় রেল সেতু? ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ? ঢাকার বুকে মেট্রোরেল? কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে প্রশস্ত সড়কপথ? এক যুগের বেশি সময় ধরে কোটি কোটি স্কুল ছাত্রছাত্রীকে সরকারি ব্যয়ে পাঠ্যবই প্রদান? নিশ্চয়ই বাঁশ ব্যবহার হয়েছে রডের পরিবর্তে, কিংবা সিমেন্টের বদলে দেওয়া হয়েছে মাটি। এদের কাছে বাস্কেট কেস ও তলাবিহীন ঝুড়ি মুখরোচক শব্দ হয়ে উঠেছিল।
‘বাংলাদেশে আমেরিকার ভিসা নিষেধাজ্ঞা’ এটিও এই মহলের কাছে মুখরোচক শব্দ। কত যে চর্চা চলছে ‘বিশেষজ্ঞ’ মহলে। মনে হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সর্বক্ষণ ঢাকায় এদের কাছে ফোন করে জানতে চান কী করবেন এবং কী করবেন না? শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয় ভারত, চীন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশেরও উচিত তাদের পরামর্শ মেনে কাজ করা কিংবা না করা। আমেরিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী পর্যায়ের কেউ বাংলাদেশ সফরে এলে তারা অবলীলায়, শীতেও ‘লু বা গরম হাওয়া’ বইয়ে দিতে পারেন কিংবা জাতীয় মর্যাদার তোয়াক্কা না করে বলতে পারেন রেজিম চেঞ্জ এক্সপার্ট আসছেন বাংলাদেশে, এইবার শেখ হাসিনার রক্ষা নেই। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশ থেকে যেন কর্মী নেওয়া না হয়, সেজন্য অপচেষ্টায় ঘাটতি নেই এ মহলের।
বাংলাদেশের কোন কোন সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশের আইজিপি থেকে থানার ওসি, রাজনৈতিক নেতা কে কে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা না পাওয়ার দলে একটি মহল তা ‘ফাঁস করে দিচ্ছে’ প্রতিদিন। কিছুদিন আগে জানা গেল বিএনপি নামের দলটি সরকারি কর্মকর্তা ও পুলিশ-র্যাবের সদস্যদের নামের তালিকা তৈরি করছে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে দেওয়ার জন্য। তারা যুক্তরাষ্ট্রকে আরও বলছে আপনাদের কথামতো যদি শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে না চায়, যদি বাংলাদেশের স্থল বা জলসীমায় সামরিক স্থাপনার প্রস্তাবে রাজি না হয় তাহলে ভিসা প্রদান না করার পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে পোশাক কেনা বন্ধ করে দিন, যুক্তরাষ্ট্রে থেকে যে সব বাংলাদেশি কষ্ট করে আয়ের পর কিছু ডলার স্বদেশে স্বজনদের কাছে পাঠায় তা বন্ধ করে দিন। এতেও যদি কাজ না হয়, ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা নস্যাতের জন্য যেমন বঙ্গোপসাগরে পারমাণবিক অস্ত্রবাহী সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিলেন, তেমন কোনো পদক্ষেপ নিন।
ক্ষমতার জন্য একটি মহল নিজের পায়ে কুঠারাঘাত করতে দ্বিধাবোধ করে না এটা জানা আছে। একটি জাতীয় দৈনিক ৫ জুলাই বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর কাছে প্রশ্ন রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র ‘ভিসা নীতি’ বাস্তবায়ন করতে অনেক সমস্যায় পড়বে। বিশেষ করে, তাদের বাংলাদেশ দূতাবাসে লোকবলের অভাব। তাদের পক্ষে সব ধরনের ডকুমেন্টস সংগ্রহ করা কঠিন। এর উত্তরে বিএনপির নেতা বলেছেন ভিসানীতি বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্রকে সব ধরনের সহায়তা দিতে বিএনপি প্রস্তুত। এমন ফ্রি অব কস্ট বা বিনা পয়সার অফার আমেরিকা কোনো দেশ থেকে কি পেয়েছে? না-কি গিভ অ্যান্ড টেক কাজ করছে তোমরা কিছু পাবে, আমরা বিনিময়ে কিছু দেব, প্রয়োজনে উজাড় করে দেব!
এটাও হতে পারে বিএনপি নিছকই বাগাড়ম্বর করছে, প্রহেলিকা বা ধাঁধা সৃষ্টি করতে চাইছে। শেখ হাসিনাকে সহায়তাকারী সরকারি অফিসার ও পুলিশের তালিকা হচ্ছে এটা রটিয়ে দিয়ে তাদের মনোবলে সামান্যও যদি চিড় ধরানো যায়, সেটাই লাভ।
অর্থনীতির ক্ষতি করাও মতলব হতে পারে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার শঙ্কায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি স্বাভাবিক কাজ না করে কিংবা কাজে ঢিলা দেয়, তাহলে নৈরাজ্য সৃষ্টি হতে পারে এবং বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে কৃষি ও শিল্প খাতে।
কূটনৈতিক অঙ্গনেও প্রভাব পড়তে পারে। বিএনপি গুজব-মিথ্যাচার-বিভ্রান্তি সৃষ্টির একটি নেটওয়ার্র্ক দাঁড় করিয়েছে, যা বাংলাদেশের বাইরেও সক্রিয়। কোরবানির সময়ে একটি ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হলো ‘ঢাকার রাস্তায় রক্তের-স্রোত’। করোনার সময় প্রচার হয়েছিল লাখ লাখ মানুষ মারা যাবে, দাফন করার লোক পাওয়া যাবে না। নেত্র নিউজ ২০২০ সালের ২১ মার্চ জানিয়েছিল- Bangladesh is facing up to two million deaths from the COVID-19 epidemic if immediate steps are not taken to suppress the virus, a leaked inter-agency UN memo has warned. সংবাদ-সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল কয়েকটি বিশ্বখ্যাতিসম্পন্ন গবেষণা সংস্থার। এর মধ্যে বাংলাদেশের একটি বেসরকারি সংস্থাও ছিল। কিন্তু পরে তারা জানায় এমন গাঁজাখুরি কিছু তারা প্রকাশ বা প্রচার করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভিসানীতির’ বরাত দিয়ে একটি মহল যা করছে তাকে ‘গাঁজার নৌকা পাহাড় ডিঙিয়ে যায় অবলীলায়’ বৈ কিছুই বলা যায় না।
কুচক্রী মহলটি আগামী নির্বাচনকে টার্গেটে রেখেছে, সন্দেহ নেই। গত বছরের অক্টোবরে তারা বলেছিল ১০ ডিসেম্বরের পর খালেদা জিয়ার কথায় চলবে বাংলাদেশ। এরপর সাত মাস চলে গেছে, তাদের মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়নি। তারা ভেবেছিল শেখ হাসিনা থাকছেন না, খালেদা জিয়া আসছেন, সেটা প্রচার হলেই প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দলে দলে বিএনপির ঝাণ্ডা তুলে ধরবে এবং নির্বাচনে বিএনপির হয়ে কাজ করবে। এখন ভিসানীতির ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র বুঝিয়ে দিয়েছে যে, তারা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে চায় না, বিএনপিকে চায়। জাতিসংঘ, আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংকের কেউ বাংলাদেশে এলেও তারা রব তোলে এইবার শেখ হাসিনার রক্ষা নেই। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে আলোচনায় বসলেও তাদের পুলক জাগে ‘দুই নেতা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিলিত হয়েছেন।’
