
প্রতি বছরই নানা ধরনের পরিমার্জন করা হলেও পাঠ্যবইয়ে থেকেই যাচ্ছে ভুল আর অসংগতি। কিন্তু দীর্ঘ পরিকল্পনা ও যাচাই-বাছাই শেষে এ বছর থেকে চালু হওয়া নতুন শিক্ষাক্রমের বইয়ে ভুলত্রুটি খুবই কম থাকবে সেটাই আশা ছিল সবার। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রম চালু হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যেই বিভিন্ন ধরনের ভুল আর অসংগতি চোখে পড়ছে। এতে অনেকটাই হতাশ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
এ বছরের মাধ্যমিক স্তরের ইংরেজি ভার্সনের সপ্তম শ্রেণির ‘Science Exercise Book’ বইয়ের প্রথম অধ্যায়ের অনেক প্যারাগ্রাফ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এডুকেশনাল সাইট ‘nationalgeographic.org’ থেকে নেওয়া হয়েছে। কিছু প্যারাগ্রাফ ওয়ার্ড-বাই-ওয়ার্ড কপি করা হয়েছে। এ বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে ‘বায়োডায়ভারসিটি’ অধ্যায়ে ৫ নম্বর পৃষ্ঠার প্রায় বেশিরভাগ লেখাই হুবহু কপি করা হয়েছে। আর ৩ নম্বর পৃষ্ঠার কিছু অংশও কপি করা হয়েছে। এভাবে নতুন শিক্ষাক্রমের বিভিন্ন বইতে অসংখ্য বানান ভুল ও বাক্য গঠনে অসংগতি পাওয়া গেছে।
এ বইটির লেখক প্যানেলে ছিলেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ড. হাসিনা খান, ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান খান, ড. মুশতাক ইবনে আইয়ূব ও রনি বসাক। আর সম্পাদনা করেছেন ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে লেখা সপ্তম শ্রেণির ‘Science Exercise Book’ বইয়ের একটি অংশ ‘ইন্টারনেট থেকে হুবহু কপি করা হয়েছে’ বলে যে অভিযোগ উঠেছে তার দায় স্বীকার করেছেন বইটির রচনা ও সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক হাসিনা খান।
জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পাঠ্যবইয়ের কোথায় কোথায় ভুলত্রুটি আছে তা খুঁজতে ইতিমধ্যে একটি কমিটি কাজ শুরু করেছে। এ ছাড়া নতুন শিক্ষাক্রমের ব্যাপারে একাধিক কমিটি মার্চ মাসে স্কুলে স্কুলে ঘুরে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মতামত সংগ্রহ করবে। আগামী বছরের বই পরিমার্জনে তাদের মতামতকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে। যতটা নির্ভুল পরিমার্জন করা যায়, সেটা আমরা করব।’
সূত্র জানায়, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। আগামী বছর দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণি এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণি এ শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে। ২০২৫ সালে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণি এবং দশম শ্রেণি যুক্ত হবে। ২০২৬ সালে একাদশ ও ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণি যুক্ত হবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে প্রায় তিন বছর আগে কাজ শুরু হয়। ২০২২ সাল থেকে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর কথা ছিল। কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও যথাযথ পা-ুলিপি তৈরি না হওয়ায় তা শুরু করা যায়নি। তবে ওই বছর কিছু স্কুলে পাইলটিং করা হয়। এরপর এ বছর থেকে তিনটি শ্রেণিতে তা চালু করা হয়।
নতুন শিক্ষাক্রমের একাধিক বই বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ষষ্ঠ শ্রেণির ইংরেজি বইয়ের ব্যাক কভারে লেখা হয়েছে, ‘Government of the Peoples’ Republic of Bangladesh’. কিন্তু বাংলাদেশের অফিশিয়াল নাম ‘Government of the People’s Republic of Bangladesh’. এ ছাড়া এই শ্রেণির একাধিক বইয়ের অনেক জায়গায় একই শব্দের একেকভাবে লেখা হয়েছে। যেমন কেন/কেনো, পড়/পড়ো, নিচে/নীচে, যে কোন/যেকোন ইত্যাদি।
নতুন শিক্ষাক্রমের ষষ্ঠ শ্রেণির ইংরেজি বইয়ের নানা ভুলত্রুটি খুঁজে বের করেছেন মাসুম হাসান নামের একজন শিক্ষক। তিনি এতে ৪৮টি ভুল পেয়েছেন। এই বইয়ের ১৫ পৃষ্ঠায় ‘লিটল থিংস’ কবিতাটি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এতে কবির নাম দেওয়া হয়নি। অথচ এই বহুল প্রচলিত কবিতাটি লিখেছেন আমেরিকান কবি জুলিয়া অ্যাবিগেল ফ্লেচার কার্নি। একইভাবে ১০১ পৃষ্ঠায় ‘মাই বুকস’ কবিতাটিতেও কবির নাম নেই।
এ ছাড়া বইটির বিভিন্ন পৃষ্ঠায় বানান, বাক্য গঠন ও গ্রামারের ব্যবহারে অসংখ্য ভুল রয়েছে। ১৭ নম্বর পৃষ্ঠার ৮ নম্বর লাইনে লেখা হয়েছে agesz, সঠিক হবে ধমবং. ১৮ পৃষ্ঠার ১১ নম্বর লাইনে আছে things, হবে Things. ২৩ পৃষ্ঠার ৭ নম্বর লাইনে লেখা হয়েছে ‘প্রাত্যাহিক’, সঠিক হবে ‘প্রাত্যহিক’। ৩৫ নম্বর পৃষ্ঠায় মোটা অক্ষরে লেখা হয়েছে anoter, সঠিক হবে other. ৪০ পৃষ্ঠায় ১১ ও ১২ নম্বর লাইনে লেখা হয়েছে dinner, হবে supper. ৪৪ পৃষ্ঠায় ৭ নম্বর লাইনে আছে hand, হবে hands. ৫২ পৃষ্ঠায় ২ নম্বর লাইনে আছে his head, হবে her head. ৬৯ পৃষ্ঠায় ২৩ নম্বর লাইনে আছে Modal verb, হবে Modal verbs. ৮০ পৃষ্ঠায় ১ নম্বর লাইনে আছে has recently transferred, হবে has recently been transferred এবং ৫ নম্বর লাইনে আছে যব attends, হবে she attends. ৮২ পৃষ্ঠায় ১৭ নম্বর লাইনে আছে conversion, হবে conversation. ৮৪ পৃষ্ঠায় ১৮ নম্বর লাইনে আছে younger, হবে youngers. ৮৫ পৃষ্ঠায় ৬ নম্বর লাইনে আছে word means, হবে words mean. ৯২ পৃষ্ঠার নিচ থেকে ৩ নম্বর লাইনে লেখা parent’s, হবে parents. ১০২ পৃষ্ঠার নিচ থেকে ২ নম্বর লাইনে লেখা word, হবে words. ১০৪ পৃষ্ঠার ১০ নম্বর লাইনে লেখা ‘You’, হবে ‘you’ এবং শেষ লাইনে আছে ণড়ঁ, হবে ুড়ঁ. ১০৬ পৃষ্ঠার চিঠিতে শুরুতেই লেখা হয়েছে Assalamu Alaaikum, স্বাভাবিকভাবেই মুসলিম বাদে অন্যান্য ধর্মের শিক্ষার্থী এ শব্দটি গ্রহণ করবে না। একই পৃষ্ঠায় নিচ থেকে ৩ নম্বর লাইনে আছে ঈড়ারফ, হবে ঈঙঠওউ.
১০৮ পৃষ্ঠায় ২ নম্বর লাইনে লেখা ওভ, হবে রভ এবং ৪ নম্বর লাইনে আছে Dear madam/sir, হবে Dear Madam/Sir. ১০৯ পৃষ্ঠায় ৫ ও ১৮ নম্বর লাইনে আছে expressions, হবে Expression. ১১০ পৃষ্ঠার নিচ থেকে ৭ নম্বর লাইনে আছে ‘অংশ গ্রহণ’ হবে ‘অংশগ্রহণ’। ১৩১ পৃষ্ঠায় নিচ থেকে ৯ নম্বর লাইনে আছে oldest, হবে eldest. ১৩৩ পৃষ্ঠায় নিচ থেকে ২ নম্বর লাইনে লেখা ‘কার্য্যক্রম’, লেখা উচিত ‘কার্যকলাপ বা কর্মকা-’ এবং নিচ থেকে ১ নম্বর লাইনে আছে ‘শ্রেনি’, হবে ‘শ্রেণি’। ১৩৪ পৃষ্ঠায় ৯ নম্বর লাইনে আছে ‘তাছাড়াও’, লেখা উচিত ‘এছাড়াও বা তাছাড়া’ এবং একই লাইনে আছে ‘বৈশিষ্ট্যবলী’ তবে লেখা উচিত ‘বৈশিষ্ট্যগুলো’।
১৩৮ পৃষ্ঠার নিচ থেকে প্রথম লাইনে আছে Eid-al-Azha, হবে Eid-al-Adha. ১৩৯ পৃষ্ঠার ৩ ও ৪ নম্বর লাইনে আছে each other, হবে one another. ১৪২ পৃষ্ঠার ৬ নম্বর লাইনে আছে I ate, হবে I have eaten. ১৪৫ পৃষ্ঠার ১০ নম্বর লাইনে আছে each othe's, হবে one another's. ১৪৮ পৃষ্ঠার ১৪ নম্বর লাইনে আছে ‘শব্দলোর’, হবে ‘শব্দগুলোর’। ১৪৯ পৃষ্ঠার ১৪ নম্বর লাইনে আছে Four Friend's, হবে Four Friends এবং একই লাইনে আছে ‘খুজে’, হবে ‘খুঁজে’। ১৫১ পৃষ্ঠার ৭ নম্বর লাইনে লেখা আছে ‘সব বন্ধু-বান্ধবদেরকে’, লেখা উচিত ‘সব বন্ধুকে’ এবং একই লাইনে আছে ‘উৎসবমূখর’, হবে ‘উৎসবমুখর’। ১৫৬ পৃষ্ঠার নিচ থেকে ১০ নম্বর লাইনে আছে it’s paws, হবে its paws. ১৬০ পৃষ্ঠার ৫ নম্বর লাইনে লেখা religion, হবে religions. ১৬৪ পৃষ্ঠার ৬ নম্বর লাইনে listening, হবে listening to. ১৬৫ পৃষ্ঠায় নিচ থেকে ২ নম্বর লাইনে লেখা ‘কৃত্তিমভাবে’, হবে ‘কৃত্রিমভাবে’। আর ১৬৭ পৃষ্ঠার ৫ নম্বর লাইনে আছে Celerate, হবে Celebrate এবং নিচ থেকে ২ নম্বর লাইনে আছে Starring, হবে Staring.
