
শাইখ সিরাজ বাংলাদেশে একটি কেবল নাম না, তিনি একজন জীবন্ত কিংবদন্তি বলা যায়। তিনি আমার কাছে দারুণ এক রোল মডেল। শাইখ ভাই যে কাজ করেছেন তাতে আমার মতো অনেকের কাছেই তিনি সেই রকম ব্যক্তিত্ব। তার জন্মদিনে তাকে শুভেচ্ছা জানাই, শ্রদ্ধা এবং ভালেবাসা জানাাই। এসবের আগে পাঠককে একটু মনে করিয়ে দিতে চাই, তার কীর্তি সম্পর্কে। এই পৃথিবী তো বটেই, বাংলাদেশেও এমন অসংখ্য মানুষ আছেন যারা উন্নয়নকে সামনে আনতে চান। কিন্তু মানব উন্নয়নকে কিন্তু সবাই সামনে আনেন না। তিনি কেবল উন্নয়নে কাজ করেছেন তা নয়, মানব মর্যাদা বৃদ্ধিতেও কিন্তু কাজ করেছেন।
তাকে তো সবাই কৃষির একজন বিপ্লবী বলে মনে করেন, কিংবদন্তি বলে মনে করেন। কিন্তু শাইখ ভাই অনন্য আরেকটা কারণে। চার দশক ধরে তিনি যে কাজ করে চলেছেন তা কেবল সাধারণ মানুষের জন্য। কৃষকরা আগে কেবল মাঠেই কাজ করতেন, যে কৃষাণী আগে কেবল ঘরেই কাজ করতেন। কিন্তু তাদের সেই চাষাবাদ, ঘর সামলানোর কাজগুলোকে শাইখ সিরাজ এমনভাবে মিডিয়ার মাধ্যমে, তার কথায়, তার লেখনীতে উপস্থাপন করেছেন যে এই মাঠে ও ঘরে কাজকরা মানুষ অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে মূল্যায়িত হওয়ার দিশা পেয়েছেন।
শাইখ সিরাজ প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ থেকে শুরু করে আদিবাসী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীদের জন্য কেবল কথাই বলেননি, তিনি তাদের জন্য কাজ করেছেন, মাঠে নেমেছেন। আমারও সুযোগ হয়েছে, সৌভাগ্য হয়েছে তার সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করার। অনেকটা তার কাজের জন্যই চ্যানেল আই আমাদের প্রিয় সংবাদমাধ্যম হয়ে উঠেছে। এখন তো বলা যায় যে তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেরও একটা অংশ হয়ে গেছে চ্যানেল আই। কখনো কোনো সময় যদি মনে হয় আজ তো চ্যানেল আই দেখা হয়নি তখন গাড়িতে বসে একটু মোবাইলে চ্যানেল আই দেখে নিলাম। এটি কিন্তু বাংলাদেশে বহু মানুষ করেন। শাইখ ভাই এখানে অন্য একটি কারণে অনন্য। একদম প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ যারা, যাদের আমরা চিনি না তারা যেমন তাকে চিনেছেন, তিনি নিজে যেমন তাদের ভেতর থেকে চিনেছেন, তেমনি তাদেরও আমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। ফলে এই অনন্য শাইখ সিরাজের কাজটি কী, সেটি যদি আমরা না বুঝি তাহলে আমরা তাকে মূল্যায়ন করতে পারব না।
আমরা অনেকে যারা মাঠে-ময়দানে কাজ করি, এই যেমন আমি শিক্ষা নিয়ে কাজ করি আমরা জানি যে প্রান্তিক মানুষের অভিজ্ঞতার মূল্য কত। শাইখ সিরাজ তার কাজের মাধ্যমে ঠিক কৃষকের মনের কথা, অভিজ্ঞতার কথা, প্রজ্ঞার কথাগুলোকে সাংঘাতিক যত্ন করে সামনে তুলে এনেছেন।
তিনি কৃষি বিপ্লব করে চলেছেন নিরবচ্ছিন্নভাবে। ছাদ কৃষির কথাই ধরুন, আমরা তো কেউ চিন্তাই করতে পারিনি যে, এটা নিয়ে কাজ করা যায়। কে ভাবতে পেরেছিল তার আগে, যে এটাও একটা জনপ্রিয় বিষয় হিসেবে উঠে আসবে জনসম্মুখে। কত মানুষই তো ছাদ কৃষি করে বেড়ান। গৃহকর্তা করছেন, গৃহকর্ত্রী করে চলেছেন। শাইখ ভাই যে কাজটি করেছেন, তা হলো তিনি অসংখ্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। গ্রামে-গঞ্জে সবার মধ্যে শাইখ সিরাজ যেমন একটা নাম, তেমনি নগরবাসীও তাকে চিনেছেন আলাদাভাবে। তার একটা ফ্যানক্লাব তৈরি হয়ে গেছে।
সারা জীবন মাঠে ঘাটে পথে প্রান্তরে চষে বেড়িয়েছি উন্নয়নকর্মী হিসেবে। কিন্তু আমি যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হলাম, শাইখ ভাইয়ের পাল্লায় পড়ে ধানক্ষেতে ধানক্ষেতে নেমে গেছি, ধান কাটতে হয়েছে। এটি আমার একটা মজার অভিজ্ঞতা ছিল। তখন অনুধাবন হলো মনের মধ্যে, যে কত কষ্ট করেন আমাদের কৃষকরা। ধান কাটতে আমার কষ্ট লেগেছে, কিন্তু কৃষকরা যে দিবারাত্রি পরিশ্রম করেন সেটি একেবারে অন্তরে অনুধাবন করেছি ওই সময়ে। সেজন্য শাইখ ভাইকে স্যালুট জানাই। তিনি কেবল মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছেন তা নয়, তাদের ভেতরে মানবিকতা বোধ, চেতনা বোধ উজ্জীবিত করছেন।
আরও মজার ঘটনা আমি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে থাকার সুবাদে শাইখ ভাইয়ের সঙ্গে একটা যোগাযোগ ছিল। উনি আমাদের উৎসাহিত করলেন নৌকা বাইচ দেখতে যাওয়ার জন্য। সেই নৌকা বাইচ দেখতে গিয়ে দেখলাম বাংলার শ্বাশত সংস্কৃতি। শাইখ ভাই আমাদের নিয়ে গেলেন নৌকাবাইচ দেখতে, উদ্বোধন করলাম, নৌকাতে উঠিয়ে ছাড়লেন। এই হচ্ছে শাইখ ভাই।
