
লেখক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিসেবী ও ব্যবসায়ী প্যারীচাঁদ মিত্রের জন্ম কলকাতায় ১৮১৪ সালের ২২ জুলাই। তার বাবার নাম রামনারায়ণ মিত্র। পারিবারিক পরিমণ্ডলে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়। তিনি পণ্ডিত ও মুনশির কাছে বাংলা ও ফারসি শেখেন। ১৮২৭ সালে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন এবং খ্যাতিমান শিক্ষক হেনরি ডিরোজিওর তত্ত্বাবধানে থেকে শিক্ষা সম্পন্ন করেন। ১৮৩৬ সালে কলকাতা পাবলিক লাইব্রেরির ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু হয়। ক্রমান্বয়ে তিনি লাইব্রেরিয়ান ও সেক্রেটারি পদে অধিষ্ঠিত হন। একই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং সফল হন। তিনি কয়েকটি বিনিয়োগ কোম্পানির অংশীদার ও পরিচালক ছিলেন। সমাজহিতৈষী ও সংস্কৃতিসেবী হিসেবে বাঙালির জাগরণে তার অবদান গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জ্ঞানোপার্জিকা সভা (১৮৩০), বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি (১৮৪৩), ডেভিড হেয়ার মেমোরিয়াল সোসাইটি (১৮৪৪), রেস ক্লাবসহ (১৮৪৭) বহু সংগঠন প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন। তিনি জাস্টিস অব পিস, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো, জেল ও কিশোর অপরাধীদের সংশোধন কেন্দ্রের পরিদর্শকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সম্মানসূচক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। সাংবাদিকতা ও বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্যই তিনি বিশেষ পরিচিতি লাভ করেন। দি ইংলিশ ম্যান, ইন্ডিয়ান ফিল্ড, হিন্দু প্যাট্রিয়ট, ফ্রেন্ড অব ইন্ডিয়া ইত্যাদি পত্রিকার নিয়মিত লেখক ছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘আলালের ঘরের দুলাল’, ‘মদ খাওয়া বড় দায় জাত থাকার কী উপায়’। তার ‘আলালের ঘরের দুলাল’ বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস হিসেবে খ্যাত। এতে তিনি সাধু গদ্যরীতি ভেঙে চলিত ভাষারীতি প্রয়োগ করেন। ১৮৮৩ সালের ২৩ নভেম্বর তিনি মারা যান।
বাংলা ভাষার প্রবাদ বাক্যগুলো অসাধারণ। জীবনের অভিজ্ঞতার নির্যাস যেন প্রকাশিত হয় একেকটি প্রবাদবাক্যে। যেমন মোটে মায়ে রান্ধে না, তপ্ত আর বাসি। অর্থাৎ মা তো ভাতই রান্ধে না, তার আবার গরম আর ঠাণ্ডা ভাত। কিংবা ভাতের হাঁড়ির একটা চাল টিপলেই বোঝা যায়, চাল সেদ্ধ হয়েছে কি না? সম্প্রতি জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন দেখে এই প্রবাদটি মনে পড়লে অসংগতিপূর্ণ বলে মনে হবে না। বিগত সাধারণ নির্বাচনগুলোর যে চেহারা দাঁড়িয়েছে তার আবার উপনির্বাচন। আর একটি নির্বাচন দেখে ভবিষ্যৎ নির্বাচন সম্পর্কেও আঁচ করা যায়। কেমন দাঁড়াতে পারে তার চেহারা আর নির্বাচন নিয়ে শাসক দলের পরিকল্পনা এবং নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা কেমন হতে পারে তার মহড়া কি দেখা গেল এই উপনির্বাচনে? নাকি মানুষ বলবে, জাতীয় নির্বাচন নিয়েই সন্দেহ, তার আবার উপনির্বাচন?
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র ছয় মাস আগে অনুষ্ঠিত হলো এই উপনির্বাচন। ইভিএম না ব্যালট এই বিতর্ক আপাতত স্থগিত। ফলে এই উপনির্বাচনে ভোট হয়েছে কাগজের ব্যালটে। রাজধানীর গুলশান, বনানী ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৭ আসন। একদিকে প্রবল ধনী, অন্যদিকে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ভোট, হাঁসফাঁস করা মধ্যবিত্ত, জীবনের চাপে চ্যাপ্টা হওয়া নিম্ন মধ্যবিত্ত আর বস্তিবাসী বিপুল ভোটার এই মিলে মোট ভোটার ৩ লাখ ২৫ হাজার ২০৫ জন। এই আসনে ১২৪টি ভোটকেন্দ্র আর ৬০৫টি ভোটকক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছিল ভোট গ্রহণ করার জন্য।
নির্বাচনী সহিংসতা আমাদের দেশের নির্বাচনে কিছুটা হয়েই থাকে। নির্বাচনে টাকার খেলা হয়, প্রচার প্রচারণা, নানা ধরনের কৌশলের নামে কারসাজি হয়, এটা প্রায় গা-সহা হয়ে গেছে। নির্বাচনে মানি, মাসল আর মেনিপুলেশনের কাছে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি যে পিছু হটে তা দেশের মানুষ দেখে এবং জানে। সমর্থকরা সংঘাতে লিপ্ত হলেও নির্বাচনের প্রচারণা ও নির্বাচনের দিনে প্রার্থীকে সর্বোচ্চ সুরক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা এবং সম্মান দেখানোর একটা সংস্কৃতি চালু ছিল। তাই নির্বাচনের দিনে প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনা খুব একটা বেশি ঘটেনি। ২০১৮ সালে বরিশালে মেয়র নির্বাচনের দিনে ভোট জালিয়াতির প্রতিবাদ করায় বাসদের মনীষা চক্রবর্তীর ওপর হামলা হয়েছিল। সেই ঘটনার কোনো প্রতিকার হয়নি বা নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ২০২৩ সালেও বরিশালে মেয়রপ্রার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। সর্বশেষ উপনির্বাচনে এমপি প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলা ব্যাপক প্রচারিত হয়েছে।
উপনির্বাচন নিয়ে নির্বাচনী কেলেংকারি ও আন্দোলন কম হয়নি। ১৯৯৪ সালের মাগুরা জালিয়াতিপূর্ণ উপনির্বাচন করে বিএনপিকে এর দায় এখনো বহন করতে হচ্ছে। আর ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর উপনির্বাচনগুলো দেখলে এ কথা মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, ক্ষমতায় থেকে উপনির্বাচন করতে হলে ক্ষমতাসীন দলের সবার আগে বিসর্জন দিতে হবে লজ্জা। কিন্তু লজ্জাহীনতারও তো একটা সীমা থাকে। ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন দেখিয়েছে এর কোনো সীমা নেই।
নির্বাচনের পর রাত ৯টার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা এই উপনির্বাচনের বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করেন। ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আরাফাত ২৮ হাজার ৮১৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম পেয়েছেন ৫ হাজার ৬০৯ ভোট। জাতীয় পার্টির প্রার্থী সিকদার আনিসুর রহমান পেয়েছেন ১ হাজার ৩২ ভোট। হিসাব অনুযায়ী এই উপনির্বাচনে ভোট পড়ার হার ১১ দশমিক ৫১ শতাংশ।
শুধু এই নির্বাচন নয়, এ যাবৎকালে অনুষ্ঠিত সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনগুলোতে ভোটার উপস্থিতি তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমে যাচ্ছে। যা নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী বাংলাদেশের জনগণের মানসিকতার সঙ্গে মিলছে না। গত কয়েকটি নির্বাচনে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিতদের ভূমিকা দেখে মানুষের আগ্রহ কমে যাওয়া এবং প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা এর অন্যতম কারণ বলে মনে হতে পারে। বিএনপির সংসদ সদস্যদের ছেড়ে দেওয়া ছয়টি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন হয়েছে গত ১ ফেব্রুয়ারি। এসব আসনে গড়ে ভোট পড়েছিল ২৮ শতাংশ। অবশ্য এর আগে কেএম নূরুল হুদা কমিশনের সময় ২০২০ সালের মার্চে ঢাকা-১০ উপনির্বাচন হয়েছিল ইভিএমে। সেই নির্বাচনে মাত্র ৫ দশমিক ২৮ শতাংশ ভোট পড়েছিল।
অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ক্ষমতায় থেকে যে দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা অহরহ বলছেন, তাদের উন্নয়ন দেখে জনগণ মুগ্ধ আর প্রতিপক্ষ ক্ষুব্ধ। বিরোধী দলগুলোর পক্ষে আর জনমত নেই, জনগণ সব সরকারের সমর্থক হয়ে গেছে। কিন্তু নির্বাচনে এই নেতাদের দলের লোকেরাও কেন ভোট দিতে আসে না তার কারণ কী? বিপুল প্রচারের পরও সরকারদলীয় প্রার্থী মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের যে কেন্দ্রে (৬৩ নম্বর) ভোট দেন, ওই কেন্দ্রে সকাল ৯টা পর্যন্ত ভোটের হার ছিল শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ। দুপুর পৌনে ১২টায় তা দাঁড়ায় ৩ শতাংশে। এ অবস্থা চললে তো ভালো দেখায় না। তাই বেলা ২টার পর সরকারদলীয় প্রতীকের ব্যাজধারীরা কেন্দ্রে প্রবেশে করেন। এরপর বেলা সোয়া ৩টা পর্যন্ত তাদের পরিশ্রমের ফলে দেখা যায়, সেখানে ভোটগ্রহণের হার বেড়ে ১০ শতাংশ হয়েছে। এ নিয়ে কিছু সাংবাদিক প্রশ্ন করে বিরক্ত করতে চাইলে গুলশান থানা নির্বাচনী কার্যক্রম সমন্বয়ের দায়িত্বরত নেতা প্রতীকের ব্যাজধারীদের ভোট কেন্দ্রে প্রবেশের বিষয়ে বলেন, ‘এটা কোথায় না হয়, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও তো এটা হয়।’ কী অকপট স্বীকারোক্তি!
