
২০১৭ সালের ৩০ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আব্দুল জব্বার। তার জন্ম ১৯৩৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ায়। তিনি ১৯৫৬ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। গানের প্রতি ঝোঁক ছোটবেলা থেকেই। তিনি সংগীতের তালিম গ্রহণ করেন ওস্তাদ ওসমান গণি ও ওস্তাদ লুৎফুল হকের কাছে। ১৯৫৮ সাল থেকে তিনি তৎকালীন পাকিস্তান বেতারে শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৬২ সালে তিনি প্রথম চলচ্চিত্রের জন্য গান করেন। ১৯৬৪ সাল থেকে বিটিভির নিয়মিত গায়ক হিসেবে পরিচিতি পান। ১৯৬৮ সালে ‘এতটুকু আশা’ ছবিতে সত্য সাহার সুরে তার গাওয়া ‘তুমি কি দেখেছো কভু’ গানটি জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং পরে ‘সারেং বৌ’ চলচ্চিত্রে ‘ওরে নীল দরিয়া’ গানটি শ্রোতাদের মন জয় করে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ও প্রেরণা জোগাতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে অসংখ্য গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। সে সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ ও ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’সহ অনেক প্রেরণাদায়ী দেশাত্মবোধক গানের গায়ক হিসেবে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। তার গাওয়া ‘তুমি কি দেখেছো কভু জীবনের পরাজয়’সহ মোট তিনটি গান ২০০৬ সালে মার্চ মাসজুড়ে অনুষ্ঠিত বিবিসি বাংলার শ্রোতাদের বিচারে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ২০টি বাংলা গানের তালিকায় স্থান করে নেয়। ২০১৭ সালে তার প্রথম মৌলিক গানের অ্যালবাম ‘কোথায় আমার নীল দরিয়া’ মুক্তি পায়। রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কারসহ নানা পুরস্কারে তিনি ভূষিত হন।
বঙ্গভূমি এখন বাহাদুরির ও চাটুকারিতার। এখানে হাতি, পাখি, নদী, বন, কোনো কিছুই নিরাপদে নেই, সবচেয়ে কম নিরাপদে আছে মানুষ। বাংলাদেশের বাহাদুরি এখন মানুষকে রক্ষা করাতে নয়, অবমাননা ও হত্যা করাতে। চাটুকারিতা এ দেশে নতুন কোনো ব্যাপার নয়, কিন্তু এখন প্রকাশ্যে, গণমাধ্যমের সাহায্যে, যে ধরনের চাটুকারিতা চলছে তেমনটা আগে কখনো দেখা যায়নি। খ্যাতিবান, বিদ্বান, বুদ্ধিমান লোকেরা এ কাজ করেন লজ্জাবিহীনভাবে। চাটুকারিতা পরিণত হয়েছে বাহাদুরিতে। চাটুকারিতা চলে সরকারের এবং চলে সরকার যে-ব্যবস্থার কারণে টিকে থাকে সেই ব্যবস্থার। মোটরসাইকেল তাকে একটা কিনে দেওয়া হয়েছিল, আরও দামি একটা চাই, না পাওয়াতে কিশোর পুত্রটি তার বাবা ও মায়ের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। দগ্ধ বাবা মারা গেছেন, মা যন্ত্রণায় কাঁদছেন। এ রকম খবর কোনো প্রতিক্রিয়াই সৃষ্টি করে বলে মনে হয় না। ধরে নেওয়া হয় এটা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। কেননা প্রতিনিয়ত এ রকমের ঘটনা ঘটছে, পরেরটির ভয়াবহতা ছাড়িয়ে যাচ্ছে আগেরটিকে। বাবা মারছে মাকে, মা মেরে ফেলছে ছেলেকে। সহিংসতা এখন ঘরে ঘরে। প্রতিক্রিয়া জানাবার ফুরসৎ নাই।
কেবল যে হত্যা তা তো নয়, আত্মহত্যার সংখ্যাও বাড়ছে। আত্মহত্যাকারীদের কাপুরুষ বলার রেওয়াজ আছে। তারা পরাজিত, জীবনের ভার বহন করতে অক্ষম, তাই নিজেই নিজেকে হত্যা করছে, এ ব্যাখ্যা মোটেই অযথার্থ নয়। কিন্তু আত্মহত্যা করতে সাহসও লাগে, কাজটা সহজ নয়, এবং মানুষের জীবন দুটি নয়, একটিই। বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা শুরু হয়েছিল, এই তৎপরতার সবচেয়ে বিপজ্জনক দিকটা হলো এই যে, জঙ্গিরা আত্মহত্যায় ভয় পায় না। ওইখানে তারা খুবই সাহসী। আর যে লোক মরতে সাহস করে তাকে বাঁচায় কে, তার হাত থেকে বাঁচেই বা কে?
তবে এটা ঠিক যে, আত্মহত্যার মূল কারণ হলো হতাশা। দেশে আত্মহত্যার সংখ্যা যে বাড়ছে তার কারণ হতাশা বাড়ছে। হতাশ যারা তারা সবাই আত্মহত্যা করে না, অধিকাংশই জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে দুলতে থাকে, ঝিমায়, বোঝা হয়ে পড়ে নিজের কাছে, এবং সংসারের কাছে। দুঃসহ যন্ত্রণায় যারা স্থির থাকতে পারে না তারাই দুঃসাহসী পদক্ষেপটা নিয়ে ফেলে, শেষ করে দেয় নিজেকেই। এ রকম লোকের সংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়ছে। তুলনায় মেয়েরাই ওই পথে বেশি সংখ্যায় যায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক যে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছিল এবং চিরকুটে লিখে রেখে গেছিল যে, তার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়, সে তো অভিযুক্ত করে রেখে গেল তার সব উত্ত্যক্তকারীদের, যাদের মধ্যে অতি আপন বলে যার ওপর সে ভরসা করেছিল সেও আছে। লোকটিকে সে বিয়ে করেছিল ভালোবেসে। মেয়েটি তো আকাশের সঙ্গে যুদ্ধ করছিল না। আত্মহত্যা করছে এখন বাংলাদেশের কৃষকও। জীবনের বোঝা তাদের অনেকের কাছেই এখন ভয়াবহ এক যন্ত্রণা। পরিসংখ্যান সব খবর সঠিকভাবে দেয় না, তবু যা দিচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে আগে যেখানে বছরে গড়পড়তা দশ হাজার মানুষ নিজের প্রাণ নিজের হাতে শেষ করে দিয়েছে, সেখানে গত বছরে তাদের সংখ্যা ছিল পনেরো হাজার। আগামী বছরে এ সংখ্যা বাড়বে না, এমন মনে করার যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ নেই।
