
আমি ছোটবেলা থেকেই হলিউডের ভক্ত। সহজলভ্যতার কারণে হলিউডের প্রচুর আজেবাজে ছবিও দেখে ফেলা হয়েছে। কিন্তু বারবি মুভি কোনোটাই দেখা হয়নি। তবে ডিজনির কয়েকটা রিসেন্ট ছবি দেখে বুঝেছি এখন ট্রেন্ড হচ্ছে গার্ল পাওয়ারের। নারীবাদের বাজার যেহেতু ভালো, হলিউড তাকে ক্যাশ করবে না, এ হতেই পারে না। উইমেন্স ফিল্ম বলে একটা জরা তো অলরেডি আছেই, কিন্তু বারবি শুধু আরও একটা নারী প্রটাগনিস্ট নিয়ে তথাকথিত নারীর গল্প বলা ছবি নয়। এর পেছনের কলকাঠিগুলোও খুব মজার।
ব্যাখ্যা করছি, এই বছর জুলাই মাসে একই দিনে (২১ জুলাই, ২০২৩) দুটি ছবি ওপেনহেইমার আর বারবি মুক্তি দেওয়া হয়েছে। প্রচুর মানুষ দুটো ছবিই দেখেছে, কিন্তু সবাই তো একদিনে দুই ছবি দেখবে না। ফলে বেশ একটা প্রতিযোগিতা আমদানি করা গেছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে বারবিহেইমার। ওপেনহেইমার একটা বায়োপিক আর বারবি হচ্ছে কমেডি ফলে এই প্রতিযোগিতার কোনো মানেই হয় না। ওপেনহেইমার না দেখেও বলতে পারি, এটা আমাকে দেখতে হবে একা, কানে হেডফোন গুঁজে এবং সাবটাইটেলসহ, কিন্তু তারপরও ছবির অর্ধেক মাথার ওপর দিয়ে যাবে, ছবি সম্পর্কে এটা-ওটা পড়ে বুঝে তারপর আবার দেখতে হবে। আমি বলছি না, সবারই এই দশা হবে, কিন্তু ক্রিস্টোফার নোলানের শেষ ছবি টেনেটের ক্ষেত্রে আমার এমনটাই হয়েছিল।
উল্টো দিকে বারবি হচ্ছে সবাই মিলে হই চই করতে করতে দেখে ফেলা যায়, এমন একটা ছবি। বারবি নিয়ে মিডিয়া কভারেজ এত বেশি হয়েছে, বলা চলে নিউজ মিডিয়াই বিনা পয়সায় বিজ্ঞাপন করে দিয়েছে অনেক। লোকে গোলাপি কাপড় পরে দেখতে যাচ্ছে, অ্যাডাল্ট কনটেন্ট আছে, নানা দেশে নিষিদ্ধ করেছে ইত্যাকার নানা নিউজ লোককে ছবি সম্পর্কে আগ্রহী করেছে। বাংলাদেশে সেলিব্রিটি নারী থেকে শুরু করে সাধারণ মধ্যবিত্ত নারীরাও গোলাপি পোশাক পরে সিনেপ্লেক্সে এই ছবি দেখে এসেছেন। নারীর সঙ্গে শিশু সব সময় অ্যাফিলিয়েটেড থাকে। অনেক মায়েরা বাচ্চাদের ছবি মনে করে শিশুদের নিয়ে গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন এমন কথাও শোনা গেছে। এই ছবির টার্গেট অডিয়েন্স নারী হলেও বাই ডিফল্ট শিশুরাও চলে এসেছে দর্শক সারিতে। বারবি পুতুল দিয়ে শিশুরা খেললেও ছবিটা আসলে বড়দের জন্যই বানানো, রেটিং নিদেনপক্ষে ১৩+ হতে পারে।
স্পয়লার না দিয়ে ছবির প্লট লাইন ছোট করে বলি বারবিল্যান্ড বলে একটা জগতে গল্পের শুরু। এই দুনিয়ায় সবাই বারবি আর সবকিছু খুব পারফেক্ট। একদিন মূল চরিত্র স্টেরিওটিপিক্যাল বারবির মনে মৃত্যুচিন্তা এলো। তার পায়ের পাতা ফ্ল্যাট মানে মানুষের মতো হয়ে গেল। তার মনে হতে শুরু করল সে পারফেক্ট নয়। এ সময় উইয়ার্ড বারবি বলে আর এক চরিত্র রিয়েল ওয়ার্ল্ডে গিয়ে তাকে নিয়ে খেলে যে মেয়ে, তাকে খুঁজে বের করার বুদ্ধি দিল। বারবির এই যাত্রায় পিছু নিল তার জন্য নির্ধারিত ছেলে পুতুল কেন। কেন আর বারবি বাস্তব জগতে গিয়ে দেখল ইটস আ ম্যান’স ওয়ার্ল্ড। এতে দুজনের প্রতিক্রিয়া হলো দুই রকম কেন মহাখুশি হয়ে বারবিল্যান্ডে গিয়ে পুরুষতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে লেগে গেল, বারবিল্যান্ডের নাম পাল্টে কেনডম বানিয়ে দিল সে। এদিকে বারবি রিয়েল ওয়ার্ল্ডে এসে আবারও এক্সিসটেনশিয়াল ক্রাইসিসে পড়ে গেল। বারবির এই ক্রাইসিস কীভাবে কাটল, সে কীভাবে খুঁজে পেল মুক্তির পথ, সেই গল্প দিয়ে শেষ হলো সিনেমা।
কমেডির মোড়কে নারীবাদের রেফারেন্স হলিউডে নতুন নয়। ‘হু ইজ অ্যাফরেইড অব ভার্জিনিয়া উলফ’ নামে অনেক পুরনো একটা সিনেমা আছে, নাটক থেকে বানানো এই সিনেমা যদিও নারীবাদ নিয়ে নয়, আধুনিক জীবনে নারী-পুরুষ সম্পর্কে টানাপড়েন ও সংকট নিয়ে একটা ডার্ক কমেডি। হালের নেটফ্লিক্স থ্রিলার ছবি এনোলা হোমস তো রীতিমতো নারীবাদী সিনেমাই। এমন ছবিও প্রচুর তৈরি হয়েছে। কিন্তু বারবির মতো একটা বিতর্কিত চরিত্র নিয়ে নারীবাদ চর্চা করা/করানোটা একেবারেই বৈপ্লবিক বলা চলে। বারবি পুতুল নিয়ে শুরু থেকেই নারীবাদীরা সব সময় উচ্চকণ্ঠ ছিলেন এবং আছেন। শরীর নারীবাদী আলাপে খুব জরুরি প্রসঙ্গ। নারীর নিজের শরীরের ওপর অল্প কিছু অধিকার আদায় করতে শত বছর লেগে গেছে এবং এখনো সেই অধিকার পুরোপুরি অর্জিত হয়নি, বহু পথ এখনো বাকি। শ্বেতাঙ্গ নীলনয়না সোনালি চুলের বারবি ডলকে বহুদিন ধরেই হোয়াইট সুপ্রিমেসি আর প্যাট্রিয়ার্কির ঠিক করে দেওয়া বিউটি স্ট্যান্ডার্ডের প্রচারক হিসেবে দেখা হয়েছে। কিন্তু ক্যাপিটালিজম যেহেতু থেমে থাকে না, নানা রঙের নানা পেশার বারবি পুতুল হয়। এ কারণে বারবি সিনেমার প্যারালাল ইউনিভার্স, যার নাম বারবিল্যান্ড, সেখানে নারীর জগৎ। ঠিক যেন বেগম রোকেয়ার সুলতানার স্বপ্নের মতো একটা জগৎ!
