
বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের প্রতি জনসমর্থন এখনো যথেষ্ট বেশি। পিওর জরিপে ৩৮টি দেশে দেখা গেছে, ৭৮ শতাংশ লোক মনে করে, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা যে আইন প্রণীত হয়, এমন ব্যবস্থা উত্তম। কিন্তু গণতন্ত্রের বিকল্প ব্যবস্থার প্রতি সমর্থন আছে, এমন লোকের সংখ্যাও কম নয়। প্রকৃত হুমকিটা হলো অপেক্ষাকৃত কম পরিণত বা অপরিণত গণতন্ত্রের বেলায়, যেখানে প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল এবং গণতান্ত্রিক অভ্যাসগুলো জনগণের মধ্যে তেমন গ্রথিত নয়। তারপরও পাশ্চাত্যে যা ঘটে, তা এসব দেশকেও প্রভাবিত করে। আমেরিকা একসময় পদানত মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিল। আজ সেই আমেরিকার রাষ্ট্রক্ষমতায় এমন এক ব্যক্তি বসে আছেন, যিনি অনুপ্রেরণা সৃষ্টি তো পরের কথা, বরং বিরাগেরই শুধু জন্ম দিতে পারেন। নবীন গণতন্ত্রকে চারপর্যায়ে নস্যাৎ করে দেওয়া হয়। প্রথম পর্যায়ে ঘটে স্ট্যাটাসকো নিয়ে জনগণের সত্যিকারের অভিযোগ ও অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ। তুরস্কের ধর্মপ্রাণ সংখ্যাগরিষ্ঠরা সেক্যুলার এলিট শ্রেণির দ্বারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে বলে মনে করে এবং সেই কারণে বর্তমান ব্যবস্থায় অসন্তুষ্ট। কয়েক দশক ধরে বিজয়কেতন উড়িয়ে চলার পর গণতন্ত্র কি এখন পিছু হটতে শুরু করেছে? প্রশ্ন উঠছে, এ জন্য যে, বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দিয়েছে, যা থেকে বলা যায় গণতন্ত্র আজ আর আগের অবস্থায় নেই। স্নœায়ুযুদ্ধের সমাপ্তির আগে সামরিক শাসন ছিল বিশ্বরাজনীতিতে একটি অনিবার্য বাস্তবতা। স্নায়ুযুদ্ধোত্তর রাজনীতিতে সামরিক হস্তক্ষেপের প্রবণতা অনেকটা কমে গেলেও তা একেবারে নিঃশেষ হয়ে যায়নি। এখনো আফ্রো-এশিয়ার অনেক দেশেই সামরিক শাসনের উপস্থিতি লক্ষণীয়। সামরিক বাহিনী কোনো কোনো দেশে প্রত্যক্ষভাবে শাসন না করলেও, পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করছে। দুটো কারণে সামরিক বাহিনীর প্রভাব স্নায়ুযুদ্ধকালীন অবস্থা থেকে দুর্বল হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
যুগে যুগে কর্র্তৃত্ববাদী শাসকের আবির্ভাব হয়েছে পৃথিবীতে এটা যেমন সত্য, তেমনি এটাও সত্য যে, কর্র্তৃত্ববাদী শাসকের নির্মম পতনও প্রত্যক্ষ করেছে বিশ্ববাসী। তা সত্ত্বেও কর্র্তৃত্ববাদী শাসকরা শিক্ষা নেননি কখনো। এমনকি নতুন নতুন অবাস্তব আদর্শ প্রচার করে এবং জনগণের কল্যাণ ও উন্নয়ন নিশ্চিতের দোহাই দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে সমকালীন বাস্তবতাকে বিবেচনায় না নিয়ে কর্র্তৃত্ববাদী শাসন জনগণের ওপর চাপিয়ে দিয়ে কর্র্তৃত্ববাদী শাসকরা রাষ্ট্র শাসন করে গেছেন বা বিদ্যমান বিশ্ব ব্যবস্থায়ও তেমন ধরনের শাসকরা জনগণের ওপর কর্র্তৃত্ববাদ চাপিয়ে দিয়ে দেশ শাসন করে চলেছেন।
জনগণ জেনে-বুঝেও শাসকের প্রতি এক প্রকারের আনুগত্য প্রকাশ করে বলে মনে করা হলেও, মূলত জনগণ ভয়ের মধ্যে থাকে বলেই শাসকের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করে না। কেননা শাসক তার প্রতি আনুগত্য আদায় করার জন্য জনগণের মধ্যে ভীতি সঞ্চারের উদ্দেশ্যে গোটা রাষ্ট্রযন্ত্রকে অপব্যবহার ও অপপ্রয়োগ করে জনগণকে অত্যাচার-নির্যাতন ও জেল-জুলুমের ভয় দেখিয়ে ভিন্ন মত দমন করে শাসকের প্রতি জনগণের আনুগত্য আদায় করার জন্য সচেষ্ট থাকে।
কাগামির মতানুযায়ী, বিরোধী মতের লোকেরা শাসকের প্রতি টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করে না ওই ভয়ের কারণেই। পক্ষান্তরে কর্র্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার সম্পূর্ণ বিপরীত এক শাসন ব্যবস্থা। যেখানে মানুষের সব প্রকার মৌলিক অধিকারের ওপর এক ধরনের ঘোষিত এবং অঘোষিত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয় বলে মানুষের মৌলিক অধিকার বিপন্ন হয়ে পড়ে। সর্বদাই শাসকের গুণগান করা কর্র্তৃত্ববাদী শাসনের এক মৌলিক বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়। শাসকের বিরুদ্ধে যায়, এমন ধরনের সর্বপ্রকারের মত প্রকাশ ও প্রচারের অধিকার নিষিদ্ধ ও নিয়ন্ত্রিত থাকে বলে এ ধরনের শাসনাধীন সমাজকে ‘বদ্ধ সমাজ’ বলে অভিহিত করা হয়। বিশ শতকে গণতন্ত্রের জোয়ার বয়ে গিয়েছিল বিশ্ব ব্যবস্থায়। গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ছিল, উন্নয়ন মডেলের একটি মৌলিক উপাদান। এর মধ্যেই জনগণের প্রকৃত মৌলিক অধিকারের বিষয়টি খোঁজা হয়েছিল। তাই দেশে দেশে ছিল গণতন্ত্রের জয়জয়কার। তবে একুশ শতকের পৃথিবীতে গণতন্ত্রের বিপরীতে কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থাকে একটি উন্নয়ন মডেল হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা চলছে। ‘আগে উন্নয়ন, পরে গণতন্ত্র’ এমন একটি প্রচারণা সামনে নিয়ে আসা হয়েছে
তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোয়। ফলে বিশ্বের দেশগুলোয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে এবং পক্ষান্তরে কর্র্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থার রাষ্ট্রের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ মুক্ত সমাজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে এবং বদ্ধ সমাজ ব্যবস্থার সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। এসব দেশে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে একজন মাত্র শাসকের পদতলে নিয়ে এসে সব রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ক্ষুদ্র একটি পরিবার ও চক্রী দলের হাতে কেন্দ্রীভূত করে গণতন্ত্রের কফিনের ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে আধুনিক কর্র্তৃত্ববাদী শাসনের মিনার। আর এখানে মানুষের সব অধিকার অস্বীকার করে শাসন ব্যবস্থার মিনারের চূড়ায় বসে থাকা শাসকের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে বলপূর্বক চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে জনগণের ওপর। জনগণের সমর্থন আছে কি নেই, সে সম্পর্কে ভ্রুক্ষেপ করা হয় না।