আবার নির্বাচনে আলোচিত প্রার্থী হিরো আলমকে যখন কয়েকজন হামলা করতে এলো, তখন একাধিক পুলিশ সদস্য নিরাপত্তা দেওয়ার মতো করে সামনে এগিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু একটু পরেই হামলাকারীদের সংখ্যা বেড়ে গেলে পুলিশ সদস্যরা সেখান থেকে সরে গেলেন। প্রার্থীকে চড়-থাপ্পড়, লাথি দেওয়া দেখেও সরে যাওয়া একজন পুলিশ সদস্যকে সাংবাদিক যখন জিজ্ঞাসা করলেন, প্রার্থীকে মারধর করা হচ্ছে, আপনারা কী করছেন? তখন সেই পুলিশ সদস্য তার ওপর অর্পিত দায়িত্বের সীমার কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘আমরা ইনার কর্ডনে। আউটার কর্ডনের বিষয় আমাদের না।’ ঠিকই তো। হামলাকারীরা বেআইনি কাজ করলেও, পুলিশ তো সীমা লঙ্ঘন করতে পারে না।
ঘটনা এখানেই শেষ নয়, প্রার্থীর ওপর হামলাকে ‘নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াস’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। ফলে প্রশ্ন উঠল, কারা চেয়েছে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে। নিশ্চয়ই বিরোধী পক্ষ। কিন্তু হামলার ফুটেজ দেখে পুলিশ যাদের গ্রেপ্তার করল, তারা সবাই সরকারদলীয়। তাহলে, ভোটকেন্দ্রে ঢুকে যাওয়া, প্রার্থীর ওপর হামলা করা আর নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে যে কথা বলা হয়েছে আর বাস্তবে যা ঘটেছে তার হিসাব মেলানো কি কঠিন?
নির্বাচনের সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব কার? বলা হয় নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচনে নিরাপত্তার দায়িত্বে যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা থাকেন, তারাও নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকার কথা। সংবিধানের ১২০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালনের জন্য যে রূপ কর্মচারীর প্রয়োজন হইবে, নির্বাচন কমিশন অনুরোধ করিলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনকে সেই রূপ কর্মচারী প্রদানের ব্যবস্থা করিবেন।’ এই ক্ষমতা হাতে নিয়ে নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন এবং ভোটার ও প্রার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন, এটা প্রত্যাশা করা অনুচিত কি? কিন্তু ভোটার তো দূরের কথা, প্রার্থীর নিরাপত্তা নিয়েই যে দৃষ্টান্ত তৈরি হচ্ছে তাতে নিজের নিরাপত্তা নিজেকেই নিতে হবে এই ভেবে, যদি ভোটাররা ঘরে বসে থাকেন তাহলে তাদের দোষ দেওয়া যাবে কি?
সে কারণেই হয়তোবা নির্বাচনের দিন ঢাকা-১৭ আসনের ৮৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ ভোটার তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেরাই নিয়েছেন ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে। এ অবস্থা চললে ভবিষ্যতেও জান ও মান রক্ষার্থে ভোটার ও প্রার্থীরা ঘরে থেকে নিজেদের নিরাপত্তা নিজেরাই নিশ্চিত করে নেবেন। নির্বাচন কমিশনের কাজ হবে, এত কিছুর পর যেসব সাহসী মানুষ ভোট ম্যানেজ করেছেন তাদের কষ্টের ফল হিসেবে নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা করে নিজেদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করা। ফলে যে কোনোভাবেই নির্বাচন হলে, তাতে গণতন্ত্র চর্চা হয় না এই কথাটা কখনই যেন ভুলে না যাই। যেমন আকাশে লাল আভা দেখলেই ভোর হয় না, অস্তগামী সূর্য সন্ধ্যার আকাশকেও রক্তিম করে। লেখক: রাজনৈতিক সংগঠক ও কলাম লেখক
তখন অক্টোবর মাস। তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে। এমন হাড়কাঁপানো শীতে দুর্গোৎসবে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ! সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই উৎসবের আয়োজন চলবে তিন দিন। বঙ্গীয় পূজা পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা পরিষদ আর আমরা সবার আয়োজিত শারদীয় দুর্গোৎসবের অনিন্দ্যসুন্দর এই আয়োজন, বিশাল আয়তনের তিন তিনটি ভিন্ন ভিন্ন ভেন্যুতে। বঙ্গীয় পূজা পরিষদের পক্ষে অভিভাবকতুল্য প্রিয় সুহৃদ কিরণ বণিক শংকর দার আমন্ত্রণ, ‘আমরা সবাই’-এর পক্ষে উৎসব উদযাপন কমিটির কর্ণধার, সিলেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, কমিউনিটির অতি আপনজন রুপক দার বিনয়ী আবেদন, কোনটি-ই অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই। প্রকৌশলী সুব্রত বৈরাগীর নেতৃত্বে আয়োজিত পূজা পরিষদের আমন্ত্রণ এটিতে অংশগ্রহণও সামাজিক দায়িত্ববোধের মধ্যেই পড়ে। তাই শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে, অনুসন্ধিৎসু হৃদয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ি।
জেনেসিস সেন্টারের বিশাল হল রুম। কয়েক হাজার দর্শক অনায়াসে যে কোনো অনুষ্ঠান স্বাচ্ছন্দ্যে উপভোগ করতে পারে। প্রতিমা মন্দির তো আছেই, সঙ্গে রঙবেরঙের নানারকম দেশীয় খাবারের স্টল, পাশেই বিশাল আকারের অনুষ্ঠান মঞ্চ। সেখানেই বঙ্গীয় পূজা পরিষদের দুর্গোৎসবের আয়োজন। কেলগেরি শহরের পূর্ব-দক্ষিণে সাউথ ভিউ কমিউনিটি হল। বঙ্গীয় পূজা পরিষদ সেখানে দুর্গোৎসবের আয়োজন করেছে। উপাদেয় খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় আমন্ত্রিত অতিথিদের। তিন দিনব্যাপী চলে নানারকম অনুষ্ঠান। পূজা মানেই ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, বিষয়টি মোটেও তেমন নয়। বাংলা ভাষা, বাঙালি সংস্কৃতিকে বিশ্বমন্ডলে ছড়িয়ে দেওয়ার এ যেন এক প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা।
চৈত্রসংক্রান্তি আর বাংলা বর্ষবরণেও ছিল এমন জমকালো আয়োজন। ‘আমরা সবাই’ আয়োজিত বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠানটি দেখে তো কবি নজরুলের সেই বিখ্যাত চরণটি-ই মনে পড়ে যায়, ‘গাহি সাম্যের গান যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা ব্যবধান’।
ডিসেম্বর, বিজয়ের মাস। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলবার্টা থেকে প্রকাশিত প্রথম বাংলা নিউজ পোর্টাল ‘প্রবাস বাংলা ভয়েস’ মহান মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানাতে আয়োজন করে ব্যতিক্রমী এক সংবর্ধনা ও স্মারক সম্মাননা অনুষ্ঠান। সেদিন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আবেগঘন স্মৃতিচারণে হলভর্তি দর্শক-শ্রোতারা যেন, একাত্তরের সেই দিনগুলোতেই ফিরে গিয়েছিল। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে বিসিএওসি আয়োজন করে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। চিত্রাঙ্কন, আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কেলগেরি প্রবাসী বাংলাদেশিরা মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথাকে তুলে ধরে।
একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও মহান শহীদ দিবস। বাংলাদেশ-কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অব কেলগেরি (বিসিএওসি) এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে। কী নেই পাশ্চাত্যের শেষ সীমানার এই রূপনগরে! নজরুলপ্রেমী যেমন আছেন, রবীন্দ্রভক্তদের সংখ্যাটিও কম নয়। গড়ে উঠেছে টেগোর সোসাইটির মতো সৃজনশীল সংগঠন। মনমাতানো জনপ্রিয় শিল্পী আর কলাকুশলীদের সংখ্যাও কম নয়। নৃত্য, শিল্পকলায় আমাদের সংস্কৃতিকে সদা জাগ্রত রাখে মুক্ত বিহঙ্গের মতো নাট্যগোষ্ঠী। আর শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সেবায় নেপথ্যে থেকে প্রাণভরে আলো সঞ্চার করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সর্বজন শ্রদ্ধেয় মাহফুজুল হক মিনুর মতো গুণীজন। সেই সঙ্গে লেখালেখি আর বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজ, সাহিত্য আর আমাদের জাতীয় মূল্যবোধকে উজ্জীবিত করতে নিয়মিত কাজ করেন প্রকৌশলী আবদুল্লা রফিক, সাইফুল ইসলাম রিপন, বায়াজিদ গালিব, অধ্যাপক কাজী খালিদ হাসানসহ একদল সৃজনশীল কলমসৈনিক।
শুধু সামাজিক আর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডই নয়, কৃতী বাঙালিদের ব্যক্তিগত অর্জনেও গর্বিত হয় এ শহরের বাংলাদেশি কমিউনিটি। তাই তো জনাকীর্ণ অনুষ্ঠানে জুবায়ের সিদ্দিকীর হাতে কুইন এলিজাবেথ সম্মানসূচক এওয়ার্ড তুলে দেয় আলবার্টা সরকারের কর্মসংস্থান, অর্থনীতি ও উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী ব্রায়ান জিন, প্রকৌশলী মোহাম্মদ কাদির এপেকের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হয়ে আলবার্টার প্রকৌশল জগতে বাংলাদেশিদের কৃতিত্বকে তুলে ধরেন। কানাডার অর্থনীতির প্রাণ আলবার্টা প্রদেশ। এ প্রদেশের অর্থনীতির মূলে রয়েছে তেল ও খনিজ সম্পদ। বৃহত্তম রাজস্বের এই সেক্টরে বাংলাদেশি প্রকৌশলী ও ভূতাত্ত্বিকদের অবদান তো সর্বজন স্বীকৃত। শিক্ষা, গবেষণা, স্বাস্থ্যসেবা, স্থানীয় সরকার, ব্যাংক, বীমা, সেবা প্রশাসন, তথ্যপ্রযুক্তি, রিয়েল এস্টেট ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব সেক্টরেই আজ কৃতী বাঙালিদের সুস্পষ্ট অবস্থান দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। চিকিৎসা ও ওষুধ সেবা খাতের এক ডজনেরও বেশি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে, ড. ইব্রাহিম খান ও তার পরিবার তো এখন আমাদের গর্বিত কমিউনিটির আদর্শ। শিক্ষা উদ্যোক্তা ড. বাতেনকে অনুসরণ করে বাংলাদেশিদের ব্যবস্থাপনায় গড়ে উঠেছে দু-দুটি কমিউনিটি কলেজ। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষকতা ও গবেষণায়ও বীরদর্পেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশি কমিউনিটির মেধাবী সদস্যরা।
গ্রীষ্মে জেগে উঠে শীতের দেশ কানাডা। বাংলাদেশিদের বৃহত্তম সংগঠন বিসিএওসিসহ সিলেট অ্যাসোসিয়েশন অব কেলগেরি, চট্টগ্রাম সমিতি, বগুড়া অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা সমিতি, কুষ্টিয়া সমিতি, কুমিল্লা সমিতি, নোয়াখালী অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও পেশাজীবী সংগঠন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইগুলোর নানা রকম কর্মসূচিকে ঘিরে সরগরম হয়ে উঠছে কেলগেরির সবুজ শ্যামল মুক্তাঞ্চল। সেই সঙ্গে কমিউনিটির প্রতিটি অনুষ্ঠানে কৃতী গবেষক ও অধ্যাপক ড. রঞ্জন দত্ত ও ড. জেবুন্নেসা চপলার শিশুসন্তান পৃথিবী, প্রার্থনা আর প্রকৃতির গায়ে লাল-সবুজের মানচিত্র আর কণ্ঠে বাংলার গানের সঙ্গে আমাদের ঐতিহ্যের নৃত্য যেন হতাশায় নিমজ্জিত দেশপ্রেমিকের হৃদয়ে আশার শিহরণ জাগিয়ে তোলে। জেরিন আর্ট স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের রংতুলিতে বাংলার রং, মুক্তিযুদ্ধ আর বাংলার শস্য প্রান্তরের প্রতিচ্ছবি, কবি আবীরের কণ্ঠে ‘স্বাধীনতা তুমি’-এর সবই তো বাংলাকে ভালোবাসার এক জ¦লন্ত প্রতিচ্ছবি। সত্যিই, সবকিছু মিলিয়ে এ যেন পাশ্চাত্যের কাক্সিক্ষত এক মিনি বাংলাদেশ!
