
ভূমি অফিস নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত কয়েকটি প্রতিবেদনের শিরোনাম দেখে নেওয়া যাক। ‘ভূমি অফিসে অনিয়মই যেন নিয়ম’, ‘ঘুষ নেওয়ার ভিডিও প্রকাশের পর তহশিলদার বরখাস্ত’, ‘পিয়ন থেকে কর্মকর্তা সবাই নেন ঘুষ’। ভূমি অফিসের দুর্নীতির গল্পের কোনো শেষ নেই। সাধারণ মানুষ তো বটেই, ক্ষমতাবানদের অভিজ্ঞতাও একই। এ ক্ষেত্রে, ভূমি অফিস দাবি করতে পারে যে ঘুষের বেলায় তারা বৈষম্যহীনতার নজির স্থাপন করেছে। স্থানীয় সাব-রেজিস্ট্রারের দপ্তরে ঘুষের টাকা না দেওয়ায় এক খণ্ড জমির দলিল করাতে পারেননি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য। এক জনসমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি সে কথা জানান। ২০২১ সালে প্রতিমন্ত্রীর ওই বক্তব্যটির একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। অবাক বিষয় হচ্ছে, তিনিই প্রথম সরকারের উচ্চ পর্যায়ের লোক নন যিনি ভূমি অফিসের এমন অপকর্মের শিকার হয়েছেন।
কাজেই টাকাখেকো ভূমি অফিসের কথা সবার জানা হলেও মুক্তি মিলছে না কারও। প্রশ্ন হচ্ছে ভূমি অফিসের কত ঘুষ প্রয়োজন? প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাটির বছরেই ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) বি এম আব্দুর রাফেল পারিবারিক জমির দলিল রেজিস্ট্রি করতে কুষ্টিয়া সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসে গেলে, সেখানে তার কাছে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করা হয়। তার পরিচয় জানার পরেও কর্মচারীদের মনে কোনো হেলদোল হয়নি। তবে, পরে ঘুষের পরিমাণ ৫ হাজার টাকা কমিয়ে দিয়েছিলেন তারা। শেষ পর্যন্ত ডিএজির ভাই ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে কাজটি করিয়ে নেন। এ ঘটনায় একজনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। প্রতিমন্ত্রী এবং ডিএজির অভিজ্ঞতার ঘটনা দুটি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।
সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের সঙ্গে ভূমি অফিসের আচরণের নমুনা, তাহলে সাধারণ জনগণের সঙ্গে তাদের আচরণ কেমন হতে পারে, তা অনুমান করা খুব একটা কঠিন নয়। তবে ঘুষের বেলায় ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যে বৈষম্যহীন নীতি, সেখানে আরেকটি মাত্রা যোগ করেছেন পিরোজপুরের নাজিরপুরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসিল্যান্ড মাসুদুর রহমান। নামজারি করতে সরকার নির্ধারিত খরচ ১ হাজার ১৭০ টাকা। অভিযোগ রয়েছে নামজারির জন্য ভূমি অফিস সরকার নির্ধারিত টাকার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা নিয়ে থাকে।
দেশ রূপান্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী তিনি জমির নামজারি করার জন্য ‘ঘুষ’ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। গত জুলাই মাসে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের নিয়ে করা এক সভায় তিনি ছয় হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি নির্ধারণ করে দেন। ওই সভার কথোপকথনের একটি অডিও সম্প্রতি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয়েছে সমালোচনা। পরিহাস এই যে, অতিরিক্ত ঘুষ আদায় করে যেন অনিয়ম না করা হয় সে বিষয়ে তিনি বেশ কঠোর। ভিডিওতে দেখা যায় কত টাকা ঘুষ নেওয়া হবে সেটা আলাপ-আলোচনায় ঠিক করে তিনি কঠোরভাবে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলছেন, ‘ছয় হাজার মানে ছয় হাজারই। ৬ হাজার ১০০ টাকা হলে পরবর্তী সময়ে আমি ব্যবস্থা নেব।’ এ ঘটনায় মাসুদুর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। অবশ্য অভিযুক্ত মাসুদুরের দাবি, তিনি চক্রান্তের শিকার। খাসজমি উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে তিনি বিভিন্ন ধরনের রোষানলের শিকার হচ্ছেন।
ভূমি বা জমিজমা নিয়ে মানুষকে যে কতরকম ভোগান্তি পোহাতে হয় তার কোনো ইয়ত্তা নেই। টিআইবির একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, দেশের মানুষ ভূমি সংক্রান্ত সেবা পাওয়ার জন্য প্রতিটি ধাপে ৫০০ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে বাধ্য হন। ই-নামজারির ব্যবস্থা করেও এ থেকে মুক্তি মেলেনি। ভুক্তভোগীরা বলছেন, অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে বাড়তি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের। অনলাইনে আবেদনের পর আবার মূল কাগজপত্র নিয়ে ভূমি অফিসে যোগাযোগ করতে হয়। তখন টাকা না দিলে অনলাইনে ঝুলে থাকে ফাইল। সবমিলিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য ভূমির মালিকানা অর্জনের চেয়ে ভূমিরক্ষা করাটাই যেন কঠিন। ভূমি ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়াকেও দ্রুত বাস্তবায়ন করা উচিত, যেন মানুষ মধ্যস্থতাকারী ও দালালদের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে সহজে ভূমি সংক্রান্ত সেবা পেতে পারে। দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নেই। তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলে ভূমি অফিসে একটি জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার সংস্কৃতি তৈরি হবে এবং মানুষ ভোগান্তি ছাড়াই সেবা নিতে পারবে।
আমরা বহু বছর ধরে যে শহরে বসবাস করি সেই শহরটি একটা গৌরবের শহর এবং সেই সঙ্গে বেদনারও। এই শহরে দেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি থাকেন, থাকেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ, সচিব, সেনাপ্রধান, সংসদ সদস্যরা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের প্রধানরা। ১৬১০ সালে এই শহর যখন সুবে বাংলার রাজধানী ছিল তখনো অমাত্যবর্গ এই শহরে বসবাস করতেন। তারপর রাজধানী যখন মুর্শিদাবাদে চলে যায় শহরটি পরিত্যক্ত হলেও একটি বড় শহরের মর্যাদা ও অমর্যাদা নিয়েই বেঁচেছিল। তখনকার অমাত্যবর্গ নিশ্চয়ই হেঁটে এই শহরে চলাচল করতেন না, তখনকার যোগাযোগব্যবস্থা কেমন ছিল তারও একটা চিত্র পাওয়া যায়। কালক্রমে এত শত বছর পেরিয়ে ঢাকা এখন কল্লোলিনী মহানগরে পরিণত হয়েছে। বহু রাস্তাঘাট, বাজার, বহুতল ভবন, শপিংমল তৈরি হয়েছে। জনসংখ্যার প্রবল চাপ এই ঢাকা শহরের ওপর। অর্থের, বাণিজ্যের বিপুল সমাগম হয়েছে, যা অকল্পনীয়।
মাত্র পঞ্চাশ বছর আগের এই শহরকে কেউ চিনতেই পারবে না। শহরের যা কিছু সৌন্দর্য ছিল সেগুলো ধ্বংস হয়ে গিয়ে শত শত ম্যাচবাক্সের মতো দালান গড়ে উঠেছে। এ যেন সারিবদ্ধ কতগুলো কংক্রিটের স্তূপ। শহর সম্প্রসারিত হয়েছে। সরকার বিত্তবান এবং তথাকথিত অভিজাতদের নামমাত্র মূল্যে আবাসনের ব্যবস্থা করেছে। শহরের জায়গার দাম প্রায় সোনার দামের মতো। জনস্বাস্থ্যের জন্য সরকারি ব্যবস্থা অপ্রতুল। পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বাণিজ্যের বিপুল প্রসার ঘটেছে। প্রচুর বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেয়ে গেছে আমাদের প্রিয় নগরী ঢাকা। কিছু কিছু এলাকায় সবুজ একেবারেই দেখা যায় না।
এ শহরে একটি বিষয় শুধু আজ থেকে পাঁচশত বছর আগে যে জায়গায় রয়ে গেছে তা হলো যানবাহন নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা। ইসলাম খাঁর সময়ে ট্রাফিক পুলিশ ছিল কিনা তা আমার জানা নেই। ইতিহাসবিদ বা গবেষকরা বলতে পারবেন। কিন্তু বর্তমানে লাখ লাখ যানবাহন চলার পরেও কোনো আধুনিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেই। একদা আধুনিক ব্যবস্থা চালু হয়েছিল, যেটা আমরা দেখতে পাই হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছে কতগুলো সিগন্যাল বাতি। বাতিগুলো কখনোই জ্বলছে না, কাজেই নেভার প্রশ্নই ওঠে না। মধ্যযুগীয় কায়দায় একজন নীল জামা পরা লোক শুধু হাত উঠাচ্ছে আর নামাচ্ছে। এই লোকটি একজন ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল, তার জ্ঞান শুধু সীমিত নয়, সে নানা সংকটে ভোগে। তার মাথাব্যথা ধরে, পারিবারিক কলহ আছে, টানাপড়েন আছে এবং এর মধ্যেই টুপাইস আয়ের ধান্ধাও আছে। সে কখনো কখনো কোনো রাস্তায় গাড়ি চলাচলের দিকনির্দেশনা দিতে ভুলে যায়। ফলে হাজার হাজার যানবাহন আটকে থাকে। আবার দেখা যায়, কোনো রাস্তায় যানবাহনই নেই সেই রাস্তায় সে চলাচলের নির্দেশ দিয়ে বসে আছে। কী অসাধারণ তার নৈপুণ্য!
