
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) জানাচ্ছে, বিশ^ব্যাপী ১৫২ মিলিয়ন শিশুশ্রমে যুক্ত। এদের মধ্যে আবার ৭২ মিলিয়ন শিশু যুক্ত রয়েছে বিপজ্জনক কাজে। তবে আশার কথা, ২০০০ সাল থেকে শিশুশ্রম কমতে শুরু করেছে। আইএলওর তথ্য অনুযায়ী , বিশ্বে লাখ লাখ মেয়ে এবং ছেলেশিশু এমন কাজে জড়িত যা তাদের পর্যাপ্ত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবসর এবং মৌলিক স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করছে। এই শিশুদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি শিশুশ্রমের নিকৃষ্ট রূপের মুখোমুখি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিপজ্জনক পরিবেশে কাজ, দাসত্ব বা অন্য ধরনের জোরপূর্বক শ্রম, মাদক পাচার, পতিতাবৃত্তি এবং অপরাধজগতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়াও রয়েছে। শিশুদের সম্পর্কে সচেতনতা ও সক্রিয়তা তৈরিতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ১২ জুনকে শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে বিশ্বদিবস পালন করছে। যাতে বিশ্বব্যাপী এই আন্দোলনকে উৎসাহিত করা যায়। কিন্তু বাস্তবতা বলে উল্টো।
পৃথিবীর শিশুরা যেমন তেমন, বাংলাদেশে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা ১০ বছরে ৮০ হাজার বেড়েছে। প্রকাশিত সংবাদ জানাচ্ছে ২০১৩ সালের তুলনায় ২০২২ সালে শ্রমজীবী শিশু এবং শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিশুদের সংখ্যা বেড়েছে। তবে, এক অদ্ভুত তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেছেন পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক।
ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিশুদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, অন্যদিকে দারিদ্র্য কমছে অথচ শিশুশ্রম বাড়ছে- এটি সাংঘর্ষিক কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক বলেন না, এটি কোনোভাবেই সাংঘর্ষিক নয়। অত ভয় পাওয়ার কিছু নেই। জনসংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় শিশুশ্রম কমেছে। এই কথার তাৎপর্য কী? এর মানে, জনসংখ্যা যে হারে বাড়বে, একই হারে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা বাড়াটাও স্বাভাবিক! কিন্তু এটা হয়নি।
এমন কথা বলে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন, তা বোধগম্য নয়। তাহলে কি হওয়া উচিত ছিল, জনসংখ্যা যে হারে বাড়বে সেই একই হারে শিশুশ্রমিকের সংখ্যাও বাড়বে? যে ১০ বছরে ৮০ হাজার শিশুশ্রমিক বৃদ্ধি পেল, এটা কী? বিশ্বে প্রতি ৪ মিনিটে জন্ম নিচ্ছে হাজার শিশু। আর বাংলাদেশে জন্ম নিচ্ছে ২১ জন।
জন্মহারে বাংলাদেশ রয়েছে বিশে^র দশম স্থানে। বিশ^খ্যাত বিভিন্ন সমাজবিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ একমত হয়েছেন যে নারীশিক্ষা কমে যাওয়ার সঙ্গে উচ্চ জন্মহারের একটি নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে। সমীক্ষা জানাচ্ছে, বাংলাদেশে নারীশিক্ষা বাড়ছে। যদি তাই-ই হয়, তাহলে দেশে ঘণ্টায় ১২৬ শিশু কীভাবে জন্ম নিচ্ছে? ১০ বছর আগে জন্ম নেওয়া শিশু এবং তারও আগে জন্ম নেওয়া শিশুর সমষ্টির কাছে গত ১০ বছরে ৮০ হাজার শিশুশ্রমিকের বৃদ্ধি পাওয়া কোনো বিষয় না!
এইভাবে শিশুশ্রমকে পর্যবেক্ষণ বা বিশ্লেষণ করতে গেলে, সমস্যা হতে পারে। শিশুশ্রম কমাতে সুষ্ঠুভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে বা গবেষণা করতে গেলে এ ক্ষেত্রে সৃষ্টি হতে পারে জটিলতা। স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গির সার্বজনীনতা এবং কল্যাণ চিন্তা না করলে- কোনোভাবেই আমাদের দেশে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা কমবে না। এর ফলে তাদের ভবিষ্যৎ হবে আরও অনিশ্চিত যেভাবেই বিষয়টা দেখা হোক না কেন।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে ‘শিশুশ্রম নিরসন ও পুনর্বাসন’ নামে। সেই প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া সময়ের দাবি। যদি তা না নেওয়া হয়, তাহলে কোনোভাবেই ২০২৫ সালের মধ্যে দেশে শিশুশ্রমকে শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে না। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, একজন শিশু হবে সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের উন্নয়ন শক্তি এবং আগামীর ভবিষ্যৎ।
গফরগাঁওয়ের গনি মিয়া। একসময় ময়মনসিংহ শুধু বড় জেলাই ছিল না ঢাকা, কলকাতা, দিল্লি বা রাওয়ালপিন্ডি থেকে তার দূরত্ব যেমন ছিল বেশি, তেমনি দুর্গমও বটে। এখন টাঙ্গাইল, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ সবই আলোকিত শুধু নয়, বৃহত্তর ময়মনসিংহের সংসারে সাবালক জনপদ। কিন্তু গফরগাঁওয়ের নাবালকত্ব কাটতে সময় লাগছে বৈকি। শোনা যায়, তার দেশ নাকি খুব শিগগিরই মধ্যম আয়ের দেশে প্রমোশন পাবে। তখন গফরগাঁওয়ের গনি মিয়াদের আদব-কায়দা, অভাবের স্বভাব, জ্ঞান কান্ডজ্ঞানে জিপিএ ফাইভ তো দূরের কথা জিপিএ ২ পাওয়ার যোগ্য লেখাপড়া, স্বাস্থ্যসেবা ঘটে জোটেনি। সন্দেহ নেই, সেখানকার বেগুন এখনো বড় সাইজের হয় বটে, কিন্তু চলন্ত ট্রেনে ঢিল ছোড়ার বদভ্যাস, হাটে মাঠে ঘাটে হাত তোলা মানে দুর্নীতি, প্রতারণা, প্রবঞ্চনার লোকালয় হিসেবে জাতে উঠতে এখনো সময় লাগছে। আলোর নিচে যেমন অন্ধকার, বড় বড় লোকালয়ের পশ্চাদভূমি যেমন ঢাকার অদূরে কালীগঞ্জ, খুলনার কাছে ডুমুরিয়া, কলকাতা ও যশোরের কাছে শৈলকুপা ও হরিণাকুন্ডু তেমনি ময়মনসিংহের গফরগাঁও নানান কিসিমের ত্যক্ত, বিরক্ত, পরিত্যক্ত এমনকি বামপন্থি মানুষের অভয়ারণ্য ছিল একসময়। এমনটি এক দিনে হয়নি।