কর্র্তৃত্ববাদী শাসনে দেশের সংবিধানকে এমনভাবে সাজানো হয়, যা একমাত্র শাসকের অনুকূল ক্ষেত্র সৃষ্টি করে মাত্র। সংবিধানের দোহাই দিয়ে শাসকরা রাষ্ট্রযন্ত্র এবং এর সব প্রতিষ্ঠানের ওপর অবাধ ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেন। অর্থাৎ শাসক নিজের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন করার লক্ষ্যে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত বিস্তৃত মধ্যবর্তী সব প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল করে দিয়ে এর ওপর নিজের কর্র্তৃত্ব স্থাপন ও কায়েম করেন, যাতে বাধাহীনভাবে শাসকের আকাক্সক্ষার বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়। আধুনিককালের লোকরঞ্জনবাদী কর্র্তৃত্বপরায়ণ শাসকরা নিজেদের সাধারণত চার স্তরবিশিষ্ট পিরামিডের সর্বোচ্চ চূড়ায় স্থাপন করেন, যেখানে শাসকই হলেন একমাত্র পূজনীয়; রাষ্ট্রের সবকিছুই পরিচালিত এবং নিয়ন্ত্রিত হয় একমাত্র শাসকের কর্র্তৃত্বে। যেমন- সক্রিয়, অন্ধ অনুগত একদল সমর্থকগোষ্ঠী, বাহ্যত দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী জনগোষ্ঠী, সমর্থকগোষ্ঠী; যারা সত্যিকারভাবেই বিশ^াস করে শাসকের অধীনে দেশ ও জনগণের উন্নতি নিশ্চিত হয়েছে। এ ধরনের শাসনে এমন একদল লোকের উদ্ভব হয়, যারা শাসকের বদৌলতে সুবিধাপ্রাপ্ত ও সুবিধাভোগী এবং খুন, গুম, ভয়ভীতির কারণে একদল লোক শাসককে সমর্থন দিয়ে থাকে, শাসকের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে।
তুরস্কের অভ্যুত্থান থেকে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বেঁচে যাওয়ার পর রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কের ভাটা পড়ে। প্রকৃত অর্থে পশ্চিমা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যে কর্র্তৃত্ববাদী ঐক্যের সৃষ্টি হয়। ব্রেক্সিটের পর চীন সরকার নিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্র পিপলস ডেইলির মন্তব্য হচ্ছে, এটা পশ্চিমা গণতন্ত্রের মৌলিক ভুলের ফসল। দ্য গ্লোবাল টাইমস লিখেছে, পশ্চিমের সন্ত্রাসী হামলাগুলো আসলে গণতন্ত্র ধসে পড়ার ইঙ্গিত। এ বিষয়ে রবার্ট কেগান লিখেছেন, মানবসভ্যতার শাসনের ইতিহাসে গণতান্ত্রিক শাসনের চেয়ে কর্র্তৃত্বপরায়ণ শাসনের ইতিহাসই দীর্ঘ। বিশ্বায়নের ভবিষ্যৎ যদি বিবর্ণই হয়, তবে হয়তো পুরো বিশ্ব আর অভিন্ন সুরে গলা মেলাতে পারবে না। হয়তো এশিয়ার কিছু দেশ যে পথে এগোতে চাইবে, ইউরোপের দেশগুলো তাকে ভুল মনে করবে। অঞ্চলভেদে বদলে যাবে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা। কোনো একক নীতিতে আর বিশ^বাসী তাল মেলাতে চাইছে না। তবে তা ভালো হবে, নাকি মন্দ হবে সময়ই তা বলে দেবে।
লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক
জ্বালানি হলো সেসব পদার্থ, যাদের ভৌত বা রাসায়নিক গঠন বা অবস্থার পরিবর্তন ঘটলে শক্তির নিঃসরণ ঘটে। আর যেসব জ্বালানিতে এই শক্তি-নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেগুলো হলো ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি। আধুনিক যুগে উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে জালানির ভূমিকা অপরিহার্য। বর্তমানে জ্বালানি চাহিদার প্রায় ৮০ ভাগ পূরণ করে আসছে জীবাশ্ম জ্বালানি। এর মধ্যে প্রধান হলো পেট্রোলিয়াম, তেল, কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাস। আমরাও এসব জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর বেশির ভাগ নির্ভরশীল, তবে স্বয়ংসম্পূর্ণ নই। এ জন্য আমাদের জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানি করতে হচ্ছে। এই জীবাশ্ম-জ্বালানি নির্ভরতা এবং জ্বালানির আমদানি-নির্ভরতা দুটোই এখন আমাদের বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে, ভবিষ্যতেও এই অবস্থা ভিন্ন হবে তা ভাবার কোনো কারণ নেই; জ্বালানি নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন ও ভূরাজনীতি-পরস্পর পরস্পরকে জটিল করে ফেলছে।
বিশ্বে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও বর্ধিত উন্নয়ন প্রচেষ্টার কারণে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ক্রমবর্ধমান হারে বেড়ে চলেছে। ফলে দিন দিন ভূমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধি ও পরিবেশ দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করছে। এখন বাংলাদেশ এই জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান শিকার; আইপিসিসির (International Panel on Climate Change, IPCC) এক প্রাক্কলনে বলা হয়েছে যে, সমুদ্রপৃষ্ঠের প্রাক্কলিত ৫০ সেন্টিমিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে দেশের আনুমানিক ১১ শতাংশ ভূমি ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রের পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়বে এবং ১৮ মিলিয়ন মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে যাবে। কাজেই এখন থেকেই বিকল্প জ্বালানির সংস্থান করা অতীব জরুরি এবং সেটা হতে হবে সাশ্রয়ী, সবুজ ও টেকসই পন্থায়। অন্যথায় শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো ধরিত্রীই বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি হলো এমন এক শক্তির উৎস, যা স্বল্প সময়ের ব্যবধানে পুনঃপুন ব্যবহার করা যায় এবং তা কখনোই নিঃশেষ হয়ে যায় না। এগুলো হলো বিভিন্ন প্রাকৃতিক উৎসজাত শক্তি; সূর্যের আলো ও তাপ, বায়ুপ্রবাহ, জলপ্রবাহ, জৈবভর, ভূ-তাপ, সমুদ্র তরঙ্গ, সমুদ্র-তাপ, জোয়ারভাটা, আবর্জনা শক্তি, হাইড্রোজেন ফুয়েল প্রভৃতি। নবায়নযোগ্য জ্বালানির সুবিধা হলো এর পুনঃব্যবহার যোগ্যতা; শক্তি উৎপাদনের জন্য বারবার অর্থ বিনিয়োগ করার প্রয়োজন পড়ে না। তা ছাড়া এটা হলো পরিবেশবান্ধব সবুজ জ্বালানি; এতে পরিবেশদূষণ নেই বলেই চলে। বাংলাদেশ কয়েকটি সবুজ জ্বালানিতে অনেক দেশের চেয়ে বেশ সমৃদ্ধ বলে ধারণা করা হয়। এসব উৎস থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি আহরণ করে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও স্বয়ম্ভরতা নিশ্চিত করতে দেশে অনেক নীতি, পথ-নকশা, পরিকল্পনা, মহাপরিকল্পনা ও প্রেক্ষিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। যেমন ১৯৯৭ সালে বেসরকারি খাতে অবকাঠামো ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তি উৎপাদনে অর্থায়নের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড ((IDCOL)। জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে সবুজ জ্বালানির প্রসার ঘটাতে ২০১২ সালে গঠন করা হয় টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ (স্রেডা)। ২০১৫ সালে গঠন করা হয়েছে বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিল। টেকসই উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার জন্য ২০২১ সালে অনুমোদন করা হয় মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা ২০২২-৪১।
