
এ মুহূর্তে বাংলাদেশের ভূ-কৌশলগত উত্থানটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এ কারণে বিশ্বের পরাশক্তি বা অর্থনীতির বড় অংশীজনরা ভূ-কৌশলগত বা ভূ-রাজনীতি বা ভূ-অর্থনীতির যে কোনো দিক থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে এনগেইজ বা সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য আগ্রহী। আগ্রহী বলেই স্বাভাবিকভাবে তারা বাংলাদেশের মতো দেশের সঙ্গে আরও নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করবে এবং করছে। এই হিসেবে যেটা দেখা যায়, বাংলাদেশের যে চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়ন বা মার্কেট ডেপথ অর্থাৎ বাজারের যে বিস্তৃতি এবং তার সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নানামূখী প্রবণতার কারণে খুব স্বাভাবিকভাবেই পশ্চিমা বিশ্ব বলেন আর চীন বা বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতির জন্য বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
এছাড়া বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য সহযোগী, অন্যদিকে বাংলাদেশকে ঘিরে দক্ষিণ এশিয়ায় এক ধরনের রাজনৈতিক বলয়ও তৈরি হয়েছে। মায়ানমার ইস্যুটাও জিও স্ট্র্যাটিজিকভাবে খুবই সেনসিটিভ, যার সঙ্গে বিশে^র সুপার পাওয়ারগুলো জড়িত। যেমন চায়না, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এমনকি ফ্রান্স এবং জাপান। সুতরাং এই জায়গাতে বাংলাদেশের বিষয়ে আরেকটা গ্লোবাল অ্যাটেনশান রয়েছে। পাশাপশি বাংলাদেশের মৌলিক অবস্থান হচ্ছে বহুপাক্ষিকতা। এই পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণের মধ্যেও বাংলাদেশ একটা ভারসাম্যমূলক অবস্থান বজায় রাখতে পেরেছে। আমার মনে হয় এটাও বিশ্বশক্তিগুলো খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে। সব মিলিয়ে এখন বাংলাদেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে চলে এসেছে। বাংলাদেশের রাজনীতির স্থিতিশীলতা, ভবিষ্যৎ গতিপ্রকৃতির সঙ্গেও তারা নিজেদের জড়িয়ে ফেলছে। কারণ, তাদের প্রচুর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় বাংলাদেশের সঙ্গে তৈরি হয়েছে। এই কারণে স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ওপর বা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপর তাদের কড়া নজর থাকবে। তবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো তাদের জাতীয় স্বার্থ। সেটা বাণিজ্যসম্পর্কিত হতে পারে, বিনিয়োগসম্পর্কিত হতে পারে আবার নিরাপত্তা কিংবা ভূ-কৌশলগত বিষয়ও হতে পারে। যে কোনো বিষয়েই সেটা হতে পারে। কারণ একেকটা দেশের স্বার্থ একেক রকম। অগ্রাধিকারও একেক রকম।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের বাংলাদেশ সফরে তিনটি বার্তা রয়েছে। তিনটি বার্তা মানে তিনটি অন্তর্নিহিত অর্থ রয়েছে। এক. রাশিয়ার বাংলাদেশের প্রতি কৌশলগত আগ্রহ তৈরি হয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের আপেক্ষিক নিরপেক্ষ অবস্থানের জন্য রাশিয়া বাংলাদেশকে ইতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করে। দুই. বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতেও রাশিয়া বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে অর্থায়ন থেকে শুরু করে অবকাঠামোগত উন্নয়নের অংশীদার। পাশাপাশি বাংলাদেশে তাদের একটা প্রতিরক্ষা বিষয়ক স্বার্থ তৈরি হয়েছে। ফলে তাদের বিনিয়োগ ও অবকাঠামো নির্মাণে কারিগরি সহায়তা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিন. রাশিয়া যেহেতু এখন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে স্যাংশান বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সে কারণে তার জন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিকল্প মুদ্রা (অল্টারনেটিভ কারেন্সি) খুঁজে বের করা জরুরি। বর্তমানে বিশ্বের বহু দেশই মনে করছে যে এই ধরনের বিকল্প ব্যবস্থা থাকা দরকার। এটাও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
অন্যদিকে রূপপুরের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াও বাংলাদেশের জন্য আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল খাদ্যনিরাপত্তা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যতক্ষণ পর্যন্ত না থামছে ততক্ষণ সারা বিশে^র জন্যই খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে থাকবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী কিন্তু এই বিষয়টাকে আলোচনার মধ্যে রেখেছেন। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রোহিঙ্গা ইস্যু। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সমস্যা সৃষ্টিকারী মায়ানমারের বড় কৌশলগত মিত্র রাশিয়া। এ বিষয়ে রাশিয়ার ভূমিকা ঐতিহাসিকভাবেই বাংলাদেশ আশা করতে পারে। আমার মনে হয় এটা রাশিয়ার পক্ষে করা সম্ভব। কারণ মায়ানমারকে কেন্দ্র করে চীন-রাশিয়ার এক ধরনের বলয় আছে, সেটা বাংলাদেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয় রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা বাংলাদেশের জন্য ভালো।
