
সম্পত্তি ও অফিস সংক্রান্ত মামলায় আদালতের বাইরে গিয়ে উভয়পক্ষ বসে স্বল্পতম সময়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করে মীমাংসার জন্য যে উদ্যোগ নেওয়া হয়, সেটি হচ্ছে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বা অলটারনেটিভ ডিসপুট রেজল্যুশন (এডিআর)। এটি একটি আইনগত প্রক্রিয়া। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি আইন ঠিকভাবে প্রয়োগ হলে, আদালতে বিচারাধীন পাহাড়সম মামলাজট কমে আসবে বলে আইনজ্ঞদের ধারণা। এডিআরের মাধ্যমে একটি মামলা নিষ্পত্তি হতে সময় লাগে ৯০ দিন। উকিলের খরচ লাগে না বললেই চলে। এতে উভয়পক্ষই লাভবান হয়। যদি কোনো মামলা এডিআরের মাধ্যমে নিষ্পত্তি না হয়, তাহলে মামলাটি আদালতে চলে যায়। অন্যদিকে বিচারিক প্রক্রিয়ায় একটি মামলা শেষ হতে দীর্ঘ সময় লাগে। ফলে প্রচুর অর্থেরও অপচয় হয়। যে কারণে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিশ্বব্যাপী এডিআর পদ্ধতির গুরুত্ব বাড়ছে। বিশে^র সঙ্গে তাল মিলিয়ে সরকারও এডিআর পদ্ধতির ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। কিন্তু, এর সাফল্য কি সত্যিই দুরস্ত!
বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মূল লক্ষ্য, মামলায় জটিলতা এবং দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করা। আমাদের দেশে রয়েছে, তিন ধরনের বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। সেগুলো হচ্ছে আলাপ-আলোচনা বা নেগোসিয়েশন, মধ্যস্থতা বা মিডিয়েশন এবং সালিশ বা আরবিট্রেশন। কিন্তু বাস্তবে বিরোধ নিষ্পত্তি হচ্ছে না। এর কারণ কী? এ বিষয়ে শনিবার দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত ‘বিকল্প হতে পারছে না বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি’ প্রতিবেদনে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে কোনোরকম ভোগান্তি ও হয়রানি ছাড়া নিখরচার এই সমাধানেও অনেকের উৎসাহ নেই। ফলে মামলা বাড়ছে, পক্ষদের বিরোধে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। ভুক্তভোগীর ভোগান্তি ও আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে চরমভাবে।
গত দুই দশকে অনিষ্পন্ন মামলার সংখ্যার সঙ্গে আদালতের বাইরে নিষ্পত্তি হওয়া বিরোধপূর্ণ ঘটনার সংখ্যা মেলালে সেই চিত্রই দেখা যায়। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ পর্যন্ত উচ্চ আদালতে বিচারাধীন দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা ৪২ লাখের বেশি।
অন্যদিকে, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার হিসাবে ২০০৯ সাল থেকে প্রায় ১৫ বছরে সাড়ে ৮৬ হাজার বিরোধ (মামলাপূর্ব ও পরবর্তী) নিষ্পত্তি করেছে ৬৪ জেলার লিগ্যাল এইড অফিস। লাখ লাখ মামলা ও বিরোধের বিপরীতে এ পরিসংখ্যানকে হতাশাজনক বলছেন আইনবিদরা। আসলে এডিআর নিয়ে ধারণা ও প্রচারের ঘাটতি, বিরোধীয় পক্ষদের আস্থাহীনতা, মামলার প্রবণতা ও ছাড় না দেওয়ার মানসিকতা, কিছু ক্ষেত্রে আইনজীবীদের আন্তরিকতার ঘাটতি, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আদালতকে নির্ভরযোগ্য মনে করা, পক্ষদের এডিআর মানার বাধ্যবাধকতা না থাকায় অনেক সম্ভাবনার পরেও বিকল্প হয়ে উঠতে পারছে না বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা।
এ ব্যাপারে অ্যাটর্নি জেনারেল একটি বাস্তবসম্মত কথা বলেছেন। তিনি জানাচ্ছেন এ বিষয়ে মানুষের ধারণা কম। অন্যদিকে, মানুষকে বোঝাতে না পারা। আমরা হয়তো মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হচ্ছি না যে, এটার লাভ-ক্ষতি কী? মামলা করলে কী হবে আর এডিআর করলে কী হবে এগুলো বোঝানো গেলে, মানুষের আগ্রহ আরও বাড়বে।
প্রশ্ন হচ্ছে, বোঝানোর দায়িত্ব আসলে কার? এই প্রশ্নের উত্তরও অ্যাটর্নি জেনারেল দিয়েছেন। বলেছেন আদালত আইনজীবীদের ডেকে নিয়ে দুপক্ষকে সমঝোতায় আসতে তাগিদ দিলে, আপসের মানসিকতা নিয়ে বসলেই সমাধান হবে। যদি তাই-ই হয়, তাহলে আদালতকেই এ বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। আইনের বিধান অনুযায়ী, এ পদ্ধতি বাস্তবায়নে আদালত নিজে মধ্যস্থতার উদ্যোগ নিতে পারে। আইনজীবী বা আইনজীবীর নিযুক্ত অন্য আইনজীবী, অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, জেলা জজের তৈরি প্যানেলও মধ্যস্থতার উদ্যোগ নিতে পারে।
যে উপায়েই হোক, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির পথেই হাঁটতে হবে। এক্ষেত্রে কোন পক্ষ দায়িত্ব নিয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন সেই বিষয়ও নির্ভর করে আদালতের ওপর। মুখ্যত, অনিষ্পন্ন মামলার সংখ্যা কমিয়ে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থায় সুফল আনতে হবে যাতে দুর্বিষহ মামলাজটের হাত থেকে সাধারণ মানুষ দ্রুত মুক্তি পায়।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক। তিনি বিভিন্ন সময়ে হাতিরঝিল প্রকল্পসহ বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি, বিআরটি, এমআরটি ও সাবওয়ে প্রকল্পে পরামর্শক হিসেবে যুক্ত ছিলেন। সম্প্রতি রাজধানীতে চালু হলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। রাজধানীর যোগাযোগব্যবস্থার নানা সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সম্পাদকীয় বিভাগের সাঈদ জুবেরী
দেশ রূপান্তর : এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আর ফ্লাইওভারের পার্থক্য কী?
ড. এম শামসুল হক : মোটা দাগে কোনো পার্থক্য নেই। দুটোই এলিভেটেড। উড়ালসড়ক বা ফ্লাইওভার হচ্ছে দ্বিতল রাস্তা, এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে দোতলা রাস্তা উইথ এক্সপ্রেস কন্ট্রোল সার্ভিস। তবে এক্সপ্রেসওয়ে মাটিতেও হতে পারে। কিন্তু ফ্লাইওভার এবং ওভারপাস সবসময় ওপরে হয়। ফ্লাইওভারের তুলনায় এক্সপ্রেসওয়েতে র্যাম্পের সংখ্যা কম থাকে। এক্সপ্রেসওয়ে অনেকটা ছিদ্রহীন পাইপের মতো। একদিক থেকে উঠলে স্বল্প সময়ে অন্যপ্রান্তে পৌঁছে যাবে। এক্সপ্রেসওয়েতে মোটামুটি ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো র্যাম্প থাকে না। অর্থাৎ এই ধরনের সড়কে কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই উচ্চগতিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে উল্লেখযোগ্য অংশ পার হয়ে যাওয়া যায়। আর তাই সড়কের মধ্যে এটি সবচেয়ে উচ্চ মানের। এক্সপ্রেসওয়েকে ফ্রিওয়ে বা সুপার হাইওয়ে নামেও ডাকা হয়। সড়কে কোনো মোড় থাকে না, ক্রস মুভমেন্ট, পার্কিং অ্যাকটিভিটি বা পথচারী চলাচল না করার অর্থ হচ্ছে ভালো মানের রাস্তা। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে অনেক র্যাম্প থাকার কারণে বাধাও বেশি পড়বে। ফলে এটি ফুল এক্সপ্রেস কন্ট্রোল এক্সপ্রেসওয়ে হবে না।
দেশ রূপান্তর : ঢাকা এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামার জন্য মোট ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩১টি র্যাম্প রয়েছে। এগুলো দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে গাড়ি ওঠাবে ও নামাবে। কিন্তু আপনি তো বললেন এক্সপ্রেসওয়েতে মোটামুটি ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো র্যাম্প থাকে না। এতে নতুন করে যানজটের সমস্যা সৃষ্টি করবে না?