ছবিতে আমেরিকান সুলতানার স্বপ্ন বারবিল্যান্ডের দৃশ্য তৈরি করতে কোনো গ্রাফিক্স ব্যবহার করা হয়নি, সব দৃশ্যে সেট সাজানো হয়েছে, ক্র্যাফটম্যানসশিপ সুন্দর। গল্পে কমিক অনেক বেশি হয়ে যায়নি, পরিমিত ছিল। সত্যি বলতে, এমন ঠিকঠাক হাস্যরস বহুদিন কোনো ছবিতে দেখিনি। তবে ছবির শুরুতে কুবরিকের ক্লাসিক ছবি স্পেস অডিসির আদলে বানানো দৃশ্যটাতে পুতুল ভাঙার অংশ আমার ব্যক্তিগতভাবে আপত্তিকর লেগেছে। শিশুরা রাগে দুঃখে আছড়ে আছড়ে পুতুল ভাঙছে, এই দৃশ্য কেমন জানি ভায়োলেন্ট! রক্তপাতের ভায়োলেন্সের চেয়ে অনেক বেশি কিছু এটা।
এই ছবির পরিচালক একজন নারী। বারবি পুতুলকে নারীবাদের আইকন বানিয়ে ফেলার মতো ব্যবসাসফল কালচার প্রডাক্ট উপহার দেওয়ার জন্য তিনি ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত, প্রশংসিত ও নিন্দিত হচ্ছেন যুগপৎ। নিন্দুকদের অনেকে প্লাস্টিক ফেমিনিজম বলে অভিহিত করেছে বারবি মুভিকে। টার্ম হিসেবে মন্দ নয়, কত রকমের ফেমিনিজমই তো আছে। ডিজনির গার্ল পাওয়ারওয়ালা অ্যানিমেশনগুলো, রাজকুমারবিহীন রাজকন্যা গল্পের সিনেমাগুলো প্রচুর কন্যাশিশুর মননে প্রভাব রাখবে বলেই আমার বিশ্বাস। যেভাবে বারবি ছবির প্লাস্টিক ফেমিনিজমও বেশ কিছু মৌলিক নারী প্রসঙ্গ উত্থাপন করে। এমনকি বারবির নিজের তৈরি বিউটি স্ট্যান্ডার্ডকেও ভাঙতে চেষ্টা করেছে এই ছবি।
আবার একে সারকাজম বলে খারিজ করা যেতেই পারে। কেউ যদি দাবি করে, এই ছবি ফেমিনিজমকে রিডিক্যুল করার একটা পুরুষতান্ত্রিক এজেন্ডা, সে কথাও আমলে না এনে পারা যাবে না। বারবি ছবিতে নারীর সঙ্গে পুরুষকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখানো হয়েছে ও নারীর রাজত্ব প্রতিষ্ঠা হওয়ার মধ্য দিয়ে গল্প শেষ করা হয়েছে। আমেরিকান সুলতানার স্বপ্ন ‘আমরা সবাই বারবি আমাদের এই বারবির রাজত্বে’ মার্কা একটা ভুল মেসেজ দেয় নারীবাদ সম্পর্কে। নারীবাদীদের কোনোকালেই নারীর রাজত্ব কায়েম করার চেষ্টা বা দাবি ছিল না। নারীবাদ নারীর ও অন্য সব জেন্ডারের মধ্যে বৈষম্য নিরসনের কথা বলে, ইনসাফের কথা বলে। পুরুষতন্ত্রের বিপরীতে নারীতন্ত্রের কথা বলে না।
আমেরিকান নারীবাদীরা অত্যন্ত চমৎকার। তারা নিশ্চয়ই বারবি মুভির প্লাস্টিক ফেমিনিজমের নানা বিশ্লেষণ করবেন। আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, নারী পরিচালক দ্বারা নির্মিত ও আপাত নারীবাদী বার্তা সংবলিত এই সিনেমা আদতে একটা অ্যান্টাই ফেমিনিস্ট প্রোপাগান্ডার অংশই। ওপেনহেইমারের বিপরীতে বারবিকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বাড়তি কাটতি করে নেওয়ার এই বিদ্বেষমূলক প্রতিযোগিতা তৈরি করার ঘটনাটাও এই দাবির পক্ষেই সাক্ষ্য দেয়। আমেরিকান কালচার ওয়ারের মতো পুরুষ বনাম নারী (অথবা ব্রেন ভারসাস বডি) বাইনারি অপোজিশন তৈরি করে বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করে নেওয়া গেল।
বারবি পুতুলের ব্যবসা আবারও চাঙ্গা হয়ে আসবে নিশ্চয়ই। চিকিৎসক থেকে নভোচারী এমনকি ফ্রিদা কাহলো বারবিও আছে বাজারে। ভার্জিনিয়া উলফ বা ক্যাথরিন ম্যাককিনন বা অ্যানড্রিয়া ডরকিন বারবিও তৈরি হয়ে যাবে নিশ্চয়ই শিগগির। এত চরিত্রের এত পেশার বারবি পুতুলের পোশাকই বিরাট একটা ইন্ডাস্ট্রি হওয়ার কথা। মুনাফাকেন্দ্রিক এই সভ্যতায় এর গুরুত্ব অনেক। প্লাস্টিকের তৈরি নারীবাদ বাজারকে উপহার দিচ্ছে বিরাট মুনাফা।
কিন্তু শুধু সে জন্য নয়, সিনেমাটা নানা কারণেই দেখার যোগ্য। ফেমিনিজমের বর্তমান ট্রেন্ড অল ইনক্লুসিভনেসের কথা বলে, ইসলামিক থেকে নিয়ে ইকো সব রকমের নারীবাদী আলোড়নই মানবসভ্যতার পক্ষে উপকারী। কিন্তু একই সঙ্গে এ কথাও সত্য, বন্ধুর মুখোশে ঘুরে বেড়ানো শত্রু চিনতে পারাও জরুরি। রিয়েল লাইফে সিস্টারহুড এত সহজ কিছুও নয়, যেমনটা বারবিল্যান্ডে। অল ইনক্লুসিভনেস দেখাতে গিয়ে পুঁজিবাদের ধান্দা পূরণ করা কালচার প্রডাক্টকে ফেমিনিস্ট মেনিফেস্টো হিসাবে দেখাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তবে বারবি ছবিটা সবারই দেখা উচিৎ, কেননা এতে ভাবনার খোরাক আছে অনেক। বিশেষত ওপেনহেইমার দেখে মাথা জ্যাম হয়ে গেলে বারবি দেখলে সেই জ্যাম ছুটে যাবে নিশ্চিত।
লেখক কবি ও লেখক
