
বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ হলো গবেষণা। কিন্তু দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণায় খুব একটা আগ্রহ নেই। সরকারি-বেসরকারি ১৫৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৩টি গবেষণায় এক টাকাও ব্যয় করেনি। আর ৪৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ লাখ টাকার নিচে লোক দেখানো ব্যয় করেছে। এমনকি এক বছরে ৫৭ বিশ্ববিদ্যালয় একটি প্রকাশনাও বের করতে পারেনি। বাংলাদেশে এই গবেষণার চিত্র অত্যন্ত হতাশাজনক বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদন হস্তান্তর করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। ৫০ সরকারি ও ১০৫ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১ সালের তথ্য নিয়ে তৈরি ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদনে গবেষণার এই দুরবস্থার চিত্র উঠে এসেছে।
ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, গবেষণায় এক টাকাও ব্যয় না করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে ৬টি সরকারি ও ২৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। আর ১০ লাখ টাকার নিচে ব্যয় করেছে ৭টি সরকারি ও ৪২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ১৫টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বছরে কোনো গবেষণা নিবন্ধ বের হয়নি। বেসরকারির ক্ষেত্রে এ সংখ্যা ৪২।
এর আগে ২০২০ সালে ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার পেছনে কোনো খরচ করেনি। তবে ২০২১ সালে এ সংখ্যা কমে ৩৩ হয়েছে। অর্থাৎ সামান্য উন্নতি হয়েছে। তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই গবেষণার খাতায় নাম ওঠাতে লোকদেখানো ব্যয় করেছে। যাতে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা হয় না তা কেউ বলতে না পারে। এজন্য তারা ছলচাতুরী করে গবেষণা খাতে ৫০ হাজার, ১ লাখ, ২ লাখ টাকার মতো ব্যয় করে ইউজিসির তালিকায় নাম তুলেছে।
ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণা না হওয়াটা দুঃখজনক। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কম-বেশি গবেষণায় অর্থ বরাদ্দ হয়। বিজ্ঞান ও কৃষিতে আমাদের ভালো গবেষণা হয়। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে এই গবেষণার অর্থ সবসময় সঠিকভাবে ব্যবহার হয় না। আর বেসরকারি ১৫ থেকে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় ভালো। বাকি ৭০ থেকে ৮০টি হলো পাঠশালা। এখানে একজন শিক্ষককে প্রতিদিন পাঁচ-ছয়টি ক্লাস নিতে হয়। তাদের বেতনও খুব কম। তারা গবেষণার চিন্তাও করতে পারে না। ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিরা চায়, ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হোক আর টাকা আসুক। গবেষণায় তারা বরাদ্দও রাখেন না।’
ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে গবেষণায় সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, তবে টাকার অঙ্কে তা মাত্র ৮ কোটি। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা করে ব্যয় করেছে রাজশাহী ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ২০২১ সালে ৫০ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় মোট ব্যয় ছিল ৭৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ফলে বাকি অন্যান্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও গবেষণায় নামমাত্র ব্যয় করেই দায় সেরেছে।
তবে গবেষণার দিক দিয়ে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাড়িয়ে অনেক দূরে চলে গেছে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। সর্বোচ্চ ৫৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা গবেষণায় ব্যয় করেছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪ কোটি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় ও তৃতীয় সর্বোচ্চ ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা গবেষণায় ব্যয় করেছে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ। এ ছাড়া গবেষণায় উল্লেখযোগ্য ব্যয় করেছে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, উচ্চশিক্ষার মান বাড়াতে গবেষণা অন্যতম পূর্বশর্ত। উন্নত দেশগুলোয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা খাতে বিপুল অর্থ ব্যয় করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে গবেষণার মতো অত্যাবশ্যকীয় খাতে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়, তা উল্লেখ করার মতো নয়। হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে নামকাওয়াস্তে গবেষণা পরিচালনা করা হয়। দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগই নিজেদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে মনে করে। বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ই গবেষণাকে তেমন একটা গুরুত্ব দেয় না। ফলে দেশের উচ্চশিক্ষার মান এখন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।
