
কোনো প্রশাসনে যখন দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিকতা পায়, তখন তুলনামূলকভাবে সৎ ও কর্মঠ পেশাজীবী বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হবেন এটাই স্বাভাবিক। প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে যখন কোনো ধরনের গলদ থাকে, খুব সাধারণ বিবেচনায় বলা যায়, দায়িত্বশীল অধস্তনরাই সব অপকর্মের ফলভোগ করবেন। যে বিষয়ে কোনোভাবেই তাদের সংশ্লিষ্টতা ছিল না। অন্যদিকে, সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিগ্রস্ত এবং লোভাতুর প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে। আবার কোনো ধরনের অনিয়ম বা দুর্নীতির খবর ফাঁস হলে, তার তদন্তে একটি উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত কমিটি হয়। অথবা কোনো অফিসের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নয়ছয় হলে, সেখানে কর্মরত কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তুষ্টি দেখা দেয়। দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদন জানাচ্ছে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ৪৭ জন শ্রম পরিদর্শকের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন ও জ্যেষ্ঠতার তালিকা পাঠায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকে তা পিএসসিতে পাঠানো হয়। পদোন্নতির জন্য এসব তালিকা অপরিহার্য। পিএসসির কর্মকর্তারা দেখেন এসিআরগুলো কাটাছেঁড়া অর্থাৎ ঘষামাজা করা। তারা ফেরত পাঠান মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অধিদপ্তরে।
প্রশ্ন হচ্ছে, কারা এবং কোন দপ্তরে এ অপকর্ম করা হয়েছে? এই বিষয়টি খুঁজে বের করতে প্রথম তদন্ত কমিটি হয় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওই সময়ের যুগ্ম সচিব এ কে এম রফিকুল ইসলামকে প্রধান করে। এরপর সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোল্লা জালাল উদ্দিনকে প্রধান করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অধিদপ্তর এসব কমিটির ওপর আস্থা না রেখে নিজেরাই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এই ত্রিমুখী তদন্তের ফল কী হতে পারে? একই ঘটনায় তিন তদন্ত কমিটি তিন ধরনের ফলাফল খুঁজে পেয়েছে এবং তিনটি ভিন্ন গ্রুপকে ঘটনার জন্য দায়ী করেছে। অবিশ^াস্য এসব তদন্তের যে কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন করলে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নীতিনির্ধারকদের পক্ষে যায়, সেটুকুই বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
এটাই স্বাভাবিক। তদন্ত কমিটি যখন তিনটি হবে, তখন ফলও তিন ধরনের হবে। মনে করার কোনো কারণ নেই সাধারণ গাণিতিক নিয়ম মেনে তদন্ত হবে! বিষয়টি তো আর অ্যালজেবরা বা অ্যারিথমেটিকসের কোনো স্থির ফর্মুলা নয় যে, সেই অনুযায়ী অঙ্ক কষে ফল তৈরি করতে হবে। এখানে কাজ করে, ইচ্ছাফল। আবার এই ফলের জন্মদানে থাকে অনেকের ভূমিকা। তারা থাকেন আড়ালে-আবডালে । কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে অধিদপ্তর, যাদের অভিযুক্ত করে বিভাগীয় মামলা করে শাস্তি দিচ্ছে, আন্তঃমন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি বলছে তারা দোষীই না।
কোনো ধরনের তদন্তে যদি দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়, তাহলে দুর্নীতিবাজরাই হবেন প্রশাসনের হর্তাকর্তা। এখন পরিস্থিতি সেদিকেই যাবে নাকি সত্যিকারের তথ্য উদঘাটিত হবে সে বিষয়ে আগাম কথা বলা কষ্টকর। শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্ভাব্য সুবিধাপ্রত্যাশী কর্মকর্তাদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে তদন্তকারী কর্মকর্তারা ৩৩তম বিসিএস নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের ওপর দায় চাপিয়েছেন। সাক্ষ্য দেওয়া কর্মকর্তারা পরে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন, তাদের বাধ্য করা হয়েছে সাক্ষ্য দিতে। শুরু থেকেই পুরো বিষয়টি জটিল করে তোলা হয়েছে।
এই মুহূর্তে বিষয়টি দুর্বোধ্য হয়ে উঠেছে। কোন কর্তৃপক্ষ বিষয়টির সমাধান দেবে সেটা বলা কঠিন। তবে যেহেতু সমস্ত তদন্তে বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব ছিল, যে কারণে ভিন্ন ভিন্ন তদন্ত কমিটি হয়েছে। বর্তমানে একটাই পথ খোলা এ ব্যাপারে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ। এ ছাড়া প্রকৃত দোষীকে শনাক্ত করা দুরূহ। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে উচ্চ পর্যায়ের তদারকিতে বিষয়টির একটি ন্যায়সংগত সমাধান আসবে। এ বিষয়ে স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা নেই। কোনোভাবেই যেন পরিশ্রমী, সৎ এবং মেধাবী কর্মকর্তা কোনো পক্ষের রোষানলে না পড়েন। আমরা সুন্দর সমাধানের অপেক্ষায় থাকলাম।
মানুষ যত আধুনিক হচ্ছে, তত তার জানার পরিধি বাড়ছে। সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মানুষের সঙ্গে সংযোগ। আজ থেকে দুশত বছর আগে একজন মানুষ গড়ে কতজন মানুষের সঙ্গে সম্পর্কিত থাকতেন, আর এখন কত মানুষের সঙ্গে সম্পর্কিত থাকতে হয় তার একটা তুলনামূলক বিচার করলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক যেমন বাড়ছে, তেমনি বিরোধটাও নতুন নতুন রূপ নিচ্ছে। ফলে সম্পর্কের বৈশিষ্ট্য, স্বাতন্ত্র্য, সম্পর্কের মর্যাদা ও গোপনীয়তার ধারণা আজ আর আগের মতো নেই। বাবা-মা, ভাই, বোন, স্বামী, স্ত্রী, সন্তানদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যেমন আলাদা, তেমনি একজনের অ্যাকাউন্ট অন্যজনের পক্ষে ব্যবহার করা শুধু অসম্ভব নয়, কখনো কখনো অনুচিত। আবার খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষা, বাজার, চাকরি, যাতায়াত, বিনোদন, ব্যাংক কত বিষয়ে যে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়, তা গুনে শেষ করা যাবে না। ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যেমন মানুষ পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত হচ্ছে, তেমনি তাদের মধ্যে একটা সম্মানজনক দূরত্ব বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তাও বাড়ছে দিন দিন।
একজনের সঙ্গে অন্যজনের দেখা হলেই সাধারণ প্রশ্ন, কেমন আছ? সবাই সবার খবর জানতে চায়, খবর রাখতে চায়। কিন্তু এই জানার সীমা কতটুকু? তথ্য জানার অধিকার সবারই আছে। সঙ্গে সঙ্গে এই বিবেচনা থাকতে হবে যে, কোন বিষয়ের তথ্য, কে জানবে, কতটুকু জানতে পারবে আর ব্যক্তিগত তথ্য নিজে থেকে কেউ না দিলে তা গোপনে কেউ জানতে পারবে কিনা? কারও ঘরে উঁকি দিয়ে দেখা খুবই অশোভন একটি বিষয়, তেমনি কারও ব্যক্তিগত চিঠি, ডায়েরি তার অজ্ঞাতে পড়াটাও অন্যায় বলে বিবেচিত। ব্যক্তির পরিচয়পত্র কথাটির সঙ্গে পরিচয় থাকলেও জাতীয় পরিচয়পত্রের ব্যবহার খুব বেশি দিন আগের নয়। প্রথমে নির্বাচনের জন্য শুরু হলেও, পরিচয়পত্র একজন ব্যক্তির শুধু ভোটের জন্য নয়, নানা ধরনের কাজে ব্যবহৃত হয়। ১৮ কিংবা তার বেশি বয়সী নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। এ ছাড়া এখন শিশুদের জন্মনিবন্ধন করাতে হয়। গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পাওয়া, পাসপোর্ট করা, জমি বেচাকেনা, মোবাইল ফোনের সিম কেনা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলাসহ ৩৮ ধরনের সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে পরিচয়পত্র দেখাতে হয়। এর বাইরে ব্যবসা নিবন্ধন, কর শনাক্তকরণ নম্বরসহ (টিআইএন) বিভিন্ন কাজে সরকারি সংস্থাকে ব্যক্তিগত তথ্য দেয় মানুষ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও বিভিন্ন কাজে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে। কিন্তু সেই তথ্য যদি সুরক্ষিত না থাকে, ফাঁস অথবা বেহাত হয়ে যায় তাহলে তো উদ্বিগ্ন হওয়ারই কথা।
