
১৯৮৭ সালের ২৩ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন কবি, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক সমর সেন। তার জন্ম ১৯১৬ সালের ১০ অক্টোবর কলকাতার বাগবাজারে। পিতা অরুণ সেন বিশ^ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসের অধ্যাপক ছিলেন। প্রথিতযশা গবেষক দীনেশচন্দ্র সেন তার পিতামহ। সমর সেন কাশিমবাজার স্কুল থেকে ম্যাট্রিক (১৯৩২), স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে আইএ (১৯৩৪) এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক (১৯৩৭) ও স্নাতকোত্তর (১৯৩৮) ডিগ্রি লাভ করেন। মার্কসবাদী নেতা রাধারমণ মিত্র ও বঙ্কিম মুখোপাধ্যায়ের সান্নিধ্য লাভ করার ফলে সমর সেনের রাজনৈতিক মনন গঠিত হয়। তবে তিনি মার্কসের সাম্যবাদী মতবাদের প্রতি আকর্ষণ বোধ করলেও সরাসরি মার্কসীয় রাজনৈতিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণ করেননি। সমর সেন কিছুকাল অধ্যাপনা করেন কাঁথির প্রভাতকুমার কলেজ এবং দিল্লির কমার্শিয়াল কলেজে। তার কর্মজীবনের লম্বা সময় কেটেছে সাংবাদিকতায়। স্টেটসম্যান, হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড, নাও প্রভৃতি পত্রিকায় তিনি সাংবাদিকতা করেন। ‘ফ্রন্টিয়ার’ ও ‘নাও’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। বিজ্ঞাপনী সংস্থায় এবং মস্কোর প্রগতি প্রকাশনালয়ে অনুবাদক হিসেবেও তিনি কর্মরত ছিলেন। ‘আমি রোমান্টিক কবি নই, আমি মার্ক্সিস্ট’ এভাবেই তিনি মার্কসবাদের প্রতি তার প্রবল আকর্ষণ ঘোষণা করেন। নাগরিক জীবনের স্বভাব, অভাব ও অসংগতির বিদ্রƒপাত্মক চিত্রায়ণ ঘটেছে তার কবিতায়। সামন্ততন্ত্রের প্রতি আসক্তি, উপনিবেশের শৃঙ্খল, আর্থিক-সামাজিক-রাষ্ট্রিক-আন্তর্জাতিক অস্থিতিশীলতার অভিঘাতে মধ্যবিত্তের বিচলিত মন তিনি তুলে ধরেন। স্নেহ-প্রেম প্রভৃতি মানবিক অনুভূতির আড়ালে মধ্যবিত্তের দোদুল্যমানতা, স্বার্থপরতা ও পাশবিকতার মর্মঘাতী রূপ তুলে ধরেছেন তিনি কবিতায়। তার কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে কয়েকটি কবিতা, গ্রহণ, নানা কথা, খোলা চিঠি, তিন পুরুষ প্রভৃতি প্রধান। তার আত্মজীবনী ‘বাবু বৃত্তান্ত’ প্রকাশিত হয় ১৯৭৮ সালে।
এবার ক্ষমতার মেইন স্ট্রিমের হকদার হতে চায় জাতীয় পার্টি। দেবর-ভাবির মধ্যে বিরোধ থাকলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভাগযোগে ক্ষমতার উল্লেখযোগ্য হিস্যা চায় দুগ্রুপই। যার যার কৌশল ভিন্ন, লক্ষ্য অভিন্ন। জিএম কাদের জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের গরম বক্তৃতা দিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে চলে গেছেন দিল্লি সফরে। তিনি আর তার স্ত্রী শেরীফা কাদেরই জাপা। তারাই ভারত সফরে জাপার প্রতিনিধি। এর আগে, রওশন এরশাদ দেখা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। রওশন প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে এসেছেন তার অধীনে নির্বাচনের থাকার কথা।
আদতে ক্ষমতার মোহ কাদের-রওশন দুজনেরই। সেই মোহ থেকেই দলে বিভক্তি। বাদ বাকি নেতাদেরও তারা তাদের মতো অভ্যস্ত করে নিতে পেরেছেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে জিএম কাদের বেশ কিছুদিন ধরে কঠোর-বিপ্লবী বক্তব্য রাখছেন। নির্বাচন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতসহ বিদেশি দূতদের সঙ্গেও তিনি দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ নির্বাচন আয়োজনে জাতীয় পার্টির অবস্থানকে গুরুত্বপূর্ণ করার এ চেষ্টায় তিনি নিজের একটা অবস্থান তৈরিতে অনেকটা সফল।
রওশন এরশাদ শেখ হাসিনা সরকারের অধীনেই নির্বাচন চান। অন্যদিকে নিরপেক্ষ নির্বাচন দাবি করলেও নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে জিএম কাদেরের জাপা কোনো কথা বলছে না। তবে আরও বেশি আসনে ক্ষমতার শরিকানা চান, বিশেষ বোঝাপড়ায় বিরোধী দল হতে চান, তা পরিষ্কার। যা রওশন এরশাদেরও চাওয়া। ভারত ভ্রমণের আগের বক্তব্যে বড় ভাইয়ের সম্পত্তি আয়ত্ত করে রাখা জিএম কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগ দেশকে পারিবারিক সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছে। নির্বাচন প্রশ্নে আওয়ামী লীগ ও জাপার সমস্যা একই। জাপার অবস্থা আওয়ামী লীগের চেয়েও করুণ। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জাপার রংপুর এলাকার কয়েকটি আসন ছাড়া দেশের আর কোথাও কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে বোঝাপড়া ছাড়া তাদের গতি নেই। আর সেখানে সেতুবন্ধ হচ্ছে ভারত। তাই ভারতকে আয়ত্তে রাখার বিষয়-আসয় রয়েছে। যা নিয়ে তুমুল প্রতিযোগিতা রওশন-কাদের দুগ্রুপে। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলার নামে সম্প্রতি বরিশালের বাকেরগঞ্জে একটি সড়কের নামকরণ করেছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নাসরিন জাহান রতœা ও তার স্বামী দলের কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। হর্ষবর্ধন শ্রিংলার নামে সড়কের নামকরণ সম্পর্কে জানেনই না সেখানকার ইউএনও। অথচ, রাস্তার নামকরণের ক্ষেত্রে উপজেলা কমিটি থেকে প্রস্তাব যেতে হয়। আর বিদেশি কারও নামকরণের ক্ষেত্রে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অনুমোদন নিতে হয়। এখানে সেসব নিয়মের কোনোটাই মানা হয়নি। রতœা এবং হাওলাদার জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে রওশন এরশাদ গ্রুপের।
আওয়ামী লীগ, সরকার, তথা ভারতের আস্থাভাজন হওয়ার দৌড়ে রওশন এরশাদ ও তার গ্রুপের কর্মতৎপরতা ওপেন সিক্রেট হলেও জিএম কাদেরের ভূমিকা চাতুরিতে মোড়া। ভারত সফরে যাওয়ার আগে কয়েকদিন সরকারের বিরুদ্ধে তার বক্তব্য ছিল অত্যন্ত জ্বালাময়ী। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে তিনি বলে গেছেন, ‘আওয়ামী লীগ নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি হিসেবে দাবি করতে পারে না। তারা ভোটাধিকার হরণ করেছে। মানুষের বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেই শাস্তি পেতে হয়। মানুষের ভোটাধিকার থাকলে, তাদের একনায়কতন্ত্র কখনো স্বৈরতন্ত্রে পরিণত হতো না। তারা মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ একা যুদ্ধ করেনি। মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র অথরিটি আওয়ামী লীগ নয়।’
জিএম কাদেরের সরকারবিরোধী গরম বক্তৃতা আর রওশন এরশাদের সরাসরি সরকারের আজ্ঞাবহতা উভয়েরই উদ্দেশ্য আসন ভাগাভাগিতে বেশি শরিকানা হাসিল করা। নির্বাচন সামনে রেখে দলকে একটি ফ্যাক্টর হিসেবে সামনে আনার এজেন্ডা থেকেই তাদের সাম্প্রতিক এসব বক্তব্য ও যাতায়াত। কেউ প্রধানমন্ত্রীর কাছে, কেউ ভারতে। ভোটের অঙ্কে জাপা দেশের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হলেও রাজনীতিতে কোনো স্বতন্ত্র অবস্থান নিতে পারেনি। কোনো না কোনোভাবে তারা ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এতে জাপা দুর্বল হয়েছে বলে বিভিন্ন সময় দলটির নেতারাও স্বীকার করেছেন। জাপাকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি বড় কৌশল ছিল এরশাদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো। দলটির বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে হত্যা বা দুর্নীতির কোনো মামলা নেই। সে ক্ষেত্রে এরশাদের মতো তার জেলভীতি থাকার কথা নয়। তবে দলটির মধ্যে ভিন্ন দুটি ধারা বা নেতাদের মধ্যে ‘বিরোধ’ রয়েছে। এ রকম অবস্থায় ‘ভয়’ বা ‘প্রলোভনের’ ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জাপা স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন রয়েছে।
সচরাচর গণঅভ্যুত্থানে কোনো স্বৈরশাসকের পতনের পর তার আর রাজনীতিতে ফেরত আসার সুযোগ হয় না। কিন্তু বাংলাদেশে জেনারেল এরশাদ এর ব্যতিক্রম। পতনের পর এরশাদ কারাবন্দি থাকলেও তার দল ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে ৩৫টি আসন পায়। কারাবন্দি থেকে তিনি নিজেও ৫টি আসনে জয়ী হন। সেই নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। বিএনপি সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে ৪০টির বেশি মামলা হয়। এ আমলের পুরোটা সময় এরশাদকে কারাগারেই থাকতে হয়। বিএনপি আমলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলনের অন্যতম শরিক হয় জাপা-জামায়াতও। তখন এরশাদ বা তার জাতীয় পার্টি আর স্বৈরাচার নয়। জামায়াতও রাজাকার নয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ১৯৯৬ সালে সংসদ নির্বাচনে জাপা ৩২টি আসন পায়। দলটির সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ ‘ঐকমত্যের সরকার’ গঠন করে। সেই সরকারে জাপা থেকে মন্ত্রী করা হয়। আওয়ামী লীগ আমলে এরশাদ একের পর এক মামলায় জামিন পান এবং ১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি কারামুক্ত হন। আওয়ামী লীগ আমলের শেষ দিকে বিরোধী দলগুলো নিয়ে বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় ঐক্যজোটে শরিক হন এরশাদ।