তাদের কী আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে গুজব-গালগল্পের শেষ নেই। সেখানে জো বাইডেনের হালুম ধ্বনি শুনে নরেন্দ্র মোদি কীভাবে মেকুরে পরিণত হয়েছিলেন, এমন ‘প্রত্যক্ষদর্শীর’ বিবরণ জানা গেছে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। এ আলোচনায় শেখ হাসিনাকে ‘সেফ এক্সিট’ প্রদানের বিষয়টিও উঠেছে বলে আমাদের জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে ভিসানীতি বাস্তবায়নে ফ্রি-সার্ভিস প্রদানে অতি উৎসাহী মহলটি। অথচ কে না জানে, এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কোনো নেতা সেফ-এক্সিট সুবিধার কাঙাল ছিলেন না।
যুক্তরাষ্ট্র আমাদের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ দেশ। অসীম সামরিক শক্তিধর দেশটি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সদস্য। কূটনীতির অঙ্গনে তাদের গুরুত্ব বাংলাদেশ উপলব্ধি করে। আমেরিকা বোমারু বিমান উড়িয়ে কোনো দেশকে ধুলায় মিশিয়ে দেওয়ার মতো কাণ্ড ঘটালে পাহাড়ের ওপর উঠে লাঠির খেলা দেখিয়ে তাদের ঘায়েল করা যাবে না, সেটা বাংলাদেশ জানে। তারা ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে অনেক দেশকে চাপ দেয়, রেজিম চেঞ্জের চেষ্টা করে আমাদের তা জানা। তবে এটাও জানা যে, তারা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর মতো রাজনৈতিক নেতাদের তরফে ফ্রি সার্ভিসের অফার এলেই লুফে নেওয়ার মতো অপরিপক্ব নয়। তাদেরও হিসাব-নিকাশ থাকে। শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশকে কতটা বদলে দিয়েছেন এবং বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের সারিতে নিয়ে যাওয়ার অপার সম্ভাবনা তৈরি করেছেন, সে খবর বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতারা তাদের না জানালেও সত্য জানার সূত্র অবশ্যই জানা আছে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক মির্জা নুরুল হুদা ১৯৬২’র জুলাই মাসে পাকিস্তান পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হলেন। পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী হাফিজুর রহমানকে কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী করা হলে, তার শূন্য পদে এম এন হুদাকে পছন্দ করা হলো। ১৯৬৫’র মার্চে পরিকল্পনা কমিশন থেকে পদত্যাগ করে মন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন। ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ অপরাহ্ণে রাওয়ালপিন্ডিতে সরাসরি আলোচনার জন্য ডেকে নিলেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আইয়ুব খান। ১৯৬৮’র ডিসেম্বরেও একবার ডেকেছিলেন, তিনি তখন পূর্ব পাকিস্তানে বিরাজমান অসন্তোষের কারণগুলো জানতে চেয়েছেন। এবার জানতে চাইলেন গভর্নর মোনেম খানের কথা। এম এন হুদার আত্মজীবনীমূলক ইংরেজি গ্রš’ মাই সেভেন ডিকেড’স জার্নি ব্রিটিশ ইন্ডিয়া, পাকিস্তান অ্যান্ড বাংলাদেশ থেকে এ বিষয়ে খানিকটা তুলে ধরছি :
প্রেসিডেন্ট হঠাৎ আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, মোনেম খান (পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর) এত অজনপ্রিয় কেন?
আমি হেসে জবাব দিই, ‘আমার বলাটা অন্যায় হবে... আমি তার কেবিনেটের একজন মন্ত্রী। আপনি তার কর্মপদ্ধতি তো অবশ্যই জানেন। তিনি শিক্ষক, ছাত্র এবং সবাইকে তার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছেন।’
প্রেসিডেন্টকে স্মরণ করিয়ে দিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পদাধিকার বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর, গভর্নর মোনেম খানের কাছ থেকে ১৯৬৪ সালে ডিপ্লোমা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। এ নিয়ে মহাগোলযোগ ও উপদ্রব সূচিত হয়। ১৯৬৮’র শেষ নাগাদ মোনেম খানের জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজন হতে থাকে। গাড়িতে এমনকি এয়ারপোর্ট পর্যন্ত যেতেও তিনি নিরাপদ বোধ করতেন না। রাস্তা এড়াতে তাকে হেলিকপ্টারে উড়িয়ে আনা হতো। স্বচ্ছতার প্রশ্নে আমি প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বেরিয়ে সোজা গভর্নরের কাছে চলে যাই এবং তার সম্পর্কে যে আলাপ হয়েছে সেটি আড়াল করে অন্য সব বিষয়ই তাকে জানাই। গভর্নর মোনেম খানের সামান্য প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকতে পারে। তবে মনে হয়েছে যে তিনি বুঝতে পেরেছেন তার দিন ঘনিয়ে এসেছে।
১৯৬৮’র ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের পর অনেকবারই গুজবটা হুদার কাছে এসেছে যে তাকেই মোনেম খানের জায়গায় বসানো হচ্ছে। এটাকে তেমন বিশ্বাসযোগ্য মনে করেননি। কিন্তু ১৯৬৯’র ১০ মার্চ ‘শেখ মুজিব রাওয়ালপিন্ডিতে আমাকে বললেন মোনেম খানের কাছ থেকে আমাকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের দায়িত্বভার নিতে হবে। আমি তখন ঢাকায় ফিরছিলাম। বললেন তার সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই আমাকে ফেরার জন্য তিনিও চাপ দিলেন।’