২০০৭ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছিল নির্বাচন কমিশন। সে সময় ভোটারদের জাতীয় পরিচয়পত্রও (এনআইডি) দেওয়া হয়। এখন ভোটারের নাম, মা-বাবার নাম, ঠিকানা, জন্মতারিখ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, ছবিসহ কমবেশি ৩০ ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ভোটারের আঙুলের ছাপ ও চোখের মণির ছাপ (আইরিশ), ডিজিটাল স্বাক্ষর নেওয়া হয়। এসব সংগৃহীত তথ্য ইসির এনআইডি সার্ভারে সংরক্ষিত আছে। এনআইডির তথ্যভান্ডারে প্রায় ১২ কোটি ভোটারের কমবেশি ৩০ ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য আছে। ১৭১টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তথ্য যাচাই করার ক্ষেত্রে ইসির এই তথ্যভান্ডার থেকে তথ্য যাচাই-সংক্রান্ত সেবা নিয়ে থাকে। তথ্য এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ মানুষের এবং সমাজের জীবনে। কিন্তু এখন পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই তথ্যভান্ডারের কোনো ডিজাস্টার রিকভারি সাইট (ডিআরএস) বা যথাযথ ব্যাকআপ (বিকল্প সংরক্ষণব্যবস্থা) নেই। ডিআরএস না থাকায় জাতীয় এই তথ্যভান্ডার অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে থাকাটা স্বাভাবিক। ডিআরএস না থাকায় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনো কারণে যদি এনআইডির তথ্যভান্ডার নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে বিপুলসংখ্যক মানুষের তথ্য হারিয়ে যাওয়া এবং আর ফিরে না পাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। অনেক দিন ধরে এই বিকল্প সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালুর (ব্যাকআপ) কথাবার্তা চললেও এখনো তা পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। এখন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে (বিসিসি) তথ্যের ব্যাকআপ রাখা হয়, কিন্তু তা যথাযথ নয় এবং যথেষ্টও নয়। সম্প্রতি উদ্বেগজনক একটি খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে এই সেবা নেয় এমন একটি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে লাখ লাখ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়েছে। গত ৪ জুন ইসির জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা ও নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ কমিটির একটি সভা হয়। ওই সভায় জাতীয় তথ্যভান্ডারের ঝুঁকির বিষয়টি তুলে ধরেন ইসির আইডেনটিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়) পরিচালক। এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রের কাজ করা হয়। এই বৈঠকে উল্লেখ করা হয় যে, বিকল্প কোনো ডিআরএস না থাকায় জাতীয় তথ্যভান্ডার অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, কমিশন গাজীপুর ও যশোরে ব্যাকআপ সার্ভার করার পরিকল্পনা নিয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত এটি কার্যকর হয়নি। ১৪ বছর কি যথেষ্ট সময় নয়, নাকি প্রয়োজনীয় বরাদ্দ ছিল না, নাকি বিষয়টা যথেষ্ট গুরুত্ব পায়নি আমাদের দেশের কর্তাদের কাছে? ইতিমধ্যে বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের ঘটনার খবর জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক অনলাইন সংবাদমাধ্যম টেকক্রাঞ্চ। ৭ জুলাই তাদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে সরকারি একটি সংস্থার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। টেকক্রাঞ্চ আরও দাবি করেছে, তারা তথ্য ফাঁসের বিষয়ে জানতে বাংলাদেশের বিজিডি ই-গভ সার্ট, সরকারের প্রেস অফিস, ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এবং নিউ ইয়র্ক সিটিতে বাংলাদেশি কনস্যুলেটের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু কোনো সাড়া পায়নি। তথ্য ফাঁসের ঘটনা এটাই প্রথম নয়, বিজিডি ই-গভ সার্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালে হ্যাকাররা রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের নিরাপত্তাব্যবস্থা হ্যাক করলে আড়াই লাখ ডলার দিয়ে তবেই উদ্ধার পেতে হয়েছিল। সেই অর্থ তুরস্কের একটা হিসাবে পাঠাতে হয়েছিল। তবে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় সাইবার আক্রমণ ছিল ২০১৬ সালে, বাংলাদেশ ব্যাংকে। অর্থ লেনদেনের সুইফট ব্যবস্থা হ্যাক করে ৮১০ কোটি ডলার চুরি করা হয়েছিল। সেই অর্থ চলে গিয়েছিল ফিলিপাইনে। আবার ২০১৯ সালে তিনটি স্থানীয় বেসরকারি ব্যাংক বড় ধরনের সাইবার হামলার মুখে পড়েছিল। সে সময় ক্লোন ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে রাশিয়া, ইউক্রেন ও সাইপ্রাস থেকে তিন ব্যাংকের ক্যাশ মেশিন থেকে ৩০ লাখ ডলার চুরি করা হয়। আবার বিজিডি ই-গভ সার্ট ডার্কওয়েবে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের ৩ হাজার ৬৩৯টি ক্রেডিট কার্ড খুঁজে পেয়েছিল। এসব কার্ড ব্যবহার করে ৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার ডলার তুলে নেওয়ার ঝুঁকির মধ্যে ছিল ব্যাংকগুলো। এই ঝুঁকি কেবল ব্যাংকেরই ছিল না, কার্ডের মালিক যারা তারাও ঝুঁকির মধ্যে ছিলেন। কিন্তু কেন এবং কীভাবে এসব ঘটনা ঘটেছিল এবং এ ঘটনায় কারা যুক্ত ছিল, তাদের কারও শাস্তি হয়েছিল কিনা সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন বিভাগের সার্ভারে (তথ্যভান্ডার) জালিয়াতি করে অবৈধ পরিচয়পত্র তৈরি, করোনাকালে বাংলাদেশের মানুষকে টিকা দিতে সুরক্ষা নামে যে ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছিল, সেখানেও জালিয়াতি করে সনদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। সরকারি মহল থেকে বারবার বলা হয়ে থেকে যে, ডিজিটাল জগতে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে এনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এই আইনকে ব্যবহার করে মানুষের নিরাপত্তার বদলে সংবাদমাধ্যম ও বিরোধী কণ্ঠ রোধেই বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। এখন আবার উপাত্ত সুরক্ষা আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া চলছে। এই আইনের খসড়া নিয়েও বিভিন্ন মহলের বিশেষজ্ঞ যারা অংশীজন হিসেবে বিবেচিত তাদের আপত্তি রয়েছে। তাদের আশঙ্কা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো এই আইনও কণ্ঠ রোধে ব্যবহার করা হবে যা নিয়ে অনেক ধরনের প্রশ্ন উঠছে।
লেখক: রাজনৈতিক সংগঠক ও কলামিস্ট
শিশুকে কে লালন করবেন? মা নাকি অন্য কেউ? বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে একজনের উপার্জনে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ বেশ কঠিন। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, সন্তানদের পড়াশোনা, বিনোদন, সামাজিকতা রক্ষা ইত্যাদি খরচের অর্থ সংস্থান করতে গিয়ে পরিবারের কর্তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাধ্য হয়েই অনেক গৃহিণীকে ঘরের বাইরে এসে উপার্জনের জন্য কাজ করতে হচ্ছে। দৃষ্টিভঙ্গিতেও এসেছে পরিবর্তন। একটা সময় মনে করা হতো, ঘর সামলানো, সন্তান মানুষ করা এই কাজগুলো শুধু স্ত্রী করবে। এখন সময় পাল্টেছে। পুরুষের পাশাপাশি মহিলারাও ঘরের বাইরের কাজে অংশগ্রহণ করছে। অনেক ক্ষেত্রে স্বামীর পাশাপাশি স্ত্রীরাও উপার্জন করে পরিবারে সমান অথবা বেশি অবদান রাখছে। এই বিষয়গুলো নিঃসন্দেহে সামাজিক অগ্রগতির লক্ষণ। কিন্তু বিপত্তি ঘটে শিশুর লালন নিয়ে। পরিবারে শ্বশুর-শাশুড়ি অথবা বয়োজ্যেষ্ঠ কেউ থাকলে, খুব বেশি একটা বেগ পেতে হয় না। তবে পরিবার যদি একক হয়, অনেক মা-বাবা বাসায় গৃহকর্মী রেখে, সাময়িক সমাধান খোঁজার চেষ্টা করেন। অথচ এর ফলে শিশুর যত্ন ও বিকাশে কী ক্ষতি হচ্ছে, তা কি কখনো ভেবে দেখছি? মা-বাবার অনুপস্থিতিতে শিশু গৃহকর্মীর কাছে বড় হচ্ছে। গৃহকর্মীর ভাষা, আচরণ এবং দৃষ্টভঙ্গি রপ্ত করছে। গৃহকর্মীদের অধিকাংশই কম বয়সী। হয়তো শিশুকে কোলে নিয়েই সারাদিন টিভি দেখছে। এমনিতেই টিভি শিশুর জন্য ক্ষতিকর। তার ওপর গৃহকর্মী যদি অসুস্থ ও অশ্লীল প্রোগ্রাম দেখে, তা শিশুর জন্য কতটা ভয়ংকর হতে পারে, সহজেই অনুমেয়। গৃহকর্মীর যত্নে যদি মমতা এবং আন্তরিকতার অভাব থাকে, তাহলে শিশুর আবেগীয় চাহিদায় এক ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়। ক্রমাগত স্নেহ মমতা থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে, মা-বাবার সঙ্গে শিশুর দূরত্ব বাড়তে থাকে। পরিবারে বাস করেও সে বিচ্ছিন্ন মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠে। বড় হয়ে