ওই জোটে যাওয়া-না যাওয়া নিয়ে জাপায় ভাঙন দেখা দেয়। এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাপা থেকে বেরিয়ে গিয়ে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু তৈরি করেন জাতীয় পার্টি-জেপি এবং নাজিউর রহমান মঞ্জুর বানান বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি। একপর্যায়ে এরশাদের জাপা চারদলীয় ঐক্যজোট থেকে বেরিয়ে যায়। ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন জিতে ক্ষমতায় আসে। এরশাদের জাপা ১৪টি আসন পায়। এত মামলা মাথায় নিয়ে রাজনীতিতে টিকে থাকতে গিয়ে এরশাদকে আজ এদিকে, কাল সেদিকে করতে করতেই জীবন সাঙ্গ করতে হয়েছে। ২০০৭ সালে এক-এগারোর পটপরিবর্তনের পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ২৩০টি আসন পায় মহাজোট। মহাজোটের শরিক দলগুলো পায় ৩২টি আসন। এর মধ্যে জাপা পেয়েছিল ২৭টি আসন।
কোনো না কোনোভাবে ক্ষমতার স্বাদ ছাড়া থাকেননি এরশাদ। ২০১৪ সালের নির্বাচনে এসে আবার নাটকীয়তা। প্রথমে নির্বাচন বর্জন, পরে ‘অংশগ্রহণের এ নাটকীয়তায় দৃশ্যপটে হাজির হন ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং। ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর ২১ ঘণ্টার এক সফরে তিনি বাংলাদেশে আসেন এবং এরশাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের পর এরশাদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব তাকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা বলেছেন। সুজাতা সিং ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগেই এরশাদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানান। কয়েক দিনের মধ্যেই এরশাদ আবার তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন এবং দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল-সিএমএইচে। নির্বাচন পর্যন্ত তাকে হাসপাতালেই রাখা হয়। স্বামীকে আটক বা হাসপাতালে রেখে পার্টির স্টিয়ারিংয়ে তখন রওশন এরশাদ।
তার নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ভাগ্য খুলে যায় জাপার কিছু নেতার। ওই নির্বাচনে ভোটের আগেই ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যান। একতরফা নির্বাচনটিতে আওয়ামী লীগ একাই ২৩৪টি আসন পায়। জাপাকে দেওয়া হয় ৩৪ আসন। ২০১৪ সালের ‘একতরফা’ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জাপা সংসদে বিরোধী দল হয়। একই সঙ্গে দলটি থেকে মন্ত্রীও করা হয় এবং এরশাদকে বানানো হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ২০১৮ সালের নির্বাচনে মহাজোট ২৮৮ আসন পায়। মহাজোটের শরিক হিসেবে ২২টি আসন পেয়ে জাপা আবারও বিরোধী দল হয়। এরশাদ হন বিরোধীদলীয় নেতা। ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই এরশাদের মৃত্যুর পর জাপায় এরশাদের স্ত্রী ও ভাইয়ের বিরোধ। মাঝে ঝলক বা চমক দেখানোর ব্যর্থচেষ্টা তার সাবেক স্ত্রী বিদিশা এরশাদের। মূল দলে ভাই জিএম কাদের চেয়ারম্যান হিসেবে নেতৃত্বে এলেও প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। মাঝেমধ্যেই তাদের বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধের এবারের ঝলকের মূল বিষয়ও ক্ষমতার চৌহদ্দি নিশ্চিত করা ছাড়া আর কিছু নয়। লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট
নিকারাগুয়ায় ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসেন বামপন্থি গেরিলা নেতা ডেনিয়েল ওর্তেগা। যদিও কারচুপির ওই নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে প্রচুর সমালোচনা রয়েছে। সম্প্রতি ওর্তেগার সরকারকে সমর্থন জানানোয় দেশটির শতাধিক কর্মকর্তার ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে এই পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন। অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তার পোস্টে বলেছেন, নিকারাগুয়ায় মানবাধিকারকে সংকুচিত ও গণতন্ত্রকে দুর্বল করায় ১০০ কর্মকর্তার ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আছেন মেয়র, সরকারি কৌঁসুলি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসক, পুলিশ কর্মকর্তা, কারা ও সামরিক কর্মকর্তা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে থাকা নিকারাগুয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ বিভিন্ন সেনা কর্মকর্তার সম্পদও জব্দ করা হয়েছে আগেই। নিকারাগুয়ার টেলিকম ও খনি খাতের সম্পদ রয়েছে এ জব্দ তালিকায়।