শুধু নতুন শিক্ষাক্রমই নয় পুরনো কারিকুলামের বইতেও রয়েছে অনেক ভুল। ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ পাঠ্যবইয়ের ১৬ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে ‘পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ ক্যাম্প, পিলখানা ইপিআর ক্যাম্প ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আক্রমণ চালায় ও নৃশংসভাবে গণহত্যা ঘটায়।’ এখানে তথ্যগত দুটি ভুল আছে। প্রকৃতপক্ষে রাজারবাগে ছিল পুলিশ লাইনস, আর পিলখানায় ছিল ইপিআর সদর দপ্তর। গত বছরের বইয়েও একই ভুল ছিল। একই শ্রেণির ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা’ বইয়ের ২০০ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা আছে, ‘১২ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের নিকট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করেন।’ এ তথ্যও সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুকে শপথ পড়িয়েছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। একই বইয়ের ১৮১ পৃষ্ঠায় ‘অবরুদ্ধ বাংলাদেশ ও গণহত্যা’ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, ‘২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশজুড়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী নির্যাতন, গণহত্যা আর ধ্বংসলীলায় মেতে ওঠে।’ প্রকৃত তথ্য হলো, পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর নির্যাতন, গণহত্যা ও ধ্বংসলীলা শুরু হয় ২৫ মার্চ কালরাতে।
গতকাল নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় এবং পৌরনীতি ও নাগরিকতা বিষয়ে মোট ৯টি সংশোধনী দিয়েছে এনসিটিবি। এতে মূলত ইতিহাসভিত্তিক কিছু তথ্যের সংশোধন করা হয়েছে।
ড. জাফর ইকবাল ও ড. হাসিনা খানের বিবৃতি : গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে ড. জাফর ইকবাল ও ড. হাসিনা খান বলেন, একই পাঠ্যপুস্তক রচনার সঙ্গে অনেকে জড়িত থাকেন, যাদের শ্রম ও নিষ্ঠার ফল বইটি। বিশেষত জাতীয় পাঠ্যপুস্তক রচনার ক্ষেত্রে এসব লেখকের কাছ থেকেই একধরনের দায়িত্বশীলতা আশা করা হয়। সেখানে কোনো একজন লেখকের লেখা নিয়ে এ ধরনের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তা আমাদের টিমের জন্য হতাশা ও মন খারাপের কারণ। ওই অধ্যায়ের আলোচিত অংশটুকু লেখার দায়িত্বে আমরা দুজন না থাকলেও সম্পাদক হিসেবে এর দায় আমাদের ওপরও বর্তায়, সেটি আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি। অবশ্যই পরবর্তী সংস্করণে বইটির প্রয়োজনীয় পরিমার্জন করা হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এ বছর বইটির পরীক্ষামূলক সংস্করণ চালু হয়েছে এবং সামনের শিক্ষাবর্ষ থেকে এতে যথেষ্ট পরিমার্জন ও সম্পাদনার সুযোগ রয়েছে। কাজেই উল্লিখিত অভিযোগের বাইরেও যেকোনো যৌক্তিক মতামতকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হবে এবং সে অনুযায়ী পাঠ্যবইয়ের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন বা পরিমার্জন করা হবে।
দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতে গুরুত্ব দিতে সংশ্লিষ্ট সকলকে আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর।
নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তিনি এ আহবান জানান। প্রফেসর মুহাম্মদ আলমগীর এর কক্ষে মঙ্গলবার সকালে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (সিইডিপি)-এর আওতায় নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় দেশের কলেজসমূহে উচ্চশিক্ষায় নিয়োজিত শিক্ষকদের শিখন ও দক্ষতার উন্নয়নে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। সভায় প্রতিনিধি দল শিক্ষক প্রশিক্ষণের অগ্রগতির নানাদিক তুলে ধরেন।
সভায় প্রফেসর আলমগীর বলেন, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন প্রোগাম চালুর ক্ষেত্রে শিক্ষক, গবেষণাগার ও অবকাঠামো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এসব শর্তসমূহ প্রতিপালন না করেই শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করছে। এটি দুঃখজনক ঘটনা। এ কারণে শ্রমবাজারের উপযোগী মানসম্পন্ন গ্রাজুয়েট তৈরি থেকে দেশ বঞ্চিত হচ্ছে। গুণগত উচ্চশিক্ষা লাভ থেকে যেন শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে বলে তিনি জানান।
ইউজিসি’র এ সদস্য আরও বলেন, কলেজ পর্যায়ে উচ্চশিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে সরকারকে আরও আন্তরিক হতে হবে। এ লক্ষ্যে বাজার উপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে।
তিনি বলেন, কলেজগুলোতে যত্রতত্র অনার্স-মাস্টার্স খোলার অনুমতি না দিয়ে কর্মমুখী ও দক্ষতা নির্ভর উচ্চশিক্ষা প্রদানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মনোযোগী হতে হবে।
সভায় নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মালয়েশিয়া ক্যাম্পাসের সেন্টার ফর একাডেমিক পার্টনারশিপ এন্ড এনগেজমেন্ট- এর পরিচালক রোজিলিনি মেরি ফার্নাদেজ চুং, সহযোগী অধ্যাপক রণজিৎ সিং গিল ও সিইডিপি প্রকল্পের সিনিয়র প্রোগাম অফিসার ড. একেএম খলিলুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, সিইডিপির অধীনে নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় দেশের কলেজ শিক্ষকদের মাস্টার ট্রেইনার, প্রিন্সিপালস ট্রেনিং, লিডার্স ট্রেনিং, পলিসি মেকারস, ফিউচার লিডার, বিষয়ভিত্তিক ট্রেনিং, আইভিসিআর- এর ওরিয়েন্টশন, অপারেশন এন্ড মেনটেনেন্স বিষয়ে বিভিন্ন মেয়াদী প্রশিক্ষণ প্রদান করে আসছে।
চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা আগামী ৩০ এপ্রিল শুরু হবে। আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার গণমাধ্যমকে এতথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, আগামী ৩০ এপ্রিল থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠালে সেটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এর দুই মাস পরে শুরু হবে এইচএসসি পরীক্ষা।
এসএসসি পরীক্ষা সাধারণত ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়। আর এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয় এপ্রিলে। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে এই পরীক্ষাগুলো নির্ধারিত সময়ে শুরু করা যায়নি। গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়।
গত বছরের মতো এ বছরও পুনর্বিন্যাস করা সিলেবাসেই এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দেশের স্কুলগুলোতে ২০২৩ সালের এসএসসির পরীক্ষার ফরম পূরণ শুরু হয় আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে। কোনো জরিমানা ছাড়া তা চলে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত।
এদিকে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবে বলেও জানিয়েছেন ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান।
২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার রেজাল্ট ৭-৯ ফ্রেব্রুয়ারির মধ্যে প্রকাশিত হবে বলে জানিয়েছেন পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার।
শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি ও ফল প্রকাশের সময়সূচি পাওয়ার ভিত্তিতে তা প্রকাশ করা হবে। ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর থেকে শুরু হয়।
এ বছর মোট ১২ লাখ তিন হাজার ৪০৭ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়। এর মধ্যে ছয় লাখ ২২ হাজার ৭৬৯ জন ছেলে ও পাঁচ লাখ ৮০ হাজার ৬১১ জন মেয়ে। এ বছর দুই হাজার ৬৪৯টি কেন্দ্র ও ৯ হাজার ১৮১টি প্রতিষ্ঠানে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
সাময়িক সনদের মেয়াদ উত্তীর্ণ এবং নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে সকল কার্যক্রম স্থানান্তরিত হতে ব্যর্থ হয়েছে এমন ১৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে আজ বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
গণবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কমিশনে পত্রের প্রেক্ষিতে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে সকল কার্যক্রম স্থানান্তর ও ক্যাম্পাস নির্মাণে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় দেশের চারটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রোগ্রামে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, আশা ইউনিভার্সিটি ও ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তরিত না হওয়া পর্যন্ত সকল প্রোগ্রামে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকবে।
স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র স্থায়ী ক্যাম্পাস ব্যতীত অস্থায়ী ক্যাম্পাসে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকবে। তবে এ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে পরিচালিত প্রোগ্রামসমূহ যথারীতি চালু থাকবে।
কমিশনের পত্রের প্রেক্ষিতে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর ও ক্যাম্পাস নির্মাণের বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি বিবেচনায় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, সিটি ইউনিভার্সিটি, দ্য মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিকে স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রমসহ সম্পূর্ণ কার্যক্রম স্থানান্তরে আগামী ৩১ মার্চ ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।
উল্লিখিত সময়সীমার মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রমসহ সকল কার্যক্রম স্থানান্তরে ব্যর্থ হলে ১ এপ্রিল ২০২৩ তারিখ হতে সকল প্রোগ্রামে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকবে। একই সঙ্গে এ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাস ব্যতীত সকল অস্থায়ী ক্যাম্পাস বা ভবনগুলো অবৈধ মর্মে বিবেচিত হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর ও ক্যাম্পাস নির্মাণের বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি এবং লিখিত অঙ্গীকার বিবেচনায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ, গ্রিন ইউনিভার্সিটি, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি এবং দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটিকে স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রমসহ সম্পূর্ণ কার্যক্রম স্থানান্তরে আগামী ৩০ জুন ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।
নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রমসহ সম্পূর্ণ কার্যক্রম স্থানান্তরে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ জুলাই ২০২৩ তারিখ হতে সকল প্রোগ্রামে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকবে। একই সঙ্গে এ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাস ব্যতীত সকল অস্থায়ী ক্যাম্পাস বা ভবনগুলো অবৈধ মর্মে বিবেচিত হবে।
গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাময়িক সনদের মেয়াদ উত্তীর্ণ ও স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত হয়নি এমন বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের জন্য ১১ এপ্রিল ২০২২ তারিখে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন নির্দেশনা প্রদান করে। উক্ত পত্রে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরে ব্যর্থ হলে ১ জানুয়ারি ২০২৩ থেকে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি থাকবে মর্মে বলা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ মোতাবেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১২ বছরের মধ্যে নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে সকল কার্যক্রম স্থানান্তরের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ ছাড়া আইনের ১২(১) ধারায় ‘কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সাময়িক অনুমতিপত্রের মেয়াদের মধ্যে বা, ক্ষেত্রমত, নবায়নকৃত সাময়িক অনুমতিপত্রের মেয়াদের মধ্যে সনদপত্রের জন্য আবেদন করিতে ব্যর্থ হইলে, অথবা সনদপত্র প্রাপ্তির জন্য ধারা ৯ এর কোন শর্ত পূরণে ব্যর্থ হইলে, উক্ত সাময়িক অনুমতিপত্র বা, ক্ষেত্রমত, নবায়নকৃত সাময়িক অনুমতিপত্রের মেয়াদ অবসানের সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও শিক্ষা সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম বন্ধ করিতে হইবে’ মর্মে উল্লেখ রয়েছে।
নবম ও দশম শ্রেণির ৩টি বইয়ের কিছু ভুলের সংশোধনী দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। বই তিনটি হলো বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং পৌরনীতি ও নাগরিকতা।
এনসিটিবির এক বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা শুরুর সময়, দেশের সংবিধান প্রণয়নের পটভূমি, ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে কয়টি দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল এবং অন্যান্য বিষয়ে ভুল ছিল। এসবের জন্য মোট ৯টি সংশোধনী দেওয়া হয়েছে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, আগামীকাল (বুধবার) সব স্কুলে সংশোধনী পাঠানো হবে।
নবম ও দশম শ্রেণির বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, পৌরনীতি ও নাগরিকতা এই তিন বইয়ের বিভিন্ন পৃষ্ঠায় মোট নয়টি ভুল মিলেছে।
এর মধ্যে বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বইয়ের ১৮১ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, ‘১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জুড়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী নির্যাতন, গণহত্যা আর ধ্বংসলীলায় মেতে ওঠে’।
ভুল সংশোধন করে এখন লেখা হয়েছে, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জুড়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী নির্যাতন, গণহত্যা আর ধ্বংসলীলায় মেতে ওঠে’।
একই বইয়ের ২০০ পৃষ্ঠায় ভুল ছিল, ‘১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের কাছে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।’ সংশোধনে লেখা হয়েছে, ‘১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর কাছে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন’।
ওই বইয়ের ২০২ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘সংবিধান প্রণয়ন ১৯৭২ এর পটভূমি’ অংশের প্রথম অনুচ্ছেদের পরে যুক্ত হবে, ‘সংবিধান প্রণয়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শিক অবস্থান প্রতিফলিত হয়েছিল। সংবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর সার্বক্ষণিক দিক-নির্দেশনা ছিল। তিনি সংবিধান কমিটিকে বিভিন্ন মৌলিক বিষয়ে প্রত্যক্ষ নির্দেশনা দিয়েছিলেন’।
এ বইয়ের আরেক ভুল পাওয়া গেছে ২০৩ নম্বর পৃষ্ঠায়। যেখানে ছাপা হয়েছে, পঞ্চম ভাগে জাতীয় সংসদ। সংশোধন হিসেবে লিখতে বলা হয়েছে, ‘পঞ্চমভাগে আইনসভা’।
একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের তিনটি ভুল চিহ্নিত হয়েছে।
বইয়ের ছয় নম্বর পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘৫৪ সালের নির্বাচনে ৪টি দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। দল চারটি হলো- আওয়ামী লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি, নেজামে ইসলাম ও গণতন্ত্রী দল’।
এর সংশোধন হবে, ৫৪ সালের নির্বাচনে ৫টি দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। দলগুলো হলো আওয়ামী লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি, নেজামে ইসলাম, গণতন্ত্রী দল, পাকিস্তান খেলাফতে রব্বানী পার্টি।
এ বইয়ের ১৬ নম্বর পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ ক্যাম্প ও পিলখানা ইপিআর ক্যাম্প।’ সংশোধন হবে, ‘রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স ও পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তর’।
ওই বইয়েরই ২৮ নম্বর পৃষ্ঠায় আছে, ‘সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ এ সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্য’।
সংশোধনীটি হচ্ছে, ‘সাধারণ মানুষের মৌলিক মানবাধিকার সংরক্ষণ এ সংবিধানের বৈশিষ্ট্য’।
নবম-দশম শ্রেণির পৌরনীতি ও নাগরিকতা বইয়ে ভুল চিহ্নিত করা হয়েছে দুটি।
বইয়ের ৫৭ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কাজ’ এর ১ ক্রমিক এর অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপিত হবে, ‘রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান সরকারের সকল শাসনসংক্রান্ত কাজ তার নামে পরিচালিত হয়। তিনি প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত তাঁর সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ পরিচালনা করেন। তিনি মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রীদের নিয়োগ করেন। রাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের (মহা হিসাবরক্ষক, রাষ্ট্রদূত ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা) নিয়োগের দায়িত্বও রাষ্ট্রপতির। প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগসমূহের সর্বাধিনায়কতা রাষ্ট্রপতির উপর ন্যস্ত। তিন বাহিনীর (সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী) প্রধানদের তিনিই নিয়োগ দেন।’
এই বইয়ের ৫৯ পৃষ্ঠায় ‘প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কাজ’ এর ১ নম্বর অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপিত হবে এভাবে, ‘প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদের প্রধান। প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্বে সংবিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়। তিনি মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যা নির্ধারণ করেন ও মন্ত্রীদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করেন। তিনি যে কোনো মন্ত্রীকে তার পদ থেকে অপসারণের পরামর্শ দিতে পারেন’।
জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১ অনুযায়ী পাবলিক বা বোর্ড পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা না থাকায় জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
২০২৩ সাল থেকে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা বাদ দেওয়ার সুপারিশ প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন।
আজ সোমবার (১৬ জানুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব আক্তার উননেছা শিউলীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা যায়।
এতে বলা হয়, জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১ অনুযায়ী জেএসসি ও জেডিসি পাবলিক বা বোর্ড পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা রাখা হয়নি বিধায় ২০২২ ও ২০২৩ এবং পরবর্তীসময়ে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা বাদ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী এই প্রস্তাবের সম্মতি দিয়ে পরীক্ষা বাতিল করার বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছেন।
এ বিষয়ে পরবর্তীসময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ হলো গবেষণা। কিন্তু দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণায় খুব একটা আগ্রহ নেই। সরকারি-বেসরকারি ১৫৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৩টি গবেষণায় এক টাকাও ব্যয় করেনি। আর ৪৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ লাখ টাকার নিচে লোক দেখানো ব্যয় করেছে। এমনকি এক বছরে ৫৭ বিশ্ববিদ্যালয় একটি প্রকাশনাও বের করতে পারেনি। বাংলাদেশে এই গবেষণার চিত্র অত্যন্ত হতাশাজনক বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদন হস্তান্তর করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। ৫০ সরকারি ও ১০৫ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১ সালের তথ্য নিয়ে তৈরি ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদনে গবেষণার এই দুরবস্থার চিত্র উঠে এসেছে।
ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, গবেষণায় এক টাকাও ব্যয় না করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে ৬টি সরকারি ও ২৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। আর ১০ লাখ টাকার নিচে ব্যয় করেছে ৭টি সরকারি ও ৪২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ১৫টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বছরে কোনো গবেষণা নিবন্ধ বের হয়নি। বেসরকারির ক্ষেত্রে এ সংখ্যা ৪২।
এর আগে ২০২০ সালে ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার পেছনে কোনো খরচ করেনি। তবে ২০২১ সালে এ সংখ্যা কমে ৩৩ হয়েছে। অর্থাৎ সামান্য উন্নতি হয়েছে। তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই গবেষণার খাতায় নাম ওঠাতে লোকদেখানো ব্যয় করেছে। যাতে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা হয় না তা কেউ বলতে না পারে। এজন্য তারা ছলচাতুরী করে গবেষণা খাতে ৫০ হাজার, ১ লাখ, ২ লাখ টাকার মতো ব্যয় করে ইউজিসির তালিকায় নাম তুলেছে।
ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণা না হওয়াটা দুঃখজনক। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কম-বেশি গবেষণায় অর্থ বরাদ্দ হয়। বিজ্ঞান ও কৃষিতে আমাদের ভালো গবেষণা হয়। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে এই গবেষণার অর্থ সবসময় সঠিকভাবে ব্যবহার হয় না। আর বেসরকারি ১৫ থেকে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় ভালো। বাকি ৭০ থেকে ৮০টি হলো পাঠশালা। এখানে একজন শিক্ষককে প্রতিদিন পাঁচ-ছয়টি ক্লাস নিতে হয়। তাদের বেতনও খুব কম। তারা গবেষণার চিন্তাও করতে পারে না। ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিরা চায়, ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হোক আর টাকা আসুক। গবেষণায় তারা বরাদ্দও রাখেন না।’
ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে গবেষণায় সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, তবে টাকার অঙ্কে তা মাত্র ৮ কোটি। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা করে ব্যয় করেছে রাজশাহী ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ২০২১ সালে ৫০ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় মোট ব্যয় ছিল ৭৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ফলে বাকি অন্যান্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও গবেষণায় নামমাত্র ব্যয় করেই দায় সেরেছে।
