
আমি যেদিন শামসুন্নাহার হলে উঠি, মিরপুর খালার বাসা থেকে সব গুছিয়ে আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। আমার সঙ্গে একটা ট্রাঙ্কভর্তি কাপড় আর বই ছিল। মফস্বল থেকে আসা, ইউনিভার্সিটির হলে উঠতে চাওয়া সব শিক্ষার্থীর যেমন থাকে। সন্ধ্যা হয় হয় সময়ে রিকশা করে ট্রাঙ্ক নিয়ে হলের গলিতে ঢুকে আমি আক্ষরিক অর্থেই হা হয়ে গিয়েছিলাম কয়েক সেকেন্ড। এ কী দৃশ্য! হলের দেয়ালঘেঁষে ফুটপাতে একটু পর পর একেকটা যুগল ঘনিষ্ঠ অবস্থায় বসা। আমি আমার ততদিনের নাতিদীর্ঘ জীবনে একসঙ্গে এত প্রেমিক যুগল দেখিনি!
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘যুগল হঠাও’ অভিযান চলছে বলে সংবাদে দেখতে পাচ্ছি। ইউনিভার্সিটিতে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ার সময় ক্লাসেই জেনেছিলাম, ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে প্রোক্টরিয়াল ল অনুযায়ী কোনো পুরুষ শিক্ষার্থী যদি কোনো নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে পড়ালেখাবিষয়ক কোনো আলাপ করতে চায় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। কর্র্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে আলাপ করতে হবে এবং এই আইন ভঙ্গ করলে তাকে জরিমানা দিতে হবে। এমন একটা গল্প শুনেছি, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইচ্ছা করে এই আইন ভঙ্গ করে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন, সেই লাঞ্ছনা প্রশাসন করেছিল নাকি অন্য হিংসুটে ছাত্ররা তা অবশ্য আমার জানা নেই। কাজী নজরুল ইসলাম রেবেল ছিলেন, প্লেবয়ও ছিলেন। ফলে তার পক্ষে এহেন পাগলামি করা বিচিত্র নয়!
নারীকে নিষ্ক্রিয় এবং অবজেক্ট মনে করা নীতিনির্ধারকদের জন্য সর্বদা স্বাভাবিক, কেননা নীতিনির্ধারণী পদ্ধতি খোদ পুরুষতান্ত্রিক। ফলে আইন ভঙ্গ করা হলে নারী শিক্ষার্থীকে নয়, পুরুষ শিক্ষার্থীকেই দিতে হবে জরিমানা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এই আইন এখনো বলবৎ রয়েছে। ফলে যুগল হঠাও অভিযান চালানোর ক্ষমতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আছে। কিন্তু ওই যে নীতি বা নিয়মকানুন, তাতে আন্দোলন-সংগ্রাম করার এখতিয়ারও শিক্ষার্থীদের নেই। এমনকি কোনো কারণে ক্লাস বয়কট করলেও বিশ্ববিদ্যালয় জলপানি অর্থাৎ বৃত্তি বা স্টাইপেন্ড বন্ধ করে দিতে পারে, ছাত্রত্ব বাতিল পর্যন্ত করতে পারে।
যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব নিয়ম মানা আদর্শ ছাত্র দিয়ে ভর্তি থাকত তাহলে কেমন হতো! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস থেকে যদি আন্দোলন-সংগ্রামটুকু বাদ দেওয়া হয়, তাহলে সম্ভবত দেশের ইতিহাসই বদলে যেত।
শামসুন্নাহার আন্দোলনের পরের বছর আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই, হলে উঠে অনেক দিন পর্যন্ত অফিস রুমের সামনের ইউক্যালিপটাস গাছে একটা কালো শিফনের ওড়না আটকে ঝুলে থাকতে দেখেছি। শুনেছি ওটা শামসুন্নাহার হলে হামলার রাতের আলামত, সত্য-মিথ্যা যাচাই করা হয়নি কোনোদিন। তখন মেয়েদের হলে ঢোকার নির্ধারিত সময় ছিল রাত সাড়ে ৯টা, বিশেষ অনুমতি নিয়ে (আসলে একটা বিশেষ খাতায় নাম সই করে) ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে পেছনে হাউজ টিউটরের বাড়ির উঠান দিয়ে ঢোকা যেত। অনেকবার নাটক বা কনসার্ট দেখার জন্য ওই পথ ব্যবহার করে রাত করে হলে ঢুকেছি। এই নিয়মটাই মানতে যথেষ্ট কষ্ট হতো আমার। নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত যে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য সূর্যাস্ত আইন প্রচলিত ছিল তা আমি ভুলেই যেতাম। ওই সময় বাড়িয়ে নেওয়ার পেছনেও আছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন-সংগ্রামই।
শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, অন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েও এই রকম নানা প্রোক্টরিয়াল টিম নানা রকম অভিযান চালাচ্ছে। যেমন টং দোকান তুলে দেওয়া। সিগারেট বিক্রি বন্ধ করে দেওয়ার জন্য টং দোকান তুলে দেওয়া হচ্ছে আপাতদৃষ্টিতে ঘটনাটা ইতিবাচক মনে হলেও সঙ্গে আছে আরও ভয়ংকর খবরও। কোনো একটা মোবাইল টিম চাঁদাবাজি করে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ভাসমান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। ক্যাম্পাসের ভেতর টং দোকান বলতে তো কেবল চা-সিগারেটের দোকান নয়, নানা রকম খাবার-দাবার, ফল-ফুলের দোকানও!
প্রেম করবে বলে নারী শিক্ষার্থীদের সন্ধ্যার মধ্যে হলে ঢুকে যেতে হবে বা কোনো যুগল ক্যাম্পাসে বসে থাকতে পারবে না, চাঁদাবাজির হিসাব তুলতে সিগারেট বিক্রির কথা বলে টং দোকান তুলে দিতে হবে এসব কুযুক্তি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগত দমন অভিযানও চলছে। এই বহিরাগত বা অছাত্র বিষয়টা যদি আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ও সিট দখল/সিট বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পালন করা হতো তাহলে হয়তো অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীর জীবন অন্য রকম হতো। আমি আমার ছাত্রজীবনের প্রথম/দ্বিতীয় বর্ষের অনেক দুপুর চারুকলায় বা উদ্যানে বসে কাটিয়েছি। কারণ হলে ঘুমানোর জন্য একটা বিছানা শেয়ার করতে হতো, দুপুরে হলে ফিরে গেলে বিশ্রাম নেওয়া যাবে, এমন কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। দলীয় রাজনীতির সিট বাণিজ্য কোন পর্যায়ে যেতে পারে, তার একটা উদাহরণ সম্ভবত ইডেন কলেজে খুব সাম্প্রতিক সময়েই দেখা গেছে। দলবাজির সময় এই প্রোক্টরিয়াল বডি, তদন্ত কমিটি, বিশেষ কমিটি ইত্যাদি খুব একটা কাজ করে না। উল্টো টিএসসিতে দরিদ্র সিগারেটওয়ালার বাক্স পুড়িয়ে দেওয়ার খবর দেখতে পাই সোশ্যাল মিডিয়ায়।
আমি খুব ফাঁকিবাজ স্টুডেন্ট ছিলাম, প্রায়ই লেখাপড়া ছেড়ে দিতে চাইতাম। ফলে আমার শিক্ষাজীবনে অনেক ড্রপ। সঙ্গে হালকা-পাতলা সেশনজট নিয়ে ড্রপ দিয়ে দিয়ে এক মাস্টার্স শেষ করে আর একটা দুই বছরের মাস্টার্সে ঢুকে যাওয়ায় আমার পাঁচ বছরের শিক্ষাজীবন টেনে গিয়ে দশ বছরে ঠেকেছে। দশ বছর লাগিয়ে পাস করারও বারো বছর পর সার্টিফিকেট তুলতে গিয়ে নস্টালজিক হয়ে লাইব্রেরির সামনের খিচুড়ি খেতে গিয়ে দেখি ওরা আমাকে চিনতে পারছে। দ্বিতীয় মাস্টার্স করার সময় আমার স্কুলে ভর্তি হয়ে যাওয়া শিশুপুত্রকে প্রায়ই আমার সঙ্গে ইউনিভার্সিটিতে নিয়ে যেতে হতো। প্রায় সময়ই আমরা মা-ছেলে এই খিচুড়ি দিয়ে লাঞ্চ সারতাম। শুধু ওই খিচুড়ির দোকান না, খাতাপত্র বিক্রি করেন এক খালা, ফুচকা বিক্রি করেন এক মামা, দেখা হলেই আমার বড় ভাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করেন এমন এক সিগারেটওয়ালা এ রকম অনেকেই আছেন ক্যাম্পাসে। ক্যাম্পাসভিত্তিক এই মানুষদের রুটি-রুজি শুধু তাদের জন্য জরুরি না, অন্য শহর থেকে আসা হলে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য এই মামা-খালাদের ভালোবাসাটুকুও ভীষণ প্রয়োজনীয়।
লেখক : কবি ও লেখক