মা-বাবাকে আর মানতে চায় না। এসব শিশুরা যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের অসংগতিপূর্ণ আচরণ করতে পারে। এ ছাড়াও পেশাজীবী মা-বাবার মধ্যে সবসময় এক ধরনের অপরাধবোধ কাজ করে। তারা মনে করেন, শিশুর জন্য কিছুই করতে পারছেন না। এই বোধের কারণে তারা শিশুর সব আবদার পূরণ করার চেষ্টা করেন, আচরণগত সমস্যাগুলোকে সহ্য করেন এবং সব কিছুতেই সায় দেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বস্তু (অর্থাৎ খেলনা, খাবার, কাপড়চোপড় অথবা টাকা) দিয়ে শিশুকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করেন। এভাবে শিশু প্রতিনিয়ত প্রশয় পেতে থাকে, যা শিশুর সমস্যাপূর্ণ আচরণগুলোকে বাড়িয়ে তোলে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কর্মজীবী মা-বাবা সারাদিন কাজ সেরে বাসায় ফিরে একটু বিশ্রাম প্রত্যাশা করেন। বাসায় এসে শিশুকে যতটুকু সময় দেন তাতেও মনোযোগের যথেষ্ট ঘাটতি থাকে। শিশু প্রশ্ন করলে ঠিকমতো উত্তর দিচ্ছেন না, চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলছেন না, মোবাইল বা টিভির দিকে তাকিয়ে থাকছেন। এই বিষয়গুলো শিশু বুঝতে পারে। মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা অথবা প্রতিশোধ হিসেবে শিশু নানা ধরনের সমস্যাপূর্ণ আচরণ করে। অনেক ক্ষেত্রে এই শিশুরা মাদকে জড়িয়ে পড়ে, অবাধ্য হয়ে যায় অথবা মানসিক সমস্যায় ভোগে। কোনো কোনো শিশু আত্মহননের পথও বেছে নিতে পারে।
আরেকটি বিপত্তি ঘটে, শিশুর সামাজিক বিকাশে। সারাদিন বাসায় একা থাকার ফলে, টিভি মোবাইল বা কম্পিউটারের সামনে বেশি সময় কাটায়। যা শিশুকে সামাজিকভাবে আরও বিচ্ছিন্ন করে তোলে। এভাবে কিছুদিন চলার পরে একটা সময় আসে যখন শিশু স্ক্রিনের প্রতি পুরোপুরি আসক্ত হয়ে যায়, কারও সঙ্গে মিশতে পারে না অথবা মিশতে চায় না। এখন এই চ্যালেঞ্জ থেকে মুক্তির জন্য আমাদের কী করণীয়? কর্মজীবী মা-বাবার জন্য পরামর্শ হচ্ছে বাসায় ফিরে শিশুকে পনেরো মিনিট বিশেষ সময় দিন। এটা পারিবারিক সময় থেকে ভিন্ন। আসলে পারিবারিক সময় আর বিশেষ সময় এক জিনিস নয়। পারিবারিক সময়ে আপনি সবার সঙ্গে থাকছেন ঠিকই, কিন্তু কারও প্রতি পরিপূর্ণ মনোযোগ দিচ্ছেন না। কিন্তু বিশেষ সময়ে শিশুর প্রতি কিছুক্ষণের জন্য পূর্ণ মনোযোগ দিচ্ছেন। এই ব্যাপরটি দারুণ কাজ করে। এর ফলে শিশু নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্মানিত মনে করে, অনেক সমস্যা এমনিতেই কেটে যায়।
আরেকটি কাজ করতে পারেন। কাছাকাছি কোনো ডে-কেয়ার সেন্টার থাকলে, শিশুকে সেখানে দিতে পারেন। শহর কিংবা গ্রাম যেখানেই হোক না কেন, শিশুর সামাজিকীকরণে এর প্রভাব অনস্বীকার্য। ডে-কেয়ারে শিশু অন্য শিশুদের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ পায়, খেলাধুলা করতে পারে, কিছুটা আত্মনির্ভরশীল হতে শেখে। স্কুলে ভর্তির সময় এই শিশুরা খুব সহজে নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়। আর ডে-কেয়ারে যদি শিষ্টাচার, আদব কায়দা এবং প্রাথমিক কা-জ্ঞান শেখানো হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে তা বাড়তি পাওয়া।
তবে ডে-কেয়ারে দেওয়ার আগে অবশ্যই খোঁজখবর নেবেন। কারণ ডে-কেয়ারের কর্মীদের যদি শিশু লালন ও প্যারেন্টিং সম্পর্কে প্রশিক্ষণ না থাকে, তাহলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে। অনেক সময় আমরা শুনতে পাই, টিভিতে কার্টুন ছেড়ে সারাক্ষণ শিশুদের বসিয়ে রাখা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধমক দিয়ে, ভয় দেখিয়ে অথবা প্রহার করে শিশুদের শান্ত রাখার চেষ্টা করা হয়। এ ধরনের ডে-কেয়ারে রাখার চেয়ে না রাখাই ভালো। সবচেয়ে ভালো হয়, যদি শিশুকে ডে-কেয়ার ও পরিবারে বয়োজ্যেষ্ঠ সঙ্গে সমন্বয় করে রাখতে পারেন। দিনের কিছুটা সময় (৩-৪ ঘণ্টা) ডে-কেয়ারে, বাকি সময়টা দাদা-দাদি, নানা-নানির কাছে রাখা যেতে পারে। দিনশেষে মা-বাবা অফিস সেরে শিশুকে সময় দেবেন। আর ছুটির দিনগুলোতে অবশ্যই শিশুকে নিয়ে ঘুরতে বের হবেন, ঘরে যতক্ষণ থাকেন শিশুর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবেন, প্রশ্নের উত্তর দেবেন এবং শিশুর সঙ্গে খেলা করবেন।
আমাদের মনে রাখতে হবে, শিশুরা আমাদের ভবিষ্যৎ। ক্যারিয়ার বা অন্য কোনো কারণে যদি শিশুর যত্ন বা মমতায় ঘাটতি থাকে, তার খেসারত আমাদের দিতে হবেই। একবার শিশু বিগড়ে গেলে বা বিপদগামী হলে, জাহান্নাম আপনি জীবদ্দশায় পরিবারেই দেখতে পাবেন। তাই সময় থাকতে শিশুর প্রতি মনোযোগ দিন।
লেখক : প্যারেন্টিং গবেষক
ক্ষমতাসীন দলীয় একটি পত্রিকায় আফসোসের সুরে বলা হইয়াছে ‘‘সম্মিলিত বিরোধী দলের মুখপত্র বলিয়া কথিত ‘ইত্তেফাক’কে একদিন যিনি বন্ধ করিবার জন্য সুপারিশ করিয়াছিলেন, সেই আজম খান আজ ‘ইত্তেফাক’ সম্পাদকের অতিথি হইয়াছেন।’’ ইহা সহযোগীর পক্ষে আফসোসের ব্যাপারও বটে। জনমতকে অগ্রাহ্য করিয়া জনগণের চক্ষে ধূলি নিক্ষেপের জন্য যে সকল লোক সত্য-মিথ্যার ধার ধারে না এবং দিবারাত্র ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে কল্পনার ফানুস উড়াইতে অভ্যস্ত, তাদের পক্ষে আত্ম-ভীতি একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। ইত্তেফাক বন্ধ করা সম্পর্কে সহযোগী যে তথ্য পরিবেশন করিয়াছেন, তাহা তার পৃষ্ঠায় প্রকাশিত অপরাপর খবরের মতই অসম্পূর্ণ, অসত্য এবং উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাইবার মত। ‘ইত্তেফাক’ নানাভাবে নির্যাতিত হইয়াছে এবং এখনও হইতেছে; কিন্তু নিজেদের নির্যাতন ভোগের কাহিনী আমরা অহরহ প্রচার করিতে অভ্যস্ত নই। তবে ক্ষমতাসীন দলীয় মুখপত্র যখন ‘ইত্তেফাক’ বন্ধ করিবার প্রসঙ্গটি উল্লেখ করিয়াছেন, তখন এই সংক্রান্ত প্রকৃত খবর জনসাধারণকে অবহিত করা প্রয়োজন।
প্রকৃত ঘটনা হইল, ১৯৬২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ইত্তেফাক বন্ধ করা নয়, ইত্তেফাককে সরকারী কর্তৃত্বাধীনে পরিচালনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হইয়াছিল। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত ছিল পিন্ডির কেন্দ্রীয় সরকারের এবং কেন্দ্রীয় সরকারেরই স্বরাষ্ট্র বিভাগ প্রাদেশিক সরকারের নিকট এই নির্দেশনামা প্রেরণ করেন; জনৈক পূর্ব পাকিস্তানীকে ‘ইত্তেফাক’ পরিচালনার জন্য এ্যাডমিনিস্ট্রেটরও নিযুক্ত করা হইয়াছিল।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে, জনাব সোহরাওয়ার্দীকে ১৯৬২ সালের ২৯শে জানুয়ারী ভোর রাত্রে করাচীতে গ্রেফতার করার পর ২রা ফেব্রুয়ারী হইতে ঢাকায় ছাত্র বিক্ষোভ শুরু হইলে, ৬ই ফেব্রুয়ারী গভীর রাত্রে যুগপৎ ইত্তেফাকের উপর (এবং একমাত্র ইত্তেফাকের উপর) প্রিসেন্সরশীপ আরোপ করা হয় এবং একই রাত্রে ইত্তেফাক সম্পাদককেও নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়। তারপর ইত্তেফাকের সম্পাদকীয় বিভাগের লোকজনকেও গ্রেফতার করা হয়। এই সকল ঘটনা ঘটিবার কালে প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব স্বয়ং ঢাকায় উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু এই পূর্ণ আয়োজন সত্ত্বেও ইত্তেফাক সরকারী কর্তৃত্বাধীনে নেওয়া সম্ভব হয় নাই, ইহাকে আমরা পরম করুণাময়ের অনুগ্রহ এবং জনমতের রায় হিসাবেই গণ্য করিয়াছি। ইত্তেফাককে পঙ্গু করিবার জন্য শুধু প্রিসেন্সরশীপই আরোপ করা হয় না, প্রিসেন্সরশীপের কারণে পত্রিকার কলেবর চার পৃষ্ঠায় নামিয়া আসে এবং তখন পত্রিকার মূল্য না কমাইতে চাহিলে কর্তৃপক্ষ তাতেও সম্মত হন না। তাঁদের ধারণা ছিল, পত্রিকার কলেবর হ্রাস পাইবার পরে শূন্য করাইতে না পারিলে পাঠকেরা ১০ পয়সা দিয়া ৪ পৃষ্ঠা ক্রোড়পত্র সমতুল্য ইত্তেফাক কিনিবে না এবং ইত্তেফাক আপনা আপনিই মৃত্যুবরণ করিবে। কিন্তু ইত্তেফাকের গুণগ্রাহী সমর্থকরা ইত্তেফাকের উপর এই নির্যাতন চলাকালে আরও আগ্রহ সহকারে অধিক পরিমাণে ইত্তেফাক কিনিতে শুরু করেন। আমরা পূর্বেই বলিয়াছি যে, ‘ইত্তেফাক’ স্বৈরাচারী শক্তির কবল হইতে কিভাবে রক্ষা পাইল তাহা আজও আমাদের নিকট আলৌকিক ব্যাপার বলিয়া মনে হয়। তবে সেদিন কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানেরই ‘সুসন্তান’ মিঃ জাকির হোসেন। তাঁরই গভর্নর গিরির আমলে ১৯৫৯ সালে ‘ইত্তেফাক’ সম্পাদককে সামরিক আইনে গ্রেফতার করিয়া তৃতীয় শ্রেণীর কয়েদী হিসাবে জেলে প্রেরণ করা হয়; তারই আমলে কর্জ গ্রহণের জন্যও ‘ইত্তেফাক’কে শাস্তি ভোগ করিতে হয়। সোহরাওয়ার্দীকে গ্রেফতার করিলে এখানে একটি কুকুর পর্যন্ত শব্দ করিবে না, এই বলিয়া তিনিই শাসক চক্রকে আশ্বাস প্রদান করিয়াছিলেন বলিয়া প্রকাশ। অত্যাচার-নির্যাতন আমাদের ভাগ্যলিপি বটে। কিন্তু ‘পি-ির বাছাই করা’ ‘বাঙ্গালী সুসন্তানরা’ যেভাবে এককোপে গলা কাটিয়া মনিবের নিকট আনুগত্যের প্রমাণ দিতে চান, সেরূপ ‘সাহস’ কোন অবাঙ্গালীর মধ্যেও দেখি নাই। পক্ষান্তরে আমরা জানিতে পারিয়াছিলাম যে, গভর্নর লেঃ জেঃ আজম খান জনাব শহীদ সোহরাওয়ার্দীর গ্রেফতারে সম্মতি প্রদান করেন নাই এবং আন্দোলনকারী ছাত্রদের ‘শক্তহস্তে’ দমন করিবারও তিনি বিরোধিতা করিয়াছিলেন। ‘ইত্তেফাক’ ছিনাইয়া নেওয়ার ব্যাপারেও তিনি আপত্তি জানাইয়াছিলেন। এই ধারণার বশবর্তী হইয়াই জেনারেল আজমের গভর্নর পদ ত্যাগের পূর্বে ঢাকার অধিকাংশ সংবাদপত্র মার্শাল ল’ বিরোধী হইলেও আজমের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব প্রদর্শন করে। সেই সময়কার সংবাদপত্রের উপর চোখ বুলাইলেই আমাদের এই বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণিত হইবে।
কিন্তু আমাদের সম্মুখে আজ প্রশ্ন ইহাও নয়। ইত্তেফাকের উপর অতীতে অত্যাচার হইয়াছে, এখনও অত্যাচার চলিয়াছে। শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি এবং ভয়-ভীতি-ত্রাসের মধ্যেই আমাদিগকে প্রতিটি মুহূর্ত কাটাইতে হইতেছে। জেনারেল আজম তৎকালে প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের এজেন্ট হিসাবেই গভর্নর পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি যদি সেদিন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব তথা কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশমতে ইত্তেফাককে সরকারী কর্তৃত্বাধীনে নিতেন, তাহা হইলে সেজন্য শুধু একা আজমকেই দায়ী করা হইত না, প্রধানতঃ কেন্দ্রীয় সরকারকেই দায়ী করা হইত। অত্যাচার-নির্যাতন ভোগ করা সহজ ব্যাপার নয়; কিন্তু যারা অত্যাচার-নির্যাতনের হোতা তাদেরকেও কোনদিন আল্লাহ এবং আল্লাহর বান্দারা ক্ষমা করেন না। ধর্মের নামে ধোঁকা দিতে আমরা অভ্যস্ত নই। কিন্তু আমাদের এটুকু ঈমানের জোর রহিয়াছে যে, অন্যায়ভাবে কাহারও উপর কেহ অত্যাচার-নির্যাতন চালাইলে আল্লাহ তায়ালা যেমনি অত্যাচারিতকে অত্যাচার সহ্য করিবার সাহস ও শক্তি যোগান, তেমনি অত্যাচারীর কব্জা শিথিল তিনিই করিতে পারেন। ইহাই যদি না হইত তাহা হইলে এত অত্যাচার, নির্যাতন, হয়রানি এবং ক্ষমতাসীনদের চক্ষুশূল হইয়াও ইত্তেফাক এতদিন টিকিয়া থাকিতে পারিত না। আমাদের শেষ ভরসা : রাখে আল্লা মারে কে।
জেনারেল আজম গভর্নর পদে কেন ইস্তফা দিয়াছিলেন তার ইঙ্গিত এই প্রদেশবাসী পাইয়াছিল এবং পাইয়াছিল বলিয়াই তাঁর এই প্রদেশ ত্যাগের পূর্বে তিনি জনগণের প্রাণঢালা অভিনন্দন লাভ করিয়াছিলেন। সামরিক শাসন এবং তার পরবর্তীকালে এই প্রদেশে একাধিক গভর্নর নিযুক্ত হইয়াছেন। তাঁরা চলিয়া যাইবার কালে অভিনন্দন দূরের কথা, চুপিচুপি কাটিয়া পড়িয়াছেন এবং জনগণের ধিক্কারই কুড়াইয়াছেন। যদি তর্কের খাতিরে ধরিয়াও নেই যে, জেনারেল আজম গভর্নর থাকাকালে ইত্তেফাককে বন্ধ করিতে চাহিয়াছিলেন, তাহা হইলেও আজ তাঁর পরিবর্তিত ভূমিকায় তাঁকে আদর-অভ্যর্থনা করিলে তাতে অন্যায় কোথায়? আজ তিনি জনগণের কাতারে দাঁড়াইয়াছেন। তিনি আজ নিজে কোন পদপ্রার্থী নন। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আজ যিনি আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করিয়াছেন, সেই মোহতারেমা মিস ফাতেমা জিয়ার পক্ষে নির্বাচনী অভিযান চালাইবার জন্যই তিনি এই প্রদেশে আগমন করিয়াছেন। ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব ক্ষমতা দখল করিবার পরে এই কয় বছর ধরিয়া রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের উপর যে অকথ্য নির্যাতন চালাইয়াছেন এবং যে নির্যাতনের হাত হইতে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পুরোধা মরহুম শহীদ সোহরাওয়ার্দী পর্যন্ত বৃদ্ধ বয়সে রেহাই পান নাই- তারপরও আমরা ফিল্ড মার্শাল আইয়ুবের প্রতি ক্রুদ্ধ মনোভাব প্রদর্শন না করিয়া বারে বারে প্রস্তাব দিয়াছি যে, তিনি জনগণের মৌলিক দাবীসমূহ মানিয়া নিন; এবং দাবী মানিয়া নিলে তাঁর বিরুদ্ধে আমাদের কোন অভিযোগ থাকিবে না। জাতীয় সংহতি এবং শান্তি-সম্প্রীতি বজায় রাখার তাকিদেই আমরা শত অনাচার- অত্যাচার ভুলিয়া গিয়া এই সমঝোতামূলক প্রস্তাব দিয়াছিলাম। আজও যদি তিনি জনগণের ভোটাধিকার মানিয়া নেন এবং দেশে গণতান্ত্রিক বিধি-ব্যবস্থা প্রবর্তনে সম্মত হন, তাহা হইলে তাঁকেও আমরা তারই এককালীন সহযোগী জেনারেল আজমের মত অভিনন্দন জানাইতে প্রস্তুত আছি। কিন্তু, তিনি তো সে পথে আসিবেন না। বরং উল্টা-পাল্টা কথা-বার্তার আশ্রয় নিবেন, সকলকে মায় মোহতারেমা ফাতেমা জিন্নার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও কটাক্ষ করিবেন। দেশবাসীকে ভোটাধিকার বঞ্চিত করিয়া তৎপরও দাবী করিবেন যে, তাঁর প্রদত্ত শাসনতন্ত্রের প্রতি জনগণের রায় পাওয়া গিয়াছে। এই অলীক প্রচারণার দ্বারা আইয়ুব সাহেব নিজে সান্ত¡না লাভ করিতে পারেন। কিন্তু দেশবাসী ইহাকে সম্পূর্ণ অসত্য এবং ভাঁওতামূলক বলিয়াই গণ্য করে। তিনি যদি সত্যই মনে করেন যে, দেশবাসীর সমর্থন তাঁর শাসনতন্ত্রের প্রতি রহিয়াছে, তাহা হইলে তাঁর একমাত্র করণীয় হইল, শাসনতন্ত্রের উপর রেফারেন্ডাম তথা গণভোট অনুষ্ঠান করা। আইয়ুব শাসনতন্ত্রের উপর রেফারেন্ডাম অনুষ্ঠিত হইলে আমরা নির্বিকার চিত্তে জনগণের রায় যাহাই হউক, মানিয়া নিব। এই সোজা প্রস্তাবে যাঁরা সম্মত নন তাঁদের অন্তর্নিহিত দুর্বলতা নিজেরাই ফাঁস করিয়া দিতেছেন। অর্থের ছড়াছড়ি, সরকারী শাসনযন্ত্র, যানবাহন ইত্যাদি ব্যবহার করিয়াও আজ তাঁরা অকুল সাগরে পাড়ি জমাইতে পারিতেছেন না; কারণ, জনগণ রাষ্ট্রে তাঁদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দৃঢ়সংকল্প। কোন ছলনায় জনগণকে বিভ্রান্ত ও লক্ষভ্রষ্ট করা সম্ভব নয়।
ইতিহাসের মনগড়া বরাত দিয়া ‘বাঙ্গালীদের’ মনোবল ক্ষুন্ন করিবার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হইবার পরে আজ আইয়ুব সাহেব বোল পাল্টাইয়া ‘বাঙ্গালীদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হইতে পারেন; তিনি এক্ষণে ‘বাঙ্গালীদের’ পাকিস্তান সংগ্রামের ভূমিকার গুণগ্রাহী বনিয়া পশ্চিম পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ‘নিদ্রায় মগ্ন’ থাকার কাহিনীও শুনাইতে পারেন। কিন্তু ভবী ভুলিবার নয়। তিনি দেশে যে শাসনতন্ত্র ও শাসনব্যবস্থার প্রচলন করিয়াছেন তাহা প্রকৃত প্রস্তাবে এক ব্যক্তির শাসন, এক ব্যক্তির নিকট সকল ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকার বিধি-ব্যবস্থা মাত্র। জনগণের ভোটাধিকার থাকিলে পাকিস্তানের বুকে ব্যক্তি-কেন্দ্রিক শাসন এবং এক ব্যক্তির হস্তে সকল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত রাখার তথাকথিত শাসনতন্ত্র এক মুহূর্তেও টিকিয়া থাকিতে পারিত না এই কঠোর সত্য উপলব্ধি করিয়াই তিনি জনগণকে ভোটাধিকার বঞ্চিত রাখিয়াছেন। আজ তিনি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকিবার জন্য যেই স্বৈরাচারী নীতির আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছেন, যেভাবে সরকারী শাসনযন্ত্রকে স্বীয় স্বার্থে ব্যবহার করিতেছেন, যেভাবে এক শ্রেণীর পুঁজিপতি-শিল্পপতিদের উপর নির্ভরশীল হইয়া পড়িয়াছেন, যেভাবে পুঁজিপতিদের অর্থে পরিচালিত সংবাদপত্রগুলিকে কুক্ষিগত করিয়া স্বীয় প্রচারে ব্যবহার করিতেছেন তাহা একজন দেশবাসীরও দৃষ্টি এড়াইতেছে না। এবং দৃষ্টি এড়াইতেছে না বলিয়াই ‘নিদ্রায় মগ্ন’ পশ্চিম পাকিস্তানেও মোহতারেমা মিস ফাতেমা জিন্নার সমর্থকদের জয়-জয়কার সূচিত হইয়াছে। আইয়ুব সাহেবের দল মৌলিক গণতন্ত্রের নির্বাচনে কোন প্রার্থী দাঁড় না করাইয়া শতকরা ৮০/৯০টি আসন দখলের যে দাবী করিতেছেন তাহা যে সম্পূর্ণ ভাঁওতামূলক, তাহা একটি বালকও বুঝিতে পারিতেছে। এনামের ভিত্তিতে তিনি যে রাজনৈতিক দলটি গঠন করিয়াছেন