সেই গফরগাঁওয়ের গনি মিয়া। এমডিজি, এসডিজির অনেক গোলের সাফল্যের দাবিদার দেশ ও সমাজে এখনো গনি মিয়ারা গোলশূন্য। আর্জেন্টিনার বড় গোলকিপার সেদিন ঢাকায় এসে তাদের জার্সি যে দিয়ে গেল, এটা দিয়ে কী বোঝাতে চাইল গনি মিয়ার মাথায় এখনো ঢোকেনি। এখনো লোকে বলাবলি করে, গনি মিয়া একজন কৃষক। তার নিজের জমি নেই, সে অন্যের জমি চাষ করে খায়। হ্যাঁ, একসময় এমনতর পরিচয় তার ছিল। কিন্তু এখন গনি মিয়াদের সামান্য ক্ষতির বদৌলতে কারও কারও আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। এখন বিনামূল্যে বিতরণকৃত পাঠ্যবইয়ে তার কথা নেই। থাকবেই বা কেন। দেশের সব মানুষের মাথাপিছু আয় যখন হাজার হাজার টাকা তখন গনি মিয়াদের মাথাপিছু আয়ের হিসাব মেলে না, তাই তাদের নাম পরিচয় সেখানে অপাঙ্্ক্তেয় তো বটেই। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়েছে ধনী-গরিব সবাইকে ৮০০/৯০০ টাকার পাঠ্যবই বিনামূল্যে দিয়ে তাদের হাজার হাজার টাকার গাইড বই কেনাতে হচ্ছে। গনি মিয়াদের ট্যাক্সের টাকায় পুরো বেতন দিয়ে রাখা শিক্ষকদের ক্লাসে না পড়িয়ে কোচিং ক্লাসে পড়ানোর নামে ন্যায়নীতি নির্ভরতার জ্ঞানার্জনের পরিবর্তে গনি মিয়াদেরই পকেট মারা হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবায় এখন সেবার নাম-গন্ধ নেই, ক্লিনিকের কসাইখানায় গনি মিয়ারা।
গনি মিয়াদের কেউ কেউ এখন সামাজিক নিরাপত্তা জালে আটকা। তাকে খাওয়ানো-পরানো এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার দায়িত্ব পয়সা বানানোওয়ালাদের হাতে চলে গিয়েছে। যাদের হাত ঘুরে সামাজিক নিরাপত্তার টাকা আসে তা দিয়ে দরিদ্রতার অসহায়ত্বেও গ্লানি ঘোচে না, বরং বাড়ে। অথচ তাদের ঘরের বেকার ও বখে যাওয়া সন্তানদের সদগতির লক্ষ্যে তাদের দক্ষ করে বিদেশে পাঠানো যেত, তাহলে তো সেটাই হতো সামাজিক নিরাপত্তা বোধের বাস্তব বিধান।
গনি মিয়ারা বড্ড হতাশ হয় যখন দেখে কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, ডিমের সিন্ডিকেটকারীরা এমন কি কালোটাকা, সোনাদানা পাচারকারীরাই বলে এমন ব্যবস্থাপনা বারবার দরকার। এরাই বলে গনি মিয়ারা সবাই ভালো আছে। এ কথা সে কথা বলে তারা নিজেদের আখের গোছায়। গনি মিয়াদের গরিব রেখে, গরিব দেখিয়ে ধনীরা আরও ধনী হয়। সোনার বাংলা শশ্মান কেন, এই প্রশ্ন তুলে সোনার বাংলাকে সোনা দিয়ে মোড়ানোর স্বপ্ন দেখিয়ে সবাইকে মরণযুদ্ধে নামিয়ে, বিজয় উৎসব করে অন্যরা। বাইরে গনি মিয়াদের সাফল্যের বড় বড় কথা বলে গনি মিয়াদের না জানিয়ে কঠিন শর্তেও ধার-কর্য করে চোখ ধাঁধানো উন্নয়নের ফন্দি আঁটে, আখেরে সব গনি মিয়াকে ঋণগ্রস্ত করে তোলে। সেই ঋণের টাকা লুটপাটে গনি মিয়াদের অন্ধকারে রেখে নিজেদের উড়াল দেওয়ার পাখনা গজায় তাদের। সেখানে না হোক, যেখানে পারে তারা উড়াল দিয়ে পার পাবে, কিন্তু গনি মিয়ারা থেকে যাবে দুর্দশার সাগরে। গনি মিয়ার দুই ছেলে, এক মেয়ের লেখাপড়ার খবর নেই, তারা নিজেরা কাজ করে খেতে পারবে কিনা এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই, তাদের চিকিৎসা হবে কিনা পথঘাট ধোঁয়াশে বিড়ম্বনাদায়ক। সুন্দর সুন্দর রাস্তাঘাটে অনেকে যখন মোটর যান হাঁকিয়ে যাতায়াত করে কখন সেই যানের তলায় পড়ে গনি মিয়াদের দুর্ঘটনার দুর্ভাবনা শেষ হয় না। বড় বড় ডাকাতের বিচার বিলম্বের নামে সবাই ভুলে যায়, কিন্তু গনি মিয়াদের সামান্য ক্ষতির ফয়সালা কে করবে?
যারা প্রকৃত ভূমিহীন তাকে জমি ও ঘর দেওয়ার কথা শোনা যায় বটে, কিন্তু কারও তদবিরে ও চালাকি ছাড়া সে ঘর ও জমি কী তারা পেয়েছে সে খবর কার কাছ থেকে কবে নেওয়া হবে? আগে গাঁয়ের মোড়ল-মাতব্বরা পর্যন্ত অন্তত ভোটের সময় সমাজসেবার সুযোগ চাইতে আসত গনি মিয়াদের কাছে, এখন তার আর নাকি দরকার নেই। বড় বড় শহরের বড় বড় লোকেরা বাইরের লোকের কাছে নালিশ দিয়ে সেই নালিশের বিচার পেতে গিয়ে ভোট চাওয়ার সময় পার হয়ে যায়, ভাবখানা এখন এমন গনি মিয়াদের ভোট তাদের কাছে থাক, আমরা আমাদেরটা ম্যানেজ করতে পারব। দেশে এমন সুবিধাভোগীদের তৈরি করা হয়েছে, সিন্ডিকেট পোষা হয়েছে, গনি মিয়াদের বদলে ভোটের আগে তারা তারস্বরে সমর্থন জানাবে। গনি মিয়ারা আর কত প্রকার উপায়ে উপেক্ষিত হবে? গাঁয়ে মানে না নিজে মোড়ল সেজে গাঁয়ের বারোটা বাজানোর শক্তি ও সাহস পাওয়া যাচ্ছে অনায়াসে, অবলীলাক্রমে। ভূরাজনীতির ভায়রা ভাইরা গনি মিয়াদের ভালো করার কথা বলে নিজেদের দরদাম বাড়ায়। ক্ষমতা দস্যুদের কাছ থেকে বাইরের বড় ডাকাতরা পত্তনি ছাড়া জমিজমা ঘরদোর মনমানসিকতা মূল্যবোধ লিখে নেওয়ার পাঁয়তারা যে করছে তা দেখার বা ধরিয়ে দেওয়ার কেউ নেই।
গনি মিয়াদের কথা আগে যারা ভাবত তাদের আমলে নেওয়ার তাগিদ অনুভব করত তাদের এখন গনি মিয়াদের ব্যাপারে বেশ নির্ভার- নির্লিপ্ত মনে হয়। গনি মিয়ারা কেন সেটা ভেবে পায় না। গনি মিয়াদের সামান্য ক্ষতির বিনিময়ে দেশ ও অর্থনীতির ভবিষ্যৎ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা এটা বলার বা বোঝাবার বা শোনার যেন কেউ নেই। হালে পানি পাওয়ারও জো নেই। নতুন আয়কর আইন চাপিয়ে দেওয়ার সময় সেটা আরও বোঝা গেল। হাড়ে হাড়ে টের পাওয়ার সময় তো সামনে।