একটা সময় পর্যন্ত একুশ বলতে মনে করা হতো বায়ান্নর মহান ভাষা আন্দোলনের একুশকেই। একুশ দিয়ে আরেকটি ডেটলাইন যোগ হয় ২০০৪ সাল থেকে। সেটি একুশে আগস্ট। যা একদিকে বিয়োগান্ত, আরেক দিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সমঝোতা বা ন্যূনতম বিশ্বাসের কফিনে ঠোকা শেষ পেরেক। বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিনের কেক কাটা স্থগিত রেখে মিলাদ আর দোয়ায় পনেরো আগস্টের শোকের আবহ মেনে নিলেও একুশ আগস্টের দায় এড়ানোর কোনো ফাঁকই রাখেনি বিএনপি।
বরং, অন্তত চুপ না থেকে এখনো আগ বাড়িয়ে একুশ আগস্টের বর্বর-বিয়োগান্ত ঘটনার দায় অস্বীকারের মাধ্যমে বিরোধকে আরও পোক্ত করে চলছেন দলটির কোনো কোনো নেতা। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তখন ‘ওই ঘটনা আওয়ামী লীগই ঘটিয়েছে, গ্রেনেড শেখ হাসিনার ভ্যানিটি ব্যাগেই ছিল’ ধরনের মন্তব্যের পরও থামার দরকার মনে করেননি তারা। ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ বা নিজেদের দায়িত্বের ব্যর্থতা শিকার তো আরও পরের বিষয়। জজ মিয়াসহ নানা নাটক এবং পারলে শেখ হাসিনাসহ তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ নেতাদেরই দোষী সাব্যস্ত করে ফেলা হয়।
ভয়াবহ সন্ত্রাসী ওই হামলার শিকার হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দলীয় নেতাকর্মীরা মানববর্ম রচনা করে তাকে রক্ষা করলেও গ্রেনেডের আঘাতে আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারান। গ্রেনেডের যন্ত্রণা ও ক্ষতচিহ্ন নিয়ে বেঁচে আছেন অনেকে। প্রথমে গ্রেনেড হামলার জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করা হয়নি। বলা হচ্ছিল তাদের ব্যর্থতা-দায়িত্বহীনতার কথা। অল্প সময়ের মধ্যে ওই সরকারের মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততার নমুনা মিলতে থাকে, যা পরে বিচারের রায়েও প্রমাণ হয়।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের এ দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে কলঙ্কিত গ্রেনেড হামলার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা শিকার পর্বেও যায়নি সরকার। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়া শুরুর আলামত না দেখে তখনকার আওয়ামী লীগ সন্দিহান হয়ে পড়ে। উপরন্তু বাহিনীর সদস্যদের ব্যস্ত করে দেওয়া হয় ঘটনার আলামত নষ্ট করাসহ কল্পকাহিনির স্ক্রিপ্ট তৈরির কাজে।
বেঁচে যাওয়া ভুক্তভোগী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বছর বছর ইতিহাসের জঘন্যতম গ্রেনেড হামলার বার্ষিকী পালন করেন, আর ফোঁসেন। তাদের কাছে এটি ‘নিপীড়িত হওয়ার বর্ষ’। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর ওই মৃত্যুপুরীতে পরিণত হওয়া, স্পিøন্টারের আঘাতে হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকার ঘটনা তাদের চোখে ভাসে। এখনো আতঙ্কে ফেলে। যার অনিবার্য জেরে সংলাপ-আলোচনা-সমঝোতার কথা শুনলে তারা চটেন। মিলমিশ-সমঝোতার আহ্বান তাদের কাছে কাটা ঘায়ে নুন ছিটা দেওয়ার মতো। কারা, কেন ঘটনা ঘটিয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া কারও জন্য ওই ঘটনার হোতাদের সঙ্গে সমঝোতা-সংলাপের আহ্বান আরও তাড়না দেয়। পরিহাসের মতো লাগে। চলমান বিরোধ মেটানো বা রাজনৈতিক সমঝোতার পথে একুশ আগস্টের গ্রেনেড হামলা অবশ্যই অন্যতম বড় বাধা। আক্রান্তরা তো নিশ্চিত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যেই চালানো হয়েছিল হামলাটি।
নানা পর্ব শেষে ২০০৮ সালে আদালতে দেওয়া দুটি অভিযোগপত্রে বিএনপি সরকারের একজন উপমন্ত্রী, তার ভাইসহ ২২ জনকে এ ঘটনার জন্য আসামি করা হয়। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আদালতের অনুমতি নিয়ে অধিকতর তদন্ত হয়। এ তদন্তের পর আসামি করা হয় বিএনপি নেতা তারেক রহমান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ আরও ত্রিশজনকে। দীর্ঘ ১৪ বছর পর ২০১৮ সালের অক্টোবরে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায় হয়। আদালত গ্রেনেড হামলায় জড়িত থাকার দায়ে বিএনপি নেতা সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। একই সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিদেশে পলাতক তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছে ১১ আসামির।
বিএনপির তরফ থেকে বরাবরই এগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলা হচ্ছে। অর্থাৎ ঘটনাটি দেশের বৃহৎ দল দুটির বিরোধকে কেবল আরও জোরালো নয়, একেবারে স্থায়ী করে দিয়েছে। যেনতেন বুঝজ্ঞান বা মলমে এ ব্যথা-বিরোধ সারানোর মতো নয়। তারা পরস্পরকে কেবল শত্রু ভাবতেই শৃঙ্খলিত করে নিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই তখনকার ক্ষমতাসীন সরকার ও প্রশাসনের ওপরই গ্রেনেড হামলার দায় বর্তায়। তারা ওই দায় মোচনের চেষ্টা হিসেবে দুঃখপ্রকাশ বা অন্তত ভর্ৎসনার কাজটিও না করে উপরন্তু আক্রান্তদেরই দোষী সাব্যস্তের চেষ্টা করেছেন। তা কেবল রাজনীতির নয়, রাষ্ট্রের কাঠামোকেও তছনছ করে দিয়েছে।
দেশে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে প্রাথমিকভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া সরকারের দায়িত্ব। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার মতো এত বড় অপরাধ যারা করেছিল, তাদের চিহ্নিত করা, গ্রেপ্তার করা এবং আইনের হাতে সোপর্দ করার জরুরি কর্তব্যটি তৎকালীন সরকার সম্পাদনে কেবল চরমভাবে ব্যর্থতারই পরিচয় দেয়নি; বরং ঘটনাপ্রবাহ অন্য খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালিয়েছে।
বিএনপি সেই প্রশ্নের তীর থেকে আজও নিস্তার পায়নি। ভুক্তভোগী দল আওয়ামী লীগের কাছে তা কত নির্মম-বেদনার জানে কেবল তারাই। এখনো মাঝেমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে ২১ আগস্ট নিয়ে যে ধরনের বক্তব্য দেওয়া হয়, সেটা আওয়ামী লীগের ক্ষোভ ও ক্ষুব্ধতায় প্রলেপ দেওয়ার মতো নয়। বরং কষ্টকে আরও উসকে দেয়। ২১ আগস্টের ঘটনাকে সামনে এনে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিএনপির রাজনীতি করার অধিকারই নেই। এমনকি কেউ কেউ বিএনপিকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করার দাবি পর্যন্ত করেন।
মর্মান্তিক ঘটনাটির রেশ রাজনীতির বাইরের মানুষকেও আর কত দিন ও কীভাবে টেনে যেতে হবে? দুটি রাজনৈতিক দলের বিরোধ অরাজনৈতিকদেরও খাদের কিনারে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের সুদূরপ্রসারী প্রভাবের শিকার তারা। এখানে ক্ষত নিরাময়ের ক্ষেত্র খোঁজা বড় কঠিন। নৃশংস ওই গ্রেনেড হামলার ঘটনায় একদলকে বেশি, আরেক দলকে কম দায়ী করে পিঠ চুলকানির মতো মোড়লি সালিশে তাদের মিলিয়ে দেওয়ার অবস্থা এখানে নেই। আক্রান্ত দলটির মতো সাধারণ শ্রেণির অনেকেও একুশে আগস্টের হামলার বিষয়টিকে নিছক একটি সন্ত্রাসী ঘটনা ভাবতে পারে না। আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে বিরোধের পেছনে অন্যতম দুই তারিখ ও কারণ পনেরো আগস্ট ও একুশে আগস্ট। দুটি বিশেষ তারিখ বা ঘটনায় কেন রাজনীতির পথ আটকে থাকবে এ প্রশ্নের জবাব মেলাও কঠিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ও ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট অভিশপ্ত তারিখ দুটি ক্যালেন্ডার থেকে তুলে দেওয়াও সম্ভব নয়।