লেখক : কলামিস্ট ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক [email protected]
ফয়েজ আহ্মদ। প্রখ্যাত সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন আর্ট গ্যালারি ‘শিল্পাঙ্গন’। প্রগতিশীল পাঠাগার ‘সমাজতান্ত্রিক পাঠাগার’র প্রতিষ্ঠাতা। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) প্রথম প্রধান সম্পাদক অকৃতদার এই কবি ও ছড়াকার মারা যান ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। অতীতের সঙ্গে অধুনার সংযোগ ঘটাতে আজ ছাপা হলো তার লেখা উপসম্পাদকীয় একথা ঐতিহাসিকভাবে সত্যি যে, সেদিন পূর্ব বাংলার গণতান্ত্রিক শক্তির প্রতীক যুক্তফ্রন্ট অন্তত অর্ধদিনের জন্যে ভেঙে দ্বিখন্ডিত হয়েছিল চুয়ান্ন সালের এগারো জানুয়ারি। বিশেষ করে, পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলে মুসলিম লীগের দুঃশাসন ও স্বৈরাচার এবং সাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যমূলক শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে সে সময় দেশবাসীর নিকট যুক্তফ্রন্ট ছিল আশা-আকাক্সক্ষার পথনির্দেশক। প্রধানত শেরে বাংলা ফজলুল হকের কৃষক শ্রমিক পার্টি ও মাওলানা ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে তখন চুয়ান্নর সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠিত হয়েছিল। অবস্থার প্রেক্ষিতে অন্যান্য গণতান্ত্রিক শক্তি ও কম্যুনিস্ট পার্টি ও মুসলিম লীগবিরোধী অভিযানে যুক্তফ্রন্টকে সমর্থনদান করে এবং গণতন্ত্রী দল এই জোটের অন্তর্ভুক্ত ছিল। উক্ত তিন নেতার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তাই সে সময় এই ফ্রন্টের অন্যতম প্রধান অবলম্বন বলে বিবেচিত হতো। মূল শ্লোগান সবার মুখে মুখে রচিত। হয়েছিল, ‘হক-ভাসানী জিন্দাবাদ’, ‘শহীদ-ভাসানী জিন্দাবাদ’। কোনো সাম্প্রদায়িক পার্টিকে যুক্তফ্রন্ট গ্রহণ করা হয়নি।
যুক্তফ্রন্ট গঠিত হওয়ার পর থেকেই আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষিতে সমগ্র পূর্ব বাংলার বিশেষ করে প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকা শহরে রাজনৈতিক তৎপরতা এক বিশেষ পর্যায়ে উপনীত হয়। চারদিকে পথসভা, মিছিল ও শ্লোগান। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সরকারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান। যুক্তফ্রন্টের নমিনেশন পাওয়ার আশায় বিভিন্ন অঞ্চলের নেতৃবর্গ স্ব-স্ব সমর্থক বাক্্চতুর ব্যক্তি ও মরুব্বি নিয়ে ঢাকায় উপস্থিত। কারণ তখন তাঁরা জানতেন যে, যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হতে পারলে নৌকার প্রতীক নিয়ে বিজয় শতকরা নব্বই ভাগ সুনিশ্চিত।
এই প্রবাহমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি আকস্মিকভাবে স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। গত কিছুদিন যাবৎ শেরে বাংলা, মাওলানা ভাসানী ও সোহরাওয়ার্দী সাহেব সদরঘাটের ৫নং সিমসন রোডস্থ ভাঙ্গা এক ইমারতে দিন-রাত বৈঠক করেও প্রার্থী নির্বাচনে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারছিলেন না। তখনকার রূপমহল সিনেমা হলের উল্টো দিকে বিনা অনুমতিতে গড়ে ওঠা হকার্স মার্কেটের মধ্যমণি প্রাচীন আমলের এই জীর্ণ ইমারতটি ছিল ভবিষ্যতের দেশ শাসকদের রাজনৈতিক তৎপরতার প্রাণকেন্দ্র তিন জাঁদরেল নেতার প্রায় সার্বক্ষণিক উপস্থিতিতে ধন্য যুক্তফ্রন্টের কেন্দ্রীয় অফিস। জনাব সোহরাওয়ার্দী সাহেব তাঁর গোয়ানিজ স্টেনোটাইপিস্ট ম্যানেজিসকে নিয়ে ফ্রন্ট অফিসের একটি কক্ষে থাকতেন। তখন তাঁর সেক্রেটারি ছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলীর (বগুড়া) ভাই ওমর আলী।
প্রার্থী নির্বাচনের প্রশ্নে তিন নেতার মধ্যে অমিল দেখা দেয়ার খবরটা ক্রমেই মুখে মুখে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই ছড়িয়ে পড়তে থাকে। প্রার্থীদের ও ধৈর্যের সীমা শেষ হয়ে আসছিল। সে সময় কয়েক হাজার রাজনৈতিক কর্মী, ছাত্র, যুবক, নেতা গভীর রাত পর্যন্ত ফ্রন্ট অফিসে, রাস্তায় ও সদরঘাট এলাকায় মনোনীত প্রার্থীদের নাম জানার আশায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। প্রার্থীর নাম প্রকাশের সাথে সাথে এরা স্ব-স্ব এলাকায় প্রচার কাজের জন্যে দ্রুত প্রত্যাবর্তনের আশায় উৎকণ্ঠিত ছিলেন। শেষে তিন নেতার বৈঠকের সময় প্রার্থীদের নাম ঘোষণার দাবিতে কর্মীরা অনবরত শ্লোগান দিতেন। স্বাভাবিকভাবেই যুক্তফ্রন্টের সমর্থক এই শ্লোগানদাতাদের মধ্যে অগ্রণী ছিলেন ঢাকার বিভিন্ন হল ও হোস্টেলের উৎসাহী ছাত্রগণ।
সব দোষ গিয়ে পড়লো ছাত্রলীগের সেক্রেটারি আবদুল ওয়াদুদের ওপর। তাঁর বিন্দুমাত্র দোষ ছিল কী না, সে বিবেচনা করার অবসরই তখন কারো ছিল না। সবাই স্তম্ভিত এবং হতাশায় জর্জরিত। সবাই সে সময় গভীরভাবে চিন্তিত হয়ে পড়লেন যে, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার এই শেষ পর্যায়ে গণতান্ত্রিক শক্তির যুক্তফ্রন্টের হয়তো ভেঙে গেল। প্রচার হলো যে, হক সাহেব নাকি চলে যাওয়ার সময় বলে গেছেন ‘আমি আর যুক্তফ্রন্টের বৈঠকে আসব না।’ এ কথা সত্যি হলে তবে আর যুক্তফ্রন্টের অস্তিত্ব নেই।
সাময়িকভাবে ক্ষুব্ধ শেরে বাংলাকে নিয়ে এই ঘটনার খবর শহরময় পল্লবিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ল মুহূর্তের মধ্যে। গণতান্ত্রিক শিবিরে হতাশার ছায়া নেমে এল। কিন্তু এই সংবাদ মুমূর্ষু মুসলিম লীগের বেড প্রান্তে অক্সিজেনের কাজ করল। তারা ঢাকা শহরের সর্বত্র ছড়িয়ে দিলেন যে, শেরে বাংলা যুক্তফ্রন্ট ভেঙে দিয়েছেন যুক্তফ্রন্টের কোনো অস্তিত্ব আর নেই। এই প্রচারে ফ্রন্ট-বিরোধী শক্তি চট্টল, খুলনা, সিলেট থেকে শুরু করে সর্বত্র টেলিফোন-টেলিগ্রাম মারফত জানিয়ে দিলেন যে, যুক্তফ্রন্ট ভেঙে গেছে। যুক্তফ্রন্টের সমর্থক-কর্মী-ছাত্র যুবক ও রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন নাগরিকগণ সদরঘাটস্থ ফ্রন্ট অফিস এবং শেরে বাংলার বাড়িতে ভিড় জমাতে থাকেন।
তাঁরা গণতান্ত্রিক শক্তির (বর্তমান প্রেক্ষিত ও চেতনায় অন্য ব্যাখ্যা হতে পারে।) ঐক্যে যে কোনো প্রকার ভাঙনের বিরোধী। এই সুযোগ ‘প্রোদা’ আইনে অভিযুক্ত ও রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত জনাব হামিদুল হক চৌধুরী গোপন রাজনীতির অন্ধকারে পা ফেলে অগ্রসর হন। নওয়াবজাদা হাসান আলীও (মোহাম্মদ আলী বগুড়ার চাচা) তৎপর হয়ে ওঠেন। প্রধানত জনাব চৌধুরী হক সাহেব ও ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর মধ্যে যোগসূত্র রক্ষা করে যুক্তফ্রন্টের ভাঙন রোধে সচেষ্ট হন। টিকাটুলিস্থ ভগবতী ব্যানার্জী রোডে তাঁর বাড়িতেই মীমাংসার বৈঠক বসে।
অপরদিকে মুসলিম লীগ এই অস্থায়ী ভাঙন বা প্রার্থী মনোনয়নের প্রশ্নে মতানৈক্যের সুযোগ পুরো মাত্রায় নেয়ার চেষ্টা করে। পাকিস্তান আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও আজাদ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ বিরোধী শক্তির ক্যাম্পের এই নাজুক পরিস্থিতির পূর্ণ সুযোগ নেয়ার আয়োজনে লিপ্ত হন। বিভাগ-পূর্বকালে একই মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠানে থেকেও তিনি সোহরাওয়ার্দী ভাসানীর বিরোধী ক্যাম্পে ছিলেন। মাওলানা সাহেব আজাদের অন্যতম রিপোর্টার আমাদের বন্ধু সন্তোষ বসাককে ডেকে যুক্তফ্রন্টে ভাঙনের সংবাদ মুসলিম লীগের দৃষ্টিকোণ থেকে রিপোর্ট করতে নির্দেশ দেন (সন্তোষ বর্তমানে কলকাতায় স্টেটসম্যান পত্রিকায় ডেপুটি নিউজ এডিটর)। রিপোর্টার সন্তোষ সারাদিন ঘুরে নানা ইন্টারভ্যু নিয়ে ব্যাপক তথ্য দিয়ে এমন এক চোখা রিপোর্ট করল, যা শুনে মাওলানা আকরাম খাঁ সাহেব স্বাভাবিকভাবেই উৎফুল্ল হয়ে উঠলেন। এ রিপোর্ট দিয়ে প্রমাণ করা যায় যে, যুক্তফ্রন্ট ভেঙে চৌচির হয়ে গেছে ।
মাওলানা সাহেব রিপোর্টটি অনুমোদন করে ওপর লিখে দিলেন, যাবে। রাতের শিফটে যিনি প্রধান, তাঁর ওপর দায়িত্ব বর্তালো রিপোর্টটির উপযুক্ত ব্যবহার করার। পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক গগনে এমন আকস্মিক পরিবর্তনের উৎকৃষ্ট সংবাদ যে কোনো মেধাবী সাংবাদিক যে ব্যানার হেডলাইনে ফলাও করবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