তার আরেকটি জিনিস যেটি আমার খুব খুব ভালো লাগে সেটি হলো উনি কিন্তু উন্নয়নের সব শাখায় দৃষ্টি দেন। চ্যানেল আইয়ের বার্তা প্রধান, আবার নিজে সপ্তাহে একটা প্রামাণ্য অনুষ্ঠান তৈরি করছেন। আমি জানি রেকর্ডিংয়ের জন্য তিনি ফজরের আজানের আগে বেড়িয়ে যান। আমি যে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত গণসাক্ষরতা অভিযান, এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারত্ব করে তিনি চ্যানেল আইয়ে দীর্ঘদিন শিক্ষা সংবাদ প্রচার করে গেছেন। ধারণাটা যদিও আমাদের কাছ থেকে গিয়েছিল কিন্তু সেটিকে তিনি এমনভাবে পুষ্পে পল্লবিত করেছেন যে পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে শিক্ষা সংবাদ নীতিনির্ধারকদের কাছে অন্যভাবে আলোড়ন তুলেছিল।
আমার জানা মতে সে সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দুজন কর্মকর্তা দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন প্রতিদিন শিক্ষা সংবাদ মনিটরিং করার। তাকে শ্রদ্ধা জানাই। শাইখ সিরাজ বহু মানুষের কাছে পূজনীয় মানুষ, কিংবদন্তিতুল্য মানুষ, ফলো করার মতো মানুষ। তার পারিবারিক মূল্যবোধ নিয়ে খানিকটা না লিখলে বড় অন্যায় হবে। পুরো পরিবারকে একসঙ্গে ধরে রাখার কাজটি তিনি করেছেন নেপথ্যে থেকে, অনেকে হয়তো জানেন না। তারা সব ভাই-বোন খিলগাঁওয়ে পৈতৃক বাড়িতে একসঙ্গে বাস করছেন। এক সঙ্গে থাকার এই মানবিক মূল্যবোধ কোনো কোনো মানুষের ব্যক্তিত্বের আড়ালে হারিয়ে যায়।
বর্তমান বাংলাদেশে আমরা যেভাবে দেখতে পাচ্ছি মূল্যবোধের অবক্ষয়, সেখানে শাইখ ভাই তার বাড়িতে এটা সযতনে লালন করে চলেছেন। এটি আমাকে বিশেষভাবে মুগ্ধ করে। তার ৭০তম জন্মদিনে আমার চাওয়া, আমাদের তরুণ প্রজন্ম, শাইখ সিরাজের ৪ দশকের উন্নয়ন সাংবাদিকতার মূলমন্ত্র অন্তরে ধারণ করবে, চর্চা করবে। তাকে অনুসরণ করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে অগ্রণী ভূমিকায় থাকবে তরুণরা।
লেখক: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা
প্রথমেই বলি, ডাক্তারদের বিষয় কিন্তু শুধুই ডেঙ্গু না। ডেঙ্গু দমাতে চাইলে, প্রথমত মশার লার্ভা বিনাশ করতে হবে। যাতে মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত না হয়। ডেঙ্গু হওয়ার পরে হাসপাতালে যে জায়গা দরকার, যে ধরনের অবকাঠামো দরকার, ওষুধপত্রের দরকার আগে তা নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, সব কিছুরই সহজপ্রাপ্যতা দরকার। এটা যেন কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়। সেইক্ষেত্রে দেখতে হবে, আমাদের সীমিত সম্পদের মধ্যে চিকিৎসকরা যেভাবে চিকিৎসা দিচ্ছেন, তা তুলনাহীন। তারা দায়িত্বশীলতার সঙ্গেই কাজ করছেন। আসলে যাদের যা করার দায়িত্ব, তা যদি হতো তাহলে ডাক্তারদের দিনরাত পরিশ্রম করতে হতো না।
আমি মনে করি না, কারও মধ্যে কোনো অসন্তোষ রয়েছে। ইতিমধ্যে সরকারের নির্দেশে বিভিন্ন হাসপাতালে ‘ডেঙ্গু কর্নার’ করা হয়েছে। এরপরও কিছু জায়গায় রয়েছে, স্যালাইনের সংকট। এটা সাময়িক। এটা যাতে দ্রুত দূর করা যায়, তার জন্যও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে স্যালাইন আমদানি করা হবে। তবু কোনো সংকট হবে না। এরপর কোনো অসন্তোষ থাকবে বলে মনে হয় না।
যে সমস্ত জায়গায় স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না, তারও সমাধান দ্রুতই হবে। এখন কোনো কোনো জায়গায় স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। যে সমস্ত জায়গায় স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না, মনে রাখতে হবে, সেখানে সিন্ডিকেট করে অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরির চেষ্টা করছেন। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এই কাজ করতে হবে অনতিবিলম্বে। এ বিষয়ে কালক্ষেপণের সুযোগ নেই। তখন দেখা যাবে, আর কোনো সংকট নেই। দেশের মানুষ নির্বিঘেœই উপযুক্ত চিকিৎসা পাবেন।