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সরকারি স্থাপনাসমূহের রক্ষণাবেক্ষণ ও জনসাধারণের নিরাপত্তাসহ সর্বোপরি আইনশৃঙ্খলা পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতেই পুলিশকে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়। বলা ভালো, এই ক্ষমতা প্রদান করতে দেশের মানুষই বাধ্য করে। কারণ দেশের সমস্ত নাগরিকের রাজনৈতিক শিক্ষা, বোধ এবং রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতা এক নয়। না হওয়ার ফলেই সরকার বাধ্য হয়, উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে আইনি শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে এসে দেশের মানুষকে একটি সভ্য আইনি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসতে। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার কেন বাধ্য হচ্ছে এমন আইন করতে? আসলে এই বিভক্তিই প্রকটভাবে প্রমাণ করে, গণতান্ত্রিক সরকারের পুলিশের ক্ষেত্রে যে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তা অত্যন্ত যৌক্তিক। পৃথিবীর অনেক দেশ আছে, যেখানে পুলিশ রয়েছে কিন্তু তাদের কোনো কাজ নেই। অনেক দেশ রয়েছে, যেখানে আদালতে তেমন কোনো মামলা নেই। অপরাধীশূন্য জেলখানা রয়েছে অনেক দেশে। সেই দেশের জনগণকে শাসন বা আন্দোলন করতে কোনো ধরনের বাধা দেওয়া তো দূরের কথা, আন্দোলনের কোনো প্রয়োজনই পড়ে না। কারণ মানুষের চাহিদা, নাগরিক অধিকার এবং রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সেই দেশের সরকার ভয়ংকরভাবে সচেতন। এই অভ্যাস একদিনে গড়ে ওঠেনি। তাদের শিক্ষাব্যবস্থাই এমন ছাঁচে তৈরি করা হয়েছে, সেখানে একজন নাগরিক খুব সহজেই রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্বশীল। ফলে তাদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোনো ধরনের আইন করতে হয় না। কিন্তু আমাদের দেশে প্রয়োজন হচ্ছে, কেন? এই ‘কেন’-এর মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে আসল কারণ।
প্রথমেই স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানের কথা উল্লেখ করা দরকার। সেখানে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, নাগরিকের অধিকার সম্পর্কে। একইসঙ্গে সেখানে জনগণের দায়বদ্ধতার কথাও বলা আছে। সমাবেশের স্বাধীনতা সম্পর্কে সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে সভা-সমাবেশ করার অধিকার দেওয়া হয়েছে। তবে তা জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইন দিয়ে আরোপিত যুক্তিসংগত বাধানিষেধ সাপেক্ষে। এটি নিরঙ্কুশ নয়। সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদ অনুসারে সংবিধান ও আইন মান্য করা, শৃঙ্খলা রক্ষা করা, নাগরিক দায়িত্ব পালন করা, জাতীয় সম্পত্তি রক্ষা করা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য। শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। অর্থাৎ পুলিশের। জনশৃঙ্খলার স্বার্থেই মিছিল-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় বিভিন্ন কারণে। গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় আইনের প্রয়োগ এবং সামরিক নেতৃত্বে দেশ পরিচালিত হওয়ার সময় পরিস্থিতি এক নয়। এখানে ভুল করলে চলবে না। ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান এবং ’৯০-এর গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে দেশের ষড়যন্ত্রমূলক দলীয় বর্তমান পরিস্থিতিকে এক পাল্লায় বিবেচনা করলে, বড় ধরনের ভুল হতে পারে।
এবার ১৯৭৬ সালের কথা উল্লেখ করা দরকার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর, শাসকচক্র বাংলাদেশ পুলিশের আইনে প্রথম পরিবর্তন নিয়ে আসে। সেখানে অধ্যাদেশের ২৯ ও ১০৫ ধারায় পুলিশকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়। বলা হয়, মিছিল-মিটিং করতে পুলিশের কাছে থেকে বিশেষ অনুমতি নিতে হবে। ইংরেজিতে লেখা সেই আইনে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু এখনো সেই আইন বলবৎ রয়েছে। শুধু ইংরেজির পরিবর্তে হয়েছে- বাংলা। কিন্তু এই ২০২৩ সালে, মানে ৪৭ বছর পরও দেখা যাচ্ছে- সেই আইনের প্রয়োজন রয়েছে শতভাগ। কিন্তু প্রেক্ষাপট ভিন্ন। তখন ছিল, গণমানুষের প্রতিবাদের ভয় আর বর্তমানে হচ্ছে- স্বাধীনতাবিরোধী সেই স্বৈরাচারী দোসরদের পরবর্তী প্রজন্মের ধ্বংসলীলার ভয়। অহেতুক সামাজিক বিশৃঙ্খলা এবং নৈরাজ্যের ভয়। রাজনৈতিক বোধহীন এবং স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যই পুলিশের এই আইনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে শতভাগ। এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই যে, সরকার পরিবর্তন হলেই পুলিশের এই আইন তুলে নেওয়া হবে। সেই নতুন সরকারও এই আইনকেই আরও কীভাবে পাকাপোক্ত করা যায়- সেই চেষ্টাই করবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি সেই কথাই বলে।
প্রকৃতপক্ষে আমাদের নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন, মিছিল-সমাবেশের জন্য কোনো ধরনের পুলিশি আইনের দরকার হতো না। এই ধরনের আইন মানেই একটি সভ্য দেশের মানুষের নৈতিক পরাজয়। তবু এটা সমর্থন করতে হয় এই কারণে যে- আমরা আজও সভ্য হতে পারিনি। আজও পারিনি দেশকে ভালোবাসতে, মানুষকে ভালোবাসতে। যে কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই ধরনের আইনকে সমর্থন করতে বাধ্য করে বাস্তবতা। যদি আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতাম, দেশের প্রতি দায়বদ্ধ থাকতাম, মানুষকে ভালোবাসতাম এবং প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারতাম তাহলে এই ধরনের আইনের প্রয়োজন হতো না।