ড. এম শামসুল হক : অবশ্যই। যে কোনো শহরে বিশেষ করে যেখানে গাড়ির সংখ্যা নিয়ন্ত্রিণহীনভাবে বেড়ে যায়, গাড়ি বলতে ছোট গাড়ির কথা বলছি তাহলে ওপরের যে ব্রডব্যান্ড কানেকশন আছে সেটা যখন লোকাল নেটওয়ার্কের সঙ্গে তার যখন ইন্টারফেসটা হবে, কানেক্টিভিটিটা এস্টাবলিস্ট হবে তখন ডেফিনিটলি একটার সক্ষমতা আরেকটাকে আক্রান্ত করবে। যেসব দেশে, বিশেষ করে উন্নত বিশে^ এক্সপ্রেসওয়েকে যেভাবে বানানো হয় একে বলা হয় ধমনী রোড। যে কোনো বড় আরবান এরিয়াতে এরকম একটা কি দুইটা ধমনী সড়ক থাকে যেটা শহরের বাইরে থেকে এসে শহরের বাইরে চলে যায়। উদ্দেশ্য হলো যে, শহরের ভেতরে যারা কাজ করে তাদের বেশিরভাগ মানুষই লোকাল ট্রাফিক হয়। কিন্তু এটা যদি একটা ক্যাপিটাল সিটি হয় তাহলে এই সিটিতে অন্যান্য জায়গা থেকে মানুষজন আসতে চাইবে এবং শহরটির মানুষজনও অন্যান্য শহরে যেতে চাইবে। তাহলে দূরপাল্লার যে ট্রিপগুলো হবে সেগুলো যেন নিচের রাস্তায় না থাকে সেজন্য এই রোডকে বলা হয় ধমনী সরক। এখানে ট্রিপগুলো লোকাল না, লংট্রিপ। আবার আরবান অ্যাক্টিভিটিকে সাপোর্ট করার জন্য গ্রিন মার্কেট, হোল সেল মার্কেট অথবা শপিং মলের যেসব পণ্য আছে সেগুলো রাতের বেলা দূরপাল্লার রাস্তা দিয়ে এসে নিয়ারবাই জায়গাতে নেমে যাবে। এবং আরবান এরিয়ার হোল সেল অ্যাক্টিভিটি, কনস্ট্রাকশন অ্যাক্টিভিটি, গ্রিন মার্কেটের পণ্য আসার এসব কাজ মিনিমাম ইম্পেক্টে হবে। যেটা আমদের দেশে এলোমেলো। গ্রিন রোডে গেলেই দেখবেন টাইলসের মার্কেট আর দোকানের সামনের রাস্তায় ছোট ছোট ট্রাক সব জটলা করে দাঁড়িয়ে আছে। আধুনিক শহরের ফুটপ্রিন্ট এটা না। আধুনিক শহরের চাহিদা আছে কিন্তু সেই চাহিদা মেটাতে কোনো পরিকল্পনা নেই।
বিআরটি পুরো পৃথিবীতে একটা সফল দাওয়াই। কিন্তু আমাদের এখানে মন্ত্রীরা এটার নামই শুনতে পারেন না। কেন? কারণ এটা দিয়ে এখানে কোনো কাজই হয় না। কিছুদিন পর শুনবেন মেট্রোর ঘটনাও হিতে বিপরীত হয়েছে। তখন বলবে যে মেট্রো রেল খারাপ। আসলে বিআরটি, মেট্রো এগুলো সবই ভালো। কার বা কাদের হাতে পড়েছে বিষয়গুলো সেটা দেখতে হবে। এবং ঢাকা শহরের নিজস্ব অবস্থাটা কী? ছোট গাড়িকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে নাকি উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে? গণপরিবহন কি বিশৃঙ্খল নাকি শৃঙ্খলার মধ্যে আছে? এসব ব্যবস্থাপনার ওপর আসলে বড় দাওয়াই নির্ভর করে।
দেশ রূপান্তর : পুরো কাজ শেষ না করে ঢাকা এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করা কি ঠিক হলো? উদ্বোধনের দিন যে তীব্র যানজট দেখা গেল সেটা কি অতিউৎসাহর জন্য নাকি প্রথম দিন থেকেই যানজটের নতুন সংকটের মুখে পড়লাম আমরা?
ড. এম শামসুল হক : প্রথমে যে কোনো ফ্যাসিলিটি আসলে এবং বিশেষ করে রাজনৈতিক স্ট্যান্টের জন্য যেসব উদ্বোধন করা হয় সেখানে কিছু ইমোশনাল ট্রাফিকও থাকে। মানুষজন দেখবে, ব্যবহার করবে যে বিষয়টা কেমন, আবার কিছু ট্রাফিক হবে কম্পেয়ার করতে চায় বলে- তারা দেখবে যে এটার কোনো বেনিফিট পাওয়া যায় কি না। সো প্রথম কিছুদিন যাওয়ার পর মানুষ যখন ওরিয়েন্টেড হয়ে যায় সে বুঝতে পারে অথবা লোকমুখে শুনেও জানতে পারে যে কোন জায়গাটা দিয়ে, কখন বা কীভাবে ব্যবহার করলে বিষয়টি থেকে বেনিফিট পাওয়া যায় তারপরে এর মূল্যায়ন করা যাবে। আমাদের এখানে ঢাকা এক্সপ্রেসওয়ের পার্শিয়াল উদ্বোধন হয়েছে, মতিঝিলের, কারওয়ানবাজারের র্যাম্পও হয়নি। মাঝখানে কিন্তু আরও কতগুলো র্যাম্প আছে। এখন যেটা হয়েছে, যারা উত্তরা থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠবেন তারা কিন্তু সবাই চেষ্টা করবেন মানিক মিয়া দিয়ে বের হয়ে যেতে। তারমানে কী, মাঝের যে র্যাম্পগুলোতে আমার লোডটা ডিস্ট্রিবিউটেড হয়ে যেত সেটা এখন এক জায়গায় এসে জড়ো হচ্ছে।
দেশ রূপান্তর : তাহলে পুরো কাজ শেষ হলে, সব র্যাম্প চালু হলে পরিস্থিতি কি বদলাবে মনে করেন?
ড. এম শামসুল হক : হ্যাঁ, একটু ডিস্ট্রিবিউট হবে, যেটা বললাম। কিন্তু পিক আওয়ারে ঢাকার যানজটের কোনো উন্নতি হবে বলে আমার মনে হয় না। কারণ একমাত্র দাওয়াইয়ে সমস্যা যায় না। ডাক্তার যখন রোগীকে ওষুধ দেন তখন কিন্তু রোগ সারাতে তিনি আরও কতগুলো কথা বলেন। রোগীকে হয়তো হাঁটতে বলবেন, ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করতে বলতে পারেন, চিনি না খেতে বলতে পারেন ইত্যাদি। তো একদিক দিয়ে মেডিসিন অন্যদিক দিয়ে অ্যাডভাইজারি ট্রিটমেন্ট। সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে রোগীকে সেগুলো সবই মানতে হবে। তো এখন র্যাম্পগুলো রাস্তার যেখানে নামবে, সেই জায়গায় যদি ঠিক না থাকে তাহলে এক্সপ্রেসওয়েতে ১০ মিনিটে এসে নিচের রাস্তায় ১ ঘণ্টা বসে থাকা লাগবে। আপনি দেখেন, রাস্তার ক্যাপাসিটির কথা চিন্তা না করে গত কয়েক বছরে যদি ১০ লাখ মোটরসাইকেলের লাইসেন্স দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে সমস্যা তো হবেই। রাস্তার ক্যাপাসিটির হিসাবটা আমার নেই। আর এই কমনসেন্স ছাড়া যানবাহনের রেজিস্ট্রেশনগুলো দিয়ে দিচ্ছে। এক্সপ্রেসওয়ে তো দারুণ, ব্রডব্র্যান্ড কানেকশন, কিন্তু নামবে যখন সেই রাস্তার কোনো হিসাব নিকাশ তো তারা করেনি। বাসরুট ফ্র্যাঞ্চাইজের কথাই ধরেন, এটাকে যদি আমরা ইপ্লিমেন্ট করতে না পারি, যেখানে কোনো খরচ লাগে না। সেটাও ভুল পথে আছে।
দেশ রূপান্তর : বাসরুট ফ্র্যাঞ্চাইজের চেষ্টা তো ঢাকার মেয়র দুজন করছেন, অনেক কথাই তো বললেন এ নিয়ে...
ড. এম শামসুল হক : তারা এটা পারবে না তো। তাদের কেউ টেকনিক্যাল লোক না। বোঝার মতো একটা লোকও নেই। বুঝলে এটা ছয় মাসও লাগে না ইমপ্লিমেন্ট করতে।
দেশ রূপান্তর : এখানে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, পরিবহন মালিকদের সিন্ডিকেট এসব সমস্যা না?
ড. এম শামসুল হক : আপনি যে দুটি সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের কথা বললেন, সেখানে যদি টেকনিক্যাল লোক থাকতেন আমি জানি তিনি আগে এটার সমাধান করতেন। চ্যালেঞ্জটা কী? এখানে অনেকের স্বার্থ, গোষ্ঠী, পেশিশক্তি, হ্যানা ত্যানা... পরিবহন মালিক সমিতির প্রেসিডেন্ট ভাবছেন আমার তো একটা সংগঠন আছে সেখানে মাত্র পাঁচটা কোম্পানি হয়ে গেলে আমি ইলেকশন করব কার সঙ্গে... ইত্যাদি। একবার ক্ষমতার স্বাদ পেলে কেউ তো আর ছাড়তে চায় না, এটা বোঝাও একটা সক্ষমতার ব্যাপার। বাস মালিকদের কয়েকজন নেতাকে ডেকে নিয়ে সব ছেড়ে দিতে বললে কি তারা ছাড়বে?
দেশ রূপান্তর : উপায় কী?
