
মানবসভ্যতার যত পরিবর্তন হয়েছে, একটি দেশের আইনও ঠিক সেভাবেই এগিয়েছে। পৃথিবীর সব রাষ্ট্রে বিভিন্ন জাতির মধ্যে যেসব আইন রয়েছে, তা মেনে চলতে একজন নাগরিক বাধ্য। আবার অনেক উপজাতি বা আদিবাসী রয়েছে, যারা নিজস্ব কিছু নিয়ম-রীতি অনুযায়ী পরিচালিত হয়। সেখানে রাষ্ট্রীয় আইন শতভাগ ব্যবহৃত হয় না। কোনো দেশের সরকারও সে ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে না। কিন্তু আদিবাসীর বাইরে যে বৃহৎ জনগোষ্ঠী রয়েছে, তারা নিজ নিজ দেশের আইন মানতে বাধ্য। সেটা দেশের সংবিধানেই স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে।
সমাজ-সংসারের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা নিয়ন্ত্রণের জন্য নানা ধরনের আইনের দরকার। সেখানে দেশের সার্বভৌমত্ব, জননিরাপত্তা, সম্পর্ক বিবাহ-পরিবার, অভ্যন্তরীণ অপরাধ দমন এবং বিভিন্ন বিষয়ে আইনের প্রয়োজন। সময়ের সঙ্গে সংগতি রেখে সব সময় আইন পরিবর্তিত হয়ে এসেছে। এটাই স্বাভাবিক। সময় যেমন চলমান, ঠিক তেমনটি আইনও। যে কারণে দেখা যায়, বিভিন্ন দেশে ক্রমাগত পরিবর্তিত হতে থাকে আইন, যা একেবারেই স্পষ্ট। সেখানে আইনের বাক্যের কোনো আবছায়া বা অস্পষ্টতা নেই। একই সঙ্গে সমাজে শুরু হয় এর প্রয়োগ। কিন্তু আমাদের দেশে হচ্ছে অনেকটাই তার বিপরীত। দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিষয়টি চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
অসংগতিপূর্ণ ধারা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে মামলা, রুল হলেও অনেক ক্ষেত্রে নিষ্পত্তির বিষয়টি উদ্যোগহীনতায় আটকা পড়ে। অসংগতি ও অস্পষ্টতা আছে বিভিন্ন আইনের অন্তত ১৮টি ধারা পর্যালোচনা করে উচ্চ ও অধস্তন আদালতের বেশ কয়েকজন আইনজীবী মনে করেন, ১৬৩ বছরের পুরনো দণ্ডবিধি, ১২৫ বছর আগের ফৌজদারি আইন ও দেড়শ বছরের পুরনো সাক্ষ্য আইনে দেশের আদালতগুলোতে বিচার কার্যক্রম চলে। সংগত কারণেই পুরনো আইনের সংস্কার, সংশোধন বা পরিমার্জন করে আইনগুলো আরও যুগোপযোগী ও যান্ত্রিকতামুক্ত করার তাগিদ আসে।
কিন্তু বিভিন্ন ধরনের বিতর্ক ও প্রশ্ন উঠেছে, জনগুরুত্বপূর্ণ এমন বেশ কিছু আইনের সংশোধন বা পরিবর্তনের তাগিদ দিয়ে উচ্চ আদালতের দেওয়া রায় কিংবা আদেশ বাস্তবায়ন হয়নি, তা নিয়ে। এই না হওয়ার পেছনে মূলত কী কাজ করছে, তা আমাদের জানা নেই। তবে এ কথা বলা যায়, মানুষের প্রয়োজনে আইন। পুরনো আইনের সঙ্গে যুক্ত হয় নতুন আইন। কিন্তু অনেক আইনি ধারার অস্পষ্টতা, অসংগতির পাশাপাশি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি নিয়ে আপত্তি ও প্রশ্ন উঠলেও, তা সমাধান হয় না।
এখনো চূড়ান্ত হয়নি, ১৯৯৯ সালের মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের কিছু ধারা, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার ও ১৬৭ ধারা অনুযায়ী রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে বিতর্ক, ছেলেশিশু, পুরুষ ও তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি অহরহ যৌন নির্যাতনের শিকার হলেও দণ্ডবিধিতে ধর্ষণ সম্পর্কিত সাজার আইনে সুস্পষ্ট অপরাধ বিষয়ে উল্লেখ, গর্ভের সন্তান বৈধ নাকি অবৈধ, তা বিচার-সংক্রান্ত সাক্ষ্য আইনের ১১২ ধারার বৈধতা নিয়ে ২০২০ সালের ৯ মার্চ রুলের নিষ্পত্তি, শ্রমিকের স্বার্থ সুরক্ষায় ২০০৬ সালে হয় শ্রম আইন এসব আইনের বিভিন্ন ধারার অসংগতি এবং অস্পষ্টতাসহ নানাবিধ আইন বিষয়ে সুনির্দিষ্ট লিখিত কোনো রায়ের প্রয়োগ এখনো হয়নি। এ বিষয়ে সংসদ সদস্যদের একান্ত উদ্যোগ দরকার। আইনের স্থবিরতা কেউ প্রত্যাশা করে না।
ভলোদিমির জেলেনস্কি স্বীকার করেছেন, ইউক্রেনের বাসন্তী কাউন্টার অফেন্স ঠিকঠাক কাজ করছে না। কী ক্ষতি হলো সে কথা অবশ্য তিনি স্বীকার করলেন না। বিবিসির কাছে তিনি বলেছেন, ‘কাউন্টার-অফেনসিভ ইজ নট গোয়িং ওয়েল।’ যতটুকু অগ্রগতি ঘটবে বলে আশা করা হয়েছিল, অগ্রগতি ঘটছে তার চেয়ে অনেক অনেক কম। ফল কাক্সিক্ষত মাত্রার নয়।
এস্তোনিয়ার সাবেক গোয়েন্দাপ্রধানের মত অনুযায়ী রাশিয়ান ডিফেন্সেজ আর অ্যা চ্যালেঞ্জ ফর ইউক্রেন। কিয়েভ আশা করেছিল তারা প্রতিপক্ষকে দূর থেকেই কাবু করে দেবে। সাবেক এস্তোনীয় গোয়েন্দাপ্রধান রাইনার সাকস বলেছেন, ইউক্রেনের প্রারম্ভিক হামলাই ব্যর্থ হয়েছে।
ইউক্রেন দক্ষিণের ফ্রন্টলাইনের তিন জায়গায় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যুহ ভেদ করতে চেয়েছিল। গত দেড় মাসের প্রতি-আক্রমণে তারা কয়েকটা গ্রাম দখল করতে পেরেছে বটে, কিন্তু তা হয়েছে রাশিয়ার কৌশলগত পশ্চাদপসরণের ফলে। মূল প্রতিরক্ষা লাইন তারা অতিক্রম করতে পারেনি। এস্তোনিয়ার ফরেন ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের সাবেক প্রধান বলেন, এ ধরনের হামলায় উল্লেখযোগ্য ফল আশা করা যায় না।
অভিযানের মধ্যেই ইউক্রেনের ট্যাঙ্ক ক্রুরা তাদের ট্যাঙ্ক খারাপ হয়ে যাওয়ার ভান করেছে। এ চালাকির কারণ রুশ মিট গ্রিন্ডারের মধ্যে পড়তে তারা নারাজ। খবরটি পেয়েছে জার্মান পত্রিকা ডার স্পাইজেল। জার্মানির দেওয়া লেপার্ড ট্যাঙ্কের ইউক্রেনী ক্রুরা বলেছে, ‘ডজিং অ্যান এনগেজমেন্ট অলটুগেদার ওয়াজ বেটার দ্যান এন্টারিং কমব্যাট ওনলি টু পুল আউট আফটার দ্য ফার্স্ট শট।’ হামলায় অংশ নিলে সঙ্গে সঙ্গে ভস্ম হয়ে যেতে হবে। জাপরোঝিয়ায় ইউক্রেনী কাউন্টার অফেনসিভে অংশগ্রহণকারী ওই ভেটেরানরা ইউক্রেনে সামরিক অভিযানে সমৃদ্ধ। তারা জার্মানিতে লেপার্ড ট্যাঙ্ক চালনায় পাঁচ সপ্তাহের প্রশিক্ষণ নিয়েছে। প্রসঙ্গত, জুনের ৪ তারিখে ইউক্রেন কাউন্টার অফেনসিভ শুরু করে।
এ ফাঁকে রাশিয়ায় ঘটে গেছে আজব, অভিনব এক অভ্যুত্থান। সশস্ত্র বিদ্রোহ প্রচেষ্টা যাকে বলা যায়। ২৩ ও ২৪ জুন বিদ্রোহটি করেছে ভাগনার প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি। কোম্পানিটি রাশিয়ারই। লিবিয়ায় এবং আফিকায় তারা বেশ নাম কুড়িয়েছে। ইউক্রেনেও তাদের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, বিশেষ করে বাখমুতে (তথা আর্চেমভস্কে)। তারা আর্চেমভস্ক দখলে নিয়ামক ভূমিকা পালন করেছে। আর্চেমভস্ক যুদ্ধ নিয়ে রুশ সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তকর্তাদের সঙ্গে ভাগনারের সেনাদের বাদানুবাদও হয়েছে। কোম্পানিটির প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন। ভাগনার পিএমসির প্রিগোজিন-অনুসারী কিছু ইউনিট এ বিদ্রোহে অংশ নেয়। তারা রস্তভ-অন-দনে সাউদার্ন মিলিটারি ডিস্ট্রিক্টের সদর দপ্তর দখল করে নেয়, ভরোনেজ শহরে হামলা চালায় এবং মস্কোর দিকে রওনা দেয়। বাহিনীর সাফল্যে মুগ্ধ প্রিগোজিন রুশ নাগরিকদের এবং রুশ বাহিনীর অন্যান্য ইউনিটকেও বিদ্রোহে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
শেষ পর্যন্ত প্রিগোজিন দেখলেন, আর কেউ তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে না। অতঃপর বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকসান্দর লুকাশেঙ্কোর দূতিয়ালিতে ভাগনার বিদ্রোহের গর্ভপাত তথা অ্যাবরশন হয়। তার আগেই এফএসবি অবশ্য একটা বিশ^াসঘাতকতার মামলা করেছিল। এফএসবি এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে প্রিগোজিনের অনুসারীদের টুকটাক যুদ্ধও হয়েছে। এফএসবির মামলায় প্রিগোজিনের ২০ বছর পর্যন্ত সাজা হতে পারত, তবে হয়নি।
