
দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হওয়া জি-২০ সম্মেলনের কাছে সবার প্রত্যাশা অনেক বেশি। কারণ, বৈশ্বিক জলবায়ু সংকটকে স্বীকার করে নেওয়ার বিষয়ে বৈশ্বিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৪ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর নাইরোবিতে বসা সম্মেলনে আফ্রিকার অংশীদারদের পাশে জি-২০ দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে নিশ্চয়তা দিতে স্থিরপ্রতিজ্ঞ জি-২০ সংগঠনটির রূপান্তরগত যে পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে, তা লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান দেশগুলোসহ সব অঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ ও নাজুক অর্থনীতির উন্নয়নশীল দেশগুলোর উপকারে আসবে।
এবারের জি-২০ সম্মেলনে যে বিষয়গুলো গুরুত্ব পেয়েছে, তা হলো দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করার এবং ধরিত্রীকে রক্ষা ও সংরক্ষণের দায়িত্ব কোনো একক দেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া উচিত হবে না। বিভিন্ন প্রয়োজনের মুখোমুখি হয়ে জি-২০ দেশগুলো বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তনমুখী পথ অনুসরণ করতে পারে এবং এর মধ্য দিয়ে ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্যগুলো পূরণ করা যেতে পারে। এটি মেনে নিতে হবে যে নাজুক অর্থনীতিগুলোকে সহায়তা করতে এবং তাদের জনগণকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে অধিকতর আর্থিক সম্পদ দরকার। গ্রিনহাউস গ্যাসের শূন্য মাত্রার নির্গমন অর্জন থেকে শুরু করে আর্থিক বৈষম্য কমানো পর্যন্ত আজকের তাবৎ বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সাফল্য উদীয়মান ও উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে ব্যক্তি খাতের পুঁজিপ্রবাহ বৃদ্ধির ওপর নির্ভর করবে। গত জুনে প্যারিসে এবং চলতি মাসে নাইরোবিতে এ বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে যে লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য একটি শক্তিশালী বৈশ্বিক আর্থিক উদ্দীপনা প্রয়োজন। সৌভাগ্যের বিষয়, বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য, বিশেষ করে আফ্রিকার জন্য ইতিমধ্যে এক লাখ কোটি ডলারের তহবিল গঠনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা হয়েছে। এই বছর জলবায়ু মোকাবিলায় এক লাখ কোটি ডলারের তহবিল গঠনের যে লক্ষ্য রয়েছে, সেটিও পূরণ হবে বলে জোরালো আশা রয়েছে।
এই তহবিল গঠনের লক্ষ্যপূরণের বিষয়টি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে তাদের ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে। তবে এই তহবিল ব্যবহারে আরও দক্ষ হতে হবে। কারণ বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এমডিবি) মাধ্যমে দেওয়া ঋণের প্রতিটি ডলারের বিপরীতে প্রাইভেট খাতের অন্তত এক ডলার পরিপূরক হিসেবে নিয়োজিত হওয়া উচিত। সেটি হলে আশা করা যায়, উন্নয়নশীল এবং উদীয়মান অর্থনীতিতে প্রতি বছর কমপক্ষে অতিরিক্ত আরও এক লাখ কোটি ডলার যুক্ত হতে পারবে। আশা করা হচ্ছে, আগামী ১০ বছরে এমডিবিগুলোর ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা সামগ্রিকভাবে দুই লাখ কোটি ডলারে বৃদ্ধি পাবে। এমডিবিতে এখন যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, তা বাস্তবায়িত হলে এসব প্রতিষ্ঠানের আরও মূলধনের প্রয়োজন হতে পারে। তবে অল্প আয়ের দেশগুলোর জন্য ঋণ পুনর্গঠন সমন্বয় প্রক্রিয়ার সময়ানুবর্তিতা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থনৈতিক পূর্বাভাসযোগ্যতা উন্নত করতে হবে। প্রয়োজনের সময় ঋণ স্থগিতকরণ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে হবে, যাতে ঋণসংকটে থাকা দেশগুলোর জন্য আর্থিক সুযোগ বাড়ানো সম্ভব হয়। এখানে এটা স্পষ্ট যে, বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফ-এর মিশনে জলবায়ু সংকটের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা গেলে তা এসব সংস্থার প্রকল্পগুলোকে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে সক্ষম করবে। এটি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দরিদ্র দেশগুলোকে সহায়তা করবে। এর বাইরে বাস্তুসংস্থান পরিষেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বন ও বনায়ন খাতে নতুন একটি আন্তর্জাতিক অর্থায়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এই ধরনের বিনিয়োগের ঝুঁকি প্রশমিত বা হ্রাস করাও প্রয়োজন হবে। প্রতিশ্রুতিগুলো যাতে সুনির্দিষ্ট সাফল্যে রূপান্তরিত হতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থা, দেশ এবং নাগরিক সমাজ নিয়ে একটি যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছিলেন; সম্মেলনের আগের দিন যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেটিকে উভয় দেশের শীর্ষ বৈঠক হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদির মধ্যকার বোঝাপড়া, বন্ধুত্ব নতুন নয়। এ বৈঠকে সেই সম্পর্ক আরও উষ্ণতা পেয়েছে। তিনটি এমওইউ সই হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ১৫ মিনিট রুদ্ধদ্বার আলাপ হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে এ বৈঠক খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। শুধু যে আমাদের কাছে ভারত গুরুত্বপূর্ণ এমনটি নয়; ভারতের কাছেও আমরা গুরুত্বপূর্ণ। ভূ-রাজনীতি ও ভূ-অর্থনীতি এর মূল নিয়ামক।
গত জুনের শেষে আন্তর্জাতিক সংহতির ওপর অনুষ্ঠিত একটি ঐতিহাসিক সম্মেলন প্যারিস এজেন্ডা ফর পিপল অ্যান্ড দ্য প্ল্যানেট-কে উপসংহার হিসেবে গ্রহণ করেছে। দিন কয়েক আগে কেনিয়ায় অনুষ্ঠিত প্রথম আফ্রিকা জলবায়ু সম্মেলনে নাইরোবি ঘোষণাকে পরিগ্রহণ করার মধ্য দিয়ে আফ্রিকার নেতারাও প্যারিস জলবায়ু চুক্তির গতিশীলতার প্রতিধ্বনি করেছেন। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ১৮ ও ১৯ তারিখের এসডিজি সম্মেলন, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের সামিট ফর দ্য ফিউচার এবং ২০২৫ সালে চতুর্থ ফিন্যান্সিং ফর দ্য ডেভেলপমেন্ট কনফারেন্স সামনে রেখে নয়াদিল্লিতে ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বরের জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন এই এজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রধান মাইলফলক হিসেবে কাজ করছে। প্যারিস সম্মেলন যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, তা হলো : এমন একটি বিশ্ব গড়ব, যেখানে দারিদ্র্য থাকবে না; পৃথিবী নামের গ্রহের স্বাস্থ্য হবে সুরক্ষিত এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও সংঘাতের প্রভাবসংশ্লিষ্ট চ্যালেঞ্জগুলো নাজুক হয়ে পড়া দেশগুলো আরও ভালোভাবে মোকাবিলা করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারবে। লক্ষ্যগুলো পূরণের জন্য অবশ্যই সরকারি উন্নয়ন সহায়তা, অভ্যন্তরীণ সম্পদ এবং ব্যক্তিপর্যায়ের বিনিয়োগসহ সব ধরনের অর্থনৈতিক উৎসকে কাজে লাগাতে হবে। এ ছাড়া পৃথিবীর সবাইকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। জি-২০ সম্মেলনকে অবশ্যই স্বীকার করে নিতে হবে ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক লক্ষ্য অর্জনে প্যারিস এজেন্ডা বাস্তবায়নে সবাই প্রস্তুত এবং আন্তরিক।
