
১৯৬৩ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন চলচ্চিত্র পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ। বাবা-মা উভয়েই চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাবা সুনীল ঘোষ ছিলেন তথ্যচিত্র-নির্মাতা ও চিত্রকর। ঋতুপর্ণ ঘোষ সাউথ পয়েন্ট হাইস্কুলের ছাত্র ছিলেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ডিগ্রি অর্জন করেন। ঋতুপর্ণ ঘোষের কর্মজীবন শুরু হয় বিজ্ঞাপনী দুনিয়ায়। তার পরিচালনায় প্রথম ছবি হিরের আংটি ১৯৯২ সালে মুক্তি পায়। এটি ছিল ছোটদের ছবি। ছবিটি তৈরি হয়েছিল শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের একটি উপন্যাস অবলম্বনে। এরপর তার নির্মিত বাংলা চলচ্চিত্রগুলো হলো : উনিশে এপ্রিল, দহন, অসুখ, বাড়িওয়ালি, উৎসব, তিতলি, শুভ মহরত, চোখের বালি, অন্তরমহল, খেলা, সব চরিত্র কাল্পনিক, আবহমান এবং চিত্রাঙ্গদা। এর মধ্যে উনিশে এপ্রিল, দহন, অসুখ, বাড়িওয়ালি, উৎসব, সব চরিত্র কাল্পনিক, আবহমান, চিত্রাঙ্গদা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায়। ২০০৪ সালে ঋতুপর্ণের প্রথম হিন্দি ছবি রেইনকোট মুক্তি পায়। এই ছবিটি ও. হেনরির ছোটগল্প ‘দ্য গিফট অব দ্য ম্যাজাই’ (১৯০৬) অবলম্বনে নির্মিত। ২০০৭ সালে দ্য লাস্ট লিয়ার মুক্তি পায়। এটি একটি প্রাক্তন শেকসপিয়ারিয়ান থিয়েটার অভিনেতার জীবনের গল্প। অমিতাভ বচ্চন কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন। পরিচালনার পাশাপাশি তিনি অভিনয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ঋতুপর্ণ ঘোষ প্রথম অভিনয় করেন ওড়িয়া ছবি কথা দেইথিল্লি মা কু-তে। ২০১১ সালে তিনি কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের আরেকটি প্রেমের গল্প এবং সঞ্জয় নাগের মেমরিজ ইন মার্চ ছবিতে অভিনয় করেন। মৃত্যুর আগে তিনি তার পরবর্তী ছবি সত্যান্বেষীর শুটিং শেষ করেছিলেন। এই ছবিটি গোয়েন্দা ব্যোমকেশ বক্সীর কাহিনি অবলম্বনে তৈরি হচ্ছিল। ঋতুপর্ণ বাংলা ফিল্ম ম্যাগাজিন আনন্দলোক সম্পাদনা করেন ১৯৯৭ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত। ২৯১৩ সালের ৩০ মে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঋতুপর্ণ ঘোষের মৃত্যু হয়।
সাত কলেজ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, তা একেবারেই অযৌক্তিক। অযথাই আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। ছাত্রদের মুখ দিয়ে যা বলানো হচ্ছে বা ছাত্ররা যা বলছে, তার কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। বিষয়টি একেবারেই অমূলক। এটি ব্যাখ্যা করলে, মনে হয় ভুল বোঝাবুঝি থাকবে না। এ বিষয়ে আমাদের মধ্যে যে ধরনের অস্পষ্টতা রয়েছে, তা দূর হবে।
সাত কলেজ আমাকে দেখার জন্য দিয়েছে। এর জন্য কিন্তু বাড়তি কোনো আর্থিক সুবিধা পাচ্ছি না। এখন বুঝতে হবে, একজন ছাত্র যদি ২-৩ বার ফেল করে, তাহলে আমাদের কী করার আছে? আমরা যদি কোনো সুযোগ না দিতাম, তাহলে একটা কথা ছিল। আমরা তো সুযোগ দিয়েছি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য, পাস করার জন্য। এখন তারা পাস করতে পারে না, এই দায়দায়িত্ব কি আমাদের? বিশ্ববিদ্যালয় তো এই দায়িত্ব নিতে পারে না। এরপরও আমরা একটি মিটিং ডেকেছি। সাত কলেজের প্রিন্সিপাল এবং বিভিন্ন অনুষদের ডিন উপস্থিত থাকবেন সভায়। সেখানে আলোচনার মাধ্যমে অবশ্যই একটি সমাধানে যেতে পারব। এখন ছাত্ররা যে বিষয় সামনে রেখে আন্দোলন করছে, তার কোনো যুক্তিই নেই। একটা যুক্তি থাকত, যদি পুনরায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ না থাকত। কিন্তু তা তো নয়। একজন ছাত্র ২ বার ফেল করার পর, নিয়ম নেই তাকে পাস করানোর। তারপরও করোনার সময়, তাদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে তৃতীয়বার পরীক্ষা দেওয়ার। সেখানেও অনেকে
অকৃতকার্য হয়েছে। এরপর আর কী করার থাকতে পারে? এখন অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরাই আন্দোলন করছে। তারা বলছে, আবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দিতে। এটা কী করে হয়! কয়েকজন স্টুডেন্ট বলছে, ‘মানবিক কারণে’ তাদের উত্তীর্ণ করা হোক। এটা কি সম্ভব! বারবার এভাবে যদি সুযোগ দেওয়া চলতেই থাকে, তাহলে তো অন্য ছাত্ররাও এই সুযোগ চাইবে। তাহলে তো আরেক ছাত্রও পড়াশোনা করবে না। তখন কী হবে! শিক্ষক হিসেবে আমাদের কাজ যেমন ছাত্রদের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকা, একই সঙ্গে বিশ^বিদ্যালয়ের আইনকানুনের প্রতিও খেয়াল রাখতে হবে। শিক্ষার্থীদের এভাবে ছেড়ে দিলে তো বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ হয়ে যাবে। এটা কিন্তু মনে রাখতে হবে।
সাত কলেজের সমস্যা অনেক। ক্লাসের সাইজ ছোট, শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি, আবার শিক্ষকের সংখ্যা কম। নানান ধরনের শিক্ষা উপকরণের ঘাটতি, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে অনিয়মিত। পরীক্ষার আগে ২-৩ দিন পড়াশোনা করে সন্তোষজনক ফল করা যাবে না, এটাই স্বাভাবিক। আবার কলেজগুলোর মধ্যেও সমস্যা রয়েছে। এক কলেজের ছাত্রের খাতা আরেক কলেজে গেলে, অনেকটা ইচ্ছাকৃতভাবেই শিক্ষক তাকে অকৃতকার্য দেখায়। তাদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা চলে। তারা বোঝাতে চায়, এই কলেজ ভালো, আরেক কলেজ খারাপ। স্বাভাবিকভাবেই ভালো কলেজে ছাত্রছাত্রী বেশি ভর্তি হবে। সেই কারণে কোন কলেজের খাতা কোন কলেজে যাবে, সেটা যেন কেউ না বুঝতে পারে সে জন্য আমরা শুধু একটা ‘কোড’ নম্বর ব্যবহার করছি। শিক্ষকদের মধ্যে যদি সততা না থাকে, তাহলে তো মুশকিল। প্রশ্ন আসে, এ ধরনের লেখাপড়া তাহলে ভবিষ্যতে কতটুকু ফল দেবে? এটা মনে রাখতে হবে, শিক্ষার্থীদের প্রতি কিন্তু আমরা বরাবরই সহানুভূতিশীল। আসলে আমরা একটা জটিল সমস্যার মধ্যে পড়েছি। না পারছি স্ট্যান্ডার্ড কমাতে আবার তাদের যে ধরনের সমস্যা, তারও কোনো যথাযথ সমাধান করতে। তবে ক্রমান্বয়ে আমরা সমাধানের দিকেই হাঁটব। তাদের পুরোপুরি বিশ^বিদ্যালয়ের নিয়মের মধ্যেই নিয়ে আসা হবে। এখন কিন্তু আমরা পরীক্ষার জন্য বিশেষ অনুমতি দিচ্ছি। তবে ভবিষতে এ বিষয়ে সতর্ক থাকব। এ জন্যই আজ (মঙ্গলবার) একটা জরুরি সভা ডাকা হয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটা লক্ষ্য ছিল অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ বিশ^বিদ্যালয়ে যে রকম অধিভুক্ত কলেজ থাকে, আমাদের কলেজগুলোও যেন মূল বিশ্ববিদ্যালয়ের মানমতোই হয়। অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের অনেক ছাত্র নবেল পেয়েছে, পৃথিবীখ্যাত হয়েছে। আমাদেরও লক্ষ্য ছিল, সাত কলেজকে বিশ^বিদ্যালয়ের সঙ্গে এনে তার মান উন্নয়ন করা। এরাতো আমাদেরই সন্তান। তাদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে, আমরা যেন সাত কলেজের মান উন্নত করতে পারি লক্ষ্য কিন্তু সেটাই। আমরা সেদিকেই খেয়াল রাখছি। এখন সাত কলেজের ছাত্রছাত্রীদের সাইকোলজিটাও আমাদের বুঝতে হবে। সাধারণত যারা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছে না, তারাই কিন্তু সেসব কলেজে ভর্তি হচ্ছে। তখনই তাদের মধ্যে একটা হতাশা-হীনম্মন্যতা কাজ করে। এসব কারণে তাদের ফলটাও ভালো হচ্ছে না। এসব যদি দূর করা যায়, তাহলে শিক্ষার আসল যে লক্ষ্য তা পূরণ হবে। আমরা প্রকৃত অর্থেই মানবসম্পদ তৈরি করতে পারব। সেই বিবেচনায় সাত কলেজ যদি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সঙ্গে থাকে, তারা যদি মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করে, তাহলে ভালো। আর যদি পড়াশোনা না করে, এভাবেই চলতে থাকে তাহলে একসময় ঠিকই তাদের উপলব্ধি হবে আগেই ভালো ছিল। তাতে সংকট আরও বাড়বে। আমি আবারও বলছি, তারা একসময় ভাববে আমরা সত্যিকার অর্থেই মানবসম্পদে পরিণত হয়েছি।