তাকে ‘ঐতিহ্যবাহী’ মুসলিম লীগের উত্তরাধিকারী বলিয়া চালাইবার প্রচেষ্টা হাস্যকর ব্যাপার ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি এবং তাঁর দলীয় আশে-পাশের লোকেরা স্বাধীনতা সংগ্রাম কিংবা পাকিস্তান আন্দোলনকালে কোথায় ছিলেন এবং কি ভূমিকা গ্রহণ করিয়াছিলেন তাহা এই দেশের একজন সাধারণ মানুষেরও জানা আছে। সাইনবোর্ড ঝুলাইলেই তো হয় না । তাই চতুর্দিকের গণজাগরণ ও বিপর্যয়ের মুখে আইয়ুব সাহেব এবং তাঁর সঙ্গী-সাথীরা নির্যাতনের যে পথ বাছিয়া নিয়াছেন তাহা তাহাদের অত্যাচারের আমলনামা ভারী করিবে, কিন্তু অন্য কোন লাভ নাই। বরঞ্চ জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়াই তাদের শেষ রক্ষার শেষ উপায়। আমরা আজও অত্যাচার-নির্যাতনের কথা ভুলিয়া যাইতে প্রস্তুত আছি। দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়া আসুক, রাষ্ট্রে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হউক, ইহাই আমরা চাই। তৎপর জনগণ কোন দল কিংবা কাকে ক্ষমতায় বসাইবে বা নামাইবে, তাহা নির্ধারণের দায়িত্ব জনগণের উপরই ন্যস্ত থাকিবে। আমাদের এই দাবীতে কোন মারপ্যাঁচ, চতুরতা নাই। সকলেই যখন জনগণকে রাষ্ট্রের মালিক মোখতার বলিয়া স্বীকার করিতেছেন এমনকি আইয়ুব সাহেবও, তখন জনসাধারণকে ভোটাধিকার বঞ্চিত রাখার কি যুক্তি থাকিতে পারে এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত হইতে ওজর-আপত্তির কি থাকিতে পারে? দেশকে যদি কেহ ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত করিতে না চায়, তবে আমরা তো ওজর-আপত্তির কোন কিছুই দেখি না।
মোহতারেমা মিস ফাতেমা জিন্না কিংবা সম্মিলিত বিরোধী দল যদি আজ জনগণের ভোটাধিকার এবং দেশে গণতান্ত্রিক বিধি-ব্যবস্থা প্রবর্তনের কথা না তুলিয়া বর্তমান শাসনতন্ত্র অনুযায়ী আইয়ুব সাহেবকে হটাইয়া তাঁর স্থলাভিষিক্ত হইতে চাহিতেন তাহা হইলে কখনও আমরা তাঁদের সমর্থন করিতাম না। ক্ষমতার হাত বদল আমাদের লক্ষ্য নয় লক্ষ্য হইল স্বাধীন রাষ্ট্রে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, ব্যক্তি-শাসনের পরিবর্তে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শাসনব্যবস্থা কায়েম করা। আইয়ুব সাহেব এই পথে আসুন। আজম সাহেব আজ যেমনি আমাদের মেহমান তেমনি তিনিও আমাদের মত নগণ্য লোকের মেহমান হইলে আমরা তাহাতে গর্বিতই বোধ করিব।
অপরপক্ষে আমরা স্পষ্টভাবে বলিতে চাই যে, অত্যাচার-নির্যাতন-বঞ্চনা-শোষণেরও সীমারেখা টানার প্রয়োজন রহিয়াছে। ৬ বৎসর যাবৎ এই দেশের উপর স্বৈরাচারী শাসন এবং লাগামহীন শোষণ চালাইয়াও যাদের তৃপ্তি হয় নাই, তাঁদেরকে আর যাহাই বলা যাক, দেশের মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী বলা যায় না।
লেখক: তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, সম্পাদক, দৈনিক ইত্তেফাক, ৫ নভেম্বর, ১৯৬৪
১৯০৪ সালের ১৫ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন রুশ ছোটগল্প লেখক ও নাট্যকার আন্তন চেখভ। তার জন্ম ১৮৬০ সালের ২৯ জানুয়ারি দক্ষিণ রাশিয়ায়। তাকে বিশ^সাহিত্যের অন্যতম সেরা ছোট গল্পকার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার বাবা পাভেল জেগোরোভিচ চেখভ এবং মা জেভগেনিয়া জাকোভলেভনা। স্কুলে তার কৃতিত্ব ছিল গড়পড়তা মানের। শুরুতে তার লেখক হওয়ার উচ্চাকাক্সক্ষা ছিল না। তার প্রথম দিকের গল্পগুলো তিনি লিখেছিলেন জীবনযাপন ও পড়ালেখার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করার উদ্দেশ্যে। কিন্তু পরে তার মধ্যে শিল্পীসুলভ উচ্চাকাক্সক্ষা জন্ম নিলে ক্রমেই তিনি সাহিত্যচর্চার ভিন্ন রীতি ও প্রবণতার উদ্ভাবন করেন, যা আধুনিক ছোটগল্পের বিকাশে বিশেষ প্রভাব রাখে। সাহিত্যিক জীবনের বেশির ভাগ সময় তিনি চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, যদিও তিনি বেশির ভাগ রোগীর চিকিৎসা করতেন বিনামূল্যে। তাই জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান আসত লেখালেখি থেকে। ১৮৭৯ সালে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে তিনি মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। এখানে পড়ার সময় তাকে পুরো পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়। পরিবারকে সাহায্য করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ জোগাড় করতে তিনি সমসাময়িক রুশজীবন নিয়ে ছোট ছোট হাস্যরসাত্মক নাটক বা রচনা লিখতেন, অলংকরণমূলক নকশা আঁকতেন। ১৮৮২ সালের মধ্যেই খ্যাতনামা প্রকাশক নিকোলাই লেইকিনের পত্রিকা অসকোলস্কিতে তিনি লিখতে শুরু করেন। ১৮৮৪ সালে তিনি চিকিৎসা পেশাকে প্রধান পেশা হিসেবে বেছে নেন। এর অনেক আগে থেকেই তিনি সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা আর বিখ্যাত সাহিত্যিকদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন তার লেখার সাহিত্যগুণের জন্য। ১৮৮০ থেকে ১৯০৩ সালের মধ্যে প্রায় ৬০০টি সাহিত্যকর্ম রচনা ও প্রকাশ করেন চেখভ। নাট্যকার হিসেবে চেখভের আন্তর্জাতিক পরিচিতি ঘটে থ্রি সিস্টারস, দ্য সিগাল এবং দ্য চেরি অরচার্ড নাটকের মধ্য দিয়ে।
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
আইন মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি বলছে, আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে। সরকারের এমন নেতিবাচক সিদ্ধান্তের পর এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি দেয়নি দলটি। তবে এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি এক দফার আন্দোলনের সঙ্গে যোগ হতে পারে বলে জানা গেছে।
৫৩ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও দলীয় নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গুরুতর। বিদেশে নেওয়া ছাড়া তার উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়। সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসনকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ চেয়ে তার ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। এতে মতামত দিতে আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় আইন মন্ত্রণালয় এতে মতামত দেয়। এ বিষয়ে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেছেন, তার সাময়িক মুক্তির আদেশটা বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) কারাগারে নেওয়া হলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া বাসায় চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশে যেতে পারবেন না এমন দুটো শর্ত সাপেক্ষে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে দন্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। দরখাস্তটা নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে আটবার দন্ড স্থগিত করা হয়েছে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার কোনো সুযোগ আইনে থাকে না। আমরা ৪০১ ধারার উপধারা ১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ ব্যাখ্যা করে মতামত পাঠিয়েছি। আমাদের মতামত হলো, ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে, সেটা অতীত এবং মীমাংসিত। এটা আর খোলার কোনো উপায় নেই।’
এক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে (খালেদা জিয়া) সাজা স্থগিত রেখে যে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, সেটা বাতিল করে তারপর পুনরায় বিবেচনা করার সুযোগ থাকলে সেটা করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই উপমহাদেশে ৪০১ ধারার ক্ষমতা যখন প্রয়োগ করে, তখন এটি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না বলে সিদ্ধান্তের নজির আছে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন যে আদেশটা আছে, সেটা যদি বাতিল করা হয়, বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) যদি আবার কারাগারে নেওয়া হয়, তাহলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু এ অবস্থায় আদালতে যেতে পারবেন না।’ খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের বিষয়টি বাতিল করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা অমানবিক হবে, বাতিল করব না।’
আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এক বার্তায় বলেন, ‘আজকের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, দেশে আইনের শাসন নেই। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক ভয়ংকর তামাশা করা হচ্ছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, নির্বাহী বিভাগ চাইলেই কাউকে মুক্তি দিতে পারে।’
খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় বিএনপি কী এখন ভাবছে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে।’
আর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর নীলনকশার অংশ। মানবতাবিরোধী ও সরকারের বর্বর ইচ্ছা পূরণের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।’
দলটির নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদন আইনগতভাবে বিবেচনা না করে, রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে। ফলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করতে না পারলে বিএনপিপ্রধানের মুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমেই এই ইস্যুর সুরাহা করতে চায় দলটি।
কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেখানে বলা হয়েছে, তাকে “দেশে চিকিৎসা নিতে হবে”, তার বদলে “দেশে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন” বলাই যথেষ্ট। কিন্তু দেশে চিকিৎসা গ্রহণের শর্তারোপ করা হলে তা যে চিকিৎসার বিবেচনায় না করে রাজনীতির বিবেচনায় করা হবে, সেটা বোঝার মতো বুদ্ধি সাধারণ মানুষের আছে।’
অসুস্থতার কারণে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের মার্চে করোনার সময় টানা দুই বছর কারাভোগের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরেছিলেন খালেদা জিয়া। পরে এ পর্যন্ত তার মুক্তির মেয়াদ আটবার বাড়িয়েছে সরকার।
এরই মধ্যে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তাকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ দিতে পরিবারের পক্ষে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এ বিষয়ে আইনি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদনটি পাঠায়।
বিএনপিপ্রধানকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছিল ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি সরকার ইতিবাচকভাবে দেখতে পারে’। কিন্তু সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ‘বিদেশে যাওয়ার আবেদন করতে হলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরত গিয়ে করতে হবে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের পর সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় এবারও ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না। গত শনিবার এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এ শঙ্কাই প্রকাশ করেছিলেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা আছে, যেকোনো মূল্যে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকার মরিয়া। সে কারণে হয়তো খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি ঝুঁলিয়ে রাখতে চাইছে এমনটাই মনে করছে সরকারবিরোধীরা। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দিলেই সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলেও বিরোধী নেতাদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। তবে শর্ত দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দল যাতে সম্মত না হয়, সে কথাই নেতাদের বলে রেখেছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির হাইকমান্ড মনে করছেন, এ অবস্থায় চলমান এক দফার আন্দোলনে খালেদা জিয়ার মুক্তি বিষয়টি থাকলেও সেটাকে আরও জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে; যাতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নেয়।
জানা গেছে, এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে দলটি। আজ সোমবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক রয়েছে। সূত্র বলছে, জোটগত ছাড়াও দলীয়ভাবেও কর্মসূচি আসতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক চিকিৎসক জানান, হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তার কেবিনে এক্স-রে মেশিন নেওয়া হয়েছিল গতকাল ভোরে। শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে না এলে সিসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ ছিল। দুপুরে তার ইসিজি ও ইকো ডায়াগ্রাম করানো হয়েছে। ফুসফুসের পানি অপসারণের জন্য তার ডান পাশে যে ক্যাথেটার লাগানো ছিল, সেটা আপাতত খুলে ফেলা হয়েছে।
লিভার জটিলতা ছাড়াও ৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ফুসফুস, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। গত ৯ আগস্ট ফিরোজায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে দলীয় মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) সেটআপে কেবিনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছে।
জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘ওনার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সে জন্য তাকে দ্রুত বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে পাঠানো দরকার।’
হতাশায় শেষ খালেদার অপেক্ষা
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
সাড়ে ৩ বছরে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স
দেশের বিদেশি মুদ্রা আয়ের অন্যতম হাতিয়ার প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের ধস নেমেছে। সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশে অবস্থানকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধপথে ও ব্যাংকের মাধ্যমে মাত্র ১৩৪ কোটি ডলারের বিদেশি মুদ্রার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। গত সাড়ে তিন বছরে এটি সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স। ৪১ মাস আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে এর চেয়ে কম ১০৯ কোটি ডলার সমপরিমাণের রেমিট্যান্স এসেছিল। রেমিট্যান্স-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দামের ব্যবধান বেশি হলে হুন্ডিতে লেনদেন বেড়ে যায়। আর যখন হুন্ডির চাহিদা বাড়ে তখন রেমিট্যান্স কমে যায়। গত মাসে ব্যাংকের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দাম ৬ থেকে ৭ টাকা বেশি ছিল। তাই বেশি লাভের আশায় বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন প্রবাসীরা।
ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজার ছাড়াল
এ বছর অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে ডেঙ্গু। গতকাল রবিবার ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজারের কোটা ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) সারা দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬ জনে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৮৮২ জন।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
অকাজের ৩৭০০ কোটির সেতু
সেতু হয়। কিন্তু সড়ক হয় না। সেতু করার জন্য নানান প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু সেসব সেতু করেই দায়সারা বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়। ভোগান্তি সাধারণ মানুষের। আবার যতগুলো সেতু করার কথা ততগুলো না করেও প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ করার প্রতিবেদনও দেওয়া হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সারা দেশের গ্রামের রাস্তাগুলোতে সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পে। প্রকল্পের এসব অনিয়ম উঠে এসেছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবি আ.লীগ নেতার
আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার। গত শনিবার রাতে তার ফেসবুকে এ দাবি জানিয়ে স্ট্যাটাস দেন তিনি।