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সঙ্গে চীনের সীমানা নিয়ে বিরোধ আছে। ভারত চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রেখেই তাদের বিরোধগুলোর মীমাংসা করে উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে চায়। ইরান থেকে শুরু করে সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, মরিশাস, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান, ভিয়েতনামসহ ভারত মহাসাগরবর্তী সব কটি দেশই শান্তির পথে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের খাতিরে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে আঞ্চলিক সমস্যাগুলো সমাধানের পথে এগিয়ে যেতে চায়।
চীনের মধ্যস্থতায় মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক পুনর্গঠন দিয়ে পশ্চিম এশিয়ার রাজনীতি নতুন মোড় নিচ্ছে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে নিমন্ত্রণ করা হয় ১৯ মে জেদ্দায় আয়োজিত আরব লিগ সম্মেলনে। তিনি তার বক্তব্যে একটি পরস্পর নির্ভরশীল, উন্নয়নশীল ও বিদেশি হস্তক্ষেপমুক্ত আরব লিগ গঠনের আশা প্রকাশ করেন, যেখানে আর যুদ্ধ ও ধ্বংস থাকবে না। যদিও বেশ কিছু দেশ এই সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট বাশারের কারণে যোগ দেয়নি। সব আঞ্চলিক জোট শান্তি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে প্রাধান্য দিচ্ছে যুদ্ধের ওপরে। যুদ্ধরত দেশগুলো এখন শান্তির পথে হাঁটতে চাইছে। পূর্বের দেশগুলো তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য পশ্চিমের বাজারের ওপর নির্ভরশীল, আর পশ্চিমের সমাজ পূর্বের উৎপাদনের ওপর। পারস্পরিক অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতার ভিত্তিতে যে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখার কথা বলা হচ্ছে, পৃথিবীতে তা এমনিতেই ন্যায্য না। এখানে সম্পদের অসম বণ্টন থেকে শুরু করে, দারিদ্র্য, দাসত্ব, বাল্যবিবাহ, নারী, শিশু ও মাদক পাচারের মতো নানা সমস্যা এখনই আছে। ‘যুদ্ধের মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান’ নীতি ছাড়াও নানা উপায় নিশ্চয় আছে মানবজাতির এই সর্বাত্মক ধ্বংস রোধ করতে। ন্যাটো জোট যেভাবে রাশিয়া ও চীনকে বিশ্বশান্তির পথে হুমকি হিসেবে দেখছে, তাদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় হয়তো এই শঙ্কা বাস্তবে পরিণত হয়ে যাবে যদি আর কোনো পথ খোলা না হয়।
ইউক্রেন যুদ্ধে যখন রাশিয়া দুর্বল হয়ে পড়েছে, এমন সময়ে ইউক্রেন ব্যাপক সামরিক সাহায্য পেল। এদিকে চীনের বিরুদ্ধেও একই সময়ে শুরু হলো বাণিজ্যযুদ্ধ। শত্রুর শত্রুর সঙ্গে বন্ধুত্ব করার এখনই মোক্ষম সময়। তাই স্বাভাবিকভাবেই রাশিয়া ও চীন এক হয়ে কাজ করবে। দক্ষিণ চীন সমুদ্রে চীনকে প্রতিহত করতে যুক্তরাষ্ট্র ২ হাজার ৫০০ সামরিক বাহিনী নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে তাদের যুদ্ধাস্ত্রের মহড়া করেছে উত্তর কোরিয়ার সীমান্তে। ফিলিপাইন ও অস্ট্রেলিয়াও ভারী ভারী সামরিক সরঞ্জামে সজ্জিত হচ্ছে। এমন অবস্থায় চীনের বাড়ির সামনেই সংঘর্ষ শুরু হতে যাচ্ছে। তাইওয়ান সমস্যা বাষ্পায়িত হয়ে চলছে, এখন কেবলই চীনের ধৈর্য পরীক্ষার পালা। চীন যদি রাশিয়ার স্বার্থে সরাসরি যুদ্ধে না জড়ায় তাহলে রাশিয়া কি তার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে?
যে পারমাণবিক বোমা হিরোশিমাকে ক্ষতবিক্ষত করে বিশ্বকে হতবাক করেছে, বিশ্বে এমন হাজার হাজার বোমা আছে বেশ কয়েকটা দেশের কাছে। তারা একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত। বিশ্বের মানুষ ক্ষমতা-অন্ধ এই রাষ্ট্রনায়কদের স্বার্থে জিম্মি। বিশিষ্ট ভাষাবিদ ও দার্শনিক নোয়াম চমস্কি আশঙ্কা করেন, বিশ্ব হয়তো এবার আর পারমাণবিক যুদ্ধের ভয়াবহ পরিণতি থেকে রেহাই পাবে না। বিজ্ঞানের এই অসাধারণ উদ্ভাবনের যুগে যুদ্ধ কাম্য নয়। ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করে যে ধ্বংস যন্ত্র তৈরি ও বিক্রি হচ্ছে, তা দিয়ে পুরো মানবজাতিকে ভালো খাবার ও জীবন দেওয়া সম্ভব। অথচ মানুষের সম্পদ ব্যবহার হচ্ছে মানুষের সম্পদ ধ্বংসের জন্য। যুদ্ধে যে পক্ষই বিজয়ী হোক না কেন, কোনো পক্ষই ক্ষতি এড়াতে পারবে না। এক পারমাণবিক বোমায় হিরোশিমা তছনছ হয়ে গিয়েছিল। এমন অনেক বোমা এই পৃথিবীকে গুঁড়ো করে দিতে যথেষ্ট। আমরা যেন এমন ভয়াবহ পরিণতির পথে না হাঁটি এটাই বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা।
লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক
সাভারে স্কুলছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ছবি তুলে অনৈতিক কাজে বাধ্য করার চেষ্টা এবং একটি ভবনের পঞ্চম তলা থেকে ফেলে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে যুব মহিলা লীগের এক নেত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার নাম মেহনাজ মিশু। গণমাধ্যমে গত ১৯ আগস্ট ‘নগ্নছবি ধারণ করে যুব মহিলা লীগের নেত্রী গ্রেপ্তার’ এই শিরোনামে খবরটি ছাপা হয়। পরদিন দুপুরে সাভার উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন শাহনাজ গার্ডেন এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা মেহনাজ মিশু ও তার কথিত স্বামী আতিকুর রহমান আতিকের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় মামলা করেছেন।
মেহনাজ মিশু ঢাকা জেলা উত্তর যুব মহিলা লীগের ১ নম্বর যুগ্ম সম্পাদক। তবে তিনি নিজেকে ঢাকা জেলা যুব মহিলা লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এজাহার ও ভুক্তভোগীর স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে ২৪ মে কৌশলে ওই ছাত্রীকে তার বাসায় নিয়ে যান মেহনাজ। পরে গভীর রাতে ছাত্রীকে ছবি তুলতে দিতে বাধ্য করার চেষ্টা করেন। এ সময় তার কথিত স্বামী আতিক ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এতে বাধা দিলে তাকে সিগারেটের ছ্যাঁকা ও নেশাজাতীয় দ্রব্য খাওয়ানো হয়। পরে বাড়ির পঞ্চম তলার বেলকনি থেকে নিচে ফেলে দেন মিশু ও আতিক।
স্থানীয় বাসিন্দারা গুরুতর অবস্থায় ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। ওই হাসপাতালে গিয়ে অভিযুক্ত মিশু এ ঘটনা কাউকে না জানাতে ছাত্রীকে হুমকি দেন। এ ছাড়া ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিল বলে সবাইকে জানাতে বলেন। ১৫ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর কিছুটা সুস্থ হলে ওই ছাত্রীর পরিবারের সদস্যরা তাকে বাসায় নিয়ে যান।