অনেকেই বলছেন, এর মাধ্যমে নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক লাভ হচ্ছে! আমি তো দেখি না। কোথায়? এটা একেবারেই হাস্যকর বিষয়। বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যবহার করা হচ্ছে সাত কলেজের জন্য, সেই বিষয়ে অনেকেরই ধারণা নেই। মনে রাখতে হবে, আমাদের কোনো জনবল বাড়েনি। রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের অনেক জায়গা ব্যবহার করতে হয়। ফলে এখানে জনবলের বিষয়ও রয়েছে। কিন্তু বেতন কি বেড়েছে? উপরন্তু পরিশ্রম বেড়েছে। আমাদের জনবল বাড়েনি, তাহলে আয়ের উৎস কোত্থেকে! সাত কলেজের বিষয়ে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, এর জন্য কি কোনো বাড়তি টাকা দেওয়া হচ্ছে? যারা এসব বলেন, তারা আসলে প্রকৃত চিত্র না জেনেই বলেন। কোনো ডিনের কি এক টাকা বেতন বেড়েছে? কীভাবে এটা আয়ের উৎস হয়, তা আমার মাথায় আসে না। যে টাকা সাত কলেজ থেকে আসে, সেটা তো তাদের খাতা মূল্যায়নেই চলে যায়। যারা খাতা দেখেন, তাদের একটা সম্মানী দিতে হয়। কারণ তারা অতিরিক্ত পরিশ্রম করছেন। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ীই হচ্ছে। এই টাকা তো সাত কলেজের শিক্ষকরাও পায়। তাহলে এই বাড়তি টাকা, আসবে কোত্থেকে? তারা অতীতেও পেয়েছে, এখনো পাচ্ছে। এটা নতুন কিছু না। সব টাকাই কিন্তু ছাত্রদের পেছনেই খরচ হচ্ছে। অনেকে টাকা আয়ের কথা বলছেন, আমি বলব এটা তারা ভালোমতো না জেনেই বলছেন। পরীক্ষাসংক্রান্ত অনেক বিষয় রয়েছে, সেখানে টাকা খরচ হচ্ছে না? এটা আসবে কোত্থেকে? খাত তো সেই একটাই। এরপর বাড়তি কোনো টাকা থাকে না। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিন্দুমাত্র আর্থিক লাভ নেই। আমরা যারা দায়িত্ব পালন করি, তাদের এক পয়সাও অতিরিক্ত দেওয়া হয় না। বরং আমাদের শ্রম, মেধা বহুলাংশে সাত কলেজের জন্য ব্যয় করতে হচ্ছে।
সাত কলেজ যে প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়েছিল, তা সঠিক ছিল না। একজন ছাত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় সব থিওরি পরীক্ষা দিয়েছে, সেই ছাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা দিল অথবা ভাইবা দিল এরপর সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রামসহ একটা সার্টিফিকেট পেল। আবার সাত কলেজে প্রথম বর্ষ বা দ্বিতীয় বর্ষে পড়েছে, এরপর এখানে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হওয়ার পর এখানের শিক্ষকরা প্রশ্ন করছেন, খাতা দেখছেন এখন তাদের তো সেভাবে এডাপ্ট করা হয়নি। উচিত ছিল নতুন ব্যাচ নিয়ে একই সঙ্গে রান করা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের নিয়ে আমরা এখনো সমস্যার মধ্যে আছি। এটা সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে। যে কোনো বিষয়ে সমস্যা দেখা দিতেই পারে, সেটা তো আলোচনা করে সমাধান করা যায়। এমন কোনো সমস্যা কি আছে, যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায় না? এ ক্ষেত্রে সবাইকে ছাড় দিয়ে একটা সমাধানের পথে আসতে হবে।
আমরা মনে করি, মানসম্মত শিক্ষার প্রশ্নে আমরা সঠিক অবস্থানেই রয়েছি। আবার বলছি, সাত কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। শিক্ষকের সংখ্যা কম। শ্রেণিকক্ষের অবস্থাও ভালো না। এ বিষয়ে অযথা কোনো ধরনের জটিলতা হোক, আমরা সেটা চাইছি না।
লেখক: উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সাত কলেজের ছাত্রদের বিষয়ে খুব ইন্টারেস্টেড কারা, কেন? কী এমন বিষয় রয়েছে সেখানে যে বাড়তি এই চাপ আমাকেই নিতে হবে? আসলে সাত কলেজ বিষয়ে, রাজনৈতিক একটি বিষয় রয়েছে। এখানে অর্থের সংযোগ রয়েছে। সেই অর্থের পরিমাণটা কিন্তু মোটেও কম না। ফলে এদের নিয়ে একটা আগ্রহ তৈরি হয়েছে। আসলে প্রশাসনিকভাবে, আমরা ব্যর্থ হচ্ছি। কারণ আমাদের যে সামর্থ্য, সেই সামর্থ্য কি আমরা যাচাই করেছি? না করার ফলেই এই সমস্যার উদ্ভব হয়েছে। যে উপায়ে সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছে, তা কি সঠিক ছিল? ১৯৭৩ সালের যে প্রশাসনিক আইন রয়েছে, তার সঙ্গে কি বিষয়টি সংগতিপূর্ণ? এটা একেবারেই সাংঘর্ষিক একটা বিষয়। ওপর থেকে চাপিয়ে দিয়ে একটা নিয়ম চালু করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় যদি কিছু মনে করে, তাহলে সেটি আলোচনা হবে। তারপর এটা সিন্ডিকেটে যাবে। কিন্তু তা তো হয়নি। এই নিয়ম চালু হয়েছে, ওপর থেকে নিচে। কিন্তু নিয়ম হচ্ছে, নিচ থেকে ওপরে যাওয়ার। তা কি হয়েছে! হয়নি বলেই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। ভাবা দরকার ছিল, আমাদের প্রশাসনিক সামর্থ্য কতটুকু? আদৌ এটা আমরা পারব কি না? বিষয়টি যাচাই করা দরকার ছিল। এমনিতেই আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের রেজাল্টই তো সময়মতো দিতে পারছি না। তার ওপর আবার এটা! কেন? কলেজগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্যই তো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় করা হলো। না হলে, এই বিশ্ববিদ্যালয় করার মানে কি? এটা কেন করা হলো? এর উদ্দেশ্যই ছিল, যে সমস্যাগুলো এখন দেখা দিয়েছে, সেখান থেকে বের হয়ে আসা। এই কলেজগুলো অধিভুক্ত থাকার কারণেই কিন্তু আমরা ঠিকমতো, রেজাল্ট পাবলিশ করতে পারছিলাম না। এই কারণেই তো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করা হলো। এখন কোন প্রেক্ষাপটে, কী ধরনের বাস্তবতায় এটা করা হলো, তা বোধগম্য না। আমরা কেন যে সাত কলেজের দায়িত্ব্ নিলাম, তা কিছুতেই বুঝতে পারছি না। এখন এটাই বড় প্রশ্ন, তাহলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় করা হলো কেন? যদি মানের প্রশ্ন ওঠে, তাহলে তো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব এটার মান কীভাবে নির্ধারণ করা যায়, আরও উন্নত করা যায়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যদি মনে করে, এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাভুক্ত থাকলে ভালো, তাহলে তো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ই অকার্যকর হয়ে যায়।
১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ, যেটা বঙ্গবন্ধু করেছিলেন, সেটাই তো আমরা মানছি না। মানলে, এই সমস্যা দেখা দিত না। এই ধরনের একটা সিদ্ধান্ত একটা একাডেমিক প্রক্রিয়ার মধ্যে সম্পন্ন করতে হয়। অথচ তা করা হয়নি। কেউ একজন বললেই তো আর এটা করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, এটা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় না। ৪টা বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু আলাদা। ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু একেবারেই আলাদা। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এই চারটিকে মেলানো যাবে না। মৌলিকভাবেই এদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