আজাদে সেদিন রাতের শিফটের প্রধান ছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন (মুক্তিযুদ্ধকালে শহীদ)। তিনি তখন উক্ত পত্রিকার জয়েন্ট নিউজ অ্যাডিটর। তাঁর নির্দেশ ও পরিচালনায় রাতের নিউজ নিয়ন্ত্রিত হয়। সে সময়ও সাইকেল ছিল মধ্যবিত্তের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ যান। তিনি রাত দশটার দিকে রাতের শিফ্ট পরিচালনা করতে যেতেন এবং ভোর রাতে ফিরতেন বাড়িতে। পুনরায় সকাল দশটায় যেতেন একবার সংশ্লিষ্ট বিষয় তদারক করতে। সেদিন রাতেও তিনি যথারীতি দশটার পর অফিসে গিয়ে নিউজ ফাইল দেখতে শুরু করেন। তাঁর এক সহকারী সারাদিন ও সন্ধ্যার বিভিন্ন বিচিত্র খবর ভিন্ন ভিন্ন ফাইল বা স্পাইকে সাজিয়ে রেখেছেন। একটা স্পাইকে তিনি পেলেন শেরে বাংলার ক্ষুদ্র্র একটি বক্তব্য, যাতে তিনি বলেছেন, ‘যুক্তফ্রন্ট ভেঙে যাবার খবর মিথ্যা এবং তিনি যুক্তফ্রন্ট থেকে পদত্যাগ করেননি।’
এ সময় জনৈক সহকারী সিরাজ সাহেবকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, মাওলানা সাহেব যুক্তফ্রন্ট ভেঙে যাওয়ার খবর লিখিয়ে ছাপানোর জন্যে পাঠিয়েছেন, তাঁর ড্রয়ারে রক্ষিত আছে। সরাসরি কেন্দ্রীয় মুসলিম লীগের ট্রাস্টের অধীনে সে সময়ের পত্রিকা সংবাদ-এ ভাঙনের খবরটা ছাপা হবে কী না জানতাম না। তবে আজাদ যে নিশ্চিতভাবে প্রকাশিত হতে চলেছে, তা আমরা ইত্তেফাকে বসে ভাবছিলাম। ইত্তেফাকের রিপোর্টার হিসেবে বিপরীত সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আমি এ কথা জানতে পেরেছি। তবে একটি ভরসা ছিলেন এপিপির ঢাকা অফিসের প্রধান জনাব এনায়েতুর রহমান। তাঁর কাছে দেয়া হয়েছিল শেরে বাংলার সুস্পষ্ট বক্তব্যসহ সেই বিবৃতিটি প্রচারের জন্যে। সাংবাদিকতার নীতিমালায় বিশ্বাসী এই নিষ্ঠাবান ডমিসাইল্ড সংবাদকর্মী বিরোধী দলের প্রধান নেতার বক্তব্য এপিপির মাধ্যমে রাতে রিলিজ করেছিলেন। সেদিন তাঁর এই সৎ সাহস না থাকলে পরিস্থিতি অন্যরূপ নিতেও পারতো। এ কারণে রহমান সাহেবকে পরবর্তীকালে স্থায়ীভাবে পশ্চিমাঞ্চলে বদলি করা হয়েছিল। তিনি বর্তমানে পিন্ডিতে এপিপির ডাইরেক্টর, নিউজ।
সিরাজুদ্দীন হোসেন রিপোর্টার কর্তৃক সংগৃহীত রিপোর্ট ড্রয়ারে তুলে রেখে এজেন্সি প্রচারিত হক সাহেবের সেই বিবৃতির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। তিনি সৎ সাংবাদিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে উক্ত ঘটনা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট নেতার বক্তব্যকেই চূড়ান্ত বলে গণ্য করেন। পরের দিন সকালের আজাদ পত্রিকায় মাওলানা সাহেবের নিদের্শিত রিপোর্টটি ছাপা হয়নি। শেরে বাংলার ক’লাইনের বিবৃতি প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশ পায়।
এই বলিষ্ঠ ভূমিকার জন্যে সিনিয়র সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন কঠোর শাস্তির হাত থেকে রেহাই পাননি। পত্রিকা মালিকের নির্দেশ অমান্য করার জন্যে তিনি কোনো নোটিশ ব্যতিরেকেই চাকরি হারিয়েছিলেন।
পরদিন সকালে অভ্যাস মতো তিনি অফিসে যান। বারান্দার নিচে সাইকেল তালা দিয়ে অফিস কক্ষের নিউজ টেবিলে নির্ধারিত চেয়ারে গিয়ে বসেন। রোজকার মতো প্যাকেট থেকে সিজার সিগারেট বের করে দেশলাই জ্বালান। কোনো ফাইল দেখার পূর্বেই একখানা চিঠি তাঁর হাতে আসে। খামের গর্ভে রক্ষিত ছোট পত্রখানায় বক্তব্য ছিল এক লাইনে ‘আপনার চাকরির আর প্রয়োজন নেই!’ সিজারপায়ী সেই ছিপছিপে লোকটি হাসিমুখে একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে অফিস থেকে বেরিয়ে এলেন।
সিজার সিগারেটের সেই বহুল প্রচারিত বিজ্ঞাপনটি সম্ভবত এ ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য : ‘আপনি কি হারাইতেছেন, আপনি জানেন না।’ লেখক: বরেণ্য সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
২০১৮ সালে আইনের একটি সংশোধনী অনুযায়ী ২৩ জন নিকটাত্মীয়ের বাইরে কেউ রোগীকে কিডনি দান করতে পারতেন না। কিন্তু আত্মীয় না হলেও কোনো ব্যক্তিকে কিডনি দান করার বিধান রেখে হাইকোর্টে আইন সংশোধনের রায় হয়েছে ৪ বছর আগে। আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তিরা অনেক সময় দেশের বাইরে গিয়ে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হলেও ব্যয়বহুল হওয়ায় বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের পক্ষে তা সম্ভব হয় না। কিন্তু এখন যে কেউ কিডনি দান করতে পারেন। শুধু ম্যাচ করলেই হয়।
দেশে প্রায় ১০ হাজার কিডনি বিকল রোগী প্রতি বছর কিডনি প্রতিস্থাপন করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশে মাত্র ১০টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বছরে প্রায় ২৫০টি কিডনি প্রতিস্থাপন হচ্ছে। শুধুমাত্র কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্যই বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর পাচার হচ্ছে ন্যূনতম ৮০০ কোটি টাকা।
রাজধানীতেই রয়েছে বেশ কয়েকটি কিডনি পাচারকারী দল। এরা আবার সংঘবদ্ধ। এই চক্রের দালাল রয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। যাদের কাজই হচ্ছে, ছলে-বলে গরিব মানুষদের বোকা বানিয়ে সামান্য টাকার বিনিময়ে শরীর থেকে কিডনি নেওয়া। যেহেতু মানুষের একটি কিডনিতেই জীবন চলে, সেখানে দুটো কিডনি না থাকলেও হয়। এমন বিষয়টিকে হালকাভাবে তুলে ধরে কৌশলে সাধারণ মানুষের শরীর থেকে নেওয়া হয় কিডনি। এই ধরনের কাজের সঙ্গে প্রকাশ্যে থাকে দালাল চক্র ও পাচারকারী। আজ পর্যন্ত অসংখ্য কিডনি পাচারকারী চক্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু তারপর তাদের কী ধরনের শাস্তির মুখোমুখি করা হয়েছে, সেই খবর প্রকাশিত হয়নি। আইনের কঠিন প্রয়োগ না হওয়াতেই কিডনি পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। দেশ রূপান্তরে শুক্রবার প্রকাশিত প্রতিবেদন ‘এক চক্রের হাতে অর্ধশত কিডনি’ সংবাদের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, কিডনি বেচাকেনায় জড়িত একটি চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। চক্রটি অর্ধশত মানুষের কিডনি হাতিয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
বলা হচ্ছে চক্রটি অনলাইন এবং অফলাইন প্রচারণার মাধ্যমে গ্রাহক ও ডোনারদের আকৃষ্ট করে থাকে। বিদেশে অবস্থানরত ক্রেতা জীবন বাঁচাতে ৪৫-৫০ লাখ টাকায় কিডনি কেনেন। এই টাকার মাত্র চার-পাঁচ লাখ টাকা পায় গরিব প্রতারিত ডোনার। ৫-১০ লাখ টাকার ভাগবাটোয়ারা হয় দেশের অভ্যন্তরে সক্রিয় দালাল, অসাধু ট্রাভেল এজেন্ট এবং অন্য প্রতারকদের মধ্যে। বাকি প্রায় ৩০ লাখ টাকা ভোগ করে বিদেশে অবস্থানরত কিডনি পাচার সিন্ডিকেট। প্রথম গ্রুপ বিদেশে অবস্থান করে বিত্তশালী রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। দ্বিতীয় দলের মূলহোতা ঢাকায় বসে বিদেশে ডোনার পাঠানোর বিষয় তদারকি করে। তৃতীয় দলের সদস্য প্রথম দলের চাহিদা মোতাবেক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরিব ও অভাবী মানুষদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে প্রলুব্ধ করে ঢাকায় নিয়ে আসে। পরে দ্বিতীয় গ্রুপ ঢাকার বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন প্রত্যাশী রোগীর সঙ্গে ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য পরীক্ষা করে। পরে উপযুক্ততা নিশ্চিত হলে চতুর্থ গ্রুপের হোতার মাধ্যমে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করে। এভাবে কিডনি পাচার হচ্ছে প্রায় নিয়মিতই।
একটি কিডনি বিক্রি করলেই ৫০ লাখ টাকা পাওয়া যায়। যে কারণে অসম্ভব শক্তিশালী এই চক্রের সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তি। আইনের কঠিন প্রয়োগ হলে পাচারকারীরা দিন দিন সাহস বাড়িয়ে আরও শক্তিশালী হতে পারত না। কোনো একক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কিডনি পাচার বন্ধ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
