
১৯৬৭ সালের এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন উচ্চাঙ্গ সংগীতশিল্পী ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ। তার জন্ম ২৬ এপ্রিল ১৮৮৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তার বাবা সবদর হোসেন খাঁ-ও একজন সংগীতজ্ঞ ছিলেন। ১০ বছর বয়সে তিনি অগ্রজ ফকির আফতাবউদ্দিন খাঁর কাছে সংগীতশিক্ষা শুরু করেন। পরে তিনি ভারতের মাইহারে যান বড় ভাই ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর কাছে এবং তার কাছে সেতার, সুরবাহার এবং বাদনকৌশল ও রাগ রূপায়ণের সূক্ষ্ম বিষয়গুলো নিষ্ঠার সঙ্গে আয়ত্ত করেন। পরে শিক্ষা সমাপনান্তে তিনি মাইহার রাজ্যের সভাবাদকরূপে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৩৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আমন্ত্রণে তিনি শান্তিনিকেতন যান এবং বিশ্বভারতীর যন্ত্রসংগীত বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে কিছুদিন পর চাকরি ছেড়ে তিনি স্বগ্রামে চলে আসেন। উচ্চাঙ্গ সংগীতের ঐতিহ্যবাহী ধারা সচল রাখা, নতুনদের এর প্রতি আকৃষ্ট করা এবং বিশেষভাবে যন্ত্রবাদনের ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ‘আলম ব্রাদার্স’ নামে একটি বাদ্যযন্ত্র তৈরির কারখানা খুলে গবেষণার মাধ্যমে কয়েকটি নতুন বাদ্যযন্ত্রও উদ্ভাবন করেন। মনোহরা ও মন্দ্রনাদ বাদ্যযন্ত্র দুটি তার সৃষ্টি। তিনি সুরবাহার ও সরোদ যন্ত্রেরও নতুনরূপ দেন। বিশুদ্ধ রাগসংগীতের চর্চা, সংরক্ষণ ও প্রসারের জন্য তিনি ১৯৪৮ সালে কুমিল্লায় এবং ১৯৫৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আলাউদ্দিন মিউজিক কলেজ নামে দুটি সংগীতপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। সংগীতে কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৬০ সালে তিনি গভর্নর পদক, ১৯৬১ সালে তমঘা-ই-ইমতিয়াজ খেতাব এবং ১৯৬১ সালে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রাইড অব পারফরম্যান্স লাভ করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি মরণোত্তর স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার লাভ করেন।
দিনরাত্রি মিলে হয় চব্বিশ ঘণ্টা। কিন্তু সব চব্বিশ ঘণ্টা কি সমান মনে হয়? নিশ্চয়ই নয়। কোনো কোনো চব্বিশ ঘণ্টা যেন মুহূর্তেই চলে যায়। যখন মানুষের হাতে টাকা-পয়সা থাকে অথবা প্রিয়জন পাশে থাকে। কিন্তু যখন প্রয়োজন তীব্র কিন্তু টাকা-পয়সার সংকট, তখন চব্বিশ ঘণ্টা যে কত বড় তা কেবল ভুক্তভোগীরাই জানেন। আবার এটাও তো সত্যি যে, আর্থিক সংকট যত তীব্রই হোক না কেন পৃথিবী তার ঘোরা থামাবে না বা গতি কমাবে না। ফলে চব্বিশ ঘণ্টা কমবে বা বাড়বে না। চব্বিশ ঘণ্টাই থাকবে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়ে সমাধানের আশায় মানুষ আপ্তবাক্য আওড়ায়। যেমন দিন বদলাবেই, এ রকম থাকবে না বা যত মুশকিল তত আসান। এতে সমস্যার সমাধান না হলেও, মানুষ একটু মানসিক সান্ত্বনা পায়। আজকের এই নিরবান্ধব হয়ে যাওয়ার কালে এটুকু সান্ত্বনাই বা কম কী?
কিন্তু সান্ত্বনারও রকমফের আছে। কোনো কোনো সান্ত্বনার বাণীতে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। আবার কোনো সান্ত্বনার বাণী শুনলে গা জ্বালা করে। যদি দেখা যায়, ভুক্তভোগীকে সান্ত্বনা দেওয়া আর দুষ্কৃতকারীকে সহযোগিতা করা হয় তখন রাগ এবং ক্ষোভ দানা বেঁধে ওঠে। আর যদি দেখা যায় পরামর্শ দেওয়া হয় এভাবে যে, অপরাধী তো অপরাধ করবেই, তোমার কাজ হচ্ছে কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া। তখন ভুক্তভোগী ক্ষুব্ধ হয় আর সুবিধাভোগী আনন্দিত হয়। নানা কায়দায় মানুষকে নিপীড়নের বিপরীতে ‘কায়দা করে বেঁচে থাক’ এ নীতি নিয়ে চললে নিপীড়ন তো কমেই না বরং বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। তারপরও মানুষ এমন কথা বলে, এভাবে সান্ত্বনা দেয় এবং অসহায়ের মতো ভুক্তভোগীরা শুনতেই থাকে।
মানুষের জীবনে কোনো কোনো সংকট আসে তা সে বুঝতে পারে। কিন্তু সমাধানের পথ খুঁজে পায় না। এরও আবার দুটো ভাগ আছে। প্রত্যক্ষ সংকট আর পরোক্ষ সংকট। প্রথমে পরোক্ষ সংকটের কথা ভাবা যাক। যেমন দেশ থেকে টাকা পাচার, বড় বড় প্রকল্পে অস্বাভাবিক ব্যয় বৃদ্ধি, ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ ইত্যাদি। যখন ফলাও করে প্রচার হয় তখন মানুষ এসব কথা শোনে, সমাজে তার প্রভাব টের পায়, সংকট নিয়ে নিজেরা কথাবার্তা বলে আর ভাবে এসব বিষয়ে আমার কী করার আছে? সরকার আছে, সরকার দেখবে। কিন্তু কিছু বিষয় আছে, প্রত্যক্ষ সংকট এবং জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলে। দ্রব্যমূল্য তার মধ্যে অন্যতম। সাধারণ মানুষের যা আয়, তা পুরোটা ব্যয় করার পরও যখন সংসার চলে না তখন সে ক্ষুব্ধ হয়। কী করা উচিত তা নিয়ে ভাবে না বরং কী করতে হবে সেটা করে। সাধারণ মানুষের দৌড় তো তার আয়ের সীমানা পর্যন্তই। তাই সে খাওয়া কমায়, কাপড় কেনা কমায়, প্রয়োজনীয় জিনিসের তালিকা ছোট করতে থাকে। সমস্যার কারণ দূর করতে না পেরে নিজেদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি করে। প্রধানত দাম্পত্য কলহে লিপ্ত হয়, স্ত্রীকে মারধর করে, সন্তানদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে, বাবা-মাকে অপমান করে আর নিজেকে অপদার্থ ভাবতে থাকে।
এ রকম সময়ে যাদের দায়িত্ব সমস্যার সমাধান করা, তারা যদি দায়িত্ব এড়িয়ে যান, তাহলে কেমন হয়? অথবা যদি তারা এমন পরামর্শ দেন যাতে সমস্যা দূর না হয়ে বরং যাদের জীবনে সমস্যার আঘাত আছে তাদেরকেই সহ্য করার বা বিকল্প পথ বের করার কথা বলা হয়, তাহলে কেমন লাগে? কাঁচা মরিচের দাম এক হাজার টাকা উঠার পর আমদানির ঘোষণা আসতে না আসতেই কেজিপ্রতি তিনশ টাকা কমে গেল। এই কমে যাওয়াকে অর্থনীতির ডিমান্ড সাপ্লাই তত্ত্বের সঙ্গে মেলানো যাবে কেমন করে?
একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, বাংলাদেশে দেখা যায়, মজুদ আছে, সরবরাহ আছে, তারপরও হঠাৎ করে জিনিসের দাম বেড়ে যায়। পেঁয়াজ, ডাবের ক্ষেত্রে দেখলাম। কাঁচা মরিচের কেজি এক হাজার টাকা দেখলাম। সিন্ডিকেটের কথা দায়িত্বশীল মন্ত্রীরাও বলেন। আমরা মনে করি, সরকার দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে। এই নিত্যপণ্যের মৌসুমি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে কি না, তা জানতে চান তিনি।
এর জবাব দিতে গিয়ে এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন ডিম নিয়ে শুরু করেছে। ডিমের দাম কমলে বেশি সেদ্ধ করে ফ্রিজে রেখে দেবেন। অনেক দিন ভালো থাকবে, সহসা নষ্ট হবে না। রান্না করতে পারবেন, ভর্তা বানাতে পারবেন।’ তিনি বলেন, ‘সিন্ডিকেটের ওপর নির্ভরশীলতা কমায় দেব, বিকল্প ব্যবস্থা করব। সিন্ডিকেট এভাবেই ভেঙে যাবে।’ বর্ষাকালে কাঁচা মরিচের দাম বাড়ে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিকল্প ব্যবস্থা তো রয়েছে। কাঁচা মরিচ এখন শুকনা করে রেখে দেওয়া যায়, পেঁয়াজ শুকিয়ে সুন্দর করে রেখে দেওয়া যায়। যে জিনিসটা বেশি হবে, সেটা ভালো করে রোদে শুকিয়ে রেখে দিলে অনেক দিন ব্যবহার করা যায়।
সেই একই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘খাদ্যপণ্য নিয়ে কয়েকটা হাউজ ব্যবসা করে। যখনই তারা আর্টিফিশিয়ালি (কৃত্রিমভাবে) দাম বাড়ায়, আমরা আমদানি করি, বিকল্প ব্যবস্থা করি। যাতে তারা বাধ্য হয় দাম কমাতে। আমরা তো সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেই।’ এর আগে কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ জুন গণভবনে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, বর্ষা হলে কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে যায়। তাই কাঁচা মরিচ উৎপাদন করে রোদে শুকিয়ে রেখে দেন। পরে পানি ছিটিয়ে দিলে এটি তাজা হয়ে যায়। খরচ কমিয়ে সংসার চালানোর ক্ষেত্রে এই পরামর্শ কাজে লাগতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যারা প্রধানমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী, আর্টিফিশিয়ালি দাম বাড়িয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করল, তাদের কি শাস্তি হবে না?
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে দৈনিক ডিমের চাহিদা সাড়ে তিন থেকে চার কোটি পিস আর পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সংগঠনগুলোর হিসাব মতে, ডিমের দৈনিক চাহিদা ৪ কোটি ৭০ লাখ থেকে ৮০ লাখ পিস। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে ডিম উৎপাদন হয়েছে ২ হাজার ৩৩৫ কোটি। প্রতিবছর দেশে ডিমের উৎপাদন বাড়ছে। সে হিসেবে দৈনিক গড় উৎপাদন দাঁড়ায় ৬ কোটি ৪০ লাখের কাছাকাছি। তাহলে তো ডিমের ঘাটতি থাকার কথা নয়। জুলাই মাসে খুচরা বাজারেও ডিম বিক্রি হয়েছে ১০ টাকা পিস, আগস্ট মাসে ডিমের দাম ১৫ টাকা পিস। প্রতিদিন চার কোটি ডিম বিক্রি হলে ক্রেতাদের পকেট থেকে বাড়তি চলে যায় ২০ কোটি টাকা। তাহলে এক মাসে ভোক্তারা বেশি খরচ করেছেন ৬০০ কোটি টাকা। গত কয়েক মাস ধরে মুরগির খাদ্যের দাম তো একই পর্যায়ে আছে, বিদ্যুৎ এবং পরিবহন খরচও আগের মতোই। তাহলে দাম বাড়ানোর কারণ কী? বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অভিযোগ করেছেন, কাজী ফার্ম, প্যারগন, নারিশ গ্রুপই ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে।
বাংলাদেশে ডিম বেশি খায় কারা? যারা মাছ, মাংস খেতে পারে না দামের কারণে তাদের জন্য আমিষের একমাত্র বিকল্প ডিম। এক কেজি মাংসের দাম ৮০০ টাকা। প্রতি কেজিতে ১২ পিস করলে প্রতি পিসের দাম পড়ে প্রায় ৬৭ টাকা। ব্রয়লার মুরগির প্রতি পিসের দাম পড়ে ২৫ টাকা, সবচেয়ে সস্তা পাঙাশ মাছের এক পিসের দাম পড়ে ২০ টাকা। এর সঙ্গে আছে রান্নার তেল মসলার খরচ। ডিমের ক্ষেত্রে সে খরচ খুবই কম, সহজে রান্না করা এবং খাওয়া যায়। সে কারণেই শ্রমিক, মেসে বাস করে যারা এবং স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে ডিম শুধু প্রিয়ই নয়, প্রয়োজনীয় খাবার। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে যে খাত থেকে সেই গার্মেন্টস খাতের শ্রমিকদের আমিষের প্রধান উৎস ডিম। মাসে ১০ হাজার টাকা আয় করে যে শ্রমিক সে আর কী খেতে পারে? এসব শ্রমিক এবং দিন এনে দিন খাওয়া মানুষদের ডিম সিদ্ধ করে ফ্রিজে রেখে দেওয়ার পরামর্শ কতটা কার্যকরী? কিংবা ফ্রিজে মরিচ, পেঁয়াজ সংরক্ষণ করার পরামর্শ কতটা বাস্তবসম্মত? কারা দাম বাড়ায়, কারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে, কারা মাঠের ফসল আর পাতের খাবার নিয়ে একচেটিয়া ব্যবসা করে এবং সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে তা কি সরকারের জানা নেই?