পরবর্তী কিছু অংশ তার রচনা থেকে অনূদিত : ‘‘পাকিস্তানের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং তথ্য সচিব আলতাফ গহরের কাছ থেকে আমার গভর্নর হওয়ার ইঙ্গিত পাই। এক-দুদিনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব আমাকে ডাকলেন এবং ১৩ মার্চের একান্ত বৈঠকে বললেন, আমাকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের দায়িত্ব নিতে হবে। আমি বললাম ‘না’। প্রেসিডেন্ট সত্যিই আমার আবেগ ও দেশপ্রেমের কাছে আপিল করলেন, একমাত্র আমিই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে পারব এবং দেশের এই সংকটজনক পরিস্থিতিতে এটাই আমার কাছে দেশের চাওয়া। তারপরও আমি যখন না বলতে থাকলাম তিনি বললেন, এখনই আপনাকে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হবে না। ঢাকা ফিরে যান, প্রস্তাবটা নিয়ে ভালো করে ভাবুন আর এক সপ্তাহ পর ফিরে এসে আমাকে বলুন, আমি আপনার চড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নেব। তিনি যা পরামর্শ দিলেন তাই করলাম। যখন এয়ারপোর্টে এলাম, দেখলাম শেখ সাহেবও একই ফ্লাইটে ঢাকা ফিরছেন। আমরা যখন এয়ারপোর্টে পৌঁছি, লোকে লোকারণ্য। তারা এসেছেন শেখকে স্বাগত সংবর্ধনা জানাতে এবং যারা রাউন্ড টেবিল বৈঠকে তার বিরোধিতা করেছেন তাদের নিন্দা জানাতে। সৌভাগ্যবশত যারা শেখের বিরোধিতা করেছেন তাদের কেউই সেই ফ্লাইটে না থাকায়, অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি।’’ পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হওয়ার পক্ষের ও বিপক্ষের যুক্তিগুলোর বিচার করা তার কাছে কঠিন কাজ মনে হয়। পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ করলেন। শেষ পর্যন্ত চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। মোনেম খান ছুটিতে যাচ্ছিলেন, ১৮ মার্চ ১৯৬৯ একই ফ্লাইটে রাওয়ানপিন্ডিতে পৌঁছলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করলেন এবং সম্মতিসূচক সিদ্ধান্ত জানালেন। প্রেসিডেন্ট সন্তুষ্ট হলেন। ঢাকা ফেরার আগে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে সাক্ষাতের পরামর্শ দিলেন।
বাকিটা এম এন হুদার লেখার অনুসৃতি : ঢাকা রওনা হওয়ার আগের দিন জেনারেল ইয়াহিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। এক ঘণ্টার আলোচনায় আমি কেমন করে পূর্ব পাকিস্তানের বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতি শান্ত করব সে কথা বললাম। মনে হলো সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং আমার পরিকল্পনাতে আশ্বস্ত। তিনি আমাকে বললেন, ‘আপনি যা বলেছেন তা করতে পারলে আমাকে তাহলে এসবের মধ্যে ঢুকতে হবে না। সাধ্যমতো চেষ্টা করুন একমাস সময় নিন। ঢাকায় কর্তৃপক্ষ যদি আপনাকে পর্যন্ত সহযোগিতা না করে তাহলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং আমাকে আলিঙ্গন করে বললেন ‘খোদা হাফেজ’।
২২ মার্চ ১৯৬৯ সকাল, দুপুর নাগাদ আমার ঢাকায় পৌঁছার কথা। সে হিসাব করেই বিকেলে গভর্নর হিসেবে শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত আমার ফ্লাইট লাহোরে অনেক দেরি করে ফেলে। পৌঁছাতে সন্ধ্যা পেরিয়ে যায়। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি হয় ২৩ মার্চ ১৯৬৯ সকালে। আমাকে শপথ করান আমার বন্ধু, প্রধান বিচারপতি বি এ সিদ্দিকী। শপথের পরপরই আমি হাইকোর্ট কমপ্লেক্সে তিন নেতার (একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং খাজা নাজিমউদ্দিন) মাজারে এবং আমার শ্বশুর পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার (১৯৬২-৬৩) তমিজউদ্দিন খানের মাজারে ফাতেহা পাঠ করি। বিকেল ও সন্ধ্যেবেলায় রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ শেখ মুজিবুর রহমান, মওলানা ভাসানী, নুরুল আমিন ও অন্যদের বাসায় গিয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করি। তারা সবাই আমাকে সাদরে গ্রহণ করেন এবং নভেম্বরে (১৪৬৯) অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তারা পরদিন সকালে গভর্নর হাউজে আমার সঙ্গে বৈঠকে বসতেও সম্মত হন। বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পুনরুদ্ধারে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়; আগামী জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুতির সিদ্ধান্তও গ্রহণ করা হয়। ২৩ তারিখ সন্ধ্যায় শহরের বিভিন্ন অংশে যখন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি; সর্বস্তরের জনগণ করতালি দেয় এবং আমার উদ্যোগের শুভকামনা করে। কোথাও কোথাও ভিড় এত বেশি যে মোটরক্যাড এগোতে পারছিল না। আমি সুযোগটা কাজে লাগাতে গাড়ি থেকে বেরিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলি, তারা আমার বিনীত আচরণের প্রশংসা করেন।
২৩ মার্চ সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে আমি রেডিওতে ভাষণ দিই। বিকেলবেলায় এই ভাষণ রেকর্ড করা হয়। তখন আমার পাশে আমার স্ত্রী কুলসুম হুদা এবং তিন সন্তান নাজমুল, সিমিন ও জারিন বসা ছিল। আমি বিশেষ করে ছাত্রদের উদ্দেশ্য করে বলি, তারাই প্রতিবাদ ও আন্দোলনের অগ্রনায়ক। আমি তাদের স্মরণ করিয়ে দিই, আমার স্ত্রী ও আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক। আমি তাদের অভিযোগের কারণ জানি, আশা করি শিগগিরই প্রতিকার করতে পারব। আমি বুঝতে পেরেছি, ভাষণটি সর্বমহলে আন্তরিকতার সঙ্গে গৃৃৃহীত হয়েছে।
২৫ মার্চ ১৯৬৯ সকালে আমি সংবাদ সম্মেলনে দেশি ও বিদেশি সাংবাদিকদের সামনে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে আনতে আমার পরিকল্পনা সম্পর্কে ধারণা দিলাম। আগের দিন ২৪ মার্চ স্থানীয় সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সঙ্গে আমার ভাবনা ও পরিকল্পনা শেয়ার করি। সব বৈঠকেই আমি সবার সাহায্য ও সহযোগিতা কামনা করি যাতে ছয় মাস সময়ের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনটা সম্পন্ন করতে পারি। শেখ মুজিব যদিও নিজস্ব কারণে বৈঠকে আসেননি তিনি আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী, নির্বাচন অনুষ্ঠানে পরিকল্পনায় সম্মত, নিজেও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। সংবাদপত্রের কাভারেজ ও সংবাদের ধরন সহানুভূতি এবং প্রশংসাসূচক।
জনগণ ও গভর্নরের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনতে আমি ছোট ছোট শুভেচ্ছাসূচক নির্দেশনা পাঠাই। গভর্নর হাউজের (বঙ্গভবন) সামনের রাস্তা গণচলাচলের জন্য খুলে দিই (আগে বন্ধ ছিল)। গভর্নরের মোটরক্যাডে সাইরেন বাজাবার প্রথা রদ করার নির্দেশ দিই। এসব শুভেচ্ছা ও বিনয়ের নিদর্শন হিসেবে প্রশংসিত হয়। ২৩ মার্চের ভাষণে বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছে আবেদন রেখেছি যেন তারা আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে আমাকে সহযোগিতা করেন যাতে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির সরকার গঠনের জন্য নির্বাচনের আয়োজন করতে পারি। ছাত্র-শিক্ষকের যে সাড়া আমি পেয়েছি তাতে অভিভূত। ২৫ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. এ বি এম হাবিবুল্লাহ আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসে জানালেন শিক্ষকদের প্রস্তাবিত ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হচ্ছে। জগন্নাথ কলেজের একজন ছাত্রনেতা এসে কিছু দাবি জানালেন এবং তারাও ধর্মঘট প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনা করতে যাচ্ছেন। এ ধরনের ধনাত্মক অগ্রগতিতে আমি সন্তুষ্ট ও উৎসাহিত বোধ করি।