স্বল্প আয়ের মানুষজন বিশেষ করে ছিন্নমূল এবং শরণার্থীরা, অভাবের তাড়নায় কিডনি বিক্রি করতে আগ্রহী হতে পারেন। কিডনি প্রতিস্থাপনের বিকল্প দিকগুলোর দিকে আরও মনোযোগ দেওয়া উচিত। একইসঙ্গে পাচারকারীদের বিরুদ্ধেও নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হবে এটাই প্রত্যাশা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির পাল্টাপাল্টি আলটিমেটামের কারণে চলমান রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে নতুন করে উত্তাপ তৈরি হয়েছে। দুই দলের এ পাল্টাপাল্টি আলটিমেটামের মূল টার্গেট ঢাকা দখলে নেওয়া। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন অসুস্থ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসা নিতে বিদেশ পাঠাতে রবিবার বিএনপি ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে। পাল্টা জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও একই পথে হেঁটেছে। বিএনপিকে ‘আগুন সন্ত্রাস, অপরাজনীতি ও নাশকতার রাজনীতি’ ছাড়ার জন্য সোমবার ৩৬ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এরপর পাল্টা ৩৬ ঘণ্টার হুঁশিয়ারি এসেছে বিএনপির কাছ থেকে।
তার আগে গত শনিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে আবেদন করলে অনুমতির বিষয়টি দেখা যাবে। তবে তার কাছে এরকম কোনো কাগজপত্র আসেনি। ওইদিনই খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার বলেছেন, সরকারের মনোভাব ইতিবাচক হলে তারা আবারও আবেদন করবেন।
পরদিন রবিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আলটিমেটাম দেন। ওইদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত জটিলতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আদালতের অনুমোদন প্রয়োজন। তবে বিএনপি বলছে, সরকার চাইলে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে পারে।
দুই দলের রাজনীতি ও ঘোষিত আলটিমেটাম মাঠের রাজনীতিতে কোনো পরিবর্তন আনবে কি না, সে সম্পর্কে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। বিএনপির আলটিমেটামের ফল কী হবে আর আওয়ামী লীগেরও দীর্ঘ ৩৬ দিনের আলটিমেটাম কেন এ নিয়ে সাধারণ মানুষের ভেতর বেশ কৌতূহল দেখা দিয়েছে।
দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত রাজধানী ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এমন পাল্টাপাল্টি আলটিমেটাম। ঢাকায় বিএনপির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার কৌশলের অংশ হিসেবেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ইস্যুতে দলটি আলটিমেটাম দিয়েছে। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতেই তার পাল্টা জবাব দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
দুই দলের ওই নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির রাজনীতির মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছে ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা। ঢাকার রাজনীতি আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ থেকে বের করে আনতে না পারলে রাজনীতিতে জুতসই অবস্থান সৃষ্টি করতে পারবে না বিএনপি।
সারা দেশের নিয়ন্ত্রণে রাখা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেয়ে ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে রাজনৈতিক জয়-পরাজয় নির্ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিএনপির ওই শীর্ষসারির নেতারা। তাই বিএনপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসাকে ইস্যু করে নেতাকর্মীদের ঢাকায় ডেকে পাঠানোর কৌশল গ্রহণ করেছে। পর্যাপ্ত নেতাকর্মী ঢাকায় ঢুকে গেলে অবস্থা বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তাই ইস্যু খালেদার চিকিৎসা, কিন্তু লক্ষ্য ঢাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ৩৬ দিনের আলটিমেটামের পেছনে রয়েছে নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার আগপর্যন্ত ঢাকায় নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখা। সেই সঙ্গে নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে নির্দেশনা দিয়ে রাখা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে ততই ষড়যন্ত্রের নীল নকশা আঁকছে।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের শান্তি যেন বিঘিœত না হয়, সেজন্যই আমরা বিএনপির কর্মসূচির দিন মাঠে থাকি। বিএনপিকে জনগণ বিশ্বাস করে না। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে সত্যিই নিতে চাইলে আলটিমেটাম কেন দেবে বিএনপি? আইনি জটিলতা নিরসন করে বিদেশ নেওয়ার চেষ্টা করবে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘বিএনপি সন্ত্রাস-সহিংসতানির্ভর রাজনীতি করে, বিশ্বাস করে। তারা পাকিস্তানের প্রেতাত্মা।’ তিনি বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করাতে চাইলে কেন বিএনপি আইনি প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে না? তার কিছু হলে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দায় নিতে হবে।’
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দুই দলের ঘোষিত আলটিমেটামকে কথার বাকযুদ্ধ হিসেবে নিয়েছেন। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এগুলো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের অবস্থান ধরে নেওয়া যায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে তাদের কোনো গা নেই। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিভিন্ন বক্তব্যে সেটাই স্পষ্ট করেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে হলে আইনগতভাবে যেতে হবে। নির্বাহী কোনো সিদ্ধান্তে এ সুযোগ দেওয়া হবে না। ফলে আলটিমেটাম মূলত নিষ্ফল হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দাবি আদায় করার জন্য জনগণ থেকে দাবি উঠতে হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণকে রাস্তায় নামাতে পারবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘এখন যেসব বক্তব্য এগুলো মঞ্চের বাকযুদ্ধ।’
বিএনপির আলটিমেটাম নিয়ে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারব না। আমি (গতকাল মঙ্গলবার) সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা শেষ করে এসেছি।’ আলটিমেটামের পেছনে ঢাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় তো আমরা সভা-সমাবেশ করছিই।’
জানতে চাইলে বিএনপির আরেক নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আলটিমেটাম সম্পর্কে ক্লিয়ার কিছু জানি না।’
বিএনপিকে ‘অপরাজনীতি’ ছাড়তে ৩৬ দিন সময় বেঁধে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ সময়ের মধ্যে ‘সঠিক পথে’ না এলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির ‘অপরাজনীতির কালো হাত’ গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে আলটিমেটাম দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এটি বিএনপির জন্য শেষ বার্তা।’ গত সোমবার রাজধানীর উত্তরায় এবং যাত্রাবাড়ীতে পৃথক সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। উত্তরার সমাবেশে ওবায়দুল কাদের এ আলটিমেটাম দেন।
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপি দুই সপ্তাহের কর্মসূচি নিয়ে এখন রাজপথে আছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগও ২১ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ঢাকায় গত সোমবার দুটি সমাবেশ হয়।
এর আগে থেকেই ঢাকায় বিএনপির কর্মসূচির দিন শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীনরা বিএনপির সভা-সমাবেশের বিষয়ে নমনীয়তা প্রদর্শন করলেও মাঠের নিয়ন্ত্রণ ছাড়েনি।
ভারতের বিপক্ষেই খেলেছিলেন বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। এবার বিশ্বকাপটাই ভারতে, যে ধর্মশালা দিয়ে শুরু হবে বিশ্বকাপ অভিযান, সেখানেই আছে বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির কৃতিত্ব। হিমালয়ের কোলে, ছবির মতো সুন্দর সেই মাঠে আবারও খেলবে বাংলাদেশ, কিন্তু খেলবেন না তামিম ইকবাল।