গনি মিয়াদের গ্রামে মৃধা ও চৌধুরী পরিবারের কাছ থেকে একসময় সবাই সমীহ সাহায্য-সহযোগিতা সবই পেত। দুই পরিবারই গ্রামবাসীকে হাতে রাখতে চেষ্টা করত। এখন চৌধুরী পরিবার মৃধা পরিবারকে গ্রামে টিকতেই দিচ্ছে না। চৌধুরী ও মৃধা পরিবার যে যখন পারত গ্রামে হুকুমদারি ও জোরজবরদস্তির পরিবেশ সৃষ্টি করে সবাইকে বশে রাখত। এখন চৌধুরী পরিবার তাদের প্রতিপত্তিকে স্থায়ী করার ইচ্ছায় একা সর্বেসর্বা হয়ে উঠতে চায়। অন্যদিকে মৃধা পরিবার তাদের অতীতের বাড়াবাড়ির কথা ভুলে গিয়ে শুধু পাওয়ার পাবার জন্য চৌধুরী পরিবারকে উৎখাত করতে চাচ্ছে। চৌধুরী পরিবার বিদ্যমান চলমান অন্যায়-অনিয়ম, জুলুম, বাড়াবাড়ি সম্পর্কে সতর্ক হয়ে ভুল স্বীকার করে আসল পথে আসার চেষ্টা না করে তারা যদি মৃধা পরিবারকে নির্মূল করার কাজে লেগে যায় এবং সেভাবে নিজেদের নিরঙ্কুশ আধিপত্য পেতে চায় তাহলে হতভাগ্য গনি মিয়াদের গাঁয়ের উন্নয়নের পরিবেশ কী অবস্থায় দাঁড়াবে? আবার মৃধা পরিবার যদি নিজেদের অতীতের ভুল বা বাড়াবাড়ির পুনরাবৃত্তির পথ থেকে ফিরে আসবে, জিঘাংসায় মেতে উঠবে না এ ধরনের প্রতিজ্ঞা সবার কাছে করতে না পারে, তারা যদি শুধু চৌধুরী পরিবারের ওপর প্রতিশোধের পথ পেতে প্রতিপত্তি ফিরে পেতে চায়, তাহলে গনি মিয়াদের সামনে অন্ধকার ছাড়া কিছু থাকবে না। মৃধা ও চৌধুরী পরিবার ভোল পাল্টিয়ে গ্রামের সবার কল্যাণের কথা মুখে বলে পার পাবে না।
গ্রামের মানুষকে বোকা বানিয়ে তাদের উপেক্ষা করার ফল ভালো হয় না, হয়নি কখনো। গনি মিয়াদের নানাভাবে উপেক্ষা করে, অবজ্ঞা, হেনস্তা করা অব্যাহত রেখে ‘কাউকে পিছে ফেলে নয়’ এ ধরনের বড় বড় কথা বললেই পেছনের লোক সামনে উঠে আসবে না। কথায় ও কাজে নিজেদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার হওয়া দরকার। গ্রামের অনেকে আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে, উন্নয়নের কথা বলে টাকা-পয়সা সরিয়ে সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি করছে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ব্যবসায়, ব্যাংকের টাকা নয়ছয় করে হাতিয়ে নিয়ে সেই শক্তিশালী সিন্ডিকেটরা যদি চৌধুরী পরিবারের পক্ষ নেয়, তখন গনি মিয়াদের পাত্তা না দিয়ে চৌধুরী পরিবার যে উন্নত গ্রাম গড়ার স্বপ্ন দেখাবে তা কি আদৌ টেকসই হবে। গনি মিয়াদের সামান্য ক্ষতির বিনিময়ে তারা বড় ক্ষতিতে নিজেরা তো পড়বেই, পুরো গ্রামবাসীকে সর্বনাশের সামনে ছুড়ে দেবে। এ কথা মৃধা বা চৌধুরী পরিবারের সবাই যত তাড়াতাড়ি বুঝবেন, দেশটা একলা তাদের নয়; এটি সবার সবার ভালোমন্দ নিশ্চিত করতে সবাইকে সঙ্গে নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। লেখক: উন্নয়ন অর্থনীতির বিশ্লেষক
নতুন হিজরি বছর শুরু হয়েছে। দুনিয়ার সাধারণ নিয়মেই নতুন একটি বছর এসেছে পরিসমাপ্তির পথ বেয়ে। তাই এটি বিগত সময়ের মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা করা এবং ভবিষ্যতের জন্য নতুন সংকল্পে উজ্জীবিত হওয়ার সময়। অতীতের যে সময়টুকু আল্লাহতায়ালার মর্জি মোতাবেক অতিবাহিত করার সুযোগ হয়েছে, তার জন্য বিনম্রচিত্তে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, আর যা উদাসীনতা, অলসতা ও আল্লাহর অবাধ্যতায় বরবাদ হয়েছে; সেজন্য আন্তরিকভাবে অনুশোচনা করা। এটাই হলো একজন প্রকৃত মুমিনের করণীয়।
ইসলামের শিক্ষা হলো মুমিনের আত্মপর্যালোচনা বর্ষকেন্দ্রিক নয়। মাস কিংবা সপ্তাহকেন্দ্রিকও নয়। মুমিন প্রতিদিন তার যাবতীয় কাজকর্মের হিসাব গ্রহণ করে এবং গতকালের চেয়ে আগামীকালকে অধিক ফলপ্রসূ করার চেষ্টা করে। কারণ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘সকল মানুষ প্রত্যুষে উপনীত হয় এবং নিজের সত্তাকে বিক্রি করে। হয় আল্লাহর কাছে বিক্রীত হয়ে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করে, নতুবা শয়তানের কাছে বিক্রীত হয়ে নিজেকে ধ্বংস করে।’ সহিহ মুসলিম : ১০০
সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেছেন, ‘যখন তুমি সন্ধ্যায় উপনীত তখন প্রত্যুষের অপেক্ষা করো না। আর প্রত্যুষে করো না সন্ধ্যার অপেক্ষা। সুস্থতার সময়ই অসুস্থতার কথা মনে রেখে কাজ করো। আর জীবন থেকেই সংগ্রহ করো মৃত্যুর পাথেয়। হে আল্লাহর বান্দা! তুমি জানো না, আগামীকাল তোমার উপাধি কী হবে? (জীবিত না মৃত)।’ জামে তিরমিজি : ৪৬৮
হিজরি বর্ষের প্রথম মাস মহররম। পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোকে এ মাস অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ও সম্মানিত। কোরআনে কারিমের ভাষায় ‘আরবাআতুন হুরুম’ অর্থাৎ চার সম্মানিত মাসের অন্যতম এই মাস। আর এ মাসের সবচেয়ে মহিমান্বিত দিন হচ্ছে ‘ইয়াওমে আশুরা’ তথা মহররমের দশ তারিখ। হাদিসে আশুরার দিনের অনেক ফজিলত বিবৃত হয়েছে। এমনকি ইসলামপূর্ব জাহেলি সমাজে এবং আহলে কিতাব ইহুদি-নাসারাদের মাঝেও ছিল এ দিনের বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদা।
উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, (জাহেলি যুগে) লোকরা রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার দিন রোজা রাখত। এ দিন কাবায় গেলাফ জড়ানো হতো। এরপর যখন রমজানের রোজা ফরজ হলো, তখন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, যে এ দিন রোজা রাখতে চায় সে রাখুক। যে না চায় না রাখুক। সহিহ বোখারি : ১৫৯২