পৃথিবীর এমন অনেক দেশ আছে, যেখানে কোনো চুরি-চামারি নেই। রাতের বেলায় সেই দেশের মানুষ দরজা খুলেই ঘুমায়। বহু দেশে মেয়েরা গভীর রাতে বাসায় ফেরে। কোনো ধরনের সমস্যা হয় না। যা আমাদের দেশে কল্পনাও করা যায় না। আমরা নানাবিধ ক্ষেত্রে পাশবিক, নির্মম ও হিংস্র বলেই আইনের দরকার হয়। এর মাধ্যমেই আমরা নিয়ন্ত্রিত হতে থাকি। এটা সত্যি, বিষয়টি মানবতার পরাজয়। যেহেতু সব কিছু মানুষকে ঘিরেই তৈরি হয়, তাই মানুষের আচরণ এবং প্রকৃতি বিবেচনা করেই আইনের দরকার পড়ে। যদি তাই না হতো, তাহলে মানুষের স্বভাব বা চরিত্রকে নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো আইনের সৃষ্টি হতো না। এটা কোনো সরকারের সমস্যা নয়। সমস্যাটা শতভাগ জনগণের। যেহেতু জনগণের মধ্যে থেকেই উঠে আসে সরকার, সেহেতু এই রাষ্ট্রীয় সমস্যাকে শুধু সরকারের বা বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলের ওপর দায় চাপালে হবে না। আগে নিজেকে সংশোধন করতে হবে। প্রকৃত মানবিক শিক্ষায় নিজেকে উন্নীত করতে পারলে, শুধু এটি কেন আরও অনেক ধরনের আইন রয়েছে, যার কোনো প্রয়োজনই হবে না। মানুষের বিকৃত রুচি, লোভ এবং হিংসাত্মক মনোভাবকে নিয়ন্ত্রণের জন্যই দরকার হয় রাষ্ট্রীয় আইনের। তবে এই ধরনের আইনের উপস্থিতিই প্রমাণ করে, আমরা সভ্যতার কোন স্তরে অবস্থান করছি?
কোনো সরকার ব্যবস্থাতেই, সরকারে থাকা একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে পুলিশকে দেওয়া এই ধরনের আইনের পরিবর্তন সম্ভব নয়। শুধু মিছিল-মিটিং নয়, এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই পরিবর্তন করতে হবে। যে দলই সরকার গঠন করুক, তারা চাইবে পুলিশ প্রশাসন তাদের নির্দেশমতোই চলুক। যেহেতু ‘পুলিশ’ সরকারি কর্মচারী, সেহেতু সরকারের নির্দেশ মতোই তাকে কাজ করতে হবে। অবশ্য এক্ষেত্রে ‘সময় এবং ‘পরিবেশ’ গুরুত্বপূর্ণ। ভাবতে হবে, কখন কোন সময়ে কোন ধরনের আইনের প্রয়োজন সমাজে। সেই বিবেচনাতেই তৈরি হয় ‘আইন’। এখন তার প্রয়োগ কীভাবে হবে- সেটা একেবারেই নির্ভর করে বাস্তবতার ওপর।
বর্তমানে পুলিশ বাহিনীর অধ্যাদেশে যে আইন রয়েছে মিছিল-সমাবেশ সংক্রান্ত ,তা পরিবর্তনের রাজনৈতিক চাহিদা তৈরি হয়নি। এই আইনের বহুমাত্রিক প্রয়োজন এখনো রয়েছে। যখন দেশের মানুষ অধিকাংশ সভ্য হবেন, দেশকে ভালোবাসবেন, বাঙালি সংস্কৃতিকে ভালোবাসবেন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদকে নিজের বলে ভাববেন- তখন এই ধরনের আইন আপনাতেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। একইসঙ্গে সরকারকেও ভাবতে হবে- সাধারণ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে কি না? যদি তা না হয়, জনগণকেই তার আচরণের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে- কোনো ধরনের রাজনৈতিক সমাবেশে পুলিশি অনুমতির প্রয়োজন নেই। মজার বিষয় হচ্ছে, এখনো যে সমস্ত সভা সমাবেশ হচ্ছে- তা কিন্তু পুলিশের দেওয়া বিভিন্ন শর্ত মেনে নিয়েই তা করতে হচ্ছে। এই ধরনের শর্ত মেনে নেওয়ার অর্থই হচ্ছে- আগে যা হয়েছে, হয়েছে এখন হবে না। আপনাদের শর্তে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
আমরা যখন সভ্য হব, তখন এই ধরনের আইন বাস্তবতা বিবর্জিত বলেই গণ্য হবে। কিন্তু তার আগে না। সরকারকে দোষারোপ না করে, নিজেকে সভ্য হিসেবে গড়ে তোলাই আমাদের মূল দায়িত্ব। এই দায়িত্ববোধ কীভাবে জন্ম নেবে, সেটা অবশ্য নির্ভর করে আমাদের পরিবার, শিক্ষাব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক মূল্যবোধের ওপর। শুধু শুধু সরকারের কাঁধে দোষ চাপালে, সমস্যা আরও জটিল হবে, সমাধান তো দুরস্ত! লেখক: সাংবাদিক
আমাদের যাপিত সময়কে বিশেষ করে রাজনৈতিক বাস্তবতাকে ‘কাফকায়েস্ক’ শব্দটি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। এর আগে, ফ্রানৎস কাফকার নামে প্রচলিত একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা যাক। একবার সরকারের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদ সভায় কাফকাকে আমন্ত্রণ জানাতে এলো কিছু লোক। কাফকা তাদের কাছে জানতে চাইলেন এই সভার অনুমতি সরকার দিয়েছে কি না। আয়োজকরা জানালেন যে হ্যাঁ তারা অনুমতি পেয়েছেন। কাফকা তখন আয়োজকদের বললেন, সরকারের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ সভার আয়োজনে সরকারই অনুমতি দেয়, সেটা তো আপনারা যে ঘটনার প্রতিবাদ জানাবেন তার চেয়েও