
ইংরেজ চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক আলফ্রেড হিচককের জন্ম ১৮৯৯ সালের ১৩ আগস্ট লন্ডনে এক রোমান ক্যাথলিক পরিবারে। মা-বাবার দ্বিতীয় পুত্রসন্তান ছিলেন তিনি। তার স্কুল ও কলেজ ছিল জিসুইট ক্লাসিক স্কুল সেন্ট ইগনাতিয়াস কলেজ ও সালেসিয়ান কলেজ। শিক্ষাজীবন শেষে তিনি ড্রাফটসম্যান এবং অ্যাডভারটাইজিং ডিজাইনার হিসেবে কেবল কোম্পানি হেনলিতে কাজ করেন। ১৯১৯ সালে হেনলি টেলিগ্রাফ প্রতিষ্ঠিত হয় আর তার প্রথম সংকলনে প্রকাশিত হয় তার লেখা গ্যাস। ১৯২০ সালের দিকে এসে আলফ্রেড হিচকক আগ্রহী হয়ে ওঠেন ফটোগ্রাফি এবং চলচ্চিত্রের প্রতি। তিনি লন্ডনে ফিল্ম প্রডাকশনে কাজ করা শুরু করেন। প্যারামাউন্ট পিকচার লন্ডন শাখায় তিনি টাইটেল কার্ড ডিজাইনার হিসেবে কিছুদিন কাজ করেন। আলফ্রেড হিচকক ১৯৪০ সালে পুরো পরিবার নিয়ে হলিউডে যান। শুরু হয় তার হলিউডে চলচ্চিত্রজীবন। ডেভিড ও’ সেলজনিকের প্রযোজনায় চলচ্চিত্র ‘রেবেকা’ মুক্তি পায় ১৯৪০ সালে। ‘রেবেকা’ তখন অস্কারের আসরে বছরের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে পুরস্কার লাভ করে। ১৯৬০ সালে মুক্তি পায় ‘সাইকো’। চলচ্চিত্রটির ব্যবসায়িক সাফল্য আর দর্শকপ্রিয়তা ছিল চলচ্চিত্র ইতিহাসের অন্যতম মাইলফলক। ‘সাইকো’র পর ১৯৬৩ সালে মুক্তি পায় আরেক সাড়া জাগানো চলচ্চিত্র ‘দ্য বার্ডস’। ‘ফ্যামিলি প্লট’ ছিল তার পরিচালিত সর্বশেষ চলচ্চিত্র। ১৯৮০ সালের ২৯ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় তিনি ৮০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর কয়েক মাস আগে তিনি নাইট উপাধি লাভ করেন।
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। প্রখ্যাত আইনজ্ঞ এবং মানবাধিকারকর্মী। সাউথ এশিয়ান ফর হিউম্যান রাইটসের সদস্য। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এই বরেণ্য আইনজীবী সাইবার সিকিউরিটি আইন, নারী নির্যাতন ও শিশু অধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে
কথা বললেন দেশ রূপান্তরের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, সহকারী সম্পাদক তাপস রায়হান
দেশ রূপান্তর : ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের পরিবর্তে নতুন একটি আইন হয়েছে। তার নাম দেওয়া হয়েছে সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য?
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া : মাত্র ৪ দিন আগে এ আইনের একটা ড্রাফট দেখলাম। এখানে আইনের মৌলিক পরিবর্তন বলতে, দুটো ধারায় পরিবর্তন লক্ষ করেছি। কিছু ধারায় পরিবর্তন নিয়ে আসা হয়েছে। আর কিছু ধারা অবিকৃত রয়েছে। আগে শাস্তির পরিমাণ বেশি ছিল। এখন কমানো হয়েছে। নারী-শিশুদের প্রটেকশনের কোনো বিষয়ই তো নেই। তারাই তো অনলাইনে বেশি ভিকটিম। আবার সাংবাদিকদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে যে হয়রানির বিষয়টি ছিল ডিজিটাল আইনে, তা অবিকৃতই রয়েছে।
নতুন আইনের মাধ্যমে মানুষকে হয়রানির বিষয়টি যে বন্ধ হবে, তা কোনোভাবেই আমার মনে হয় না। জামিনযোগ্য ধারাতেই যে আপনি জামিন পাবেন, সেই গ্যারান্টি কিন্তু এখন আর নেই।
কেন এমন কথা বলছি? ফৌজদারি আইনের যে পরিস্থিতি ৫৩ বছরে দাঁড়িয়েছে, তার একটা লিগেসি আছে। সেটা হচ্ছে, জামিনযোগ্য ধারা মানে ১৯৭ ধারা অনুযায়ী জামিন দেওয়া। জামিন না দেওয়া না। জামিন অযোগ্য থাকলেও আমি জামিন দেব, তবে বুঝেশুনে দেব। তখন অনেক কিছু বিশ্লেষণ করতে হয়।
কোনো ঘটনার পরিস্থিতি, পারিপার্শি¦কতা বিবেচনায় নিতে হয়। সেইটি বিবেচনা করে জামিন দেওয়া হয়। জামিন অযোগ্য মানে কিন্তু জামিন না দেওয়া নয়। এক্ষেত্রে কিছু কন্ডিশন বিবেচনায় নিতে হয়। অল্প কথায় এটি পরিষ্কার করা সম্ভব নয়। তবে এই আইন বাতিল করতে হবে। না হলে আগের মতোই সব থাকবে। কোনো পরিবর্তন হবে না। বর্তমান আইনের কোনো সংশোধনেই কাজ হবে না। আইনের ফর্মটা পরিবর্তন করতে হবে। না হলে কোনো লাভ নেই।
দেশ রূপান্তর : আপনি কি বলতে চাচ্ছেন, আইন থাকতে পারে। তবে কিছু ধারার পরিবর্তন করতে হবে?