ওই ছাত্রীর মামা জানান, তার ভাগ্নি সাভারের একটি স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। মা-বাবার বিচ্ছেদের পর সে তার ফুফুর সঙ্গে সাভারে মিশুদের বাসায় ভাড়া থাকত। ফুফু গ্রামে ও ফুফাতো বোন চাকরির সুবাদে অন্যত্র চলে যান। তখন একাই ওই বাসায় থাকত ওই ছাত্রী। সেই সুযোগ তাকে দিয়ে অনৈতিক কাজ করানোর চেষ্টা করেন মিশু। ২৪ জুলাই রাতে দফায় দফায় মারধর করেন তাকে। এ তথ্য পুলিশকে জানিয়ে দেবে বললে ওই ছাত্রীকে পঞ্চম তলা থেকে ফেলে হত্যার চেষ্টা করা হয়। যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডেইজি সারওয়ার সাংবাদিকদের বলেন, ‘মেহনাজ মিশুর বিরুদ্ধে আগেও কিছু অভিযোগ এসেছে। আমার সই নকল করে ঢাকা জেলা যুব মহিলা লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিতেন বলেও জেনেছি।’ সাভার মডেল থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, মেহনাজ মিশুকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনার তো কোনো শেষ নেই। কদিন আগে কক্সবাজারের এক দামি হোটেলে আওয়ামী লীগের এক নেতা নিহত হয়েছেন। এখন জানা যাচ্ছে, যৌন নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে এক কিশোর তাকে হত্যা করেছে। এসব ঘটনা কাউকে যে হতবাক করবে সে অবস্থা এখন আর নেই। কোনটা ছেড়ে কোনটার কথা বলা যাবে। খবর তো পাওয়া যাচ্ছে অহরহ। ‘স্বামীকে বেঁধে রেখে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ।’ (টাঙ্গাইলের সখীপুরে) ‘শ্যালিকাকে ধর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে দুই শিশুকে হত্যা’ (বরগুনায়)। ওই ঘটনার শিকার মহিলা মারা যাননি, তবে আহত হয়েছেন। মহিলা একা আছেন জেনে অনুপস্থিত স্বামীর ভ্রাতা ওই রাতের বেলায় তাকে আক্রমণ করেছিল। হাতের কাছে একটি দা থাকায় সেটি দিয়ে মহিলা আত্মরক্ষায় সচেষ্ট হন। প্রতিফল ওই হত্যাকাণ্ড। আরেক মহিলা গোসল করছিলেন নিজের বসতবাড়ির গোসলখানায়। তারই এক আত্মীয়, বাড়িতে যার স্বাভাবিক আনাগোনা, সে মোবাইল ফোনে গোপনে গোসলের দৃশ্য ধারণ করে এবং সেই দৃশ্য ছড়িয়ে দেবে বলে ভয় দেখিয়ে মহিলাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেছে। নিজেকে বাঁচাতে মহিলা শেষ পর্যন্ত তার স্বামীকে জানিয়েছেন এবং তাতে আত্মীয়টি গ্রেপ্তার হয়েছে। এসবের চেয়েও ভয়ংকর খবর পাওয়া যায় বৈকি। যেমন, ‘ঈদ সালামি দেওয়ার কথা বলে শিশুকে ধর্ষণের পরে হত্যা’ (রাজশাহীতে)। মুন্সীগঞ্জ থেকে পাওয়া এক খবরে প্রকাশ যে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের এক নেতাকে জেলে পাঠানো হয়েছে, অভিযোগ, তিনি একটি মেয়েকে ধর্ষণ করেছেন। মেয়েটি হাসপাতালে গিয়েছিল অসুস্থ মাকে দেখতে। হাসপাতালের সিঁড়িতেই ঘটে তার ওই ভাগ্যবিপর্যয়।
এই খবরটিকেও এখন আর কেউ চাঞ্চল্যকর মনে করবেন না যে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার ঘটনার জের ধরে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি আবাসিক ছাত্রাবাসের ছাত্রদের মধ্যে মধ্যরাত্রে ভয়ংকর এক সংঘর্ষ ঘটেছে, যাতে কয়েকজন আহত হয়েছে, সাতজনের অবস্থা গুরুতর হওয়াতে তাদের পাঠানো হয়েছে হাসপাতালে। আবাসিক ছাত্রাবাস দুটির একটির নাম বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল, অপরটির নাম শহীদ সালাম-বরকত হল। নামে কি-ই বা আসে যায়।
ক্ষমতার দ্বন্দ্বটা সকল মানবিক সম্পর্কের ভেতরেই থাকে; কোথাও কম, কোথাও বেশি। নর-নারীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে তো বিশেষ ভাবেই দেখা দেয়। নর-নারীর সম্পর্কগুলোর ভেতর প্রধান হচ্ছে বিবাহ। বিবাহের ভেতরও ধর্ষণের ব্যাপারটা ঘটে; অনেক স্ত্রীই অভিযোগ করেন যে, তারা স্বামী কর্তৃক ধর্ষিত হয়েছেন। নীরবেই ঘটনা ঘটে অধিকাংশ ক্ষেত্রে; সরবে যে করা হয় না এমন নয়। গার্হস্থ্য সহিংসতা বিশে^র সর্বত্রই সত্য। তবে সমাজের অগ্রগতির সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনাও বাড়ছে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও দেখা যাচ্ছে বৈবাহিক সম্পর্ক অক্ষুণœ রাখতে পারছেন না। কানাডার প্রেসিডেন্ট জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে তার স্ত্রী সোফি গ্রেগেয়ারের বিবাহবিচ্ছেদের খবর বিশে^র অনেক মানুষেরই ইতিমধ্যে জানা হয়ে গেছে। তাদের বিয়ে হয়েছিল প্রেমের ভেতর দিয়ে। আঠারো বছর একসঙ্গে ঘরসংসার করেছেন। তিনটি সন্তান রয়েছে তাদের। বিয়ের পরে স্বামী ট্রুডো কানাডার প্রধানমন্ত্রী হন। ফলে স্ত্রীর মানমর্যাদা ক্ষমতা সবকিছুই বৃদ্ধি পায়। তবু কেন এই বিচ্ছেদ? পরকীয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। বন্ধুত্বে ঘাটতি পড়েছে বলেও দুজনের কেউই বলেননি। বরং তারা দুজনেই বন্ধুর মতো থাকবেন বলে জানিয়েছেন। সে জন্য সাবেক স্ত্রী ঠিক করেছেন বসবাস করবেন স্বামীগৃহের কাছেই একটি বাড়িতে। তবে বিচ্ছেদের কারণের একটা আভাস পাওয়া গেছে স্ত্রীর দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে। সেখানে তিনি ‘মুক্তির’ কথা বলেছিলেন। ওই যে তার বিভিন্ন ভূমিকা, স্ত্রীর, জননীর, ঘরসংসারের এসব খোপ খোপ ভূমিকা তার কাছে বন্ধন মনে হচ্ছিল। তিনি চেয়েছিলেন তার নিজস্বতাকে রক্ষা করতে। সে জন্যই বিবাহের বন্ধন থেকে মুক্তি পাওয়ার এই আয়োজন। বন্ধুত্ব থাকবে, সন্তানদের যতœও নেবেন, তবে বন্ধনটা থাকবে না। বিবাহ ও বন্ধুত্ব যে এক বস্তু নয় এবং বিবাহে যে বন্ধুত্ব খর্ব হয় এটি তাত্ত্বিকভাবে সত্য, জীবনেও সত্য এবং তারই প্রমাণ এই বিচ্ছেদ। বিবাহে দ্বন্দ্ব ও প্রতিযোগিতা অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। একপক্ষ মেনে নেয়; সাধারণত স্ত্রীদেরকেই মেনে নিতে হয়, কারণ সমাজ পিতৃতান্ত্রিক।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
‘ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয়’ এই প্রবাদই সাধারণ বাঙালির ঐতিহাসিক বঞ্চনার কথা বলে দেয়, একই সঙ্গে ছাপোষা বাঙালির বাড়তি নিরাপত্তা খোঁজার যৌক্তিকতা তৈরি করে। হয়তো একটু বেশিই করে এবং কখনো কখনো বাড়াবাড়ি রকমের হয় বলেই কোনো ধরনের কার্যকারণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ছাড়াই এই ছাপোষা বাঙালির উচ্চাকাক্সক্ষা আকাশসম। যার বেশির ভাগই ব্যক্তিগত ধন-সম্পদ, ভোগবিলাস ও ক্ষমতার চর্চা সম্পর্কিত। সেটাও আবার তথাকথিত ‘শর্ট-কার্ট’বা সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে। সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রবণতাটা এত বেশি দৃষ্টিকটুভাবে ধরা দেয় যে, এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ২০২২-এর জানুয়ারিতে শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের একটি সাক্ষাৎকার সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক মাধ্যমে বেশ ঘোরাফেরা করে। যেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘দেশে কোনো বিজ্ঞানী নেই, গবেষক নেই, দার্শনিক নেই। যেদিকে তাকাবেন শুধুই প্রশাসক।’ মূলত ভারতের চন্দ্র বিষয়ের পর যেন এই আলোচনাই নতুন করে হালে পানি পেয়েছে। মূলত সেই আলোচনা থেকেই যে ভারত পারলেও আমরা কেন পারছি না?