বেলারুশের প্রেসিডেন্টের দূতিয়ালিতে কথিত ভাগনার বিদ্রোহের অবসান হয়েছে। বিদ্রোহীদের বিচার হচ্ছে না। প্রিগোজিন বেলারুশে যাবেন। প্রকৃত ঘটনা যদিও অন্যরকম। সলেদার, আর্চেমভস্ক (বা বাখমুত) দখলে ভাগনার পিএমসির ভূমিকা রুশরা মনে রেখেছে এবং পুতিনও মনে রেখেছেন। রাশিয়া দুর্বল হবে, গাড্ডায় পড়বে সম্মিলিত পাশ্চাত্য ও ন্যাটোর স্বপ্নটা স্বপ্নই থেকে গেল। কাউন্টার অফেনসিভে ইউক্রেন সুবিধা করতে পারছে না। অভিযানের এক মাস পার হয়ে গেছে যদিও। ভাগনার পিএমসির বিদ্রোহ না ইউক্রেনকে না ন্যাটোকে না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কোনো সুবিধা এনে দিতে পারল। ইট ওয়াজ অ্যান অ্যাবরটেড ক্যু। প্রিগোজিনের বিদ্রোহের পর মিডিয়ায় অনেক কথা হয়েছে এবং হচ্ছে। প্রেস্টিটিউট বলছে, রাশিয়া দুর্বল হয়ে গেছে। আর বিকল্প ভাষ্য হচ্ছে, রাশিয়া একান্নব্বইয়ের দশার চেয়ে আরও সংহত হয়েছে। প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তার বিলাসিতার ও সম্পদের খোঁজ নিচ্ছে রুশ মিডিয়া।
জেলেনস্কির প্রাক্তন সহযোগীরা কাউন্টার অফেনসিভের ব্যর্থতার জন্য দায়ী করছে পাশ্চাত্যকে। তারা বলছে ইউক্রেনের পশ্চিমা মদদদাতারা রসদ সরবরাহে খুবই ধীরগতির। এই সমালোচকদের একজন হলেন ভলোদিমির জেলেনস্কির সাবেক উপদেষ্টা আলেক্সি আরেস্তোভিচ। তিনি বলেছেন, মদদদাতারা সঠিক সময়ে সঠিক সমরাস্ত্র সরবরাহ করতে পারেনি। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বলেছে, কাউন্টার অফেনসিভে ইউক্রেন কোনো অগ্রগতি ঘটাতে পারছে না বলে পাশ্চাত্যের সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
প্রত্যাশিত এফ-১৬ও ইউক্রেনকে দেওয়া হয়নি। কখনো দেওয়া হবে বলে মনে হয় না। মার্কিন সশস্ত্র বাহিনী প্রধান মার্ক মিলির বক্তব্যেও আরেস্তোভিচ অসন্তোষ প্রকাশ করেন। মিলি বলেছেন, ইউক্রেনের কাউন্টার অফেনসিভে প্রচুর সৈন্য ক্ষয় হবে এবং কাউন্টার অফেনসিভের গতি কাক্সিক্ষত মাত্রার হবে না। আরেস্তোভিচ বলেন, প্রয়োজনীয় সমরাস্ত্রের জোগান কোথায়? জেলেনস্কির জ্যেষ্ঠ সহযোগী মিখাইল পদোলিয়কও প্রায় একই কথা বলেছেন। বলেছেন, পাশ্চাত্যের ঢিলেমির সুযোগেই রাশিয়া অপ্রতিরোধ্য প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। এখন ইউক্রেনে ক্লাস্টার মিউনিশান পাঠবে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। কানাডা ও যুক্তরাজ্য জাতিসংঘ প্রটোকলের দোহাই দিয়ে তাতে আপত্তি জানিয়েছে। যাক, এ ক্ষেত্রে তারা আপত্তিটা করতে পারল। অবশ্য তাতে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযানের গতি কমবে না, ইউক্রেনের সেনাদের নিহত হওয়ায় বন্ধ হবে না। অফেনসিভে ইউক্রেনের ২৬ হাজারের বেশি সৈন্য নিহত হয়েছে। মোদ্দা কথা, ইউক্রেনের কাউন্টার অফেনসিভে কোনো ফায়দা হওয়ার সম্ভাবনা নিকট ভবিষ্যতে নেই।
কাউন্টার অফেনসিভে সেটাই ঘটতে যাচ্ছে যেমনটা বলেছেন জুলিয়ান ম্যাকফারলেন, ‘ইউক্রেন ইজ মাউন্টিং শ্রোডিংগারস অফেনসিভ। ইফ ইট সাকসিডস, ইট হ্যাজ অলরেডি স্টারটেড। ইফ ইট ফেইলস দেন ইট হ্যাজেন্ট ইভেন বিগান। ইউক্রেনের কাউন্টার অফেনসিভ একটা কোয়ান্টাম যুদ্ধ। কাউন্টার অফেনসিভ শুরু হয়েছে ৪ জুন। আর ৬ জুন কাখভকা বাঁধ উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ খবরটা কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র আগে থেকে জানতে পারেনি (বলা ভালো, জানতে চায়নি)। তারা বলেছে, রাশিয়াই কর্মটি করেছে। অল্টারনেটিভ মিডিয়া-বিশ^ যদিও বলছে, এ কাজ ইউক্রেনের।
ইউক্রেন এ কাজ করতে পারে বলে দিনিয়েপার নদীর যার ওপরে কাখভকা বাঁধ, পশ্চিম পার থেকে সেনা সরিয়ে নিয়েছিল রাশিয়া। এ আলোচনা বহুদিনের। ইউক্রেন জাপরোঝিয়ার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করছে বছরখানেক ধরে, কিন্তু পারছে না সামর্থ্য নেই বলে। বাঁধ ধসের পর ইউক্রেনে নানা পরিবেশগত ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। সৃষ্ট বন্যায় ৩৭ জন মারা গেছে। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রচুর। দিনিয়েপার নদীর দুই পাড়ের বিশাল এলাকা প্লাবিত হয়। অসংখ্য ঘরবাড়ি তলিয়ে যায়। বহু মানুষ অঞ্চলটি ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। কাখভকা বাঁধ নির্মিত হয়েছিল সোভিয়েত আমলে। বাঁধের কারণে তৈরি হয় বিশাল জলাধার, যেটিকে স্থানীয়রা কাখভকা সাগর বলে। জলাধারের পানি বিদ্যুৎ উৎপাদনে কাজে লাগত। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর সিকিউরিটি পলিসির জ্যেষ্ঠ ফেলো স্টিফেন ব্রায়েন মনে করেন, রুশরা যদি কাখভকা বাঁধ উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করত, তাহলে তাদের নৌকায় করে কয়েক টন বিস্ফোরক সেখানে নিয়ে যেতে হতো। এরপর বাঁধে জুড়ে দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটাতে হতো। কিন্তু ইউক্রেন সরকার বাঁধ ধসের যে ভিডিও প্রকাশ করেছে তাতে মনে হয়, বিস্ফোরণ পানির ওপরে হয়নি, নিচে হয়েছে।
ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র জাপরোঝিয়া এনপিপিতে শীতল পানি কাখভকা জলাধার থেকেই সরবরাহ করা হতো। ইউক্রেনের দক্ষিণ ও ক্রিমিয়ার উত্তরাঞ্চলে কৃষিকাজের পানিও সেখান থেকে যেত। ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ভেতরের কেউ ধসানোর কাজটি করেছে। রুশদের কথাই তিনি বলেছেন। সম্ভবত তিনি ১৯৪১ সালে ইউক্রেন হয়ে জার্মানরা যখন এগোচ্ছিল তখন তাদের থামাতে এই নদীতে নির্মাণ করা সে সময়ের বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ বাঁধে স্তালিনের বাহিনীর বোমা হামলার কথাই স্মরণ করাতে চাইছেন। কাখভকা বাঁধ ধসিয়ে রুশদের কী অর্জন হবে তা খুব পরিষ্কার নয়। কাখভকা বাঁধ ধসানোর ঘটনাকে যুদ্ধাপরাধ গণ্য করা চলে। গোটা এলাকা শুধু ডুবেইনি, সৃষ্ট বন্যায় মিঠা পানির উৎস ও কৃষ্ণসাগর অববাহিকা দূষণের ঝুঁকিতে পড়েছে। পানিবাহিত রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। জলাধারের দূষিত পানি ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিজমিকেও হুমকিতে ফেলেছে। এমনিতেই গত বছরের গোড়ার দিকে যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা কমেছে। কাখভকা জলবিদ্যুৎকেন্দ্র ধসের কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ আরও ব্যাহত হয়েছে।
ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জাপরোঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে বিজ্ঞানীরা উদ্বিগ্ন। এর রিঅ্যাক্টরে তাপমাত্রার পার্থক্য খুব বেশি হলে ভয়ংকর বিপর্যয় ঘটতে পারে। অবশ্য ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি বলেছে, জাপরোঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তাৎক্ষণিক হুমকির মধ্যে নেই, কারণ রিঅ্যাক্টর শীতল করার জন্য বিকল্প জলাধার আছে। বন্যায় দিনিয়েপার নদীর দুই পাড়ের প্রায় ৪২ হাজার মানুষ ঝুঁকিতে পড়ে। নদীর বাম পাড় ইউক্রেনের দখলে আর ডান পাড় রুশদের দখলে। এক লাখ ১০ হাজার মানুষের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। জীবজন্তুর ওপরও বাঁধ ধসের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এবং আগামীতে আরও পড়বে। বন্যার ঢলে নদীর ডান তীরের কাজকোভা-দিব্রোভা চিড়িয়াখানার প্রায় ৩০০ প্রাণী মারা গেছে। বড় ধরনের প্রভাব পড়বে কাখভকা জলাধারের মাছের ওপর। তাদের প্রজননক্ষেত্র ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। জলাধারের ছোট ছোট উদ্ভিদ ও প্রাণীর বাসস্থান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। পানির উচ্চতা বাড়বে বলে লবণাক্ততা বাড়বে; গাছপালার বৃদ্ধি ব্যাহত হবে।