ড. এম শামসুল হক : এটা তারা পারবে না। এখানে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেতে হবে। একটা পদ্মা ব্রিজ করতে গিয়ে আপনি ৩০ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে পুনর্বাসন ও কয়েক হাজার হেক্টর জমি অ্যাকোয়ার করেছেন। তার মানে কী? জনগণের সুবিধার জন্য কিছু করতে গেলে আপনাকে কিছু কাজ করতে হয় যা অনেক বড় সিদ্ধান্ত। ঢাকাকেও বসবাসযোগ্য নগরী করতে গেলে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আছে। ভাই তোমরা এতদিন এই বিজনেসে আছো এখন ঢাকার যে অবস্থা তা যানজট বলেন আর পল্যুশান বলেন এটা ঠিক করা লাগবে, তোমাদের আমি পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। এটা না হলে আপনার সব উন্নয়ন কিন্তু মাঠে মারা যাবে। কাজগুলো সব টেকনিক্যাল। টেকনিক্যালি যখন সমাধান হয়ে যায়, ইমপ্লিমেন্টে যদি কোনো পলিটিক্যাল সাপোর্ট লাগে এ জন্য মন্ত্রীরা, সচিবরা আছেন, আর এজন্যই রাজনীতি আছে। সেদিকে না গিয়ে ফিল্ডে আপনি যদি জোর করে চাপান তাহলে তো হবে না। আগের এক মেয়র বিআরটিএর বাস সার্কুলার করে কী যে হাস্যকর কাজ করলেন। কারণ তার টেকনিক্যাল জ্ঞান নেই। আর যে কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির কিছু বেনিফিশিয়ারি থাকে। সেখানে শৃঙ্খলা আনতে গেলেই তারা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। হাতিরঝিলের কথাই ধরেন, সেখানে পুলিশের কিন্তু মন বেজার হয়েছে। বাস যদি যত্রতত্র না থামে, যাত্রী না ওঠায়, কেউ যদি আইন না ভাঙে তাহলে পুলিশের কী লাভ? কাজেই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে গেলে পরিবহন মালিক, শ্রমিক ছাড়াও অনেকেরই মন বেজার হবে। এখানেই সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্ব আসে। এই সরকার যেই ক্ষমতাবান, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্দেশনা দিতে পারেন, সেক্ষেত্রে আমি মনে করি রাজধানীর সড়কের এসব সমস্যা ৬ মাসের মধ্যে সমাধান হতে পারে।
হু হু করে বাড়ছে জনসংখ্যা। এর পাশাপাশি ফসলি জমির পরিমাণ বাড়ছে না। বরং প্রতি বছর নগরায়ণ, হাটবাজার, রাস্তাঘাট, বসতবাড়িসহ নানা প্রয়োজনে জমির পরিমাণ প্রায় ১ শতাংশ হারে কমছে। যে কারণে একই জমিতে বারবার ফসল ফলানোর প্রয়োজন পড়ছে। ভোক্তার পরিমাণ বেড়ে গেলে খাদ্যের প্রয়োজনও বাড়ে। ফলে এক ফসলি জমি এখন দুই ফসলি, আবার দুই ফসলি জমিকে তিন ফসলি জমি হিসেবে চাষাবাদ করা হচ্ছে। একই জমিতে বারবার একই ধরনের ফসল উৎপাদন, মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সারের প্রয়োগ, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত এবং জমিকে বিশ্রাম না দেওয়ায় মাটির প্রয়োজনীয় জৈব পদার্থের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ অবস্থার টেকসই পরিবর্তন আনা সম্ভব না হলে মাটির স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটবে, ফলে বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হবে। মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা বিঘিœত হলে, আবার খাদ্য আমদানির পরিমাণ বেড়ে যাবে। দেশের অর্থনীতিও চাপের বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
সবদিক বিবেচনায় নিলে, মাটির স্বাস্থ্যরক্ষায় ত্বরিত জৈবসারের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত এক দশকে দেশের কৃষিজমিতে জৈব উপাদান কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। অথচ ফসল উৎপাদন ঠিক রাখতে হলে মাটিতে জৈব উপাদান ন্যূনতম সাড়ে ৩ শতাংশ থাকা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু দেশের ৭ লাখ হেক্টরের বেশি জমিতে জৈব উপাদান নেমে গেছে ১ শতাংশের নিচে। প্রায় ৪০ লাখ হেক্টর জমির জৈব উপাদান এখন ২ শতাংশের নিচে। ফলে মাটির উর্বরতা ঠিক রাখতে যে অণুজীব কাজ করে, তা সঠিক মাত্রায় কাজ করতে পারছে না। প্রতিনিয়ত জৈব উপাদানের ঘাটতিতে ফলন বিপর্যয় হচ্ছে, নানাভাবে ফসলের মাঠে পোকামাকড়ের অনাকাক্সিক্ষত আক্রমণও বাড়ছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে ৫৪ লাখ হেক্টর জমিতে ফসফরাস, ২৬ লাখ হেক্টর জমিতে পটাশিয়াম, ৩৩ লাখ হেক্টর জমিতে গন্ধক, ২৭ লাখ হেক্টর জমিতে দস্তা ও ২৩ লাখ হেক্টর জমিতে বোরনের অভাব রয়েছে। এমনকি অনেক জমিতে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের প্রচুর ঘাটতি রয়েছে। এসব উপাদানের ঘাটতি ফসল উৎপাদনে বিঘ্নের সৃষ্টি করে। যেমন কৃষি জীবাণু গাছের জন্য মাটিতে পর্যাপ্ত পুষ্টি এবং খনিজ তৈরি করতে পারে, হরমোন তৈরি করতে পারে, এমনকি যা বিকাশের অনুপ্রেরণা দেয়, উদ্ভিদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সাধারণত মাটির মাইক্রোবায়োসের ফলে গাছের রোগ বালাই কম হয় এবং ফলনের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। ফলে মাটির ভৌতিক ও রাসায়নিক অবস্থা উন্নয়নের জন্য জৈব পদার্থের গুরুত্ব অপরিসীম, যা উদ্ভিদের খাদ্যোপাদান সরবরাহ, মাটির অমম্ল ও ক্ষারত্বের তারতম্য রক্ষা এবং রাসায়নিক কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। তাই জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ গোবর সার, কম্পোস্ট, খামারজাত সারের ব্যবহার বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের প্রচেষ্টা নেওয়া উচিত। এমনকি জৈব সার জমিতে প্রয়োগ করে মাটির স্বাস্থ্যরক্ষা করা জরুরি।
যেখানে আদর্শ জমিতে শতকরা ৫ ভাগ জৈব পদার্থ থাকা দরকার, যেখানে আমাদের মাটিতে এর পরিমাণ ১ থেকে দেড় ভাগ মাত্র, যা ভালো ফসল উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট নয়। অথচ আমাদের দেশের কৃষকরা এখনো জৈব পদার্থের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে যেমন সচেতন নন, তেমনি চিরাচরিত পদ্ধতিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার করে ভালো ফলনের পেছনে ছুটছে। চিরাচরিত এই প্রথায় সার প্রয়োগ করে কাক্সিক্ষত ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করা আদৌ সম্ভব নয়। যে কারণে জৈব সার প্রস্তুত করে জমিতে পর্যাপ্তভাবে প্রয়োগ করতে হবে। যেমন : ধঞ্চেতে পর্যাপ্ত জৈব উপাদান রয়েছে। এটিকে মাঝেমধ্যে সব জমিতে চাষ করতে হবে। ধান কাটার পর ধান গাছের গোড়া জ্বালানির জন্য সংগ্রহ না করে, বরং এসবকে মাটি নরম করে মিশিয়ে দিতে হবে, তাহলে জৈব সারের চাহিদা কিছুটা হলেও পূর্ণ হবে। মনে রাখতে হবে, ভালো মাটি ভালো ফসলের জন্য খুবই দরকারি।
আগেই বলেছি, বাংলাদেশে দিন দিন মানুষ বাড়ছে। এসব মানুষের খাদ্য চাহিদা মেটাতে এখন জমিতে বেশি ফসল উৎপাদন এবং উচ্চফলনশীল জাতের আবাদ ক্রমান্বয়েই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের মধ্যে সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। আমরা অনেকেই জানি না, উচ্চফলনশীল জাতের আবাদ দেশীয় জাতের চাইতে অধিক হারে মাটি, খাদ্য ও পুষ্টি গ্রহণ করে। অথচ চাষিরা মাটিতে জৈব সারের প্রয়োগ না করে শুধু রাসায়নিক সার অপরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করছে। ফলে সুষম সার প্রয়োগের অভাবে দিন দিন একদিকে যেমন ফলন কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে ফসলে পোকার আক্রমণও বাড়ছে। মৃত্তিকাবিজ্ঞানীদের মতে, অতীতে আমরা সনাতন জাতের ফসল আবাদ করতাম, যা মাটি থেকে কম পরিমাণ খাবার গ্রহণ করত এবং ফলনও কম হতো। এখন কিন্তু সে প্রেক্ষাপট পাল্টে গেছে। মানুষের বেঁচে থাকার প্রয়োজনে খাদ্যের চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মানুষ নানা কৌশলে শস্য উৎপাদনও বৃদ্ধি করেছে। তা না হলে মানুষকে না খেয়েই মরতে হতো।