রাজনীতির গতিপথে বিরোধ, ভিন্নমত, মতপার্থক্য স্বাভাবিক হলেও হত্যা-বিনাসের মানসিকতা অস্বাভাবিকতাকেই কেবল বাস্তব করে তুলছে। মত ও পথের ভিন্নতা সম্প্রীতি ও সৌহার্দের পরিবেশ যে মাত্রায় নষ্ট করেছে তা অনেকটা ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুধ দেবো কোথায়’র মতো। একুশে আগস্টের গ্রেনেড বাংলাদেশের রাজনীতিকে সেই ব্যথায় কাতরিয়ে ছাড়ছে। রাজনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত দল বিএনপির মধ্যে অতীতের ভুল শুধরানোর রাজনৈতিক কৌশল অস্পষ্ট। আত্মসমালোচনাও নেই।
ভবিষ্যতে বিএনপি তার সঙ্গী-সাথিদের নিয়ে ক্ষমতায় গেলে দেশে প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির চর্চা বন্ধ করবে কি না, সে কথা স্পষ্ট করছে না। বরং সুযোগ পেলেই হুমকি-ধমকিতে চারদিক আরও উতলা করে দেওয়া হয়। ঘুরে দাঁড়াতে হলে তাদের রাজনীতিতে পরিবর্তনের বার্তা দিতেই হবে। একুশে আগস্টের বিয়োগান্ত ঘটনার দায় স্বীকার-অস্বীকারেও এখন আর তেমন কিছু যায় আসে না। তবে পনেরো আগস্ট ট্র্যাজেডির তারিখে কেক কাটা বন্ধ করে বেগম জিয়ার জন্মদিনে দোয়া-মোনাজাতের বিলম্বিত সিদ্ধান্ত দেশের রাজনীতির বিরোধের ব্যথায় কিছুটা হলেও মলম ফেলেছে। একুশে আগস্ট নিয়ে কী করা যায় বা তারা করতে পারে তা ঠিক করতে হবে বিএনপিকেই। যা হতে পারে বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠের সহাবস্থান-সমঝোতা তথা অন্তত আলোচনা-সমঝোতাসহ মুখ দেখাদেখির দাওয়াই।
গত মাসে ‘পলিটব্যুরো’র এক বৈঠকে চীনের নেতারা এই বছরের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারকে ব্যাখ্যা করেছেন ‘নির্যাতন’ হিসেবে। এতটা খোলামেলা বক্তব্য চীনা কমিউনিস্ট পার্টি থেকে সাধারণত শোনা যায় না। তারা বর্তমান পরিস্থিতির কথাই বলছিলেন। কিন্তু এটা চীনের এমনসব সমস্যার খানিকটা প্রকাশ করে দিয়েছে, যাতে তার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যকার পদ্ধতিগত ব্যবধান যে কত প্রকট, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
গত কয়েক দিনে চীনের প্রকাশিত বেশ কিছু পরিসংখ্যান বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। জুলাই মাসে দেখা গেছে চায়নিজ ভোক্তারা গত বছরের তুলনায় আরও কম দামে পণ্য কিনছেন। মানে ব্যাপক মুদ্রা সঙ্কোচন ঘটছে। অর্থনীতির আকার ক্ষীণ হয়ে আসছে এবং রাষ্ট্রের দীর্ঘস্থায়ী চাহিদার ঘাটতি উন্মোচন করে দিচ্ছে। জুলাইতে আরও দেখা যায়, চীনের বৈদেশিক বাণিজ্য ক্রমশ আরও দুর্বল হয়েছে। রপ্তানিতে শুরু হয়েছে তীব্র পতন, বোঝা যায় বৈশ্বিক চাহিদা কমে আসছে। এদিকে আমদানি রেখাও গড়িয়ে নামছে, বোঝা যায় অভ্যন্তরীণ চাহিদাও কমছে। এভাবে উভয় সংকট কেন দেখা দিল? নিশ্চয় বড় কোনো কারণ আছে। কিন্তু কারণগুলো অস্পষ্ট। এই অস্পষ্টতা যে বার্তা দেয়, তা হচ্ছে, চীনে কোথাও আরও গুরুতর কিছু ভুল হয়েছে।
আশা ছিল, মহামারী কাটিয়ে চীন মহাসমারোহে ফিরে আসবে। এ-নিয়ে বছরের গোড়ার দিকে খানিকটা উত্তেজনাও ছিল। অথচ ফলাফল হয়েছে ঠিক উল্টো। বিশেষ করে গাড়ি, বাড়ি, বিমানের মতো বড় বড় টিকিট আইটেম এবং ব্যক্তিগত বিনিয়োগের খাতগুলো যাকে বলা হয় চীনের অর্থনীতির মেরুদণ্ড তাতে বছরের প্রথমার্ধেই ব্যাপক পতন ঘটেছে। এমন ঘটনা চীনের ইতিহাসে খুব একটা ঘটেনি, বরং দীর্ঘ কয়েক দশকের মধ্যে এবার প্রথম।
বেসরকারি সংস্থা এবং উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়েছে। লোকবল নিয়োগেও তারা ব্যয় সঙ্কোচন নীতি গ্রহণ করছে। অথচ বেকারত্বের হার তুঙ্গে। তরুণদের মধ্যে শতকরা ২১ ভাগ বেকার যা যুক্তরাজ্যের তুলনায় দ্বিগুণ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় প্রায় তিনগুণ। স্নাতক সমাপন হলে প্রতি বছর গ্রীষ্মে ১১ থেকে ১২ মিলিয়ন শিক্ষার্থী বিদ্যায়তন থেকে বেরিয়ে আসে কাজ করার উপযুক্ত হয়ে। কিন্তু কাজ নেই। কাজ খুঁজে পাওয়ার সমস্যা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। এটা কঠিন পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। চীনের শ্রমবাজারের অবস্থাও এমন দাঁড়িয়েছে যে, বেশিরভাগ কর্মস্থলের পদ শূন্য, তবু কোম্পানির চাহিদা নেই। সিংহভাগ চাকরিগুলোর হালত এককথায় কম দক্ষতা, কম বেতন। উৎপাদন ও নির্মাণের মতো উচ্চমানের প্রতিষ্ঠানের চাকরি এবং বাজারের তুলনায় ছোটখাটো যন্ত্রাংশ তৈরি টাইপ অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির বাজার এবং কর্মসংস্থান কয়েকগুণ বড়। এর প্রভাব পড়ছে শিক্ষায়ও। সবকিছুই একটা বৃত্তাকারে ঘুরছে।
এটা বলা ভুল হবে যে, এই সবের মূলে রয়েছে মহামারীর আঘাত। না, মোটেও তা নয়। চীনের অর্থনীতিকে ওজনদার করেছে যেসব পণ্য, তার বেশিরভাগ তৈরি হচ্ছে বেশ কয়েক বছর ধরে। এমনকি যখন হুয়াওয়ে, আলিবাবা, টেনসেন্ট ও টিকটকের মতো চীনের গ্লোবাল ব্র্যান্ডগুলো নিয়ে বিশ্বে দাবানলের মতো আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছিল, তখনো তাদের আয় কমেনি, বরং লকলক করে ওপরে উঠছিল।
এরই মধ্যে চীন ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ নিয়েছে, আর সারা বিশ্বে তার পদচিহ্ন এঁকে দিয়েছে। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই), একটি বিশ্বব্যাপী অবকাঠামো উন্নয়ন কৌশল যা ২০১৩ সালে ১২৬টি দেশ এবং ২৯টি আন্তর্জাতিক সংস্থা যৌথভাবে বেল্ট অ্যান্ড রোড নির্মাণে চীনের সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তির মাধ্যমে গৃহীত হয়।
এটিকে শি জিনপিংয়ের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিআরআই শি জিনপিংয়ের ‘মেজর কান্ট্রি ডিপ্লোম্যাসি’ কৌশলের একটি কেন্দ্রীয় উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা চীনকে তার ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা এবং মর্যাদা অনুসারে বৈশ্বিক বিষয়গুলোর জন্য একটি বৃহত্তর নেতৃত্বের ভূমিকা গ্রহণ করার আহ্বান জানায়। ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত, ১৪৬টি দেশ বিআরআই-তে স্বাক্ষর করে। পাশাপাশি, এ কথাও উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো বৈশ্বিক সংস্থাগুলোতেও চীন শুধু প্রভাব নয়, বরং রীতিমতো শাসন চালিয়েছে।
এত সব ঈর্ষণীয় কৃতিত্ব এবং যুগান্তকারী সাফল্য সত্ত্বেও চীন গত এক দশক বা তারও বেশি সময় ধরে রাশি রাশি সংকটের সৃষ্টি করছে এবং ক্রমেই সেগুলো সমস্যার স্তূপ তৈরি করে যাচ্ছে। মন্দঋণের পাহাড় জেগেছে। অলাভজনক ও অবাণিজ্যিক অবকাঠামো নির্মাণ হয়েছে দেদার। ফলে নিষ্ফলা রিয়েল এস্টেট, খালি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক, স্বল্প-ব্যবহৃত অ্যাপার্টমেন্ট, যাত্রীশূন্য পরিবহন সুবিধা এবং কয়লা, ইস্পাত, সৌর প্যানেল ও বৈদ্যুতিক যানবাহন থেকে সৃষ্ট অতিরিক্ত এনার্জির বোঝা তৈরি হয়েছে। এসব হচ্ছে সব সংকটের প্রধান উদ্দীপক। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির হার থমকে গেছে। বলা যায়, চীনের দুর্ভাগ্য যে, দেশটি এখন বিশ্বের সর্বোচ্চ স্তরের বৈষম্যের চূড়ায় অবস্থান করছে এবং বিষয়টি শীর্ষস্থান দখলে রাখার মতো গর্বের নয় নিশ্চয়। বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কি নৈতিক, সামাজিক এবং বস্তুগত ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে কাক্সিক্ষত ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করার দিকে এগিয়ে যেতে পারবে?