বন্যার পানিতে শিল্প-কারখানা, গ্যাস স্টেশন ও ড্রেন থেকে বিপুল পরিমাণে দূষণকারী উপাদান মিঠা পানিতে মিশবে। প্রায় ১০ লাখ মানুষ বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত। কাখভকা জলাধারের দূষিত পানি কৃষ্ণসাগরে গিয়ে পড়বে। তাতে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাঁধ ধসের পর খেরসনের ৯৪ শতাংশ, জাপরোঝিয়ার ৭৪ শতাংশ ও নিপ্রোপেত্রভস্ক অঞ্চলের ৩০ শতাংশ জমিতে সেচের পানি নেই। আগামী বছরের শুরুতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষিজমি মরুভূমিতে পরিণত হতে পারে। জমিতে লবণাক্ততা বাড়বে, সামনের বছরগুলোতে কৃষিকাজের অনুপযুক্ত হয়ে পড়তে পারে। গম ও ভুট্টার উৎপাদন মারাত্মক ব্যাহত হতে পারে। বড় বিপদে পড়তে পারে উন্নয়নশীল দেশগুলো। বৈশি^ক খাদ্য নিরাপত্তায় ব্যাঘাত ঘটবে।
খ্রিস্টের জন্মের তিন হাজার তিনশ বছর আগের সিন্ধু সভ্যতা পুরাণের বিবরণ অনুযায়ী ধ্বংস হয়েছিল দেবতা ইন্দ্রের কারণে। কথিত আছে, বৃত্র নামের এক অসুর সিন্ধু সভ্যতার রক্ষক ছিল। ইন্দ্র বৃত্রকে হত্যা করেছিল। সিন্ধু তীরের শহর ও পাশর্^বর্তী এলাকাকে রক্ষার জন্য ছিল একটি বাঁধ। ওই বাঁধই বৃত্র। আর্যরা সবকিছুর পেছনেই একজন অসুরকে দেখতে পেত। ইন্দ্রের উপর্যুপরি হামলায় বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। তারই বিবরণ বৃত্র সংহার উপাখ্যান। ইউক্রেনেও নব্য আর্যরা সক্রিয়। কাখভকা বাঁধ ধসিয়ে তারা নয়া বৃত্র সংহার উপাখ্যান রচনা করল।
লেখক: সাংবাদিক
তার সঙ্গে পরিচয় সম্ভবত আজকের কাগজে থাকতে। তখন আমি জনকণ্ঠে। ছোটখাটো, কৃষ্ণবর্ণের শীর্ণ মানুষ। যখনই দেখা হয়েছে, মুখ চেপে হাসি দিয়ে, হালকা দাঁত বের করে বলতেন কেমন আছেন দাদা? বাড়িয়ে দিতেন হাত। দেখা হলেই বলেছি ভাই, আমাকে তো দিলেন না! কথাটার অর্থ তিনি জানতেন। বলতেন দিমুনি! দিলেই তো শ্যাষ! তখন কী চাইবেন? হাহাহা। আসেন চা খাই। আপনার সঙ্গে জরুরি একটা কথাও আছে?
সেটা এম. এ কুদ্দুসের ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নে প্রথমবার সহসভাপতি হিসেবে নেতৃত্বে আসার সময়ের কথা। জানালেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন। সেই সময় চাকরি করতেন দৈনিক সংবাদে। এমন কথা শুনে বললাম আপনার চারদিকে এত টাকার ছড়াছড়ি, এর মধ্যে পারবেন? তিনি বললেন আপনে প্রথমে আমারে ‘তুমি কইরা বলবেন? হাহাহা। তারপর কথা বলুম। আমি আপনার অনেক ছোট। আর নির্বাচনের কথা বলতাছেন? ঐটা হইবো। দেইখেন ক্যামনে হয়। মনে রাইখেন, সবকিছু টাকা দিয়া হয় না! এরপর ইউনিয়ন অফিসে গেলে প্রায় সময়ই তাকে পেতাম। হয় অফিসের ভেতরে, না হলে ইউনিয়নের বাইরে গাছতলায়। প্রেসক্লাবের ব্যাডমিন্টন মাঠের কোনাকুনি বরাবর, যে রাস্তাটা ব্যাংকের দিকে গেছে সেখানে একটা সিমেন্টের গোল পাইপ রয়েছে। তার ওপরে তিনি বসতেন। প্রায় সময় ওখানেই পাওয়া যেত। নির্বাচিত হওয়ার পরও, কেবল মিটিং ছাড়া, ওখানেই বসতেন। আর দুপুরে খাবারের সময় চলে যেতেন প্রেসক্লাবের ভেতরে। সারাদিন আড্ডা শেষে, পড়ন্ত বিকেলে চলে যেতেন সংবাদ অফিসে। একদিন দুপুরবেলার ঘটনা। বসে আছি ইউনিয়ন অফিসে। বেজে উঠল মোবাইল ফোন। স্ক্রিনে দেখলাম কুদ্দুস কার্টুন নাম! কারণ মোবাইলে রয়েছে, তিনজন কুদ্দুস। এর মধ্যে প্রথমজন কুদ্দুস আফ্রাদ। যিনি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি। আরেকজন বন্ধু।
ফোন রিসিভ করতেই বললেন কই আপনে?
ইউনিয়ন অফিসে?
বসেন। আসতেছি। আমি পাইপে বইসা আছি।
না না, আপনে থাকেন। আমিই আসতেছি। ওখানে যাওয়ার পর বললেন চা খাবেন? না, ভাই। চলে যাব। জরুরি কাজ আছে।
অফিসে যাবেন?
না। এখন আর ধানমন্ডি যাব না।
হ, আপনের তো সুখের চাকরি। ইচ্ছা হইলে যান, নইলে যান না। হাহাহা। শোনেন, জরুরি কথা আছে। আমি একটা কার্টুন আঁকছি। এইবার নির্বাচনে সিনিয়র সহসভাপতি হিসাবে আমার পোস্টার, এইটাই ক্যাম্পেইন! আর একটা ছোট কার্ড করছি। এই যে...। তিনি বুক পকেট থেকে কয়েকটি কার্ড দেখালেন। বললেন যা আছে, কপালে। নামছি তো নামছি! আপনের পোর্টেট কিন্তু পাইবেন! আঁকতাছি...।
ছবি কোনটা নিছেন?
নিছি একটা, ফেসবুক থেকে। যেটা ভাল্লাগছে। ফিনিশিং বাকি আছে।
এরপর আপনেরে দিমু। আপনে কিন্তু আমারে দেবেন ৭০ ভোট! হাহাহা।
অবাক হয়ে বললাম এত ভোট পাবো কোথায়?
তিনি দাঁত বের করে হাসলেন। বললেন বিটলামি কইরেন না?
আপনে ২০০০ সালে ছিলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির (বাচসাস) সাধারণ সম্পাদক। আমি কিছু জানি না? আমাদের ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নে আপনার বন্ধু আর শিষ্যই তো আছে কমপক্ষে ২০০! আর প্রেসক্লাবের কথা বাদই দিলাম। সেইখানে চাইছি মাত্র ৭০টা!
আচ্ছা, দেখি পারি কিনা? এই বলে চলে যাচ্ছিলাম। তিনি হাত ধরলেন। বললেন আমি কিন্তু আপনেরে ভীষণ শ্রদ্ধা করি, ভালোবাসি।
জানি তো! আমারও ভীষণ পছন্দের মানুষ আপনি। ঠিক আপনি না, আপনার হাসি! দুজনেই হাসতে থাকলাম। বললাম দৈনিক সংবাদ ছেড়ে ইত্তেফাকে গেলেন। আবার সংবাদে ফিরে এলেন ক্যান? ভাল্লাগে না!
... বেশ কিছুদিন পর। তখন নির্বাচন শেষ। নতুন নেতৃত্ব এসেছে, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নে। কুদ্দুস হয়েছেন, সিনিয়র সহসভাপতি। আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরলেন। অনেক কথা বললেন। এও বললেন একটা সমস্যা হইছে। নতুন সদস্য নিয়া। এইভাবে তো সদস্য পদ দেওয়া যাইবো না। গত কমিটি যে পদ্ধতিতে সদস্য চূড়ান্ত করছে, তা গঠনতান্ত্রিক না। যে কারণে, নির্বাচিত নেতাদের কয়েকজনকে নিয়া একটা রিভিউ কমিটি হইছে। তারা যাচাই-বাছাই কইরা দেখার পর, সদস্য চূড়ান্ত করবো। তখন হইবো।
এটা কবে হবে?
নির্বাচনের আগে।
কাউকে বাদ দেবেন?
যোগ্যতার মধ্যে না থাকলে তো, বাদ পড়বোই।
সমস্যা হতে পারে। তাদের কাছে, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের প্যাডে সভাপতি স্বাক্ষরিত নতুন সদস্য হিসেবে অভিনন্দন জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। নতুন সদস্যরা বাড়তি টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে ব্যাংক রসিদসহ সেই চিঠি সংগ্রহ করেছেন। এখন নতুন কিছু করতে গেলে, আইনের ফাঁকে পড়তে পারেন। সেই দিকটা মাথায় রাখবেন। ইউনিয়ন যেন কোনোভাবেই আদালতের বারান্দায় দৌড়াদৌড়ি না করে। এটা সাংবাদিক সমাজের জন্য লজ্জাজনক। বললাম, বাদ দেন এসব। অনেক দিন হাসপাতালে ছিলেন। হার্টে সমস্যা আছে আপনার। এসব নিয়া বাড়তি চিন্তা করার দরকার নাই। গঠনতান্ত্রিকভাবে যা হওয়ার, তাই হবে।
কে জানতো, এটাই শেষ কথা? গত শনিবার সকালে চমকে উঠলাম! দেখলাম, ফেসবুকের নিউজফিড ভেসে যাচ্ছে কুদ্দুসের মৃত্যু সংবাদ জানিয়ে। মুহূর্তেই অন্য এক কুদ্দুসের ছায়া ভেসে উঠল মনের পর্দায়। ভীষণ মায়ামাখা মুখে তিনি যেন বলছেন দাদা, আমারে শেষ দেখাটা দেখতেও প্রেসক্লাবে আইবেন না!