মাত্র দেড় দশক আগের কথা। যখন খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ ছিল মাত্র ২ কোটি ৭৭ লাখ ৮৭ হাজার মে. টন, যা বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৭৭ লাখ ৬৮ হাজার মে. টনে। বলা যায়, আমরা এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দ্বারপ্রান্তে। খাদ্যনিরাপত্তা অনেকাংশেই নিশ্চিত হয়েছে, যা সম্ভব হয়েছে কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা, কৃষিবিজ্ঞানীদের নতুন নতুন জাতের উচ্চফলনশীল খাদ্যশস্যের উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে। সাফল্যের এই অভিযাত্রাকে ধরে রাখতে হলে টেকসই মাটির স্বাস্থ্যরক্ষার কোনো বিকল্প নেই। আর মাটির সুস্বাস্থ্য রক্ষা করতে হলে, জমিতে জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। অথচ জৈব সার উৎপাদনের দিকে সরকারের তেমন একটা নজর নেই। সভা-সমাবেশ, সেমিনার, আলোচনায় জৈব সারের গুরুত্ব যেভাবে পাওয়া যায়, সে অর্থে কার্যত জৈব সার উৎপাদনে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। অথচ বর্জ্য হতে পারে, জৈব সারের এক অপার সম্ভাবনা। আমাদের নগর, মহানগর, এমনকি এখন মফস্বল শহরেও বর্জ্যরে যত্রতত্র ভাগাড়ে জনস্বাস্থ্য বিঘিœত হচ্ছে। বর্জ্য এখন একটা বড় সমস্যা। অথচ পাহাড় সমান বর্জ্যরে সমস্যাকে আমরা জৈব সারে রূপান্তরিত করতে পারলে একদিকে মাটির স্বাস্থ্য যেমন রক্ষা করা সম্ভব হবে, অন্যদিকে ফসলের জমিতে প্রয়োজন মাফিক জৈব সার ব্যবহার করে ফসল উৎপাদনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনাও সম্ভব হবে।
আমরা মনে করি, নগর-মহানগরকে ঘিরে বর্জ্যকে জৈব সারে রূপান্তরিত করতে বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রেখে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা জরুরি। অন্তত, খাদ্যনিরাপত্তার স্বার্থে জৈব সার উৎপাদনে সরকার বিশেষভাবে নজর দেবে, এটাই প্রত্যাশা।
লেখক : সংগঠক ও কৃষিবিষয়ক লেখক
অবশেষে ভারতে জি-২০ সম্মেলন আজ শেষ হচ্ছে। এই সম্মেলন সফল করতে ভারতের কূটনৈতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রস্তুতির কোনো কমতি ছিল না। বলা হচ্ছিল, এই আয়োজন নির্বিঘ্ন করতেই গত জুলাইতে আরেকটি মেগা সামিট সাংহাই কো-অপারেশন (এসসিও) সামিট শেষ পর্যন্ত অনলাইনে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয় নয়াদিল্লি। ৯-১০ সেপ্টেম্বরের এই সম্মেলন সফল করতে নয়াদিল্লির নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল নজরকাড়া। জন্মাষ্টমীর ছুটিসহ পুরো দিল্লি চারদিনের ছুটিতে গেছে। মেট্রো স্টেশনগুলো নিয়ন্ত্রিত, এমনকি শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় চলছে নিয়ন্ত্রিত ট্রাফিক। সংরক্ষিত এলাকায় পাস ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। শহরের ব্যস্ততম শপিংমল যেমন খান মার্কেট, কর্ণট প্লেসসহ বেশ কিছু শপিং মলও বন্ধ রাখা হয়েছে। দিল্লি বিমানবন্দরে ভিআইপি ফ্লাইটের কারণে স্থানীয় ফ্লাইটগুলো শিডিউল পাচ্ছে না।
তিন স্তরের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে দিল্লিতে প্রবেশ করেছেন, বিশ্বের শক্তিশালী ২০ দেশের সরকার/রাষ্ট্রপ্রধান ও ৯টি আমন্ত্রিত দেশের প্রতিনিধি। এমন বাড়াবাড়ি নিরাপত্তার ‘যৌক্তিকতাও’ আছে। নয়াদিল্লিতে যে জি-২০ বা শীর্ষ ২০ ধনী দেশের বৈঠক হচ্ছে তারা বিশ্বের জিডিপির প্রায় ৮৫ শতাংশ, বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশের বেশি নিয়ন্ত্রণ করে। বলা চলে এই বিশ্বটা যারা নিয়ন্ত্রণ করেন, তারাই নয়াদিল্লির প্রগতি ময়দানের সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। এবারের শীর্ষ সম্মেলনে জি-২০ নেতারা ডিজিটাল রূপান্তর, জলবায়ু অর্থায়ন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, খাদ্য নিরাপত্তা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব এবং বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা ও সমাধান খুঁজে বের করা হবে বলে আলোচ্যসূচি রয়েছে।
তবে এখন পর্যন্ত এই সম্মেলনকে ঘিরে পূর্ব-পশ্চিমের বিরোধই সামনে এসেছে। ইন্দোনেশিয়ার বালি সম্মেলনে যে বিরোধের সূচনা হয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতায় দক্ষিণ আফ্রিকার ব্রিকস সম্মেলন বা নয়াদিল্লির জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন অংশ নেননি। পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-এর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় কূটনৈতিক উত্তেজনা এড়িয়ে চলতে পুতিন মূলত আন্তর্জাতিক সফর এড়িয়ে চলছেন। এবারের সম্মেলনে পুতিন আগেরবারের মতো ভিডিও বার্তাও দেননি। পুরো সম্মেলন মূলত রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিনিধিত্ব করছেন। এবারের সম্মেলনে নতুন ইস্যু আলোচনায় এসেছে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও সম্মেলনে আসেননি। শি জিনপিংকে এই মুহূর্তে মার্কিন প্রেসিডেন্টের পর সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে ধরা হয়। নিজ দেশের রাজনীতিতেও শি যেমন অপ্রতিদ্বন্দ্বী, নানা বিতর্ক ও প্রতিযোগিতা সত্ত্বেও শি জিনপিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরই) প্রত্যেকটি মহাদেশে চীনের প্রভাবকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।
শি জিনপিংয়ের যোগ না দেওয়ার খবরটি একেবারেই হুট করে। মূলত গত সপ্তাহে চীন নিজেদের একটি মানচিত্র প্রকাশ করে, সেখানে তাইওয়ানের পাশাপাশি ভারতের অরুণাচল প্রদেশ ও লাদাখের কিছু অংশকে নিজেদের বলে দাবি করে। চীনের মানচিত্র প্রকাশ নিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে জোরালো তেমন প্রতিবাদ করা হয়নি। সম্ভবত নয়াদিল্লি জি-২০ অনুষ্ঠানের কোনো ত্রুটি হোক সেটা চাচ্ছিল না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শি আসেননি এবং চীনের প্রতিনিধি হিসেবে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং যোগ দিয়েছেন।
চীনের প্রেসিডেন্টের যোগ না দেওয়ার কারণকে কয়েকটি দিক থেকে মূল্যায়ন করা যায়। প্রথমত, ক্রমশ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্লাটফরমে চীনের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠা ভারতের গ্লোবাল ইমেজ তৈরি হোক সেটা বেইজিং চাচ্ছে না। দ্বিতীয় আরেকটি কারণ হতে পারে পুতিনের অংশগ্রহণ করতে না পারার সঙ্গে সলিডারিটি প্রকাশ। চীন-রাশিয়া এই সম্মেলনের পর জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনকে নানা অজুহাতে এড়িয়ে চললে সে ধারণা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে। জি-২০ একটি বৈশ্বিক জোট হলেও জোটটি মূলত পশ্চিমারাই যে নিয়ন্ত্রণ করে তা শীর্ষ সম্মেলনে পুতিনের যোগ না দিতে পারার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়। চীন ও রাশিয়া সে ‘প্রতিশোধ’ নিতে ধীরে ধীরে নিজেরা ও পরবর্তী সময়ে নিজেদের ঘনিষ্ঠ রাষ্ট্রগুলোর জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান থেকে বিরত রেখে জি-২০ এর আবেদন কমানোর কৌশল নিচ্ছে কি না সেটা সময় বলে দেবে।
এবারের শীর্ষ সম্মেলনে আয়োজক দেশ ভারত, ৯টি দেশ ও একটি সংস্থাকে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়া থেকে একমাত্র আমন্ত্রিত অতিথি বাংলাদেশ। এই আমন্ত্রণের কূটনৈতিক, রাজনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার নয়াদিল্লি পৌঁছেই সন্ধ্যায় চাণক্যপুরীর লোক কল্যাণ মার্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় বাসভবনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাৎকারে দুদেশের মধ্যে পারস্পরিক আর্থিক লেনদেনের পথ সুগম করা, কৃষি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের বিষয়ে তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এই তিনটি সমঝোতা স্মারকের মধ্যে কৃষি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ স্মারকটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভারত ও বাংলাদেশের উভয় দেশের কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দুই দেশ এই ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করে জলবায়ু পরিবর্তনে টিকে থাকতে পারে এমন কৃষি উৎপাদনে নজর দিতে পারে। তবে এখন বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, অর্থনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতাগুলোর প্রতি গণমাধ্যমের কম নজর রয়েছে। জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে দেশগুলোর আলোচ্য ইস্যুর চেয়ে বৈশ্বিক গণমাধ্যমে পুতিন-শি’র যোগ না দেওয়ার খবর বেশি আলোচিত হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পরও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গণমাধ্যমের জিজ্ঞাসা ছিল, ‘বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন আলোচনায় ছিল কি না’?