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া : না , তা না। এটা যদি আগামী নির্বাচনের কোনো প্রচার কৌশল হয়, তাহলে ভিন্ন কথা। তবে আইনের তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি।
দেশ রূপান্তর : কোন উদ্দেশ্যে এই আইন করা হলো?
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া : ২০১৮ সালেও একটা আইনের পরিবর্তন হয়েছে। আবার ২০২৪ থেকে যদি এই আইনের পরিবর্তন করে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে সামনে আনা হয়, সেটা জনগণ মেনে নেবে বলে মনে হয় না।
এখানে একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে, আইন করা হয় জনগণের প্রয়োজনে। আমার যৌক্তিক কথাই আইন। আমার প্রতিনিধিরা সেটাই বানাবে। যেহেতু জনগণের প্রয়োজনে সব কিছু হবে- সুতরাং তাদের চাহিদা মতোই আইন করতে হবে। সংবিধান তো তাই বলছে। সেখানে সমস্ত ক্ষমতার মালিক জনগণ। কিন্তু সরকার শুধু তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে ক্ষমতার চর্চা করবে। তাহলে ক্ষমতাটা কে চর্চা করছে, সেই তো জনগণ! তাহলে? এখন জনগণ বলছে, আমরা এই ধরনের আইন চাই না। নাগরিক হিসেবে আমার অধিকার থাকতে হবে তো।
দেশ রূপান্তর : তাহলে এই আইন বাতিল বা পরিবর্তন করতে হবে?
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া : কোনো বিকল্প নেই। যদি জনগণের মতামতকে আপনি গুরুত্ব দেন, তাহলে পরিবর্তন করতেই হবে। এখন একই বিষয় থাকবে, শুধু নামের পরিবর্তন হবে এটা কেমন হলো?
দেশ রূপান্তর : আপনি কি নতুন ফর্মের কোনো আইন চাচ্ছেন?
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া : আমাদের অলরেডি একটা আইন রয়েছে। আইসিটি অ্যাক্ট-২০০৬। সেটা বাতিল হয়নি। সেই আইনের ৫টি ধারা, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের ৬১-এর ১ এর উপধারা অনুযায়ী বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া আইনে তো আগের মতো সবই আছে।
দেশ রূপান্তর : নতুন আইনের কোনো দরকার তাহলে ছিল না?
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া : এটা তো আমরা শুুরু থেকেই বলছি। ঐ আইনেই প্রয়োজনীয় স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে একটা সমাধানে যাওয়া যেত।
দেশ রূপান্তর : এমনটি কি মনে হচ্ছে, এই আইন উদ্দেশ্যমূলক?
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া : আমি তা বলছি না। হতে পারে, এটা একটা নির্বাচনী কৌশল। তবে অধিকাংশ মানুষ কিন্তু এটার ওপর বিরক্ত।
এখনো কিন্তু অনেক সাংবাদিক, শিশু জেলে রয়েছে। অনেকেই এই আইনের মাধ্যমে নিপীড়িত হয়েছে। নাগরিক হিসেবে আমার কথা বলার অধিকার থাকতে হবে।
দেশ রূপান্তর : এর সমাধান কী?
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া : অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে, সর্বসম্মতভাবে আইন করতে হবে। কোনো কিছু চাপিয়ে দিলে হবে না। আমরা কিন্তু বলছি না যে, এই আইন লাগবে না। অবশ্যই লাগবে। আমি চাই, আরও ভালোমতো আইনটা হোক, এটি যাতে আমাকে নিরাপদ করে। তবে এটা হতে হবে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু আমাকে অনিরাপদ করে, এরকম বিধিবিধান বাদ দিতে হবে। আলটিমেটলি উদ্দেশ্য যদি রাজনৈতিক হয়, তাহলে তো মুশকিল।
দেশ রূপান্তর : আপনি কি আলোচনার মাধ্যমে এই আইন চূড়ান্ত করার কথা বলতে চাচ্ছেন?