মার খাচ্ছে প্রকৃতিও। পৃথিবীজুড়ে পুঁজিবাদী কুঠার প্রকৃতিকে নিত্যদিন রক্তাক্ত করছে। মুনাফার লোভে, মুনাফার খোঁজে। প্রকৃতিরও প্রাণ আছে, সে মরে যেতে প্রস্তুত নয়, ঘা দিলে সেও ফিরতি ঘা দিতে চায়, দিচ্ছেও। ধরণী তপ্ত হয়েছে, সমুদ্রের পানির স্তর ওপরে উঠছে। খরা, প্লাবন, টাইফুন সবই দেখা দিয়েছে মারাত্মক আকারে। বিপন্ন প্রকৃতি সবাইকেই আঘাত করতে চায়, কিন্তু তার সেই আঘাতে গরিব মানুষই মারা পড়ে সবার আগে। মারা পড়ে গরিব দেশও। বাংলাদেশে প্রকৃতি প্রতিশোধ গ্রহণের অভিনব কিছু প্রকাশ দেখা যাচ্ছে। বৃক্ষমানব ও বৃক্ষশিশুর খবর পাওয়া গেছে। বৃক্ষ উৎপাটিত হচ্ছে, উৎপাটিত হয়ে সে বুঝি ঢুকে পড়ছে এমন কি মানুষের দেহের ভেতরও। প্রতিশোধ, নাকি আশ্রয়ানুসন্ধান? ওদিকে জন্মবৃদ্ধ মানুষেরও সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। আমরা সাধারণত অতিদ্রুতই বৃদ্ধ হই, এবং বৃদ্ধ অবস্থায় শিশুর মতো আচরণ করি। এটা ঐতিহাসিক সত্য। কিন্তু শিশু জন্মাচ্ছে বার্ধক্যের লক্ষণ নিয়ে অথবা চার বছর বয়সের শিশু ষাট বছরের বৃদ্ধের অবয়ব পেয়ে যাচ্ছে এটা নতুন ঘটনা। এ কী সমগ্র দেশের ভেতরের ক্লান্তির প্রতীকী প্রকাশ? বাংলাদেশে তারুণ্য ভীষণভাবে বিপদগ্রস্ত এবং বার্ধক্য মানসিকভাবে সন্তুষ্ট থাকছে না, শারীরিক রূপ পরিগ্রহ করছে, জন্মবৃদ্ধের আগমন হয়তো এই বাস্তবতারই প্রতীক। বায়ুদূষণের কারণে এক বছরে মারা গেছে সাঁইত্রিশ হাজার মানুষ। বজ্রপাত আমাদের জন্য নতুন কোনো ঘটনা নয়; বজ্রপাতকে অভিশাপ হিসেবেই দেখা হতো। তোমার মাথায় ঠাটা পড়–ক, এমন কামনা শত্রুর জন্য করাটা নিয়ম ছিল আমাদের সমাজে; এখন প্রকৃতিই ঠাটা ফেলছে, শোধ নিচ্ছে মানুষের ওপর। এই গরিব দেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। একদিনেই সাতাশজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিল, সেদিন সড়ক দুর্ঘটনাতেও অতজন প্রাণ হারায়নি। মারা গেছে যারা তারা সবাই গরিব মানুষ, আশ্রয়হীন, অথবা বিপজ্জনক স্থানে বসবাসকারী। প্রকৃতি শোধ নিচ্ছে, তবে প্রকৃতিও দেখা যাচ্ছে ধনীদের সমীহ করে, অথবা বাধ্য হয় সমীহ করতে। প্রকৃতিও ধনীদের মতোই, গরিবের ওপরই চোটপাট করে বেশি বেশি করে। গরিব দেশের গরিবদের মারে সে অতিসহজে। গরিবের বিপদ চতুর্দিকে।
উন্নতি তো হচ্ছে। অবশ্যই। কিন্তু সে উন্নতির চরিত্রটা অত্যন্ত বিপজ্জনক। সেটা প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধির মতোই, পাবলিকের রেলওয়েকে যে কোণঠাসা করতে ভালোবাসে। এই উন্নতি হাই-রাইজ বিল্ডিংয়ের, চারদিকে যার দুঃসহ ট্র্যাফিক জ্যাম; পথ অবরুদ্ধ, যেমন প্রবেশের তেমনি নির্গমনের। ঢাকার মেয়রদের একজন ঘোষণা দিয়েছিলেন ফুটপাত থেকে হকাররা উঠে না গেলে উন্নয়নের স্বার্থে তাদের ওপর দিয়ে তিনি বুলডোজার চালিয়ে দেবেন। এখানকার সব উন্নতিই ওই বুলডোজার-মার্কা। পুঁজিপাট্টা হারিয়ে সন্ত্রস্ত হকাররা কাঁদতে কাঁদতে উঠে যাবে বুঝলাম, কিন্তু যাবেটা কোথায়? খাবে কী? সে চিন্তা অন্য কারও নয়, হকারদের নিজেদের ছাড়া।
উন্নতির অন্তর্নিহিত দর্শনটা পুঁজিবাদী, এই দর্শনের বাস্তবায়নে যত উন্নতি হবে তত বাড়বে বৈষম্য। হকার উচ্ছেদ হবে, দেখা দেবে শপিংমল, যেখানে গরিব মানুষ কেনাকাটা দূরের কথা, ঢুকতেই সাহস পাবে না। বলা হচ্ছে ভিক্ষুক উচ্ছেদ করা চাই, কিন্তু মানুষ কেন ভিক্ষুক হয় সেটা ভাবা হচ্ছে না। ধনীর উন্নতি যে গরিবের ভিক্ষাবৃত্তির কারণ সেটা তো মিথ্যা নয়। তাহলে? তা ছাড়া আমাদের ধনীরাও তো মনে মনে বড় বড় ভিক্ষুক, তারা বিদেশের মুখাপেক্ষী, ক্ষণে ক্ষণে বিদেশে যায়, পারলে স্থায়ী বসতি গড়ে। রাষ্ট্রের মালিকরা হাত পেতে বসে থাকেন বিদেশি সাহায্যের আশায়। শাসক শ্রেণিকে ভরসা করতে হয় বিদেশিদের সমর্থনের ওপর, বিনিময়ে তারা দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেন প্রতিযোগিতামূলকভাবে।
শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নতির দৃশ্যমান ছবি পাওয়া যাবে। শিক্ষিতের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু গুণ? শিক্ষামন্ত্রী জিপিএ ৫-এর বৃদ্ধি নিয়ে প্রতিবছর সন্তোষ প্রকাশ করে থাকেন, কিন্তু সম্প্রতি দেখা গেল তিনিও সংশয়ে পড়েছেন, বলছেন শুধু পরিমাণে কুলাবে না গুণগত মানও বৃদ্ধি করা চাই। মান কিন্তু বাড়েনি, ধারণা করা হয় যে সেটা নিম্নগামী। ধারণা নয়, প্রত্যক্ষ প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে। এইচএসসিতে সেরা ফল করেছে যারা তারাই কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার মতো বুকের পাটা রাখে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও সামাজিকবিজ্ঞান শাখায় এ বছর ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিয়েছিল ৩৩ হাজার, পাস করেছে ৩ হাজার, ৩০ হাজারই ফেল। শিক্ষামন্ত্রীর সেটা অজানা থাকার কথা নয়।
না, মানবৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। শিক্ষার কেন্দ্রে থাকেন শিক্ষক। উপযুক্ত শিক্ষক যে আমরা পাচ্ছি না সেটা বলাই বাহুল্য। শিক্ষকের নিয়োগের ক্ষেত্রে ঘুষ ও দলীয় পক্ষপাতিত্বের প্রমাণিত অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়োগের নতুন এক পদ্ধতি চালু করা হবে বলে শোনা যাচ্ছে। পদ-প্রার্থীদের নাকি লিখিত পরীক্ষা দিতে হবে ও সংগ্রহ করতে হবে পুলিশের সার্টিফিকেট। যার সরল অর্থ দাঁড়াবে মেধাবীদের শিক্ষক হতে নিরুৎসাহিতকরণ। মেধাবান ও পরীক্ষিতদের জন্য পুনরায় লিখিত পরীক্ষা অমর্যাদার ব্যাপার। আর পুলিশের রিপোর্ট তো ভীষণরকমের বিপজ্জনক। লিখিত পরীক্ষার ব্যবস্থা কোনোকালেই ছিল না। গোয়েন্দা রিপোর্ট পাকিস্তান আমলে চালু ছিল, এবং ওই ধরনের কার্যক্রম চালু থাকাটা ছিল অন্যতম কারণ, যে জন্য ওই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আমাদের বিক্ষোভ গড়ে উঠেছিল এবং রাষ্ট্রটি ভেঙে আমরা বের হয়ে এসেছি। এখন চেষ্টা চলছে পুরনো ব্যবস্থাকে ফেরত আনার। এই পুলিশি কার্যক্রম দুর্নীতি ও উৎপীড়ন উভয়কেই প্রসারিত করে দেবে। আমরা আশা করব সিদ্ধান্তটি বাতিল করা হবে, কিন্তু ভরসা করি না, কারণ প্রতিবাদকারীদের সংখ্যা ক্রমে কমছে, তদবিপরীতে সংখ্যা বাড়ছে চাটুকারদের।