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণ মতামত দেয়। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব সরকারের। ফলে শুধু সাফল্যের প্রশংসা নয়, ব্যর্থতার দায় তাদেরই নিতে হবে। প্রশ্ন উঠবে, উন্নয়ন হচ্ছে অবকাঠামোর কিন্তু জনগণের জীবনমানের উন্নতি হচ্ছে কি? এই প্রশ্নের সমাধানের লক্ষ্যে যে বিতর্ক তা শুধু জনগণের জীবনমানের উন্নতি ঘটাবে না, উন্নতি ঘটাবে গণতান্ত্রিক চেতনার। মানুষ যুক্তি করবে, নির্বাচনে তার যুক্তি অনুযায়ী ভোট দেবে। রাজনীতিতেও বিকল্প খোঁজার পরিবেশ গণতন্ত্র ও জবাবদিহিতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ কথা সত্য যে, সব বিকল্প সব সময় ভালো হয় না। তাই শুধু বিকল্প নয়, চেষ্টা করতে হবে উন্নততর বিকল্প প্রতিষ্ঠার। বিকল্প প্রতিষ্ঠার এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক। লেখক: রাজনৈতিক সংগঠক ও কলামিস্ট
বিএনপি যখন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে ব্যস্ত রয়েছে, ঠিক সেই সময় আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রকাশিত কয়েকটি রিপোর্ট দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকা এবং ডয়চে ভেলেতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন ও দ্য টেলিগ্রাফের একটি প্রতিবেদন বাংলাদেশের রাজনীতির পরিবর্তিত পটভূমি সম্পর্কে আলোকপাত করেছে।
তিনটি রিপোর্টের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারত সরকারের অবস্থান যা সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত অস্পষ্ট ছিল। তবে প্রতিবেদনগুলোতে বাংলাদেশকেন্দ্রিক ভূ-রাজনৈতিক বিষয় এবং ভারতের অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে। আনন্দবাজার এবং ডয়চে ভেলেতে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, নয়াদিল্লি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটা বার্তা পাঠিয়ে জানিয়েছে যে, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার দুর্বল হলে তা ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য সহায়ক হবে না। কূটনৈতিক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, নয়াদিল্লি একাধিক স্তরের কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বাইডেন প্রশাসনকে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। এর থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন সরকারের যে হস্তক্ষেপ সেটি সম্পর্কে ভারতের কিছুটা হলেও আপত্তি রয়েছে। যদিও ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ একটি স্বচ্ছ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করে। তবে নয়াদিল্লি বিশ্বাস করে যে, বাংলাদেশের নির্বাচনকে সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা গৃহীত কিছু পদক্ষেপ শেখ হাসিনা সরকারকে দুর্বল করতে পারে, যা ভারত এবং দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যান্য প্রতিবেশীদের জন্য হুমকি হতে পারে।
দ্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত একটি পৃথক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সংক্রান্ত বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। প্রথমত, উভয় দেশই বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ধারণাকে সমর্থন করে এবং দ্বিতীয়ত, তারা চীনপন্থি এবং ইসলামপন্থি নেতাদের বাদ দিয়ে দলে অসাম্প্রদায়িক এবং জনপ্রিয় প্রার্থীদের গুরুত্ব প্রদানের ব্যাপারে আওয়ামী লীগকে আহ্বান জানাবে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, উভয় দেশই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করতে চায় না।
ফলে এসব তথ্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রতিবেদনগুলো এ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য আপাতদৃষ্টিতে সুবিধাজনক বলে মনে হচ্ছে। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ভারত সরকার যদি বাংলাদেশি জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার পরিপন্থি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তবে তা হবে উদ্বেগের বিষয়। তিনি এ ধরনের হস্তক্ষেপকে দুর্ভাগ্যজনক এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে লঙ্ঘন বলে মনে করেন। অন্যদিকে, মির্জা ফখরুল এবং তার দল বাংলাদেশের জন্য কার্যকর করা মার্কিন ভিসা নীতির প্রশংসা করেছেন, যা ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড’-এর উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
জঙ্গিবাদের প্রতি সরকারের জিরো টলারেন্স প্রদর্শন এবং চরমপন্থার বিরুদ্ধে তাদের সক্রিয় পদক্ষেপ ভারতের প্রশংসা অর্জন করেছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর নাজুক ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কার্যকরভাবে জঙ্গিবাদ দমন এবং বাংলাদেশের মাটিকে সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করতে না দিয়ে, শেখ হাসিনার সরকার ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত এলাকায় একটি নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে অবদান রেখেছে। এই সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি শুধু উভয় দেশকে সরাসরি উপকৃত করেনি, বরং বৃহত্তর দক্ষিণ এশীয় প্রেক্ষাপটে আস্থা ও সহযোগিতার পরিবেশ গড়ে তুলতেও অবদান রেখেছে।
অন্যদিকে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি শাসনামলের তিক্ত অতীতের স্মৃতি এখনো ভারত সরকারের চেতনায় রয়ে গেছে, যা তাদের বাংলাদেশে বিএনপি সরকারের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তনকে সমর্থন করার বিষয়ে সতর্ক করে তুলেছে। এই সময়কালে ভারত ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম (উলফা)-এর মতো গোষ্ঠীগুলোর জন্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ পরিবহনের জন্য বাংলাদেশের ভূখণ্ডের দুর্ভাগ্যজনক ব্যবহার প্রত্যক্ষ করেছে, যা তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে অশান্তি সৃষ্টিতে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রেখেছিল। ফলে এই বিষয়গুলো নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়ে ভারতের উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তা ছাড়া এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ধর্মীয় আদর্শভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির ঘনিষ্ঠতা। এই ঐতিহাসিক ঘটনা ও অনুষঙ্গের সংমিশ্রণ আঞ্চলিক শান্তি ও সহযোগিতার প্রতি বিএনপির প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভারতের মনে সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। ফলে অতীতের অভিজ্ঞতা এবং বিএনপি সরকারের সঙ্গে জড়িত সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে বাংলাদেশে এ ধরনের প্রশাসনকে স্বাগত জানানো ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের মতো দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশি রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ কাম্য না হলেও খুবই স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এ ধরনের বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক বা বৈশ্বিক রাজনীতিতে বাংলাদেশের শক্তিশালী অবস্থানকে নির্দেশ করে। কারণ এর আগে পরাশক্তিগুলোকে বাংলাদেশকে নিয়ে এত শক্ত অবস্থান গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। ফলে সরকার, বিরোধী দল এবং বাংলাদেশের জনগণ কীভাবে আন্তর্জাতিক পরাশক্তিদের হস্তক্ষেপ মোকাবিলা করে জাতির স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে সেটাই দেখার বিষয়।
বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো যদি সত্য হয়, তাহলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে। আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি যৌথ অঙ্গীকারের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ভারতের মধ্যে ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব, ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ধারাবাহিকতার গুরুত্বের ওপর জোর দেওয়াটাই স্বাভাবিক। বিভিন্ন ধরনের আলোচনা থাকলেও, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দলের জিরো টলারেন্সের অবস্থান এবং অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য তাদের প্রচেষ্টা বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে ইতিবাচকভাবে অনুরণিত হচ্ছে, যা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থন আদায় করার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলকেই সাহায্য করবে। শেষ পর্যন্ত আসন্ন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের জয়ের পাল্লাকেই তা ভারী করবে।
লেখক : অধ্যাপক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ফয়েজ আহ্মদ। প্রখ্যাত সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন আর্ট গ্যালারি ‘শিল্পাঙ্গন’। প্রগতিশীল পাঠাগার ‘সমাজতান্ত্রিক পাঠাগার’-এর প্রতিষ্ঠাতা। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) প্রথম প্রধান সম্পাদক অকৃতদার এই কবি ও ছড়াকার মারা যান ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। অতীতের সঙ্গে অধুনার সংযোগ ঘটাতে চিন্তা পাতায় ছাপা হলো তার লেখা উপসম্পাদকীয়
নির্বাচন অত্যন্ত নিষ্ঠুর হতে পারে না; নির্বাচনের সঠিক ফলাফল সম্পর্কে এ বক্তব্য নয় নির্বাচন পদ্ধতি ও তার প্রচারাভিযান। পদ্ধতি সম্পর্কেই-বা কী বলা চলে? নির্বাচন ফলবান করতে হলে সাধারণত বলবান হতে হবে; শুধু তাই নয়, অর্থ বলিদান একটি প্রধান উপায় বলে অনেকে সম্প্রতি প্রতিপন্ন করেছেন। মিথ্যা, অর্থ, ব্যালেট বাক্স হরণ, শক্তি প্রয়োগ, শাসনযন্ত্রের অপব্যবহার (কোনো কোনো, ক্ষেত্রে বন্দুক চালনা) ইত্যাদি প্রয়োগ সম্পর্কেও বলছি না। এই অদ্ভুত প্রচারাভিযানের মাধ্যমেও নির্বাচনে জয়লাভ করা সম্ভব। যেমন ঐতিহাসিক সত্য ফাঁস করে দিয়ে অথবা পারিবারিক সত্য দেশবাসীর কাছে প্রচার করে মুষ্টিবদ্ধ উড়ন্ত পতাকা নিয়ে পরিষদ কক্ষে প্রবেশ দুঃসাধ্য নয়।
তবে সত্য এমনই মোক্ষম হতে হবে যে, তার মূল তথ্য যেন সত্যের অপলাপ না হয়। অর্থাৎ সত্য প্রচারণাটি হবে উত্তেজক, অসাধারণ বা আপাতদৃষ্টিতে অদ্ভুত ও ব্যঞ্জনাপূর্ণ, যা শ্রবণের পর প্রতীয়মান ভোটদাতাগণ প্রদ্যোতিত হয়ে উঠবেন। ইংল্যান্ডের যুদ্ধকালীন প্রধানমন্ত্রী ও নোবেল পুরস্কার বিজয়ী স্যার উন্সটন চার্চিল পঞ্চান্ন সালের প্রথম সিকিতে নিজ এলাকায় নির্বাচনী বক্তৃতামালার শুরুতেই এমন এক ঐতিহাসিক গোপন সত্য প্রকাশ করেছিলেন যে, তারপরে উক্ত নির্বাচনে রক্ষণশীল দলের প্রার্থীর বিজয়ের জন্যে আর যে কোনো প্রকার প্রচারণাই যেন বাহুল্য ছিল। একটি মাত্র দূরদর্শিতাপূর্ণ নির্দেশ সংক্রান্ত সত্য তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করেই তিনি এলাকার ভোটারদের পকেটে পুরে ফেলতে সক্ষম হয়েছিলেন। চার্চিল নির্বাচন এলাকায় প্রথম বক্তৃতায় প্রকাশ করেন যে, ‘দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে মিত্রপক্ষের জার্মানি ও বার্লিন বিজয়ের সময় আমি মন্টিকে (ফিল্ড মার্শাল মন্টেগোমারি) জার্মানদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অস্ত্র মাটির নিচে লুকিয়ে রাখতে বলেছিলাম, যাতে সোভিয়েত রাশিয়ার হাতে এ সমস্ত অস্ত্র না পৌঁছায়। কারণ, এই অস্ত্র ভবিষ্যতে সোভিয়েতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে হতে পারে (তাই ঘটেছে পরে)।
সে সময় চার্চিলের এই তথ্য প্রকাশের ফলে যুদ্ধকালীন মিত্র পক্ষের শিবিরে ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ব্রিটেনের কম্যুনিস্ট পার্টির সে সময়কার মুখপত্র ডেইলি ওয়ার্কার পত্রিকায় সেদিনই প্রতিবাদী কণ্ঠে বিশাল হেডিং-এ প্রথম পৃষ্ঠাব্যাপী খবর বের হয় ‘রিজাইন চার্চিল।’ সম্পাদক কর্তৃক লিখিত সংবাদ নিবন্ধে স্যার উন্সটনকে বিশ্বাসঘাতক বলে আখ্যায়িত করে অবিলম্বে পদত্যাগের দাবি করা হয়েছিল। সম্পাদক বলেন, দ্বিতীয় ফ্রন্টের দ্বিতীয় অধিনায়ক ব্রিটিশ ফিল্ড মার্শাল মন্টেগোমারিকে অস্ত্র লুকিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়ে চার্চিল মিত্রপক্ষের অংশীদার সোভিয়েত রাশিয়ার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। চার্চিলের নির্দেশ ঐতিহাসিকভাবে রূঢ় সত্য হলেও কঠোর মন্তব্য ও অভিযোগের কোনো উত্তর ছিল না বললেই চলে। কিন্তু নির্বাচনী অভিযান তাঁর এই উক্তি রক্ষণশীল দলের সমর্থকদের কাছে তাঁকে ‘দূরদর্শী ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞাসম্পন্ন’ নেতা হিসেবে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করে।
এ ধরনের বিশ্ব রাজনীতির সাথে সম্পর্কিত নয়, কিন্তু পারিবারিক উত্তেজনাকর ও ব্যঞ্জনাপূর্ণ একটি ঘটনা চুয়ান্ন সালের নির্বাচনের যুক্তফ্রন্টের জনৈক প্রার্থীর জয়লাভ সহায়কই শুধু হয়নি, প্রদেশের রাজনৈতিক আলোচনার রসাত্মক বিষয়বস্তুতেও পরিণত হয়েছিল।
যুক্তফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থীদের নামের তালিকা অভ্যন্তরীণ কলহের ফলে একদিনে বা একবারে প্রকাশিত হয়নি। প্রতি রাত্রে খন্ড খন্ড লিস্ট আসত বলে পত্রিকার অফিস রিপোর্টার ও অন্যদের অপেক্ষা করতে হতো অধিক রাত্রি পর্যন্ত। প্রার্থীদের মনোনয়নের পর স্ব-স্ব এলাকা থেকে প্রার্থীরা প্রতি রাতেই বক্তৃতার অসংখ্য টেলিগ্রাম পাঠাতেন এবং টেলিফোন পেলে তো কথাই ছিল না। সুতরাং আমাদের অধিক রাত্রি না জেগে উপায় ছিল না। এ ছিল উৎসাহী প্রতিটি পত্রিকারই অবস্থা। সে ক্ষেত্রে কাজ শেষে নিউজ টেবিলে ফাইল মাথায় দিয়ে ঘুমিয়ে পড়া ছিল নিয়মিত ব্যাপার।
কিন্তু প্রভুভক্ত পিয়ন বশীর ছিল বেরসিক। ভোর ছ’টার দিকে কেউ ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাবে, তা আমরা চাইনি। সে টেবিলের পাশে এসে কারো নাম উচ্চারণ না করে এক সুরে বলে যেতে লাগলো স্যার! স্যার! স্যার!