বর্ণিত হাদিস থেকে স্পষ্ট বুঝে আসে, জাহেলি সমাজে এ দিনের বিশেষ গুরুত্ব ছিল, আলাদা মর্যাদা ছিল। যখন রাসুলে করিম (সা.) হিজরত করে মদিনা মোনাওয়ারা চলে আসেন দেখেন, মদিনার আহলে কিতাব ইহুদিরা এ দিনে রোজা রাখছে। এ দিনকে তারা বিশেষভাবে উদযাপন করছে। নবীজি (সা.) তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, এ দিনে তোমরা কী জন্য রোজা রাখছ? তারা বলল, এটি একটি মর্যাদাপূর্ণ দিবস। আল্লাহতায়ালা এ দিনে হজরত মুসা (আ.) ও তার সম্প্রদায়কে (ফেরাউনের কবল থেকে) মুক্তি দিয়েছেন এবং ফেরাউনকে তার দলবলসহ (সমুদ্রে) নিমজ্জিত করেছেন। এরপর হজরত মুসা (আ.) এ দিনে কৃতজ্ঞতা আদায়স্বরূপ রোজা রাখতেন। তাই আমরাও রোজা রাখি।
নবীজি (সা.) এ কথা শুনে বললেন, হজরত মুসা (আ.)-এর অনুসরণের ক্ষেত্রে তো আমরা তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার। এরপর নবীজি (সা.) নিজেও রোজা রাখলেন এবং অন্যদের রোজা রাখতে বললেন। সহিহ মুসলিম : ১১৩০
মহররম মাসে রোজা রাখার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘রমজানের পর আল্লাহর মাস মহররমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ।’ সহিহ মুসলিম : ৩৬৮
মহররম মাসের রোজার মধ্যে আশুরার রোজার ফজিলত আরও বেশি। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আমি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে রমজান ও আশুরায় যেরূপ গুরুত্বের সঙ্গে রোজা রাখতে দেখেছি, অন্য সময় তা দেখিনি।’ সহিহ বোখারি : ২১৮
অন্য হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘আমি আশাবাদী যে, আশুরার রোজার কারণে আল্লাহতায়ালা অতীতের এক বছরের (সগিরা) গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ সহিহ মুসলিম : ৩৬৭
আশুরার রোজা সম্পর্কে অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আশুরার রোজা রাখো এবং ইহুদিদের সাদৃশ্য পরিত্যাগ করে আশুরার আগে বা পরে আরও এক দিন রোজা রাখো।’ মুসনাদে আহমদ : ২৪১
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যদি আমি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে ৯ তারিখেও অবশ্যই রোজা রাখব।’ সহিহ মুসলিম : ৩৫৯
ইসলাম মতে, আশুরার দিনের মূল ইবাদত হচ্ছে এ দিনের রোজা রাখা। সাহাবায়ে কেরাম এ দিনে বাচ্চাদের রোজা রাখতে অভ্যস্ত করতেন। বিখ্যাত নারী সাহাবি হজরত রুবায়্যি বিনতে মুআববিজ (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আশুরার দিন সকালে আনসারদের এলাকায় লোক মারফত খবর পাঠালেন, যে আজ সকালে খেয়েছে সে যেন সারা দিন আর না খায়। আর যে সকালে খায়নি সে যেন রোজা পূর্ণ করে। ওই নারী সাহাবি বলেন, এরপর থেকে আমরা নিজেরাও এ দিনে রোজা রাখতাম এবং বাচ্চাদেরও রোজা রাখাতাম। তাদের জন্য আমরা খেলনা বানিয়ে রাখতাম। তারা খাবারের জন্য কান্নাকাটি করলে তাদের খেলনা দিয়ে শান্ত করতাম। ইফতার পর্যন্ত এ নিয়ে তার সময় কেটে যেত। সহিহ বোখারি : ১৯৬০
উল্লিখিত হাদিসগুলোর আলোকে ইসলামি স্কলাররা বলেন, মুমিন-মুসলমানদের উচিত মহররম মাসে রোজা রাখার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া। সেই সঙ্গে মহররম মাসে তওবা-ইস্তেগফারের প্রতি গুরুত্ব দেওয়াও আমাদের কর্তব্য।
ইসলামের বিধানে তওবা-ইস্তেগফার যেকোনো সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। কোনো পাপের কাজে নিজেকে জড়িয়ে ফেলা অথবা ভুলত্রুটি করলেই শুধু তওবা-ইস্তেগফার করবে এমন নয়। বান্দা সর্বদা আল্লাহর দরবারে ধরনা দেবে এবং নিজের অতীতের জন্য ক্ষমা চাইবে। তবে কিছু কিছু মুহূর্ত এমন রয়েছে, যখন তওবার পরিবেশ আরও অনুকূল হয়। বান্দার উচিত আল্লাহর দেওয়া সেই প্রত্যাশিত মুহূর্তগুলো লুফে নেওয়া এবং আল্লাহমুখী হয়ে জীবনকে আরও সুন্দর করা। মহররম মাস, বিশেষ করে এর ১০ তারিখ ‘ইয়াওমে আশুরা’ এমনই একটি উপযুক্ত সময়।
মহররম মাসের ফজিলতের একটি দিক হচ্ছে, এর সঙ্গে তওবা কবুল হওয়া এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে মুক্তি, নিরাপত্তা এবং গায়েবি সাহায্য লাভ করার ইতিহাস জুড়ে আছে। এজন্য এ সময় এমনসব আমলের প্রতি মনোনিবেশ করা উচিত, যাতে আল্লাহর রহমত বান্দার প্রতি আরও বেশি ধাবিত হয়।
এক সাহাবি নবী করিম (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! রমজানের পর আপনি কোন মাসে রোজা রাখতে বলেন? নবীজি (সা.) বললেন, তুমি যদি রমজানের পর রোজা রাখতে চাও তাহলে মহররমে রোজা রেখো। কেননা মহররম হচ্ছে আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন এক দিন আছে, যেদিন আল্লাহতায়ালা (অতীতে) অনেকের তওবা কবুল করেছেন। ভবিষ্যতেও অনেকের তওবা কবুল করবেন। জামে তিরমিজি : ৭৪১
হাদিসের ব্যাখ্যাকারকরা এ দিনটি আশুরার দিন হওয়ার সম্ভাবনা উল্লেখ করেছেন। ইসলামি স্কলারদের মতে, আশুরার ইতিহাসের সঙ্গে মিশে আছে আল্লাহর রহমত ও নাজাত লাভের ইতিহাস, রয়েছে গোনাহ মাফের ঘোষণা তাই এ দিনে আল্লাহর রহমত লাভে তওবা-ইস্তেগফারের প্রতি খুব মনোযোগ দেওয়া। আর মুমিন তো রোজা অবস্থায় আল্লাহর রহমত লাভের অধিক প্রত্যাশী হয়।
লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক
বাঙালির রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন বারবারই হোঁচট খেয়েছে। এই জনগোষ্ঠীর জীবনে নিকট অতীতে যত রাজনৈতিক পরিবর্তন এসেছে তার প্রায় সবই পরিপূর্ণ সুফল আদায় করা যায়নি। বলা যায়, এর কোনো কোনোটা বেহাত হয়েছে আবার কোনো কোনোটা হেলায় হারিয়েছে। এটাই যেন আমাদের রাজনৈতিক পরিবর্তনের ইতিহাস এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিয়তি। আর বাঙালির এই রাজনৈতিক ইতিহাসের ভুক্তভোগী এ দেশের সাধারণ ও প্রান্তিক মানুষ যাদের কাছে রাজনীতি মানে হচ্ছে, খেয়ে পরে কিছুটা ভালো থাকার নিশ্চয়তা। দীর্ঘদিন এ দেশের মানুষ রাজনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে চেয়েছে, অর্থনৈতিক নিষ্পেষণ আর পরাধীনতার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। আর এ ক্ষেত্রে অপ্রাপ্তির ঝুলি প্রাপ্তির তুলনায় অনেক ভারী, যেন পাথুরে অস্তিত্ব কোনোভাবেই নড়ানো যায় না।