বড় অপরাধ। গল্প অনুযায়ী কাফকা সেই আয়োজনে যাননি। এটা কাফকাকে নিয়ে একটি চালু গল্প। তবে, বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় এই শোনা গল্পটির ‘কাফকায়েস্ক’ বাস্তবতা রয়েছে। কাফকার গল্প-উপন্যাসে যে অসহনীয়, কঠিন বাস্তবতার অমীমাংসিত নিয়তিজাত পরিস্থিতি তাকে বোঝাতে ‘কাফকায়েস্ক’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। অনেকটা যেন আমরা বাস করছি কাফকার বাস্তবতায়। ‘কাফকায়েস্ক’ শব্দের অর্থ করা যেতে পারে অর্থহীন, বিভ্রান্তিকর, ভীতিকর জটিলতা অথবা পরাবাস্তব বিকৃতিতে ভরা নৈরাজ্যের বোধ-জাগানো অনুভূতি কিংবা দুঃস্বপ্নপীড়িত রকমের উদ্ভট কিছু। প্রতিটা শব্দই চারপাশের বাস্তব অবস্থার সঙ্গে আপনি মেলাতে পারবেন।
শুরুতে কাফকার নামে শোনা গল্পটির কথাই ধরা যাক। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, কর্মসূচিতে পুলিশের অনুমতির বিষয়টি আমাদের এখানে হালে বেশ আলোচনায় আছে। বাংলাদেশের সংবিধানের তৃতীয় অনুচ্ছেদের ৩৭ ধারায় বলা হয়েছে ‘জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধানিষেধ সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।’ কাজেই, যে কোনো দল বা মতের যে কোনো লোকের সভা-সমাবেশ করার অধিকার দেওয়া হয়েছে। এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখবে যে, এই সভা সমাবেশে কোনো ভায়োলেন্স হয় কি না।
সরকারের জাতীয় জরুরি সেবা ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, স্বাধীন মতপ্রকাশের জন্য সভা-সমাবেশ, মিটিং-মিছিল করা যাবে। এ জন্য শুধু মহানগরীতে পুলিশ কমিশনার আর জেলা পর্যায়ে পুলিশ সুপারের কাছে একটা আবেদন করতে হবে। অনুমতি পেলে দু-চার দিন পর্যন্ত পুলিশ নিরাপত্তা দেবে। সাম্প্রতিককালে আমরা দেখে আসছি, কেউ, বিশেষ করে বিরোধী দলের সভা-সমাবেশ করার জন্য পুলিশের অনুমতি চাইলে তারা অযাচিত শর্তারোপ করে এবং কোনো কারণ ছাড়াই সভা-সমাবেশের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে। এক্ষেত্রে জনদুর্ভোগ ও জননিরাপত্তার কথাও জানায় পুলিশ। ফলে এই অনুমতির বিষয়টি প্রশ্নের মুখে পড়ছে।
সংবিধান ও ওয়েবসাইটে সভা-সমাবেশের অনুমতি ও তাতে অংশ নেওয়া যত সহজ হিসেবে দেখাচ্ছে, আসলে তা নয়। গত ১৫ বছর সভা-সমাবেশে বিরোধীদের সরকার দাঁড়াতেই দেয়নি। সভা-সমাবেশের অনুমতি পেলেও কৌশলে তা পণ্ড করেছে। হয় সরকারের লাঠিয়াল বাহিনী, নইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। তবে ক্ষমতাসীন ও সমমনা সংগঠনগুলোর সভা-সমাবেশ করার অভিজ্ঞতা এর বিপরীত। এক্ষেত্রে পুলিশি আবেদন, অনুমতি এবং শর্তের কোনো আলাপই ছিল না। ঢাকা মহানগরী পুলিশ অধ্যাদেশ অনুযায়ী, পুলিশ কমিশনার জনসাধারণের শান্তি বা নিরাপত্তা রক্ষার জন্য যখনই প্রয়োজন মনে করবেন এবং যে সময়ের জন্য প্রয়োজন মনে করবেন, তখনই জনসমক্ষে উচ্চৈঃস্বরে বক্তৃতা দেওয়া, ব্যঙ্গসূচক অঙ্গভঙ্গি করা, ছবি, প্রতীক, প্ল্যাকার্ড বা এমন অন্য বস্তু বা মালামাল প্রস্তুত, প্রদর্শন বা বিতরণ করা, যা তার বিবেচনায় শালীনতা বা নৈতিকতার পক্ষে ক্ষতিকর অথবা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ব্যাহত হয়, সেগুলো নিষিদ্ধ করতে পারেন।
এখানে ‘অনুমতি’ শব্দটির ব্যবহার নিয়েই প্রশ্ন উঠতে পারে। অনুমতি নিয়ে সভা-সমাবেশ করতে হবে কেন, এই প্রশ্নও উঠছে। কারণ অনুমতি শব্দটির ক্ষেত্রে নাগরিক অধিকারের চেয়ে কর্তৃপক্ষ বেশি প্রকট থাকে। বরং আয়োজকরা সভা-সমাবেশের কথা কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে পারে, যেন আয়োজনটি নির্বিঘ্ন হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কাছে সভা-সমাবেশের কতগুলো আবেদন জমা পড়ে এবং কতগুলো প্রত্যাখ্যাত হয়, তার কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে সবশেষ গত বছরের ২ ডিসেম্বর অনুমতি ছাড়া ঢাকা মহানগরীতে যেকোনো ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে ডিএমপি। অনুমতি ছাড়া কেউ সভা-সমাবেশ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। পুলিশের এ সিদ্ধান্ত নিয়ে বিস্তর সমালোচনাও হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর জন্য দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি দায়ী। তারা ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার কথাও বলছেন।