ল্যাভরভের সফর শেষে নয়াদিল্লিতে যে জি-২০ সম্মেলন হলো সেখানে অনেকগুলো মাইলফলক সূচিত হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে নিকটতম প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এই সমে¥লনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দেখা-সাক্ষাৎ একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক। এই দেখা-সাক্ষাৎ একটা রাজনৈতিক বোঝাপড়ার বিষয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হয়েছে। এই ধরনের রাজনৈতিক বোঝাপড়া যে কোনো রাষ্ট্রের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ভারতের আস্থার জায়গাটা অনেক বেশি স্পষ্ট হয়েছে। এখানে বাংলাদেশের অনেকগুলো এজেন্ডাও রয়েছে, যেগুলো হয়তো আমরা নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে দেখতে পাব। আরেকটা জটিল পয়েন্ট হচ্ছে বাংলাদেশের স্বার্থের সঙ্গে যে বিষয়গুলো জড়িত সেসবের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্যনিরাপত্তা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, দুর্নীতি দমন, জৈবজ্বালানি প্রভৃতিতে বাংলাদেশের একটা অবস্থান আছে। কিছু কিছু জায়গায় বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় ভূমিকা আছে। বিষয়গুলো জি-২০-এ আলোচিত হয়েছে। এগুলো আমাদের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গেও সরাসরি জড়িত। এসব দিক থেকে দেখলেও জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জি-২০ এর মধ্যেও ক্ষমতার রাজনীতি আছে। এর ধ্রুপদী উদাহরণ হলো - চীন, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং ভারত আরও যোগাযোগ অবকাঠামো তৈরির জন্য এক ধরনের মতৈক্যে এসেছে। মুশকিল হচ্ছে এটা করতে গেলে পাকিস্তান, আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারত বা চীনের সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি পুনর্বিবেচনা করা দরকার। অন্যদিকে পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনীতির বাস্তবতায় এক দেশ আরেক দেশের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এ পরিস্থিতিতে কোন মুদ্রায় বাণিজ্য হবে তা নিয়ে বিশ্বে একটা সংকট চলমান আছে। এই সংকটের মুখে ব্রিকসে বিকল্প একটা ব্যাংক তৈরি করা হলো। কিন্তু সেই ব্যাংক কতটা ফলপ্রসূ হবে এবং যে ব্যাংকিং সিস্টেম বিশ্বে বহাল আছে সেটার বিপরীতে নতুন কী তারা দিতে পারবে সেটা নিয়েও প্রশ্নের অবকাশ আছে। সুতরাং এ পরিস্থিতিতে জি-২০-এ বাংলাদেশের অবস্থান জাতীয় স্বার্থের জায়গা থেকে ঠিক আছে। তবে ব্রিকসের মতো এখানেও সদস্যপদ নিয়ে অতি উৎসাহী হওয়ার কিছু নেই।
জি-২০ সম্মেলনের পরপরই ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর ঢাকা সফরেও বিশ্বে বাংলাদেশের একটা বড় ভূমিকা দৃশ্যমান হয়েছে। একটা হলো ফরাসি অর্থনীতি এখন মোটামুটি একটা জটিল অবস্থায় আছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ন্যাটো বা অন্যান্য যে সংস্থা আছে সেগুলোর সঙ্গে ফ্রান্সের সম্পর্কে জটিলতা বিরাজ করছে। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা চুক্তি অকাসে ফ্রান্সের কয়েক বিলিয়ন ডলারের সাবমেরিন সরবরাহ করার কথা হয়েছিল, কিন্তু সেটা হয়নি। আমার মনে হয় এ কারণে ফ্রান্স খুব গুরুত্বের সঙ্গে তার এক্সপোর্ট পোর্টফোলিওর মধ্যে প্রতিরক্ষা বিষয়ক সংযোগ, সাইবার স্পেস বিষয়ক প্রযুক্তি, এয়ার বাস, স্যাটেলাইট, রাফায়েলের মতো যুদ্ধবিমান বিক্রির বাজার খুঁজছে। হয়তো তারা বাংলাদেশকে একটা গুরুত্বপূর্ণ বাজার হিসেবে দেখছে। সম্প্রতি আফ্রিকাতে যে ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তনগুলো ঘটছে এবং এর ফলে সেখানে ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক অধিপত্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। সুতরাং তার জন্য বাংলাদেশের মতো বাজারগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের যে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এবং বঙ্গোপসাগরীয় ক্ষমতার সমীকরণ তৈরি হয়েছে সেটাও একটা কারণ। আমি বাংলাদেশকে সবসময় ‘অনুক্ত শক্তি’ বলি। এ শক্তিকে কেউ স্বীকার করত না, কিন্তু শক্তিটা আছে। এখন অবশ্য স্বীকারও করে। কারণ একের পর এক পরাশক্তিগুলোর রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ লোকজন বাংলাদেশে আসছেন, যাচ্ছেন। ১৭ কোটি মানুষের একটা সম্ভাবনাময় অর্থনীতি যে কারোর জন্যই খুব লোভনীয়। সুতরাং ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে ঘিরে যে ‘অনুক্ত শক্তি’র বাংলাদেশ তার উপস্থিতি বিশ্বশক্তিগুলো এখন অনুধাবন করছে।
তবে এখানে মনে রাখা দরকার, ক্ষমতার যে বৈশ্বিক সমীকরণের মধ্যে বাংলাদেশের উত্থান, তাকে ধরে রাখার জন্য উপযুক্ত কাঠামোগত সংস্কার, রাজনৈতিক সংস্কার এবং আর্থিক খাতের সংস্কার খুব জরুরি। আমরা যদি দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা পেতে চাই, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশকে এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রের যারা অংশীজন তাদের প্রত্যেকেরই একটা জাতীয় ঐকমত্যের জায়গা থেকে দেশের এই উত্থানকে ব্যাখ্যা করতে হবে। কেবলমাত্র একটা দলপ্রাণ জায়গা থেকে একে ব্যাখ্যা করলে এর টেকসই উপযোগিতা ধরে রাখা কঠিন হয়ে যাবে। এজন্যই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটাকে সুসংহত করা প্রয়োজন, যাতে আমরা লম্বা সময় ধরে এর সুবিধাটা নিতে পারি। এক্ষেত্রে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলেরই উচিত দলগত জায়গা থেকে না দেখে সামগ্রিক জাতীয় স্বার্থের জায়গা থেকে বিষয়গুলো বিবেচনা করা। ভবিষ্যতে যে দলই বা যারাই ক্ষমতায় আসুক তারাই এর সুফল পাবেন, যেটা বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিশ্বশক্তির মনোযোগ কেড়ে নেওয়া বাংলাদেশের এই উত্থানটা ধারাবাহিকভাবে হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে বিদেশিদের কথাবার্তায় মনে হতে পারে যে পরাশক্তিগুলো সামনের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী। কিন্তু বাংলাদেশের নির্বাচনে ফ্রান্সের বড় রকমের কোনো ভূমিকা নেই। কিছুটা ভূমিকা থাকলে সেটা তিনটা দেশের আছে চীন, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। চীন আর ভারতের অবস্থানটা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার পক্ষে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশে কোনো অস্থিতিশীলতা দেখতে চায় না। যুক্তরাষ্ট্র যেটা চায়, সেটা হচ্ছে একটা জবাবদিহির ব্যবস্থা, সেটা অর্থনৈতিক এবং নির্বাচন সব কিছুতেই। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির জন্যই এটা দরকার। সুতরাং আমার মনে হয়, চীন এবং ভারতকে সঙ্গে নিয়েই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের যোগাযোগ আরও বাড়ানো উচিত।