পৃথিবীর অন্য যে-কোনো দেশের তুলনায় চীনের বার্ধক্যের গতি অস্বাভাবিক দ্রুত। কিন্তু সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই শোচনীয়। ২৯০ মিলিয়ন অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকাংশ সামাজিক সুবিধা পায় না বা সুবিধা পাওয়ার যোগ্যতায় উত্তীর্ণ নয়। চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে সারা দেশের অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যা ২০২০ সালের তুলনায় ২.৪ শতাংশ তথা ৬৯.১ লাখ বৃদ্ধি পেয়ে ২৯ কোটি ২৫ লাখ ১০ হাজার।
উপরন্তু মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়েছে শি জিনপিংয়ের রাজনীতি। তার ব্যর্থ উন্নয়ন মডেলের প্রভাব মোকাবিলা করার জন্য তিনি যে রাজনৈতিক অস্ত্র ব্যবহার করছেন, তা একটি ক্রমশ দমনমূলক, রাষ্ট্রকেন্দ্রিক এবং নিয়ন্ত্রণকারী শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলেছে।
বলা যায়, সময়টা আসলেই কঠিন। এটা চীনা নাগরিকদের পরীক্ষার সময়। বিশেষত ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত সমাজের জন্য মহাপরীক্ষাযাদের সঞ্চয়ের বেশিরভাগ ফুরিয়ে গেছে কোনো এক রিয়েল এস্টেট সেক্টরে একটি বাড়ি খুঁজে পেতে গিয়ে; অথচ কাঠামোগত পতনের কারণে তা হয়ে উঠছে পিঠ ন্যুব্জ করে দেওয়া বোঝার মতো। বেশিরভাগ হাউজিং স্টক অতিরিক্ত নির্মাণ, লেনদেনে দরপতন এবং মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা হারানোর কারণে বসে যাচ্ছে। কিন্তু এটা ঘটছে ছোট ছোট শতাধিক শহরে। বেইজিং, শেনজেন বা সাংহাইয়ের মতো বড় শহরগুলোতে যেহেতু ঘটছে না, তাই শহরের লোকেরা খবরও পায় না।
চীনের নেতারা এই বছর ভোগ্য চাহিদা বাড়াতে উঠেপড়ে লেগেছেন এবং প্রাইভেট ফার্ম ও উদ্যোক্তাদের ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করার বিষয়ে সোচ্চার হয়েছেন। এমনকি তারা তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থকে পার্টির রাজনৈতিক লক্ষ্যের সঙ্গে একীভূত করে নিতে দলের চাপের মুখে পড়ছেন, কেউ কেউ শাস্তির শিকারও হয়েছেন। আমরা এখনো জানি না, এই ধরনের বাগাড়ম্বর আসলে কতটা ফল বয়ে আনবে।
আগামী সপ্তাহ এবং মাসগুলোতে আমরা হয়তো সর্বোচ্চ আশা করতে পারব যে, কর্র্তৃপক্ষ তাদের আর্থিক ও বাজেট নীতি এবং আবাসন প্রবিধান ও অবকাঠামোতে অর্থায়নের প্রয়োজনে ঋণ পলিসিকে আরও সহজ করবেন। এমন ব্যবস্থাও থাকতে পারে, যা একই সঙ্গে ভোক্তাবান্ধব হবে, আয়ও বাড়াবে, ফলে খরচ বাড়লেও তাতে ভারসাম্য বজায় থাকবে।
তবে এসবে আসন্ন শীতকালে অর্থনীতিকে সাময়িক স্বস্তি দিতে পারবে বটে। কিন্তু এটা তো স্থায়ী সমাধান নয়। অর্থনীতির অন্তর্নিহিত দুর্বলতা এবং বৃহত্তর কর্র্তৃত্ববাদ এখন চীনের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য এবং বলা যায় একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ বাহ্যত যার পরিবর্তন দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ।
একবিংশ শতকের দুই দশক পেরিয়ে যাওয়ার পরেও চীনের অর্থনীতির এই টালমাটাল পরিস্থিতি বিশ্বের ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্যও একটি বড় হুমকি। হুমকি সংক্রামিত হয়েছে চীনের অভ্যন্তরেও। একসময় যে গণচীন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বিশ্ব মঞ্চে অগ্রসর হয়েছে এবং গণতন্ত্রকে একপাশে সরিয়ে রাখলেও উদারপন্থার পথ ধরে চলেছে, নিজের এবং বিশ্বের স্বার্থে তাকে শাসনব্যবস্থা পুনর্বিন্যাস করতে হবে। নিশ্চয় সে সেটা পারবে। কঠিন সময়ে এর বিকল্প তার সামনে নেই।
দি গার্ডিয়ান অনলাইন থেকে ভাষান্তর : মনযূরুল হক
লেখক: অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির চায়না সেন্টার এবং সোস-এর একজন গবেষণা সহযোগী
‘মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন এবং মানব পাচার অপরাধের শিকার ব্যক্তিবর্গের সুরক্ষা ও অধিকার বাস্তবায়ন ও নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইন’ নামে ২০১২ সালে একটি আইন করা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এখন পর্যন্ত এই আইনে মোট কতজনকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে? প্রায়ই জানা যায়, ‘আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রের ... সদস্য গ্রেপ্তার’ এদের পরবর্তী সময়ে কোথায় পাচার করা হয়, তা জানা না থাকলেও এমনটি বলাই যায় তারা সবকিছু ম্যানেজ করেই চলে যান লোকচক্ষুর আড়ালে। কয়েকদিন পর আবার শুরু করেন মানব পাচার ব্যবসা। দেশীয় চক্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক চক্র মিলে যে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন, খোঁজ নিলে জানা যাবে এর সঙ্গে জড়িয়ে আছেন অনেক রাঘববোয়াল। ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নেটওয়ার্ক ঘুরেফিরে একটি নেটওয়ার্কে চলে আসে। যার নেতৃত্ব দেখা যাবে, ইউরোপ বা আমেরিকা থেকে আসছে। তবে এই মুহূর্তে আমরা যে চক্রের কথা জানতে পেরেছি, তার নেতৃত্ব রয়েছে মিয়ানমারে। মিয়ানমারের দুই রোহিঙ্গা নাগরিকের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে একটি আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্র। এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কয়েকজন বাংলাদেশি প্রতারক। এই চক্রের বাংলাদেশের হোতা মো. ইসমাইল ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। সংস্থাটি বলছে, এই চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন এলাকার তরুণ এবং যুবকদের কোনো অর্থ ও পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রলোভন দেখাত। এ বিষয়ে দেশ রূপান্তরে ‘পাসপোর্ট ভিসা টাকা ছাড়াই মালয়েশিয়া পাঠাত চক্রটি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। প্রতিবেদনে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এত অনিশ্চয়তা জেনেও একজন মানুষ কেন এমন ভয়ংকর প্রতারণার ফাঁদে পা দিচ্ছে? এখানে ঠিক কোন ধরনের মনস্তত্ত্ব কাজ করছে, তা বলা খুব একটা কঠিন নয়। সোজা ভাষায় বলতে গেলে পাসপোর্ট, ভিসার বিড়ম্বনা এড়িয়ে সহজেই যদি মালয়েশিয়ার মতো দেশে গিয়ে চাকরি পাওয়া যায়, সমস্যা কী? এমন সরল বিশ্বাসের কারণেই প্রতারণার খপ্পরে পড়ছেন তারা। প্রতিবেদনে সেই প্রতারণার ভয়াবহ নির্যাতনের চিত্র ফুটে উঠেছে। প্রথমে ট্রলারে তারা যাচ্ছেন মিয়ানমার, সেখান থেকে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর হয়ে মালয়েশিয়া। এই দীর্ঘ সমুদ্রপথে রয়েছে মিয়ানমার-থাইল্যান্ডের কোস্টগার্ড। এই চক্রটি গত ১৯ মার্চ ২২ জনকে নিয়ে একটি ট্রলারে যাত্রা শুরু করে মিয়ানমার উপকূলে পৌঁছালে সেখানকার কোস্টগার্ড ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করে। অন্য তিনজনকে চক্রের এক সদস্য কৌশলে ছাড়িয়ে তার ক্যাম্পে নিয়ে যান। সেখানে আটকে রেখে মুক্তিপণের জন্য নির্যাতন করেন। তার মধ্যে ২২ জনের একজন জহিরুলের পরিবারের কাছে তারা ৬ লাখ টাকা দাবি করেন। তার পরিবার গত ১০ মে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা দেয় এবং ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পর দেওয়ার কথা জানায়।
এইভাবে মিয়ানমারে অনেককে নির্যাতন করা হয়। সেই নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে পরিবারের কাছ থেকে আদায় করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা। যাদের কাছ থেকে টাকা পাওয়া যেত, তাদের পাঠানো হতো থাইল্যান্ড হয়ে মালয়েশিয়া। মাঝখানে অবশ্যই কোনো না কোনো চ্যানেলে তারা ম্যানেজ করতেন। কিন্তু মালয়েশিয়াতেও থাকতেন আরেক দালাল। তিনি টাকা পাওয়ার পরই সবকিছু ব্যবস্থা করে দিতেন। আবার নির্যাতন করে কাউকে হত্যাও করা হচ্ছে।
এসবের সুষ্ঠু প্রতিকার করার জন্য অবশ্যই নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ রয়েছে। কীভাবে এসব প্রতারক চক্র দিন দিন ডালপালা বৃদ্ধি করতে পারছে, সে বিষয়ে গভীর সুষ্ঠু তদন্ত দরকার। শুধু তদন্ত করলেই হবে না, তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা না নিলে এই ধরনের প্রতারণার হাত থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করা দুরূহ। এই চক্রের নেপথ্য শক্তিকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা দরকার। একইসঙ্গে এ বিষয়ে সরকারি উদ্যোগে প্রচারণা চালাতে হবে। কোনোভাবেই যে পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া মালয়েশিয়ার মতো দেশে যাওয়া যায় না, সেই বিষয়ে জনগণকে সচেতন করা প্রয়োজন। আর প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে তাদের পরিণতি হবে নির্মম এবং নৃশংস। তাহলেই একমাত্র সরকারের আন্তরিকতা পরিলক্ষিত হবে। আমরা এটাই দেখতে চাই।