বিশ্ববিদ্যালয় তো পরে আসবে, শিক্ষার ভিত্তিটাই তো দুর্বল। প্রাথমিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না, মাধ্যমিক শিক্ষা অত্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত। শিক্ষকদের মান এবং ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত উন্নত না হলে শিক্ষার মান বাড়বে এ রকম ভাবার কোনো কারণই নেই। নিয়োগ সুষ্ঠু নয়, নিয়োগের পরে প্রশিক্ষণ নেই। জবাবদিহিতা উঠে গেছে। প্রতিবেদন বলছে মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক-ছাত্র অনুপাতের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার ভেতর বাংলাদেশের অবস্থান সবচেয়ে খারাপ। বাজেটে শিক্ষার জন্য বরাদ্দ কোনো মতেই বাড়ানো যাচ্ছে না।
লেখক : ইমেরিটাস অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
দেশের উত্তর জনপদের অন্যতম শিল্পনগরী বগুড়া। ঢাকা ও চট্টগ্রামের পরই বগুড়াকে শিল্পের বিকাশে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এর যথেষ্ট কারণও আছে। একটি অঞ্চল শিল্পোন্নত হতে হলে যে সুযোগ-সুবিধা আর সম্ভাবনা দরকার তার সবটাই আছে উত্তরের এই প্রবেশদ্বারে। তারপরও কেন জানি রহস্যজনক ভাবে দিনের পর দিন অবহেলিত এই জনপদ। তবে ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক দিয়ে বগুড়ার মানুষকে কিন্তু সৌভাগ্যবানও বলা যেতে পারে। করতোয়া, নাগর, বাঙ্গালী আর যমুনার মতো বড় ৪টি নদী বয়ে গেছে বগুড়ার বুক চিরে। মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এরপরও কেন অবহেলিত এই পুন্ড্রনগর?
কারণটা হলো এ অঞ্চলের মানুষ ৪টি নদী পেলেও কোনোটিরই সঠিক ব্যবহার হয়নি। আজকের প্রবন্ধে যমুনা নিয়ে বলতে চাই। ২০২১ সালের ১২ আগস্ট বহু প্রত্যাশিত বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও জামালপুরের মাদারগঞ্জের সঙ্গে যমুনা নদীতে চালু হয় ফেরি সার্ভিস। সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলা ইউনিয়নের জামথল ঘাটে প্রধান অতিথি হিসেবে ফেরি সার্ভিসের উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তখন যমুনাপাড়ে ঢল নেমেছিল অসংখ্য মানুষের। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন ঠিক কতটা প্রাণের দাবি ছিল যমুনা নদীতে চালু হওয়া ফেরি সার্ভিস।
এই সার্ভিসের ফলে নৌপথ হয়ে ঢাকার সঙ্গে বগুড়ার দূরত্ব কমেছিল ৮০ থেকে ৮৫ কিলোমিটার। উদ্বোধনী বক্তব্যে খালিদ মাহমুদ বলেছিলেন, ‘এটি বাস্তবায়িত হলে যমুনাপাড়ের মানুষের জীবনমান পাল্টে যাবে।’ কিন্তু বাস্তবতা হলো সেটি বাস্তবায়নও হয়নি, যমুনাপাড়ের মানুষের জীবনমানও পাল্টায়নি।
কারণ পুরনো ইঞ্জিনের কারণে ২৩ আগস্ট ফেরিটি প্রথম দফায় বিকল হয়। পরে নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড থেকে কারিগরি দল ইঞ্জিন সারানোর পর ৩১ আগস্ট এটি পুনরায় চালু হয়। এক মাস না যেতেই ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রী নিয়ে মাঝনদীতে আবার বিকল হয় সি-ট্রাকটি। পরবর্তী সময়ে এই পথের সি-ট্রাকটি সরিয়ে নেওয়া হয়। এতে প্রতিনিয়ত অতিরিক্ত টাকা খরচ করে নৌকায় চলাচল করতে গিয়ে যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ফেরি চলাচল করলে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি কার, মাইক্রোবাস, মিনি ট্রাকসহ বিভিন্ন শিল্পজাত পণ্য ও কাঁচামাল আনা-নেওয়ার দূরত্ব, সময় আর অর্থ সবই হ্রাস পেত। ফেরিতে ৪৫ মিনিটে যাত্রীরা নদী পার হতে পারত। বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ আশপাশের জেলার সঙ্গে বগুড়া জেলার যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হতো।
নদীর নাব্য সংকটের কারণে একেবারে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সম্ভাবনা জাগানো ফেরিটি। সেই সঙ্গে যেন মুখ থুবড়ে পড়ে উত্তরের লাখ লাখ মানুষের নৌপথে যাতায়াতের স্বপ্ন। তবে এখানেই শেষ নয়। সুযোগ, আর সম্ভাবনা এখনো আছে। নদীর নাব্য সংকট কাটাতে পারলে হয়তো আবারও হাসি ফোটানো সম্ভব যমুনাপাড়ের মানুষদের। আর সেটি সম্ভব হলে এ অঞ্চলের মানুষের উৎপাদিত কৃষিপণ্য, ইঞ্জিনিয়ারিং সামগ্রীসহ অন্যান্য পণ্য স্বল্প সময় ও কম খরচে রাজধানীসহ আশপাশের জেলায় নিতে পারবেন। বঙ্গবন্ধু সেতু পথে যেতে না হওয়ায় রাজধানীর সঙ্গে প্রায় ৮০ কিলোমিটার পথ কমবে।
উত্তরে নদী ঘাট নিয়ে আমাদের রয়েছে সোনালি অতিত। ১৯১২ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে চালু হয়েছিল বাহাদুরাবাদ রেলঘাট। তখন ফেরিতে করে ট্রেন যাতায়াত করত। শুধু দেশে নয়, ইতিহাসের সাক্ষী এই ফেরি ঘাটটির পরিচিতি ছিল বিশ্বজুড়েই। বাহাদুরাবাদের বিশ্বখ্যাতি এনে দিয়েছিল একমাত্র এই ফেরি ঘাটটিই। পরবর্তী সময়ে ১৯৩৮ সালে তিস্তামুখ থেকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ রেলঘাট পর্যন্ত ফেরি চলাচল শুরু হয়। বাহাদুরাবাদ রেল ফেরিঘাট থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন ও মালবাহী ওয়াগন চলাচল করত রাজধানী ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলে। সে সময় উত্তরাঞ্চলের মানুষের দক্ষিণাঞ্চলের যাতায়াত প্রধান মাধ্যম ছিল ফেরি সার্ভিস।
১৯৮৮ সালে ভয়াবহ বন্যায় যমুনা নদীর গতি পরিবর্তন হয়। ফলে নাব্য সংকট দেখা দেয়। নাব্য সংকটে ফেরি সার্ভিসটি তিস্তামুখ ঘাট থেকে বালাসী ঘাটে স্থানান্তর করা হয়। বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের আগে দিনাজপুর থেকে রংপুর হয়ে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বালাসীঘাট পর্যন্ত ট্রেন চলাচল অব্যাহত ছিল। সান্তাহার, বগুড়া, বোনারপাড়া হয়েও ট্রেনের যাত্রীরা এই ঘাট পারাপার হতেন। এমন ইতিহাসসমৃদ্ধ যমুনা উত্তর জনপদে এখন কেন অবহেলিত?
