
২০০৬ সালের ২১ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন প্রখ্যাত সানাইবাদক ও শাস্ত্রীয় সংগীতের কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব বিসমিল্লাহ খাঁ। তার জন্ম ১৯১৬ সালের ২১ মার্চ ভারতে। তিনি ভারতের উচ্চাঙ্গ শাস্ত্রীয় সংগীতের জগতে ওস্তাদ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন এবং তিনি তৃতীয় ব্যক্তি, যিনি ‘ভারতরতœ’ পদক পেয়েছেন। তার বাবা পয়গম্বর খাঁ ও মা মিঠান। বিসমিল্লাহ খাঁর ডাকনাম ছিল কামরুদ্দিন। তার পূর্বপুরুষ বিহারের ডুমরাও রাজ্যের রাজসংগীতজ্ঞ ছিলেন। তার সংগীতগুরু ছিলেন প্রয়াত আলী বকস্ বিলায়াতু। বিসমিল্লাহ খাঁ ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক শিয়া মুসলমান। তবে জ্ঞানের দেবী সরস্বতীরও তিনি পূজা করতেন। ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খাঁ ১৯৩৭ সালে কলকাতায় অল ইন্ডিয়া মিউজিক কনফারেন্সে সানাই বাজিয়ে সানাইকে ভারতীয় সংগীতের মূল মঞ্চে নিয়ে আসেন। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি দিল্লির লাল কেল্লায় অনুষ্ঠিত ভারতের প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসে তিনি তার অন্তরের মাধুরী ঢেলে রাগ কাফি বাজিয়ে মুগ্ধ করেছিলেন ভারতবর্ষকে। তার যোগ্যতায় সানাই ও ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খাঁ সমার্থক হয়ে গেছেন। পৃথিবীর নানা দেশে তিনি তার সংগীতপ্রভা ছড়িয়েছেন। এত সুনাম ও অর্জন সত্ত্বেও তিনি অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন করতেন। সাইকেল-রিকশাই ছিল তার চলাচলের মূল বাহন। সংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য বিসমিল্লাহ খাঁ ‘ভারতরতœ’, ‘পদ্মবিভূষণ’, ‘পদ্মভূষণ’, ‘পদ্মশ্রী’সহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেয়েছেন সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি। তিনি সত্যজিৎ রায়ের ‘জলসাঘর’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এবং গুঞ্জে উঠে সানাইয়ের অংশে সানাই বাজিয়েছেন। গৌতম ঘোষ তার জীবন ও কর্মের ওপর প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছেন।
একটা সময় পর্যন্ত একুশ বলতে মনে করা হতো বায়ান্নর মহান ভাষা আন্দোলনের একুশকেই। একুশ দিয়ে আরেকটি ডেটলাইন যোগ হয় ২০০৪ সাল থেকে। সেটি একুশে আগস্ট। যা একদিকে বিয়োগান্ত, আরেক দিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সমঝোতা বা ন্যূনতম বিশ্বাসের কফিনে ঠোকা শেষ পেরেক। বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিনের কেক কাটা স্থগিত রেখে মিলাদ আর দোয়ায় পনেরো আগস্টের শোকের আবহ মেনে নিলেও একুশ আগস্টের দায় এড়ানোর কোনো ফাঁকই রাখেনি বিএনপি।
বরং, অন্তত চুপ না থেকে এখনো আগ বাড়িয়ে একুশ আগস্টের বর্বর-বিয়োগান্ত ঘটনার দায় অস্বীকারের মাধ্যমে বিরোধকে আরও পোক্ত করে চলছেন দলটির কোনো কোনো নেতা। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তখন ‘ওই ঘটনা আওয়ামী লীগই ঘটিয়েছে, গ্রেনেড শেখ হাসিনার ভ্যানিটি ব্যাগেই ছিল’ ধরনের মন্তব্যের পরও থামার দরকার মনে করেননি তারা। ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ বা নিজেদের দায়িত্বের ব্যর্থতা শিকার তো আরও পরের বিষয়। জজ মিয়াসহ নানা নাটক এবং পারলে শেখ হাসিনাসহ তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ নেতাদেরই দোষী সাব্যস্ত করে ফেলা হয়।
ভয়াবহ সন্ত্রাসী ওই হামলার শিকার হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দলীয় নেতাকর্মীরা মানববর্ম রচনা করে তাকে রক্ষা করলেও গ্রেনেডের আঘাতে আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারান। গ্রেনেডের যন্ত্রণা ও ক্ষতচিহ্ন নিয়ে বেঁচে আছেন অনেকে। প্রথমে গ্রেনেড হামলার জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করা হয়নি। বলা হচ্ছিল তাদের ব্যর্থতা-দায়িত্বহীনতার কথা। অল্প সময়ের মধ্যে ওই সরকারের মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততার নমুনা মিলতে থাকে, যা পরে বিচারের রায়েও প্রমাণ হয়।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের এ দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে কলঙ্কিত গ্রেনেড হামলার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা শিকার পর্বেও যায়নি সরকার। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়া শুরুর আলামত না দেখে তখনকার আওয়ামী লীগ সন্দিহান হয়ে পড়ে। উপরন্তু বাহিনীর সদস্যদের ব্যস্ত করে দেওয়া হয় ঘটনার আলামত নষ্ট করাসহ কল্পকাহিনির স্ক্রিপ্ট তৈরির কাজে।
বেঁচে যাওয়া ভুক্তভোগী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বছর বছর ইতিহাসের জঘন্যতম গ্রেনেড হামলার বার্ষিকী পালন করেন, আর ফোঁসেন। তাদের কাছে এটি ‘নিপীড়িত হওয়ার বর্ষ’। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর ওই মৃত্যুপুরীতে পরিণত হওয়া, স্পিøন্টারের আঘাতে হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকার ঘটনা তাদের চোখে ভাসে। এখনো আতঙ্কে ফেলে। যার অনিবার্য জেরে সংলাপ-আলোচনা-সমঝোতার কথা শুনলে তারা চটেন। মিলমিশ-সমঝোতার আহ্বান তাদের কাছে কাটা ঘায়ে নুন ছিটা দেওয়ার মতো। কারা, কেন ঘটনা ঘটিয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া কারও জন্য ওই ঘটনার হোতাদের সঙ্গে সমঝোতা-সংলাপের আহ্বান আরও তাড়না দেয়। পরিহাসের মতো লাগে। চলমান বিরোধ মেটানো বা রাজনৈতিক সমঝোতার পথে একুশ আগস্টের গ্রেনেড হামলা অবশ্যই অন্যতম বড় বাধা। আক্রান্তরা তো নিশ্চিত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যেই চালানো হয়েছিল হামলাটি।
নানা পর্ব শেষে ২০০৮ সালে আদালতে দেওয়া দুটি অভিযোগপত্রে বিএনপি সরকারের একজন উপমন্ত্রী, তার ভাইসহ ২২ জনকে এ ঘটনার জন্য আসামি করা হয়। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আদালতের অনুমতি নিয়ে অধিকতর তদন্ত হয়। এ তদন্তের পর আসামি করা হয় বিএনপি নেতা তারেক রহমান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ আরও ত্রিশজনকে। দীর্ঘ ১৪ বছর পর ২০১৮ সালের অক্টোবরে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায় হয়। আদালত গ্রেনেড হামলায় জড়িত থাকার দায়ে বিএনপি নেতা সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। একই সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিদেশে পলাতক তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছে ১১ আসামির।