এটা দুঃখজনক যে, আমাদের দেশে একটা শ্রেণি রয়েছে, যারা মজুদদারি করে। তারা কোনো সময় দেখেন না। শুধু দেখেন, তাদের কী করলে লাভ হবে? মরিচ-পেঁয়াজের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, আমদানি করার। সঙ্গে সঙ্গেই কিন্তু মরিচ-পেঁয়াজের দাম কমে গেল। এখানেও এরকম সহজপ্রাপ্যতা দরকার। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এই সমস্যা কিন্তু খুবই সাময়িক। মাসখানেকের মধ্যেই বিষয়টি থাকবে না। আসলে স্যালাইন আমদানি করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তখন দেখা যাবে, যারা স্টক করেছেন তারাই সম্মুখীন হয়েছেন ব্যবসায়িক ক্ষতির। এ বিষয়ে সরকার যথেষ্ট সতর্ক। পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা সর্বজনীন করার যত ধরনের উদ্যোগ নেওয়া দরকার, তা করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এ পর্যন্ত ৮৫০ জনের মতো রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে দুই কি তিন জন মারা গেছেন। এছাড়া চিকিৎসা সেবা সবাই পাচ্ছেন। অনেক ভিআইপি এখানেই ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিচ্ছেন। সাধারণ মানুষ তো নিচ্ছেনই, ভিআইপিরাও নিচ্ছেন। এখানে অবশ্যই সবাই আসছেন একটি আস্থার কারণে। তাদের মধ্যে একটা বিশ^াস তৈরি হয়েছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ^বিদ্যালয়ে আধুনিক প্রযুক্তিতে উন্নত মানের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, আন্তরিকভাবেই।
চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে সবাইকে কিন্তু রোগী হিসেবেই দেখা হচ্ছে। যে কারণে, এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের এমনটি ভাবার কারণ নেই যে, আমি সাধারণ মানুষ, তাই আমার চিকিৎসাও হবে সাধারণ। কোনোভাবেই তা নয়।
আমি মনে করি, সব হাসপাতালেই ডাক্তাররা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন। তাদের মধ্যে কোনো ধরনের কোনো অসন্তোষ নেই। এছাড়া হাসপাতালগুলোও এ ব্যাপারে যথেষ্ট প্রস্তুত। যারা বলেন হাসপাতালের ঠিকমতো প্রস্তুতি নেই, অবকাঠামোগত দুর্বলতা অথবা ডাক্তারদের মধ্যে আন্তরিকতার অভাব তারা বিষয়টি না জেনেই বলেন। এটি একেবারেই সঠিক নয়। কারণ ডাক্তাররা সবসময় সেবার মানসিকতা নিয়েই কাজ করেন, সেখানে নিজস্ব কোনো চাওয়া-পাওয়ার প্রতিফলন নেই। তারা এ ব্যাপারে অত্যন্ত সংবেদনশীল। কোনো সাধারণ মানুষ যদি সরাসরি এসে বিষয়টি দেখতেন, তাহলে তিনিই বলতেন ডাক্তাররা খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন। এখানে কোনো ধরনের ফাঁকি নেই।
আসলে ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে হলে, কয়েকটা মন্ত্রণালয়কে একত্রে কাজ করতে হবে। যার যতটুকু দায়িত্ব, তা পালন করতে হবে। এককভাবে আমি কোনো পক্ষকে দায়ী করতে চাই না। পাশাপাশি জনগণকেও সচেতন হতে হবে। এর সঙ্গে জড়িত অনেকগুলো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব রয়েছে। আমাদের বাইরে এখানে এলজিআরডি রয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় রয়েছে। এমনকি ওয়াসারও দায়িত্ব রয়েছে।
এ ক্ষেত্রে শুধু চিকিৎসকের ওপর দায় চাপালে সঠিক হবে না। যখন হাসপাতালে কোনো রোগী আসেন, তখন তাদের কোনোভাবেই ফেরত পাঠানো ঠিক না। জেলা, উপজেলা পর্যায়ে একটি নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। কীভাবে তাদের কাজ করতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো দ্বিধার সুযোগ নেই। সমস্ত দেশেই নিয়মানুযায়ী, প্রয়োজনানুযায়ী রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এরপর আর কোনো পক্ষের এ বিষয়ে ভুল বোঝার সুযোগ নেই।
ডেঙ্গু আক্রান্ত সব রোগীর ঢাকা শহরে আসার প্রয়োজন নেই। দেশের প্রত্যেকটি জেলা-উপজেলায়ই ডেঙ্গু মোকাবিলা করা জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে।
আমাদের একটা গাইড লাইন রয়েছে, সেটা অনুসরণ করেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বেশি বেশি ফ্লুইড খাওয়ানো হয় রোগীকে। সেই অনুযায়ীই তারা কাজ করছেন। এর বাইরে কোনো কিছুই হচ্ছে না। প্রটোকল ফলো করলে, কোনো আতঙ্কের কারণ নেই। একইসঙ্গে কারও মধ্যেই কোনো অসন্তোষ তৈরি হবে না। ডাক্তাররা ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা দিতে পারবেন।