২৫ মার্চ থেকে পূর্ব পাকিস্তানে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। কোনো অকাক্সিক্ষত ঘটনার সংবাদ নেই। নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতে শেখ মুজিব ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পুরো ট্রেনই ভাড়া করে নিয়েছেন। কিন্তু হায়! রাওয়ালপিন্ডি কর্তৃপক্ষ-সামরিক জান্তা মনস্থির করে ফেলেছে বেসামরিক শাসন অব্যাহত রাখতে দেবে না। আমাকে পূর্ব পাকিস্তান শান্ত করতে একমাস সময় দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন জেনারেল ইয়াহিয়া খান। সেদিন সন্ধ্যায় সারা পাকিস্তানে সামরিক আইন জারি হলো। যখন এই ঘোষণা আসে আমি একটি সভায় বক্তৃতা করছিলাম। সে রাতেই গভর্নর হাউজ ত্যাগ করে বাড়ি ফিরে আসি।
তার এডিসি মেজর এমজি জিলানি চিফ সেক্রেটারিকে ফোন করলেন, গভর্নর সাহেবের কি গভর্নর হাউজ ছেড়ে দেওয়া উচিত? খাঁটি সিএসপির মতো তিনি জবাব দিলেন, গভর্নর নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন। জিওসি মেজর জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খানকে ফোন করলে তিনি খাঁটি ফৌজি ভাষায় বললেন, হ্যাঁ, তিনি যেতে পারেন।
জিলানি অতঃপর গভর্নরকে তার মিন্টো রোডের বাসায় পৌঁছে দিলেন।
লেখক: সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ও কলামিস্ট
পুরো বিশ্ব এক টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গত এক বছরে জীবনযাত্রার সংকট কেবলই তীব্র হয়েছে। দিন যত গড়াচ্ছে, বেশিরভাগ মানুষেরই আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষা করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছে। কবে যে যুদ্ধটা থামবে। আর বিশ্ব ফিরে পাবে তার চিরচেনা স্বাভাবিকতা এটাই এখন সবার বড় চিন্তার বিষয়। স্বল্প, মধ্যম বা উন্নত দেশ ভালো নেই কেউই। বিশেষ করে, অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতিই সব সর্বনাশের মূল। আর এর মধ্যেই আসছে আমাদের জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচন মানেই অস্থিরতার শঙ্কা। তাই এই পূর্বানুমান করা মোটেও অসাধ্য নয় যে, নিশ্চিতভাবেই আমাদের জন্য এক দুঃসহ সময় অপেক্ষমাণ। তবে নির্বাচনী বছরে অর্থনীতির অবস্থা যে রকমই থাকুক না কেন, শেয়ারবাজারের পরিস্থিতি একটু ভালো থাকে সাধারণ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবাই এরকমই আশা করেন। বিশেষ করে মাহাবুব সাহেবের মতো বিনিয়োগকারীরা যারা বিনিয়োগের সব নিয়মকানুন শিকেয় তুলে, জীবনের সব কষ্টার্জিত সঞ্চয়টুকু আরও বেশি ভালো থাকার আশায় শেয়ারবাজারের মতো একটি ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় বিনিয়োগ করে আজ সর্বস্বান্ত। অবশেষে তাচ্ছিল্য ও ঔদাসীন্যপূর্ণ এক জীবন অতিবাহিত করছেন। তাই তো দূরাশার কালো মেঘ ভেদ করে যখন এক চিলতে আলো দেখা যায় তখনই মনে স্বপ্ন জাগে, ভাবে সুদিন বুঝি ফিরে আসবে। স্বাভাবিকভাবেই অন্য সবার চেয়ে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা একটু স্বপ্নচারী। নির্বাচনের আগে এটি সরকারের শেষ বাজেট। তাই তো নির্বাচনী বাজেট নিয়ে বিনিয়োগকারীদের অনেক প্রত্যাশা নিশ্চয়ই অর্থমন্ত্রী এবারের বাজেটে মাহাবুব সাহেবদের জন্য কোনো সুখবর রেখেছেন। আশা-নিরাশার দোলাচলে বিনিয়োগকারীরা। ব্রোকার হাউজগুলোও বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতিতে সরগরম। সবকিছু ভুলে তারা নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন। অন্তত লেনদেনের চাঙ্গাভাবে এটাই প্রতিভাত হয়। গত বছরের নভেম্বরের পর লেনদেন ছাড়িয়েছে হাজার কোটি টাকার ওপর। লেনদেনের ওপর ভর করে ঝিমিয়ে থাকা সূচকেও দেখা যাচ্ছে, কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। কারণ হিসেবে অনেকে মনে করছেন, শেয়ারবাজার প্রাণবন্ত ও বিনিয়োগবান্ধব করার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে যে প্রণোদনাগুলো প্রস্তাব আকারে পাঠানো হয়েছে, তা থেকে বাজেটে অর্থমন্ত্রী নিশ্চয়ই কিছু না কিছু বিবেচনা করবেন। যা শেয়ারবাজার স্থিতিশীলতায় ভূমিকা রাখবে। যেমন বন্ড থেকে সুদের আয়ের ওপর কর অব্যাহতি, যা একটি শক্তিশালী বন্ড বাজার তৈরি করবে। একটি কার্যকরী বন্ড বাজার অর্থনীতিকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করতে পারে। আবার দেখা যাচ্ছে, বিনিয়োগকারীরা সাধারণত শেয়ারবাজার থেকে লভ্যাংশ আকারে যে মুনাফা লাভ করেন, তা কিন্তু কোম্পানিগুলোর কর-পরবর্তী মুনাফা। তাই এই লভ্যাংশের ওপর আবার কর, এটি এক ধরনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের করারোপ। এটি বাতিল করে লভ্যাংশের ওপর উৎসে কর চূড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচিত হলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জের স্টেকহোল্ডারদের উৎসে কর হ্্রাস করতে হবে। এটি এই মন্দা বাজারে তাদের টিকে থাকতে সহায়তা করবে। এসএমই বোর্ডের অধীনে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য রেয়াতযোগ্য হারে কর আরোপের দাবি জানানো হয়েছে। তাহলে ওই কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্তির জন্য উৎসাহী হবে এবং শেয়ারবাজারের গভীরতা বৃদ্ধি করবে। মূলত এই প্রস্তাবনাগুলো নিয়েই বিনিয়োগকারীদের একটু বাড়তি প্রত্যাশা। নিশ্চয়ই শেয়ারবাজারের জন্য বাজেটে ভালো কিছু অপেক্ষা করছে।