তবে গবেষণার দিক দিয়ে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাড়িয়ে অনেক দূরে চলে গেছে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। সর্বোচ্চ ৫৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা গবেষণায় ব্যয় করেছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪ কোটি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় ও তৃতীয় সর্বোচ্চ ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা গবেষণায় ব্যয় করেছে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ। এ ছাড়া গবেষণায় উল্লেখযোগ্য ব্যয় করেছে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, উচ্চশিক্ষার মান বাড়াতে গবেষণা অন্যতম পূর্বশর্ত। উন্নত দেশগুলোয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা খাতে বিপুল অর্থ ব্যয় করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে গবেষণার মতো অত্যাবশ্যকীয় খাতে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়, তা উল্লেখ করার মতো নয়। হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে নামকাওয়াস্তে গবেষণা পরিচালনা করা হয়। দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগই নিজেদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে মনে করে। বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ই গবেষণাকে তেমন একটা গুরুত্ব দেয় না। ফলে দেশের উচ্চশিক্ষার মান এখন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।
অন্যান্য দেশের দিকে তাকালে দেখা যায়, যে দেশে যত বেশি গবেষণার জন্য আর্থিক প্রণোদনাসহ অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়, সে দেশ তত বেশি সমৃদ্ধ। যেমন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত ইত্যাদি দেশে বারবার গবেষণা ছাড়া অপেক্ষাকৃত ছোট বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় না। গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে যেসব দেশে বার্ষিক ৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ ব্যয় করা হয়, সে রকম ৯০টি দেশের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত থাকলেও বাংলাদেশ বরাবরের মতোই অনুপস্থিত।
দেশের সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাতগুলোর মধ্যে গার্মেন্টস অন্যতম। আর এই খাতকে আরও শক্তিশালী করতে দেশে প্রতিষ্ঠা করা হয় বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়। যাদের নিত্যনতুন গবেষণার মাধ্যমে এই খাতের সমৃদ্ধি অর্জনে কাজ করার কথা। অথচ ২০২১ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ব্যয় ছিল মাত্র ৫০ লাখ টাকা। এমনকি ওই বছরে তাদের একটিও গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়নি। দেশকে ডিজিটাল করার ক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্ভাবনের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে ১০ হাজার কোটি টাকার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) জমা দেওয়া হলেও ২০২১ সালে তারা গবেষণায় ব্যয় করেছে মাত্র ৬ লাখ টাকা, ছিল না কোনো প্রকাশনা।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২৯ বছরের পুরনো বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি গবেষণায় এক টাকাও খরচ করেনি। পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, আশা ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ গবেষণায় এক টাকাও ব্যয় করেনি। নামমাত্র ব্যয় করেছে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ৭ লাখ ৪৩ হাজার, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি ২ লাখ ৫২ হাজার, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি ৫ লাখ ৯৮ হাজার, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি ১ লাখ ২৯ হাজার, সিটি ইউনিভার্সিটি ২ লাখ ৫০ হাজার, নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ১ লাখ ৯৮ হাজার, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ৪ লাখ ৯৫ হাজার, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি ২০ হাজার, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা ৬৮ হাজার, নটর ডেম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। অনেক বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ই এক লাখ টাকার নিচে ব্যয় করে গবেষণার খাতায় নাম তুলেছে।
তবে ইউজিসি প্রতিবছর গবেষণার জন্য নিয়মিতভাবে বিভিন্ন প্রকার বৃত্তি ও ফেলোশিপ দিয়ে থাকে। ২০২১ সালে তারা এ খাতে ৮৯৪টি প্রকল্পের জন্য ১ কোটি ৫৮ লাখ ৮ হাজার ৭৯০ টাকা ব্যয় করেছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যদি ইউজিসির গবেষণা বরাদ্দের গড় করা হয়, তাহলে প্রতিটি প্রকল্পের জন্য গড়ে বরাদ্দ মাত্র সাড়ে ১৭ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে গবেষণা হয় না। তাই শিক্ষকরা বরাদ্দ নিলেও বেশিরভাগই প্রকৃত অর্থে কোনো গবেষণা না করে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়ে দায় সারেন।
চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফরম পূরণের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। বিলম্ব ফিসহ গত সোমবার ফরম পূরণের শেষ সময় ছিল।
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার বিলম্ব ফিসহ ফরম পূরণের সময় আগামী ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ফি জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১৭ জানুয়ারি।
শিক্ষা বোর্ডগুলো এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের ফি ২ হাজার ২০ টাকা। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত ফি ২ হাজার ১৪০ টাকার মধ্যে বোর্ড ফি ১ হাজার ৬২৫ টাকা ও কেন্দ্র ফি ৫১৫ টাকা। ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত ২ হাজার ২০ টাকা ফির মধ্যে বোর্ড ফি ১ হাজার ৫৩৫ টাকা ও কেন্দ্র ফি ৪৮৫ টাকা।
আরও বলা হয়েছে, এসএসসি পরীক্ষার ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পত্রপ্রতি ১১০ টাকা, ব্যবহারিকের ফি বাবদ পত্রপ্রতি ৩০ টাকা, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্টের ফি বাবদ পরীক্ষার্থীপ্রতি ৩৫ টাকা, মূল সনদ বাবদ শিক্ষার্থীপ্রতি ১০০ টাকা, বয়েজ স্কাউট ও গার্লস গাইড ফি বাবদ ১৫ টাকা এবং জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ফি বাবদ পরীক্ষার্থীপ্রতি ৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীপ্রতি ১০০ টাকা অনিয়মিত ফি দিতে হবে। আর জিপিএ উন্নয়ন পরীক্ষার্থীদের ১০০ টাকা অনুমতি বা তালিকাভুক্তি ফি দিতে হবে।
সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি) সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সাবেক সচিব মো. খলিলুর রহমান এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক।
সোমবার (৯ জানুয়ারি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
খলিলুর রহমানের নিয়োগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, তার অভোগকৃত অবসরোত্তর ছুটি ও এ–সংক্রান্ত সুবিধা স্থগিতের শর্তে তাকে পিএসসির সদস্য পদে নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। তার মেয়াদ হবে দায়িত্ব গ্রহণের দিন থেকে পাঁচ বছর বা তার বয়স ৬৫ বছর পূর্ণ হওয়ার মধ্যে যেটি আগে হবে, সেই সময় পর্যন্ত। খলিলুর রহমান সর্বশেষ ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ছিলেন।
সৈয়দ গোলাম ফারুকের নিয়োগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে কর্ম-সম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে তাকে নিয়োগ দেওয়া হলো। তারও মেয়াদ হবে খলিলুর রহমানের মতোই।
তিনি বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদ মাউশির মহাপরিচালকের (ডিজি) পদ থেকে অবসরে গিয়েছিলেন।
প্রাইভেট কোচিংয়ে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে বাংলাদেশে।
বাংলাদেশে গ্রামীণ এলাকার ৫৪ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাইভেট পড়ে এবং শহরাঞ্চলে এ হার ৬৭ শতাংশ। শ্রীলঙ্কায় শহরে এ হার ৬৫ এবং গ্রামে ৬২ শতাংশ। পাকিস্তানে সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের ২৫ ও বেসরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের ৪৫ শতাংশকে প্রাইভেট পড়তে হয়। ভারতে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাইভেট শিক্ষকের দ্বারস্থ হয়।
গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট-২০২২ এ এসব তথ্য উঠে এসেছে। ইউনেসকো প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষায় বেসরকারি খাতের ভূমিকা সংক্রান্ত গবেষণা করেছে। এতে সহযোগী হিসেবে রয়েছে ব্র্যাক।
মঙ্গলবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘দক্ষিণ এশিয়া: শিক্ষাক্ষেত্রে অরাষ্ট্রীয় অবদান’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ বাংলাদেশে মাধ্যমিকে ৯৪ শতাংশ শিক্ষার্থী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের। তবে প্রাক প্রাথমিকে শ্রীলঙ্কায় ৮০ শতাংশ, প্রাথমিকে ভারতে ৪৫ ও উচ্চশিক্ষায় আফগানিস্তানে ৫৪ শতাংশ শিক্ষার্থী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে। প্রাক প্রাথমিকে বাংলাদেশে ৫৫, প্রাথমিকে ২৪ ও উচ্চশিক্ষায় ৩৬ শতাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়ে। অন্যদিকে ভারতে মাধ্যমিকে ৫১ ও উচ্চশিক্ষায় ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়ে।
গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যয়ের ৭১ শতাংশ পরিবার বহন করে। তবে এনজিও স্কুলে ফি সরকারির তুলনায় তিনগুণ ও বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনের ফি সরকারির তুলনায় নয়গুণ বেশি। পাকিস্তানে শিক্ষা ব্যয়ের ৫৭ শতাংশ বহন করে পরিবার। নেপালে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষায় পরিবারের ব্যয় ৬৩ শতাংশ এবং কারিগরি-বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে পরিবার ব্যয় করে ৭৫ শতাংশ। ভারতে শীর্ষ ২০ শতাংশ পরিবার নিচের ২০ শতাংশ পরিবারের তুলনায় সরকারি, বেসরকারি অনুদানপ্রাপ্ত এবং অনুদানবিহীন সব রকম স্কুলে প্রায় চারগুণ বেশি ব্যয় করে।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় ১২ শতাংশ পরিবার সঞ্চয় করে এবং ৬ শতাংশ পরিবার স্কুলের ফি মেটাতে ঋণ করে থাকে। বাংলাদেশে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পরিবার ঋণ করে বেসরকারি পলিটেকনিকে পড়াশোনার খরচ মেটায়। ভুটান, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণকারীদের স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশে শিক্ষার্থীরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি বৃদ্ধি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি এর ওপর কর আরোপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল। ফলস্বরূপ, কিছু সিদ্ধান্তের পরিবর্তনও হয়েছিল।
এই প্রতিবেদনের জন্য করা একটি জরিপে দেখা যায়, ভারতের এক হাজার ৫০টি কম খরচের বেসরকারি স্কুলের মধ্যে এক হাজারটি স্কুল শুধু ফির ওপর নির্ভর করে চলে।
প্রাইভেট-কোচিংয়ের কৃতকার্যতার ব্যাপারে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ৭০ শতাংশের বেশি রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রাইভেট পাঠদান শিক্ষার্থীদের ভালো ফল পেতে সাহায্য করেছে। উচ্চ আয়ের সন্ধানে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে অনেক মেধাবী শিক্ষক এই ‘ছায়া শিক্ষা’য় চলে গেছেন বলে জানা যায়। তবে শ্রীলঙ্কায় প্রাইভেট পাঠদানে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলে কোনো প্রভাব ফেলেনি। নেপালে শিক্ষকরা প্রাইভেট পাঠদানের চাহিদা বাড়াতে স্কুলের শ্রেণিকক্ষে পড়ার বিষয় অসম্পন্ন করে রাখেন বলে জানা যায়। ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের শহরাঞ্চলে শিক্ষার্থীরা তাদের শ্রেণিকক্ষের শিক্ষকদের চেয়ে কোচিং সেন্টারের শিক্ষকদের প্রতি বেশি শ্রদ্ধাশীল বলে জানা যায়।