বিএনপির তরফ থেকে বরাবরই এগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলা হচ্ছে। অর্থাৎ ঘটনাটি দেশের বৃহৎ দল দুটির বিরোধকে কেবল আরও জোরালো নয়, একেবারে স্থায়ী করে দিয়েছে। যেনতেন বুঝজ্ঞান বা মলমে এ ব্যথা-বিরোধ সারানোর মতো নয়। তারা পরস্পরকে কেবল শত্রু ভাবতেই শৃঙ্খলিত করে নিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই তখনকার ক্ষমতাসীন সরকার ও প্রশাসনের ওপরই গ্রেনেড হামলার দায় বর্তায়। তারা ওই দায় মোচনের চেষ্টা হিসেবে দুঃখপ্রকাশ বা অন্তত ভর্ৎসনার কাজটিও না করে উপরন্তু আক্রান্তদেরই দোষী সাব্যস্তের চেষ্টা করেছেন। তা কেবল রাজনীতির নয়, রাষ্ট্রের কাঠামোকেও তছনছ করে দিয়েছে।
দেশে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে প্রাথমিকভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া সরকারের দায়িত্ব। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার মতো এত বড় অপরাধ যারা করেছিল, তাদের চিহ্নিত করা, গ্রেপ্তার করা এবং আইনের হাতে সোপর্দ করার জরুরি কর্তব্যটি তৎকালীন সরকার সম্পাদনে কেবল চরমভাবে ব্যর্থতারই পরিচয় দেয়নি; বরং ঘটনাপ্রবাহ অন্য খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালিয়েছে।
বিএনপি সেই প্রশ্নের তীর থেকে আজও নিস্তার পায়নি। ভুক্তভোগী দল আওয়ামী লীগের কাছে তা কত নির্মম-বেদনার জানে কেবল তারাই। এখনো মাঝেমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে ২১ আগস্ট নিয়ে যে ধরনের বক্তব্য দেওয়া হয়, সেটা আওয়ামী লীগের ক্ষোভ ও ক্ষুব্ধতায় প্রলেপ দেওয়ার মতো নয়। বরং কষ্টকে আরও উসকে দেয়। ২১ আগস্টের ঘটনাকে সামনে এনে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিএনপির রাজনীতি করার অধিকারই নেই। এমনকি কেউ কেউ বিএনপিকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করার দাবি পর্যন্ত করেন।
মর্মান্তিক ঘটনাটির রেশ রাজনীতির বাইরের মানুষকেও আর কত দিন ও কীভাবে টেনে যেতে হবে? দুটি রাজনৈতিক দলের বিরোধ অরাজনৈতিকদেরও খাদের কিনারে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের সুদূরপ্রসারী প্রভাবের শিকার তারা। এখানে ক্ষত নিরাময়ের ক্ষেত্র খোঁজা বড় কঠিন। নৃশংস ওই গ্রেনেড হামলার ঘটনায় একদলকে বেশি, আরেক দলকে কম দায়ী করে পিঠ চুলকানির মতো মোড়লি সালিশে তাদের মিলিয়ে দেওয়ার অবস্থা এখানে নেই। আক্রান্ত দলটির মতো সাধারণ শ্রেণির অনেকেও একুশে আগস্টের হামলার বিষয়টিকে নিছক একটি সন্ত্রাসী ঘটনা ভাবতে পারে না। আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে বিরোধের পেছনে অন্যতম দুই তারিখ ও কারণ পনেরো আগস্ট ও একুশে আগস্ট। দুটি বিশেষ তারিখ বা ঘটনায় কেন রাজনীতির পথ আটকে থাকবে এ প্রশ্নের জবাব মেলাও কঠিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ও ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট অভিশপ্ত তারিখ দুটি ক্যালেন্ডার থেকে তুলে দেওয়াও সম্ভব নয়।
রাজনীতির গতিপথে বিরোধ, ভিন্নমত, মতপার্থক্য স্বাভাবিক হলেও হত্যা-বিনাসের মানসিকতা অস্বাভাবিকতাকেই কেবল বাস্তব করে তুলছে। মত ও পথের ভিন্নতা সম্প্রীতি ও সৌহার্দের পরিবেশ যে মাত্রায় নষ্ট করেছে তা অনেকটা ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুধ দেবো কোথায়’র মতো। একুশে আগস্টের গ্রেনেড বাংলাদেশের রাজনীতিকে সেই ব্যথায় কাতরিয়ে ছাড়ছে। রাজনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত দল বিএনপির মধ্যে অতীতের ভুল শুধরানোর রাজনৈতিক কৌশল অস্পষ্ট। আত্মসমালোচনাও নেই।
ভবিষ্যতে বিএনপি তার সঙ্গী-সাথিদের নিয়ে ক্ষমতায় গেলে দেশে প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির চর্চা বন্ধ করবে কি না, সে কথা স্পষ্ট করছে না। বরং সুযোগ পেলেই হুমকি-ধমকিতে চারদিক আরও উতলা করে দেওয়া হয়। ঘুরে দাঁড়াতে হলে তাদের রাজনীতিতে পরিবর্তনের বার্তা দিতেই হবে। একুশে আগস্টের বিয়োগান্ত ঘটনার দায় স্বীকার-অস্বীকারেও এখন আর তেমন কিছু যায় আসে না। তবে পনেরো আগস্ট ট্র্যাজেডির তারিখে কেক কাটা বন্ধ করে বেগম জিয়ার জন্মদিনে দোয়া-মোনাজাতের বিলম্বিত সিদ্ধান্ত দেশের রাজনীতির বিরোধের ব্যথায় কিছুটা হলেও মলম ফেলেছে। একুশে আগস্ট নিয়ে কী করা যায় বা তারা করতে পারে তা ঠিক করতে হবে বিএনপিকেই। যা হতে পারে বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠের সহাবস্থান-সমঝোতা তথা অন্তত আলোচনা-সমঝোতাসহ মুখ দেখাদেখির দাওয়াই।
আমি যেদিন শামসুন্নাহার হলে উঠি, মিরপুর খালার বাসা থেকে সব গুছিয়ে আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। আমার সঙ্গে একটা ট্রাঙ্কভর্তি কাপড় আর বই ছিল। মফস্বল থেকে আসা, ইউনিভার্সিটির হলে উঠতে চাওয়া সব শিক্ষার্থীর যেমন থাকে। সন্ধ্যা হয় হয় সময়ে রিকশা করে ট্রাঙ্ক নিয়ে হলের গলিতে ঢুকে আমি আক্ষরিক অর্থেই হা হয়ে গিয়েছিলাম কয়েক সেকেন্ড। এ কী দৃশ্য! হলের দেয়ালঘেঁষে ফুটপাতে একটু পর পর একেকটা যুগল ঘনিষ্ঠ অবস্থায় বসা। আমি আমার ততদিনের নাতিদীর্ঘ জীবনে একসঙ্গে এত প্রেমিক যুগল দেখিনি!
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘যুগল হঠাও’ অভিযান চলছে বলে সংবাদে দেখতে পাচ্ছি। ইউনিভার্সিটিতে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ার সময় ক্লাসেই জেনেছিলাম, ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে প্রোক্টরিয়াল ল অনুযায়ী কোনো পুরুষ শিক্ষার্থী যদি কোনো নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে পড়ালেখাবিষয়ক কোনো আলাপ করতে চায় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। কর্র্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে আলাপ করতে হবে এবং এই আইন ভঙ্গ করলে তাকে জরিমানা দিতে হবে। এমন একটা গল্প শুনেছি, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইচ্ছা করে এই আইন ভঙ্গ করে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন, সেই লাঞ্ছনা প্রশাসন করেছিল নাকি অন্য হিংসুটে ছাত্ররা তা অবশ্য আমার জানা নেই। কাজী নজরুল ইসলাম রেবেল ছিলেন, প্লেবয়ও ছিলেন। ফলে তার পক্ষে এহেন পাগলামি করা বিচিত্র নয়!
