
সময় সবকিছু বদলে দেয়। অতীতের চাকচিক্য, কর্মচাঞ্চল্য এবং জনপদ একসময় হারিয়ে যায়। কেবলমাত্র ‘সময়’ই চিরতরুণ, যে কেবলি নানা রঙে, ছন্দে বয়ে চলছে সুদীর্ঘকাল। বাকি সব পরিবর্তিত হয়। কিন্তু সময়ের হিসাবে, মাত্র কয়েক দশকের মধ্যেই যেন নিজের চাকচিক্য হারিয়ে, রিক্ততার পথে হাঁটছে মতিঝিল।
১৬১০ সালে সুবেদার ইসলাম খান চিশতি ঢাকায় বাংলার রাজধানী স্থানান্তর করেন। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের নামানুসারে ঢাকার নামকরণ হয়, জাহাঙ্গীরনগর। সপ্তদশ শতাব্দীতে পুরান ঢাকা মুঘল সাম্রাজ্যের সুবা বাংলা (বাংলা প্রদেশ) এর প্রাদেশিক রাজধানী ছিল। বিশ্বব্যাপী মসলিন বাণিজ্যের একটি কেন্দ্র ছিল ঢাকা এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এখানে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে আসতেন। যদিও আধুনিক ঢাকা শহরের বিকাশ হয় ঊনবিংশ শতাব্দীতে। এই সময় নবাবরা ঢাকা শাসন করতেন। কলকাতার পরেই ঢাকা বাংলা প্রেসিডেন্সির দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী হয়ে ওঠে। তখন সদরঘাট, ওয়াইজঘাট, সোয়ারীঘাট, আহসান মঞ্জিল এবং আজকের পুরান ঢাকা ছিল শহরের কেন্দ্রবিন্দু।
সময়ের আবর্তনে মতিঝিল হয়ে ওঠে শহরের কেন্দ্রবিন্দু। এখানেই রয়েছে শাপলা চত্বর এবং বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইনসের ‘বলাকা ভাস্কর্য’। এ ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন, সোনালী ব্যাংক ভবন, জনতা ব্যাংক ভবন, অগ্রণী ব্যাংক ভবন, সেনা কল্যাণ ভবন, ওয়াপদা ভবন, ইত্তেফাক ভবন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, রাজউক ভবনসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এখানেই। একসময় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের ব্যস্ততায় ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠে এই মতিঝিল। কিন্তু বর্তমানে তার সেই রূপ নেই। বেসরকারি অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান, চলে আসছে মতিঝিল থেকে। এখন পছন্দের এলাকা হয়ে উঠেছে বনানী, গুলশান, উত্তরা। একইসঙ্গে একসময়ের ‘মিডিয়াপাড়া’ নামে খ্যাত এই মতিঝিল থেকে নাই হয়ে গেছে দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক জনকণ্ঠ। বন্ধ হয়ে গেছে বাংলার বাণী, দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ টাইমস। মিডিয়াপাড়া হিসেবে এখন খ্যাত হয়ে উঠছে বাংলা মোটর, কারওয়ান বাজার, তেজগাঁও। ব্যাংকপাড়াখ্যাত মতিঝিল এখন মৃতপ্রায়। এ বিষয়ে শনিবার দেশ রূপান্তরে ‘সবাইকে রাঙিয়ে রিক্ত মতিঝিল’ শিরোনামে দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
মূলত রাজউকের পরিকল্পনাহীনতার কারণে বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলো শহরের কারওয়ান বাজার, বনানী, গুলশান, উত্তরা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। পরিকল্পনা থাকলে এই প্রতিষ্ঠানগুলোকেই একটি নির্দিষ্ট জায়গায় স্থানান্তর করা যেত। একটি নতুন জায়গা পরিচিতি পেত ‘বাণিজ্যিক কেন্দ্র’ হিসেবে। অথচ তা হয়নি। মূলত যেসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিস এখনো মতিঝিলে রয়েছে, সেগুলো যেন নামকাওয়াস্তে। কিন্তু আসল কাজ করতে হলে মানুষকে ছুটতে হয় সেই নতুন অফিসে। যা রয়েছে মতিঝিলের বাইরে।
রাজউক সূত্র বলছে, ষাটের দশক থেকেই মতিঝিলের পুরোপুরি বাণিজ্যিক বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। বিশে^র উন্নত দেশগুলোর বাণিজ্যিক অঞ্চলে শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান থাকে। আর কাছাকাছি এলাকায় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা থাকে। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে সেটা ছিল না। অভিজাত মানের হোটেল পূর্বাণী গড়ে উঠলেও আশপাশে সময় কাটানোর মতো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লোকজন গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় থাকেন। মতিঝিলের সৌন্দর্য নিশ্চিত করতে ও আধুনিকায়নে যেসব বিষয়ে দৃষ্টি রাখা দরকার ছিল রাজউক ও সিটি করপোরেশন সেটা করেনি। রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মুখপাত্র মো. আশরাফুল ইসলাম জানাচ্ছেন- মতিঝিল এলাকা যেহেতু ইতিমধ্যে তার আভিজাত্য হারিয়ে ফেলেছে, এজন্য মতিঝিলের জমির শ্রেণিকে মিশ্র ব্যবহার হিসেবে ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি নিয়েছে রাজউক। সংশোধিত ড্যাপে সে বিষয়ে নির্দেশনা রাখা হয়েছে। পৃথিবীর নগর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৫০, ৬০ বা ১০০ বছর অন্তর সেসব ঢেলে সাজানো হয়। সেটা বিবেচনায় নিয়েই মতিঝিল এলাকাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। এখানে আবাসিকের বৈশিষ্ট্য দিতে হবে; কনডোমিনিয়াম গড়ে তুলতে হবে। ইতিমধ্যে রাজউক বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ১৬ একর জায়গা নিয়ে একটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে লাইব্রেরি, ওয়াকওয়ে থাকবে। বসার ব্যবস্থা থাকবে। মতিঝিল এলাকায় ঝিল ছিল, ওই ঝিলকে প্রাধান্য দিয়ে পার্কটি তৈরি করা হবে। বহুমুখী ব্যবহার ছাড়া মতিঝিলকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
মতিঝিলে আবার প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনতে চাইলে সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। রাজউকের পরিকল্পনায় মতিঝিল আবার নগরীর ব্যস্ত এলাকা হিসেবে গড়ে উঠুক পূর্ণতায়, এমনই প্রত্যাশা।
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-এর সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান। মূল্যস্ফীতির মধ্যে দেশের বাজার ব্যবস্থাপনা ও প্রথমবারের মতো সরকার কর্তৃক কয়েকটি পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়াসহ নানা বিষয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন এই অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সম্পাদকীয় বিভাগের সাঈদ জুবেরী
দেশ রূপান্তর : প্রথমবারের মতো ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম বেঁধে দিল সরকার। এর আগে সরকার নির্ধারিত মূল্যতালিকা টানিয়ে রাখার নির্দেশসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ নিলেও মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা সম্ভব হয়নি।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান : সরকারের এই উদ্যোগের মধ্যে হয়তো একটা ভালো কিছু করার আকাক্সক্ষা থাকতে পারে। কিন্তু এটার বাস্তবায়ন কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। কারণ রিটেইল বা খুচরা পর্যায়ে যদি এটা বাস্তবায়ন করতে হয় তাহলে সেটা খুবই কঠিন। দেশে লাখ লাখ রিটেইল পয়েন্ট আছে। সেখানে এটা কার্যকর করা খুবই মুশকিল। আমার মনে হয় আমদানি এবং উৎপাদন স্তর থেকে খুচরা পর্যায় হয়ে ভোক্তা পর্যন্ত আসতে আসতে দেখা যাচ্ছে বাজারকে প্রভাবিত করার এক ধরনের মেকানিজম দাঁড়িয়ে গেছে। সেখানে এক রকম একচেটিয়াকরণ হচ্ছে। আসলে ওই জায়গাগুলোতে বেশি নজর দিতে হবে। রিটেইল লেভেলে নজর দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের মতো সেই সক্ষমতা সরকারের নেই। মানে প্রত্যেক পাড়ায় পাড়ায়, আনাচে কানাচে বিভিন্ন পয়েন্টে খুচরা পর্যায়ে বেচাকেনা হয়, সেটা কি নজরদারি করা সম্ভব? প্রথমত, হোলসেল এবং আমদানি স্তর থেকে রিটেইল লেভেল পর্যন্ত বাজারকে অযৌক্তিকভাবে প্রভাবান্বিত করা হচ্ছে কিনা? দ্বিতীয়ত, সমস্যা তো আসলে একদিনে সৃষ্টি হয়নি, সমাধানও এক সিদ্ধান্তেই হবে না। আমাদের আসলে উৎপাদন কত, সরবরাহ কত, ঘাটতি কত, আমদানি কখন করতে হবে, কখন আমদানিকে উৎসাহিত করতে হবে, স্টক কত রাখতে হবেÑ এ বিষয়গুলোতে গবেষণাভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপার আছে। এই জায়গাতেই আমাদের আসল সমস্যা রয়েছে বলে আমার মনে হয়।
দেশ রূপান্তর : বাজার ব্যবস্থাপনায় এই দাম বেঁধে দেওয়ায় কি প্রভাব পড়বে?