ঘুমের মধ্য থেকে কে একজন বলল হুঁ! স্যার, বেশি কাগজ চায়।
ক্ষেপে উঠলাম। আমরা কি জানি! বলেন গিয়ে সম্পাদক সাহেবকে (তখন থেকেই জনাব তফাজ্জল হোসেন মানিক মিঞা ইত্তেফাকের সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী সম্পাদক)।
বশীর নাছোড়বান্দা। বললাম ওয়াদুদ সাহেবকে খুঁজে বের করুন। আবদুল ও ওয়াদুদ সাহেব তখন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং নব প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাকের একনিষ্ঠ ম্যানেজার। বশীর এক অসাধারণ প্রকৃতির পিয়ন ও হকার। পত্রিকার প্রতি তার দরদ ছিল অপরিসীম, একটি কপিও যেন অবিক্রীত না থাকে। তাই সে অতিরিক্ত সংখ্যক কাগজের খদ্দের ছেড়ে দিতে নারাজ। কাজের ফাঁকে ফাঁকে সে হতো হকার। হকার বশীরের কাগজ বিক্রয় করার অভিনব পন্থা ছিল। প্রতিদিনের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বা মুখরোচক খবরের মূল শিরোনাম চিৎকার করে উচ্চারণ করতো সে এবং ঢাকার বিশেষ বিশেষ অঞ্চলে প্রধানত ইত্তেফাক বিক্রয় করে বেড়াত। রাজনৈতিক বা ঘটনার দিক থেকে কোন হেডিংটা ক্রেতাদের কাছে আকর্ষণীয়, সে বিষয়ে তার অভিজ্ঞতা ছিল প্রচুর। একবার বশীর হাটখোলা রোডে চিৎকার করে কাগজ ‘হক’ করছিল ‘খবর নেই, খবর নেই। ভাসানীর কোনো খবর নেই!’
পথচারী, দোকানদার, গাড়িচালক সবাই এসে উৎকণ্ঠার সাথে তাকে ঘিরে ধরলো এবং প্রায় বলপূর্বক ইত্তেফাক কিনে নিতে লাগলো। মুহূর্তের মধ্যে তার কয়েকশ’ পত্রিকা বিক্রয় হয়ে গেল। সবাই রাস্তায় দাঁড়িয়ে দ্রুত কাগজটার ওপর চোখ বুলিয়ে অবাক। কোথায় ভাসানীর খবর? পাঠক ক্রেতাগণ ভেবেছিলেন, মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী সম্ভবত নিখোঁজ! তারই বৃত্তান্ত লিপিবদ্ধ আছে অর্থাৎ পুলিশ রাতের অন্ধকারে মওলানা সাহেবকে তুলে নিয়ে গোপন স্থানে আটক রেখেছে। অথবা মওলানা ভাসানী নিজেই নৌকা করে যমুনা পাড়ি দেয়ার সময় নিখোঁজ হয়েছেন। মওলানা সাহেব মাঝে মাঝে নৌকায় করে গ্রামাঞ্চলে ঘুরে বেড়াতেন এবং সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখের অংশীদার হয়ে তাদের রাজনৈতিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতেন। সে সময় তাঁর নিজের দলের সাথেও তিনি কোনো কোনো ক্ষেত্রে যোগাযোগ রাখতে পারতেন না। সবাই চেপে ধরলো বশীরকে, কোথায় ভাসানীর খবর? কাগজে তো ভাসানীর কোনো খবর নাই?
বশীর : আমি তো তাই বলছি, আজকের কাগজে ভাসানীর কোনো খবর নাই, (তখন প্রতিদিনই পত্রিকায় মওলানা সাহেবকে নিয়ে কোনো না কোনো খবর থাকতো। সেদিনটা ছিল ব্যতিক্রম)! অবাক ক্রেতাদের সামনে বশীর পুনরায় চিৎকার করে উঠলো খবর নাই, ভাসানীর কোনো খবর নাই! পরবর্তীকালে ইত্তেফাক সম্পাদক মানিক ভাই কোনো একটা কারণে বশীরের ওপর রেগে গিয়ে তাকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেন। এ জাতীয় বরখাস্ত তাকে (এবং অনেককে) ইতোপূর্ব বহুবারই করা হয়েছিল। দ্বিতীয় দিন সম্পাদক তা ভুলে গেছেন এবং কোনোদিনই তা কার্যকর হয়নি। কিন্তু এবার সম্পাদক সাহেব একটু কঠোর ছিলেন। অবস্থা লক্ষ করে বশীর তার বাসায় ফিরে যায়। বিকেলে সে পুনরায় ইত্তেফাক অফিস এসে উপস্থিত; কিন্তু সে একা নয় বশীরের স্ত্রী ও পাঁচটি শিশুসন্তানসহ!