২০০৮ সালের নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিতে এ উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল ২০১০ সালের মধ্যে মোট উৎপাদনের ৫ শতাংশ এবং ২০২০ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ পূরণ করা। এখন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন মাত্র ৩.৪৯ শতাংশ। অথচ এ সময়ে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা চাহিদার চেয়ে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে উৎপাদন ক্ষমতার একটা বড় অংশ (৪৮ শতাংশ) অলস পড়ে রয়েছে এবং তার জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হচ্ছে (Institute for Energy Economics and Financial Analysis Report, dt. 28.07.2023, IEEFA)।
এ অবস্থার কারণ সবুজ জ্বালানির প্রতি নীতিবিরুদ্ধ পশ্চাৎদেশ প্রদর্শন এবং জীবাশ্ম জ্বালানির প্রতি অন্ধ পক্ষপাতিত্ব গ্রহণ। জাইকার সহযোগিতায় ২০১৬ সালের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা মহাপরিকল্পনায় উচ্চাকাক্সক্ষী প্রবৃদ্ধি অভিক্ষেপের ভিত্তিতে জ্বালানি চাহিদা প্রাক্কলন করায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে এই একপেশে অবস্থান গ্রহণ যৌক্তিকতা পায়। এখন আবার প্রণয়ন করা হচ্ছে সমন্বিত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা ((Integrated Energy & Power Master Plan, IEPMP). এই পরিকল্পনায় কিছু ইতিবাচক দিক থাকলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উপেক্ষিত এবং এলএনজি ও কয়লা আশীর্বাদ প্রাপ্ত হয়েছে। মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনায় মোট জ্বালানিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অংশ ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ, ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ১০০ শতাংশ ধরা হয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও ২০২১ সালের জলবায়ু সম্মলনে একই কথার প্রতিধ্বনি করেন। কিন্তু আইইপিএমপি মতে, ২০৪০ সালের মধ্যে মোট জ্বালানির ৪০ শতাংশ হবে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি, আর ২০৫০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অংশ হবে মাত্র ১৭.১০ শতাংশ। এর অর্থ কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কারখানায় বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত থাকবে, শুধু উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে দূষণ ক্লিন বা পরিচ্ছন্ন করা হবে। তা ছাড়া আগের পরিকল্পনার মতো এখানেও বিদ্যুৎ চাহিদার অভিক্ষেপ করা হয়েছে বাড়িয়ে; ২০৫০ সালে বিদ্যুৎ চাহিদার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৯০ গিগাওয়াট। এভাবে অতিরঞ্জিত চাহিদার ভিত্তিতে হিসাব করা নবায়নযোগ্য জ্বালানির অংশ ফেলে রেখে আগের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি অংশের উৎপাদন ক্ষমতা গড়ে তোলা হলে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা আরও ভঙ্গুর হয়ে পড়বে, আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে এবং পরিবেশদূষণ আগ্রাসী হয়ে উঠবে।
এ দেশে যেমন রয়েছে কোটি কোটি মানুষ, তেমনি তাদের থাকার জন্য রয়েছে লাখ লাখ বাড়িঘর। আবার প্রতিদিন মানুষ ও কলকারখানা হাজার হাজার টন বর্জ্য উৎপাদন করে চলেছে। এসব বাড়িঘরের ছাদ থেকে সৌরবিদ্যুৎ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কলকারখানার ছাদ, নদী অববাহিকা ও অব্যবহৃত ভূমি সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা যেতে পারে। National Solar Energy Roadmap-2021-41 অনুযায়ী এসব সুবিধা ব্যবহার করে দেশে ২০ হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। IEEFA-এর এক হিসাব মতে, বাংলাদেশ বর্তমান কাঠামতেই দিনের বেলায় প্রতিদিন ১,৭০০ থেকে ৩,৪০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে, আর বায়ুশক্তি থেকেও পারে ২,৫০০ থেকে ৪,০০০ মেগাওয়াট। মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান The National Renewable Energy Lab (NREL)-এর হিসাব অনুযায়ী এ দেশে বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের যে সম্ভাবনা রয়েছে, তার সদ্ব্যবহার করে ৩০,০০০ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। এসব হিসাব ও প্রাক্কলন থেকে এটা স্পষ্ট যে, হাইড্রোজেন, অ্যামোনিয়া ও সিসিএস (Carbon Capture & Storage)-)-এর মতো অতি উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর এবং আমদানিনির্ভর ব্যয়বহুল জ্বালানি ছাড়াও দেশে সাধারণ নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিস্তর সম্ভাবনা রয়েছে। সেগুলোরই আগে সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। গ্রিড ও অফ-গ্রিড ব্যবস্থাপনায় সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে সেগুলোকে শুধু সমৃদ্ধ ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানির সুবিধা এটা যে শুধু গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমিয়ে আনে, তাই না; এটা জ্বালানি নিরাপত্তাকেও সুসংহত করে। নবায়নযোগ্যতার কারণে একবার একটা স্থাপনা গড়ে উঠলে তা প্রতিস্থাপনের আগ পর্যন্ত প্রায় বিনা বিনিয়োগে দীর্ঘদিন বিদ্যুৎ শক্তি সরবরাহ অব্যাহত রাখতে পারে। জীবাশ্ম জ্বালানির প্রতিকূল প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে বিশ্ব আজ নবায়নযোগ্য জ্বালানির পথে হাঁটছে। ২০২২ সালে বিশ্বে ২৯৫ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে যুক্ত হয়। এর মধ্যে ৮৩ শতাংশই আসে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস থেকে। আগের বছর এই হার ছিল ৮১ শতাংশ। এ সময় একই উৎস থেকে চীন উৎপাদন করেছে ১৪১ গিগাওয়াট ও ভারত করেছে ১৫.৭ গিগাওয়াট। ফলে জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানিতে ২০২০-২২ সালে ভারতের ৪.২০ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হয়েছে (আজকের পত্রিকা, অনলাইন ডেস্ক, ০২.৮.২০২৩)। ভারত ২০৩০ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুতের ৫০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে। ইতিমধ্যে তাদের উৎপাদনক্ষমতা ৬৪ গিগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। তাদের ২০২২ সালে গৃহীত বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের ৮৪ শতাংশই ছিল নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর (ডেইলি স্টার, ১৪.০৪.২০২৩)।