অন্যান্য দেশের দিকে তাকালে দেখা যায়, যে দেশে যত বেশি গবেষণার জন্য আর্থিক প্রণোদনাসহ অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়, সে দেশ তত বেশি সমৃদ্ধ। যেমন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত ইত্যাদি দেশে বারবার গবেষণা ছাড়া অপেক্ষাকৃত ছোট বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় না। গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে যেসব দেশে বার্ষিক ৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ ব্যয় করা হয়, সে রকম ৯০টি দেশের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত থাকলেও বাংলাদেশ বরাবরের মতোই অনুপস্থিত।
দেশের সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাতগুলোর মধ্যে গার্মেন্টস অন্যতম। আর এই খাতকে আরও শক্তিশালী করতে দেশে প্রতিষ্ঠা করা হয় বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়। যাদের নিত্যনতুন গবেষণার মাধ্যমে এই খাতের সমৃদ্ধি অর্জনে কাজ করার কথা। অথচ ২০২১ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ব্যয় ছিল মাত্র ৫০ লাখ টাকা। এমনকি ওই বছরে তাদের একটিও গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়নি। দেশকে ডিজিটাল করার ক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্ভাবনের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে ১০ হাজার কোটি টাকার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) জমা দেওয়া হলেও ২০২১ সালে তারা গবেষণায় ব্যয় করেছে মাত্র ৬ লাখ টাকা, ছিল না কোনো প্রকাশনা।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২৯ বছরের পুরনো বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি গবেষণায় এক টাকাও খরচ করেনি। পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, আশা ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ গবেষণায় এক টাকাও ব্যয় করেনি। নামমাত্র ব্যয় করেছে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ৭ লাখ ৪৩ হাজার, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি ২ লাখ ৫২ হাজার, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি ৫ লাখ ৯৮ হাজার, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি ১ লাখ ২৯ হাজার, সিটি ইউনিভার্সিটি ২ লাখ ৫০ হাজার, নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ১ লাখ ৯৮ হাজার, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ৪ লাখ ৯৫ হাজার, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি ২০ হাজার, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা ৬৮ হাজার, নটর ডেম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। অনেক বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ই এক লাখ টাকার নিচে ব্যয় করে গবেষণার খাতায় নাম তুলেছে।
তবে ইউজিসি প্রতিবছর গবেষণার জন্য নিয়মিতভাবে বিভিন্ন প্রকার বৃত্তি ও ফেলোশিপ দিয়ে থাকে। ২০২১ সালে তারা এ খাতে ৮৯৪টি প্রকল্পের জন্য ১ কোটি ৫৮ লাখ ৮ হাজার ৭৯০ টাকা ব্যয় করেছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যদি ইউজিসির গবেষণা বরাদ্দের গড় করা হয়, তাহলে প্রতিটি প্রকল্পের জন্য গড়ে বরাদ্দ মাত্র সাড়ে ১৭ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে গবেষণা হয় না। তাই শিক্ষকরা বরাদ্দ নিলেও বেশিরভাগই প্রকৃত অর্থে কোনো গবেষণা না করে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়ে দায় সারেন।