নারীকে নিষ্ক্রিয় এবং অবজেক্ট মনে করা নীতিনির্ধারকদের জন্য সর্বদা স্বাভাবিক, কেননা নীতিনির্ধারণী পদ্ধতি খোদ পুরুষতান্ত্রিক। ফলে আইন ভঙ্গ করা হলে নারী শিক্ষার্থীকে নয়, পুরুষ শিক্ষার্থীকেই দিতে হবে জরিমানা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এই আইন এখনো বলবৎ রয়েছে। ফলে যুগল হঠাও অভিযান চালানোর ক্ষমতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আছে। কিন্তু ওই যে নীতি বা নিয়মকানুন, তাতে আন্দোলন-সংগ্রাম করার এখতিয়ারও শিক্ষার্থীদের নেই। এমনকি কোনো কারণে ক্লাস বয়কট করলেও বিশ্ববিদ্যালয় জলপানি অর্থাৎ বৃত্তি বা স্টাইপেন্ড বন্ধ করে দিতে পারে, ছাত্রত্ব বাতিল পর্যন্ত করতে পারে।
যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব নিয়ম মানা আদর্শ ছাত্র দিয়ে ভর্তি থাকত তাহলে কেমন হতো! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস থেকে যদি আন্দোলন-সংগ্রামটুকু বাদ দেওয়া হয়, তাহলে সম্ভবত দেশের ইতিহাসই বদলে যেত।
শামসুন্নাহার আন্দোলনের পরের বছর আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই, হলে উঠে অনেক দিন পর্যন্ত অফিস রুমের সামনের ইউক্যালিপটাস গাছে একটা কালো শিফনের ওড়না আটকে ঝুলে থাকতে দেখেছি। শুনেছি ওটা শামসুন্নাহার হলে হামলার রাতের আলামত, সত্য-মিথ্যা যাচাই করা হয়নি কোনোদিন। তখন মেয়েদের হলে ঢোকার নির্ধারিত সময় ছিল রাত সাড়ে ৯টা, বিশেষ অনুমতি নিয়ে (আসলে একটা বিশেষ খাতায় নাম সই করে) ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে পেছনে হাউজ টিউটরের বাড়ির উঠান দিয়ে ঢোকা যেত। অনেকবার নাটক বা কনসার্ট দেখার জন্য ওই পথ ব্যবহার করে রাত করে হলে ঢুকেছি। এই নিয়মটাই মানতে যথেষ্ট কষ্ট হতো আমার। নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত যে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য সূর্যাস্ত আইন প্রচলিত ছিল তা আমি ভুলেই যেতাম। ওই সময় বাড়িয়ে নেওয়ার পেছনেও আছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন-সংগ্রামই।
শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, অন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েও এই রকম নানা প্রোক্টরিয়াল টিম নানা রকম অভিযান চালাচ্ছে। যেমন টং দোকান তুলে দেওয়া। সিগারেট বিক্রি বন্ধ করে দেওয়ার জন্য টং দোকান তুলে দেওয়া হচ্ছে আপাতদৃষ্টিতে ঘটনাটা ইতিবাচক মনে হলেও সঙ্গে আছে আরও ভয়ংকর খবরও। কোনো একটা মোবাইল টিম চাঁদাবাজি করে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ভাসমান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। ক্যাম্পাসের ভেতর টং দোকান বলতে তো কেবল চা-সিগারেটের দোকান নয়, নানা রকম খাবার-দাবার, ফল-ফুলের দোকানও!
প্রেম করবে বলে নারী শিক্ষার্থীদের সন্ধ্যার মধ্যে হলে ঢুকে যেতে হবে বা কোনো যুগল ক্যাম্পাসে বসে থাকতে পারবে না, চাঁদাবাজির হিসাব তুলতে সিগারেট বিক্রির কথা বলে টং দোকান তুলে দিতে হবে এসব কুযুক্তি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগত দমন অভিযানও চলছে। এই বহিরাগত বা অছাত্র বিষয়টা যদি আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ও সিট দখল/সিট বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পালন করা হতো তাহলে হয়তো অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীর জীবন অন্য রকম হতো। আমি আমার ছাত্রজীবনের প্রথম/দ্বিতীয় বর্ষের অনেক দুপুর চারুকলায় বা উদ্যানে বসে কাটিয়েছি। কারণ হলে ঘুমানোর জন্য একটা বিছানা শেয়ার করতে হতো, দুপুরে হলে ফিরে গেলে বিশ্রাম নেওয়া যাবে, এমন কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। দলীয় রাজনীতির সিট বাণিজ্য কোন পর্যায়ে যেতে পারে, তার একটা উদাহরণ সম্ভবত ইডেন কলেজে খুব সাম্প্রতিক সময়েই দেখা গেছে। দলবাজির সময় এই প্রোক্টরিয়াল বডি, তদন্ত কমিটি, বিশেষ কমিটি ইত্যাদি খুব একটা কাজ করে না। উল্টো টিএসসিতে দরিদ্র সিগারেটওয়ালার বাক্স পুড়িয়ে দেওয়ার খবর দেখতে পাই সোশ্যাল মিডিয়ায়।
আমি খুব ফাঁকিবাজ স্টুডেন্ট ছিলাম, প্রায়ই লেখাপড়া ছেড়ে দিতে চাইতাম। ফলে আমার শিক্ষাজীবনে অনেক ড্রপ। সঙ্গে হালকা-পাতলা সেশনজট নিয়ে ড্রপ দিয়ে দিয়ে এক মাস্টার্স শেষ করে আর একটা দুই বছরের মাস্টার্সে ঢুকে যাওয়ায় আমার পাঁচ বছরের শিক্ষাজীবন টেনে গিয়ে দশ বছরে ঠেকেছে। দশ বছর লাগিয়ে পাস করারও বারো বছর পর সার্টিফিকেট তুলতে গিয়ে নস্টালজিক হয়ে লাইব্রেরির সামনের খিচুড়ি খেতে গিয়ে দেখি ওরা আমাকে চিনতে পারছে। দ্বিতীয় মাস্টার্স করার সময় আমার স্কুলে ভর্তি হয়ে যাওয়া শিশুপুত্রকে প্রায়ই আমার সঙ্গে ইউনিভার্সিটিতে নিয়ে যেতে হতো। প্রায় সময়ই আমরা মা-ছেলে এই খিচুড়ি দিয়ে লাঞ্চ সারতাম। শুধু ওই খিচুড়ির দোকান না, খাতাপত্র বিক্রি করেন এক খালা, ফুচকা বিক্রি করেন এক মামা, দেখা হলেই আমার বড় ভাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করেন এমন এক সিগারেটওয়ালা এ রকম অনেকেই আছেন ক্যাম্পাসে। ক্যাম্পাসভিত্তিক এই মানুষদের রুটি-রুজি শুধু তাদের জন্য জরুরি না, অন্য শহর থেকে আসা হলে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য এই মামা-খালাদের ভালোবাসাটুকুও ভীষণ প্রয়োজনীয়।
লেখক : কবি ও লেখক
গত মাসে ‘পলিটব্যুরো’র এক বৈঠকে চীনের নেতারা এই বছরের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারকে ব্যাখ্যা করেছেন ‘নির্যাতন’ হিসেবে। এতটা খোলামেলা বক্তব্য চীনা কমিউনিস্ট পার্টি থেকে সাধারণত শোনা যায় না। তারা বর্তমান পরিস্থিতির কথাই বলছিলেন। কিন্তু এটা চীনের এমনসব সমস্যার খানিকটা প্রকাশ করে দিয়েছে, যাতে তার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যকার পদ্ধতিগত ব্যবধান যে কত প্রকট, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
গত কয়েক দিনে চীনের প্রকাশিত বেশ কিছু পরিসংখ্যান বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। জুলাই মাসে দেখা গেছে চায়নিজ ভোক্তারা গত বছরের তুলনায় আরও কম দামে পণ্য কিনছেন। মানে ব্যাপক মুদ্রা সঙ্কোচন ঘটছে। অর্থনীতির আকার ক্ষীণ হয়ে আসছে এবং রাষ্ট্রের দীর্ঘস্থায়ী চাহিদার ঘাটতি উন্মোচন করে দিচ্ছে। জুলাইতে আরও দেখা যায়, চীনের বৈদেশিক বাণিজ্য ক্রমশ আরও দুর্বল হয়েছে। রপ্তানিতে শুরু হয়েছে তীব্র পতন, বোঝা যায় বৈশ্বিক চাহিদা কমে আসছে। এদিকে আমদানি রেখাও গড়িয়ে নামছে, বোঝা যায় অভ্যন্তরীণ চাহিদাও কমছে। এভাবে উভয় সংকট কেন দেখা দিল? নিশ্চয় বড় কোনো কারণ আছে। কিন্তু কারণগুলো অস্পষ্ট। এই অস্পষ্টতা যে বার্তা দেয়, তা হচ্ছে, চীনে কোথাও আরও গুরুতর কিছু ভুল হয়েছে।
আশা ছিল, মহামারী কাটিয়ে চীন মহাসমারোহে ফিরে আসবে। এ-নিয়ে বছরের গোড়ার দিকে খানিকটা উত্তেজনাও ছিল। অথচ ফলাফল হয়েছে ঠিক উল্টো। বিশেষ করে গাড়ি, বাড়ি, বিমানের মতো বড় বড় টিকিট আইটেম এবং ব্যক্তিগত বিনিয়োগের খাতগুলো যাকে বলা হয় চীনের অর্থনীতির মেরুদণ্ড তাতে বছরের প্রথমার্ধেই ব্যাপক পতন ঘটেছে। এমন ঘটনা চীনের ইতিহাসে খুব একটা ঘটেনি, বরং দীর্ঘ কয়েক দশকের মধ্যে এবার প্রথম।
বেসরকারি সংস্থা এবং উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়েছে। লোকবল নিয়োগেও তারা ব্যয় সঙ্কোচন নীতি গ্রহণ করছে। অথচ বেকারত্বের হার তুঙ্গে। তরুণদের মধ্যে শতকরা ২১ ভাগ বেকার যা যুক্তরাজ্যের তুলনায় দ্বিগুণ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় প্রায় তিনগুণ। স্নাতক সমাপন হলে প্রতি বছর গ্রীষ্মে ১১ থেকে ১২ মিলিয়ন শিক্ষার্থী বিদ্যায়তন থেকে বেরিয়ে আসে কাজ করার উপযুক্ত হয়ে। কিন্তু কাজ নেই। কাজ খুঁজে পাওয়ার সমস্যা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। এটা কঠিন পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। চীনের শ্রমবাজারের অবস্থাও এমন দাঁড়িয়েছে যে, বেশিরভাগ কর্মস্থলের পদ শূন্য, তবু কোম্পানির চাহিদা নেই। সিংহভাগ চাকরিগুলোর হালত এককথায় কম দক্ষতা, কম বেতন। উৎপাদন ও নির্মাণের মতো উচ্চমানের প্রতিষ্ঠানের চাকরি এবং বাজারের তুলনায় ছোটখাটো যন্ত্রাংশ তৈরি টাইপ অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির বাজার এবং কর্মসংস্থান কয়েকগুণ বড়। এর প্রভাব পড়ছে শিক্ষায়ও। সবকিছুই একটা বৃত্তাকারে ঘুরছে।
