
বলার অপেক্ষা রাখে না ‘সর্বজনীন পেনশন’ চালু হওয়ার পর, দেশের মানুষ কিছুটা হলেও আর্থিক নিরাপত্তা পাবে। বাংলাদেশে এই পদ্ধতি একেবারেই নতুন। স্বাভাবিকভাবেই মানুষকে এ বিষয়ে বিশ^স্ততা এবং নির্ভরতার জায়গায় নিয়ে যেতে যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হবে। পেনশনব্যবস্থা সম্পর্কে, পরিষ্কার ধারণা দেওয়ার দায়িত্বে নিশ্চয়ই নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে। আগামী মাসে এই ব্যবস্থা চালু হলে, মানুষের আগ্রহের বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা উচিত। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদ দৃষ্টিভঙ্গিতে সেখানে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন-২০২৩ নামে অনলাইনে যা দেখা যাচ্ছে, তা যদি চূড়ান্ত আইন হয়ে থাকে, তাহলে তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ রয়েছে। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন-২০২৩ এর ১৪ ধারার ১-এর ক-তে বলা হচ্ছে- জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি ধরিয়া সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার আওতায়, ১৮ বৎসর বা তদূর্ধ্ব বয়স হইতে ৫০ বৎসর বয়সী সকল বাংলাদেশি নাগরিক সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ করিতে পারিবে। তবে শর্ত থাকে যে, বিশেষ বিবেচনায় ৫০ বৎসর ঊর্ধ্ব নাগরিকগণও সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ করিতে পারিবেন এবং সেইক্ষেত্রে স্কিমে অংশগ্রহণের তারিখ হইতে নিরবচ্ছিন্ন ১০ বৎসর চাঁদা প্রদান শেষে তিনি যে বয়সে উপনীত হইবেন, সেই বয়স হইতে আজীবন পেনশন প্রাপ্য হইবেন।
খ উপধারায় বলা হচ্ছে- সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্তির পর একজন চাঁদাদাতা ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ (দশ) বৎসর চাঁদা প্রদান-সাপেক্ষে মাসিক পেনশন পাইবার যোগ্যতা অর্জন করিবেন এবং চাঁদাদাতার বয়স ৬০ (ষাট) বৎসর পূর্তিতে পেনশন তহবিলে পুঞ্জীভূত মুনাফাসহ জমার বিপরীতে পেনশন প্রদান করা হইবে। ঞ- ধারায় বলা হচ্ছে- পেনশনারগণ আজীবন অর্থাৎ মৃত্যু পূর্ব পর্যন্ত পেনশন সুবিধা ভোগ করিবেন। ট- ধারায় বলা হচ্ছে- পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ (পঁচাত্তর) বৎসর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে মৃত্যুবরণ করিলে পেনশনারের নমিনি অবশিষ্ট সময়কালের (মূল পেনশনারের বয়স ৭৫ বৎসর পর্যন্ত) জন্য মাসিক পেনশন প্রাপ্য হইবেন। এইখানেই হয়েছে সমস্যা। এছাড়া আরও কয়েকটি ধারার বিশ্লেষণ করার অবকাশ রয়েছে। তবে সামান্য পরিসরে এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। কিন্তু উল্লিখিত ধারাগুলো বিশ্লেষণ করলে ভিন্নধর্মী যুক্তির পথ উন্মুক্ত হতে পারে।
জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি করে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করার পর, বাংলাদেশি প্রকৃত নাগরিকের বাইরের কোনো মানুষও এ সুবিধা ভোগ করতে পারেন। কারণ, অনেক রোহিঙ্গাই জাল পরিচয়পত্র নিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। এর ফলে নকল পরিচয়পত্র তৈরির একটি হিড়িক পড়তে পারে। যদিও চূড়ান্তভাবে তা চিহ্নিত হবে, তবে তার আগেই বড় ধরনের জালিয়াতির সুযোগ থেকে যায়। এরপর বলা হচ্ছে- ৫০ বৎসর ঊর্ধ্ব নাগরিকগণও সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ করিতে পারিবেন এবং সেইক্ষেত্রে স্কিমে অংশগ্রহণের তারিখ হইতে নিরবচ্ছিন্ন ১০ বৎসর চাঁদা প্রদান শেষে তিনি যে বয়সে উপনীত হইবেন, সেই বয়স হইতে আজীবন পেনশন প্রাপ্য হইবেন। ৫০ বছর বয়সী ঊর্ধ্ব নাগরিক আরও ১০ বৎসর চাঁদা দেওয়ার পর তার বয়স হবে, কমপক্ষে ৬০...বৎসর। মানুষটি বাঁচবে কত বৎসর? এরপর আবার আজীবন পেনশন সুবিধা! তাহলে এই পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ করে সেই ব্যক্তির কোন ধরনের আর্থিক লাভ হলো? এই বিষয়ে আরও গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজন রয়েছে। আবার ট- ধারায়ও একটু পরিমার্জন দরকার।
যে সমস্ত ধারা নিয়ে সমালোচনা হতে পারে, সেই ধারাগুলো আরও সহজ এবং জনগ্রাহ্য হলে- মানুষের অংশগ্রহণ বাড়বে। যেহেতু প্রাথমিক অবস্থায় একটানা ১০ বৎসর একজন চাঁদা প্রদান করবেন, সেই হিসাবে দেশের ১ কোটি মানুষ এই স্কিমের আওতায় আসলে- বড় ধরনের একটি অঙ্ক হবে। সরকারের ফান্ডে যেহেতু এই অর্থ গচ্ছিত থাকবে, এর ফলে সরকার এই টাকা দিয়ে কোনো উৎপাদন খাতেও ব্যয় করতে পারবে। নিঃসন্দেহে উদ্যোগটি প্রশংসাযোগ্য। তবে আরও সংযোজন, পরিবর্তন এবং পরিবর্ধনের প্রয়োজন রয়েছে। জনকল্যাণই হবে মূল কথা- প্রত্যাশা থাকল, সর্বজনীন করার উদ্দেশ্যে আইনের কিছু ধারা পরিবর্তন করা হবে।