গত এক যুগে সভা-সমাবেশ করেছে কিংবা করার চেষ্টা করেছে এমন রাজনৈতিক দলগুলো হলো আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও ভোটের হিসাবে তৃতীয় স্থানে থাকা চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বামপন্থি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলো। দেখা যাচ্ছে নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো নানা রকম পুলিশি নিষেধাজ্ঞা, অধ্যাদেশের ফলে তাদের কর্মসূচি পালনে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়ে আসছে। অন্যদিকে তাদের সরকারবিরোধী আন্দোলন এতটা স্বতঃস্ফূর্ততা এখনো পায়নি যে অনুমতি ছাড়া তারা রাজপথে নামবে। গত এক যুগে তিন থেকে চারটি স্বতঃস্ফূর্ত সমাবেশ হয়েছে ঢাকায়। এসব আয়োজনে অনুমতির প্রসঙ্গ আলোচনাতেই আসেনি।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি গণজাগরণ মঞ্চ টানা তিন মাস সমাবেশ করে। এ মঞ্চের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম শাপলা চত্বরে একই বছর ৫ মে সমাবেশ ডাকে, যা পরে সহিংসতায় গড়ায়। ২০১৫ সালে অতিরিক্ত ভ্যাট বাতিলের দাবিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘নো ভ্যাট’ আন্দোলন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং ওই একই বছর নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন ছিল উল্লেখ করার মতো ঘটনা। এ আন্দোলনগুলোর সূত্রপাত হয় প্রতিবাদী স্বতঃস্ফূর্ত সমাবেশ থেকে। অনুমতি নিয়ে, কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে যা সম্ভবই হতো না। এক্ষেত্রে ব্যর্থতার প্রসঙ্গ উল্লেখ না করেই ‘আরব বসন্তের’ কথা স্মরণ করা যেতে পারে। নব্বইয়ের দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এরশাদের পতনের ঘটনার অভিজ্ঞতাও রয়েছে। জিল স্কট হেরনের ‘বিপ্লব টিভিতে দেখাইব না’ গানটির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে ‘বিপ্লব টিভিতেও দেখাইব না, অনুষ্ঠিতও হইব না/ প্রচারিতও হইব না, সম্প্রচারিত ভি হইব না/ বিপ্লব কখনোই পুনঃপ্রচারিত হইব না, ভাইজান/ বিপ্লব হইব এক্কেরে সামনাসামনি-জ্যাতা-জিন্দা-টাটকা-গরমাগরম।’ (তর্জমা: নাসিফ আমিন) রাজনৈতিক দলগুলো গত ১৫ বছরে কতগুলো সভা-সমাবেশ করেছে, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধীরা সরকারের পদত্যাগ দাবি করে বলছে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীনরা বলছে সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। এই ‘কাফকায়েস্ক’ পরিস্থিতিতে রাজনীতির মাঠ গরম হয়ে উঠেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের বক্তব্য জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্য জনসভার আয়োজন করে থাকে। এসব জনসভায় যারা যোগদান করে তাদের অনেককে দেখা যায় শোভাযাত্রার মাধ্যমে জনসভার স্থলে উপস্থিত হয়। আমাদের দেশে যেভাবে শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত উন্মুক্ত স্থান, সড়ক অবরোধপূর্বক বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কর্র্তৃক জনসভার আয়োজন করা হয় পৃথিবীর কোনো উন্নত দেশে এভাবে জনসভা অনুষ্ঠিত হয় না। সভা-সমাবেশ আয়োজনে পুলিশের অনুমতি না পাওয়ার ক্ষেত্রেও তাই জনদুর্ভোগ, জননিরাপত্তার কথার এক ধরনের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের কর্মসূচির চরিত্র বদলের কথা ভাবতে হবে। না হলে তাদের যৌক্তিক দাবি-দাওয়া, সংগ্রাম, আন্দোলনের চেয়ে পুলিশের অনুমতি পাওয়া না পাওয়ার টানাপড়েনের মধ্যেই অনেকটা শক্তি হারিয়ে ফেলতে পারে। আর সেই কাক্সিক্ষত স্বতঃস্ফূর্ততা পেলে আন্দোলন তো আটকে থাকবে না, অনুমতি ছাড়াই জনতা তার রাজপথ দখল নেবে। স্বতঃস্ফূর্ততার অনুমতি লাগে না। লেখক: কবি ও সাংবাদিক
রাজা-বাদশাহদের যুগে সমাজে যারা জ্ঞানচর্চা করতেন, শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা করতেন তারা যেন নির্বিঘেœ কাজ করতে পারেন, সেজন্য তাদের নানাভাবে পুরস্কৃত করা হতো। আধুনিক রাষ্ট্রও জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্প-সংস্কৃতি জগতের কীর্তিমানদের পৃষ্ঠপোষকতা ও পুরস্কৃত করে। বাংলাদেশে সরকারি পদক-পুরস্কারের মধ্যে মর্যাদাসম্পন্ন হলো স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কার। এ ছাড়া শিশু-কিশোর সাহিত্যে অবদানের জন্য শিশু একাডেমি পুরস্কার, চলচ্চিত্র শিল্পে অবদানের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, খেলাধুলায় অবদানের জন্য জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার দেওয়া হয়। এত এত পুরস্কার দিয়ে কী হবে, যদি মানি লোকের মান না দেওয়া যায়। এসব পুরস্কার প্রদানের যে নীতিমালা আছে, তা থাকা না-থাকা সমান। স্বচ্ছতারও কোনো প্রমাণ নেই। পদক যারা পান, তারা যেন অলৌকিকভাবে পান। উপমহাদেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী কৃতী মানুষের দাম জীবদ্দশায় কম। মৃত্যুর পর বাড়ে। তাই তো মরণোত্তরের এত ছড়াছড়ি। রাষ্ট্রীয় সম্মান এ দেশে রাজনীতির হাতিয়ার। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই সম্মাননা পুরস্কারপ্রাপ্তদের কী কাজে লাগে?