মুহূর্তেই স্ট্যাটাসটি ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিএনপির অসংখ্য নেতা, কর্মী-সমর্থক তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রশংসা করেন। অন্যদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নিন্দা জানিয়ে দলীয় সব পদ থেকে তার বহিষ্কারের দাবি জানান।
আবদুল মোতালেব হাওলাদার তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘রাজনৈতিক কারণে আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দেওয়া হউক।’
স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন অধরাই
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
ফুটপাত থেকে মদের বার সবখানে চাঁদাবাজি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের কমিটি পার করেছে পাঁচ বছরের বেশি সময়। মেয়াদোত্তীর্ণ এ কমিটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। কিছু নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার তথ্য রয়েছে। সর্বশেষ মদের বার ভাঙচুর ও লুট করে আবারও আলোচনায় এ কমিটির নেতাকর্মীরা।
নতুন কমিটি না হওয়ায় নেতারা বেপরোয়া আচরণের পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছেন বলে মনে করেন সাধারণ কর্মীরা। তারা বলেন, সংগঠনের কর্মকাণ্ডও স্থবির হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান তারা।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মো. রিপন মিয়াকে সভাপতি ও মাহমুদুল হক জুয়েল মোড়লকে সাধারণ সম্পাদক করে তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের জন্য আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে গত বছর ১২ জুন ৩২১ জনের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য।
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ অনুযায়ী, দেশে ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২২ হাজার ১১৯। এ তালিকায় রয়েছে যারা রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, মাজার, ফুটপাত, সিঁড়ি, ওভারব্রিজের নিচে, লঞ্চ টার্মিনাল, ফেরিঘাট, মার্কেটের বারান্দায় দিন কাটান। আর বস্তিতে বসবাস করছে ১৮ লাখ ৪৮৬ জন। তারা মূলত শহর ও উপশহর এলাকায় টিনের ঘর, সেমিপাকা ঘর বা ঘিঞ্জি পাকা ঘরে বাস করে। তবে বস্তিবাসী কারা সে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১৬ সালে সরকার আবাসন নীতিমালা করেছে। আবাসন উন্নয়ন তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। আবাসন সংকট নিরসন করতে হলে সরকারকে আবাসন তহবিল করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বস্তিবাসী, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত কারা তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। না হলে বোঝা যাবে না কত মানুষ বস্তিতে থাকে।’
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে আবাসন সংকট কাটছে না। স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে আবাসন।’
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে ৯ লাখ গৃহহীন মানুষকে চিহ্নিত করে। ইতিমধ্যে আট লাখ মানুষের গৃহের ব্যবস্থা করেছে; প্রায় ৪০ লাখ মানুষের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বাকিদের জন্যও শেখ হাসিনা ব্যবস্থা করবেন। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্যও আবাসনের ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা তার সৈনিক হিসেবে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
জানা যায়, বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার সবার জন্য আবাসন। অঙ্গীকার পূরণে সরকার নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সারা দেশে ৩০টি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, নোয়াখালী, যশোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, শরীয়তপুর, নড়াইল, খুলনা, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব প্রকল্পে ৬ হাজার ৪৩২টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হয়েছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২৭টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পে ৫ হাজার ৯৩০টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হবে। শেরপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, হবিগঞ্জ, সিলেট, ঝিনাইদহ, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে ১৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৩৫টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় রাজউক পূর্বাচল, ঝিলমিল, উত্তরা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় আবাসন প্রকল্পে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ফ্ল্যাটগুলো উচ্চমূল্যের কারণে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। পূর্বাচল, ঝিলমিল ও উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প গ্রহণ করছে সরকার। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনেও বিভিন্ন সংস্থা আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন শহরে বসবাসরত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সম্পদশালী ব্যক্তিরা। যাদের অনেক ফ্ল্যাট আছে তারা আরও ফ্ল্যাট কিনছেন। কিন্তু বাস্তুহারা, দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত সরকারি এসব আবাসনের সুবিধা পাচ্ছেন না। অল্প দামে জমি অধিগ্রহণ করে সরকার আবাসন প্রকল্প তৈরি করে যাদের নামে বরাদ্দ দিচ্ছে তারা রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে জমির মালিক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত।
জাতিসংঘ ১৯৮৫ সালে বিশ্ব বসতি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশে^ অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার এ দিবসটি পালিত হয়।
বিশ্বজুড়ে বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউ এয়ারের তথ্য অনুযায়ী আজ সোমবার (০২ অক্টোবর) ঢাকার বাতাসের মান ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’। এদিন সকাল ১০টার দিকে ১২৯ স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে ঢাকা।
এসময় ১৮৩ স্কোর নিয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকার প্রথম স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর। ১৬২ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা। ১৬০ স্কোর নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি। ১৫৬ স্কোর নিয়ে চতুর্থ ভারতের আরেক শহর করাচি। ১৫৩ স্কোর নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে ইতালির মিলানো।
এ ছাড়া একইসময়ে একিউআই স্কোর ১১৭ স্কোর নিয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে চীনের উহান। ১১৩ স্কোর নিয়ে অষ্টম স্থানে রয়েছে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর। ১১২ স্কোর নিয়ে নবম স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। ১০৯ স্কোর নিয়ে দশম স্থানে রয়েছে সৌদি আরবের রিয়াদ।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার দূষিত বাতাসের শহরের এ তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই স্কোর একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে কি না, তা জানায়।
একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। একইভাবে একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং স্কোর ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে থাকলে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়।
অপেক্ষা আর মাত্র ৩ দিনের। তারপরই শুরু হয়ে যাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ডের চার বছরের রাজত্ব আরও চার বছর টিকিয়ে রাখার আর বাকিদের সেই মুকুট কেড়ে নেওয়ার লড়াই শুরু হবে গতবারের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই দিয়েই।
শাহরুখ খানকে দিয়ে প্রোমো আর রণবীর সিংকে দিয়ে থিম সং, আইসিসি জানান দিয়েছে ক্রিকেটে বলিউডি আবেগের মিশেল ভালোই থাকবে। কিং খানের ‘জাওয়ান’ কাঁপাচ্ছে পর্দা, কাটতি বাড়ছে বক্স অফিসে; বিশ্বকাপে আইসিসির পকেট ভরবে তো?