আমরা পরিচালিত হব, বঙ্গবন্ধুর তৈরি আইন দিয়ে। যা ১৯৭৩ সালে হয়েছিল। সেই পাকিস্তানি খপ্পর থেকে বের করার জন্যই তো এই আইন করা হয়েছে। দেশে আইয়ুব খান বিরোধী যে আন্দোলন গড়ে উঠল, সেই আন্দোলনের ফসলই কিন্তু ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ। সবকিছু মাথায় রেখেই এটি করা হয়েছিল। এখন এইরকম পরিস্থিতি তৈরি করার পেছনে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বিষয় রয়েছে। এটি উপলব্ধি করতে হবে। এখানে কিন্তু বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অতিরিক্ত বোঝা হয়ে যাচ্ছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে হলো ৪০০ খাতা আর এই সাত কলেজে ১২০০ খাতা। আমি বুঝি না, যেখানে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজই ঠিকমতো করতে পারছি না, সেখানে আবার এই সাত কলেজের দায়িত্ব কেন নিচ্ছি, তা আমার মাথায় আসে না। সেমিস্টার সিস্টেমে আসার পরে, আমাদের অনেক কিছু করতে হয়। এখন অ্যাসাইনমেন্ট নিতে হয়, প্রেজেনটেশন নিতে হয়, মিডটার্ম পরীক্ষা নিতে হয় এগুলো তো ভাবতে হবে। সবকিছু মিলিয়ে ৩-৪ মাসের মধ্যে আমাদের পরীক্ষা নিতে হয়। এই চাপের মধ্যে আমি আবার কলেজের দায়িত্ব নিচ্ছি। কেন?
এর পেছনে দৃশ্যমান আসল কারণ হচ্ছে, আমি টাকা পাচ্ছি। আমার কথা হচ্ছে আমি যাই করি, সেটা তো ভেবেচিন্তে করতে হবে নাকি? এখন ওপর থেকে চাপিয়ে দিলে কিছু হবে না। বাস্তবতা তো আমরাই ভালো জানি। ওপর থেকে চাপিয়ে দিলে, সমস্যা দেখা দেবেই। এখন যা হচ্ছে। সবাই কিন্তু এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ থেকে উত্তরণের একটাই পথ কলেজগুলোকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দিয়ে দেওয়া। অথবা যদি রাখতেই হয়, তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের জন্য আলাদা প্রশাসনিক বিভাগ গড়ে তোলা।
যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন, সেই তারাই আবার সাত কলেজের দায়িত্ব পালন করছেন। এমনও হয়, আমাদের যে হল সাত কলেজের প্রশ্নপত্র চলে আসার কারণে, সেখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র রাখারই জায়গা পাই না। আমি এমনিতেই চাপের মধ্যে রয়েছি, তার ওপর আবার সাত কলেজের দায়িত্ব নিচ্ছি। এটা কেন? এই ‘কেন’র বিষয়ে কোনো উত্তর নেই।
আমি যদি সারা দিন খাতা দেখি, পরীক্ষা নিই তাহলে কখন রিসার্চ করব? অন্যান্য কাজেরই বা কী হবে! ফলে স্বাভাবিকভাবেই সাত কলেজের ছেলেমেয়েরা বিভিন্নভাবে বঞ্চিত হচ্ছে। যে কারণে ওদের আন্দোলন করতে হচ্ছে। আমি মনে করি, ছাত্ররা যে বিষয়ে মুভমেন্ট করছে তা অত্যন্ত যৌক্তিক। এখন এই সমস্যার তো একটা সমাধানে যেতে হবে। এভাবে চলতে পারে না। সাত কলেজের ছাত্রদের বিষয়টিও ভাবতে হবে। এখন সাত কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্ত করা ছাড়া, এই সমস্যার সমাধান কীভাবে আসবে আমি জানি না। এত সমস্যা থাকার পরও, সাত কলেজকে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার নেপথ্য কারণটা কী? এটার স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা জানি না। এটি করার আগে কোনো ধরনের আলোচনা হয়নি। সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়ে করা হলে, আজকের জটিলতা দেখা দিত না। আমি জোর দিয়েই বলব, ছাত্রদের এই আন্দোলন শতভাগ যৌক্তিক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো নিয়ে, নতুন করে ভাবতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক কিছুরই পরিবর্তন দরকার। সময় বদলেছে, সমস্যার নতুন ধরনের সঙ্গে আমাদের খাপ খাইয়ে চলতে হবে। কোনোভাবেই যেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সর্বাগ্রে তাদের স্বার্থ দেখতে হবে। এখন ১৯৭৩ সালের হিসাব করলে তো হবে না। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে, প্রশাসনিক সংস্কার জরুরি। যে যখন ভিসি হন, তিনি মনে করেন তিনিই সঠিক। একদম বিভাগের চেয়ারম্যান পর্যন্ত। তারা কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করেন না। যার যেমন ক্ষমতা, তেমন প্রয়োগ করেন। নিজের মতো করে, প্রশাসনিক কার্যক্রম চালিয়ে যান। এর ফলেই এরকম সমস্যার সৃষ্টি হয়। আসলে আমাদের একটা অধ্যাদেশ রয়েছে, সেটা তো মেনে চলতে হবে নাকি? যখন কোনো সভায় আমরা বলি, এটা তো আমাদের নিয়মের মধ্যে নেই তখন তারা বলেন, এটা আমাদের প্র্যাকটিসের মধ্যে আছে! এইভাবে আইন বহির্ভূত অনেক কাজই হয়েছে। তার একটি হলো, সাত কলেজ নিয়ে বর্তমান জটিলতা।
আমি মনে করি, ছাত্ররা যে বিষয়ে আন্দোলন করছে তা একেবারেই যৌক্তিক। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যদি শিক্ষার্থীদের আকাক্সক্ষা পূরণ করতে না পারে, সেটা আমাদেরই ব্যর্থতা। সমস্ত শিক্ষকের ব্যর্থতা। সেই ব্যর্থতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এর জন্য করতে হবে গণতান্ত্রিক আচরণ। আমাদের আরও সহিষ্ণু হতে হবে। ছাত্রদের সম্যস্যাকে নিজের বলে ভাবতে হবে। যদি আমার মানসিকতাকে এই ধরনের বোধ দিয়ে জাগিয়ে রাখতে পারি, তাহলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আসলে দলীয় রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সামষ্টিকভাবে সমস্যাকে চিহ্নিত করতে পারলে, কোনো অসুবিধা থাকার কথা নয়। শিক্ষার্থীর বাইরে অন্য কোনো চিন্তা যেন আমাদের মাথায় কাজ না করে। যদি তাই হতো, তাহলে কোনো সমস্যার সৃষ্টি হতো না। আমি মনে করি, সব পক্ষকে বসে সমস্যার সমাধান করা উচিত। বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখা ঠিক হবে না।
লেখক: অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
রাজনীতি শব্দটির যথার্থ অর্থ সংজ্ঞায়িত করা দুরূহ, রাজনীতি হলো একটি ব্যাপক ধারণা। ইংল্যান্ডের ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রখ্যাত রাজনীতি বিজ্ঞানী অড্রিয়ান লেফটউইচের মতে, ‘আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক, সর্বসাধারণ ও ব্যক্তি নির্বিশেষে সব সমষ্টিগত কার্যকলাপের মূলে রাজনীতি বর্তমান।’ রাজনীতিবিজ্ঞানের লেখক অ্যান্ড্রু হেউড তার ‘politics’ গ্রন্থেও একই মত পোষণ করেছেন। গ্রিক শব্দ পলিশ (politic) এবং পলিটেজ (politics) শব্দ দুটি থেকে পলিটিক্স (politics) শব্দটির উৎপত্তি। আর সহজ অর্থে রাজ্য বা রাষ্ট্রবিষয়ক রীতিনীতি বা নিয়মকানুন ইত্যাদি নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের রাজনীতিবিদ বলা হয়ে থাকে। আমাদের সংবিধান মতে, রাষ্ট্রের ৩টি মূল অঙ্গ রয়েছে যথা- ১. বিচার বিভাগ, ২. নির্বাহী বিভাগ, ৩. আইনসভা। বৃহত্তর অর্থে ৩টি রাষ্ট্রীয় মূল ভিত্তির সঙ্গে যারা ওতপ্রোতভাবে জড়িত বা দায়িত্বপ্রাপ্ত তারা সবাই রাষ্ট্রীয় ধারণার আলোকে রাজনীতিবিদ। সেই অর্থে বিচার বিভাগের কর্ণধারদের রাজনীতিবিদ বলার মধ্যে অসাংবিধানিক কিছু নেই।
সংবিধান একটি প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ ও অলংঘনীয় আইন, একটি দেশের রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতিচ্ছবি। রাষ্ট্রের সব বিষয় এতে বিধৃত থাকে। সংবিধানের নির্দেশনাই রাষ্ট্র পরিচালনার মূল সূত্র। এই মহামূল্যবান দলিল বাংলার জনগণ আন্দোলন-সংগ্রাম ও লাখো জীবনের বিনিময়ে লাভ করেছে, যা বাঙালি জাতির হাজার বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসে সেরা কীর্তি, রাজনৈতিক চড়াই-উতরাইয়ের ফসল।
বাংলাদেশের সংবিধান বাঙালি জাতির চরম আশা-আকাক্সক্ষার বহিঃপ্রকাশ। মুক্তিকামী রাজনীতি সংশ্লিষ্ট বাঙালি জনতার বুকের তাজা রক্তে লিখিত এক ঐতিহাসিক দলিল। বাঙালির হাজার বছরব্যাপী আত্মাহুতি আর আহাজারির পুরস্কার। যারা এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক মতাদর্শের পরিচয় বহন করে, এ সংবিধান তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না। সংবিধানে সরকারের গঠণপ্রণালি, নাগরিকের মৌলিক অধিকার, রাষ্ট্র পরিচালনাসংক্রান্ত নীতিমালা এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গ ও প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা, দায়িত্ব ও নিয়ম সম্পর্কে ইতিবৃত্ত লিপিবদ্ধ।
পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি জাতি-রাষ্ট্রের আলাদা আলাদা সংবিধান রয়েছে, যাতে রাষ্ট্রের চরিত্র ও নাগরিকদের রাজনৈতিক অভিপ্রায় লিপিবদ্ধ। সংবিধানের মর্যাদা এবং লক্ষ্য, উদ্দেশ্য-আদর্শ রক্ষা ও তদুপরি এতে অবিচল থাকা প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিকের পবিত্র দায়িত্ব। আমাদের সংবিধানের অখ-তা, মূলনীতির বিরোধিতার অর্থই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ও ঐতিহাসিক অর্জনের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ।
মূল বিষয়ে আসা যাক, গত ১৫ আগস্ট আপিল বিভাগের একজন মাননীয় বিচারপতি বিচারকরা ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ মর্মে বক্তব্য দেওয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে সে সম্পর্কে কিছু বলতেই আমার এ লেখা। আমেরিকার সিরাকিউস বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক, keith J. Bybee-এর লিখিত ‘All judges are political-Except when they are not’ নামক বইটিতে উল্লেখ করেন, ‘Judicial decision making is essentially a matter of politics’। আমার অভিমত, Judges mix with politics। মূলত রাজনীতি এবং বিচারক একই সূত্রে আবদ্ধ।
এখন দেখা যাক, শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ কী? আমাদের সংবিধান মতে, উচ্চ আদালতের একজন বিচারকের সংবিধানের প্রতিটি মূলনীতি, আদর্শ-উদ্দেশ্য ও নাগরিকের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত রাখা বিচারিক দায়িত্ব, যা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭,৪৪, ১০১-১০৭ সম্পর্ককৃত। একজন বিচারপতি এই মর্মে শপথ গ্রহণ করেই বিচারকের পদে আসীন হন।
সংবিধানে বর্ণিত শপথবাক্য প্রাসঙ্গিক হওয়ায় হুবহু তুলে ধরলাম, ‘আমি, ......., প্রধান বিচারপতি (বা ক্ষেত্রমত সুপ্রীম কোর্টের আপীল/হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক) নিযুক্ত হইয়া সশ্রদ্ধচিত্তে শপথ (বা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা) করিতেছি যে, আমি আইন-অনুযায়ী ও বিশ্বস্ততার সহিত আমার পদের কর্তব্য পালন করিব; আমি বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করিব; আমি বাংলাদেশের সংবিধান ও আইনের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করিব; এবং আমি ভীতি বা অনুগ্রহ, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হইয়া সকলের প্রতি আইন-অনুযায়ী যথাবিহিত আচরণ করিব।’
ওই শপথবাক্য অনুসারে বিচারকরা আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য এবং ‘সংবিধান ও আইনের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তাবিধান’ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। যেহেতু রাষ্ট্রের আইন এবং সংবিধানের প্রতিটি বিষয় প্রজাতন্ত্রের নাগরিকের সম্মিলিত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রতিফলন, সে দৃষ্টিকোণ থেকে যে সংবিধান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বাংলার জনগণ মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমে রচনা করেছেন সেটির নিরাপত্তাবিধানে বিচারকরা তাদের বিচার কাজের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত দায়িত্বশীল থাকতে নির্দেশিত ও শপথবদ্ধ। ফলে জনগণের যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও মহান আদর্শের ছকে সংবিধান প্রণীত হয়েছে, এটা রক্ষা ও বাস্তবায়ন পুরোটাই রাজনীতিরই অবিচ্ছেদ্য অংশ।
জনগণ, সংবিধানের প্রস্তাবনায় বর্ণিত রাষ্ট্রের চারটি মূলনীতি রক্ষা ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাজনীতি করে থাকেন। অন্যদিকে বিচারকরা শপথ নিয়ে সংবিধানসম্মতভাবে সংবিধান রক্ষার রাজনীতি করেন। সে অর্থে উচ্চ আদালতের বিচারকরা শপথবদ্ধ থেকে সংবিধানের আলোকে জনগণের রাজনৈতিক অভিপ্রায় বিচারকার্যের মাধ্যমে বাস্তবায়ন ও চর্চার এক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। এভাবেই বিচারকরা ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’।
যা হোক, বিচারকদের সম্মান ও বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি রক্ষা আমাদের সবার দায়িত্ব। অথচ একটি মহল মাঠে-ঘাঠে দোকান-রেস্তোরাঁয় অপবাদ ছড়িয়ে দিয়েছেন এই বলে যে, বিচারপতিরাও রাজনীতিতে অংশ নিয়েছেন। মূলত এর মাধ্যমে বিচার বিভাগকে জনমনে হেয় করার অপপ্রয়াস রয়েছে। যার ফলাফল কারও জন্যই সুফল বয়ে আনবে না। মাননীয় বিচারপতি যিনি ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ পরিভাষাটি এর আগেও ব্যবহার করেছেন, গত বছরের ৩ নভেম্বর একটি আলোচনা সভাসহ একাধিক সভায় তিনি এটি ব্যবহার করেছেন। তখন ওই মহলটি সমালোচনা বা অপব্যাখ্যা করেননি, প্রয়োজনও ছিল না। এখন সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, বিদেশি শক্তির উসকানি এবং অপরাজনীতির মৌসুম চলছে। তাই ইচ্ছাকৃতভাবে সাধারণ জনগণকে বিচারপতিদের প্রতি বিরূপ ধারণা দিতে এমন অযৌক্তিক সমালোচনায় নেমেছেন বলে মনে হয়, যা খুবই অনাকাক্সিক্ষত।
দেশের প্রতিটি আইনজীবী সমিতির সদস্যকে একজন ভদ্রলোক (Gentleman of the Bar) হিসেবে গণ্য করা হয়। তারা বিজ্ঞজন হয়েও ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ পরিভাষাটির অর্থ বুঝেও না বোঝার ভান করে অপব্যাখ্যা প্রদান করে বিচারপতিদের পদত্যাগ দাবি করেছেন। বিচারপতিদের আইনজীবীদের কাতারে এসে রাজনীতি করতে আহ্বান জানিয়ে উপহাস করছেন। পদত্যাগের এমন যুক্তিহীন দাবি বিজ্ঞ আইনজীবীদের ক্ষেত্রে একেবারেই বেমানান। তাহলে ওইরূপ অপব্যাখ্যা ও পদত্যাগের দাবি কেন? এ দাবি সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করে দেশের আদালতগুলোয় হট্টগোল তৈরির মাধ্যমে বিচার বিভাগকে দেশে-বিদেশে ও জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপকৌশল কি-না, এটা এখন একটা বড় প্রশ্ন।
ইতোমধ্যে চলতি মাসের ২৮ তারিখ সুপ্রিম কোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে বিশেষ এক মামলার সূত্রে মাননীয় বিচারকদের ও আইন-আদালতের প্রতি একদল বিজ্ঞ আইনজীবী কর্তৃক যে অসম্মান ও অসহনশীলতা প্রদর্শিত হয়েছে, তা বিচার বিভাগের প্রতি চরম তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করার শামিল। এমন আচরণ সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবীদের পক্ষে কতটা শোভনীয়? কেন এমনটা ঘটছে এর উত্তর খুঁজতে সাধারণ আইনজীবীরা আজ হতচকিত। তবে এটা অনুমেয় যে, এসব ষড়যন্ত্র, কু-আচরণ ও নেতৃত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর নামে যে অপরাজনীতি চলছে সেখান থেকে উত্তরণ খুবই জরুরি, অন্যথায় আইনজীবী সমাজ নিজেরাই নিজেদের সর্বনাশ ঘটাবেন। আর এ জন্য বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে না। বলা হয়ে থাকে যে, আইনজীবীরা একটি পরিবার, জাতির বিবেক, বুদ্ধিজীবী, সহজাত নেতা, সভ্য পেশার সদস্য এবং আইনজীবী ও বিচারক একটি পাখির দুটি ডানা। সুতরাং, এসব বাক্যকে অর্থহীন করে ফেলার কোনো চেষ্টা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