লেখক: অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পত্রিকা সম্পাদনা, স্কাউট, অভিনয়, কলাম লেখা, শিক্ষকতা, ব্যবসা ও ব্যাংকার হিসেবে যথেষ্ট অবদান ও বহুমাত্রিক কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। এ যাবৎ পুরস্কারও পেয়েছেন শতাধিক। সবচেয়ে বড় পুরস্কার পেয়েছেন ‘নোবেল’। একইসঙ্গে এই মানুষটি দেশে-বিদেশে শিক্ষকতা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত।
বিশ্বমহলে সুপরিচিত বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী এই গুণী মানুষটি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে রাজনীতিতে সক্রিয় ও যুক্ত হওয়ার একাধিক উদ্যোগ নিয়েছেন অতীতে। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘আমার দল’ নামে রাজনৈতিক দল। সর্বশেষ ২০০৬ সালে নোবেল বিজয়ের ৫ মাসের মধ্যেই ১/১১ এর সময় ‘নাগরিক শক্তি’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। আগামী দিনে অন্য কোনো নামে রাজনৈতিক দল গঠন করবেন কি না, তা তিনিই বলতে পারবেন।
সম্মান, অর্থ, খ্যাতি, পুরস্কার সবই তিনি পেয়েছেন। শুধু রাজনীতিতে সফলতা এখনো অধরা। এ অপূর্ণতা ঘুচাতে দেশের রাজনৈতিক ক্রান্তিলগ্নে ও দুঃসময়ে বারবার উঁকি মেরেছেন। জনগণের নেতা হিসেবে আবির্ভূত হতে চেয়েছেন, কিন্তু জনগণ তাকে গ্রহণে কার্পণ্য করায় বারবার ফিরে যান। ২০০৭ সালে ১/১১-এর সময়ে সেনা সমর্থিত সরকার, পরাশক্তিধর দেশ ও তার প্রেসক্রিপশন ছিল মাইনাস-টু নীতি, যাতে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে নতুনরা নির্বিঘ্নে রাজনীতি করতে পারেন। উদ্দেশ্য ব্যর্থ হওয়ায়, ‘হাসিনা হটাও নীতিতে’ তখন যাত্রা শুরু হয়।
সুযোগের বসন্তকাল এসেছে মনে করে কভিড-১৯, ইউক্রেন যুদ্ধ, দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈদেশিক বন্ধুদের প্রভাব এসবকে এখন ঢাল হিসেবে নিয়ে চলমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার আরেক নীলনকশা তৈরি করা হয়েছে। বিশ্বের নোবেল বিজয়ী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজের সদস্যদের দ্বারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি পাঠানো হলো একটি বিবৃতি। আহ্বান করা হয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে আদালতে চলমান মামলাসমূহের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ রাখতে।
সারা বিশ্বকে বুঝানোর চেষ্টা হলো, বাংলাদেশে বিচার বিভাগ বা সংবিধান বলতে কিছু নেই। আমরা জেনেছি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ২টি কর ফাঁকি, ১টি মানি লন্ডারিং এবং বাকি মামলাগুলো শ্রমিকদের সঙ্গে ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠানের চুক্তি মতো পাওনা অর্থ আদায়ের জন্য দায়েরকৃত। একাধিক মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস, আইনি যুদ্ধ শেষে করের টাকা পরিশোধ করেছেন। এখনো অনেকগুলো মামলা চলমান। ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, এমন অভিযোগ আদালতে না করে মামলা বন্ধের চিঠি ও বিবৃতি কেন? ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবকে ইনডেমনিটি দিতে যে চিঠি প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে, এ বিষয়ে সচেতন নাগরিকদের প্রশ্ন আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জনাব ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তনের অভিযোগে আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলা চলছে, রাশিয়ার নোবেলজয়ী সাংবাদিক দিমিত্রি মুরাতভকে বিদেশি এজেন্ট আখ্যায়িত করা হয়েছে যা ফৌজদারি অপরাধ, মিয়ানমারের নোবেলজয়ী অং সান সূচি অসুস্থ ও অমানবিক অবস্থার শিকার হয়ে জেল খাটছেন, মাননীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও নোবেল বিজয়ীরা কি উক্ত ৩ জনের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও চলমান মামলা স্থগিতের জন্য ঐসব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে অনুরোধ করে বিবৃতি দেবেন? ফিলিপাইনের নোবেলজয়ী সাংবাদিক মারিয়া রেসার বিরুদ্ধে কর ফাঁকির মামলা ছিল, অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে মামলা ছিল, কোস্টারিকার প্রেসিডেন্টেরও একই অবস্থা ছিল, আলেস বিলিয়াতস্কির (বেলারুশ) জেল হয়েছিল। তাদের বিষয়ে কিছু করণীয় ছিল?
বোদ্ধাদের মতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবের বিরুদ্ধে চলমান মামলার বিষয়, কারণ ও নথিপত্র সম্মানিত স্বাক্ষরদাতারদের সম্মুখে উপস্থাপিত হলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে কৌশলের মাধ্যমে স্বাক্ষর বা সম্মতি আদায়ের জন্য স্বাক্ষরদাতাদের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। কেননা এতে তাদের ব্যক্তি ইমেজ ও সম্মান জড়িত। লক্ষণীয় যে, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অমর্ত্য সেন, পাকিস্তানের মালালা ইউসুফ জাইসহ দক্ষিণ এশিয়ার কেউ কিন্তু ঐ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেননি।
ধারণা করি, চিঠিতে স্বাক্ষরদাতাদের ভুল বুঝানোর ফলে ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজের জালে নিজেই আটকা পড়েছেন। বারাক ওবামা বা হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে হুমকি সমেত চিঠি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রেরণ করেছেন, যা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে আঘাত করারই শামিল। এর ফলে রাষ্ট্রের অন্যতম অঙ্গ বিচার বিভাগ এবং দেশের ভাবমূর্তিকে বিশ্বের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। এটা ঠিক, ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন জ্ঞানী আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। আমরা তাকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করি। কিন্তু বিচার বিভাগ নিয়ে প্রশ্ন তোলা, রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করার শামিল নয় কি!