বাংলাদেশের ব্যাপারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার দায়িত্বভার দুটি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ভাগ করা হয়েছে। যা পাঠ্যক্রম, শিক্ষক, শিক্ষার গুণগত মান ও অন্যান্য মানদণ্ডগুলোর ক্ষেত্রে সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গিকে বাধাগ্রস্ত করছে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ড. হোসাইন জিল্লুর রহমান, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউনেসকোর পরিচালক ড. মানোস অ্যান্টোনিনিস। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের পরিচালক সাফি রহমান খান।
চাকরি স্থায়ী করার এক দফা দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণিতে কর্মরত দৈনিক মজুরি ভিত্তিক অস্থায়ী কর্মচারীরা।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনশন শুরু করে সন্ধ্যা সাতটা অনশন চালিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। চাকরি স্থায়ী করার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এই কর্মচারীরা।
এর আগে, দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ছয়টি আবাসিক হল পরিদর্শনে গিয়ে অনশনরতদের সঙ্গে কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম। এ সময় তিনি আন্দোলনকারীদের দাবির প্রেক্ষিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন আবাসিক হলগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োজিত অস্থায়ী কর্মচারীদের চাকরি দেওয়ার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সুপারিশ করেছেন ইউজিসি সদস্য দিল আফরোজা বেগম।
এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম জানিয়েছেন, অনশনরতদের বিষয়ে সুপারিশ মোতাবেক কাজ করা হবে।
তিনি বলেন, ‘আন্দোলনরত চতুর্থ শ্রেণির এই অস্থায়ী কর্মচারীরা নতুন হলগুলোতে আবেদন করলে আমরা সর্বোচ্চ বিবেচনা করবো।’
রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির সাতজন ও চতুর্থ শ্রেণির ১৪৯ জন কর্মচারী ‘দৈনিক মজুরি’ ভিত্তিতে কর্মরত আছেন। ইউজিসির অনুমোদন না থাকায় তাদের নিয়োগ স্থায়ী করা সম্ভব হচ্ছে না।
চাকরি স্থায়ী করার দাবিতে অনশনকারীদের একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের জাহানারা ইমাম হলের পিয়ন নাসরিন আক্তার। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হলেও ইউজিসির দোহাই দিয়ে আমাদের চাকরি স্থায়ী করা হয়নি। এখন আমাদের পক্ষে আর ধৈর্য ধরা সম্ভব হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে অনশনে বসেছি।’
শেখ হাসিনা হলের মালি শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘ ১১ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেবা দিয়ে মাসে মাত্র ১২ হাজার টাকা বেতন পাই। এই টাকা দিয়ে সংসার চলে না।’
একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ১ম ধাপের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ফল প্রকাশ করা হয়। অনলাইনে নির্ধারিত ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে প্রথম ধাপের এ ফল জানা যাচ্ছে।
এ বছর প্রায় ১৩ লাখ ভর্তিচ্ছু একাদশে ভর্তির আবেদন করেছিলেন।
ফল জানা যাবে যেভাবে
নির্ধারিত ওয়েবসাইটের ‘ভিউ রেজাল্ট’ বাটনে ক্লিক করতে হবে। এরপর ভর্তিচ্ছুরা রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, বোর্ড ও পাসের বছর এবং ওয়েবপাতায় উল্লেখিত ভেরিফিকেশন কোডটি ইনপুট দিতে হবে। এরপর নীল বর্ণের ‘ভিউ রেজাল্ট’ বাটনে ক্লিক করলেই শিক্ষার্থীর ফল দেখাতে পাবে।
ভর্তি নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের নির্বাচন নিশ্চায়ন চলবে ১ থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। ৩২৮ টাকা ফি দিয়ে ভর্তির প্রাথমিক নিশ্চায়ন করা যাবে। নিশ্চায়ন না করলে প্রথম পর্যায়ের নির্বাচন ও আবেদন বাতিল হবে। পরে তাদের পুনরায় ফিসহ আবেদন করতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপে আবেদন
আগামী ৯ ও ১০ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্যায়ের আবেদন নেওয়া হবে। পছন্দক্রম অনুযায়ী- ১২ জানুয়ারি প্রথম মাইগ্রেশনের ফল প্রকাশ করা হবে। একই দিনে দ্বিতীয় পর্যায়ে আবেদনের ফল প্রকাশ করা হবে। ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি চলবে দ্বিতীয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীর নির্বাচন নিশ্চায়ন।
তৃতীয় ধাপে আবেদন
১৬ জানুয়ারি তৃতীয় পর্যায়ের আবেদন নেওয়া হবে। পছন্দক্রম অনুযায়ী দ্বিতীয় মাইগ্রেশন ও তৃতীয় পর্যায়ের আবেদনের ফল প্রকাশ করা হবে ১৮ জানুয়ারি। তৃতীয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীর নির্বাচন নিশ্চায়ন চলবে ১৯ ও ২০ জানুয়ারি।
ভর্তি
একাদশ শ্রেণিতে আগামী ২২-২৬ জানুয়ারি ভর্তি চলবে। বিভিন্ন কলেজ ও মাদরাসায় একাদশ শ্রেণিতে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্লাস শুরু হবে।
আনন্দের কথা, পরিতুষ্টি ও তৃপ্তির কথা আগামীকাল আমি যেন পুনর্জন্ম লাভ করতে যাচ্ছি। এই কসমোপলিটন অথচ বায়ুদূষণে সেরা শহরের ঘিঞ্জি অলিগলি থেকে উদার উন্মুক্ত পরিবেশে সুরম্য সুউচ্চ সুবিস্তৃত রাজস্ব ভবন হিসেবে আমার দ্বার উদঘাটন হবে রবিবার। আমাকে সবাই চিনে না। তবে সমাজের যাদের আয়-রোজগার ভালো, যারা ব্যবসাপাতি করে খায়, জাহাজের খবর যারা রাখে তাদের তো আমারে চেনার কথা। শুনেছি অনেকে আমাকে চেনে, অনেকে আমার নাম শুনেছে, জানে। কিন্তু আমাকে পাশ কাটিয়ে যেতে চায়, আমার সঙ্গে দেখা না হলে ভালো, এমন মনে করে কেউ কেউ। নিজের দেশে না খাটিয়ে, কাজ-কাম সৃষ্টি না করে চুরি-বাটপারির টাকা যারা হরহামেশা বিদেশে পাঠায় তারা তো আমাকে চিনেও চিনবে না, জেনেও জানবে না, তাদের কাছে আমার বার্তা পৌঁছাতে আমি নব বলে বলীয়ান হতে যাচ্ছি। দেশে যারা সুবোধ সুশীল সদাচারে সুশাসনে ন্যায্যতায় বিশ্বাসী তাদের আরও উন্নত সেবা দেওয়ার সক্ষমতা পাবএ প্রত্যাশা ও প্রতিজ্ঞায় সবাইকে নতুন রাজস্ব ভবনে স্বাগত জানাই।
মিডিয়ার বন্ধুদের প্রতি আমি সবিশেষ কৃতজ্ঞ। তারাই তো আমার কথা ও ছবি হরহামেশা প্রকাশ ও প্রচার করে। বিট আপা, বিট ভাইয়ারা আমার খোঁজ করেন, আমার এখানে যাতায়াত করেন। আমার কাজকর্মের তারিফ যতটা না করেন তার চেয়ে আমার ভেতরের অনেক বিষয়-আশয় নিয়ে খোঁচাখুঁচি করেন বেশি। এটাকে আমি স্বাগত জানাই, কারণ সবার সঙ্গে আমার জানাশোনা যত বাড়বে তত আমাদের সবার জন্য ভালো। আমার সঙ্গে যাদের আনন্দ(?) কিংবা বিরাগ-বিষাদের যোগাযোগ তাদের সহায়তা করতে সাহায্য করার বিষয়ে মিডিয়ার ভূমিকাকে আমি বড় মূল্যবান মনে করি। আমার কর্মকাণ্ডের পরিসংখ্যানের সুচতুর সমালোচনায় ঘরে-বাইরে ও সবার মধ্যে যে কাণ্ডজ্ঞান ও দায়িত্ববোধ বাড়ে, সেদিকে তারা নজর যেমনটি দিচ্ছেন, সেটি যেন আরও জোরদার, রাজস্ব আহরণের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। এটি সবাইকে বোঝাতে চাই এ দেশ অর্থনীতি, সমাজ একান্তভাবে আমাদের, এর আয়-উন্নতি আমাদের জন্য দরকার। দূরে কিংবা কাছের জনের পরামর্শ, খবরদারি, শর্ত মেনে আমাকে চলতে হবে কেন। আমাদের যার যা আছে তা দিয়েই তো আমরা আমাদের উন্নতি, উন্নয়ন করতে পারি। নতুন রাজস্ব ভবন থেকে একটি স্বাবলম্বী, স্বয়ম্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলার আহ্বান আমরা জানাতেই পারি। স্বাধীনতার পাঁচ দশক পেরিয়ে বর্তমানে আমরা যে পর্যায়ে পৌঁছেছি, সে সাফল্যের মর্মমূলে, মিডিয়ার সৌজন্যে সাড়া জাগাতে পেরেছি এটা কম কীসে।
এই আমার নিজের আবাসস্থলের কথাই ধরুন। পুরনো প্যাঁচানো সরকারি ভবনে আমার বাল্যকাল, কৈশোরকাল পেরিয়ে সাত দশক পার করেছি। আমার ছানা-পোনারা অমুকের গলি, তমুকের আস্তানায় এখনো ভাড়া থাকে। হায়রে কপাল, ভাড়াটিয়া হয়ে বাড়িওয়ালার কাছ থেকে মাসোহারা পাই কেমনে? লোকে সেই ভাড়াটিয়া বাড়িতে বছরে একবার-দুবার আসে, গন্ধে মুখ সিটকায়। অন্ধকার ঘরে আগের হিসাব-কিতাবের কাগজ ঠিকমতো রাখার পারি না। ঘনঘন বাসা পাল্টানোয় তারা আমার আস্তানা ঠিক মনে রাখতে পারে না। সবাই কর মেলায় যেতে চায়। কর মেলার পরিবেশ পেতে চায়। এখন অনলাইনে সব সারার জন্য সবাই উন্মুখ। অনলাইন সবাইরে দেওয়ার জন্য, দেখভাল করার জন্য, তথ্য সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণের জন্য যে যোগ্য মানুষ দরকার, পরিবেশ প্রয়োজন সে জন্য আমি এখনো চেয়েচিন্তে চলেছি। নতুন আবাসে সার্ভার সুস্থ-সক্রিয় ও সুরক্ষা পাবেএ আশায় বুক বেঁধে আছি। আমি ভেবে রেখেছি শুধু ভবন সুন্দর হলে চলবে না, আমার কাজের মান, সবার সঙ্গে আচার-আচরণ, ব্যবহারের মাত্রায়ও যেন পরিবর্তন আসে, আমাকে আরও দায়িত্ব-কর্তব্যসচেতন হতে হবে।
আগামীকাল আমি নতুন গৃহে খাসা একটি বাড়ি জম্পেশ আয়োজনে যেতে যাচ্ছি। রাজধানী শহরে এ রকম একটা বাড়ি পেতে কতটাকাল অপেক্ষা করেছি জানেন? মোটামুটি প্রায় দুই দশক। হায়রে কপাল, আমার আশপাশে, দূরে-অদূরে কত শত সুরম্য ভবন হলো যাদের নির্মাণের নামে আমারই আহরিত টাকা ব্যয়ের খেলা আমি শুধু দেখেই চলেছি, সেসব ভবন বানানেওয়ালারা সুরম্য ভবন নির্মাণের মধ্যে গুড়ের সন্ধান পেয়েছে বলেই সেগুলো সত্বর তৈরি হয়েছে। আমি যে টাকা জোগাড় করি সেই টাকা এদিক-ওদিক করে অনেকের দেশ বিদেশে ঘরবাড়ি বানানো বাড়ছে অথচ আমার ঘর বাঁধার টাকা ও লোক সময়মতো পাওয়া যায় না। আমাকে যারা পছন্দ করে না তারা তুষ্টির ঢেকুর তোলে আমাকে ভাড়াবাড়িতে রেখে। উপজেলাপর্যায়েও অনেকের নিজস্ব বাড়ি আছে। আমার বেলায় ন্যূনতম নতুন জেলা শহরেও নগেনের গলি খগেনের আস্তানায় থাকার ব্যবস্থা চলছে তো চলছেই। গবেষণা, কর্মপরিকল্পনা, সবাইকে এক শামিয়ানায় আনা? উপজেলায় পয়সাওয়ালাদের সংখ্যা বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। আর তাদের দোরগোড়ায় গিয়ে যে খোঁজখবর করব তা আমি পারি না। তাহলে এটা কারণ কি না সবাই হয়তো বুঝবার পারছেন আমার সক্ষমতা বাড়ুক এটা তারাই চান না যাদের কাছ থেকে আমি সবার জন্য রাজস্ব সংগ্রহ করি। হায়রে যাদের সঙ্গে আমার নিত্য-সাক্ষাৎ হওয়ার কথা আলাপ-আলোচনা দরকার তারাই আমার জনপ্রিয়তা বাড়–ক চায় না। স্বাধীনতার পর প্রথম দশক ছিল পুনর্বাসন পুনর্গঠন, সে সময় বিদেশের অনুদানে চলা ছাড়া গত্যন্তর ছিল না, অর্থনীতির যে অবয়ব, সেখান থেকে রাজস্ব আহরণের অবকাশ তেমন মেলেনি। কিন্তু আশির দশকে? যখন বিদেশি দেনায় একশ ভাগের বেশি উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়িত চলেছে তখনো আমার কথা কেউ ভাবেননি। বিদেশেও মুখাপেক্ষী হতে গিয়ে আমাদের নিজস্ব আয়-উপার্জনে নজর দেওয়া হয়নি। আমার লোকবল ও প্রাতিষ্ঠানিক সম্প্রসারণের দাবি বরাবরই উপেক্ষিত হয়েছে। নব্বইয়ের দশকে এসে টনক নড়তে শুরু করে, কিন্তু অর্থনীতি যেভাবে হঠাৎ করে বড় হয়েছে, সেই অর্থনীতি থেকে রাজস্ব আয়ে আমার সক্ষমতা বাড়ানো যায়নি, অর্থনীতির অগ্রযাত্রার সঙ্গে আমার পথচলায় সমীকরণ মেলেনি বলেই আমাকে আজ নানান কথা শুনতে হচ্ছে, আইন সংস্কারে বিলম্ব, মেশিন দিতে বিলম্ব, অনলাইনে যেতে বিড়ম্বনাসব এখন আমাকে মাথায় নিতে হচ্ছে। আমাকে এড়িয়ে চলাদের গতি ও শক্তি বাড়ছে জ্যামিতিক হারে আর আমি গাণিতিক হারে সক্ষমতা বাড়াতে গিয়ে হোঁচট খেয়েই চলেছি।