ভারত ও বাংলাদেশে আগামী বছরের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ পরাশক্তিগুলোর বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে পর্যবেক্ষণ রয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব একটি অবস্থান নিয়েছে। চীন-রাশিয়ার অবস্থান তার বিপরীতে। রাজনৈতিক মহলের চোখ ভারত কী ভাবছে তার দিকে। ভারতের কিছু গণমাধ্যম দাবি করছে, বর্তমান সরকারের প্রতি ‘অনাবশ্যক চাপকে’ দক্ষিণ এশিয়ায় ‘রাজনৈতিক ও সামাজিক সুস্থিতির’ পক্ষে হিতকর নয় বলে মনে করে ভারত। যদিওবা গণমাধ্যমের এসব বক্তব্যের কোনো নির্ভরযোগ্য সোর্স ছিল না। তবে সার্বিক বিবেচনায় শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদির এই বৈঠক ঘিরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আগ্রহ ছিল। কিন্তু দিনশেষে এটা রাষ্ট্রীয় সফর।
বাংলাদেশকে একমাত্র দক্ষিণ এশীয় অতিথি হিসেবে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়ে মূলত ভারত গ্লোবাল প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশের জন্য একটি সহায়ক রাষ্ট্র হতে চায়, যাতে বাংলাদেশ চীনের প্রতি বেশি ঝুঁকে না পড়ে। এছাড়া ভারত-বাংলাদেশ -জাপান যে ত্রিদেশীয় অংশীদারত্বের ভিত্তিতে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে ভারতের সেভেন সিস্টারকে যুক্ত করছে যাচ্ছে তা ভারতের জন্য ‘গেম চেঞ্জিং’ সুযোগ। ভারত এই প্রকল্প নির্বিঘ্ন করতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে আরও গতিশীল ও আস্থাশীল রাখতে চায়। এছাড়া মংলা-খুলনা ট্রেন যোগাযোগের ফলে এখন মংলা বন্দর থেকে ট্রেন কলকাতা যেতে পারবে। অন্যদিকে আখাউড়া-আগরতলায় ট্রেন সংযোগ চালুর ফলে চট্টগ্রাম বা মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর থেকে এখন ট্রেন চলে যাবে ত্রিপুরা। এইসব কানেক্টিভিটির কারণে বাংলাদেশ- ভারত বাণিজ্যিক যোগাযোগও বাড়বে। ফলে বাংলাদেশ ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হয়ে উঠেছে। সে গুরুত্বের জায়গা থেকে বাংলাদেশকে অতিথি রাষ্ট্র হিসেবে নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
তবে যে কোনো দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত আলাপ- আলোচনা হয়। সেক্ষেত্রে ভারতের কানেকটিভিটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ দেশ বাংলাদেশে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে ভারতের উদ্বেগ এই শীর্ষ বৈঠকে নয়াদিল্লি প্রকাশ করতে পারে। অন্যদিকে ২০১১ সাল থেকে ঝুলে থাকা তিস্তা চুক্তির কথা জানিয়ে দিতে বাংলাদেশের ভুল না হওয়ার কথা। কূটনৈতিক বরাত বলছে, বাংলাদেশ ভারতের কাছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়েও সহযোগিতা কামনা করেছে। লেখক: কলামিস্ট [email protected]
১৯২৩ সালের এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন শিশুসাহিত্যিক সুকুমার রায়। তার জন্ম ১৮৮৭ সালের ৩০ অক্টোবর কলকাতায়। তার বাবার নাম উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। সত্যজিৎ রায় তার পুত্র। তিনি সিটি স্কুল থেকে প্রবেশিকা পাস করে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯১১ সালে রসায়নে অনার্সসহ বিএসসি পাস করেন। পরে ফটোগ্রাফি ও প্রিন্টিং টেকনোলজিতে উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি বিলেতে যান। প্রথমে লন্ডন এবং পরে ম্যানচেস্টারে স্কুল অব টেকনোলজিতে তিনি লেখাপড়া করেন। প্রবাসে থাকা অবস্থায় তিনি বিভিন্ন বিষয়ে খ্যাতি অর্জন করেন। এক অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রবিষয়ে প্রবন্ধ পাঠ করেন এবং সেটি পত্রিকায় প্রকাশিত হলে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তিনি রয়াল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন। ১৯১৩ সালে দেশে ফিরে তিনি বাবার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ইউ রায় অ্যান্ড সন্সে যোগ দেন। কলেজজীবনে তিনি ছোটদের হাসির নাটক রচনা ও তাতে অভিনয় করতেন। তিনি শান্তিনিকেতনে একবার রবীন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথের সঙ্গে ‘গোড়ায় গলদ’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর তিনি পিতৃপ্রতিষ্ঠিত সন্দেশ পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন। প্রেসিডেন্সিতে ছাত্র থাকাকালে তিনি ননসেন্স ক্লাব নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন, যার মুখপত্র ছিল ‘সাড়ে-বত্রিশ-ভাজা’। বিলেত থেকে ফিরে তিনি গঠন করেন মানডে ক্লাব। এখানে আলোচনা ও পাঠের সঙ্গে থাকত ভূরিভোজের ব্যবস্থা। তাই ব্যঙ্গ করে কেউ কেউ একে বলত মন্ডা ক্লাব। তার প্রধান অবদান শিশু-কিশোর উপযোগী বিচিত্র সাহিত্যকর্ম। কবিতা, নাটক, গল্প, ছবি সব কিছুতেই তিনি সূক্ষ্ম ব্যঙ্গ ও কৌতুকরস সঞ্চার করতে পারতেন। তার উল্লেখযোগ্য রচনা : ‘আবোল-তাবোল’, ‘হ-য-ব-র-ল’, ‘খাইখাই’, ‘ঝালাপালা’ ইত্যাদি।
অভিষেকে ২৬ মিনিট খেলে দুই অ্যাসিস্টের অবদান রাখতে পেরেছিলেন নেইমার। আল হিলাল জিতেছিল। কিন্তু পর পর দুম্যাচ খেললেন পুরো সময়। তেমন কিছুই করতে পারলেন না। ড্র করেছে আল হিলাল আবার।
এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচে শেষ দিকের গোলে ১-১ ড্র করে পরাজয় বাঁচিয়েছিল আল হিলাল। আজ সৌদি প্রো লিগে দামাক এফসির বিপক্ষে ম্যালকমের গোলে ৯ মিনিটে এগিয়ে গেলেও শেষপর্যন্ত তা ধরে রাখতে পারেনি।
সাত ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে তবুও শীর্ষেই রইলো আল হিলাল।
বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস আজ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে দিবসটি পালিত হবে। এ উপলক্ষে ২১টি বেসরকারি সংস্থা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘স্বল্প দূরত্বে হেঁটে ও সাইকেলে চলি, ব্যক্তিগত গাড়ি পরিহার করি’।
দিবসটি উপলক্ষে আজ শুক্রবার সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে ২১টি আয়োজক সংস্থার সম্মিলিত উদ্যোগে ধানমন্ডি-২৭-এর মোড় থেকে আবাহনী খেলার মাঠ পর্যন্ত ‘স্বল্প দূরত্বে হেঁটে ও সাইকেলে চলি, ব্যক্তিগত গাড়ি পরিহার করি’ শীর্ষক র্যালি আয়োজন করা হয়েছে।
২০০৬ সাল থেকে দেশে বেসরকারি উদ্যোগে দিনটি উদযাপন করা হচ্ছে। তবে ২০১৬ সাল থেকে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে এটি পালন শুরু হয়, যেখানে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্র্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) মুখ্য সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করে এসেছে। কিন্তু বিশ্বের অন্যতম যানজটপ্রবণ ঢাকা শহরে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা থাকা সত্ত্বেও সরকারিভাবে এ দিবসটি পালনের উদ্যোগ এই বছর নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশে দিবসটি পালনের প্রায় দেড় যুগ পার হতে চললেও ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ও ফলপ্রসূ পরিকল্পনা ও নীতির বাস্তবায়ন এখনো দেখা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, যানজটের বড় কারণ হলো এই ব্যক্তিগত গাড়ি। দেশে মেগা প্রকল্পগুলো ব্যক্তিগত গাড়িকে প্রাধান্য না দিয়ে গণপরিবহনকে প্রাধান্য দিয়ে করা উচিত। এখন গণপরিবহনের দিকে জোর না দেওয়ায় অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে ব্যক্তিগত গাড়ি, যা সড়কে বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিআরটিএ একটি সূত্র থেকে জানা যায়, দিন দিন ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। চলতি বছর আগস্ট পর্যন্ত মোট যানবাহন নিবন্ধন আছে ৫৮ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮টি মতো। এর মধ্যে গণপরিবহনের সংখ্যা মাত্র ২ শতাংশের কম। আর বেশিরভাগই ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা গাড়ি।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বায়ুদূষণে বিশ্বে দুই বিলিয়ন শিশু প্রতিদিন বিষাক্ত বাতাসের সংস্পর্শে আসছে। এদের মধ্যে পাঁচ লাখের বেশি প্রতিবছর মারা যাচ্ছে। তবুও দেশে গণপরিবহনকে প্রাধান্য না দিয়ে বড় বড় অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। যার জন্য দেশে দিনের পর দিন ব্যক্তিগত গাড়ি বাড়ছে। এ অবস্থায় ভবিষ্যতে সড়কে নানারকম বিশৃঙ্খলার শঙ্কা থেকেই যাবে।
এদিকে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানান, প্রতি মাসের প্রথম রবিবার সব ধরনের ব্যক্তিগত গাড়ি বন্ধ করার রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ প্রয়োজন। নীতিনির্ধারকরা গণপরিবহন ব্যবহার করলেই সাধারণ মানুষের যাতায়াতের দুর্ভোগ উপলব্ধি করতে পারবেন, ফলে গণপরিবহনের মান বাড়তে পারে। টেকসই পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নগর এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়াস সারা বিশ্বে বেগবান হলেও বাংলাদেশে এ প্রয়াস সীমিত। তাছাড়া ঢাকা শহরে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ব্যক্তিগত গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দিয়ে চলছে বিআরটিএ। নগর পরিকল্পনা ও পরিবহন পরিকল্পনার মধ্যে সমন্বয় নেই, কর্র্তৃপক্ষগুলোর মধ্যেও নেই কার্যক্রমের সমন্বয়। ফলে নগরে গাড়ির চাপ বাড়ছে, মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়েছে যানজট।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনা কখন যাবি জনগণ এখন আর এই কথা বলে না। বলে, এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনা এখন যাবি। আর যাবেনইবা কোথায়? এখন সেটাই দেখার বিষয়। সর্বশেষ গতকাল ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাফ বলে দিয়েছে, তারা শেখ হাসিনার অধীনে হওয়া নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবেন না। কারণ তাদের যে প্রতিনিধিরা দেশে এসেছিলেন, তারা গিয়ে বলেছেন, নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই।’ গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিএনপি আয়োজিত ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-সিলেট অভিমুখী ‘রোডমার্চ’ কর্মসূচির শুরুতে ভৈরবের বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সকালে অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির এক দফা দাবি আদায়ে এই রোডমার্চ শুরু হয়। কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রোডমার্চ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন গয়েশ^র চন্দ্র রায়।
এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওয়ারেস আলী মামুন, নির্বাহী কমিটির সদস্য লায়লা বেগম ও মজিবুর রহমান ইকবাল।
ওই জনসভায় গয়েশ্বর চন্দ্র আরও বলেন, ‘বিএনপির দাবি দেশে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন, যা হতে হবে নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। যার যার ভোট সে সে দেবে। সকালের ভোট রাতে হবে না।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ব্যবসার পরিবেশ পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগের লোকেরা ধ্বংস করছে। ফলে এতে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। দেশের মানুষ আজ অসহায় দ্রব্যমূল্য নিয়ে। চালের দাম, তেলের দাম, আলুর দাম, বিদ্যুতের দাম হু হু করে বেড়েছে। আজকে ব্যাংকগুলোতে টাকা চুরি করে আওয়ামী লীগের লোকেরা পাচার করছে বিদেশে। রিজার্ভ কমে গেছে। সরকারদলীয় লোকের দুর্নীতির কারণে আজ রিজার্ভ কমছে, দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হচ্ছে।’
দুপুরে সিলেট অভিমুখে তারুণ্যের রোডমার্চে যাত্রাপথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল বিশ্বরোড মোড়ে পথসভা হয়। এ সময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তৃতাকালে গয়েশ্বর বলেন, ‘তারুণ্যের যে রোডমার্চ শুরু হয়েছে, তা সরকার পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। দেশ বাঁচাতে, মানুষ বাঁচাতে তরুণ সমাজ আজ জেগে উঠেছে। শেখ হাসিনা সরকারকে আর কোনো অশুভ শক্তিই রক্ষা করতে পারবে না।’ এ আন্দোলন ডু আর ডাই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
রোডমার্চটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমানায় পৌঁছলে দলের কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম খোকন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মোহাম্মদ শামীম ও যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা এসএন তরুণ দেসহ দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নেতৃত্বে রোডমার্চকে স্বাগত জানিয়ে শোডাউন করা হয়।
পরে দুপুরে হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ এলাকায় পথসভা করা হয়। পথসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মালিক জনগণ। সেই মালিকানা আমরা ফেরত দিতে চাই। ক্ষমতায় আসার জন্য আমরা আন্দোলন করছি না। জনগণের অধিকার আর মানুষের ভোটাধিকার ফেরাতে আমরা রাজপথে নেমেছি।’
রোডমার্চটি বিকেল ৪টায় সিলেটে এসে সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই রোডমার্চ সিলেটে পৌঁছে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। এরপর সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ নেতারা।
এদিকে বৃষ্টি হওয়ায় সমাবেশস্থল আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে নেতাকর্মীরা সেভাবে অবস্থান নিতে পারেননি। খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে অনেকে সমাবেশস্থলে এলেও বৃষ্টির কারণে তারা আশপাশের বিভিন্ন ভবনে আশ্রয় নেন। অবশ্য বেশ কিছু নেতাকর্মী ছাতা, ব্যানার-ফেস্টুন ইত্যাদি মাথায় দিয়ে মাঠেই অবস্থান করছিলেন। বৃষ্টিতে ভিজে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী সরকারবিরোধী স্লোগান দেন।
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন জানান, রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশে যোগ দিতে দুপুর থেকেই সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলা, পৌরসভা ও সিলেট মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মী মিছিল সহকারে এসে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জড়ো হতে থাকেন। তবে বৃষ্টির কারণে মাঠে অবস্থান কষ্টকর হয়ে পড়ে। এরপরও বৃষ্টিতে ভিজে শত শত নেতাকর্মী সেখানে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ সফল করেছেন। সভা শেষে রোডমার্চ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
* প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ও নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
রাজধানীর পল্টনে ব্যাংক থেকে ব্যবসায়ীর ২০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দুই পুলিশসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
জানা গেছে, আবদুল্লাহ আল মামুন নামে একজন ব্যবসায়ীর কর্মচারী আইএফআইসি ব্যাংকের পল্টন শাখায় ২০ লাখ টাকা জমা দিতে আসেন। তিনি এসে টাকা জমা দেওয়ার লাইনে দাঁড়ান। এ সময় পুলিশের ইউনিফর্ম পরা দুই ব্যক্তি তাকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে যান। পরে তার কাছে থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যান তারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। পরে সিটিটিভি ফুটেজ দেখে দুজন হকারকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ধারাবাহিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয় অন্যদের। এ ঘটনায় পল্টন থানায় একটি মামলা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের (ডিএমপি) উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ছিনতাইয়ের সঙ্গে দুজন পুলিশ কনস্টেবল জড়িত ছিল। তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিভিলে থাকা তিন ব্যক্তি টাকার বিষয়ে ওই দুই পুলিশকে তথ্য দেয়। এরপর ইউনিফর্ম পরা দুই পুলিশ কনস্টেবল ব্যাংকে ঢুকে ওই ব্যক্তিকে বাইরে নিয়ে আসে। তার কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। দুই পুলিশ কনস্টেবল বরখাস্ত ছিল।
জানা গেছে, পল্টন থানা-পুলিশ ও ডিবির মতিঝিল জোনাল টিম সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ব্যাংকের সামনের ফুটপাতের হকার হৃদয় ও তার সহযোগী মঞ্জুকে আটক করে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের দেওয়া তথ্যে ডেমরা পুলিশ লাইনসে ক্লোজড হয়ে থাকা পুলিশের দুই সদস্য কনস্টেবল মাহাবুব ও কনস্টেবল আসিফকে ১০ লাখ টাকাসহ আটক করা হয়। এরপর বাসাবো থেকে ছিনতাইয়ের আরও ১০ লাখ টাকা ও মোটরসাইকেলসহ সোহেলকে আটক করে পুলিশ।
এ ঘটনার ভুক্তভোগী আবদুল্লাহ আল মামুন করপোরেট আইডিয়াসের মালিক। তিনি বলেন, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই মার্কেটিং অফিসারের মাধ্যমে টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার জন্য পাঠানো হয়। টাকা নিয়ে ব্যাংকের ওই শাখায় যাওয়ার পর এ ঘটনা ঘটে। এরপর দ্রুত পুলিশকে জানাই।
এ ব্যবসায়ী আরও বলেন, পুলিশের পোশাক পরিহিত দুই লোক এসে আমাদের কর্মীকে ভয় দেখিয়ে টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে এটি শুনে বিস্মিত হয়েছিলাম। এখন জানলাম এ ছিনতাইকাণ্ডে শাহজাহানসহ আরও তিনজন রয়েছে। শাহজাহান আমার দীর্ঘদিনের কর্মী। আমাদের প্রতিষ্ঠান ঠিকাদারিতে জড়িত।
পুলিশ বলছে, পুরানা পল্টনে করপোরেট আইডিয়াসের অফিস থেকে টাকা জমা দেওয়া জন্য ব্যাংকের উদ্দেশ্যে যাত্রার পরপরই শাহজাহান, হৃদয় ও রাসেল পুলিশের দুই সদস্যকে খবর দেন। তারা পল্টনের আইএফআইসি ব্যাংকে গিয়ে টাকার ব্যাগসহ আজিমকে তুলে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে দুই পুলিশ সদস্য পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিনতাইয়ে অংশ নেন। এ সময় বাকি তিনজন আশপাশে পাহারায় ছিলেন।
পল্টন থানার ওসি সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরই ব্যাংকের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়। এরপর পুলিশের দুই সদস্যকে শনাক্তের পর অন্য তিনজনের বিষয়েও তথ্য বেরিয়ে আসে।
জানা গেছে, ব্যাংকের ওই শাখায় গিয়ে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা একটি হিসাব নম্বরে জমা দেওয়ার পরই ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের নামে ব্যাংকের বাইরে নিয়ে আসা হয়। তারা আজিমের টাকার উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। ব্যাগে থাকা টাকা হুন্ডির অর্থ বলে দাবি করেন পুলিশ সদস্যরা। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে আজিমকে ব্যাংকের বাইরে নিয়ে যান। রাস্তায় এনে তাকে মোটরসাইকেলে তুলে দ্রুত মুগদা এলাকায় নেন। সেখানে টাকার ব্যাগ রেখে ছেড়ে দেওয়া হয় আজিমকে। এরপর ঘটনা ওই প্রতিষ্ঠানের মালিককে জানানোর পর পুলিশের একাধিক দল কাজ শুরু করে।