২০০৬ সালের ২১ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন প্রখ্যাত সানাইবাদক ও শাস্ত্রীয় সংগীতের কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব বিসমিল্লাহ খাঁ। তার জন্ম ১৯১৬ সালের ২১ মার্চ ভারতে। তিনি ভারতের উচ্চাঙ্গ শাস্ত্রীয় সংগীতের জগতে ওস্তাদ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন এবং তিনি তৃতীয় ব্যক্তি, যিনি ‘ভারতরতœ’ পদক পেয়েছেন। তার বাবা পয়গম্বর খাঁ ও মা মিঠান। বিসমিল্লাহ খাঁর ডাকনাম ছিল কামরুদ্দিন। তার পূর্বপুরুষ বিহারের ডুমরাও রাজ্যের রাজসংগীতজ্ঞ ছিলেন। তার সংগীতগুরু ছিলেন প্রয়াত আলী বকস্ বিলায়াতু। বিসমিল্লাহ খাঁ ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক শিয়া মুসলমান। তবে জ্ঞানের দেবী সরস্বতীরও তিনি পূজা করতেন। ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খাঁ ১৯৩৭ সালে কলকাতায় অল ইন্ডিয়া মিউজিক কনফারেন্সে সানাই বাজিয়ে সানাইকে ভারতীয় সংগীতের মূল মঞ্চে নিয়ে আসেন। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি দিল্লির লাল কেল্লায় অনুষ্ঠিত ভারতের প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসে তিনি তার অন্তরের মাধুরী ঢেলে রাগ কাফি বাজিয়ে মুগ্ধ করেছিলেন ভারতবর্ষকে। তার যোগ্যতায় সানাই ও ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খাঁ সমার্থক হয়ে গেছেন। পৃথিবীর নানা দেশে তিনি তার সংগীতপ্রভা ছড়িয়েছেন। এত সুনাম ও অর্জন সত্ত্বেও তিনি অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন করতেন। সাইকেল-রিকশাই ছিল তার চলাচলের মূল বাহন। সংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য বিসমিল্লাহ খাঁ ‘ভারতরতœ’, ‘পদ্মবিভূষণ’, ‘পদ্মভূষণ’, ‘পদ্মশ্রী’সহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেয়েছেন সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি। তিনি সত্যজিৎ রায়ের ‘জলসাঘর’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এবং গুঞ্জে উঠে সানাইয়ের অংশে সানাই বাজিয়েছেন। গৌতম ঘোষ তার জীবন ও কর্মের ওপর প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছেন।
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের জামালপুর ইউনিয়নের শ্রীকলা গ্রামে মায়ের সঙ্গে নানার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল দেড় বছরের রুহান। গত মঙ্গলবার বাড়ির উঠানে খেলা করছিল শিশুটি। পরে বাড়িতে না দেখে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে তাকে পাশের পুকুরে ভাসতে দেখেন স্বজনরা। পুকুর থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রুহানকে মৃত ঘোষণা করেন।
একইদিন হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের আউশকান্দি ইউনিয়নের সদরাবাদ গ্রামে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তারা হলো সদরাবা গ্রামের মালেক মিয়ার ছেলে ইকবাল হোসেন, বাবুল হোসেনের ছেলে রাফি আহমেদ। পরিবারের সদস্যদের অগোচরে বাড়ির পাশের পুকুরে গোসল করতে নেমে তলিয়ে যায় ইকবাল ও রাফি। খোঁজখুঁজির একপর্যায়ে পুকুরে তাদের লাশ দেখতে পান স্বজনরা।
দেশে কোনো না কোনো প্রান্তে প্রতিদিনই এরকম ঘটনা ঘটছে। গত এক মাসে তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা একশর বেশি। চলতি বছর জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬১।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো দুর্ঘটনার মধ্যে পানিতে ডুবে মৃত্যু তালিকার প্রথম দিকেই থাকবে। এটি একটি অবহেলাজনিত জাতীয় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাস্থ্য ও তথ্য জরিপ ২০১৬ অনুযায়ী, বছরে ১ থেকে ১৭ বছর বয়সী ১৪ হাজার ৪৩৮ শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এ সংখ্যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। এসব মৃত্যুর ৮৮ শতাংশই বাড়ি থেকে ২০ মিটারের মধ্যে ঘটে। পানিতে ডোবার ঘটনা বেশি ঘটে মিঠাপানিতে, যেমন বাড়ির পাশের পুকুর-দীঘি-ডোবায়। খেলতে খেলতে কিংবা গ্রামাঞ্চলে হাত-মুখ ধুতে গিয়েও পানিতে ডুবে মৃত্যুর অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। আবার কখন ডুবে যাওয়া শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে একই সঙ্গে দুজন বা তারও বেশি মৃত্যুর ঘটনাও আছে। এ ছাড়া নদী বা খালে ডুবেও মৃত্যুর ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে।
দেশে দীর্ঘদিন ধরে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু নিয়ে কাজ করছে গণমাধ্যম উন্নয়ন ও যোগাযোগবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘সমষ্টি’। সংবাদপত্রে প্রকাশিত পানিতে ডুবে মৃত্যুর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তারা। সংগঠনটির হিসাবে, ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত পানিতে ডুবে ৩ হাজার ৮৪৬ জন মারা গেছে। এর ৮৮ শতাংশই ৫-৯ বছর বয়সী শিশু।
প্রতিষ্ঠানটির তথ্য বলছে, ২০২০ সালে মৃত্যু হয়েছিল ৮০৭ জনের। এর মধ্যে ৫ বছরের শিশু রয়েছে ২৬০টি। এর পরেই আছে ৫-৯ বছর বয়সী ২৮৭, ১০-১৪ বছর বয়সী ১০৬, ১৫-১৮ বছর বয়সী ৩০ জন। আর ১৮ বছরের বেশি বয়সী ১৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০২১ সালে মৃত্যু ছিল প্রায় দ্বিগুণ। ওই বছর পানিতে ডুবে মারা গেছে ১ হাজার ৩৪৮ জন। এর মধ্যে অনূর্ধ্ব ৫ বছর বয়সী শিশুমৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৫৯৭। তার পরেই আছে ৫-৯ বয়সী ৩৮৭, ১০-১৪ বছর বয়সী ১০৬ ও ১৫-১৮ বছর বয়সী ৪৩ জন। এ ছাড়া ১৮ বছরের বেশি বয়সী তরুণ মারা গেছে ২১৫ জন।
২০২২ সালে মারা গেছে ১ হাজার ১৩০ জন। এ সময় অনূর্ধ্ব ৫ বছর বয়সী শিশু মারা গেছে ৫৬৬ জন, যা মোট মৃত্যুর প্রায় অর্ধেক। অন্যদিকে ৫-৯ বছর বয়সী শিশু মারা গেছে ৩৬৩ জন। এরপরই ১০-১৪ বছর বয়সী ৯৩, ১৫-১৮ বছর বয়সী ৩৮ ও ১৮ বছরের বেশি বয়সী ৬৭ জন মারা গেছে।
২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে দেশে পানিতে ডুবে মারা গেছে ৫৬১ জন। এর মধ্যে ২৯০ জনের বয়স ছিল ৫ বছরের মধ্যে। ৫-৯ বছর বয়সী শিশু মারা গেছে ১৯৪ জন। ১০-১৪ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা ৪৮। ১৫-১৮ বছর বয়সী রয়েছে ৯ জন। এ ছাড়া ১৮ বছরের বেশি বয়সী মারা গেছে ১৩ জন।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশের সব বিভাগেই পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার প্রায় কাছাকাছি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় চট্টগ্রাম বিভাগে। এরপরের অবস্থান ঢাকা বিভাগের। এ বিভাগে রাজধানী ঢাকাসহ প্রতিটি জেলায় গড়ে ৪০ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
বছর জুড়ে পানিতে ডুবে শিশু মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটলেও সাধারণত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে যায়। এ সময় বর্ষার কারণে পুকুর, খাল-বিল ও নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার ফলে শিশুমৃত্যুর ঘটনা বেশি ঘটে। পানির উৎস বাড়ির যত কাছাকাছি থাকে, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি ততই বেড়ে যায়।
পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু নিয়ে ‘সমষ্টি’র পরিচালক মীর মাসরুর জামান রনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় আমরা যে তথ্য পাই সেখান থেকে এ প্রতিবেদন তৈরি করা। বাস্তবে চিত্র আরও ভয়াবহ। মাত্র ২৫ শতাংশ মৃত্যুর সংবাদ আমরা পেয়ে থাকি।’
তিনি বলেন, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর একটি বড় কারণ হচ্ছে পারিবারিক অসচেতনতা ও অবহেলা। শুধু বড় জলাশয় বা পুকুরে ডুবে মৃত্যু হয় বিষয়টা এমন নয়। অনেক সময় বালতির পানিতে ডুবেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ দুর্ঘটনাগুলো ঘটে থাকে পরিবার বা বাবা-মায়ের অসচেতনতার কারণে। ছয় বছরের বেশি বয়সী একটি শিশুর মৃত্যু হয় পানিতে ডুবে। অথচ এ বয়সের শিশুদের সাঁতার শেখানোর কথা। যদি তারা সাঁতার জানত তাহলে এ মৃত্যু অনেকাংশে কমে আসত।