আসলে আমাকে তো আইনকানুন কষে ধরে-বেঁধে রাজস্ব নিতে হয়, এর জন্য যে মেধা, যে প্রজ্ঞা, যে পারদর্শিতা দরকার তা আমার না বাড়ুক এটা তো তারা প্রকারান্তরে চাইবেনই না, ভাবখানা এই যে, আমি যেন তাদের ফাঁকি-যুকির নিয়ন্ত্রণে সবলতায় সফলতায় বড় হই। সেই প্রমাণই পেলাম দুই দশক সময় নিয়ে বানানো আমার নয়া বাড়ি, নিজের বাড়ি ‘রাজস্ব ভবন’-এ গৃহ প্রবেশের সময়। আমার পুরনো বাড়ির কাছে একসময় একটি বড় পুকুর ছিল, হিসাব নিরীক্ষা বিভাগের জুনিয়র অফিসাররা আশির দশকের শুরুতে সেখানে অডিট বিভাগের দপ্তর হবে, নির্মাণকাজ শুরু হয়ে শেষ হতে হতে ওই অফিসাররা রিটায়রমেন্টে চলে গিয়েছেন।
আমাকে লোকবল না দিয়ে, আমার সক্ষমতা না বাড়িয়ে, পারঙ্গম হতে সহায়তা না করে আমাকে খালি খালি রাজস্ব আহরণের মোটা তাজা লক্ষ্যমাত্রা ধরিয়ে দেওয়ায় যাদের আমি চিনি, জানি শুধু তাদের কাছ থেকে বারবার বেশি করে চাইতে থাকি। কীভাবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পথে হাঁটতে গিয়ে আমি যা-যা করি তাকে অনেকে অযথা হয়রানি বলে থাকেন। নিজে ফাঁকি দেওয়ার পথ খুঁজবেন, আমাকে পারঙ্গম না করে এড়িয়ে চলার পথ খুঁজবেন, তাদের কাছে ন্যায্য হিসাবমতো রাজস্ব চাইতে গেলে, পাইতে গেলে আমার ভূমিকাকে ভিন্নভাবে দেখানো হয়, যা সংগ্রহ করি তাও আবার খাজাঞ্চিখানায় ঠিকমতো যায় না, সবাই হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবেন, চাই ফাঁকি দিতে, ফন্দি আঁটবেন আর তার সব দোষ-দায়-দায়িত্ব আমার ওপর চাপানো। অস্বীকার করি না, সুশাসন ও জবাবদিহির দুর্বলতায় রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রেও স্বভাবচরিত্রে কিছু বদ-অভ্যাস গেঁড়ে বসেছে। রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার পথে সহায়ক ভূমিকা পালনে প্রলুব্ধ করতে বা হতে এসব ঘটে। চারদিকে এ ধরনের খেলা যখন বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যায়, তখন তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে, আমাকে খাতায় আনতে গিয়ে, আমাকে জোত-জমিদার, পাইক-বরকন্দাজের মতো হতে হয়। এ বদ-খাসলত সবার মধ্যে এক দিনে গড়ে ওঠেনি। এর জন্য আমরা উভয়ই দায়ী। আর দায়ী আমার আহরিত টাকা নয়-ছয় (দেশের ব্যাংকের বিতর্কিত সুদের হার নয়) করে, নীতি-নৈতিকতার মাথা খেয়ে ‘আরও চাই’-এর স্বভাবের কৌশলের কারণে।
দোষারোপে লাভ নেই, জাতীয় রাজস্ব আয়-উন্নতির পথ পেতে হবে, সঠিক পথে উঠতে হবে। সবাই যেন যার যার দায়িত্ব (আমার বেলায় ন্যায়নীতি নিয়মকানুন, এসআরও অর্থবিধি আইন হার ধারা সঠিকভাবে প্রয়োগ করে, হিসাব কষে) আর কর্তব্য (রাষ্ট্রের ন্যায্য পাওনা পরিশোধে সবার) পালনে এগিয়ে আসতেই হবে, নইলে আমরা সবাই বড় ক্ষতির মধ্যে পড়ে যাব। নতুন রাজস্ব ভবন হয়েছে, সুরম্য সুউচ্চ প্রাসাদ হয়েছে কিন্তু সেখানে সবার মধ্যে এই ভবনের নীতি-আদর্শের দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধের উপলব্ধি উপলব্ধিতে পরিণত যদি না হয় তাহলে লাখ টাকায় ঝাড়বাতিটা নিশুতি রাতে কেঁদেই মরবে।
আমাকে ঘর দেওয়া হয়েছে ভালো বর চাই। সহজ আলাপে সংসার নির্মাণ চাই, স্বনির্ভর হতে চাই। সামনে দিন খারাপ। ঘরে-বাইরে সমস্যারা পান-তামাক খেয়ে কোমরের বাঁধন কষে এগিয়ে আসছে, ধেয়ে আসছে। সেখানে নিজের সম্পদ আহরণ করে যদি আমরা বলশালী না হয়ে তাদের মোকাবিলায় না নামি তাহলে তাদের সঙ্গে পারব কেমনে। বল ও কর্মক্ষমতা ধার-কর্জ করে বাড়ানো যায় না, লক্ষ্য অর্জন করা যায় না। অন্যের শর্ত-সাবুদ মেনে তাদের বানানো পোশাক পরে তাদের আইনের ভাষায় ও চোখে তাকালে আমার খাবার খাদ্য জোগাড় তো ভেজালমুক্ত হবে না। আমার নতুন বাড়িতে সবাইকে সাদর সম্ভাষণ। আশা করি এখানে সবাই ভালো ব্যবহার পাবেন এবং আপনারা সবাই নিজ গুণে, উপলব্ধিতে নিজেদের দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে আসবেন। এটা মনে রাখতে হবে, আমরা সবাই এক হাঁড়ির ভাত খাই। আমাদের আয়োজন আমাদেরই করতে হবে।
লেখক: উন্নয়ন অর্থনীতির বিশ্লেষক
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৫০ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা খরচের হিসাব ধরে বাজেট প্রস্তাব প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৭২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বেশি। অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে খরচের বেশিরভাগ অর্থ জোগাড়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৯ শতাংশ বাড়ানো হবে। আসছে জুনের প্রথমভাগে জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগামী বাজেট হবে জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট। তাই এখানে নেওয়া কোনো পদক্ষেপে যেন আওয়ামী লীগ সরকার সমালোচনার মুখে না পড়ে এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের থাকছে বিশেষ নজর। এ ছাড়া রয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। তাই সংকট ও নির্বাচন দুটোই মাথায় রাখতে হচ্ছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে মোটাদাগে একটি রূপরেখা পাঠানো হয়েছে। নতুন পরিকল্পনার পাশাপাশি গত তিন মেয়াদে সরকার কী কী উন্নয়ন করেছে আগামী বাজেট প্রস্তাবে তা মনে করিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং উচ্চপর্যায়ের সরকারি নীতিনির্ধারকদের উপস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো আগামী বাজেটের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি পাঠিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে হিসাব ধরে অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট প্রস্তাব প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে তা কয়েক দফা খতিয়ে দেখা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধন, যোগ-বিয়োগ করে আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত হওয়ার আগেও অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে।
ডলার সংকটে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র বা এলসি খুলতে পারছেন না সাধারণ ব্যবসায়ীরা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় পণ্যের দাম বাড়ছে। কাঁচামাল সংকটে বিপাকে শিল্প খাত। ব্যাংক খাতে অস্থিরতা। নতুন চাকরির সুসংবাদ নেই বললেই চলে। দফায় দফায় জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। খুব শিগগিরই এসব সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছেন না অর্থনীতিবিদরা। অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ঋণদাতা সংস্থার কঠিন শর্তের বেড়াজালে আছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতেই আগামী অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশি^ক অস্থিরতা মোকাবিলায় সরকার কী কী পদক্ষেপ নেবে তা আগামী বাজেটে স্পষ্ট করা হবে। দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথাও বলা হবে। তবে শত সংকটের মধ্যেও আগামী বাজেটে ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী যতটা সুবিধা দেওয়া সম্ভব তা দিতে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে কাঁচামাল আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দিতে হিসাব কষা হচ্ছে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকটে আমদানি রপ্তানি প্রায় বন্ধ। ব্যবসা-বাণিজ্যে সংকটকাল চলছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটে আমাদের দাবি অনুযায়ী নগদ সহায়তা দিতে হবে। রাজস্ব ছাড় দিতে হবে। কর অবকাশ ও কর অব্যাহতি বাড়াতে দিতে হবে।’
ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া সংস্কারের শর্ত মানার অঙ্গীকার করে সরকার ঋণ পেয়েছে। শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে ঋণের যেকোনো কিস্তি আটকে দিতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। পর্যায়ক্রমে প্রতি অর্থবছরের বাজেটে এসব সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়ন করা হবে। আসছে বাজেটে শর্ত মানার চেষ্টা থাকবে। বিশেষভাবে অতীতের মতো ঢালাওভাবে কর অব্যাহতি দেওয়া হবে না। আর্থিক খাতের সংস্কারের কিছু ঘোষণা থাকবে। বিশেষভাবে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দেওয়া হবে। আইএমএফের সুপারিশে এরই মধ্যে ভ্যাট আইন চূড়ান্ত হয়েছে। আয়কর আইন মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন হয়েছে। শুল্ক আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে আছে। এ তিন আইন অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণ করা হবে। আসছে বাজেটে টেকসই অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার কথা বলা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছু উদ্যোগের কথা শোনানো হবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঋণদাতা সংস্থার শর্ত মানার কথা বলা হলেও সব আগামী বাজেটে একবারে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে অর্থনীতির গতি কমে যাবে।’
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত খাত এবং এনবিআর খাতের জন্য মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হতে পারে। এতে লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা হবে। এনবিআর এ লক্ষ্যমাত্রা কমানোর জোরালো আবেদন করেছে। কিন্তু তা আমলে আনেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) হিসেবে, ৩৪ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা আয়কর হিসেবে এবং ৩১ শতাংশ বা বাকি ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা শুল্ক হিসেবে সংগ্রহ করার কথা বলা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার কথা শুধু বললেই হবে না। কীভাবে অর্জিত হবে, সেটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা না থাকলে প্রতিবারের মতো ঘাটতি থাকবে। রাজস্ব ঘাটতি হলে অর্থনীতিতে আয় ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত।’
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআর উৎসে করের আওতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। সম্পদশালীদের ওপর নজর বাড়ানো হবে। শুধু বেশি সম্পদ থাকার কারণে অতিরিক্ত কর গুনতে হবে। সারচার্জ বহাল রাখা হবে। সুপারট্যাক্স গ্রুপকে উচ্চহারে গুনতে হবে কর। আগামী অর্থবছরেও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা থাকবে। অর্থ পাচারোধে আইনের শাসন কঠোর করা হবে। অর্থ পাচার আটকাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হবে। করপোরেট কর কমানোর দাবি থাকলেও তা মানা হবে না। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করতে খোদ অর্থমন্ত্রী বললেও রাজস্ব আদায় কমে যাবে এমন যুক্তি দেখিয়ে এনবিআর রাজি নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে। কমানো হবে শিল্পের অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানি শুল্ক। ডলারের ওপর চাপ কমাতে বেশি ব্যবহৃত পণ্য আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হবে। বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কমাতে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হবে। তৈরি পোশাক খাতের সব সুবিধা বহাল রাখা হবে। শিল্পের অন্যান্য খাতেও কতটা সুবিধা বাড়ানো যায় তা নিয়ে এনবিআর হিসাব করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বাজেট প্রস্তুতিবিষয়ক প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং ঘাটতি ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হতে পারে। আগামী অর্থবছরে জিডিপির ৬ শতাংশ ঘাটতি ধরে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হতে পারে বলে জানা যায়। ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে ভর্তুকি কমানোর চাপ থাকলেও আগামীবার এ খাতে বেশি ব্যয় ধরা হতে পারে। এ খাতে ১ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যয় আছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ অনুমোদন করে। ঋণদাতা সংস্থাটির কাছ থেকে বাংলাদেশ ছয় কিস্তিতে তিন বছরে ৪৭০ কোটি ডলার পাচ্ছে। ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের দিন আইএমএফ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিয়ে পূর্বাভাস দেয়। সংস্থাটি বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা হতে পারে ৭ দশমিক ১ শতাংশ।