পৃথিবী এখন চিড়িয়াখানার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসেছে। একইভাবে সাফারি পার্কগুলোর ব্যবস্থাপনাতেও আনছে আমূল পরিবর্তন। কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত ‘উটপাখি’ শিরোনামের এক কবিতায় বলেছিলেন, ‘কল্পলতার বেড়ার আড়ালে সেথা/গ’ড়ে তুলবো না লোহার চিড়িয়াখানা;/ডেকে আনবো না হাজার হাজার ক্রেতা/ছাঁটতে তোমার অনাবশ্যক ডানা।’ মনে রাখা উচিত, একটি জীবন্ত প্রাণসত্তা কোনোভাবেই দোকানের সাজিয়ে রাখা খেলনা পুতুল নয়। আমাদের বন বিভাগের দায়িত্ব হলো দেশের স্থানীয় বা ইনডিজিনাস বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষা করা। কিন্তু আমরা দেখছি তারা দেশের বায়ো-ডাইভারসিটি ধ্বংস করে বিদেশি বন্যপ্রাণী ও গাছ কিনে সাফারি পার্ক বানিয়ে লুটপাটের আড়ালে পুরো দেশকে চিড়িয়াখানায় রূপান্তর করার অপচেষ্টা করছে।
বুধবার দেশ রূপান্তরে ‘বন কেটে সাফারি পার্ক’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মৌলভীবাজারের লাঠিটিলা পুরোটাই বন। এখানে নানান প্রজাতির বন্যপ্রাণীর বসবাস। আছে বিরল প্রজাতিও। কিন্তু বন্যপ্রাণীদের এ আবাস ধ্বংসের মুখে ফেলে মানুষের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পরিকল্পনা কমিশনে ‘বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, মৌলভীবাজার, প্রথম পর্যায়’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পাঠানো হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১ হাজার ২৫ কোটি টাকা। প্রকল্প অনুযায়ী, এই বনের ৫ হাজার ৬৩১ একর এলাকায় হবে সাফারি পার্ক। এতে ৩ হাজার মিটার অভ্যন্তরীণ বাউন্ডারি, ৩ হাজার বর্গমিটারে গাড়ি পার্কিং, ১ হাজার ৫৮৮ বর্গমিটারে প্রাণী হাসপাতাল ভবন, ৪ হাজার মিটারের সীমানাপ্রাচীরসহ নানা অবকাঠামো হবে। যে বন অধিদপ্তরের দায়িত্ব বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করা, সেই অধিদপ্তরই শুধু ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করার উদ্যোগ নিয়েছে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রমগুলোর একটি হলো ওয়াল ও বাউন্ডারি। এ ছাড়া চিত্তবিনোদনের জন্য বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ তো আছেই। প্রশ্ন উঠেছে, বাউন্ডারির ভেতরে এত মানুষের চলাচল ও অবকাঠামোর মধ্যে বন্যপ্রাণী অবাধে বিচরণ করবে কীভাবে? বাস্তুতন্ত্র স্বাভাবিকভাবে চলবে কীভাবে? লাঠিটিলা নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করা প্রাণীবিদরা বলছেন, এ এলাকায় আগে থেকেই বন সংরক্ষণকর্মীরা বসতি গড়েছেন, সেখানে এখন ৩ শতাধিক ঘরবাড়ি হয়েছে। সবগুলোই বনের জায়গা। সরকারের উচিত ছিল বনে সাফারি পার্ক তো নয়ই; বরং সেখানে যেসব মানুষ বসবাস করছে, তাদের উচ্ছেদ করা। এই প্রকল্পের যখন সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয়, তখন এর বিরোধিতা করে আন্দোলন করেছিল পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। তারা দাবি করেছিলেন, লাঠিটিলা একটি সংরক্ষিত বনভূমি। এখানে কেবল সাফারি পার্কই নয়, কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণেরই সুযোগ নেই।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, নির্মাণকাজের জন্য যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের অনুমোদিত ড্রইং বা ডিজাইন ডিপিপিতে সংযুক্ত করা হয়নি। মৌলভীবাজারের বন কর্মকর্তা সহকারী বন সংরক্ষক অবশ্য দাবি করেছেন, যে জায়গাটি সাফারি পার্কের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখানে এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যাতে গাছ কাটতে না হয়। কিন্তু প্রকল্পের ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রকল্পের জন্য প্রায় কোটি টাকা ব্যয় হবে শুধু কাটার নিয়োগের জন্যই। তারা কী কাটবেন? অন্যদিকে, এই প্রকল্পে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের যেসব ব্যয়ের সুপারিশ করা হয়েছিল তার ধারেকাছেই নেই ডিপিপির ব্যয়। প্রকল্প প্রস্তাবের কিছু ব্যয়ও অস্বাভাবিক। ফলে বন বিভাগের এই সাফারি পার্ক প্রকল্প কতটা বন ও বন্যপ্রাণী-বান্ধব আর কতটা তাদের আর্থিক লাভের জন্য তা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আমাদের এসব উন্নয়নের ন্যারেটিভই প্রশ্নবিদ্ধ। আমাদের ইতিমধ্যে দুইটা সাফারি পার্ক আছে, বিভিন্ন চিড়িয়াখানা আছে। সেখানে নানান ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। সেগুলোর ব্যবস্থাপনা ভালো নয়, প্রাণীর মৃত্যুর খবরও আমাদের জানা। কিছু বুনো প্রাণীদের কেবলমাত্র বিনোদনের নামে একটা জায়গায় আটকে রেখে ‘সাফারি পার্ক’ নাম দেওয়ার মানে কী? সাফারি পার্কে তো প্রাণীরা নিরাপদ থাকবে, দর্শনার্থীদের সঙ্গে বন্যপ্রাণীর এক ভালোবাসাময় দায়িত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হবে। সাফারি পার্ক ভ্রমণের পর মানুষ বন্যপ্রাণীর প্রতি তার দায়িত্ববোধ সম্পর্কে সচেতন হবে। কিন্তু তা কি হচ্ছে?
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
আইন মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি বলছে, আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে। সরকারের এমন নেতিবাচক সিদ্ধান্তের পর এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি দেয়নি দলটি। তবে এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি এক দফার আন্দোলনের সঙ্গে যোগ হতে পারে বলে জানা গেছে।
৫৩ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও দলীয় নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গুরুতর। বিদেশে নেওয়া ছাড়া তার উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়। সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসনকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ চেয়ে তার ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। এতে মতামত দিতে আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় আইন মন্ত্রণালয় এতে মতামত দেয়। এ বিষয়ে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেছেন, তার সাময়িক মুক্তির আদেশটা বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) কারাগারে নেওয়া হলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া বাসায় চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশে যেতে পারবেন না এমন দুটো শর্ত সাপেক্ষে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে দন্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। দরখাস্তটা নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে আটবার দন্ড স্থগিত করা হয়েছে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার কোনো সুযোগ আইনে থাকে না। আমরা ৪০১ ধারার উপধারা ১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ ব্যাখ্যা করে মতামত পাঠিয়েছি। আমাদের মতামত হলো, ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে, সেটা অতীত এবং মীমাংসিত। এটা আর খোলার কোনো উপায় নেই।’
