
পরিবারে একটু সচ্ছলতা আনতে অনেক নারী শ্রমিক বিদেশে গেছেন, এখনো অনেকে যাওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছেন। কিন্তু কষ্টের প্রবাস থেকে ফিরেও জীবনখাতায় একইরকম শূন্য দেখছেন বেশিরভাগ। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৮৪ দেশে বাংলাদেশের নারীশ্রমিক কাজ করছেন। তারা কী অবস্থায় রয়েছেন, কোথায় কোন ধরনের কাজ করতে হচ্ছে, তা জানে কোনো কর্তৃপক্ষ? এ ছাড়া ৮৫ শতাংশ তাদের বর্তমান কাজ নিয়ে হতাশাগ্রস্ত এবং ৫৭ শতাংশ তাদের জীবন ও জীবিকা নিয়ে চিন্তিত। ৫২ শতাংশ নারীশ্রমিক বিদেশে জবরদস্তিমূলক শ্রমের শিকার হয়েছেন, ৬১ শতাংশ বিদেশে খাদ্য ও পানির অভাবে ভুগেছেন, ৭ শতাংশ যৌন এবং ৩৮ শতাংশ শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
দুচোখে স্বপ্ন নিয়ে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার মাত্র এক বছরের মাথায়, গত এপ্রিলে প্রায় ৩৪০ জন নারী অভিবাসী দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা যেসব রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে তারা বিদেশ যাচ্ছেন, সেই সব এজেন্সিগুলো আসলে কোন শর্তে নারীদের নিয়ে বিদেশ যাচ্ছে তা কি কারও জানা আছে? এটা ঠিক, বাংলাদেশের নারীশ্রমিকদের বিদেশে কাজ করার ক্ষেত্রে নিরাপত্তাজনিত সমস্যা ছাড়াও ভাষা, সংস্কৃতি ও সেদেশের নিয়মকানুন নিয়ে প্রায়ই ঝামেলায় পড়তে হয়। এই ঝামেলা থেকে মুক্ত রাখতে, তাদের জীবনকে সত্যিকার অর্থে নিরাপদ করতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা ঠিক কতটুকু আন্তরিক, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। না হলে, নারীশ্রমিকের দুর্বিষহ জীবনের কষ্টকথাগুলো তাদের কর্ণকুহরে ঠিকই প্রবেশ করত। একদিকে নারীদের ওপর শারীরিক-মানসিক নির্যাতন অন্যদিকে যৌন নির্যাতনের পৈশাচিকতা আমাদের স্তম্ভিত করে।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তরে সোমবার ‘সৌদিতে বিক্রি হয় নারীশ্রমিক’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেই প্রতিবেদনে প্রবাসী নারীদের নির্যাতনের যে কাহিনি উল্লেখ করা হয়েছে, তা যেন এই আধুনিক পৃথিবীতে একবারেই অবিশ^াস্য। যদিও এই ধরনের ঘটনার কথা প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয় না। যেসব রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে তারা বিদেশ যান, সেই এজেন্সির কর্তৃপক্ষেরও কোনো ধরনের শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় না। ফলে এই ধরনের নির্যাতন ক্রমাগত চলছেই। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে নির্যাতনের শিকার হয়ে আটকে আছেন কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন ভাগনা এলাকার বাসিন্দা স্মৃতি বেগম। তিনি জানান, ‘তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। স্বামী অটোরিকশা চালান। সংসারে আর্থিক সংকট লেগেই থাকত। পরিবারের সচ্ছলতার আশায় দালালের মাধ্যমে গত ২৩ মে সৌদি আরব যান। তাকে শুধু পাসপোর্ট করার টাকা দিতে হয়েছিল। বলা হয়েছিল, ভালো কাজ দেওয়া হবে। মোটা অঙ্কের বেতনও পাবেন। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পরই তার জীবনে নেমে আসে দুর্বিষহ যন্ত্রণা।’
স্মৃতি বেগম কান্না করতে করতে বলেন, ‘আমি অনেক অসুবিধায় আছি। যদি পারেন এখান থেকে আমাকে উদ্ধার করেন, আমার জীবনটা বাঁচান।’ তিনি আরও বলেন, ‘যে এজেন্সি আমাকে এখানে আনছে তারা দেশে পাঠাবে না। তারা আমাকে বলতেছে, তোরে টাকা দিয়ে আনছি কাজ করার জন্য, তোরে কাজ করতে হইব। কিন্তু আমার উপর যে নির্যাতন করতেছে আমার পক্ষে সেখানে কাজ করা সম্ভব না।’
শুধু স্মৃতি বেগম নন, এরকম শত শত নারী আছেন যারা বিদেশে কাটাচ্ছেন দুর্বিষহ জীবন। এই অত্যাচার, অনাচার বন্ধ করতে পারে ঠিক কোন কর্তৃপক্ষ জানা আছে কারও!
প্রতিপক্ষ দলের ষড়যন্ত্র করা লাগেনি বা প্ররোচনা দিতে হয়নি। নিজ থেকেই স্বামী সাভারের স্থানীয় বিএনপি নেতা ফরহাদ মিয়াকে তালাকের নোটিস দিয়েছেন স্ত্রী রহিমা বেগম। সাভার মডেল থানায় গিয়ে জিডি করে জানিয়েছেন, তিনি সাচ্চা আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। অথচ তার স্বামী ফরহাদ বিএনপি করেন। বিএনপির একটা মিছিলও বাদ দেন না। মিছিলে যেতে মানা করলে তাকে মারধরসহ নির্যাতন করেন। তাই এ স্বামীর সঙ্গে তিনি আর সংসার করবেন না। এর আগে ভুক্তভোগী রহিমা বেগম ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামানের কার্যালয়েও এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়েছেন।
পুলিশের জন্য এটি আচ্ছা রকমের উটকা ঝামেলা। কোন পক্ষ নেবে? জিডি বা মামলা পোক্ত করতে গেলে ঘটনার সঙ্গে তাদের আরও কিছু যোগ করতে হয়। সেই দৃষ্টে সাভার মডেল থানার ডিউটি অফিসার বলেছেন, তার স্বামী বিএনপি সমর্থকই নন, নেশাগ্রস্তও। নেশার টাকা না পেলে এই জাতীয়তাবাদী স্বামী তার আওয়ামী স্ত্রীকে মারধর করে। প্রায় ২০ বছরের ঘর-সংসার তাদের। বিয়ে হয়েছিল পারিবারিকভাবে। দুটি সন্তানও হয়েছে। এত বছরে স্বামী-স্ত্রীর জাতীয়তাবাদ নিয়ে সমস্যা হয়নি। আওয়ামী-বিএনপি নিয়ে গোলমাল বাধেনি। সমস্যা হয়ে গেছে গত সপ্তাহে। রহিমার মতে, তার স্বামীর সবচেয়ে গুরুতর অপরাধ, তিনি বিএনপি করেন। এই স্বামী এখন বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিলে বা আওয়ামী লীগের মিছিলে গেলে ল্যাঠা মিটে যাবে কিনা সেই প্রশ্ন করা হয়নি। পুলিশও জানতে চায়নি। দুপক্ষের অভিভাবক বা স্থানীয়রা আলাপ-সংলাপের ব্যবস্থা করলে একটা রাজনৈতিক হিল্লা হয়ে যাওয়ার আশা থাকে।
রাজনীতির বাতাসে আমাদের সামাজিক চিত্রের একটি খণ্ড অংশ ঘটল সাভারে। এর আগে, ফেনীর প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রীকে নিয়ে বিএনপি নেতার চম্পট দেওয়া বা রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ নেতার বৌকে নিয়ে বিএনপি নেতার ভেগে যাওয়ার সংবাদের মধ্যে কারও কারও বিকৃত সুখবোধের বিষয় ছিল। আন্দোলনে টানা ব্যর্থতার মধ্যে একে ভিন্ন স্টাইলের প্রতিশোধ ভাবার লোকের অভাব হয়নি রঙ্গভরা এ দেশে। থানা-পুলিশ পর্যন্ত না গড়ালে এসব ঘটনা গণমাধ্যমে নাও আসতে পারত। সাভারেও তাই।
সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের কদাকার ঘটনা বাড়বাড়ন্ত। কোনো কোনোটি লেখার বা বলারও অযোগ্য। কিন্তু, সোশ্যাল মিডিয়া ছাড় দিচ্ছে না। সোশ্যাল মিডিয়ার ফাঁক গড়িয়ে চলে আসছে মূলধারার গণমাধ্যমেও। কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির দাতা সদস্য, রাজনীতিক, ধনবান খন্দকার মুশতাক আহমেদের ঘটনা বেশ ভাইরাল। তা থানা-পুলিশ গড়িয়ে হাইকোর্টেও চলে গেছে। মহান পেশা রাজনীতি আর পবিত্র জায়গা আদালত। সেখানেও সাবজেক্ট হয়ে যাচ্ছে এসব ঘটনা। কলেজছাত্রীকে প্রলোভন ও জোরপূর্বক ধর্ষণের অভিযোগে গত ১ আগস্ট রাজধানীর মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির দাতা সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। আর এতে সহযোগী হিসেবে কলেজের অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদীকে আসামি করা হয়। ভুক্তভোগী কলেজছাত্রীর বাবা মো. সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