এটা বলা ভুল হবে যে, এই সবের মূলে রয়েছে মহামারীর আঘাত। না, মোটেও তা নয়। চীনের অর্থনীতিকে ওজনদার করেছে যেসব পণ্য, তার বেশিরভাগ তৈরি হচ্ছে বেশ কয়েক বছর ধরে। এমনকি যখন হুয়াওয়ে, আলিবাবা, টেনসেন্ট ও টিকটকের মতো চীনের গ্লোবাল ব্র্যান্ডগুলো নিয়ে বিশ্বে দাবানলের মতো আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছিল, তখনো তাদের আয় কমেনি, বরং লকলক করে ওপরে উঠছিল।
এরই মধ্যে চীন ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ নিয়েছে, আর সারা বিশ্বে তার পদচিহ্ন এঁকে দিয়েছে। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই), একটি বিশ্বব্যাপী অবকাঠামো উন্নয়ন কৌশল যা ২০১৩ সালে ১২৬টি দেশ এবং ২৯টি আন্তর্জাতিক সংস্থা যৌথভাবে বেল্ট অ্যান্ড রোড নির্মাণে চীনের সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তির মাধ্যমে গৃহীত হয়।
এটিকে শি জিনপিংয়ের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিআরআই শি জিনপিংয়ের ‘মেজর কান্ট্রি ডিপ্লোম্যাসি’ কৌশলের একটি কেন্দ্রীয় উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা চীনকে তার ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা এবং মর্যাদা অনুসারে বৈশ্বিক বিষয়গুলোর জন্য একটি বৃহত্তর নেতৃত্বের ভূমিকা গ্রহণ করার আহ্বান জানায়। ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত, ১৪৬টি দেশ বিআরআই-তে স্বাক্ষর করে। পাশাপাশি, এ কথাও উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো বৈশ্বিক সংস্থাগুলোতেও চীন শুধু প্রভাব নয়, বরং রীতিমতো শাসন চালিয়েছে।
এত সব ঈর্ষণীয় কৃতিত্ব এবং যুগান্তকারী সাফল্য সত্ত্বেও চীন গত এক দশক বা তারও বেশি সময় ধরে রাশি রাশি সংকটের সৃষ্টি করছে এবং ক্রমেই সেগুলো সমস্যার স্তূপ তৈরি করে যাচ্ছে। মন্দঋণের পাহাড় জেগেছে। অলাভজনক ও অবাণিজ্যিক অবকাঠামো নির্মাণ হয়েছে দেদার। ফলে নিষ্ফলা রিয়েল এস্টেট, খালি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক, স্বল্প-ব্যবহৃত অ্যাপার্টমেন্ট, যাত্রীশূন্য পরিবহন সুবিধা এবং কয়লা, ইস্পাত, সৌর প্যানেল ও বৈদ্যুতিক যানবাহন থেকে সৃষ্ট অতিরিক্ত এনার্জির বোঝা তৈরি হয়েছে। এসব হচ্ছে সব সংকটের প্রধান উদ্দীপক। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির হার থমকে গেছে। বলা যায়, চীনের দুর্ভাগ্য যে, দেশটি এখন বিশ্বের সর্বোচ্চ স্তরের বৈষম্যের চূড়ায় অবস্থান করছে এবং বিষয়টি শীর্ষস্থান দখলে রাখার মতো গর্বের নয় নিশ্চয়। বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কি নৈতিক, সামাজিক এবং বস্তুগত ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে কাক্সিক্ষত ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করার দিকে এগিয়ে যেতে পারবে?
পৃথিবীর অন্য যে-কোনো দেশের তুলনায় চীনের বার্ধক্যের গতি অস্বাভাবিক দ্রুত। কিন্তু সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই শোচনীয়। ২৯০ মিলিয়ন অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকাংশ সামাজিক সুবিধা পায় না বা সুবিধা পাওয়ার যোগ্যতায় উত্তীর্ণ নয়। চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে সারা দেশের অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যা ২০২০ সালের তুলনায় ২.৪ শতাংশ তথা ৬৯.১ লাখ বৃদ্ধি পেয়ে ২৯ কোটি ২৫ লাখ ১০ হাজার।
উপরন্তু মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়েছে শি জিনপিংয়ের রাজনীতি। তার ব্যর্থ উন্নয়ন মডেলের প্রভাব মোকাবিলা করার জন্য তিনি যে রাজনৈতিক অস্ত্র ব্যবহার করছেন, তা একটি ক্রমশ দমনমূলক, রাষ্ট্রকেন্দ্রিক এবং নিয়ন্ত্রণকারী শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলেছে।
বলা যায়, সময়টা আসলেই কঠিন। এটা চীনা নাগরিকদের পরীক্ষার সময়। বিশেষত ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত সমাজের জন্য মহাপরীক্ষাযাদের সঞ্চয়ের বেশিরভাগ ফুরিয়ে গেছে কোনো এক রিয়েল এস্টেট সেক্টরে একটি বাড়ি খুঁজে পেতে গিয়ে; অথচ কাঠামোগত পতনের কারণে তা হয়ে উঠছে পিঠ ন্যুব্জ করে দেওয়া বোঝার মতো। বেশিরভাগ হাউজিং স্টক অতিরিক্ত নির্মাণ, লেনদেনে দরপতন এবং মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা হারানোর কারণে বসে যাচ্ছে। কিন্তু এটা ঘটছে ছোট ছোট শতাধিক শহরে। বেইজিং, শেনজেন বা সাংহাইয়ের মতো বড় শহরগুলোতে যেহেতু ঘটছে না, তাই শহরের লোকেরা খবরও পায় না।
চীনের নেতারা এই বছর ভোগ্য চাহিদা বাড়াতে উঠেপড়ে লেগেছেন এবং প্রাইভেট ফার্ম ও উদ্যোক্তাদের ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করার বিষয়ে সোচ্চার হয়েছেন। এমনকি তারা তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থকে পার্টির রাজনৈতিক লক্ষ্যের সঙ্গে একীভূত করে নিতে দলের চাপের মুখে পড়ছেন, কেউ কেউ শাস্তির শিকারও হয়েছেন। আমরা এখনো জানি না, এই ধরনের বাগাড়ম্বর আসলে কতটা ফল বয়ে আনবে।
আগামী সপ্তাহ এবং মাসগুলোতে আমরা হয়তো সর্বোচ্চ আশা করতে পারব যে, কর্র্তৃপক্ষ তাদের আর্থিক ও বাজেট নীতি এবং আবাসন প্রবিধান ও অবকাঠামোতে অর্থায়নের প্রয়োজনে ঋণ পলিসিকে আরও সহজ করবেন। এমন ব্যবস্থাও থাকতে পারে, যা একই সঙ্গে ভোক্তাবান্ধব হবে, আয়ও বাড়াবে, ফলে খরচ বাড়লেও তাতে ভারসাম্য বজায় থাকবে।
তবে এসবে আসন্ন শীতকালে অর্থনীতিকে সাময়িক স্বস্তি দিতে পারবে বটে। কিন্তু এটা তো স্থায়ী সমাধান নয়। অর্থনীতির অন্তর্নিহিত দুর্বলতা এবং বৃহত্তর কর্র্তৃত্ববাদ এখন চীনের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য এবং বলা যায় একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ বাহ্যত যার পরিবর্তন দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ।
একবিংশ শতকের দুই দশক পেরিয়ে যাওয়ার পরেও চীনের অর্থনীতির এই টালমাটাল পরিস্থিতি বিশ্বের ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্যও একটি বড় হুমকি। হুমকি সংক্রামিত হয়েছে চীনের অভ্যন্তরেও। একসময় যে গণচীন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বিশ্ব মঞ্চে অগ্রসর হয়েছে এবং গণতন্ত্রকে একপাশে সরিয়ে রাখলেও উদারপন্থার পথ ধরে চলেছে, নিজের এবং বিশ্বের স্বার্থে তাকে শাসনব্যবস্থা পুনর্বিন্যাস করতে হবে। নিশ্চয় সে সেটা পারবে। কঠিন সময়ে এর বিকল্প তার সামনে নেই।
দি গার্ডিয়ান অনলাইন থেকে ভাষান্তর : মনযূরুল হক
লেখক: অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির চায়না সেন্টার এবং সোস-এর একজন গবেষণা সহযোগী