সংশ্লিষ্টদের এবং সরকারের উচিত হবে, বিবৃতিদাতা সম্মানিত ব্যক্তিদের ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগের ফিরিস্তি ও তার বিরুদ্ধে চলমান মামলার সব কাগজপত্র প্রেরণ করে, তাদের প্রকৃত ঘটনা জানানো। একইসঙ্গে তাদের কাছ থেকে অভিমত নেওয়া যে, কর ফাঁকি বা শ্রমিকের পাওনা মিটাতে অস্বীকার যিনি করেন তাকে অভিযুক্ত না করা তাদের আইনে আছে কি-না? তবেই থলের বিড়াল বের হয়ে আসবে।
ইউনূস সাহেবকে দুটো বিষয় মনে করিয়ে লেখাটি শেষ করতে চাই বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল তার দেশের জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন রাজনীতির মাঠে। ১৯৫২ সালে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন গোরিওন এবং জনগণ ‘রাষ্ট্রপতি’ পদে আসীন হওয়ার জন্য পৃথিবী বিখ্যাত বিজ্ঞানী ‘আলবার্ট আইনস্টাইনকে’ অনুরোধ করেছিলেন। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, I have neither the natural ability nor the experience to deal with human beings.
লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
এডিস মশা নিধন প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, মশা মারার দায়িত্ব মন্ত্রণালয়ের একার না। জনগণকে সম্পৃক্ত করে এই কাজ করা হয়। মন্ত্রী মশাই ভালোই বলেছেন। কিন্তু মন্ত্রণালয় বা সিটি করপোরেশন মশা মারার বাজেট নেয় কেন? বা খরচ নেয় কেন? জনগণ তো কোনো পয়সা নেয় না। ডেঙ্গু মশার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর সিটি করপোরেশন নানা উদ্যোগের কথা বলেছে। বাস্তবায়ন করতে বড় বাজেট তৈরি করেছে। কিন্তু জনগণ কী করেছে? তাদের হাতে যা ছিল তা নিয়ে মশা মোকাবিলার চেষ্টা করছে। রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডেঙ্গু মশা ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিটি ঘরে মশা তাড়াতে কয়েল, স্প্রে বা লোশন ব্যবহার হচ্ছে। এতে জনগণ কি কোনো বাজেট নিচ্ছে? নিজের রোজগারের পয়সায় মশা থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে যাচ্ছে তাদের খরচের হিসাবটা দেখুন? মন্ত্রী মশাই এ টাকার হিসাব করবেন না যে মশা তাড়াতে শহরের একজন মানুষের খরচ কতটা বেড়েছে? আপনারা বাজেট করে বসে আছেন প্রকৃতির ওপর ভরসা করে। বৃষ্টি কমে গেলে মশা কমে যাবে। বড় জোর আর মাসখানেক। অক্টোবর থেকে মশা আপনাআপনি কমে যাবে, এ আশায় তারা আছেন। সিজন শেষে আক্রান্তের হার এমনিতেই কমে যাবে সেখানে সরকারের মন্ত্রণালয় বা সিটি করপোরেশনের কোনো কৃতিত্ব নেই। কিন্তু প্রতিবেশী দেশ ভারতে ডেঙ্গুকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। তারা কিন্তু প্রাকৃতিক নিরোধের ওপর ভরসা করেনি। তারা নানাভাবে চেষ্টা করেছে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য।
মশা নিধনের ফগার মেশিন চালানোর দক্ষতা অর্জনের জন্য গত আগস্টে চারজন সরকারি কর্মকর্তা ও একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর জার্মানি সফর করেছেন। তারা সেখানে থার্মাল ফগার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান পালসফগে প্রশিক্ষণ নেন। যদিও এই কর্মকর্তারা এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মশানিধন প্রক্রিয়ায় সরাসরি জড়িত নন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সম্প্রতি ১০০টি ফগার মেশিন কিনেছিল। এসব মেশিন চালাতে এবং ফগার মেশিন পরিচালনার সঙ্গে জড়িতদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এ সফরের উদ্দেশ্য। কিন্তু জরুরি ছিল ডেঙ্গু নিধনে কীটতত্ত্ববিদদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। কিংবা তাদের গবেষণার জন্য সুযোগ তৈরি করা, যা আমাদের দেশে এখনো হয়নি। আর গবেষণা ছাড়া বছর বছর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখা একেবারেই সম্ভব না। যে কথা ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ার শুরু থেকে বলা হচ্ছে।
২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে ১৫৬ জনের মৃত্যু ও ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রেকর্ড গড়েছিল। এরপর ডেঙ্গু মশা নিধনে কার্যকর উদ্যোগের প্রয়োজন ছিল। সেটা হয়নি। সেখান থেকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত। ওই বছরও ডেঙ্গু নিধনে প্রকৃতির সহায়তা নেওয়া হয়েছে। চলতি বছর জানুয়ারি থেকেই মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে এবং মৃত্যুও হয়েছে। মারাত্মক আকার ধারণ করতে শুরু করেছে গত মে থেকে। ওই মাসে আক্রান্তের সংখ্যা হাজারের কোটা পেরোয়। এর পরের মাসগুলোতে এ হার লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে? ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা দিনক্ষণ ঠিক করে মশা মারার অভিযানে নামেন। ওই অভিযানে মশা নিধনের জন্য ফগার মেশিন নিয়ে যারা বেরিয়েছিলেন তারা শুধু কর্মকর্তাদের সঙ্গই দিয়েছেন। খবরের কাগজের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, নির্মাণাধীন ভবনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা ও জরিমানা আদায়ে দিন পার করেছেন। উত্তর সিটি করপোরেশন সাংবাদিকদের ডেকে অভিযানে নামার ঘোষণা দেয়। সেখানে ড্রোনের সাহায্যে এডিস মশার জন্মস্থান চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এসব উদ্যোগে ফলাফল হলো ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার এবং মৃত্যু দুই-ই বাড়ছে। গত চার মাসে মৃত্যু হয়েছে ৭ শতাধিক মানুষের। আক্রান্ত লাখ ছাড়িয়েছে।