গেল তিন সপ্তাহ ইউরোপ ভ্রমণে আছি। দেশে ডেঙ্গুর ডিগবাজি, বড় বড় দলের সমাবেশ এবং প্রকৃতির পিচ্চি ঘূর্ণিঝড়ের আনাগোনোর খবরাখবর পাচ্ছি। ডেনমার্কের রাজনৈতিক আকাশ না হলেও প্রাকৃতিক আকাশকে বাংলার থেকে ভিন্নতর মনে হলো না। সারা দিন সঞ্চরণশীল মেঘের আনাগোনা। মেঘদূতের মেঘেরা যেমন ক্ষণে ক্ষণে মত পাল্টিয়ে দূরদেশে চলাচল করে প্রেয়সীর বার্তা পৌঁছাতে চায়, এখানে মনোমুগ্ধকর মেঘমালার মধ্যে তার কোনো ব্যতিক্রম দেখিনে। ঘন মেঘ যখন সূর্যের আলো ঢাকে তখন ঠান্ডা বাতাস দেয় এবং বারি বর্ষণে উৎসাহ জোগায়। এ রকম কতবার যে তার কান্নাকাটি শুনেছি তার ইয়ত্তা নেই। এই কিছুক্ষণ আগে মেঘেদের আন্তঃকলহ শুনলুম। আমার দেশে বিরোধী দল আর সরকারি দল যেমন ঝগড়াঝাটিতে লিপ্ত, সেখানে মেঘ ডাকলে তারা বজ্রপাত ঘটানোর মতো সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে পড়ে, এখানে এমন মনে হলো না। হতে পারে এরাও ভিসা না পাওয়ার ভয়ে ভদ্র হতে চলেছে। বাইরে বাতাস বৃষ্টি ও মেঘের গর্জন তবে ১৫৪ ধারায় আটকানোর মতো কোনো মতলবে তারা নেই।
ডেনমার্কে এখন জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ, বাংলাদেশে আষাঢ় পেরিয়ে শ্রাবণ এসেছে। বাংলাদেশেও অবিরাম বর্ষা আর কুমারী নদীর বুক প্রণয়ের জোয়ারে কেঁপে ওঠার পালা, ডেঙ্গু আর সড়কে প্রাণপাতের খবরে তা তলিয়ে যাচ্ছে। বাংলার খাল-বিল-নদী এমনিতে নাব্যে সতিত্ব হারা। ফলে অল্প বিস্তর বৃষ্টিতে তারা ভরে ওঠে কানায় কানায়। বিপদসীমা পেরিয়ে আশপাশে বন্যার কারণ ঘটায়। আজ থেকে শতবর্ষের আগে রবীন্দ্রনাথ কেমনতর শ্রাবণের সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন? এ সময় তিনি যখন পদ্মায় বোটে তখন দেখতেন আকাশ কালো করে মেঘেরা বারি বর্ষণের আয়োজনে মেতেছে। পদ্মার পয়মন্ত ইলিশের ঝোলের তরকারি খেয়ে তার ঘুমে যাওয়ার পালা। তখন আমি এই ডেনমার্কে নতুন মেঘের বারতা পাচ্ছি। মোবাইল ফোনে ঘণ্টায় ঘণ্টায় পাল্টাচ্ছে বৃষ্টির পূর্বাভাস, বৃষ্টি আসে যায় এই রোদ এই ছায়া। শ্রাবণ মেঘের মেলায় রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরি খেলায় যেমন মেতেছিলেন শতবর্ষের আগের সেই কবি।
সত্যজিৎ রায় তার অশনি সংকেত ছবির টাইটেল সং-এ মেঘের গর্জন, ধানের খেতে উদ্বেলিত বাতাসের চিত্রকল্প এঁকে দেখাতে চেয়েছিলেন অশনি সংকেত, বাংলার কৃষি খাত, দুর্ভিক্ষের আকালের হাতছানি। এখনো তেমনি মনে করার কারণ যদিও মহা মন্দাভাব লেগে আছে অধিকাংশ অর্থনীতিতে, তারপরও আপাতত এই ইউরোপে দেখছি তাদের অসুবিধা হচ্ছে না। দেশে দেশে ভূ-রাজনীতিতে কোন্দল বাড়ছে। আধিপত্য বিস্তারের জন্য দেশে দেশে সভ্য-অসভ্যদের খুনসুটি খেলা চলছে।
ডেনমার্কের কোপেনহেগেনের যে এলাকায় আমি অছি সেখানে গেল কয়েকদিন কিছু সামুদ্রিক পাখি কখনো করুণ স্বরে কখনো চপল হরিণির মতো আচরণে, শব্দে আমার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে চলছে। বোঝা যায় আশপাশে কিংবা কাছে সমুদ্র আছে। সেখান থেকে দলছুট হয়ে তারা মরখোাঁ এলাকার এই আবাসিক এলাকায় বেড়াতে এসেছে। এমনও তো হতেই পারে তারা আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছে, সহমর্মিতা প্রকাশ করতে এসেছে। এসব পাখির সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েও হচ্ছে না। রবীন্দ্রনাথ টোকিও বে’র বাসায় জানালা দিয়ে যেমন দেখতেন পলাতকা একটি পাখিকে, তাকে নিয়ে লেখা তার কবিতা ‘পুরবী’ কাব্যগ্রন্থে ঠাঁই পেয়েছে।
এখানকার পাখিরা আমাকে যেন অনেকটা নিজের মনে করে দেখা করতে এসেছে। এমনো তো হতে পারে সুন্দরবনের বাবাহকু (বাঘ, বানর, হরিণ, কৃমির) পরিষদ থেকে তারা কোনো বিশেষ বার্তা পেয়েছে। আমি যে এখানে আছি এটা তারা মনে হয় জেনে গেছে, তারা তাবৎ বিশে^র পাখি সম্প্রদায়ের পক্ষে কোনো বিশেষ বার্তা বা আর্জি আমাকে জানাতে চায়। আজকাল ঘরের কথা পরকে না জানিয়ে, সবাইকে একসঙ্গে না নিয়ে নাকি কোনো খেলা জমে না।
কয়েক বছর আগে মার্কিন নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প তো বলেই দিলেন প্যারিসের ঘোষণা তারা মানবেন না। কিয়েটো কনভেনশনর? এসব আবার কী? আমি বা আমরা যা করব এবং বলব সেটাই সবাই শুনবে এই হচ্ছে তাদের বদ্ধমূল ধারণা। কিন্তু এখন কী দেখি? ট্রাম্প বাইডেন সাহেবদের দেশও তো প্রায়শ অকাল বন্যায়, অকাল বাতাস, খরা ও প্রাকৃতিক নানান অনাচারে ভুগছে। নিজের দেশের দিকে সে সব ব্যাপারে করণীয় কিছু ভাবার চাইতে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে কত বড় বড় বাণী বা স্যাংশন দিতে তারা কসুর করছে না। তারা কি মনে করেন যে প্রকৃতি তাদেরও ছেড়ে কথা বলবে?