বাংলাদেশ সরকার ২০১১ সালের স্বাস্থ্যনীতিতে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুকে একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। শিশু নিরাপত্তায় পাইলট প্রকল্পে পানিতে ডুবে মৃত্যুও বিবেচনা করলেও সরকারের বাস্তবায়িত প্রকল্প এখনো সীমিত। গত বছর সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশুযতœ কেন্দ্রের মাধ্যমে ‘শিশুদের প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষা এবং শিশুর সাঁতার সুবিধা প্রদান’ নামে কর্মসূচি নিয়েছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে ২৭১ কোটি ৮২ লাখ ৫৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘ইনটেগ্রেটেড কমিউনিটি বেইজড সেন্টার ফর চাইল্ড কেয়ার, প্রটেকশন অ্যান্ড সুইম-সেইফ ফ্যাসিলিটিজ’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সারা দেশে ১৬টি জেলার ৪৫টি উপজেলায় আট হাজার শিশুযত্ন কেন্দ্র পরিচালনা করা হবে। এসব যতœকেন্দ্রে কাজ পাবে ১৬ হাজার গ্রামীণ নারী। প্রতিটি যতœকেন্দ্রে ২৫ শিশুকে ভর্তি করা হবে। একই সঙ্গে ৬-১০ বছর বয়সী শিশুদের সাঁতার শেখানো হবে।
মীর মাসরুর জামান বলেন, ‘শিশুমৃত্যু ঠেকাতে হলে শহর থেকে গ্রামপর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সেখানে প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি অথবা কমিউনিটির নেতাদেরও কাজে লাগানো যেতে পারে।’
তিনি বলেন, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু কমানোকে গুরুত্ব দিয়ে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ শিশু একাডেমির অধীনে প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। যদিও এসব প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে বেশিদিন হয়নি। প্রয়োজনে এ ধরনের প্রকল্পকে সরকারীকরণ করতে হবে।
শিশু-কিশোর সংগঠক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নদীর বাইরেও খাল-বিল, জলা, ডোবা-পুকুর এখন যথেষ্ট রয়েছে। ফলে পানির সঙ্গে এ দেশের মানুষের মিলেমিশে বসবাস করতে হবে। এজন্য সাঁতার শেখার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে স্কুলের কারিকুলামের মধ্যেই থাকবে সাঁতার শেখা।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার একটা কথা বলি, আনন্দের মধ্যে এবং চারপাশের চেনা প্রতিবেশ ও পরিবেশের মধ্যে দিয়েই শিশুকে শিক্ষা দিতে হবে।’
ডা. লেলিন বলেন, ‘একটি শিশু যখন স্কুলে গেল সেখানেই সাঁতার শেখানো সম্ভব। কারণ দেশের সব জায়াগায় সাঁতার শেখানোর যথেষ্ট উপকরণ রয়েছে। এ ছাড়া যেসব মহানগর বা শহরে সাঁতার শেখানোর জায়গার অপ্রতুলতা রয়েছে, সেসব জায়গায়ও বিশেষ ব্যবস্থায় সাঁতার শেখানোর ব্যবস্থা করতে পারে। প্রাথমিক জীবনের অঙ্গ হিসেবে শিক্ষার শুরু থেকেই সাঁতার শেখানোটা বাধ্যতামূলক করলে এ সমস্যার বড় অংশ সমাধান করা যাবে। দ্বিতীয়ত অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। যেসব জায়গায় ছোট শিশু রয়েছে সেখানে জলাধারগুলোকে চারপাশে ঘেরাও দিতে হবে। যেন শিশু বাইরে থাকলেও সুরক্ষিত থাকে। এ ছাড়া সরকারকে এ বিষয়ে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। যে প্রকল্পগুলো রয়েছে, সেগুলো যেন কার্যকর ভূমিকা রাখে সেটা নজরদারিতে রাখতে হবে।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেই হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচি দেবে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি। এক দফার যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে থাকা দলগুলোও এই কর্মসূচি পালন করবে। চলতি মাসে অনুষ্ঠিত দলটির স্থায়ী কমিটির দুটি বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে বিএনপি সূত্রের দাবি। যার প্রতিফলন দেখা গেছে গতকাল বৃহস্পতিবার বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতেও।
সূত্রের দাবি, দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অন্তত তিন নেতা হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন নেতাকর্মীদের।
সূত্রগুলো বলছে, নভেম্বরের যেকোনো সময় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে ওই তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। বিএনপি চাচ্ছে তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচন ইস্যুতে রাজনৈতিক ফয়সালা নিশ্চিত করতে। এ লক্ষ্যে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বড় ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণার চিন্তা রয়েছে তাদের। এসব কর্মসূচির মধ্যে ঢাকা ঘেরাও, সচিবালয় ঘেরাও, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘিরে কর্মসূচিসহ নানা ধরনের কর্মসূচি নিয়ে দলটির অভ্যন্তরে আলোচনা রয়েছে।
জানা গেছে, এসব কর্মসূচিতে সরকার পক্ষ বাধা দিলে ‘যদি পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠে’ তাহলে এক পর্যায়ে অসহযোগ আন্দোলনের দিকেও যেতে পারে দলটি। বিএনপি নেতারা বলছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে দুই ধাপে কর্মসূচি সাজিয়েছে বিএনপি। প্রতিটি ধাপের শেষ দিনের কর্মসূচি হবে শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক। সরকার কঠোর হলে কর্মসূচিও কঠোর হবে। তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত যতটুকু সম্ভব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ রাখতে চাইবে দলটি। পরিস্থিতি বিবেচনায় তফসিলের আগেই হরতালের কর্মসূচি আসতে পারে। তবে দলটির এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হচ্ছে, তফসিল ঘোষণা হলেই তারা হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
এই কর্মসূচি ঘোষণার আগে আন্দোলনে থাকা সমমনা দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করা হবে। কীভাবে কর্মসূচি সফল করা যায় তা নিয়ে নতুন করে ছক সাজানো হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে হরতালের মতো কর্মসূচির ইঙ্গিত দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যতদিন আপনি (শেখ হাসিনা) থাকবেন দেশ আরও সংঘাতের দিকে যাবে, খারাপের দিকে যাবে এবং সংঘাত আরও বাড়তে থাকবে। এখনো তো সংঘাত শুরু হয়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগ যেভাবে এগোচ্ছে তাতে এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে জনগণ রুখে দাঁড়াবে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘শত প্ররোচনার মুখেও আমরা একেবারে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। এটার শেষ পরিণতি কী হবে তা নির্ভর করবে সরকারের আচরণ কী হচ্ছে তার ওপর।’
একই দিন পৃথক কর্মসূচিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী হরতাল কর্মসূচি ঘোষণার কথা বলেন। ভৈরব বাসস্ট্যান্ডে সিলেট অভিমুখী রোডমার্চ কর্মসূচির প্রথম পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমরা হরতাল করিনি, কিন্তু করব না সেই প্রতিজ্ঞাও করিনি। জনগণের চাপের কারণে হরতাল অবরোধ যা যা করা দরকার, গণতান্ত্রিক পন্থায় এই অবৈধ সরকারকে মাটিতে বসিয়ে দেওয়ার জন্য দল, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে সব ধরনের কর্মসূচি হবে। সেই জন্য আপনারা প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। আমাদের এবারের আন্দোলন ডু অর ডাই। হয় মরব, নয়তো লড়ব।’
আর জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের উদ্যোগে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে আয়োজিত আলোচনা সভা ও সম্মেলনে প্রধান অতিথির বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘জনগণকে সম্পৃক্ত করে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছি। হরতাল অবরোধ শান্তির প্রবক্তারাই চালু করেছে। সরকার যদি আমাদের রোডমার্চ, মিছিলে জনগণের সম্পৃক্ততায় কোনো বার্তা না পায় বা না বোঝে তাহলে দিনের পর দিন হরতাল অবরোধ করে দেশ অচল করে দেওয়া হবে। সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।’
জাতীয় সংসদের পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে। চলতি সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হবে আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারি। এর আগের ৯০ দিন; অর্থাৎ আগামী ১ নভেম্বর থেকে ২৯ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করতে হবে। সাধারণত নির্বাচনের ৪০ থেকে ৪৫ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করা হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর। মাঝখানে ৪৫ দিন সময় রেখে ভোটের তারিখ ছিল ২৩ ডিসেম্বর। তবে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির মুখে ভোটের তারিখ এক সপ্তাহ পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর করা হয়েছিল। দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর। ভোটগ্রহণ করা হয়েছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। তফসিল ঘোষণা ও ভোট গ্রহণের মধ্যে সময় ছিল ৪০ দিন।০