গত মে থেকেই ডেঙ্গু নিধনে নানাবিধ আলোচনা হচ্ছে। সিটি করপোরেশন বাজেট নিয়েছে। কীটতত্ত্ববিদরা নানা ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু কাকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে? মশা নিধনে মূল দায়িত্ব যাদের তাদের এগিয়ে আসার কথা, সমাধানের পথ বলে দেওয়ার কথা। আমাদের এখানে হচ্ছে ঠিক তার উল্টো। যাদের ডেঙ্গু নিধনের পথ দেখানো হচ্ছে তারা নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন। তারা জানছেন মৃত্যু বাড়ছে, সারা দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু মশা নিধনের কার্যকর গঠনতান্ত্রিক সমাধানে যাচ্ছেন না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন, সিটি করপোরেশন ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে মশা নিধনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কথা সত্য। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে এটা একার কাজ না। জনগণকে সচেতন হতে হবে। এ কথাও সত্য। কিন্তু আপনার কাজটা যদি আপনি করে ফেলতেন আর তারপরও যদি মশার উপদ্রব বাড়তে থাকত তাহলে মেনে নিতাম, জনসচেতনতার অভাবেই ডেঙ্গু বাড়ছে। সিটি করপোরেশন মশক নিধন অভিযানের নামে যা করছে তা রীতিমতো মশকরা। ঢাকা নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে যদি প্রতিদিন ফগিং করা হতো তাও মশা অনেকাংশে কমে যেত। এ কথা সত্য, শুধু ফগিং করে ডেঙ্গু নিধন সম্ভব নয়। এ জন্য লার্ভা ধ্বংস করা প্রয়োজন। সিটি করপোরেশনের কাছে লার্ভা নিধনের ব্যবস্থা না থাকলে তারা সরকারের কাছে সাহায্য চাইতে পারত। তাও বুঝতাম তারা কিছু করছে।
ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণের উদাহরণ হিসেবে প্রতিবেশী দেশ ভারতের কলকাতার উদাহরণ দেওয়া হচ্ছে সেই মে মাস থেকে। যখন আমাদের দেশে ডেঙ্গু বাড়তে শুরু করে। গণমাধ্যমে পরিষ্কারভাবেই তুলে ধরা হয়েছে , কলকাতা শহর কীভাবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। আমাদের সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীলরা বোধকরি সে জ্ঞানটা নিতে চান না। যে কারণে গবেষণা, কীটতত্ত্ববিদদের পরামর্শ বা মশা নিধন ও জনসচেতনতা বাড়ানোর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। সিটি করপোরেশনের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, এটা কোনো ব্যাপার না। মশা কামড়ে মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে, মারা যাচ্ছে তাতে কী হয়েছে। তা আপনাআপনি কমে যাবে। মেয়র বা ওয়ার্ড কমিশনারদের তো কারও কাছে জবাবদিহি করতে হচ্ছে না।
চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) মশা নিয়ন্ত্রণে ১৬৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এর মধ্যে বাজেটে মশা নিধনে ১২১ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা নিয়েছে ডিএনসিসি। মশা নিধন কার্যক্রম পরিচালনা, যন্ত্রপাতি কেনা, ডেঙ্গু মোকাবিলা, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও প্রচার কাজে এই টাকা ব্যয় করবে ডিএসসিসি। অন্যদিকে মশা মারতে চলতি অর্থবছরে ৪৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে ৩৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিয়ে মশা নিধনে ব্যবহৃত কীটনাশক কেনা হবে। বাকি ৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা যন্ত্রপাতি কেনা ও পরিবহন খাতে টাকা ব্যয় করা হবে।
মশা নিধন বা নিয়ন্ত্রণে বাজেট তো হলো। কিন্তু করপোরেশনের দায়িত্ব কী পালন হচ্ছে। দুই সিটি মিলে আমাদের ১৭৫ জন ওয়ার্ড কমিশনার রয়েছেন (সংরক্ষিত নারীসহ)। তারা এ সময় কী দায়িত্ব পালন করছেন? বেশির ভাগ ওয়ার্ডের কমিশনার মশা নিধন অভিযানে সম্পৃক্ত হননি। হলে হয়তো ১৫ দিনেই কমে আসত ডেঙ্গুর সংক্রমণ। কলকাতায় তো ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে তারাই মূল দায়িত্ব পালন করছে। তাহলে আমাদের ওয়ার্ড কমিশনাররা কি ভিনগ্রহ থেকে এসেছেন?
কলকাতা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন মোট ১৬টি বরো (প্রশাসনিক অঞ্চল) এবং ১৪৪টি ওয়ার্ড রয়েছে। প্রতিটি বরোতে আছে ৭ থেকে ১২টি করে ওয়ার্ড। প্রতিটি ওয়ার্ডে রয়েছে মশা নিয়ন্ত্রণ কমিটি। এতে ওয়ার্ড কাউন্সিলর, চিকিৎসক ও স্থানীয় ব্যক্তিরা রয়েছেন। আছেন ৬ থেকে ১৫ জন মশককর্মী। প্রত্যেক কর্মীর মশা নিয়ন্ত্রণের প্রশিক্ষণ আছে। এসব ওয়ার্ড কমিটির কাছে এলাকার সম্ভাব্য ডেঙ্গুর উৎসস্থলের তালিকা আছে। কলকাতায় প্রতি বছর ১০০ দিনের কর্মসূচি রয়েছে। এসব কর্মসূচিতে যুক্ত ব্যক্তিরা ওয়ার্ড পর্যায়ে মশককর্মী হিসেবে কাজ করেন। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে তারা সার্বক্ষণিক নজরদারি করেন। জুলাইয়ে মশার প্রাদুর্ভাবের মৌসুমে নজরদারি আরও বেড়ে যায়।
এই হলো ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কলকাতার প্রস্তুতি। যেটা আমাদের দেশে এখনো ভাবতে পারছি না। জনসচেতনতা বাড়াতে তারাও কাজ করে। একপাড়ার ডেঙ্গু মশা যাতে আরেক পাড়ায় না যেতে পারে তার আগেই তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। আর আমরা ঢাকা সিটিতে থাকা ডেঙ্গু মশা পাঠিয়েছি প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত। বাজেট, উদ্বোধন, ফটোসেশন, দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানোর বাইরে আমরা কী করতে পারছি?