এক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে (খালেদা জিয়া) সাজা স্থগিত রেখে যে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, সেটা বাতিল করে তারপর পুনরায় বিবেচনা করার সুযোগ থাকলে সেটা করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই উপমহাদেশে ৪০১ ধারার ক্ষমতা যখন প্রয়োগ করে, তখন এটি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না বলে সিদ্ধান্তের নজির আছে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন যে আদেশটা আছে, সেটা যদি বাতিল করা হয়, বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) যদি আবার কারাগারে নেওয়া হয়, তাহলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু এ অবস্থায় আদালতে যেতে পারবেন না।’ খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের বিষয়টি বাতিল করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা অমানবিক হবে, বাতিল করব না।’
আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এক বার্তায় বলেন, ‘আজকের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, দেশে আইনের শাসন নেই। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক ভয়ংকর তামাশা করা হচ্ছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, নির্বাহী বিভাগ চাইলেই কাউকে মুক্তি দিতে পারে।’
খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় বিএনপি কী এখন ভাবছে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে।’
আর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর নীলনকশার অংশ। মানবতাবিরোধী ও সরকারের বর্বর ইচ্ছা পূরণের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।’
দলটির নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদন আইনগতভাবে বিবেচনা না করে, রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে। ফলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করতে না পারলে বিএনপিপ্রধানের মুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমেই এই ইস্যুর সুরাহা করতে চায় দলটি।
কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেখানে বলা হয়েছে, তাকে “দেশে চিকিৎসা নিতে হবে”, তার বদলে “দেশে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন” বলাই যথেষ্ট। কিন্তু দেশে চিকিৎসা গ্রহণের শর্তারোপ করা হলে তা যে চিকিৎসার বিবেচনায় না করে রাজনীতির বিবেচনায় করা হবে, সেটা বোঝার মতো বুদ্ধি সাধারণ মানুষের আছে।’
অসুস্থতার কারণে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের মার্চে করোনার সময় টানা দুই বছর কারাভোগের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরেছিলেন খালেদা জিয়া। পরে এ পর্যন্ত তার মুক্তির মেয়াদ আটবার বাড়িয়েছে সরকার।
এরই মধ্যে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তাকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ দিতে পরিবারের পক্ষে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এ বিষয়ে আইনি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদনটি পাঠায়।
বিএনপিপ্রধানকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছিল ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি সরকার ইতিবাচকভাবে দেখতে পারে’। কিন্তু সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ‘বিদেশে যাওয়ার আবেদন করতে হলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরত গিয়ে করতে হবে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের পর সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় এবারও ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না। গত শনিবার এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এ শঙ্কাই প্রকাশ করেছিলেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা আছে, যেকোনো মূল্যে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকার মরিয়া। সে কারণে হয়তো খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি ঝুঁলিয়ে রাখতে চাইছে এমনটাই মনে করছে সরকারবিরোধীরা। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দিলেই সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলেও বিরোধী নেতাদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। তবে শর্ত দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দল যাতে সম্মত না হয়, সে কথাই নেতাদের বলে রেখেছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির হাইকমান্ড মনে করছেন, এ অবস্থায় চলমান এক দফার আন্দোলনে খালেদা জিয়ার মুক্তি বিষয়টি থাকলেও সেটাকে আরও জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে; যাতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নেয়।
জানা গেছে, এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে দলটি। আজ সোমবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক রয়েছে। সূত্র বলছে, জোটগত ছাড়াও দলীয়ভাবেও কর্মসূচি আসতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক চিকিৎসক জানান, হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তার কেবিনে এক্স-রে মেশিন নেওয়া হয়েছিল গতকাল ভোরে। শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে না এলে সিসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ ছিল। দুপুরে তার ইসিজি ও ইকো ডায়াগ্রাম করানো হয়েছে। ফুসফুসের পানি অপসারণের জন্য তার ডান পাশে যে ক্যাথেটার লাগানো ছিল, সেটা আপাতত খুলে ফেলা হয়েছে।
লিভার জটিলতা ছাড়াও ৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ফুসফুস, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। গত ৯ আগস্ট ফিরোজায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে দলীয় মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) সেটআপে কেবিনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছে।
জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘ওনার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সে জন্য তাকে দ্রুত বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে পাঠানো দরকার।’
হতাশায় শেষ খালেদার অপেক্ষা
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
সাড়ে ৩ বছরে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স
দেশের বিদেশি মুদ্রা আয়ের অন্যতম হাতিয়ার প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের ধস নেমেছে। সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশে অবস্থানকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধপথে ও ব্যাংকের মাধ্যমে মাত্র ১৩৪ কোটি ডলারের বিদেশি মুদ্রার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। গত সাড়ে তিন বছরে এটি সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স। ৪১ মাস আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে এর চেয়ে কম ১০৯ কোটি ডলার সমপরিমাণের রেমিট্যান্স এসেছিল। রেমিট্যান্স-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দামের ব্যবধান বেশি হলে হুন্ডিতে লেনদেন বেড়ে যায়। আর যখন হুন্ডির চাহিদা বাড়ে তখন রেমিট্যান্স কমে যায়। গত মাসে ব্যাংকের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দাম ৬ থেকে ৭ টাকা বেশি ছিল। তাই বেশি লাভের আশায় বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন প্রবাসীরা।
ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজার ছাড়াল
এ বছর অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে ডেঙ্গু। গতকাল রবিবার ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজারের কোটা ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) সারা দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬ জনে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৮৮২ জন।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