সমাজবিজ্ঞানী বলেন, ঔপনিবেশিক ব্যবস্থা আমাদের মানসিক দাসত্ব শিখিয়েছে এবং পাশাপাশি আমাদের মনে সামন্ত হওয়ার যে প্রবল আকাক্সক্ষা তৈরি করেছে সেই ভূত আমাদের ঘাড় থেকে আজও নামেনি বরং বিস্তৃত হয়েছে। আর এই কায়দাকানুনের একটি প্রকাশ সেই প্রচলিত প্রবাদ, ‘লেখাপড়া করে যে, গাড়ি-ঘোড়া চড়ে সে’। কে দার্শনিক হবে, কে বা বিজ্ঞানী হবে যেখানে দার্শনিক, বিজ্ঞানী, শিল্পী, কবি হয়ে গাড়ি ও ঘোড়ায় চড়া যায় না। শিক্ষার উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এখনো এই সংকীর্ণ চিন্তার মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। তাও আগে সমাজে ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার মতো পেশাগত শিক্ষা ও দক্ষতা অর্জনের প্রতি এক ধরনের পক্ষপাতিত্ব ছিল তবে এখন আর ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়াররাও নিজ পেশায় থাকতে চান না, পেশা বিসর্জন দিয়ে তারাও প্রশাসক হতে চান। আর এসব বিষয়ের খবর আমরা গণমাধ্যমে দেখতে পাই কিছু দিন পর পর, কোন এক দরিদ্র পরিবারের এক বা একাধিক সদস্য বিসিএস ক্যাডার হতে পেরেছে। একইভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখি না যখন কেউ কেউ কবি, শিল্পী, দার্শনিক, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, সমাজকর্মী, পরিবেশকর্মী বা এ রকম সৃষ্টিশীল পেশায় যুক্ত হন। প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রশাসক হওয়া মানেই প্রভূত ক্ষমতা, বাড়তি অনেক কিছুর প্রলোভন । অনেকের কাছে এটাই মর্ত্য থেকে স্বর্গ আরোহণের সিঁড়ি, দেবতা হিসেবে না হলেও অন্তত রাক্ষস-খোক্ষস হিসেবে। একবার প্রশাসক হয়ে যাওয়ার পর জনগণের সঙ্গে সম্পর্কটা হয়ে যায় রাজা ও প্রজার। তাই শিক্ষার লক্ষ্য গিয়ে ঠেকেছে প্রশাসক হওয়ায় ও তা না পারলেও নিদেনপক্ষে যেকোনো একটি সরকারি চাকরি।
আর এসবের ফলাফল হচ্ছে জ্ঞান ও বিজ্ঞানে, চিন্তাচেতনায় ও উদ্ভাবনে ধারাবাহিক পিছিয়ে পড়া। যার প্রতিফলন হিসেবে দেখা যায় সবক্ষেত্রে পশ্চাৎপদতাকে আঁকড়ে ধরে শিল্প, সাহিত্য ও বিজ্ঞান চর্চাকে নিরুৎসাহিত করা। আসলে শিক্ষার উদ্দেশ্য শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করে না, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের একটি অনুষঙ্গ মাত্র। শিক্ষার মূলধারার উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে সমাজ ও রাষ্ট্র। আর এই সমাজ ও রাষ্ট্রকে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করে দার্শনিক ও সৃষ্টিশীল রাজনীতিকরা। সমাজে যদি সৃষ্টিশীল দার্শনিকদের গুরুত্ব কমে যায়, তারা যদি মুক্তচিন্তার চর্চা করতে না পারে তখন শিক্ষার উদ্দেশ্য হয়ে যায় যেন শুধু একটি চাকরি করা, জীবন চালানো আর প্রশাসক হলে তো কথাই নেই, এ যেন মর্ত্য থেকে স্বর্গে আরোহণ।
আসলে হঠাৎ প্রশাসক হয়ে যাওয়া যতটা সম্ভব সৃষ্টিশীল দার্শনিক হওয়া ততটা না। দার্শনিকরা যেমন ভবিষ্যৎ দেখতে পায় তেমনি নিজ গুণে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবান হয়। আমাদের জাতীয় নীতিনির্ধারণের সঙ্গে যারা যুক্ত তারা প্রশাসনিক ক্ষমতাবান কিন্তু অনেক সময় প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি ও ধ্যানধারণার ঊর্ধ্বে উঠতে পারে না। চাঁদে যাওয়া তো দূরের কথা, কোনো মর্ত্যরে মানুষ যে চাঁদে যেতে পারে সেই ধারণাকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখার লোকের অভাব নেই আমাদের সমাজে। ফলে ধারাবাহিক উন্নতির লক্ষ্যে শিক্ষা ব্যবস্থার যে নীতি ও আদর্শ নির্ধারণ করা দরকার তা করতে যেমন ব্যর্থ হচ্ছে, আবার নীতিনির্ধারণে কতকটা প্রতিফলিত হলেও তার বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। জ্ঞান ও বিজ্ঞানের উন্নতি শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব না, তার জন্য সমাজের প্রচলিত ক্ষমতা কাঠামোতে পরিবর্তন আনা দরকার। অন্তত প্রশাসককেন্দ্রিক সমাজ পরিচালনার ধারণায় পরিবর্তন আনতে হবে, সামাজিক প্রথাগত ধ্যানধারণায় প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ অব্যাহত রাখতে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির ধারণকারীদের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। যার হয়তো কিছুটা প্রতিফলন থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, কিন্তু সমাজই হবে শিক্ষার আসল পরিসর।
আকাশ ও পাতাল নিয়ে আমাদের ভাবার সময় কই? আকাশ-পাতাল নিয়ে বেশির ভাগ চিন্তাচেতনাই যেন ভূত-প্রেত, রাক্ষস-খোক্ষসদের নিয়ে গল্প-গাথা, কখনোবা দেবতাদের নিয়ে কেন্দ্রীভূত থাকে। তাই আকাশ-পাতালে নিজেদের ভূমিকা নিয়ে ভাবতে পারি না, এ যেন নিজেদের মর্ত্যরে মানুষ মনে করে আকাশ-পাতালের ভাবনাকে দেবতাদের কাছে সমর্পণ করে নিশ্চিন্ত হওয়ার চেষ্টা করা। যদিও সময় বদলেছে, মর্ত্যরে অনেকেই এখন আকাশ ভ্রমণ করছে, আকাশে রকেট ও রোবট পাঠাচ্ছে এবং পাতালেও যাচ্ছে। মানুষ হলেও তারা কতটুকু দেবতাসম বা দেবতাদের গুণসম্পন্ন এই প্রশ্নের কোনো সহজ উত্তর নেই। সম্ভবত এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে, বলা বাহুল্য, এসব বিতর্কে যতটানা যুক্তিতর্ক নির্ভর তার থেকে অনেক অনেক গুণ প্রচলিত বিশ্বাসকেন্দ্রিক। কখনো কখনো এই দুটোর মিশেলও থাকে, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিজের গণ্ডিবন্ধ বিশ্বাসকে অতিক্রম করতে পারে না। তাই আমাদের দৃষ্টি না আকাশে, না পাতালে; বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বড্ড বেশি সমান্তরাল, কিছুটা প্রচলিত কথায় ‘ছাপোষা বাঙালি’র মতো। আর আমাদের মধ্যে কে ছাপোষা, কে নতুন সৃষ্টির নেশায় মত্ত সেই বিতর্কের মধ্যে যাওয়াটাই হয়তো অসম্ভব, এমনও হতে পারে, ‘লোম বাছতে কম্বল উজাড়’। তাই অন্য অনেক কিছুর মতো ভাবনাচিন্তার ক্ষেত্রেও এক ধরনের নিরাপদ অবস্থান অবলম্বন করাটাই যেন শ্রেয়। আবার এটাই হয়তো ছাপোষা বাঙালির প্রধান বৈশিষ্ট্য। সেখানে টিকে থাকতে পারাটাই মুখ্য এবং যার অনেকগুলোই আবার একেবারে জীবনধারণের মৌলিক চাহিদাগুলোর সঙ্গে যুক্ত।
শিক্ষার উদ্দেশ্য শুধু গাড়ি ও ঘোড়ায় চরার জন্য, ঔপনিবেশিক সেই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে এখন সময় এসেছে শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলার। জ্ঞান ও বিজ্ঞানকে আহ্বান করা, প্রাচীনপন্থিতাকে মোকাবিলা করে প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন সৃষ্টির জয়গান গাওয়া। তাহলেই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারবে এবং দেশকে বিশ্বের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সহযোগিতা করবে। ইতিহাস বলে পুরনোকে আঁকড়ে ধরে নতুন বিশে^ নেতৃত্বের আসনে আসা সম্ভব না। তবে পুরনোকে ছুড়ে ফেলে দিয়েও হয়তো না, পুরনোর সঙ্গেই ধারাবাহিক নতুন ধারণা ও ব্যবস্থাপনার সমন্বয়ে একটি সৃষ্টিশীল পরিবেশ তৈরি সম্ভব। এই সৃষ্টিশীল বাংলাদেশ থেকে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে অধিকন্তু অনেকেই আছেন, যারা পুরনোকে খড়-কুটোর মতো আঁকড়ে ধরে জাতিকে পেছনের দিকে ঠেলে দিতে চায়। বাংলাদেশের গত কয়েক দশকের অভিজ্ঞতায় এদের প্রভাব যে ধীরে ধীরে বেড়েই চলছে তা বলাই বাহুল্য। আর এর মাধ্যমে ওই গোষ্ঠী শুধু কীভাবে নিজেদের গোষ্ঠীগত প্রভাব প্রতিপত্তিকে বাড়ানো যায়, সেই চেষ্টাতেই ব্যস্ত। এই অবস্থায় অন্যের চাঁদে যাওয়া চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার নেই। আর যদি কিছু করতেই হয় তাহলে এই পশ্চাৎপদতার কারণগুলো নির্মোহভাবে অনুধাবন করতে হবে এবং সেই কারণগুলো দূর কারোর জন্য সমাজের প্রত্যেকটা গোষ্ঠীর ভূমিকা পালন করতে হবে, তবে এর সহায়ক পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে সরকারকে।
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