১৯৮৪ সালে নিকারাগুয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী মনোভাবকে কাজে লাগিয়েছিলেন ওর্তেগা। নির্বাচনী প্রচারে ওর্তেগা বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বলছে, আমরা গণতন্ত্রবিরোধী। কিন্তু আমরা জানি গণতন্ত্রের সত্যিকার অর্থ কী। গণতন্ত্র হলো সাক্ষরতা, গণতন্ত্র হলো ভূমি সংস্কার, গণতন্ত্র হলো শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য।’ ওর্তেগা বলেন, কন্ট্রা বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ে প্রাণহানির জন্য দায়ী মার্কিন সরকার। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট হন ডেনিয়েল ওর্তেগা। কিন্তু এরপর থেকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে থাকে। এর অন্যতম কারণ হলো কন্ট্রা গোষ্ঠীর সঙ্গে যুদ্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা। নিকারাগুয়ার মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায়। এর ফলাফল সাবেক সহযোগী ভিওলেতা চামোরোর কাছে ১৯৯০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ওর্তেগার পরাজয়। পরে নিকারাগুয়ার এই প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট কন্ট্রার সঙ্গে যুদ্ধ থামাতে পেরেছিলেন। কয়েকবার হারের পর ২০০৬ সালে আবারও ক্ষমতায় ফেরেন ওর্তেগা। তবে নিন্দুকেরা বলেন, সেই ওর্তেগার সঙ্গে আগের ওর্তেগার বিস্তর ফারাক। বদলে যায় আদর্শ, বদলে যায় রাজনৈতিক অবস্থান।
২০০৬ সালে ক্ষমতায় আসার জন্য নিজেকে খ্রিস্টান সোশ্যালিস্ট হিসেবে আখ্যা দিয়ে প্রচার চালান ওর্তেগা। এখানেই শেষ নয়, তিনি তার মার্কসবাদী আদর্শ ও যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী মনোভাব থেকেও সরে আসেন বলে মনে করেন সমালোচকরা। এতে লাভও হয়েছিল। বেসরকারি ও বিদেশি বিনিয়োগ জোগাড় করতে সমর্থ হয়েছিলেন ওর্তেগা। এ দফায় তিনি ক্ষমতায় আসার আগে বিশ্বে দ্বিতীয় দরিদ্রতম দেশ ছিল নিকারাগুয়া। কিন্তু ক্ষমতায় আসার ১০ বছরের মাথায় দেশটির জিডিপি পৌঁছায় ৪ শতাংশে। এই সাফল্য বিরোধীদেরও বিস্মিত করে। প্রাথমিক অবস্থায় অর্থনৈতিক মুক্তি মিলেছিল কিন্তু এর চরম মূল্য দিতে হয় নিকারাগুয়ার জনগণকে। কারণ, সেবার ক্ষমতায় এসে নিকারাগুয়ার ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছিলেন ওর্তেগা। নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেন বিচার বিভাগের ওপরও। নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয় নির্বাচনী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরও। দুইবারের বেশি প্রেসিডেন্ট থাকা যাবে না সংবিধানের এই বাধা দূর করতে ২০০৯ সালে সুপ্রিম কোর্টকে ব্যবহার করেছিলেন ওর্তেগা। ২০১৬ সালে ক্ষমতায় আসতে আবারও পরিবর্তন করেন সংবিধান। ওর্তেগা কেন এমন করেছেন তার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন ঔপন্যাসিক সার্জিও রামিরেস। তার মতে, ‘একটি প্রাণীর পায়ে যখন গুলি করা হয়, তখন সে দৌড়াতে থাকে। কিন্তু একটা সময় তাকে থামতে হয়। আমার ধারণা, ওর্তেগার পায়েও গুলি লেগেছে। তিনি যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন তার পতন শিগগিরই।’ কিন্তু ওর্তেগার পতনের আগেই অনেক কিছু ঘটে যাচ্ছে নিকারাগুয়ায়।
২০১৮ সালে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতাধীন অবসর ভাতা ৫ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দেওয়ার পর ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। এই বিক্ষোভ পরে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নিয়েছিল। বিক্ষোভ দমনে কঠোর পদক্ষেপ নেয় সরকারি বাহিনী। নিহত হয় শতাধিক মানুষ। ব্যবসায়ী মহলকে সন্তুষ্ট করতে নিকারাগুয়ার সামষ্টিক অর্থনীতির ধারা বদলে দেন ওর্তেগা। ক্ষমতা ধরে রাখতে নির্বাচন নিয়ে নতুন নতুন নকশা করছেন ওর্তেগা। নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্প্রতি ১৭ রাজনীতিককে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী পাঁচজন। তাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধেই আনা হয়েছে দেশদ্রোহের অভিযোগ। তবে এ নিয়ে দ্বিধাহীন ওর্তেগা, থামার কোনো লক্ষণ নেই তার। এসব ঘটনাপ্রবাহে এটি স্পষ্ট যে ডেনিয়েল ওর্তেগা আগে যা-ই ছিলেন, এখন অন্তত উদারপন্থি সরকারপ্রধান নন। বিরোধীদের আদতে সহ্যও করতে পারছেন না আর। গণতন্ত্র বা বামপন্থা কোনো পথেই হাঁটছেন না তিনি। বরং ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার মোহ পেয়ে বসেছে তাকে।
শেষটা করা যাক ১৯৭৫ সালের এক ঘটনা দিয়ে। নিকারাগুয়ার স্বৈরশাসক আনাস্তাসিও সোমোজা দেবাইলেকে একটি খোলা চিঠি লিখেছিলেন সেই সময়ের সুপরিচিত সাংবাদিক পেদ্রো হোয়াকিন চামোরো। সরকারের কঠোর সমালোচনা ছিল ওই চিঠিতে। এর তিন বছর পরই পেদ্রো হোয়াকিন চামোরোকে হত্যা করা হয়েছিল। ১৯৭৫ আর ২০২১-এও মিল আছে যথেষ্ট। কারণ, আজ পেদ্রো হোয়াকিন চামোরোর মেয়ে ক্রিস্টিনা চামোরোকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়তে চাওয়া তার অপরাধ। আর তাকে বন্দি করার নির্দেশদাতা একসময়ের বিপ্লবী সরকারের হর্তাকর্তা ও সোমোজা পরিবারের শাসনের বিরোধী ডেনিয়েল ওর্তেগা। তবে কি সেই সোমোজা পরিবারের সঙ্গে একই কাতারে নাম লেখাচ্ছেন একদা গণতন্ত্র-সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় লড়াই করা ওর্তেগা। ইঙ্গিত কিন্তু সেদিকেই।