প্রকৃতি তার বিচারে কোনো পক্ষপাতিত্ব করে না। সেখানে বশংবদ রাজা বা কিংবা কানা কোনো বিচারক নেই। তারা নিরপেক্ষ, প্রকৃতি কারও একক সিদ্ধান্তে ‘নির্বাচিত’ নয়, ‘নিয়োগপ্রাপ্ত’ও নয়। প্রকৃতিকে প্রতিশোধ নিতে উদ্দীপ্ত করার মতো অমার্জনীয় অপরাধ আর নেই।
এই ডেনমাকের্, নরওয়েতে দেখলুম ঘন সবুজ বনানী। এখানে কার্বন নিঃসরণের হার যথেষ্ট কম আর অক্সিজেন তো কানায় কানায় ভরা। এখানে উইন্ডমিল মাঠে ময়দানে, এমনকি সমুদ্রেও বিনা জীবাশ্ম ও ফসিলে বিদ্যুৎ উৎপাদন উদার, খালি মাঠে সোলার প্যানেলের সমারোহ। রিনিউইবল এনার্জি ব্যবহারে দক্ষ ও পারঙ্গম এসব দেশের কাছ থেকে বাংলাদেশের তালিম নেওয়ার সময় এখনো আছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে ডেনমার্ক থেকে উইন্ড মিল বিনিয়োগের খবর পাচ্ছি। শুনে ভালো লাগল। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে, নদী বেষ্টনীতে উইন্ড মিল কার্যকর করণের সুযোগ বেশ। আমাদের এখন উচিত প্রকৃতিকে ধ্বংস করে নয়, প্রকৃতির কাছ থেকেই জ্বালানি ও বিদ্যুৎ চাওয়ার পথে হাঁটা। আমাদের বিদ্যুতের প্রয়োজন তবে সেই প্রয়োজন মেটাতে নয় ছয় পদ্ধতিতে যাওয়াটা আদৌ সমীচীন নয়। কেননা তাতে সমস্যারা সমস্যা সৃষ্টিতে উৎসাহী হবে।
আমাদের তিন প্রধান খাত জ্বালানি, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। দেখতে হবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের আয় বাড়ানোর পথে তস্কররা যেন লাভের গুড় পিঁপড়ে দিয়ে খাওয়ানোর পথে আমাদের না নিয়ে যায়। বেপথে যাওয়ার কারণ সৃষ্টি করে আরও বেপথমুখী করার এন্তেজামের মতো আত্মঘাতী প্রবণতা আর থাকতে পারে না। আমাদের উন্নয়ন দরকার, কিন্তু সেই উন্নয়নের নাম করে আমাদের যেন প্রকৃতির সঙ্গে বৈরিতায় না জড়াতে হয়। আমাদের যা আছে তাই নিয়ে আমাদের চলতে হবে। আমাদের প্রকৃতির কাছে ফিরতে হবে। পরমুখাপেক্ষী উন্নয়ন অভিসারে প্রাকৃতিক বিপর্যয় আমাদের আরাধ্য হতে পারে না।
পাঁচটি সিগাল পাখির এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আমার কিছুক্ষণ আগে আলাপ হলো। তারা আমাকে জানাল আমরা আমাদের এখন এ এলাকার, সে এলাকার এভাবে দেখতে চাচ্ছি না। আপনাদের সুন্দরবনের পক্ষীকুলের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। সেখানকার আবাসস্থলে কীভাবে অত্যাচার, অনাচার, অবিচার চলছে তার একটা বেতার প্রতিবেদন আমাদের কাছে এসেছে গত পরশু দিন। প্রকৃতির সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি দ্বন্দ্বে আপনারা জড়িয়েই আছেন। কয়লা ও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে বিশে্বর সেরা ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট উজাড় ও আনব্রোকেন সমুদ্রসৈকত প্রাকৃতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার সব আয়োজনে উৎফুল্ল বোধ করে, ন্যায়নীতি-নির্ভরতার দুয়ারে তালা লাগিলে, গণসেবা পেতে উঠতে বসতে দুর্নীতির দুরাচারে প্রকৃতি বড়ই রুক্ষ।
পাখিদের প্রতিনিধিদল এটাও শোনাল আমায় ‘আপনাদের ঢাকা শহরের সিসার উপস্থিতি বাড়ছে তো বাড়ছে, ঢাকা শহরে পক্ষীকুলের সমিতি সেটা সুন্দরবনের হেড কোয়ার্টারকে জানিয়েছে। ঢাকা শহরের বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। তাতে কার্বন নিঃসরণ এবং অক্সিজেন উৎপাদন যেমন ব্যাহত হচ্ছে, পাখিদের মৌলিক অধিকার নিরাপদে রাতযাপনের যন্ত্রণা বাড়ছে।’ আমার মুখের ওপর তারা বলে ফেলল, আপনাদের পরিকল্পনা কমিশন থেকে করা প্রকল্পপত্রে হাতিরঝিলের মধ্যে একটি কৃত্রিম দ্বীপ বানিয়ে সেখানে পক্ষীদের জন্য অভয়ারণ্য তৈরি এবং রাতের রিসোর্ট তৈরির কথা ছিল। অনেক বছর পর গাছ লাগানো শুরু হয়েছে বটে কিন্তু সেখানে মানুষদের যাওয়ার জন্য পথ তৈরি করে রাখা হয়েছে। তাহলে অভয়ারণ্য হবে কী করে বলুন।’
লেখক: উন্নয়ন অর্থনীতির বিশ্লেষক
আগামীকাল বহু ঘটনার সাক্ষী মহররম মাসের ১০ তারিখ। দিনটি আশুরা হিসেবে বেশি পরিচিত। পৃথিবীর সৃষ্টি এবং হজরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে অনেক নবী-রাসুলের স্মৃতিবিজড়িত দিন আশুরা। মুসলমান ছাড়াও ইহুদি-খ্রিস্টানদের কাছে আশুরা বেশ পবিত্র ও সম্মানিত। আশুরার দিনের মূল ইবাদত হচ্ছে- এ দিনের রোজা রাখা। এ দিনের রোজার ফজিলতের ব্যাপারে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আশুরার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা রাখি, তিনি পূর্বের এক বছরের (সগিরা) গোনাহ মাফ করে দেবেন।’ -সহিহ মুসলিম : ১১৬২
আশুরার দিন রোজা রাখা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি আমল। এ দিন রোজা রাখা মোস্তাহাব। তবে উত্তম হলো, দশ মহররমের আগে বা পরে ৯ বা ১১ তারিখে একদিন অতিরিক্ত রোজা রাখা। ৯ তারিখে রাখতে পারলে ভালো। কারণ হাদিসে ৯ তারিখের কথা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।