ড. মোস্তাফিজুর রহমান : আমাদের বাজার ব্যবস্থাপনা তো দুর্বল এবং আমাদের ভোক্তা অধিকার বলি আর কম্পিটিশন কমিশন বলি, খুবই রিয়েক্টিভ। কিছু একটা হলো, তখন তারা যায় অভিযানে। যেমন ভোজ্যতেল বা পেঁয়াজ এসব ক্ষেত্রে দেখা গেল, তারপর পোলট্রি ফার্ম নিয়ে দেখলাম কম্পিটিশন কমিশন অনুসন্ধানে নামল। যখন কোনো একটা সমস্যা হাজির হয় তখন এসব তৎপরতা দেখা যায়। কিন্তু এগুলোকে একটা সার্বক্ষণিক তথ্য-উপাত্তভিত্তিক নজরদারির মধ্যে রাখার ক্ষেত্রে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা রয়েছে। মূল সমস্যা মনে হয়, যখন কিছু একটা হয় তখন আমরা স্বল্পমেয়াদে সমাধান খোঁজার চেষ্টা করি। কিন্তু বাজার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে তো আসলে ধারাবাহিক এবং সার্বক্ষণিক নজরদারির একটা ব্যাপার আছে। সেখানে যেটা বললাম আর কী, তথ্য-উপাত্তভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সেই অনুযায়ী আমদানিটা কখন করতে হবে, স্টক কখন ছাড়তে হবে এসব বিবেচনা নিতে সার্বক্ষণিক লেগে থাকার একটা ব্যাপার রয়েছে। কিন্তু যখন কিছু হয় বা ঘটে যায় তখন তার রিয়েক্ট করে আমরা একটা সিদ্ধান্ত চাপানোর চেষ্টা করি। এটা ফলপ্রসূ হবে না।
দেশ রূপান্তর : খাদ্য মূল্যস্ফীতি সাড়ে ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বিবিএসের হিসাবে, যা গত ১১ বছর ৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। কিন্তু মূল্যস্ফীতি আরও বেশি বলে অনেকে বলছেন। আপনার পর্যবেক্ষণে বর্তমানে মূল্যস্ফীতি কী পর্যায়ে আছে?
ড. মোস্তাফিজুর রহমান : আমরা তো এ ধরনের তথ্য-উপাত্তের জন্য বিবিএসের ওপরই নির্ভর করি। কারণ এত বিস্তৃতভাবে আর কেউ করেও না। সুতরাং এটাকেই আমরা মেনে নিতে পারি। আর এটা তো কোনো ভালো চিত্র নয়, যেখানে বৈশ্বিক পর্যায়ে সব দেশেই মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাচ্ছে, সেখানে আমাদের দেশেই এটা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে মনে রাখতে হবে, খাদ্য মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার মান ও ক্রয়ক্ষমতার সরাসরি একটা সংযোগ আছে। সুতরাং এই সাড়ে ১২ শতাংশ মূল্যস্ফীতি যদি আমরা ধরেও নেই, তাহলে সেটা একটা নৈরাশ্যজনক চিত্র। একই সঙ্গে এই সাড়ে ১২ শতাংশ যে মূল্যস্ফীতি, এটা তো হলো গড় হিসাব। কিন্তু যারা নিম্ন আয়ের মানুষ, তাদের জন্য যে মূল্যসূচক সেখানে কিন্তু অন্য চিত্র দেখা যাবে। যেমন চালের দামের গুরুত্বটা অনেক বেশি। নিম্ন আয়ের মানুষ যেগুলো ভোগ করেন, সেসব পণ্য যদি আমরা দেখি তাহলে কিন্তু মূল্যস্ফীতির হিসাব আরও বাড়বে। বিবিএসের যে প্রাইস ইনডেক্স বা ভোক্তা মূল্যসূচক সেখানে চালের গুরুত্ব হলো ২০ শতাংশ। কিন্তু নিম্ন আয়ের মানুষের যে কনজাম্পশন, ভোগ্যপণ্যের যে বাস্কেট সেখানে চালের গুরুত্ব এই ২০ শতাংশ থেকে অনেক বেশি।
দেশ রূপান্তর : খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশি বেড়েছে গ্রামীণ এলাকায়। সেখানে এর পরিমাণ ১২.৭১ শতাংশ। গত জুলাইতে এটি ছিল ৯.৮২ শতাংশ। এর কারণ কি আপনি যেটা বললেন নিম্ন আয়?
ড. মোস্তাফিজুর রহমান : হ্যাঁ। কিন্তু আমি বলছি নিম্ন আয়ের মানুষ, সেটা তিনি শহরের হোক বা গ্রামের। বিবিএসের সূচকের যে কাঠামো, যেমন চালের কথা বললাম, ২০ শতাংশ গুরুত্ব। কিন্তু নিম্ন আয়ের মানুষের ভোগ্যপণ্যের যে ব্যয়, সেখানে তার মোট ব্যয়ে চালের গুরুত্ব ৪০ থেকে ৩৫ শতাংশ। সেভাবে যদি আমি হিসাব করি তাহলে যে মূল্যস্ফীতির গড় সেটা কিন্তু নিম্ন আয়ের মানুষের ক্ষেত্রে ভিন্ন হবে। অনেক ক্ষেত্রেই সেটা আরও অনেক বেশি হবে। তবে এই প্রেক্ষিতে তৃতীয়ত যেটা আমি বলতে চাচ্ছি, আমরা যদি দেখি রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই কিন্তু মূল্যবৃদ্ধি পাওয়া শুরু করে। সুতরাং মূল্যের স্তরটা কিন্তু ওপরে উঠে গেছে এবং এর ওপর ভিত্তি করে আমরা এখন মূল্যস্ফীতি হিসাব করছি। অর্থনীতিতে যেটাকে বলে বেজ ইফেক্ট। তো সেই বেজ ইফেক্টটা কিন্তু থেকে যাবে। আগামী সাত-আট মাসে মূল্যস্ফীতিটা যদি সাড়ে ১২ থেকে কমে আট শতাংশে নেমে আসে তাহলে আমরা হয়তো বলতে পারব যে, মূল্যস্ফীতি কমেছে, সেটা ওপরের একটা জায়গা থেকে হবে। ধরেন ১০০ টাকারটা ১১২ টাকা হয়েছে। তারপর মূল্যস্ফীতি যদি কমে আট শতাংশ হয় তাহলেও ওই ১১২ টাকারটা হবে তখন ১১৭ টাকা। তার মানে কি ১০০ টাকারটা হলো ১১৭ টাকা। তো এখন যদি আমি বলি যে মূল্যস্ফীতি কমেছে কিন্তু সেটা তো স্বস্তিকর না, কারণ ইতিমধ্যে মূল্য বেশ উপরের স্তরে আছে এবং সেখানে হয়তো মূল্য বাড়ার হারটা কমেছে। দাম কমছে না, বৃদ্ধির হারটা কমছে।
দেশ রূপান্তর : চাল ও চিনি ছাড়া বিশ্ববাজারে প্রায় সব খাদ্যপণ্যের দামই কমেছে। তবে উল্টোচিত্র বাংলাদেশে। কেন?
ড. মোস্তাফিজুর রহমান : এটা একটা বড় প্রশ্ন। আমাদের আশপাশের দেশগুলোতেও কমেছে। এখানে শ্রীলঙ্কার কথা বাদ দিলেও, মানে সেখানে তো ৬০ শতাংশের ওপরে মূল্যস্ফীতি চলে গিয়েছিল, পরে তারা সেটা কমিয়ে নিয়ে এসেছে। আমরা বিশ্ববাজারে দেখি, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরুর পর জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত মূল্য বাড়ার একটা প্রবণতা ছিল। তারপর আমরা চিনি, ফুয়েলের মতো দু-একটি পণ্য ছাড়া বাকি সবগুলোরই মূল্য কমেছে। মানে আমাদের আমদানিকৃত পণ্যগুলোর দাম কমার কথা। কিন্তু সেটা হয়নি। আমাদের স্থানীয় উৎপাদিত পণ্যের ক্ষেত্রেও তাই। দেখা যাচ্ছে আমাদের উৎপাদিত এবং আমদানিকৃত উভয় পণ্যের ক্ষেত্রেই মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতাটি রয়েই গেছে। এর পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে বলে মনে হয়। এর মধ্যে কয়েকটা আছে সরকারের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে। আর কয়েকটা রয়েছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যেগুলো নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি একটি কারণ হতে পারে। কিন্তু এর মধ্যে রয়েছে বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা। এটা একটা বড় কারণ। উৎপাদন এবং আমদানি স্তর থেকে ভোক্তা স্তরে যেতে যে হাতবদলটা হয় সেখানে আমরা দেখছি যে, কিছু মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে এই বাজারটা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। সেখানে সরকারের কিছু কিছু সংস্থা মাঝে মাঝে চেষ্টা করছে। যেমন ভোক্তা অধিকারের কথা প্রথমেই বলেছি।
দেশ রূপান্তর : ভোক্তা অধিকার এখন ডাব বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে, খুচরা বিক্রেতার ভ্যানে রেইড দিচ্ছে। এর আগে দেখলাম ভোজ্যতেল বা পেঁয়াজের ক্ষেত্রে, তারপর ডিম..., এর পেছনে বাজার ঠিক রাখার চেয়ে কি ট্রেন্ডের দিকে ছোটার প্রবণতা রয়েছে?