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া : এ ছাড়া তো অন্য কোনো পথ নেই। নির্বাচিত সরকার এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হয়। শুধু শুধু এই সরকারের এমন দায়িত্ব নেওয়ার কোনো প্রয়োজন পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তাহলে কেন বিতর্কের সুযোগ দেব? সাংবাদিকরা যে সমস্ত বিষয়ে নিউজ করে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, তা কি ভুল বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল? তাতো নয়। ফলে সবাই যা চায়, সেটাই করা উত্তম। মানুষের চিন্তাচেতনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। সমাজের কোনো অংশের আপত্তি বা সংশয়ের মধ্যে এমন আইন চূড়ান্ত করা ঠিক হবে না।
মনে রাখতে হবে, আমার সমস্ত কাজের মধ্যে যেন, গণমানুষের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার বিষয়টিই আসল হয়। তখন আর কোনো সমস্যা থাকবে না। জোর করে কিছু করা ঠিক হবে না। মানুষের জন্যই তো আইন। ফলে আলোচনার বিকল্প নেই। সেখান থেকে অবশ্যই একটা সমাধান বের হয়ে আসবে। ওটাই হবে সর্বজনগ্রাহ্য। আমি আশাবাদী। ঐ রকম কিছু একটা হলে অবশ্যই ভালো হবে। তখন আর মানুষের মধ্যে কোনো ধরনের আতঙ্ক কাজ করবে না। এটাই ভালো পথ। আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। সমাধান আসবেই।
দেশ রূপান্তর : এ বিষয়ে সর্বশেষ কী বলবেন?
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া : নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে যারা আসবে, তারাই এই আইনটি চূড়ান্ত করুক। অন্য কেউ তা করলে সমস্যা হবেই। জনগণ সব তো মেনে নাও নিতে পারে।
দেশ রূপান্তর : আমাদের দেশে শিশু ও নারী নির্যাতন বিষয়ে আপনি কী বলবেন?
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া : নির্যাতনের ধরন পাল্টেছে। কিন্তু নির্যাতনের মাত্রা কমেছে বলে মনে হয় না। তবে আমরা অনেক ক্ষেত্রেই উন্নতি করেছি। এসিড সন্ত্রাস, বাল্যবিবাহসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের উত্তরণ হয়েছে। কিন্তু নারীর কর্মপরিবেশ এবং নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা পিছিয়ে আছি। এদিকে নজর দিতে হবে। তাহলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।
আমার ছেলে অনিরুদ্ধ সিলেটের একটি ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিকে পড়াশোনা করে। ঈদের পূর্ববর্তী সময় থেকে সব মিলিয়ে টানা এক মাস স্কুল বন্ধ ছিল। ছুটি বেশ লম্বা হওয়ায় স্কুল খোলার দিন তাকে বলেছিলাম, তোমার স্যার কেমন আছে, তুমি তা জিজ্ঞাসা করবে। সে মন খারাপ করে যা বলল, তাতে কিছুটা অবাক হয়েছি। যা বুঝলাম তা হলো, তাদের ক্লাসে পড়াশোনা ছাড়া অন্য যেকোনো বিষয়ে কথা বলতে মানা। অথচ, ছাত্রদের আন্তরিকতার সঙ্গে জানতে চাওয়াটা অপ্রয়োজনীয় কিছু নয়। মূলত এসব কোমলমতি শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষকদের কমিউনিকেশন গ্যাপ রয়েছে। তাই শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কাছে কি চায় শিক্ষকরা তা বুঝতে চান না, কিংবা বুঝলেও তারা তা কর্ণপাত করতে রাজি নন। অথচ তার বাংলা বইয়ের কভার পেজে লেখা ‘আনন্দ করে বাংলা শিখি’, গণিত বইয়ে লেখা ‘আনন্দ করে গণিত শিখি’, ইংরেজি বইয়ে লেখা ‘Fun with English’। যে ক্লাসে পড়াশোনা ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে ছাত্রদের কিছু বলতে বারণ, সেখানে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় কতটুকু আনন্দ আছে জানা নেই।