আশুরার ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক ঘটনা হচ্ছে হজরত মুসা (আ.) ও তার সম্প্রদায়ের অত্যাচারী শাসক ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তিলাভ। এই দিনে আল্লাহতায়ালা লোহিত সাগরে ডুবিয়ে মারেন ফেরাউন ও তার বাহিনীকে। ঘটনাটি ইমাম বোখারি (রহ.) তার কিতাবে এভাবে বর্ণনা করেন, ‘হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারিম (সা.) যখন হিজরত করে মদিনা পৌঁছেন, তখন তিনি দেখলেন যে, মদিনার ইহুদি সম্প্রদায় আশুরার দিনে রোজা পালন করছে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করেন, আশুরার দিনে তোমরা রোজা রেখেছ কেন? তারা উত্তর দিল, দিনটি অনেক বড়। এই পবিত্র দিনে মহান আল্লাহ হজরত মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষা করেছিলেন আর ফেরাউন ও তার বাহিনী কিবতি সম্প্রদায়কে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। এর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ হজরত মুসা (আ.) রোজা রাখতেন, তাই আমরাও আশুরার রোজা পালন করে থাকি। তাদের উত্তর শুনে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, হজরত মুসা (আ.)-এর কৃতজ্ঞতার অনুসরণে আমরা তাদের চেয়ে অধিক হকদার। অতঃপর তিনি নিজে আশুরার রোজা রাখেন এবং উম্মতকে তা পালন করতে নির্দেশ প্রদান করেন।’ -সহিহ বোখারি : ৩৩৯৭
আগেই বলা হয়েছে, নবী-রাসুলদের স্মৃতিবিজড়িত দিন আশুরা। আশুরা আমাদের কাছে গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ হওয়ার আরও কারণ হলো- এ দিনেই (৬১ হিজরির ১০ মহররম) আমাদের প্রিয়তম নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) সপরিবারে কারবালা প্রান্তরে নির্মমভাবে শাহাদত বরণ করেন। এ ঘটনা এত মর্মস্পর্শী ও হৃদয়বিদারক যে কেয়ামত পর্যন্ত মুসলমানদের অন্তরকে তা নাড়া দেবে এবং এর আবেদন কখনো ফুরাবে না। তিনি যুদ্ধের উদ্দেশ্যে রওনা হননি, তার সঙ্গে ছিল তার পরিবারের নারী-শিশুসহ মাত্র ৭২ জন সঙ্গী-সাথী। সেদিন একটি অসম যুদ্ধে ইমাম শহীদ হয়েছিলেন। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে স্বৈরশাসনের মোকাবিলা করে জীবন দিতে হয়। শাহাদতের পর থেকে গভীর শ্রদ্ধা ও ভক্তির সঙ্গে মুসলিম উম্মাহর কাছে তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত থাকবেন। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সব আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি বিপ্লবীদের প্রেরণার উৎস।
হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) কারবালা প্রান্তরে সেদিনের যুদ্ধ ছিল মূলত অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের, অসুন্দরের বিরুদ্ধে সুন্দরের, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের, অকল্যাণের বিরুদ্ধে কল্যাণের। অনাদর্শের বিরুদ্ধে আদর্শের, যা অনন্তকালের জন্য আদর্শিক বিজয়ের চেতনা। কারবালার চেতনা অন্যায়ের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের চেতনা।
উপরোক্ত ঘটনাবলি ছাড়া মহররম এবং আশুরার সঙ্গে রয়েছে মুসলানদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তবে এটা সুস্পষ্ট যে, আশুরা মানেই কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা নয়, আশুরার ঐতিহ্য আবহমানকাল থেকেই চলে এসেছে। এর ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে সেই সুপ্রাচীনকাল থেকে। ইসলামের আবির্ভাবেরও বহু আগে থেকে। এমনকি আশুরার রোজার প্রচলন ছিল ইসলামপূর্ব জাহেলি যুগেও! এমতাবস্থায় আশুরার ঐতিহ্যকে শুধুমাত্র কারবালা দিবসের ফ্রেমে বন্দি করা কাম্য নয়।
মহররম ও আশুরার ইতিহাসের সঙ্গে তওবা কবুল হওয়া এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে মুক্তি, নিরাপত্তা এবং গায়েবি সাহায্য লাভের ইতিহাসজুড়ে আছে। এজন্য এ সময়ে এমন সব আমলের প্রতি মনোনিবেশ করা উচিত, যাতে আল্লাহর রহমত বান্দার প্রতি আরও বেশি ধাবিত হয়। বিশেষভাবে এ সময়ে তওবা-ইস্তেগফারের প্রতি পূর্ণ মনোযোগী হওয়া।
এক সাহাবি নবীজির কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন- ইয়া রাসুলাল্লাহ! রমজানের পর আপনি কোন মাসে রোজা রাখতে বলেন? নবী করিম (সা.) বললেন, তুমি যদি রমজানের পর রোজা রাখতে চাও তাহলে মহররমে রোজা রেখো। কেননা মহররম হচ্ছে- আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একদিন আছে, যেদিন আল্লাহতায়ালা (অতীতে) অনেকের তওবা কবুল করেছেন। ভবিষ্যতেও অনেকের তওবা কবুল করবেন। -জামে তিরমিজি : ৭৪১
হাদিসের ব্যাখ্যাকাররা দিনটি আশুরার দিন হওয়ার সম্ভাবনা উল্লেখ করেছেন। বস্তুত তওবা-ইস্তেগফার যেকোনো সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। বান্দা আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করবে, নিজের অতীতের জন্য ক্ষমা চাইবে এটাই তো তার কাজ। কিন্তু আল্লাহর অপার অনুগ্রহ, তিনি সেই আকুতি পেশ করার অর্থবহ শব্দ-বাক্যও বান্দাকে শিখিয়ে দিয়েছেন। কোরআন-হাদিসে বর্ণিত সেসব দোয়ার মর্ম ও ব্যঞ্জনা মুমিনের হৃদয় ছুঁয়ে যায়, যদি সে উপলব্ধির সঙ্গে সেগুলো পাঠ করে। কোরআন মাজিদে নবীদের অনেক দোয়া উল্লেখ করা হয়েছে, যে দোয়ার অসিলায় তারা আল্লাহতায়ালার বিশেষ রহমত প্রাপ্ত হয়েছেন। মুমিনের জন্য সেগুলো অনেক বড় সম্বল। হাদিসেও অনেক দোয়া-ইস্তেগফার বর্ণিত হয়েছে। সেগুলোও অজিফা হিসেবে গ্রহণ করা। বিশেষ করে, দেশজুড়ে চলছে ডেঙ্গুজ্বরের ভয়াবহতা- এই অবস্থায় আশুরার দিন রোজা পালনের পাশাপাশি, বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার করে রোগমুক্তিসহ যাবতীয় বিপদ মুক্তির জন্য বিনয়ের সঙ্গে প্রার্থনা করা। মন দিয়ে গভীরভাবে আশুরা দিনের তাৎপর্য উপলব্ধি করে সে অনুযায়ী জীবন গঠনের শিক্ষা নেওয়া।
লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক গবেষক
খুচরা আলাপে চিকনবুদ্ধির জয়জয়কার। ফলে খুচরা আড্ডায়, গসিপে এই ধরনের মানুষের কদর আছে। অনেকক্ষেত্রে বাকপটুতা তাদের বেশ বুঝদার অর্থে জ্ঞানী হিসেবেও ভাবায় সাধারণকে। কিন্তু ঝামেলা হচ্ছে সিরিয়াস আলাপে এই ধরনের চিকনবুদ্ধি বিপজ্জনক। কারণ তাদের লক্ষ্য থাকে তর্কে জেতা, অনেকটা রাজনীতির ভেতর পলিটিকস ঢুকিয়ে মাঠজয় করা।
একটা পুরনো গল্প দিয়ে আরেকটু বলা যাক। চিকনবুদ্ধির বাঙালি গফুর মিয়া দুধ বিক্রি করেন। তো তিনি তার সামান্য চিকনবুদ্ধি খরচ করে ১০ লিটার দুধে ৫ লিটার পানি মিশিয়ে ১৫ লিটার করলেন। নগদ লাভের টাকা নিয়ে তিনি গেলেন চাল কিনতে। দোকানির কি চিকনবুদ্ধি নেই? তিনি আগে থেকেই কাঁকর মেশানো চাল ধরিয়ে দিয়ে ওজনে আধা কেজির লাভ পকেটে পুরলেন। এদিকে মাছ বিক্রেতার তো দুধ, চাল কিনতে হয়। তাই তার তো চিকনবুদ্ধি কম থাকলে চলবে না, তিনি দ্বিগুণ দামে ফরমালিন মেশানো পচা মাছ ধরিয়ে দিয়ে লাভ বুঝে নিলেন। তো এই গল্পে যে উইন উইন সিচুয়েশন, চিকনবুদ্ধির চক্র এমনটা রাজনীতিতেও দেখছি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই উইন উইন সিচুয়েশনে খুচরা বিক্রেতাদের চিকনবুদ্ধিতে বাজারে যে ভেজাল ছড়িয়ে দিচ্ছে তাতে আখেরে সবারই হার। রাজনীতিতেও তাই।
ক্ষমতাসীন দল, বিরোধী দলের চিকনবুদ্ধি ও তার মোকাবিলার বলি হচ্ছেন পাবলিক। আরও স্পষ্ট করে বললে চিকনবুদ্ধির পলিটিকস করতে গিয়ে মানুষের দুর্ভোগকেই বাড়িয়ে তোলা এখানকার স্বাভাবিক চর্চা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে জনদুর্ভোগের প্রশ্ন বরাবরই উপেক্ষিত, মুখের কথা হিসেবে আমরা দেখে আসছি। অবশ্য বিরোধী দলকে মোকাবিলায় প্রথমত ক্ষমতাসীন দলকে চিকনবুদ্ধির বান মারতে দেখি আমরা। আর বিরোধীরা সেই ফাঁদে পড়ে অথবা টিকে থাকার জন্য চিকনবুদ্ধির চক্রে নামেন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, পাবলিকের অধিকারের কথা বলে বিরোধীরা আন্দোলনে নামেন আর যে পাবলিকের অসুবিধার কথা তুলে তাদের পথরোধ করার চেষ্টা করে ক্ষমতাসীন দল ও পুলিশ; চিকনবুদ্ধির ফেরে পড়ে সেই পাবলিকের কথা তখন আর বিবেচনাতেই থাকে না কারও। গায়ের জোর, গোঁয়ার্তুমি প্রধান হয়ে ওঠে। আর চিড়ে চ্যাপ্টা পাবলিক তাদের এসব চিকনবুদ্ধির দৌরাত্ম্য বুঝলেও, দুর্ভোগ পোহানো ছাড়া কিছুই করতে পারে না। যেমন ননসেন্স যুক্তি দিয়ে চায়ের দোকানে জিতে যাওয়া চিকনবুদ্ধির প্রতিভায় বাকহারা হয়ে থাকে বাকি অডিয়েন্স, অনেকটা তেমনই।
মজা হচ্ছে, বাকহারা হয়ে পড়া ওই অডিয়েন্স কিন্তু তর্কে জিতে যাওয়া চিকনবুদ্ধির যুক্তি যে ননসেন্স, সেটা বুঝেও কিছু বলে না বা বলতে পারে না। রাজনীতিতেও তেমনি। ধরেন এর আগে, বিরোধীদের কর্মসূচি সামনে রেখে বাস ধর্মঘটের কথা। ঠিক যে যে জেলায়, যে যে বিভাগে, যেদিন যেদিন বিরোধীদের সমাবেশ ঠিক সেই সেই জেলায়, সেই সেই বিভাগে, সেই সেই দিনে পরিবহন ধর্মঘট থাকার চিকনবুদ্ধি কি পাবলিক বুঝতে পারে না? কিন্তু কী করার আছে, পাবলিকের? এই বিচিত্র পরিবহন ধর্মঘটের ভোগান্তিকে হজম করে যাওয়া পাবলিক এমন প্রশ্নও তুলছে না যে, যেসব দাবিতে ওই ধর্মঘটগুলো ডাকা হয়েছিল তার কী মীমাংসা হলো?
রাজনীতিতে পলিটিকসের নামে এই চিকনবুদ্ধির খেলা না হয় গণতন্ত্রের নামে করতে দেওয়া লাগল। যেমন একই দিনে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি। এর ফলে দুই দলের সমান কভারেজ করতে গিয়ে তাদের বক্তব্য, দাবি-দাওয়ার চাইতে ‘পাল্টাপাল্টির’ দ্বৈরথটাই প্রধান খবর হয়ে যায়। আর পাবলিক তাদের এই চিকনবুদ্ধির নিকুচি করতে করতে যানজটের শহরে কর্মদিবস মোকাবিলা করে অফিস করে, বাড়ি ফেরে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক গীতিআরা নাসরিনের ফেসবুক পোস্ট উদ্ধৃত করা যায়। তিনি সেখানে বলেছেন, ‘‘রাজনৈতিক দলগুলো পাবলিক পরিসরে তাদের কর্মসূচির জুলাই-ডিসেম্বর ষাণ্ণাসের একটা দিনপঞ্জি দিয়ে দিলে পাবলিকের প্রভূত সুবিধা হতো। কেউ কেউ ক্যালেন্ডারে তারকা চিহ্ন (*) দিয়ে ‘চাঁদ দেখা সাপেক্ষে’ লেখার মতো, ‘অন্য দলের কর্মসূচি দেওয়া সাপেক্ষে’ এই তথ্যটিও যুক্ত করতে পারেন।’’
এই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির পেছনে অপরপক্ষের বক্তব্য যেমন মনোযোগ পায় না, তেমনি যে পক্ষের আসলে বলার মতো কথা নেই তারা কেবল বিরোধিতার খবরেই শিরোনামে থাকতে পারে। এতে কি তাদের যে আসলে কোনো কথা নেই, সেটাকে আড়াল করা যায়?