ড. মোস্তাফিজুর রহমান : বিভিন্ন সময়ে তারা রেইড দিচ্ছে, সিচুয়েশন তৈরি হলে অভিযান চালাচ্ছে। এখন অভিযান চালিয়ে তো আর বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিক করা যাবে না। রেইড বা অভিযান এক জিনিস আর বাজার ব্যবস্থাপনা আরেক জিনিস। এ দুটো একদমই আলাদা। একটা আইনি প্রয়োগ থাকতে হবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাজারে নজরদারি, খবরদারি করবে সেটা একটা। কিন্তু আমাদের কম্পিটিশন কমিশন বা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ধারাবাহিকভাবে এগুলোকে পর্যবেক্ষণে রাখা এবং কোনটা যৌক্তিক, কোনটা অযৌক্তিক সেটা বের করে সে অনুযায়ী সরকারের বিভিন্ন নীতিমালা তৈরিতে সহায়তা করার যে জায়গাটা থাকার কথা সেটা কিন্তু আমরা দেখছি না। আগেই বলেছি আমাদের তথ্য-উপাত্তের বড় ধরনের অভাব আছে। আর কম্পিটিশন কমিশন যে আছে, সেটা তো আমাদের আগে নজরেই আসেনি। সম্প্রতি দেখলাম যে ডিমের বাজার নিয়ে তারা একটু চাঞ্চল্য তৈরি করেছে। এসব কমিশন, সংস্থার কাজ কিন্তু অভিযান করা না। তাদের কাজ হচ্ছে এখানে মূল্য কতটা যৌক্তিক আছে সেটা দেখা এবং অযৌক্তিক মূল্য থাকলে, সিন্ডিকেট থাকলে অবশ্যই সেখানে তারা হস্তক্ষেপ করবে। এখানে আরেকটা বিষয় হলো, কোনটা অযৌক্তিক অভিযান আর কোনটা যুক্তিসংগত সেটা বোঝা যায় না। কারণ, তথ্য-উপাত্ত আমরা পাই না।
দেশ রূপান্তর : সিন্ডিকেটের বিষয়টা তো ওপেনসিক্রেট। সর্বোচ্চ মহলে এ নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছেন। কিন্তু সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে আসছে না, এটা কি রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে?
ড. মোস্তাফিজুর রহমান : আমার মনে হয়, এখানে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা দায়ী। অবশ্যই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক উদ্যোগ ও উদ্যমের অভাব রয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বগুলো পালন করার প্রায়োগিক সক্ষমতাও দুর্বল। সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা বড় একটা কারণ। এই বাজার ব্যবস্থাপনার মধ্যে কিন্তু তথ্য-উপাত্ত, গবেষণা করে সমস্যা ও সমাধান বের করার বিষয় রয়েছে। ভারতে অ্যাগ্রিকালচারাল কমোডিটির জন্য পারমানেন্ট প্রাইস কমিশন আছে, কারণ খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়টি খুবই সেনসিটিভ, সরবরাহ থাকলেই হবে না, ক্রয়ক্ষমতারও ব্যাপার আছে।
দেশ রূপান্তর : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান : আপনাকে ও দেশ রূপান্তরকেও অনেক ধন্যবাদ।
এমন এক সময় ছিল, যখন ‘সোনালি আঁশ’ খ্যাত পাটকে ঘিরে ছিল রমরমা ব্যবসাবাণিজ্য। দেদার পাট রপ্তানি হতো বিদেশে। এক কথায় বলা যায়, দেশের অর্থনীতির মূল শক্তি ছিল পাট। জন্মসূত্রে আমার বেড়ে ওঠা ঐতিহ্যবাহী চিলমারী বন্দরে। খরস্রোতা নদ ব্রহ্মপুত্রের তীরঘেঁষে গড়ে ওঠা চিলমারী বন্দর। কী এক অভূতপূর্ব কর্মচাঞ্চল্য চিলমারী বন্দরের। ছোট-বড় পাট ব্যবসায়ীদের সুবিশাল পাটের গুদাম। পাট যাচাই-বাছাই করে পাটকলে বেল করে দেশের নানা প্রান্তে পাঠানো হতো। ভোর হলেই সপ্তাহের দুদিন বিভিন্ন এলাকার পাটচাষিরা পাট নিয়ে হাটে আসতেন। বেচাকেনা হতো। তারপর পাট চলে যেত গুদামে। ‘মাড়োয়ারি’ নামে খ্যাত ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ছিল এই বন্দরে। তখন পাকা রাস্তা জেলা শহরেও চোখে পড়ত না। একমাত্র ভরসা, গরুর গাড়িতে পাট আনা-নেওয়া। এরপর পাটের রাজধানী নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাটভর্তি বড় বড় পানশী নৌকা চলে যেত, চিলমারী বন্দরের ঘাট ছেড়ে। আজ সবই স্মৃতি। ঐতিহ্যবাহী চিলমারী বন্দরের পাটের সেই ভরা যৌবন এখন আর চোখে পড়ে না।
পাটের সেই সোনালি দিন এখন অতীত। পাটচাষিরা এখন পাটের চাষ করলেও তেমন উৎসাহ পায় না। কারণ কোনো বছর পাটের দাম ভালো পেলেও কোনো বছর পাট চাষের খরচও ওঠে না। ফলে কমে গেছে পাট চাষ। আর পাটকল তো দেশে তেমন একটা নেই। এশিয়ার সর্ববৃহৎ পাটকল আদমজিকে চারদলীয় জোট সরকার, বিদেশিদের প্রিসক্রিপশনে বন্ধ করে দিয়েছিল। যেখানে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। শেষ পর্যন্ত চোখের পানিতে বিদায় নিতে হয়েছে চিরচেনা আদমজি থেকে। কথা ছিল, আদমজি বন্ধ করে সেখানে আরও বেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থানের জোগান দেওয়া হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, সে ওয়াদা বাস্তবায়িত হয়নি। এরপর বিশেষ প্রয়োজনে ছোট ছোট পাটকল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেগুলোর অবস্থাও খুব একটা ভালো নেই। ফলে পাটচাষিরা গত ক’বছর ধরে পাটের ভালো দাম পেলেও, এ বছর পাটের উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছেন না। যদিও পাট বিক্রি করে পাটচাষিদের লোকসান গুনতে হচ্ছে না। তবে লাভের মুখও দেখছে না। অর্থাৎ পাট চাষের উৎসাহ একসময় পাটচাষিরা হারিয়ে ফেলবে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে পাটশিল্পের দুর্দিন আসবে, যা অনেকটা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
এমনিতেই পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি অনেক কমে গেছে। এর ওপর আবার প্রতিবেশী দেশ ভারত পাট ও পাটজাত পণ্যের উচ্চ হারে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করেছে। ফলে ভারতে পাটজাত পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করায় ভারতের বাজারে প্রতিযোগিতায় টেকা আর সম্ভব হচ্ছে না। কারণ নিজেদের পণ্যের বাজার নিশ্চিত করতে যে কোনো দেশ, বিদেশি পণ্যের বাজার নিরুৎসাহিত করবে এটাই স্বাভাবিক। এতে শঙ্কার কিছু নেই, কারণ বিশ্বের সেরা মানের পাট বাংলাদেশেই উৎপন্ন হয়। বিশ্ববাজারের চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ কাঁচাপাট এবং প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ পাটজাত পণ্য বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়। এখনো পাট খাতের বৈ ক রপ্তানি আয়ের ৭২ শতাংশ বাংলাদেশের দখলে। এমনকি একক কৃষিপণ্য হিসেবে বর্তমানে জাতীয় রপ্তানি আয়ের পাট খাতের বিশেষ অবদান রয়েছে। পাট অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জিডিপিতে এ খাতের অবদান ২ দশমিক ৮ শতাংশ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ লাখ ২১ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়। পাট অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বছরে দেশে ৮৫-৯০ লাখ বেল কাঁচা পাট উৎপাদিত হয়। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ১১২ কোটি ৭৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার আয় করেছে। এর মধ্যে শুধু কাঁচা পাট রপ্তানিতে আয় হয়েছে ২১ কোটি ৬১ লাখ ৮০ হাজার ডলার। আর এখন পাট থেকে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হচ্ছে।
সূত্রমতে, পাট ও পাটজাত বর্জ্যরে সেলুলোজ থেকে পরিবেশবান্ধব বিশেষ সোনালি ব্যাগ তৈরি হচ্ছে। পাটের তৈরি জিনস (ডেনিম) সারা বিশ্বের ফ্যাশনসচেতন মানুষের নজর কেড়েছে। এখন পাট দিয়ে জিও টেক্সটাইল, পাটখড়ি থেকে ছাপাখানার বিশেষ কালি (চারকোল) এবং পাট পাতা থেকে উৎপাদিত ভেষজ জাতীয় পণ্য বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে। শুধু তাই নয়, পাট দিয়ে তৈরি হচ্ছে শাড়ি, লুঙ্গি, সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবিসহ নানা কাপড়ের পণ্য। এ ছাড়াও ব্যাগ, খেলনা, শোপিস, ওয়ালমেট, জুতা, স্যান্ডেল, দরজা, পর্দার কাপড়সহ নানা গয়না। সেসব বিক্রি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করাও সম্ভব। অথচ অপার সম্ভাবনার এই খাতকে আমরা তেমন নজর দিচ্ছি না। ফলে হেলায়-অবহেলায় অপার সম্ভাবনার পাট ও পাটজাত পণ্যের বাজার হুমকিতে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে পাটজাত পণ্য থেকে বাংলাদেশ ৯১ দশমিক ২২ কোটি ডলার আয় করেছে। এর পরিমাণ আরও বৃদ্ধির সুযোগ ছিল, যা হাত ছাড়া হয়েছে তুরস্কের বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায়। পাট খাতের অন্যতম বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান, আকিজ বশির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সূত্রে জানা গেছে, পাটপণ্যের সর্ববৃহৎ বাজার ছিল তুরস্ক। এই বাজারে দুই লাখ টনের চাহিদা এখন এক লাখ টনের নিচে নেমে এসেছে। দ্বিতীয় বৃহৎ বাজার ছিল চীন। ভারত বড় বাজার হলেও, বাড়তি শুল্ক আরোপ করায় ভারতের বাজার এখন অনুকূলে নেই। পাট ও পাটজাত পণ্যের বাজার যে কোনো মূল্যে টিকিয়ে রেখে রপ্তানি আয় বাড়াতে হবে। আমরা সহজেই পাট ও পাটজাত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে পারি। এ বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব, সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। আমরা যেন কোনোভাবেই আমাদের ঐতিহ্যের কথা ভুলে না যাই।
লেখক : কৃষি ও পরিবেশ বিষয়ক লেখক