মামলার এজহারে বাদী উল্লেখ করেন, তার মেয়ে মতিঝিল আইডিয়ালের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। আসামি মুশতাক বিভিন্ন অজুহাতে কলেজে আসতেন এবং ভিকটিমকে ক্লাস থেকে প্রিন্সিপালের কক্ষে ডেকে আনতেন। খোঁজখবর নেওয়ার নামে আসামি ভিকটিমকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে প্রলুব্ধ করতেন। কয়েক দিন পর আসামি মুশতাক ভিকটিমকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কুপ্রস্তাব দেন। এতে রাজি না হওয়ায় ভুক্তভোগীকে তুলে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে এবং তাকে ও তার পরিবারকে ঢাকাছাড়া করবেন বলে হুমকি দেন মুশতাক। এ বিষয়ে বাদী প্রতিকার চাইতে গেলেও কোনো সহযোগিতা করেননি অধ্যক্ষ; বরং আসামি মুশতাককে অনৈতিক সাহায্য করে আসতে থাকেন। এরপর বাদী জানতে পারেন আসামি ভিকটিমকে একেক দিন একেক স্থানে রেখে অনৈতিক কাজে বাধ্য করেছেন এবং যৌন নিপীড়ন করেছেন।
আদালতে হাজির হয়ে আগাম জামিনের আবেদন করেন খন্দকার মুশতাক। শুনানিতে হাইকোর্ট মুশতাককে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কি বিবাহিত? জবাবে মুশতাক বলেন, ‘হ্যাঁ। তবে সেই সংসার অনেক আগেই ভেঙে গেছে।’ এ সময় হাইকোর্ট বলে, ছাত্রীকে বিয়ে করে নৈতিকভাবে কাজটি ঠিক করেননি। এ সময় তার আইনজীবী বলেন, এই মামলার অপর আসামিকে জামিন দিয়েছে অপর একটি বেঞ্চ। এ সময় আদালত বলে, ‘আমাদের বেঞ্চ এ জামিন শুনতে আগ্রহী নয়।’ পরে তার আইনজীবী আবেদন ফেরত দেওয়ার আবেদন করলে তা ফেরত দেয় হাইকোর্ট। অবশ্য ওই কলেজছাত্রী দাবি করেছে মুশতাক তাকে জোরপূর্বক আটকে রাখেননি, তাদের সম্পর্কটি নিখাদ প্রেমের সম্পর্ক।
শুনতে কেমন লাগে এসব ঘটনা? আদালতের শুনানিতে উঠে আসা বক্তব্যগুলো সহ্য করা কোনো সভ্য মানুষের কানের জন্য কতটা সহনীয়-শোভনীয়? একই সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে যুব মহিলা লীগের এক নেত্রীর সঙ্গে এক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার অন্তরঙ্গ নানান ছবি। ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যায়, এই নেতা ও নেত্রী তাদের কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে মদের আসর বসিয়েছেন। নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহীম গণমাধ্যমকে বলেছেন, এরা সবাই তার লোক। তাই কিছু করতেও পারছেন না।
মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য, আলোচিত কণ্ঠশিল্পী মমতাজ মাঝেমধ্যেই ভিন্ন ভিন্ন ঘটনায় গণমাধ্যমের শিরোনামে আসছেন। এবার তাকে টেনে এনেছেন বর্তমান স্বামী ডা. এ এস এম মঈন হাসান। বছর খানেক আগে তার ওপর একবার হামলা হয়েছিল। এক বছর পর জানালেন হামলাকারীদের কারও কারও সঙ্গে তার স্ত্রীকে দেখা যায়। হামলার এক বছরেও বিচার না পেয়ে নিজের ফেসবুক আইডিতে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়ে নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছেন এই এমপিপতি। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘কতটুকু অশ্রু গড়ালে হৃদয় জলে সিক্ত, কত প্রদীপ শিখা জ্বালাতেই জীবন আলোয় উদ্দীপ্ত, কত ব্যথা বুকে চাপালে তাকে বলি আমি ধৈর্য, নির্মমতা কতদূর হলে জাতি হবে নির্লজ্জ...’।
আপলোড করা ছবিতে তার ওপর ১ বছর আগে করা হামলার বেশ কয়েকটি ছবি ও থানায় দায়ের করা অভিযোগের কপি স্থান পায়। এর মধ্যে রয়েছে- হামলায় আহত হওয়া নিজের ছবি, ভাঙচুরকৃত গাড়ির ছবি ও এমপি মমতাজের সঙ্গে গোল চিহ্নিত হামলাকারী নয়নের ছবি। সেই সঙ্গে সম্প্রতি সিংগাইরে চাঞ্চল্যকর জেপি নেতা সালাম বাহাদুর হত্যার কিলার হিসেবেও নয়নের ছবি আপলোড করা হয়েছে। মমতাজ বেগমের স্বামী ডা. এ এস এম মঈন হাসান স্ট্যাটাসে আপলোড করা ছবিটির ক্যাপশনে লিখেছেন, হত্যার মতো ভয়ংকর অপরাধ করেও তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। মমতাজের স্বামীর এ স্ট্যাটাস নিয়ে মানিকগঞ্জের রাজনৈতিক মহলসহ বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। এমপি মমতাজের সঙ্গে বর্তমান স্বামী ডা. মঈনের সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এখন তারা এক ছাদের নিচে থাকছেন না। মমতাজ বেগমের বিভিন্ন পারিবারিক প্রোগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে তাকে অনুপস্থিত দেখা যাচ্ছে। সর্বশেষ এমপি মমতাজ টানা বেশ কয়েক দিন কানাডা ভ্রমণ করেছেন। সেখানে তার পরিবারের সদস্য ছাড়াও সফরসঙ্গী ছিলেন ব্যক্তিগত সহকারীও। সফরসঙ্গী তালিকায় ছিলেন না স্বামী ডা. মঈন হাসান।
এ সময়টাতেই দলীয় পদ পেতে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নির্যাতনের মাধ্যমে সন্তান নষ্ট করার অভিযোগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের রামপুরা থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ ফরিদের বিরুদ্ধে। ২০২৩ সালের মার্চ মাসের ১৩ তারিখে রুবাইয়া রীতিকে বিয়ে করেন খালিদ সাইফুল্লাহ। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য রীতিকে নির্যাতন শুরু করেন সাইফুল্লাহ। এর মধ্যেই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন রীতি। এ নিয়ে শুরু হয় সাংসারিক ঝামেলা। নতুন কমিটিতে আবারও সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী, এ কারণে বিয়ে করার সময় তাকে বিষয়টি গোপন রাখতে বলেন খালিদ। রীতি গণমাধ্যমকে বলেছেন, বিয়ের দেড় মাস পর তিনি কনসিভ করেন। কিন্তু খালিদ তাকে জানান, বাচ্চার পরিচয় দিতে গেলে তার কমিটি থাকবে না। তিনি লাখ লাখ টাকা খরচ করে এই কমিটি পেয়েছেন। এখন এই বাচ্চার জন্য কমিটি ছাড়া যায়? ঘটনার পরদিন ভুক্তভোগী খিলগাঁও থানায় নারী নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার মামলা করলে ২৩ জুলাই খালিদ সাইফুল্লাহকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। আশ্চর্যজনকভাবে এমন মামলায়ও আটকের পরদিনই জামিনে মুক্তি পান অভিযুক্ত খালিদ সাইফুল্লাহ।
ক্ষমতাসীন দলের নেত্রকোনার পূর্বধলা আসনের এমপি ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের অন্দরমহলের ঘটনা আরও আউলাঝাউলা। মধ্যরাতে তাকে তুলে নিয়ে তার যুবলীগ-ছাত্রলীগের সাঙ্গপাঙ্গরা নাদিয়া আক্তার নামের এক কলেজছাত্রীর সঙ্গে বিয়ে পড়িয়ে দিয়েছে। পূর্বধলা থানায় এ মর্মে মামলা করেছেন এই মাননীয়র স্ত্রী রওশন হোসেন। আসামি করেছেন এমপির নয়া স্ত্রী নাদীয়া, নতুন শ্যালক পূর্বধলা সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগ নেতা তাইফ, এমপির পিএস ফেরদৌস, গাড়িচালক শফিকসহ ৯ জনকে। পুলিশের জন্য যারপরনাই বিব্রতকর অবস্থা মামলাটি নিয়ে। ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল যেনতেন এমপি নন, অন্য উচ্চতার ব্যক্তি। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে খেতাবপ্রাপ্ত বীরপ্রতীক তিনি। আর ব্যক্তিগতভাবে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার বহুল আলোচিত কর্নেল তাহেরের ছোট ভাই।
উল্টাপাল্টার এসব উদাম দৌড় নিয়েই এগোচ্ছে বাংলাদেশের মাঠ তথা ঘর-সংসারের রাজনীতি। এর মধ্যে আমাদের কিছুটা আশা দেখাচ্ছে বিদেশিরা। এরা তরুণ-তরুণী, কূটনীতিক নন। ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশিরা কূটনীতিকরা দিচ্ছেন রাজনীতির পরিচ্ছন্নতার তাগাদা। আর বাংলাদেশের প্রেমে মুগ্ধ হয়ে আসছেন এসব বিদেশি তরুণ-তরুণী। সংবাদমাধ্যমেও এসব ঘটনার কিছু কিছু আসছে চমকপ্রদ খবর হিসেবে। প্রেমের টানে ভিনদেশ থেকে এসে আমাদের ছেলে বা মেয়েদের তারা বিয়ে করছেন। উৎকট-দুর্গন্ধময় অতীত পেছনে ফেলে রুপালি পর্দার কাহিনির মতো কেউ এখানেই সংসার করছেন, কেউ বা নিয়ে যাচ্ছেন নিজ দেশে।
লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট
ব্র্যান্ড মার্কেটিংয়ে ২৫ বছরের পথচলায় আমি সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত হই বাংলাদেশের মানুষের থেমে না থাকা, যেকোনো পরিস্থিতি থেকেই ঘুরে দাঁড়ানো আর অদম্য স্পৃহা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি দেখে। যেমনটা সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে তুলনা করা হয়েছিল তলাবিহীন ঝুড়ির সঙ্গে সেই বাংলাদেশই এখন বিশ্বের বুকে অর্থনীতির বিস্ময়। হার না মেনে যেকোনোভাবে সফল হওয়ার এই শক্তিতেই তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার ৪৬০ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, যা মাত্র এক যুগ আগে ২০১১ সালে ছিল ১২৮.৬৪ বিলিয়ন ডলার। তাদের তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২৬৮৮ ডলার, যা ২০১১ সালে ছিল ৮৫৬ ডলার।
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এই ছোট্ট কিন্তু জনবহুল দেশটির মানুষ ঝড়, বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সঙ্গে করে বাঁচে। প্রায়শই তাকে এসব দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হলেও সে প্রতিবারই সাহস নিয়ে ফের ঘুরে দাঁড়ায়। যে এলাকাটি বন্যার পানির নিচে ছিল, সেখানে পানি নেমে যাওয়ার পর গেলে দেখা যাবে মানুষ নিজেদের উদ্যোগে কী অসাধারণভাবে আবার ফিরছে জীবন ও জীবিকার কাছে। নিজের উদ্যোগে প্রতি মুহূর্তে নিজের সমস্যা সমাধান করে এগিয়ে চলে এ দেশের মানুষ। সারা দেশের যে কোনো প্রান্তে গেলেই দেখা মেলে সামান্য পুঁজি নিয়ে, ছোট্ট একটা টুকরিতে করে নিজের আর পরিবারের হাল ধরতে সংগ্রাম করছেন কোনো প্রান্তিক উদ্যোক্তা।
সবমিলিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ‘আনস্টপেবল স্পিরিট’ আছে। কোনো বাধাই যা থামাতে পারে না। দেশের মানুষের এই অদম্য শক্তিকে বিকাশের পক্ষ থেকে আমার স্যালুট জানিয়েছি ‘আমাদের বিকাশ ঠেকায় কে’ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে।
আমাদের এই ক্যাম্পেইনের প্রোটাগনিস্ট বা প্রধান চরিত্র ছিল পেশাদার বক্সার সুর কৃষ্ণ চাকমা। পাহাড়ে বেড়ে ওঠা সুরের পেশাদার বক্সার হয়ে ওঠার গল্পটা সহজ নয়। ছোটবেলায় বাবাকে হারানোর পর তার বিকেএসপি যাত্রা এবং বক্সিংয়ের মতো ভিন্নধারার খেলায় নিজেকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কোনো কিছুই তৈরি করে রাখা ছিল না। হার না মানার প্রত্যয় আর সফল হওয়ার মন্ত্র নিয়ে সুর দেশের জন্য বয়ে এনেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি। সব প্রতিকূলতা পেরিয়েই সুরের এই সফলতা।
নানান ক্ষেত্রে এরকম অসংখ্য সুরের অদম্য শক্তিতে আজ আমরা বিশ্বের বুকে এক অগ্রসরমান জাতি। এগিয়ে যাওয়ার এই পথে ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা বিশাল জনগোষ্ঠীকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে যুক্ত করা ছিল সময়ের দাবি। সেই প্রেক্ষাপটেই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আর্থিক সেবা দেওয়ার সূচনা ছিল যুগান্তকারী। সে লক্ষ্যেই একযুগ আগে যাত্রা শুরু করে বিকাশ। ক্যাশ টাকায় লেনদেনে অভ্যস্ত মানুষকে মোবাইলের মাধ্যমে ডিজিটাল টাকায় লেনদেন করার বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা ছিল আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যেই সেবার সঙ্গে আগে কখনো মানুষের পরিচয় হয়নি সেই সেবা সম্পর্কে তাদের জানানো, তাদের কাছে সেবাটি সহজলভ্য করা আর বিশ্বস্ত করে তোলা।
গত ১২বছর ধরে সারা দেশের ৩ লাখ ৩০ হাজার এজেন্টের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি প্রান্তে বিকাশ সেবা সহজলভ্য করে তোলার এই কঠিন পথ চলতে আমরা থেমে যাইনি। ফলে আজ সাত কোটি গ্রাহকের এক বিশাল পরিবার বিকাশ।
মানুষের দৈনন্দিন লেনদেনকে সহজ করে তাদের হাতের মুঠোয় এনে দিয়ে তাদের সম্ভাবনার বা এগিয়ে চলার সহযোগী হয়ে উঠেছে বিকাশ। কেবল সেবা আনা নয়, সেই সেবা কীভাবে ব্যবহার করতে হবে সেই ডিজিটাল লিটারেসি তৈরিতেও ভূমিকা রাখতে পেরে বিকাশ আনন্দিত। আজ দেশের অসংখ্য মানুষের প্রতিদিনকার জীবনযাপনে, সংগ্রাম আর সাফল্যে তাদের সঙ্গী থাকতে পারাটা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার। সেই অনুপ্রেরণা নিয়ে বিকাশের একযুগ পূর্তিতে আমরা হাজির হয়েছি ‘আমাদের বিকাশকে ঠেকায় কে?’ বার্তা নিয়ে।
১২ বছর ধরে নানান রকম গ্রাহক-কেন্দ্রিক সেবা যুক্ত হয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে বিকাশ। একসময় টাকা পাঠানো, ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউট সেবা থাকলেও এখন মোবাইল রিচার্জ করা, যেকোনো ধরনের বিল পরিশোধ করা, পেমেন্ট করা, ব্যাংকের ডিজিটাল ঋণ, ব্যাংকে সেভিংসের মতো অসংখ্য সেবায় বিকাশ এখন প্রতি মুহূর্তের সঙ্গী। সেবাকে ২৪ ঘণ্টা গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর পেছনে অসংখ্য জটিল প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হলেও গ্রাহকের কাছে তা পৌঁছানো হচ্ছে সবচেয়ে সহজ করে। এই সব প্রচেষ্টায় সাড়ে তিন কোটি পরিবারে সাত কোটি বিকাশ গ্রাহক অর্থাৎ প্রতিটি পরিবারে কমপক্ষে দুটো বিকাশ ব্যবহার হচ্ছে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সব বাংলাদেশির জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে বিকাশ।
দেশের কোটি মানুষের আর্থিক লেনদেনেও এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এমএফএস-এর কল্যাণে এখন মানুষের হাতের মুঠোয় সব ধরনের আর্থিক সেবা। দ্য গ্লোবাল ফিনডেক্স ডাটাবেজের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে যেকোনো ধরনের ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট সেবা গ্রহণ করতেন প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর মাত্র ৩২ শতাংশ মানুষ। মোবাইল ব্যাংকিং সেবার কল্যাণে ২০২১ সালে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৩ শতাংশে। এখন শহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ ব্যাংকিং সেবা নিতে পারছেন সহজেই।
আগামীর বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ। ক্যাশলস ইকোসিস্টেম তৈরিতে সব পক্ষের সম্মিলিত এগিয়ে চলার প্রত্যয় আমাদের সফল করে তুলবে। আগামীতে গ্রাহক যেন সব ধরনের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তার জন্য সবচেয়ে ভালো এবং প্রযোজ্য সিদ্ধান্তটা নিতে পারে তেমন করে প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছি আমরা। একটা উদাহরণ দিই, একজন খুচরা পণ্য বিক্রেতা, হঠাৎ দেখলেন পণ্য পাচ্ছেন নির্ধারিত মূল্যের কম দামে। তার কাছে হয়তো টাকা নেই। কিন্তু বিকাশ আছে। তিনি বিকাশ থেকে মুহূর্তেই একটা জামানাতবিহীন লোন নিয়ে নিতে পারবেন। তার পণ্য বিক্রি শেষে তা পরিশোধও করে দিতে পারবেন। এই যে মুহূর্তে যা প্রয়োজন ঠিক সেই মুহূর্তে সেই সেবা গ্রাহকের কাছে সহজলভ্য করাই আমাদের লক্ষ্য। যেন গ্রাহক প্রযুক্তিগত এই বিকাশ সেবাকে পাশে নিয়ে দৃপ্ততার সঙ্গে বলে ওঠেন ‘আমাদের বিকাশ ঠেকায় কে?’