কিন্তু প্রশ্ন হলো পুলিশ প্রশাসন কি এই চিকনবুদ্ধির খেলায় নামতে পারে? আমরা দেখে আসছিলাম সরকারি দলের সভা-সমাবেশে অনুমতি, শর্ত, জনদুর্ভোগের কথা না তুলেই যথাস্থানে হয়ে যেতে। হয়তো তারাও অনুমতি নেন, কিন্তু সেখানে অনুমতি পাওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশের সঙ্গে কোনো টানাপড়েন হয় না। পুলিশ কোনো শর্ত আরোপ করে তাদের অনুমতি দেয় কি না জানা যায় না। কিন্তু বিরোধীদের বেলায় এ সবকিছুই আলোচনায় আসে। জনদুর্ভোগ আর নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে, শর্ত, ধরপাকড়, মামলা তল্লাশিসহ নানা তৎপরতায় বিরোধীদের সভা-সমাবেশে এক ধরনের চিকনবুদ্ধির ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দিচ্ছিল পুলিশ।
সর্বশেষ সমাবেশ নিয়েও বিএনপিকে পুলিশের এই চিকনবুদ্ধিকে মোকাবিলা করতে হয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের পাল্টা সমাবেশ তো আছেই। পুলিশ যথারীতি বলল, ‘গণদুর্ভোগের কারণে বিএনপিকে নয়াপল্টনে কিংবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে অনুমতি দেওয়া হবে না। তবে তারা চাইলে রাজধানীর গোলাপবাগে সমাবেশ করতে পারে।’ পুলিশ বিএনপিকে বৃহস্পতিবার সমাবেশ করলে গোলাপবাগে আর শুক্রবার করলে নয়াপল্টনে করার প্রস্তাব দেয়। আন্দোলন, সংগ্রামের নিজস্ব গতিই অবশ্য দিন, ক্ষণ আর জমায়েতের স্থান তৈরি করে নেয়। বিএনপির আন্দোলনে সেই গতি এখনো আসেনি। আইন ভেঙে, পুলিশি বাধা ডিঙিয়ে মহাসমাবেশ করতে পারবে না বিএনপি। কূটনীতিকদের কাছেও বিএনপির আন্দোলনের অহিংস ভাষা বদলে গেলে বিপদ। বিদেশিরা চান বিএনপি অহিংস ও নিয়মতান্ত্রিক পথে চলুক। কিন্তু এই চিকনবুদ্ধির ব্যারিকেড সরাতে বিএনপি বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছে। তারা জনদুর্ভোগকে অ্যাড্রেস করে পুলিশের শর্ত মেনে সমাবেশ এক দিন পিছিয়েছে। নিজেদের পছন্দের জায়গা নয়াপল্টনেই তারা সমাবেশ করবে।
বিএনপি তাদের মহাসমাবেশ এক দিন পিছিয়েছে বুধবার রাতে এই খবর প্রচারিত হওয়ার পরপরই শোনা যায়, আওয়ামী লীগও তাদের তিনটি সংগঠনের সমাবেশ পিছিয়েছে। এখানে বিএনপি নানাবিধ চিকনবুদ্ধি প্রতিহত করতে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছে। তাছাড়া পুলিশের বহুল কথিত জনদুর্ভোগকে অ্যাড্রেস করেই বিএনপি যে তাদের কর্মসূচি পেছাতে রাজি হয়েছে গোঁয়ার্তুমি না করে এটা শুভ লক্ষণ। চিকনবুদ্ধির পলিটিকস করতে করতে এইবার জনদুর্ভোগ জিতেছে। এই জয় জারি থাকুক। যারা একে বিরোধীদের দমনের চিকনবুদ্ধি হিসেবে নেবে, তারা জনগণের কাছে ধরা খাবে। কারণ পাবলিক সব বোঝে। অন্যদিকে যারা একে গায়ের জোর দিয়ে না দেখে পজিটিভলি রেসপন্স করবে তারা এগিয়ে থাকবে। কারণ, অপরপক্ষকে সেটাই অনুসরণ করতে হবে।
গত ছয় মাসের রাজনৈতিক সহিংসতায় ২০ জনের মতো মানুষ নিহত হয়েছে। নিহতদের বড় অংশই বিএনপির লোক। অগুনতি মামলায় অসংখ্য নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। তারপরও ঘেরাও, হরতাল বা অবরোধের মতো কর্মসূচিতে যায়নি দলটি। তারা বারবার নিজেদের সরকারবিরোধী আন্দোলনকে অহিংস বলে আসছে। মানুষও তা বিশ^াস করা শুরু করেছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে জ¦ালাও- পোড়াওয়ের যে চর্চা ছিল, সেখান থেকে বের হয়ে আসার ইঙ্গিত স্পষ্ট। রাজনীতির এই পরিবর্তনে বিরোধীরা তাদের ভূমিকা রাখছে। এখন ক্ষমতাসীন দল এই চর্চাকে এগিয়ে নেবে নাকি চিকনবুদ্ধি দিয়ে, উসকানি দিয়ে তাদের রাজপথের পুরনো সহিংসতার পথে টেনে নামাবে সেটাই দেখার বিষয়। আওয়ামী লীগকে কেবল বিএনপির কর্মসূচির মোকাবিলায় পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে গেলে চলবে না। তাদের রাজনৈতিক বক্তব্য, কর্মসূচি নিয়ে সামনে আসতে হবে। তা না হলে আওয়ামী লীগের রাজনীতিই প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তবে, পুলিশকে জনদুর্ভোগ, জনভোগান্তি, জননিরাপত্তার প্রশ্নে আমারা বিরোধীদের দমনে ক্ষমতাসীনদের চিকনবুদ্ধির সহযাত্রী হিসেবে দেখতে চাই না। আশা করব জনদুর্ভোগ, জনভোগান্তি, জননিরাপত্তার প্রশ্নে সঠিক অবস্থান নিক।
জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী পক্ষের মুখোমুখি অবস্থান আগামী দিনগুলোতে আরও স্পষ্ট হবে। আগামী দিনগুলোতে রাজনীতি আরও বেশি মাত্রায় মাঠে থাকবে। কিন্তু আমরা অতীতের রাজনৈতিক সহিংসতার দিনগুলোতে ফিরতে চাই না। আমরা বিশ^াস করতে চাই রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কর্মসূচি পালনে ও বিপক্ষকে মোকাবিলায় সহিংসতা ও তাতে উসকানির চিকনবুদ্ধি থেকে দূরে থাকবে। এটাও সত্যি যে আন্দোলন-সংগ্রামের চরিত্র আগে থেকে ঠিক করে দেওয়া যায় না। কিন্তু সহিংসতা এড়ানোর প্রজ্ঞা ও সৃষ্টিশীলতা রাজনৈতিক দলগুলোকে দেখাতে হবে। এক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা রাখতে হবে। না হলে পুলিশের মুখে জনদুর্ভোগ, জনভোগান্তি, জননিরাপত্তা শব্দগুলো হাস্যকর হয়ে উঠবে। আর পাবলিক গান গাইবে- ‘সবেতে আছি সব নজরে পড়ে, কে খায় খেয়ে কে ন্যাজ নাড়ে।’
লেখক: কবি ও সাংবাদিক
খ্যাতনামা কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, সমালোচক ও অনুবাদক আহমদ ছফা ১৯৪৩ সালের ৩০ জুন চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার গাছবাড়িয়া গ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। চট্টগ্রামে স্কুল ও কলেজের লেখাপড়া সমাপ্ত করে ছফা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তীক্ষ্ন মেধার অধিকারী সৃষ্টিশীল লেখক আহমদ ছফার সাহিত্য-জীবনের সূচনা হয় ষাটের দশকে। ছফা একাধারে গল্প, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ, সমালোচনা, অনুবাদ ও শিশুসাহিত্যে অবদান রেখে বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে একজন সফল লেখক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে সাহিত্য-সাময়িকপত্র সম্পাদনা করেন। আহমদ ছফার উপন্যাসগুলো হলো সূর্য তুমি সাথী (১৯৬৭), উদ্ধার (১৯৭৫), একজন আলী কেনানের উত্থান-পতন (১৯৮৯), অলাতচক্র (১৯৯০), ওঙ্কার (১৯৯৩), গাভীবৃত্তান্ত (১৯৯৪), অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী (১৯৯৬), পুষ্পবৃক্ষ ও বিহঙ্গপুরাণ (১৯৯৬)। ছফার গল্পগ্রন্থ নিহত নক্ষত্র (১৯৬৯)। ছফার কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে জল্লাদ সময়, একটি প্রবীণ বটের কাছে প্রার্থনা, লেনিন ঘুমোবে এবার। জার্মান কবি গ্যেটের বিখ্যাত কাব্য ‘ফাউস্ট’-এর অনুবাদ এবং বার্ট্রান্ড রাসেলের ‘সংশয়ী’ রচনার বাংলা রূপান্তর আহমদ ছফাকে অনুবাদক হিসেবেও খ্যাতি এনে দেয়। গবেষক ও প্রাবন্ধিক হিসেবে তার পরিচিতি সর্বাধিক। তার গবেষণার বিষয় ছিল বাঙালি মুসলমান সমাজ। তার দুটি উল্লেখযোগ্য রচনা ‘বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস’ (১৯৭৩) ও ‘বাঙালি মুসলমানের মন’ (১৯৭৬)-এ। এ ছাড়া সমাজের ইতিহাস, বিবর্তন ও মননশীলতা নিয়ে ছফা লিখেছেন ‘সিপাহি যুদ্ধের ইতিহাস’ ও ‘যদ্যপি আমার গুরু’-এর মতো গ্রন্থ। আহমদ ছফা ২০০১ সালের ২৮ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক-সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি এখনো নিশ্চিত হয়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাজেটস্বল্পতার যুক্তিতে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষকদল পাঠাতে পারবে না বলেছে। এখন পর্যন্ত আবেদনকারী ২১০টি দেশি সংস্থা বা সংগঠনের মধ্যে ৬৬টিকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে।