দেশব্যাপী হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে শুধু শুধু আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে সরকার সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছে। যারা মনে করছেন, এ বিষয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই তা ঠিক নয়। ডাক্তার, নার্সসহ স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত সবাই এ ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিক। সরকারসহ সমস্ত পক্ষই, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যাতে কমে আসে, ক্রমাগত সেই চেষ্টাই করছে। আমি নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি, সরকারিভাবে যে ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা যথেষ্ট সময়োপযোগী এবং আধুনিক। দেশে ডেঙ্গু বিষয়ে আদৌ কোনো সমস্যা নেই। যা শোনা যাচ্ছে, বা কেউ কেউ বলছেন তা একবারেই অযৌক্তিক। এসব কথার কোনো ভিত্তিই নেই।
আমরা যথেষ্ট প্রস্তুতি রেখেছি, এই রোগের চিকিৎসার ব্যাপারে। কেউ কোনো ধরনের অবহেলা করছে না, বিশেষ করে চিকিৎসাসেবার সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছেন। সমস্ত হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে তারা সবসমসয় সতর্ক অবস্থানেই রয়েছেন। যখনই কোথাও ডেঙ্গু আক্রান্ত কোনো রোগী আসছেন, সঙ্গে সঙ্গে তিনি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে কোনো পক্ষের অবহেলা আমি প্রত্যক্ষ করিনি। যদি কেউ তা বলে থাকেন, তাহলে বলব, বিষয়টি উদ্দেশ্যমূলক। আগে বুঝতে হবে এটি কোন ধরনের রোগ, এর চিকিৎসার কী নিয়ম এরপর আমাদের কথা বলতে হবে। যারা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ, কেবল তারাই জানেন, বাস্তবতা কী? খোঁজ নিলে দেখা যাবে, ডেঙ্গু নিয়ে বাইরে যতটুকু আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে, তা একেবারেই হাস্যকর। প্রকৃত সত্য একেবারেই উল্টো। পরিস্থিতি পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে। চিকিৎসা পেশার সঙ্গে যুক্ত সবাই, অত্যন্ত দায়বদ্ধতার সঙ্গেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
আমি কখনোই এককভাবে কোনো সিটি করপোরেশনকে দায়ী করব না। এখানে বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় জড়িত রয়েছে। সমন্বিতভাবে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে হবে। তখন দেখা যাবে, এ বিষয়ে আর কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
অনেকেই বলছেন, হাসপাতালের বিভিন্ন অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে, ডাক্তারদের সমস্যা রয়েছে যা আদৌ ঠিক নয়। যদি কেউ এ ব্যাপারে ঠিকমতো খোঁজখবর নেন, তখন দেখতে পারবেন হাসপাতালের প্রকৃত চিত্র। কত আন্তরিকতার সঙ্গে সবাই কাজ করছেন। হাসপাতাল, জনগণসহ সবাইকেই সচেতনভাবে এ বিষয়ে কাজ করতে হবে।
লেখক: উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
আমার ছেলে প্রসূনের বন্ধু তাহমিদ। সেন্ট যোসেফ স্কুল থেকেই তারা একসঙ্গে পড়াশোনা করছে। দুজন ভর্তি হয়েছিল বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে। বন্ধুমহলে প্রসূন বেশ লম্বা, ছয় ফুট ছাড়িয়েছে আগেই। কিন্তু তাহমিদ প্রসূনের চেয়েও লম্বা। স্বাস্থ্যও প্রসূনের চেয়ে ভালো। সব মিলিয়ে দারুণ হ্যান্ডসাম। তাহমিদের বাবা দুবাইয়ে চাকরি করেন। বড় বোন আর মাকে নিয়ে বনশ্রীতে তাদের বাসা। সচ্ছল পরিবারের সন্তান তাহমিদ, দাবড়ে বেড়াত ঢাকা। বাবা দেশের বাইরে ছিল বলে, তাহমিদই ছিল তার পরিবারের কর্তা। নিজে গাড়ি চালিয়ে ইউনিভার্সিটিতে যেত। মধ্যরাতে মা-বোনকে নিয়ে চলে যেত কখনো মাওয়া, কখনো অন্য কোথাও। হঠাৎ এক শুক্রবার সকালে শুনি তাহমিদ মারা গেছে! আমাদের কারও বিশ্বাসই হচ্ছিল না। বুধবারও তাহমিদ গাড়ি চালিয়ে ইউনিভার্সিটিতে গেছে। রাতে এক আত্মীয়ের গায়ে হলুদে অংশ নিয়েছে। পরদিন নিজে ডাক্তারের কাছে গেছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে খারাপ লাগছিল বলে নিজে থেকেই যেতে চেয়েছে। মা-বোনের সঙ্গে হাসপাতালে যাওয়ার পথে গাড়িতে মায়ের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে। হাসপাতালে যাওয়ার পর ডাক্তাররা জানান, গাড়িতেই মারা গেছে তাহমিদ। মায়ের কাঁধে মাথা রেখেই চিরঘুমে চলে গেছে তাহমিদ। মাত্র দুদিনের জ্বরে তাহমিদের মতো প্রাণবন্ত একটি ছেলের চলে যাওয়ার শোক এখনো সামলে উঠতে পারিনি আমরা। সন্তান হারানোর বেদনায় আর্ত আমরাও। তার বন্ধুরা এখনো বিশ্বাসই করতে পারছে না। একবার ভাবুন সেই মায়ের কথা, যার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেল সন্তান। গত একমাসে সেই মাকে একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। বনশ্রীতে তাদের বিশাল বাসায় এখন খাঁখা শূন্যতা, বাসাজুড়ে তাহমিদের স্মৃতি। কীভাবে ভুলবে সেই মা, সেই বোন।