আসুন যমুনাপাড়ের এক বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া শিক্ষার্থীর গল্প শোনাই। তানভির ইসলাম, বাড়ি সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটফুলবাড়ি এলাকায়। লেখাপড়া করছেন ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
তিনি বলেন, ‘নৌকায় ময়মনসিংহ যেতে ভয় লাগে। একবার গিয়েছিলাম। মাদারগঞ্জ নেমে জামালপুর হয়ে ভার্সিটিতে। তবে খুব ভয় লেগেছিল। তারপর থেকে ভার্সিটি যেতে এখন জেলা শহর বগুড়ার চারমাথা বাসস্ট্যান্ড থেকে ময়মনসিংহের গাড়িতে যাতায়াত করি। ফেরি চালু হলে সহজে বাড়ি আসা যাবে।’ তানভিরের মতো এ অঞ্চলের আরও অসংখ্য ছেলে-মেয়ে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। তাদের জন্য এই নৌ-বন্দর হতে পারে শুভকর সংবাদ।
উত্তরের এই নৌপথে ফেরি চালুর জন্য ফেরিঘাট নির্মাণ, সড়ক যোগাযোগ স্থাপন, নাব্য ফেরাতে নদী খননসহ নদী সংস্কার ও উন্নয়নকাজে প্রকল্প গ্রহণের প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে একটি কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল ইতিমধ্যে সারিয়াকান্দি ও মাদারগঞ্জ এলাকা পরিদর্শন করেছেন। জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের (আইডব্লিউএম) দুই সদস্যের প্রতিনিধিদল ফেরি চালুর সামাজিক ও অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা যাচাই করছেন।
এতকিছুর পরও ভাগ্য বদলাচ্ছে না উত্তর জনপদের মানুষের। সব জটিলতা কাটিয়ে আবারও নতুন করে চালু হবে যমুনার এই রুটে ফেরি চলাচল। শিল্পজাত পণ্য আর উত্তরাঞ্চলে উৎপাদিত কাঁচামাল দ্রুততম সময়ে নৌপথে ময়মনসিংহ হয়ে রাজধানী ঢাকায় পৌঁছে যাবে। আর সারিয়াকান্দি হয়ে উঠবে উত্তরের অন্যতম নৌ-বন্দর। এমনটাই প্রত্যাশা করি।
লেখক : কলাম লেখক
শুরুর দিকে ব্রিকস নিয়ে কেউ মাথা ঘামায়নি। তবে পশ্চিমা উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর বাইরে ব্রিকস বর্তমানে একটি শক্তিশালী জোটে পরিণত হয়েছে। এ জন্য পুরো বিশ্বের নজর জোহানেসবার্গে হওয়া জোটের ১৫তম শীর্ষ সম্মেলনের দিকে। দক্ষিণ আফ্রিকার কর্মকর্তারা জানান, এ পর্যন্ত ৪০টিরও বেশি দেশ এই জোটে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ২২টি দেশ যুক্ত হওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেছে। বাংলাদেশও এই জোটে যোগ দিতে পারে বলে এর আগে আভাস পাওয়া গেলেও নতুন ছয়টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই।
বিশ্ব পরিস্থিতি বর্তমান সভ্যতায় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রাজনীতির কৌশলও বদলাতে হচ্ছে। ইউক্রেন সংঘাতের পটভূমিতে এবং ব্রিকসের দুই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য চীন ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে বাইডেন প্রশাসনের দ্বৈত অবরোধ কৌশলের প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি বড়ই কঠিন। আশ্চর্যজনকভাবে সাম্প্রতিক অতীতে চীন এবং রাশিয়া তাদের বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গিতে নাটকীয় পরিবর্তন এনেছে এবং দৃঢ়ভাবে মার্কিন আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এ দুই বৃহৎ প্রতিবেশীর মধ্যে সীমাহীন বন্ধুত্ব ব্রিকসের অন্য সদস্যদের থেকে তাদের কিছুটা আলাদা করে দিয়েছে। এটি জোটের রসায়নকে প্রভাবিত না করে পারে না। যদিও তাদের বাস্তববাদ এবং বিচক্ষণতার দৌলতে যূথবদ্ধতার চেতনা অব্যাহত রয়েছে। বলে রাখা দরকার, অনেক দেশ ব্রিকসে যোগ দিতে চায় মূলত এ ধারণা থেকে যে, এটি বিশেষত ছোট এবং মাঝারি রাষ্ট্রগুলোর বিষয়ে অনেকটা ন্যায়সংগত এবং কম স্বার্থপর বিশ্ব শাসনকে সমর্থন করে। এটাকে ব্রিকসের এক প্রকার দ্বিতীয় স্তম্ভ বলেও আখ্যায়িত করা যায়। ভুলে যাওয়া উচিত নয়, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ব শাসনের সব অভিজ্ঞতা সাধারণ মূল্যবোধ এবং অংশীদারত্বমূলক স্বার্থের ভিত্তিতে তৈরি পশ্চিমা জোটের দখলে। তবে পরিহাসজনক হলো, এটি তাদের ব্লক মানসিকতায় আটকে দিয়েছে। তবে ব্রিকসের মধ্যে সমন্বয়হীনতা এবং বিশ্ব এজেন্ডা সেট করার ক্ষমতার অভাব রয়েছে, যা জি-৭ কয়েক দশক ধরে করে আসছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈশ্বিক পরিসরে যুক্তরাষ্ট্রের নানা উদ্যোগকে ব্রিকস যে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে, তাতে সন্দেহ নেই। বিশেষ করে ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, কূটনৈতিক দিক থেকে সেই নিষেধাজ্ঞাকে ব্রিকস প্রচ্ছন্নভাবে খাটো করেছে। এদিকে ডলারকে দুর্বল করে দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুদ্রার মর্যাদা থেকে তাকে নামিয়ে আনার চেষ্টাও ব্রিকস দেশগুলো করে যাচ্ছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
ব্রিকস-এর নেতারা জোহানেসবার্গে যে দুই দিনের সম্মেলনে করলেন, ওয়াশিংটনের নীতি নির্ধারকরা সন্দেহাতীতভাবে ওই নেতাদের কথা খুব মন দিয়ে শুনেছেন। ব্রিকসের সদস্য হতে আগ্রহী দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী ইরান, কিউবা ও ভেনেজুয়েলার মতো দেশও আছে। অর্থাৎ ব্রিকস দিন দিন যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে তাতে সন্দেহ নেই। এই অবস্থায় ওয়াশিংটন কী করবে এবং ব্রিকসের কাজকর্মের প্রতিক্রিয়া জানাবে, সেটি একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা দল উদীয়মান শক্তিদের জোটগুলো নিয়ে গবেষণা করে আসছে এবং তারা ব্রিকসের বিবর্তন প্রক্রিয়া ও তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে মূল্যায়ন করেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, চীনা আধিপত্যের অধীনে থাকা ব্রিকস নামের এই গ্রুপ মার্কিন স্বার্থবিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়নের নীতি অনুসরণ করে থাকে বলে সাধারণভাবে যা বলা হয়ে থাকে, তা আসলে ঠিক নয়। বরং ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো অভিন্ন উন্নয়ন স্বার্থ ও বহুমুখী বিশ্বব্যবস্থার অন্বেষণে পরস্পরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে যেখানে কোনো একক শক্তির আধিপত্য নেই। তবে এটি সত্য যে, ব্রিকসে জড়ো হওয়া দেশগুলো একটি শক্তিশালী গ্রুপে পরিণত হয়েছে, যা এখন ওয়াশিংটনের ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক লক্ষ্যকে চ্যালেঞ্জ করে বসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ আলজেরিয়া ও মিসরের মতো দেশগুলোও এখন ব্রিকসে যোগ দিতে চাইছে। সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ব্রিকস নীতি তৈরি করা উচিত, যা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিকে নতুন করে ভাবতে সাহায্য করতে পারে। ব্রিকস নীতি নিশ্চিত করতে পারবে যে যুক্তরাষ্ট্র এখন আর কোনো একক দেশের খবরদারির বিশ্বে নয়, বরং একটি বহুমুখী বিশ্বে অবস্থান করছে।