‘মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন এবং মানব পাচার অপরাধের শিকার ব্যক্তিবর্গের সুরক্ষা ও অধিকার বাস্তবায়ন ও নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইন’ নামে ২০১২ সালে একটি আইন করা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এখন পর্যন্ত এই আইনে মোট কতজনকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে? প্রায়ই জানা যায়, ‘আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রের ... সদস্য গ্রেপ্তার’ এদের পরবর্তী সময়ে কোথায় পাচার করা হয়, তা জানা না থাকলেও এমনটি বলাই যায় তারা সবকিছু ম্যানেজ করেই চলে যান লোকচক্ষুর আড়ালে। কয়েকদিন পর আবার শুরু করেন মানব পাচার ব্যবসা। দেশীয় চক্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক চক্র মিলে যে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন, খোঁজ নিলে জানা যাবে এর সঙ্গে জড়িয়ে আছেন অনেক রাঘববোয়াল। ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নেটওয়ার্ক ঘুরেফিরে একটি নেটওয়ার্কে চলে আসে। যার নেতৃত্ব দেখা যাবে, ইউরোপ বা আমেরিকা থেকে আসছে। তবে এই মুহূর্তে আমরা যে চক্রের কথা জানতে পেরেছি, তার নেতৃত্ব রয়েছে মিয়ানমারে। মিয়ানমারের দুই রোহিঙ্গা নাগরিকের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে একটি আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্র। এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কয়েকজন বাংলাদেশি প্রতারক। এই চক্রের বাংলাদেশের হোতা মো. ইসমাইল ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। সংস্থাটি বলছে, এই চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন এলাকার তরুণ এবং যুবকদের কোনো অর্থ ও পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রলোভন দেখাত। এ বিষয়ে দেশ রূপান্তরে ‘পাসপোর্ট ভিসা টাকা ছাড়াই মালয়েশিয়া পাঠাত চক্রটি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। প্রতিবেদনে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এত অনিশ্চয়তা জেনেও একজন মানুষ কেন এমন ভয়ংকর প্রতারণার ফাঁদে পা দিচ্ছে? এখানে ঠিক কোন ধরনের মনস্তত্ত্ব কাজ করছে, তা বলা খুব একটা কঠিন নয়। সোজা ভাষায় বলতে গেলে পাসপোর্ট, ভিসার বিড়ম্বনা এড়িয়ে সহজেই যদি মালয়েশিয়ার মতো দেশে গিয়ে চাকরি পাওয়া যায়, সমস্যা কী? এমন সরল বিশ্বাসের কারণেই প্রতারণার খপ্পরে পড়ছেন তারা। প্রতিবেদনে সেই প্রতারণার ভয়াবহ নির্যাতনের চিত্র ফুটে উঠেছে। প্রথমে ট্রলারে তারা যাচ্ছেন মিয়ানমার, সেখান থেকে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর হয়ে মালয়েশিয়া। এই দীর্ঘ সমুদ্রপথে রয়েছে মিয়ানমার-থাইল্যান্ডের কোস্টগার্ড। এই চক্রটি গত ১৯ মার্চ ২২ জনকে নিয়ে একটি ট্রলারে যাত্রা শুরু করে মিয়ানমার উপকূলে পৌঁছালে সেখানকার কোস্টগার্ড ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করে। অন্য তিনজনকে চক্রের এক সদস্য কৌশলে ছাড়িয়ে তার ক্যাম্পে নিয়ে যান। সেখানে আটকে রেখে মুক্তিপণের জন্য নির্যাতন করেন। তার মধ্যে ২২ জনের একজন জহিরুলের পরিবারের কাছে তারা ৬ লাখ টাকা দাবি করেন। তার পরিবার গত ১০ মে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা দেয় এবং ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পর দেওয়ার কথা জানায়।
এইভাবে মিয়ানমারে অনেককে নির্যাতন করা হয়। সেই নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে পরিবারের কাছ থেকে আদায় করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা। যাদের কাছ থেকে টাকা পাওয়া যেত, তাদের পাঠানো হতো থাইল্যান্ড হয়ে মালয়েশিয়া। মাঝখানে অবশ্যই কোনো না কোনো চ্যানেলে তারা ম্যানেজ করতেন। কিন্তু মালয়েশিয়াতেও থাকতেন আরেক দালাল। তিনি টাকা পাওয়ার পরই সবকিছু ব্যবস্থা করে দিতেন। আবার নির্যাতন করে কাউকে হত্যাও করা হচ্ছে।
এসবের সুষ্ঠু প্রতিকার করার জন্য অবশ্যই নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ রয়েছে। কীভাবে এসব প্রতারক চক্র দিন দিন ডালপালা বৃদ্ধি করতে পারছে, সে বিষয়ে গভীর সুষ্ঠু তদন্ত দরকার। শুধু তদন্ত করলেই হবে না, তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা না নিলে এই ধরনের প্রতারণার হাত থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করা দুরূহ। এই চক্রের নেপথ্য শক্তিকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা দরকার। একইসঙ্গে এ বিষয়ে সরকারি উদ্যোগে প্রচারণা চালাতে হবে। কোনোভাবেই যে পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া মালয়েশিয়ার মতো দেশে যাওয়া যায় না, সেই বিষয়ে জনগণকে সচেতন করা প্রয়োজন। আর প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে তাদের পরিণতি হবে নির্মম এবং নৃশংস। তাহলেই একমাত্র সরকারের আন্তরিকতা পরিলক্ষিত হবে। আমরা এটাই দেখতে চাই।
যুক্তরাষ্ট্র গত মে মাসে ভিসানীতি আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল। শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় তারা ভিসানীতি ঘোষণার কার্যকারিতার কথা জানালো। এই ভিসানীতি কার্যকারিতার কথা তারা তখন জানালো যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।
আরেকটু স্পষ্ট করে বললে, নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় গত শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়ার এক বৈঠকে আবারও বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়।
ওই বৈঠকের পর আজরা জেয়া নিজেই এক্সে (সাবেক টুইটার) সচিত্র একটি পোস্ট দিয়েছেন। এতে তিনি লিখেছেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশ, কানাডা, গাম্বিয়া, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের একটি সাইড ইভেন্টের আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আবারও যুক্ত হতে পেরে সম্মানিতবোধ করছি। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, অংশীদারত্বের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছি এবং ৯ লাখ ৬০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে উদারতার সঙ্গে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছি।’
বৈঠকে আজরা জেয়া প্রধানমন্ত্রীকে জানান, তারা রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের জন্য ১১৬ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জেয়া রোহিঙ্গাদের উন্নত জীবিকা নিশ্চিত করতে তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর জোর দেন।
জবাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা উচিত, অন্যথায় এই অঞ্চল নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়বে। কারণ রোহিঙ্গারা ইতিমধ্যে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। যার মধ্যে রয়েছে হত্যা, আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান এবং মাদক কারবার। রোহিঙ্গারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে কারণ তাদের প্রত্যাবাসন দীর্ঘায়িত হচ্ছে এবং তারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে এবং তারা সেখানে কোনো ভবিষ্যৎ অনুভব করছে না।
একটা বিষয় খেয়াল করলে বুঝা যাবে, উজারা জেয়ার সঙ্গে বৈঠকের পর পরই বাংলাদেশের উপর যুক্তরাষ্ট্র তাদের ভিসানীতি কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছে। এতে বুঝা যাচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করেছে। তাদের দাবি ছিলো, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেছেন, তাদেরকে নিজ দেশ ফিরিয়ে নিতে যত তাড়াতাড়ি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত।এ থেকে বুঝতে কোনো অসুবিধা নেই যে, রোহিঙ্গাদের কর্মসংসস্থানের প্রস্তাব সরাসরি ফিরিয়ে দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র নাখোশ হয়েছে। এই প্রস্তাব ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আর কী কী প্রস্তাব বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছিল তা আমরা জানি না। মনে হচ্ছে, এমন কিছু প্রস্তাব হয়তো প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছিল যেগুলো তিনি নাকচ করে দিয়েছেন।এবার আসা যাক বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচন প্রসঙ্গে। বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। অনেকদিন ধরে তারা সেটি বলে আসছে। বাংলাদেশের তরফ থেকেও বার বার জানানো হয়েছে যে, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা হবে। তারপরও তারা ভিসানীতি আরোপ করে সেটি কার্যকর করতে শুরু করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- নির্বাচন তো এখনও হয়নি। তার আগেই কেন ভিসানীতি আরোপ ও কার্যকর করা হলো?