আমাদের ছেলেবেলায় পড়ালেখার ধরন ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। স্কুলে সিস্টেমেটিক পড়াশোনায় আনন্দ না থাকলেও, বিদ্যালয়ের বৈচিত্র্যময় পরিবেশ সহজেই শৈশবকে প্রাণবন্ত রাখত। সহপাঠী কিংবা শিক্ষকদের আন্তরিকতা ছিল মধুর। কোনো ছাত্র কিছু বলতে চাইলে শিক্ষক মন দিয়ে শুনতেন। শিক্ষকরা রাগী হলেও ছাত্রদের প্রতি দায়বদ্ধতা ছিল। তাই, কোনো ছাত্র ক্লাসে অনুপস্থিত থাকলে বাড়িতে কাউকে পাঠিয়ে স্কুলে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হতো। এখনকার সময়ের মতো তখন এত স্কুল ছিল না। সে জন্য কয়েক কিলোমিটার পথ হেঁটে বিদ্যালয়ে যেতে হয়েছে। গল্প কিংবা আড্ডার ছলে দলবদ্ধভাবে স্কুলে যাওয়ার আনন্দ ছিল অন্যরকম। মাঝে মাঝে গাছতলায় বসে ক্লাস করেছি। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বড়দের কাছ থেকে জোর গলায় নামতা গুনতে শিখেছি। তাতে ছিল এক ভিন্ন মাত্রার অনুভূতি। এখন সে রকম আনন্দ নেই।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু পরিবর্তিত হয়েছে। স্কুলের বৈচিত্র্যময় পরিবেশ যেমন নেই, তেমনি পাঠদানের প্রক্রিয়াও বদলে গেছে। এখন গ্রামের স্কুলগুলোতে খোলা বারান্দা কিংবা খেলার মাঠ থাকলেও, শহরাঞ্চলে সে সুবিধা নেই। বিদ্যালয়ের চারপাশে বন্দিশালার মতো রয়েছে উঁচু প্রাচীর করা বন্ধ গেট। এসব বদ্ধ পরিবেশ এবং রুটিনবদ্ধ ক্লাস কোমলমতি শিশুদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। জোর করে যা শেখানো হয়, তা মুখস্থ ছাড়া আর কিছু নয়। শিশুশ্রেণি থেকে সব শ্রেণিতেই এমন অবস্থা চলমান। অথচ, প্লে বা শিশুশ্রেণিতে পড়াশোনার চেয়ে স্কুলে বেশি সময় এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটির সঙ্গে জড়িত থাকা উচিত। যাতে আনন্দের মাধ্যমে শিশুরা পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পারে। শিক্ষায় উন্নত দেশগুলোতে বাচ্চারা যাতে আনন্দের সঙ্গে পড়াশোনা করতে পারে সেদিকে কড়া নজর রাখা হয়। অন্যদিকে পড়ার পাশাপাশি খেলাধুলার জন্যও প্রচুর সময় দেওয়া হয়।
এখন বিদ্যালয় বেড়েছে, বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নও হয়েছে। শিক্ষার্থী বেড়েছে, শিক্ষার হারও বেড়েছে। কিন্তু শিক্ষকদের আন্তরিকতা এবং আনন্দের মাধ্যমে পাঠদান কতটুকু এগিয়েছে জানা নেই। বইয়ের বোঝা ভারী হয়, কিন্তু আনন্দ-অনুভূতি নেই। একগাদা বই নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করা অসহনীয় ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা ছাড়া পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়ার প্রতিযোগিতা। ছাত্ররা মুুখস্থ পড়া গলাধকরণ করে। সর্বোপরি ভালো নম্বরের প্রত্যাশায় এবং পরীক্ষার মতো ভীতিকর অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রাথমিক স্তরেও শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়তে হয়। সম্প্রতি এক জরিপেও সে তথ্য উঠে এসেছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরম ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা ও নীলফামারী জেলার ৩০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ৪০৮ জনের ওপর জরিপ করেছে। তিনটি জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওপর পরিচালিত জরিপের তথ্যমতে, সেখানকার এক-তৃতীয়াংশের বেশি শিক্ষার্থী ‘প্রাইভেট টিউটরের’ কাছে পড়ে। আর প্রাইভেট টিউটরের কাছে না পড়লে শিক্ষার্থীরা ‘অপ্রত্যাশিত সমস্যায়’ পড়ে। এমনকি প্রাইভেট টিউটরের কাছে না পড়লে শিক্ষার্থী ফেল করবে বলে মনে করেন জরিপে অংশ নেওয়া এক- তৃতীয়াংশ মানুষ। এই ‘অপ্রত্যাশিত সমস্যা’ আমরা মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে বহুবার দেখেছি। এখন প্রাথমিক স্তরেও দেখা দিয়েছে। জরিপে তিনটি জেলার কথা উল্লেখ থাকলেও অন্যান্য জেলায় সমস্যা যে নেই, তা বলা যাবে না।