এবার ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন সম্পর্কে ভারতের মনোভাব কিছু বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এ জোট সম্পর্কে ভারতের ধারণার মধ্যে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ একটি ধারাবাহিকতা রয়েছে। ধারণাটি হলো, ব্রিকস বিশ্বের সংশোধনবাদী কিছু শক্তির একটি জোট, যারা বিদ্যমান বিশ্বব্যবস্থার ধ্বংস চায় না; শুধু চায় এ ব্যবস্থায় তাদেরও স্বার্থ অন্তর্ভুক্ত হোক। তবে সময় থেমে থাকেনি। এরই মধ্যে বিশ্বায়ন মুমূর্ষু হয়ে পড়েছে এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত যে ব্যবস্থা এর ভিত্তিস্বরূপ কাজ করে, তা আদৌ অন্তর্ভুক্তিমূলক নয়। একদিকে রাশিয়া ও চীন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার অধীনে রয়েছে, বিপরীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক সম্ভবত ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। উভয়ে মিলে প্রায় একটি জোট গঠন করেছে; ওয়াশিংটন যাকে শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারত্ব হিসেবে বর্ণনা করে। শুধু তা-ই নয়, চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এমনকি ভারতের জন্য সুবিধা বয়ে আনছে বললেও ভুল হবে না। চিপ শিল্পকে কেন্দ্র করে দুটি দেশের মধ্যে প্রক্রিয়াধীন ঘনিষ্ঠ বন্ধন এ ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ হতে পারে। বলা যেতে পারে, এর ফলে ভারতের জীবনযাত্রা আরও ভালো হয়ে উঠতে পারে। তাই দেশটির এলিটদের পক্ষে বিদ্যমান আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার ধ্বংস দূর স্থান, এর মৌলিক পুনর্গঠনের জন্যও আগ্রহী হওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। মূল কথা হলো, ব্রিকসের প্রভাব খাটিয়ে বিশ্বকে আরেকটু ন্যায়সংগত এবং স্থিতিশীল করা গেলে ভারত তাতেই সন্তুষ্ট থাকবে। আর এটি এক অবাস্তব স্বপ্নও নয়। কারণ ব্রিকস ইতিহাসের সঠিক দিকেই রয়েছে। এ জোটের সদস্যদের কারোরই এ দুর্নাম নেই যে, তাদের বিদ্যমান অর্থনৈতিক সুযোগ এবং রাজনৈতিক প্রভাব রক্ত ঝরিয়ে অর্জিত এবং কয়েক শতাব্দী ধরে সঞ্চিত এ সম্পদকে তারা আঞ্চলিক এবং বিশ্বব্যাপী আধিপত্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে পরিচালিত করেছে। ফলে ভারত তার উদ্দেশ্য পূরণে বেশ সাবলীল বোধ করছে।
কেন জাতীয় বৈশিষ্ট্য, মূল্যবোধ এবং স্বার্থের এত ভিন্নতা সত্ত্বেও ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মিসর ও সৌদি আরবের মতো দেশ জোটটির প্রতি আকর্ষণ বোধ করে? এ দেশগুলো এমনকি এটাও মনে করে যে পাশ্চাত্যের কাছ থেকে বিশ্বশাসনের ব্যানার হস্তগত করার সামর্থ্য এ জোট রাখে। অবশ্য এ ধরনের প্রত্যাশা অযৌক্তিক। কারণ এটা সমগ্র আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার একটি নির্দিষ্ট পূর্বনির্ধারিত দিকমুখী বিবর্তনের ওপর ভিত্তি করে রচিত, বাস্তবতা যাকে সমর্থন করে না। কাজেই এটা খুবই স্বাভাবিক যে আগামী দিনগুলোতে বিশ্বশাসনে ব্রিকস সত্যিকার অর্থে কতটা নির্ণায়ক হয়ে উঠতে পারে, ব্রাজিল বা ভারত তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে পারে। সত্যি করে বললে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্রিকসের পক্ষে অতীতের সংশোধনবাদী আচরণটুকুও বজায় রাখা সম্ভব কিনা, তা নিয়েই অনিশ্চয়তা রয়েছে। সমস্যাটি ইউক্রেন সংঘাতের ফলাফল সম্পর্কিত নয়। এ যুদ্ধে রাশিয়া হারতে পারে না এবং হারবেও না। তবে এখানে গো-হারা হারলেও রাশিয়ার প্রতিপক্ষ বিশ্ব সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করবে, এমন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
যদি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ব্রিকস প্রসারিত হয়, তাহলে জোটের ঐক্য দুর্বল হতে পারে এবং পরিণামে জোটটি ঢিলা ও অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের ক্ষেত্রে এটাই হয়েছিল। এখানে বেশ কিছু কারণ জড়িত এবং বিরোধাত্মক মনে হলেও একটি প্রধান কারণ হলো, ভারতের ব্রিকস অংশীদার চীনের অভূতপূর্ব উত্থান, যা দেশটির অভ্যন্তরে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। নিরাপত্তার সমস্যা সমাধানের জন্য ভারত যে কয়েকটি উপায় কার্যকর মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারত্ব হলো সেগুলোর একটি। তবে ভারতের ব্রিকস অংশীদাররা জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে একটি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি চালিয়ে যেতে সক্ষম বলে ভারত বিশ্বাস করতে পারে এবং তাদের তা করা উচিত। সব মিলিয়ে প্রশ্ন হলো- ব্রিকস কি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিকল্প অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক স্তম্ভ হিসেবে আবির্ভূত হবে? অথবা অভ্যন্তরীণ পার্থক্য কি গ্রুপটির সক্ষমতা সীমিত করতে পারে? বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্রিকস জোটের প্রভাব আরও বাড়তে পারে। তবে এটি নাটকীয়ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থার প্রতিস্থাপন করতে পারবে বলে মনে হয় না। যদিও বিদ্যমান বিশ্বব্যবস্থায় খ- খ- অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক বিকল্প তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তা ছাড়া এটি পশ্চিমের সঙ্গে আরও উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। যা হোক, এখন শুধুই অপেক্ষার পালা। বিশ্ব কি বিভক্তির দিকে যাচ্ছে, নাকি সমঝোতার মধ্য দিয়ে এগুচ্ছে?
লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক
শিশুর সুস্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিকাশের অন্যতম অপরিহার্য পূর্বশর্ত হিসেবে ধরা হয় স্বাস্থ্যকর পয়ঃনিষ্কাশন বা মৌলিক স্যানিটেশন ব্যবস্থাকে। অন্যদিকে করোনা মহামারীর অভিজ্ঞতার আলোকে স্যানিটেশনের গুরুত্বের কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অথচ, ইউনিসেফের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, দেশের অর্ধেকের বেশি প্রায় ৫২ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখনো মৌলিক স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়নি। এমনকি সরকার উদ্যোগ নিলেও তা অব্যবস্থাপনা, নির্মাণ ত্রুটি, অনিয়মের কারণে ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার দেশ রূপান্তরে ‘ওয়াশব্লক ফাঁকি যেতে হয় অন্যের বাড়ি’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির কথাই ধরা যাক। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মাদারীপুর জেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ৩০০ কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে চার শতাধিক স্কুলে স্বাস্থ্যসম্মত ওয়াশব্লক তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। প্রকল্প অনুযায়ী, প্রতিটি ওয়াশব্লক ২৬ ফুট দীর্ঘ ও ১৩ ফুট প্রস্থের হওয়ার কথা। আধুনিক ওয়াশব্লকে উন্নতমানের দুটি কমোড, চারটি সাধারণ প্যান, দুটি বেসিন, দুটি প্রস্রাবখানা, দুটি ফুটওয়াশ, সাবমারসিবল পাম্পসহ পানির ট্যাংক, সেপটিক ট্যাংক এবং ভেতরে পুরোটাই উন্নতমানের টাইলসযুক্ত হওয়ার কথা।
ছয় মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার টার্গেট নিয়ে ২০১২ সাল থেকে শুরু হয় প্রকল্প। কিছু স্কুলে কাজ শেষে ওয়াশব্লক হস্তান্তর করা হলেও সেগুলো নিয়ে রয়েছে নানান অভিযোগ। কয়েকটিতে নির্মাণকাজ এখনো চলছে। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ ওঠায় কাজ বন্ধ রেখেছেন কয়েকজন ঠিকাদার। অনেক ওয়াশব্লকে একটি বা দুটি ছাদ ঢালাই দিয়েই ঠিকাদার উধাও! স্কুল বন্ধ থাকলে নির্মাণাধীন এসব ওয়াশব্লক মাদকসেবীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ পরিস্থিতিতে এক নারী সহকারী শিক্ষক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি স্কুলে আসি সকাল ৮টার মধ্যে। সাড়ে ৪টা পর্যন্ত আমাদের স্কুলে থাকতে হয়। স্কুলে ওয়াশরুম থাকতেও আমাদের অন্যের বাড়িতে যেতে হয়। এতে তারা বিরক্ত হয়। এরপরও যেতে হয়।’ এ বাস্তবতায় ছেলে শিক্ষার্থীদের তুলনায় মেয়ে শিক্ষার্থীরা বেশি বিড়ম্বনায় পড়ে। অনেক মেয়ে এজন্য স্কুলে যাওয়াও কমিয়ে দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অন্যের বাড়িতে গেলে অনেক সময় তাদের কাছ থেকে নানান কথা শুনতে হয়। অনেক সময় তারা বাথরুম চেপে রাখে, বাসায় গিয়ে সারে।
ঠিকাদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাজের টাকার অঙ্ক থেকে ২ থেকে ৩ শতাংশ দিতে হয়। আবার বিল পাওয়ার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন ভিজিটে ও বিভিন্ন দিবসে তদারককারী কর্মকর্তাদের ‘খুশি’ করতে হয়। এসব কারণেই প্রকল্পে অনিয়ম বেশি হয়। এ ক্ষেত্রে উপজেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি, জনপ্রতিনিধি কেউই দায় এড়াতে পারেন না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১৫ সালের ২৩ জুন স্যানিটেশন ব্যবহার উন্নয়নে ১১টি নির্দেশনা জারি করে। শিক্ষার্থীর উপস্থিতি বাড়াতে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটিকে টয়লেট ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতের নির্দেশনাও দেওয়া হয়। অথচ তা মানা হয় না।
শুধু স্কুল-কলেজে নয়, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েও শৌচাগারের অবস্থা বেহাল। শিক্ষার্থীরা যদি দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখে তাহলে তাদের ইউরিন ইনফেকশন হতে পারে। এ ছাড়া কিডনি, মূত্রথলির পাশাপাশি জরায়ুর ইনফেশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পিরিয়ডকালীন সময়ে যদি টয়লেট ব্যবহার না করতে পারে তাহলে মেয়েরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারে। পয়োনিষ্কাশনের সঙ্গে শিশুর ডায়রিয়া ও খর্বকায়ত্বের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে ইউনিসেফ জানিয়েছে, অনুন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার কারণে ডায়রিয়া, অন্ত্রের প্রদাহ ও কৃমির মতো সমস্যা দেখা দেয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় মৌলিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার অনুপস্থিতির বড় একটি নিদর্শন হলো মাদারীপুরের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াশব্লক নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি। এ ব্যাপারে কর্র্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্যের বিষয়েও শিক্ষকদের নিজেদেরও সচেতন হতে হবে, পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মাঝেও সচেতনতা তুলে ধরতে হবে। শিক্ষার্থীদের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার বিষয়ে কোনো আপস করা যাবে না। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক শৌচাগার থাকতে হবে।
একদিকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানির দিকে হাঁটছে, অন্যদিকে রপ্তানি আয় স্বাভাবিক থাকলেও প্রবাসী আয় গত সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যেই বিদেশি ঋণে বড় ধাক্কার মুখে বাংলাদেশ। সরকারি কর্মকর্তাদের অদক্ষতায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না পারায় একদিকে বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমে গেছে, অন্যদিকে ঋণ পরিশোধের চাপ ক্রমেই বাড়ছে। আগস্ট শেষে ঋণ পরিশোধ করতে গত বছরের তুলনায় ৩৮ শতাংশ বেশি, বিপরীতে অর্থছাড় কম হয়েছে ১৭ শতাংশ। অর্থাৎ এ বছর ঋণ পাওয়ার চেয়ে ঋণ পরিশোধের চাপ গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমে দাঁড়িয়েছে ৭৩ কোটি ৯০ লাখ ডলারে। গত বছর একই সময়ে তা ছিল ৮৬ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমেছে ১৭ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের দুর্বলতার কারণে অর্থছাড় কমেছে। তাছাড়া ঋণ পরিশোধে আরও বেশি চাপের মুখে পড়তে হবে বলেও মনে করেন তারা।
ইআরডির হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছর আগস্ট শেষে সুদসহ ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ৪০ কোটি ডলার বা ৪ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। অথচ গত বছর একই সময়ে সুদসহ ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল ২৮ কোটি ৯৭ লাখ ডলার বা ২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ বছর বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ৩৮ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। ঋণ থেকে সুদকে আলাদা করলে দেখা যায়, সুদের চাপও দ্বিগুণ হয়েছে। আগস্ট শেষে সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ১৪ কোটি ৬৩ লাখ ডলার বা ১ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের শুরু থেকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে উন্নয়ন প্রকল্পে বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়েছে। উন্নয়ন কাজে ব্যবহৃত নির্মাণসামগ্রীর মূল্য ঊর্ধ্বমুখী ছিল। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও এলসি ওপেনিং নিয়ে অনেক প্রকল্পে জটিলতায় পড়তে হয়েছে। এ কারণে ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন হার কম ছিল। এ ছাড়া সক্ষমতার অভাবে এডিপিতে বৈদেশিক ঋণের বরাদ্দের ব্যবহার এর আগের অর্থবছরের চেয়ে কিছুটা কম ছিল।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগে আমরা বড় বড় প্রকল্পের যেসব ঋণ নিয়েছিলাম, অধিকাংশ ঋণের ম্যাচিউরিটি শেষ হয়েছে। এ ঋণগুলোর সুদহারও বেশি আবার গ্রেস পিরিয়ডও কম। গ্রেস পিরিয়ড কম অর্থাৎ আমাদের ঋণ পরিশোধের সময় দ্রুততর হয়ে আসছে।’