পূর্ববঙ্গের রাজনৈতিক ইতিহাসে বঙ্গভঙ্গকে অস্বীকার করার জো নেই। বঙ্গভঙ্গের মধ্য দিয়ে পূর্ববঙ্গের মানুষের যখন রাজনৈতিক ক্ষমতা পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলো, তার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হলো। বলা বাহুল্য, এদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিল কলকাতাকেন্দ্রিক অভিজাত বুদ্ধিজীবী সমাজ। নিঃসন্দেহে বঙ্গভঙ্গের ফলে বাংলার শক্তি ও পরিচয় খণ্ডিত হয়েছে কিন্তু সেই পরিচয় দিয়ে কী হবে, যে পরিচয় সক্ষমতা ও মর্যাদার নিশ্চয়তা দেয় না? অন্যদিকে পরিচয়ের দোহাই দিয়ে শোষণ ও বঞ্চনার ইতিহাস নতুন কোনো বিষয় নয়। বঙ্গভঙ্গ যে দুরভিসন্ধি থেকেই করা হোক না কেন, এটা পূর্ব বাংলার সাধারণ মানুষের মনে এক মুহূর্তের জন্য হলেও আশা ও প্রাণের সঞ্চার করেছিল যদিও তা উবে যেতে সময় নেয়নি। যেমনটা ঘটেছে ব্রিটিশ বাংলায় একের পর আরেক প্রগতিশীল আন্দোলনের ক্ষেত্রে। এসব আন্দোলনের ফলাফল না উঠেছে সাধারণ মানুষের ঘরে, না পড়েছে তার পাতে। পরিবর্তন হলেও তার সুফল পেয়েছে অল্প কিছু মানুষ।
আমাদের রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় ঘটনা হচ্ছে স্বাধীনতা আন্দোলন। আমরা যে স্বাধীন হয়েছি তাও একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। কিন্তু স্বাধীনতার সুফল পেতে না পেতেই রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। ফলে স্বাধীনতার সেই কাক্সিক্ষত স্বপ্ন ধূসর হয়ে যায় অকালেই। একই সঙ্গে ভেঙে পড়ে রাজনৈতিক ব্যবস্থাও। রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ চলে যায়, সেই প্রচলিত শ্রেণির কাছে যাদের কেউ কেউ উর্দিওয়ালা, উচ্চপদস্থ আমলা, শীর্ষ পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, ভূস্বামী। আর উল্টো দিকে পিছিয়ে পড়তে থাকে বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী কৃষক, মুটেমজুর, শ্রমিক ও খেটে খাওয়া মানুষ। এটি যেন দেশের মানুষের ঐতিহাসিক পরাজয়েরই একটি উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। স্বাধীনতার পূর্ববর্তীকালে যে প্রগতিশীল ধারণা ও চিন্তাচেতনার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল অল্প সময়ের মধ্যেই, তারা আর ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারল না, নানা ধরনের প্ররোচনা ও স্বার্থের সংঘাতে জড়িয়ে। আহমদ ছফা একপর্যায়ে একে ‘বেহাত বিপ্লব’ বলেছিলেন। একই কথা হয়তো প্রযোজ্য নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনের ক্ষেত্রে। আন্দোলনের ফলাফল বেহাত তো হয়েছেই, অধিকন্তু ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে এতটুকু সময় লাগেনি।
ঔপনিবেশিক ও সামরিক আইন এ দেশের মানুষকে শুধু হাততালি দিতে শিখিয়েছে, কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে শেখায়নি। একইভাবে আমাদের অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আকাক্সক্ষা জনগণ তাদের অনুসরণ করবে, তাদের কথা শুনবে কিন্তু নিজেরা নেতৃত্ব দিতে আসবে না। যে কারণে স্বাধীনতার দীর্ঘদিনেও আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও সংস্কৃতিতে যেমন সংস্কার আসেনি একইভাবে রাষ্ট্রকাঠামোতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকতাও নজরে পড়ে না।
অধিকন্তু এখানে সুস্থ রাজনৈতিক চর্চাকে বলা হয় ‘ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো’। আবার রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের খেলায় ‘নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ’র মতো প্রবাদগুলো যথাযথ প্রয়োগের কোনো ঘাটতি নেই। এ ধরনের বিষয়গুলোই সমাজে যেমন ‘পরশ্রীকাতরতা’কে বৈধতা দেয় একই সঙ্গে নিজের সক্ষমতা বা ‘শ্রী’কেই বুঝতে না পারার পরিবেশ তৈরি করে। আর এসবের ফলাফলই নিজেদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিজেরা নিতে না পারা, অন্যের মুখাপেক্ষী থাকা। যেটা স্থানীয় পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত। প্রচলিত নেতৃত্ব তাদের যেভাবেই পরিচালনা করুক না কেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অন্ধভাবে মেনে নিতে হয়, সেখানে প্রশ্ন করার যেমন কোনো সুযোগ নেই, ভিন্ন চর্চার প্রশ্ন তো অবান্তর।