লেখক : চিফ মার্কেটিং অফিসার, বিকাশ
আমাদের প্রাণিজ আমিষের শতকরা ৬০ ভাগ পাই মাছ থেকে। বাংলাদেশে বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এই সময় প্রাকৃতিক জলাশয়, পুকুর ও দিঘিতে প্রচুর পানি থাকে। মাছ ডিম পাড়ে। মাছের পোনা বড় হয়। বাজারেও পাওয়া যায় প্রচুর ছোট মাছ। এ কারণে ভাদ্র-আশ্বিনে সাধারণত চাষের বড় মাছের দাম কম থাকে। বিলম্বিত বর্ষা ও স্বল্প বৃষ্টিপাতের কারণে এ বছর ভাদ্র মাসেও বাজারে ছোট মাছের সরবরাহ কম। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় দাম একটু বেশি।
ডিম ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাছের দাম বাড়ার কারণে বাজারে বাড়ছে ডিমের দাম। মাছের খামারিদের কথা খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহন খরচ, বিদ্যুৎ খরচ এবং শ্রমিকের বাড়তি মজুরির জন্য মাছের দাম কিছুটা বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু খামারিরা যে হারে দাম বাড়িয়েছেন, সে তুলনায় উচ্চ হারে দাম বাড়িয়ে মাছের বাজারকে অস্থির করে তুলেছে অতিলোভী মধ্যস্বত্বভোগীরা।
বাংলাদেশে মাছের বাজারে মধ্যস্বত্বভোগী হলো আড়তদার, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী। ধান, চাল, ফলমূল ও শাকসবজি বিপণনে পাইকারি ব্যবসায়ীদের বড় ভূমিকা থাকলেও বিদ্যমান মাছের বাজার ব্যবস্থাপনায় পাইকারি ব্যবসায়ীদের তেমন কোনো ভূমিকা নেই। খামারি বা মাছ চাষির কাছ থেকে সরাসরি আড়তদার মাছ কিনে পুকুর থেকে ধরে নিয়ে আসেন। আড়তদার সেই মাছ খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। আড়তদারদের সমিতি আছে। তারা খুব সংগঠিত। সংগঠনের নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দামে কোনো আড়তদার মাছ বিক্রি করতে পারেন না। খুচরা ব্যবসায়ীরাও কম সংগঠিত নন। তাদেরও সমিতি আছে। আছে মাছের দৈনিক নির্ধারিত দাম।
গরিবের মাছ হিসেবে পরিচিত পাঙ্গাশ ও তেলাপিয়া। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০১৩ সালে সারা দেশ মিলিয়ে পাঙ্গাশের প্রতি কেজির দাম ছিল ১১৪ টাকা। ২০২১ সালে এই দর ছিল ১১১ টাকা। খামারি পর্যায়ে মাছ চাষিরা যে দামে মাছ বিক্রি করেন, তার চেয়ে কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দামে মাছ বিক্রি হচ্ছে খুচরা পর্যায়ে। সম্প্রতি (২৫.৮.২৩) ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে মাঝারি ও বড় সাইজের প্রতিকেজি তেলাপিয়া ২০০ টাকা এবং পাঙ্গাশ প্রতিকেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক কেজি ওজনের রুই মাছের দাম ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, দুই-আড়াই কেজি ওজনের দাম ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি। তিন থেকে চার কেজি ওজনের কাতলা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে খামারি পর্যায়ে মাঝারি ও বড় সাইজের তেলাপিয়া প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশ ফিশ ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, মাছের খাবারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহন ব্যয়, বিদ্যুৎ বিল ও মজুরি খরচ বৃদ্ধির কারণে মূলত মাছের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তবে চাষিপর্যায়ে যে হারে দাম বেড়েছে, মধ্যস্বত্বভোগীরা তার চেয়ে অনেক বেশি দামে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করছেন। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ভোক্তা। মাছ চাষ করে একজন চাষি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা লাভ করতে পারছেন না, অন্যদিকে মধ্যস্বত্বভোগীরা একদিনের ব্যবধানে কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা লাভ করছেন। এককেজি ওজনের রুই মাছ তৈরি করতে সাধারণত প্রায় এক বছর সময় লাগে। বর্তমানে চাষি পর্যায়ে এক কেজি ওজনের রুই মাছের দাম ২২০ টাকা। কিন্তু খুচরা পর্যায়ে সেই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা। সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনার অভাবেই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। চাষিবান্ধব ও ভোক্তাবান্ধব বাজার দরকার। তা হলে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমত এবং ভোক্তারাও কম দামে প্রাণিজ আমিষের স্বাদ কিছুটা হলেও উপভোগ করতে পারতেন।
এবার গতবারের চেয়ে তুলনামূলকভাবে ইলিশের দামও বেশি। গত বছর এই সময়ে ৫০০ গ্রাম ও ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ৮০০ ও ১২০০ টাকা কেজি দামে। বর্তমানে ময়মনসিংহ মহানগরের বিভিন্ন মাছের বাজারে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১২০০ টাকা এবং ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। ইলিশের মূল্যবৃদ্ধিও চাষের মাছের মূল্যবৃদ্ধিকে পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করছে বললে ভুল হবে না।
ত্রিশাল উপজেলার হদ্দের ভিটা গ্রামের খামারি মো. লিটন মিঞার মোট ১৫টি পুকুর আছে। পাঙ্গাশ ছাড়াও তিনি সেখানে রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প, তেলাপিয়া মাছের চাষ করেন। সপ্তাহ অন্তর পাইকাররা তার পুকুর থেকে মাছ ধরে নিয়ে যান। মাঝারি সাইজের প্রতিকেজি রুই ও কাতলা ৩০০ থেকে ৩২০, তেলাপিয়া ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা এবং পাঙ্গাশ ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি করেন। আর ওই মাছই উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দামে খুচরা বিক্রি করা হয়। উপজেলার চকপাঁচপাড়া গ্রামের মাছচাষি মাহবুবুর রহমান জানান, তিনি প্রতি বছর ২.৫ একর জমিতে পাঙ্গাশ ও বাংলা মাছের মিশ্র চাষ করেন। তার মতে, মাছের দাম বাড়ার প্রধান কারণগুলো হলো খাবার, বিদ্যুৎ, শ্রমিকের মজুরি ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি। এছাড়া মাছ চাষের আন্যান্য উপকরণ যেমন চুন ও ওষুদের দামও বেড়েছে প্রচুর। এককেজি মাছে খামারিদের লাভ হয় ১৫ থেকে ২০ টাকা। আর মধ্যস্বত্বভোগীদের লাভ হয় ৫০ থেকে ১০০ টাকা। মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে খামারে মাছচাষি আর বাজারে ঠগছেন ভোক্তা সাধারণ।
মাছের খাদ্য তৈরির উপকরণ সয়ামিল, ভুট্টা, গম/আটা, খইল, শুঁটকি মাছ, কুড়া প্রভৃতির দাম গত এক বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে প্রচুর। ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার একজন বিশিষ্ট মাছের খাদ্য ব্যবসায়ীর মতে, মাত্র এক বছর আগে যে সয়াবিন মিলের দাম ছিল ৩৫ টাকা, বর্তমানে তার দাম হয়েছে ৪৮ টাকা। অনুরূপভাবে ৩৫ টাকার খইল হয়েছে ৪৭ টাকা, ৩০ টাকার আটার দাম হয়েছে ৪০ টাকা, ২৫ টাকা কেজির ভুট্টার দাম হয়েছে ৩২ টাকা, ৮০ টাকা কেজির শুঁটকির দাম হয়েছে ১৫০ টাকা, ২০ টাকা কেজি চালের কুড়ার দাম হয়েছে ৩০ টাকা। অপরদিকে ২৫ টাকা কেজির সাধারণ ব্যবসায়ীদের তৈরি ডুবন্ত খোলা খাদ্যের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ টাকা। বিভিন্ন কোম্পানির তৈরি প্রতি কেজি ডুবন্ত খাবারের যে দাম ছিল ৩৬ টাকা, বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৪৪ টাকা কেজি দরে। দেশে জনপ্রতি মাছের দৈনিক চাহিদা ৬০ গ্রাম। জনপ্রতি মাছের বার্ষিক চাহিদা ২১.৯০ কেজি। জনপ্রতি বার্ষিক মাছ গ্রহণ ২৩ কেজি। মাছের বার্ষিক চাহিদা ৪৫.৫২ লাখ মেট্রিক টন। দেশে অভ্যন্তরীণ মৎস্য উৎপাদন ৪৬ লাখ ২১ হাজার টন। সে হিসেবে মাছের দাম এতটা তো বাড়ার কথা নয়।
দেশ এখন মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশে^ প্রথম (৫.১৯ লাখ টন), তেলাপিয়া উৎপাদনে বিশে^ ৪র্থ (প্রায় ৫ লাখ টন), অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়সহ মাছ উৎপাদনে বিশে^ বাংলাদেশ ৩য়, মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে ৪র্থ এবং জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে ৫ম। এটা জাতির জন্য বিশাল গৌরব ও অহংকারের বিষয় হলেও নিম্ন আয়ের গরিব মানুষের জন্য তা কোনো সুফল বয়ে আনছে না। দেশের নিম্ন আয়ের গরিব মানুষ যাতে মাছের স্বাদ ভোগ করতে পারে, দিনে অন্তত একবার মাছ খেতে পারে সে ব্যাপারে সরকারকেই কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। মধ্যস্বত্বভোগীদের উৎপাত থেকে বাঁচতে হবে ভোক্তা ও খামারিদের।
মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য হ্রাসে কিছু সুপারিশ
১. প্রতিটি পৌরসভা ও মহানগরে কৃষক বাজারের মতো আধুনিক মৎস্য বাজার স্থাপন করতে হবে, যেখানে প্রকৃত মাছচাষিরা তাদের খামারে উৎপাদিত মাছ সংরক্ষণ করে বিক্রি করতে পারবেন। এতে খামারি বা মাছচাষি ন্যায্যমূল্য পাবেন এবং ভোক্তাও মধ্যস্বত্বভোগীদের উৎপাত থেকে রক্ষা পাবেন।
২. রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর মতো এলাকায় আগোরা, স্বপ্নের মতো সুপার শপগুলো সংযোগ চাষির মাধ্যমে উত্তম মাছচাষ নীতি অনুসরণ পূর্বক মাছ উৎপাদন ও সংগ্রহ করে তা ভোক্তার কাছে সরাসরি বিক্রি করতে পারে। এতে মাছচাষি এবং ভোক্তা উভয়ই উপকৃত হবেন।
৩. করোনাকালের মতো অনলাইনে মাছের ব্যবসা চালু হলে মধ্যস্বত্বভোগীদের একচেটিয়া ব্যবসা কিছুটা হলেও বাধাগ্রস্ত হবে।
৪. প্রত্যেক আড়তদার ও খুচরা ব্যবসায়ীকে মাছের ক্রয়মূল্য সংক্রান্ত কাগজপত্র সংরক্ষণ করতে হবে। বিক্রয়মূল্যের চার্ট দোকানে টানিয়ে রাখতে হবে এবং ক্রেতাকে বিক্রিকৃত মাছের রসিদ দিতে হবে।
৫. এছাড়া মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে দেশের সর্বত্র মৎস্য সমবায় বিক্রয় সমিতি গঠন করতে হবে।