২০১৬ সালের আগে অনেকেই মনে করেছিলেন, শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প তার রাজনৈতিক আবেদনকে প্রসারিত করে সমর্থক ও বিরোধী মহলের প্রেসিডেন্ট হবেন। বেশির ভাগ রাজনীতিক তা-ই করেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও তিনি সবার হতে পারেননি; অনুগতদের প্রতি অতিমাত্রায় পক্ষপাতিত্ব প্রদর্শন করে যাচ্ছিলেন এবং যারাই তার সমালোচনা করেছেন, এমনকি তারা নিজের দলের কংগ্রেসম্যান হলেও, তাদের বিরুদ্ধে সেই অনুগত গোষ্ঠীকে খেপিয়ে তুলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাথমিক ধাপের প্রচার মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবচেয়ে সম্ভাব্য চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে যে দুজনের কথা মনে করা হচ্ছে, তাদের একজন জো বাইডেন এবং অন্যজন হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অর্থাৎ এই দুজন আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মুখোমুখি হবেন। ২০২০ সালের নির্বাচনী নকশা অবলম্বনে বিচার করা হলে, বাইডেনই জয়ী হবেন বলে মনে হয়। কিন্তু আমেরিকার রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আগেভাগে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যায় না। দুই নেতার স্বাস্থ্যগত, আইনি অথবা অর্থনৈতিক অবস্থা ঘিরে ঘটা যেকোনো চমকে দেওয়া ঘটনা যেকোনো সময় দৃশ্যপট বদলে দিতে পারে।
তবে ট্রাম্প যদি সত্যি সত্যি হোয়াইট হাউজে ফিরে আসেন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি কী হবেÑ এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া খুবই কঠিন। কারণ, ট্রাম্প নিজেই অনিশ্চিত মেজাজের লোক এবং তার মতিগতি নিয়ে আগেভাগে কিছু বলা সম্ভব নয়। তার প্রথম রাজনৈতিক কার্যালয়ই ছিল প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এবং তার রাজনৈতিক আচরণও ছিল অত্যন্ত অপ্রচলিত। কম বেশি সবারই জানা, মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন আইন লঙ্ঘন করে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠার পর ১৯৭৭ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ টিভি উপস্থাপক ডেভিড ফ্রস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ বিষয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছিলেন।
প্রেসিডেন্ট জাতীয় স্বার্থে কোনো বেআইনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে নিক্সন বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট যখন এটি করেন, তখন তা আর বেআইনি থাকে না। ডেভিড ফ্রস্ট তখন তাকে প্রশ্ন করেছিলেন, এটা কি আনুষ্ঠানিক সংজ্ঞার মধ্যে পড়বে? নিক্সনের জবাব ছিল, অবশ্যই। তার সেই বক্তব্য এটিও ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করেছিল যে, কীভাবে তিনি আমেরিকান গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে করা ষড়যন্ত্রকে বৈধ হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত ছিলেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, তখন নিক্সনের কোনো বিচার হয়নি। গদি থেকে সরে যাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে চলা একটি ফৌজদারি তদন্ত প্রাথমিক পর্যায় অতিক্রম করার আগেই প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড তাকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।
মার্কিন রাজনীতিকরা মনে করেন, জেরাল্ডের এই ক্ষমা যুক্তরাষ্ট্রকে তার নিজের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে মামলা করার মতো বিব্রতকর অবস্থা থেকে বাঁচিয়েছিল। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্রুত ধারাবাহিকভাবে চার চারটি মামলায় অভিযুক্ত হয়ে রীতিমতো ইতিহাস গড়ে ফেলেছেন। লক্ষ করার বিষয় হলো, এই চার অভিযোগের একটিও প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের আনুষ্ঠানিক দায়িত্বের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয়। মার্কিন কিংবা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে কোনোখানে ড্রোন হামলা চালানোর নির্দেশ দেওয়ায় তার বিচার হচ্ছে না। কোথাও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সাধারণ মানুষকে দুর্দশায় ফেলে দেওয়ার জন্য তার বিচার হচ্ছে না। কিংবা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে কুৎসিত আলাপচারিতার জন্যও তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে না। বরং ২০২০ সালের নির্বাচনের ফলকে নস্যাৎ করার চেষ্টা, গোপন নথি সরানো এবং নির্বাচনী প্রচারণাবিধি লঙ্ঘন করে এক নারীকে উৎকোচ দেওয়ার অভিযোগে তার বিচার হচ্ছে।
একজন সাবেক নেতাকে আইনের আওতায় আনা আপাতত কূটনৈতিকভাবে আমেরিকার জন্য বিব্রতকর হতে পারে। তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রকে আইনের শাসনের প্রতি ন্যায়নিষ্ঠ ও নিবেদিত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। এই বিচার করতে যুক্তরাষ্ট্র ব্যর্থ হলে সেটি তাৎক্ষণিক মেয়াদে মার্কিনিদের মুখরক্ষা করবে বটে; কিন্তু প্রজাতন্ত্রের ভাবমূর্তির জন্য একটি ধ্বংসাত্মক আঘাতের প্রতিনিধিত্ব করবে। বিশ্বজুড়ে কার্যকর গণতন্ত্রগুলো প্রায়ই তাদের সাবেক নেতাদের এবং এমনকি গদিতে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করে। অবশ্য তাদের মধ্যে খুব কম লোকই জেল খেটেছেন। বিচারিক প্রক্রিয়ায় তাদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করালেও শেষ পর্যন্ত জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে তাদের ক্ষমা করা হয় এবং কেউ কেউ কম শাস্তি পান। নিক্সনের মতো তাদের গদি থেকে সরিয়ে দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু জেলে রাখা দুরূহ ব্যাপার। যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প এখনো রিপাবলিকান পার্টির অতুলনীয় নেতা এবং দক্ষিণপন্থি অনেকের কাছে ত্রাণকর্তা। ট্রাম্পের সমর্থকদের একটি বড় অংশ মনে করেন, ট্রাম্প যা করেছেন তা একদম ঠিক ছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থেই তিনি তা করেছেন।
পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে মুখ বন্ধ রাখার জন্য উৎকোচ দেওয়ার মামলায় নিউ ইয়র্কের গ্র্যান্ড জুরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর তারা হয়তো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। নিশ্চিত করে বলা যায় ফ্রান্স, তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো গণতান্ত্রিক দেশ তাদের সাবেক রাষ্ট্রপ্রধানদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে, এমনকি সাজাও দিয়েছে। ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা এই মামলার গুরুত্বকে খাটো করে দেখছেন। ট্রাম্পের সঙ্গে যৌন সংসর্গ হওয়ার কথা চেপে যাওয়ার জন্য ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ট্রাম্প অর্থ দিয়েছিলেন এবং সেই অর্থ মাইকেল কোহেন নামের এক আইনজীবীর মাধ্যমে স্টর্মিকে দেওয়া হয়েছিল বলে ২০১৮ সালে একটি আদালতে প্রমাণিত হয়েছিল। মামলায় মাইকেল কোহেনের তিন বছরের জেল হয়। এই অভিযুক্তির কারণে ট্রাম্প ভবিষ্যতে নির্বাচিত কোনো প্রেসিডেন্টের কাছেই ক্ষমা পাবেন না। তিনি যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তাহলেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন।
সাবেক মডেল কারেন ম্যাকডুগালের মতো অনেকেরই ধারণা, এ ঘটনায় ট্রাম্প নারী ভোটারদের কাছে অজনপ্রিয় হবেন। যে সপ্তাহে ট্রাম্পের অভিযুক্তি এবং টোলেডোর প্রত্যর্পণ চূড়ান্তকারী রায় ঘোষণা হয়েছে, সেই একই সপ্তাহে পেরুর কৌঁসুলিরা ঘোষণা করেছেন, তারা ভাবী প্রেসিডেন্ট দিনা বোলুয়ার্তে এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট পেদরো কাস্তিলোর বিরুদ্ধে ২০২১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার ব্যয়বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করে দেখবেন।
১৯৯০ থেকে এ পর্যন্ত পেরুতে যতজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন, তার মধ্যে ছয়জন আছেন যাদের কেউ হয় জেলে আছেন, নয়তো কেউ জেলে যাওয়ার অবস্থায় আছেন, কেউবা আটকাদেশ মাথায় নিয়ে আছেন। টোলেডোর প্রত্যর্পণাদেশের চূড়ান্ত রায় হওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত পেরুর অনেক মানুষ ধারণা করছিলেন, টোলেডোকে যুক্তরাষ্ট্র রক্ষা করবে। ঠিক একইভাবে অনেক আমেরিকানেরও বিশ্বাস ছিল, ট্রাম্পের কখনো বিচার হবে না। ট্রাম্প এবং টোলেডো মামলাকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য একই ধরনের কৌশল নিয়েছেন। তারা দুজনই দাবি করেছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনা হচ্ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগকে অস্ত্র বানানো হচ্ছে। ট্রাম্পের সমর্থকরা বলছেন, আদালতের এ রায় প্রমাণ করে, যুক্তরাষ্ট্র এখন বানানা রিপাবলিক।
কর্র্তৃত্ববাদী শাসকদের প্রশংসাকারী থেকে ট্রাম্প ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দাঁড়াচ্ছেন। বিশ্বের কাছে এখন এই বার্তা স্পষ্ট যে, ট্রাম্প আবার নির্বাচিত হলে বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের জন্য মহাদুর্যোগ বয়ে আনবে। স্থানীয়ভাবে গজিয়ে ওঠা উগ্রবাদ, ষড়যন্ত্রতত্ত্ব এবং ঘৃণাসূচক ভাষা ব্যবহারের আধিক্য যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রকে ভয়ানক বিপদে ফেলে দিয়েছে। রিপাবলিকান পার্টি দিন দিন ক্রিশ্চিয়ান জাতীয়তাবাদের দিকে ঝুঁকছে। প্রতি পাঁচজন রিপাবলিকানের মধ্যে একজন এবং ডেমোক্র্যাটদের ১৩ শতাংশ সমর্থক বিশ্বাস করেন ‘আজকের দিনে’ রাজনৈতিক সহিংসতা ন্যায্য। কিন্তু ট্রাম্পের ওই গ্রেপ্তার হওয়াকে একদিন গণতন্ত্রের বাঁকবদল হিসেবে স্মরণ করা হবে। সবচেয়ে বড় কথা, পেরু এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টদের বিচারিক প্রক্রিয়ার সামনে দাঁড় করানোর ঘটনা আমাদের দেখাচ্ছে, আইনের শাসন বজায় রাখার এবং ক্ষমতাবানদের জবাবদিহি করার ক্ষমতাই গণতন্ত্রকে স্বৈরতন্ত্র থেকে আলাদা করে রাখে।
লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক
১৯৩৪ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন কবি বিনয় মজুমদার। বাবা বিপিনবিহারি মজুমদার ও মা বিনোদিনী। ১৯৪২ সালে তাকে বাংলাদেশের একটি স্কুলে ভর্তি করা হয় এবং ১৯৪৬ সালে তাকে গোপালগঞ্জের বৌলতলী উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। ১৯৪৮ সালে দেশভাগের সময় তারা সপরিবারে ভারতের কলকাতায় চলে যান। ১৯৪৯ সালে তাকে মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউটে নবম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। ১৯৫১ সালে আইএসসি পড়ার জন্য তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। শিবপুর বিই কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক লাভ করেন। ১৯৫৮ সালে গ্রন্থজগৎ থেকে বের হয় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘নক্ষত্রের আলোয়’। ১৯৫৮ সালে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন এবং পাবলিক হেলথে অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে স্বল্প দিন চাকরি করেন। ত্রিপুরা গভর্নমেন্ট কলেজেও বিনয় মজুমদার অধ্যাপনা করেন। এক সময় চাকরি ছেড়ে দিয়ে কাব্য সাধনাতে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৬৬ সালে লিখতে শুরু করেন ‘অঘ্রাণের অনুভূতিমালা’ ও ‘ঈশ্বরীর স্বরচিত নিবন্ধ’। ২০টির মতো কাব্যগ্রন্থ লিখেছেন। রবীন্দ্র পুরস্কার, সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারসহ নানা পুরস্কারে তিনি ভূষিত হয়েছেন। ২০০৬ সালের ১১ ডিসেম্বর তিনি মারা যান।
ভারতের বিপক্ষেই খেলেছিলেন বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। এবার বিশ্বকাপটাই ভারতে, যে ধর্মশালা দিয়ে শুরু হবে বিশ্বকাপ অভিযান, সেখানেই আছে বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির কৃতিত্ব। হিমালয়ের কোলে, ছবির মতো সুন্দর সেই মাঠে আবারও খেলবে বাংলাদেশ, কিন্তু খেলবেন না তামিম ইকবাল।
অনেক নাটকীয়তার পর অবশেষে বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বরাবরের মতো সংবাদ সম্মেলনে নিরাবেগ কণ্ঠে একের পর এক নাম পড়ে শোনাননি প্রধান নির্বাচক, গভীর রাতে কোনো ইমেইলেও আসেনি খেলোয়াড় তালিকা। বিশ্বকাপগামী ১৫ ক্রিকেটারের প্রত্যেকের হাতে হাতে সুন্দর করে বাক্সবন্দি বিশ্বকাপ জার্সি তুলে দেওয়ার ভিডিও নিজেদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে ২০২৩ বিশ্বকাপের জন্য নির্বাচিতদের পরিচিত করেছে বিসিবি। এজন্য বিসিবির সংশ্লিষ্টরা বাহবা পেতেই পারেন, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড যেমনটা হৃদয় জিতে নিয়েছে ক্রিকেটারদের পরিবারের আপনজনদের দিয়ে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করিয়ে।
কারা থাকছেন আর কারা থাকছেন না, তা নিয়ে খুব বড় কোনো চমক ছিল না বিশ্বকাপ দলে। সবাই শুধু একটাই কোটি টাকার প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলেন। তামিম ইকবাল শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ দলে আছেন নাকি নেই। অবসর, প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে প্রত্যাবর্তন, ব্যক্তিগত কাজে দুবাই ভ্রমণ, ইংল্যান্ডে ইনজেকশন, দেশে অনুশীলন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এক ইনিংসে ব্যাট করে ৪৪ রান এবং পরে নিজেকে আবারও পুরোপুরি ফিট নয় বলে পরের ম্যাচে বিশ্রাম। স্বভাবতই এই তামিম ইকবালকে বিশ্বকাপে দেখতে চাইবেন না কোনো কোচ এবং অধিনায়ক। সোমবার গভীর রাতে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বাসায় সাকিবের ছুটে যাওয়া এবং সিডনি থেকে নেমে তড়িঘড়ি করে বোর্ড সভাপতির বাসায় কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের পা রাখাই প্রমাণ করে, বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করতেই তাদের এ তৎপরতা।
তামিমের মতো ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটা সহজ নয়। নিঃসন্দেহে দেশের সফলতম ব্যাটসম্যান, ওয়ানডেতে ১৪টা সেঞ্চুরি। হুট করে অবসর নিলে যাকে ফিরিয়ে আনেন স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রী। সাক্ষাৎকারেও তামিম বলেছেন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগের কথাও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেশাদারির কাছে হার মেনেছে আবেগ, যুক্তির কাছে হেরে গেছে অতীত। তামিম নামটা আছে বিশ্বকাপ দলে, তবে পদবিটা ইকবাল নয়। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তানজিদ হাসান তামিমকে নিয়েই বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন সাকিব আল হাসান, যার বয়স আর তামিম ইকবালের ক্যারিয়ারের বয়স প্রায় কাছাকাছি।
২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিবের পারফরম্যান্স ছিল অতিমানবীয়। ৬০৬ রান আর ১১ উইকেট। তবু দল হলো অষ্টম। গোটা আসর চোটজর্জর অধিনায়ককে বইল দল। প্রতিটি সকাল শুরু হতো এক অনিশ্চয়তা নিয়ে, খেলতে পারবেন তো মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা? শুরুর দিকে নতুন বলে কোনো উইকেট ফেলতে পারেনি বাংলাদেশ, প্রতিপক্ষ গড়েছে রানের পাহাড়। সেই অভিজ্ঞতা কী করে ভুলবেন সাকিব। অস্ট্রেলিয়ান জেমি সিডন্স আর অধিনায়ক সাকিব এজন্যই ২০১১ সালের বিশ্বকাপে দলে রাখেননি চোটগ্রস্ত মাশরাফীকে। হাথুরুসিংহে জাতীয়তায় শ্রীলঙ্কান হলেও অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে থাকতে হয়ে গেছেন তাদের মতোই পেশাদার। তাই তো কঠিন সিদ্ধান্তটা নেওয়ার সাহস দেখিয়েছেন।
কাল বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডের পর সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন জাতীয় নির্বাচকরা। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন এবং দুই নির্বাচক হাবিবুল বাশার ও আবদুর রাজ্জাক। তামিমকে বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে মিনহাজুল শুনিয়েছেন মুখস্থ কথাই, ‘আপনারা তো এবারের বিশ্বকাপের দলটা এরই মধ্যে পেয়ে গেছেন। তামিম ইকবালের তো অনেক দিন ধরেই ইনজুরি নিয়ে চিন্তা আছে। নিউজিল্যান্ড সিরিজের পর... সবকিছু বিবেচনা করেই, সবাই আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া। বিশ্বকাপে অনেক দিনের ব্যাপার। অনেক ম্যাচ আছে।’
তামিমের চোটটা তো নতুন নয়। অনেক দিন ধরেই এ চোট নিয়ে তিনি ভুগছেন, নিজের ইচ্ছামতো ভারতের বিপক্ষে সিরিজ, আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ এসব থেকে নিজেকে সরিয়েও রেখেছিলেন। চিকিৎসাও করিয়ে আনা হয়েছে। সবকিছু জেনেশুনে কেন তাকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে সুযোগ দেওয়া এবং ম্যাচ খেলিয়ে বাদ দেওয়া এ প্রসঙ্গে মিনহাজুলের উত্তর, ‘দেখুন, কিছু কিছু ইনজুরি আছে আপনি ঝুঁকি নিতে পারেন না। টিম ম্যানেজমেন্ট কিন্তু বেকায়দায় পড়বে। আপনি দেখুন, নিউজিল্যান্ড সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলার পর দ্বিতীয় ম্যাচে... প্রথম ম্যাচ খেলেছে, দ্বিতীয় ম্যাচটা খেলেছে... এরপর কিন্তু শেষ ম্যাচে বিশ্রাম দিতে হয়েছে।’
‘তামিম অন্যতম সেরা। কিন্তু চোটের দুশ্চিন্তা থাকলে নিজেকে মেলে ধরা কঠিন। মেডিকেলের সঙ্গে আলোচনা করেছি, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি। এটা আগেই বলেছি, এখন দল ঘোষণা করা হয়েছে’বলছিলেন প্রধান নির্বাচক। বিসিবি সভাপতি বা সাকিব ও কোচের সঙ্গে আলাপ হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কী আলাপ হয়েছে সেটা তো এখানে প্রকাশ করব না।’
১০ দলের বিশ্বকাপে দশম দল হিসেবে বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। কেন এত দেরি, ফ্লাইটে ওঠার ২৪ ঘণ্টারও কম সময় আগে বিশ্বকাপের দল দেওয়া হলো কেন এ নিয়ে হাবিবুল বাশারের ব্যাখ্যা, ‘আমাদের সঙ্গে কী হয়েছে সেটা তো আমাদের সঙ্গের ব্যাপার। দল নির্বাচন করতে যখন বসি... খেলোয়াড় হিসেবে তামিমের... আমরা সুস্থ-সবল তামিমকে পেতে... এটা নিয়ে আমাদের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত ভাবতে হয়েছে। তাই দেরি হয়েছে।’
তামিমের বাদ পড়ার ডামাডোলে হারিয়ে গেছে মাহমুদউল্লাহর ফেরাটাও। সেই ইংল্যান্ড সিরিজের পর বিশ্রামের মোড়কে বাদ পড়েছিলেন। তার বদলে অনেক বিকল্প খুঁজেও শেষ পর্যন্ত ঘুরেফিরে আবার তার কাছেই ফিরলেন নির্বাচকরা। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ৪৯ আর ২১ রানের দুটো ইনিংসেই হয়ে গেছে বিশ্বকাপের টিকিট। প্রধান নির্বাচক বললেন, ‘আগেই বলেছি, বিশ্বকাপের আগে যেকোনো খেলোয়াড়কে যেকোনো সিরিজে দেখব। ও পরিকল্পনাতেই ছিল। নিউজিল্যান্ড সিরিজে দেখেছি।’
২০১৫ সালের বিশ্বকাপের আগে, মাত্র দুই ম্যাচ দেখে সৌম্য সরকারকে দলে নিয়েছিলেন হাথুরুসিংহে। তানজিদ তামিম আর তানজিম সাকিব নিজেদের ভাগ্যবান ভাবতে পারেন। যথাক্রমে মাত্র পাঁচ আর দুই ম্যাচ খেলে তারা বিশ্বকাপ যাত্রার সঙ্গী হয়েছেন। এমন নয় যে, এ স্বল্প সময়ে দারুণ কিছু করে দেখিয়েছেন, প্রধান কারণ বিকল্পের অভাব।
শুধু তামিম ইকবালই নয়, দলের লজিস্টিক ম্যানেজারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তার বড় ভাই ও সাবেক খেলোয়াড় নাফিস ইকবালকেও। তামিমের অবসর-কা-ে তিনি বিসিবি সভাপতির মেসেজের জবাব দেননি, যা পাপন নিজে বলেছেন গণমাধ্যমে। হয়তো তারই প্রতিশোধ, সেই সঙ্গে ড্রেসিংরুমের সঙ্গে তামিমের সব সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া।