এসব চর্চার জের ধরেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক গতিধারায় বিদেশিদের অংশগ্রহণ এক প্রকার স্বীকৃতি নিয়েই আছে। আমরা স্বীকার করি বা না করি এটাই বাস্তবতা। আর সেটাই বাংলাদেশের রাজনীতির সবচেয়ে বড় পরিহাস। প্রতিবার নির্বাচন এলেই বিদেশিদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়, রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি নির্বাচনে বিদেশি দূতাবাসগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। আর এটাই স্বীকৃত রাজনৈতিক ব্যবস্থা! এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। এর আগে ২০১৩ সালে জাতিসংঘের দূত অস্কার ফার্নান্দেস তারানকো এবং ২০১৮ সালে কমনওয়েলথ মহাসচিবের বিশেষ দূত স্যার নিনিয়ান স্টেফানকে মধ্যস্থতার ভূমিকায় দেখা গেছে। আমাদের দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা এবং বিদেশি প্রতিনিধিরা খোলামেলা পরামর্শ ও নানা ধরনের মন্তব্য করে থাকেন। অন্যদিকে আমাদেরও আগ্রহ আছে বিদেশিরা রাজনৈতিক পরিস্থিতি কীভাবে বিশ্লেষণ করছেন, তাদের সমর্থনের হাওয়া কোন দিকে যাচ্ছে, তার পর্যালোচনায় ব্যস্ত থাকা। এই যখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি সেখানে রাজনৈতিক দল, সাধারণ মানুষের ক্ষমতায়ন যে প্রশ্নবিদ্ধ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিদেশিদের কথা শোনা যাবে না, এমন কোনো কথা নেই। আবার বিদেশিদের গঠনমূলক উপদেশ গ্রহণ করতেও বাধা নেই, কিন্তু উপদেশ তো এভাবে বাস্তবায়ন হয় না। উপদেশ বাস্তবায়নের জন্যও সহায়ক রাজনৈতিক পরিবেশের দরকার। আর সেই রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি হতে পারে সাধারণ জনগণের ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। আবার বিদেশিদের সব কথা শুনতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। বিদেশিদের সব কথা শুনলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না । ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ শুনেছে সাধারণ মানুষের মনের কথা এবং এই মনের কথাকেই সমর্থন জুগিয়েছে বেশ কিছু দেশ। তার ফলেই বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। তবে আজ সেখানটাতেই যেন বড় ঘাটতি, সাধারণ মানুষের মনের কথা, তার অনুভূতি, চাওয়া ও পাওয়া এখন গৌণ।
আমাদের রাজনৈতিক সংকটের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, আমরা আসল সমস্যা চিহ্নিত করতে চাই না। মূল সমস্যা চিহ্নিত না করে এর ডালপালা নিয়ে কাজ করা এবং আখেরে ‘তালগাছটা আমার’ সেই গল্পের ধারাবাহিকতা রক্ষা করাই স্বাভাবিক রীতি। এই মূল সমস্যা চিহ্নিত না করতে পারার পেছনের কারণ আমাদের অনেকেই সেই কারণেরই অংশ। সেই কারণ চ্যালেঞ্জ করা মানে নিজেদের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ করা।
বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ আছে, কিন্তু তারা কতটুকু রাজনৈতিক সচেতন তা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ আছে। প্রশ্ন হচ্ছে, সচেতনতা ও ক্ষমতায়ন তৈরিতে রাজনৈতিক দলগুলো কতটা ভূমিকা পালন করেছে, কতটুকু বা তারা করতে চায়। জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টি হয় যদি রাজনৈতিক দলগুলোর মহান দায়িত্ব তাহলে নিজস্ব দলীয় কাঠামোর মধ্যে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের চর্চার হচ্ছে তার প্রথম সোপান। সেই পরীক্ষায় পাস না করে পরের পরীক্ষায় লেটার্স মার্ক পেতে চাওয়া কী স্ববিরোধিতা নয়? অনেকেই আছে, যারা রাজনৈতিক আন্দোলনের ফলাফল চায়, কিন্তু সাধারণ জনগণের রাজনৈতিক শিক্ষা অর্জন করুক তা চায় না।
আমাদের সমাজে সত্যিকারের গণতন্ত্র লুকিয়ে আছে সাধারণ জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা প্রতিফলনের মধ্য দিয়ে, তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ও ভূমিকা রাখার মাধ্যমে। রাজনৈতিক ক্ষমতা জনগণের কাছে না পৌঁছানো পর্যন্ত আমাদের দেশ ও জনগণ কখনো পরিবর্তনের সুফল অর্জন করতে পারবে না, যদিও ক্ষমতার হাতবদল হতে পারে। আর এটাই ক্ষমতার কাঠামোগত সংকট, যে সংকটের কারণ সাধারণ জনগণ না, তারা শুধু ভুক্তভোগী। লেখক: উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
কথাসাহিত্যিক মাহমুদুল হক ১৯৪০ সালের ১৬ নভেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বারাসাতে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা সিরাজুল হক ছিলেন অর্থ বিভাগের উপসচিব। মায়ের নাম মাহমুদা। ১০ ভাইবোনের মধ্যে মাহমুদুল হক ছিলেন চতুর্থ। ১৯৫০ সালে তিনি পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৫৭ সালে ঢাকার ওয়েস্টএন্ড হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৫৯ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। পরে অনার্সে ভর্তি হলেও তিনি আর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করেননি। মাহমুদুল হক খুব নিভৃতচারী ছিলেন। তার লেখায় স্থান পেয়েছে বিচিত্র মানুষ, যাদের সবাই উন্মুল, কোথাও কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। তিনি মনে করতেন, মানুষ সর্বদাই শিকড়হীন। ১৯৮২ সালের দিকে তিনি লেখালেখি ও জাগতিক কামনা-বাসনা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। প্রথম উপন্যাস ‘অনুর পাঠশালা’ ১৯৬৭ সালে লিখিত। কিন্তু উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয় ‘যেখানে খঞ্জনা পাখি’ নামে ১৯৭৩ সালে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় উপন্যাস ‘নিরাপদ তন্দ্রা’ (১৯৭৪) ও ‘জীবন আমার বোন’ (১৯৭৬)। এরপর ‘খেলাঘর’, ‘কালো বরফ’, ‘মাটির জাহাজ’ এবং দীর্ঘ বিরতিতে ‘অশরীরী’ প্রকাশিত হয়। একটি মাত্র গল্পগ্রন্থ ‘প্রতিদিন একটি রুমাল’ ও একটি শিশুতোষ বই ‘চিক্কোর কাবুক ছাড়া’।
এ ছাড়া তার চারটি অনুবাদ গ্রন্থ রয়েছে। অগ্রন্থিত লেখার মধ্যে রয়েছে শতাধিক গল্প ও অন্তত দুটি উপন্যাস। এগুলো পরে বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। অগ্রন্থিত উপন্যাস দুটি হচ্ছে ‘দ্রৌপদীর আকাশে পাখি’ ও ‘পাতালপুরী’। তিনি শিশুদের পত্রিকা ‘আলাপনী’, ‘শাহীন সেতারা’ প্রভৃতিতে নিয়মিত লিখতেন। তার ‘খেলাঘর’ উপন্যাসটি চলচ্চিত্ররূপ পেয়েছে। বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৭৭ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। ২০০৮ সালের ২১ জুলাই মাহমুদুল হক মৃত্যুবরণ করেন।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