কিন্তু একটা সময়ে শুধু সে নয়, তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও সাংঘাতিকভাবে সতর্ক হয়ে পড়ে, সব রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেয়। আসছে কোনো ভিআইপি। একবার চট্টগ্রামে দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। বসার কোনো জায়গা ছিল না সেখানে, অথচ রাস্তাটা পাড় হলেই আমার গন্তব্য। জানা গেল মহামান্য রাষ্ট্রপতি এখান দিয়ে যাবেন, অতএব নাগরিকদের সব চলাচল বন্ধ। তেমনি এক দিন বিজয় সরণিতে দেড় ঘণ্টা ধরে রাস্তা বন্ধ করে রাখা হলো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আসছেন। রাস্তাটি অতিক্রম করতেও দেওয়া হলো না। এই তো সেদিন গত শুক্রবার রাস্তা ফাঁকা, হঠাৎ দেখলাম সায়েন্স ল্যাবরেটরির সামনে রাস্তাঘাট সব বন্ধ হয়ে গেল। যাচ্ছেন কে? দেখলাম একটি কালো জিপে করে কোনো এক পুলিশ কর্মকর্তা যাচ্ছেন, তাকে পুলিশ ও সার্জেন্টরা স্যালুট দিচ্ছে এবং তিনি চলে যাওয়ার পর আমরা অনুমতি পেলাম চলার। সেই ফাঁকা রাস্তায়ও জনগণের সঙ্গে একটু পথ যেতে ওই কর্মকর্তার মর্যাদায় বাঁধল! এখানে এটাই স্বাভাবিক আগেই বলেছি, এই শহরে হাজার হাজার ভিআইপি, ভিআইপিদের সঙ্গে একজন লোক থাকে সেই পুলিশ ও সার্জেন্টদের রাস্তা ক্লিয়ার করার জন্য নির্দেশ দিয়ে থাকে। বলা বাহুল্য, শহরটা জনগণের শহর নয়, এটি ভিআইপিদের শহর। তাদের চলাচলের সুবিধার জন্য স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিস্টেমকে বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
ঢাকা শহর তো বটেই, বাংলাদেশের কোনো শহরেই নগর পরিকল্পনাবিদদের কোনো ভূমিকা নেই। যেকোনো স্থাপনার জন্য ওই ভিআইপিদের নির্দেশই যথেষ্ট। সরকারি ভিআইপি ছাড়াও অনেক বেসরকারি ভিআইপির জন্ম হয়েছে। অর্থের বলে তারা দিনকে রাত ও রাতকে দিন করতে পারে। যারা এই অনুমতি প্রদান করে ওই কর্মকর্তারা কি কখনো হিসাব করে দেখেন, যে ওই অপ্রশস্ত রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন কত গাড়ি চলে? আরেকটি হাসপাতাল বা টাওয়ার নির্মাণ করলে কতজন মানুষ এর সঙ্গে যুক্ত হবে, কত গাড়ি বাড়বে। অনুমতি মিলে গেল প্রভাব প্রতিপত্তি এবং অর্থের বলে, এখন সেই রাস্তা সবসময়ই জ্যাম হয়ে থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক।
শহরকে এখন আর যন্ত্রচালিত যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করে না, নিয়ন্ত্রণ করে লাখ লাখ রিকশা। এই রিকশাওয়ালাদের দিকে তাকালেই বোঝা যায় এরা কৃষিশ্রমিক, কৃষিতে তাদের পোষাচ্ছিল না। তাই শহরে চলে এসেছে। প্রচুর নগদ কামাই, সেই সঙ্গে নানা ধরনের স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ। অন্যদিকে এখনো কৃষিতে যারা আছে তারা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে আমাদের খাদ্যের জোগান দিয়ে যাচ্ছে। রিকশার মতো একটি মধ্যযুগীয় যানবাহন কোনো আধুনিক শহরে চলতে পারে? ভোটের রাজনীতির জন্য এই রিকশাচালকদের এই শহরে রাখতে হচ্ছে। কিন্তু তাদের বিকল্প আয়ের কোনো ব্যবস্থার কথা সরকার চিন্তা করছে না। সরকারের চিন্তা করার কোনো সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। কোনো একটি দপ্তর রিকশাচালকদের বিকল্প পেশার কথা ভাববে এবং ব্যবস্থা নেবে, সেরকম কোনো উদ্যোগ কখনই দেখা যায়নি। বড় বড় মেগা প্রজেক্ট হচ্ছে, হয়তো তারও প্রয়োজন আছে। কিন্তু এই মেগা প্রজেক্টগুলোতে রিকশাচালকদের কথা কখনো কি ভাবা হয়?