হিন্দি ভাষায় রচিত ‘তারে জামিন পর’ (Taare Zameen Par) সিনেমাটি আমরা অনেকেই দেখেছি। ছবিটির কাহিনি প্যাট্রিসিয়া পোলাক্কোর বই ‘Thank You, Mr. FalkerÕ’ থেকে অনুপ্রাণিত। সিনেমাটি মূলত একটি ছেলের জীবননির্ভর কাহিনি নিয়ে রচিত। ছোটবেলা থেকে ছেলেটি ‘ডিসলেক্সিয়া’ রোগে আক্রান্ত ছিল। যার নেতিবাচক প্রভাবে নিত্যদিনের জীবন-যাপনসহ পড়াশোনায় মনোসংযোগ ব্যাহত হতো। ভালো লাগার কোনো মুহূর্তকে খোঁজে পাওয়া তার জন্য দুষ্কর ছিল। মাঝে মাঝে ছবি এঁকে না বলা কথা তার মাকে বোঝাতে চাইত। ব্যস্ত জীবনে তার মায়ের সে আঁকিবুঁকি দেখার সময় হয় না। অন্যদিকে বাবা তো রেগেই আগুন। সেখানে তার শিক্ষককে দেখেছি সম্পূর্ণ ভিন্ন চরিত্রের একজন মানুষকে। যার ভালোবাসার পরশে ছেলেটি পেয়েছে দুরন্ত শৈশবকে। যেখানে বাবা-মা ছেলেকে বুঝতে পারেনি সেখানে শিক্ষক ছেলেটির আধবোঝা কুঁড়ির শৈশবকে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন।
আমাদের স্কুলের প্রত্যেক শিক্ষকও যদি সেরকম হতেন। অকারণেই মুখের গাম্ভীর্য ধরে না রাখতেন, হাসি-আনন্দে স্কুলে পাঠদান করাতেন তাহলে অনেক শিক্ষার্থীই তাদের মূল লক্ষ্যে পৌঁছতে পারত। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই তাদের প্রাইভেট টিউটরের কাছে যেতে হতো না। কারণ ছোটবেলার শ্রেণিকক্ষ হলো শিক্ষার মূল স্থান এবং শিক্ষক হলেন এই প্রক্রিয়ার মূল পরিচালক। সে জন্য, শিক্ষকদের মনের মতো করে ছাত্রদের বুঝতে হবে। তারপর শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা খুঁজে বের করতে হবে। শিক্ষকরা আন্তরিকতার সঙ্গে কথা বললে শিক্ষার্থীরাও অতি উৎসাহে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন। মূলত, কী শেখানোর পরিবর্তে কীভাবে শেখানো যায়, সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। শিক্ষাকে আনন্দের উপকরণ হিসেবে উপস্থাপন করাও নিপুণতা। বিচিত্র উপকরণের মাধ্যমে বৈচিত্র্যময় পাঠদানে শিক্ষায় আনন্দ আসে। তাই শিখন প্রক্রিয়ায় নানা বর্ণের কার্ড, চার্ট, মডেলের আয়োজন করা যেতে পারে। তাতে শিশুর প্রতিভা বিকশিত হবে। মূলত আনন্দের মাধ্যমে পাঠদান হবে মূল লক্ষ্য। সে জন্য আর্থ-সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে শিশুদের পড়াশোনাকে আনন্দময় করে তুলতে হবে।
লেখক : ব্যাংক কর্মকর্তা ও কলাম লেখক
অধ্যাপক ডা. সাকিল আহম্মদ
(শেষাংশ)
‘এমন হলে কী করণীয়?’
দ্রুত হাসপাতালে যাওয়া বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
‘আমরা যে শুনি ডেঙ্গু হলে রক্তক্ষরণ হয়। ফলে মানুষ মারা যায়। রক্তক্ষরণ হওয়াটা তাহলে কি ডেঙ্গু শকের চেয়ে মারাত্মক হলো না?’
ডেঙ্গু জ¦র মৃত্যুবরণ করার প্রধান কারণ নয়। মূল কারণ DSS বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। ডেঙ্গুতে রক্তক্ষরণে মৃত্যুর সংখ্যার চেয়ে ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। যে কোনো শকের মতো ডেঙ্গু শকের চিকিৎসা মূলত শিরায় স্যালাইন দেওয়ার মাধ্যমে করা হয়। নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করে স্যালাইনের পরিমাণ ও কতক্ষণে দেওয়া হবে তা ঠিক করতে হয়। এই কাজটা সূক্ষ্মভাবে হিসাব করে স্যালাইন সঠিকভাবে দেওয়ার মধ্যেই চিকিৎসার সাফল্য।
‘এভাবে ক’দিন স্যালাইন দিতে হয়?’
অধিকাংশ রোগী ২-৩ দিনে ভালো হয়ে যান। ক্ষেত্র বিশেষে ৩-৪ দিন লাগে।
‘আমার ওপরের তলার ভাবি তো ৭-৮ দিন ছিলেন আইসিইউতে?’