ডেনিয়েল ওর্তেগা কতটা নিপীড়কে পরিণত হয়েছেন বা সম্প্রতি কী পরিমাণ দমন-পীড়ন চালাচ্ছেন, তাতে চোখ বোলানোর আগে একবার দেখে নেওয়া যেতে পারে তার অতীত। ১৯৪৫-এ জন্ম নেওয়া কিশোর ওর্তেগা যোগ দিয়েছিলেন সেই সময়ের সরকারবিরোধী বামপন্থি আন্দোলনে। নিকারাগুয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম আলোচিত দল সান্দিনিস্তা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট। এই দলেই তার রাজনীতির হাতেখড়ি। ১৯৬৩ সালে তিনি রাজনৈতিক কারণে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যান। ১৯৬৭ সালে তৎকালীন শাসক সোমোজা পরিবারের বিরুদ্ধে শহরকেন্দ্রিক আন্দোলন গড়ে তোলার দায়িত্ব পেয়েছিলেন। কিন্তু ওই বছরই ব্যাংক ডাকাতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হন ওর্তেগা। কারাগারে থাকা অবস্থায় ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তিনি। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ১৯৭৪ সালে ওর্তেগা নির্বাসিত হয়েছিলেন কিউবায়। সেখানে গিয়ে গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তিনি। পরে হয়ে ওঠেন গেরিলা নেতা। আর এই গেরিলাদের হাত ধরেই সংঘটিত হয় ১৯৭৯ সালের বিপ্লব। গৃহযুদ্ধের অবসানের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্ট সোমোজা পরিবারের বিদায় হয় নিকারাগুয়া থেকে। এরপর যে বিপ্লবী সরকার গঠন করা হয়েছিল তার শীর্ষ পাঁচ নেতার একজন ছিলেন ওর্তেগা। শুরু হয় নতুন চড়াই-উতরাই। কারণ যুক্তরাষ্ট্র বসে থাকেনি। বিপ্লবী সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে সশস্ত্র গোষ্ঠী কন্ট্রাকে মদদ দেওয়া শুরু করে দেশটি। ওর্তেগার স্বপ্ন ছিল কিউবার মতো একটি রাষ্ট্র গঠনের। আর যুক্তরাষ্ট্র চাইছিল এই বিপ্লবী সরকারকে হটিয়ে দিয়ে তার মতাদর্শের সরকার প্রতিষ্ঠা করা। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকেও ওর্তেগাদের সরকার সমর্থন পাচ্ছিল। ফলে তাদের হুমকি মনে করছিল যুক্তরাষ্ট্র। এ সময় এফএসএলএন-এর সরকারের হাত ধরে নিকারাগুয়ার বিভিন্ন খাতের উন্নয়নও হয়। এর মধ্যে অন্যতম স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও ভূমি সংস্কার ছিল অন্যতম। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে নিকারাগুয়ার শাসনক্ষমতায় থাকা ওর্তেগা-মুরিল্লো সরকার দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে দিয়েছে। দুর্নীতি ও দায়মুক্তির সংস্কৃতিকে প্রশ্রয় দিয়েছে বলে নিকারাগুয়ার আজকের এই পরিণতি।
লেখক : গবেষক ও কলাম লেখক
গরিব ঘরের যে ছেলেটি অকালে র্যাগিংয়ের কারণে চলে গেল, সে মা-বাবার হাজার কান্নাতেও আর ফিরে আসবে না। নদীয়ার বাচ্চা ছেলেটির হত্যা দেশ দুনিয়াকে যেভাবে নাড়া দিয়েছে তা খুব কম ঘটনাতেই দেয়। একটা সতেরো, সাড়ে সতেরো বছরের ছেলে অনেক স্বপ্ন নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলা ভাষা নিয়ে পড়তে এসেছিল। চলে যাওয়ার পর তার বাবা স্বগতোক্তি করছিলেন ‘যে ছেলে উচ্ছসিত ছিল স্যারদের পড়ানো নিয়ে।’ সেই ছেলে অকালে, অকারণে চলে গেলে কোনো মা-বাবা শান্ত থাকতে পারেন! সত্যি কথা বলতে, ঘটনার পর থেকে এমন কোনো পরিবার নেই যে বা যারা চোখের জল ফেলেননি। আমি সাধারণ মানুষের কথা বলছি। রাজনীতির কারবারিদের ধরছি না। মৃত্যু পরবর্তী সময়ে, এখন অবধি তাদের হাবভাব-চালচলনে কোথাও কোনো সংবেদনশীলতা লক্ষ করিনি। বরং তাদের অধিকাংশকেই ভাগাড়ে মরা পড়লে শকুনের যে আনন্দ হয়, তেমনি নিষ্ঠুর, নৃশংস লেগেছে। শুধু রাজনীতিবিদদের নয়, অত্যন্ত নোংরা লেগেছে, লাগছেও বেশ কিছু মিডিয়া, বিশেষ করে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ভূমিকা।
যেভাবে তারা গলাবাজি করে একটি অত্যন্ত দুঃখজনক মৃত্যুর জন্য পুরো যাদবপুরকে অপরাধের কাঠগড়ায় তুলছে, তার পেছনে যদি কেউ অন্য কোনো মতলবের গন্ধ পান, তাহলে তা পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যায় না। রাজনীতিবিদ, মিডিয়ার একাংশের লম্ফঝম্ফ দেখতে দেখতে ঠিক বুঝতে পারছি নাÑ তারা বাচ্চা ছেলেটির চলে যাওয়ার পেছনে কে বা কারা দোষী তা নিয়ে চিন্তিত, নাকি একটা ইউনিভার্সিটির নামে কুৎসা করে নিজেদের কোনো না কোনো স্বার্থ মেটাতে চাইছেন!