নিউ ইয়র্কের চারপাশেই বাঙালি পাবেন। ব্রুকলিন, জ্যামাইকা, কুইন্স সর্বত্রই। কিন্তু জ্যাকসন হাইটস যেন বাংলাদেশেরই কোনো এক অঞ্চল। কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকায় ঘোরাঘুরি করলেই যেমন মনে হয় পাবনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, রাজশাহী অথবা অন্য কোনো জনপদে আপনি হাঁটছেন, ঠিক তেমনি নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস পুরোপুরি এক বাংলাদেশ। আপনা বাজার ও অন্যান্য দু-একটি বিপণি সর্বভারতীয় অস্তিত্বের জানান দেয় বটে, কিন্তু বাংলাদেশের দাপটের কাছে তা কিছুই নয়। একপা, দুপা অন্তর ছোট-বড় অজস্র দোকান। একের পর এক রেস্টুরেন্ট। সাগর, বৈশাখী ও নবান্ন। ফুটপাত জুড়ে সবজি, বঙ্গসন্তানদের ফুচকা খাবার উৎসাহ দেখে বেশ মন ভালো হয়ে যায়।
বাংলাদেশের জনগণ থাকবে আর রাজনীতি নিয়ে তর্কাতর্কি থাকবে না, এ হতে পারে না। ফুটবল ওয়ার্ল্ড কাপের সময় যেমন পাড়া ভাগাভাগি হয়ে যায়, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স ও ব্রাজিলে, এখানেও তেমনি এখন তুমুল উত্তেজনা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে। কান পাততে হবে না, জ্যাকসন হাইটসের চারদিকে দু-তিন দিন হাঁটাচলা করলেই বুঝতে পারবেন যে পুরো বাংলাদেশ ভাগ হয়ে আছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে। এরশাদের জাতীয় পার্টিও যৎসামান্য আছে, কিন্তু বামদের উপস্থিতি সেভাবে চোখে পড়েনি। শুনেছি সিপিবির কালচারাল ফ্রন্টের মজবুত সংগঠন আছে। আমি এখনো টের পাইনি। পুরো আমেরিকাতেই ভারত ও অন্যান্য দেশের ইমিগ্র্যান্ট প্রচুর। কিন্তু কেউই বাংলাদেশিদের মতো রাজনীতি নিয়ে মাতামাতি করেন বলে মনে হয়নি। এখানে অনেক বাংলা ম্যাগাজিন বের হয়। সাপ্তাহিক, ত্রৈমাসিক সব। সেখানেও রাজনৈতিক বিশ্লেষণের গুরুত্ব যথেষ্ট প্রাধান্য পায়। সাধারণভাবে বাংলাদেশের জনগণ আমেরিকান মূলধারার রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামান না। ব্যতিক্রম যে নেই, বলব না। মওলানা ভাসানী অনুসারী তরুণী কাজি ফৌজিয়ার সঙ্গে আলাপ হলো। লড়াকু মেয়েটি আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ, বাংলাদেশি, লাতিন ইমিগ্র্যান্ট ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর জন্য বছরের পর বছর মাটি কামড়ে লড়াই করে চলেছেন।
শেখ হাসিনার আমেরিকা ভ্রমণ নিয়ে জ্যাকসন হাইটস সরগরম। বিকেল হতে না হতেই ছোট ছোট মিছিল চারপাশে ঘুরছে। বঙ্গদেশের কমিউনিটির মধ্যে আওয়ামী লীগের শক্তি যথেষ্ট। মহিলা লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ সব পাবেন। প্রত্যেকটি স্টেটেই আওয়ামী লীগের শাখা সংগঠনের উপস্থিতি ভালোই। পাশাপাশি বিএনপি সমর্থকদের সংখ্যাও কম নয়।
বিকেলে ছোটখাটো দোকানে খেতে খেতে সুষ্ঠু নির্বাচন, রাতের ভোট, ভারতের সঙ্গে পানি চুক্তি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে তর্কবিতর্ক, উত্তেজনা শুনতে শুনতে মনে হয় যেন ঢাকা বা বাংলাদেশের কোনো অন্য শহরে বসে আছি। এই রাজনৈতিক চাপানো উতরে এটা স্পষ্ট, কয়েক হাজার মাইল দূরে থাকলেও দেশের ভালোমন্দ নিয়ে চিন্তা কম নেই অভিবাসীদের। বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম জোগানদার কিন্তু এই অভিবাসীরাই। রেমিট্যান্স দেশের আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এ নিয়ে সরকারি-বেসরকারি মহলে কোনো সন্দেহ নেই। লক্ষ করছিলাম যে এক-একজন বাংলাদেশি কত কত বছর ধরে এখানে আছেন। নিজেরা খেটে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। বাড়ি করেছেন। গাড়ি কিনেছেন। কিন্তু মন আজও পড়ে থাকে দেশের মাটিতে।
বাংলাদেশে কয়েক মাস আগে যখন গেলাম, তখন সেখানে আমেরিকান ভিসানীতি নিয়ে বিতর্ক প্রবল। শেখ হাসিনার সরকারকে আমেরিকা নাকি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, আগামী বছর বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ না হলে এবং দেশের মধ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ যদি না থাকে তাহলে তারা বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না। আমেরিকা নিজের দেশে কতটা গণতন্ত্রকে সম্মান করে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। দিন-দুই আগে ম্যানহাটনের লাইব্রেরি চত্বরে গিয়ে দেখি জনা-পঁচিশ-তিরিশ নারী-পুরুষ বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, কুড়ি বছর, তেইশ বছর ধরে বিনাবিচারে আমেরিকার বিভিন্ন জেলে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির দাবিতে।
তাও আমেরিকা যেহেতু অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এগিয়ে, ফলে সেখানে যাওয়ার আগ্রহ অস্বাভাবিক নয়। এ ছাড়া পুঁজি যেভাবে ভোগবাদী মননকে লালন করে, সেখানে ভোগবাদের স্বর্গরাজ্যে যাওয়ার আকাক্সক্ষা বাড়বে, বাড়ছেও। গ্রিন কার্ড পেতে সক্রিয় অনেক তরুণের সঙ্গে আলাপ হলো। যারা রয়েছেন, তারাও অধিকাংশ দেশের হালচালে বিরক্ত, হতাশ। বিরাটসংখ্যক বিএনপি সমর্থকের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, তারা নিরাপত্তার অভাবেই দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তবে সরকার পরিবর্তন হলেও তারা সবাই দেশে ফিরবেন, এমন কিন্তু মনে হয়নি। ঢাকায় যত আমেরিকান ভিসানীতি নিয়ে উৎকণ্ঠা বা আলোচনা শুনেছি, তার ছিটেফোঁটাও জ্যাকসন হাইটসে শুনবেন না। এখানকার বাসিন্দাদের ধারণা, এসব বাইডেনের রাজনৈতিক হুমকি, যা আদতেই ফাঁপা। বিষয়টির কোনো সারবত্তা নেই।
সারা নিউ ইয়র্কে যত অভিবাসী আছে, তাদের সাহায্য ছাড়া আমেরিকা একপাও এগোতে পারবে না। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় ইমিগ্র্যান্টবিরোধী কিছু তৎপরতা ছিল। এখন সেসব নেই। নিউ ইয়র্ক মোটের ওপর ডেমোক্র্যাটদের ঘাঁটি। যত মানবতার পক্ষে, ইমিগ্র্যান্ট সমর্থন, অধিকার রক্ষা আন্দোলনÑ সব আজও এ শহরের অলংকার। কাজেই আমেরিকার ভিসা পলিসি নিয়ে আদৌও কেউ চিন্তিত নন। এই, অন্তত একটা ব্যাপারে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে কোথাও কোনো মতপার্থক্য নেই। আমেরিকান প্রশাসনের সত্যিই ক্ষমতা নেই লাখ লাখ অভিবাসীকে চটিয়ে সে কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়।
বাংলাদেশিদের আরও কিছু বৈশিষ্ট্য চট করে চোখে পড়ে। আর তার প্রশংসা না করে উপায় নেই। নিজেদের মধ্যে দলাদলি, গোষ্ঠী কলহ থাকলেও তারা অনেক মিশুকে, সামাজিক ও উষ্ণ। সহজেই অন্যকে আপন করে নিতে পারেন। বিপদে পড়লে বাংলাদেশের মানুষ যত ঝাঁপিয়ে পড়ে আপনার পাশে থাকবে, তত অন্য কাউকে পাবেন না। ভারতীয়দের মধ্যে বাসিন্দা হিসেবে বাঙালি যেমন আছেন, তেমনি রয়েছেন পাঞ্জাবি ও দক্ষিণ ভারতীয়রা। তাদের সম্পর্কে বিশদে পরে কোথাও লেখার ইচ্ছে থাকল।
ব্রুকলিনে পাকিস্তানি এক দোকানে চমৎকার জিলাপি ও শিঙাড়া খেলাম। দেশে থাকলে মনে হয় ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান পরস্পরের শত্রু। মুখে মিঠে মিঠে করে, যত, আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি গাই না কেন, পশ্চিমবঙ্গেও হালে রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ নিয়ে বিদ্বেষ বাড়ছে। অনুপ্রবেশ, সীমান্ত হত্যা নিয়ে সত্যি-মিথ্যা মিলিয়ে দুদেশেই জনমনে অসন্তোষ বাড়ছে। বিদেশের মাটিতে আপাত শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান দেখতে বেশ লাগে। আসলে দিনভর পরিশ্রম ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হতে পারে, এখানে ধর্মীয় বিদ্বেষকে মাথা তুলতে দেয় না। জ্যাকসন হাইটসে সন্ধ্যা নামছে। আওয়ামী সমর্থকরা বলে চলেছেনÑ হাসিনার সরকার চিরকাল দরকার... পাশের সেলুনের দরজায় মওলানা ভাসানীর হাসিমুখ। আমেরিকার পক্ষ-বিপক্ষ প্রশ্নেই আওয়ামী লীগ ভেঙে আলাদা হয়ে জন্ম নিয়েছিল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বা ন্যাপ। সেসব তো ইতিহাসের পাঠ। এমন সুন্দর আবহাওয়ায় ইতিহাস চর্চা নিশ্চিত বিরক্তিকর।
লেখক : ভারতীয় প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা ও লেখক
ব্যাংকপাড়াখ্যাত মতিঝিল এখন মৃতপ্রায়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে না পারায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যত্র সরে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির চাকা ঘোরানো মতিঝিলে আবাসিক ভবন, শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান তৈরি না হলে দেশের প্রধান এই বাণিজ্যিক অঞ্চল প্রাণ হারাবে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তাদের মতে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বড় অবদান রয়েছে মতিঝিলের টাকার। শুধু তা-ই নয়, মতিঝিলে উপার্জিত অর্থে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, কানাডাসহ আরও অনেক দেশে। এখানকার উপার্জিত টাকা অনেকে জমা রেখেছেন সুইস ব্যাংকেও। শুধু উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি মতিঝিলে। এ যেন মা কাঁকড়ার আত্মত্যাগের গল্প। মা কাঁকড়া বাচ্চাদের আগলে রাখে বুকের ভেতর; যেদিন বাচ্চাগুলো বের হয়ে আসে, সেদিন খোলস ছাড়া মা কাঁকড়ার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। মা কাঁকড়ার মতো দুঃখী ও ত্যাগী বাণিজ্যিক মতিঝিল।