১৯০৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী। পিতার কর্মস্থল শ্রীহট্ট (সিলেট) জেলার করিমগঞ্জে তিনি জন্মগ্রহণ করেন, কিন্তু পৈতৃক নিবাস হবিগঞ্জের উত্তরসুর গ্রামে। বাবার নাম সৈয়দ সিকান্দর আলী। বিশ্বভারতীতে তিনি বহু ভাষা শেখার সুযোগ পান। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯২৬ সালে প্রবেশিকা পাস করে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে আইএ শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯২৯ সালে ‘হুমবল্ট’ বৃত্তি নিয়ে জার্মানি গিয়ে তিনি বার্লিন ও বন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। সেখানে তিনি দর্শন বিভাগে তুলনামূলক ধর্মশাস্ত্রে গবেষণা করেন এবং ডি. ফিল ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৩৪-৩৫ সালে মিসরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম ধর্মশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। ১৯২৭ সালে কাবুলের কৃষিবিজ্ঞান কলেজে প্রভাষকরূপে তার চাকরিজীবন শুরু হয়। ১৯৩৫ সালে তিনি বরোদা কলেজে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক হন। তিনি বগুড়া আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনসের সচিব ও অল ইন্ডিয়া রেডিওর কর্মকর্তা হন। ১৯৬১ সালে তিনি বিশ্বভারতীর ইসলামের ইতিহাস বিভাগে রিডার হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৬৫ সালে অবসর নেন। তিনি সত্যপীর, রায়পিথোরা, ওমর খৈয়াম, টেকচাঁদ, প্রিয়দর্শী ইত্যাদি ছদ্মনামে আনন্দবাজার, দেশ, সত্যযুগ, শনিবারের চিঠি, বসুমতী পত্রিকায় কলাম লিখতেন। তার মোট ৩০টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ‘দেশে-বিদেশে’, ‘শবনম’ তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। সামগ্রিকভাবে তিনি পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে সমান জনপ্রিয় ও সমাদৃত লেখক ছিলেন। ১৯৭৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কথায় বলে লঘুপাপে গুরুদণ্ড। কিন্তু পুলিশের বেলায় দেখা যায় উল্টো গুরুতর অপরাধেও দেওয়া হয় লঘুদণ্ড। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপরাধ করেও শাস্তি পেতে হয় না। আবার অনেক ক্ষেত্রে বিভাগীয় শাস্তির নামে যেসব শাস্তি দেওয়া হয়, বিশেষজ্ঞদের মতে তা আসলে কোনো ধরনের শাস্তিই নয়। যেমন প্রত্যাহার, সাময়িক বরখাস্ত। এ ছাড়া পুলিশের কোনো সদস্য অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে বিচারের বিধান থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কার্যকর হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে ফৌজদারি অপরাধের বিচারও করা হয় বিভাগীয় আইনে। এক্ষেত্রে অভিযুক্তদের ‘বিভাগীয় শাস্তির আওতায়’ আনার কথা বলে আড়াল করার অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, পুলিশের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের তদন্ত এবং বিচারও করে পুলিশ। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে।
বিভিন্ন সময়ে নির্যাতনের ঘটনায় আলোচনায় উঠে আসা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন-অর-রশীদের সর্বশেষ ঘটনাটিও একই পরিণতির দিকে যাচ্ছে কি না, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গত শনিবার রাতে তিনি ‘ব্যক্তিগত’ ঘটনার জের ধরে পুলিশি ক্ষমতা ব্যবহার করে অধস্তনদের মাধ্যমে তিন ছাত্রলীগ নেতাকে শাহবাগ থানায় ধরে নিয়ে বর্বর নির্যাতন চালিয়েছেন। এক্ষেত্রে কেবল ক্ষমতার অপব্যবহার নয়, তিনি ফৌজদারি অপরাধ করেছেন। অন্যদিকে যে ‘ব্যক্তিগত’ ঘটনার জের ধরে এই কা-, তাতে করে এডিসি হারুনের নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে বাধ্য।
দেশ রূপান্তরের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ওই ঘটনায় রাষ্ট্রপতির আদেশে সোমবার এডিসি হারুনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি গুরুপাপে লঘুদণ্ডেরই নামান্তর। যেখানে নৈতিক স্খলন এবং আইন লঙ্ঘনের অপরাধে চাকরিচ্যুত করার পাশাপাশি ফৌজদারি অপরাধের দায়ে গ্রেপ্তার হওয়ার কথা সেখানে সাময়িক বরখাস্ত কোনো শাস্তি হতে পারে না। এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নতুন নয়। রমনা এলাকায় তিনি রীতিমতো ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নির্যাতন চালিয়ে তিনি সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন ধারাবাহিকভাবে। গত মার্চ মাসে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকালে সাংবাদিকদের লাঠিপেটার ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। রাজনৈতিক কর্মসূচি ছাড়াও যৌক্তিক নানান দাবিতে বিভিন্ন সময়ে রমনা এলাকায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, লেখক, বুদ্ধিজীবীরা তার নির্মম হামলার শিকার হয়েছেন। এমনকি পুলিশ সদস্যরাও তার নির্যাতন থেকে রক্ষা পাননি। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নির্যাতনের বেলায় ক্ষমতাসীনরা এডিসি হারুনকে প্রশ্রয় দিতে দিতে এমন পর্যায়ে নিয়ে এসেছে যে, সর্বশেষ নিজ সহযোগী ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরাও তার হাত থেকে রেহাই পেল না।
ডিএমপি কমিশনার আশ্বস্ত করেছেন, বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনার সর্বোচ্চ আইনানুগ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। প্রশ্ন হচ্ছে পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত এবং শাস্তি নিশ্চিত করবে কে? এ ছাড়া সহকর্মীর অপরাধকে লঘু করার জন্য এক ধরনের পেশাগত ঐক্যও তৈরি হতে দেখা যায়। অন্যদিকে, বরখাস্ত অবস্থায় অভিযুক্ত কর্মকর্তা যে তদন্ত প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ২০২১ সালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তে একটি স্বাধীন পুলিশ তদন্ত কমিশন গঠন করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না; তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিল হাইকোর্ট বিভাগ। বিষয়টি সেখানেই আটকে আছে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নত বিশ্বে পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এলে আলাদা কমিশন করে তার বিচার করা হয়। এতে পুলিশ সদস্যদের অপরাধ অনেকাংশে কমবে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আমরা মনে করি এডিসি হারুনের ঘটনাটির বিচার বিভাগীয় তদন্ত দরকার। আমরা মনে করি আইনের শাসনের স্বার্থেই কেবল সর্বশেষ ঘটনাটিই নয়, তার বিরুদ্ধে সামগ্রিক অনুসন্ধান ও তদন্ত হওয়া উচিত। এর সঙ্গে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি জড়িত। কোনো ব্যক্তির অপরাধ-অনিয়মের দায় গোটা বাহিনী কেন নেবে?
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
আইন মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি বলছে, আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে। সরকারের এমন নেতিবাচক সিদ্ধান্তের পর এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি দেয়নি দলটি। তবে এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি এক দফার আন্দোলনের সঙ্গে যোগ হতে পারে বলে জানা গেছে।