নোয়াম চমস্কি অনেক দিন আগেই সতর্ক করেছিলেন করপোরেট মিডিয়া সম্পর্কে। তার ম্যানুফ্যাকচারিং কনসেপ্ট তত্ত্ব আমরা পড়ি বটে। মনে রাখি না। মনে রাখলে এটা বোঝা খুব দুষ্কর নয় যে র্যাগিং অজুহাত মাত্র। একটা নামি বিশ্ববিদ্যালয়কে বদনাম করতে পারার পেছনে আসল মতলব সরকারি ভর্তুকি বন্ধ করে করপোরেটের হাতে তুলে দিয়ে শিক্ষাকে মুনাফার মৃগয়া ক্ষেত্র তৈরি করা। এই কাজ তারা করেই চলেছে। ঘটনাচক্রে যাদবপুরের কয়েকজন কাণ্ডজ্ঞানহীন, দুষ্কৃতী মনস্ক ছেলেদের দৌরাত্ম্যে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনাটি তাদের কাজ সহজ করে দিয়েছে।
চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ের মতো ঘটনার পর এখন রোজ টিভি চ্যানেল ও সোশ্যাল মিডিয়ায় খাপ পঞ্চায়েত বসছে। ছেলেটি ও তার শোকসন্তপ্ত বাবা-মা এখন গৌণ, মুখ্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এমন ঢিলেঢালা কেন! এসবের কেন্দ্রীয় আলাপের সুর একই ‘যেখানে অবাধে মদ, গাঁজা পাওয়া যায়! যেখানে মুক্তচিন্তার নামে চলে নারী-পুরুষের অবাধ যৌনতা! এবং যারা দুষ্কৃতী তারা সবাই বামপন্থি। ফলে এই গুন্ডাবাজির জন্য পরোক্ষভাবে দায়ী বামপন্থা। হয়তো মার্কস, লেনিন, রোজা লুক্সেমবার্গের বাণীই ছেলেমেয়েদের বিপথগামী করছে।’ ফলে এই সমস্যা সমাধানের একটাই রাস্তা জয়শ্রী রাম বলতে বলতে ক্যাম্পাস বামমুক্ত করা। পাপমুক্ত ক্যাম্পাস করতে স্বস্তি স্বস্ত্যয়ন করতে হয় তা তো মহর্ষি মনু কবেই বলে গেছেন। ঠাট্টা নয়, বাবুদের ভাবভঙ্গি অনেকটা তাই-ই। ইতিমধ্যে বলা শুরু হয়ে গেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে তুলে দেওয়া হোক। মুস্কিল হচ্ছে এই দাবি জোরালো হতে না হতেই রামকৃষ্ণ মিশনেও র্যাগিংয়ের শিকার অনেক ছাত্র মুখ খুলতে শুরু করে দেওয়ায় মিশন কিছুটা ব্যাকফুটে।
সিসিটিভি দিয়ে গোটা ক্যাম্পাস মুড়ে দেওয়া হোক, আপাতত এই দাবিই এখন সামনে। আমেরিকার ভূতপূর্ব প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ যেমন নাইন ইলেভেনের পরে হুমকি দিয়ে জানিয়েছিলেন যে আমাদের পক্ষে নয় তারাই সন্ত্রাসী। ঠিক তেমনই এখানেও অনেক বিদ্বজ্জন, রাজনীতিবিদ ও মিডিয়ার বক্তব্য পরিষ্কার যে তুমি যদি সিসিটিভি নিয়ে, ব্যক্তিগত পরিসরের স্বাধীনতা থাকবে না এমন যুক্তিতে আপত্তি করো, তাহলে কোনো সন্দেহ নেই তুমি বা তোমরা র্যাগিংয়ের সমর্থক। ছেলেমেয়েদের নিরাপত্তা চাও না। কারা বলছে এসব কথা! যাদের রাজত্বকালে পুলিশের অস্ত্রাগার লুট করে মনিপুরে দিনের পর দিন সন্ত্রাস চলে, পুলিশের চোখের সামনে হরিয়ানায় ঘটে সংখ্যালঘু নির্যাতন। গুজরাট গণহত্যার সময়, তাদের ভাই-বেরাদারেরা খোলাখুলি বলত, ইয়ে গরব কি বাত হ্যায়, পুলিশ হামারা সাথ হ্যায়।
কয়েকজনের অবিবেচক আচরণের জন্য একটা ইউনিভার্সিটির গায়ে কাদা ছোঁড়ার আগে মনে রাখবেন যে ওই ইউনিভার্সিটি জন্ম দিয়েছে অসাধারণ মেধাবীদের। দিনের পর দিন। তারা সবাই আজ সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। মনে রাখবেন ওই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস দিয়ে একদিন হাঁটতেন কবি বুদ্ধদেব বসু, নবনীতা দেব সেন, শঙ্খ ঘোষ, অমর্ত্য সেনের মতো বিশ্ববরেণ্য অধ্যাপকরা। বামেদের গায়ে কাদা ছোড়ার আগে পড়ুন শঙ্খ ঘোষের অনবদ্য শোকগাথা বাবরের প্রার্থনা। মনে রাখবেন ওই পথেই একদিন হেঁটেছিল তিমির সিংহ। সিসিটিভি সিসিটিভি বলে চেঁচামেচি করুন। তার আগে খোঁজ করুন সিসিটিভি থাকা সত্ত্বেও আইআইটিতে কেন র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে খুন হয়ে যায় মেধাবী ছাত্র!
পচে যাওয়া, আদর্শ রহিত, চূড়ান্ত ভোগবাদী সমাজে র্যাগিং শুধু ক্যাম্পাসের ঘটনা নয়। সর্বত্রই হচ্ছে। দাদাগিরি, গু-ামি, দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার রোজ রোজ হয়ে চলেছে। সৌরভ গাঙ্গুলী উপদেশ দিয়েছেন যে ইউনিভার্সিটি শুধু পড়াশোনা করার জায়গা। তিনি যদি সুভাষচন্দ্রকে এই উপদেশ দিতেন, তাহলে আমরা হয়তো নেতাজীকে পেতাম না। আসলে এই অরাজনীতিকরণ সৌরভ একা নন, অনেকেই চান। প্রতিনিয়ত চান। তারা হয়তো জানেন না অরাজনীতিকরণ আসলেই এক রাজনীতি। বার্টল্ড ব্রেখট তো কবেই বলেছিলেন যে যারা রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামান না বলে গর্ব অনুভব করেন, তারা হচ্ছেন সব থেকে বড় অশিক্ষিত, মূর্খ। র্যাগিং বন্ধ হোক। ছাত্র মৃত্যুর জন্য দোষী শাস্তি পাক। কিন্তু ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টাও পাশাপাশি বন্ধ হোক। ঘৃণার কারবারিদের মুখে আর যাই হোক ন্যায়ের বাণী শোনা কম যন্ত্রণার নয়।
শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী খুন হয়ে গিয়েছিলেন নিজের সিকিউরিটি গার্ডের হাতে। ফলে তথাকথিত নিরাপত্তা বলয়ে ইউনিভার্সিটি চত্বর মুড়ে দিলেও সমস্যার সমাধান হবে না। আসলে সিস্টেমের মধ্যে ঘুণ ধরে গেছে। ত্রিগুনা সেনের মতো শিক্ষাবিদ যেখানে উপাচার্য ছিলেন, সেখানে এই ডামাডোলে এমন একজনকে উপাচার্য করে নিয়ে আসা হলো, যিনি ইউজিসির নিয়ম অনুযায়ী দশ বছর অধ্যাপনা করেননি। নিয়ম আছে উপাচার্য হতে হলে দশ বছরের এই শর্ত মানা আবশ্যিক। নতুন উপাচার্যের মানসিকতা বুঝতে ইতিমধ্যেই তার টাইমলাইন থেকে যে মণিমুক্তা পাওয়া গেছে তা ভয়ংকর। সেখানে তিনি এমন সব পোস্ট করেছেন তাতে তার পুরুষতান্ত্রিক, থার্ড জেন্ডার বিরোধী মন স্পষ্ট। এও একধরনের দাদাগিরি। তার মতো রক্ষণশীল, মিডিওকার একজন উপাচার্য হয়েছেন স্রেফ বিজেপির প্রতি আনুগত্য রয়েছে এই যোগ্যতায়। যিনি নিয়োগ করেছেন তিনি নামে রাজ্যপাল। আসলে তো বিজেপি অনুগত। ফলে আপনি অন্যায়ের জন্য শুধুমাত্র ছাত্রদের দিকে আঙুল তুলে পার পাবেন না।
দুঃখ হয়, যে ছেলেটি যাদবপুরে কিংবা আইআইটির খড়গপুরে খুন হলেন, তারা নিতান্তই ছাপোষা ঘরের। পাশাপাশি এখনো অবধি যাদের পুলিশ ধরেছে তারাও সবাই গরিব ঘরের। যারা চিরদিনের জন্য চলে গেলেন তাদের মা-বাবাকে সান্ত্বনা দেওয়ার সত্যি কোনো ভাষা নেই। নিজে বাবা বলেই জানি, বাবা হয়ে সন্তান চলে যাওয়ার মতো যন্ত্রণা আর কিছু নেই। আবার পাড়ার গরিব ঘরের যে ছেলেটির মা-বাবা জমি বিক্রি করে অনেক স্বপ্ন নিয়ে ছেলেকে যাদবপুরে ভর্তি করে মাথা উঁচু করে পথ চলতেন। নিমেষে তাদের যাবতীয় স্বপ্ন খান খান হয়ে ভেঙে গেল। সমাজে, পাড়া, পড়শি, আত্মীয় সবার কাছে বাকি জীবন মাথা হেঁট করে তাদের শুনতে হবে খুনির বাবা-মা। ব্রাইট, ব্রিলিয়ান্ট ছেলে কীভাবে রাতারাতি অন্ধকারে তলিয়ে গেল।
জীবন হয়ে গেছে দ্রুতগতির। কোথাও কোনো দর্শন নেই। রবীন্দ্রনাথ, গান্ধী কিংবা মার্কস আমরা পড়ি। কখনো কখনো পরীক্ষাতে কাজে আসে। কিন্তু যাপনে ও সবের সঙ্গে কারোর কোনো সম্পর্ক নেই। মিডিয়া যাদবপুরকে ব্যঙ্গ করে বলছে, মাদকপুর। বহু বহু বছর মিডিয়াতে আছি। কাক কাকের মাংস খায় না, তবুও বলতে বাধ্য হচ্ছি, প্রেস কনফারেন্সে বিনা পয়সায় স্কচ খেয়ে সিনক্রিয়েট করেনি এমন খুব কম সাংবাদিককে দেখেছি। পশ্চিমবঙ্গের রাজস্বের বড় অংশ আসে মদ থেকে। পাড়ায়, দু পা হাঁটতে হাঁটতে দোকান। সেখানে শুধু নির্দিষ্ট একটি ইউনিভার্সিটির ছেলে-মেয়েই মদ গাঁজা খায় এসব ফালতু কথা বলার কোনো মানেই হয় না। ইদানীং তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে গেছে। ইঁদুর দৌড়ে পিছিয়ে পড়া বা পড়ার আশঙ্কা নিশ্চিত এর পেছনে অন্যতম কারণ। লেখক: ভারতীয় প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা ও লেখক
‘তুঘলকি কাণ্ড’ প্রবাদটি সবার জানা। এর অর্থ হলো ভীষণ বা বড়সড় কোনো ঘটনা, অন্যায় আর জোরজবরদস্তির ঘটনা। তুঘলক রাজবংশেরই বৈপরীত্যে ভরা দুই শাসকের পাগলাটে কীর্তিকলাপ, খামখেয়ালিপনা ও জোরজবরদস্তির জের ধরে এই প্রবাদের প্রচলন। কিন্তু সুলতানদের এই কর্মকান্ডের জের টানতে হতো প্রজাদের। আজকের দিনেও এমন কর্তৃপক্ষ ও প্রতিষ্ঠানের ইচ্ছেমাফিক কর্মকান্ডে ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ প্রবাদটির স্মরণ করেন। এমনই এক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি।
জনজীবনে নানাবিধ ব্যয়ের চাপ কীভাবে কমানো যায় তা নিয়ে চলমান উদ্বেগের মধ্যেই গ্যাসের মিটারের ভাড়া দ্বিগুণ করার প্রস্তাব দিয়েছে তিতাস গ্যাস। গ্রাহকের পকেট কেটে মুনাফা আরও বাড়াতে চাইছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিতাস গ্যাস অনিয়মের চূড়ান্তে উঠেছে। মঙ্গলবার দেশ রূপান্তরে ‘দ্বিগুণ হচ্ছে তিতাসের মিটার ভাড়া’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তিতাসের পক্ষ থেকে গ্রাহকদের ৬ লাখ ৫০ হাজার প্রিপেইড মিটার দেওয়ার জন্য ২ হাজার ২৮৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। ‘স্মার্ট মিটারিং এনার্জি এফিশিয়েন্সি ইম্প্র“ভমেন্ট প্রজেক্ট’ নামের প্রকল্পে প্রতি মাসে গ্রাহকের জন্য মিটার ভাড়া ধরা হয়েছে ২০০ টাকা। অথচ তিতাসেরই আরেক প্রকল্পে মিটার ভাড়া ধরা হয়েছে ১০০ টাকা। নতুন ভাড়ায় আপত্তি তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