দেশে এখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট চলছে। এ জন্য আমদানিতে চলছে নিয়ন্ত্রণ। দেশের আমদানি করা পণ্যের মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো জীবাশ্ম জ্বালানি। বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে এ পণ্যটির আমদানিও সীমিত হয়ে পড়ায় অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখতে হচ্ছে; করতে হচ্ছে লোডশেডিং। এই অবস্থা থেকে টেকসই পদ্ধতিতে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর আস্থাশীল হয়ে তার উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা। IEEFA-এর এপ্রিল ৫, ২০২৩ তারিখের এক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে যে, ২০৪১ সালের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী নবায়নযোগ্য জ্বালানির অংশ ৪০ শতাংশে উন্নীত করতে ২০২৪ সাল থেকে প্রতিবছর ১.৫৩ বিলিয়ন থেকে ১.৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করার প্রয়োজন হবে। যদিও এর মধ্যে সংরক্ষণ প্রযুক্তির ব্যয় অন্তর্ভুক্ত নয়। আপাতদৃষ্টিতে এই অঙ্ক অনেক স্ফীত বলে মনে হলেও এটা ২০২১-২২ সালের জ্বালানি খাতে প্রদত্ত ভর্তুকির চেয়ে কম। এক বছরের ভর্তুকির সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় করে যদি বছরভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী নবায়নযোগ্য জ্বালানির স্থাপনা গড়ে তোলা যায়, তার চেয়ে আর কি ভালো হতে পারে? লেখক: খাদ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক
অনেকটা নীরবে চলে গেলেন কিংবদন্তি চিত্রগ্রাহক ও আলোকচিত্রী আফজাল এইচ চৌধুরী। গত ৩১ আগস্ট, বৃহস্পতিবার দুপুরে ইউনাইটেড হাসপাতালে প্রায় ৯৩ বছর বয়সে তিনি প্রয়াত হন। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের কালজয়ী চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেয়া’ (১৯৭০), উভয় পাকিস্তানের প্রথম আংশিক রঙিন ছবি ‘গুলে বাঁকালি’ (১৯৬১), প্রথম জনন্দিত লো-কি সিনেমা ‘কাঁচের দেয়াল’ (১৯৬৩), প্রথম সম্পূর্ণ রঙিন ছবি ‘সঙ্গম’ (১৯৬৪), প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র ‘বাহানা’ (১৯৬৫) ও প্রথম ট্রিপল রোলের চলচ্চিত্র ‘জ¦লতে সুরুজ কে নিচে’ (১৯৭০)-এর চিত্রগ্রাহক ছিলেন তিনি। তৎকালীন পাকিস্তানের সবচেয়ে ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র ‘আয়না’ চলচ্চিত্রও তারই সেলুলয়েডে আঁকা। এ ছাড়াও বাংলাদেশের অসংখ্য চলচ্চিত্রে তিনি ক্যামেরায় যেন কথা বলেছেন। অথচ তারই মৃত্যুতে এ দেশের মিডিয়াগুলো কেন যেন একেবারেই নীরব! জীবিতকালেও তাকে যে খুব সম্মান দেওয়া হয়েছে এমন নয়। আফজাল চৌধুরীর সঙ্গে আমার খুব বেশি ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল না। তাকে একবারই দেখেছিলাম পাঠশালায়। সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব ফটোগ্রাফি আয়োজিত সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সেই সময় আফজাল চৌধুরী ও পাঠশালার অধ্যক্ষ ড. শহিদুল আলমের হাত থেকে সনদ গ্রহণ করেছিলাম। পরবর্তী সময়ে জেনেছি, তিনি ছিলেন পাঠশালার প্রতিষ্ঠাকালীন উপদেষ্টা কমিটির সদস্য।
আফজাল এইচ চৌধুরী, যিনি এক কথায় সেলুলয়েড শিল্পী, তাকে নিয়ে তেমন চর্চা হয়নি। তুলে ধরা হয়নি তার সৃজনকর্ম, নতুন প্রজন্মের কাছে। ফলে অনেকটা অন্তরালেই থেকে যান এই শক্তিমান চিত্রগ্রাহক। অবশ্য নিজেও ছিলেন এক নিভৃতচারী মানুষ। কয়েক বছর আগে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর তার একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। সেটি দেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। সামাজিক দুনিয়ায় সাক্ষাৎকারটি থেকে যাওয়ায় আফজাল চৌধুরী বিস্মৃতি হয়ে যাওয়া থেকে কিছুটা রক্ষা পেয়ে যান।
হাইস্কুলে পড়ার সময় ফটোগ্রাফি শুরু করেন আফজাল চৌধুরী। পরবর্তী জীবনে জড়ান চলচ্চিত্রের সঙ্গে। তার জন্ম ১৯৩১ সালের ৩১ অক্টোবর সিরাজগঞ্জে। পিতা হাজী আবদুল ওয়াহাব চৌধুরী রংপুরের মহিমাগঞ্জে কাঠের ব্যবসা করতেন। এক মাস ২২ দিন বয়সে মা আমেনা খাতুনকে হারান। ফলে তাকে মহিমাগঞ্জে মামির কাছে পাঠানো হয়। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত তিনি সেখানে পড়াশোনা করেন। এরপর সিরাজগঞ্জের জ্ঞানদায়িনী স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে ভর্তি হন বিএল হাইস্কুলে। ১৯৪৭ সালে সেখান থেকেই তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন। ফলে তারাই ছিলেন কলকাতা বিশ^বিদ্যালয়ের শেষ ব্যাচের শিক্ষার্থী।
একদিন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখলেন, কোডাক কোম্পানি ৬ টাকা ১২ আনায় বক্স ক্যামেরা বিক্রি করছে; সঙ্গে এক রোল ফিল্ম। বড় ভাইকে চিঠি লিখলেন, টাকা পাঠানোর জন্য। সেই টাকায় কিনলেন কোডাক ব্রাউনি ক্যামেরা। সিরাজগঞ্জে তখন স্টুডিও ছিল। ওখানে গিয়ে শিখলেন, ফটোগ্রাফির টুকিটাকি। কিছু বইপত্র সংগ্রহ করলেন। ঢাকা থেকে কিনে আনলেন কেমিক্যাল। বাড়িতে ডার্করুম নেই। রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে, দরজা-জানালা বন্ধ করে লালবাতি জ¦ালিয়ে ডিশের মধ্যে নেগেটিভ ডেভেলপ করতেন। প্রথমে প্রিন্ট করতে জানতেন না। স্টুডিওতে নেগেটিভ নিয়ে গিয়ে প্রিন্টং করা শিখলেন। তখন কন্ট্রাক্ট প্রিন্টের একটা ফ্রেম পাওয়া যেত। তাতে নেগেটিভ রেখে ১৫ সেকেন্ড আলো ফেলে কন্টাক্ট প্রিন্ট করা যেত। কিন্তু ছবি বড় করবেন কেমন করে? এনলার্জারের তখন অনেক দাম। বাবার কাঠের দোকানে মিস্ত্রিরা কাজ করত। ওই কাঠ দিয়ে তিনি এনলার্জার বানিয়ে তাতে কনডেক্সার আর ক্যামেরার লেন্স লাগালেন। ছবি তোলা তখন তার নেশার মতো হয়ে গিয়েছিল। যখন ক্লাস টেনে পড়েন তখন কলকাতায় গিয়ে রোলিফ্লেক্স ক্যামেরা ও ফ্ল্যাশগান কিনে আনেন।