আগামী সোমবার (৫ জুন) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশ এডুকেশন এক্সপো ২০২৩। মেলায় প্রবেশ সকলের জন্য উন্মুক্ত। এতে দেশ বিদেশে উচ্চশিক্ষায় ভর্তীচ্ছু শিক্ষার্থীরা এক ছাদের নিচে বসেই সব ধরনের তথ্য পাবেন। এই এক্সপোতে শতভাগ পর্যন্ত শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে উপস্থিত থাকবে দেশ বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এছাড়া ৬০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়, পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটসহ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের গবেষনা, প্রকাশনা ও উদ্ভাবন নিয়েও হাজির থাকবেন।
জানা যায়, দিনব্যাপী এই এক্সপো সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে চলবে সন্ধ্যা ৮টা পর্যন্ত। এতে উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠান ছাড়াও একাধিক সেমিনার ও প্যানেল আলোচনা থাকছে। শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষায় বিষয় নির্বাচন নিয়ে থাকছে পাবলিক লেকচার। যাতে উপস্থিত থাকবেন শিক্ষা প্রশাসনের উর্ধ্বতনরা, দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ ও সেলিব্রেটিরা। শিক্ষা নিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় এডুকেশন এক্সপো আয়োজন করছে শিক্ষা সাংবাদিকদের সংগঠন এডুকেশন রিপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন-ইরাব।
ইরাব সভাপতি মীর মোহাম্মদ জসীম জানান, আমরা যারা শিক্ষা নিয়ে রিপোর্টিং করি তাদের সংগঠন ইরাব। সংগঠনটি গত বছর বাংলাদেশ সরকারের নিবন্ধন লাভ করে। শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবেই আমরা এই এক্সপোর আয়োজন করছি। এতে শিক্ষার্থীরা একই স্থানে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির তথ্য পাবেন। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নানা ধরনের গবেষনা ও উদ্ভাবন এখানে তুলে ধরবেন।
আয়োজকরা জানান, এক্সপো উপলক্ষ্যে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে রেজিস্ট্রেশন। শিক্ষার্থীরা যে কোনো সময় এই www.bangladesheducationexpo.com ওয়েবসাইটে ঢুকে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। রেজিস্ট্র্রেশন করলে লটারিতে থাকছে ল্যাপটপ, ট্যাব, মোবাইলসহ অসংখ্য পুরষ্কার। রেজিস্ট্রেশন ছাড়াও মেলা সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকছে। ইতিমধ্যে ৬০ হাজার শিক্ষার্থী তাদের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছে।
দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিষ্ঠাতা-উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির (এপিইউবি) বার্ষিক সাধারণ সভা এবং কার্যনিবাহী পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ মে) অনুষ্ঠিত নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শেখ কবির হোসেন। সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারাল আর্টস বাংলাদেশের ড. কাজী আনিস আহমেদ।
অ্যাসোসিয়েশন অব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিজ অব বাংলাদেশের (এপিইউবি) জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক বেলাল আহমেদ স্বাক্ষরিত পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সমিতির নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) অধ্যাপক শফিক আহমেদ সিদ্দিক।
জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হয়েছেন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইশতিয়াক আবেদিন এবং ট্রেজারার পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের কে বি এম মঈন উদ্দিন চিশতি।
কার্যনিবাহী পরিষদের অন্যান্য নির্বাচিত সদস্যরা হলেন- পোর্টসিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এ কে এম এনামুল হক শামীম, সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির নজরুল ইসলাম বাবু, আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির কাজী রফিকুল আলম, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সাদাফ সাজ সিদ্দিকী, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির শফিকুল ইসলাম মহিউদ্দিন, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের চৌধুরী নাফিজ সরাফত, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মো. সবুর খান, এক্সিম ব্যাংক এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটির এ কে এম নুরুল ফজল বুলবুল, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের আব্দুল হাই সরকার, ঈশাখাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রিয়াদ আহমেদ তুষার, নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের অধ্যাপক আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহ, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির মো. রেজাউল করিম এবং ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের কাইয়ূম রেজা চৌধুরী।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মো. আবু সালেহের নেতৃত্বে চার সদস্যের নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির (এপিইউবি) কার্যনিবাহী পরিষদের নির্বাচন পরিচালনা করে।