দেখা গেছে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত নামমাত্র ৪৯ জন কালোটাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছেন। অর্থমন্ত্রীও হতাশ তাই চলতি অর্থবছরে অর্থমন্ত্রী দেশের মধ্যে থাকা কালোটাকা বিনিয়োগের পথ বন্ধ করে দিয়ে, বিদেশে পাচারকৃত অর্থ সুযোগ দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এখানেও তিনি ব্যর্থ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে সরকারের এ সহজ সুযোগ কেউ গ্রহণ করেছে এমনটি জানা যায়নি। এনবিআর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রচারের অভাব ও আস্থার সংকটে কেউ বৈদেশিক সম্পদ ফেরত আনার সুযোগ নেয়নি। তবে এটি কীভাবে আরও প্রচার করা যেত, সে সম্পর্কে তারা স্পষ্ট করে কিছু জানাননি।
মানুষের উপার্জন কমে গেছে। অন্যদিকে লাগামহীন মূল্যস্ফীতিতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ব্যয় বেড়েছে। ফলে মানুষের হাতে উদ্বৃত্ত অর্থ থাকছে না। তাই ব্যাংকে যেমন আমানত কমছে, তেমনি অন্যান্য সঞ্চয়ী উপকরণেও বিনিয়োগ প্রবণতা কমছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক জরিপে জানা গেছে, অর্থনীতির এই অবস্থায় বাংলাদেশে মাথাপিছু ঋণ গ্রহণ বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ । ৩৭ শতাংশ পরিবার ঋণ গ্রহণ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। এই যখন সামষ্টিক অর্থনীতির হাল। সেখানে শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী। আবার যেখানে অর্থমন্ত্রী আগামী বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য কোনো সুখবর রাখেননি; বরং বাজেট পাঠে একবারের জন্যও শেয়ারবাজারের নাম উচ্চারণও করেননি। বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনেও দেখা গেছে, অর্থমন্ত্রী, সচিব ও গভর্নর শেয়ারবাজার প্রশ্নের উত্তর, একে অপরকে পাস দিয়েছেন। আশ্চর্যের বিষয় এর কোনো নেতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়েনি। সাম্প্রতিক সময়ে বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, অনেক শেয়ার ফ্লোর প্রাইস ছেড়ে ওপরে উঠে গেছে। কিন্তু ভালো মৌলভিত্তি শেয়ারের কোনো ক্রেতা নেই। লেনদেনে শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ভালো মৌলভিত্তি শেয়ার আতশি কাচ দিয়ে খুঁজে বের করতে হয়। লেনদেন যা হয়, এর এক-তৃতীয়াংশ নির্দিষ্ট একটি সেক্টরের। জানা যায়, সেই সেক্টরে নাকি সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই কোনো কোনো শেয়ারদর বেড়ে তিন-চারগুণ হয়েছে। এটি কি কোনো স্বাভাবিক বাজার? নাকি সেই পুরনো বীমা খাতের প্রেতাত্মারা বাজার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। আবার অনেকে বলেন, এবারের বাজেটে তালিকাভুক্ত আর অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে করের পার্থক্য আরেকটু বাড়ানো যেত কি না। এটি করলে নিঃসন্দেহে ভালো হতো। তবে ভেবে দেখার বিষয় হলো, শেয়ারবাজারে যেসব ভালো কোম্পানি রয়েছে, সেগুলো কি যথাযথ মূল্যে রয়েছে? বাজার কি এই শেয়ারগুলোর প্রতি যৌক্তিক আচরণ করছে? এটা কি প্রমাণ করে না আমাদের শেয়ারবাজার এখনো সেই ম্যাচিউর জায়গায় পৌঁছায়নি। এ বাজারে বাস্তবতা নেই, আছে অকারণে প্রত্যাশার প্রসারণ। বাজার যখন কোনো একদিকে মোড় নেয়, তখন সবাই সেদিকেই ছুটতে থাকেন। এটাকে বলে হার্ড মেন্টালিটি। অনেক বেশিসংখ্যক বিনিয়োগকারী কারসাজির প্ররোচনায় নির্দিষ্ট বা কমসংখ্যক কিছু শেয়ারের পেছনে যুক্তিহীনভাবে ছোটেন। চিন্তা-চেতনার কোনো বালাই নেই। সবাই এখানে স্বপ্নে পৌষ দেখেন, কিন্তু দিগন্তে অপেক্ষমাণ সর্বনাশের কথা কেউ ভাবেন না। দার্শনিক সান্তানার বিখ্যাত একটি উক্তি ‘যারা অতীত মনে করতে পারেন না, দ-নীয়ভাবে তারা একই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটাবেন’। সেই পথ ধরেই বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বারবার একই পরিণতি। সুযোগসন্ধানী চক্রের কলকাঠি নাড়ানোই শেয়ারবাজারের ইতিহাস। এখানে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কোনো বিনিয়োগ নেই। আবার কেউ করলেও বিনিয়োগসুরক্ষা নেই, সুশাসন নেই। অব্যবস্থাপনার শেষ নেই।
যে দেশে মেয়ের বান্ধবীর ননদের হাজব্যান্ডের কথা শুনে, কোনো অর্থনীতিবিদ নিজে, তার ছেলেমেয়ে, স্ত্রী বা কাজের বুয়া, এমনকি বাড়ির দারোয়ান ও ড্রাইভার সবাই একসঙ্গে ধনী হওয়ার আশায় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন, সে বাজারের পরিস্থিতি এর চেয়ে ভালো আর কীই-বা হবে? আর এই দুর্গম পথের কথা বললে এটি তো সহজে শেষ হওয়ার নয়।
লেখক : পুঁজিবাজার বিশ্লেষক
১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কবি আল মাহমুদ। তার প্রকৃত নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার সাধনা হাই স্কুল এবং পরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন। সংবাদপত্রে লেখালেখির সূত্র ধরে তিনি ঢাকা আসেন ১৯৫৪ সালে। ঢাকা থেকে প্রকাশিত সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত সমকাল পত্রিকা এবং কলকাতার নতুন সাহিত্য, চতুষ্কোণ, ময়ূখ, কৃত্তিবাস ও বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত বিখ্যাত ‘কবিতা’ পত্রিকায় লেখালেখির সুবাদে ঢাকা-কলকাতার পাঠকদের কাছে তার নাম সুপরিচিত হয়ে ওঠে এবং তাকে নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয়। কাব্যগ্রন্থ ‘লোক লোকান্তর’ সর্বপ্রথম তাকে স্বনামধন্য কবিদের সারিতে জায়গা করে দেয়। ১৯৭৫ সালে তার প্রথম ছোটগল্প গ্রন্থ ‘পানকৌড়ির রক্ত’ প্রকাশিত হয়। ১৯৯৩ সালে বের হয় তার প্রথম উপন্যাস ‘কবি ও কোলাহল’। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং যুদ্ধের পরে দৈনিক গণকণ্ঠ নামক পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু তাকে শিল্পকলা একাডেমির গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের সহপরিচালক পদে নিয়োগ দেন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে পরিচালক হিসেবে ১৯৯৩ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার শহরমুখী প্রবণতার মধ্যেই ভাটি বাংলার জনজীবন, গ্রামীণ আবহ, নদীনির্ভর জনপদ, চরাঞ্চলের জীবনপ্রবাহ এবং নরনারীর চিরন্তন প্রেম-বিরহকে তার কবিতায় অবলম্বন করেন। আধুনিক বাংলা ভাষার প্রচলিত কাঠামোর মধ্যে স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ততায় আঞ্চলিক শব্দের প্রয়োগ তার অনন্য কীর্তি। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে মাত্র দুটি কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। প্রকাশিত গ্রন্থ : লোক লোকান্তর, কালের কলস, সোনালী কাবিন, মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো, আরব্য রজনীর রাজহাঁস, বখতিয়ারের ঘোড়া, অদৃশ্যবাদীদের রান্নাবান্না, দিনযাপন, দ্বিতীয় ভাঙ্গন, একটি পাখি লেজ ঝোলা ইত্যাদি। কবি আল মাহমুদ ৮২ বছর বয়সে ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।