লেখক: সাংবাদিক
চলতি বছরের এ পর্যন্ত ৩৬১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ৫৯.৩০ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী। আবার এর মধ্যে ১৬৯ জন হচ্ছে স্কুলশিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্রী ২১৪ এবং ছাত্র ১৪৭ জন। এদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীই ৬৬ জন। এসব আত্মহত্যার ঘটনার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই অভিমানে বেছে নিয়েছে আত্মহননের পথ। সাধারণত প্রেমঘটিত, পারিবারিক বিবাদ, যৌন হয়রানি এবং পড়াশোনার চাপ, অভিমান ও বিভিন্ন ব্যর্থতার কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, প্রতি ৪০ সেকেন্ডে আত্মহত্যা করছে একজন। ধারণা করা হয়ে থাকে, বিশ্বজুড়ে বছরে ৮ থেকে ১০ লাখ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে নিজের হাতেই। অন্যদিকে, বর্তমানে দেশে প্রতিদিন গড়ে ৩৫ জন মানুষ আত্মহত্যা করছে। সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক, সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য কিছু বিষয় প্রতিনিয়ত আত্মহত্যামূলক আচরণের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বছরজুড়ে বিশ্বে যেসব কারণে মানুষের মৃত্যু হয়, তার মধ্যে আত্মহত্যা ত্রয়োদশতম প্রধান কারণ। বিষন্নতা এবং বিভিন্ন ধরনের নেশার ফলে আত্মহত্যা প্রবণতা বেড়ে যায়।
করোনার সময়ে ১৫ মাসে বাংলাদেশে ১৫১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। মনোবিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতি আমাদের বলছে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর জোর দেওয়া উচিত। বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বাধ্যতামূলকভাবে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ থাকা দরকার। আসলে তাদের আনন্দের মধ্যে শিক্ষা দিতে হবে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের আচরণ শিক্ষার্থীবান্ধব হওয়া ভীষণ প্রয়োজন। পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মনের যত্ন, আন্তরিকতার সঙ্গে নেওয়া দরকার।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তরে রবিবার ‘অভিমানেই সর্বনাশ শিক্ষার্থীদের’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে মূলত শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ এবং মানসিক সাহস জোগানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। বলা হচ্ছে এক দল গবেষক শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার পেছনের কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখেছে, আত্মহত্যার পেছনে সবচেয়ে বেশি দায়ী অভিমান। অভিমানের কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে ৩১ দশমিক ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যা করেছে ১৫ দশমিক ৮০, পারিবারিক সমস্যার কারণে ৬ দশমিক ৯, মানসিক অস্থিতিশীলতার কারণে ১১ দশমিক ৪, যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে ৩ দশমিক ৩০ এবং একাডেমিক চাপের কারণে আত্মহত্যা করেছে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত আট মাসে ১৬৯ জন স্কুলশিক্ষার্থী, ৯৬ জন কলেজশিক্ষার্থী, ৬৬ জন বিশ^বিদ্যালয়শিক্ষার্থী এবং ৩০ জন মাদ্রাসাশিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে। এই বিভাগে আত্মহত্যা করেছে ৩১ দশমিক ৩০ শতাংশ। এ ছাড়া খুলনা বিভাগে ১৩ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ, রংপুর বিভাগে ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ১১ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং বরিশাল বিভাগে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং সিলেট বিভাগে ২ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।
শুধু আমাদের দেশ নয়, বিশ্বজুড়েই উদ্বেগের কারণ আত্মহত্যা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সঠিক সময়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারলেই সম্ভব আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা। সে ক্ষেত্রে ব্যক্তি সচেতনতা, পরিবার ও সমাজের দায়িত্বশীল ভূমিকার পাশাপাশি উদ্যোগী হতে হবে রাষ্ট্রকেও। পারিবারিক বন্ধন, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো, সামাজিক সম্পর্ক জোরদার আত্মহত্যা প্রতিরোধের বড় হাতিয়ার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সমাজের সবাই যদি নিজের মতো করে সচেতন হয়ে ওঠে, আভাস পেলেই মনোবিদের শরণাপন্ন হওয়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে, তাহলেই আত্মহননের প্রবণতা অনেকখানি কমিয়ে আনা সম্ভব।
শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিলেই হবে না। মনেরও যে একটি স্বাস্থ্য রয়েছে, সে বিষয়ে আমাদের সচেতনতা নেই বললেই চলে। এ বিষয়ে মনোবিজ্ঞানী, মনোচিকিৎসক এবং মনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চিন্তাবিদদের সমন্বয়ে বিশেষ সেল গঠন করে দ্রুত একটি কার্যকরী প্যানেল তৈরি করা দরকার। মনে রাখতে হবে, মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি জনগণের চেতনা জাগ্রত করার মূল দায়িত্ব সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। পরিপুষ্ট মানসিক স্বাস্থ্য ছাড়া দেশের প্রকৃত উন্নয়ন আদৌ কি সম্ভব?