যারা এ দেশে রাজনীতি করেন তারা ক্ষমতা দখলের কথা ভাবেন। কিন্তু রাষ্ট্রটিকে আবাসযোগ্য করার জন্য কী করা যেতে পারে তার কোনো পরিকল্পনা আমাদের সামনে তুলে ধরেন না। আমাদের নাগরিকরাও সব কিছুতেই অভ্যস্ত হয়ে যান। বড় শহরগুলোতে যে ট্রাফিক সিগন্যাল নেই তা নিয়ে কেউ কোনো উচ্চবাচ্য করে না। অথচ প্রতিদিন জ্যামক্লান্ত নাগরিকরা প্রায় অসুস্থ হয়ে ঘরে ফেরে। বিষয়টি সরকারের জন্য এক কর্মদিবসের ব্যাপার। কিন্তু কোনো জটিল লাল ফিতার মধ্যে এবং বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বিষয়টি অপেক্ষা করছে। দেশে সরকারি স্কুলের বাইরে অনেক বেসরকারি স্কুল গড়ে উঠেছে এই স্কুলগুলোতে বিত্তবান লোকদের ছেলেমেয়েরা পড়ে এবং তারা গাড়িতে করে আসে। যতক্ষণ স্কুল চলে ততক্ষণ রাস্তার কোনো একটি জায়গায় তারা বসে থাকে এবং যানজটের একটা কারণ হয়ে দাঁড়ায়। স্কুল ছুটি হওয়ার সময় রাস্তাঘাট প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। তাতে উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারীদের কোনো সমস্যা হয় না। নানান ধরনের আওয়াজ করে তারা চলে যায়। সমস্যা হয় আমজনতা বা পাবলিকের। ব্যবসায়ী শাসিত সংসদেও এদের কোনো ভাবনার কথা শোনা যায় না। কারণ তাদের কোনো অসুবিধা নেই। ছেলেমেয়ে এ দেশে থাকে না, আর নিজেরা বিশাল বিশাল শুল্কহীন গাড়ির মালিক। কেউ কেউ হেলিকপ্টারে করেও কর্মস্থলে যান।
বাংলাদেশে বল্গাহীন পুঁজিবাদের শোষণের ফলে একটা শ্রেণির হাতে প্রচুর টাকা এসে গেছে। দুর্নীতিপরায়ণ রাষ্ট্রযন্ত্র এসব লোকদের জন্য সব সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে ফেলেছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও এ রকম ধনী মানুষেরা আছে কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র ক্ষমাহীন এবং মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত মানুষদের জন্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা থাকে নিজেদের স্বার্থেই। কিন্তু এখানে সেসব চিন্তার কোনো অবকাশ নেই। লুটপাট করো, বাইরে টাকা পাচার করো এবং রাষ্ট্রের সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করো, তাতে আবার পারও পাওয়া যায়। প্রায়ই বড় বড় ব্যাংক কেলেঙ্কারি দেখে আমরা স্তম্ভিত হই। এসব কারণেই রাস্তার বিশৃঙ্খলা, এই বিশৃঙ্খলা দেখে এই শহরে বসবাসরত রাষ্ট্রদূতরা মনে মনে হেসে নানা ধরনের মন্তব্যও করে থাকেন। আমরা কি চিরকাল হাসির পাত্র হয়ে থাকব? নাকি জ¦লে উঠবে লাল, সবুজ, হলুদ সিগন্যাল। পথ নিরাপদ হবে, শহরে থাকবে না কোনো ভিআইপির স্বেচ্ছাচার।
লেখক: নাট্যকার, অভিনেতা ও কলামিস্ট
অরুন্ধতী রায়ের ‘ইউরোপিয়ান এসে প্রাইজ’ জেতার খবরটি পেলাম ঘোষণার (১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩) দিন দুয়েক পরে। কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের অনলাইন ভার্সনে পড়লাম ফ্রান্স থেকে দেওয়া খটোমটো নামের এই পুরস্কার ৪৫ বছর ধরে দেওয়া হচ্ছে, এবারেই প্রথম কোনো ভারতীয় লেখক সম্মানজনক এই পুরস্কারটি পেলেন। মূলত আজীবন সম্মাননা কিংবা লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট হিসেবে দেওয়া হলেও পুরস্কার দেওয়ার সময় জুরিরা লেখকের ‘আজাদি : ফ্রিডম ফ্যাসিজম ফিকশন’ শীর্ষক প্রবন্ধ সংকলনের ফরাসি অনুবাদটিকে আমলে নিয়েছেন।
অরুন্ধতী রায়ের লেখার সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটে তার প্রথম এবং তখন পর্যন্ত একমাত্র উপন্যাস ‘দ্য গড অব স্মল থিংসের’ মাধ্যমে। পরবর্তী বিশ বছর তিনি আর কোনো আখ্যান লেখেননি, শুধুই নন-ফিকশন বা প্রবন্ধ লিখেছেন যেগুলো খুব বেশি মনোযোগ দিয়ে আগাপাশতলা পড়া হয়নি। তার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘দ্য মিনিস্ট্রি অব আটমৌস্ট হ্যাপিনেস’ পড়বার পর আমার মনে হলো যে কাব্যিক ভাষার জাদুতে দ্য গড অব স্মল থিংস আমাদের মোহিত করে রেখেছিল সেটি যেন অনেকটাই উধাও হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ক্ষুরধার ভাষায় বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে প্রবন্ধ রচনা করতে করতে হয়তো তিনি হয়ে উঠেছেন মূলত একজন প্রবন্ধ লেখক এবং অ্যাকটিভিস্ট পরিচয়টিই তার মুখ্য পরিচয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চার্লস ভেইলন ফাউন্ডেশন, এই পুরস্কার যারা দিয়ে থাকেন, এই মর্মে মত প্রকাশ করেছেন যে অরুন্ধতী রায়ের প্রবন্ধগুলো আসলে তার জন্য যুদ্ধাস্ত্র। এই সময়ে এসে কোনো লেখক যদি ভাবেন নিজের লেখা দিয়ে তিনি পৃথিবী বদলাতে পারবেন তাহলে তা ভীষণ উদ্ধত, উগ্র এমনকি খানিকটা নির্বোধের মতনও মনে হতে পারে, কিন্তু এই প্রচেষ্টার প্রশংসাই তারা করতে চান।
অরুন্ধতী রায়ের দুটি উপন্যাসের একটিও ভারতের সমসাময়িক রাজনীতির কলুষতা আর ‘বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্র’ হিসেবে গর্বের অসারতা দেখাতে ব্যর্থ হয়নি। দ্য গড অব স্মল থিংসে কেরালার কমিউনিস্ট পার্টির এক নেতার চরিত্র ছিল, আজাদি গ্রন্থের এক প্রবন্ধে রায় জানিয়েছেন, তার জন্মস্থানে তাকে অ্যান্টি কমিউনিস্ট তকমা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আবার অন্যদিকে মাওয়িস্ট আন্ডারগ্রাউন্ড দলের গ্রেপ্তারকৃত সদস্যদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত বইপত্রের মধ্যে ‘অরুন্ধতী রয়ের কিছু লেখা পাওয়া গেছে’ বলে এক খবরে প্রকাশ হয়, স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে একটি সংবাদপত্রে ছোট্ট এই খবরটি দেখতে পান লেখক।
প্রথম উপন্যাসে নিম্নবর্নের হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের বিবরণ আধুনিক ভারত রাষ্ট্রের তথাকথিত গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তিকে আহত তো করেছিল বটেই, ভেলুথা নামের পারাভান চরিত্রটির সঙ্গে সিরিয়ান খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নারীর প্রেমের সম্পর্ক দেখানোতে অশালীনতা আর অনৈতিকতার দায়ে মামলা পর্যন্ত করা হয় লেখকের বিরুদ্ধে। আবার দ্বিতীয় উপন্যাসে কাশ্মীরের মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে মুসলিম, চাঁড়াল, হিজড়া, পিতৃপরিচয়হীন শিশু যে কোনো একটি হিসেবে ‘প্রান্তিক’ মানুষদের নিয়ে একটি বিরাট আখ্যান তিনি রচনা করেছেন যা গণতন্ত্রের তেরঙ্গা ঝাণ্ডা ওড়ানো আধুনিক ভারত রাষ্ট্রের বৈষম্যমূলক চরিত্রের স্বরূপ উন্মোচন করে। বিজেপির ‘এক ধর্ম এক রাষ্ট্র’ নীতিকে তিনি এই উপন্যাসের শত্রু হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