শুধু তাহমিদের পরিবার নয়, দেশের শত শত পরিবারে এখন একই ধরনের কান্না, হাহাকার। তছনছ হয়ে গেছে অসংখ্য পরিবার, মুছে গেছে শত স্বপ্ন। এক সপ্তাহে পরিবারের দুই সন্তানকে হারানোর বেদনায় নীল পরিবারের কান্নাও ছুঁয়ে গেছে সবাইকে। হাসপাতালে হাসপাতালে এখন উপচেপড়া ভিড়। কোথাও আসন খালি নেই, আইসিইউ তো সোনার হরিণ। দুঃখটা হলো ডেঙ্গু কিন্তু নতুন অসুখ নয়। অনেক পুরনো রোগ। তবে বাংলাদেশে এই জ্বর শনাক্ত হয়েছে ২০০০ সালে। এমনিতে বলা হয়, ডেঙ্গু মূলত বর্ষার রোগ। জুন থেকে সেপ্টেম্বর হলো ডেঙ্গুর মৌসুম। কিন্তু এবার বর্ষার আগেই ডেঙ্গু তার থাবা বিস্তার করে। লক্ষণ দেখে মৌসুম শুরুর আগে থেকেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলে আসছিল, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এ বছর ডেঙ্গুর বিস্তার হবে ভয়াবহ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। ডেঙ্গু এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন নাম। কান্নায় ভারী হচ্ছে বাতাস।
২০০০ সালে শনাক্তের পর থেকে এতদিনে ডেঙ্গুর কারণ, চিকিৎসা সম্পর্কে সবাই জেনে গেছে। তারচেয়ে বড় কথা হলো, ডেঙ্গুর চিকিৎসা তেমন জটিলও নয়, ব্যয়বহুলও নয়। আশা ছিল, ডেঙ্গুর বিস্তার যাই হোক, মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কম হবে। কিন্তু আশা ভয়ংকর আশঙ্কায় বদলে গেছে। হু হু করে বাড়ছে কান্না, বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা।
স্বাভাবিক সময়েই বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে আসনের চেয়ে অনেক বেশি রোগী থাকে। আর করোনা বা ডেঙ্গুর মতো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হলে সবকিছু আয়ত্তের বাইরে চলে যায়। তারপরও কীভাবে যেন গাদাগাদি করে মানুষ হাসপাতালে থাকে। একবার ভাবুন, দেড় কোটি মানুষের এই ঢাকায় যদি এক ভাগ মানুষও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়, তাহলেও সংখ্যাটা দেড় লাখ! এই দেড় লাখ মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হতে চাইলে, কোথায় পাবে আসন?
এতদিন জানতাম, ডেঙ্গু অত ভয়ংকর নয়। খালি সময়মতো রোগটা শনাক্ত হতে হবে এবং সঠিক সময়ে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। তাই জ্বর হলে একদম খামখেয়ালি করা যাবে না। সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গুর টেস্ট করতে হবে। ডেঙ্গুর টেস্টও ব্যয়বহুল নয়। সরকারি হাসপাতালে ১০০ টাকাতেই ডেঙ্গুর টেস্ট করা যাবে। আর ডেঙ্গু হলেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে ছুটতে হবে এমনও নয়। এখন ডেঙ্গুর চিকিৎসা প্রটোকল বাংলাদেশের সব চিকিৎসকেরই মুখস্থ। পরিমাপমতো স্যালাইন দিলেই অনেক সময় সুস্থ হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে। তবে সময়মতো সেই পরিমাপটা ঠিক করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্লাটিলেট বেশি কমে গেলে রক্ত দিতে হতে পারে। তবে সতর্ক থাকলে এবং শুরুতেই শনাক্ত হয়ে গেলে অল্পতেই সুস্থ হওয়া সম্ভব। কিন্তু এখন সব এলোমেলো লাগছে। হাসপাতালে ভিড় কমাতে ডাক্তাররা বলছেন, জ্বর হলেই হাসপাতালে ছুটে আসবেন না। তাহলে সাধারণ মানুষ কী করবে? দ্রুত হাসপাতালে গেলেও সমস্যা আবার সময় মতো না গেলেও মৃত্যুর ঝুঁকি। আবার জ্বর আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টেস্ট না করলে নাকি ডেঙ্গু ধরা পড়ে না। কোনটা ডেঙ্গু, কোনটা ম্যালেরিয়া, কোনটা টাইফয়েড, কোনটা ভাইরাল জ্বর সাধারণ মানুষ কীভাবে বুঝবে? এতদিন ডেঙ্গু ছিল শহুরে অসুখ, অভিজাত রোগ। কিন্তু এবার ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। সব মিলিয়ে আমার কাছে ডেঙ্গুকে এবার করোনার চেয়েও ভয়ংকর লাগছে।