নির্বাচনের তিন মাসেরও কম সময় বাকি। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের কাছ থেকে কাক্সিক্ষত সাড়া না পেয়ে তাদের চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানানোর কথা ভাবছে ইসি। তাদের উদ্দেশ্য নির্বাচন নিয়ে বড় কোনো প্রশ্ন যাতে না ওঠে, নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা যেন বাধাগ্রস্ত না হয়। এ লক্ষ্যে সব চেষ্টাই নির্বাচন কমিশন করবে। ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে।
অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়েছে, সেটি বোঝাতে হলে আন্তর্জাতিক মহলে বার্তা পৌঁছাতে হবে। আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে এ বার্তা পৌঁছানোর কাজটি করেন বিদেশি পর্যবেক্ষকরা। ইইউ বলে দিয়েছে, তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। যুক্তরাষ্ট্র সরকার নির্বাচন-পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না, তার জন্য ক্ষেত্রসমীক্ষণে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) যৌথ প্রতিনিধিদল আসবে। ৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল ও তাদের সহায়তাকারীরা ৭ থেকে ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সফর করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি এবং দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করা নিয়ে টুইটবার্তা এবং বিভিন্ন বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের ধারণা, তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত এ বার্তাই দিচ্ছে যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু না-ও হতে পারে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার কাছে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত না হলে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) পর্যবেক্ষক না পাঠালেও আরও অনেক দেশ আছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোকে (আফগানিস্তান, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা) আমন্ত্রণ জানিয়ে অক্টোবরে চিঠি দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষকদের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে ভালো হয়। আমরা চাই দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা বেশি সংখ্যায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করুক। আমরা আশা করি বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আসবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি সংস্থা।
পৃথিবীতে আরও অনেক দেশ আছে।’
আপনারা তো ভোটের জন্য শতভাগ প্রস্তুত কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতি নির্বাচনমুখী কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেভাবেই হোক সংবিধান অনুযায়ী জানুয়ারির ২৯ তারিখের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। না হলে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হবে। এতে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। নির্বাচন কমিশন সেটা হতে দিতে পারে না।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমেরিকা আসবে না বলেনি। আসলে আমরা খুশি হব। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য যেসব যোগ্যতার প্রয়োজন, সেসব থাকলে যে কেউ আসতে পারে।’
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষক দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। আশা করি নির্ধারিত সময়ের আগেই তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসবে।’
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বদিউল আলম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে, নির্বাচনসংক্রান্ত বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামো, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে যে দলীয়করণ হয়েছে, তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অতীতেও তা হয়নি। আগামীতে হবে বিশ্বাস করা কঠিন। যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, তথ্য-উপাত্ত নিয়েই তা করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও বলেছে, তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। নেতিবাচক মনোভাবই তাদের সিদ্ধান্তে প্রকাশ পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা আসেনি। ফলে সেটি আন্তর্জাতিক মানদ-ে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। ওই দুটি নির্বাচন সব মহলেই প্রশ্নবিদ্ধ। এখন সরকার বা ইসি যে কথা বলছে, তাতে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নীতির বদল হবে বলে মনে হয় না। আস্থা তৈরি করতে হলে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সূত্রগুলো বলছে, তারা নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে কাজ করছে। ইতিমধ্যে ইইউকে ছোট পরিসরে হলেও পর্যবেক্ষক পাঠাতে ২৪ সেপ্টেম্বর চিঠি দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে কমিশন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে এমন প্রতিশ্রুতি সিইসি দিচ্ছেন। সরকারও একই কথা বলছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার ও নির্বাচন কমিশন। যদিও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ফলে আস্থার একটা সংকট তৈরি হয়েছে। তা কাটানোর জন্যই ইসি নানা পরিসরে কাজ করছে।
সূত্রমতে, ইইউর নেতিবাচক মনোভাবের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষকদের সন্তেুাষজনক তথ্য তৈরির কাজ করছে ইসি সচিবালয়। মার্কিন দলের মনোতুষ্টির বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে কমিশনের। নির্বাচনী তফসিল থেকে নির্বাচনী ফল ঘোষণা পর্যন্ত সব কর্মকা-, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয়গুলো তাদের কাছে তুলে ধরা হবে।
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতির সুবিধা হলো তারা নির্বাচনী কাজে জড়িতদের জবাবদিহির মুখোমুখি করে। পর্যবেক্ষকদের কোনো আইনি শক্তি নেই। তবে তারা নৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এতে প্রার্থীদের সমর্থকদের আচরণও প্রভাবিত হয়। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে ভোটারদের ওপর, তারা আস্থা পান।’
তিনি বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে তাতে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা অংশ নেয় না। আগামী নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এখন পর্যন্ত সব দলের অংশ নেওয়ার বার্তা নেই। সব দলই নিজ অবস্থানে অনড়। এ কারণেই বিদেশিরা আগ্রহ প্রকাশ করছে না।’
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশে সাধারণত ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, সার্কভুক্ত দেশ, কমনওয়েলথ, ওআইসি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে এমন সংস্থা, মানবাধিকার গোষ্ঠী, ঢাকায় বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন। ২০১৮ সালে দেশি ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন এবং ওআইসি ও কমনওয়েলথ থেকে আমন্ত্রিত ও অন্যান্য বিদেশি পর্যবেক্ষক ছিলেন ৩৮ জন, কূটনৈতিক বা বিদেশি মিশনের কর্মকর্তা ৬৪ জন এবং বাংলাদেশে দূতাবাস বা হাইকমিশন বা বিদেশি সংস্থায় কর্মরত বাংলাদেশি ৬১ জন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।