অকাজের ৩৭০০ কোটির সেতু
সেতু হয়। কিন্তু সড়ক হয় না। সেতু করার জন্য নানান প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু সেসব সেতু করেই দায়সারা বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়। ভোগান্তি সাধারণ মানুষের। আবার যতগুলো সেতু করার কথা ততগুলো না করেও প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ করার প্রতিবেদনও দেওয়া হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সারা দেশের গ্রামের রাস্তাগুলোতে সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পে। প্রকল্পের এসব অনিয়ম উঠে এসেছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবি আ.লীগ নেতার
আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার। গত শনিবার রাতে তার ফেসবুকে এ দাবি জানিয়ে স্ট্যাটাস দেন তিনি।
মুহূর্তেই স্ট্যাটাসটি ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিএনপির অসংখ্য নেতা, কর্মী-সমর্থক তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রশংসা করেন। অন্যদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নিন্দা জানিয়ে দলীয় সব পদ থেকে তার বহিষ্কারের দাবি জানান।
আবদুল মোতালেব হাওলাদার তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘রাজনৈতিক কারণে আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দেওয়া হউক।’
স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন অধরাই
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
ফুটপাত থেকে মদের বার সবখানে চাঁদাবাজি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের কমিটি পার করেছে পাঁচ বছরের বেশি সময়। মেয়াদোত্তীর্ণ এ কমিটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। কিছু নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার তথ্য রয়েছে। সর্বশেষ মদের বার ভাঙচুর ও লুট করে আবারও আলোচনায় এ কমিটির নেতাকর্মীরা।
নতুন কমিটি না হওয়ায় নেতারা বেপরোয়া আচরণের পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছেন বলে মনে করেন সাধারণ কর্মীরা। তারা বলেন, সংগঠনের কর্মকাণ্ডও স্থবির হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান তারা।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মো. রিপন মিয়াকে সভাপতি ও মাহমুদুল হক জুয়েল মোড়লকে সাধারণ সম্পাদক করে তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের জন্য আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে গত বছর ১২ জুন ৩২১ জনের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য।
অপেক্ষা আর মাত্র ৩ দিনের। তারপরই শুরু হয়ে যাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ডের চার বছরের রাজত্ব আরও চার বছর টিকিয়ে রাখার আর বাকিদের সেই মুকুট কেড়ে নেওয়ার লড়াই শুরু হবে গতবারের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই দিয়েই।
শাহরুখ খানকে দিয়ে প্রোমো আর রণবীর সিংকে দিয়ে থিম সং, আইসিসি জানান দিয়েছে ক্রিকেটে বলিউডি আবেগের মিশেল ভালোই থাকবে। কিং খানের ‘জাওয়ান’ কাঁপাচ্ছে পর্দা, কাটতি বাড়ছে বক্স অফিসে; বিশ্বকাপে আইসিসির পকেট ভরবে তো?
প্রস্তুতি বলছে, ভরবে। উইকেটে হবে রান উৎসব, লড়াই হবে ধুন্ধুমার। তাতেই ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ হবে এক ব্লকবাস্টার মেগা হিট।
মাস তিনেক আগে, বিশ্বকাপের মূলপর্বের ম্যাচগুলো যে ১০ ভেন্যুতে আয়োজন করা হবে সেই ভেন্যুগুলোর কিউরেটরদের সঙ্গে বসেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান কিউরেটর। সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপের একটাই মন্ত্র, রান চাই।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে, ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে ৩ ওয়ানডের সিরিজ খেলেছে সেই ম্যাচগুলো যদিও বিশ্বকাপের ভেন্যুতে হয়নি তবে সেই সব ম্যাচেও রানের বন্যা বয়েছে।
প্রথম দুটো ওয়ানডেতে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার করা ২৭৬ রান অনায়াসে তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছে ভারত। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ঠেঙিয়ে তুলেছেন ৩৯৯ রান। তিন নম্বর ম্যাচে আবার অস্ট্রেলিয়া করেছে ৩৫২ রান, যা তাড়া করে ভারতও গিয়েছিল ২৮৬ অবধি।
উদ্বোধনী ম্যাচ হবে গুজরাতের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। এখানে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় গত ১ ফেব্রুয়ারি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। ম্যাচে শুভমান গিল করেন সেঞ্চুরি, ভারত করে ৪ উইকেটে ২৩৪ রান আর জবাবে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ৬৬ রানে।
বোঝাই যাচ্ছে, উইকেটের ধরন বুঝে ব্যাট করতে পারলে ৫০ ওভারে এখানে রানবন্যা হবে। বিশ্বকাপে ভারত-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। দুই দল এখানে মুখোমুখি হয়েছে বহুবার, পোশাকের রঙ কখনো রঙিন কিংবা কখনো সাদা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ কমেনি। এই মাঠে অস্ট্রেলিয়া ২৬৯ রান করে ভারতকে ২১ রানে হারিয়েছে সবশেষ ম্যাচে।
আইপিএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ঘরের মাঠে সবশেষ মৌসুমে ধোনির ‘ইয়েলো আর্মি’ ৮ ম্যাচ খেলে ২০০ রানের ওপরে করেছে দুইবার, একবার জিতেছে অন্যবার হেরেছে। তবে দুই ইনিংসেই ২০০’র বেশি রান হয়েছে দুটো ম্যাচেই। অর্থাৎ চাইলে চেন্নাইকেও ব্যাটিং স্বর্গে পরিণত করা সম্ভব।
বিশ্বকাপের আগে দারুণ ছন্দে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হারার পর টানা তিন ওয়ানডে জিতে সিরিজ তো নিশ্চিত করেছেই, টানা তিন ম্যাচে ৩০০’র ওপর রান করেছে। চতুর্থ ওয়ানডেতে তো ৪০০ পার করেছে প্রোটিয়ারা। ব্যাটিং উইকেটে তারাও যে কোনো প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। হেনরিক ক্লাসেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৮৩ বলে খেলেছেন ১৭৪ রানের ইনিংস। বিধ্বংসী রূপে ফিরছেন ডেভিড মিলারও।
প্রোটিয়ারা প্রথম ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে। সেখানে অবশ্য সবশেষ হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ম্যাচেও খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে তারা অলআউট হয়েছিল মাত্র ৯৯ রানে। দিল্লির মাঠটা হয়তো খানিকটা স্পিনারদের দিকেই ঝুঁকবে, তবে অন্য মাঠগুলোতে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের রান উৎসবে মেতে উঠতে দেখার সম্ভাবনা জোরালো। তাই অনেক সাবেক ক্রিকেটারই প্রোটিয়াদের দেখছেন শেষ চারে।