না, কুদ্দুস আমি আপনজনের হীমশীতল মুখ সহ্য করতে পারি না। তাই দেখি না। মনের ভেতরে বেঁচে থাক, প্রাণোচ্ছল জীবন্ত মানুষ। যেভাবে আপনাকে মনে থাকবে, আমৃত্যু। এক সমুদ্দুর ভালোবাসা, আত্মাপ্রিয় স্বজন...!
লেখক : সাংবাদিক
পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ইলেকশন নিয়ে আগাম যা লিখেছিলাম, মোটামুটি তার সবটুকুই মিলে যাওয়ায়, আনন্দ পেতে পারতাম কলমচি হিসেবে। কিন্তু যে আশঙ্কা করে বলেছিলাম যে এবার সংখ্যালঘু ভোট শিফট হবে। অনেক জায়গায় শাসকদলের ভোট লুট আটকাতে গণপ্রতিরোধ হবে। ফলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অনেক মানুষের প্রাণ যেতে পারে। অক্ষরে অক্ষরে তা মিলে গেছে। বিপুলসংখ্যক নিরীহ মানুষ খুন হয়েছেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। একুশ শতকের পৃথিবীতেও যদি তথাকথিত ‘গণতন্ত্রের স্বার্থে’ গরিবের এমন জীবন দিতে হয় তা সত্যিই বর্বরতা।
মুশকিল হচ্ছে, এই বর্বরতা চোখের সামনে ঘটে যাওয়ার পরও অনেক তথাকথিত ইন্টেলেকচুয়ালরাও যুক্তিতর্ক করে ব্যাপারটাকে লঘু করে দেখাতে ব্যস্ত। আর রাজনীতিবিদদের কথা যত কম বলা যায় তত ভালো। এক এক সময় মনে হয় আজকের এই গ্রেট পলিটিশিয়ানদের চামড়া এতটাই মজবুত যে, গন্ডার সেখানে নিতান্তই শিশু। কিন্তু কিছু করার নেই। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বলে যে সিস্টেম বছরের পর বছর চলে আসছে তা যত ঘুণ ধরুক না কেন, আমরা পরম যতেœ তার গুণকীর্তন করে যাব। সিস্টেম নিয়ে প্রশ্ন তুললে আপনি দেশবিরোধী, রাষ্ট্রদ্রোহী। এ এমন এক সিস্টেম, যেখানে আপনার দৈনন্দিন নানা কাজে বাধ্য হয়ে এমন রাজনীতিবিদের কাছে যেতে হবে, অন্য সময় হলে তার নাম শুনলে আপনার ঘেন্না হতো। পাওয়ার পলিটিকসের যুগে, আদ্যন্ত ভোগবাদী এই সমাজে সবার ওপরে ক্ষমতা সত্য, তাহার ওপরে নাই।
পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে এটা পরিষ্কার যে, শাসক দল পুরোপুরি গা জোয়ারি, ছাপ্পা ভোট, প্রশাসন, পুলিশকে কাজে লাগিয়ে পঞ্চায়েত দখল করেছে। কখনো কখনো, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেস ভোট রিগিংয়ে সর্বকালের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। মমতা ব্যানার্জির সরকার নিঃসন্দেহে বেশ কিছু জনমুখী প্রকল্প সারা বছর চালালেও জনগণের ওপরে আস্থা এত কম যে, বিরোধী শূন্য রাজ্য করতে তাদের গা জোয়ারি পথ না ধরলে চলে না।
পুলিশ সবসময় শাসক অনুগত। এবারও সে তাই ছিল। আর ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। নির্বাচনের আগে থেকেই বিরোধী দল কেন্দ্রীয় বাহিনী চাই বলে যেভাবে উদ্বাহু নৃত্য করছিল, আর কোনো না কোনোভাবে তাকে ঠেকাতে সরকার পক্ষ কোর্টে যাচ্ছিল, তাতে সাধারণ মানুষের ধারণা হচ্ছিল যে, সত্যিই বোধহয় কেন্দ্রীয় ফোর্স এলেই একমাত্র সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। বাস্তবে দিল্লি বাহিনী সব বুথে ছিল না। থাকলেও তাদের কোনো সক্রিয় ভূমিকা অন্তত এবারের ভোটে দেখা যায়নি। ফুটবল বা ক্রিকেটেও ম্যাচ গড়া-পেটা হয়। এ দেশেও কখনো কখনো কেন্দ্র-রাজ্য গড়া-পেটা হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তা ছাড়া মেঠো তর্জন-গর্জন বাদ দিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য দুপক্ষের দরদ যখন হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি, তখন গট আপ না থাকাটাই তো আশ্চর্যের।
একজন-দুজন নয়, খুব ভুল না বললে এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে মারা গেছেন অন্তত পঞ্চান্নজন অতি সাধারণ লোক। যাদের মধ্যে শাসকদলের লোকের সংখ্যা কম নয়। আমরা দিনে দিনে এমন অসংবেদনশীল হয়ে পড়ছি, এত মৃত্যু এখন নিতান্তই সংখ্যা মাত্র। এত পরিবারে অন্ধকার নেমে আসার পরও টিভিতে আমাদের বিজ্ঞানীদের পারস্পরিক দোষারোপ অব্যাহত। গত চৌত্রিশ বছরে কেমন পরিস্থিতি ছিল, এখন কত ভালো তা নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা থেকে অন্যান্য রাজ্যের চেয়ে পশ্চিমবঙ্গ কত চমৎকার রয়েছে, এসব তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ চলছে। চলতেই থাকবে। শুধু গরিব পরিবারগুলো সারা জীবন হাহাকার নিয়ে বেঁচে থাকবে। আঙুল তোলা হয় মাওবাদীদের দিকে, তারা সহিংস আন্দোলনে বিশ্বাসী বলে। আমাদের কোনো গণতান্ত্রিক, আদর্শবাদী, অহিংস রাজনীতিক আছেন, যিনি বুক ঠুকে বলতে পারেন যে তার হাতে রক্ত লেগে নেই! কোনো বুদ্ধিজীবী আছেন যিনি সরাসরি দেশের সর্বত্র যে চরম স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে রাস্তায় নামবেন!
এবার দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ভাঙ্গর এলাকায় নির্বাচনের আগে বা পরে যা হয়েছে তা ফ্যাসিস্ট আচরণ ছাড়া আর কোনো ভাষায় ব্যাখ্যা করব বুঝে উঠতে পারছি না। আমি যদি তর্কের খাতিরে মেনেও নিই যে, গন্ডগোলের পেছনে বিরোধী দলের ইন্ধন ছিল, সেটা তো কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। কিন্তু শাসকদের ভূমিকা কি ছিল তা তো জলের মতো পরিষ্কার। নমিনেশন জমা দেওয়া থেকে ভোটের দিন, আরও ভয়ংকর নির্বাচিত প্রতিনিধিকে জোর করে হারিয়ে দেওয়ার অভিযোগ। সবাই দেখেছেন কোথাও কোনো গোলমাল হলেই পুলিশ নির্লজ্জভাবে কেমন পক্ষপাত করে গণতন্ত্রকে ধর্ষণ করেছে। যে পশ্চিমবঙ্গ বুদ্ধিচর্চায় সারা দুনিয়ার কাছে শ্রদ্ধা অর্জন করে এসেছে চিরটাকাল, সে ধীরে ধীরে যেভাবে অন্ধকারের দিকে চলেছে তা ভাবলে দুঃখ হয়।
এর আগে বহুবার বলেছি যে, সংখ্যালঘু ভোট নিশ্চিত শিফট হবে। এবারের যাবতীয় অরাজকতার মধ্যেও মুর্শিদাবাদে, কিছু মালদা, দিনাজপুর, দুই চব্বিশ পরগনায় বিরোধী বাম, কংগ্রেস, আইএসএফ বেশ কিছু জায়গায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের গ্রাম ও সমিতি জিতেছে। জেলা পরিষদ পাবে না বলাই বাহুল্য জানতাম। পায়নিও। যেভাবে বামেদের নিশ্চিহ্ন করার কথা বলা হচ্ছে এবং বিজেপিকে প্রধান বিরোধী দল বলে বলা হচ্ছে, ব্যাপারটা সত্যিই তা নয়। বিজেপি এবার কিছু না হোক, ষোলো শতাংশ ভোট হারিয়েছে। বামেদের ভোট শতাংশের হিসেবে বেশ বেড়েছে। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে, বিজেপির ভোট কমে কাদের বাক্সে পড়ল! আমার ধারণা তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে গেছে। বামেদের বাড়তি ভোট এসেছে মূলত তৃণমূল থেকে। তৃণমূল তাত্ত্বিকভাবে অনেক সময় বোঝাতে চেষ্টা করেন যে, তৃণমূল মূলত সাবঅলটার্ন পার্টি। তৃণমূলের এই তাত্ত্বিক ভিত্তি নির্মাণে পুরোপুরি কৃতিত্ব নকশালপন্থিদের বড় অংশের। শত্রুর শত্রু আমার মিত্র এই তত্ত্বজ্ঞানে তাদের জাতশত্রু সিপিআইএমের বিরুদ্ধে, তারা মমতাপন্থি। মুশকিল হচ্ছে জেলাওয়ারি যেটুকু যা ভোট বামেরা জিতেছে তা কোন উচ্চবর্গ থেকে এসেছে এর কোনো ব্যাখ্যা কখনো পাই না। প্রলেতারিয়েতের সঙ্গে লুম্পেন প্রলেতারিয়েতের ফারাক নিয়ে লেনিনীয় ব্যাখ্যায় অধিকাংশ অতি বামেদের অনাস্থা বেশ রহস্যময়। পাশাপাশি গ্রামশি রাষ্ট্রীয় হেজিমনি প্রশ্নে যে নিম্নবর্গীয় দ্রোহের কথা বলেছিলেন তার সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের বাহিনীর সম্পর্ক ঠিক কোথায় আজ অবধি তা মাথায় ঢুকল না।
এত সব লিখছি দুটো কারণে। এক. পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিসরে বিতর্ক পুরোদস্তুর ভ্যানিস হয়ে গেছে। যা গণতন্ত্রের পক্ষে যথেষ্ট উদ্বেগের। দুই. তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক অভিমুখ ঠিক কোনদিকে তা জানতে চাওয়া। জনমুখী কর্মসূচি কিছুদিন নিশ্চিত জনপ্রিয় হতে পারে। কিন্তু কোনো সমস্যার স্থায়ী সমাধান সে করতে পারে না। কৃষি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের নির্দিষ্ট ভাবনা আজও স্পষ্ট নয়। তৃণমূলের আর এক সংকট তার অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠী কোন্দল। স্থিতাবস্থায় যা ওপর ওপর মনে হচ্ছে, আগামী কোনো সময় নিশ্চিত তা বড় জটিলতা ডেকে আনবে।
আর বামেদের যদি ফের ক্ষমতায় ফিরতে হয়, তবে নিশ্চিতভাবেই ঔদ্ধত্য, গোষ্ঠীবাজি, সংকীর্ণ মানসিকতা, ইডি, সিবিআইকে পূজা করা বন্ধ করে, আগে কী কী ভুল ছিল তা অকপটে মেনে নিয়ে নিবিড় জনসংযোগে মন দিতে হবে। গণ-আন্দোলন ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। মনে রাখতে হবে, এবার নিশ্চিত অনেক জায়গায় তৃণমূল সন্ত্রাস করে জিতেছে। সব জায়গায় কিন্তু নয়। সেসব জায়গায় হার নিয়ে বিশ্লেষণটাও কিন্তু জরুরি।
লেখক: প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা ও লেখক