আশ্বিন মাসের সন্ধ্যায় ঢাকায় নামল শ্রাবণের বৃষ্টি। আকাশ ভেঙে পড়া বর্ষণে তলিয়ে গেছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তা। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে টানা কয়েক ঘণ্টার মুষলধারে বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকার রাস্তা তলিয়ে যায়। কোথাও কোথাও বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। মাঝরাত পর্যন্ত ওইসব সড়কে থমকে থাকে গাড়ি। অনেকেই যেমন বৃষ্টির কারণে কর্মস্থলেই আটকা পড়েন তেমনি অনেকের অপেক্ষার প্রহর কেটেছে জলমগ্ন সড়কে গাড়িতে বসেই।
এদিকে মিরপুরে সড়কের পাশে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও কয়েকজন। নিহতদের মধ্যে তিনজন একই পরিবারের। তাদের মধ্যে এক শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে মিরপুর মডেল থানার পুলিশ। গতকাল দিনভর মেঘলা আকাশ ও থেকে থেকে বৃষ্টির পর সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টি বাড়তে শুরু করে। সঙ্গে থেমে থেমে শুরু হয় ঝড়ো হাওয়া। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ঢাকায় সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, এদিন সন্ধ্যার পর ঢাকা ছাড়াও রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে বৃষ্টি হয়েছে। আর ঢাকায় বৃষ্টি হতে পারে আজও।
গতকাল রাতের বৃষ্টিতে ঢাকার ফার্মগেট, ধানমন্ডি, এলিফ্যান্ট রোড, নিউ মার্কেট, মিরপুর, বনানী এলাকার সড়ক পানিতে ডুবে যায়। রাজধানীর প্রায় সব সড়কে দেখা দেয় তীব্র যানজট। দীর্ঘ সময় স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় যানবাহনকে। অনেকে জানান, তাদের ব্যক্তিগত গাড়িতে পানি ঢুকে গেছে। রাতে কখন তারা বাসায় ফিরতে পারবেন তা অনিশ্চিত।
জানা গেছে, মিরপুর ১০ নম্বরে প্রধান সড়কসহ অলিগলিতে কোমরসমান পানি জমেছে। পানি প্রধান সড়কে চলাচলরত প্রাইভেট গাড়ির ভেতরেও ঢুকে গেছে।
গ্রিন রোড, নর্থ ধানমন্ডিসহ আশপাশের সব গলিতে পানি জমেছে। সেখানকার গ্রিন লাইফ হাসপাতাল, সেন্ট্রাল হাসপাতাল এবং ল্যাবএইডে আসা রোগীরা পড়েছেন বিপদে। একই অবস্থা রাজধানীর মগবাজার, মালিবাগ, সিদ্ধেশ্বরী, বেইলি রোড এবং শান্তিনগরেও। মতিঝিলে রাতে লোক কম থাকলেও পানি হাঁটুর ওপরে উঠে গেছে।
হঠাৎ ভারী বৃষ্টির জন্য পথচারী ও ঘরমুখো মানুষরা মোটেও তৈরি ছিলেন না। এ সময় অনেকেই কাকভেজা হয়ে বাসায় ফেরেন আবার কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন যাত্রীছাউনি বা দোকানের নিচে। গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাংলা মোটর মোড়ে বাসে ৩০ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলেন ফাহাদ হোসাইন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, বৃষ্টি শুরু হলে একটি উঁচু ভবনের নিচে দাঁড়িয়েছিলাম। বৃষ্টি কিছুটা কমলে বাসে উঠি। আধা ঘণ্টা হলো বাস একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।
সরকার সৌরভ নামের একজন জানান, তার মোহাম্মদপুর থেকে শাহবাগ আসতে ৩ ঘণ্টার বেশি লেগেছে। ফেরার পথে বাংলা মোটর মোড়েই আটকে আছেন এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে।
গতকাল রাত সাড়ে ১২টার সময়ও গুগল ম্যাপে দেখা যায় রাজধানী জুড়ে তীব্র যানজটের সংকেত। বেশিরভাগ সড়ক রেড মার্ক ছিল সে সময়। গ্রিন রোড, মিরপুর রোডের ধানমন্ডি ২৭, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউসহ বেশ কয়েকটি সড়কেই ছিল যান চলাচল বন্ধের সংকেত। গুগলের তথ্য বলছিল, ওইসব এলাকায় সে সময় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ ছিল।
আহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ শুক্রবারও রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের বেশিরভাগ জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। এ সময় বজ্রপাতও হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
মিরপুরে চারজনের মৃত্যু : মিরপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও কয়েকজন। নিহতদের মধ্যে তিনজন একই পরিবারের। তাদের মধ্যে এক শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে মিরপুর মডেল থানার পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে মিরপুর-১ নম্বর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে আহতদের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এ দুর্ঘটনার বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেন মিরপুর থানার এসআই রুহুল আমিন। তিনি বলেন, বৃষ্টির মধ্যে রাস্তার পাশের বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন মিজান, তার স্ত্রী মুক্তা, তাদের মেয়ে লিমা এবং এই তিনজনকে বাঁচাতে যাওয়া যুবক অনিক। মৃত মিজান পেশায় সিএনজি অটোরিকশাচালক ছিলেন বলে জানা গেছে।
অভিষেকে ২৬ মিনিট খেলে দুই অ্যাসিস্টের অবদান রাখতে পেরেছিলেন নেইমার। আল হিলাল জিতেছিল। কিন্তু পর পর দুম্যাচ খেললেন পুরো সময়। তেমন কিছুই করতে পারলেন না। ড্র করেছে আল হিলাল আবার।
এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচে শেষ দিকের গোলে ১-১ ড্র করে পরাজয় বাঁচিয়েছিল আল হিলাল। আজ সৌদি প্রো লিগে দামাক এফসির বিপক্ষে ম্যালকমের গোলে ৯ মিনিটে এগিয়ে গেলেও শেষপর্যন্ত তা ধরে রাখতে পারেনি।
সাত ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে তবুও শীর্ষেই রইলো আল হিলাল।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক যাত্রীর কাছ থেকে মূল্য দেড় কোটি টাকা মূল্যের ১৭০০ গ্রাম স্বর্ণ উদ্ধার করেছে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টা ২৪ মিনিটে শারজাহ থেকে এয়ার অ্যারাবিয়ার ফ্লাইটে আসা মোহাম্মদ আলী নামের এক যাত্রীর রাইস কুকারে এসব স্বর্ণ পাওয়া যায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার মো. আহসান উল্লাহ বলেন, আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ব্যাংকপাড়াখ্যাত মতিঝিল এখন মৃতপ্রায়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে না পারায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যত্র সরে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির চাকা ঘোরানো মতিঝিলে আবাসিক ভবন, শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান তৈরি না হলে দেশের প্রধান এই বাণিজ্যিক অঞ্চল প্রাণ হারাবে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তাদের মতে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বড় অবদান রয়েছে মতিঝিলের টাকার। শুধু তা-ই নয়, মতিঝিলে উপার্জিত অর্থে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, কানাডাসহ আরও অনেক দেশে। এখানকার উপার্জিত টাকা অনেকে জমা রেখেছেন সুইস ব্যাংকেও। শুধু উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি মতিঝিলে। এ যেন মা কাঁকড়ার আত্মত্যাগের গল্প। মা কাঁকড়া বাচ্চাদের আগলে রাখে বুকের ভেতর; যেদিন বাচ্চাগুলো বের হয়ে আসে, সেদিন খোলস ছাড়া মা কাঁকড়ার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। মা কাঁকড়ার মতো দুঃখী ও ত্যাগী বাণিজ্যিক মতিঝিল।