১৯৪৮ সালে ঢাকা কলেজে পড়ার সময়ে ১৪ আগস্টে রাষ্ট্রীয় একটা অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখলেন, প্রখ্যাত পরিচালক এ জে কারদার সিক্সটিন মিলিমিটার মুভি ক্যামেরায় ছবি তুলছেন। ওই দিনই তিনি মুভি ক্যামেরা শেখার সিদ্ধান্ত নেন। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার পর কয়েকজন বন্ধু মিলে হিচহাইকিংয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করলেন। তখন শামসুদ্দীন আবুল কালাম তাকে একটা ৮ মিলিমিটার ক্যামেরা দেন। ওই ক্যামেরায় তিনি চা বাগানের ওপর সাড়ে তিন মিনিটের একটি ডকুমেন্টারি বানান। কিছু দিন পর মাইকেল টডের একটা ইউনিট ঢাকায় আসে। ইউনিটটি ঢাকা থেকে ট্রেনে করে সিলেটে যায়। তখন এফডিসির অপারেটিভ ডিরেকটর নাজির আহমেদ তাকে একটা ক্যামেরা ও ৩৫ মিলিমিটার চারশ ফিটের একটি রোল দিলেন স্যুট করার জন্য। পরে নাজির আহমেদ ওই রোলটা মাইকেল টড কোম্পানির কাছে পাঠান। কিছুদিন পর তারা আফজাল চৌধুরীর কাজের প্রশংসা করে নাজির আহমেদের কাছে একটা চিঠি পাঠায়। এরপর আফজাল চৌধুরী সিনেমাটোগ্রাফার হওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন।
’৫১ সালের শেষ দিকে বম্বে গিয়ে ওখানকার বিখ্যাত ক্যামেরাম্যান সুধীন মজুমদারের স্টুডিওতে যোগ দেন। স্টুডিওতে ওই সময়ের টপ ক্যামেরাম্যান ফলি মিস্ত্রি ও জাল মিস্ত্রির কাছে কাজ শেখেন। দেড় বছর পর বাবার চিঠি পেয়ে দেশে ফিরে আসেন। বাড়িতে থাকলেন কিছুদিন। এক বন্ধু তাকে নিয়ে গেলেন ইউএসআইএসের পরিচালকের কাছে। পরিচালক সব শুনে বললেন, ‘কালই যোগদান করো।’ ইউএসআইএসে তাকে নিউজ ফটোগ্রাফি করতে হতো। দেড় বছর কাজ করার পর মনে হয়েছে, এটা তার কাজ না। ’৫৭ সালে তিনি করাচিতে গিয়ে ইস্ট্রার্ন ফিল্ম স্টুডিওতে চিফ অ্যাসিসট্যান্ট হিসেবে যোগ দেন। ওখানেই প্রথমে কালার ফিল্মে কিছু নৃত্য ও গানের চিত্রায়ণ করেন।
১৯৬০ সালে ‘আর ভি গাম হ্যায়’ চিত্রায়ণ করে। ছবিটা ওই সময় প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিল। এরপর ডব্লিউ জেড আহমেদের সঙ্গে কাজ করেন করাচি ও লাহোরে। তখন লোকে জেনে গেছে আফজাল চৌধুরীর কালার ফিল্মে কাজ করেন। ’৬২ সালে জহির রায়হান অভিনেতা খান আতাকে দিয়ে চিঠি পাঠিয়ে আফজাল চৌধুরীকে লাহোর থেকে দেশে নিয়ে আসেন। এরপর তিনি জহির রায়হানের বেশ কয়েকটি ছবিতে কাজ করেন। ১৯৬৯ সালে জহির রায়হানের পরিচালনায় আফজাল চৌধুরী ‘জ¦লতে সুরুজ কে নিচে’ নামে একটা ছবি বানান। চলচ্চিত্রে ফরিদা আক্তার পপির নাম ‘ববিতা’ রাখেন আফজাল চৌধুরীর স্ত্রী সুরাইয়া চৌধুরী।
শেষ জীবনে স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতেন। দুই মেয়ে সীমা, সাদিয়া আর নাতি-নাতনিদের সান্নিধ্যে তার ভালোই কাটছিল। ৬৫ বছর তিনি চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এ দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ চিত্রগ্রাহক তার শিষ্য। কী নির্মম বাস্তবতা, এ দেশে তার কোনো মূল্যায়নই হলো না!
লেখক : আলোকচিত্র সম্পাদক, দেশ রূপান্তর
উপাচার্য বা ভাইস চ্যান্সেলর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী পদ। কিন্তু আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলছে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়। দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১৩টি। এর মধ্যে ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, ৮৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি এবং ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রেজারারের পদ শূন্য রয়েছে। আইনের বিধান মতে, ব্যয় ভাউচার, দেনা পরিশোধ, সব অর্থ লেনদেনে চ্যান্সেলর নিযুক্ত ট্রেজারারের সই থাকতে হবে। কিন্তু অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈধ ট্রেজারার নেই। অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে গতিশীলতা নিয়ে আসতে ও শিক্ষার মান বজায় রাখতে উপ-উপাচার্য থাকারও বিধান রয়েছে আইনে। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার ছাড়াই দিব্যি চলছে কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এর অন্তর্নিহিত কারণ অনেকেরই অজানা। ভিসি ও ট্রেজারার না থাকলে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়মে সুবিধা হয়। যে কারণে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ চ্যান্সেলর অনুমোদিত ভিসি নিয়োগে বিলম্ব করে দিনের পর দিন ভারপ্রাপ্ত ভিসি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করে। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার ট্রেজারার পদে ট্রাস্টি বোর্ড সদস্যদের আত্মীয়স্বজনই দিব্যি বসে আছেন। এ বিষয়ে রবিবার দেশ রূপান্তরে ‘ভিসি-প্রোভিসি পেতে হয়রান’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়গুলো ভিসি-প্রোভিসি-ট্রেজারার ছাড়াই কীভাবে বছরের পর বছর চলছে এবং বিশ^বিদ্যালয়ের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হ্যাঁ-না খেলার কথাও চমৎকারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
তখন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সে সময় ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদন-২০২১ পেশ করেন ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) ক্ষমতা দিতে সরকারের কাছে সুপারিশ করে সংস্থাটি। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভিসি, প্রোভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগে ইউজিসির মতামত গ্রহণ এবং একটি নীতিমালা তৈরি করারও সুপারিশ করা হয়। এরপর সরকারি-বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক ও নিয়োগ-সংক্রান্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টদের জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণের নির্দেশ দেন রাষ্ট্রপতি। কিন্তু সেই নির্দেশও অজানা কারণে কার্যকর হয়নি!