মূল লড়াইয়ের আগে গা গরমের খেলা। সেখানে ব্যাটসম্যানরা ছিলেন আগ্রাসী। তাতে পাকিস্তান পায় ৩৪৫ রানের বড় সংগ্রহ। তারপরও জিততে পারল না। নিউজিল্যান্ড জয় তুলে নিয়েছে ৩৮ বল হাতে রেখেই।
পাকিস্তানের ব্যাটারদের মধ্যে সেঞ্চুরি পেয়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ৯৪ বলে ১০৩ রান করে অবসর নেন তিনি। এছাড়া বাবর আজম ৮০ ও সৌদ শাকিল ৭৫ রান সংগ্রহ করেছেন।
পাকিস্তানের দেয়া ৩৪৬ রানের জবাব দিতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে নিউজিল্যান্ড।
কিউই ব্যাটারদের মধ্যে ওপেনিংয়ে নামা রাচিন রবীন্দ্র ৭২ বলে ৯৭ রান সংগ্রহ করে দলের জয়ে বড় অবদান রাখেন। এছাড়া দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা কেন উইলিয়ামসন ৫৪, ড্যারেল মিচেল ৫৯ আর মার্ক চাপম্যান ৬৫ রান করে দলকে ৫ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
গোটা দেশ এখন দুই ভাগে বিভক্ত। একদল সাকিব আল হাসানকে শূলে চড়াচ্ছে, অন্যরা তামিম ইকবালকে। অথচ জাতীয় ক্রিকেট দল ভারতে গেছে বিশ্বকাপ খেলতে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে খোঁচাখুঁচি। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ খেলতে নেমেছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে। যে উদ্বোধনী জুটি নিয়ে এত দ্বিধা আর সংকোচ, যে কারণে তামিম না থাকায় এত হাহাকার, সেখানেই কিনা বাজিমাত করে পুরো জাতিকে অন্য এক বার্তা দিলেন তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস।
বিশ্বকাপের দলে যে তামিম ইকবাল থাকছেন না, সেটা জানা গিয়েছিল আগের দিনেই। তবু ক্রিকেট ভক্তদের মনের এক কোণে ক্ষীণ আশা ছিল। ওপেনারদের টানা ব্যর্থতার কথা বিবেচনায় হলেও এই ব্যাটসম্যান থাকবেন বলে ছিল তাদের। কিন্তু সেই আশার গুড়ে বালি। তাকে দলে না রাখায় অবশ্য রাস্তায় জনতার ঢল নামেনি, রাজপথে হয়নি কোনো সভা-সমাবেশ। তবে নতুন যুগের দেয়ালে দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদী নিন্দার বাণী। হাল জামানায় যাকে ‘টাইমলাইন’ বলে সম্বোধন করা হয়।
সেই সব প্রতিবাদী স্ট্যাটাসও দুই ভাগে বিভক্ত। কেউ সাকিব আল হাসানের পক্ষে, কেউবা তামিম ইকবালের। একদল পরিসংখ্যান-পর্যালোচনা দিয়ে বোঝাতে ব্যস্ত যে এই যুগে তামিমের কৌশল ‘ওল্ড স্কুল’। ওসব এখন আর চলে না। অন্য দল ১৭ বছরের ইতিহাস আর আবেগ নিয়ে হাজির। তাদের কাছেও আছে পরিসংখ্যান। সেটা গত কয়েক বছরের তামিমের ওপেনার সঙ্গীদের একটা তালিকা। তারাই শূলে চড়াচ্ছেন সাকিব-হাথুরু থেকে শুরু করে বিসিবির শীর্ষ কর্তাদের।
বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে সাকিব ক্রীড়াভিত্তিক একটি টিভি চ্যানেলকে দিয়ে গেছেন সাক্ষাৎকার। সেখানে তিনি সরাসরি তামিমের সমালোচনা করেছেন। এই ওপেনার যে দলের প্রয়োজনে পজিশন পরিবর্তনে রাজি হতে চান না, সেই মানসিকতা বাচ্চাদের মতো বলে সমালোচনা করেছেন টাইগার অধিনায়ক। এমনকি তার স্পোর্টসম্যানশিপ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তার আগে তামিম নিজে একটা ভিডিও বার্তায় বলেছেন তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা। মাশারফী বিন মোর্ত্তজাও ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। তাতে করে ক্রিকেটাঙ্গনে এখন যেন ভিডিও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ক্রিকেট নিয়ে জাতির অবস্থা যখন এমন, তখন ভারতের গোয়াহাটিতে বাংলাদেশের ক্রিকেট দল। আসাম রাজ্যের রাজধানীর বরষাপাড়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম উদ্বোধনী ম্যাচ খেলতে নেমেছিল তারা। ছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, নাজমুল হোসেন শান্তও ছিলেন না থাকার মতো করেই। প্রথম গা গরমের ম্যাচে তাই নেতৃত্ব দেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
টসভাগ্যে মিরাজের পরাজয়ের পর বল হাতে নামে বাংলাদেশ। টানা ৪০ ওভার টাইগারদের বোলারদের যেন শাসন করছিলেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। ঐ সময় পর্যন্ত ৫ উইকেট হারালেও তারা করে ২০২ রান। তারপরই যেন ঘুরে দাঁড়ান টাইগার বোলাররা। শেষ ১০ ওভারের ৫ বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় লঙ্কানরা। ২৬৩ রানের বেশি তারা করতে পারেনি।
২৬৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নামা বাংলাদেশের হালটা যে সুখকর হবে না, মুহূর্তেই ধসে পড়বে ব্যাটিং লাইনআপ। সিনিয়রদের কাউকে এসে হাল ধরে নিয়ে টেনে নিয়ে যেতে হবে দলকে। খাঁদের কিনারা থেকে টেনে তুলে হয় জয়, নয়তো সম্মানজনক হার! এমনটাই ছিল অনুমিত। আমরা যে এতেই অভ্যস্ত।
কিন্তু তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস সব অনুমান ভুল প্রমাণ করে দেন। যে ওপেনিং জুটি বাংলাদেশকে ভোগাচ্ছিল, যে সমস্যার কারণে চোট প্রবণ তামিম ইকবালকেও সবাই চাইছিলেন দলে। সেটাই কিনা তারা প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে ভুলিয়ে দিলেন! উদ্বোধনীতে তারা গড়েন ১৩১ রানের জুটি। তাতে ১৩ ম্যাচ পর বাংলাদেশ ওপেনিংয়ে শতরানের জুটি দেখতে পেয়েছে। হোক সেটা প্রস্তুতি ম্যাচ, তবুও তো লড়াই!