এ থেকে এটা স্পষ্ট যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করতেই এসব ভিসানীতি, নিষেধাজ্ঞা জারি করছে। গণতন্ত্র, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক ভোট শুধুমাত্র ইস্যু। নিজের দেশেই আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাদের বিরোধী পক্ষকে ঘায়েল করতে নানান কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। নিজের দেশেই যেখানে বাইডেন প্রশাসন প্রশ্নবিদ্ধ সেখানে অন্যদেশের গণতন্ত্র নিয়ে তাদের এতো মাথা ব্যাথা কেন?
বাংলাদেশেই যে তারা প্রথম ভিসানীতি আরোপ বা নিষেধাজ্ঞা জারি করে তা কিন্তু নয়। সাম্প্রতিক অতীত ঘাটলে দেখা যাবে, যুক্তরাষ্ট্র আরও বহু দেশের সরকারের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদদের উপর একইভাবে ভিসানীতি এবং নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এটা নতুন কিছু নয়। যেখানেই তাদের স্বার্থ জড়িত সেখানেই তারা একই পথে হেঁটেছে। কিন্তু কোথাও তারা সফল হতে পারেনি। সব জায়গা থেকেই ফিরেছে শূন্য হাতে। আমরা যদি ভেনিজুয়েলা থেকে শুরু করে সিরিয়া, ইরান, মিশর, তুরস্ক, রাশিয়া, বেলারুশের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো এদের সবার উপরই নিষেধাজ্ঞা জারি কিংবা ভিসানীতি আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু খুব একটা ফল হয়নি।তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই সেদেশে সামরিক অভ্যূত্থান হয়েছিল। সেই অভ্যূত্থানে যুক্তরাষ্ট্র ইন্ধন দিয়েছিল। ২০২১ সালে তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেইমান সৌলু যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ধনের বিষয়টি স্পষ্ট করেন। ভেনিজুয়েলায় নিজেদের পছন্দের লোক গুইদুকে প্রেসিডেন্ট করতে না পেরে মাদুরোকে বার বার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।পাঠকদেরকে হালের একটা তথ্য দিয়ে রাখি। যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ভারতের মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্রের উপরও। ১৯৯২ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বহাল ছিল। বারাক ওবামা ভারত সফরের পর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। তার সফরের বেশ কিছু দিন পর ভারত নাসার সঙ্গে চুক্তি করল।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। গুজরাট দাঙ্গার কারণে তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। পরবর্তিতে নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্র তার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বাধ্য হয়।
বাংলাদেশের রাজনীতি কোন দিকে যাবে, কারা সরকার পরিচালনা করবে- সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক শুধুই বাংলাদেশের জনগণ। এখানে বাইরের রাষ্ট্র সে যুক্তরাষ্ট্র হোক কিংবা অন্য কোনো দেশ হোক কারোরই হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।
বাংলাদেশের রাজনীতি কোন দিকে যাবে, কারা সরকার পরিচালনা করবে- সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক শুধুই বাংলাদেশের জনগণ। এখানে বাইরের রাষ্ট্র সে যুক্তরাষ্ট্র হোক কিংবা অন্য কোনো দেশ হোক কারোরই হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। যখনই বাইরের কোনো রাষ্ট্র কোনো অজুহাতে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করবে তখনই বুঝতে হবে ওই দেশের বৃহত্তর স্বার্থ আছে। আর এসব নিষেধাজ্ঞা, ভিসানীতি আরোপে এদেশের সাধারণ মানুষের কিছুই যায় আসে না। কারণ বাংলাদেশের মানুষ নিজেরাই নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্ত করেছে এবং করছে।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী নিজামুল হক বিপুল
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
মানকাডিং আউটের সুবিধাটা দলীয় সিদ্ধান্ত। এটা নেওয়া হবে কি না তা বসে আলোচনা করে দলের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন তামিম ইকবাল। একবার আউট করে আবার ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে আনাটা ভালো দেখায় না বলেও মনে করেন এই টাইগার ব্যাটসম্যান।
মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে মানকাড আউটের ঘটনা ঘটে। বল হওয়ার আগেই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া ইশ সোধিকে মানকাড করেন হাসান মাহমুদ। টিভি আম্পায়ারও তাকে আউট ঘোষণা করেন। কিন্তু ড্রেসিংরুমে ফেরার আগেই অধিনায়ক লিটন দাস তাকে ফিরিয়ে আনেন। তারপরই শুরু হয়ে যায় সমালোচনার ঝড়।
স্বাভাবিকভাবেই প্রসঙ্গটা আসে সংবাদ সম্মেলেনও। দলের প্রতিনিধি হয়ে আসা তামিম ইকবালের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, তাঁকে এভাবে ফিরিয়ে আনা উচিত হয়েছে কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে তামিম সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘এ আউট নিলে… আমার মনে হয়নি ওরও (সোধি) এমন করা উচিত হয়নি। ও যেভাবে বিস্মিত হয়েছে, তারও বিস্মিত হওয়া উচিত নয়। এটা আমরা নেব কি নেব না, এটা অধিনায়কের সিদ্ধান্ত। দুঃখিত, দলের সিদ্ধান্ত। নেব কি নেব না। তবে সে যেভাবে নিয়েছে, তাতে আমি অবাক হয়েছি। এটা ক্রিকেটেরই অংশ।’
এমন আউটের ক্ষেত্রে একটা কথা আসে—ব্যাটসম্যানকে সতর্ক করা। তবে সেটিকেও উড়িয়ে দিয়েছেন তামিম, ‘এখানে ওয়ার্নিংয়ের কিছু নেই। বোল্ড আউটের মতোই। হয়তো তখন অধিনায়ক ভেবেছে আমরা নেব না, এ কারণেই আমরা নেই নাই। এখানে ঠিক বা ভুল নেই। হয় আপনি করবেন, তাতেও ভুল নেই। যদি না করেন, তাতেও ভুল নেই। এটা দলের সিদ্ধান্ত। আমাদের এটা নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত, করব কি করব না। কারণ সামনে (এমন) আরও দেখা যাবে।’
এমন দ্বিপক্ষীয় সিরিজে ম্যাচের ওই পর্যায়ে না হয়ে অন্য কোনো আরও গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এমন আউট বাংলাদেশ করত কি না, সে ব্যাপারে তামিম বলেছেন, ‘হয়তোবা (নিতাম)। হয়তোবা না। আমি ভুল দেখি না। নিয়ম আছে এমন। এটা যদি কেউ আমরা নিই বা আমাদের বিপক্ষেও নেয়, আমার মনে হয় না এভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত। যেভাবে এখন লোকে দেখায়।’