গত বছর অনলাইনে আবেদন করার পরও যেসব শিক্ষার্থী কোনো কলেজে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়নি তাদের রেজিস্ট্রেশনের সময়সীমা বাড়িয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। আজ শুক্রবার থেকে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তারা রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে যেসব শিক্ষার্থী অনলাইনে আবেদন করেছে কিন্তু কোনো কলেজে ভর্তি হতে পারেনি, তাদের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে অনলাইনে ছবি সহ ফরম পূরণের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে।
বাংলাদেশের স্থায়ী সনদপ্রাপ্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ মালয়েশিয়ার শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে যৌথভাবে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ।
আজ বৃহস্পতিবার এডুকেশন মালয়েশিয়া গ্লোবাল সার্ভিসেস (ইএমজিএস)-এর চার সদস্যের এক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ইউজিসিতে অনুষ্ঠিত এক সভায় তিনি এ কথা বলেন। ইএমজিএস- এর চেয়ারম্যান এবং মালয়েশিয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশেষদূত ড. আব্দুর রাজ্জাক প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
প্রফেসর বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, এই মুহূর্তে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ডিগ্রি প্রদানের সুযোগ নেই। তবে তারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গবেষণা করতে আগ্রহী। স্থায়ী সনদ পাওয়া প্রথম সারির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শর্ত সাপেক্ষে মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যৌথ পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করতে পারে।
এর মাধ্যমে তাদের গবেষণার দ্বার উন্মোচিত হবে এবং গবেষণার সুযোগ তৈরি হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। যৌথ পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান বিষয়ে তিনি মালয়েশিয়া সরকারর সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের আগ্রহের কথা জানান।
তিনি প্রতিনিধি দলকে মালয়েশিয়ায় অধ্যায়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরির সুযোগ তৈরির আহ্বান জানান। মালয়েশিয়ায় অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও অন্যান্য নাগরিকদের যেন মর্যাদার দৃষ্টিতে দেখা হয় সেদিকে খেয়াল রাখার অনুরোধ করেন।
ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মালয়েশিয়া উচ্চশিক্ষা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণে চেষ্টা করছে। মালয়েশিয়ায় বেশ কিছু মানসম্পন্ন সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস রয়েছে। মালয়েশিয়া উচ্চশিক্ষার মান বজায় রাখতে ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা, ট্যালেন্ট হান্ট করাসহ যৌথ পিএইচডি ডিগ্রি প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এছাড়া, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও স্টাফদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে। যৌথ গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি ও গবেষণা সহযোগিতা বৃদ্ধি করছে।
সভায় ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান, গবেষণা সহায়তা ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক ড. মো. ফখরুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সিলেট আঞ্চলিক অফিসের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর কবীর আহাম্মদ। তিনি ২০০৯ সাল থেকে প্রায় ১৪ বছর ধরে ওই অফিসে চাকরি করছেন। তার মূল পদ প্রধান শিক্ষক। কথিত আছে, ওই অঞ্চলে টাকা ছাড়া এমপিও মেলে না। বাতিল হওয়া আবেদনেও বড় অঙ্কের ঘুষ পেলে তিনি তা ছাড় করে দেন। খোদ সরকারি সংস্থার তদন্তেই তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য উঠে এসেছে।