কক্সবাজারে ছিনতাইয়ের ঘটনা শুরু হয়েছে অনেক আগে। একসময় ছিনতাইকারীদের মূল টার্গেট ছিলেন পর্যটকরা। কক্সবাজারের অনেক বিচে রাতের বেলায় নিরাপত্তা তেমন একটা থাকে না। যতই বলা হোক, পুলিশ ছিনতাইকারী ধরতে বদ্ধপরিকর এটা শুধু কথার কথা। পুলিশ ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে পারছে না এটা কানার ভাই অন্ধও বিশ্বাস করবে না। আন্তরিকতা এবং দায়বদ্ধতা থাকলে, পুলিশ কতদূর কী করতে পারে তা আমরা জানি। কিন্তু রহস্যজনক কারণে, ছিনতাই বন্ধ হচ্ছে না। বর্তমানে শহর ছেয়ে গেছে ছিনতাইকারীতে। কয়েক বছর আগে, খোদ পুলিশ কনস্টেবলকেই ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে মরতে হয়। সমুদ্রের ব্যস্ততম বিচ লাবণীতে এই ঘটনা ঘটে। যে কারণে, এই বিচের প্রবেশমুখের রাস্তায় একটি নোটিস টানানো রয়েছে। কক্সবাজারবাসী তো বটেই, ছিনতাইকারীদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না পর্যটকরাও। অন্যদিকে, শহরবাসীও রয়েছেন আতঙ্কে। সেখানে যেন আগের চেয়ে গতি বৃদ্ধি করে ছিনতাই-ডাকাতি শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন প্রায় নির্বিকার। কোনো কিছুতেই তাদের বিকার নেই। যে কারণে অপরাধের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে। শুরু হয়েছে মাদক কারবার, ভূমিদস্যুতা এমনকি হত্যাকা-ও। কিন্তু কোনো ঘটনারই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায়নি অপরাধীরা। কক্সবাজার সদর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলছেন, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিকই রয়েছে। যেসব ঘটনা ঘটেছে তার অধিকাংশই পুলিশ ট্রেস করেছে। উদ্ধার হয়েছে মালামাল, গ্রেপ্তারও হয়েছে অনেকে। তবে এটাও সত্য এখনো কিছু ঘটনা অমীমাংসিত রয়ে গেছে। সেগুলোর সমাধানে নিরলস কাজ করছে পুলিশ।
কক্সবাজারে নিয়মিতভাবে যেসব ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক কারবার এবং ভূমিদস্যুতার ঘটনা ঘটছে তা যদি ‘বিচ্ছিন্ন’ হয়, তাহলে প্রশ্ন আসে ‘ছিন্ন’ ঘটনা কেমন? এর মানে কী, প্রকারান্তরে ছিনতাইকারীদের আরও উসকে দেওয়া! দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদন জানাচ্ছে শহরের ৩০টি স্পট রাতের বেলা ভয়ংকর হয়ে ওঠে। সেখানে প্রায় প্রতিদিন শহরে প্রকাশ্যে ঘুরছে দেড় শতাধিক ছিনতাইকারী। পৌরসভার ৩০টি পয়েন্টে ঘটছে নিয়মিত ছিনতাইয়ের ঘটনা। স্থানগুলো চিহ্নিত হলেও এসব এলাকায় নেই কোনো বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা। এরপরও যদি এসব ঘটনা শহরের বিচ্ছিন্ন ঘটনা হয়, তাহলে বিষয়টি সচেতন মানুষের জন্য অসম্ভব দুঃখজনক। শহরের অধিকাংশ ছিনতাইপ্রবণ এলাকায় পুলিশের কোনো তৎপরতা নেই। একজন সাংবাদিক যদি ছিনতাইয়ের স্পট চিহ্নিত করতে পারেন, সেখানে চৌকস পুলিশ সদস্য সেটা পারেন না একথা কোনোভাবেই কক্সবাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। বিষয়টি পুলিশ বাহিনীর জন্য হবে লজ্জার। একইসঙ্গে পুলিশের ওপর সাধারণ মানুষের এখনো যতটুকু আস্থা রয়েছে, সেটাও আর থাকবে না। গণমাধ্যমে এই ধরনের নিন্দনীয় ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর, তার প্রভাব পড়বে সারা দেশেই। এর ফলে শুধু কক্সবাজারবাসী নন দেশের সমুদ্রবিলাসী ও ভ্রমণপিপাসু মানুষের মধ্যেও বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তাহীনতা এবং আস্থার অভাব দেখা দিতে পারে। ‘আমরা কক্সবাজারবাসী’র সাধারণ সম্পাদক যখন বলেন, প্রায় প্রতিদিনই চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, এমনকি খুনের মতো ঘটনা ঘটছে শহরে। আমাদের নিরাপত্তা দিতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে বর্তমান পুলিশ।
তাহলে আর পুলিশের ওপর নির্ভরতার জায়গাটি থাকল কোথায়? শহরের সাধারণ মানুষ এবং পর্যটকদের আইনশৃঙ্খলাজনিত স্বাভাবিক পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্ব পুলিশেরই। কারণ তাদের কাজই হচ্ছে, অপরাধের দমন। এই ঘটনাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মনে রাখতে হবে, কক্সবাজার শহরের মানুষ এবং সমুদ্রসৈকতে আগত পর্যটকরা যদি আইনশৃঙ্খলার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ না পায় তাহলে তার জবাবদিহি অবশ্যই উচ্চপদস্থ কাউকে করতে হবে এমনটি আমরা প্রত্যাশা করতেই পারি। পর্যটন শহর কক্সবাজার হচ্ছে নির্মল বিনোদনের জায়গা নগরবাসী এবং পর্যটকদের কাছে এমন কথাই বদ্ধমূল হবে এটাই প্রত্যাশা।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।
প্রাচীন সময় থেকে মানুষের খাদ্যতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে চীজ বা পনির। গরুর দুধের তৈরি পনিরে শরীরকে সুস্থ রাখার প্রয়োজনীয় সব উপাদান পাওয়া যায়।
বর্তমানে সময়ের সাথে সাথে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পনিরের ব্যবহার। আর তাই বিস্কিট থেকে শুরু করে পাউরুটি, পাস্তা, পিৎজা অনেক কিছুতেই পনির ব্যবহার হয়।
পনিরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের মতে, ১০০ গ্রাম পনিরের মধ্যে রয়েছে:
শক্তি - ৩৬২ কিলোক্যালরি
প্রোটিন – ৫.১৭ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট - ৫০ গ্রাম