অবসর ভেঙে ফিরেছিলেন তামিম, দুটি ম্যাচ খেললেন। কিন্তু যেভাবে বাদ পড়লেন, তাতে মনে হতে পারে অবসরের সিদ্ধান্তটাই ছিল সঠিক। বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগামীতেও তামিমের দলে ফেরাটা বোধহয় অনিশ্চিতই হয়ে গেল।
তামিম প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে দলটা কেমন হয়েছে দেখা যাক। পাঁচ পেসার, দুই অফ স্পিনার, দুই বাঁহাতি স্পিনার মিলিয়ে বোলিং আক্রমণটা নেহায়েত খারাপ নয়। লিটন দাসের সঙ্গে তানজিদ তামিম অথবা মেকশিফট ওপেনার মিরাজ। সহঅধিনায়কের পদ থেকে বাদ পড়েছেন লিটন, সেটা করা হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তকে। সাকিব, মুশফিক, তাওহীদ হৃদয়দের নিয়ে মিডল অর্ডারের পর ফিনিশার রোলে মাহমুদউল্লাহ। এ নিয়েই ধর্মশালায় আফগানদের বিপক্ষে লড়াইয়ের শুরু। প্রত্যাশা অনেক বড়, প্রস্তুতি গোলমেলে। ভরসা একটাই, শুরুর আগে পরিস্থিতি এমন গোলমেলে হলেই কেন যেন ভালো করে বাংলাদেশ!
বিশ্বকাপ দল : সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন (সহঅধিনায়ক), তাওহীদ হৃদয়, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, শরীফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ, মেহেদি হাসান, তানজিদ হাসান, তানজিম হাসান ও মাহমুদউল্লাহ।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির পাল্টাপাল্টি আলটিমেটামের কারণে চলমান রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে নতুন করে উত্তাপ তৈরি হয়েছে। দুই দলের এ পাল্টাপাল্টি আলটিমেটামের মূল টার্গেট ঢাকা দখলে নেওয়া। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন অসুস্থ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসা নিতে বিদেশ পাঠাতে রবিবার বিএনপি ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে। পাল্টা জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও একই পথে হেঁটেছে। বিএনপিকে ‘আগুন সন্ত্রাস, অপরাজনীতি ও নাশকতার রাজনীতি’ ছাড়ার জন্য সোমবার ৩৬ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এরপর পাল্টা ৩৬ ঘণ্টার হুঁশিয়ারি এসেছে বিএনপির কাছ থেকে।
তার আগে গত শনিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে আবেদন করলে অনুমতির বিষয়টি দেখা যাবে। তবে তার কাছে এরকম কোনো কাগজপত্র আসেনি। ওইদিনই খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার বলেছেন, সরকারের মনোভাব ইতিবাচক হলে তারা আবারও আবেদন করবেন।
পরদিন রবিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আলটিমেটাম দেন। ওইদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত জটিলতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আদালতের অনুমোদন প্রয়োজন। তবে বিএনপি বলছে, সরকার চাইলে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে পারে।
দুই দলের রাজনীতি ও ঘোষিত আলটিমেটাম মাঠের রাজনীতিতে কোনো পরিবর্তন আনবে কি না, সে সম্পর্কে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। বিএনপির আলটিমেটামের ফল কী হবে আর আওয়ামী লীগেরও দীর্ঘ ৩৬ দিনের আলটিমেটাম কেন এ নিয়ে সাধারণ মানুষের ভেতর বেশ কৌতূহল দেখা দিয়েছে।
দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত রাজধানী ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এমন পাল্টাপাল্টি আলটিমেটাম। ঢাকায় বিএনপির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার কৌশলের অংশ হিসেবেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ইস্যুতে দলটি আলটিমেটাম দিয়েছে। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতেই তার পাল্টা জবাব দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
দুই দলের ওই নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির রাজনীতির মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছে ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা। ঢাকার রাজনীতি আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ থেকে বের করে আনতে না পারলে রাজনীতিতে জুতসই অবস্থান সৃষ্টি করতে পারবে না বিএনপি।
সারা দেশের নিয়ন্ত্রণে রাখা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেয়ে ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে রাজনৈতিক জয়-পরাজয় নির্ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিএনপির ওই শীর্ষসারির নেতারা। তাই বিএনপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসাকে ইস্যু করে নেতাকর্মীদের ঢাকায় ডেকে পাঠানোর কৌশল গ্রহণ করেছে। পর্যাপ্ত নেতাকর্মী ঢাকায় ঢুকে গেলে অবস্থা বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তাই ইস্যু খালেদার চিকিৎসা, কিন্তু লক্ষ্য ঢাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ৩৬ দিনের আলটিমেটামের পেছনে রয়েছে নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার আগপর্যন্ত ঢাকায় নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখা। সেই সঙ্গে নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে নির্দেশনা দিয়ে রাখা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে ততই ষড়যন্ত্রের নীল নকশা আঁকছে।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের শান্তি যেন বিঘিœত না হয়, সেজন্যই আমরা বিএনপির কর্মসূচির দিন মাঠে থাকি। বিএনপিকে জনগণ বিশ্বাস করে না। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে সত্যিই নিতে চাইলে আলটিমেটাম কেন দেবে বিএনপি? আইনি জটিলতা নিরসন করে বিদেশ নেওয়ার চেষ্টা করবে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘বিএনপি সন্ত্রাস-সহিংসতানির্ভর রাজনীতি করে, বিশ্বাস করে। তারা পাকিস্তানের প্রেতাত্মা।’ তিনি বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করাতে চাইলে কেন বিএনপি আইনি প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে না? তার কিছু হলে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দায় নিতে হবে।’
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দুই দলের ঘোষিত আলটিমেটামকে কথার বাকযুদ্ধ হিসেবে নিয়েছেন। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এগুলো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের অবস্থান ধরে নেওয়া যায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে তাদের কোনো গা নেই। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিভিন্ন বক্তব্যে সেটাই স্পষ্ট করেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে হলে আইনগতভাবে যেতে হবে। নির্বাহী কোনো সিদ্ধান্তে এ সুযোগ দেওয়া হবে না। ফলে আলটিমেটাম মূলত নিষ্ফল হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দাবি আদায় করার জন্য জনগণ থেকে দাবি উঠতে হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণকে রাস্তায় নামাতে পারবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘এখন যেসব বক্তব্য এগুলো মঞ্চের বাকযুদ্ধ।’
বিএনপির আলটিমেটাম নিয়ে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারব না। আমি (গতকাল মঙ্গলবার) সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা শেষ করে এসেছি।’ আলটিমেটামের পেছনে ঢাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় তো আমরা সভা-সমাবেশ করছিই।’
জানতে চাইলে বিএনপির আরেক নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আলটিমেটাম সম্পর্কে ক্লিয়ার কিছু জানি না।’
বিএনপিকে ‘অপরাজনীতি’ ছাড়তে ৩৬ দিন সময় বেঁধে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ সময়ের মধ্যে ‘সঠিক পথে’ না এলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির ‘অপরাজনীতির কালো হাত’ গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে আলটিমেটাম দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এটি বিএনপির জন্য শেষ বার্তা।’ গত সোমবার রাজধানীর উত্তরায় এবং যাত্রাবাড়ীতে পৃথক সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। উত্তরার সমাবেশে ওবায়দুল কাদের এ আলটিমেটাম দেন।
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপি দুই সপ্তাহের কর্মসূচি নিয়ে এখন রাজপথে আছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগও ২১ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ঢাকায় গত সোমবার দুটি সমাবেশ হয়।
এর আগে থেকেই ঢাকায় বিএনপির কর্মসূচির দিন শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীনরা বিএনপির সভা-সমাবেশের বিষয়ে নমনীয়তা প্রদর্শন করলেও মাঠের নিয়ন্ত্রণ ছাড়েনি।
তামিম ইকবাল দলে না থাকাতে যেন অনেকেরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে! আবার বিশ্বকাপের দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অন্তর্ভুক্তিতেও অনেকের চোখ কপালে! দল ঘোষণার পর যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকরা এলেন সংবাদ সম্মেলনে, তখন আলোচনায় শুধু ছিলেন এই দুজনেই। তাদের এই বিরহ বেদনায় চাপা পড়ে যায় অনেক প্রশ্ন। লিটন দাসকে বাদ দিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত কেন সহ-অধিনায়ক! বাড়তি কোনো ওপেনার ছাড়া কিংবা পাঁচ পেসারকে নিয়ে কেন দল গড়া?