ষাটের দশকে মতিঝিলে গড়ে ওঠে দেশের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট-সিবিডি)। সেই থেকে এখনো দেশের প্রধান বাণিজ্যিক অঞ্চল মতিঝিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১। এর মধ্যে সরকারি ৮টি, বেসরকারি ৪৫টি এবং বিদেশি ব্যাংক রয়েছে ৮টি। এ ছাড়া ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ৮১টি বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকের বেশির প্রধান কার্যালয় চলে গেছে কারওয়ান বাজার, গুলশান-বনানী ও উত্তরায়। নতুন করে যেসব ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাচ্ছে, সেগুলোর প্রধান কার্যালয় মতিঝিলের বাইরে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, মতিঝিলের আশপাশে পরিকল্পিত কোনো আবাসিক এলাকা, অভিজাত হোটেল, কাজের ফাঁকে অবসর কাটানোর মতো উন্মুক্ত স্থান, শপিং কমপ্লেক্স না থাকায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের সুবিধার জন্য অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয়গুলোও মতিঝিলের বাইরের এলাকা, অর্থাৎ কারওয়ান বাজার, গুলশান অ্যাভিনিউ, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে গড়ে উঠছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক বাংলা, শাপলা চত্বর, মধুমিতা সিনেমা হল এবং ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এবং দিলকুশা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবন এবং বঙ্গভবনের পাশের এলাকাজুড়ে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল। বিশ্বের বাণিজ্যিক অঞ্চলের ভবনগুলো সুউচ্চ হয়ে থাকে। কিন্তু মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের পাশেই বঙ্গভবন। নিরাপত্তার কারণে বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর কোনো বহুতল ভবন করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, মতিঝিলের প্লটগুলোর ‘নন-রেসট্রিকটেড’ উচ্চতা দেওয়া রয়েছে। কিন্তু বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর সাড়ে চারতলার বেশি উচ্চতার ভবনের অনুমোদন মেলে না। ফলে মূল্যবান ওই প্লটগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারছেন না মালিকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগ জরাজীর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণও রয়েছে কয়েকটি ভবন। একটির সঙ্গে অন্যটি লাগানো। দুটি ভবনের মাঝখানে উন্মুক্ত জায়গা নেই বেশিরভাগ ভবনের। দিলকুশা এলাকার বঙ্গভবন লাগানো ভবনগুলোর মাঝখানেও কোনো ফাঁকা জায়গা দেখা যায় না।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, মতিঝিল এলাকার ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে। ভাঙাচোরা এবড়োখেবড়ো সড়ক। সড়ক বিভাজকগুলো শ্রীহীন। এগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হয়নি। প্রধান সড়ক থেকে একটু ভেতরে গেলে মতিঝিলের আরও করুণ দশা চোখে পড়ে। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকার সড়কের ফুটপাতে গড়ে উঠেছে চটের ছালা দিয়ে ঘেরা খাবারের হোটেল, চায়ের দোকান এবং নানা পণ্যের অস্থায়ী দোকান। সামান্য বৃষ্টিতে মতিঝিল এলাকার সড়কগুলো তলিয়ে থাকে পানির নিচে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত। ডিএসসিসি এলাকার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলছে। খসড়া মাস্টারপ্ল্যানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে মূল্যায়ন করলে মতিঝিল ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে। যদিও এটা মানতে নারাজ ডিএসসিসির কারিগরি কমিটি।
মতিঝিল এলাকার বেহাল অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিল এলাকার সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে ডিএসসিসি। পরিত্যক্ত প্রায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর একটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মতিঝিলের সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত ও সড়ক বিভাজকের অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা দরকার। পর্যায়ক্রমে এ এলাকার বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে কাজ করবে ডিএসসিসি। তবে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের মূল সংস্কার ও আধুনিকায়নের দায়িত্ব রাজউকের। রাজউককে সেসব বিষয় পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব কাজে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা লাগলে করপোরেশন সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলে রাজউক। রাজউক সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশক থেকেই মতিঝিলের পুরোপুরি বাণিজ্যিক বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। বিশে^র উন্নত দেশগুলোর বাণিজ্যিক অঞ্চলে শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান থাকে। আর কাছাকাছি এলাকায় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা থাকে। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে সেটা ছিল না। অভিজাত মানের হোটেল পূর্বাণী গড়ে উঠলেও আশপাশে সময় কাটানোর মতো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লোকজন গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় থাকেন। মতিঝিলের সৌন্দর্য নিশ্চিত করতে ও আধুনিকায়নে যেসব বিষয়ে দৃষ্টি রাখা দরকার ছিল রাজউক ও সিটি করপোরেশন সেটা করেনি।
রাজউক সূত্রে আরও জানা যায়, ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধরা, উত্তরা। সেই সব এলাকা থেকে মানুষ মতিঝিলে আসেন। শহরের জনসংখ্যা বাড়ায় দিন দিন যানজট বাড়ছে। ওই সব এলাকা থেকে মতিঝিলে আসতে সড়কে এক থেকে দেড় ঘণ্টা চলে যায়। দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কর্মঘণ্টার মধ্যে ৩০ শতাংশ সময় সড়কে নষ্ট হচ্ছে। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে চিন্তা করেছে, তার কর্মস্থল এমন একটা জায়গায় হবে যা তার আবাসনের কাছাকাছি। মতিঝিল থেকে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও ভূমিকা রেখেছে।
কালের বিবর্তনে গুলশান হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক এলাকা। কারওয়ান বাজার, উত্তরায়ও গেছে কিছু। এসব জায়গায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমও সেখানে চলে গেছে। এসব এলাকার আশপাশে গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় তাদের বসবাস। আবাসিক এলাকা ছাড়া, পৃথিবীর কোথাও শতভাগ জায়গা শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা অথবা একই শ্রেণির কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার হয় না।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মুখপাত্র মো. আশরাফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, নগর পরিকল্পনায় ভূমির ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়, যেকোনো জায়গার ব্যবহার হবে ২৪ ঘণ্টা। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল কর্মচঞ্চল থাকে মাত্র ১২ ঘণ্টা। এরপর ওই জায়গার ব্যবহার হয় না। রাতে নীরব ও ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়।
তিনি বলেন, যে মতিঝিলে দিনের বেলায় হাঁটা যায় না; গাড়ির কারণে, যানজটে; সেই মতিঝিলে রাত ৮টার পরে আবার একাও হাঁটা যায় না; অনিরাপদ বোধ হয়। এ জন্য যারা দিনে বাণিজ্য করতে আসেন, তারা মতিঝিল এলাকার হোটেলগুলোতে থাকেন না। অন্যদিকে গুলশান-বনানী এলাকায় থাকলে তারা শপিংয়ে যেতে পারেন, কফি শপে যেতে পারেন। এসব কারণে সারা বিশ্বে ভূমির মিশ্র ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, মতিঝিল এলাকা যেহেতু ইতিমধ্যে তার আভিজাত্য হারিয়ে ফেলেছে, এ জন্য মতিঝিলের জমির শ্রেণিকে মিশ্র ব্যবহার হিসেবে ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি নিয়েছে রাজউক। সংশোধিত ড্যাপে সে বিষয়ে নির্দেশনা রাখা হয়েছে। পৃথিবীর নগর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৫০, ৬০ বা ১০০ বছর অন্তর সেসব ঢেলে সাজানো হয়। সেটা বিবেচনায় নিয়েই মতিঝিল এলাকাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। এখানে আবাসিকের বৈশিষ্ট্য দিতে হবে; কনডোমিনিয়াম গড়ে তুলতে হবে। ইতিমধ্যে রাজউক বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ১৬ একর জায়গা নিয়ে একটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে লাইব্রেরি, ওয়াকওয়ে থাকবে। বসার ব্যবস্থা থাকবে। মতিঝিল এলাকায় ঝিল ছিল, ওই ঝিলকে প্রাধান্য দিয়ে পার্কটি তৈরি করা হবে। বহুমুখী ব্যবহার ছাড়া মতিঝিলকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিলের আধুনিকায়ন ও ভূমির মিশ্র ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। তাহলে মতিঝিল সচল থাকবে; তবে ঢাকা শহর বড় হওয়ায় আরও বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে ওঠা ইতিবাচক। এসব পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা দরকার ছিল; কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে সে রকম হয়নি। এটা দুঃখজনক। এ জন্য শহরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ঢাকায় এখন অনেকগুলো বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই সব অঞ্চলে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় বড় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় মতিঝিলে রয়েছে। তবে ব্যবসা গুলশান, বনানী, উত্তরা, গাজীপুরে সরে যাওয়ায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ব্যবসা কেন্দ্রের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।