খ্যাতনামা বাঙালি অভিনেত্রী ও কণ্ঠশিল্পী কানন দেবী ১৯৯২ সালের ১৭ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। আনুমানিক ১৯১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সাধারণে ‘কাননবালা’ নামে পরিচিত ছিলেন তিনি। শৈশবে বাবার মৃত্যুর পর তার মা দুই মেয়েকে নিয়ে এক দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে ঝিয়ের কাজ করেন। তার আত্মজীবনী ‘সবারে আমি নমি’ (১৯৭৩) গ্রন্থে তার বেড়ে ওঠার এসব কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। অসাধারণ সুন্দরী কানন দেবী ১৯২৬ সালে মাত্র ১২-১৩ বছর বয়সে কলকাতার ‘ম্যাডান চলচ্চিত্র’ স্টুডিওতে হাজির হন। বয়স কম হলেও সুন্দরী হওয়ায় তিনি অভিনয়ের সুযোগ পান এবং ‘জয়দেব’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে পারিশ্রমিক হিসেবে পাঁচ টাকা উপার্জন করেন। তার পুরোমাত্রার অভিনয়জীবন শুরু হয় ১৯৩০ সালে। তার প্রথম সবাকচিত্র ‘জোর বরাত’ (১৯৩১)। ১৯৩৫ সালে ‘মানময়ী গার্লস স্কুল’-এ নায়িকার অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেন। এ সময় তিনি ‘কাননবালা’ থেকে ‘কানন দেবী’তে পরিণত হন। অপরূপা কানন এতই জনপ্রিয়তা অর্জন করেন, রাস্তার ধারে তার আলোকচিত্র বিক্রি হতে শুরু করে এবং তার পোশাক, অলংকার, চলাফেরা ইত্যাদি নারীদের ফ্যাশনে পরিণত হয়। ১৯৩৭ সালে সেকালের প্রখ্যাত নায়ক প্রমথেশ বড়ুয়ার সঙ্গে ‘মুক্তি’ সিনেমায় নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করে ভূয়সী প্রশংসা পান। তার জনপ্রিয় সিনেমাগুলোর মধ্যে আছে বিদ্যাপতি, সাথী, পরিচয়, শেষ উত্তর এবং মেজদিদি। ১৯৪৮ সালে তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজনা শুরু করেন এবং ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত বিশেষত মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন। অভিনয়ের পাশাপাশি কানন দেবী তিন দশকব্যাপী সবচেয়ে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী হিসেবে বাংলা সংগীতজগতে অসাধারণ অবদান রাখেন। বিশেষ করে রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি এবং আধুনিক বাংলা গানকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল অতুলনীয়। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পরিচয় এবং কাজী নজরুল ইসলামের কাছে গান শেখার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। কানন দেবীর বিয়ে হয় কলকাতার এক অভিজাত ও ধনাঢ্য পরিবারে। অভিনয়জগৎ থেকে বিদায় নেওয়ার পর তিনি সমাজকল্যাণে আত্মনিয়োগ করেন। অভিনয়ের জন্য তিনি ‘শ্রেষ্ঠ নায়িকা’ এবং ‘দাদা সাহেব ফালকে’ পুরস্কারসহ বহু সম্মানে ভূষিত হন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির পাল্টাপাল্টি আলটিমেটামের কারণে চলমান রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে নতুন করে উত্তাপ তৈরি হয়েছে। দুই দলের এ পাল্টাপাল্টি আলটিমেটামের মূল টার্গেট ঢাকা দখলে নেওয়া। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন অসুস্থ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসা নিতে বিদেশ পাঠাতে রবিবার বিএনপি ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে। পাল্টা জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও একই পথে হেঁটেছে। বিএনপিকে ‘আগুন সন্ত্রাস, অপরাজনীতি ও নাশকতার রাজনীতি’ ছাড়ার জন্য সোমবার ৩৬ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এরপর পাল্টা ৩৬ ঘণ্টার হুঁশিয়ারি এসেছে বিএনপির কাছ থেকে।
তার আগে গত শনিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে আবেদন করলে অনুমতির বিষয়টি দেখা যাবে। তবে তার কাছে এরকম কোনো কাগজপত্র আসেনি। ওইদিনই খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার বলেছেন, সরকারের মনোভাব ইতিবাচক হলে তারা আবারও আবেদন করবেন।
পরদিন রবিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আলটিমেটাম দেন। ওইদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত জটিলতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আদালতের অনুমোদন প্রয়োজন। তবে বিএনপি বলছে, সরকার চাইলে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে পারে।
দুই দলের রাজনীতি ও ঘোষিত আলটিমেটাম মাঠের রাজনীতিতে কোনো পরিবর্তন আনবে কি না, সে সম্পর্কে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। বিএনপির আলটিমেটামের ফল কী হবে আর আওয়ামী লীগেরও দীর্ঘ ৩৬ দিনের আলটিমেটাম কেন এ নিয়ে সাধারণ মানুষের ভেতর বেশ কৌতূহল দেখা দিয়েছে।
দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত রাজধানী ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এমন পাল্টাপাল্টি আলটিমেটাম। ঢাকায় বিএনপির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার কৌশলের অংশ হিসেবেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ইস্যুতে দলটি আলটিমেটাম দিয়েছে। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতেই তার পাল্টা জবাব দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
দুই দলের ওই নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির রাজনীতির মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছে ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা। ঢাকার রাজনীতি আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ থেকে বের করে আনতে না পারলে রাজনীতিতে জুতসই অবস্থান সৃষ্টি করতে পারবে না বিএনপি।
সারা দেশের নিয়ন্ত্রণে রাখা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেয়ে ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে রাজনৈতিক জয়-পরাজয় নির্ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিএনপির ওই শীর্ষসারির নেতারা। তাই বিএনপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসাকে ইস্যু করে নেতাকর্মীদের ঢাকায় ডেকে পাঠানোর কৌশল গ্রহণ করেছে। পর্যাপ্ত নেতাকর্মী ঢাকায় ঢুকে গেলে অবস্থা বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তাই ইস্যু খালেদার চিকিৎসা, কিন্তু লক্ষ্য ঢাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ৩৬ দিনের আলটিমেটামের পেছনে রয়েছে নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার আগপর্যন্ত ঢাকায় নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখা। সেই সঙ্গে নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে নির্দেশনা দিয়ে রাখা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে ততই ষড়যন্ত্রের নীল নকশা আঁকছে।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের শান্তি যেন বিঘিœত না হয়, সেজন্যই আমরা বিএনপির কর্মসূচির দিন মাঠে থাকি। বিএনপিকে জনগণ বিশ্বাস করে না। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে সত্যিই নিতে চাইলে আলটিমেটাম কেন দেবে বিএনপি? আইনি জটিলতা নিরসন করে বিদেশ নেওয়ার চেষ্টা করবে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘বিএনপি সন্ত্রাস-সহিংসতানির্ভর রাজনীতি করে, বিশ্বাস করে। তারা পাকিস্তানের প্রেতাত্মা।’ তিনি বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করাতে চাইলে কেন বিএনপি আইনি প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে না? তার কিছু হলে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দায় নিতে হবে।’
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দুই দলের ঘোষিত আলটিমেটামকে কথার বাকযুদ্ধ হিসেবে নিয়েছেন। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এগুলো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের অবস্থান ধরে নেওয়া যায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে তাদের কোনো গা নেই। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিভিন্ন বক্তব্যে সেটাই স্পষ্ট করেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে হলে আইনগতভাবে যেতে হবে। নির্বাহী কোনো সিদ্ধান্তে এ সুযোগ দেওয়া হবে না। ফলে আলটিমেটাম মূলত নিষ্ফল হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দাবি আদায় করার জন্য জনগণ থেকে দাবি উঠতে হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণকে রাস্তায় নামাতে পারবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘এখন যেসব বক্তব্য এগুলো মঞ্চের বাকযুদ্ধ।’
বিএনপির আলটিমেটাম নিয়ে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারব না। আমি (গতকাল মঙ্গলবার) সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা শেষ করে এসেছি।’ আলটিমেটামের পেছনে ঢাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় তো আমরা সভা-সমাবেশ করছিই।’
জানতে চাইলে বিএনপির আরেক নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আলটিমেটাম সম্পর্কে ক্লিয়ার কিছু জানি না।’
বিএনপিকে ‘অপরাজনীতি’ ছাড়তে ৩৬ দিন সময় বেঁধে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ সময়ের মধ্যে ‘সঠিক পথে’ না এলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির ‘অপরাজনীতির কালো হাত’ গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে আলটিমেটাম দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এটি বিএনপির জন্য শেষ বার্তা।’ গত সোমবার রাজধানীর উত্তরায় এবং যাত্রাবাড়ীতে পৃথক সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। উত্তরার সমাবেশে ওবায়দুল কাদের এ আলটিমেটাম দেন।
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপি দুই সপ্তাহের কর্মসূচি নিয়ে এখন রাজপথে আছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগও ২১ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ঢাকায় গত সোমবার দুটি সমাবেশ হয়।