বিশ্বকাপের আগে ক্লাসেন ছাড়াও ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস খেলেছেন ১৮২ রানের ইনিংস, দারুণ ছন্দে ইংল্যান্ডের ডাভিড মালানও। তবে সেরা ছন্দে নিঃসন্দেহে শুভমান গিল। সবশেষ ৫ ইনিংসে দুটো শতরান আর একটা হাফসেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেলও আছেন দারুণ ছন্দে। দুটো হাফসেঞ্চুরি আর একটা সেঞ্চুরি সবশেষ ৫ ইনিংসে। হায়দ্রাবাদে বিশ্বকাপের অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের ৩৪৫ রান কিউইরা তাড়া করেছে ৩৮ বল হাতে রেখে।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করেন, এই বারের বিশ্বকাপে রানবন্যায় বোলারদের জন্য কাজটা হবে কঠিন। দেশ রূপান্তরকে আশরাফুল বলেন, ‘আমাদের পেসাররা গত এক দেড় বছর ধরে খুবই ভালো করছে। তবে যেহেতু ভারতের মাটিতে খেলা, আমরা দেখেছি যে সাড়ে ৩০০’র বেশি রান হচ্ছে প্রতিটা ম্যাচে। কেউ যদি ভালো না করে, তাকে মনে রাখতে হবে যে টুর্নামেন্টে পরের ম্যাচে ফিরে আসতে হবে। একজনের দিন খারাপ যেতেই পারে, কোনো ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান উঠেই যেতে পারে। ৯টা ম্যাচের ভেতর ৪-৫টা ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান হতে পারে। তাই বোলারদের ফিরে আসার মানসিকতা থাকতে হবে।’
বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমও বলেছেন যে দেড় মাসের আসরে প্রস্তুত থাকতে হবে যে কোনো কিছুর জন্যই, ‘দেড় মাসের আসর, ৯টা ম্যাচ এই সময়ে খেলতে হবে বা তারও বেশি। অনেক উত্থান-পতন হবে। যে কোনো কিছুর জন্যই তৈরি থাকতে হবে।’
রান উৎসবের বিশ্বকাপ যে হতে যাচ্ছে, তার সব রসদই মজুদ। মাঠগুলোকে করা হয়েছে ব্যাটিং স্বর্গ, বিশ্বকাপে আসার আগে সেরা সেরা ব্যাটসম্যানরাও আছেন ছন্দে। শুধু প্রশ্ন এটাই, রান উৎসবের এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে রান করবেন কে? সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাটিংয়ের ছবিটা যে মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়।
বিশ্বজুড়ে বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউ এয়ারের তথ্য অনুযায়ী আজ সোমবার (০২ অক্টোবর) ঢাকার বাতাসের মান ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’। এদিন সকাল ১০টার দিকে ১২৯ স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে ঢাকা।
এসময় ১৮৩ স্কোর নিয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকার প্রথম স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর। ১৬২ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা। ১৬০ স্কোর নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি। ১৫৬ স্কোর নিয়ে চতুর্থ ভারতের আরেক শহর করাচি। ১৫৩ স্কোর নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে ইতালির মিলানো।
এ ছাড়া একইসময়ে একিউআই স্কোর ১১৭ স্কোর নিয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে চীনের উহান। ১১৩ স্কোর নিয়ে অষ্টম স্থানে রয়েছে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর। ১১২ স্কোর নিয়ে নবম স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। ১০৯ স্কোর নিয়ে দশম স্থানে রয়েছে সৌদি আরবের রিয়াদ।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার দূষিত বাতাসের শহরের এ তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই স্কোর একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে কি না, তা জানায়।
একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। একইভাবে একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং স্কোর ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে থাকলে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়।
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ অনুযায়ী, দেশে ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২২ হাজার ১১৯। এ তালিকায় রয়েছে যারা রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, মাজার, ফুটপাত, সিঁড়ি, ওভারব্রিজের নিচে, লঞ্চ টার্মিনাল, ফেরিঘাট, মার্কেটের বারান্দায় দিন কাটান। আর বস্তিতে বসবাস করছে ১৮ লাখ ৪৮৬ জন। তারা মূলত শহর ও উপশহর এলাকায় টিনের ঘর, সেমিপাকা ঘর বা ঘিঞ্জি পাকা ঘরে বাস করে। তবে বস্তিবাসী কারা সে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১৬ সালে সরকার আবাসন নীতিমালা করেছে। আবাসন উন্নয়ন তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। আবাসন সংকট নিরসন করতে হলে সরকারকে আবাসন তহবিল করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বস্তিবাসী, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত কারা তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। না হলে বোঝা যাবে না কত মানুষ বস্তিতে থাকে।’
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে আবাসন সংকট কাটছে না। স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে আবাসন।’
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে ৯ লাখ গৃহহীন মানুষকে চিহ্নিত করে। ইতিমধ্যে আট লাখ মানুষের গৃহের ব্যবস্থা করেছে; প্রায় ৪০ লাখ মানুষের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বাকিদের জন্যও শেখ হাসিনা ব্যবস্থা করবেন। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্যও আবাসনের ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা তার সৈনিক হিসেবে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
জানা যায়, বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার সবার জন্য আবাসন। অঙ্গীকার পূরণে সরকার নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সারা দেশে ৩০টি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, নোয়াখালী, যশোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, শরীয়তপুর, নড়াইল, খুলনা, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব প্রকল্পে ৬ হাজার ৪৩২টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হয়েছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২৭টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পে ৫ হাজার ৯৩০টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হবে। শেরপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, হবিগঞ্জ, সিলেট, ঝিনাইদহ, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে ১৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৩৫টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় রাজউক পূর্বাচল, ঝিলমিল, উত্তরা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় আবাসন প্রকল্পে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ফ্ল্যাটগুলো উচ্চমূল্যের কারণে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। পূর্বাচল, ঝিলমিল ও উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প গ্রহণ করছে সরকার। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনেও বিভিন্ন সংস্থা আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন শহরে বসবাসরত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সম্পদশালী ব্যক্তিরা। যাদের অনেক ফ্ল্যাট আছে তারা আরও ফ্ল্যাট কিনছেন। কিন্তু বাস্তুহারা, দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত সরকারি এসব আবাসনের সুবিধা পাচ্ছেন না। অল্প দামে জমি অধিগ্রহণ করে সরকার আবাসন প্রকল্প তৈরি করে যাদের নামে বরাদ্দ দিচ্ছে তারা রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে জমির মালিক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত।
জাতিসংঘ ১৯৮৫ সালে বিশ্ব বসতি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশে^ অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার এ দিবসটি পালিত হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।