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আশা ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য (ভিসি) পদ দীর্ঘদিন ধরেই শূন্য। গত বছর তারা তিনজনের একটি ভিসি প্যানেল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। কিন্তু গত বছরের ২৯ নভেম্বর সে ফাইলটি মন্ত্রণালয় থেকে ফিরে আসে। এরপর চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি চিটাগংয়ের উপাচার্য নিয়োগের ফাইলটি ফেরত আসে। মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছিল, প্রস্তাবিত ব্যক্তিদের মধ্যে অধ্যাপক ড. মো. জাহিদ হোসেন শরীফের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকায় তার পরিবর্তে বিকল্প প্রস্তাবসহ নতুন করে তিনজনের প্যানেল প্রস্তাব পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হলো। এখনো এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসির পদটি শূন্য রয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভের (ইউডা) প্রোভিসি নিয়োগের ফাইল ফেরত আসে এ বছরের ৯ এপ্রিল। গত বছরের ১০ নভেম্বর প্রাইম ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার নিয়োগের ফাইল ফেরত আসে। প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকায় গত বছরের ৯ নভেম্বর সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার নিয়োগের ফাইলও ফেরত আসে। মন্ত্রণালয় এই বিশ্ববিদ্যালয়কে পুনরায় ট্রেজারার নিয়োগের প্যানেল পাঠানোর অনুরোধ করেছে। কিন্তু ১০ মাস পার হলেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রেজারার নিয়োগ হয়নি। এখন প্রোভিসি পদটিও খালি রয়েছে।
বাংলাদেশের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং ট্রেজারার নিয়োগের কোনো সুস্পষ্ট নীতিমালা ও পদ্ধতি নেই। এমনকি ইউজিসি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মানসম্পন্ন শিক্ষা ও গবেষণার উৎকর্ষসহ উচ্চশিক্ষার সার্বিক তদারকির দায়িত্ব পালন করলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ণিত তিনটি পদে (উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার) নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ইউজিসির কোনো ধরনের মতামত নেওয়া হয় না। তবে ইউজিসির মতামতের ভিত্তিতে দেশের খ্যাতনামা শিক্ষাবিদদের মধ্য থেকে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার নিয়োগ দেওয়ার জন্য সরকার একটি বাস্তবায়নযোগ্য নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯ ধরনের কমিটি থাকতে হয়। এর মধ্যে তিনটি কমিটির সভাপতি থাকেন ভিসি। তিনটি কমিটিতে ভিসি মনোনীত শিক্ষক সভাপতি হন। আর বাকি তিনটি কমিটিতে সভাপতি থাকেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যরা। এই তিন কমিটিতেও সদস্য হিসেবে থাকেন ভিসি আর একটিতে ট্রেজারারের থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আর্থিক লেনদেন পরিচালিত হয় ভিসি ও ট্রেজারারের স্বাক্ষরে। এর জন্যই কি এই ইচ্ছাকৃত শূন্যতা! এই অচলায়তন কীভাবে ভাঙবে, কে জানে?
সাংবাদিক ও লেখক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের জন্ম ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার খোশবাসপুরে ১৪ অক্টোবর ১৯৩০ সালে। প্রথম জীবনে বাড়ি থেকে পলাতক কিশোরের জীবন অতিবাহিত করেছেন। সেখানে গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। সেই নবগ্রাম গোপালপুরের প্রেক্ষাপটে তিনি লিখেছিলেন ‘প্রেমের প্রথম পাঠ’ উপন্যাস। গোপালপুর থেকে পাস করে তিনি ভর্তি হন বহরমপুর কলেজে। রাঢ় বাংলার লোকনাট্য আলকাপের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নাচ-গান-অভিনয়ে অংশ নিয়ে জেলায় জেলায় ঘুরেছেন। তিনি ছিলেন আলকাপ দলের ওস্তাদ ও নাচ-গানের প্রশিক্ষক। দীর্ঘদিন আনন্দবাজার পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে চাকরি ও লেখালেখি চালিয়ে গেছেন। তার জ্ঞান ও অধীত বিদ্যা এবং প্রগতিশীল মুক্তচিন্তা তাকে বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী হিসেবে বিদ্বানসমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তার লেখকসত্তায় জড়িয়ে ছিল রাঢ়ের রুক্ষ মাটি। মুর্শিদাবাদের পাশের জেলা বীরভূম। যেখানে লাভপুর গ্রামে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম। তারাশঙ্কর বলতেন, ‘আমার পরেই সিরাজ, সিরাজই আমার পরে অধিষ্ঠান করবে’। তিনি গল্প, উপন্যাস, গোয়েন্দা কাহিনিসহ নানা ধরনের লেখা লিখেছেন। ‘অলীক মানুষ’ তার বিখ্যাত উপন্যাস। এ উপন্যাসটি তাকে খ্যাতির চূড়ান্ত শিখরে উন্নীত করেছে। কিশোর পাঠকদের জন্য লিখেছেন ‘গোয়েন্দা কর্নেল’ নামের চরিত্র। তিনি আনন্দ পুরস্কার, সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার, বঙ্কিম পুরস্কার, ভুয়ালকা পুরস্কারসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ২০১২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