৬. নিয়মিত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নেতৃত্বে মাছের বাজার মূল্যায়ন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
লেখক : সাবেক মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন
১৯৫৮ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন পপসংগীতের কিংবদন্তি তারকা মাইকেল জ্যাকসন। তাকে পপসংগীতের রাজা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। সংক্ষেপে তাকে এমজে নামে অভিহিত করা হয়। সংগীত, নৃত্য এবং ফ্যাশন জগৎসহ ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপটে চার দশকেরও অধিককাল ধরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তিনি বৈশ্বিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিলেন। জো জ্যাকসন ও ক্যাথেরিন জ্যাকসন দম্পতির সপ্তম সন্তান মাইকেল জ্যাকসন। তার পরিবার ছিল আফ্রো-আমেরিকান। পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে মাইকেল জ্যাকসনকে কপিকল অপারেটর হিসেবে কারখানায় কাজ করতে হয়েছে। মাইকেল জ্যাকসন মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তার ভাইদের সঙ্গে ‘জ্যাকসন-৫’ মিউজিক্যাল গ্রুপে যোগ দেন। সেখান থেকে প্রথম মিউজিক অ্যালবাম ‘ডায়ানা রোজ’ ১৯৬৯ সালে প্রকাশ হয়। এ অ্যালবামের প্রথম একক গান ‘আই ওয়ান্ট ইউ ব্যাক’ ১৯৭০ সালের জানুয়ারিতে বিলবোর্ডের হট তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করে নেয়। মাত্র ১৩ বছর বয়সে এককভাবে মাইকেল জ্যাকসনের ক্যারিয়ারের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭২ সালে তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘বেন’ প্রকাশিত হয়। এরপর ১৯৭৯ সালে তার পরবর্তী অ্যালবাম বের হয়। এ অ্যালবামের নাম ছিল ‘অফ দ্য ওয়াল’। এর ‘ডোন্ট স্টপ টিল ইউ গেট অ্যানাফ’ ও ‘রকিং উইথ ইউ’ গান দুটির মাধ্যমে তুমুল জনপ্রিয়তা পান তিনি। মাইকেলের সবচেয়ে বিক্রীত অ্যালবামের মধ্যে রয়েছে ‘অফ দ্য ওয়াল’, ‘থ্রিলার’, ‘ব্যাড’, ‘ডেঞ্জারাস’ এবং ‘হিস্ট্রি’। এর মধ্যে ‘থ্রিলার’ সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া অ্যালবাম। মাইকেল জ্যাকসনের গানের ভিডিওগুলো বিশ্ববাসীকে মন্ত্রমুগ্ধ করে। ‘বিট ইট’ গানটি প্রচার করে শিরোনামে আসে এমটিভির নাম। অনেকেই হয়তো জানেন না, মাইকেল জ্যাকসনের এই একটি গানকে পুঁজি করে এমটিভির উত্থান ঘটে। মাইকেলের জনপ্রিয় নাচের মধ্যে রোবট ও মুনওয়াক (চাঁদে হাঁটা) রয়েছে। মুনওয়াক আসলে হলো সামনের দিকে হাঁটার দৃষ্টিভ্রম সৃষ্টি করে পেছনে যাওয়ার ভঙ্গিমা। তিনি পপ সংগীত এবং মিউজিক ভিডিওর ধারণা পাল্টে দেন। ২০০৯ সালের ২৫ জুন মাত্র ৫০ বছর বয়সে ওষুধের বিষক্রিয়ায় তিনি পাড়ি জমান না ফেরার দেশে।
ভারতের ভিসা পাওয়া নিয়ে পাকিস্তান দল যে জটিলতার মধ্যে ছিল সেটার অবসান হয়েছে। অবশেষে ভারতের সরকার পাকিস্তান দলের জন্য ভিসা অনুমোদন করেছে।
সোমবার ক্রিকেট বিষয়ক ভারতীয় ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ এই খবর জানিয়েছে। ভিসা অনুমোদনের ফলে বাবর আজমের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান দল এখন বিশ্বকাপে অংশ নেওয়ার জন্য ভারতে ভ্রমণ করতে পারবে। আগামী ৫ অক্টোবর শুরু হতে যাওয়া ১০ দলের আসরে শেষ দল হিসেবে ভিসা পেয়েছে পাকিস্তান।
ওয়ানডে বিশ্বকাপ অংশ নিতে আগামী বুধবার ভারতের উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার কথা রয়েছে পাকিস্তান দলের। তবে যাত্রার ৪৮ ঘণ্টা আগেও ভিসা না পাওয়াকে 'অস্বাভাবিক দেরি' হিসেবে উল্লেখ করে উদ্বেগ জানায় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তারা বিষয়টি নিয়ে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির দ্বারস্থও হয়। এর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এসেছে ভিসা অনুমোদনের খবর।
ক্রিকবাজ জানিয়েছে, আইসিসির একটি সূত্র তাদেরকে পাকিস্তান দলের ভারতের ভিসা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ভিসা পেতে দেরি হওয়াকে স্বাভাবিক প্রশাসনিক প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করেছে ওই সূত্র।
সবশেষ এশিয়া কাপের মূল আয়োজক ছিল পাকিস্তান। তবে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে দেশটিতে যেতে চায়নি ভারত। ওই আসরে ভারতের সবগুলো ম্যাচ হয় শ্রীলঙ্কায়। একটি বাদে সুপার ফোরের বাকি সব ম্যাচ আর ফাইনালও অনুষ্ঠিত হয় দ্বীপ দেশটিতে।
ভারত নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকায় হাইব্রিড মডেলে এশিয়া কাপ আয়োজনের প্রস্তাব আসে পাকিস্তানের কাছ থেকেই। এর আগে ভারত দল পাকিস্তানে না গেলে পাকিস্তানও ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে যাবে না বলে হুমকি দিয়েছিল পিসিবি। যদিও নিজেদের সেই সিদ্ধান্ত থেকে পরে সরে আসে তারা।
বিশ্বকাপের আগে আগামী শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে মাঠে নামবে পাকিস্তান। তিনদিন পর তাদের আরেকটি প্রস্তুতি ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপে বাবরদের প্রথম ম্যাচ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। আগামী ৬ অক্টোবর হায়দ্রাবাদে অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচটি।
বাংলাদেশে ফৌজদারি অপরাধে আইনের যে ধারায় শাস্তি দেওয়ার হয়, দণ্ডবিধি বা পেনাল কোড নামে আইনটি ১৬৩ বছরের পুরনো। বিচারের দিক-নির্দেশক হিসেবে ফৌজদারি কার্যবিধি (দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর বা সিআরপিসি) নামে পদ্ধতিগত আইনটিও ১২৫ বছর আগের তৈরি। এ ছাড়া ১৫১ বছরের বেশি পুরনো (১৮৭২ সাল থেকে প্রচলিত) সাক্ষ্য আইন (অ্যাভিডেন্স অ্যাক্ট)। ব্রিটিশ আমলে তখনকার প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতিতে তৈরি এ আইনগুলোর কাঠামো নিয়ে আপত্তি না থাকলেও আইন ও বিচারসংশ্লিষ্ট বেশিরভাগ মানুষের প্রশ্ন আছে সময়, পরিস্থিতি ও প্রয়োজনে আইনগুলোর সংস্কার এবং যুগোপযোগী না করা নিয়ে। বাংলাদেশসহ এ উপমহাদেশে ৭৬ বছর আগে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয়েছে। আইনের সংস্কার নিয়ে বছরের পর বছর দাবি উঠেছে জোরেশোরে। স্বাধীনতার ৫২ বছরে এসব আইনের আলোকে, অনেক বিশেষ আইন হয়েছে। সেগুলোর অনেক ধারাতেও অসংগতি ও অস্পষ্টতার বিষয়টি নানা সময়ে আলোচনায় এসেছে। কিন্তু সংস্কারের বিষয়টি এখনো উপেক্ষিত।
১৮৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত দণ্ডবিধিতে ৫১১ ধারার ৪৫৯টি শাস্তিসংক্রান্ত। এর মধ্যে আটটি ধারায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। ১৮৯৮ সালে তৈরি হওয়া ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬৫ ধারার বেশিরভাগই বিচারের লক্ষ্যে দিকনির্দেশনা সংক্রান্ত। এ ছাড়া ১৫১ বছরের বেশি পুরনো (১৮৭২ সাল থেকে প্রচলিত) ও ১৬৬টি ধারা সংবলিত সাক্ষ্য আইনে (অ্যাভিডেন্স অ্যাক্ট) ধর্ষণের শিকার নারীদের জন্য অবমাননাকর একটি ধারা গত বছর নভেম্বরে বাতিলসহ এ আইনে ডিজিটাল তথ্য-প্রমাণ আমলে নেওয়ার সুযোগ রাখা হয় সংশোধনীতে। আইন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, সাক্ষ্য আইনটিকে আরও যুগোপযোগী ও সংস্কারের অংশ হিসেবে চলতি বছরেই তারা সুপারিশসংক্রান্ত প্রতিবেদন দেবেন।
আইনের সংস্কার প্রশ্নে পাঁচজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে তাদের মতামত নিয়েছে দেশ রূপান্তর। প্রায় অভিন্ন সুরে তারা বলেন, আইনের প্রতিষ্ঠিত নীতিবাক্য হলো ‘দশজন অপরাধী খালাস পেলেও একজন নিরপরাধ ব্যক্তি যেন সাজা না পান’। ফলে বিচারে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ এবং আইনের ভাষা হতে হয় সহজ ও অযান্ত্রিক। একই সঙ্গে বিচারপ্রত্যাশীর ভোগান্তি লাঘবে দ্রুত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হয়। তাদের মতে, প্রায় ২০০ বছরের ঔপনিবেশিক সময়ে মানুষকে প্রজা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এর প্রভাব পড়েছে ওই সময়ে তৈরি আইনগুলোতে। যেখানে শুধু শাস্তিকেই লক্ষ্য করা হয়েছে। অন্যদিকে একশ, দেড়শ বছরে অপরাধের ধরন, ভিন্নতা, অপরাধে প্রযুক্তিগত ব্যবহারসহ বদলেছে অনেক কিছু। বিপরীতে আইনগুলোতে নগণ্য কিছু সংশোধনী ছাড়া সংস্কার হয়নি।
পুরনো আইনের সংস্কার না হওয়াকে মামলাজটের কারণ উল্লেখ করে আইনজীবীরা আরও বলেন, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি, আদালতের সময়সহ বিচারপ্রত্যাশীর অর্থ ও সময় সাশ্রয়, অপরাধীর পুনর্বাসন, সংশোধন ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তেমন কিছুই নেই আইনগুলোতে। অন্যদিকে আইনের অপপ্রয়োগ কিংবা দুর্বলতায় প্রায়ই নির্দোষ ব্যক্তিকে নির্যাতন, জেলে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) ট্রাস্টি অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের জন্য আইন। কিন্তু ব্রিটিশরা কর্তৃত্ব ও নিপীড়নমূলক অনেক আইন করেছে মানুষকে শোষণ, শাসন ও লুণ্ঠন করতে। তখন তো আর নাগরিক ও মানবাধিকার নিয়ে এত কথা হতো না। তাদের লক্ষ্যই ছিল কথায় কথায় স্বাধীনতাকামীদের বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করে শাস্তি দেওয়া। তিনি বলেন, ‘এখন তো আমরা ব্রিটিশদের উপনিবেশে নেই। কিন্তু ৫৪ (বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার) ১৬৭ ধারার (রিমান্ড) মতো নিপীড়নমূলক আইনগুলোসহ আরও অনেক কিছু রয়ে গেছে। ১৯৭২ সালে মাত্র কয়েক দিনে একটি ভালো সংবিধান হলে এখন মানুষের জন্য যুগোপযোগী আইন কেন হবে না?’