সম্প্রতি জাহাঙ্গীর কবীর আহাম্মদের অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপারে তদন্তে নামে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)। তদন্ত দলে ছিলেন যুগ্ম পরিচালক বিপুল চন্দ্র সরকার, সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক মনিরুজ্জামান ও অডিট অফিসার মো. মতিয়ার রহমান। তারা এমপিও, কেনাকাটাসহ প্রায় সব ক্ষেত্রে ভয়াবহ দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছেন। চলতি সপ্তাহে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া ২০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে উপপরিচালকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
ডিআইএর পরিচালক অধ্যাপক অলিউল্লাহ মো. আজমতগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সিলেটের উপপরিচালকের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ ছিল, তার প্রায় সব প্রমাণিত হয়েছে। আমরা সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। মন্ত্রণালয়ই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে।’
হবিগঞ্জ সদরের তরপ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তদন্ত দলের সামনে সাক্ষ্য দেন, ‘টাইম স্কেল ও এমপিওভুক্তির জন্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. রুহুল্লার মাধ্যমে ডিডি জাহাঙ্গীর কবীর টাকা নেন।’
রসময় মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী গ্রন্থাগারিক কাজী মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমি ২০১৯ সালের ১০ মার্চ নিয়োগ পাই। এরপর চার-পাঁচবার এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করেছি। প্রতিবারই “নিডেড টু ভেরিফাই” বলে রিজেক্ট করা হয়। আমি গবেষণা কর্মকর্তা গিয়াসউদ্দিনের কাছে গেলে তিনি বড় স্যার অর্থাৎ উপপরিচালকে খুশি করতে হবে বলে জানান এবং আমাকে লিংকন নামের একজনকে দেখিয়ে দেন। তিনি এমপিওভুক্তির জন্য ডিডির বরাত দিয়ে দেড় লাখ টাকা দাবি করেন।’
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, হবিগঞ্জ সদরের পইল হাই স্কুলের মো. নুরুল হুদার আবেদনটি বাতিল করা হয়। কারণ হিসেবে বলা হয়, ‘নিয়োগ পরীক্ষার ফল-বিবরণীতে কমিটির সদস্যদের ভিন্ন ভিন্ন তারিখে স্বাক্ষরের বিষয়টির যাচাই বা ব্যাখ্যা প্রয়োজন।’ পরে আবার এ শিক্ষককেই এমপিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কীভাবে যাচাই করে ফল-বিবরণী সঠিক হলো তার কোনো ব্যাখ্যা নথিতে নেই। এতে বোঝা যায়, নিয়োগ রেকর্ড যথাযথ না থাকা সত্ত্বেও দুর্নীতির মাধ্যমে এমপিও আবেদনটি অনুমোদন করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ সদরের পূর্ব পাগলা হাই স্কুলের পীযূষ কান্তি দেবের নিয়োগের স্বাক্ষরের তারিখটি ঘষামাজা করা। প্রথমে আবেদনটি বাতিল করা হলেও পরে অনুমোদন করা হয়। সুনামগঞ্জের হাফিজ আলী হাই স্কুলের শেফালী রানী দাসের আবেদনের সিএস কপিতে ডিডি প্রতিনিধির স্বাক্ষর যাচাইয়ের জন্য প্রথমে রিজেক্ট করলেও পরে অনুমোদন করা হয়।
সিলেটের ড. ইদ্রিস আলী হাই স্কুলের মো. আবদুল কাদেরের কাম্য, যোগ্যতা বিএজিএড ডিগ্রি থাকা সত্ত্বেও প্রথমে আপত্তি জানিয়ে পরে ঠিকই এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। মৌলভীবাজারের তেলিবিল হাই স্কুলের সাবিনা ইয়াসমীনের প্যাটার্নভুক্ত পদ শূন্য থাকা সত্ত্বেও প্রথমে বাতিল করে দীর্ঘদিন পরে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। বিএড সনদ না থাকা সত্ত্বেও ২০২০ সালে প্রধান শিক্ষকের এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে আপত্তি জানিয়ে পরে এমপিওভুক্ত করা হয়।
ঘুষ না দেওয়ায় সিলেট সদরের আল আমীন জামেয়া ইসলামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক শামছুল হকের প্রথমবারের আবেদন ‘ল্যাক অব কোয়ালিফিকেশন’ ও পরে তিনবার ‘আদারস’ দেখিয়ে রিজেক্ট করা হয়। একইভাবে রসময় মেমোরিয়াল হাই স্কুলের সহকারী লাইব্রেরিয়ান কাজী মাহবুবুর রহমানের আবেদনটিও ‘নিডেড টু ভেরিফাই’ দেখিয়ে রিজেক্ট করা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সিলেট আঞ্চলিক অফিসে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে এমপিওভুক্তিতে বিভিন্ন ত্রুটি দেখিয়ে, ভয়ভীতি দেখিয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সিন্ডিকেটের সঙ্গে বেশিরভাগ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জড়িত। ঘুষ প্রদানকারী ব্যক্তিরা তদন্ত দলের কাছে জেলা শিক্ষা অফিস ও আঞ্চলিক অফিসের বিভিন্ন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে আর্থিক লেনদেনের কথা বলেছেন।’