এর আগে থেকেই ঢাকায় বিএনপির কর্মসূচির দিন শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীনরা বিএনপির সভা-সমাবেশের বিষয়ে নমনীয়তা প্রদর্শন করলেও মাঠের নিয়ন্ত্রণ ছাড়েনি।
ভারতের বিপক্ষেই খেলেছিলেন বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। এবার বিশ্বকাপটাই ভারতে, যে ধর্মশালা দিয়ে শুরু হবে বিশ্বকাপ অভিযান, সেখানেই আছে বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির কৃতিত্ব। হিমালয়ের কোলে, ছবির মতো সুন্দর সেই মাঠে আবারও খেলবে বাংলাদেশ, কিন্তু খেলবেন না তামিম ইকবাল।
অনেক নাটকীয়তার পর অবশেষে বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বরাবরের মতো সংবাদ সম্মেলনে নিরাবেগ কণ্ঠে একের পর এক নাম পড়ে শোনাননি প্রধান নির্বাচক, গভীর রাতে কোনো ইমেইলেও আসেনি খেলোয়াড় তালিকা। বিশ্বকাপগামী ১৫ ক্রিকেটারের প্রত্যেকের হাতে হাতে সুন্দর করে বাক্সবন্দি বিশ্বকাপ জার্সি তুলে দেওয়ার ভিডিও নিজেদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে ২০২৩ বিশ্বকাপের জন্য নির্বাচিতদের পরিচিত করেছে বিসিবি। এজন্য বিসিবির সংশ্লিষ্টরা বাহবা পেতেই পারেন, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড যেমনটা হৃদয় জিতে নিয়েছে ক্রিকেটারদের পরিবারের আপনজনদের দিয়ে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করিয়ে।
কারা থাকছেন আর কারা থাকছেন না, তা নিয়ে খুব বড় কোনো চমক ছিল না বিশ্বকাপ দলে। সবাই শুধু একটাই কোটি টাকার প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলেন। তামিম ইকবাল শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ দলে আছেন নাকি নেই। অবসর, প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে প্রত্যাবর্তন, ব্যক্তিগত কাজে দুবাই ভ্রমণ, ইংল্যান্ডে ইনজেকশন, দেশে অনুশীলন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এক ইনিংসে ব্যাট করে ৪৪ রান এবং পরে নিজেকে আবারও পুরোপুরি ফিট নয় বলে পরের ম্যাচে বিশ্রাম। স্বভাবতই এই তামিম ইকবালকে বিশ্বকাপে দেখতে চাইবেন না কোনো কোচ এবং অধিনায়ক। সোমবার গভীর রাতে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বাসায় সাকিবের ছুটে যাওয়া এবং সিডনি থেকে নেমে তড়িঘড়ি করে বোর্ড সভাপতির বাসায় কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের পা রাখাই প্রমাণ করে, বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করতেই তাদের এ তৎপরতা।
তামিমের মতো ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটা সহজ নয়। নিঃসন্দেহে দেশের সফলতম ব্যাটসম্যান, ওয়ানডেতে ১৪টা সেঞ্চুরি। হুট করে অবসর নিলে যাকে ফিরিয়ে আনেন স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রী। সাক্ষাৎকারেও তামিম বলেছেন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগের কথাও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেশাদারির কাছে হার মেনেছে আবেগ, যুক্তির কাছে হেরে গেছে অতীত। তামিম নামটা আছে বিশ্বকাপ দলে, তবে পদবিটা ইকবাল নয়। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তানজিদ হাসান তামিমকে নিয়েই বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন সাকিব আল হাসান, যার বয়স আর তামিম ইকবালের ক্যারিয়ারের বয়স প্রায় কাছাকাছি।
২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিবের পারফরম্যান্স ছিল অতিমানবীয়। ৬০৬ রান আর ১১ উইকেট। তবু দল হলো অষ্টম। গোটা আসর চোটজর্জর অধিনায়ককে বইল দল। প্রতিটি সকাল শুরু হতো এক অনিশ্চয়তা নিয়ে, খেলতে পারবেন তো মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা? শুরুর দিকে নতুন বলে কোনো উইকেট ফেলতে পারেনি বাংলাদেশ, প্রতিপক্ষ গড়েছে রানের পাহাড়। সেই অভিজ্ঞতা কী করে ভুলবেন সাকিব। অস্ট্রেলিয়ান জেমি সিডন্স আর অধিনায়ক সাকিব এজন্যই ২০১১ সালের বিশ্বকাপে দলে রাখেননি চোটগ্রস্ত মাশরাফীকে। হাথুরুসিংহে জাতীয়তায় শ্রীলঙ্কান হলেও অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে থাকতে হয়ে গেছেন তাদের মতোই পেশাদার। তাই তো কঠিন সিদ্ধান্তটা নেওয়ার সাহস দেখিয়েছেন।
কাল বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডের পর সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন জাতীয় নির্বাচকরা। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন এবং দুই নির্বাচক হাবিবুল বাশার ও আবদুর রাজ্জাক। তামিমকে বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে মিনহাজুল শুনিয়েছেন মুখস্থ কথাই, ‘আপনারা তো এবারের বিশ্বকাপের দলটা এরই মধ্যে পেয়ে গেছেন। তামিম ইকবালের তো অনেক দিন ধরেই ইনজুরি নিয়ে চিন্তা আছে। নিউজিল্যান্ড সিরিজের পর... সবকিছু বিবেচনা করেই, সবাই আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া। বিশ্বকাপে অনেক দিনের ব্যাপার। অনেক ম্যাচ আছে।’
তামিমের চোটটা তো নতুন নয়। অনেক দিন ধরেই এ চোট নিয়ে তিনি ভুগছেন, নিজের ইচ্ছামতো ভারতের বিপক্ষে সিরিজ, আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ এসব থেকে নিজেকে সরিয়েও রেখেছিলেন। চিকিৎসাও করিয়ে আনা হয়েছে। সবকিছু জেনেশুনে কেন তাকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে সুযোগ দেওয়া এবং ম্যাচ খেলিয়ে বাদ দেওয়া এ প্রসঙ্গে মিনহাজুলের উত্তর, ‘দেখুন, কিছু কিছু ইনজুরি আছে আপনি ঝুঁকি নিতে পারেন না। টিম ম্যানেজমেন্ট কিন্তু বেকায়দায় পড়বে। আপনি দেখুন, নিউজিল্যান্ড সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলার পর দ্বিতীয় ম্যাচে... প্রথম ম্যাচ খেলেছে, দ্বিতীয় ম্যাচটা খেলেছে... এরপর কিন্তু শেষ ম্যাচে বিশ্রাম দিতে হয়েছে।’
‘তামিম অন্যতম সেরা। কিন্তু চোটের দুশ্চিন্তা থাকলে নিজেকে মেলে ধরা কঠিন। মেডিকেলের সঙ্গে আলোচনা করেছি, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি। এটা আগেই বলেছি, এখন দল ঘোষণা করা হয়েছে’বলছিলেন প্রধান নির্বাচক। বিসিবি সভাপতি বা সাকিব ও কোচের সঙ্গে আলাপ হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কী আলাপ হয়েছে সেটা তো এখানে প্রকাশ করব না।’
১০ দলের বিশ্বকাপে দশম দল হিসেবে বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। কেন এত দেরি, ফ্লাইটে ওঠার ২৪ ঘণ্টারও কম সময় আগে বিশ্বকাপের দল দেওয়া হলো কেন এ নিয়ে হাবিবুল বাশারের ব্যাখ্যা, ‘আমাদের সঙ্গে কী হয়েছে সেটা তো আমাদের সঙ্গের ব্যাপার। দল নির্বাচন করতে যখন বসি... খেলোয়াড় হিসেবে তামিমের... আমরা সুস্থ-সবল তামিমকে পেতে... এটা নিয়ে আমাদের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত ভাবতে হয়েছে। তাই দেরি হয়েছে।’
তামিমের বাদ পড়ার ডামাডোলে হারিয়ে গেছে মাহমুদউল্লাহর ফেরাটাও। সেই ইংল্যান্ড সিরিজের পর বিশ্রামের মোড়কে বাদ পড়েছিলেন। তার বদলে অনেক বিকল্প খুঁজেও শেষ পর্যন্ত ঘুরেফিরে আবার তার কাছেই ফিরলেন নির্বাচকরা। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ৪৯ আর ২১ রানের দুটো ইনিংসেই হয়ে গেছে বিশ্বকাপের টিকিট। প্রধান নির্বাচক বললেন, ‘আগেই বলেছি, বিশ্বকাপের আগে যেকোনো খেলোয়াড়কে যেকোনো সিরিজে দেখব। ও পরিকল্পনাতেই ছিল। নিউজিল্যান্ড সিরিজে দেখেছি।’
২০১৫ সালের বিশ্বকাপের আগে, মাত্র দুই ম্যাচ দেখে সৌম্য সরকারকে দলে নিয়েছিলেন হাথুরুসিংহে। তানজিদ তামিম আর তানজিম সাকিব নিজেদের ভাগ্যবান ভাবতে পারেন। যথাক্রমে মাত্র পাঁচ আর দুই ম্যাচ খেলে তারা বিশ্বকাপ যাত্রার সঙ্গী হয়েছেন। এমন নয় যে, এ স্বল্প সময়ে দারুণ কিছু করে দেখিয়েছেন, প্রধান কারণ বিকল্পের অভাব।
শুধু তামিম ইকবালই নয়, দলের লজিস্টিক ম্যানেজারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তার বড় ভাই ও সাবেক খেলোয়াড় নাফিস ইকবালকেও। তামিমের অবসর-কা-ে তিনি বিসিবি সভাপতির মেসেজের জবাব দেননি, যা পাপন নিজে বলেছেন গণমাধ্যমে। হয়তো তারই প্রতিশোধ, সেই সঙ্গে ড্রেসিংরুমের সঙ্গে তামিমের সব সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া।
অবসর ভেঙে ফিরেছিলেন তামিম, দুটি ম্যাচ খেললেন। কিন্তু যেভাবে বাদ পড়লেন, তাতে মনে হতে পারে অবসরের সিদ্ধান্তটাই ছিল সঠিক। বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগামীতেও তামিমের দলে ফেরাটা বোধহয় অনিশ্চিতই হয়ে গেল।
তামিম প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে দলটা কেমন হয়েছে দেখা যাক। পাঁচ পেসার, দুই অফ স্পিনার, দুই বাঁহাতি স্পিনার মিলিয়ে বোলিং আক্রমণটা নেহায়েত খারাপ নয়। লিটন দাসের সঙ্গে তানজিদ তামিম অথবা মেকশিফট ওপেনার মিরাজ। সহঅধিনায়কের পদ থেকে বাদ পড়েছেন লিটন, সেটা করা হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তকে। সাকিব, মুশফিক, তাওহীদ হৃদয়দের নিয়ে মিডল অর্ডারের পর ফিনিশার রোলে মাহমুদউল্লাহ। এ নিয়েই ধর্মশালায় আফগানদের বিপক্ষে লড়াইয়ের শুরু। প্রত্যাশা অনেক বড়, প্রস্তুতি গোলমেলে। ভরসা একটাই, শুরুর আগে পরিস্থিতি এমন গোলমেলে হলেই কেন যেন ভালো করে বাংলাদেশ!