তামিমের কথা শুনে মনে হবে, মানকাডিং না করার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত বা নিজেদের মধ্যে আলোচনা হয়নি তাঁদের। এ ব্যাপারে এখন দলের মধ্যে আলোচনা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি, ‘এটা একটা দলীয় সিদ্ধান্ত। আজকের ঘটনার পর আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করব। আমাদের যদি দলীয় সিদ্ধান্ত হয়, আমরা এ ধরনের উইকেট নেব তাহলে নেব, নইলে নেব না। কারণ এটা ভালো দেখায় না, একবার আউট করার পর আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসা।’
যুগে যুগে দুনিয়ায় এমন কিছু মানুষের জন্ম হয়, যারা তাদের কর্ম, নীতি ও আদর্শের কারণে স্মরণীয়-বরণীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। এমনই একজন ব্যক্তি হলেন শায়খুল হাদিস মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। যুগ সচেতন আলেম, লেখক, প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ ও শিক্ষক। তার আরও অনেক পরিচয় রয়েছে। সেসব ছাপিয়ে আদর্শ শিক্ষক হিসেবে তিনি ঠাঁই করে নিয়েছেন। এ মনীষীর বর্ণাঢ্য জীবন নিয়ে লিখেছেন মোস্তফা ওয়াদুদ
তিনি প্রায় অর্ধশতাধিক মাদ্রাসার মুরুব্বি। রাজধানীর জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা, জামিয়া সুবহানিয়া তুরাগ ও জামিয়াতুন নুর আল কাসেমিয়ার শায়খুল হাদিস। শতাব্দী প্রাচীন রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র সহসভাপতি। আলেম-উলামাদের আস্থার প্রতীক। দেশজুড়ে রয়েছে তার অসংখ্য ছাত্র ও ভক্ত-অনুরক্ত।
মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক ১৯৪৭ সালের ৯ আগস্ট সিলেট জেলার কানাইঘাট থানার আকুনি গ্রামের প্রভাবশালী শিকদার বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা শায়খুল হাদিস ওয়াত তাফসির আল্লামা শফিকুল হক আকুনি (রহ.)। দাদার নাম মাওলানা ইবরাহীম আলী (রহ.)। নয় ভাইবোনের সংসারে মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক সবার বড়।
আল্লামা শফিকুল হক আকুনি (রহ.) প্রতিষ্ঠিত নিজ গ্রামের মাজাহিরুল উলুম আকুনি মাদ্রাসায় মক্তব থেকে মেশকাত পর্যন্ত পড়াশোনা করেন তিনি। শৈশব থেকেই তিনি অত্যন্ত মেধাবী এবং লেখাপড়ায় খুব মনোযোগী ছিলেন। এরপর চট্টগ্রামের হাটহাজারি মাদ্রাসা থেকে ১৯৬৯ সালে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন। দাওরায়ে হাদিস পাস করে এক বছর তাবলিগে কাটান। দাওয়াত ও ইমানের মেহনতকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে যুবক বয়সে অশেষ পরিশ্রম করেন। এরপর যোগ দেন শিক্ষকতায়। এ সময় তিনি সিলেটের ফাতেহপুর মাদ্রাসায় ১৯৭২ সালে ও ভারতের আসাম প্রদেশের নোয়াগাং মাদ্রাসায় ১৯৭৩ সালে শিক্ষকতা করেন। শিক্ষকতা করলেও, মনে আকাক্সক্ষা ছিল দারুল উলুম দেওবন্দে গিয়ে আরও পড়াশোনার। ফলে শিক্ষকতায় সাময়িক বিরতি দিয়ে বিশ্বখ্যাত ইসলামি বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম দেওবন্দে গমন করেন মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। দুই বছর তিনি (১৯৭৪-৭৫) দেওবন্দে পড়াশোনা করেন।
কর্মজীবনে অসংখ্য অবদান আছে তার। মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক দেওবন্দ থেকে দেশে ফিরেন ১৯৭৫ সালে। এরপর ১৯৭৭ সনে পবিত্র হজব্রত পালনে সৌদি আরব গমন করেন। ১৯৭৮ সালে ঢাকার ফরিদাবাদ মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। এ সময় দেশসেরা শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন তিনি। ওই সময়ই প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ।’ শুরুতে বেফাকের পরীক্ষার প্রশ্ন হাতে লিখে তৈরি করা হতো। মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক ছিলেন প্রশ্ন সম্পাদনা কমিটির অন্যতম সদস্য।
ফরিদাবাদ মাদ্রাসায় ৬ বছর শিক্ষকতার পর ১৯৮৪-৮৭ সাল পর্যন্ত জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগে শিক্ষকতা করেন। পরে নিজ গ্রাম আকুনিতে পিতা কর্র্তৃক প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত। এরপর তার একান্ত হিতাকাক্সক্ষী আল্লামা নুর হোসাইন কাসেমি (রহ.)-এর আহ্বানে জামিয়া মাদানিয়া বারিধারায় শায়খুল হাদিস (শায়খে সানি) পদে যোগ দেন। জামিয়া বারিধারা ও জামিয়া সুবহানিয়ার প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমি (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর থেকে এই দুই প্রতিষ্ঠানে প্রধান শায়খুল হাদিসের পদ অলঙ্কিত করে আছেন খ্যাতনামা এ আলেম।
অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা করা এই আলেমের হাজার হাজার শিক্ষার্থী হাদিস পড়েছেন। যারা দেশের আনাচে-কানাচে দ্বীনি ইলমের তালিম দিয়ে বেড়াচ্ছেন। মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক বিভিন্ন ভ্রান্ত মতবাদ সম্পর্কে বিস্তৃত এবং গভীর পড়াশোনা করে এ বিষয়ে জাতিকে সতর্ক করার কাজে পথিকৃতের ভূমিকায় আছেন। তিনি নিয়মিত ক্লাসে ছাত্রদের কাছে ও মাঠে-ময়দানে ওয়াজ-মাহফিলে সাধারণ মানুষদের মধ্যে এসব বিষয়ে সতর্কবার্তা তুলে ধরেন। বাতিল মতবাদ থেকে মানুষকে ব্যাপকভাবে সতর্ক করতে তিনি বেশ কিছু পুস্তকও রচনা করেছেন।
মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক হাদিস অস্বীকারের ফেতনার মোকাবিলায় নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণীর মর্যাদা হৃদয়গ্রাহী করে উপস্থাপন, শিয়া মতবাদ খণ্ডনের লক্ষ্যে সাহাবিদের ফজিলত ও মর্যাদা বর্ণনা, কাদিয়ানি মতবাদের মোকাবিলায় খতমে নবুওয়তের প্রমাণ ও এর দাবিসমূহ মানুষকে বোঝানো, মাজহাব অস্বীকারকারীদের মোকাবিলায় মাজহাবের ইমামদের মর্যাদা ও উম্মতের প্রতি তাদের অবদানসমূহ এমন হৃদয়গ্রাহী করে উপস্থাপন করেন যার বর্ণনা দেওয়া মুশকিল। ভ্রান্ত মতবাদ ও বিশ্বাসের অসারতা প্রমাণে তার যুক্তি পূর্ণ আলোচনায় মানুষের আকিদা যেমন মজবুত হয়, তেমনি অনেক মানুষ ভ্রান্ত মতবাদ ও বিশ্বাসের পথ ছেড়ে সঠিক পথের সন্ধান পায়।