সম্ভবত উনার কোনো জটিলতা হয়েছিল। জটিল ডেঙ্গুকে Dengue Extended Syndrome বলে। দ্রুত ও যথাসময়ে রক্ত, আলট্রাসাউন্ড ও অন্যান্য পরীক্ষার মাধমে এই অবস্থা শনাক্ত করতে হয়।
‘আরেকটা বিষয় রক্তে প্লাটিলেট কমে গেলেই তো এমন জটিল হয়। ভাবির ক্ষেত্রে দেখেছিলাম, কাউন্ট হয়ে গেল ৫০ হাজার। চারদিকে দৌড় পড়ে গেল। প্লাটিলেট জোগাড় করা কী যে একটা ঝামেলার কাজ।’
সামাজিক মাধ্যমে চলা ডেঙ্গু রোগীর সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার বিষয়টা চলে এলো। রক্তক্ষরণ না হলে প্লাটিলেট ২০,০০০, এমনকি ১০,০০০-এ নেমে এলেও প্লাটিলেট দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের স্বাস্থ্য সংস্থা সিডিসি বলছে প্লাটিলেট দেওয়ার ফলে রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা কমে না। এ জন্য হাসপাতালে বেশি দিন থাকতেও হতে পারে। [Dengue Case Management for Clinicians (cdc.gov)]
পর্ব :৫। ডেঙ্গু শক-আগাম সতর্কবাণী জানতে হবে
‘আমার মেয়েকে তো বললেন ভর্তি করাতে হবে না। বাসায় গিয়ে কী করব? কী কী খেতে দেব? কী দেব না?’
বেশি করে পানি, খাবার স্যালাইন দেবেন। ডাবের পানিও ভালো। তবে লাল, বাদামি, কালো, চকলেট রঙের কিছু খেতে দেবেন না।
‘আমার মেয়ে তো চকলেট মিল্ক খুব পছন্দ করে!’ মেয়ের প্রিয় খাবারের জন্য মায়ের অনুমতি প্রার্থনা।
এটাও খাওয়ানো যাবে না। ডেঙ্গুতে অনেক সময় পাকস্থলিতে রক্তক্ষরণ হয় এবং বমির সঙ্গে আসা রক্ত লাল, কালচে, বাদামি, কফি বা চকলেট বর্ণের হয়। ফলে চকলেট মিল্ক খাওয়ালে বমিটা চকলেট মিল্কের জন্য হয়েছিল না ডেঙ্গুজনিত রক্তক্ষরণের জন্য হয়েছিল বোঝা যাবে না। ফলে সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু না হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সঠিক সময়। দেরি মানেই বিপদ।
‘বাসায় তো গেলাম। কীভাবে বুঝব কখন আবার হাসপাতালে আসতে হতে পারে? ছোট বাচ্চার প্রেশার তো আমরা মাপতে পারব না।’
ডেঙ্গু রোগী শকে যাওয়ার আগে কিছু লক্ষণ দেখা যায় এগুলোকে (ডেঙ্গু রোগীর) আগাম বিপদসংকেত বলে। যেমন পেটে ব্যথা, অনবরত বমি, চোখে বা মুখের ভেতর রক্তক্ষরণ, অস্থিরতা বা নেতিয়ে পড়া, শ্বাস কষ্ট, শোয়া থেকে উঠে বসলে বা দাঁড়ালে মাথা ঘোরানো। বাসায় থাকার সময় প্রচুর পানি, খাবার স্যালাইন, ডাবের পানি গ্রহণ করলে খারাপ হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যায়।
পর্ব : ৬ । খাদের কিনারা থেকে ফিরে আসার গল্প
‘আপনার কথা শুনে তো মনে হচ্ছে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা জটিল কিছু নয়। সহজ। মূল চিকিৎসা প্রেশার মেপে স্যালাইন দেওয়া। তাহলে এত মৃত্যুর মিছিল কেন? পত্রপত্রিকায় দেখলাম এ পর্যন্ত ৩০০-এর বেশি মানুষ মারা গেছেন।’
কয়েক বছর আগে ডেঙ্গুজনিত মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানের একটি কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করার সময় আমরা বেশ কিছু মৃত্যুবরণকারী রোগীর কেস পর্যালোচনা করি। সেখানে কয়েকটি কারণ উঠে আসে। সেগুলো সম্ভবত এখনো প্রযোজ্য ১. পূর্ণাঙ্গ শকের ডেঙ্গু রোগী কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছাচ্ছে একেবারে শেষ বেলায়। তখন করণীয় বিশেষ কিছু থাকে না। ২. ঢাকার বাইরের কিছু রোগী আসার পথে অথবা আসার পর পর হাসপাতালে মারা গিয়েছেন।
এদের অধিকাংশ ডেঙ্গু শক থাকা অবস্থায় নিজ উদ্যোগে অথবা জেলার কোনো ক্লিনিক বা হাসপাতাল থেকে রেফার হয়ে ঢাকা আসছিলেন। পথে পর্যাপ্ত স্যালাইন পাননি। রক্তচাপ কমে গিয়েছিল। ৩. আইভি স্যালাইন হয় কম না হলে অতিরিক্ত বেশি দেওয়ার কারণে। এই রোগীদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গু চিকিৎসার জাতীয় গাইড লাইন অনুসরণের ব্যত্যয় ঘটেছিল বলে ধারণা করা হয়। ডেঙ্গু রোগী সম্পূর্ণভাবে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা সম্ভব। ডেঙ্গু শকের রোগী রেফার করা একেবারেই অনুচিত।
‘আপনি তো অনেক বছর ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা করছেন। কোনো বিশেষ রোগীর কথা কী মনে আছে?’