৫৩ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও দলীয় নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গুরুতর। বিদেশে নেওয়া ছাড়া তার উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়। সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসনকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ চেয়ে তার ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। এতে মতামত দিতে আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় আইন মন্ত্রণালয় এতে মতামত দেয়। এ বিষয়ে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেছেন, তার সাময়িক মুক্তির আদেশটা বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) কারাগারে নেওয়া হলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া বাসায় চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশে যেতে পারবেন না এমন দুটো শর্ত সাপেক্ষে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে দন্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। দরখাস্তটা নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে আটবার দন্ড স্থগিত করা হয়েছে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার কোনো সুযোগ আইনে থাকে না। আমরা ৪০১ ধারার উপধারা ১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ ব্যাখ্যা করে মতামত পাঠিয়েছি। আমাদের মতামত হলো, ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে, সেটা অতীত এবং মীমাংসিত। এটা আর খোলার কোনো উপায় নেই।’
এক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে (খালেদা জিয়া) সাজা স্থগিত রেখে যে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, সেটা বাতিল করে তারপর পুনরায় বিবেচনা করার সুযোগ থাকলে সেটা করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই উপমহাদেশে ৪০১ ধারার ক্ষমতা যখন প্রয়োগ করে, তখন এটি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না বলে সিদ্ধান্তের নজির আছে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন যে আদেশটা আছে, সেটা যদি বাতিল করা হয়, বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) যদি আবার কারাগারে নেওয়া হয়, তাহলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু এ অবস্থায় আদালতে যেতে পারবেন না।’ খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের বিষয়টি বাতিল করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা অমানবিক হবে, বাতিল করব না।’
আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এক বার্তায় বলেন, ‘আজকের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, দেশে আইনের শাসন নেই। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক ভয়ংকর তামাশা করা হচ্ছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, নির্বাহী বিভাগ চাইলেই কাউকে মুক্তি দিতে পারে।’
খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় বিএনপি কী এখন ভাবছে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে।’
আর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর নীলনকশার অংশ। মানবতাবিরোধী ও সরকারের বর্বর ইচ্ছা পূরণের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।’
দলটির নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদন আইনগতভাবে বিবেচনা না করে, রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে। ফলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করতে না পারলে বিএনপিপ্রধানের মুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমেই এই ইস্যুর সুরাহা করতে চায় দলটি।
কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেখানে বলা হয়েছে, তাকে “দেশে চিকিৎসা নিতে হবে”, তার বদলে “দেশে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন” বলাই যথেষ্ট। কিন্তু দেশে চিকিৎসা গ্রহণের শর্তারোপ করা হলে তা যে চিকিৎসার বিবেচনায় না করে রাজনীতির বিবেচনায় করা হবে, সেটা বোঝার মতো বুদ্ধি সাধারণ মানুষের আছে।’
অসুস্থতার কারণে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের মার্চে করোনার সময় টানা দুই বছর কারাভোগের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরেছিলেন খালেদা জিয়া। পরে এ পর্যন্ত তার মুক্তির মেয়াদ আটবার বাড়িয়েছে সরকার।
এরই মধ্যে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তাকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ দিতে পরিবারের পক্ষে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এ বিষয়ে আইনি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদনটি পাঠায়।
বিএনপিপ্রধানকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছিল ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি সরকার ইতিবাচকভাবে দেখতে পারে’। কিন্তু সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ‘বিদেশে যাওয়ার আবেদন করতে হলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরত গিয়ে করতে হবে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের পর সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় এবারও ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না। গত শনিবার এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এ শঙ্কাই প্রকাশ করেছিলেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা আছে, যেকোনো মূল্যে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকার মরিয়া। সে কারণে হয়তো খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি ঝুঁলিয়ে রাখতে চাইছে এমনটাই মনে করছে সরকারবিরোধীরা। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দিলেই সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলেও বিরোধী নেতাদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। তবে শর্ত দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দল যাতে সম্মত না হয়, সে কথাই নেতাদের বলে রেখেছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির হাইকমান্ড মনে করছেন, এ অবস্থায় চলমান এক দফার আন্দোলনে খালেদা জিয়ার মুক্তি বিষয়টি থাকলেও সেটাকে আরও জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে; যাতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নেয়।
জানা গেছে, এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে দলটি। আজ সোমবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক রয়েছে। সূত্র বলছে, জোটগত ছাড়াও দলীয়ভাবেও কর্মসূচি আসতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক চিকিৎসক জানান, হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তার কেবিনে এক্স-রে মেশিন নেওয়া হয়েছিল গতকাল ভোরে। শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে না এলে সিসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ ছিল। দুপুরে তার ইসিজি ও ইকো ডায়াগ্রাম করানো হয়েছে। ফুসফুসের পানি অপসারণের জন্য তার ডান পাশে যে ক্যাথেটার লাগানো ছিল, সেটা আপাতত খুলে ফেলা হয়েছে।
লিভার জটিলতা ছাড়াও ৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ফুসফুস, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। গত ৯ আগস্ট ফিরোজায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে দলীয় মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) সেটআপে কেবিনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছে।
জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘ওনার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সে জন্য তাকে দ্রুত বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে পাঠানো দরকার।’
হতাশায় শেষ খালেদার অপেক্ষা
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
সাড়ে ৩ বছরে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স