বিশ্বকাপ দল : সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন (সহঅধিনায়ক), তাওহীদ হৃদয়, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, শরীফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ, মেহেদি হাসান, তানজিদ হাসান, তানজিম হাসান ও মাহমুদউল্লাহ।
তামিম ইকবাল দলে না থাকাতে যেন অনেকেরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে! আবার বিশ্বকাপের দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অন্তর্ভুক্তিতেও অনেকের চোখ কপালে! দল ঘোষণার পর যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকরা এলেন সংবাদ সম্মেলনে, তখন আলোচনায় শুধু ছিলেন এই দুজনেই। তাদের এই বিরহ বেদনায় চাপা পড়ে যায় অনেক প্রশ্ন। লিটন দাসকে বাদ দিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত কেন সহ-অধিনায়ক! বাড়তি কোনো ওপেনার ছাড়া কিংবা পাঁচ পেসারকে নিয়ে কেন দল গড়া?
প্রায় মিনিট পনেরোর সংবাদ সম্মেলনে ঘুরে ফিরে এসেছে একই প্রশ্ন। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও ঘুরেফিরে বন্দী ছিলেন একই কথার বৃত্তে। প্রশ্নোত্তর শেষে বেরিয়ে যান তিন নির্বাচক। যেতে যেতে কথা হয় তাদেরই একজন হাবিবুল বাশারের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল চাপা পড়া সেইসব প্রশ্নের উত্তর।
শুরুতেই জানতে চাওয়া হয় লিটনকে বাদ দিয়ে শান্তকে কেন সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ একটা কারণ। আর লিটনের অনাগ্রহও তাকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর একটি কারণ। লিটন নিজেও চায় না নেতৃত্বের চাপ নিতে। সে একটু ব্যাটিংয়ে বেশি মনোযোগ দিতে চায়।’
বিশ্বকাপ দলে বিকল্প ওপেনার না থাকার কারণও জানা গেল এই নির্বাচকের কথায়। তিনি জানালেন, ‘আমরা ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে মিরাজকে ভাবছি।’
বিকল্প ওপেনার হিসেবে বিশেষজ্ঞ কাউকে না নেওয়ায় একজন বাড়তি বোলার দলে রাখার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে শেখ মেহেদি হাসান সুযোগ পেয়েছেন সে কারণে। পাশাপাশি জায়গা হয়েছে পাঁচ পেসারেরও। এর পেছনে বাশার ভারতের কন্ডিশনের কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভারতে এখন আর্লি সিজন। উইকেট সতেজ থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই পাঁচজন পেসার দরকার হবে।’
যেতে যেতে আরও বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক মুখোমুখি হলেন, এই দলটা বিশ্বকাপে কেমন করবে? এই প্রশ্নটা শুনেই ঘুরে দাঁড়ালেন হাবিবুল। উত্তরে মজা করে বললেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হবে এই দল।’ এরপর একটু গাম্ভীর্য ফিরিয়ে এনে যোগ করলেন, ‘আমি এদের অনেক দিন ধরে দেখছি। ওরা কয়টা ম্যাচ জিতবে জানি না। তবে বিশ্বকাপে প্রতিটি দলকে ভোগাবে, এটা জানি।’
জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগলের ২৫তম জন্মদিন আজ। ১৯৯৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর স্ট্যানফোর্ডের দুই পিএইচডির ছাত্রের হাত ধরে যাত্রা শুরু। ভাড়া করা গ্যারেজে জন্ম নেওয়া সেই গুগল আজ বিশ্বের বৃহত্তম সার্চ ইঞ্জিন; পরিণত হয়েছে ট্রিলিয়ন ডলারের কোম্পানিতে। কীভাবে দরজা আটকাবেন বা কীভাবে কাটবেন আনারস— গুগলে উত্তর পাবেন না এমন প্রশ্ন খুঁজে মেলা ভার। তাইতো মানুষের কাছে এত জনপ্রিয় ও প্রয়োজনীয় একটি হাতিয়ার হয়ে উঠেছে গুগল।
আজ ২৭ সেপ্টেম্বর গুগল ২৫তম জন্মবার্ষিকী পালন করছে। বিশেষ ডুডল তৈরি করে বর্ণাঢ্য আকারে উদ্যাপন করেছে দিবসটি। এবারের ডুডলটি তৈরি করা হয়েছে এর বিবর্তনের থিম ধরে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গুগলের লোগোর পরিবর্তন উঠে এসেছে ডুডলে।
কম্পিউটার বিজ্ঞানের দুই শিক্ষার্থী ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিনের প্রকল্প হিসেবে শুরু করেছিল এ সার্চ ইঞ্জিন। নিজেরদের ছাত্রাবাসে বসেই কাজ শুরু করেন দুজন। বড় আকারের সার্চ ইঞ্জিনের প্রোটোটাইপ তৈরি করার পর একটি ভাড়া করা গ্যারেজে অফিস স্থাপন করেন তারা। এখন সারা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন ও ইন্টারনেটের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে গুগল।
চলুন গুগল নিয়ে একটা মজার তথ্য জানাই আপনাদের। আমাদের সবার পরিচিত নাম গুগল নামটি কিন্তু ইচ্ছা করে দেননি ল্যারি ও ব্রিন। গুগল নামটি আসলে এসেছে গাণিতিক হিসাবের গোগল (googol) ভুল করে লেখার মাধ্যমে, যার মানে হলো ১ এর পর ১০০টি শূন্য। এ নিয়ে এখন গল্প প্রচলিত আছে যে, একজন প্রকৌশলী বা ছাত্র আসল নামের বদলে এই ভুল বানানটি লিখেছিলেন। সেই ভুল নামই পুরো দুনিয়ার সামনে চলে আসে। কেন এই নাম বেছে নিয়েছিলেন ল্যারি আর সের্গেই? তাদের ওয়েবসাইট যে বিপুল পরিমাণ উপাত্ত ঘাঁটাঘাঁটি, অনুসন্ধান করবে, সেটা এই নাম দিয়ে বোঝাতে চেয়েছিলেন তারা। সেই ভুল নামই গুগল!