অনেক নাটকীয়তার পর অবশেষে বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বরাবরের মতো সংবাদ সম্মেলনে নিরাবেগ কণ্ঠে একের পর এক নাম পড়ে শোনাননি প্রধান নির্বাচক, গভীর রাতে কোনো ইমেইলেও আসেনি খেলোয়াড় তালিকা। বিশ্বকাপগামী ১৫ ক্রিকেটারের প্রত্যেকের হাতে হাতে সুন্দর করে বাক্সবন্দি বিশ্বকাপ জার্সি তুলে দেওয়ার ভিডিও নিজেদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে ২০২৩ বিশ্বকাপের জন্য নির্বাচিতদের পরিচিত করেছে বিসিবি। এজন্য বিসিবির সংশ্লিষ্টরা বাহবা পেতেই পারেন, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড যেমনটা হৃদয় জিতে নিয়েছে ক্রিকেটারদের পরিবারের আপনজনদের দিয়ে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করিয়ে।
কারা থাকছেন আর কারা থাকছেন না, তা নিয়ে খুব বড় কোনো চমক ছিল না বিশ্বকাপ দলে। সবাই শুধু একটাই কোটি টাকার প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলেন। তামিম ইকবাল শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ দলে আছেন নাকি নেই। অবসর, প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে প্রত্যাবর্তন, ব্যক্তিগত কাজে দুবাই ভ্রমণ, ইংল্যান্ডে ইনজেকশন, দেশে অনুশীলন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এক ইনিংসে ব্যাট করে ৪৪ রান এবং পরে নিজেকে আবারও পুরোপুরি ফিট নয় বলে পরের ম্যাচে বিশ্রাম। স্বভাবতই এই তামিম ইকবালকে বিশ্বকাপে দেখতে চাইবেন না কোনো কোচ এবং অধিনায়ক। সোমবার গভীর রাতে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বাসায় সাকিবের ছুটে যাওয়া এবং সিডনি থেকে নেমে তড়িঘড়ি করে বোর্ড সভাপতির বাসায় কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের পা রাখাই প্রমাণ করে, বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করতেই তাদের এ তৎপরতা।
তামিমের মতো ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটা সহজ নয়। নিঃসন্দেহে দেশের সফলতম ব্যাটসম্যান, ওয়ানডেতে ১৪টা সেঞ্চুরি। হুট করে অবসর নিলে যাকে ফিরিয়ে আনেন স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রী। সাক্ষাৎকারেও তামিম বলেছেন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগের কথাও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেশাদারির কাছে হার মেনেছে আবেগ, যুক্তির কাছে হেরে গেছে অতীত। তামিম নামটা আছে বিশ্বকাপ দলে, তবে পদবিটা ইকবাল নয়। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তানজিদ হাসান তামিমকে নিয়েই বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন সাকিব আল হাসান, যার বয়স আর তামিম ইকবালের ক্যারিয়ারের বয়স প্রায় কাছাকাছি।
২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিবের পারফরম্যান্স ছিল অতিমানবীয়। ৬০৬ রান আর ১১ উইকেট। তবু দল হলো অষ্টম। গোটা আসর চোটজর্জর অধিনায়ককে বইল দল। প্রতিটি সকাল শুরু হতো এক অনিশ্চয়তা নিয়ে, খেলতে পারবেন তো মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা? শুরুর দিকে নতুন বলে কোনো উইকেট ফেলতে পারেনি বাংলাদেশ, প্রতিপক্ষ গড়েছে রানের পাহাড়। সেই অভিজ্ঞতা কী করে ভুলবেন সাকিব। অস্ট্রেলিয়ান জেমি সিডন্স আর অধিনায়ক সাকিব এজন্যই ২০১১ সালের বিশ্বকাপে দলে রাখেননি চোটগ্রস্ত মাশরাফীকে। হাথুরুসিংহে জাতীয়তায় শ্রীলঙ্কান হলেও অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে থাকতে হয়ে গেছেন তাদের মতোই পেশাদার। তাই তো কঠিন সিদ্ধান্তটা নেওয়ার সাহস দেখিয়েছেন।
কাল বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডের পর সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন জাতীয় নির্বাচকরা। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন এবং দুই নির্বাচক হাবিবুল বাশার ও আবদুর রাজ্জাক। তামিমকে বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে মিনহাজুল শুনিয়েছেন মুখস্থ কথাই, ‘আপনারা তো এবারের বিশ্বকাপের দলটা এরই মধ্যে পেয়ে গেছেন। তামিম ইকবালের তো অনেক দিন ধরেই ইনজুরি নিয়ে চিন্তা আছে। নিউজিল্যান্ড সিরিজের পর... সবকিছু বিবেচনা করেই, সবাই আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া। বিশ্বকাপে অনেক দিনের ব্যাপার। অনেক ম্যাচ আছে।’
তামিমের চোটটা তো নতুন নয়। অনেক দিন ধরেই এ চোট নিয়ে তিনি ভুগছেন, নিজের ইচ্ছামতো ভারতের বিপক্ষে সিরিজ, আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ এসব থেকে নিজেকে সরিয়েও রেখেছিলেন। চিকিৎসাও করিয়ে আনা হয়েছে। সবকিছু জেনেশুনে কেন তাকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে সুযোগ দেওয়া এবং ম্যাচ খেলিয়ে বাদ দেওয়া এ প্রসঙ্গে মিনহাজুলের উত্তর, ‘দেখুন, কিছু কিছু ইনজুরি আছে আপনি ঝুঁকি নিতে পারেন না। টিম ম্যানেজমেন্ট কিন্তু বেকায়দায় পড়বে। আপনি দেখুন, নিউজিল্যান্ড সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলার পর দ্বিতীয় ম্যাচে... প্রথম ম্যাচ খেলেছে, দ্বিতীয় ম্যাচটা খেলেছে... এরপর কিন্তু শেষ ম্যাচে বিশ্রাম দিতে হয়েছে।’
‘তামিম অন্যতম সেরা। কিন্তু চোটের দুশ্চিন্তা থাকলে নিজেকে মেলে ধরা কঠিন। মেডিকেলের সঙ্গে আলোচনা করেছি, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি। এটা আগেই বলেছি, এখন দল ঘোষণা করা হয়েছে’বলছিলেন প্রধান নির্বাচক। বিসিবি সভাপতি বা সাকিব ও কোচের সঙ্গে আলাপ হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কী আলাপ হয়েছে সেটা তো এখানে প্রকাশ করব না।’
১০ দলের বিশ্বকাপে দশম দল হিসেবে বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। কেন এত দেরি, ফ্লাইটে ওঠার ২৪ ঘণ্টারও কম সময় আগে বিশ্বকাপের দল দেওয়া হলো কেন এ নিয়ে হাবিবুল বাশারের ব্যাখ্যা, ‘আমাদের সঙ্গে কী হয়েছে সেটা তো আমাদের সঙ্গের ব্যাপার। দল নির্বাচন করতে যখন বসি... খেলোয়াড় হিসেবে তামিমের... আমরা সুস্থ-সবল তামিমকে পেতে... এটা নিয়ে আমাদের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত ভাবতে হয়েছে। তাই দেরি হয়েছে।’
তামিমের বাদ পড়ার ডামাডোলে হারিয়ে গেছে মাহমুদউল্লাহর ফেরাটাও। সেই ইংল্যান্ড সিরিজের পর বিশ্রামের মোড়কে বাদ পড়েছিলেন। তার বদলে অনেক বিকল্প খুঁজেও শেষ পর্যন্ত ঘুরেফিরে আবার তার কাছেই ফিরলেন নির্বাচকরা। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ৪৯ আর ২১ রানের দুটো ইনিংসেই হয়ে গেছে বিশ্বকাপের টিকিট। প্রধান নির্বাচক বললেন, ‘আগেই বলেছি, বিশ্বকাপের আগে যেকোনো খেলোয়াড়কে যেকোনো সিরিজে দেখব। ও পরিকল্পনাতেই ছিল। নিউজিল্যান্ড সিরিজে দেখেছি।’
২০১৫ সালের বিশ্বকাপের আগে, মাত্র দুই ম্যাচ দেখে সৌম্য সরকারকে দলে নিয়েছিলেন হাথুরুসিংহে। তানজিদ তামিম আর তানজিম সাকিব নিজেদের ভাগ্যবান ভাবতে পারেন। যথাক্রমে মাত্র পাঁচ আর দুই ম্যাচ খেলে তারা বিশ্বকাপ যাত্রার সঙ্গী হয়েছেন। এমন নয় যে, এ স্বল্প সময়ে দারুণ কিছু করে দেখিয়েছেন, প্রধান কারণ বিকল্পের অভাব।
শুধু তামিম ইকবালই নয়, দলের লজিস্টিক ম্যানেজারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তার বড় ভাই ও সাবেক খেলোয়াড় নাফিস ইকবালকেও। তামিমের অবসর-কা-ে তিনি বিসিবি সভাপতির মেসেজের জবাব দেননি, যা পাপন নিজে বলেছেন গণমাধ্যমে। হয়তো তারই প্রতিশোধ, সেই সঙ্গে ড্রেসিংরুমের সঙ্গে তামিমের সব সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া।
অবসর ভেঙে ফিরেছিলেন তামিম, দুটি ম্যাচ খেললেন। কিন্তু যেভাবে বাদ পড়লেন, তাতে মনে হতে পারে অবসরের সিদ্ধান্তটাই ছিল সঠিক। বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগামীতেও তামিমের দলে ফেরাটা বোধহয় অনিশ্চিতই হয়ে গেল।
তামিম প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে দলটা কেমন হয়েছে দেখা যাক। পাঁচ পেসার, দুই অফ স্পিনার, দুই বাঁহাতি স্পিনার মিলিয়ে বোলিং আক্রমণটা নেহায়েত খারাপ নয়। লিটন দাসের সঙ্গে তানজিদ তামিম অথবা মেকশিফট ওপেনার মিরাজ। সহঅধিনায়কের পদ থেকে বাদ পড়েছেন লিটন, সেটা করা হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তকে। সাকিব, মুশফিক, তাওহীদ হৃদয়দের নিয়ে মিডল অর্ডারের পর ফিনিশার রোলে মাহমুদউল্লাহ। এ নিয়েই ধর্মশালায় আফগানদের বিপক্ষে লড়াইয়ের শুরু। প্রত্যাশা অনেক বড়, প্রস্তুতি গোলমেলে। ভরসা একটাই, শুরুর আগে পরিস্থিতি এমন গোলমেলে হলেই কেন যেন ভালো করে বাংলাদেশ!