জানতে চাইলে ডিডি জাহাঙ্গীর কবীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০২১ সালের দিকে ডিআইএর তদন্ত দল এসেছিল। তারা ২০টির মতো এমপিও নিয়ে কথা বলেছেন। আমার উত্তরে তারা স্যাটিসফাইড হয়েছিলেন। তারা ক্যাশবই চেয়েছিলেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তো সরকারি অডিট হয়। তাই দুই-তিন বছরেরটা দেখালাম।’
এমপিওর ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘ডিআইএর রিপোর্টে কী আছে তা আমি জানি না। তবে আমি জ্ঞাতসারে কোনো অনিয়ম করিনি। সহজেই এমপিও দিয়ে দিই। আমি ১ জুন হজে যাচ্ছি। এর আগে কেন এ রিপোর্ট জমা দিল বুঝতে পারছি না।’
তদন্ত কমিটি বলছে, ডিডি জাহাঙ্গীর কবীরের দায়িত্বকালে ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত নতুন ৩ হাজার ৫৮১টিসহ ৮ হাজার ৩৩৭টি এমপিও দেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। ৮৪১টি আবেদন বাতিল করা হয়। বাতিলের তালিকা থেকে পরে কত আবেদন অনুমোদন করা হয়েছে তা তিনি দেখাননি। আবেদনগুলো সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হলেও এখন আর প্রদর্শিত হয় না জানিয়েছেন ডিডি। অথচ সরকারের এ সংক্রান্ত পরিপত্রে বলা হয়েছে, আবেদনের প্রিন্ট আউটে স্বাক্ষর করে তা সংরক্ষণ করতে হবে।
সিলেট আঞ্চলিক অফিসে আর্থিক ব্যয় ও কেনাকাটায়ও অনিয়ম পেয়েছে তদন্ত দল। ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের কেনাকাটা ও অর্থ ব্যয়ের আংশিক কাগজপত্র তদন্তের প্রথম দিন দেওয়া হলেও পরে আর কাগজপত্র দিতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।
আংশিক কাগজপত্র পর্যালোচনা করে কমিটি দেখতে পায়, মালামাল কেনার নথিতে অনুমোদন ও চাহিদাপত্র নেই। কেনা মালামালের স্টকের রেজিস্ট্রার নেই। মালামাল খন্ডে খন্ডে কেনা হয়েছে। বিক্রেতাকে টাকা পরিশোধ করা হলেও কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রায় প্রতিটি বিলেই ক্যালকুলেটর ও স্ট্যাপলার কেনা হয়েছে দেখানো হলেও তা গ্রহণকারীর তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রাপ্যতা যাচাই ছাড়াই কর্মচারীদের পোশাক সরবরাহে ব্যয় দেখানো হয়েছে।
সুপারিশে বলা হয়েছে, বিধিবহির্ভূতভাবে ব্যয় করা টাকা সরকারি কোষাগারে ট্রেজারির মাধ্যমে জমা দিতে হবে। অন্যান্য বাজেট ব্যয়ের হিসাব না দেওয়া সরকারি কাজে অসহযোগিতার শামিল বিধায় ডিডি জাহাঙ্গীর কবীরের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হলো।
এ ছাড়া এমপিওভুক্তির আবেদন রিজেক্ট করা এবং পুনরায় অনুমোদন করার ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের অবস্থান প্রমাণিত। এ ক্ষেত্রেও তার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হলো।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে ফরমায়েশি বলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য দেশের আইন ও আদালত অবমাননার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির মামলায় এর আগে বিএনপির দুই নেতাকে নিম্ন আদালতের দেওয়া সাজা বহাল রেখে দেশের উচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছে, সে সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিবের দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দেশবাসীকে হতাশ করেছে।’
গতকাল বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদে জানিয়ে এ বিবৃতি দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মনে করেন, মার্কিন নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করার পর বিএনপি তাদের বিদেশি প্রভুদের কাছ থেকে করুণা প্রাপ্তির আশায় সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। উচ্চ আদালতের রায়কে ফরমায়েশি বলা তাদের সেই চলমান ষড়যন্ত্রেরই অংশ। বিএনপির এ দুই নেতার আজকের পরিণতি তাদের ধারাবাহিক অপরাজনীতিরই ফসল বলে মন্তব্য করেন সেতুমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট শাসন আমলে হাওয়া ভবন খুলে তারা দুর্নীতি ও লুটপাটের মহোৎসবে মেতে উঠেছিল, যার পরিণতিতে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সে সময় হাওয়া ভবনের কর্ণধার জিয়াপুত্র তারেক রহমানের দুর্নীতির খতিয়ান বিশ^ গণমাধ্যম ও বিশ^খ্যাত গোপন নথি প্রকাশকারী সংস্থা উইকিলিকসে বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি দুই নেতার দুর্নীতির মামলার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কোনো যোগসূত্র নেই। ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে এবং তাদের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ার পর নিম্ন আদালত সাজা দিয়ে রায় দেয়। প্রায় ১৬ বছর বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ করে আদালত তাদের সাজা দিয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশের পবিত্র সংবিধান অনুযায়ী সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যার কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও আইন ও বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। এমনকি বিশ্বজিৎ হত্যাকা- এবং বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার হত্যা মামলায়ও ছাত্রলীগের নেতারা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ভোগ করছেন।’ তিনি বলেন, বিএনপি দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে তাদের দলীয় গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করেছে এবং দলের চিহ্নিত শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের সুরক্ষা দিয়েছে।
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রসঙ্গ উঠলেই আলোচনায় আসেন সাবেক সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরণ। নগরীর লোকেরা বলে, তার মতো নগর পিতা দরকার। এবার আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত নগরবাসীকে কথা দিয়েছেন, হিরণের মতো করে নগরী গড়বেন তিনি। শওকত হোসেন হিরণের মৃত্যুর এক দশক পেরিয়ে গেছে, তবু তিনি আলোচনায়; শুধু বরিশালে নয়, সারা দেশে।
সংশ্লিষ্ট লোকজন বলে, হিরণের কর্মফলই তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। একসময় সব ক্ষেত্রে বরিশাল সিটির মানুষ অবহেলিত ছিল। সেসব অবহেলার কারণ ঘুচিয়ে এবং মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী নগরীকে আধুনিক করার অঙ্গীকার নিয়ে হাজির হন হিরণ। মেয়র নির্বাচিত হয়ে পাঁচ বছরের মধ্যে নগরীর রূপ পাল্টে দেন তিনি। বরিশালকে সাজান আধুনিক রূপে।
অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য আবদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হিরণ ছিলেন আদর্শ নেতা। মানুষকে বোঝার চেষ্টা করতেন। দক্ষ ও বিচক্ষণ এবং সৃজনশীল মানুষ। তিনি নগরীর উন্নয়ন নিয়ে যেমন ভেবেছেন, ঠিক তেমনি মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন। তাই মানুষ ভুলতে পারে না তাকে।’
বিসিক শিল্পনগরীসংলগ্ন চায়ের দোকানদার মো. হালিম বলেন, ‘হিরণ সবসময় মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করতেন। সাধারণ পোশাকে চলতেন। দলমত নির্বিশেষ সবাইকে ভালোবাসতেন।’
নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সমির বলেন, ‘মেয়র হিরণ আমাদের জন্য রাস্তাঘাট, সড়কে বাতির ব্যবস্থাসহ অনেক কিছু করেছেন। তার কাজগুলোই কোনোমতে অনুসরণ করেছে অন্যরা। যে কাজ করে তাকেই তো মনে রাখব আমরা, তাই হিরণকে মনে রেখেছি।’
রিকশাচালক মো. হারুন বলেন, ‘এ নগরীর রাস্তাঘাট চলাচলের অযোগ্য ছিল। রাতে অন্ধকারে ডুবে থাকত। চুরি-ডাকাতি নিত্যখবর ছিল। কিন্তু হিরণ মেয়র হওয়ার পর রাতারাতি নগরী বদলে গেল। অনেক মানুষকে সিটি করপোরেশনে চাকরি দিয়েছেন তিনি। নগরীর গরিব মানুষকে এক টাকা করে হলেও সাহায্য করেছেন। সবার মন জয় করেছেন। আজ তার মতো একজন মানুষ থাকলে আমরা শান্তিতে নিঃশ্বাস নিতে পারতাম।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যাকে হারিয়েছি তাকে তো আর ফিরে পাব না। কিন্তু তার কর্ম, মানুষের প্রতি তার সম্মান এবং ভালোবাসা তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তিনি বিদ্যালয়ে এলে কখনো রাজনৈতিক আলাপ করতেন না। সবসময় শিক্ষার্থীদের আদর্শ মানুষ হওয়ার জন্য বলতেন, গল্প শোনাতেন।’
একজন ব্যবসায়ী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হিরণ সাহেব থাকাকালে ব্যবসা করতে গিয়ে কখনো হেনস্তার শিকার হইনি। তিনি নিজেও ব্যবসায়ী ছিলেন। আমাদের ব্যবসায়ীদের কষ্ট তিনি বুঝতেন। কিন্তু নগরীর একদল মানুষ তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তাকে নির্বাচনে হারিয়ে দিয়েছে। তারপর হিরণ সাহেব দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন।’