ক্যালসিয়াম - ৬৯ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম - ১৮১ মিলিগ্রাম
স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড – ৩.৪৫ গ্রাম
কোলেস্টেরল - ৩৪ মিলিগ্রাম
এটি প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে এবং ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস। পনিরের বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে।
পনির ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এবং প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস। এটি বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অনেক উপকারি। পনিরে থাকা ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পনির খেলে অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করা যায়।
পনির ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা শক্তিশালী ও মজবুত দাঁত তৈরিতে অবদান রাখে। পনিরে থাকা কেসিন ফসফোপেপটাইড উপাদান দাঁতের গহ্বর কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া চিউইং চিজ মুখের পিএইচ মাত্রা বাড়াতে পারে এবং সামগ্রিক মৌখিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
পনিরে অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড যেমন কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিডের সমৃদ্ধ উৎস। কোরিয়া ইউনিভার্সিটি এবং ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে এই ফ্যাটি অ্যাসিডে ক্যান্সার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ ছাড়া এই ফ্যাটি অ্যাসিড এথেরোস্ক্লেরোসিস এর বিকাশ রোধ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে।
পনিরে কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিড এবং স্ফিংগোলিপিড রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে স্ফিংগোলিপিড মানুষের কোলন ক্যান্সারকে বাধা দিতে পারে।
এ ছাড়া পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে খাদ্যতালিকাগত ক্যালসিয়াম কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ উপকারি।
পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই উপকারি। এটি প্রসবের সময় সংকোচনকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া উকের দুধ পান করানোর সময় ক্যালসিয়াম পুষ্টির ঘাটতিও পূরণ করে পনির। এটি গর্ভবতী মহিলাদের ভ্রূণের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে।
কিছু ধরণের পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কার্যকারিতা বাড়াতে পরিচিত। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে পনির শরীরের প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটি অসুস্থতা এবং রোগ কমাতে পারে।
প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সুরক্ষিত পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। এটি বয়স্কদেরমধ্যে ইমিউনোসেনেসেন্স (প্রতিরোধ ব্যবস্থার ধীরে ধীরে দুর্বল হওয়া) প্রতিরোধ করতে পারে।
পনির সেলেনিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা থাইরয়েড ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সেলেনিয়ামের থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করে ভাইরাসের বিকাশকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে।
চেডার পনির হল এক ধরনের হার্ড পনির। এটি খাদ্যতালিকায় যোগ করলে তা থাইরয়েড রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
পনিরের আশ্চর্যজনক স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলির মধ্যে একটি হল মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করা। বিশেষ করে ক্যামেমবার্ট জাতের পনির এই ধরনের কাজ করে থাকে। ক্যামেমবার্ট পনির প্রদাহজনক সাইটোকাইনের মাত্রা কমাতে পারে। এটি আলঝাইমার রোগের ঝুঁকি কমায় এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।
পনির ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। এতে থাকা ভিটামিন বি কোষের বিপাক এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে এটি উজ্জ্বল ত্বকের পাশাপাশি ত্বকের দাগ কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
যাদের গরুর দুধে অ্যালার্জি আছে তাদের পনির এড়ানো উচিত। এটি অ্যালার্জি, ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথার কারণ ও হতে পারে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (অতিরিক্ত পনির খাওয়া) কার্ডিওভাসকুলার রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
পনিরের স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ও রয়েছে। যেমন,
কিছু লোকের দুধের প্রোটিন যেমন কেসিনে অ্যালার্জি থাকে। এটি সারা শরীর জুড়ে একটি প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এবং ত্বকে ফুসকুড়ি, সাইনাস কনজেশন এবং ব্রণ জ্বলতে পারে।
অনেকের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা থাকে। সেক্ষেত্রে তাদের পনির না খাওয়াই শ্রেয়। কারণ ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা গ্যাস, পেট ফোলাভাব এবং ডায়রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। অনেক সময় এর কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে।
প্রচুর পরিমাণে পনির খাওয়ার ফলে মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথা হতে পারে। পুরনো পনিরে থাকা টাইরামিন উপাদান কিছু ব্যক্তির মধ্যে মাইগ্রেনকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
যারা মোনোমাইন অক্সিডেস ইনহিবিটরস (MOIs) গ্রহণ করছেন তাদের পনির খাওয়া এড়ানো উচিত। এই ওষুধগুলি হতাশার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এসব ওষুধ পুরনো বা বয়স্ক পনিরে থাকা উপাদান টাইরামিনের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হবে ২ নভেম্বর। পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন তা নিয়ে এখন চলছে আলোচনা, কানাঘুষা; শুরু হয়েছে দৌড়ঝাঁপ।