প্রস্তুতি বলছে, ভরবে। উইকেটে হবে রান উৎসব, লড়াই হবে ধুন্ধুমার। তাতেই ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ হবে এক ব্লকবাস্টার মেগা হিট।
মাস তিনেক আগে, বিশ্বকাপের মূলপর্বের ম্যাচগুলো যে ১০ ভেন্যুতে আয়োজন করা হবে সেই ভেন্যুগুলোর কিউরেটরদের সঙ্গে বসেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান কিউরেটর। সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপের একটাই মন্ত্র, রান চাই।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে, ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে ৩ ওয়ানডের সিরিজ খেলেছে সেই ম্যাচগুলো যদিও বিশ্বকাপের ভেন্যুতে হয়নি তবে সেই সব ম্যাচেও রানের বন্যা বয়েছে।
প্রথম দুটো ওয়ানডেতে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার করা ২৭৬ রান অনায়াসে তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছে ভারত। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ঠেঙিয়ে তুলেছেন ৩৯৯ রান। তিন নম্বর ম্যাচে আবার অস্ট্রেলিয়া করেছে ৩৫২ রান, যা তাড়া করে ভারতও গিয়েছিল ২৮৬ অবধি।
উদ্বোধনী ম্যাচ হবে গুজরাতের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। এখানে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় গত ১ ফেব্রুয়ারি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। ম্যাচে শুভমান গিল করেন সেঞ্চুরি, ভারত করে ৪ উইকেটে ২৩৪ রান আর জবাবে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ৬৬ রানে।
বোঝাই যাচ্ছে, উইকেটের ধরন বুঝে ব্যাট করতে পারলে ৫০ ওভারে এখানে রানবন্যা হবে। বিশ্বকাপে ভারত-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। দুই দল এখানে মুখোমুখি হয়েছে বহুবার, পোশাকের রঙ কখনো রঙিন কিংবা কখনো সাদা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ কমেনি। এই মাঠে অস্ট্রেলিয়া ২৬৯ রান করে ভারতকে ২১ রানে হারিয়েছে সবশেষ ম্যাচে।
আইপিএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ঘরের মাঠে সবশেষ মৌসুমে ধোনির ‘ইয়েলো আর্মি’ ৮ ম্যাচ খেলে ২০০ রানের ওপরে করেছে দুইবার, একবার জিতেছে অন্যবার হেরেছে। তবে দুই ইনিংসেই ২০০’র বেশি রান হয়েছে দুটো ম্যাচেই। অর্থাৎ চাইলে চেন্নাইকেও ব্যাটিং স্বর্গে পরিণত করা সম্ভব।
বিশ্বকাপের আগে দারুণ ছন্দে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হারার পর টানা তিন ওয়ানডে জিতে সিরিজ তো নিশ্চিত করেছেই, টানা তিন ম্যাচে ৩০০’র ওপর রান করেছে। চতুর্থ ওয়ানডেতে তো ৪০০ পার করেছে প্রোটিয়ারা। ব্যাটিং উইকেটে তারাও যে কোনো প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। হেনরিক ক্লাসেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৮৩ বলে খেলেছেন ১৭৪ রানের ইনিংস। বিধ্বংসী রূপে ফিরছেন ডেভিড মিলারও।
প্রোটিয়ারা প্রথম ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে। সেখানে অবশ্য সবশেষ হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ম্যাচেও খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে তারা অলআউট হয়েছিল মাত্র ৯৯ রানে। দিল্লির মাঠটা হয়তো খানিকটা স্পিনারদের দিকেই ঝুঁকবে, তবে অন্য মাঠগুলোতে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের রান উৎসবে মেতে উঠতে দেখার সম্ভাবনা জোরালো। তাই অনেক সাবেক ক্রিকেটারই প্রোটিয়াদের দেখছেন শেষ চারে।
বিশ্বকাপের আগে ক্লাসেন ছাড়াও ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস খেলেছেন ১৮২ রানের ইনিংস, দারুণ ছন্দে ইংল্যান্ডের ডাভিড মালানও। তবে সেরা ছন্দে নিঃসন্দেহে শুভমান গিল। সবশেষ ৫ ইনিংসে দুটো শতরান আর একটা হাফসেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেলও আছেন দারুণ ছন্দে। দুটো হাফসেঞ্চুরি আর একটা সেঞ্চুরি সবশেষ ৫ ইনিংসে। হায়দ্রাবাদে বিশ্বকাপের অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের ৩৪৫ রান কিউইরা তাড়া করেছে ৩৮ বল হাতে রেখে।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করেন, এই বারের বিশ্বকাপে রানবন্যায় বোলারদের জন্য কাজটা হবে কঠিন। দেশ রূপান্তরকে আশরাফুল বলেন, ‘আমাদের পেসাররা গত এক দেড় বছর ধরে খুবই ভালো করছে। তবে যেহেতু ভারতের মাটিতে খেলা, আমরা দেখেছি যে সাড়ে ৩০০’র বেশি রান হচ্ছে প্রতিটা ম্যাচে। কেউ যদি ভালো না করে, তাকে মনে রাখতে হবে যে টুর্নামেন্টে পরের ম্যাচে ফিরে আসতে হবে। একজনের দিন খারাপ যেতেই পারে, কোনো ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান উঠেই যেতে পারে। ৯টা ম্যাচের ভেতর ৪-৫টা ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান হতে পারে। তাই বোলারদের ফিরে আসার মানসিকতা থাকতে হবে।’
বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমও বলেছেন যে দেড় মাসের আসরে প্রস্তুত থাকতে হবে যে কোনো কিছুর জন্যই, ‘দেড় মাসের আসর, ৯টা ম্যাচ এই সময়ে খেলতে হবে বা তারও বেশি। অনেক উত্থান-পতন হবে। যে কোনো কিছুর জন্যই তৈরি থাকতে হবে।’
রান উৎসবের বিশ্বকাপ যে হতে যাচ্ছে, তার সব রসদই মজুদ। মাঠগুলোকে করা হয়েছে ব্যাটিং স্বর্গ, বিশ্বকাপে আসার আগে সেরা সেরা ব্যাটসম্যানরাও আছেন ছন্দে। শুধু প্রশ্ন এটাই, রান উৎসবের এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে রান করবেন কে? সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাটিংয়ের ছবিটা যে মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।