সবাই মিলে চেষ্টা করলে ডেঙ্গুতে মৃত্যু রোধ করা সম্ভব। তবে সেটার জন্য ডাক্তার, হাসপাতাল, চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর ভরসা করলে হবে না। ডেঙ্গুতে মৃত্যু কমানোর উপায় একটাই, এডিস মশা থেকে দূরে থাকা। আপনার এলাকায় যদি মশার উৎপাত থাকে, দিনরাত মশারি টানিয়ে রাখুন। বিশেষ করে, শিশুদের মশারির ভেতরে রাখুন। যথাসম্ভব হাত-পা ঢেকে রাখুন, যাতে মশা আপনার নাগাল না পায়। তবে অফিস-আদালত, চাকরি-বাকরি, স্কুল-কলেজ ফেলে সারা দিন তো আর মশারির ভেতরে কাটানো সম্ভব নয়। তাই মশা থেকে দূরে থাকার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো, মশার বংশবিস্তার ঠেকিয়ে রাখা, আর বংশবিস্তার ঠেকাতে না পারলে মেরে ফেলা।
অনেক বছর ধরে ডেঙ্গুর কারণে মশা মারার বিষয়টা নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু কখনোই ‘মশক নিধন অভিযান’ পুরোপুরি সফল হয় না। কখনো ওষুধ ফুরিয়ে যায়, কখনো ওষুধ কাজ করে না। মশা মারতে কামান দাগার কথা শুনেছি। কিন্তু এখন দেখছি কামানেও কাজ হবে না। মশা মারতে আামাদের দেশে হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ লাগে। এবার আগেভাগেই ডেঙ্গু নিয়ে আলোচনাটা শুরু হয়েছিল। আশা করেছিলাম, নগরপিতারা পরিকল্পনা করে মশা মারতে মাঠে নামবেন। কিন্তু তারা কথায় কামান দাগতে যতটা ওস্তাদ, মশা মারতে ততটা নন। মশার কামড়ে ছড়িয়ে পড়ে অনেক রোগজীবাণু। তবে মশার মধ্যে এখন সবচেয়ে ভয়ংকর হলো এডিস। এই মশাই ডেঙ্গুর বাহক।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে মেয়র প্রার্থীরা সম্ভব-অসম্ভব অনেক প্রতিশ্রুতি দেন। সাদা চোখে সিটি করপোরেশনের প্রধান কাজ দুটি প্রতিদিন ময়লা পরিষ্কার করা আর মশা মারা। এ দুটি কাজ করতেই মেয়রদের নাভিশ্বাস। প্রতিদিন গৃহস্থালি বর্জ্য অপসারণের তবু একটা সিস্টেম দাঁড়িয়েছে, কিন্তু রাস্তাঘাট এখনো অনেক ময়লা, ঢাকার খালগুলো সব আবর্জনায় অচল হয়ে গেছে। আর এই ময়লা হলো, মশার বংশবিস্তারের জন্য সবচেয়ে ভালো। সিটি করপোরেশন কিছু করেনি, সেটা বলব না। তারা চেষ্টা করেছে। অনেক চেষ্টা করলেন, কিন্তু মশা মরল না। উল্টো মানুষ মরছে শত শত, তাহলে লাভটা কী হলো?
এখন জান বাঁচাতে মশার বিরুদ্ধে সম্মিলিত লড়াই চালাতে হবে। সব দায়িত্ব মেয়রদের হাতে দিয়ে, তাদের ব্যর্থ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করার চেয়ে, নিজেদের কাজটুকু নিজেরা করা ভালো। এডিস মশা ঠেকানোর কৌশল আমাদের সবার জানা। কোথাও ময়লা রাখা যাবে না, পানি জমতে পারে, এমন কোনো ব্যবস্থা যেন না থাকে। আমাদের চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে; পরিত্যক্ত ডাবের খোসা, টায়ার, নজরের বাইরে থাকা ফুলের টব, নির্মাণকাজের খানাখন্দে পানি জমতে দেওয়া যাবে না। ছাদ বাগানের দিকে যেন সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। সাধের ছাদ বাগান যেন আপনার মৃত্যুর কারণ না হয়। স্বচ্ছ পানি জমতে না পারলে এডিস বংশবিস্তার করতে পারবে না। তবে সিটি করপোরেশন একা যেমন পারবে না, আবার ব্যক্তি সচেতনতায়ও পুরোপুরি নিরাপদ থাকা যাবে না। সচেতনতার একটা সম্মিলিত প্রয়াস লাগবে। কারণ আপনি আপনার বাসা নিরাপদ রাখলেন কিন্তু পাশের বাসায় যদি এডিসের কারখানা থাকে, আপনি কিন্তু বাঁচতে পারবেন না। তাই মশার বিরুদ্ধে লড়াইটা হতে হবে সর্বাত্মক, বছরজুড়ে এবং দেশজুড়ে।
এডিস মশা আপনাকে কামড়ালে আপনার ডেঙ্গু হতে পারে। ডেঙ্গু হয়ে গেলে ডাক্তার, সরকার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, হাসপাতালকে গালি দিয়ে পার পাওয়া যাবে না। হাসপাতালে আসন বা আউসিইউ বাড়ানোর চেয়ে, সবাই মিলে এডিসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
সেনেগালি এক প্রবাদে বলা হয়েছে ‘তাড়াহুড়োর পথের মধ্যে অনুশোচনা বহন করতে হয়।’ আবার যথাসময়ে কর্ম সম্পাদনের উপদেশ দিয়েও অনেক প্রবাদ রয়েছে। এই দুই বাস্তবতার মিল খুঁজে পাওয়া যাবে সম্প্রতি মন্ত্রিসভায় বিল ও প্রকল্প অনুমোদনের হিড়িক দেখলে। বুধবার দেশ রূপান্তরে ‘শেষ সময়ে কাজ শেষের তাড়া’ শিরোনামের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মন্ত্রিসভা বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে কতগুলো বিষয় থাকবে, তার কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। তবে সাধারণত ছয়-সাতটি বিষয় থাকে। কিন্তু গত সোমবারের মন্ত্রিসভা বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে ১৯টি বিষয় ছিল। শুধু প্রকল্প এবং খসড়া