এতে রিজার্ভ সম্পর্কে বলা হয়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমে দাঁড়াবে ৩ হাজার কোটি ডলার। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে তা ধারাবাহিকভাবে বাড়বে এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
খেলা তখন গড়িয়েছিল ৪৩ মিনিটে। বাংলাদেশ এগিয়ে ২-১ গোলে। আর সেই সময়েই মাথায় চোট পান অনূর্ধ্ব–২০ নারী দলের অধিনায়ক শামসুন্নাহার। নেপালের এক ডিফেন্ডার ট্যাকল করলে মাটিতে পড়ে যান তিনি। মাথায় আঘাত পেয়ে প্রায় মিনিট দুয়েক মাটিতে শুয়ে ছিলেন।
ম্যাচের বিরতির সময় শামসুন্নাহার ডাগআউটে শুয়ে ছিলেন বেশ কিছুক্ষণ। এরপর ম্যাচ শেষ হলে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে দলের ফিজিও গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করেন তাকে। কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরলেও খেলার মতো ফিট ছিলেন না তিনি। বিরতিতে শামসুন্নাহারকে উঠিয়ে কোচ গোলাম রব্বানী মাঠে নামান আইরিন খাতুনকে।
শামসুন্নাহারের চোট যদিও তত গুরুতর নয় বলেই জানিয়েছেন কোচ গোলাম রব্বানী। তারপরও তাকে নিয়ে ঝুঁকি নিতে চান না তিনি। যে কারণে শামসুন্নাহারকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে কোচ বলেন, ‘শামসুন্নাহার ব্যথা পাওয়ার পর কিছু সময় স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য সে কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। তারপরও কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষার জন্য দলের সঙ্গে থাকা চিকিৎসক তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। তবে আমি আশা করি, পরশু দিন সে ঠিক হয়ে যাবে।’
কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সকে রুদ্ধশ্বাস এক খেলায় টাইব্রেকারে হারিয়ে আর্জেন্টিনা শিরোপা জিতেছে। কিলিয়ান এমবাপ্পে হ্যাটট্রিক করলেও শেষ বিশ্বকাপের শিরোপা উঠেছে লিওনেল মেসির হাতে। এ দুই ফাইনালিস্টের ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে অনেকের কৌতূহল।
পিএসজিতে মেসির সতীর্থ এমবাপ্পে। দুজনের সম্পর্ক নিয়ে কানাঘুষার শুরু বিশ্বকাপ জেতার পর আর্জেন্টাইন দলের উৎসবকে কেন্দ্র করে। কাতার থেকে দেশে ফেরার পর আর্জেন্টিনা গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ এমবাপ্পের পুতুল হাতে নিয়ে তাকে কটাক্ষ করে বিতর্কের জন্ম দেন। পাশে থাকলেও মেসি কেন বাধা দেননি, এমন কথাও বলেন কেউ কেউ।
বিশ্বকাপের পর মেসি-এমবাপ্পের ব্যক্তিগত সম্পর্ক কেমন! আর্জেন্টিনার ‘ওলে’ পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আর্জেন্টিনা অধিনায়ক সেই কৌতূহল মিটিয়েছেন।
বিশ্বকাপ ফাইনাল নিয়ে দুজনের মধ্যে প্যারিসে আড্ডাও হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেসি, ‘বিশ্বকাপ ফাইনাল নিয়ে আমরা দুজন কথা বলেছি। আর্জেন্টিনায় বিশ্বকাপ জেতার পর যে উৎসব হয়েছে, এমবাপ্পে সেটি নিয়ে আমার কাছে জানতে চেয়েছে। এর বাইরে আর কিছু হয়নি। ভালো, খুবই ভালো আমাদের দুজনের সম্পর্ক।’
বিশ্বকাপ ফাইনাল হারার অনুভূতিটা এমবাপ্পের কেমন ছিল, তা নিয়ে মেসি সতীর্থের সঙ্গে কোনো কথাই বলেননি বলে জানিয়েছেন, ‘দেখুন, আমিও ফাইনালে খেলেছি। আমিও হেরে যেতে পারতাম। আমি তাঁর কাছে এ নিয়ে কিছু জানতে চাইনি। আসল কথা হচ্ছে, এমবাপ্পের সঙ্গে আমার কোনো সমস্যা নেই। বরং মানুষ যেটা ভাবে আমাদের সম্পর্ক তার ঠিক উল্টো।’
একাদশ সংসদে উপনির্বাচনের সুযোগ আবার তৈরি হোক তা চায় না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। উপনির্বাচন নিয়ে একধরনের জটিলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে বলে মনে করছে টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকা দলটি। উপনির্বাচনের পরে নানা আলোচনা-সমালোচনায় বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি পড়তে হয় সরকার ও দলকে। বিএনপির ছেড়ে দেওয়া ৬টি আসনে গত বুধবার অনুষ্ঠিত উপনির্বাচন ঘিরেও নানা বিষয় সামনে আসছে। এর আগে গাইবান্ধা উপনির্বাচন নিয়েও বিতর্কের মুখে পড়ে আওয়ামী লীগ।
তাই নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের অঙ্কে আগের চিত্র পাল্টে ফেলেছে সরকারি দল। যে কারণে একাদশ সংসদের সদস্য থাকা কারও জন্য রাষ্ট্রপতি হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
গুরুত্বপূর্ণ ওই নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আলোচনায় থাকা স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন না, অনেকটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র আরও জানিয়েছে, সব বিবেচনায় রাষ্ট্রপতি আলোচনায় এখন সবচেয়ে এগিয়ে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার সদস্য স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। টেকনোক্রেট কোটায় টানা তিনবার সরকারের মন্ত্রী তিনি। আস্থা-বিশ্বাসের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এই মন্ত্রীর পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি রয়েছে মনে করেই রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাকে নিয়ে আলোচনা এখন সবচেয়ে বেশি। তবে গণমাধ্যমে আসা অন্য নেতাদের নামও কমবেশি আলোচনায় রয়েছে এখনো। দুই দিন পর আগামী রবিবার সবাই জেনে যাবেন কে হচ্ছেন দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি। আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপনির্বাচনে অনীহার কারণে রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো নিতে পারেননি দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। সংসদ নেতা শেখ হাসিনার বরাত দিয়ে কেন্দ্রীয় ওই নেতারা আরও বলেন, বর্তমান সংসদে থাকা কোনো সদস্যকে রাষ্ট্রপতি বানানোর ব্যাপারে এই মুহূর্তে নেতিবাচক অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামী লীগপ্রধান। এর অন্যতম কারণ উপনির্বাচনে অনীহা দেখা দেওয়া।
সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগের জন্য উপনির্বাচনের অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয়। গাইবান্ধার উপনির্বাচন তাদের সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করেছে। দেশের ইতিহাসে ভোট বাতিল করার নজির সৃষ্টি করেছে ওই উপনির্বাচন। ফলে আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে একধরণের ভুল-বোঝাবুঝি ও দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে নানা মহলে আলোচনা আছে; যা একেবারেই অনাকাক্সিক্ষত আওয়ামী লীগের জন্য। সর্বশেষ গত বুধবার বিএনপির ছেড়ে দেওয়া ৬টি আসনের উপনির্বাচনেও সমালোচনামুক্ত থাকেনি।
দলের আরেক সভাপতিমন্ডলীর সদস্য নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, গণমাধ্যম ও দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রায় চূড়ান্ত জানিয়ে দিলেও তিনি রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন না, তা মোটামুটি নিশ্চিত। তার এ দাবির পেছনে দুটি যুক্তি দাঁড় করান তিনি। আওয়ামী লীগের প্রবীণ এ নেতা বলেন, স্পিকার হিসেবে শিরীন শারমিন বেশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। টানা স্পিকার হিসেবে অভিজ্ঞতাও হয়ে গেছে। ফলে একাদশ সংসদ পরিচালনায় এমন দক্ষ ও অভিজ্ঞ স্পিকার প্রয়োজন রয়েছে। তাকে রাষ্ট্রপতি বানানো হলে সংসদ সামলে নেওয়া যে কারও জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। সেটা ভেবে তার সম্ভাবনা কম বলে দাবি করছেন ওই নেতা। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই একজন নারী নেতাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেখতে চেয়েছেন বলেই স্পিকারকে এগিয়ে রাখা হয়েছে।
দ্বিতীয় কারণ, উপনির্বাচনে অনীহা। স্পিকারকে রাষ্ট্রপতি করা হলে তার ছেড়ে দেওয়া আসনে উপনির্বাচন করতে হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হবেন ওই ব্যক্তি, যাকে প্রধানমন্ত্রী ‘আপনি’ সম্বোধন করেন তাকে। মহামান্য পদটি প্রধানমন্ত্রী ‘তুই’ বা ‘তুমি’ সম্বোধন করা কাউকে সেভাবে চাচ্ছেন না। সে ক্ষেত্রে স্পিকারের রাষ্ট্রপতি হওয়ার সুযোগ কমই দেখছেন তিনি।
দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি। ১২ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা এবং পরদিন যাচাই-বাছাই। ১৪ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতি কে হবেন এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। গণমাধ্যমে যাদের নাম এসেছে, তাদের মধ্যে স্পিকার ছাড়াও রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। এ ছাড়া দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের নামও আলোচনায় এসেছে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়নি বলে আমি জানি। সেই জন কে, সংসদ নেতা নিজের ভেতরে রেখেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘একজন নারী রাষ্ট্রপতি দেখতে চান প্রধানমন্ত্রী, এটা তার বহু আগের স্বপ্ন। আবার রাজনীতির বাইরে কাউকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেখতে চান না আওয়ামী লীগ সভাপতি এমন একটি ব্যাপারও আমার জানা ছিল।’
উপদেষ্টা পরিষদের ওই সদস্য বলেন, ‘এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো চাওয়ার প্রতিফলন না-ও ঘটতে পারে। পরিস্থিতির কারণে রাজনৈতিক নেতার বাইরে রাষ্ট্রপতি হলেও হতে পারে।’ তিনি বলেন, নানা দিক বিবেচনায় রেখে রাজনীতিবিদ না হলেও রাজনৈতিক পরিবার থেকে আসা কোনো সজ্জন ব্যক্তিও এবার রাষ্ট্রপতি হিসেবে আসতে পারেন। খানিকটা অস্পষ্টতা রেখেই প্রবীণ এ নেতা আরও বলেন, ‘চমকও থাকতে পারে এ ক্ষেত্রে। আমাদের কারোরই আলোচনায় নেই এমন একজন নারীও চলে আসতে পারেন। সে ক্ষেত্রে চমকে দেওয়ার মতো কিছু ঘটারও সুযোগ আছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি নিয়ে এখনো কোনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা চলছে। তবে যিনি হবেন, নিশ্চয়ই তিনি গ্রহণযোগ্য হবেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনীত ব্যক্তিটির নাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের ভেতরেই রেখেছেন।’
আরেক সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। এখতিয়ারবহির্ভূত বিষয়ে জানার আগ্রহও আমার কম।’
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
নাগরিকত্ব বিষয়ক জটিলতার জেরে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে দেশের উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ ও পার্লামেন্টে আসন হারিয়েছেন নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী রবি লামিছানে। শুক্রবারের রায়ে আদালত জানিয়েছে, এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকত্বও নেই তার।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র বিমল পৌদেল বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় অনুযায়ী, ২০২২ সালের জাতীয় নির্বাচনে নাগরিকত্ব বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে রবি লামিছানের বিরুদ্ধে। এ কারণে এখন থেকে আর পার্লামেন্টের সদস্য নন তিনি।’