স্থায়ীভাবে ঢাকা বসবাসের আমার ষাট বছর পূর্ণ হলো। এই ষাট বছরে প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকা, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ঢাকার উত্থান-পতন, বন্যা, দুর্ভিক্ষ, আন্দোলন-অভ্যুত্থানসহ অনেক কিছু দেখার সুযোগ পেয়েছি। যখন ঢাকায় প্রথম এসেছিলাম তখন মনে হতো ঢাকা একটি বড় গ্রাম। এখানে গ্রামের মতোই বৃষ্টি হয়, অমাবস্যা পূর্ণিমা হয়, শীত-গ্রীষ্ম হয়। ভারী থেকে লঘু বর্ষণ হয়। ঢাকার চারদিক বর্ষার পানিতে প্লাবিত হয়। সদরঘাট, চকবাজার, সোয়ারীঘাট, ইসলামপুর এসব ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের এলাকা। গুলিস্তানকে ঘিরে বিপণি কেন্দ্রগুলো বিকশিত হতে শুরু করে। মতিঝিল গড়ে উঠছে। ঢাকার উন্নয়নের জন্য ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট সংক্ষেপে (ডিআইটি)’র কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তখনো ধোলাইখাল অতিক্রম করে কোর্টকাচারি, জগন্নাথ কলেজ, সদরঘাটের দিকে যেতে হতো। ঢাকা শহরের আবর্জনা নিষ্কাশনের জন্য আর্মেনিয়ানদের উদ্যোগে ধোলাইখাল চালু হয়েছিল।
ঢাকা শহরের ১৬১০ সালের আগে ও পরের মানচিত্র দেখলে বোঝা যায় যে শহরটা কী রকম খাল-বিল-নালা দিয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। যে কারণে শহরটি কখনোই ডুবে যাওয়ার কোনো ইতিহাস পাওয়া যায় না। সেই সময়ে একমাত্র যাতায়াতের উপায় ছিল নৌকা। এর মধ্যেই ১৬১০ সালে ইসলাম খাঁ রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তর করেন। বহুকষ্টে ঘোড়া, হাতি এবং পদাতিক বাহিনীকে রাজমহল থেকে বাংলায় আসতে হয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনক পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধীনে ঢাকার পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। স্থানিক বিবেচনাকে অগ্রাহ্য করে যখন বিদেশিরা নানা ধরনের শহর উন্নয়নের উদ্যোগ নেয় তার পরিণতি যে কত ভয়াবহ হয় তার প্রমাণ ঢাকা শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। ধোলাইখাল বন্ধ করে সেখানে মাটির নিচে বড় বড় পাইপ বসিয়ে নারিন্দাতে একটি পাম্প মেশিন বসিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়।
বিদেশিদের পরামর্শে এই ব্যবস্থার ফলে ঢাকায় গুরুতরভাবে পানি নিষ্কাশনের সংকট দেখা দেয়। একই পদ্ধতিতে বিভিন্ন জায়গায় পাইপ বসানো হয় এবং পানি নিষ্কাশনের গুরুতর সংকট দেখা দেয়। এরপর ঢাকা রাজধানী হলো, বিপুল পরিমাণ মানুষের আগমন ঘটল এই শহরে। বিভিন্ন জলাভূমি, ফাঁকা জায়গা যে যেখানে পারে বাড়িঘর তৈরি করতে শুরু করল। সরকারও প্রথমে ডিআইটি এবং পরে রাজউকের মাধ্যমে নানা জায়গায় আবাসনের ব্যবস্থা করতে শুরু করল। সেই ব্যবস্থা শুরু করতে গিয়ে ধানম-ি, গুলশান, বনানী, উত্তরা এসব জায়গায়ও জলাভূমিগুলো ভরাট করে শহরের আবাসিক এলাকা বৃদ্ধির কার্যক্রম শুরু করা হয়। এখন বৃষ্টিপাত মানেই সর্বত্রই জলাবদ্ধতা এবং মানুষের অন্তহীন দুর্ভোগ।
আশির দশকের পর থেকে গত চল্লিশ বছরে শহরটি কংক্রিটের জঞ্জালে পরিণত হয়েছে। সেই ষাটের দশকের গাছপালাগুলো নেই, ফাঁকা জায়গা নেই, বৈচিত্র্যহীন অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে শহরটি কিছু ম্যাচ বাক্সের মতো এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা একটা আবর্জনার স্তূপ মনে হয়। শহরটায় এত পরিমাণ গাড়ি, বিশেষ করে প্রাইভেট গাড়ি একেবারেই পরিকল্পনাহীন নগরীতে চেপে বসেছে। মাত্র গত দশ পনের বছরে কিছু ফ্লাইওভার এবং সম্প্রতি মেট্রোরেলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বটে কিন্তু সেগুলোর অধিকাংশ পরিকল্পনাহীন হওয়ায় যানজট কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এর মধ্যে সেবা সংস্থাসমূহ একজন আরেকজনের প্রতি দোষ চাপিয়ে আপাতত নিজেদের গা বাঁচিয়ে চলছে।
আমার এই ষাট বছরের ঢাকা বসবাসের ইতিহাসে গত তিনদিন আগে যখন আমি মগবাজার থেকে ধানম-ির বাসায় এসেছি তখন সময় লেগেছে চার ঘণ্টা! এই চার ঘণ্টার মধ্যে সাড়ে তিন ঘণ্টাই ছিলাম আমি পানির মধ্যে। কিন্তু চলাচলের কোনো উপায় ছিল না। এক জায়গাতেই এক থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকেছি। সামনে পেছনে গাড়ির চাপ, কোনো কোনো গাড়ি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। তার সামনে বা পেছনে যাওয়ারও কোনো উপায় ছিল না। শহরে কোনো ট্রাফিক পুলিশ দেখা যায়নি। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোনো ধরনের সরকারি উদ্যোগ দেখা যায়নি। খবরে প্রায়ই দেখে থাকি কোনো দেশে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের বাহিনীগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে মানুষের সাহায্যে সরকারের প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসে। যা ভেবেছিলাম তাই, এই দুর্যোগের মধ্যে কিছু প্রাণ যাবে, কিছু লোক আহত হবে এবং সত্যিই দেখলাম যে ওই রাতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের তিনজনসহ চারজন মারা গেছে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত এক শিশুকে নিয়ে উদ্ধারকারীরা বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসার জন্য গিয়েছে কিন্তু চিকিৎসা পায়নি। এটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয় না এই কারণে যে, একবার আমার ছেলে স্কুল থেকে ফেরার সময়ে বেবিট্যাক্সিতে দুর্ঘটনায় পড়ে তার শরীর রক্তাক্ত হয়। সেই সময়ে তার কাছে পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না, চিকিৎসার জন্য কাছের একটি চিকিৎসাকেন্দ্রে গেলে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। রক্তাক্ত অবস্থাতেই সে ঘরে ফিরে আসে।
আমার কাছে প্রশ্নটি অন্য জায়গায়, আমরা নিয়তিতে বিশ্বাস করতে শুরু করেছি। দ্রব্যমূল্য বাড়বে, বেকারত্বের সৃষ্টি হবে, মানুষ চিকিৎসা পাবে না এটাই যেন স্বাভাবিক। আর এর বিনিময়ে কোটি কোটি ডিমের দাম পাঁচ টাকা করে বাড়িয়ে একদিনে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কোটিপতি হয়ে যায়। রাষ্ট্রীয় অমাত্যরা এর সমাধানে বিনিদ্র রজনী পার করবেন না, আমলারা নিজের সন্তানদের পৃথিবীর নিরাপদ কোনো জায়গায় পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত থাকবেন। সাংসদ-ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে ব্যবহার করে আরও কোটি কোটি টাকার মালিক হবে। আমরা কি এমনটি দেখতে পাব কোনোদিন দেশ যারা চালায় তাদের ঘুম নেই, সারা রাত পথে পথে ঘুরছেন কোথায় কী হলো সেসব দেখে পরদিনই মানুষকে জানানো যে এই ব্যবস্থা এইভাবে পরিবর্তন করা সম্ভব। সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ! রাজনীতিবিদরা শুধুই বোঝেন ক্ষমতা। মার্কিন ভিসা নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই, কিন্তু পাঁচজন মানুষ যে অতিবর্ষণের ফলে পানিতে তলিয়ে যাওয়া রাস্তায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে অকালে মারা গেল তাতে তাদের কপালে একটুও ভাঁজ পড়ে না।
ক’দিন পরে পরে রাস্তার পাশে বিরাট বিরাট কংক্রিটের পাইপ দেখা যায়। বহুদিন মানুষকে ভুগিয়ে একদিন সেই পাইপগুলো মাটির নিচে চাপা পড়ে। কিন্তু এই পাইপের কাজগুলো কী? তারা কি পানি নিষ্কাশনের কাজ করে? নাকি মাটির নিচে গিয়ে নানা রকম ময়লা-আবর্জনায় বন্ধ হয়ে নিচের দিকের পানিকে ওপরের দিকে ঠেলে দেয়? আমাদের এক নাট্যকর্মীর বা অভিনেতা বন্ধু উবারে করে তার কল্যাণপুরের বাসায় যাচ্ছিলেন। কল্যাণপুর যাওয়ার পর উবারের ড্রাইভার আর যেতে রাজি হলেন না। বুক সমান পানি ভেঙে সেই বন্ধু বাড়ি যাওয়ার পথে ম্যানহোলের মধ্যে পড়ে যান। তার একটি পা ক্ষতবিক্ষত হয় এবং মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে এখনো ট্রমায় ভুগছেন।
এটা সত্য, বাংলাদেশ বানভাসি ও ঝড়-ঝঞ্ঝার দেশ। মানুষ এসবের বিরুদ্ধে লড়াই করে বহু শতাব্দী ধরে বেঁচে আছেন। মানুষের কোনো অভিজ্ঞতা আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র কিছুতেই নেবে না। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গৃহে কিছু অনভিজ্ঞ লোক নকশাঁ বানাবে এবং বিপুল পরিমাণে অর্থ ব্যয়ে একটি প্রকল্প সাজাবে, তার মধ্য থেকে কোটি কোটি টাকা চলে যাবে ক্ষমতাসীনদের পকেটে। আজই পত্রিকায় দেখলাম প্রমাণসহ একজন লিখেছেন ভাঙ্গা থেকে খুলনার রেললাইন আপাতত এখন প্রয়োজন নেই। এতে বিশাল অর্থের অপচয় হবে। কিন্তু দেখা যাবে প্রকল্পটি হলো ঠিকই, কিন্তু এটা কারও কাজে লাগছে না। এমনি অনেক অকেজো প্রকল্প হরহামেশাই হয়। আমাদের সংস্কৃতিতে ষাটের দশক পর্যন্ত দেশপ্রেমের বিষয়টি বড়ই প্রবল ছিল। হয়তো সেটা পরাধীনতার কারণে। সবাই যার যার মতো দেশের জন্য কাজ করতে ছুটত। সত্তরের দশকের পর যে চায়নি তা নয়। কিন্তু সম্পূর্ণ বিষয়টি চলে গেছে শাসকের হাতে। জনগণের মেধাকে কখনোই গ্রহণ করার চেষ্টা করা হয়নি। গত ষাট বছরে এবং আমার এই বয়সে আমাদের কাজে লাগানোর রাষ্ট্রীয় কোনো ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়নি। সব কিছু সরকারি বেতনভুক্ত লোকদের কাছে এবং রাজনীতিবিদদের হাতে। তারা যাই করবেন তাই হবে। তবে সবচেয়ে বেদনার বিষয় এই পরিস্থিতির কোনো উন্নতিরও আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। একমাত্র গণজাগরণ এবং সাংস্কৃতিক বিপ্লবই সমাজকে আবার কর্মময় করে তুলতে পারে। অন্যথায় খবরের কাগজের প্রথম পৃষ্ঠায় নির্বাচন আর ভিসার খবরই আমরা দেখতে পাব। ওই পাঁচজন হতভাগ্য মানুষ যে রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলার শিকার তার সত্যতা কখনোই ভুলবার নয়। এসব ভেবেই হয়তো আলেকজান্ডার পাঞ্জাব থেকে ফিরে গিয়েছিলেন এবং সেনাপতিকে বলেছিলেন ‘সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ’।
লেখক: অভিনেতা, নাট্যকার ও কলামিস্ট
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।