আজাদি বইয়ের বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ আসলে তার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপলক্ষে দেওয়া বক্তৃতার লিখিত রূপ। প্রথম প্রবন্ধ ‘ইন হোয়াট ল্যাঙ্গুয়েজ ডাজ দ্য রেইন ফল ওভার টরমেন্টেড সিটিজ?’ শীর্ষক ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি মাতৃভাষার বদলে ইংরেজিতে লেখালেখি করার কারণ জানান। এই প্রবন্ধেই তিনি বলেন যে, একই উৎস থেকে উৎপত্তি হওয়া দুটি ভাষা হিন্দি আর উর্দুর মধ্যে হরফের পার্থক্যজনিত কারণে একটিকে হিন্দুদের অন্যটিকে মুসলমানদের ভাষা হিসেবে ধরে নেওয়া একটি ঐতিহাসিক ভুল। কোনো একটি ভাষাকে নিজের ভাবা কিংবা না ভাবা নিয়ে আরও বহু আলাপই আছে। সঙ্গে একটি চমকপ্রদ তথ্যও তিনি দিলেন। দ্য মিনিস্ট্রি অব আটমৌস্ট হ্যাপিনেস উপন্যাসের ৪৮টি অনুবাদের মধ্যে দুটি হয়েছে হিন্দি এবং উর্দুতে। লেখক জানালেন উর্দু ভাষায় ভালোবাসা বা প্রেমের জন্য বহু শব্দ থাকলেও যোনির জন্য কোনো শব্দ নেই। ভ্যাজাইনার জন্য লাগসই একটি মাত্র শব্দবন্ধ পাওয়া গেছে আর তা হলো ‘আউরত কা শরমগাহ’ কিংবা নারীর লজ্জাস্থান। নারীর সতীত্বের সঙ্গে সম্ভ্রম বা ইজ্জতকে গুলিয়ে ফেলার প্রবণতা সহজে প্রকাশিত হয় উর্দুর মতন সমৃদ্ধ একটি ভাষায়, নারীর জননাঙ্গের জন্য কোনো সঠিক প্রতিশব্দ না থাকাতে।
‘ইনটিমেশন অব অ্যান এন্ডিং : দ্য রাইজ অ্যান্ড দ্য রাইজ অব দ্য হিন্দু নেশন’ শীর্ষক বক্তৃতায় অরুন্ধতী রায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির কীর্তিকলাপের বিশদ বর্ণনা এবং তার দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার, যা আরএসএস বা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ নামের মিলিট্যান্ট সংগঠনটির মাধ্যমে শুরু হয়েছিল, তার মতাদর্শিক জায়গাটি বিশ্লেষণ করে দেখান। তার বিশ্লেষণে উঠে আসে বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রের প্রজেক্ট বাস্তবায়িত হলে কী কী বিপদ কোন কোন দিক থেকে ঘনিয়ে আসবে। তার দ্বিতীয় উপন্যাসের মূল উপজীব্য আসলে এটিই।
‘দ্য ল্যাঙ্গুয়েজ অব লিটারেচার’ শীর্ষক প্রবন্ধে তিনি বলেন হায়দ্রাবাদের এক কলেজে বক্তৃতা দিতে গিয়ে দেখা হওয়া এক অধ্যাপক তাকে উপদেশ দিয়েছিলেন যে, ফিকশন লিখে আর সময় নষ্ট করবার দরকার নেই, রাজনৈতিক লেখাপত্রের দিকেই বরং তার বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত। আবার পাশে বসা এক সাহিত্যের অধ্যাপক কানে কানে বলেন, ‘আপনি আবার কবে সাহিত্যে ফেরত যাবেন? ওটাই আপনার সত্যিকারের স্থান, বাদবাকি যা লিখছেন সেগুলো কেবল সাময়িকভাবে গুরুত্বপূর্ণ’। দুই অধ্যাপকের পরস্পরবিরোধী উপদেশ শুনে রায় হাসিমুখে স্মরণ করেন নিজের প্রিয় লেখক জন বার্জারের হাতে লেখা মেসেজ, যাতে তিনি লিখেছিলেন ‘তোমার ফিকশন আর নন-ফিকশন তোমার দুই পায়ের মতন, যা দিয়ে তুমি পৃথিবীর বুকে হাঁটতে পারো’।
আমি নিজে পাঠক হিসেবে নিজের প্রিয় লেখকের প্রবন্ধের জন্য পুরস্কারপ্রাপ্তিতে অত্যন্ত আনন্দিত এবং বার্জারের সঙ্গে একমত। রায়ের প্রবন্ধগুলো ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতির সাপেক্ষে অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ হলেও তার উপন্যাসের গুরুত্ব মোটেও কম নয়। মাত্র দুটি উপন্যাসেই তিনি তার দেখা পৃথিবীকে বর্ণনা করেছেন সততা আর দক্ষতার সঙ্গে। কানাডিয়ান লেখক গাই ভ্যান্ডারহেইগের মতে, ‘ইতিহাস আমাদের জানায় কী ঘটেছিল আর রাজনৈতিক উপন্যাস আমাদের জানায় যা ঘটেছিল তাতে মানুষ আসলে কেমন অনুভব করেছিল’। অরুন্ধতী রায়ের উপন্যাসের চরিত্ররা কাল্পনিক। কিন্তু ভারতের নাগরিক প্রান্তিক জনগণ যে জুলুম আর নিপীড়নের ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন, তা বাইরে থেকে বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে না দেখে ভেতর থেকে অনুভব করতে চাইলে রায়ের কাল্পনিক চরিত্রদের কাছে আমাদের যেতেই হবে।
লেখক : কথাসাহিত্যিক
আমরা যারা এখন সিনিয়র সিটিজেন, গত শতকের ষাট সত্তর দশকে, সাম্রাজ্যবাদের সদর দপ্তরে কামান দাগো, স্লোগান শুনতে শুনতে বড় হয়েছি, তাদের কাছে আমেরিকা ঘোরা নিঃসন্দেহে এক বড় অভিজ্ঞতা। ঘুরতে এমনিতে বেশ লাগে। সময় সুযোগ পেলেই এদিক-সেদিক যাওয়ার অভ্যেস আশৈশব। তবে পায়ের তলায় যত শর্ষেই থাক না কেন, আমার ছোটাছুটি মোটের ওপর দেশের চৌহদ্দির মধ্যেই। কখনো কাশ্মীরের লালচক, নিশাদ গার্ডেন, দিল্লির পুরনো মহল্লার অলিগলি, বল্লিমারানের গালিবের কোঠি বা ভরা বর্ষায় জানা-অজানা কোনো নদীর তীর আমাকে টানে। ইদানীং খুব, খুব ভালো লাগে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াতে।
আমার ঘোরাঘুরি নিয়ে একটা বই করলে মন্দ হয় না। তবে ওই যে বললাম, যা ভালো লাগা সব ভারত বাংলাদেশের নানা জনপদ। বিদেশ বিভুঁইয়ে যাওয়ার কথা দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি। একে তো ভিসা করো, পাসপোর্ট দেখো, ডলার-পাউন্ড কত কী নিতে হবে তার হিসেব-নিকেশ করতে থাকো, তারপরে আবার অত ঘণ্টা প্লেনে বসে থাকা, সবমিলিয়ে অত সব ঝড়-ঝঞ্ঝাটের কথা ভাবলেই বুকের ভেতর ধড়ফড় করে। এমনিতেই একটু অলস প্রকৃতির, তারপর বিদেশে যাওয়ার কথা ভাবলেই গায়ে জ্বর আসে। অনেক বন্ধু বিভিন্ন জায়গায় যায়-টায়। এসে গল্প বলে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবিটবি দেয়, হাসিমুখে সেলফি তুলে লেখে, অফ টু লন্ডন বা আমেরিকা, টপাটপ লাইক পড়ে, কমেন্টের বন্যা বয়, আমার সে সব দেখেই আনন্দ।
কিন্তু, কপালের লিখন কে খন্ডাবে! আর সুযোগ এলো তো এলো, এক্কেবারে সদর দপ্তরে। নিউ ইয়র্ক থেকে আচমকা আমন্ত্রণ। আন্তর্জাতিক কনফারেন্স। যেতে হবে। হবেই। মওলানা ভাসানী ফাউন্ডেশন, আমেরিকা, চতুর্থ সম্মেলন করছে, সেখানে বক্তৃতা দিতে হবে। সবে সবে ছোট একটা ডকুমেন্টারি ফিল্ম শেষ করেছি মওলানা ভাসানীর ওপর। সেটা তাহলে ওখানেই প্রিমিয়ার করা যাবে। সবমিলিয়ে সাত পাঁচ ভেবে হ্যাঁ বলে দিলাম উদ্যোক্তাদের। তারাও মহাখুশি হয়ে অফিশিয়াল চিঠিপত্র পাঠালেন সময় মতো। আমেরিকান কনস্যুলেট ভিসার আবেদনপত্র দেখে সবিনয়ে জানিয়ে দিলেন, যে তারা তাদের দেশে যেতে চেয়েছেন বলে কৃতার্থ বোধ করছেন।
আমি ভাবলাম যাক, ভিসা পাওয়া তাহলে কঠিন হবে না। কিন্তু কী কান্ড! আমার স্ত্রী ভালো করে আদ্যোপান্ত মেইল দেখে বলে উঠলেন এতো চব্বিশ সালে তোমাকে ইন্টারভিউতে ডেকেছে ভিসা দেবে বলে। কনফারেন্স তো তেইশ সালের সেপ্টেম্বরে। তাই তো! সাড়ে চুয়াত্তর সিনেমার সুচিত্রা সেনের অলস বাবার মতো পাশ ফিরে শুয়ে নিশ্চিন্ত হলাম, যাক, শেষ অবধি সাত সমুদ্দুর পার হতে হচ্ছে না ভেবে। কিন্তু কোন জাদুমন্ত্রে ভাসানী ফাউন্ডেশন ফের মেল চালাচালি করে সাতদিনের মধ্যে নতুন করে ইন্টারভিউয়ের ব্যবস্থা করে ফেলল। আর কী আশ্চর্য ভিসা পেয়েও গেলাম। ভিসা নিয়ে বিজয় গর্বে কনসুলেটের গেট পার হতে হতে, মিথ্যে বলব না, আনন্দ একটু হচ্ছিল। সেই সঙ্গে, আমার বন্ধু কে.পি শশীর দু-মিনিটের মিউজিক ভিডিও, আমেরিকা আমেরিকা চোখের সামনে ভাসছিল।
ভিসার লাইনে বিপুলসংখ্যক তরুণদের ভিড়। সবাই উচ্চশিক্ষা নিতে আমেরিকা যেতে চায়। চোখেমুখে অদ্ভুত উজ্জ্বলতা। গেলে অধিকাংশ হয়তো আর এদেশে ফিরবে না। গ্রিন কার্ড পেয়ে বাড়িতে ডলার পাঠাবে। সেই টাকায় বাবা-মা ব্যাঙ্গালোর, মুম্বাই, দিল্লি, কিংবা কলকাতায় নতুন ফ্ল্যাট কিনে গৃহ প্রবেশে পড়শীকে বলবে, ছেলে আমার স্টেটসে থাকে। মনে পড়ে যাচ্ছিল, আমাদের ছোটবেলা, ভিয়েতনামের যুদ্ধ, ম্যাকনামারা ফিরে যাও বলা অজস্র তরুণ মুখ, বিশ্বে আনবে নতুন দিন, মাও সেতুং আর হো চি মিন... । পরে, আরও পরে বিশ্বজুড়ে ইসলাম ফোবিয়া, কিউবা, ইরাক, চিলি, ভেনেজুয়েলা, নিগ্রো ভাই আমার... সব মনে পড়ছিল, চার্লি চ্যাপলিন আর মুহম্মদ আলি রাতের ঘুম কাড়ছিল। তবুও গুছিয়ে টুছিয়ে নির্দিষ্ট দিনে প্লেনে উঠলাম। এবং এক সময়ে হুশ করে পৌঁছেও গেলাম আমেরিকা।