দেশের বিদেশি মুদ্রা আয়ের অন্যতম হাতিয়ার প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের ধস নেমেছে। সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশে অবস্থানকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধপথে ও ব্যাংকের মাধ্যমে মাত্র ১৩৪ কোটি ডলারের বিদেশি মুদ্রার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। গত সাড়ে তিন বছরে এটি সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স। ৪১ মাস আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে এর চেয়ে কম ১০৯ কোটি ডলার সমপরিমাণের রেমিট্যান্স এসেছিল। রেমিট্যান্স-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দামের ব্যবধান বেশি হলে হুন্ডিতে লেনদেন বেড়ে যায়। আর যখন হুন্ডির চাহিদা বাড়ে তখন রেমিট্যান্স কমে যায়। গত মাসে ব্যাংকের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দাম ৬ থেকে ৭ টাকা বেশি ছিল। তাই বেশি লাভের আশায় বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন প্রবাসীরা।
ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজার ছাড়াল
এ বছর অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে ডেঙ্গু। গতকাল রবিবার ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজারের কোটা ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) সারা দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬ জনে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৮৮২ জন।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
অকাজের ৩৭০০ কোটির সেতু
সেতু হয়। কিন্তু সড়ক হয় না। সেতু করার জন্য নানান প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু সেসব সেতু করেই দায়সারা বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়। ভোগান্তি সাধারণ মানুষের। আবার যতগুলো সেতু করার কথা ততগুলো না করেও প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ করার প্রতিবেদনও দেওয়া হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সারা দেশের গ্রামের রাস্তাগুলোতে সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পে। প্রকল্পের এসব অনিয়ম উঠে এসেছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবি আ.লীগ নেতার
আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার। গত শনিবার রাতে তার ফেসবুকে এ দাবি জানিয়ে স্ট্যাটাস দেন তিনি।
মুহূর্তেই স্ট্যাটাসটি ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিএনপির অসংখ্য নেতা, কর্মী-সমর্থক তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রশংসা করেন। অন্যদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নিন্দা জানিয়ে দলীয় সব পদ থেকে তার বহিষ্কারের দাবি জানান।
আবদুল মোতালেব হাওলাদার তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘রাজনৈতিক কারণে আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দেওয়া হউক।’
স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন অধরাই
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
ফুটপাত থেকে মদের বার সবখানে চাঁদাবাজি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের কমিটি পার করেছে পাঁচ বছরের বেশি সময়। মেয়াদোত্তীর্ণ এ কমিটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। কিছু নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার তথ্য রয়েছে। সর্বশেষ মদের বার ভাঙচুর ও লুট করে আবারও আলোচনায় এ কমিটির নেতাকর্মীরা।
নতুন কমিটি না হওয়ায় নেতারা বেপরোয়া আচরণের পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছেন বলে মনে করেন সাধারণ কর্মীরা। তারা বলেন, সংগঠনের কর্মকাণ্ডও স্থবির হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান তারা।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মো. রিপন মিয়াকে সভাপতি ও মাহমুদুল হক জুয়েল মোড়লকে সাধারণ সম্পাদক করে তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের জন্য আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে গত বছর ১২ জুন ৩২১ জনের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য।
অপেক্ষা আর মাত্র ৩ দিনের। তারপরই শুরু হয়ে যাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ডের চার বছরের রাজত্ব আরও চার বছর টিকিয়ে রাখার আর বাকিদের সেই মুকুট কেড়ে নেওয়ার লড়াই শুরু হবে গতবারের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই দিয়েই।
শাহরুখ খানকে দিয়ে প্রোমো আর রণবীর সিংকে দিয়ে থিম সং, আইসিসি জানান দিয়েছে ক্রিকেটে বলিউডি আবেগের মিশেল ভালোই থাকবে। কিং খানের ‘জাওয়ান’ কাঁপাচ্ছে পর্দা, কাটতি বাড়ছে বক্স অফিসে; বিশ্বকাপে আইসিসির পকেট ভরবে তো?
প্রস্তুতি বলছে, ভরবে। উইকেটে হবে রান উৎসব, লড়াই হবে ধুন্ধুমার। তাতেই ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ হবে এক ব্লকবাস্টার মেগা হিট।
মাস তিনেক আগে, বিশ্বকাপের মূলপর্বের ম্যাচগুলো যে ১০ ভেন্যুতে আয়োজন করা হবে সেই ভেন্যুগুলোর কিউরেটরদের সঙ্গে বসেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান কিউরেটর। সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপের একটাই মন্ত্র, রান চাই।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে, ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে ৩ ওয়ানডের সিরিজ খেলেছে সেই ম্যাচগুলো যদিও বিশ্বকাপের ভেন্যুতে হয়নি তবে সেই সব ম্যাচেও রানের বন্যা বয়েছে।
প্রথম দুটো ওয়ানডেতে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার করা ২৭৬ রান অনায়াসে তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছে ভারত। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ঠেঙিয়ে তুলেছেন ৩৯৯ রান। তিন নম্বর ম্যাচে আবার অস্ট্রেলিয়া করেছে ৩৫২ রান, যা তাড়া করে ভারতও গিয়েছিল ২৮৬ অবধি।
উদ্বোধনী ম্যাচ হবে গুজরাতের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। এখানে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় গত ১ ফেব্রুয়ারি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। ম্যাচে শুভমান গিল করেন সেঞ্চুরি, ভারত করে ৪ উইকেটে ২৩৪ রান আর জবাবে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ৬৬ রানে।
বোঝাই যাচ্ছে, উইকেটের ধরন বুঝে ব্যাট করতে পারলে ৫০ ওভারে এখানে রানবন্যা হবে। বিশ্বকাপে ভারত-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। দুই দল এখানে মুখোমুখি হয়েছে বহুবার, পোশাকের রঙ কখনো রঙিন কিংবা কখনো সাদা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ কমেনি। এই মাঠে অস্ট্রেলিয়া ২৬৯ রান করে ভারতকে ২১ রানে হারিয়েছে সবশেষ ম্যাচে।
আইপিএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ঘরের মাঠে সবশেষ মৌসুমে ধোনির ‘ইয়েলো আর্মি’ ৮ ম্যাচ খেলে ২০০ রানের ওপরে করেছে দুইবার, একবার জিতেছে অন্যবার হেরেছে। তবে দুই ইনিংসেই ২০০’র বেশি রান হয়েছে দুটো ম্যাচেই। অর্থাৎ চাইলে চেন্নাইকেও ব্যাটিং স্বর্গে পরিণত করা সম্ভব।
বিশ্বকাপের আগে দারুণ ছন্দে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হারার পর টানা তিন ওয়ানডে জিতে সিরিজ তো নিশ্চিত করেছেই, টানা তিন ম্যাচে ৩০০’র ওপর রান করেছে। চতুর্থ ওয়ানডেতে তো ৪০০ পার করেছে প্রোটিয়ারা। ব্যাটিং উইকেটে তারাও যে কোনো প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। হেনরিক ক্লাসেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৮৩ বলে খেলেছেন ১৭৪ রানের ইনিংস। বিধ্বংসী রূপে ফিরছেন ডেভিড মিলারও।
প্রোটিয়ারা প্রথম ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে। সেখানে অবশ্য সবশেষ হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ম্যাচেও খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে তারা অলআউট হয়েছিল মাত্র ৯৯ রানে। দিল্লির মাঠটা হয়তো খানিকটা স্পিনারদের দিকেই ঝুঁকবে, তবে অন্য মাঠগুলোতে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের রান উৎসবে মেতে উঠতে দেখার সম্ভাবনা জোরালো। তাই অনেক সাবেক ক্রিকেটারই প্রোটিয়াদের দেখছেন শেষ চারে।