যদি ১০০ টাকা ভাড়া ধরা হয়, তাহলে এ প্রকল্পে সাড়ে ছয় লাখ মিটারে প্রতি মাসে ভাড়া আসবে ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০০ টাকা হলে ভাড়া আসবে ১৩ কোটি টাকা। বছরে ভাড়া আদায় হবে ১৫৬ কোটি টাকা। পুরোটাই যাবে গ্রাহকের পকেট থেকে। মিটার ভাড়া দ্বিগুণ করার যুক্তি কী জানতে চাইলে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘মিটারের দাম ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। ১০ বছরের লাইফ। এটার সার্ভারের চার্জ আছে, অন্য চার্জও আছে।’ প্রকল্পের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ প্রকল্পের প্রি-পেইড মিটারের চুক্তিমূল্য ছিল ১৫ হাজার ৮৭৩ টাকা। তিতাসের প্রস্তাবিত প্রকল্পে মিটারের চুক্তিমূল্য ১০ শতাংশ বেশি ধরা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প শক্তি বিভাগের উপপ্রধান বলেছেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পের ১০ শতাংশ অতিরিক্ত চুক্তিমূল্য বাদ দিতে হবে। এ ব্যাপারে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তিতাসে তুঘলকি কান্ড চলছে। এর আগে রাষ্ট্রপতি মিটারের ভাড়া বাড়ানোর অনুমোদন দিয়েছিলেন। এখন আবার পরিকল্পনা কমিশনের কাছে আবদার করা হয়েছে। রামরাজত্বেও এসব ঘটেনি।’
দেশে প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপন কার্যক্রম চলছে খুবই ধীরগতিতে। কর্মকর্তারা বলছেন, প্রি-পেইড মিটার বসালে গ্রাহকপ্রতি গড়ে অন্তত ৩০ ঘনমিটার গ্যাস সাশ্রয় হবে। এতে গ্রাহকের আর্থিক সুবিধার পাশাপাশি দেশে চলমান গ্যাস সংকটও কিছুটা কমবে। অভিযোগ রয়েছে, তিতাসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর অবৈধ আয় যাতে বন্ধ না হয় সেজন্য প্রি-পেইড মিটার স্থাপনে গড়িমসি করে।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, তিতাসে ৬ শতাংশ সিস্টেম লস হয় মূলত অবৈধ সংযোগের কারণে। অথচ গ্যাসের বিপুল সংখ্যক অবৈধ সংযোগ বন্ধের কোনো উদ্যোগ নেই। অথচ এবারও জনগণের পকেট কাটার সহজ পথে হাঁটার রাস্তাই বেছে নিয়েছে তিতাস।
তিতাসের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ রয়েছে। এগুলো দীর্ঘদিনের। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। কারও কাছে তাদের কোনো জবাবদিহি নেই। আইনে থাকুক আর না থাকুক, মিটারের ভাড়া বাড়িয়ে মূল্যস্থিতির বাজারে ভোক্তার পকেট কেটে তার আরও বেশি আয় করতে হবে? এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ও হাত-পা গুটিয়ে রাখতে পারে না।
আগামী চেস গিল্ড স্কুল দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আইয়ান রহমান ও মনন রেজা নীড়। একক ইভেন্টের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী ক্যাটাগরিতে আইয়ান ও ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নীড়। ৭ রাউন্ডের খেলায় আইয়ান ও নীড় দুজনই পেয়েছে সাড়ে ছয় পয়েন্ট করে।
বিটজ দলগত বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এলিগেন্ট চেস একাডেমি। এই দলে খেলেছে জারিফ হক আফনান, তাসরিক সায়হান, সিয়াম চৌধুরী ও নীলাভা চৌধুরী। আজ শনিবার দাবা ফেডারেশন কার্যালয়ে শেষ হয়েছে এই প্রতিযোগিতা।
আগামী চেস গিল্ডের আয়োজনে গত ২৮ সেপ্টেম্বর শুরু হয় ‘আমরা ৯২’ আগামী চেস গিল্ড স্কুল রেটিং টুর্নামেন্ট। সুইস লিগ পদ্ধতিতে হয়েছে খেলা। একক ও দলগত দুই বিভাগে অংশ নেয় ১৪৫ জন দাবাড়ু। টুর্নামেন্টে বিজয়ীরা ট্রফি, মেডেল ও সার্টিফিকেটের পাশাপাশি পেয়েছে ৭০ হাজার টাকা।
টুর্নামেন্ট শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন গ্র্যান্ডমাস্টার রিফাত বিন সাত্তার, আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার রানী হামিদ। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম।
টানা ৬ ম্যাচ জিতে লা লিগার শীর্ষে উঠে এসেছিল জিরোনা। আগের রাতে সেভিয়াকে হারানো বার্সেলোনা সেই জিরোনাকে পেছনে ফেলে। আর রিয়াল মাদ্রিদ এবার উড়তে থাকা জিরোনাকে হারিয়ে লা লিগার কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধার করেছে।
শনিবার মন্তিলিভি স্টেডিয়ামে জিরোনাকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে কার্লো আনচেলত্তির দল। রিয়ালের হয়ে গোল তিনটি করেছেন জোসেলু, অঁরেলিয়ে চুয়ামেনি ও জুড বেলিংহাম।
আট ম্যাচের সাতটিতে জিতে রিয়ালের পয়েন্ট এখন ২১। সমান ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে বার্সেলোনা। আর টানা ছয় জয়ের পর রিয়ালের কাছে হেরে যাওয়া জিরোনা ১৯ পয়েন্ট নিয়ে আছে তিনে।
সপ্তাহ খানেক আগেই আতলেতিকো মাদ্রিদে গিয়ে ৩-১ গোলে হেরেছিল রিয়াল। এবার জিরোনায় গিয়ে
প্রথমার্ধেই ২ গোলে এগিয়ে যায় আনচেলোত্তির শিষ্যরা। এর মধ্যে ১৭ মিনিটে বেলিংহামের ক্রস থেকে বল জালে পাঠান জোসেলু। আর ২২ মিনিটে টনি ক্রুসের কর্নার থেকে হেডে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন চুয়ামেনি।
রিয়াল ব্যবধান ৩-০ করে ৭১ মিনিটে। জোসেলুর শট জিরোনা গোলরক্ষক প্রতিহত করলেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি। নাগালে বল পেয়ে দারুণভাবে বল জালে পাঠান বেলিংহাম। এটি রিয়ালের হয়ে ৭ ম্যাচে তার অষ্টম গোল।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।