নেপালের এক সময়ের জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব রবি লামিছানে দেশটির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ইনডিপেনডেন্ট পার্টির শীর্ষ নেতা। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নেপালের পার্লামেন্ট প্রতিনিধিসভার নির্বাচনে তার দল ২০টি আসনে জয়ী হয়েছে। তারপর গত ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন জোট সরকারে নিজের দলসহ যোগ দিয়ে নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন লামিছান।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিত্ব ছিল লামিছানের; কিন্তু নেপালের সংবিধানে দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃত না হওয়ায় ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। শুক্রবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর নেপালের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার কথা ছিল লামিছানের; কিন্তু তা করেননি তিনি। ফলে এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকও নন লামিছান। এদিকে, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর লামিছানের প্রতিক্রিয়া জানতে তার মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে গিয়েছিলেন সাংবাদিকরা; কিন্তু লামিছানে তাদের বলেন, ‘যেহেতু এই মুহূর্তে আমি কোনো দেশেরই নাগরিক নই, তাই আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করা আমার পক্ষে উচিত নয়, সম্ভবও নয়।’
তার কলাম মানেই সেদিন বাংলার বাণী অফিস সরগরম। সকাল থেকেই ফোন আসত। বিভিন্ন আড্ডায়ও আলোচনা হতো সেই কলাম নিয়ে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিষয়-আশয় এবং দেশের সমসাময়িক বিষয়গুলো আকর্ষণীয় এবং সহজ করে পাঠকের কাছে তুলে ধরতেন এই সাংবাদিক। এর বাইরে প্রকৃতি, পাহাড়, নদী ও দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে লিখতেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের লাল পাহাড়ের মানুষের জীবনের গল্পও তুলে আনতেন। প্রায় দেড় দশক নিরবচ্ছিন্নভাবে তিনি সাংবাদিকতা করেছেন। লিখেছেন অসংখ্য কলাম।
যখন সাংবাদিকতা করতেন তখন তার কাজের জায়গাটিতে তিনি ছিলেন সেরা। ছাত্ররাজনীতির জন্য যেমন নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন, ছাত্রনেতা হিসেবেও পেয়েছেন তুমুল জনপ্রিয়। সফল হয়েছেন প্রতিমন্ত্রী এবং মন্ত্রী হিসেবে। দেশের ঐতিহ্যবাহী এবং ইতিহাসসমৃদ্ধ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও তিনি সফল। তৃতীয়বারের মতো দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি হলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রাজনীতির বাইরে তার আরও অনেক পরিচয়ের মধ্যে সাংবাদিক পরিচয়টাও অনেক বেশি উজ্জ্বল।
ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন স্পষ্টবাদী, সাহসী ও দেশপ্রেমিক। পাকিস্তান আমলে ছাত্র ও গণআন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখা এ নেতা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং কোম্পানীগঞ্জ থানা মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) অধিনায়ক ছিলেন।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। ওই ভয়াল রাতে নিহত হন তার ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি। তিনি তখন দৈনিক বাংলার বাণীর সম্পাদক। ফলে পত্রিকাটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ১৯৮১ সালে পত্রিকাটি আবার ছাপার অনুমতি পায়। ওই সময় ওবায়দুল কাদের জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন। সেই সঙ্গে লেখালেখি। দ্বিতীয়বার শেখ ফজলুল করিম সেলিমের (বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য) সম্পাদনায় বাংলার বাণী পত্রিকার ছাপা শুরু হওয়ার পর যুক্ত হন ওবায়দুল কাদের। তিনি পত্রিকাটির সহকারী সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য ও পরে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের আগপর্যন্ত তিনি সাংবাদিকতা করেছেন।
টানা ১৫ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে ওবায়দুল কাদের অসংখ্য কলাম লিখেছেন বাংলার বাণীতে। ‘ও কাদের’ নামে তিনি কলাম লিখতেন। প্রতিদিন সকালে অফিসে আসতেন। সম্পাদকীয় বিভাগ ও অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে মিটিং করতেন। সম্পাদকীয় বিভাগের বাইরে সেই সময় তিনি বাংলার বাণীর আন্তর্জাতিক পাতাটি নিজের দায়িত্বে বের করতেন। আন্তর্জাতিক বিষয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও সমসাময়িক বিষয়ে তিনি খুব বেশি সচেতন ও আগ্রহী ছিলেন।
ওবায়দুল কাদেরের সেই সময়কার সহকর্মীরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সহকর্মী হিসেবে তিনি চমৎকার ছিলেন। তাছাড়া সাংবাদিক হিসেবেও খুব পেশাদার ছিলেন। তিনি যদি রাজনীতি না করে সাংবাদিক থাকতেন, তার অনেক লেখা এবং অসংখ্য বই আমরা পেতাম। যদিও তিনি এখন রাজনীতিতে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছেন। কিন্তু আমরা যারা তাকে পেয়েছি, তারা তার লেখা মিস করছি। তার লেখার জন্য অপেক্ষা করতাম। যেহেতু বাংলার বাণী ছিল বিরোধী ঘরানার পত্রিকা, তাই সাধারণ মানুষেরও আগ্রহ থাকত।
ওবায়দুল কাদেরের লেখালেখি ও তার কলাম সম্পর্কে জাতীয় অধ্যাপক প্রয়াত কবীর চৌধুরী লিখেছিলেন, ‘যখনি সংকট, যখনই এক অপয়া অন্ধকার ওঁৎ পেতে আসে, যখনই সমাজ ধূসরতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, যখনই মিথ্যা ও ইতিহাস বিকৃতির গোলকধাঁধায় নয়া প্রজন্মকে দিগভ্রান্ত করার অপচেষ্টা, যখনই রাজনীতির গৌরব কলুষতায় ঢেকে দেওয়ার অপপ্রয়াস তখনই ওবায়দুল কাদেরের এই জীবন ঘনিষ্ঠ, সত্য ও সুন্দরের আরাধনাময় সাহসী রচনা সমাজকে আলোর ইতিহাস শোনাতে পারে।’
ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকতা জীবনে সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয়, রাজনৈতিক কলাম লিখেছেন অসংখ্য। কবি নির্মলেন্দু গুণ তার সম্পর্কে বলেছেন, ‘বাংলার বাণী পত্রিকায় সম্পাদকীয় বিভাগে আমার সহকর্মী ছিলেন, কলাম লেখক হিসেবেও জনপ্রিয় হয়েছিলেন।... আমি তার অলংকৃত কাব্যিক ভাষায় বক্তৃতার একজন ভক্তশ্রোতা।’
প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মূল্যায়ন ছিল, ‘ওবায়দুল কাদের শুধু রাজনীতিক নন, তিনি সাংবাদিক, তিনি বাগ্মী, তিনি লেখক। বক্তৃতায় বাংলা শব্দ উচ্চারণ, ছন্দের ব্যবহারে চারণকবি তিনি। নিবন্ধ লেখক হিসেবে যুক্তি ও বিশ্লেষণে তীব্র লক্ষ্যভেদী তিনি।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন তার সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন বাংলার বাণীতে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১৯৮৯ সালে বাংলার বাণীতে যখন জয়েন করি তখন সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাদের ভাইকে পাই। আমরা বার্তাকক্ষে বসতাম আর তিনি তখন অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটরদের রুমে বসতেন। ওনাদের আলাদা রুম ছিল। তিনি রুম থেকে বের হয়ে সবসময় আমাদের খোঁজখবর নিতেন। মাঝেমধ্যে আমাদের এখানে এসে গল্প করতেন। তিনি সহকর্মী হিসেবে খুবই আন্তরিক ও সহকর্মীবান্ধব ছিলেন।’
সেই সময়ে বাংলার বাণীতে ওবায়দুল কাদেরের আরেক সহকর্মী ও পাক্ষিক ক্রীড়াজগৎ পত্রিকার সম্পাদক দুলাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি তাকে ১৯৮৫ সালে পেয়েছি। আমি তখন সহ-সম্পাদক হিসেবে জয়েন করেছি বাংলার বাণীতে। ওবায়দুল কাদের তখন সহকারী সম্পাদক ছিলেন। তিনি কলাম লিখতেন। তার কলাম পাঠকের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিল। তার লেখার মধ্যে সাহিত্য ছিল। লেখা খুব আকর্ষণীয় ছিল। পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন জায়গায় যেতেন, সেসব বিষয় নিয়েও লিখতেন। তার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা ছিল চট্টগ্রাম, পাহাড়-সমুদ্র খুব পছন্দ করতেন এবং এসব নিয়েও তিনি লেখালেখি করতেন। তিনি খুব আবেগী লোক ছিলেন এবং লেখার মধ্যে সেটা ফুটে উঠত। তার লেখা পাঠক পড়তে বাধ্য হতেন।’
তিনি বলেন, ‘রাজনীতির মানুষ হলেও অফিসে ঢুকলে একজন সংবাদকর্মী হিসেবেই থাকতেন ওবায়দুল কাদের। রাজনীতির বিষয়টা বাইরে রাখতেন। বরাবরই তিনি শৌখিন টাইপের লোক ছিলেন। ভালো কাগজ-কলম ব্যবহার করতেন লেখার সময়। লেখার সময় আলাদা একটা মেজাজে থাকতেন। তখন খুব জরুরি না হলে কোনো বিষয় অ্যালাউ করতেন না। লেখা শেষ করলে বেশ ফুরফুরে থাকতেন। তখন আমাদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন, গল্প করতেন। পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে তার মনোভাব আমরা দেখতে পেয়েছি।’
সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাংবাদিক সুভাষ চন্দ বাদল বাংলার বাণী পত্রিকায় ওবায়দুল কাদেরের সহকর্মী ছিলেন। তিনি বলেন, ‘কাদের ভাইকে ছাত্ররাজনীতি থেকেই চিনতাম। ১৯৭৫ সালের পর যখন তিনি কারাগারে যান তখন আমিও কারাগারে। তাকে কারাগারে দেখেছি বই নিয়ে ডুবে থাকতে। বাংলার বাণীতে এসে তাকে নতুন করে পেয়েছি। সেই সময় আজিজ মিসির ও তার কলাম ছিল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। তিনি সাংবাদিকবান্ধব। বাংলার বাণী অফিসেও সহকর্মীদের সবসময় সহযোগিতা করতেন। আমি রিপোর্টার হিসেবে যদি কখনো কোথাও আটকে যেতাম তিনি সহযোগিতা করতেন। কাদের ভাই সাংবাদিক হিসেবে ছিলেন মেধাবী ও জ্ঞানী। তার সাহসের ঘাটতি ছিল না। তার কলামেও এর প্রভাব দেখেছি।’
ওবায়দুল কাদের ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানার বড় রাজাপুর গ্রামে জন্ম নেন। বাবা মোশারফ হোসেন সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা শুরু করেন। মা ফজিলাতুন্নেছা। ওবায়দুল কাদের বসুরহাট সরকারি এএইচসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি ও নোয়াখালী কলেজ থেকে মেধা তালিকায় স্থান পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি কলেজজীবন থেকে ছাত্ররাজনীতি শুরু করেন।
১৯৭৫-এর পর একনাগাড়ে দীর্ঘ আড়াই বছর কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং পরপর দুবার সভাপতি ছিলেন।
তার সেই সময়ের সহকর্মীরা বলেন, সাংবাদিক ওবায়দুল কাদের তথা কাদের ভাই মানেই অন্যরকম। তিনি ছিলেন খুব সংবেদনশীল। সবাইকে মেনে নেওয়ার একটা ক্ষমতা ছিল। তিনি যে এত বড় একজন রাজনীতিক ও মুক্তিযোদ্ধা, এত বড় ছাত্রনেতা, তা কখনই সাংবাদিকদের কাছে মনে হতো না। মনে হতো, কাদের ভাই যেন সাংবাদিকতার মধ্যেই ডুবে আছেন। কোনো রিপোর্টার বা সাব-এডিটর অনুবাদ করতে সমস্যায় পড়েছেÑ কাদের ভাইয়ের কাছে গেলেই সমাধান। নিজের রুমে, ডেস্কে বসিয়ে বুঝিয়ে দিতেন। আর তার টেবিলে ছিল সবসময়ই গাদা গাদা বই।
বাংলার বাণীর সেই সময়ের একাধিক সাংবাদিক ওবায়দুল কাদের সম্পর্কে দেশ রূপান্তরকে বলেন, কাদের ভাই ছিলেন সাংবাদিকতার প্রতি পুরো নিষ্ঠাবান। তার কাছে অনেক কিছু শিখেছি। তিনি দীর্ঘক্ষণ কোথাও বসে থাকতেন না। কাজের ফাঁকে ফাঁকেই তিনি রুম থেকে বেরিয়ে অন্য সহকর্মীদের টেবিলে টেবিলে আড্ডা দিতেন। সেখানে হয়তো আমরা চায়ের অর্ডার দিয়েছি। চা আসতে না আসতেই তিনি উঠে যেতেন। তারপর আবার তাকে চায়ের কাপ নিয়ে খুঁজতে হতো কাদের ভাই কই...।