মূল লড়াইয়ের আগে গা গরমের খেলা। সেখানে ব্যাটসম্যানরা ছিলেন আগ্রাসী। তাতে পাকিস্তান পায় ৩৪৫ রানের বড় সংগ্রহ। তারপরও জিততে পারল না। নিউজিল্যান্ড জয় তুলে নিয়েছে ৩৮ বল হাতে রেখেই।
পাকিস্তানের ব্যাটারদের মধ্যে সেঞ্চুরি পেয়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ৯৪ বলে ১০৩ রান করে অবসর নেন তিনি। এছাড়া বাবর আজম ৮০ ও সৌদ শাকিল ৭৫ রান সংগ্রহ করেছেন।
পাকিস্তানের দেয়া ৩৪৬ রানের জবাব দিতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে নিউজিল্যান্ড।
কিউই ব্যাটারদের মধ্যে ওপেনিংয়ে নামা রাচিন রবীন্দ্র ৭২ বলে ৯৭ রান সংগ্রহ করে দলের জয়ে বড় অবদান রাখেন। এছাড়া দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা কেন উইলিয়ামসন ৫৪, ড্যারেল মিচেল ৫৯ আর মার্ক চাপম্যান ৬৫ রান করে দলকে ৫ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
গোটা দেশ এখন দুই ভাগে বিভক্ত। একদল সাকিব আল হাসানকে শূলে চড়াচ্ছে, অন্যরা তামিম ইকবালকে। অথচ জাতীয় ক্রিকেট দল ভারতে গেছে বিশ্বকাপ খেলতে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে খোঁচাখুঁচি। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ খেলতে নেমেছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে। যে উদ্বোধনী জুটি নিয়ে এত দ্বিধা আর সংকোচ, যে কারণে তামিম না থাকায় এত হাহাকার, সেখানেই কিনা বাজিমাত করে পুরো জাতিকে অন্য এক বার্তা দিলেন তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস।
বিশ্বকাপের দলে যে তামিম ইকবাল থাকছেন না, সেটা জানা গিয়েছিল আগের দিনেই। তবু ক্রিকেট ভক্তদের মনের এক কোণে ক্ষীণ আশা ছিল। ওপেনারদের টানা ব্যর্থতার কথা বিবেচনায় হলেও এই ব্যাটসম্যান থাকবেন বলে ছিল তাদের। কিন্তু সেই আশার গুড়ে বালি। তাকে দলে না রাখায় অবশ্য রাস্তায় জনতার ঢল নামেনি, রাজপথে হয়নি কোনো সভা-সমাবেশ। তবে নতুন যুগের দেয়ালে দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদী নিন্দার বাণী। হাল জামানায় যাকে ‘টাইমলাইন’ বলে সম্বোধন করা হয়।
সেই সব প্রতিবাদী স্ট্যাটাসও দুই ভাগে বিভক্ত। কেউ সাকিব আল হাসানের পক্ষে, কেউবা তামিম ইকবালের। একদল পরিসংখ্যান-পর্যালোচনা দিয়ে বোঝাতে ব্যস্ত যে এই যুগে তামিমের কৌশল ‘ওল্ড স্কুল’। ওসব এখন আর চলে না। অন্য দল ১৭ বছরের ইতিহাস আর আবেগ নিয়ে হাজির। তাদের কাছেও আছে পরিসংখ্যান। সেটা গত কয়েক বছরের তামিমের ওপেনার সঙ্গীদের একটা তালিকা। তারাই শূলে চড়াচ্ছেন সাকিব-হাথুরু থেকে শুরু করে বিসিবির শীর্ষ কর্তাদের।
বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে সাকিব ক্রীড়াভিত্তিক একটি টিভি চ্যানেলকে দিয়ে গেছেন সাক্ষাৎকার। সেখানে তিনি সরাসরি তামিমের সমালোচনা করেছেন। এই ওপেনার যে দলের প্রয়োজনে পজিশন পরিবর্তনে রাজি হতে চান না, সেই মানসিকতা বাচ্চাদের মতো বলে সমালোচনা করেছেন টাইগার অধিনায়ক। এমনকি তার স্পোর্টসম্যানশিপ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তার আগে তামিম নিজে একটা ভিডিও বার্তায় বলেছেন তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা। মাশারফী বিন মোর্ত্তজাও ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। তাতে করে ক্রিকেটাঙ্গনে এখন যেন ভিডিও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ক্রিকেট নিয়ে জাতির অবস্থা যখন এমন, তখন ভারতের গোয়াহাটিতে বাংলাদেশের ক্রিকেট দল। আসাম রাজ্যের রাজধানীর বরষাপাড়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম উদ্বোধনী ম্যাচ খেলতে নেমেছিল তারা। ছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, নাজমুল হোসেন শান্তও ছিলেন না থাকার মতো করেই। প্রথম গা গরমের ম্যাচে তাই নেতৃত্ব দেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
টসভাগ্যে মিরাজের পরাজয়ের পর বল হাতে নামে বাংলাদেশ। টানা ৪০ ওভার টাইগারদের বোলারদের যেন শাসন করছিলেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। ঐ সময় পর্যন্ত ৫ উইকেট হারালেও তারা করে ২০২ রান। তারপরই যেন ঘুরে দাঁড়ান টাইগার বোলাররা। শেষ ১০ ওভারের ৫ বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় লঙ্কানরা। ২৬৩ রানের বেশি তারা করতে পারেনি।
২৬৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নামা বাংলাদেশের হালটা যে সুখকর হবে না, মুহূর্তেই ধসে পড়বে ব্যাটিং লাইনআপ। সিনিয়রদের কাউকে এসে হাল ধরে নিয়ে টেনে নিয়ে যেতে হবে দলকে। খাঁদের কিনারা থেকে টেনে তুলে হয় জয়, নয়তো সম্মানজনক হার! এমনটাই ছিল অনুমিত। আমরা যে এতেই অভ্যস্ত।
কিন্তু তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস সব অনুমান ভুল প্রমাণ করে দেন। যে ওপেনিং জুটি বাংলাদেশকে ভোগাচ্ছিল, যে সমস্যার কারণে চোট প্রবণ তামিম ইকবালকেও সবাই চাইছিলেন দলে। সেটাই কিনা তারা প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে ভুলিয়ে দিলেন! উদ্বোধনীতে তারা গড়েন ১৩১ রানের জুটি। তাতে ১৩ ম্যাচ পর বাংলাদেশ ওপেনিংয়ে শতরানের জুটি দেখতে পেয়েছে। হোক সেটা প্রস্তুতি ম্যাচ, তবুও তো লড়াই!