বিএম কলেজের সাবেক ভিপি ও শওকত হোসেন হিরণের ঘনিষ্ঠ মঈন তুষার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হিরণ সাহেব প্রত্যেক নেতাকর্মীর নাম জানতেন। তিনি যার সাঙ্গে কথা বলতেন, সেই মানুষটিকে ভুলতেন না। এজন্য মানুষ তার প্রতি এত দুর্বল এবং আকৃষ্ট। নগরীর জন্য তিনি মাস্টারপ্ল্যান করে কাজ করেছেন। তার সঙ্গে মানুষ সরাসরি কথা বলতে পারত এবং দেখা করত। এখনো মানুষ তাকে ভালোবাসে এবং মনে রেখেছে।’
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সোহেল রানা বলেন, ‘সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণ বরিশালকে আধুনিক নগরীতে রূপান্তরিত করে গেছেন। উন্নয়ন-আন্তরিকতা ও ব্যবস্থাপনার দক্ষতার সমন্বয় ঘটিয়ে তিনি একজন আইকনিক সিটি মেয়র ছিলেন। আন্তরিকতাই একজন প্রশাসকের মূল সূচক। তাই তিনি সাধারণ মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছেন।’
মেয়র হিরণ ব্যক্তিগত জীবনে কেমন ছিলেন এ প্রশ্নের উত্তরে তার সহধর্মিণী ও সাবেক সংসদ সদস্য জেবুন্নেসা আফরোজ হিরণ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২৬ বছর আমি তাকে দেখেছি। তিনি কারও ভাই ছিলেন, একজন স্বামী ছিলেন এবং সন্তানদের বাবা ছিলেন। পরিবারভক্ত একজন মানুষ। মানবিক গুণাবলি ছিল। তার মা-ভক্তির খুব নাম আছে বরিশাল শহরে। স্বজন-সন্তান ও পরিবারের প্রতি যতœ নেওয়ায় কোনো কমতি ছিল না। স্ত্রী হিসেবে তাকে অসাধারণ কর্তব্যপরায়ণ একজন মানুষ হিসেবে দেখেছি আমি।’
তিনি বলেন, ‘উনি রাজনৈতিক মহলে অত্যন্ত বিচক্ষণ একজন ব্যক্তি ছিলেন। কর্মী ও সহযোদ্ধাদের প্রতি ভালোবাসা ছিল; নেতাদের প্রতি সম্মানে কোনো ঘাটতি ছিল না তার। ২০০১ সালের জামায়াত-বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসে, তখন কর্মীদের কীভাবে বুকে আগলে রাখতে হয় আমি তা পাশে থেকে দেখেছি। রাজনীতি এবং নগর উন্নয়নÑ দুই ক্ষেত্রেই তিনি সফল।’
প্রসঙ্গত, শওকত হোসেন হিরণ এলএলবি পাস করার পর জাসদ ছাত্রলীগে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন এবং ১৯৮৮ সালে ২২ বছর বয়সে বরিশাল সদর উপজেলা থেকে বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর আলোচনায় আসেন তিনি। ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। রাজনীতিতে আরেক দফা পরিবর্তন আসে ১৯৯৬ সালের পর। স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে ভালো সখ্য থাকায় আওয়ামী লীগে যোগ দেন হিরণ। তার রাজনৈতিক সক্রিয়তা ও সাংগঠনিক দক্ষতা বিবেচনা করে ২০০৩ সালে কেন্দ্রীয় কমিটি তাকে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মনোনীত করে। ২০০৮ সালের ৪ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন। বরিশাল মহানগরীকে আধুনিক সাজে সাজান। স্থানীয় মানুষ ও তার অনুসারীদের কাছে আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। ২০১২ সালে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামালের কাছে পরাজিত হন। গুঞ্জন রয়েছে, তার দলীয় লোকেরাই তার পরাজয়ের কারণ। হিরণের মন ভাঙলেও তিনি থেমে যাননি। ২০১৪ সালে বরিশাল সদর আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই বছর ৯ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের মুখে থাকা কুড়িগ্রামের চর ভগপতিপুর সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিকটি অবশেষে বিলীন হয়ে গেছে। ক্লিনিকটি সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চলের চর ভগপতিপুর এলাকায় ছিল।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে চর ভগপতিপুর সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিকটি ব্রহ্মপুত্রের গর্ভে বিলীন হয়। এর আগে ওই এলাকার একটি স্কুলও ভাঙনের শিকার হয়। এ ছাড়াও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে একটি মসজিদ ও আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দাদের। ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছে ব্রহ্মপুত্র নদসহ অন্যান্য নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গফুর বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের গাফিলতির কারণে ক্লিনিকটি নিলামে বিক্রি করা সম্ভব হয়নি।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, অনেক চেষ্টা করেও ক্লিনিকটি রক্ষা করা গেল না।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।