সবচেয়ে বড় স্বস্তি লিটন-তানজিদের রানে ফেরা। এশিয়া কাপের আগে জ্বরে ভুগছিলেন লিটন। সেই জ্বরের ধকল কাটিয়ে উঠতে তার সময় লেগেছে। মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে যেতে হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর চোটের কারণে। কিন্তু নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। এই টুর্নামেন্টে ২ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তানজিদ। কিন্তু তিনিও প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড সিরিজেও।
তাই বিশ্বকাপের দলে তামিম ইকবালকে বাদ দেওয়াতে ঝড় উঠেছিল। সেই ঝড় চলমান ছিল আজ দুপুর অবধি। অনেকেই ভেবে রেখেছিলেন, এই জুটি ব্যর্থ হবে। যা ধারাবাহিক থাকবে টুর্নামেন্টের শুরুতেও। তারপর বিশ্বকাপের মাঝপথে আচমকা ডাক পেয়ে তামিম ইকবাল উড়াল দেবেন ভারতে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলে। সেবার জাভেদ মিয়াঁদাদকে ছাড়াই তারা বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল। কিন্তু ব্যাটারদের ব্যর্থতার কারণে তাকে মাঝপথে উড়িয়ে নেওয়া হয়েছিল, এবং বিশ্বকাপ জিতেছিল।
এমন স্বপ্ন বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটভক্তরাও দেখতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তানজিদ তামিম আর লিটনের জুটি বদলে দিয়েছে সব হিসেব-নিকেশ। তামিমের ফেরার প্রত্যাশায় যারা গুনছিলেন প্রহর, তাদের মাথায় যেন এবার আকাশ ভেঙে পড়েছে। কারণ তারা যে রানে ফিরেছেন। যুববিশ্বকাপজয়ী তামিম খেলেছেন ৮৪ রানের একটি ইনিংস। ৮৮ বলে যা সাজানো ছিল ১০টি চার ও ২টি ছক্কায়। অন্যপ্রান্তে লিটন ৫৬ বলে ১০ চারে খেলেছেন ৬১ রানের ইনিংস। শুধু কি তাই! এদিন তিনে নেমেছিলেন মিরাজ। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৬৭ রান। ৬৪ বলের হার না মানা ইনিংসটি সাজানো ছিল ৫ চার ও ২ ছক্কায়।
পঞ্চপান্ডবের পরের প্রজন্ম তো তারাই। যাদের ব্যাটে শুক্রবার বরষাপাড়ায় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তাদের রানে ফেরা যেন নতুন দিনের বার্তা দেয়। যে বার্তা আগামীর পথচলার। যেখানে পুরনোকে আকড়ে ধরে রাখার প্রবণতা ক্ষীণ হয়ে আসার বার্তা। সহজ কথায়, তরুণদের রানে ফেরাতে মিয়াঁদাদ হওয়ার সুযোগ আর হচ্ছে না তামিম ইকবালের।
আল নাসরে প্রথম মৌসুমটা ভালো না কাটলেও দ্বিতীয় মৌসুমের শুরু থেকেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আছেন দারুণ ছন্দে। নিজে গোল করে দলকে জেতাচ্ছেন, সতীর্থদের দিয়ে গোল করাচ্ছেন।
শুক্রবারও সৌদি প্রো লিগে আল তা’য়ির বিপক্ষে ২-১ গোলে জিতেছে আল নাসর। এ ম্যাচেও রোনালদো গোল করেছেন এবং করিয়েছেন। তবে তাঁকে নিয়ে বেশি আলোচনা তালিসকার গোলটিতে অসাধারণ এক অ্যাসিস্টের জন্য। অ্যাসিস্টটিতে যে সবার মন ভরিয়ে দিয়েছেন রোনালদো।
তা’য়ির মাঠে আল নাসর গতকাল শুরুটা করেছে দারুণ। একের পর এক আক্রমণে স্বাগতিক দলের রক্ষণ করে দিয়েছে এলোমেলো। ম্যাচের শুরুর দিকেই রোনালদোর দুর্দান্ত একটি প্রচেষ্টা ঠেকিয়ে দেন তা’য়ির গোলকিপার। এ ছাড়া রোনালদোও খুব কাছ থেকে পাওয়া একটি সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি।
তবে ৩২ মিনিটে এগিয়ে যায় আল নাসর। গোলটি করেছেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার অ্যান্ডারসন তালিসকা। গোলটিতে রোনালদো অ্যাসিস্ট করেছেন অসাধারণ এক বাই-সাইকেল কিকে। সৌদি প্রো লিগে এ মৌসুমে এটা রোনালদোর পঞ্চম অ্যাসিস্ট।
খেলার স্রোতের বিপরীতে ৭৯ মিনিটে সমতায় ফেরে তা’য়ি। কিন্তু সমতা বেশিক্ষণ থাকেনি। ৩ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে আল নাসরের জয়সূচক গোলটি করেছেন রোনালদো। সৌদি প্রো লিগে এ মৌসুমে এটা ৭ ম্যাচে তার ১০ নম্বর গোল। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৫ ম্যাচ খেলে করেছেন ১৬ গোল।
এই জয়ের পর ৮ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে আল নাসর। আল ফেইহার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করা আল ইত্তিহাদ সমান ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে আছে শীর্ষে। ৮ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে আল তা’য়ি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পুলিশ। নির্বাচনে কী উপায়ে নিরাপত্তা দেওয়া হবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। তবে সরকারের হাইকমান্ড থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে তথ্য এসেছে, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ও সদস্য সরকারবিরোধীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছে। পুলিশের একটি প্রতিবেদনেও তথ্য এসেছে সারা দেশে অন্তত আড়াইশো কর্মকর্তা আছেন তারা সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তাদের পুরো কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এদিকে, চলতি মাস ও আগামী মাসের মধ্যে পুলিশে আরও বড় ধরনের রদবদল করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তালিকাও করা হয়েছে। পাশাপাশি উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদিও কেনার চেষ্টা করছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, সামনের দিনগুলোতে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। এ নিয়ে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা আগাম সতর্কবার্তাও দিয়েছে। যেকোনো বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করতে কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সবকটি ইউনিট প্রধান ও জেলার এসপিদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। বার্তায় বলা হয়েছে রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তায়নের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি পুলিশের মধ্যে কোনো সদস্য সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার তথ্য পেলে জানাতে বলা হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশেই সব পুলিশ সদস্যকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনকালীন যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পেশাদার সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু সদস্যের কর্মকান্ড নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এই সংখ্যা প্রায় আড়াইশো মতো হবে। সংখ্যা আরও বাড়তেও পারে। ইতিমধ্যে তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে সরকারের হাইকমান্ডকে অবহিতও করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য পুলিশকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশে উদ্বেগ আছে। বৈধ অস্ত্রের সংখ্যার খোঁজ নেওয়া, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্র কারবারিদের গ্রেপ্তার করতে বিশেষ অভিযান চালাতে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযানের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। হুট করেই আমরা বিশেষ অভিযান শুরু করব। কেপিআই স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন যথাসময়ে হবে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো মহল বা চক্র নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালাতে না পারে সে জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সতর্ক আছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের সবধরনের প্রস্তুতি আছে। দাগি সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বড় ধরনের অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের।
পুলিশ সূত্র জানায়, আড়াইশো পুলিশ কর্মকর্তার কর্মকান্ড নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তাদের মোবাইল নম্বর সার্বক্ষণিক ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও খোঁজ রাখা হচ্ছে। নজরদারির মধ্যে থাকা বেশ কয়েকজন পুলিশ সুপার, অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর আছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতাদের সাপোর্ট দেওয়া আমাদের কাজ না। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের জন্য উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্র ও যানবাহন ক্রয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি ৫০ লাখের মতো রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড কেনা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে এসব সরঞ্জাম বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করছি। ডিএমপি, সিএমপি, কেএমপি, আরএমপি, বিএমপি, এসএমপি, আরপিএমপি, জিএমপি কমিশনার, বিশেষ শাখা (এসবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), অপরাধ তদন্ত বিভাগ, পিবিআই, টুরিস্ট পুলিশ, এটিইউ, রেলওয়ে পুলিশ, নৌপুলিশ, এপিবিএন, হাইওয়ে, শিল্পাঞ্চল পুলিশ প্রধান, সব অ্যাডিশনাল আইজিপি, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও রংপুর রেঞ্জে নতুন আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি পাঠানো হবে। ইতিমধ্যে ইউনিট প্রধানরা পুলিশ সদর দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন। বিষয়টি আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারবিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্র করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। বিএনপি আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করছে। তারা পুলিশের ওপর হামলা করছে। যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। আর এসব মোকাবিলা করতে পুলিশকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পুলিশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।