কবি সুফি মোতাহার হোসেনের জন্ম ১১ সেপ্টেম্বর ১৯০৭ সালে ফরিদপুরে। তার বাবা মোহাম্মদ হাশেম পুলিশ বিভাগে চাকরি করতেন। তিনি ফরিদপুর জিলা স্কুল থেকে এন্ট্রান্স, ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে এফএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩১ সালে প্রথম বিভাগে বিএ পাস করেন। পড়াশোনা শেষ করে প্রথমে তিনি ফরিদপুর জজকোর্টে যোগ দেন। কিন্তু বছর দু-এক পরে নিউরেস্থিনিয়া ও ডিসপেপশিয়া রোগে আক্রান্ত হন। এ রোগ ক্রমেই তার মস্তিষ্কে আঘাত করে। ফলে কবির সারা দেহ অবসন্ন হয়ে পড়ে। ডাক্তার বিধান রায় ও ডা. নীল রতন সরকারের চিকিৎসায়ও তিনি সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করতে ব্যর্থ হয়ে তালতলার পীর সাহেব আরশেদ আলীর শরণাপন্ন হন এবং আরোগ্য লাভ করেন। সুস্থ হওয়ার পর শুরু করেন শিক্ষকতার জীবন। মাদারীপুর ও ভাঙ্গা পাইলট হাইস্কুল, ময়েজউদ্দীন হাই মাদ্রাসা ও পটুয়াখালী স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ১৯৫০ সালে তিনি ঈশান ইনস্টিটিউশনে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে পরিচয় ও যোগাযোগসূত্রে সাহিত্যচর্চায় উদ্বুদ্ধ হন এবং পাশ্চাত্য আদর্শে সনেট লিখে খ্যাতি অর্জন করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পাদিত বাংলা কাব্য পরিচয় পাঠ্যপুস্তকে তার ‘দিগন্ত’ নামক সনেট স্থান পায়। ১৯৬৫ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ সনেট সংকলন প্রকাশিত হয়। প্রেম, প্রকৃতি ও মানবতা তার সনেটের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৬৫ সালে তিনি আদমজী পুরস্কার, ১৯৭০ সালে প্রেসিডেন্ট পুরস্কার ও ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৫ সালের ৭ আগস্ট ঢাকায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে চলতি বছর মে মাসে। গত শুক্রবার ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে দেশটি। নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে এ নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করার ঘোষণার তিন দিন পার হলেও কারও নাম প্রকাশ হয়নি। তবে বিভিন্ন মহলে নানা দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের নামে আলোচনা এখন সর্বত্র।
কারা যুক্তরাষ্ট্রের এ ভিসা নিষেধাজ্ঞায় পড়েছেন বা পড়তে যাচ্ছেন তা নিয়ে রাজনৈতিক, কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ ও ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্বকারী একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, যেহেতু নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, তাতে এর লক্ষ্য নির্বাচনী ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারাই। তারাই ভিসানীতির আওতায় পড়বেন, এটাই স্পষ্ট।
তারা আরও বলেন, ভিসানীতি প্রয়োগের কথা জানালেও যুক্তরাষ্ট্র কারও নাম প্রকাশ করেনি। তবুও বলা যেতে পারে, কাদের ওপর ভিসানীতি প্রয়োগ করবে পশ্চিমা এ প্রভাবশালী দেশটি।
এ ব্যক্তিরা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয়ই একটা তালিকার বেশিরভাগ নামই চূড়ান্ত করে ফেলেছে। অল্পসংখ্যক বাকি থাকতে পারে। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে সেগুলোরও চূড়ান্ত করা হবে। যেখানে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জড়িত প্রতিষ্ঠান, দপ্তর, অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা থাকতে পারেন।
বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে ধারণা পাওয়া গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির উদ্দেশ্যই যেহেতু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে, ফলে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা যারা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকবেন তারাই ভিসানীতির আওতায় আসবেন। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারাও থাকতে পারেন। থাকতে পারেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রাজনৈতিক নেতা, তারা যেকোনো দলের হতে পারেন। অল্পসংখ্যক ব্যবসায়ীও থাকতে পারেন।
জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন,‘ভিসানীতির বিষয়টি আমেরিকা প্রশাসন পরিষ্কার করে ঘোষণা না করলেও বুঝিয়ে দিয়েছে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারেন, এমন যে কেউ এ ভিসানীতির আওতায় পড়তে পারেন। যেমন রাজনীতিবিদ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাহী প্রশাসন, জুডিশিয়ারি অর্থাৎ যারাই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট থাকবেন, অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যাহত করবেন তারাই এর আওতায় আসবেন।’ তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের এর আওতায় পড়ার সুযোগ নেই। তবে হ্যাঁ, নির্বাচন ব্যাহত করার ছোট্ট সুযোগ তাদের হাতেও থাকে, তারা যদি জড়িত হন, ভিসানীতির আওতায় পড়বেন।’
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ভিসানীতির চেয়েও আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে নেগোশিয়েশন জরুরি। কে ভিসানীতির আওতায় পড়ল, কে পড়ল না এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঐক্য।’ তিনি বলেন, ‘ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়ায় কারা রয়েছেন সেটা আমেরিকা প্রশাসন ঘোষণা না করলেও বোঝা খুব জটিল কিছু নয়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘আমেরিকা যেহেতু ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে তাদের ভিসানীতি, ফলে পরিষ্কার হয়ে গেছে কারা পড়তে পারেন এর আওতায়। যারা নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, নিশ্চয়ই তারাই এর আওতায়।’
বিভিন্ন পর্যায়ের ও পেশার নিয়োজিত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজনৈতিক নেতারা ভিসানীতিকে তেমন আমলে না নিলেও বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা ও সিভিল প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ভেতরে আমেরিকার ভিসানীতি ভীষণ ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে এর নানা কারণ জানা গেছে। এর মধ্যে বিদেশে টাকা পাচার, ব্যবসাবাণিজ্য, পরিবারের সদস্যদের বিদেশে থাকা এসব কারণে বেশি ভীতিতে ফেলেছে তাদের। আবার একটা অংশ বিদেশে কিছু না থাকলেও ভিসানীতির আওতায় পড়লে ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হওয়ার ভয় পাচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করায় যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে পারেন এমন দুুশ্চিন্তা যেমন কারও কারও মনে ভর করেছে, তেমনি ভিসানীতিতে পড়ার সুযোগ নেই তারাও দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। কারণ এই শ্রেণির লোকজন মনে করছেন, কখনো যদি যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান, তখন যদি ভিসা না হয়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন এমন নামের তালিকাও চারদিকে ঘুরপাক খাচ্ছে। আরও অগ্রসর হয়ে কোনো কোনো মহল লম্বা তালিকা হাতে নিয়ে ঘুরছে। তবে এসব নামের তালিকার উৎস বা সূত্র নিশ্চিত নয় বলে কেউ কেউ বিষয়টি গুজব মনে করছেন। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের বাইরে প্রায় সবাই ভিসানীতি আতঙ্কে ভুগছেন।
একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ভিসানীতিকে জয়-পরাজয় হিসেবে প্রচার করে এলেও ভেতরে ভীতি সবারই রয়েছে। কারণ পশ্চিমা দেশে তাদের অনেকেই ইতিমধ্যে সেকেন্ড হোম গড়ে তুলেছেন। ফলে রাজনীতির বাইরেও ব্যক্তিজীবনের প্রয়োজনে ভিসানীতি তাদের ওপর যদি প্রভাব ফেলে, সে আশঙ্কা তো আছেই।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সব বিষয়ে আমি কথা বলি না। আমি একটাই কথা বলব, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আওয়ামী লীগ সে কাজই করছে।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘ভিসানীতি আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এর সঙ্গে গণতন্ত্র ও নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।’ তিনি বলেন, গণতন্ত্রের বিষয়ে বলতে হলে আরও অনেক বিষয় রয়েছে। এ ভিসানীতি কারা লক্ষ্যবস্তু জানতে চাইলে ইনু বলেন, ‘এটি নিয়ে মাথাব্যথা নেই আমাদের। তারাই বলতে পারবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কারও পরামর্শে সরকার কোনো প্রতিষ্ঠান অদলবদল করবে না, পরিবর্তনও আনবে না।’
আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর আন্দামান সাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
সংস্থাটি বলছে, আজ রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ ছাড়া বর্ধিত পাঁচ দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
আজ সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সকাল ৯টা থেকে আজ রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়; ঢাকা ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুই এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত) দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে সৈয়দপুরে ২৫৯ মিলিমিটার। এ ছাড়া দেশের উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাতের মধ্যে দিনাজপুরে ১৯১, রংপুর ১৩৮, ডিমলায় ৯৯, তেঁতুলিয়ায় ৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সীতাকুণ্ডে ৩৫.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর আজকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়া ও রাজারহাটে ২৩.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঝাল খেতে অনেকেই পছন্দ করেন আবার অনেকেই অল্প ঝালও সহ্য করতে পারেন না। সে যাই হোক বেশি ঝাল লাগলে আমরা পানি পান করে উপশম করার চেষ্টা করি। তবে পানি কিন্তু ঝাল লাগা কমায় না, বরং বাড়ায়! কথাটা শুনে অবাক লাগছে? বিষয়টি বুঝতে হলে আমাদের জানতে হবে ঝাল কেন লাগে।
ঝাল খাবারে ক্যাপাসাইসিন নামক এক ধরনের উপাদান থাকে। সেই উপাদানে এক ধরনের প্রাকৃতিক তেল পাওয়া যায়। আর তেল ও পানি কখনও মেশে না। যা আপনার কোষঝিল্লি থেকে ক্যাপসিসিন তাড়ানোর বদলে মুখের ভেতরের অন্য অংশে ছড়িয়ে দেয়। এতে করে মুখের ভেতর আরও ঝাল লাগা অনুভূত হয়।
পানির পরিবর্তে কিছু খাবার আছে সেগুলো খেলে ঝাল লাগা থেকে দ্রুত স্বস্তি পাওয়া যায়।
টমেটো ও লেবু
টমেটো ও লেবু মুখের ঝালভাব কমাতে দারুণ কাজে দেয়। ঝালের যে অ্যাসিড থাকে তা কমাতে দারুন কার্যকর টমেটো ও লেবু। ঝাল লাগলে তাই দ্রুত এক টুকরো টমেটো মুখে দিতে পারেন। কমলা, আনারস ও লেবুর রসেও একই ধরনের উপাদান আছে। যদি তরকারি খুব বেশি ঝাল হয় তাহলে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন। ঝাল দ্রুত কমে যাবে।
দুগ্ধজাতীয় খাবার
ঝাল লাগলে দুগ্ধজাত খাবার দ্রুত যাদুর মতো কাজ করে। ঠাণ্ডা এক চুমুক দুধ বা এক চামচ দই মুখের জ্বালা জুড়াতে পারে। দই মুখে দিলে দ্রুত মুখের জ্বলুনি কমবে। দুগ্ধজাত খাবারে ক্যাপসিসিন নামক এক উপাদান থাকে, যা ঝালে থাকা ক্যাপসিসিনকে ভেঙে ফেলে ও এর প্রভাব থেকে মুক্তি দেয়।
চিনি ও মধু
মুখে বেশি ঝাল লাগলে একটু চিনি বা এক চামচ মধু খেয়ে নিতে পারেন। তেলজাতীয় ক্যাপসিসিনকে চিনি বা মধু শোষণ করে নেয় এবং মুখের জ্বলা ভাব দ্রুত দূর করে।
ভাত বা রুটি
মুখে বেশি ঝাল লাগলে দ্রুত ফোলা রুটি বা একগাল ভাত খেয়ে নিতে পারেন। ক্যাপসিসিন ও মুখের মধ্যে প্রাকৃতিক বাধা দেয় শ্বেতসার। এতে কিছুটা ক্যাপসিসিন শোষিত হয়। এছাড়া ঝোলজাতীয় কোনো তরকারিতে ঝাল বেশি হলে তখন আলুর কয়েক টুকরা দিয়ে দেবেন। এতে করে তরকারিতে ঝাল অনেকটা কমবে। একইভাবে স্যুপেও ঝাল হলেও একই পদ্ধতি কাজে লাগাতে পারেন।
টক দই
মেদ ঝরানো থেকে ঝাল কমানো— টক দই । ঝাল কমাতে এই দইয়ের জুড়ি মেলা ভার। তবে সবচেয়ে ভাল হয় যদি ঝাল কোনও খাবার খেয়ে এক চামচ টক দই খেয়ে নিতে পারেন। দইয়ে থাকা উপকারী উপাদান মুখের ভিতরে একটা স্তর তৈরি করে। যা ঝালের সঙ্গে লড়াই করে।
লিকার চা
মশলাদার খাবার খেয়ে ঝালের চোটে প্রাণ ওষ্ঠাগত? সুস্থ হতে কিন্তু চুমুক দিতে পারেন চায়ের কাপে। চায়ে থাকা ট্যানিন ক্যাপাসাইসিনের সক্রিয়তা ধীরে ধীরে কমাতে থাকে। তবে এই সময়ে খুব গরম চা খাওয়ার দরকার নেই। তাতে সমস্যা হতে পারে। তার চেয়ে ঈষদুষ্ণ গরমজলে চা ফুটিয়ে নিতে পারেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের উদ্যোগে আজ রাজধানীর উত্তরা ও যাত্রাবাড়ীতে দুটি শান্তি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটায় সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে যাত্রাবাড়ী মোড়সংলগ্ন শহীদ ফারুক সড়কে শান্তি সমাবেশ শুরু হবে।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুরুল আমিন রুহুল এমপির সভাপতিত্বে সমাবেশে কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
বিকেল ৩টায় উত্তরা আজমপুর আমির কমপ্লেক্সের সামনে শুরু হবে আরেকটি শান্তি সমাবেশ। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের এ সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন।
এতে সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। সঞ্চালনা করবেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’