আইন নয়, বিভিন্ন নীতিমালাও তোলা হচ্ছে। পুরনো জমে থাকা এসব খসড়া মন্ত্রিসভায় তোলার কারণেই বৈঠকের এজেন্ডার বহরও বাড়ছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সরকারের আগের মেয়াদে করা ভূমি সংস্কার আইনের খসড়াটিই হঠাৎ অনুমোদন হয় ২৮ আগস্টের মন্ত্রিসভা বৈঠকে। চাল থেকে পোকা বাছার মতো করে লাইন বাই লাইন পড়ে একটি আইনের খসড়া করা হয়ে থাকে। সেখানে খসড়াটি দীর্ঘদিন পড়ে থাকার কারণটি খুঁজে দেখা দরকার। সেদিন মোট ছয়টি আইনের খসড়া উঠেছিল সভায়। এগুলোর বেশিরভাগই কয়েক বছর ধরে করা খসড়া। যথাসময়ে খসড়াগুলো মন্ত্রিসভার বৈঠকে উঠল না কেন? মন্ত্রিপরিষদের বিষয়টি যেখানে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে মনিটর করা হয়, সেখানেই কাজের এই দীর্ঘসূত্রতা স্বাভাবিক নয়। অনুমেয় যে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরের কাজের ধীরগতির কারণও এরই পরম্পরা।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সবকিছু ঠিক থাকলে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যারা জিতবে তারা সরকার গঠন করবে। বর্তমান সরকার মেয়াদের প্রায় শেষ প্রান্তে চলে এসেছে। তফসিল ঘোষণা হলে আইনের খসড়া প্রণয়ন বা নতুন প্রকল্প নেওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। ফলে শেষ সময়ে এসে সরকার নির্বাচনী প্রকল্প অনুমোদনেও তোড়জোড় করছে। সংশ্লিষ্টরা এগুলোকে জনতুষ্টিমূলক প্রকল্প হিসেবেও অভিহিত করেছেন।
গত চারটি একনেক সভায় ৭৮টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ৭৩টিই অবকাঠামো, সড়ক ও যোগাযোগ এবং প্রশিক্ষণকেন্দ্রিক। বিশ্লেষকদের মতে, এসব প্রকল্পই নির্বাচনী প্রকল্প। এ ছাড়া নির্বাচনের আগে বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই উদ্বোধনের তোড়জোড় দেখা গেছে। কাজ চলমান থাকা অবস্থায় উদ্বোধন হওয়া ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কথা এখানে উল্লেখ করা যায়।
সরকারের শেষ সময়ে এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আইনের খসড়া ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প অনুমোদনের হিড়িক লাগার বিষয়টি নতুন নয়। তারই ধারাবাহিকতা দেখা যাচ্ছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কিছুদিন আগে পর্যন্ত নতুন প্রকল্প অনুমোদন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের হিড়িক পড়ে যায়। যদিও কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে আমাদের টপ প্রায়োরিটি পেন্ডিং কাজ খুঁজে বের করে তা শেষ করা। কারণ নতুন মন্ত্রী এসে পুরনো এসব সিদ্ধান্তের দায়িত্ব নাও নিতে পারেন।
সরকারের মেয়াদের শেষ সময়ে এসে এসব প্রকল্প নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সরকারের রুটিন কাজ হলেও নৈতিকতার দিক থেকে এটাকে দৃষ্টিকটু হিসেবে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। এর মাধ্যমে নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরির পথ বন্ধ হয়ে যায় বলে মনে করেন তারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনী বছরের শেষ দিকে সাধারণত অন্য সময়ের চেয়ে বেশি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। কারণ এই বছরকে সামনে রেখে বাজেটের আকারও বাড়ানো হয়। সে হিসেবে অন্য বছরের তুলনায় নির্বাচনী বছরে সরকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বেশি করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভোটারদের তুষ্ট করতে নেওয়া এসব প্রকল্প সময়মতো শেষ হবে না, গুনতে হবে বাড়তি খরচও।
১৯৩৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার ও সম্পাদক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তার জন্ম বর্তমান বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানার মাইজপাড়া গ্রামে। বাবা ছিলেন স্কুলশিক্ষক। চার বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে কলকাতায় চলে যান। সুরেন্দ্রনাথ কলেজ, দমদম মতিঝিল কলেজ, সিটি কলেজ পেরিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ করেন ১৯৫৪ সালে। কিছুদিন গতানুগতিক চাকরি করে সুনীল সাংবাদিকতায় স্থায়ী হন। ১৯৫৩ সালে কয়েকজন বন্ধুসহ তিনি কবিতা পত্রিকা ‘কৃত্তিবাস’ সম্পাদনা করতে