২০০০ সাল। বাংলাদেশে বহু বছর পর ডেঙ্গু মহামারী শুরু। সে সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বহির্বিভাগে ১০ বছরের মেয়ে দেখছিলাম পালস পাচ্ছি না, ব্লাড প্রেশার শূন্যের কাছাকাছি। মেয়েটা কিন্তু দিব্বি হেঁটে বেড়াচ্ছে! ওয়ার্ডে ফোন করলাম। রোগী একজন যাচ্ছে। স্যালাইন রেডি করো। আসার সঙ্গে সঙ্গে স্যালাইন শুরু করে দিও। বাচ্চাটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছিল। ডেঙ্গুর সমস্যাটা এখানে। অনেক ক্ষেত্রেই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত রোগী স্বাভাবিক। তারপর এক লহমায় পড়ে গেল তো গেলই। তখন সুস্থ করা খুব কঠিন।
আমার ছোট মামার বাইপাস সার্জারি হয় ২০১৮ সালে। অপারেশনের পঞ্চম দিন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। বাইপাস সার্জারির পর গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা হলো প্লাটিলেট কমিয়ে রাখা আর স্বাভাবিক প্রয়োজনের চেয়ে একটু কম করে স্যালাইন দেওয়া; অন্যদিকে ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা হচ্ছে প্লাটিলেট বাড়ানো আর বেশি করে স্যালাইন দেওয়া। শাখের করাতের এর চেয়ে ভয়াবহ উদাহরণ আর হয় না।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের চিফ সার্জন অধ্যাপক ফারুক আহমদসহ পুরো টিম চিন্তিত। এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি তারা কখনো হননি। বিপদ। কী হবে এই রোগীর! আমি আর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাজমুল মিলে চিকিৎসা করলাম। প্লাটিলেট নেমে এলো ৪৮,০০০। আমরা ঠিক করলাম ডেঙ্গু গাইডলাইন ১০০ ভাগ অনুসরণ করব। ছোট মামা ভালো হয়ে বাড়ি ফিরলেন।
এমন আরও সব জটিল ডেঙ্গু রোগী সুস্থ করার মন্ত্র আছে আমাদের দেশের ন্যাশনাল ডেঙ্গু গাইড লাইনে। দরকার এটা যথাযথভাবে অনুসরণ করা। রোগীদের সুস্থ করার সহজ অস্ত্র কিন্তু এটাই।
[Pocket Guideline for Dengue Case Management (dghs.gov.bd)]
‘ধন্যবাদ, ডাক্তার সাহেব। মনে বেশ সাহস পাচ্ছি। আপনার এই কথাগুলো সবাইকে জানান।’
আপনাকেও ধন্যবাদ। চমৎকার সব বিষয়ের অবতারণা করার জন্য। এই যে জানালাম সবাইকে। দেশ রূপান্তর পত্রিকার মাধ্যমে।
দেশের অবস্থা এমন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে যে- অধিকাংশ সেক্টরে লোভী, আত্মকেন্দ্রিক এবং দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। অন্যায় পথে মানুষের চাহিদার এমন জ্যামিতিক বৃদ্ধি, সচরাচর কোনো দেশে লক্ষ করা যায় না। শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক বোধহীনতার কারণে, এক ধরনের হ্যালুসিনেশনে আক্রান্ত হচ্ছে লোভাতুর মানুষ। তারা যে কোনো উপায়েই হোক, অর্থ আয়ের জন্য উন্মুখ। ন্যায়-অন্যায় বিচারের সময়ও যেন তাদের হাতে নেই। ফলে দেশের কিছু মানুষের নৈতিকতা এবং বিচার-বিশ্লেষণের ক্ষমতাও প্রায় বিলুপ্তির পথে।
বাংলাদেশে বিভিন্ন সেক্টর দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এটা অস্বীকারের উপায় নেই। কিন্তু একই হারে দুর্নীতি এবং স্বার্থপরতার উল্লম্ফনের লাগামও টেনে ধরা যাচ্ছে না। এই লাগাম টানার বিষয়টি যাদের হাতে, তারাও যেন চোখ বন্ধ করে আছেন। অনেকটা বাঘের তাড়া খেয়ে, শুকনো পাতার মধ্যে হরিণের মুখ গুঁজে রাখার মতন। সেই হরিণ কিছুই দেখে না, জানে না বলে সে মনে করে কেউই তা জানে না, দেখে না। কিন্তু বাঘ তো নাছোড়বান্দা। অতঃপর হরিণের মৃত্যু বাঘের থাবায়। কিন্তু আমাদের সমাজের অধিকাংশ ক্ষেত্রে এখন আর হরিণ খুঁজে পাওয়া যায় না। সব জায়গাতেই ধূর্ত শেয়ালের বিচরণ। জঙ্গল ছেড়ে শহরে বসবাস করা, এইসব শেয়ালকে বাইরে থেকে আবার চেনাও যায় না। তাদের আকারআকৃতি মানুষের মতোই। কিন্তু প্রকৃতি এবং স্বভাব ঠিক শেয়ালের মতন। যে কারণে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা বেশ কষ্টসাধ্য। একটি সভ্য সমাজের প্রত্যাশা করলে, এইসব লোভী শেয়ালকে নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।
কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে দেশের বিদ্যমান টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সক্ষমতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এজন্য ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘৬৪ টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্প’ হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু সাড়ে চার বছর পার হলেও প্রকল্পের কাজ এখনো ৫৫ শতাংশ বাকি। ভবন নির্মাণ না হলেও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই আসবাব ও যন্ত্রপাতি কেনাকাটা চলছে পুরোদমে। অথচ আগামী ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। ১ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার এ প্রকল্পের ভবন নির্মাণেও ব্যবহৃত হচ্ছে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দেশ রূপান্তরে শনিবার প্রকাশিত ‘ভবন হয়নি আসবাবে সয়লাব’ শিরোনামের প্রতিবেদনে এমনটিই উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি মাত্র ৪৫ শতাংশ। তবে ৬৪ টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের মধ্যে মাত্র একটির নির্মাণকাজ শতভাগ শেষ হয়েছে এবং হস্তান্তরের অপেক্ষায় আছে। ১৮টির অগ্রগতি ৭৫ শতাংশের ওপরে, ১২টির অগ্রগতি ৫০ শতাংশের ওপরে, ১৫টির অগ্রগতি ২৫ শতাংশের ওপরে, ১৭টির অগ্রগতি ২৫ শতাংশের নিচে। ঝালকাঠি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের অগ্রগতি সর্বনিম্ন, যা মাত্র ৬ শতাংশ। তবে পণ্য কেনার ক্ষেত্রে ৪৪টি প্যাকেজের মধ্যে ১৩টির কেনাকাটা হয়ে গেছে, বাকি ৩১টি প্যাকেজের কেনাকাটা প্রক্রিয়াধীন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমানে নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় ভবন নির্মাণকাজে আগ্রহ কমে গেছে ঠিকাদারদের। ফলে তারা নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের চেষ্টা করছেন। যা নিয়ে বিপাকে রয়েছে ইইডি। তবে যন্ত্রপাতি ও আসবাব কেনা হয় প্রকল্প অফিস থেকেই। আর এ কাজে বড় অঙ্কের কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। ফলে ভবন নির্মাণ হোক আর না-ই হোক, আসবাব ও যন্ত্রপাতি কেনাকাটা পুরোদমেই চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রকল্প থেকে। আর টেকনিক্যাল স্কুলের সক্ষমতা বৃদ্ধির এ প্রকল্পের আসবাব মূলত নতুন ভবনের জন্যই। বিষয়টি শরীরের আগেই শার্ট তৈরি করা নাকি ঘোড়ার আগেই লাগাম কেনার মতন? আইএমইডির প্রতিনিধিদল শরীয়তপুর টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে দেখতে পান, ভবন নির্মাণ শেষ না হলেও আসবাবপত্র ঠিকই সরবরাহ করা হয়েছে। নির্মাণকাজে রয়েছে যথেষ্ট ধীরগতি।
অবশ্য এসব বিষয় গণমাধ্যমে প্রকাশের পর, কর্তৃপক্ষের কতটুকু বোধোদয় হবে, তা বলা না গেলেও এটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায়Ñ এরপরও তেমন একটা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে না! তবু এই বিষয়টির দিকে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া জরুরি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।