মাত্র কদিনে তো কোনো দেশই দেখা হয় না। তারপর আবার আমেরিকার মতো বিপুল এক মহাদেশ। শুধু নিউ ইয়র্ক স্টেট যদি ধরি, সে তো প্রায় বাংলাদেশের সমান। প্লেনে বসে জানলার দিকে তাকাতেই মন ভালো হয়ে গেল। বাইরে কাঁচা হলুদ রোদ্দুর। প্লেন ল্যান্ড করতে করতে সকাল সাড়ে ৭টা। তখনো শহর সেভাবে জাগেনি। ইমিগ্রেশন লাইনের দিকে তাকাতেই বুক কাঁপতে লাগল। বিশাল লম্বা এক লাইন। এ লাইন আজ শেষ হবে বলে তো মনে হয় না। আসার সময় ফোন রোমিং করিয়ে ছিলাম। সেটা মাঝেসাঝে ঠিকঠাক কাজ করছে। কখনো হঠাৎই নীরব হয়ে পড়ছে। আমেরিকান পাসপোর্ট যাদের, তাদের লাইন আলাদা করা হতেই দুড়দুড়িয়ে অনেক ভারতীয় সেদিকে ছুটল। বেশিরভাগ সাউথ ইন্ডিয়ান। প্লেনে কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। নিউ জার্সিতে থাকেন। আইটি ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরি করেন। লাইন খুব ধীরলয়ে এগোচ্ছে।
আমাকে নিতে চলে এসেছেন নাসের ভাই। মঈনুদ্দিন নাসের। বহু বছর আগে চট্টগ্রাম থেকে নিউ ইয়র্কে এসে থিতু হয়েছেন। পরোপকারী, অমায়িক ভদ্রলোক। দিনরাত পরিশ্রম করেন। তবুও মুখে সবসময় হাসি লেগে আছে। লাইন দেখে ভাবছি, কখন বাইরে যাব বা আদৌ যেতে পারব কি না, তখন বার দুই ফোন করে নাসির ভাই আশ্বস্ত করলেন, চিন্তা করবেন না। আমি আছি। সাহস একটু পেলাম বটে, তবে তা সাময়িক। আসলে দেশে থাকতে এত লোক, এতভাবে ইমিগ্রেশন নিয়ে ভয় দেখিয়েছেন, যে ইমিগ্রেশন কাউন্টারে বসা লোকগুলোকে দূর থেকে কেমন দানব দানব মনে হচ্ছে। ছোটবেলা থেকে পুঁজিবাদী বিদ্বেষ তো আছেই। কত কিছু শুনেছি, মোবাইল খুলে খুলে চেক করা হবে, আপাদমস্তক ছানবিল করে দেখা হবে যে, সন্দেহজনক কিছু কাগজপত্র আছে কি না ইত্যাদি হাজারও সতর্কবাণী। সামনে মাত্র দুজন লোক। দুরুদুরু বুকে এগোলাম। ইমিগ্রেশন অফিসার অত্যন্ত ভদ্র, মৃদুভাষী। পাসপোর্ট উল্টে পাল্টে দেখে, কেন এসেছি জিজ্ঞেস করে হাসিমুখে, হ্যাভ অ্যা গুড জার্নি বলে হাত তুলে বিদায় জানাতেই টের পেলাম সত্যি সত্যিই আমেরিকায় পৌঁছে গেছি।
লাইনে দাঁড়িয়ে একঝলক আমেরিকা চেনার চেষ্টা করছিলাম। মোটে আট-দশ দিনে কতটুকুই আর একটা জনপদকে চেনা যায়! তাও থাকছি তো মাত্র এক শহরেই। নিউ ইয়র্ক। ফলে আমেরিকা দেখা না বলে নিউ ইয়র্ক দেখা বলাই বোধহয় ঠিকঠাক। তার পরে আবার সারা জীবন আমেরিকা নিয়ে আমাদের ছুঁতমার্গিতা কম নেই। প্রায় গোয়েন্দা দৃষ্টিতে প্রথম থেকেই আমেরিকা চেনার চেষ্টা চালাচ্ছি। একটা কিছু বিসদৃশ চোখে পড়লেই ধরে ফেলেছি, ধরে ফেলেছি ভাব নিয়ে পুলকিত হচ্ছি। এই যেমন এই ঘণ্টাখানেকের মধ্য একটা জিনিস চোখে পড়েছে। যারা সাধারণ এমপ্লয়ি, ঝাড়ু দিচ্ছে বা হাত ঠেলা টানছে কিংবা বুড়ো-বুড়ির হাত ধরে নিয়ে আসছেন কাউন্টারের দিকে, তারা অধিকাংশই কালো চামড়ার। পরেও এটা দেখতে দেখতে নিশ্চিত হয়েছি যে, গণতন্ত্রের যত বাকফট্টাই আমেরিকা করুক না কেন, আমেরিকা থেকে হোয়াইট সুপ্রিমেসি কখনো যাবে না। যে কালো মানুষের শ্রমনির্ভরতা আমেরিকাকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করেছে, তাদের প্রতি বৈষম্য ও অবহেলা এখনো, এই একুশ শতকেও গড় আমেরিকান বাসিন্দাদের অস্থিমজ্জায়।
গেটের বাইরে আসামাত্র এক দমকা টাটকা বাতাস মন ভালো করে দিল। গ্লোবাল ভিলেজের অন্যতম ধনী শহর এই নিউ ইয়র্ক। আমি নেমেছি নিউ জার্সির কাছে, তুলনায় ছোট এয়ারপোর্টে। সামনে ঝা চকচকে রাস্তা। নানা ভাষাভাষী, নানা ধর্মের, জাতের লোকজন নিজের নিজের গন্তব্যে যেতে বাহন খুঁজছেন। এক মহিলা ট্যাক্সি লাগবে কি না আমার কাছে জানতে চাইলেন। ততক্ষণে ভাসানী ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি মহম্মদ নাসের গাড়ি চালিয়ে সটান আমার কাছে। পরম উষ্ণতায় বুকে টেনে নিলেন। আমেরিকা গিয়ে কোথায় কী করব, কদিনের ভয় নিমেষে ভেঙে গেল। পইপই করে আমার বন্ধু, ডাক্তার অনিরুদ্ধ বোস বলে দিয়েছিল যে, গিয়ে হোটেলে ঢুকেই ঘুমের ওষুধ খেয়ে আগে অন্তত চার ঘণ্টা ঘুমিয়ে নিবি। না হলে জেটলগে মাথা ধরে থাকবে।
কিন্তু নতুন শহর, পুঁজিবাদী দুনিয়ার স্বর্গরাজ্য দেখার আনন্দে জেটলগ-টগ কোথায় চলে গেছে। ওয়েদার ভারি চমৎকার। সামান্য শিরশির করছে। নাসের ভাই জোর করে কফি মগ ধরিয়ে দিয়ে নিজে স্টিয়ারিংয়ে হাত দিয়েই ঘোষণা করে দিলেন, হোটেল টোটেল পরে হবে দাদা, আপনি তো ইয়াং, ফ্রেশ লাগছে। চলুন, শহরটা এক চক্কর ঘুরিয়ে দেখাই আপনাকে। এক্কেবারে রাতে হোটেলে ঢুকবেন। অনিরুদ্ধর মুখ আবছা মনে পড়লেও খুশিই হলাম। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখছি ঝলমলে নীল আকাশ। লিঙ্কন টানেল পার হতেই দুনিয়ার সম্ভবত সবচেয়ে ধনী এলাকা, ম্যানহাটনের চৌহদ্দিতে, বিরাট বিরাট গগনচুম্বী প্রাসাদের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকছি। দু-পা সামনে এগোতেই হাডসন নদী। পাল তোলা নৌকা ঘাটে দাঁড়িয়ে। এও যেন এক টুকরো বাংলা। নদীর জলে রোদ চিকচিক করছে। আকাশ জল মিলেমিশে কবিতার জন্ম দিচ্ছে। হাডসনকে মুহূর্তে ভালোবেসে না ফেলে উপায় নেই। হাডসন যেন সেই ‘কীর্তিনাশা’, যার রূপে ডুবে আমেরিকার সব দোষ আপাতত মাফ করে দিলাম।
লেখক: ভারতীয় প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা ও লেখক
১৯৮৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন ছন্দবিশারদ ও রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ প্রবোধচন্দ্র সেন। জন্ম ১৮৮৭ সালের ২৭ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার চুলতা গ্রামে। বাবা হরদাস সেন, মা স্বর্ণময়ী সেন। তিনি সিলেট মুরারিচাঁদ কলেজ থেকে ১৯২৪ সালে ইতিহাসে অনার্সসহ বিএ এবং প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৭ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। কর্মজীবনের শুরুতে খুলনার দৌলতপুর কলেজের ইতিহাস ও বাংলার অধ্যাপক ছিলেন। পরে বিশ্বভারতীতে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে বিদ্যাভবনের রবীন্দ্র-অধ্যাপক ও রবীন্দ্রভবনের অধ্যক্ষ ছিলেন ১৯৪১ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত। এরপর বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এবং পুনর্গঠিত রবীন্দ্রভবনের রবীন্দ্র-অধ্যাপক ও অধ্যক্ষ ছিলেন। বিশ্বভারতীর ইমেরিটাস অধ্যাপক ছিলেন ১৯৬৫ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত। বাংলা ছন্দের বিশ্লেষক প্রবোধচন্দ্র ছন্দের ইতিহাস রচনা, রবীন্দ্রনাথ ও অন্য প্রধান কবিদের ছন্দ বিশ্লেষণ, বাংলা ছন্দের ব্যাকরণ ও পরিভাষা তৈরিতে পাণ্ডিত্যের পরিচয় দিয়েছেন। ইতিহাস, শিক্ষা, সমাজ, সংস্কৃতি ও বাংলা সাহিত্যের আলোচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। তার বইগুলোর মধ্যে রয়েছে : বাংলা ছন্দে রবীন্দ্রনাথের দান, ছন্দ পরিক্রমা, ছন্দ-জিজ্ঞাসা প্রভৃতি। তার আরেকটি উল্লেখযোগ্য কীর্তি রবীন্দ্রনাথের ‘ছন্দ’ গ্রন্থের সম্পাদনা। তিনি বঙ্কিম স্মৃতি পুরস্কার, দেশিকোত্তম উপাধি, কল্যাণী ও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট ও এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে মরণোত্তর রবীন্দ্র শতবার্ষিকী স্মারক পদক পেয়েছেন।