সম্প্রতি ২৪তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নিয়োগ পাওয়ার পরদিন গত ১৩ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি মামলাজটকে তার প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন। এ লক্ষ্যে আইনের সংস্কার বড় বিষয় উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘মানুষের দুর্গতি ও কষ্ট লাঘবে সরকার নিশ্চয়ই এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করবে।’ নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতির এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা।
আইন সাময়িকী ডিএলআরের সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি যথার্থই বলেছেন। আমরাও আইনের সংস্কার চাই। শুধু ফৌজদারি কিংবা দণ্ডবিধি নয়, এসব আইনের আলোকে আর্থিক অপরাধ, মানি লন্ডারিংসহ এমন কিছু আইন আছে যেগুলোর অনেক কিছুর সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে।’
কিছুদিন আগে ভারত সরকার ব্রিটিশদের তৈরি ফৌজদারি আইন ব্যাপক সংস্কারে উদ্যোগ নিয়েছে।
সংস্কারের রূপরেখা আলোর মুখ দেখেনি : পুরনো ফৌজদারি আইনের সংস্কার নিয়ে ২০১১ সালে একটি রূপরেখা তৈরি করে আইন মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রতিবেদন দিয়েছিল আইন কমিশন। এতে আইনের প্রতিষ্ঠিত নীতিবাক্যটিকে একটু ভিন্নভাবে উপস্থান করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘একজন নির্দোষ ব্যক্তি যাতে সাজা না পায় এবং একজন অপরাধীও যাতে খালাস না পায়।’ আইনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে প্রশ্নের অবতারণা করে সমস্যা চিহ্নিত ও সমাধানে ৩৩টি সুপারিশ করে কমিশন। এর মধ্যে তদন্ত ও বিচারের ত্রুটি কাটাতে ফৌজদারি অপরাধের তদন্ত করতে স্থায়ী, পেশাদার ও দক্ষ পৃথক তদন্ত সংস্থা গঠন, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য শুধু হাতেকলমে না লিখে টেপ রেকর্ডার, ভিডিওতে রাখা, ১৬৪ ধারায় আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির সঙ্গে সাক্ষীর বক্তব্য রেকর্ড করা, মিথ্যা ও তুচ্ছ অভিযোগকারীকে জরিমানা, ক্ষতিপূরণ বা কারাদণ্ড দিতে ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি দায়রা জজকেও ক্ষমতা দেওয়া, বিচারকাজের দীর্ঘসূত্রতা কমাতে মুলতবির সময় সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া, মামলার কার্যক্রম স্থগিতের সময়সীমা ৩০ দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনের তাগিদ দেয় কমিশন। এ ছাড়া কারাগারের চাপ কমানো এবং আসামিকে সংশোধনের লক্ষ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও অভিযোগ গঠনের সময় দোষ স্বীকার করলে সাজা রেয়াত দেওয়া, যুক্তিতর্কের কারণে মামলার কার্যক্রম বিলম্বিত হওয়ায় তা লিখিত আকারে জমা দেওয়া, আদালতের সংখ্যা অনুপাতে আপিল আদালত প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে কমিশন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কমিশনের ওই সুপারিশ আলোর মুখ দেখেনি।
কমিশনের মুখ্য গবেষণা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোর্শেদ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রতিবেদন দেওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে কমিশন অবহিত নয়।
দণ্ডবিধির অনেক ধারার অসংগতি ও অস্পষ্টতা নিয়ে আইন ও বিচার সংশ্লিষ্টরা বলেন, এই আইনে অনেক কিছুই আছে। কিন্তু গণপিটুনিতে মৃত্যু, অর্থনৈতিক অপরাধের মতো আরও কিছু বিষয়ে আইনে কিছু নেই। অন্যদিকে পুরনো এ আইনে এখনো ১০ টাকা, ১০০ টাকা ও ২০০ টাকার মতো অর্থদণ্ডের বিধান রয়ে গেছে। জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার তিনজন (একজন অবসরে) বিচারক এসব আইনে তাদের বিচারিক অভিজ্ঞতার বিষয়টি দেশ রূপান্তরের কাছে তুলে ধরেন। সংগতকারণে তারা তাদের নাম না প্রকাশের অনুরোধ জানান। একজন বিচারক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আদালত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রসিকিউশনসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার সমন্বয়ে একটি ফৌজদারি মামলার বিচার কার্যক্রম হয়। কিন্তু বিচারের দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে শুধু বিচার বিভাগকে শুনতে হয়। পুরনো আইনগুলোতে এমন অনেক কিছু আছে, যা একটু আধুনিক হলে বিচারকাজে আরও গতিশীল হবে।’ অন্য একজন বিচারক বলেন, ‘বিচারকাজের সময় টাইম (আদালত ও বিচারপ্রার্থীর সময়), কস্ট (বিচারপ্রার্থীর খরছ) এবং ভিজিট (বিচারপ্রত্যাশীর আদালতে আসা-যাওয়া) এ তিনটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আইনগুলোতে এসব বিষয়ে স্পষ্ট কিছু দিকনির্দেশনা নেই। সংগতকারণে বিচারপ্রার্থীর প্রতি সিমপ্যাথি (সহানুভূতি) ও ইমপ্যাথি (সহানুভূতির পরিপ্রেক্ষিতে কিছু করা) থাকা সমীচীন।’
আইন সংস্কারের উদ্যোগ থমকে দুই বছর ধরে : ২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফৌজদারি আইন সংস্কার ও আইনটি বাংলা ভাষায় প্রণয়ন করতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হককে নির্দেশ দেন। দুদিন পর ফৌজদারি আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন করে আইনটি যুগোপযোগী, আধুনিক ও বাংলা ভাষায় প্রণয়নের উদ্দেশ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এতে চেয়ারপারসন করা হয় মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব মো. মইনুল কবিরকে। কমিটিকে অন্যান্য দেশের আইন বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা করে সমস্যা চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। তবে মন্ত্রণালয়ের ওয়াকিবহাল একটি সূত্রের তথ্য বলছে, দুই বছর পার হলেও এ বিষয়ে কার্যকর কোনো অগ্রগতি নেই।
এ বিষয়ে জানতে সচিব ময়নুল কবিরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল ধরেননি। সার্বিক বিষয়ে জানতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও তার সাড়া মেলেনি। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এএম আমিন উদ্দিন মনে করেন, পুরনো আইনগুলোর আমূল পরিবর্তন কিংবা পুরো সংস্কার নয়, যতটুকু করলে বিচারপ্রার্থীর দ্রুত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে সেটি হতে পারে। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আইনগুলোর প্রসিডিউরে (কার্যপ্রণালি) তেমন ভুল নেই। যেসব ক্ষেত্রে অসংগতি বা অস্পষ্টতা আছে শুধু সেগুলোই আলোচনার মাধ্যমে সংশোধন করা উচিত। এ ক্ষেত্রে অংশীজন হিসেবে অন্যদের সঙ্গে অবশ্যই আইনজীবীদের সম্পৃক্ত রাখা উচিত।’
ন্যায্য পারিশ্রমিক ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার সীমিত করার দাবি নিয়ে পাঁচ মাস আগে হলিউডে শুরু হওয়া হট্টগোলের অবসান হচ্ছে। আন্দোলনকারী লেখকরা প্রযোজকদের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর পর ধর্মঘট তুলে নেওয়ার কথা জানান। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানাচ্ছে, পাঁচ মাস আগে লেখক বা চিত্রনাট্যকারদের আন্দোলনের সঙ্গে যোগ দেন অভিনয়শিল্পীরা। যার কারণে হলিউডে একধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। বন্ধ হয়ে যায় অনেক সিনেমার নির্মাণকাজ। তবে স্থানীয় সময় গত রবিবার হলিউডের লেখক ইউনিয়ন বড় স্টুডিওগুলোর সঙ্গে একটি প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছেছে।
সিএনএন বলছে, এই চুক্তির ফলে হলিউডের ইতিহাসের বড় দুটি ধর্মঘটের মধ্যে একটি পক্ষ কাজে ফিরতে সম্মত হলো। এই ধর্মঘটের ফলে প্রায় পাঁচ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে বেশিরভাগ ফিল্ম ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানের চিত্রায়ণ। ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতিতে এর প্রভাব বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের। তাই এবার আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে লেখক ও অভিনয়শিল্পীদের কাজে ফেরাতে সচেষ্ট হচ্ছে হলিউডের স্টুডিওগুলো।
লেখকদের সঙ্গে নিষ্পত্তি হলেও এখনই হলিউডের স্টুডিওগুলোর আলো জ্বলছে না। অভিনেতাদের সংগঠন এসএজি-এএফটিআরএ এখনো পারিশ্রমিক ও এআই ইস্যুতে ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছে। এসব দাবির পাশাপাশি লেখকদের পারিশ্রমিক ও লভ্যাংশ ইস্যুতে সংহতি প্রকাশ করে ২ মে থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন তারা। এসব বিষয়ে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে বার্তা সংস্থার আহ্বানে সাড়া দেয়নি দ্য অ্যালায়েন্স অব মোশন পিকচার অ্যান্ড টেলিভিশন প্রডিউসারস, ওয়াল্ট ডিজনি, নেটফ্লিক্স, ওয়ার্নার ব্রস ডিসকভারিসহ অন্যান্য প্রতিনিধিত্বকারী বাণিজ্যিক গোষ্ঠী।
চলতি বছরের ২ মে থেকে শুরু হওয়া ধর্মঘটে ১১ হাজারেরও ফিল্ম এবং টিভি লেখক অংশগ্রহণ করেন, যারা স্ট্রিমিং যুগে উচ্চ বেতন এবং আরও ভালো কাজের দাবি করছেন। তারা যুক্তি দিয়েছেন যে স্টুডিওগুলো স্ট্রিমিং প্ল্যাটফরম থেকে যে আয় করেছে, সেই তুলনায় তাদের ক্ষতিপূরণ মিলছে না। লেখকরা নতুন নিয়মও চান, যাতে এসব স্টুডিও টিভি শোগুলোর জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্টসংখ্যক লেখক নিয়োগ করতে হবে। একই সঙ্গে বড় স্টুডিওগুলোর কাছ থেকে বেশি পারিশ্রমিক চেয়ে একটি চুক্তি করতে চেয়েছিল লেখকদের সংগঠন রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকা (ডব্লিউজিএ)। সেই চুক্তির চেষ্টা ব্যর্থ হওয়াতেই মূলত ধর্মঘটের ডাক দেন লেখকেরা। হলিউড আন্দোলনের কারণে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে টেলিভিশন শো ও হলিউডের নির্মাণাধীন সিনেমাগুলো।
বিশ্বকাপ যত এগিয়ে আসছে, বাংলাদেশে বিশ্বকাপ নিয়ে নাটক ততই জমে উঠেছে। একদিন পর দল বিশ্বকাপ খেলতে দেশ ছাড়বে, অথচ এখনো ঘোষণা হয়নি বিশ্বকাপের দল।