স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের সুযোগ দিতে এবার দ্বিতীয়বারের মতো বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। দেড় শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে। প্রথমবার দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বাদপড়াদের মধ্য থেকেই বেশি আবেদন এসেছে বলে জানা গেছে।
গত ১৮ জানুয়ারি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের জন্য প্রথমবারের মতো আবেদন আহ্বান করেছিল নির্বাচন কমিশন। ২১১টি সংস্থা আবেদন করেছিল। গত ৮ আগস্ট প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ ৬৮টি সংস্থার তালিকা প্রকাশ করে সংস্থাটি। আপত্তি ওঠায় দুটি সংস্থাকে বাদ দিয়ে শেষপর্যন্ত ৬৬টি সংস্থাকে নিবন্ধন দেয় কমিশন। এসব সংস্থার ৪২টিই ছিল নতুন। এর আগে তারা কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কাজ করেনি; সংস্থাগুলোর সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে পর্যবেক্ষক সংস্থার সংখ্যা অর্ধেকের মতো কমে যাওয়ায় দ্বিতীয়বারের মতো ১৫ সেপ্টেম্বর ১০ দিনের জন্য ফের আবেদন আহ্বান করে ইসি। এর সময় শেষ হয়েছে ২৪ সেপ্টেম্বর।
ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগের মতোই বাছাই শেষে দাবি-আপত্তি আহ্বান করা হবে। তারপর চূড়ান্ত হবে কোন কোন সংস্থা নিবন্ধন পাচ্ছে।
ইসির জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক মো. আশাদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। দেড় শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে।’
২০০৮ সাল থেকে ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষক নিবন্ধন দিচ্ছে ইসি। সে সময় ১৩৮টি সংস্থা নিবন্ধন পেয়েছিল। ২০১৮ সালে ১১৮টি সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছিল ইসি। পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের পাঁচ বছরের মেয়াদ গত ১১ জুলাই শেষ হয়েছে।
আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য সংশোধিত নীতিমালা : আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য নীতিমালা সংশোধন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ২৬ সেপ্টেম্বর ইসি এই নীতিমালা জারি করেছে। সংশোধিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো বিদেশি নাগরিক বা সংস্থা বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে চাইলে তাদের সুশাসন, নির্বাচন, গণতন্ত্র, শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সংস্থাগুলোকে সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধিত হতে হবে।
শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করা হচ্ছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, ‘ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হবে।’
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর গুলিস্তান মহানগর নাট্যমঞ্চে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি জামায়াতে ইসলামকে ইসলামের দুশমন মন্তব্য করে বলেন, ‘যারা একাত্তরে মানুষ হত্যা করেছে, তারা মুসলমান হতে পারে না। তাদের জামাকাপড়ে মুসলমান ভাব থাকলেও অন্তরে নেই। খুনিরা মুসলমান হতে পারে না- কারণ ইসলাম শান্তির ধর্ম- যা মানবতার কথা বলে।’
এ সময় সারা দেশে মডেল মসজিদ নির্মাণসহ ইসলেমের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরেন শাজাহান খান।
অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘আশেকানে গাউছিয়া রহমানিয়া মইনীয়া সহিদীয়া মাইজভাণ্ডারীয়া’।
সংগঠনের প্রধান পৃষ্টপোষক শাহসূফি মাওলানা শাহজাদা সৈয়দ সহিদউদ্দিন আহমেদ আল-হাসানী ওয়াল-হোসাইনি মাইজভাণ্ডারী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ সা. সৃষ্টি না হলে পৃথিবী সৃষ্টি হতো না। সেই দয়াল নবীর মত ও পথকে অনুসরন করতে হবে। সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হবে, জীবন চালাতে হবে। এ ছাড়া আল্লাহর নৈকট্য লাভের ভিন্ন কোনো সুযোগ নেই।
আলোচনা সভা সেমিনারের পর দুপুর সোয়া ১২টায় ঈদে মিলাদুন্নবীর জশনে জুলুশ (র্যালি) বের হয়। গুলিস্তান জিরোপয়েন্ট থেকে পল্টন মোড় হয়ে র্যালিটি আবার জিরো পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়।
পরে আখেরি মোনাজাতে দেশ ও জাতির শান্তি-সমৃদ্ধি কামনা করেন সৈয়দ সহিদউদ্দিন আহমেদ মাইজভাণ্ডারী।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ইলেকশন মনিটরিং কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবেদ আলীসহ হাক্ক্বানি ওলামায়ে ক্বেরামগণ। এ সময় ভক্ত ও আশেকানবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সাত বছর পর ভারতের মাটিতে অবতরণ পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে তারা গিয়েছিল সেখানে। তারপর এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে। টুর্নামেন্ট শুরুর এক সপ্তাহ আগে তারা পৌঁছালেন দেশটিতে। সেখানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হোটেলে।
বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বাবর আজমরা সেখানে পৌঁছানো মাত্রই উচ্ছ্বসিত জনতা ভিড় করেন। হায়দ্রবাদের বিমানবন্দরের বাইরে তাদের দেখে অনেকেই চিৎকার করে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন। বাবরের নাম উচ্চারণ করতও শোনা গেছে এসময়। পুলিশ উৎসুক জনতাকে আটকে রেখেছিল।
রাজনৈতিক বৈরি সম্পর্কের কারণে দুই দলের দেখা হয় না দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজে। বিশ্ব মাতানো ক্রিকেটার থাকলেও পাকিস্তানিরা খেলতে পারে না আইপিএলে। কারণ ঐ একটাই। তবে বৈশ্বিক বা মহাদেশীয় ইভেন্টে তাদের ঘিরে আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। সেটা দেখা গেছে এশিয়া কাপেও।
বিশ্বকাপ খেলতে আজ বাংলাদেশ উড়াল দিয়েছে ভারতে। সেই টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখে টাইগাররা। তামিম ইকবাল নেতৃত্ব ছাড়ার পর সাকিব আল হাসানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে অধিনায়কত্বের ভার। আর আজই জানা গেল, বিশ্বকাপের পর একদিনও তিনি অধিনায়কত্ব করবেন না।
গত ১১ আগস্ট তৃতীয় দফায় ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান। তখনই বলা হয়েছিল, সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপ ও ভারত বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
দেশের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এই বিশ্বকাপই শেষ। এরপর একদিনও (অধিনায়কত্ব) করবো না। যে কারণে আমি এশিয়া কাপের আগে নিতে চাইনি। এরপরও এটা না। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি হাসতে চাই, খেলতে চাই, পারফর্ম করতে চাই। এই একটা কারণে আমি করতে চাইনি।’
সাকিব যোগ করেন, ‘আর কোনে কারণ নেই। বেস্ট হয় যদি অধিনায়ক না থাকি। অধিনায়কত্ব কি আমার কোনো ভেল্যু এড করতেছে ক্যারিয়ারে এই স্টেজে এসে? আমি তো মনে করি না।’
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।