সবচেয়ে বড় স্বস্তি লিটন-তানজিদের রানে ফেরা। এশিয়া কাপের আগে জ্বরে ভুগছিলেন লিটন। সেই জ্বরের ধকল কাটিয়ে উঠতে তার সময় লেগেছে। মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে যেতে হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর চোটের কারণে। কিন্তু নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। এই টুর্নামেন্টে ২ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তানজিদ। কিন্তু তিনিও প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড সিরিজেও।
তাই বিশ্বকাপের দলে তামিম ইকবালকে বাদ দেওয়াতে ঝড় উঠেছিল। সেই ঝড় চলমান ছিল আজ দুপুর অবধি। অনেকেই ভেবে রেখেছিলেন, এই জুটি ব্যর্থ হবে। যা ধারাবাহিক থাকবে টুর্নামেন্টের শুরুতেও। তারপর বিশ্বকাপের মাঝপথে আচমকা ডাক পেয়ে তামিম ইকবাল উড়াল দেবেন ভারতে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলে। সেবার জাভেদ মিয়াঁদাদকে ছাড়াই তারা বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল। কিন্তু ব্যাটারদের ব্যর্থতার কারণে তাকে মাঝপথে উড়িয়ে নেওয়া হয়েছিল, এবং বিশ্বকাপ জিতেছিল।
এমন স্বপ্ন বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটভক্তরাও দেখতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তানজিদ তামিম আর লিটনের জুটি বদলে দিয়েছে সব হিসেব-নিকেশ। তামিমের ফেরার প্রত্যাশায় যারা গুনছিলেন প্রহর, তাদের মাথায় যেন এবার আকাশ ভেঙে পড়েছে। কারণ তারা যে রানে ফিরেছেন। যুববিশ্বকাপজয়ী তামিম খেলেছেন ৮৪ রানের একটি ইনিংস। ৮৮ বলে যা সাজানো ছিল ১০টি চার ও ২টি ছক্কায়। অন্যপ্রান্তে লিটন ৫৬ বলে ১০ চারে খেলেছেন ৬১ রানের ইনিংস। শুধু কি তাই! এদিন তিনে নেমেছিলেন মিরাজ। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৬৭ রান। ৬৪ বলের হার না মানা ইনিংসটি সাজানো ছিল ৫ চার ও ২ ছক্কায়।
পঞ্চপান্ডবের পরের প্রজন্ম তো তারাই। যাদের ব্যাটে শুক্রবার বরষাপাড়ায় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তাদের রানে ফেরা যেন নতুন দিনের বার্তা দেয়। যে বার্তা আগামীর পথচলার। যেখানে পুরনোকে আকড়ে ধরে রাখার প্রবণতা ক্ষীণ হয়ে আসার বার্তা। সহজ কথায়, তরুণদের রানে ফেরাতে মিয়াঁদাদ হওয়ার সুযোগ আর হচ্ছে না তামিম ইকবালের।
আল নাসরে প্রথম মৌসুমটা ভালো না কাটলেও দ্বিতীয় মৌসুমের শুরু থেকেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আছেন দারুণ ছন্দে। নিজে গোল করে দলকে জেতাচ্ছেন, সতীর্থদের দিয়ে গোল করাচ্ছেন।
শুক্রবারও সৌদি প্রো লিগে আল তা’য়ির বিপক্ষে ২-১ গোলে জিতেছে আল নাসর। এ ম্যাচেও রোনালদো গোল করেছেন এবং করিয়েছেন। তবে তাঁকে নিয়ে বেশি আলোচনা তালিসকার গোলটিতে অসাধারণ এক অ্যাসিস্টের জন্য। অ্যাসিস্টটিতে যে সবার মন ভরিয়ে দিয়েছেন রোনালদো।
তা’য়ির মাঠে আল নাসর গতকাল শুরুটা করেছে দারুণ। একের পর এক আক্রমণে স্বাগতিক দলের রক্ষণ করে দিয়েছে এলোমেলো। ম্যাচের শুরুর দিকেই রোনালদোর দুর্দান্ত একটি প্রচেষ্টা ঠেকিয়ে দেন তা’য়ির গোলকিপার। এ ছাড়া রোনালদোও খুব কাছ থেকে পাওয়া একটি সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি।
তবে ৩২ মিনিটে এগিয়ে যায় আল নাসর। গোলটি করেছেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার অ্যান্ডারসন তালিসকা। গোলটিতে রোনালদো অ্যাসিস্ট করেছেন অসাধারণ এক বাই-সাইকেল কিকে। সৌদি প্রো লিগে এ মৌসুমে এটা রোনালদোর পঞ্চম অ্যাসিস্ট।
খেলার স্রোতের বিপরীতে ৭৯ মিনিটে সমতায় ফেরে তা’য়ি। কিন্তু সমতা বেশিক্ষণ থাকেনি। ৩ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে আল নাসরের জয়সূচক গোলটি করেছেন রোনালদো। সৌদি প্রো লিগে এ মৌসুমে এটা ৭ ম্যাচে তার ১০ নম্বর গোল। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৫ ম্যাচ খেলে করেছেন ১৬ গোল।
এই জয়ের পর ৮ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে আল নাসর। আল ফেইহার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করা আল ইত্তিহাদ সমান ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে আছে শীর্ষে। ৮ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে আল তা’য়ি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পুলিশ। নির্বাচনে কী উপায়ে নিরাপত্তা দেওয়া হবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। তবে সরকারের হাইকমান্ড থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে তথ্য এসেছে, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ও সদস্য সরকারবিরোধীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছে। পুলিশের একটি প্রতিবেদনেও তথ্য এসেছে সারা দেশে অন্তত আড়াইশো কর্মকর্তা আছেন তারা সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তাদের পুরো কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এদিকে, চলতি মাস ও আগামী মাসের মধ্যে পুলিশে আরও বড় ধরনের রদবদল করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তালিকাও করা হয়েছে। পাশাপাশি উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদিও কেনার চেষ্টা করছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, সামনের দিনগুলোতে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। এ নিয়ে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা আগাম সতর্কবার্তাও দিয়েছে। যেকোনো বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করতে কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সবকটি ইউনিট প্রধান ও জেলার এসপিদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। বার্তায় বলা হয়েছে রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তায়নের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি পুলিশের মধ্যে কোনো সদস্য সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার তথ্য পেলে জানাতে বলা হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশেই সব পুলিশ সদস্যকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনকালীন যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পেশাদার সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু সদস্যের কর্মকান্ড নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এই সংখ্যা প্রায় আড়াইশো মতো হবে। সংখ্যা আরও বাড়তেও পারে। ইতিমধ্যে তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে সরকারের হাইকমান্ডকে অবহিতও করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য পুলিশকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশে উদ্বেগ আছে। বৈধ অস্ত্রের সংখ্যার খোঁজ নেওয়া, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্র কারবারিদের গ্রেপ্তার করতে বিশেষ অভিযান চালাতে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযানের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। হুট করেই আমরা বিশেষ অভিযান শুরু করব। কেপিআই স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন যথাসময়ে হবে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো মহল বা চক্র নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালাতে না পারে সে জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সতর্ক আছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের সবধরনের প্রস্তুতি আছে। দাগি সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বড় ধরনের অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের।
পুলিশ সূত্র জানায়, আড়াইশো পুলিশ কর্মকর্তার কর্মকান্ড নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তাদের মোবাইল নম্বর সার্বক্ষণিক ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও খোঁজ রাখা হচ্ছে। নজরদারির মধ্যে থাকা বেশ কয়েকজন পুলিশ সুপার, অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর আছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতাদের সাপোর্ট দেওয়া আমাদের কাজ না। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের জন্য উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্র ও যানবাহন ক্রয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি ৫০ লাখের মতো রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড কেনা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে এসব সরঞ্জাম বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করছি। ডিএমপি, সিএমপি, কেএমপি, আরএমপি, বিএমপি, এসএমপি, আরপিএমপি, জিএমপি কমিশনার, বিশেষ শাখা (এসবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), অপরাধ তদন্ত বিভাগ, পিবিআই, টুরিস্ট পুলিশ, এটিইউ, রেলওয়ে পুলিশ, নৌপুলিশ, এপিবিএন, হাইওয়ে, শিল্পাঞ্চল পুলিশ প্রধান, সব অ্যাডিশনাল আইজিপি, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও রংপুর রেঞ্জে নতুন আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি পাঠানো হবে। ইতিমধ্যে ইউনিট প্রধানরা পুলিশ সদর দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন। বিষয়টি আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারবিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্র করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। বিএনপি আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করছে। তারা পুলিশের ওপর হামলা করছে। যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। আর এসব মোকাবিলা করতে পুলিশকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পুলিশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।