প্রায় মিনিট পনেরোর সংবাদ সম্মেলনে ঘুরে ফিরে এসেছে একই প্রশ্ন। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও ঘুরেফিরে বন্দী ছিলেন একই কথার বৃত্তে। প্রশ্নোত্তর শেষে বেরিয়ে যান তিন নির্বাচক। যেতে যেতে কথা হয় তাদেরই একজন হাবিবুল বাশারের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল চাপা পড়া সেইসব প্রশ্নের উত্তর।
শুরুতেই জানতে চাওয়া হয় লিটনকে বাদ দিয়ে শান্তকে কেন সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ একটা কারণ। আর লিটনের অনাগ্রহও তাকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর একটি কারণ। লিটন নিজেও চায় না নেতৃত্বের চাপ নিতে। সে একটু ব্যাটিংয়ে বেশি মনোযোগ দিতে চায়।’
বিশ্বকাপ দলে বিকল্প ওপেনার না থাকার কারণও জানা গেল এই নির্বাচকের কথায়। তিনি জানালেন, ‘আমরা ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে মিরাজকে ভাবছি।’
বিকল্প ওপেনার হিসেবে বিশেষজ্ঞ কাউকে না নেওয়ায় একজন বাড়তি বোলার দলে রাখার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে শেখ মেহেদি হাসান সুযোগ পেয়েছেন সে কারণে। পাশাপাশি জায়গা হয়েছে পাঁচ পেসারেরও। এর পেছনে বাশার ভারতের কন্ডিশনের কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভারতে এখন আর্লি সিজন। উইকেট সতেজ থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই পাঁচজন পেসার দরকার হবে।’
যেতে যেতে আরও বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক মুখোমুখি হলেন, এই দলটা বিশ্বকাপে কেমন করবে? এই প্রশ্নটা শুনেই ঘুরে দাঁড়ালেন হাবিবুল। উত্তরে মজা করে বললেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হবে এই দল।’ এরপর একটু গাম্ভীর্য ফিরিয়ে এনে যোগ করলেন, ‘আমি এদের অনেক দিন ধরে দেখছি। ওরা কয়টা ম্যাচ জিতবে জানি না। তবে বিশ্বকাপে প্রতিটি দলকে ভোগাবে, এটা জানি।’
নাজিবা হুসাইনি মারা যান ২০১৭ সালে জুলাই তালেবানের আত্মঘাতী বোমা হামলায়। ক’দিন পরেই তার বিয়ে হওয়ার কথা। বাগদত্তা হোসাইন রেজাই ভাবছিলেন নাজিবার স্মৃতির প্রতি কীভাবে সম্মান জানানো যায়। তিনি একটি গ্রন্থাগার করলেন দাইকুন্ডির প্রদেশের নিলি শহরে, যে-শহরে ২৮ বছর বয়সী নাজিবার জন্ম ও শৈশব কেটেছে। ‘নাজিবা হুসাইনি মেমোরিয়াল লাইব্রেরি’ দিনে দিনে ১২ হাজারেরও বেশি ভলিউমের সংগ্রহশালা এবং একটি কম্পিউটার ল্যাবে পরিণত হয়। সেখানে শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়। আফগানিস্তানের প্রতিটি প্রদেশে আরও গ্রন্থাগার তৈরির পরিকল্পনা ছিল রেজাইয়ের। কিন্তু তালেবান দেশের ওপর পুনরায় দখল সুসংহত করার পর ‘নাজিবা হুসাইনি মেমোরিয়াল লাইব্রেরি’তে আক্রমণ হয়। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় ভবনের ভেতরে ভাঙচুর চলছে এবং সংগ্রহগুলো নষ্ট করা হচ্ছে। রেজাই এখন ইতালি প্রবাসী। তার মতে, যা ঘটেছে তাতে তিনি ‘বিধ্বস্ত’। তিনি বলেছেন, ‘আমরা যা কিছু তৈরি করেছি সব একটা দুঃস্বপ্নের মতো শেষ হয়ে গেছে।’ লাইব্রেরি বললে আমাদের কল্পনায় ভেসে ওঠে, নিরাপদ ও নির্মল একটি ঘর, যেখানে শান্ত ও সুস্থির পরিবেশে অধ্যয়ন চলছে। আফগানিস্তানে সেই লাইব্রেরি ও আর্কাইভ হামলার শিকার হয়েছে। গ্রন্থাগারিকরা ফিরে আসতে পারছেন না পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে।
কাবুলের পাবলিক লাইব্রেরি এবং সেখানকার ন্যাশনাল আর্কাইভ চলমান রয়েছে বটে। তবে কর্মীসংখ্যা সীমিত এবং কোনো পরিষেবা নেই বললেই চলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারগুলো বন্ধ। কাবুলের বাইরেও অনেক লাইব্রেরি নাই হয়ে গেছে। লাইব্রেরির অনেক সরকারি কর্মচারী তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায়। নারী কর্মচারীদের কাজ করার অনুমতি নেই। সরকারের উপ-সংস্কৃতিমন্ত্রী জাবিউল্লাহ মুজাহিদ সম্প্রতি তার মন্ত্রণালয়কে লাইব্রেরি ভবনগুলো আবার খুলতে বলেছেন। তবে লাইব্রেরিতে নারী কর্মজীবীদের সংখ্যা ছিল বেশি, তারা আবার আগের ভূমিকায় ফিরতে পারবেন কি না জানা যায়নি। নারী গ্রন্থাগারিক থাকলে নারীরা লাইব্রেরিতে আসতে উৎসাহিত হন। কারণ গ্রন্থাগার তাদের অধ্যয়নের একটি নিরাপদ জায়গা। ন্যাশনাল আর্কাইভসের প্রাক্তন পরিচালক মাসুমা নাজারি বলেছেন, ‘আফগানিস্তানের পাঠাগারগুলো মেয়েদের জন্য নিরাপদ ও ভালো জায়গা। পরিবারের সদস্যরা তাদের মেয়েদের সহপাঠী ও বন্ধুদের সঙ্গে লাইব্রেরিতে পড়তে, দেখা করতে এবং কথা বলতে যেতে বাধা দেয় না। লাইব্রেরিতে পড়ার ফাঁকে তারা নতুন নতুন শিক্ষার খোঁজ পায়, হাসতে, কাঁদতে এবং জীবনের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ পায়। যদি তালেবান নারীদের এখানেও নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাহলে তারা এই নিরাপদ জায়গাটি হারাবে। আফগান মেয়েদের থেকে লাইব্রেরি কেড়ে নেওয়া উচিত নয়।’
তালেবান শাসনের প্রথম সময়েও দেশটিতে সংস্কৃতির ওপর আক্রমণ হয়েছিল। লাইব্রেরি এবং আর্কাইভগুলোও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। অ-পশতু ভাষায়, বিশেষ করে ফার্সি ভাষায় উপকরণ পড়া নিষিদ্ধ ছিল। কাবুলের ১৮টি গ্রন্থাগারের মধ্যে ৮টি তখন ধ্বংস হয়ে গেছে, আরও ৭টি ধর্মীয় ভবনে রূপান্তরিত হয়েছে। ১৯৯৮ সালের ১২ আগস্ট তালেবান ‘হাকিম নাসের খোসরো বলখি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’ হাতে নিয়ে নেয়, যার কেন্দ্রস্থলে একটি গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক লাইব্রেরি ছিল। কেন্দ্রের দরজায় তারা রকেট লঞ্চার ও মেশিনগানের মতো ভারী অস্ত্রশস্ত্র স্থাপন করে। লতিফ পেদ্রাম ছিলেন গ্রন্থাগারিক, প্রধানত ফার্সি পা-ুলিপির ৫৫ হাজার ভলিউমের সংগ্রহশালা সেই লাইব্রেরিটি ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর মতো শক্তি তার ছিল না। তালেবানের পতনের পর ন্যাশনাল লাইব্রেরির পরিচালক ফজলুল্লাহ কোদসি বলেছেন, ‘‘আফগানিস্তানের আইনি কোডের প্রতিটি কপি ধ্বংস হয়ে গেছে। ফার্সি ভাষার মহাকাব্য ‘শাহনামা’ পড়া থামাতে কিংবা এ-জাতীয় নিষিদ্ধ বই আছে কি না, তার জন্য ঘরে ঘরে অনুসন্ধান চালিয়েছিল তালেবান।” পেদ্রাম সেই দিনগুলোর কথা স্মরণ করে জানান, ‘যদি তারা আমাকে ধরে ফেলতে পারত, ঘটনাস্থলেই মৃত্যুদণ্ড দিত।’ পরবর্তী সময়ে বাইরের তহবিল ও অভ্যন্তরীণ উদ্যোগের ফলে গ্রন্থাগার ও আর্কাইভ সেক্টর পুনরুজ্জীবিত হতে থাকে। রাষ্ট্রপতি হামিদ কারজাই জাতীয় আর্কাইভগুলো পুনরায় চালু করেছিলেন, ফলে যথাযথ রেকর্ড রাখার অনুশীলন শুরু হয়। তালেবান ক্ষমতায় আরোহণের সময় আবারও আর্কাইভটি আক্রান্ত হয়। এমনকি লুটপাটও করা হয়। পরিচালককে আফগানিস্তানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য ফেসবুকে তালেবানের কাছে একটি অনুরোধ পোস্ট করতে দেখা যায়। পরে আফগানিস্তানের জাতীয় জাদুঘরের পরিচালক মোহাম্মদ ফাহিম রহিমি একটি বিবৃতি জারি করেন যে, তিনি ও তার কর্মীরা প্রতিষ্ঠান রক্ষা করতে তালেবান-সরকারের সমর্থন পেয়েছেন।
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার ছিল সমগ্র অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম। ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯২ সাল নাগাদ ২ লাখেরও বেশি ভলিউম সংগৃহীত হয়। প্রায় ৫০ জন গ্রন্থাগারিক নিয়োগ করা হয়েছিল। ইরান, তাজিকিস্তান, পাকিস্তান, ভারত এবং অন্যান্য জায়গা থেকেও পণ্ডিতরা সংগ্রহগুলো ব্যবহার করতে আসতেন। আফগানিস্তানে সোভিয়েত যুদ্ধের সময় এটি জাতীয় গ্রন্থাগারে পরিণত হয়। সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের পরে গ্রন্থাগারটি ধ্বংসের মুখে পড়ে এবং পুনর্নির্মাণের কাজও শুরু হয়। নব্বইয়ের শেষের দিকে তালেবান তা বন্ধ করে দেয়। গ্রন্থাগার চত্বরে গোলাগুলিও হয়েছে। অনেক ঐতিহাসিক নথি, প্রাচীন বই ও পা-ুলিপির অবৈধ পথে পাচার হয়ে যায়। গ্রন্থাগারটি গত বছর আগস্টের মাঝামাঝি থেকে বন্ধ রয়েছে। কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র লাইব্রেরি ব্যবহারে তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেছেন, ‘সেখানে বই পড়তাম, লিখতামও। মাঝে মাঝে বন্ধুরা মিলে টেবিলের চারপাশে বসে আফগানিস্তানের উন্নয়ন ও বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে কথা বলতাম। এখন সব স্বপ্নের মতো মনে হয়।’ অনেক তরুণ এখন বিভিন্ন নথি ও ফুটেজ সংগ্রহ করে পশ্চিমাদের বিভিন্ন অনলাইন লাইব্রেরি ও ইন্টারনেট আর্কাইভে রাখছে। তারা আফগান ওয়েবসাইটেও আর্কাইভ করার চেষ্টা করছে, যাতে দেশের ডিজিটাল উপায়ে হলেও নথিগুলো রক্ষা করা যায়।
তথ্যের সহজলভ্যতা থেকে শুধু নাগরিকরাই উপকৃত হয় না, নিপীড়ক শাসককেও তার সুবিধা দেয়। প্রাচীন মেসোপটেমিয়ায় কর বাড়ানোর উদ্দেশ্যে তথ্য-সংগ্রহের কাজটি ছিল সম্ভবত জনগণের ওপর ব্যাপক নজরদারির প্রথম উদাহরণ। নাৎসি জার্মানি ও স্টালিনবাদী রাশিয়াও নাগরিকদের ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করত এবং বিস্তারিতভাবে নথিভুক্ত করে রাখত। অথচ আফগানিস্তানে নাগরিকদের স্কুলের রেকর্ড ধ্বংস করার খবর প্রকাশ পেয়েছে যেন, ডকুমেন্টেশন বর্তমান সরকারের হাতে না পড়ে, কেননা, তাতে তারা শাস্তির মুখে পড়তে পারে। অনেক বইয়ের দোকানি নিজেরা তাদের স্টক ধ্বংস করেছে, কেননা, তা ধর্মবিরোধী বিবেচিত হতে পারে। গ্রন্থাগার কেবল আক্রমণের মাধ্যমেই ধ্বংস হয় না, তহবিলের অভাবেও হতে পারে। অক্সফোর্ডের ওরিয়েন্টাল ইনস্টিটিউটের পরিচালক আরেজু আজাদ বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই আফগানিস্তানে গ্রন্থাগার ও সংরক্ষণাগার রক্ষায় সমর্থন দিতে হবে। আফগানিস্তানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং এর সাংস্কৃতিক ইতিহাসের জ্ঞান সংরক্ষণ দেশের শান্তির ও রাষ্ট্র গঠনের একটি মৌলিক ভিত্তি।’
লেখক : বোডলির গ্রন্থাগারিক এবং ‘বার্নিং দ্য বুকস : অ্যা হিস্ট্রি অব নলেজ আন্ডার অ্যাটাক’ গ্রন্থের লেখক।
ফাইনান্সিয়াল টাইমস থেকে ভাষান্তর : মনযূরুল হক
জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগলের ২৫তম জন্মদিন আজ। ১৯৯৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর স্ট্যানফোর্ডের দুই পিএইচডির ছাত্রের হাত ধরে যাত্রা শুরু। ভাড়া করা গ্যারেজে জন্ম নেওয়া সেই গুগল আজ বিশ্বের বৃহত্তম সার্চ ইঞ্জিন; পরিণত হয়েছে ট্রিলিয়ন ডলারের কোম্পানিতে। কীভাবে দরজা আটকাবেন বা কীভাবে কাটবেন আনারস— গুগলে উত্তর পাবেন না এমন প্রশ্ন খুঁজে মেলা ভার। তাইতো মানুষের কাছে এত জনপ্রিয় ও প্রয়োজনীয় একটি হাতিয়ার হয়ে উঠেছে গুগল।
আজ ২৭ সেপ্টেম্বর গুগল ২৫তম জন্মবার্ষিকী পালন করছে। বিশেষ ডুডল তৈরি করে বর্ণাঢ্য আকারে উদ্যাপন করেছে দিবসটি। এবারের ডুডলটি তৈরি করা হয়েছে এর বিবর্তনের থিম ধরে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গুগলের লোগোর পরিবর্তন উঠে এসেছে ডুডলে।
কম্পিউটার বিজ্ঞানের দুই শিক্ষার্থী ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিনের প্রকল্প হিসেবে শুরু করেছিল এ সার্চ ইঞ্জিন। নিজেরদের ছাত্রাবাসে বসেই কাজ শুরু করেন দুজন। বড় আকারের সার্চ ইঞ্জিনের প্রোটোটাইপ তৈরি করার পর একটি ভাড়া করা গ্যারেজে অফিস স্থাপন করেন তারা। এখন সারা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন ও ইন্টারনেটের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে গুগল।
চলুন গুগল নিয়ে একটা মজার তথ্য জানাই আপনাদের। আমাদের সবার পরিচিত নাম গুগল নামটি কিন্তু ইচ্ছা করে দেননি ল্যারি ও ব্রিন। গুগল নামটি আসলে এসেছে গাণিতিক হিসাবের গোগল (googol) ভুল করে লেখার মাধ্যমে, যার মানে হলো ১ এর পর ১০০টি শূন্য। এ নিয়ে এখন গল্প প্রচলিত আছে যে, একজন প্রকৌশলী বা ছাত্র আসল নামের বদলে এই ভুল বানানটি লিখেছিলেন। সেই ভুল নামই পুরো দুনিয়ার সামনে চলে আসে। কেন এই নাম বেছে নিয়েছিলেন ল্যারি আর সের্গেই? তাদের ওয়েবসাইট যে বিপুল পরিমাণ উপাত্ত ঘাঁটাঘাঁটি, অনুসন্ধান করবে, সেটা এই নাম দিয়ে বোঝাতে চেয়েছিলেন তারা। সেই ভুল নামই গুগল!
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।