বিশ্বকাপ দল : সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন (সহঅধিনায়ক), তাওহীদ হৃদয়, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, শরীফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ, মেহেদি হাসান, তানজিদ হাসান, তানজিম হাসান ও মাহমুদউল্লাহ।
তামিম ইকবাল দলে না থাকাতে যেন অনেকেরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে! আবার বিশ্বকাপের দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অন্তর্ভুক্তিতেও অনেকের চোখ কপালে! দল ঘোষণার পর যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকরা এলেন সংবাদ সম্মেলনে, তখন আলোচনায় শুধু ছিলেন এই দুজনেই। তাদের এই বিরহ বেদনায় চাপা পড়ে যায় অনেক প্রশ্ন। লিটন দাসকে বাদ দিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত কেন সহ-অধিনায়ক! বাড়তি কোনো ওপেনার ছাড়া কিংবা পাঁচ পেসারকে নিয়ে কেন দল গড়া?
প্রায় মিনিট পনেরোর সংবাদ সম্মেলনে ঘুরে ফিরে এসেছে একই প্রশ্ন। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও ঘুরেফিরে বন্দী ছিলেন একই কথার বৃত্তে। প্রশ্নোত্তর শেষে বেরিয়ে যান তিন নির্বাচক। যেতে যেতে কথা হয় তাদেরই একজন হাবিবুল বাশারের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল চাপা পড়া সেইসব প্রশ্নের উত্তর।
শুরুতেই জানতে চাওয়া হয় লিটনকে বাদ দিয়ে শান্তকে কেন সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ একটা কারণ। আর লিটনের অনাগ্রহও তাকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর একটি কারণ। লিটন নিজেও চায় না নেতৃত্বের চাপ নিতে। সে একটু ব্যাটিংয়ে বেশি মনোযোগ দিতে চায়।’
বিশ্বকাপ দলে বিকল্প ওপেনার না থাকার কারণও জানা গেল এই নির্বাচকের কথায়। তিনি জানালেন, ‘আমরা ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে মিরাজকে ভাবছি।’
বিকল্প ওপেনার হিসেবে বিশেষজ্ঞ কাউকে না নেওয়ায় একজন বাড়তি বোলার দলে রাখার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে শেখ মেহেদি হাসান সুযোগ পেয়েছেন সে কারণে। পাশাপাশি জায়গা হয়েছে পাঁচ পেসারেরও। এর পেছনে বাশার ভারতের কন্ডিশনের কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভারতে এখন আর্লি সিজন। উইকেট সতেজ থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই পাঁচজন পেসার দরকার হবে।’
যেতে যেতে আরও বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক মুখোমুখি হলেন, এই দলটা বিশ্বকাপে কেমন করবে? এই প্রশ্নটা শুনেই ঘুরে দাঁড়ালেন হাবিবুল। উত্তরে মজা করে বললেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হবে এই দল।’ এরপর একটু গাম্ভীর্য ফিরিয়ে এনে যোগ করলেন, ‘আমি এদের অনেক দিন ধরে দেখছি। ওরা কয়টা ম্যাচ জিতবে জানি না। তবে বিশ্বকাপে প্রতিটি দলকে ভোগাবে, এটা জানি।’
জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগলের ২৫তম জন্মদিন আজ। ১৯৯৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর স্ট্যানফোর্ডের দুই পিএইচডির ছাত্রের হাত ধরে যাত্রা শুরু। ভাড়া করা গ্যারেজে জন্ম নেওয়া সেই গুগল আজ বিশ্বের বৃহত্তম সার্চ ইঞ্জিন; পরিণত হয়েছে ট্রিলিয়ন ডলারের কোম্পানিতে। কীভাবে দরজা আটকাবেন বা কীভাবে কাটবেন আনারস— গুগলে উত্তর পাবেন না এমন প্রশ্ন খুঁজে মেলা ভার। তাইতো মানুষের কাছে এত জনপ্রিয় ও প্রয়োজনীয় একটি হাতিয়ার হয়ে উঠেছে গুগল।
আজ ২৭ সেপ্টেম্বর গুগল ২৫তম জন্মবার্ষিকী পালন করছে। বিশেষ ডুডল তৈরি করে বর্ণাঢ্য আকারে উদ্যাপন করেছে দিবসটি। এবারের ডুডলটি তৈরি করা হয়েছে এর বিবর্তনের থিম ধরে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গুগলের লোগোর পরিবর্তন উঠে এসেছে ডুডলে।
কম্পিউটার বিজ্ঞানের দুই শিক্ষার্থী ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিনের প্রকল্প হিসেবে শুরু করেছিল এ সার্চ ইঞ্জিন। নিজেরদের ছাত্রাবাসে বসেই কাজ শুরু করেন দুজন। বড় আকারের সার্চ ইঞ্জিনের প্রোটোটাইপ তৈরি করার পর একটি ভাড়া করা গ্যারেজে অফিস স্থাপন করেন তারা। এখন সারা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন ও ইন্টারনেটের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে গুগল।
চলুন গুগল নিয়ে একটা মজার তথ্য জানাই আপনাদের। আমাদের সবার পরিচিত নাম গুগল নামটি কিন্তু ইচ্ছা করে দেননি ল্যারি ও ব্রিন। গুগল নামটি আসলে এসেছে গাণিতিক হিসাবের গোগল (googol) ভুল করে লেখার মাধ্যমে, যার মানে হলো ১ এর পর ১০০টি শূন্য। এ নিয়ে এখন গল্প প্রচলিত আছে যে, একজন প্রকৌশলী বা ছাত্র আসল নামের বদলে এই ভুল বানানটি লিখেছিলেন। সেই ভুল নামই পুরো দুনিয়ার সামনে চলে আসে। কেন এই নাম বেছে নিয়েছিলেন ল্যারি আর সের্গেই? তাদের ওয়েবসাইট যে বিপুল পরিমাণ উপাত্ত ঘাঁটাঘাঁটি, অনুসন্ধান করবে, সেটা এই নাম দিয়ে বোঝাতে চেয়েছিলেন তারা। সেই ভুল নামই গুগল!