বিশ্বকাপের আগে ক্লাসেন ছাড়াও ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস খেলেছেন ১৮২ রানের ইনিংস, দারুণ ছন্দে ইংল্যান্ডের ডাভিড মালানও। তবে সেরা ছন্দে নিঃসন্দেহে শুভমান গিল। সবশেষ ৫ ইনিংসে দুটো শতরান আর একটা হাফসেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেলও আছেন দারুণ ছন্দে। দুটো হাফসেঞ্চুরি আর একটা সেঞ্চুরি সবশেষ ৫ ইনিংসে। হায়দ্রাবাদে বিশ্বকাপের অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের ৩৪৫ রান কিউইরা তাড়া করেছে ৩৮ বল হাতে রেখে।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করেন, এই বারের বিশ্বকাপে রানবন্যায় বোলারদের জন্য কাজটা হবে কঠিন। দেশ রূপান্তরকে আশরাফুল বলেন, ‘আমাদের পেসাররা গত এক দেড় বছর ধরে খুবই ভালো করছে। তবে যেহেতু ভারতের মাটিতে খেলা, আমরা দেখেছি যে সাড়ে ৩০০’র বেশি রান হচ্ছে প্রতিটা ম্যাচে। কেউ যদি ভালো না করে, তাকে মনে রাখতে হবে যে টুর্নামেন্টে পরের ম্যাচে ফিরে আসতে হবে। একজনের দিন খারাপ যেতেই পারে, কোনো ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান উঠেই যেতে পারে। ৯টা ম্যাচের ভেতর ৪-৫টা ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান হতে পারে। তাই বোলারদের ফিরে আসার মানসিকতা থাকতে হবে।’
বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমও বলেছেন যে দেড় মাসের আসরে প্রস্তুত থাকতে হবে যে কোনো কিছুর জন্যই, ‘দেড় মাসের আসর, ৯টা ম্যাচ এই সময়ে খেলতে হবে বা তারও বেশি। অনেক উত্থান-পতন হবে। যে কোনো কিছুর জন্যই তৈরি থাকতে হবে।’
রান উৎসবের বিশ্বকাপ যে হতে যাচ্ছে, তার সব রসদই মজুদ। মাঠগুলোকে করা হয়েছে ব্যাটিং স্বর্গ, বিশ্বকাপে আসার আগে সেরা সেরা ব্যাটসম্যানরাও আছেন ছন্দে। শুধু প্রশ্ন এটাই, রান উৎসবের এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে রান করবেন কে? সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাটিংয়ের ছবিটা যে মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়।
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ অনুযায়ী, দেশে ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২২ হাজার ১১৯। এ তালিকায় রয়েছে যারা রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, মাজার, ফুটপাত, সিঁড়ি, ওভারব্রিজের নিচে, লঞ্চ টার্মিনাল, ফেরিঘাট, মার্কেটের বারান্দায় দিন কাটান। আর বস্তিতে বসবাস করছে ১৮ লাখ ৪৮৬ জন। তারা মূলত শহর ও উপশহর এলাকায় টিনের ঘর, সেমিপাকা ঘর বা ঘিঞ্জি পাকা ঘরে বাস করে। তবে বস্তিবাসী কারা সে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১৬ সালে সরকার আবাসন নীতিমালা করেছে। আবাসন উন্নয়ন তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। আবাসন সংকট নিরসন করতে হলে সরকারকে আবাসন তহবিল করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বস্তিবাসী, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত কারা তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। না হলে বোঝা যাবে না কত মানুষ বস্তিতে থাকে।’
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে আবাসন সংকট কাটছে না। স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে আবাসন।’
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে ৯ লাখ গৃহহীন মানুষকে চিহ্নিত করে। ইতিমধ্যে আট লাখ মানুষের গৃহের ব্যবস্থা করেছে; প্রায় ৪০ লাখ মানুষের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বাকিদের জন্যও শেখ হাসিনা ব্যবস্থা করবেন। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্যও আবাসনের ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা তার সৈনিক হিসেবে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
জানা যায়, বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার সবার জন্য আবাসন। অঙ্গীকার পূরণে সরকার নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সারা দেশে ৩০টি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, নোয়াখালী, যশোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, শরীয়তপুর, নড়াইল, খুলনা, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব প্রকল্পে ৬ হাজার ৪৩২টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হয়েছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২৭টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পে ৫ হাজার ৯৩০টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হবে। শেরপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, হবিগঞ্জ, সিলেট, ঝিনাইদহ, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে ১৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৩৫টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় রাজউক পূর্বাচল, ঝিলমিল, উত্তরা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় আবাসন প্রকল্পে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ফ্ল্যাটগুলো উচ্চমূল্যের কারণে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। পূর্বাচল, ঝিলমিল ও উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প গ্রহণ করছে সরকার। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনেও বিভিন্ন সংস্থা আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন শহরে বসবাসরত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সম্পদশালী ব্যক্তিরা। যাদের অনেক ফ্ল্যাট আছে তারা আরও ফ্ল্যাট কিনছেন। কিন্তু বাস্তুহারা, দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত সরকারি এসব আবাসনের সুবিধা পাচ্ছেন না। অল্প দামে জমি অধিগ্রহণ করে সরকার আবাসন প্রকল্প তৈরি করে যাদের নামে বরাদ্দ দিচ্ছে তারা রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে জমির মালিক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত।
জাতিসংঘ ১৯৮৫ সালে বিশ্ব বসতি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশে^ অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার এ দিবসটি পালিত হয়।
সুরের মূর্চ্ছনায় মোহাচ্ছন্ন শ্রোতারা হারিয়ে যাবেন। তারপর নৃত্যের তালে মেতে উঠবে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি ক্রিকেট স্টেডিয়াম। আগামী বুধবার (৪ অক্টোবর) বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। আয়োজনকে বর্ণাঢ্য করে তুলতে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
এবারের বিশ্বকাপ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কী থাকছে, এ নিয়ে আয়োজক ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) এখনো চুপ। দর্শকদের চমকে দিতে এমন গোপনীয়তার চেষ্টা অবশ্য প্রায় সব আয়োজকেরাই করে থাকেন।
তবে ভারতীয় গণমাধ্যম পিটিসি পাঞ্জাবের সূত্রে এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইনসাইডস্পোর্ট।
খবরে বলা হয়, বিশ্বকাপের উদ্বোধনী বিভিন্ন পরিবেশনায় থাকবেন বেশ কয়েকজন বলিউড অভিনেতা–অভিনেত্রী ও গায়ক–গায়িকা। এর মধ্যে গান পরিবেশনে থাকবেন কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী আশা ভোসলে, গায়ক ও সংগীত পরিচালক শঙ্কর মহাদেভান, কণ্ঠশিল্পী শ্রেয়া ঘোষাল ও অরিজিত সিং।
নাচের পরিবেশনায় দেখা যাবে রণবীর সিং ও তামান্না ভাটিয়াকে। রণবীর বিশ্বকাপের অফিশিয়াল থিম সংয়েও অংশ নিয়েছিলেন।
নাচ–গানের পাশাপাশি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হবে ভারতের ইতিহাস–ঐতিহ্য ও ক্রিকেট উন্মাদনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খেলোয়াড়দের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ১০ দলের অধিনায়ক। এ ছাড়া আয়োজক বিসিসিআই ও আইসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তো থাকবেনই।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।