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
আইন মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি বলছে, আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে। সরকারের এমন নেতিবাচক সিদ্ধান্তের পর এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি দেয়নি দলটি। তবে এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি এক দফার আন্দোলনের সঙ্গে যোগ হতে পারে বলে জানা গেছে।
৫৩ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও দলীয় নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গুরুতর। বিদেশে নেওয়া ছাড়া তার উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়। সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসনকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ চেয়ে তার ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। এতে মতামত দিতে আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় আইন মন্ত্রণালয় এতে মতামত দেয়। এ বিষয়ে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেছেন, তার সাময়িক মুক্তির আদেশটা বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) কারাগারে নেওয়া হলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া বাসায় চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশে যেতে পারবেন না এমন দুটো শর্ত সাপেক্ষে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে দন্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। দরখাস্তটা নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে আটবার দন্ড স্থগিত করা হয়েছে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার কোনো সুযোগ আইনে থাকে না। আমরা ৪০১ ধারার উপধারা ১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ ব্যাখ্যা করে মতামত পাঠিয়েছি। আমাদের মতামত হলো, ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে, সেটা অতীত এবং মীমাংসিত। এটা আর খোলার কোনো উপায় নেই।’
এক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে (খালেদা জিয়া) সাজা স্থগিত রেখে যে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, সেটা বাতিল করে তারপর পুনরায় বিবেচনা করার সুযোগ থাকলে সেটা করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই উপমহাদেশে ৪০১ ধারার ক্ষমতা যখন প্রয়োগ করে, তখন এটি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না বলে সিদ্ধান্তের নজির আছে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন যে আদেশটা আছে, সেটা যদি বাতিল করা হয়, বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) যদি আবার কারাগারে নেওয়া হয়, তাহলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু এ অবস্থায় আদালতে যেতে পারবেন না।’ খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের বিষয়টি বাতিল করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা অমানবিক হবে, বাতিল করব না।’
আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এক বার্তায় বলেন, ‘আজকের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, দেশে আইনের শাসন নেই। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক ভয়ংকর তামাশা করা হচ্ছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, নির্বাহী বিভাগ চাইলেই কাউকে মুক্তি দিতে পারে।’
খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় বিএনপি কী এখন ভাবছে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে।’
আর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর নীলনকশার অংশ। মানবতাবিরোধী ও সরকারের বর্বর ইচ্ছা পূরণের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।’
দলটির নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদন আইনগতভাবে বিবেচনা না করে, রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে। ফলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করতে না পারলে বিএনপিপ্রধানের মুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমেই এই ইস্যুর সুরাহা করতে চায় দলটি।
কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেখানে বলা হয়েছে, তাকে “দেশে চিকিৎসা নিতে হবে”, তার বদলে “দেশে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন” বলাই যথেষ্ট। কিন্তু দেশে চিকিৎসা গ্রহণের শর্তারোপ করা হলে তা যে চিকিৎসার বিবেচনায় না করে রাজনীতির বিবেচনায় করা হবে, সেটা বোঝার মতো বুদ্ধি সাধারণ মানুষের আছে।’
অসুস্থতার কারণে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের মার্চে করোনার সময় টানা দুই বছর কারাভোগের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরেছিলেন খালেদা জিয়া। পরে এ পর্যন্ত তার মুক্তির মেয়াদ আটবার বাড়িয়েছে সরকার।
এরই মধ্যে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তাকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ দিতে পরিবারের পক্ষে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এ বিষয়ে আইনি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদনটি পাঠায়।
বিএনপিপ্রধানকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছিল ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি সরকার ইতিবাচকভাবে দেখতে পারে’। কিন্তু সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ‘বিদেশে যাওয়ার আবেদন করতে হলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরত গিয়ে করতে হবে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের পর সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় এবারও ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না। গত শনিবার এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এ শঙ্কাই প্রকাশ করেছিলেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা আছে, যেকোনো মূল্যে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকার মরিয়া। সে কারণে হয়তো খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি ঝুঁলিয়ে রাখতে চাইছে এমনটাই মনে করছে সরকারবিরোধীরা। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দিলেই সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলেও বিরোধী নেতাদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। তবে শর্ত দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দল যাতে সম্মত না হয়, সে কথাই নেতাদের বলে রেখেছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির হাইকমান্ড মনে করছেন, এ অবস্থায় চলমান এক দফার আন্দোলনে খালেদা জিয়ার মুক্তি বিষয়টি থাকলেও সেটাকে আরও জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে; যাতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নেয়।