ষাটের দশকে মতিঝিলে গড়ে ওঠে দেশের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট-সিবিডি)। সেই থেকে এখনো দেশের প্রধান বাণিজ্যিক অঞ্চল মতিঝিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১। এর মধ্যে সরকারি ৮টি, বেসরকারি ৪৫টি এবং বিদেশি ব্যাংক রয়েছে ৮টি। এ ছাড়া ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ৮১টি বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকের বেশির প্রধান কার্যালয় চলে গেছে কারওয়ান বাজার, গুলশান-বনানী ও উত্তরায়। নতুন করে যেসব ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাচ্ছে, সেগুলোর প্রধান কার্যালয় মতিঝিলের বাইরে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, মতিঝিলের আশপাশে পরিকল্পিত কোনো আবাসিক এলাকা, অভিজাত হোটেল, কাজের ফাঁকে অবসর কাটানোর মতো উন্মুক্ত স্থান, শপিং কমপ্লেক্স না থাকায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের সুবিধার জন্য অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয়গুলোও মতিঝিলের বাইরের এলাকা, অর্থাৎ কারওয়ান বাজার, গুলশান অ্যাভিনিউ, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে গড়ে উঠছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক বাংলা, শাপলা চত্বর, মধুমিতা সিনেমা হল এবং ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এবং দিলকুশা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবন এবং বঙ্গভবনের পাশের এলাকাজুড়ে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল। বিশ্বের বাণিজ্যিক অঞ্চলের ভবনগুলো সুউচ্চ হয়ে থাকে। কিন্তু মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের পাশেই বঙ্গভবন। নিরাপত্তার কারণে বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর কোনো বহুতল ভবন করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, মতিঝিলের প্লটগুলোর ‘নন-রেসট্রিকটেড’ উচ্চতা দেওয়া রয়েছে। কিন্তু বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর সাড়ে চারতলার বেশি উচ্চতার ভবনের অনুমোদন মেলে না। ফলে মূল্যবান ওই প্লটগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারছেন না মালিকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগ জরাজীর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণও রয়েছে কয়েকটি ভবন। একটির সঙ্গে অন্যটি লাগানো। দুটি ভবনের মাঝখানে উন্মুক্ত জায়গা নেই বেশিরভাগ ভবনের। দিলকুশা এলাকার বঙ্গভবন লাগানো ভবনগুলোর মাঝখানেও কোনো ফাঁকা জায়গা দেখা যায় না।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, মতিঝিল এলাকার ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে। ভাঙাচোরা এবড়োখেবড়ো সড়ক। সড়ক বিভাজকগুলো শ্রীহীন। এগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হয়নি। প্রধান সড়ক থেকে একটু ভেতরে গেলে মতিঝিলের আরও করুণ দশা চোখে পড়ে। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকার সড়কের ফুটপাতে গড়ে উঠেছে চটের ছালা দিয়ে ঘেরা খাবারের হোটেল, চায়ের দোকান এবং নানা পণ্যের অস্থায়ী দোকান। সামান্য বৃষ্টিতে মতিঝিল এলাকার সড়কগুলো তলিয়ে থাকে পানির নিচে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত। ডিএসসিসি এলাকার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলছে। খসড়া মাস্টারপ্ল্যানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে মূল্যায়ন করলে মতিঝিল ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে। যদিও এটা মানতে নারাজ ডিএসসিসির কারিগরি কমিটি।
মতিঝিল এলাকার বেহাল অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিল এলাকার সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে ডিএসসিসি। পরিত্যক্ত প্রায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর একটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মতিঝিলের সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত ও সড়ক বিভাজকের অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা দরকার। পর্যায়ক্রমে এ এলাকার বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে কাজ করবে ডিএসসিসি। তবে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের মূল সংস্কার ও আধুনিকায়নের দায়িত্ব রাজউকের। রাজউককে সেসব বিষয় পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব কাজে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা লাগলে করপোরেশন সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলে রাজউক। রাজউক সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশক থেকেই মতিঝিলের পুরোপুরি বাণিজ্যিক বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। বিশে^র উন্নত দেশগুলোর বাণিজ্যিক অঞ্চলে শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান থাকে। আর কাছাকাছি এলাকায় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা থাকে। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে সেটা ছিল না। অভিজাত মানের হোটেল পূর্বাণী গড়ে উঠলেও আশপাশে সময় কাটানোর মতো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লোকজন গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় থাকেন। মতিঝিলের সৌন্দর্য নিশ্চিত করতে ও আধুনিকায়নে যেসব বিষয়ে দৃষ্টি রাখা দরকার ছিল রাজউক ও সিটি করপোরেশন সেটা করেনি।
রাজউক সূত্রে আরও জানা যায়, ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধরা, উত্তরা। সেই সব এলাকা থেকে মানুষ মতিঝিলে আসেন। শহরের জনসংখ্যা বাড়ায় দিন দিন যানজট বাড়ছে। ওই সব এলাকা থেকে মতিঝিলে আসতে সড়কে এক থেকে দেড় ঘণ্টা চলে যায়। দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কর্মঘণ্টার মধ্যে ৩০ শতাংশ সময় সড়কে নষ্ট হচ্ছে। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে চিন্তা করেছে, তার কর্মস্থল এমন একটা জায়গায় হবে যা তার আবাসনের কাছাকাছি। মতিঝিল থেকে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও ভূমিকা রেখেছে।
কালের বিবর্তনে গুলশান হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক এলাকা। কারওয়ান বাজার, উত্তরায়ও গেছে কিছু। এসব জায়গায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমও সেখানে চলে গেছে। এসব এলাকার আশপাশে গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় তাদের বসবাস। আবাসিক এলাকা ছাড়া, পৃথিবীর কোথাও শতভাগ জায়গা শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা অথবা একই শ্রেণির কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার হয় না।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মুখপাত্র মো. আশরাফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, নগর পরিকল্পনায় ভূমির ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়, যেকোনো জায়গার ব্যবহার হবে ২৪ ঘণ্টা। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল কর্মচঞ্চল থাকে মাত্র ১২ ঘণ্টা। এরপর ওই জায়গার ব্যবহার হয় না। রাতে নীরব ও ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়।
তিনি বলেন, যে মতিঝিলে দিনের বেলায় হাঁটা যায় না; গাড়ির কারণে, যানজটে; সেই মতিঝিলে রাত ৮টার পরে আবার একাও হাঁটা যায় না; অনিরাপদ বোধ হয়। এ জন্য যারা দিনে বাণিজ্য করতে আসেন, তারা মতিঝিল এলাকার হোটেলগুলোতে থাকেন না। অন্যদিকে গুলশান-বনানী এলাকায় থাকলে তারা শপিংয়ে যেতে পারেন, কফি শপে যেতে পারেন। এসব কারণে সারা বিশ্বে ভূমির মিশ্র ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, মতিঝিল এলাকা যেহেতু ইতিমধ্যে তার আভিজাত্য হারিয়ে ফেলেছে, এ জন্য মতিঝিলের জমির শ্রেণিকে মিশ্র ব্যবহার হিসেবে ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি নিয়েছে রাজউক। সংশোধিত ড্যাপে সে বিষয়ে নির্দেশনা রাখা হয়েছে। পৃথিবীর নগর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৫০, ৬০ বা ১০০ বছর অন্তর সেসব ঢেলে সাজানো হয়। সেটা বিবেচনায় নিয়েই মতিঝিল এলাকাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। এখানে আবাসিকের বৈশিষ্ট্য দিতে হবে; কনডোমিনিয়াম গড়ে তুলতে হবে। ইতিমধ্যে রাজউক বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ১৬ একর জায়গা নিয়ে একটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে লাইব্রেরি, ওয়াকওয়ে থাকবে। বসার ব্যবস্থা থাকবে। মতিঝিল এলাকায় ঝিল ছিল, ওই ঝিলকে প্রাধান্য দিয়ে পার্কটি তৈরি করা হবে। বহুমুখী ব্যবহার ছাড়া মতিঝিলকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিলের আধুনিকায়ন ও ভূমির মিশ্র ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। তাহলে মতিঝিল সচল থাকবে; তবে ঢাকা শহর বড় হওয়ায় আরও বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে ওঠা ইতিবাচক। এসব পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা দরকার ছিল; কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে সে রকম হয়নি। এটা দুঃখজনক। এ জন্য শহরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ঢাকায় এখন অনেকগুলো বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই সব অঞ্চলে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় বড় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় মতিঝিলে রয়েছে। তবে ব্যবসা গুলশান, বনানী, উত্তরা, গাজীপুরে সরে যাওয়ায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ব্যবসা কেন্দ্রের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।