শুরু করেন। আমৃত্যু দেশ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সাহিত্যে প্রবেশ কবিতা দিয়ে। তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার জীবনানন্দ-পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি। একই সঙ্গে তিনি আধুনিক ও রোমান্টিক। লেখালেখিতে ‘নীললোহিত’, ‘সনাতন পাঠক’ ও ‘নীল উপাধ্যায়’ প্রভৃতি ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন। প্রথম উপন্যাস ‘আত্মপ্রকাশ’ (১৯৬৬), প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একা এবং কয়েকজন’ (১৯৫৮)। সাহিত্যের সব শাখায় বিচরণ করেছেন তিনি। কাব্যগ্রন্থ ‘আমি কী রকমভাবে বেঁচে আছি’, ‘হঠাৎ নীরার জন্য’, উপন্যাস ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, ‘প্রথম আলো’, ‘সেই সময়’, ‘পূর্ব পশ্চিম’, ‘মনের মানুষ’, আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘অর্ধেক জীবন’ ও ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’, কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ ‘কাকাবাবু’সহ অসংখ্য রচনা তাকে অমর করে রাখবে। সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার, আনন্দ পুরস্কার, বঙ্কিম পুরস্কারসহ বহু স্বীকৃতি তিনি লাভ করেন। ২০০৮ সালে ভারতের সাহিত্য আকাদেমির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি পশ্চিমবঙ্গ শিশু-কিশোর আকাদেমির সভাপতিরও দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর কলকাতায় জনপ্রিয় এই কথাসাহিত্যিক মৃত্যুবরণ করেন।
আগামী চেস গিল্ড স্কুল দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আইয়ান রহমান ও মনন রেজা নীড়। একক ইভেন্টের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী ক্যাটাগরিতে আইয়ান ও ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নীড়। ৭ রাউন্ডের খেলায় আইয়ান ও নীড় দুজনই পেয়েছে সাড়ে ছয় পয়েন্ট করে।
বিটজ দলগত বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এলিগেন্ট চেস একাডেমি। এই দলে খেলেছে জারিফ হক আফনান, তাসরিক সায়হান, সিয়াম চৌধুরী ও নীলাভা চৌধুরী। আজ শনিবার দাবা ফেডারেশন কার্যালয়ে শেষ হয়েছে এই প্রতিযোগিতা।
আগামী চেস গিল্ডের আয়োজনে গত ২৮ সেপ্টেম্বর শুরু হয় ‘আমরা ৯২’ আগামী চেস গিল্ড স্কুল রেটিং টুর্নামেন্ট। সুইস লিগ পদ্ধতিতে হয়েছে খেলা। একক ও দলগত দুই বিভাগে অংশ নেয় ১৪৫ জন দাবাড়ু। টুর্নামেন্টে বিজয়ীরা ট্রফি, মেডেল ও সার্টিফিকেটের পাশাপাশি পেয়েছে ৭০ হাজার টাকা।
টুর্নামেন্ট শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন গ্র্যান্ডমাস্টার রিফাত বিন সাত্তার, আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার রানী হামিদ। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম।
টানা ৬ ম্যাচ জিতে লা লিগার শীর্ষে উঠে এসেছিল জিরোনা। আগের রাতে সেভিয়াকে হারানো বার্সেলোনা সেই জিরোনাকে পেছনে ফেলে। আর রিয়াল মাদ্রিদ এবার উড়তে থাকা জিরোনাকে হারিয়ে লা লিগার কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধার করেছে।
শনিবার মন্তিলিভি স্টেডিয়ামে জিরোনাকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে কার্লো আনচেলত্তির দল। রিয়ালের হয়ে গোল তিনটি করেছেন জোসেলু, অঁরেলিয়ে চুয়ামেনি ও জুড বেলিংহাম।
আট ম্যাচের সাতটিতে জিতে রিয়ালের পয়েন্ট এখন ২১। সমান ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে বার্সেলোনা। আর টানা ছয় জয়ের পর রিয়ালের কাছে হেরে যাওয়া জিরোনা ১৯ পয়েন্ট নিয়ে আছে তিনে।
সপ্তাহ খানেক আগেই আতলেতিকো মাদ্রিদে গিয়ে ৩-১ গোলে হেরেছিল রিয়াল। এবার জিরোনায় গিয়ে
প্রথমার্ধেই ২ গোলে এগিয়ে যায় আনচেলোত্তির শিষ্যরা। এর মধ্যে ১৭ মিনিটে বেলিংহামের ক্রস থেকে বল জালে পাঠান জোসেলু। আর ২২ মিনিটে টনি ক্রুসের কর্নার থেকে হেডে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন চুয়ামেনি।
রিয়াল ব্যবধান ৩-০ করে ৭১ মিনিটে। জোসেলুর শট জিরোনা গোলরক্ষক প্রতিহত করলেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি। নাগালে বল পেয়ে দারুণভাবে বল জালে পাঠান বেলিংহাম। এটি রিয়ালের হয়ে ৭ ম্যাচে তার অষ্টম গোল।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।