সোজা সম্পাদকের কক্ষে গিয়ে বলল স্যার, আমি যখন ইত্তেফাকে আসি, তখন ছিলাম একা। ইত্তেফাকে চাকরিকালেই এই ঘর-সংসার ও সন্তান। এরা ইত্তেফাকের সন্তান। একা এসেছিলাম, একা চলে গেলাম। ইত্তেফাকই এদের দেখবো। স্ত্রী-সন্তানদের ইত্তেফাক অফিসে রেখে বশীর নিরুদ্দেশ যাত্রার উদ্যোগ নিল। প্রভাবশালী পত্রিকার প্রখ্যাত সম্পাদক অবাক বিস্ময়ে চেয়ে রইলেন।
সেই বশীর এখনও দৈনিক ইত্তেফাকে অব্যাহত চাকরিতে কাজ করে যাচ্ছে, তার পদোন্নতিও হয়েছে। ইত্তেফাক বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করলে সিঁড়ির কাছাকাছি শ্মশ্রুম-িত যে ভদ্রলোককে এক সময় একটি ছোট টেবিলের পাশে বসে থাকতে দেখা যেত, সে-ই আমাদের বহু পরিচিত বশীর। ইত্তেফাকের প্রাণের সাথে সম্পর্কিত জনাব বশীর পুত্রগণ এখন স্কুল-কলেজে। এহেন বশীরের হাত থেকে রেহাই পাওয়া ছিল দুঃসাধ্য কাজ। টেবিলের ওপর উঠে বসে বললাম, কোথায় তোমার সেই ভদ্রলোক? দেখি কথা বলে, কত কপি চান তিনি? যত সব ঝামেলা।
খদ্দের ভদ্রলোক কক্ষে প্রবেশ করতেই মনে হলো, চিনি। মুসলিম লীগ নেতা জনাব সবুর খানের ভাই, ব্যারিস্টার জনাব আবদুল গনি। যুক্তফ্রন্ট খুলনায় সবুর সাহেবের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রার্থী মনোনয়নদানের জন্যে চেষ্টা করছিল। শেষ পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে তাঁরই ভাই ব্যারিস্টার সাহেবকে মনোনয়ন প্রদান করা হয়েছিল। সৎ, শান্ত প্রকৃতির ও ঝামেলাবিহীন ব্যারিস্টার গনি সাহেব সোলার হ্যাট মাথায় দিয়ে সাইকেলে চড়ে হাইকোর্ট যেতেন। সে কারণে তিনি অনেক চক্ষু এড়াতে পারেননি। সবুর খানের বিপরীতে ব্যারিস্টারের জয়লাভের সম্ভাবনা ক্ষীণ ছিল, যুক্তফ্রন্টের নৌকাই ছিল তাঁর একমাত্র প্রধান সহায়।
গনি সাহেব যে। আমি এসেছি আজকের কাগজের পাঁচ হাজার কপি নিতে। এ কপি পেলেই লঞ্চে করে খুলনায় যাত্রা করবো। আমরা ভুলেই গিয়েছিলাম, সেদিনের পত্রিকায় বড় হরফে প্রকাশিত সবুর খান সাহেব সম্পর্কিত একটি বিশেষ কোর্ট নিউজের কথা। আগের দিন খুলনা থেকে এক ভদ্রলোক এসে জানিয়ে গিয়েছিলেন যে, ঢাকার লোয়ার কোর্টে সবুর সাহেবের বিরুদ্ধে একটা মামলা সেদিনই রুজু করা হবে। রাজনৈতিক মামলার কথা বিবেচনা করে, আজাদ পত্রিকার সন্তোষ বসাক ও ইত্তেফাকের আমি কোর্টে সময়মতো উপস্থিত। অন্য কাগজের কোর্ট রিপোর্টারও সম্ভবত ছিলেন। নতুন কাগজ বলে কোর্ট রিপোর্টার তখন আমাদের ছিল না। উকিলের সাহায্য নিয়ে প্রয়োজনবোধে কোর্টের বিশেষ বিশেষ রিপোর্ট করা হতো। কিন্তু কোর্টে বাদীপক্ষের অর্জিত ব্যাপারে ভিন্নতর, রাজনৈতিক নয়। বাদীপক্ষের বক্তব্যে সবুর খান সাহেবকে (নামের পূর্বে খান সংযোজন পরবর্তীকালে আইয়ুব আমাদের অলঙ্করণ খান এ. সবুর) জড়িয়ে একটি বিবাহ সংক্রান্ত অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। আমরা হতবাক। বাদী সংশ্লিষ্ট মহিলার নাম উল্লেখ করে তাঁকে নিজের স্ত্রী বলে দাবি করেছেন। অফিসে ফিরে সম্পাদকের সাথে পরামর্শ করেই খবরটা প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপানোর জন্যে লেখা হলো। রাত্রে এক উকিলকে দেখিয়েই পরদিন সকালের কাগজে কোর্টে উত্থাপিত, এই বিবাহ সংক্রান্ত খবরটি প্রকাশিত হয়।
ক্ষমতার লড়াইয়ের নিষ্ঠুর নির্বাচনে ব্যক্তিগত ঘটনা কি ভয়ঙ্কর অস্ত্ররূপে ব্যবহৃত হতে পারে! আপন প্রতিদ্বন্দ্বী ভাই (উর্দুতে যাকে বলে ‘হামশিরা’ এক মায়ের দুধ যারা পান করেছেন!) ভয়ানক এক শাণিত অস্ত্র, ইত্তেফাকে প্রকাশিত সংবাদটির জন্যে, পাঁচ হাজার কপি ক্রয় করতে এসেছেন প্রতুষ্যে!
ইত্তেফাক থেকে যতসংখ্যক সম্ভব কপি নগদ পয়সায় ক্রয় করে ব্যারিস্টার গনি সাহেব খুলনা যাত্রা করলেন। নির্বাচনী এলাকায় প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ইত্তেফাক টাঙিয়ে দেয়া হলো, প্রত্যেকটি নির্বাচনী বক্তৃতায় লীগবিরোধী বক্তাগণ এই কোর্টে উত্থাপিত খবরটি উল্লেখ করতে দ্বিধা করলেন না। এবং এই ধারালো খবরই প্রতাপশালী সবুর সাহেবের পরাজয়ের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ালো।
মুসলিম লীগের নেতা জনাব সবুর যিনি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন, সেই নির্বাচনে নিজের ভাই যুক্তফ্রন্ট প্রার্থী ব্যারিস্টার জনাব আবদুল গনির কাছে পরাজয়বরণ করতে বাধ্য হন। নির্বাচন প্রায়ই এমন নিষ্ঠুর হয় প্রচারের শাণিত অস্ত্র সহোদরকেও নিদারুণ আঘাত হানতে দ্বিধাবোধ করে না।
লেখক: বরেণ্য সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
যেকোনো জেলা শহরে, ব্যাচেলরদের জন্য বাসাভাড়া একটা বিড়ম্বনার বিষয়। আর রাজধানী ঢাকা শহরে কী যে অবস্থা, তা কেবল ভুক্তভোগীমাত্রই জানেন। অধিকাংশ আবাসিক এলাকায় ব্যাচেলরদের জন্য বাসা ভাড়া দেওয়া হয় না। তবু কোনো কোনো ফ্যামিলির সঙ্গে গোপনে সাবলেটে অনেকেই থাকেন। সেখানে ছেলে বা মেয়ে, যা-ই হোক না কেন, শুধু নিরাপত্তা এবং নিশ্চয়তা থাকলেই কোনো আগপিছ ভাবেন না তারা। বাড়িওয়ালাদের কাছে অবিবাহিত কেউ যেন ‘আপদ’ কিংবা ‘আতঙ্কে’র নাম। যে কারণে তারা বাধ্য হয়েই মেসের সন্ধান করেন। এ সুযোগটিই কাজে লাগাচ্ছে কিছু পক্ষ। এখন পর্যন্ত সন্ধান পাওয়া গেছে, তৃতীয় পক্ষের। তবে এর বাইরেও অন্য কোনো পক্ষ রয়েছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় মেয়েদের জন্য নির্দিষ্ট মেস গড়ে উঠেছে। সেখানে তারা মোটামুটি নিশ্চিন্তে এবং নিরাপদেই থাকতে পারেন। কিন্তু পুরুষ ব্যাচেলর শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবীদের জন্য সেভাবে কোনো নির্দিষ্ট জায়গা নেই। যে কারণে হন্যে হয়ে তাদের বাসা খুঁজতে হয়। যদিও তারা পান, তবু সেখানে রয়েছে নানা ধরনের জটিলতা। দ্বিতীয় বা তৃতীয় পক্ষের ব্যাপারে বাড়ির মালিক যতই না জানার ভান করুক, তার অগোচরে কিছু করা একেবারেই অসম্ভব।