এমন অবস্থায় সোমবার মাঝরাতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বাসায় বৈঠকে বসেছিলেন ওয়ানডে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।
বিকেলে বিসিবি সভাপতির পেশাগত কার্যালয়, বেক্সিমকোতে নির্বাচক কমিটির সদস্যসহ বিসিবির বেশ কয়েকজন পরিচালকের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন বিসিবি সভাপতি। তারপর সন্ধ্যার দিকে দেশের কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দাবী করা হয় সাকিব ও তামিম ইকবালের ভেতর নতুন দ্বন্দের খবর।
গণমাধ্যমগুলোর দাবী, তামিম ইকবাল জানিয়েছেন বিশ্বকাপে তিনি পাঁচটি ম্যাচে খেলতে পারবেন। অন্যদিকে তামিমের এই দাবী মানলে বিশ্বকাপে না খেলার হুমকি দিয়ে রাখেন সাকিব।
২০১৯ বিশ্বকাপে চোটজর্জর মাশরাফী বিন মর্তুজা দলে থাকায় এবং সবগুলো ম্যাচে খেলায় অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের পরও দলকে বিশ্বকাপে অষ্টম হতে দেখেছেন সাকিব, তাই এই শর্তে তার নেতৃত্বে না থাকার আশংকাই প্রবল। এই দুই জনকে সমঝোতা করার জন্য মাশরাফীকে পাপন দায়িত্ব দিয়েছেন এমন একটা খবরই দাবী করা হয়। যদিও এসবের পক্ষে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
ধোঁয়া থাকলে আগুন থাকবেই। তাই মধ্যরাতে, পৌনে ১২টায় সাকিবের বিসিবি সভাপতির বাসভবনে ছুটে যাওয়া আর সিডনি থেকে বাংলাদেশে পা রাখার ঘণ্টা তিনেকের মাথায় তাকে গুলশানের আইভি লেগেসিতে ছুটে আসতে দেখার মাধ্যমেই বোঝা যায়, চূড়ান্ত দল ঘোষণার আগে শেষ মুহূর্তে কোনো মারপ্যাঁচ লেগেছে।
প্রায় ৩ মাস পর আন্তর্জাতিক ম্যাচে ব্যাট করতে নেমে তামিম খেলেছিলেন ৪৪ রানের ইনিংস। পরের ম্যাচে আবার তিনি বিশ্রামে, যেটা বিসিবির মেডিক্যাল বিভাগেরই সুপারিশে।
তাই বিশ্বকাপে তামিম কতটা ফিট হয়ে খেলতে পারবেন, আদৌ খেলতে পারবেন কি না এসব নিয়েই হয়তো হয়েছে শেষ মুহুর্তে মধ্যরাতের আলোচনা।
অধিনায়ক, কোচ আর বিসিবি প্রধান মিলে মিনিট চল্লিশেক বৈঠক করেছেন। আগে বের হয়েছেন হাথুরুসিংহে, তার মিনিট দশেক পর সাকিব। কেউই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি, গাড়ির কাঁচটাও নামাননি। আর পাপনের বাসায় যখন এসব চলছে, তখন এক বন্ধুর সঙ্গে বাসায় বসে চাউমিন খাচ্ছেন তামিম!
সাকিব-তামিম একজন আরেকজনের সঙ্গে কথা বলেন না, এই খবর পুরাতন। শোনা গেছে সম্প্রতি একটি মোবাইলে আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপণের কাজে দুজনের ভেতর সম্পর্কে তিক্ততা বেড়েছে। তামিমের খেলা, না খেলা এসব নিয়েও জলঘোলা হওয়ার কারণেই নাকি সাকিবের বিরক্তি বেড়েছে।
তবে দুজনের কারো কাছ থেকেই এসব নিয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তামিম অধিনায়ক থাকা অবস্থায় ইংল্যান্ড সিরিজের আগে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন 'নাথিং এলস ম্যাটার্স'। সাকিবও স্বভাবসুলভ ভাবেই পাশ কাটিয়ে গেছেন এসব প্রসঙ্গ।
দল ঘোষণার আগের দিনে, মাঝরাতে বিসিবি প্রেসিডেন্টের বাসভবনে কোচ ও অধিনায়কের বৈঠক হতে পারে শেষ মুহূর্তের বোঝাপড়া। যেহেতু একদিন বাদেই উড়াল দিতে হবে। অথবা তামিম সংক্রান্ত ব্যপারে চূড়ান্ত ফয়সালা। উত্তরটা পেতে অপেক্ষা মাত্র কয়েক ঘণ্টার।
২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনকেন্দ্রিক সক্রিয় অবস্থানের পর দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের বড় কোনো কর্মসূচি নেই। কর্মসূচি পালন করতে চাইলেও ছাত্রলীগের হামলার মুখে দাঁড়াতেই পারছেন না সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। মাঝেমধ্যে ক্যাম্পাসের আশপাশে ছোটখাটো ঝটিকা মিছিল করেই সারছে দলীয় কর্মসূচি। তবে বিএনপির এক দফা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আবারও ক্যাম্পাসে সরব হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।
জানা যায়, ক্যাম্পাসে সক্রিয় হওয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিভিন্ন উপদলে ভাগ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত আড্ডা এবং কর্মী ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছেন তারা। আগামীতে ঢাবি ছাত্রদলের নেতৃত্বপ্রত্যাশী নেতারা এসব কর্মকা- পরিচালনা করছেন বলে জানা যায়। আড্ডা দিতে গিয়ে শনিবার রাতে ছাত্রলীগের হামলার শিকারও হন কয়েক জন ছাত্রদল নেতা। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ সক্রিয় দেখা যাচ্ছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের। ‘আমরা দ্রুত ফিরছি, মাত্র কয়দিনের অপেক্ষা’ লিখে স্ট্যাটাস দিতে দেখা যায় তাদের।
এদিকে রবিবার ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনের দেয়ালে ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ সে্লাগান লিখে আলোচনা তৈরি করে ঢাবি ছাত্রদল। ছাত্রদল নেতা আনিসুর রহমান খন্দকার অনিকের নেতৃত্বে মধুর ক্যানটিন ছাড়াও ডাকসু ক্যাফেটেরিয়া, কলা ভবনসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দেয়ালে ২০টির বেশি দেয়াল লিখন করেছে তারা। এসব দেয়ালে ‘দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’, ‘ঘুরে দাঁড়াও বাংলাদেশ’, ‘তারেক রহমান বীরের বেশে আসবে ফিরে বাংলাদেশে’ সে্লাগান লেখা হয়। যদিও এদিন দুপুরের দিকে মধুর ক্যানটিনের লেখা মুছে দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
ঢাবি ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশব্যাপী বিএনপির লংমার্চ শেষে অক্টোবরে ঢাকাকেন্দ্রিক টানা আন্দোলন চলবে। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও পুরোদমে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ছাত্রদল। যত বাধাই আসুক ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক কর্মসূচি ও আন্দোলন করতে চান তারা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত স্যাংশন ও বিএনপির সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি চূড়ান্ত রূপ লাভের অপেক্ষা থাকায় নেতাকর্মীরা বেশ উজ্জীবিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও তাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন বলে দাবি ছাত্রদলের নেতাদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। অক্টোবরে তা চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আপাতত বিভিন্ন ভাগ হয়ে হয়ে আড্ডা, দেয়াল লিখনসহ নানান কর্মসূচি চলছে। নতুন শিক্ষার্থীরাও আমাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। ছাত্রলীগের দখলদারিত্বের বিনাশ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। দেশনায়ক তারেক রহমানের চূড়ান্ত নির্দেশের অপেক্ষায় আছি আমরা।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গতকালও ছাত্রলীগ আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমরা হামলার জবাব হামলা দিয়ে নয়, কাজের মাধ্যমে জবাব দিতে চাই। সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিনাশ করতে চাই। ক্যাম্পাস কারও একার সম্পত্তি নয়, যেকোনো সময় আমরা আসব। শুধু সময়ের অপেক্ষা। আমরা দেশনায়ক তারেক রহমানের আগমনী বার্তা দিতে চাই।’
ঢাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যেহেতু সামনে নির্বাচন, নির্বাচনকেন্দ্রিক আমাদের কর্মসূচি চলছে। সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ দিতে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসব। আমরা খুব দ্রুতই আসব। হাইকমান্ডের নির্দেশের অপেক্ষায় আছি। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল প্রস্তুত আছি। ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে, দাবি আদায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে অচিরেই ক্যাম্পাস থেকে আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে আমরা বিজয় নিয়েই ঘরে ফিরব ইনশা আল্লাহ।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ক্যাম্পাস থেকে হারিয়ে যায়নি। হামলা-মামলার শিকার হয়েও আমরা নিয়মিত পদচারণা অব্যাহত রেখেছি। আগামীতেও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এই ক্যাম্পাসে সরব অবস্থানে থাকবে। ছাত্রলীগের দখলদারিত্বের অবসান ঘটবে শিগগিরই। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা পেলে আমরা চূড়ান্ত কর্মসূচিতে যাব। আমরা প্রস্তুত ইনশা আল্লাহ।’
এদিকে ক্যাম্পাস দখল ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করলে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভোররাতে এসে কেউ যদি দেয়াল লিখন করে, এটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলে আমরা মনে করি না। আদালত কর্তৃক ঘোষিত অপরাধীকে তারা দেশনায়ক বলছে, তাদের কর্মকাণ্ড দ্বারা বোঝা যায় তারা কতটা অথর্ব। বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানচর্চার একটি কেন্দ্র, এখানে দখলদারিত্বের কোনো বিষয় নেই। যেটি ছাত্রদল বলার চেষ্টা করছে দখল করবে, এই চিন্তা-ভাবনা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক যায় না। এসবে আমরা বিশ্বাস করি না। শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য যা যা করার দরকার, আমরা তা করতে রাজি আছি। ক্যাম্পাসকে কেউ অস্থিতিশীল করতে চাইলে তা প্রতিহত করা হবে।’
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনে রদবদলের সুযোগ নেই সরকারের। তাই এর আগেই নির্বাচনী প্রশাসনে ধাপে ধাপে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রশাসনে চলছে পদোন্নতি ও রদবদল। ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রশাসন সাজাতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে বদলি-পদায়ন হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদে বড় পদোন্নতি হয়েছে। নির্বাচনের আগে অবসরে যাওয়া কয়েকজন সচিবেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২০ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১৮ জন ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিসিএসের ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৫ সালে, ২৫তম ব্যাচ ২০০৬ সালে এবং ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৮ সালে।