জানা গেছে, এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে দলটি। আজ সোমবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক রয়েছে। সূত্র বলছে, জোটগত ছাড়াও দলীয়ভাবেও কর্মসূচি আসতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক চিকিৎসক জানান, হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তার কেবিনে এক্স-রে মেশিন নেওয়া হয়েছিল গতকাল ভোরে। শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে না এলে সিসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ ছিল। দুপুরে তার ইসিজি ও ইকো ডায়াগ্রাম করানো হয়েছে। ফুসফুসের পানি অপসারণের জন্য তার ডান পাশে যে ক্যাথেটার লাগানো ছিল, সেটা আপাতত খুলে ফেলা হয়েছে।
লিভার জটিলতা ছাড়াও ৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ফুসফুস, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। গত ৯ আগস্ট ফিরোজায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে দলীয় মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) সেটআপে কেবিনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছে।
জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘ওনার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সে জন্য তাকে দ্রুত বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে পাঠানো দরকার।’
হতাশায় শেষ খালেদার অপেক্ষা
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
সাড়ে ৩ বছরে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স
দেশের বিদেশি মুদ্রা আয়ের অন্যতম হাতিয়ার প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের ধস নেমেছে। সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশে অবস্থানকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধপথে ও ব্যাংকের মাধ্যমে মাত্র ১৩৪ কোটি ডলারের বিদেশি মুদ্রার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। গত সাড়ে তিন বছরে এটি সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স। ৪১ মাস আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে এর চেয়ে কম ১০৯ কোটি ডলার সমপরিমাণের রেমিট্যান্স এসেছিল। রেমিট্যান্স-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দামের ব্যবধান বেশি হলে হুন্ডিতে লেনদেন বেড়ে যায়। আর যখন হুন্ডির চাহিদা বাড়ে তখন রেমিট্যান্স কমে যায়। গত মাসে ব্যাংকের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দাম ৬ থেকে ৭ টাকা বেশি ছিল। তাই বেশি লাভের আশায় বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন প্রবাসীরা।
ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজার ছাড়াল
এ বছর অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে ডেঙ্গু। গতকাল রবিবার ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজারের কোটা ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) সারা দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬ জনে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৮৮২ জন।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
অকাজের ৩৭০০ কোটির সেতু
সেতু হয়। কিন্তু সড়ক হয় না। সেতু করার জন্য নানান প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু সেসব সেতু করেই দায়সারা বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়। ভোগান্তি সাধারণ মানুষের। আবার যতগুলো সেতু করার কথা ততগুলো না করেও প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ করার প্রতিবেদনও দেওয়া হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সারা দেশের গ্রামের রাস্তাগুলোতে সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পে। প্রকল্পের এসব অনিয়ম উঠে এসেছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবি আ.লীগ নেতার
আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার। গত শনিবার রাতে তার ফেসবুকে এ দাবি জানিয়ে স্ট্যাটাস দেন তিনি।
মুহূর্তেই স্ট্যাটাসটি ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিএনপির অসংখ্য নেতা, কর্মী-সমর্থক তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রশংসা করেন। অন্যদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নিন্দা জানিয়ে দলীয় সব পদ থেকে তার বহিষ্কারের দাবি জানান।
আবদুল মোতালেব হাওলাদার তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘রাজনৈতিক কারণে আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দেওয়া হউক।’
স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন অধরাই
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
ফুটপাত থেকে মদের বার সবখানে চাঁদাবাজি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের কমিটি পার করেছে পাঁচ বছরের বেশি সময়। মেয়াদোত্তীর্ণ এ কমিটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। কিছু নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার তথ্য রয়েছে। সর্বশেষ মদের বার ভাঙচুর ও লুট করে আবারও আলোচনায় এ কমিটির নেতাকর্মীরা।
নতুন কমিটি না হওয়ায় নেতারা বেপরোয়া আচরণের পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছেন বলে মনে করেন সাধারণ কর্মীরা। তারা বলেন, সংগঠনের কর্মকাণ্ডও স্থবির হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান তারা।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মো. রিপন মিয়াকে সভাপতি ও মাহমুদুল হক জুয়েল মোড়লকে সাধারণ সম্পাদক করে তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের জন্য আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে গত বছর ১২ জুন ৩২১ জনের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য।
অপেক্ষা আর মাত্র ৩ দিনের। তারপরই শুরু হয়ে যাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ডের চার বছরের রাজত্ব আরও চার বছর টিকিয়ে রাখার আর বাকিদের সেই মুকুট কেড়ে নেওয়ার লড়াই শুরু হবে গতবারের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই দিয়েই।
শাহরুখ খানকে দিয়ে প্রোমো আর রণবীর সিংকে দিয়ে থিম সং, আইসিসি জানান দিয়েছে ক্রিকেটে বলিউডি আবেগের মিশেল ভালোই থাকবে। কিং খানের ‘জাওয়ান’ কাঁপাচ্ছে পর্দা, কাটতি বাড়ছে বক্স অফিসে; বিশ্বকাপে আইসিসির পকেট ভরবে তো?