সংস্থাগুলো সুদের হার বাড়াচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটা সময় ছিল গ্রেস পিরিয়ড ১০ বছর দেওয়া হতো, এখন বেশিরভাগ ঋণেই ৫ বছর দেওয়া হয়। সুদের হার বাড়াচ্ছে ঋণদাতা সংস্থাগুলো। ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাংক ৫ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে কথা বলেছে, অথচ তারা আমাদের শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ ঋণ দিত।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঋণদাতা সংস্থাগুলোর মধ্যে এ দুই মাসে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে জাপান। এ দেশের কাছ থেকে ছাড় হয়েছে ৩০ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা এডিবির কাছ থেকে। এ সংস্থার কাছ থেকে ঋণের অর্থছাড় হয়েছে ১৫ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। তৃতীয় সর্বোচ্চ করেছে বিশ^ব্যাংক। এ সংস্থার আইডিএ প্রোগ্রামের অর্থছাড় হয়েছে ১৩ কোটি ২৯ লাখ ডলার।
চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে অর্থছাড় কম হলেও এ সময়ে ঋণের প্রতিশ্রুতি এসেছে প্রায় চারগুণ। আগস্ট শেষে অনুদানসহ বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি এসেছে ১১৪ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। গত বছর একই সময়ে প্রতিশ্রুতি ছিল ৩০ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের। এ সময়ে পাইপলাইনে থাকা সম্ভাব্য ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৭০ কোটি ডলারের বেশি।
ইআরডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সুদের হার বৃদ্ধির ফলে সরকারের বৈদেশিক ঋণের পরিশোধের চাপ বেড়েছে। এর ফলে ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।
ইআরডির হিসাবে, সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের সুদ ও আসল মিলিয়ে ২ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে। এর মধ্যে সুদ হিসাবে পরিশোধ করেছে ৯৩৫ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ডলার আর আসল পরিশোধ করেছে ১ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকার আসল ও সুদ বাবদ পরিশোধ করেছে ২ দশমিক ০১৭ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে আসল ১ দশমিক ৫২ বিলিয়ন এবং সুদ ৪৯১ মিলিয়ন ডলার।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (এসওএফআর) রেট বেড়ে ৫ শতাংশের বেশি হয়েছে। এ কারণে বাজারভিত্তিক ঋণের জন্য বাংলাদেশকে এখন ৫ শতাংশের বেশি সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের আগে এই রেট ছিল ১ শতাংশের কম।
ঋণের চাপ আরও বাড়বে বলে মনে করেন ড. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের ঋণ পরিশোধের চাপ আরও বাড়বে। যদিও এখন পর্যন্ত রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের শতাংশ হিসাবে বা জিডিপির শতাংশ হিসাবে এটি কম। কিন্তু তারপরও এটি ধীরে ধীরে বেড়ে এখন ৩৮ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। এমন সময়ে ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে যখন আমাদের রিজার্ভও চাপে আছে।’ তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের প্রতিবছর প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স মিলিয়ে আমাদের আয় ৮০ বিলিয়ন ডলার। এ অর্থ আবার আমদানির জন্য ব্যয় করতে হচ্ছে। রিজার্ভের নিরিখে এটি এখন অবশ্যই চাপ। যখন রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছিল তখন এ চাপ অনুভূত হয়নি। এখন রিজার্ভ কমতির দিকে আর ঋণ পরিশোধের দায়ভার বৃদ্ধির দিকে।’
বর্তমানে চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য সরকার যে ঋণ নিয়েছে, সেসব ঋণের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হলে ঋণ পরিশোধের চাপ আরও বাড়বে বলে ধারণা করছে ইআরডি।
সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রের প্রভাব পড়েছে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে। এডিপি বাস্তবায়নও চলছে ঢিমেতালে। অর্থ সংকট ছিল না, এমন প্রকল্পের অগ্রগতিও আশানুরূপ হয়নি। অগ্রাধিকার পাওয়া মেগা প্রকল্পের কাজও চলছে ঢিমেতালে। আর ব্যয় করতে না পারায় বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমে গেছে।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণের সিংহভাগই এসেছে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির মতো বড় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা থেকে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে পাইপলাইনে বৈদেশিক ঋণ রয়েছে ৪৪.৭ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এ ঋণের জন্য সরকার ইতিমধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে।
ফরিদপুরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। গত এক মাসে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ৪৫ ডেঙ্গু রোগীর। আর গত এক সপ্তাহেই মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। চলতি বছর সব মিলিয়ে জেলাটিতে এ নিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ৬১ জন। জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে এবার ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১২ হাজার ৬৩২। এর আগে এক বছরে এত আক্রান্ত আর মৃত্যু দেখেনি জেলাটি। রোগীর চাপে বিভিন্ন হাসপাতালে দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট। ডেঙ্গু রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছে হাসপাতালের বারান্দা ও সিঁড়িতে। তাতে ব্যাহত হচ্ছে অন্য রোগীদের চিকিৎসাসেবাও।
ডেঙ্গুতে জেলার এমন পরিস্থিতির জন্য সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে জেলা প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সব কার্যক্রম চলমান। সরকারি সংস্থাগুলোর পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিভিন্ন এলাকায় মশা নিধন কার্যক্রম চলছে। বিভিন্ন হাসপাতালে বিনামূল্যে স্যালাইন বিতরণ করা হচ্ছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হিসাবে এ বছর জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ১২ হাজার ৬৩২ রোগী। বর্তমানে ফরিদপুরে ভর্তি হয়ে ৮২৪ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে সেবা নিচ্ছে। ডেঙ্গু আক্রান্তের সঙ্গে যেন পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে মৃত্যুও। এদের অধিকাংশই নারী। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, গত এক মাসে এ জেলার হাসপাতালগুলোতে মৃত্যু হয়েছে ৪৫ জনের। এর মধ্যে ফরিদপুরের ৩১ এবং অন্যান্য জেলার ১৪ জন। আর এ বছর জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ৬১ জন। এর মধ্যে ফরিদপুরে ৪১ জন, বাকি ২০ জন রাজবাড়ী, মাগুরা, গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরের।
হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় শয্যা সংকটের পাশাপাশি তীব্র গরমে অনেকটাই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা। তবে ডেঙ্গু রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে দিন-রাত চেষ্টা করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সব স্কুল-কলেজ, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থানে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার আশা প্রকাশ করেন, শিগগিরই সবার সমন্বয়ে ডেঙ্গু মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
সিভিল সার্জন অফিস বলছে, বিভিন্ন হাসপাতালে দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে জেলার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ২ হাজারের অধিক রোগী। ফলে রোগীদের চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এনামুল হক বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের চিকিৎসকসহ সব বিভাগের কর্মীরা দিন-রাত কাজ করছেন। তবে শুধু সেবা দিলেই চলবে না। এর প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে মৃত্যুর মিছিল থামানো যাবে না। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শুধু ফরিদপুর নয়, এ অঞ্চলের ৫ থেকে ৬টি জেলার রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