বুধবার দেশ রূপান্তরে ‘রাষ্ট্রীয় পুরস্কার একদিনের সম্মান’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে পদকপ্রাপ্তদের কথায় স্পষ্ট হয়েছে দেশে গুণীরা কোনো কদর পান না। প্রতিবেদনে কবি নির্মলেন্দু গুণের স্বাধীনতা পুরস্কার ও একুশে পদক বেচে দিতে চাওয়ার প্রসঙ্গ এসেছে। হতাশা কোন পর্যায়ে গেলে দেশের সেরা প্রায় সব পুরস্কারে ভূষিত একজন রাষ্ট্রীয় পদক বেচে দিতে চান। কবি কি বাড়তি সুবিধা চেয়েছিলেন সরকারের কাছে? ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে তিনি একটি তিনতলা বাড়ি বানিয়েছেন। বিদ্যুৎ সংযোগ পেলেও গ্যাস সংযোগ মেলেনি। বারবার চেষ্টা করেও না। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পুরস্কারপ্রাপ্তদের সামান্য বাড়তি সুবিধা কি দেওয়া যায় না? সরকারি প্লট, ফ্ল্যাট বরাদ্দের ক্ষেত্রেও পদকপ্রাপ্তদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত বলে মনে করি আমরা।
বাংলাদেশে ভিভিআইপি, ভিআইপি ও সিআইপি এ তিন ক্যাটাগরিতে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়। ভিভিআইপি, ভিআইপি ও সিআইপিরা যথেষ্ট মর্যাদা পান। শুধু মর্যাদা নেই রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্তদের। তাদের সম্মান শুধু একদিনের। প্রধানমন্ত্রী যেদিন তাদের হাতে পদক তুলে দেন সেদিনই তারা বিশিষ্ট ব্যক্তি। বাকি দিনগুলোতে কেউ তাদের খোঁজ নেয় না। সরকারও তাদের কোনো খবর রাখে না।
কয়েক বছর ধরে স্বাধীনতা পুরস্কার ও একুশে পদক নিয়ে অপ্রীতিকর আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। ঘটেছে জালিয়াতির ঘটনাও। একুশে পদকের বানান ভুল, ভুল ব্যক্তিকে স্বাধীনতা পুরস্কার, বিদেশি বন্ধুদের দেওয়া ক্রেস্টে জালিয়াতি এমন ঘটনা রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের জন্য কাম্য নয়। আমরা মনে করি এসব করে জাতিকে বারবার বিব্রত করা হচ্ছে। রাষ্ট্রের কর্তাদের কেউ দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করতেই পারেন, কিন্তু বিনা জবাবদিহিতে কেউ ছাড় পেতে পারেন না। যারা পুরস্কার প্রদান কমিটিতে ছিলেন, তাদের সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসা করা উচিত, কোন বিবেচনায় তারা পুরস্কারের জন্য তাদের মনোনীত করেছেন।
একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত নাট্যজন আতাউর রহমান বলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উচিত সরকারি-বেসরকারি সব দপ্তরে পুরস্কার বা পদকে ভূষিতদের নামের তালিকা পাঠিয়ে তাদের যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করা। তাদের উপযুক্ত সম্মান দেওয়া সরকারের কর্তব্য।’ একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী মনিরুল ইসলামের অভিজ্ঞতা এক্ষেত্রে বেশ বিস্তৃত। স্পেনের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননাসহ দেশটির তিনটি পদকে সম্মানিত এই শিল্পী জানান, দেশটিতে রাষ্ট্রীয় সম্মানপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা মেডেল লাগিয়ে ঘোরেন, আর সেগুলো দেখলে তাদের রেলস্টেশনে ও বিমানবন্দরে বিশেষ সম্মান দেওয়া হয়। শিল্পীর আক্ষেপ ‘বাংলাদেশে এসব মেডেল লাগিয়ে ঘুরে বেড়ালে লোকে হাসবে।’ তার এই কথায় আমাদের রাষ্ট্রে ও সমাজে কৃতীমানের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পায়।
সভ্যতার দিক থেকে এগিয়ে থাকা দেশগুলোও কীর্তিমানদের পৃষ্ঠপোষকতা করে। সম্মানিত বা স্বীকৃতি দিলে জ্ঞানী-গুণী যতটা না উপকৃত হন, তার চেয়ে বেশি উপকৃত হন সাধারণ মানুষ। দেশে গুণিজনের সম্মানের সংস্কৃতি গড়ে উঠলেই সেই মহিমার দেখা মিলবে।
১৯৭৮ সালের ৩ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন সাংবাদিক ও লেখক মোহাম্মদ ওয়ালিউল্লাহ। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার বাউরিয়া গ্রামে ১৯০৭ সালের ১ মার্চ তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ওয়ালিউল্লাহ ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে বরিশাল বিএম কলেজে অধ্যয়ন করেন, কিন্তু পরীক্ষার আগে বার্মা চলে যাওয়ায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা হয়নি। তিনি ছাত্রজীবনে জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ব্রিটিশবিরোধী আইন অমান্য আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কারণে ১৯২১-২২ সালে তিনি কারারুদ্ধ হন। প্রথম জীবনে মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন এবং ‘লালকোর্তা’ ও ‘ওলী গান্ধী’ নামে পরিচিত হন। পরে তিনি মুসলিম লীগের সঙ্গে সম্পর্কিত হন (১৯৩৭)। কর্মজীবনে বার্মা, ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রে চাকরি করেন। তিনি যেসব পত্রিকার সঙ্গে জড়িত ছিলেন সেগুলো হলো দ্য রেঙ্গুন, ডেইলি নিউজ, স্টার অব ইন্ডিয়া, দ্য ওরিয়েন্ট প্রেস অব ইন্ডিয়া, দৈনিক আজাদ, দৈনিক পূর্বদেশ, দৈনিক ইত্তেহাদ ও দৈনিক সংবাদ। যুক্তফ্রন্ট সরকার ও পরবর্তী সরকারের তথ্য বিভাগের সহকারী সম্পাদক হিসেবে তিনি ১৯৫৪-১৯৬৭ সাল পর্যন্ত নিযুক্ত ছিলেন। সাংবাদিকতা সূত্রে তিনি মহাত্মা গান্ধী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ও মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ করেন। এই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি রচনা করেন যুগ-বিচিত্রা (১৯৬৭) নামে একটি মূল্যবান গ্রন্থ। তার রচিত অন্যান্য গ্রন্থ হলো : সংবাদ ও সাংবাদিক, সেকাল ও একাল, ফাঁসির মঞ্চে, বিচিত্র জীবন, আমাদের মুক্তিসংগ্রাম, বাংলাদেশের অভ্যুদয় ইত্যাদি। যুগ-বিচিত্রার জন্য তিনি ১৯৬৮ সালে দাউদ পুরস্কার লাভ করেন।
সাত বছর পর ভারতের মাটিতে অবতরণ পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে তারা গিয়েছিল সেখানে। তারপর এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে। টুর্নামেন্ট শুরুর এক সপ্তাহ আগে তারা পৌঁছালেন দেশটিতে। সেখানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হোটেলে।
বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বাবর আজমরা সেখানে পৌঁছানো মাত্রই উচ্ছ্বসিত জনতা ভিড় করেন। হায়দ্রবাদের বিমানবন্দরের বাইরে তাদের দেখে অনেকেই চিৎকার করে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন। বাবরের নাম উচ্চারণ করতও শোনা গেছে এসময়। পুলিশ উৎসুক জনতাকে আটকে রেখেছিল।
রাজনৈতিক বৈরি সম্পর্কের কারণে দুই দলের দেখা হয় না দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজে। বিশ্ব মাতানো ক্রিকেটার থাকলেও পাকিস্তানিরা খেলতে পারে না আইপিএলে। কারণ ঐ একটাই। তবে বৈশ্বিক বা মহাদেশীয় ইভেন্টে তাদের ঘিরে আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। সেটা দেখা গেছে এশিয়া কাপেও।
বিশ্বকাপ খেলতে আজ বাংলাদেশ উড়াল দিয়েছে ভারতে। সেই টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখে টাইগাররা। তামিম ইকবাল নেতৃত্ব ছাড়ার পর সাকিব আল হাসানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে অধিনায়কত্বের ভার। আর আজই জানা গেল, বিশ্বকাপের পর একদিনও তিনি অধিনায়কত্ব করবেন না।
গত ১১ আগস্ট তৃতীয় দফায় ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান। তখনই বলা হয়েছিল, সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপ ও ভারত বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
দেশের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এই বিশ্বকাপই শেষ। এরপর একদিনও (অধিনায়কত্ব) করবো না। যে কারণে আমি এশিয়া কাপের আগে নিতে চাইনি। এরপরও এটা না। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি হাসতে চাই, খেলতে চাই, পারফর্ম করতে চাই। এই একটা কারণে আমি করতে চাইনি।’
সাকিব যোগ করেন, ‘আর কোনে কারণ নেই। বেস্ট হয় যদি অধিনায়ক না থাকি। অধিনায়কত্ব কি আমার কোনো ভেল্যু এড করতেছে ক্যারিয়ারে এই স্টেজে এসে? আমি তো মনে করি না।’
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
বিশ্বকাপে তামিম ইকবালকে ওপেন থেকে সরিয়ে মিডল অর্ডারে ব্যাট করার প্রস্তাব দিয়ে ফোন করেছিলেন, তামিমের ভাষায় 'বোর্ডের টপ লেভেল' এবং 'ক্রিকেটের সাথে বেশ ইনভলভড' একজন।
তিনি তামিমকে বলেন, ''তুমি তো বিশ্বকাপে যাবা, তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলতে হবে। তুমি এক কাজ করো। তুমি প্রথম ম্যাচ খেলো না আফগানিস্তানের সঙ্গে।'
তিনি আবার বলেন, আচ্ছা তুমি যদি খেলোও, আমরা এমন একটা পরিকল্পনা করছি, তুমি যদি খেলোও, তাহলে নিচে ব্যাট করবে।''
তামিমের এমন বক্তব্যের পর প্রশ্ন উঠেছে, কেই সেই বোর্ড কর্মকর্তা? এক টিভি সাক্ষাৎকারে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'আমি এটা জানিনা।'
পরক্ষণেই তিনি বলেন, 'তবে যদি কেউ বলে থাকে, আমি সিউর তিনি অথোরাইজড পার্সন। আর এরকম কিছু বলে থাকলে আমি খারাপ কিছু বলেছে বলে আমি মনে করিনা। টিমের কথা চিন্তা করেই বলেছে। টিম কম্বিনেশন নিয়ে কথা বলে থাকলে দোষের কি আছে। আমার তো মনে হয় না দোষের কিছু আছে। নাকি এরকম কোনো প্রস্তাব দেয়া যাবে না। নাকি আপনি যা চাইবেন তাই করতে পারবেন?।'
বিশ্বমঞ্চে দেশের ক্রিকেটের দূত বলা যায় সাকিব আল হাসানকে। বর্ণিল এক ক্যারিয়ার গড়েছেন তিনি। তিন ফরম্যাটেই তিনি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। দেশের এই তারকা ক্রিকেটার নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপে যাচ্ছেন দলের অধিনায়ক হিসেবে। সেই টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই জানা গেল কবে তিনি অবসর নিচ্ছেন।
দেশের একটি ক্রীড়াভিত্তিক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের অবসরের সময় জানিয়েছেন। তার ইচ্ছে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর অবসর ঘোষণা করার। একইসঙ্গে তিন ফরম্যাটকে বিদায় জানাতে চান দেশের ক্রিকেটের এই তারা।
নেতৃত্ব ছাড়া ও অবসরের প্রসঙ্গ টেনে সাকিব বলেন, ‘আজকে এখন এই অবস্থায় বলছি, ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত ওয়ানডে খেলবো। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে টি-টোয়েন্টিকে বিদায় দেবো। টেস্টের অবসর শিগগিরই। তবে একেক ফরমেট একেক সময় ছাড়লেও আনুষ্ঠানিক অবসর ঘোষণা করবো ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর।’
অধিনায়কত্ব নিয়ে সাকিব বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপের আগে একাধিক সিরিজে বিশ্রামের কথা বলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে দলের বাইরে রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত এশিয়া কাপেও দলে ফেরানো হয়নি তাকে। যেহেতু সাকিবের নেতৃত্বে সেই আসরে খেলেছে বাংলাদেশ, তাই অনেকের ধারণা সাকিবের চাওয়াতেই দলের বাইরে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ।
তবে সাকিব এসব কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়ক ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দল পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলারও ছিল না! কারন পরের দিন সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকি রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা!'
দলের ভেতরের কথা ভালোভাবে না জেনেই মানুষ যেভাবে সমালোচনা করে সেটাকে হাস্যকর বলেছেন সাকিব। বাংলাদেশ অধিনায়ক সমালোচকদের মানসিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, 'মানুষের সাইলকোলজি এমন কেন! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!'
অধিনায়ক একা যে দল নির্বাচন করেন না সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন সাকিব। তিনি বলেন, 'রিয়াদ ভাইয়ের যে ডেডিকেশন ছিল তার দলের প্রতি যে অবদান ছিল। দলের হয়ে খেলার যে ইচ্ছে ছিল, সবকিছু সবাই দেখতে পেরেছে। আমার দায়িত্বতো পুরো দলটা নির্বাচন করার না। এমনটা হলে এশিয়া কাপের একদিন পরেই এনাউন্স করে দল দিয়ে দিতে পারতাম। এটা অনেক প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। অনেক বিষয় চিন্তা করতে হয়। অনেক কিছু চিন্তা করে দলটা গড়তে হয়।'
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।