জানা যায়, নির্বাচনের সময় ডিসিরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকেন। তাদের যে কোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে বাতিলের ক্ষমতাও থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও থাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা তথা ডিসির অধীনে। নির্বাচনের সময় সমন্বয়কারীর ভূমিকায়ও থাকেন ডিসিরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন তাদের দুটি ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে। আর সে সময় বিসিএস নিয়ে বেশ বিতর্ক ছিল। বিসিএসে ছিল নানা ধরনের তদবির। ২৪ ও ২৫তম ব্যাচ দুটি বিএনপির সময়ে নিয়োগ পেলেও ২৭তম ব্যাচ নিয়োগ পেয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। কারণ বিএনপির শেষ সময়ে ২৭তম ব্যাচের নিয়োগে বড় ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকায় তা বাতিল হয়। পরে ফের পরীক্ষা নিয়ে ২০০৮ সালে এ ব্যাচের নিয়োগ দেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ছিল ২৪তম ব্যাচের নিয়োগ নিয়ে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২৪তম ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডিসির পদ থেকে তুলে আনা হতে পারে। নির্বাচনের সময় যারা ডিসির দায়িত্বে থাকবেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তাদের সবার ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে পরিবার ও নিকট আত্মীয়স্বজনদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো যাচাই করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে ছাত্রজীবনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে আর ডিসির পদে রাখা হবে না।
এ ছাড়া নির্বাচনে অন্যতম ভূমিকা পালন করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। বর্তমানে ৩৩, ৩৪ ও ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা রয়েছেন ইউএনও পদে, যারা আসন্ন নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এখন ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ইউএনওর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে; এ ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারের ২৯১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।
জানতে চাইলে সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ইকরাম আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পিএসসির নিয়োগ পরীক্ষা হয় যোগ্যতা, মেধা ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে। সেখানে ছাত্রজীবনে কে কোন পার্টি করেছিলেন, কোন দল ক্ষমতায় আছে তা বিবেচনা করা হয় না। বিসিএস কর্মকর্তাদের যে ফাউন্ডেশন ট্রেনিং হয়, তাতে তাকে একজন অফিসার হিসেবেই গড়ে তোলা হয়। এরপর এসিআর, সুপিরিয়রের মতামত, সুনাম, দক্ষতা, যোগ্যতার ভিত্তিতেই একজন কর্মকর্তাকে উচ্চতর পদে দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তবে সরকার যে দল পরিচালনা করে তাদের কিছু নীতিমালা ও উদ্দেশ্য থাকে। কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সরকারের নেওয়া বৈধ ও জনকল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা। তিনি প্রলুব্ধ হবেন না, নিরপেক্ষ থেকে তার দায়িত্ব পালন করবেন। যদি কোনো নির্বাচনী দায়িত্বও দেওয়া হয়, সেটাও নিরপেক্ষভাবে তিনি পালন করবেন।’
গত মে মাসে অতিরিক্ত সচিব পদে ১১৪ জনের পদোন্নতি হয়। জুলাই মাসে পাঁচ বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার দেওয়া হয়েছে। গত জুলাই মাসেই বদলি ও নতুন মিলিয়ে ৩০টি জেলায় ডিসি পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উপসচিব পদমর্যাদার এই ডিসি পদে এবারও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর আটজন পিএসকে পদায়ন দেওয়া হয়েছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ২২১ কর্মকর্তা। এ পদোন্নতিতে মূল বিবেচনায় এসেছে ২২তম ব্যাচ। বর্তমানে যুগ্ম সচিবের স্থায়ী পদ ৫০২টি। এর বিপরীতে পদোন্নতি পাওয়ার পর যুগ্ম সচিবের সংখ্যা হলো ৯৪৬ জন। এর আগে সর্বশেষ গত বছর ২ নভেম্বর ১৭৫ জন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। আর গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২৭০ জন সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
জানা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই অন্তত ১০ জন সচিবের স্বাভাবিক অবসরে যাওয়ার কথা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন আগামী ১৩ অক্টোবর অবসরে যেতে পারেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান ১৪ সেপ্টেম্বর, সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আবদুস সালামের ২৬ সেপ্টেম্বর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে আবদুস সালামের চাকরি এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ৯ অক্টোবর, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দীক ৩০ অক্টোবর, ইআরডি সচিব শরিফা খান ২৪ নভেম্বর, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহসানে এলাহী ২৫ নভেম্বর এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের সিনিয়র সচিব কামাল হোসেন ২৯ নভেম্বর অবসরে যাবেন। ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোছাম্মৎ নাসিমা বেগম এবং ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুল ইসলাম। এ ১০ জনের মধ্যে কয়েকজন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন।
গত কয়েক বছরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং মুখ্য সচিব পদে যারা ছিলেন, তাদের অনেকেই স্বাভাবিক অবসরের মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। সর্বশেষ সাবেক চার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মধ্যে একমাত্র কবির বিন আনোয়ার ছাড়া বাকি তিনজনই স্বাভাবিক মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। তারা হলেন মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা, মোহাম্মদ শফিউল আলম ও খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তাই স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিনের মধ্যে অন্যতম ভিটামিন ডি। অতি প্রয়োজনীয় এই ভিটামিনের প্রধান উৎস সূর্যের আলো। তবে আমাদের ব্যস্ত জীবনে রোদ পোহানের সময় কই। অফিস থেকে বাসা, বাসা থেকে অফিস। এসির ভেতর থাকতে থাকতে শরীরে তৈরি হচ্ছে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি। ফলে কম বয়সে হাড়ক্ষয়, পিঠে-কাঁধে ব্যথা, চুল ঝরে যাওয়া, ঘা শুকোতে দেরি হওয়া, হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা যায়।
রেগুলার অফিসযাত্রীরা ভিটামিন ডি-এর অভাবে সবচেয়ে বেশি ভোগে। এরা রোদে বসার সময় পান না। যে কারণে এদের মধ্যে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি খুব বেশি দেখা যায়। ৫০ বছরের বেশি বয়সের পর শরীরে অনেক ধরনের ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দেয়, যার মধ্যে ভিটামিন ডিও একটি। এই বয়সে শরীর সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি তৈরি করতে সক্ষম হয় না। যে কারণে এই বয়সের মানুষের শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণ করতে হয় অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমে। এনআইএইচ-এর একটি রিপোর্ট অনুসারে, যাদের বডি মাস ইনডেক্স ৩০-এর বেশি বা তাদের শরীরে চর্বির পরিমাণ বেশি তারাও ভিটামিন ডি-এর অভাবের সম্মুখীন হতে পারেন।
কীভাবে বাড়াবেন ভিটামিন ডি?
মাশরুম
মাশরুমে ভিটামিন ডি থাকে। মাশরুম ইউভি রশ্মির সংস্পর্শে এলে ভিটামিন ডি তৈরি করে। এটি খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। কম তেলে রান্না করলে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
সি ফুড
কিছু মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকে। রিপোর্ট অনুযায়ী, স্যামন, টুনা এবং ম্যাকেরেল মাছে ভিটামিন ডি থাকে। যদি আমিষভোজী হন তবে আপনি তাদের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
দুধ
এছাড়াও দুধে অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এতে ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি বেশি পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে। বিশেষ করে গরুর দুধে, এটা স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। এর পাশাপাশি সহজে হজম হয়। দই দইয়ে ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকে। দই হাড় মজবুত করে এবং হার্ট ভাল রাখে।
ভিটামিন ডি পাওয়ার সেরা উপায় কি?
রিপোর্ট অনুযায়ী, ভিটামিন ডি পাওয়ার সবচেয়ে ভালো উৎস হল চর্বিযুক্ত মাছ এবং মাছের তেল। ডিমের কুসুম এবং পনিরে অল্প পরিমাণে পাওয়া যায়। উপরন্তু, কিছু মাশরুমে কিছু ভিটামিন ডি২ থাকে।
ভিটামিন ডি এর জন্য রোদে বসার সঠিক সময় কোনটি?
অনেক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে সকাল ও বিকেল হল রোদে বসার সেরা সময়। দুপুরে ইউভিবি রশ্মি সবচেয়ে শক্তিশালী হয়। এর মানে হল আপনি কম সময়ে বেশি ভিটামিন ডি পাবেন। কমপক্ষে ১০ মিনিট এবং সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট রোদে বসলে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।