ডেঙ্গু রোগীদের বিষয়ে জেলার সিভিল সার্জন ডা. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘গত এক মাসে এ জেলায় অতিরিক্ত ডেঙ্গু রোগীর চাপ লক্ষ করা গেছে। আমরা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জেলার সব হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে বলেছি। তিনি জানান, ফরিদপুরে এ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১২ হাজার ৬৩২ ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছে ১১ হাজার ৭৪৭ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ৬১ জনের। গতকাল সোমবার জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল ৮২৪ জন।
ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেছেন, মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ, নীতি ও দর্শন বর্তমান বিশ্বের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ বন্ধে মহাত্মা গান্ধীর শান্তি ও সম্প্রীতিকে ছড়িয়ে দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু ও মহাত্মা গান্ধী উভয়ে অসাম্প্রদায়িক নেতা। তাদের মতাদর্শ বিশ্বের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। গতকাল সোমবার দুপুরে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট ক্যাম্পাসে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক যুব পিস ক্যাম্পের শেষ দিন ও মহাত্মা গান্ধীর ১৫৫তম জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) জীবন কানাই দাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন নোয়াখালী-১ আসনের সাংসদ এইচ এম ইব্রাহিম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবিব, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয়া সেন, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুল আনম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক সহিদ উল্যাহ খান সোহেল প্রমুখ। অনুষ্ঠান শুরুর আগে গান্ধীর ম্যুরালের সামনে প্রভাত প্রার্থনা ও ম্যুরালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। শেষে গান্ধী আশ্রম প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকী এবং মহাত্মা গান্ধীর ১৫৫তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক যুব পিস ক্যাম্পের সমাপনী ঘোষণা করা হয়। ক্যাম্পে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ ১২টি দেশের দেড় শতাধিক প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজ দেশের মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। কারণ এ সরকার খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রেখেছে। তার মুক্তির বিষয়ে ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে। এরা কাপুরুষ। এরা জানে খালেদা জিয়া সুস্থ হলে তাদের ক্ষমতার মসনদ ভেঙে পড়বে। বন্দি রেখে খালেদা জিয়াকে এরা হত্যা করতে চায়।
গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তির’ দাবিতে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল আয়োজিত কৃষক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও সকাল থেকে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন নেতাকর্মীরা। কাকরাইল থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত সড়কে হলুদ-সবুজ রঙের টুপি মাথায় দিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মী ‘খালেদা জিয়ার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’, ‘এক দফা এক দাবি শেখ হাসিনা কবে যাবি’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য তারা (সরকার) বিভিন্ন রকম আইনকানুন দেখাচ্ছে। যখন আপনার (শেখ হাসিনার) কানের সমস্যা হয়েছিল তখন আপনি আমেরিকা চলে গিয়েছিলেন। যান নাই? আজকে খালেদা জিয়ার যখন জীবন-মরণের সমস্যা তখন এইসব কথা বলছেন কেন? কারণ রাজনৈতিকভাবেই তারা বেগম জিয়াকে হিংসা করে, তাকে সুস্থ করতে চায় না। বেগম জিয়াকে রাজনীতি করতে দিচ্ছে না। আওয়ামী লীগের সম্পূর্ণ লক্ষ্য একটাই, এ দেশে কোনো বিরোধী দল থাকবে না, তারাই সরকার চালাবে, সরকারে থাকবে। তাদের কথাবার্তা শুনলে মনে হবে তারাই শুধু এ দেশের মালিক আর আমরা সব প্রজা।’
তিনি আরও বলেন, ‘পিটার হাসকে (মার্কিন রাষ্ট্রদূত) নিয়ে তারা (সরকার) খুব রেগেছে। তাদের নেতা-মন্ত্রীরা সমস্ত ডিপ্লোমেটিক নর্মসকে উপেক্ষা করে তার বিরুদ্ধে কথাবার্তা বলছে। তাদের বংশবদ টেলিভিশন চ্যানেলগুলো মিথ্যাচার করছে। এরা এত দায়িত্বজ্ঞানহীন। যে দেশটাতে আমরা সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি করি, সেই দেশের সঙ্গে সমস্যা তৈরি করেছে। আরেকটা খবর আছে, সেপ্টেম্বর মাসে সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে। এর অর্থ বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর তাদের আস্থা নেই। সেজন্য তারা অর্থ পাঠাচ্ছে না।’
দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা খালেদা জিয়া উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ নেতারা) তো মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। তারা পাকিস্তানের সরকারের ভাতা খেয়েছিলেন।’
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে কেনো বিকল্প নেই। একটাই পথ। সরকারকে সরাসরি বলতে চাই, এখনো সময় আছে মানে মানে পদত্যাগ করে একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিন, সংসদ বিলুপ্ত করুন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় দেশের মানুষ জানে কীভাবে স্বৈরাচারকে, ফ্যাসিবাদকে দূর করতে হয়।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখানে আমাদের রংপুর-দিনাজপুরের মানুষ আছেন। এক কৃষক নেতা ব্রিটিশ পিরিয়ডে বিদ্রোহ করেছিলেন। কৃষককে ডাক দিয়েছিলেন, কোনঠে বাহে জাগো সবাই। এই হচ্ছে ডাক। কোথায় আছেন, সবাই জাগেন, জেগে ওঠেন। প্রতিরোধ গড়ে তুলি, সমস্ত নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই।’
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, ‘সরকারের দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে দেশের কৃষকরা পণ্যের ন্যায্যমূল্য, সার-কীটনাশক-বীজ কোনো কিছুই পাচ্ছেন না। মেগা প্রকল্পের নামে সরকার লুটপাট করে বিদেশে অর্থ পাচার ও বাড়িঘর করে আখের গোছাচ্ছে।’
কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির শাহজাহান ওমর, বরকতউল্লা বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, ফরহাদ হালিম ডোনার, রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ বক্তব্য দেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রস্তুত থাকার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশর (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান। গতকাল সোমবার বিজিবির সিলেট সেক্টর সদর দপ্তরে সব পর্যায়ের বিজিবি কর্মকর্তা ও সৈনিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ নির্দেশনা দেন। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে বিজিবির প্রতিটি সদস্যকে সর্বোচ্চ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনেরও আহ্বান জানান।
এর আগে ডিজি বিজিবির বিভিন্ন ইউনিটের অপারেশনাল, প্রশিক্ষণ ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিদর্শনের অংশ হিসেবে গত রবিবার ও গতকাল সোমবার বিজিবির সিলেট সেক্টর সদর দপ্তর এবং আওতাধীন সিলেট ব্যাটালিয়ন (৪৮ বিজিবি) এবং অধীনস্থ ১০ নম্বর পোস্ট ও পাথরকোয়ারি বিওপি, সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়ন (২৮ বিজিবি) এবং অধীনস্থ দুর্গম ডুলুরা বিওপি এবং জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের (১৯ বিজিবি) অধীনস্থ আমলশিদ বিওপি ও রহিমপুর খাল পরিদর্শন করেন।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে জকিগঞ্জে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে রহিমপুর খালের সংযোগস্থল বন্ধ রয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশি কৃষকরা সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ বিষয়ে গত জুন মাসে বিজিবি-বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলনে বিজিবির পক্ষ থেকে বিষয়টি অত্যন্ত জোরালোভাবে উত্থাপন করা হয়। বিএসএফ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য বিজিবিকে আশ্বাস দেন। এরই ধারাবাহিকতায় রহিমপুর খালের সংযোগস্থল পুনঃউন্মুক্তকরণ কাজের অগ্রগতি সরেজমিনে পরিদর্শনের জন্য বিজিবি মহাপরিচালক গতকাল রহিমপুর খাল পরিদর্শন করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।