এ বিষয়ে শুক্রবার দেশ রূপান্তরে ‘বাসাভাড়ায় “তৃতীয় পক্ষ” আতঙ্ক’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে ব্যাচেলর এবং চাকরিজীবীদের নানা ধরনের সমস্যা এবং অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে কীভাবে তৃতীয় পক্ষ তৈরি হয়েছে, তার বিস্তারিত করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, এলাকাভেদে একটি ফ্ল্যাট কয়েক হাত বদল হয়ে শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবীদের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়। প্রথম পক্ষ বাড়ির মালিক। তারা দ্বিতীয় পক্ষকে নির্ধারিত হারে ফ্ল্যাট ভাড়া দেন। দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা লাভে তৃতীয় পক্ষের কাছে ভাড়া দেয় দ্বিতীয় পক্ষ। ব্যাচেলরদের কাছ থেকে রুমের ভাড়া ২ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা এবং সিটপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি আদায় করে ফ্ল্যাট ভাড়া নেয় তৃতীয় পক্ষ। এ ব্যাপারে মালিকরা কিছুই জানেন না বলে তাদের দাবি।
বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১ রয়েছে। প্রচারের অভাবে বাড়ির মালিক বা ভাড়াটিয়া কেউ আইনটি সম্পর্কে তেমন অবহিত নন। কয়েকজন বাড়ির মালিক জানলেও স্বীকার করেন না। ভাড়ানৈরাজ্য রোধে আইনের ৭ ধারায় বলা হয়েছে, বাড়িভাড়া বাবদ ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা যাবে না। বাস্তবতা ভিন্ন। কোথাও কোথাও কয়েকগুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, এই আইনে ব্যাচেলর এবং চাকরিজীবীদের বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে যে ঝামেলার মুখোমুখি হতে হচ্ছে, তা থেকে উত্তরণের কোনো কথা নেই। না থাকার ফলে, উদ্ভব হয়েছে তৃতীয় পক্ষের। একজন বাড়ির মালিক, আইনের বাইরে বাড়তি ভাড়া কোনোভাবেই আদায় করতে পারেন না। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পক্ষ তো দূরের কথা। তিনি জানেন, কত বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটের ভাড়া কত হতে পারে? তা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত রয়েছে। এটাও ঠিক, গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলা, শোলাকিয়া ঈদগাহে হামলার চেষ্টার পর থেকে সারা দেশে ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়া দিতে মালিকরা হিসাবনিকাশ করছেন। আবার কল্যাণপুরে একটি বাড়িতে অভিযানে ৯ জঙ্গি নিহত হওয়ার পর অবিবাহিত তরুণ, যুবকদের বাসা ভাড়া দেওয়া থেকে একরকম মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বাড়ির মালিকরা। অনেকের কথা, প্রয়োজনে বাসা খালি থাকবে তা-ও একজন ব্যাচেলর ভাড়াটিয়া চান না তারা।
এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মাত্র ১০-১৫ শতাংশ হল বা ছাত্রাবাসে থাকেন। বাকি ৮৫-৯০ শতাংশই ভাড়া বাসায় থাকছেন। আর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন এমন ব্যাচেলরের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। সঙ্গে ব্যাচেলর পোশাককর্মী আছেন ৫-৬ লাখ। সব মিলিয়ে প্রায় ৬০ লাখ ব্যাচেলর থাকেন রাজধানীতে।
কোনো বৈধ নাগরিককেই বাসা ভাড়া না দেওয়ার আইন নেই। যদি না তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অপরাধের প্রমাণ থাকে। এসব বিষয় বাড়িওয়ালারা পাত্তা দেন না বলেই তৈরি হয়েছে তৃতীয় পক্ষেরযারা সুযোগ নিচ্ছে অসহায়ত্বের। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ দেখাবে কোন কর্তৃপক্ষ, জানা নেই কারও।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।
প্রাচীন সময় থেকে মানুষের খাদ্যতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে চীজ বা পনির। গরুর দুধের তৈরি পনিরে শরীরকে সুস্থ রাখার প্রয়োজনীয় সব উপাদান পাওয়া যায়।
বর্তমানে সময়ের সাথে সাথে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পনিরের ব্যবহার। আর তাই বিস্কিট থেকে শুরু করে পাউরুটি, পাস্তা, পিৎজা অনেক কিছুতেই পনির ব্যবহার হয়।
পনিরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের মতে, ১০০ গ্রাম পনিরের মধ্যে রয়েছে:
শক্তি - ৩৬২ কিলোক্যালরি
প্রোটিন – ৫.১৭ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট - ৫০ গ্রাম
ক্যালসিয়াম - ৬৯ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম - ১৮১ মিলিগ্রাম
স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড – ৩.৪৫ গ্রাম
কোলেস্টেরল - ৩৪ মিলিগ্রাম
এটি প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে এবং ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস। পনিরের বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে।
পনির ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এবং প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস। এটি বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অনেক উপকারি। পনিরে থাকা ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পনির খেলে অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করা যায়।
পনির ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা শক্তিশালী ও মজবুত দাঁত তৈরিতে অবদান রাখে। পনিরে থাকা কেসিন ফসফোপেপটাইড উপাদান দাঁতের গহ্বর কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া চিউইং চিজ মুখের পিএইচ মাত্রা বাড়াতে পারে এবং সামগ্রিক মৌখিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
পনিরে অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড যেমন কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিডের সমৃদ্ধ উৎস। কোরিয়া ইউনিভার্সিটি এবং ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে এই ফ্যাটি অ্যাসিডে ক্যান্সার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ ছাড়া এই ফ্যাটি অ্যাসিড এথেরোস্ক্লেরোসিস এর বিকাশ রোধ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে।
পনিরে কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিড এবং স্ফিংগোলিপিড রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে স্ফিংগোলিপিড মানুষের কোলন ক্যান্সারকে বাধা দিতে পারে।
এ ছাড়া পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে খাদ্যতালিকাগত ক্যালসিয়াম কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ উপকারি।
পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই উপকারি। এটি প্রসবের সময় সংকোচনকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া উকের দুধ পান করানোর সময় ক্যালসিয়াম পুষ্টির ঘাটতিও পূরণ করে পনির। এটি গর্ভবতী মহিলাদের ভ্রূণের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে।
কিছু ধরণের পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কার্যকারিতা বাড়াতে পরিচিত। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে পনির শরীরের প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটি অসুস্থতা এবং রোগ কমাতে পারে।
প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সুরক্ষিত পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। এটি বয়স্কদেরমধ্যে ইমিউনোসেনেসেন্স (প্রতিরোধ ব্যবস্থার ধীরে ধীরে দুর্বল হওয়া) প্রতিরোধ করতে পারে।
পনির সেলেনিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা থাইরয়েড ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সেলেনিয়ামের থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করে ভাইরাসের বিকাশকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে।
চেডার পনির হল এক ধরনের হার্ড পনির। এটি খাদ্যতালিকায় যোগ করলে তা থাইরয়েড রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
পনিরের আশ্চর্যজনক স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলির মধ্যে একটি হল মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করা। বিশেষ করে ক্যামেমবার্ট জাতের পনির এই ধরনের কাজ করে থাকে। ক্যামেমবার্ট পনির প্রদাহজনক সাইটোকাইনের মাত্রা কমাতে পারে। এটি আলঝাইমার রোগের ঝুঁকি কমায় এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।
পনির ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। এতে থাকা ভিটামিন বি কোষের বিপাক এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে এটি উজ্জ্বল ত্বকের পাশাপাশি ত্বকের দাগ কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
যাদের গরুর দুধে অ্যালার্জি আছে তাদের পনির এড়ানো উচিত। এটি অ্যালার্জি, ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথার কারণ ও হতে পারে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (অতিরিক্ত পনির খাওয়া) কার্ডিওভাসকুলার রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
পনিরের স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ও রয়েছে। যেমন,
কিছু লোকের দুধের প্রোটিন যেমন কেসিনে অ্যালার্জি থাকে। এটি সারা শরীর জুড়ে একটি প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এবং ত্বকে ফুসকুড়ি, সাইনাস কনজেশন এবং ব্রণ জ্বলতে পারে।
অনেকের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা থাকে। সেক্ষেত্রে তাদের পনির না খাওয়াই শ্রেয়। কারণ ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা গ্যাস, পেট ফোলাভাব এবং ডায়রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। অনেক সময় এর কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে।
প্রচুর পরিমাণে পনির খাওয়ার ফলে মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথা হতে পারে। পুরনো পনিরে থাকা টাইরামিন উপাদান কিছু ব্যক্তির মধ্যে মাইগ্রেনকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
যারা মোনোমাইন অক্সিডেস ইনহিবিটরস (MOIs) গ্রহণ করছেন তাদের পনির খাওয়া এড়ানো উচিত। এই ওষুধগুলি হতাশার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এসব ওষুধ পুরনো বা বয়স্ক পনিরে থাকা উপাদান টাইরামিনের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
ঠান্ডা-সর্দি-কাশির সমস্যায়, মেদ কামনো, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, বিভিন্ন সংক্রমণ রুখতে মধু খুবই উপকারী। এর পাশাপাশি মধু কিছুটা অ্যান্টিসেপ্টিকেরও কাজ করে। বাজারে এখন নানা রঙের মোড়কে মধু পাওয়া গেলেও বহু নামী কোম্পানির মধুতেও ভেজাল থাকে। তাহলে খাঁটি মধু চিনবেন কী করে? কয়েকটি সাধারণ পদ্ধতিতেই বোঝা যায় মধু খাঁটি না কি ভেজাল মেশানো। দেখে নিন, খাঁটি মধু চিনে নেওয়ার কিছু উপায়।
- এক গ্লাস পানিতে এক চামচ মধু দিন। তার পরে গ্লাসটি আস্তে আস্তে নাড়াতে থাকুন। মধু যদি খাঁটি হয় তবে এটি গোলকার পিণ্ডের মতো হয়ে গ্লাসের নিচে বসে যাবে এবং পানির সঙ্গে মিশবে না। তবে মধু যদি পানির সঙ্গে তাড়াতাড়ি মিশে যায়, তা হলে সেটি নকল।
- এক টুকরো কাগজের ওপর কয়েক ফোঁটা মধু দিন। খাঁটি মধু হলে তা ছড়িয়ে পড়বে না এবং কাগজে শোষিত হবে না। এক জায়গায় অক্ষত থাকবে। এতে কাগজ হালকা চটচটে হয়ে যেতে পারে। তবে মধু যদি খাঁটি না হয়, তাহলে তা দ্রুত কাগজ শুষে নেবে এবং কাগজে ভেজা দাগ পড়ে যাবে।
- মধু খাঁটি কিনা তা পরীক্ষা করতে, আপনার বুড়ো আঙুলে এক ফোঁটা মধু নিন। যদি খুব চটচট করে এবং আঠালো মনে হয়, তবে সেই মধু খাঁটি। তবে মধু যদি পানির মতো লাগে, তাহলে তা নকল।
- খাঁটি মধুতে খুব মিষ্টি এবং মনোরম সুগন্ধ রয়েছে। অল্প পরিমাণে মধু মুখে দিয়ে দেখুন, যদি তাতে ফুল বা ফলের মতো মিষ্টি গন্ধ থাকে, তবে তা খাঁটি। আর মধু ভেজাল হলে তার স্বাদ অতিরিক্ত মিষ্টি হতে পারে, অথবা মধুতে আরও কিছু উপাদান থাকার কারণে তার স্বাদ কম হতে পারে।
- মধু খাঁটি অথবা নকল কি না, তা বোঝার আরও এক সহজ রাস্তা হল, মধুতে ফেনা হচ্ছে কি না সেটা দেখা। যদি খুব ফেনা হয় তাহলে তাতে ভেজাল মেশানো।
- মোমবাতির সলতে মধুতে ডুবিয়ে সেটা জ্বালানোর চেষ্টা করুন। যদি তা জ্বালাতে সক্ষম হন, তা হলে বুঝবেন এই মধু খাঁটি। আর যদি মোমবাতি না জ্বলে, তাহলে সেই মধুতে ভেজাল রয়েছে।
- এক টুকরো পরিষ্কার সাদা কাপড়ে কয়েক ফোঁটা মধু ফেলে অপেক্ষা করুন খানিকক্ষণ। তারপর পানি দিয়ে তা ধুয়ে ফেলুন। যদি মধুর দাগ একেবারে উঠে যায়, তবে সেই মধু একেবারেই খাঁটি নয়। কারণ মধুর দাগ সহজে যায় না।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।