বর্তমান উপাচার্যই আবার দায়িত্ব পাবেন নাকি নতুন কাউকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হবে এ আলোচনাই চলছে এখন। আলোচিত হচ্ছে কয়েকজন শিক্ষকের নামও। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন কানাঘুষারও অবসান হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ পদে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের মধ্য থেকেই কাউকে বাছাই করার বিষয়টি একপ্রকার নিশ্চিত। বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের এ বিষয়ে আগ্রহ নেই। গুণী কোনো শিক্ষক উপাচার্যবিষয়ক আলোচনার মধ্যে নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সিনেটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা হবে কি না, এ বিষয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশের ১১(১) ধারা অনুযায়ী, উপাচার্য নিয়োগে তিন সদস্যবিশিষ্ট প্যানেল নির্বাচনের দায়িত্ব সিনেটের। সিনেট নির্বাচিত তিনজনের মধ্য থেকে একজনকে উপাচার্য নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এবং রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। রাষ্ট্রপতি তাকে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেন।
রীতি অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের জন্য সিনেটের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করা হয়। কিন্তু এবার সিনেট অধিবেশন হওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। উপাচার্য অধিবেশন ডাকবেন কি ডাকবেন না; ওপর মহলের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কেউ কিছু জানেন না। উপাচার্য নিজেও বিষয়টি খোলাসা করছেন না।
অধ্যাদেশের ১১(২) ধারা অনুযায়ী, কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যেমন অসুস্থতা, ছুটি, অপসারণ বা অন্য কোনো কারণে উপাচার্যের পদ শূন্য হলে একজনকে অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা বলছেন, অধ্যাদেশের নিয়ম অনুসরণ করে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করা হোক। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে এবং আগামী নির্বাচনেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। নতুন উপাচার্যের গ্রহণযোগ্যতাও বাড়বে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, ‘ভিসি প্যানেল নিয়ে আলোচনা নেই। উপাচার্যও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে আমাদের জানা নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট, সিন্ডিকেট সদস্য ও শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল সবচেয়ে বেশি আলোচিত। তাদের মধ্য থেকেই কারোর পরবর্তী উপাচার্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম এ বিষয়ক আলোচনায় রয়েছেন।
অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পান। পরে প্যানেল নির্বাচনের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর উপাচার্য পদে পুনর্নিয়োগ পান তিনি। সাত বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সামলাচ্ছেন তিনি। দুই মেয়াদের বেশি উপাচার্য থাকার নজির নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই তার দায়িত্ব পালনের শেষ দেখছেন অনেকে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে শিক্ষকদের মধ্যেও তাকে নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে পুনরায় নিয়োগ পেতে পারেন তিনি।
ইমেরিটাস অধ্যাপক বা অন্য কোনো গুণী শিক্ষক নেই উপাচার্য নিয়োগের আলোচনায়। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গুণী শিক্ষকদের সামনে আনার যে ধরনের কাঠামো থাকা উচিত তা নেই। যারা তোশামোদ করতে পারে, অন্ধ আনুগত্য প্রকাশ করতে পারে, তাদেরই প্রশাসনের শীর্ষ পদে নিয়ে আসা হয়। সত্যিকারের গুণী শিক্ষক এবং অনেক ভালো গবেষক আছেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারা কখনো প্রশাসনের দায়িত্বে আসতে পারেন না। তারা ব্যক্তিত্বের জলাঞ্জলি দিতেও রাজি নন।’
অতীতে উপাচার্যদের মধ্যে অ্যাকাডেমিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে একটা ভারসাম্য ছিল। এখন তা নেই। এখন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও আনুগত্যের ভিত্তিতে প্রশাসনিক পদগুলো দেওয়া হয়।
পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন বা ভিসি প্যানেল নিয়ে আগ্রহ নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের। বিএনপিঘোষিত এক দফাতেই তারা মগ্ন। যদিও সিনেটে তিনজন প্রতিনিধি থাকায় সুযোগ তাদেরও রয়েছে। সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার পরিবর্তন না হলে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিষয়ে ভাবছি না। এ বিষয়ে আমাদের ফোকাস নেই। আমাদের ফোকাস হচ্ছে এ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। জাতীয় রাজনীতিতে পরিবর্তন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও পরিবর্তন আসবে।’
শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও সাংগঠনিকভাবে আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আমরা নীল দল এখনো এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করিনি। যথাসময়ে দলের সভায় এ নিয়ে কথা হবে। মনোনয়ন কে পাবেন, তার আলোচনাও সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে। বর্তমান প্রশাসনের শীর্ষ তিনজন বিশেষভাবে আলোচনায় থাকবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই দায়িত্ব দেবেন। আমরা উনাদের সমর্থন করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ীই সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।’
বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইনের গতি অনুযায়ীই সব চলবে। এ বিষয়ে যাদের ভাবা প্রয়োজন তারা অবশ্যই ভাববেন।’ সিনেটের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশেষ অধিবেশন ডাকার প্রয়োজন হলে আমরা ডাকি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।