লেখালেখির জগতে রয়েছে তার সরব পদচারণা। দরসে নেজামিতে যেসব জীবিত লেখকদের কিতাব পড়ানো হয়, তিনি তাদের অন্যতম। তার রচিত অনবদ্য হাদিসের কিতাব ‘খোলাসাতুল আছার’ (চমৎকার বিন্যাসের এ গ্রন্থে তিনি হানাফি মাজহাবের মৌলিক মাসয়ালা সমর্থনের শক্তিশালী হাদিসসমূহ সংকলন করেছেন) অনেক কওমি মাদ্রাসার পাঠ্য কিতাব। যুগ যুগ ধরে এ কিতাব তাকে সর্বমহলে বাঁচিয়ে রাখবে। এ ছাড়া তিনি আকর্ষণীয় ভাষারীতি ও প্রাঞ্জলতার সঙ্গে রচনা করেছেন বেশ কিছু গ্রন্থ। তার মধ্যে-ইসলাম ও মওদুদীবাদের সংঘাত, কোরআন ও হাদিসের আলোকে নামাজ, তাহকিক-তাকলিদ, শিক্ষা পর্যালোচনা, মাকামে সাহাবা, ভূগোল ও ইতিহাস, বিরাজমান সমস্যা কারণ ও প্রতিকার, মওদুদিবাদ ও সাদ সাহেবের আসল রূপ অন্যতম। তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের বিভিন্নবিষয় নিয়ে রচনা করেছেন অসংখ্য পুস্তিকা। লেখনীর পাশাপাশি তার বক্তৃতাও বেশ চমৎকার। তার বক্তব্য যুক্তি তর্ক নির্ভর। যে কাউকে মুগ্ধ করে তার বয়ান। তিনি দেশব্যাপী বিভিন্ন মাদ্রাসায় বোখারি শরিফের উদ্বোধনী ও সমাপনী সবক পড়ান। এ ছাড়া সারাদেশের তওহিদি জনতার মধ্যে হেদায়েতি বয়ানের মাধ্যমে দ্বীনের দাওয়াত প্রচার করেন।
মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক পারিবারিকভাবে বেশ সম্ভ্রান্ত। ১৯৮০ সালে মাস্টার ফজলুল হকের কনিষ্ঠ কন্যার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জনক। দুই ছেলেই আলেম দ্বীনি খেদমতে নিয়োজিত।
মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক ১৯৬৬ সাল থেকে পাঁচ দশকের অধিককাল অবধি এ দেশের রাজনীতি ও ইসলামি আন্দোলনের এক নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে সর্বমহলে পরিচিতি লাভ করেছেন। বাবার হাত ধরে ছাত্রকাল থেকেই তিনি জমিয়তের সক্রিয় কর্মী। সাংগঠনিকভাবে নানা পদে দায়িত্ব পালন শেষে বর্তমানে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র সহসভাপতি ও কেন্দ্রীয় মজলিশে আমেলার অন্যতম নীতি নির্ধারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বলা হয়, তিনি একজন ইতিহাস সমৃদ্ধ রাজনীতিবিদ। তার বক্তৃতা ও লেখনীর মাধ্যমে এমনটাই ফুটে ওঠে। তিনি জানেন, কীভাবে রাজনীতির মাঠে ইতিহাস স্মরণ করিয়ে রাজনৈতিক ভাষায় বক্তৃতা করতে হয়। কীভাবে, কোন পদ্ধতিতে, কোন ভাষায়, কাকে, কি জবাব দিতে হয়। তিনি স্থান-কাল-পাত্র ভেদে সবস্থানে বিচরণ করেন। বর্তমানে এমন চতুর্মুখী মেধাবী আলেম খুবই বিরল। তার তুলনা শুধুই তিনি।
মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুকের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশি অনেক ছাত্র দারুল উলুম দেওবন্দে ভর্তির সুযোগ লাভ করেন। বর্তমান প্রজন্মের ছাত্রদের ব্যাপকভাবে দেওবন্দের সঙ্গে সরাসরি ও চিন্তা-চেতনায় সম্পর্ক স্থাপনে তার অবদান অনস্বীকার্য। মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক ছোটবেলা থেকেই বাবা ও দাদার কারণে আকাবিরদের সান্নিধ্যে যাওয়ার সুযোগ পান। জীবনে অনেক বুজুর্গ আলেমের সান্নিধ্য পেয়েছেন। তবে তিনি নিয়মতান্ত্রিকভাবে আধ্যাত্মিক সাধনা শুরু করেন দেওবন্দে অবস্থানকালে ফেদায়ে মিল্লাত সাইয়্যিদ আসআদ মাদানি (রহ.)-এর সঙ্গে ইসলাহি সম্পর্ক স্থাপন করে। সাইয়্যিদ আসআদ মাদানি (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি বায়াত গ্রহণ করেন খলিফায়ে মাদানি শায়খ আবদুল মুমিন (রহ.)-এর হাতে। পরে সদরে জমিয়ত আল্লামা শায়খ আবদুল মুমিন (শায়খে ইমামবাড়ি রহ.) তাকে খেলাফত প্রদান করেন।
মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক ইতিহাস, দর্শন এবং ভূগোলের একজন ভালো পাঠক। তার বক্তব্য শোনলেই যে কেউ তা বুঝতে পারে। তিনি এই যোগ্যতা লাভ করেছেন মূলত তার পিতা শায়খুল হাদিস আল্লামা শফিকুল হক আকুনি (রহ.)-এর কাছ থেকে। মাওলানা আকুনি (রহ.)-কে বলা হতো সিলেটের আলেমদের জীবন্ত ইতিহাসের বই। তিনি যতদিন বেঁচে ছিলেন তত দিন আলেমদের সঠিক ইতিহাস লেখার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহে অনেকই তার কাছে যেতেন।
মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক সবসময় দেশ, জাতি, মানুষ ও মানবতা নিয়ে ভাবেন, তাদের উন্নতির কথা চিন্তা করেন। তার চিন্তা-চেতনা স্বচ্ছ। কথায় ও কাজে পরিচ্ছন্ন। তিনি এদেশের ইসলাম ও দেশ প্রিয় জনতার অমূল্য সম্পদ। ইলম, আমল, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, পারিবারিক ঐতিহ্য, আধ্যাত্মিক সাধনায় মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক উজ্জ্বল একটি নাম। তার জ্ঞান ও সান্নিধ্য থেকে উপকৃত হওয়ার অনেকে সুযোগ রয়েছে। আল্লাহতায়ালা তাকে সুস্থতার সঙ্গে নেক হায়াত দান করুন। তার থেকে আরও বেশি বেশি উপকৃত হওয়ার তওফিক দিন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তামিম ইকবালকে সবশেষ দেখা গিয়েছিল গত জুলাইতে। তারপর থেকে তিনি মাঠের বাইরে। ঘটে গেছে নানা ঘটনা। নিয়েছিলেন অবসর, একদিন পরেই অবশ্য ফিরে এসেছেন তিনি। তারপর ছেড়েছেন নেতৃত্ব। চোটে জর্জর শরীর নিয়ে খেলেননি এশিয়া কাপে।
তবে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড সিরিজ দিয়ে দলে ফিরেছেন তিনি। প্রথম ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে গেলেও, দ্বিতীয় ম্যাচ আজ খেলেছেন ৪৪ রানের একটি ইনিংস। এই ইনিংসে তিনি হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন বলে জানালেন ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে। সেখানে জানিয়েছেন শুরুতে তিনি নাকি অস্বস্তিতে ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে তামিম বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, আমি নার্ভাস ছিলাম। যদি বলি যে এটা জাস্ট আরেকটা ম্যাচ তাহলে বলা যাবে না। শেষ কয়েক মাসে যেসব ঘটনা ঘটেছে, ব্যাটিংয়ে নামার সময় আমি নার্ভাস ছিলাম। তবে প্রথম ওভার শেষে সেটা কমে গিয়েছিল যা স্বস্তির ছিল। এছাড়া ব্যাটিং করে আনন্দ পাচ্ছিলাম।’
তিনি যোগ করেছেন, ‘মাঠে ফিরে ভালো লাগছে। প্রথম ম্যাচে ৩০ ওভারের মতো ফিল্ডিং করেছি। আজ ৫০ ওভার মাঠে ছিলাম। এছাড়া ব্যাটিং করেছি ২০ ওভারের মতো। ফিরে ভালো লাগছে। তবে এখনও অস্বস্তি রয়েছে। এখনও আমার পেছনে বেশ ভালো অস্বস্তি রয়েছে। ফিজিও এবং আমি এটা ওভারকাম করার চেষ্টা করছি। এটা সত্য এখনও অস্বস্তি রয়েছে।’
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’