স্থায়ীভাবে ঢাকা বসবাসের আমার ষাট বছর পূর্ণ হলো। এই ষাট বছরে প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকা, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ঢাকার উত্থান-পতন, বন্যা, দুর্ভিক্ষ, আন্দোলন-অভ্যুত্থানসহ অনেক কিছু দেখার সুযোগ পেয়েছি। যখন ঢাকায় প্রথম এসেছিলাম তখন মনে হতো ঢাকা একটি বড় গ্রাম। এখানে গ্রামের মতোই বৃষ্টি হয়, অমাবস্যা পূর্ণিমা হয়, শীত-গ্রীষ্ম হয়। ভারী থেকে লঘু বর্ষণ হয়। ঢাকার চারদিক বর্ষার পানিতে প্লাবিত হয়। সদরঘাট, চকবাজার, সোয়ারীঘাট, ইসলামপুর এসব ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের এলাকা। গুলিস্তানকে ঘিরে বিপণি কেন্দ্রগুলো বিকশিত হতে শুরু করে। মতিঝিল গড়ে উঠছে। ঢাকার উন্নয়নের জন্য ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট সংক্ষেপে (ডিআইটি)’র কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তখনো ধোলাইখাল অতিক্রম করে কোর্টকাচারি, জগন্নাথ কলেজ, সদরঘাটের দিকে যেতে হতো। ঢাকা শহরের আবর্জনা নিষ্কাশনের জন্য আর্মেনিয়ানদের উদ্যোগে ধোলাইখাল চালু হয়েছিল।
ঢাকা শহরের ১৬১০ সালের আগে ও পরের মানচিত্র দেখলে বোঝা যায় যে শহরটা কী রকম খাল-বিল-নালা দিয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। যে কারণে শহরটি কখনোই ডুবে যাওয়ার কোনো ইতিহাস পাওয়া যায় না। সেই সময়ে একমাত্র যাতায়াতের উপায় ছিল নৌকা। এর মধ্যেই ১৬১০ সালে ইসলাম খাঁ রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তর করেন। বহুকষ্টে ঘোড়া, হাতি এবং পদাতিক বাহিনীকে রাজমহল থেকে বাংলায় আসতে হয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনক পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধীনে ঢাকার পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। স্থানিক বিবেচনাকে অগ্রাহ্য করে যখন বিদেশিরা নানা ধরনের শহর উন্নয়নের উদ্যোগ নেয় তার পরিণতি যে কত ভয়াবহ হয় তার প্রমাণ ঢাকা শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। ধোলাইখাল বন্ধ করে সেখানে মাটির নিচে বড় বড় পাইপ বসিয়ে নারিন্দাতে একটি পাম্প মেশিন বসিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়।
বিদেশিদের পরামর্শে এই ব্যবস্থার ফলে ঢাকায় গুরুতরভাবে পানি নিষ্কাশনের সংকট দেখা দেয়। একই পদ্ধতিতে বিভিন্ন জায়গায় পাইপ বসানো হয় এবং পানি নিষ্কাশনের গুরুতর সংকট দেখা দেয়। এরপর ঢাকা রাজধানী হলো, বিপুল পরিমাণ মানুষের আগমন ঘটল এই শহরে। বিভিন্ন জলাভূমি, ফাঁকা জায়গা যে যেখানে পারে বাড়িঘর তৈরি করতে শুরু করল। সরকারও প্রথমে ডিআইটি এবং পরে রাজউকের মাধ্যমে নানা জায়গায় আবাসনের ব্যবস্থা করতে শুরু করল। সেই ব্যবস্থা শুরু করতে গিয়ে ধানম-ি, গুলশান, বনানী, উত্তরা এসব জায়গায়ও জলাভূমিগুলো ভরাট করে শহরের আবাসিক এলাকা বৃদ্ধির কার্যক্রম শুরু করা হয়। এখন বৃষ্টিপাত মানেই সর্বত্রই জলাবদ্ধতা এবং মানুষের অন্তহীন দুর্ভোগ।
আশির দশকের পর থেকে গত চল্লিশ বছরে শহরটি কংক্রিটের জঞ্জালে পরিণত হয়েছে। সেই ষাটের দশকের গাছপালাগুলো নেই, ফাঁকা জায়গা নেই, বৈচিত্র্যহীন অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে শহরটি কিছু ম্যাচ বাক্সের মতো এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা একটা আবর্জনার স্তূপ মনে হয়। শহরটায় এত পরিমাণ গাড়ি, বিশেষ করে প্রাইভেট গাড়ি একেবারেই পরিকল্পনাহীন নগরীতে চেপে বসেছে। মাত্র গত দশ পনের বছরে কিছু ফ্লাইওভার এবং সম্প্রতি মেট্রোরেলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বটে কিন্তু সেগুলোর অধিকাংশ পরিকল্পনাহীন হওয়ায় যানজট কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এর মধ্যে সেবা সংস্থাসমূহ একজন আরেকজনের প্রতি দোষ চাপিয়ে আপাতত নিজেদের গা বাঁচিয়ে চলছে।
আমার এই ষাট বছরের ঢাকা বসবাসের ইতিহাসে গত তিনদিন আগে যখন আমি মগবাজার থেকে ধানম-ির বাসায় এসেছি তখন সময় লেগেছে চার ঘণ্টা! এই চার ঘণ্টার মধ্যে সাড়ে তিন ঘণ্টাই ছিলাম আমি পানির মধ্যে। কিন্তু চলাচলের কোনো উপায় ছিল না। এক জায়গাতেই এক থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকেছি। সামনে পেছনে গাড়ির চাপ, কোনো কোনো গাড়ি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। তার সামনে বা পেছনে যাওয়ারও কোনো উপায় ছিল না। শহরে কোনো ট্রাফিক পুলিশ দেখা যায়নি। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোনো ধরনের সরকারি উদ্যোগ দেখা যায়নি। খবরে প্রায়ই দেখে থাকি কোনো দেশে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের বাহিনীগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে মানুষের সাহায্যে সরকারের প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসে। যা ভেবেছিলাম তাই, এই দুর্যোগের মধ্যে কিছু প্রাণ যাবে, কিছু লোক আহত হবে এবং সত্যিই দেখলাম যে ওই রাতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের তিনজনসহ চারজন মারা গেছে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত এক শিশুকে নিয়ে উদ্ধারকারীরা বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসার জন্য গিয়েছে কিন্তু চিকিৎসা পায়নি। এটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয় না এই কারণে যে, একবার আমার ছেলে স্কুল থেকে ফেরার সময়ে বেবিট্যাক্সিতে দুর্ঘটনায় পড়ে তার শরীর রক্তাক্ত হয়। সেই সময়ে তার কাছে পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না, চিকিৎসার জন্য কাছের একটি চিকিৎসাকেন্দ্রে গেলে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। রক্তাক্ত অবস্থাতেই সে ঘরে ফিরে আসে।
আমার কাছে প্রশ্নটি অন্য জায়গায়, আমরা নিয়তিতে বিশ্বাস করতে শুরু করেছি। দ্রব্যমূল্য বাড়বে, বেকারত্বের সৃষ্টি হবে, মানুষ চিকিৎসা পাবে না এটাই যেন স্বাভাবিক। আর এর বিনিময়ে কোটি কোটি ডিমের দাম পাঁচ টাকা করে বাড়িয়ে একদিনে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কোটিপতি হয়ে যায়। রাষ্ট্রীয় অমাত্যরা এর সমাধানে বিনিদ্র রজনী পার করবেন না, আমলারা নিজের সন্তানদের পৃথিবীর নিরাপদ কোনো জায়গায় পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত থাকবেন। সাংসদ-ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে ব্যবহার করে আরও কোটি কোটি টাকার মালিক হবে। আমরা কি এমনটি দেখতে পাব কোনোদিন দেশ যারা চালায় তাদের ঘুম নেই, সারা রাত পথে পথে ঘুরছেন কোথায় কী হলো সেসব দেখে পরদিনই মানুষকে জানানো যে এই ব্যবস্থা এইভাবে পরিবর্তন করা সম্ভব। সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ! রাজনীতিবিদরা শুধুই বোঝেন ক্ষমতা। মার্কিন ভিসা নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই, কিন্তু পাঁচজন মানুষ যে অতিবর্ষণের ফলে পানিতে তলিয়ে যাওয়া রাস্তায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে অকালে মারা গেল তাতে তাদের কপালে একটুও ভাঁজ পড়ে না।
ক’দিন পরে পরে রাস্তার পাশে বিরাট বিরাট কংক্রিটের পাইপ দেখা যায়। বহুদিন মানুষকে ভুগিয়ে একদিন সেই পাইপগুলো মাটির নিচে চাপা পড়ে। কিন্তু এই পাইপের কাজগুলো কী? তারা কি পানি নিষ্কাশনের কাজ করে? নাকি মাটির নিচে গিয়ে নানা রকম ময়লা-আবর্জনায় বন্ধ হয়ে নিচের দিকের পানিকে ওপরের দিকে ঠেলে দেয়? আমাদের এক নাট্যকর্মীর বা অভিনেতা বন্ধু উবারে করে তার কল্যাণপুরের বাসায় যাচ্ছিলেন। কল্যাণপুর যাওয়ার পর উবারের ড্রাইভার আর যেতে রাজি হলেন না। বুক সমান পানি ভেঙে সেই বন্ধু বাড়ি যাওয়ার পথে ম্যানহোলের মধ্যে পড়ে যান। তার একটি পা ক্ষতবিক্ষত হয় এবং মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে এখনো ট্রমায় ভুগছেন।
এটা সত্য, বাংলাদেশ বানভাসি ও ঝড়-ঝঞ্ঝার দেশ। মানুষ এসবের বিরুদ্ধে লড়াই করে বহু শতাব্দী ধরে বেঁচে আছেন। মানুষের কোনো অভিজ্ঞতা আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র কিছুতেই নেবে না। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গৃহে কিছু অনভিজ্ঞ লোক নকশাঁ বানাবে এবং বিপুল পরিমাণে অর্থ ব্যয়ে একটি প্রকল্প সাজাবে, তার মধ্য থেকে কোটি কোটি টাকা চলে যাবে ক্ষমতাসীনদের পকেটে। আজই পত্রিকায় দেখলাম প্রমাণসহ একজন লিখেছেন ভাঙ্গা থেকে খুলনার রেললাইন আপাতত এখন প্রয়োজন নেই। এতে বিশাল অর্থের অপচয় হবে। কিন্তু দেখা যাবে প্রকল্পটি হলো ঠিকই, কিন্তু এটা কারও কাজে লাগছে না। এমনি অনেক অকেজো প্রকল্প হরহামেশাই হয়। আমাদের সংস্কৃতিতে ষাটের দশক পর্যন্ত দেশপ্রেমের বিষয়টি বড়ই প্রবল ছিল। হয়তো সেটা পরাধীনতার কারণে। সবাই যার যার মতো দেশের জন্য কাজ করতে ছুটত। সত্তরের দশকের পর যে চায়নি তা নয়। কিন্তু সম্পূর্ণ বিষয়টি চলে গেছে শাসকের হাতে। জনগণের মেধাকে কখনোই গ্রহণ করার চেষ্টা করা হয়নি। গত ষাট বছরে এবং আমার এই বয়সে আমাদের কাজে লাগানোর রাষ্ট্রীয় কোনো ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়নি। সব কিছু সরকারি বেতনভুক্ত লোকদের কাছে এবং রাজনীতিবিদদের হাতে। তারা যাই করবেন তাই হবে। তবে সবচেয়ে বেদনার বিষয় এই পরিস্থিতির কোনো উন্নতিরও আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। একমাত্র গণজাগরণ এবং সাংস্কৃতিক বিপ্লবই সমাজকে আবার কর্মময় করে তুলতে পারে। অন্যথায় খবরের কাগজের প্রথম পৃষ্ঠায় নির্বাচন আর ভিসার খবরই আমরা দেখতে পাব। ওই পাঁচজন হতভাগ্য মানুষ যে রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলার শিকার তার সত্যতা কখনোই ভুলবার নয়। এসব ভেবেই হয়তো আলেকজান্ডার পাঞ্জাব থেকে ফিরে গিয়েছিলেন এবং সেনাপতিকে বলেছিলেন ‘সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ’।
লেখক: অভিনেতা, নাট্যকার ও কলামিস্ট
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।