প্রস্তুতি বলছে, ভরবে। উইকেটে হবে রান উৎসব, লড়াই হবে ধুন্ধুমার। তাতেই ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ হবে এক ব্লকবাস্টার মেগা হিট।
মাস তিনেক আগে, বিশ্বকাপের মূলপর্বের ম্যাচগুলো যে ১০ ভেন্যুতে আয়োজন করা হবে সেই ভেন্যুগুলোর কিউরেটরদের সঙ্গে বসেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান কিউরেটর। সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপের একটাই মন্ত্র, রান চাই।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে, ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে ৩ ওয়ানডের সিরিজ খেলেছে সেই ম্যাচগুলো যদিও বিশ্বকাপের ভেন্যুতে হয়নি তবে সেই সব ম্যাচেও রানের বন্যা বয়েছে।
প্রথম দুটো ওয়ানডেতে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার করা ২৭৬ রান অনায়াসে তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছে ভারত। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ঠেঙিয়ে তুলেছেন ৩৯৯ রান। তিন নম্বর ম্যাচে আবার অস্ট্রেলিয়া করেছে ৩৫২ রান, যা তাড়া করে ভারতও গিয়েছিল ২৮৬ অবধি।
উদ্বোধনী ম্যাচ হবে গুজরাতের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। এখানে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় গত ১ ফেব্রুয়ারি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। ম্যাচে শুভমান গিল করেন সেঞ্চুরি, ভারত করে ৪ উইকেটে ২৩৪ রান আর জবাবে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ৬৬ রানে।
বোঝাই যাচ্ছে, উইকেটের ধরন বুঝে ব্যাট করতে পারলে ৫০ ওভারে এখানে রানবন্যা হবে। বিশ্বকাপে ভারত-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। দুই দল এখানে মুখোমুখি হয়েছে বহুবার, পোশাকের রঙ কখনো রঙিন কিংবা কখনো সাদা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ কমেনি। এই মাঠে অস্ট্রেলিয়া ২৬৯ রান করে ভারতকে ২১ রানে হারিয়েছে সবশেষ ম্যাচে।
আইপিএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ঘরের মাঠে সবশেষ মৌসুমে ধোনির ‘ইয়েলো আর্মি’ ৮ ম্যাচ খেলে ২০০ রানের ওপরে করেছে দুইবার, একবার জিতেছে অন্যবার হেরেছে। তবে দুই ইনিংসেই ২০০’র বেশি রান হয়েছে দুটো ম্যাচেই। অর্থাৎ চাইলে চেন্নাইকেও ব্যাটিং স্বর্গে পরিণত করা সম্ভব।
বিশ্বকাপের আগে দারুণ ছন্দে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হারার পর টানা তিন ওয়ানডে জিতে সিরিজ তো নিশ্চিত করেছেই, টানা তিন ম্যাচে ৩০০’র ওপর রান করেছে। চতুর্থ ওয়ানডেতে তো ৪০০ পার করেছে প্রোটিয়ারা। ব্যাটিং উইকেটে তারাও যে কোনো প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। হেনরিক ক্লাসেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৮৩ বলে খেলেছেন ১৭৪ রানের ইনিংস। বিধ্বংসী রূপে ফিরছেন ডেভিড মিলারও।
প্রোটিয়ারা প্রথম ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে। সেখানে অবশ্য সবশেষ হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ম্যাচেও খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে তারা অলআউট হয়েছিল মাত্র ৯৯ রানে। দিল্লির মাঠটা হয়তো খানিকটা স্পিনারদের দিকেই ঝুঁকবে, তবে অন্য মাঠগুলোতে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের রান উৎসবে মেতে উঠতে দেখার সম্ভাবনা জোরালো। তাই অনেক সাবেক ক্রিকেটারই প্রোটিয়াদের দেখছেন শেষ চারে।
বিশ্বকাপের আগে ক্লাসেন ছাড়াও ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস খেলেছেন ১৮২ রানের ইনিংস, দারুণ ছন্দে ইংল্যান্ডের ডাভিড মালানও। তবে সেরা ছন্দে নিঃসন্দেহে শুভমান গিল। সবশেষ ৫ ইনিংসে দুটো শতরান আর একটা হাফসেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেলও আছেন দারুণ ছন্দে। দুটো হাফসেঞ্চুরি আর একটা সেঞ্চুরি সবশেষ ৫ ইনিংসে। হায়দ্রাবাদে বিশ্বকাপের অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের ৩৪৫ রান কিউইরা তাড়া করেছে ৩৮ বল হাতে রেখে।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করেন, এই বারের বিশ্বকাপে রানবন্যায় বোলারদের জন্য কাজটা হবে কঠিন। দেশ রূপান্তরকে আশরাফুল বলেন, ‘আমাদের পেসাররা গত এক দেড় বছর ধরে খুবই ভালো করছে। তবে যেহেতু ভারতের মাটিতে খেলা, আমরা দেখেছি যে সাড়ে ৩০০’র বেশি রান হচ্ছে প্রতিটা ম্যাচে। কেউ যদি ভালো না করে, তাকে মনে রাখতে হবে যে টুর্নামেন্টে পরের ম্যাচে ফিরে আসতে হবে। একজনের দিন খারাপ যেতেই পারে, কোনো ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান উঠেই যেতে পারে। ৯টা ম্যাচের ভেতর ৪-৫টা ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান হতে পারে। তাই বোলারদের ফিরে আসার মানসিকতা থাকতে হবে।’
বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমও বলেছেন যে দেড় মাসের আসরে প্রস্তুত থাকতে হবে যে কোনো কিছুর জন্যই, ‘দেড় মাসের আসর, ৯টা ম্যাচ এই সময়ে খেলতে হবে বা তারও বেশি। অনেক উত্থান-পতন হবে। যে কোনো কিছুর জন্যই তৈরি থাকতে হবে।’
রান উৎসবের বিশ্বকাপ যে হতে যাচ্ছে, তার সব রসদই মজুদ। মাঠগুলোকে করা হয়েছে ব্যাটিং স্বর্গ, বিশ্বকাপে আসার আগে সেরা সেরা ব্যাটসম্যানরাও আছেন ছন্দে। শুধু প্রশ্ন এটাই, রান উৎসবের এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে রান করবেন কে? সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাটিংয়ের ছবিটা যে মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়।
বিশ্বজুড়ে বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউ এয়ারের তথ্য অনুযায়ী আজ সোমবার (০২ অক্টোবর) ঢাকার বাতাসের মান ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’। এদিন সকাল ১০টার দিকে ১২৯ স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে ঢাকা।
এসময় ১৮৩ স্কোর নিয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকার প্রথম স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর। ১৬২ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা। ১৬০ স্কোর নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি। ১৫৬ স্কোর নিয়ে চতুর্থ ভারতের আরেক শহর করাচি। ১৫৩ স্কোর নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে ইতালির মিলানো।
এ ছাড়া একইসময়ে একিউআই স্কোর ১১৭ স্কোর নিয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে চীনের উহান। ১১৩ স্কোর নিয়ে অষ্টম স্থানে রয়েছে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর। ১১২ স্কোর নিয়ে নবম স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। ১০৯ স্কোর নিয়ে দশম স্থানে রয়েছে সৌদি আরবের রিয়াদ।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার দূষিত বাতাসের শহরের এ তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই স্কোর একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে কি না, তা জানায়।
একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। একইভাবে একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং স্কোর ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে থাকলে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়।
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ অনুযায়ী, দেশে ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২২ হাজার ১১৯। এ তালিকায় রয়েছে যারা রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, মাজার, ফুটপাত, সিঁড়ি, ওভারব্রিজের নিচে, লঞ্চ টার্মিনাল, ফেরিঘাট, মার্কেটের বারান্দায় দিন কাটান। আর বস্তিতে বসবাস করছে ১৮ লাখ ৪৮৬ জন। তারা মূলত শহর ও উপশহর এলাকায় টিনের ঘর, সেমিপাকা ঘর বা ঘিঞ্জি পাকা ঘরে বাস করে। তবে বস্তিবাসী কারা সে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১৬ সালে সরকার আবাসন নীতিমালা করেছে। আবাসন উন্নয়ন তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। আবাসন সংকট নিরসন করতে হলে সরকারকে আবাসন তহবিল করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বস্তিবাসী, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত কারা তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। না হলে বোঝা যাবে না কত মানুষ বস্তিতে থাকে।’
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে আবাসন সংকট কাটছে না। স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে আবাসন।’
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে ৯ লাখ গৃহহীন মানুষকে চিহ্নিত করে। ইতিমধ্যে আট লাখ মানুষের গৃহের ব্যবস্থা করেছে; প্রায় ৪০ লাখ মানুষের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বাকিদের জন্যও শেখ হাসিনা ব্যবস্থা করবেন। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্যও আবাসনের ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা তার সৈনিক হিসেবে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
জানা যায়, বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার সবার জন্য আবাসন। অঙ্গীকার পূরণে সরকার নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সারা দেশে ৩০টি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, নোয়াখালী, যশোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, শরীয়তপুর, নড়াইল, খুলনা, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব প্রকল্পে ৬ হাজার ৪৩২টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হয়েছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২৭টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পে ৫ হাজার ৯৩০টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হবে। শেরপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, হবিগঞ্জ, সিলেট, ঝিনাইদহ, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে ১৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৩৫টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় রাজউক পূর্বাচল, ঝিলমিল, উত্তরা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় আবাসন প্রকল্পে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ফ্ল্যাটগুলো উচ্চমূল্যের কারণে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। পূর্বাচল, ঝিলমিল ও উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প গ্রহণ করছে সরকার। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনেও বিভিন্ন সংস্থা আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন শহরে বসবাসরত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সম্পদশালী ব্যক্তিরা। যাদের অনেক ফ্ল্যাট আছে তারা আরও ফ্ল্যাট কিনছেন। কিন্তু বাস্তুহারা, দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত সরকারি এসব আবাসনের সুবিধা পাচ্ছেন না। অল্প দামে জমি অধিগ্রহণ করে সরকার আবাসন প্রকল্প তৈরি করে যাদের নামে বরাদ্দ দিচ্ছে তারা রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে জমির মালিক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত।
জাতিসংঘ ১৯৮৫ সালে বিশ্ব বসতি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশে^ অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার এ দিবসটি পালিত হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।